অধ্যায় ১০৫
আমার বাক্যসমূহের পশ্চাতে নিহিত নীতির এবং আমার কার্যসাধনের পদ্ধতির কারণে, মানুষ আমায় অস্বীকার করে; আমার এতো দীর্ঘকালব্যাপী কথনের এ-ই হল উদ্দেশ্য (এটি অতিকায় লাল ড্রাগনের সকল বংশধরদের প্রতি উদ্দিষ্ট)। এ-ই হল আমার কার্যসাধনের বিচক্ষণ পদ্ধতি; এ হল অতিকায় লাল ড্রাগনের সম্বন্ধে আমার বিচার। এ আমার রণকৌশল, এবং কোনো মানুষই তা সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়। প্রতিটি বাঁকে—অর্থাৎ, আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনার প্রত্যেক ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে—কিছু মানুষ অবশ্যই বহিষ্কৃত হবে; আমার কার্যপরম্পরা অনুসারে তারা বহিষ্কৃত হয়। এটিই, এবং একমাত্র এটিই, হল আমার সমগ্র পরিচালনামূলক পরিকল্পনার কার্যপন্থা। যে মানুষগুলিকে আমি বহিষ্কৃত করতে চাই, তাদের একে-একে ছুঁড়ে ফেলার পর, আমি স্বীয় কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপের সূচনা করি। অবশ্য, এ হল অন্তিম বহিষ্করণ (এবং তা চীনদেশের গির্জার অভ্যন্তরকে বোঝাচ্ছে), এবং এই সময়েই, এই ক্রান্তিকালীন পর্যায়েই, জগতের সৃষ্টির পর থেকে সর্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যক মানুষ বহিষ্কৃত হবে। ইতিহাসব্যাপী, যতবার মানুষকে বহিষ্কার করা হয়েছে, ততবারই পরবর্তী কার্যে সেবা প্রদানের নিমিত্ত তাদের একটি অংশ রয়ে গিয়েছে। কিন্তু, বর্তমান সময়টি পূর্ববর্তী সময়গুলির অনুরূপ নয়; চলতি সময়টি পরিচ্ছন্ন ও কার্যকর। সকল সময়কালের মধ্যে এটিই সবচেয়ে সঙ্কটপূর্ণ ও সর্বাধিক সমন্বিত। যদিও অধিকাংশ মানুষ, আমার বাক্যসমূহ পাঠের পর, বলপূর্বক তাদের মন থেকে সংশয়কে বিদূরিত করার চেষ্টা করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তা জয় করতে সক্ষম হয় না, এবং অন্তিমে, তাদের সংগ্রামে তারা ব্যর্থ হয়। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী তারা নয়, কারণ যাদের আমি পূর্বনির্দিষ্ট করেছি তারা রেহাই পেতে পারে না, এবং যাদের আমি পূর্বনির্দিষ্ট করিনি তাদের শুধুই অবজ্ঞা করতে পারি। যে মানুষদের আমি অনুকূল দৃষ্টিতে দেখি, একমাত্র তাদেরই আমি ভালোবাসি; নচেৎ, কোনো ব্যক্তিই যদৃচ্ছভাবে আমার রাজ্য ত্যাগ করতে বা সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। এই হল আমার লৌহদণ্ড, এবং একমাত্র এ-ই হল আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহ নিষ্পাদনের বলিষ্ঠ সাক্ষ্য ও সম্পূর্ণ উদ্ভাস। নিশ্চিতরূপেই বিষয়টি নিছকই উদ্দীপ্ত হওয়া নয়। শয়তানকে কেন আমি পতনের বিপক্ষে শক্তিহীন বলেছি? শুরুতে তার শক্তি ছিল, কিন্তু সে আমার করায়ত্ত; আমি যদি তাকে শুয়ে পড়তে বলি, তবে তাকে শয়ন করতেই হবে, এবং আমি যদি তাকে আমার নিমিত্ত সেবাপ্রদানের উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়াতে বলি, তবে সে উঠে দাঁড়িয়ে আমার নিমিত্ত সেবাদান করতে বাধ্য, এবং তাকে তা ভালোভাবেই করতে হবে। এমন নয় যে শয়তান তা করতে ইচ্ছুক; ব্যাপারটি হল আমার লৌহদণ্ড শয়তানকে শাসন করে, এবং শুধুমাত্র এভাবেই সে কায়মনোবাক্যে প্রতীত হয়। আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহ তাকে নিয়ন্ত্রিত করে, এবং আমার নিজস্ব শক্তি রয়েছে, ফলে শয়তান সম্পূর্ণরূপে প্রতীত না হয়ে পারে না; আমার পাদপীঠের তলায়, লেশমাত্র প্রতিরোধ ব্যতিরেকে, তাকে পদদলিত হতেই হবে। অতীতে, আমার পুত্রদের সেবা প্রদানকালে, শয়তান চূড়ান্ত রকমের উদ্ধত ছিল, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের নিপীড়ন করতো, এর মাধ্যমে আমায় লজ্জিত করার আশা পোষণ করতো, এবং দাবি করতো যে আমি নাকি অক্ষম। কতখানি অন্ধ! পদদলিত করে আমি তোমায় হত্যা করবো! এগিয়ে এসো; আরেকবার বর্বরতা করার স্পর্ধা দেখাও! পুনর্বার আমার পুত্রদের প্রতি শীতল ও নিঃস্পৃহ আচরণ করার দুঃসাহস করো! মানুষ যত বেশি সৎ হয়, এবং যত বেশি করে তারা আমার বাক্য শ্রবণ করে ও আমার প্রতি সমর্পিত হয়, তত বেশি তুমি তাদের উৎপীড়ন ও বিচ্ছিন্ন করো (আমি এখানে তোমার উপদল গঠনের উদ্দেশ্যে দুষ্কর্মের দোসরদের সমবেত করার প্রতি ইঙ্গিত করছি)। বর্তমানে তোমার বর্বরতার কাল শেষ হয়েছে, এবং একটু একটু করে আমি তোমার সাথে হিসাবনিকাশের মীমাংসা করছি; তোমার কৃতকর্মের প্রতিটি কণার পাওনাগণ্ডা না মিটিয়ে আমি তোমায় রেহাই দেবো না। ওহে শয়তান, ক্ষমতার রাশ এখন আর তোমার হাতে নেই; বরং, সে ক্ষমতা আমি প্রত্যাহরণ করেছি, এবং তোমার মোকাবিলার নিমিত্ত আমার পুত্রদের আহ্বান করার কাল সমাগত হয়েছে। তোমায় অনুগত হতেই হবে, এবং বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ করা চলবে না। অতীতে আমার সম্মুখে তুমি যতই সুশীল আচরণ করো না কেন, আজ তা তোমায় কোনো সহায়তা করবে না। তুমি যদি আমার ভালোবাসার পাত্রদের একজন না হও, তাহলে তোমায় আমি চাই না। মাত্রাতিরিক্ত কিছু গ্রহণযোগ্য নয়; অবশ্যই তা আমার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত সংখ্যা হতে হবে, এবং তা-র চেয়ে কম হলে তো আরোই খারাপ। হে শয়তান—বিঘ্ন সৃষ্টি কোরো না! এমন কি হতে পারে যে স্বীয় অন্তরে আমি কাকে ভালোবাসি ও কাকে ঘৃণা করি তা আমার কাছেই সুস্পষ্ট নয়? আমার কি তোমাকে তা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে? শয়তান কি আমার পুত্রদের জন্ম দিতে পারতো? সবকিছুই অযৌক্তিক! সমস্তকিছুই জঘন্য! সকলকিছুকে আমি আনুপুঙ্খিকভাবে ও সম্পূর্ণরূপে বাতিল করবো। একজনও ইপ্সিত নয়; সকলকেই বহিষ্কৃত হতে হবে! ছয় সহস্র বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সমাপ্তিতে এসে পৌঁছেছে, আমার কার্য নিষ্পন্ন হয়েছে, এবং এই পশু ও বর্বরদের দলকে অবশ্যই আমি অপসারিত করবো!
যারা আমার বাক্যসমূহে বিশ্বাস রাখে ও সেগুলি পালন করে, তারা অবশ্যই আমার প্রিয়পাত্র হবে; তাদের একজনকেও আমি পরিত্যাগ করবো না, এবং একজনকেও আমি যেতে দেবো না। সেকারণেই, যারা প্রথমজাত পুত্র তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যেহেতু তা আমার দ্বারা অর্পিত, সেহেতু কেউ তা কেড়ে নিতে পারে না, এবং যারা আমার আশীর্বাদধন্য তাদের আমি তা অর্পণ করতে দায়বদ্ধ। (জগতসৃষ্টির পূর্বে) যাদের আমি অনুমোদন করেছিলাম, (আজ) তাদের আমি আশীর্বাদ করি। এ-ই হল আমার কার্যসাধনের পদ্ধতি, এবং এটি আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহের প্রতিটি ধারার নেপথ্যে নিহিত মূল নীতিও বটে, এবং কেউই এর পরিবর্তন ঘটাতে পারে না; অতিরিক্ত একটি শব্দ বা বাক্যও যোগ করা যাবে না, এবং একটি মাত্র শব্দ বা বাক্যও বাদ দেওয়া যাবে না। অতীতে আমি প্রায়শই বলেছিলাম যে আমার ছবি তোমাদের সমক্ষে আবির্ভূত হয়। তাহলে, আমার “ছবি” কী, এবং কীভাবেই বা তা আবির্ভূত হয়? তা কি শুধুই আমার সত্তাকে নির্দেশ করে? তা কি কেবল আমার কথিত প্রতিটি বাক্যকেই সূচিত করে? অপরিহার্য হলেও, এই দিকদুটি শুধুমাত্র এক ক্ষুদ্র অংশ গঠন করে; অর্থাৎ, এগুলির মধ্যে আমার ছবির এক সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা আধৃত নেই। আমার ছবির অন্তর্ভুক্ত আমার দেহরূপী সত্তা, আমার বাক্যাবলী, এবং সেই সাথে আমার কার্যাদি, কিন্তু সবথেকে যথাযথ ব্যাখ্যা হল, আমার প্রথমজাত পুত্রেরা ও আমিই হলাম আমার ছবি। অর্থাৎ, আমার ছবি হল যৌথ খ্রীষ্টান মানবদের এক গোষ্ঠী, যারা রাজত্ব করে ও ক্ষমতা ধারণ করে। সেহেতু, প্রথমজাত পুত্রদের প্রত্যেকেই অপরিহার্য এবং আমার ছবির এক অংশ, এবং সেকারণেই আমি জোর দিয়ে বলি যে, মানুষের সংখ্যা অত্যধিকও হতে পারে না (তাতে আমার নামকে তারা অবমানিত করবে), এবং, আরো গুরুত্ব সহকারে, অত্যল্পও হতে পারে না (তাতে আমায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিভাত করতে তারা অসমর্থ হবে)। উপরন্তু, আমি বারংবার জোর দিয়ে বলি যে প্রথমজাত পুত্রেরা আমার প্রিয়তম, তারা আমার সম্পদ, এবং আমার ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার স্ফটিক-রূপ; একমাত্র তারাই আমার নিখুঁত ও সম্পূর্ণ প্রতিভাস মূর্ত করে তুলতে পারে। স্বয়ং আমি আমার ছবির কেবল এক পূর্ণ প্রকাশ হতে পারি; একমাত্র প্রথমজাত পুত্রদের সঙ্গে সম্মিলিত অবস্থাতেই স্বয়ং আমাকে এক নিখুঁত ও সর্বাঙ্গীণ প্রতিভাস বলা যেতে পারে। সেকারণেই, কোনো বিষয়কেই উপেক্ষা না করে, আমার প্রথমজাত পুত্রদের উপর আমি কঠোর দাবিসমূহ ন্যস্ত করি, এবং আমার প্রথমজাত পুত্রগণ ব্যতীত বাকি সকলকে বারংবার আমি কর্তনপূর্বক হত্যা করি; এ-ই হল আমার সকল বাক্যের মূল ভিত্তি, এবং আমার সকল উক্তির অন্তিম লক্ষ্য। উপরন্তু, বারংবার আমি গুরুত্বসহকারে বলি যে তাদেরকে অবশ্যই আমার দ্বারা অনুমোদিত মানুষ হতে হবে, আমি স্বয়ং যাদের বিশ্বসৃষ্টির পর থেকে মনোনীত করেছি। তাহলে, “আবির্ভূত হওয়া” শব্দবন্ধটি কীভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? তা কি কোনো ব্যক্তির আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশকালটির সঙ্গে সম্পর্কিত? অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস, এটি হল সেই ক্ষণ যখন আমার দেহরূপী সত্তা অভিষিক্ত হয়েছিল, বা যে মুহূর্তে তারা আমার দেহরূপী সত্তাকে প্রত্যক্ষ করেছিল, কিন্তু এই সবই ভ্রান্ত ধারণা; বাস্তব সত্যের এমনকি ধারেকাছেও আসে না। আদি অর্থ অনুযায়ী, “আবির্ভূত হওয়া” বিষয়টি উপলব্ধি করা মোটেই কঠিন কিছু নয়, কিন্তু আমার অভিপ্রায় অনুযায়ী তা উপলব্ধি করা অনেক বেশি দুরূহ। বিষয়টি এইভাবে বলা যায়: মানবজাতি সৃষ্টিকালে, আমি আমার প্রেমাস্পদ এই মানবগোষ্ঠীর মধ্যে স্বীয় গুণাবলী আরোপ করছিলাম, এবং এই মানবগোষ্ঠী ছিল আমার ছবি। অন্যভাবে বলা যায়, আমার ছবি তৎকালে ইতিপূর্বেই আবির্ভূত হয়েছিল। এমন নয় যে এই নাম গৃহীত হওয়ার পর আমার ছবি আবির্ভূত হয়েছিল; বরং, আমি এই মানবগোষ্ঠীকে পূর্বনির্ধারিত করার পরেই তা-র অভ্যাগম ঘটেছিল, কারণ তারা ছিল আমার গুণাবলীর ধারক (তাদের প্রকৃতির পরিবর্তন হয় না, এবং আজও তারা আমার সত্তার এক অংশ)। সুতরাং, জগতসৃষ্টির পর থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত, আমার ছবি সততই আবির্ভূত হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ এই পূর্বধারণায় বিশ্বাস পোষণ করে যে আমার দেহরূপী সত্তাই হল আমার ছবি, কিন্তু বিষয়টি মোটেই সেরকম নয়; এই ধারণাটি কেবল তাদের চিন্তাভাবনা ও পূর্বধারণা থেকেই উদ্ভূত হয়। আমার দেহরূপী সত্তা এককভাবে যদি আমার ছবি হতো, তাহলে শয়তানকে লজ্জিত করার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট হতো না। আমার নামকে তা মহিমান্বিত করতে পারতো না, এবং বস্তুতই এর একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকতো, এবং এইভাবে আমার নামকে তা কলঙ্কিত করতো, এবং যুগান্তব্যাপী তা শয়তান কর্তৃক আমার নামে কলঙ্কলেপনের এক নিদর্শনে পরিণত হতো। আমি স্বয়ং প্রাজ্ঞ ঈশ্বর, এবং আমি কখনোই এধরনের কোনো নির্বোধসুলভ কাজ করবো না।
আমার কার্য অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে, এবং উপরন্তু, আমাকে অবশ্যই পদ্ধতিসমূহ অনুযায়ী বাক্যোচ্চারণ করতে হবে; আমার সকল বাক্যাবলী ও উচ্চারণসমূহ আমার আত্মার সাথে সম্মিলিতভাবে উক্ত হয়, এবং আমি বক্তব্য রাখি আমার আত্মার যাবতীয় কার্যকলাপ অনুসারে। সুতরাং, আমার বাক্যাবলীর মাধ্যমে সকলের আমার আত্মাকে অনুভব করা উচিত, আমার আত্মা কী করছে তা লক্ষ্য করা উচিত; আমি সঠিক কী করতে চাই তা তাদের প্রণিধান করা উচিত, আমার বাক্যসমূহের উপর ভিত্তি করে আমার কার্যসাধনের পদ্ধতিটি তাদের অবলোকন করা উচিত, এবং আমার সমগ্র পরিচালনামূলক পরিকল্পনার নীতিগুলি কী, তা তাদের দেখা করা উচিত। ব্রহ্মাণ্ডের সামগ্রিক চিত্রটি আমি লক্ষ্য করি: প্রত্যেক মানুষ, প্রতিটি ঘটনা, এবং প্রতিটি স্থান আমার আজ্ঞার অধীন। আমার পরিকল্পনাকে লঙ্ঘন করার স্পর্ধা রাখে এমন কেউ নেই; আমার নির্দেশিত ধারাক্রম অনুসারে সকলেই ধাপে-ধাপে অগ্রসর হয়। এ-ই হল আমার ক্ষমতা; আমার সমগ্র পরিকল্পনা পরিচালিত করার প্রজ্ঞা এখানেই নিহিত। কেউই সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে বা সুস্পষ্টভাবে বলতে সক্ষম নয়; সমস্তকিছু ব্যক্তিগতভাবে আমার দ্বারা সম্পাদিত হয়, এবং এককভাবে আমার দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।