অধ্যায় ১১৯
তোমাদের সকলের আমার অভিপ্রায়গুলিকে অনুধাবন করা উচিত, এবং তোমাদের সকলের আমার মেজাজ বোঝা উচিত। এখন সিয়োনে প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুতির সময়। এখন এই বিষয়ে ছাড়া অন্য কিছুতে আমি মনোযোগ দেওয়ার মানসিকতা নেই। আমি শুধু খুব শীঘ্র একদিন তোমাদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার, এবং সিয়োনে প্রতিটা মুহূর্ত তোমাদের সঙ্গে অতিবাহিত করার দিন গুনছি। এই আমি পৃথিবীকে ঘৃণা করি, আমি এই দেহকে ঘৃণা করি, এবং এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে তো আরো বেশি ঘৃণা করি, কারণ তারা সকলেই সমান দানব, যাদের মধ্যে মানব স্বভাবের লেশমাত্র নেই। আমি এই পৃথিবীতে থাকতে চাই না; সকল কে আমি ঘৃণা করি, যা কিছু রক্তমাংসের সেই সবকিছুকেই আমি ঘৃণা করি। এই সমগ্র পৃথিবী শবদেহের পূতিগন্ধে পরিপূর্ণ; আমি এক্ষণেই সিয়োনে ফিরে যেতে চাই, পৃথিবী থেকে শবদেহের পূতিগন্ধ দূর করে সমগ্র পৃথিবীকে আমার বন্দনাগানে মুখরিত করে তুলতে চাই। আমি সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করব, এই দেহ এবং এই পৃথিবীর বন্ধন ছিন্ন করে বেরোব, এবং কেউ আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমার যে হাত মানুষকে সংহার করে তার কোনো আবেগ নেই! এখন থেকে গির্জা নির্মাণের ব্যাপারে কেউ কোনো কথা বলবে না। যদি কেউ বলে, তবে আমি তাদের ক্ষমা করব না। (কারণ এটা আমার প্রথমজাত পুত্রদের হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়, এবং এটা রাজ্য নির্মাণের সময়; গির্জা নির্মাণের কথা যে বলছে সে রাজ্যের নির্মাণকে ধ্বংস করছে এবং আমার ব্যবস্থাপনাকে বিঘ্নিত করছে)। সব কিছু তৈরি, সবকিছুই প্রস্তুত; কেবলমাত্র প্রথমজাত পুত্রদের মহিমাকীর্তন ও তাদের হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া বাকি রয়েছে। আর এটা যখন ঘটবে, তৎক্ষণাৎ, আর এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে, কোনো কিছু বিবেচনা না করে, প্রত্যাবর্তন করব সিয়োনে – সেই স্থান যেটিকে তোমরা দিবারাত্রতোমাদের মনেধারণ করে রেখেছো। বর্তমান বিশ্ব কী মসৃণ ও অবিচলিত ভাবে বয়ে চলে কেবল তার দিকে মনোনিবেশ কোরো না। এই কার্যগুলির সবই সিয়োনে প্রত্যাবর্তনের কার্য, তাই এই সমস্ত বিষয়ের উপর এখন মনোযোগ দিয়ো না; সিয়োনে প্রত্যাবর্তনের দিনটি এলে, সমস্ত কিছুই সম্পূর্ণ হবে। কেই বা যথা শীঘ্র সম্ভব সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করতে চায় না? খুব শীঘ্র পিতা ও পুত্রগণের পুনর্মিলন কে-ই বা চায় না? পার্থিব ভোগবিলাস যতই আনন্দদায়ক হোক না কেন, তা আমাদের দেহের উপর কব্জা কায়েম রাখতে পারে না; আমরা দেহকে অতিক্রম করব এবং একত্রে সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করব। কার সাধ্য এ কাজে কে বাধা দেয়? কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সাহস করবে? আমি নিশ্চিতভাবেই তাদের ক্ষমা করব না! সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে আমি নিশ্চিহ্ন করে দেব। (এই কারণেই আমি সিধা সিয়োনে প্রত্যবর্তন করতে পারি না। এই পরিমার্জন কার্য আমি সম্পন্ন করছি, এবং একই সঙ্গে আমার প্রথমজাত পুত্রদের হয়ে আমি সাক্ষ্যদান করছি; এই দুটি কাজ একই সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে। পরিমার্জনের কাজ যখন সম্পন্ন হবে, তখন আমার প্রথমজাত পুত্রদের উদ্ঘাটনের সময় আসবে। বিপুল সংখ্যক সেবা-প্রদানকারীই এই “প্রতিবন্ধকতা”, সেই কারণেই আমি বলি যে এই দুটি কাজ একসাথে সংঘটিত হচ্ছে)। আমি আমার প্রথমজাত পুত্রদেরকে আমার সঙ্গে এই মহাবিশ্বজুড়ে এবং পৃথিবীর শেষপ্রান্ত পর্যন্ত, পর্বত, নদী ও সমস্ত কিছু অতিক্রম করে পদসঞ্চারিত করাবো; কার সাধ্য এতে বিঘ্ন ঘটায়? কার সাধ্য এতে বাধা দেয়? আমার হাত সহজে কোনো মানুষকে নিস্তার দেয় না; শুধু আমার প্রথমজাত পুত্রদের বাদ দিয়ে বাকি সকলের বিরুদ্ধে আমি ক্রোধে ফেটে পড়ি এবং সকলকে অভিশাপ দিই। সারা জগতে এমন কোনো নশ্বর সত্তা নেই যে আমার আশীর্বাদ লাভ করেছে; সকলেই আমার অভিশাপের সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বসৃষ্টির সময় থেকে আমি কাউকেই আশীর্বাদ করিনি; এমনকি যখন আমি আশীর্বাদ করেছি তখনও সেগুলো ছিল নিছক কিছু শব্দমাত্র, কখনোই তা বাস্তব ছিল না, কারণ শয়তানকে আমি চূড়ান্তভাবে ঘৃণা করি; আমি তাকে কখনোই আশীর্বাদ দেব না, শুধুমাত্র শাস্তি দেব। কেবল অন্তিমে, শয়তানকে পুরোপুরি পরাজিত করার পর, এবং সমগ্র জয় আমার অধিগত করার পর-ই আমি সমস্ত অনুগত সেবা-প্রদানকারীকে জাগতিক আশীর্বাদ দেব, এবং আমার স্তুতিতে তাদের সুখানুভব করতে দেব, কারণ আমার সমস্ত কাজ তখন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
বস্তুত আমার সময় আর বেশিদূরে নয়। তোমাদের চোখের সামনে ছয়-সহস্র-বর্ষীয় পরিচালনামূলক পরিকল্পনা শেষ হতে চলেছে। (এটা বাস্তবিকই তোমাদের চোখের সামনে ঘটছে। এটা কোনো পূর্ব-কল্পনা নয়, তোমরা তা আমার মেজাজ থেকেই বুঝতে পারো)। আমি আমার প্রথমজাত পুত্রদের এক্ষণেই সিয়োনের আবাসে নিয়ে যাবো। কিছু কিছু মানুষ বলবে, “এটা যদি শুধুমাত্র প্রথমজাত পুত্রদের জন্যই হয়ে থাকে তাহলে এর জন্য ছয় সহস্র বছর সময় লাগল কেন? এবং কেন এত সংখ্যক মানুষকে সৃষ্টি করা হল?” আমি আগেও বলেছি যে আমার সমস্তকিছুই মহার্ঘ। তাহলে আমার প্রথমজাত পুত্ররা আরো বেশি করে তেমন হবে না কেন? আমাকে সেবার জন্য আমি সকলকে সমাবিষ্ট করব, এবং উপরন্তু, আমি আমার ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাব, যাতে প্রতিটি মানুষ দেখতে পায় যে সমগ্র মহাবিশ্বে এমন একটি বস্তুও নেই যা আমাদের হাতে নয়, এমন একজন ব্যক্তিও নেই যে আমাদের সেবা করছে না, এবং এমন একটি বিষয়ও নেই যা আমাদের সংসাধনের উদ্দেশ্যে নয়। আমি সমস্ত কিছু সাধন করব। আমার কাছে সময়ের কোনো ধারণা নেই, যদিও আমি ছয় সহস্র বছরের মধ্যে আমার পরিকল্পনা ও কার্যকে সম্পূর্ণ করতে মনস্থ করেছি, কিন্তু আমার কাছে সবকিছুই মুক্ত ও স্বাধীন। এমনকি, এটি যদি ছয় হাজার বছরের কম সময়ও হয়ে থাকে তাহলেও, আমার মতানুযায়ী যদি সঠিক সময় হয়েছে বলে মনে হয়, তাহলে এর বিরুদ্ধে একটাও কথা উচ্চারণের দুঃসাহস কে করবে? কে স্বেচ্ছায় উঠে দাঁড়িয়ে বিচারের সাহস দেখাবে? আমার কার্য আমি নিজেই সাধন করি; আমার সময় আমি নিজেই নির্ধারণ করি। কোনো ব্যক্তি, কোনো বস্তু, এবং কোনো বিষয়ই স্বেচ্ছায়কিছু করার সাহস করে না, আমি সকলকে আমার অনুসরণ করতে বাধ্য করব। আমার কাছে ঠিক-ভুল কিছু নেই; আমি যদি কোনো বিষয়কে সঠিক বলি, তবে তা অবশ্যই সঠিক; যদি আমি কোনো বিষয়কে ভুল বলি, তবে তা নিশ্চিতভাবেই ভুল। মনুষ্যোচিত ধ্যানধারণা নিয়ে সর্বদা আমায় পরিমাপ কোরো না! আমি বলি, আমি এবং প্রথমজাত পুত্ররা একইসঙ্গে আশীর্বাদধন্য – মেনে নিতে অস্বীকার করার সাহস কেই-বা দেখাবে? আমি সেই স্থলেই তোমাকে ধ্বংস করব! তুমি সমর্পণে অস্বীকার করো! তুমি বিদ্রোহী! মানবজাতির কারোর প্রতি আমার কোনো করুণা নেই, এবং আমার ঘৃণা ইতিমধ্যেই তার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে; এর চেয়ে আর বেশি সহনশীল আমি হতেই পারব না। আমার ক্ষমতে তো এই মহাবিশ্বকে অবিলম্বে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে – একমাত্র তখনই আমার মহান কার্য সম্পন্ন হবে; একমাত্র তখনই আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হবে; এবং একমাত্র তখনই আমার হৃদয় থেকে ঘৃণা বিদূরিত হবে। এখন আমি আমার প্রথমজাত পুত্রদের প্রত্যক্ষ করা নিয়েই একমাত্র উৎসাহী। অন্যান্য সকল বিষয়কে এখন আমি সরিয়ে রাখব; প্রথমে আমি গুরুত্বপূর্ণ কার্যগুলি সম্পন্ন করব, এবং তারপরেই গৌণ বিষয়গুলিতে হাত দেব। এগুলিই হল আমার কর্মের বিভিন্ন ধাপ, কোনো ব্যক্তিরই এগুলিকে লঙ্ঘন করা উচিত নয়; আমি যেভাবে বলি সেভাবেই সবার কার্যসাধন করা উচিত, যাতে তারা আমার অভিশাপের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত না হয়।
এখন আমার কর্ম যখন সমাধা হয়েছে, আমি এবার বিশ্রাম নিতে পারি। এখন থেকে, আমি আর কোনো কার্য করব না, বরং আমি যা করা হোক বলে চাই তা আমার প্রথমজাত পুত্রদের দিয়েই নিষ্পন্ন করাব, কারণ আমার প্রথমজাত পুত্ররাই স্বয়ং আমি; আমি প্রথমজাত পুত্ররাই আমার সত্তা। এর মধ্যে কণামাত্রও ভুল নেই; পূর্বধারণা দিয়ে কোনো বিচার কোরো না। প্রথমজাত পুত্রদের দর্শনের অর্থই হল আমায় দর্শন করা, কারণ আমরা এক ও অভিন্ন। যে আমাদের পৃথক করে সে এইভাবেই আমার প্রতিরোধ করে, এবং আমি তাদের ক্ষমা করব না। আমার বাক্যের মধ্যে এমন অনেক রহস্য রয়েছে যা মানুষের বোধমগ্য নয়। আমি যাদের ভালোবাসি একমাত্র তারাই আমাকে প্রকাশ করতে পারে, অন্যরা নয়; এটাই আমার দ্বারা নির্ধারিত, অন্য কেউ এর পরির্তন করতে পারে না। আমার বাক্যগুলি সমৃদ্ধ, সর্বাত্মক, এবং অতল। আমার বাক্যগুলিকে নিয়ে সকলের প্রভূত প্রয়াস করা উচিত, প্রায়ই সেগুলি নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রচেষ্টা করা উচিত, এবং একটি শব্দ বা বাক্যও বাদ দেওয়া উচিত নয় – অন্যথায়, মানুষে ভুল পথে শ্রম ব্যয় করবে, এবং আমার বাক্যগুলির ভুল ব্যাখ্যা হবে। আমি বলেছি, আমার স্বভাব কোনো অন্যায় সহ্য করে না, এর অর্থ আমার প্রত্যক্ষিত প্রথমজাত পুত্রদের বিরোধিতা করা যায় না। আমার প্রথমজাত পুত্ররা আমার স্বভাবের প্রতিটি দিকের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই যখন পবিত্র ভেরী বেজে উঠবে, অর্থাৎ, আমি যখন প্রথমজাত পুত্রদের চাক্ষুষ করতে শুরু করব, এবং এভাবেই, এই পবিত্র ভেরী অতঃপর সাধারণ মানুষের কাছে আমার স্বভাবর ক্রমিক-প্রচার হয়ে উঠবে। প্রকারান্তরে বললে, প্রথমজাত পুত্ররা যখন প্রকাশিত হবে, তখন আমার স্বভাবও প্রকাশিত হবে। কে এর মর্মোদ্ধার করতে পারে? এমনকি, যে রহস্যগুলির আমি উদ্ঘাটন করেছি, তার মধ্যেও এমন অনেক রহস্য থেকে গেছে মানুষ যার জট ছাড়াতে পারে না। তোমাদের মধ্যে কে এই বাক্যগুলির প্রকৃত অর্থ বোঝার জন্য যথার্থভাবে চেষ্টা করেছ? তোমরা যেমন কল্পনা করেছো, আমার স্বভাব কি একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মতো? এমন ভাবাই বিরাট ভুল! আজ, যে-ই আমার প্রথমজাত পুত্রদের প্রত্যক্ষ করে সে-ই আশীর্বাদের লক্ষ্যবস্তু, এবং তারা আমার স্বভাবকে প্রত্যক্ষ করে – এ কথা একদম সত্য। আমার প্রথমজাত পুত্ররা আমার সমগ্রিকতার প্রতিনিধিত্ব করে; তারা নিঃসন্দেহে আমার সত্তা। কারো মনে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়! অনুগতদের উপর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়, এবং বিদ্রোহীরা অভিশপ্ত হয়। এই হল আমার আদেশ, এবং কোনো ব্যক্তি এর পরিবর্তন ঘটাতে পারে না!