অধ্যায় ১০২

কিছু মাত্রা পর্যন্ত আমি বাক্যোচ্চারণ করেছি এবং আমার কার্য এক নির্দিষ্ট পর্যায়ে উপনীত হয়েছে; এতোদিনে তোমাদের সকলেরই আমার ইচ্ছাকে উপলব্ধি করা, এবং, কম-বেশি, আমার দায়ভারের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন হতে সক্ষম হওয়া উচিত। অধুনা সেই সন্ধিক্ষণ উপনীত যখন দেহের আধ্যাত্মিক জগতে উত্তরণ ঘটবে—তোমরাই সেই অগ্রদূত যারা যুগ থেকে যুগান্তরে উত্তীর্ণ হয়, সেই বিশ্বজনীন মানুষ যারা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড ও পৃথিবীর প্রান্তসমূহ অতিক্রম করে যায়। তোমরা আমার প্রিয়তম; তোমাদেরই আমি ভালোবাসি। বলা যেতে পারে, তোমাদের ছাড়া আর কাউকেই আমি ভালোবাসি না, কারণ আমার সকল শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টা তোমাদেরই খাতিরে। এমন কি হতে পারে যে তোমরা তা জানো না? বস্তুসমুদয় আমি কেন সৃষ্টি করবো? তোমাদের প্রয়োজন মেটাতে কেন-ই বা আমি তা সর্বস্থানে সঞ্চালিত করবো? এই সমস্ত ক্রিয়াকর্মই ছিল তোমাদের প্রতি আমার ভালোবাসার অভিব্যক্তি। পর্বতসমূহ ও পর্বতোপরি সকল বস্তু, এবং পৃথিবী ও পৃথিবীবক্ষের সকল বস্তু তোমাদের অর্জন করার হেতু আমার বন্দনা করে ও আমায় মহিমান্বিত করে। বস্তুতই, সকলকিছুই সম্পন্ন করা হয়েছে; উপরন্তু, সমস্তকিছুই আনুপুঙ্খিকভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। তোমরা আমার জোরালো সাক্ষ্য বহন করেছো, এবং আমার প্রতিভূ হিসাবে তোমরা শয়তান ও অশুভ আত্মাদের অপদস্থ করেছো। আমার বহিঃস্থ সকল মানুষ, বিষয় ও বস্তুসমূহ আমার কর্তৃত্বের কাছে সমর্পণ করে, এবং আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে, সকলেই তাদের নিজ নিজ গোষ্ঠীর অনুসরণ করে (আমার লোকজনেরা আমার স্বত্বাধীন থাকে, এবং শয়তানের গোষ্ঠীর সকলে অগ্নিময় হ্রদের অধিকারভুক্ত হয়—তারা অতল গহ্বরে পতিত হয়, যেখানে অনাদি কালব্যাপী তারা আর্তনাদ করবে এবং চিরতরে অবলুপ্ত হবে)। আমি যখন “অবলুপ্তি” এবং “সেই মুহূর্ত থেকে, তাদের মানস, আত্মা, ও শরীরকে গ্রহণ করা”-র বিষয়ে বক্তব্য রাখি, তখন আমি শয়তানের নিকট তাদের হস্তান্তর এবং পদদলনের অনুমোদনের প্রতি নির্দেশ করছি। অন্যভাবে বলা যায়, যারা আমার গৃহের অন্তর্ভুক্ত নয়, তারা সকলেই ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হবে, এবং তাদের অস্তিত্ব লোপ পাবে। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ যেমন কল্পনা করে সেই রকম, তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এমনও বলা যায় যে, আমার মতে, আমার বহিঃস্থ সমস্তকিছুই অস্তিত্বহীন, এবং এই-ই হল নরকবাসের প্রকৃত অর্থ। মানুষের দৃষ্টিতে, এই বস্তুগুলি এখনও অস্তিমান বলে প্রতিভাত হয়, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে, এগুলি অনস্তিত্বে পর্যবসিত হয়েছে এবং চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। (আমি গুরুত্বসহকারে বলছি, যাদের উপর আমি আর কার্যসাধন করি না, তারাই আমার বহিঃস্থ।) যেভাবেই তারা চিন্তা করুক না কেন, মানুষ তা বুঝে উঠতে পারে না, এবং যত উত্তমরূপেই দেখুক না কেন, তারা এর মর্মভেদ করতে পারে না। আমি তাদের আলোকিত ও প্রদীপ্ত না করলে, স্পষ্টরূপে অঙ্গুলিনির্দেশ করে দেখিয়ে না দিলে, মানুষ পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। উপরন্তু, এ বিষয়ে তারা সকলেই ক্রমাগত আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, আরো বেশি করে রিক্ত বোধ করে, এবং উত্তরোত্তর অনুভব করে যে অনুসরণযোগ্য কোনো পথ নেই—তারা প্রায় মৃত মানুষেরই অনুরূপ। এই মুহূর্তে, অধিকাংশ মানুষ (অর্থাৎ, প্রথমজাত পুত্রেরা ব্যতিরেকে সকলেই) এই অবস্থায় রয়েছে। এই বিষয়গুলির প্রতি এতো সুস্পষ্টভাবে আমি অঙ্গুলিনির্দেশ করেছি, তবুও এই মানুষগুলির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এবং এখনো তারা তাদের দৈহিক উপভোগসমূহের প্রতিই যত্নশীল। তারা খাদ্যগ্রহণ করে, তারপর নিদ্রা যায়; তারা নিদ্রা যায়, তারপর খাদ্যগ্রহণ করে। আমার বাক্যগুলির সম্পর্কে তারা চিন্তাভাবনা করে না। এমনকি তাদের যদি সক্রিয়ও করে তোলা হয়, তবু তা-ও কেবল কিছুক্ষণের জন্যই; পরবর্তীকালে, তারা তবুও পূর্বাবস্থাতেই থেকে যায়, সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রূপে, যেন-বা আমার বাক্য তারা আদৌ শ্রবণই করেনি। এরাই হল গড়পড়তা দায়ভারহীন অকেজো মানুষের নমুনা; এরাই সুবিধাভোগীদের সবচেয়ে প্রত্যক্ষগোচর দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে, এদের আমি একে একে বর্জন করবো; চিন্তিত হোয়ো না! একাদিক্রমে, আমি এদের অতল গহ্বরে প্রত্যাবৃত্ত করবো। এজাতীয় মানুষগুলির উপর পবিত্র আত্মা কখনো কার্য সম্পাদন করেননি, এবং তারা যাকিছু করে তা তাদের প্রাপ্ত বরগুলি থেকে উদ্ভূত হয়। আমি যখন বরদানের উল্লেখ করি, তখন আমি বোঝাতে চাই যে আমায় সেবা-প্রদানকারী এই মানুষগুলি জীবনরহিত; এদের কাউকেই আমি চাই না, এবং আমি এদের বহিষ্কার করবো (কিন্তু এই মুহূর্তে, এখনো তারা সামান্য হলেও ব্যবহার্য)। তোমরা, যারা সেবা-প্রদানকারী, তারা শোনো! ভেবো না যে তোমাকে আমার ব্যবহার করার অর্থ আমি তোমার প্রতি অনুকূল; বিষয়টি এতো সরল নয়। তুমি যদি আমার আনুকূল্য লাভ করতে চাও, তাহলে তোমায় অবশ্যই এমন একজন হয়ে উঠতে হবে যাকে আমি অনুমোদন করি এবং ব্যক্তিগতভাবে নিখুঁত করে তুলি। এই ধরনের মানুষদেরই আমি ভালোবাসি। এমনকি মানুষ যদি বলেও যে আমি কোনো ভুল করেছি, তাহলেও আমি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবো না। তোমরা কি সে বিষয়ে অবগত? যারা সেবা প্রদান করে, তারা নিতান্তই গবাদি পশু ও অশ্ব মাত্র; তারা কীভাবে আমার প্রথমজাত পুত্র হতে পারে? তা কি অর্থহীন হবে না? তা কি প্রকৃতির বিধানসমূহের এক লঙ্ঘন হবে না? যারাই আমার জীবন ও আমার ক্ষমতার অধিকারী, তারাই আমার প্রথমজাত পুত্র। এ হল এক যুক্তিযুক্ত বিষয়; কেউই তা খণ্ডন করতে পারে না। এরকমটা হতেই হবে; অন্যথায় এই ভূমিকা নেওয়ার মতো, এবং এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মতো কেউই থাকবে না। এটি আবেগচালিত হয়ে কাজ করার মতো কোনো বিষয় নয়, কারণ আমি স্বয়ং ধার্মিক ঈশ্বর; আমি স্বয়ং পবিত্র ঈশ্বর। আমি মহিমান্বিত, অপ্রতিরোধ্য ঈশ্বর স্বয়ং!

মানুষের পক্ষে যাকিছু অসম্ভব, আমার কাছে তা মসৃণভাবে ও স্বচ্ছন্দে অগ্রসর হয়। কেউই তার গতিরোধ করতে পারে না, এবং কেউই তার পরিবর্তনসাধনে সক্ষম নয়। এই বিশ্ব, তার তাবৎ বিশালত্ব সমেত, সম্পূর্ণরূপে আমার করায়ত্ত, নগণ্য দুরাত্মা শয়তানের উল্লেখ না-ই বা করলাম। আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনা ও আমার প্রথমজাত পুত্রদের কারণে না হলে, বহুপূর্বেই আমি এই পুরাতন বালাইকে, এবং সেই সঙ্গে মৃত্যু-গন্ধে আদ্যন্ত পরিব্যাপ্ত এই উচ্ছৃঙ্খল যুগকে ধ্বংস করে ফেলতাম। কিন্তু, আমি উপযুক্ততা অনুসারে কার্যসাধন করি, এবং লঘুভাবে বাক্যোচ্চারণ করি না। একবার আমি কিছু বললে, তা সম্পন্ন হবেই; এমনকি তা যদি না-ও হতো, তাহলেও সততই আমার প্রজ্ঞার বিষয়টি রয়েছে, যা আমার নিমিত্ত সমস্তকিছু সম্পন্ন করবে এবং আমার কার্যাদির পথ উন্মুক্ত করে দেবে। এর কারণ আমার বাক্যসমূহই আমার প্রজ্ঞা; আমার বাক্যাবলীই হল যাবতীয় কিছু। মানুষ সেগুলিকে উপলব্ধি করতে মৌলিকভাবে ব্যর্থ হয়, এবং সেগুলির অর্থ অনুধাবন করতে পারে না। প্রায়শই আমি “অগ্নিময় হ্রদ”-এর উল্লেখ করি। এর অর্থ কী? জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদের থেকে কীভাবে তা স্বতন্ত্র? জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ শয়তানের প্রভাবকে নির্দেশ করে, সেখানে অগ্নিময় হ্রদ নির্দেশ করে শয়তানের আধিপত্যের অধীন সমগ্র জগতকে। বিশ্বের সকলেই অগ্নিময় হ্রদে আহুতিসাপেক্ষ (অর্থাৎ, উত্তরোত্তর তারা অধিকতর কলুষিত হয়ে পড়ে, এবং তাদের ভ্রষ্ট আচরণ একবার এক নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছে গেলে, একাদিক্রমে তারা আমার দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, যা শুধু একটিমাত্র বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমেই আমি অনায়াসে সম্পন্ন করতে পারি)। আমার ক্রোধ যত তীব্রতর, অগ্নিময় হ্রদ জুড়ে বহ্নিশিখা তত বেশি লেলিহান হয়ে ওঠে। তা মানুষের উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমান দুষ্টতাকে নির্দেশ করে। আমার ক্রোধ যেক্ষণে ফেটে পড়বে ঠিক সেই ক্ষণেই অগ্নিময় হ্রদও বিস্ফোরিত হবে; অর্থাৎ, সেই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই দিন, ধরাধামে আমার রাজ্য সর্বাঙ্গীনভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং এক নবজীবনের সূত্রপাত হবে। এটি এমন এক বিষয় যা শীঘ্রই নিষ্পন্ন হবে। আমার বলামাত্র, সমস্তকিছু সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিগোচর হয়ে উঠবে। এ হল বিষয়টি সম্পর্কে মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে, বিষয়াদি অগ্রিম ইতিপূর্বেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, কারণ আমার কাছে সকলকিছুই অনায়াসসাধ্য। আমি বাক্যোচ্চারণ করি, এবং তৎক্ষণাৎ তা নিষ্পন্ন হয়; আমি বাক্যোচ্চারণ করি, এবং অবিলম্বে তা প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রত্যহ, তোমরা আমার বাক্যসমূহ ভোজন করো, আমার মন্দিরের অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার উপভোগ করো, আমার জীবন-তরঙ্গিনীর বারিধারা পান করো, এবং আমার জীবন-বৃক্ষের ফল আহরণ করো। আমার মন্দিরের অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার তাহলে কী? আমার জীবন-তরঙ্গিনীর বারিধারা কী? জীবন-বৃক্ষ কী? জীবন-বৃক্ষের ফল-ই বা কী? এই শব্দবন্ধগুলি প্রচলিত হতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এগুলি সমস্ত মানুষের কাছে দুর্বোধ্য, তারা সকলেই বিভ্রান্ত। দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তারা শব্দগুলি উচ্চারণ করে, অপরিণামদর্শীর মতো সেগুলির ব্যবহার করে, এবং যথেচ্ছভাবে সেগুলিকে প্রয়োগ করে। মন্দিরের অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার আমার উচ্চারিত বাক্যাবলীকে নির্দেশ করে না, কিংবা তোমাদের উপর অর্পিত অনুগ্রহরাজিকেও নির্দেশ করে না। তাহলে, বস্তুত তা কোন অর্থ বহন করে? আদিম কাল থেকে, কেউ কখনো আমার মন্দিরের অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার উপভোগ করার মতো যথেষ্ট সৌভাগ্যের অধিকারী হয়নি। কেবলমাত্র অন্তিম সময়ে, আমার প্রথমজাত পুত্রদের মাঝে, মানুষ আমার মন্দিরের অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার কী তা দেখতে পাবে। এই শব্দবন্ধে “মন্দির” আমার সত্তাকে নির্দেশ করে; তা সিয়োন পর্বতকে, আমার বাসস্থানকে, সূচিত করে। আমার অনুমতি ব্যতিরেকে, কেউই সেখানে প্রবেশ করতে বা সেখান থেকে নিষ্ক্রান্ত হতে পারে না। “অফুরন্ত খাদ্যসম্ভার” বলতে কী বোঝানো হয়? এটি আধ্যাত্মিক শরীরে আমার সঙ্গে রাজত্ব করতে সক্ষম হওয়ার আশীর্বাদকে নির্দেশ করে। সাধারণভাবে বলা যায়, এটি প্রথমজাত পুত্রদের আধ্যাত্মিক শরীরে আমার সঙ্গে রাজত্ব করতে সক্ষম হওয়ার আশীর্বাদের প্রতি ইঙ্গিত করে, এবং বিষয়টি উপলব্ধি করা কঠিন কিছু নয়। জীবন-তরঙ্গিনীর বারিধারার দুটি অর্থ রয়েছে: একদিকে তা আমার অন্তরতম সত্তা থেকে প্রবাহিত প্রাণবারিকে বোঝায়—অর্থাৎ, আমার মুখনিঃসৃত প্রতিটি বাক্যকে নির্দেশ করে। অন্যদিকে, তা আমার কার্যের নেপথ্যের প্রজ্ঞা ও কৌশলকে, এবং একই সঙ্গে আমি যা ও আমার যা আছে তা-ও সূচিত করে। আমার বাক্যগুলি অনিঃশেষ প্রচ্ছন্ন রহস্যসমূহ ধারণ করে (এবং রহস্যগুলি যে আর প্রচ্ছন্ন নয় তা অতীতের সাথে প্রতিতুলনাক্রমে উল্লেখিত হয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে যে প্রকাশ্য উদ্ঘাটন সংঘটিত হবে তার সাথে তুলনা করলে, এখনও সেগুলি প্রচ্ছন্ন। এখানে, “প্রচ্ছন্ন হওয়া” বিষয়টি চূড়ান্ত নয়; তা আপেক্ষিক)। প্রকারান্তরে বললে, জীবন-তরঙ্গিনীর বারিধারা চিরপ্রবহমান। আমার মধ্যে অসীম প্রজ্ঞা রয়েছে, এবং আমি যা ও আমার যা আছে মানুষ একেবারেই তা উপলব্ধি করতে পারে না; অর্থাৎ জীবন-তরঙ্গিনীর বারিধারা চিরপ্রবহমান। মানুষের দৃষ্টিতে, নানাবিধ প্রাকৃতিক বৃক্ষ রয়েছে, কিন্তু জীবন-বৃক্ষ কখনো কারো চোখে পড়েনি। অবশ্য, আজ তা দর্শন করা সত্ত্বেও, মানুষ এখনো সেটিকে শনাক্ত করতে পারে না—কিন্তু তবু, তারা এমনকি জীবন-বৃক্ষ থেকে আহার করার কথাও বলে। সত্যিই তা হাস্যকর! জীবন-বৃক্ষ থেকে তারা নির্বিচারে আহার করবে! আমি কেন বলি যে আজ মানুষ তা দেখলেও শনাক্ত করতে পারে না? কেন আমি এমন উক্তি করি? তোমরা কি আমার বাক্যের অর্থ উপলব্ধি করো? আমি হলাম স্বয়ং আজকের বাস্তববাদী ঈশ্বরের ছবি, এবং তিনিই হলেন জীবন-বৃক্ষ। আমায় পরিমাপ করতে মানবীয় ধারণাসমূহ ব্যবহার কোরো না। বাহ্যিকভাবে, আমায় বৃক্ষের মতো দেখায় না, কিন্তু তুমি কি অবহিত যে আমি বস্তুতই জীবন-বৃক্ষ? আমার প্রতিটি পদক্ষেপ, আমার বাচনভঙ্গি, এবং আমার রীতিনীতি হল জীবন-বৃক্ষের ফল, এবং সেগুলি আমার ছবি—আমার প্রথমজাত পুত্রদের এগুলি ভক্ষণ করা উচিত, যাতে, কালক্রমে, শুধুমাত্র আমার প্রথমজাত পুত্রগণ আমার সাথে সম্পূর্ণ অভিন্ন হয়ে উঠবে। তারা আমায় যাপন করতে ও আমার সাক্ষ্য বহন করতে সক্ষম হবে। (এই বিষয়গুলি সংঘটিত হবে আমরা আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করার পর। একমাত্র শরীরেই আমরা অভিন্ন হতে পারি; দেহরূপে, আমরা কেবল মোটামুটি সদৃশ হতে সক্ষম, কিন্তু তখনো আমাদের ব্যক্তিগত অভিরুচি থাকবে।)

শুধুমাত্র আমার প্রথমজাত পুত্রদের মধ্য দিয়েই আমি স্বীয় ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাবো না, বরং সকল রাষ্ট্র ও সমুদয় মানুষের উপর তাদের শাসনের মাধ্যমেও আমি তা প্রকাশিত করবো। এটি হল আমার কার্যের একটি ধাপ। বর্তমান সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অধিকন্তু, বর্তমান সময়টি হল সন্ধিক্ষণ। যখন সমস্তকিছু সম্পন্ন হয়ে যাবে, তখন আমার হস্ত কী সংঘটিত করছে তা তোমরা প্রত্যক্ষ করবে, এবং তোমরা দেখতে পাবে কীভাবে আমি পরিকল্পনা ও পরিচালনা করি—অবশ্য, তা কোনো অস্পষ্ট বিষয় নয়। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঘাত-প্রতিঘাতের আলোকে, বিষয়টি খুব দূরবর্তী নয়; তা মানুষের পক্ষে অকল্পনীয় এক বিষয় এবং, উপরন্তু, তারা আগে থেকে তা বুঝতেও পারে না। আশীর্বাদধন্য ও পুরস্কৃত হওয়ার এই সুযোগ যাতে হারাতে না হয়, সেহেতু অবশ্যই তোমরা কোনোক্রমেই অসতর্ক হবে না বা অবহেলা করবে না। রাজ্যের দৃশ্যপট দৃষ্টিগোচর, এবং সমগ্র বিশ্ব ক্রমশ মৃত্যু-মুখে ঢলে পড়ছে। অতল গহ্বর এবং জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ থেকে আর্তনাদের আওয়াজ দমকে-দমকে ধ্বনিত হয়ে উঠছে, মানুষকে যা আতঙ্কিত ও সন্ত্রস্ত করে তুলছে, এবং তারা অনুভব করছে যে আত্মগোপন করার মতো তাদের কোনো স্থান নেই। আমার নামে নির্বাচিত হওয়ার পর যে-ই বহিষ্কৃত হবে, তার স্থান হবে অতল গহ্বরে। এইভাবে, যেমনটি আমি একাধিকবার বলেছি, আমার দ্বারা বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের আমি অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করবো। সমগ্র বিশ্বজগৎ যখন বিধ্বস্ত হবে, তখন ধ্বংসপ্রাপ্ত সমস্তকিছু জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে পতিত হবে। অন্যভাবে বলা যায়, এই বস্তুগুলি অগ্নিময় হ্রদ থেকে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে স্থানান্তরিত হবে। সেই সময়ে, প্রত্যেকেই হয় অনন্ত বিনাশ (অর্থাৎ, আমার বহিঃস্থ সকলে) নয়তো অনন্ত জীবনের (অর্থাৎ, আমার অভ্যন্তরস্থ সকলে) জন্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। সেই ক্ষণে, আমি ও আমার প্রথমজাত পুত্রগণ রাজ্য থেকে নির্গত হয়ে অনন্তকালে প্রবেশ করবো। এটি এমন এক বিষয় যা পরবর্তীকালে নিষ্পন্ন হবে; আমি যদি এখনই তোমাদের বলতামও, তাহলেও তোমরা তা উপলব্ধি করতে না। তোমরা কেবল আমার পথনির্দেশনা অনুসরণ করতে পারো, আমার আলোয় পথ চলতে পারো, আমার প্রেমে আমায় সঙ্গদান করতে পারো, আমার গৃহে আমার সাথে আনন্দ উপভোগ করতে পারো, আমার রাজ্যে আমার সাথে রাজত্ব করতে পারো, এবং আমার কর্তৃত্বের অধীনে আমার সাথে সকল রাষ্ট্র ও সমুদয় মানুষের উপর আধিপত্য করতে পারো। উপরে যাকিছু আমি বর্ণনা করেছি সেগুলির মধ্যেই নিহিত রয়েছে সেই অন্তহীন আশীর্বাদ যা তোমাদের আমি প্রদান করছি।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ১০১

পরবর্তী: অধ্যায় ১০৩

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন