অধ্যায় ১১৪

আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলাম; আমি পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, ও সকল বস্তুসমূহ নির্মাণ করেছিলাম; বিশ্বজগৎ ও ধরিত্রীর প্রান্তসমূহকে আমি আকারদান করেছিলাম; আমার পুত্র ও লোকেদের আমি পথপ্রদর্শন করেছিলাম; সকল বস্তু ও পদার্থসমূহকে আমি নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এখন, আমার প্রথমজাত পুত্রদের আমি পথ দেখিয়ে সিয়োন পর্বতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো, স্বীয় বাসস্থানে প্রত্যাবর্তন করবো, এবং তা হবে আমার কার্যের অন্তিম পদক্ষেপ। আমার সকল কার্য (সৃষ্টির সময় থেকে আজ অবধি সম্পাদিত সকল কর্ম) ছিল আমার কার্যের বর্তমান পর্যায়ের স্বার্থে, এবং আরো বেশি করে, তা ছিল আগামীর নিয়ম, আগামীর রাজ্য, এবং আমার ও আমার প্রথমজাত পুত্রদের চিরকালীন উপভোগের খাতিরে। সমস্ত কিছু সৃজনের নেপথ্যে এটিই আমার লক্ষ্য, এবং আমার সৃষ্টির মাধ্যমে অবশেষে আমি তা অর্জন করবো। আমার কথন ও কার্যের একটি উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা রয়েছে; কোনোকিছুই এলোমেলোভাবে সম্পাদিত হয় না। যদিও আমি বলে থাকি যে আমার মধ্যে সবই স্বাধীনতা ও মুক্তি, তথাপি আমার সকল কার্যই নীতিনিষ্ঠ, আমার যাবতীয় কর্ম আমার প্রজ্ঞা ও স্বভাবের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ বিষয়ে তোমাদের কি কোনো অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে? সৃষ্টির কাল থেকে আজ অবধি, আমার প্রথমজাত পুত্রেরা ব্যতীত আর কেউই আমায় জানতে পারেনি, এবং কেউই আমার প্রকৃত মুখাবয়ব প্রত্যক্ষ করেনি। আমার প্রথমজাত পুত্রদের ক্ষেত্রে আমি ব্যত্যয় ঘটিয়েছি, কারণ তারা মূলত আমার সত্তারই এক অংশ।

আমার বিশ্বসৃজনকালে, স্বীয় প্রয়োজন অনুসারে মানুষদের আমি চারটি ভিন্ন মর্যাদাবিশিষ্ট শ্রেণীতে বিভক্ত করেছিলাম, যেগুলি হল: আমার পুত্রগণ, আমার লোকজন, সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা, এবং যাদের ধ্বংস করা হবে। আমার প্রথমজাত পুত্রেরা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয় কেন? এর কারণ, আমার প্রথমজাত পুত্রগণ সৃজিত সত্তা নয়; তারা আমার থেকে উদ্ভূত, এবং মানবজাতির অন্তর্গত নয়। দেহধারণের পূর্বে আমার প্রথমজাত পুত্রদের জন্য আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম; কোন পরিবারে তারা জন্ম নেবে এবং তাদের সেবার নিমিত্ত সেখানে কারা থাকবে—এই সমস্ত বিষয়ই আমার দ্বারা পরিকল্পিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে কে কোন সময় আমার দ্বারা পুনরর্জিত হবে তা-ও আমি পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। অন্তিমে, আমরা একত্রে সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করবো। সৃষ্টির পূর্বেই এই সমস্ত কিছুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেকারণেই কোনো মানুষ এর বিষয়ে অবহিত নয় এবং কোনো পুস্তকে তা লিপিবদ্ধ নেই, কারণ এগুলি সিয়োনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাপার। উপরন্তু, আমার দেহরূপ ধারণের সময় মানুষকে এই ক্ষমতা আমি প্রদান করিনি, সেকারণেই ওই বিষয়গুলি কেউই জানতো না। যখন সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তোমরা জানতে পারবে অতীতে তোমরা কেমন ছিলে, বর্তমানে তোমরা কীরকম, এবং এই জীবনে তোমরা কী করেছো। এই মুহূর্তে আমি এই বিষয়গুলি তোমাদের শুধু সহজবোধ্যভাবে ও অল্প-অল্প করে বলছি, অন্যথায়, আমি যত প্রচেষ্টাই প্রয়োগ করি না কেন, তোমরা উপলব্ধি করবে না, এবং আমার ব্যবস্থাপনাকে ব্যাহত করবে। বর্তমানে, আমার অধিকাংশ প্রথমজাত পুত্রদের থেকে আমি দৈহিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও, আমরা একাত্ম, এবং আমাদের কায়িক অবয়ব হয়তো ভিন্নতর, তাহলেও আমরা আদ্যন্তই একাত্ম। কিন্তু, শয়তানের বংশধরেরা যেন কোনোক্রমেই একে স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ হিসাবে গ্রহণ না করে। আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে যেভাবেই তুমি ছদ্মবেশ ধারণ করো না কেন, তা উপরিগতই থেকে যায়, এবং আমি এর অনুমোদন করবো না। সুতরাং, এর থেকে প্রতিপন্ন হয় যে, যারা উপরিগত বিষয়ে মনোনিবেশ করে এবং বাহ্যিকভাবে আমায় অনুকরণ করতে চায়, তারা যে শয়তান তা একশো শতাংশ নিশ্চিত। যেহেতু আত্মাগতভাবে তারা স্বতন্ত্র এবং তারা আমার প্রিয়জনও নয়, সেহেতু, যতোই তারা আমার অনুকরণ করুক, তারা মোটেই আমার অনুরূপ নয়। উপরন্তু, আমার প্রথমজাত পুত্রগণ মূলগতভাবে আমার সঙ্গে একাত্ম হওয়ায়, আমার অনুকরণ না করলেও, তারা আমার মতন করেই কথাবার্তা বলে ও কার্যাদি সম্পাদন করে, এবং তারা সকলেই সৎ, নিষ্পাপ, ও উদারচেতা (বস্তুজগতে তাদের সীমিত অভিজ্ঞতার দরুন ওই মানুষগুলির প্রজ্ঞার অভাব রয়েছে, এবং সেকারণেই প্রজ্ঞার ঘাটতি আমার প্রথমজাত পুত্রদের কোনো ত্রুটি নয়; তারা যখন আধ্যাত্মিক শরীরে প্রত্যাবর্তন করবে, তখন সমস্তকিছু সংশোধিত হয়ে যাবে)। সুতরাং উপরিবর্ণিত কারণেই, অধিকাংশ মানুষ এখনও তাদের পুরাতন প্রকৃতির পরিবর্তনসাধন করে না, সে আমি যেভাবেই তাদের মোকাবিলা করি না কেন। অথচ আমার মোকাবিলা ব্যতিরেকেই আমার প্রথমজাত পুত্রগণ আমার ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এর কারণ, আমরা একাত্ম। তাদের আত্মায় তারা আমার নিমিত্ত নিজেদের সম্পূর্ণরূপে ব্যয় করার এক ইচ্ছা অনুভব করে। সুতরাং আমার প্রথমজাত পুত্রেরা ব্যতীত, আর কেউই আমার ইচ্ছার প্রতি অকৃত্রিম ও আন্তরিকভাবে সহানুভূতিশীল নয়; শুধুমাত্র শয়তানের বিরুদ্ধে আমার বিজয়লাভের পরেই তারা আমার সেবা করতে ইচ্ছুক হবে।

আমার প্রজ্ঞা ও আমার প্রথমজাত পুত্রগণ সকলকিছুর ঊর্ধ্বে বিরাজমান এবং সমস্তকিছুর উপর আধিপত্য করে, এবং কোনো বস্তু, ব্যক্তি, বা পদার্থ তাদের পথে অন্তরায় সৃষ্টির স্পর্ধা দেখায় না। উপরন্তু, এমন কোনো মানুষ, পদার্থ, বা বস্তু নেই যা তাদের উপর আধিপত্য করতে পারে, পরিবর্তে সকলেই অনুগতভাবে আমার ছবির সম্মুখে সমর্পণ করে। এটি এমন এক বাস্তব ঘটনা যা প্রত্যেকের সমক্ষে সংঘটিত হয়, এবং এমন এক বাস্তব সত্য যা ইতিমধ্যেই আমি অর্জন করেছি। আনুগত্যহীনতায় যে অনড় থাকবে (যারা আনুগত্যহীন তারা এখনো শয়তানকে নির্দেশ করে, এবং যারা শয়তানের দ্বারা অধিকৃত নিঃসন্দেহে তারা শয়তান ভিন্ন আর কেউ নয়), নিশ্চিতরূপেই তাকে আমি সমূলে বিনাশ করবো, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়; আমার শাস্তির দরুন তৎক্ষণাৎ তাদের মৃত্যু ঘটবে। আমার নিমিত্ত সেবাপ্রদানে যারা অনিচ্ছুক, তারাই এই ধরনের শয়তান। সৃষ্টির পর থেকে এই লোকগুলি সর্বদাই অনমনীয়ভাবে আমার বিরোধিতায় অটল থেকেছে, এবং বর্তমানে আমায় অমান্য করার ব্যাপারে তারা কৃতসংকল্প। (মানুষ তা প্রত্যক্ষ করতে অক্ষম, কারণ এটি নিতান্তই এক আত্মা-সম্পর্কিত বিষয়। এই ধরনের মানুষ এই প্রকারের শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করে।) বাকি সমস্তকিছু প্রস্তুত হওয়ার পূর্বে সর্বপ্রথম এদের আমি ধ্বংস করবো, চিরকালব্যাপী যাতে তারা কঠোর শাস্তির অনুশাসন প্রাপ্ত হয় তা-র ব্যবস্থা করবো। (এখানে “ধ্বংস করা” বলতে “তাদের অস্তিত্বের বিলোপ ঘটানো” বোঝায় না, বরং তারা যে মাত্রায় নির্মমতার শিকার হবে সেটাকেই নির্দেশ করে। এখানে “ধ্বংস” পদটি যাদের বিনাশ করা হবে তাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত “ধ্বংস” শব্দটির থেকে স্বতন্ত্র।) অনন্তকাল ধরে তারা অবিরাম অশ্রুপাত করবে ও দাঁতে দাঁত ঘষবে। মনে-মনে এই দৃশ্যটির ধারণা করতে মানুষের কল্পনাশক্তি পূর্ণতই অক্ষম। মানবজাতির নশ্বর চিন্তাভাবনার সাহায্যে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলির ধারণা করতে তারা অক্ষম, এবং সেকারণেই আরো অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলি একমাত্র সিয়োনে প্রত্যাবর্তনের পরেই তোমরা উপলব্ধি করবে।

আমার ভবিষ্যতের গৃহে আমার প্রথমজাত পুত্রগণ ও আমি ব্যতীত আর কেউ থাকবে না, এবং কেবল তখনই আমি আমার লক্ষ্যে উপনীত হবো এবং আমার পরিকল্পনা সর্বাঙ্গীণ চরিতার্থতা লাভ করবে, কারণ সকলকেই তাদের আদি অবস্থায় ফেরত পাঠানো হবে এবং প্রত্যেককেই তার প্রকারভেদ অনুযায়ী শ্রেণীবিভক্ত করা হবে। আমার প্রথমজাত পুত্রেরা আমার শ্রেণীভুক্ত হবে, আমার পুত্রগণ ও লোকজনেরা সৃজিত সত্তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে, এবং সেবা-প্রদানকারীরগণ ও বিনাশ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরা শয়তানের অধিকারভুক্ত হবে। নিখিলবিশ্বকে বিচার করার পর, আমি ও আমার প্রথমজাত পুত্রেরা আরেকবার আধ্যাত্মিক জীবনের সূচনা করবো, এবং তারা কখনো আমায় ত্যাগ করে যাবে না, সততই আমার সঙ্গে থাকবে। মানব-মনের প্রণিধানযোগ্য যাবতীয় রহস্যসমূহ তোমাদের কাছে একটু-একটু করে প্রকাশিত করা হবে। সমগ্র ইতিহাস জুড়ে, অসংখ্য মানুষ আমার কারণে শহীদ হয়েছে, নিজেদেরকে তারা আমার কাছে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছে, কিন্তু যতোই হোক, মানুষ সৃজিত জীব, এবং তারা যত সদাশয়ই হোক না কেন, তাদেরকে ঈশ্বরের শ্রেণীভুক্ত করা যায় না; এ হল ঘটনাসমূহের এক অনিবার্য গতিপথ, এবং কেউই এর পরিবর্তনসাধনে সক্ষম নয়। এতদসত্ত্বেও, সমস্তকিছুকে যিনি সৃষ্টি করেন তিনি ঈশ্বর, সেখানে মানুষ সৃজিত প্রাণী মাত্র, এবং শয়তান, সর্বোপরি, আমার বিনাশের লক্ষ্যবস্তু এবং আমার ঘৃণিত শত্রু—এ-ই হল “পাহাড়পর্বত ও নদনদীর স্থানান্তর ও রূপান্তর ঘটতে পারে, কিন্তু কারো স্বভাবের পরিবর্তন ঘটবে না” বাক্যটির যথার্থতম অর্থ। বর্তমানে এই অবস্থায় ও এই পর্যায়ে অবস্থান করাটাই হল একটি সংকেত যে আমি ও আমার প্রথমজাত পুত্রগণ বিশ্রামে প্রবেশ করবো। এর কারণ, ধরাধামে আমার কার্য আনুপুঙ্খিকরূপে সম্পূর্ণ, এবং আমার কার্যের পরবর্তী পর্যায়টি সম্পন্ন করার প্রয়োজনে আমায় আধ্যাত্মিক শরীরে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এগুলি আমার কার্যের সেই ধাপসমূহ, যা বহুপূর্বেই আমি পরিকল্পনা করেছিলাম। এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে অনুধাবন করা আবশ্যক, নচেৎ অধিকাংশ মানুষ আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহ লঙ্ঘন করবে।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ১১৩

পরবর্তী: অধ্যায় ১১৬

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।👇

সম্পর্কিত তথ্য

প্রার্থনার অনুশীলন বিষয়ে

তোমরা তোমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রার্থনার উপর জোর দাও না। মানুষ প্রার্থনার বিষয়টিকে অবহেলা করে। প্রার্থনা সাধারণত করা হয়ে থাকে দায়সারাভাবে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন