ঈশ্বরের কাজের দর্শন (১)
যোহন যীশুর জন্য সাত বছর কাজ করেছিল, এবং যীশুর আগমনের পূর্বেই তাঁর পথ প্রস্তুত করে রেখেছিল। এর আগে যোহনের দ্বারা স্বর্গ-রাজ্যের সুসমাচার সমগ্র দেশ জুড়ে প্রচারিত হয়েছিল, তাই এটি যিহূদিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল আর প্রত্যেকেই তাঁকে ভাববাদী বলে অভিহিত করেছিল। সেই সময়, রাজা হেরোদ যোহনকে হত্যা করতে চাইলেও সাহস করে নি, কারণ মানুষেরা যোহনকে উচ্চ স্থানে বসিয়েছিল এবং হেরোদ আশঙ্কা করেছিল সে যদি যোহনকে হত্যা করে, তাহলে জনগণ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। যোহনের দ্বারা করা কাজ সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল এবং সে ইহুদিদের বিশ্বাসী করে তুলেছিল। সাত বছর ধরে সে যীশুর জন্য পথ প্রস্তুত করেছিল, ঠিক যীশুর সেবাব্রত শুরুর আগের সময় পর্যন্ত। এই কারণে, যোহন ছিল সমস্ত ভাববাদীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। যোহনের কারারুদ্ধ হওয়ার পরেই যীশু তাঁর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেছিলেন। যোহনের আগে, কোনো ভাববাদীই ঈশ্বরের জন্য পথ প্রস্তুত করে নি, কারণ যীশুর আগে ঈশ্বর কখনোই দেহধারণ করেন নি। তাই যোহনের আগে পর্যন্ত পূর্বের সমস্ত ভাববাদীদের মধ্যে কেবলমাত্র সে-ই ঈশ্বরের অবতারের জন্য পথ প্রস্তুত করেছিল আর এভাবেই যোহন পুরাতন ও নূতন নিয়মের শ্রেষ্ঠ ভাববাদীতে পরিণত হয়েছিল। যীশুর বাপ্তিস্ম হওয়ার আগে যোহন সাত বছর স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার ছড়াতে শুরু করেছিল। মানুষের কাছে, তার করা কাজ পরবর্তীতে যীশুর করা কাজের থেকেও উচ্চ মনে হয়েছিল, তা সত্ত্বেও সে ছিল কেবলই এক ভাববাদী। সে মন্দিরের মধ্যে কাজ করে নি বা প্রচার করে নি, বরং তার বাইরের শহর বা গ্রামেই প্রচার করেছিল। সে অবশ্য এটা ইহুদি দেশগুলির মানুষদের মধ্যে, বিশেষ করে দরিদ্রদের মধ্যে এটা করেছিল। যোহন খুব কালেভদ্রেই সমাজের উচ্চস্তরের মানুষদের সংস্পর্শে আসত এবং কেবলমাত্র যিহূদিয়ার সাধারণ মানুষদের মধ্যেই সুসমাচার প্রচার করত। প্রভু যীশুর জন্য সঠিক মানুষদের প্রস্তুত করা এবং তাঁর কাজ করার উপযুক্ত স্থান প্রস্তুতির জন্যই এই কাজ করা হয়েছিল। যোহনের মতো ভাববাদীর দ্বারা পথ প্রস্তুত হয়েছিল বলেই প্রভু যীশু আগমনের পরেই সরাসরি ক্রুশের পথে অভিগমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ঈশ্বর যখন তাঁর কাজ করার জন্য দেহরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, মানুষদের নির্বাচন করার কাজ তাঁকে করতে হয় নি, তাঁর ব্যক্তিগতভাবে কাজ করার মতো মানুষ অথবা স্থান অনুসন্ধানের কাজ করারও প্রয়োজন ছিল না। তাঁর আসার পরে তাঁকে এই ধরনের কাজ করতে হয় নি; সঠিক ব্যক্তি ইতিমধ্যেই তাঁর আগমনের পূর্বে এই সমস্ত কাজ প্রস্তুত করে রেখেছিল। যোহন যীশুর কাজ শুরু করার আগে ইতিমধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করেছিল, কারণ ঈশ্বর যখন অবতাররূপে তাঁর কাজ করতে আসেন, তখন দীর্ঘকাল ধরে তাঁর জন্য দীর্ঘকাল যাবৎ প্রতীক্ষারত মানুষদের ওপরেই তিনি সরাসরি কাজ করতে শুরু করেন। যীশু মানুষের সংশোধনের কাজ করতে আসেন নি। তিনি কেবলমাত্র তাঁর সেবাব্রত সম্পন্ন করতে এসেছিলেন; অন্য সমস্ত কিছুর সাথে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। যখন যোহন এসেছিল, তখন সে মন্দির এবং ইহুদিদের মধ্যে থেকে স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার গ্রহণকারী একদল মানুষকে বের করে আনা ছাড়া আর কিছুই করে নি, যাতে তারা প্রভু যীশুর কাজের লক্ষ্য হয়ে উঠতে পারে। যোহন সাত বছর ধরে কাজ করেছিল, যার অর্থ হল সে সাত বছর ধরে সুসমাচার প্রচার করেছিল। কাজের সময় যোহন তেমন অলৌকিক ঘটনা দেখায় নি, কারণ তার কাজ ছিল পথ প্রস্তুত করা; তার কাজ ছিল প্রস্তুতির কাজ। যে কাজ যীশু করতে যাচ্ছিলেন, সেই সমস্ত অন্যান্য কাজের সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না; সে শুধুমাত্র মানুষকে পাপ স্বীকার করতে ও অনুতপ্ত হতে বলেছিল এবং মানুষকে বাপ্তিস্ম করেছিল, যাতে তারা উদ্ধার পায়। যদিও সে নতুন কাজ করেছিল এবং এমন একটি পথ উন্মুক্ত করেছিল যে পথে মানুষ আগে কখনও হাঁটে নি, তবুও তার কাজটি ছিল কেবলমাত্র যীশুর জন্য পথের প্রস্তুতি। সে কেবলমাত্র প্রস্তুতির কাজ করা একজন ভাববাদী ছিল এবং সে যীশুর কাজ করতে অক্ষম ছিল। যদিও যীশু স্বর্গরাজ্যের সুসমাচারের প্রথম প্রচারকারী নন, এবং যদিও তিনি যোহনের যাত্রাপথ ধরেই কাজ চালিয়েছিলেন, তবুও তাঁর কাজ করতে পারার মতো অন্য কেউ ছিল না এবং এটি যোহনের কাজের ঊর্ধ্বে ছিল। যীশু তাঁর নিজের পথ প্রস্তুত করতে পারেন নি; তাঁর কাজ সরাসরি ঈশ্বরের প্রতিনিধি রূপেই তিনি সম্পাদন করেন। আর তাই যোহন অনেক বছর ধরে কাজ করলেও সে ছিল শুধুই একজন ভাববাদী এবং শুধুই একজন পথ প্রস্তুতকারী ব্যক্তিবিশেষ। যীশুর তিন বছরের কাজ যোহনের সাত বছরের কাজকে অতিক্রম করে গেছে, কারণ তাঁর কাজের সারসত্য এক ছিল না। যীশু যখন তাঁর সেবাব্রত করতে শুরু করেছিলেন, যা যোহনের কাজ শেষ হওয়ার সময়ে করা হয়েছিল, সেই সময়েও যোহন প্রভু যীশুর ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট মানুষ এবং স্থান প্রস্তুত করেছিল এবং এগুলি প্রভু যীশুর তিন বছরের কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট ছিল। আর তাই, যোহনের কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই প্রভু যীশু আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন এবং যোহনের বলা বাক্যসমূহ একপাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ যোহনের করা কাজটি কেবলমাত্র অবস্থান্তরের জন্যই হয়েছিল, তার বলা বাক্য মানুষদের নতুন সমৃদ্ধির পথে নেতৃত্বদানকারী জীবনের বাক্য ছিল না; পরিশেষে বলা যায়, তার বাক্যগুলি শুধুমাত্র সাময়িক ব্যবহারের জন্যই ছিল।
যীশু যে কাজ করেছিলেন তা অতিপ্রাকৃতিক ছিল না; এটা করার একটি প্রক্রিয়া ছিল এবং এর সমস্তটাই বস্তুর সাধারণ নিয়ম অনুসারেই অগ্রসর হয়েছিল। জীবনের শেষ ছয় মাসে যীশু নিশ্চিতরূপে বুঝে গিয়েছিলেন যে তিনি এই কাজটি করতে এসেছেন এবং এও জানতেন যে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হতে এসেছেন। যীশু যেমন তিন বার করে গেৎশিমানী বাগানে প্রার্থনা করতেন, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগেও তিনি অবিরত পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। বাপ্তিস্ম হওয়ার পর যীশু সাড়ে তিন বছর তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন করেছিলেন এবং তাঁর আনুষ্ঠানিক কাজ আড়াই বছর স্থায়ী হয়েছিল। প্রথম বছরে, তিনি শয়তানের দ্বারা অভিযুক্ত হন, মানুষের দ্বারা হয়রান হন এবং মানুষের প্রলোভনের শিকার হন। তাঁর কাজ সম্পাদনকালে তিনি অনেক প্রলোভনকে জয় করেছিলেন। শেষ ছয় মাসে যখন যীশুকে শীঘ্রই ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, সেই সময়ে পিতরের মুখ থেকে বেরিয়েছিল যে তিনি জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র, তিনিই খ্রীষ্ট। শুধু তখনই তাঁর কাজ সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল এবং তখনই তাঁর পরিচয় জনসাধারণের কাছে প্রকাশিত হয়েছিল। এর পরে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন যে মানুষের জন্য তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হবে এবং তিন দিন পরে তিনি আবার উত্থিত হবেন; বলেছিলেন যে তিনি মুক্তির কাজ সম্পাদন করতে এসেছিলেন এবং তিনিই পরিত্রাতা। শুধুমাত্র শেষ ছয় মাসেই তিনি তাঁর পরিচয় এবং কাজের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছিলেন। এটিও ছিল ঈশ্বরেরই সময়, এবং এইভাবেই কাজটি সম্পন্ন করতে হত। সেই সময়ে, যীশুর কাজের কিছু অংশ পুরাতন নিয়ম অনুসারে এবং এর পাশাপাশি মোশির আইন এবং বিধানের যুগে যিহোবার বাক্য অনুসারে হয়েছিল। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে যীশু তাঁর কাজের অংশ সমাধার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। তিনি মানুষদের কাছে প্রচার করতেন, সমাজ-গৃহে তাদের শিক্ষা দিতেন, এবং তিনি তাঁর সাথে শত্রুতাকারী ফরীশীদের তিরস্কার করার জন্য পুরাতন নিয়মের ভাববাদীদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে কাজে লাগিয়েছিলেন, তাদের অবাধ্যতা প্রকাশ করার জন্য শাস্ত্রের বাক্য ব্যবহার করেছিলেন এবং এইভাবে তাদের নিন্দা করেছিলেন। কারণ তারা যীশুর কাজকে তাচ্ছিল্য করেছিল; বিশেষত যীশুর অনেক কাজ শাস্ত্রের আইন অনুসারে করা হয়নি, উপরন্তু, তাঁর শিক্ষা তাদের নিজেদের বাক্যের চেয়ে, এমনকি শাস্ত্রে ভাববাদীদের কৃত ভবিষ্যদ্বাণীর চেয়েও উচ্চতর ছিল। যীশুর কাজটি শুধুমাত্র মানুষের মুক্তি এবং ক্রুশবিদ্ধকরণের স্বার্থেই ছিল, আর তাই কোনও মানুষকে জয় করার জন্য তাঁর বেশি বাক্য বলার প্রয়োজন ছিল না। তিনি মানুষকে যা শিখিয়েছিলেন তার বেশিরভাগই শাস্ত্রের বাক্য থেকেই নেওয়া এবং তাঁর কাজটি শাস্ত্রকে অতিক্রম না করলেও তিনি ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। তাঁর কাজটি না ছিল বাক্যের কাজ, আর না তা মানবজাতিকে জয় করার জন্য করা হয়েছিল, বরং তা করা হয়েছিল মানবজাতির মুক্তির জন্য। তিনি মানবজাতির জন্য কেবল পাপস্খালনের বলি হিসাবে কাজ করেছিলেন, মানবজাতির বাক্যের উৎস হিসাবে নয়। তিনি অ-ইহুদিদের কাজ, অর্থাৎ মানুষদের জয় করার কাজ করেন নি, করেছিলেন ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজ, যা ঈশ্বরবিশ্বাসীদের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল। যদিও তাঁর কাজ শাস্ত্রের ভিত্তির ওপর সম্পাদিত হয়েছিল এবং তিনি ফরীশীদের নিন্দা করার জন্য পুরোনো ভাববাদীদের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যবহার করেছিলেন, তবু তা ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজ সম্পূর্ণ করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। যদি বর্তমানের কাজটি শাস্ত্রে উল্লিখিত পুরোনো ভাববাদীদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলির ভিত্তিতে পরিচালিত হত, তবে তোমাদের জয় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত। কারণ পুরাতন নিয়মে তোমাদের অর্থাৎ চীনা মানুষদের অবাধ্যতা এবং পাপের কোনো প্রমাণ নেই এবং তোমাদের পাপের কোনো ইতিহাস নেই। সুতরাং, যদি এই কাজটি এখনও বাইবেলের ভিত্তিতে করা হয় তবে তোমরা কখনোই তা মানবে না। বাইবেলে শুধুমাত্র ইসরায়েলীদের একটি সীমিত ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে, যা তোমরা মন্দ না ভালো তা প্রতিষ্ঠা করতে, বা তোমাদের বিচার করতে পারে না। কল্পনা করো, আমি যদি তোমাদের ইসরায়েলীদের ইতিহাস অনুসারে বিচার করতাম তাহলে তোমরা আমাকে বর্তমানে যেমন অনুসরণ করছ, তেমন করে কি অনুসরণ করতে? তোমরা কি জানো যে তোমরা কতটা বেয়াড়া? যদি এই পর্যায়ে কোনো বাক্য না বলা হত, তাহলে জয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা অসম্ভব হয়ে যেত। যেহেতু আমি ক্রুশবিদ্ধ হতে আসি নি, তাই আমাকে অবশ্যই বাইবেলের থেকে আলাদা বাক্য বলতে হবে যাতে তোমাদের জয় করা যায়। যীশুর কৃত কাজ ছিল শুধুমাত্র পুরাতন নিয়মের থেকে উচ্চতর পর্যায়ের কাজ; এটা শুধুমাত্র একটা যুগের সূচনা করার জন্য এবং সেই যুগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। কেন তিনি বলেছিলেন, “আমি বিধান ধ্বংস করতে নয়, বরং তার রূপায়ণের জন্য এসেছি”? তবুও তাঁর কাজের অনেকটাই অনুশীলনকৃত আইন এবং ইসরায়েলীদের দ্বারা অনুসরণ করা পুরাতন নিয়মের আদেশসমূহের থেকে আলাদা ছিল, কারণ তিনি আইন মান্য করতে নয়, বরং তা রূপায়ণের জন্য এসেছিলেন। এই রূপায়ণ করার প্রক্রিয়াটিতে অনেকগুলি ব্যবহারিক জিনিস অন্তর্ভুক্ত ছিল: তাঁর কাজটি ছিল আরও ব্যবহারিক এবং বাস্তবিক, উপরন্তু, এটি ছিল আরও প্রাণবন্ত এবং নিয়মের অন্ধ আনুগত্যবিহীন। ইসরায়েলীরা কি বিশ্রামবার পালন করে নি? যীশু যখন এসেছিলেন, তিনি বিশ্রামবার পালন করেন নি, কারণ তিনি বলেছিলেন যে মনুষ্যপুত্র হল বিশ্রামবারের প্রভু, এবং যখন বিশ্রামবারের প্রভু আসবেন, তখন তিনি যা ইচ্ছা তাই করবেন। তিনি পুরাতন নিয়মের আইন রূপায়ণ এবং আইন পরিবর্তন করতে এসেছিলেন। এযুগের যাবতীয় কাজ বর্তমানের উপর ভিত্তি করে করা হলেও, এটি এখনও বিধানের যুগে যিহোবার কাজের ভিত্তির উপরে নির্ভর করে এবং এটি এই উদ্দেশ্যকে লঙ্ঘন করে না। উদাহরণস্বরূপ—সংযত হয়ে কথা বলা এবং ব্যভিচার না ক রা—এগুলি কি পুরাতন নিয়মের আইন নয়? বর্তমানে তোমাদের যা প্রয়োজন তা এই দশটি আদেশে সীমাবদ্ধ নেই, বরং পূর্বের থেকে উচ্চতর আদেশ ও বিধানও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আগেকার সমস্ত কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কারণ ঈশ্বরের কাজ সম্পাদনের প্রতিটি পর্যায় তার আগের পর্যায়ের ভিত্তিতে নির্বাহিত হয়। যিহোবা সেই সময়ে ইসরায়েল যে কাজ করেছিলেন, যেমন মানুষজনের বলি উৎসর্গ করা, পিতামাতাকে সম্মান করা, মূর্তি পূজা না করা, অন্যদের আক্রমণ বা অভিশাপ না দেওয়া, ব্যভিচার না করা, ধূমপান বা মদ্যপান না করা এবং মৃত জিনিস না খাওয়া বা রক্ত পান না করা—এটা কি বর্তমানে তোমাদের অনুশীলনের ভিত্তি তৈরি করে না? যদিও আগেকার বিধান আর উল্লিখিত হয় না এবং তোমার কাছ থেকে নতুন দাবি করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও এই আইনগুলি বিলুপ্ত হওয়া তো দূরের কথা, পরিবর্তে এগুলিকে আরও উচ্চে উন্নীত করা হয়েছে। এগুলি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এই কথা বলার অর্থ হল পূর্বের যুগ সেকেলে হয়ে গেছে, অথচ এমন কিছু আদেশ রয়েছে যেগুলিকে তোমায় অনন্তকাল সম্মান করে যেতে হবে। অতীতের আদেশগুলি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে, ইতিমধ্যেই মানুষের সত্তায় পরিণত হয়েছে এবং “ধূমপান কোরো না” এবং “মদ্যপান কোরো না” ইত্যাদির মতো আদেশগুলিতে আর বিশেষ জোর দেওয়ার দরকার নেই। এই ভিত্তিতেই, তোমাদের বর্তমানের প্রয়োজন অনুসারে, মর্যাদা অনুসারে এবং বর্তমানের কাজ অনুসারে নতুন আদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নতুন যুগের জন্য আদেশ জারির অর্থ পুরোনো যুগের আদেশ বাতিল করা নয়, বরং এই ভিত্তির উপরে এগুলিকে আরও উচ্চে উন্নীত করা, মানুষের ক্রিয়াকলাপগুলিকে আরও সম্পূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত করে তোলা। যদি বর্তমানে তোমাদের ইসরায়েলীদের মতো শুধুমাত্র পুরাতন নিয়মের আদেশ অনুসরণ করে ও আইন মেনে চলতে হতো, এবং যদি তোমাদের যিহোবার দ্বারা স্থাপিত সমস্ত আইন মুখস্থও করতে হতো, তা সত্ত্বেও তোমাদের পরিবর্তন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই থাকতো না। যদি তুমি কেবলমাত্র কতগুলি আদেশ পালন করতে বা অসংখ্য আইন মুখস্থ করতে, তাহলে তোমার পুরোনো স্বভাব গভীরেই নিহিত থাকতো এবং তা উপড়ে ফেলার কোনো উপায়ই থাকতো না। এইভাবে তোমরা ক্রমাগত অধঃপতিত হয়ে পড়তে এবং তোমাদের মধ্যে কেউই আজ্ঞাকারী হতে না। এর অর্থ হল কয়েকটি সাধারণ আদেশ বা অসংখ্য আইন তোমাদের যিহোবার কাজ জানার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারবে না। তোমরা ইস্রায়েলীদের মতো নও: আইনের অনুসরণ এবং আদেশ মুখস্থ রাখার মাধ্যমে তারা যিহোবার কাজগুলি প্রত্যক্ষ করতে এবং একমাত্র তাঁর প্রতি তাদের ভক্তি নিবেদন করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু তোমরা এটি অর্জন করতে অক্ষম, এবং পুরাতন নিয়মের যুগের কয়েকটি আদেশ শুধুমাত্র যে তোমাদের হৃদয় জয় করতে, বা তোমাদের রক্ষা করতে অক্ষম তা-ই নয়, বরং পরিবর্তে তোমাদের অসংযত করে তুলবে এবং মৃতস্থানে পতিত করবে। কারণ আমার কাজটি জয়ের কাজ এবং এটি তোমাদের অবাধ্যতা এবং পুরানো স্বভাবকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়। যিহোবা এবং যীশুর সদয় বাক্যগুলি বর্তমানের বিচারের কঠিন বাক্যগুলির তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র। এই ধরনের কঠোর বাক্য ছাড়া, তোমাদের মতো হাজার হাজার বছর ধরে অবাধ্য হয়ে আসা “বিশেষজ্ঞদের”-কে জয় করা অসম্ভব। পুরাতন নিয়মের আইনগুলি তোমাদের ওপর থেকে অনেক আগেই তাদের ক্ষমতা হারিয়েছে এবং বর্তমানের বিচার পুরোনো আইনগুলির থেকেও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। তোমাদের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত হল বিচার, আইনের তুচ্ছ সীমাবদ্ধতা নয়। কারণ তোমরা আদিকালের মানবজাতি নও, বরং তোমরা হলে সেই মানবজাতি যারা হাজার হাজার বছর ধরে ভ্রষ্ট হয়ে থেকেছে। এখন মানুষদের যা অবশ্যই অর্জন করতে হবে তা হল বর্তমান সময়ের ক্ষমতা এবং প্রকৃত মর্যাদা অনুসারে বর্তমানের মানুষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাস্তবিক মর্যাদা এবং এতে তোমার নিয়ম অনুসরণ করার দরকার নেই। এটা করা হয় যাতে তোমার পুরোনো স্বভাবে পরিবর্তন আসে এবং তুমি তোমার ধারণাগুলি একপাশে সরিয়ে রাখতে পারো। তুমি কি মনে করো আদেশগুলিই নিয়ম? এগুলিকে বলা যেতে পারে, মানুষের সাধারণ প্রয়োজনীয়তা। এগুলি তোমার অবশ্য অনুসরণীয় নিয়ম নয়। উদাহরণ হিসাবে ধূমপান নিষেধের কথাই নেওয়া যাক—এটা কি কোনো নিয়ম? এটা কোনো নিয়ম নয়! এটা স্বাভাবিক মানবিকতার জন্য প্রয়োজনীয়, এটা কোনো নিয়ম নয় বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য নির্ধারিত একটি বিষয়। বর্তমানে এক ডজনেরও বেশি প্রদত্ত আদেশগুলিও কিন্তু নিয়ম নয়, এগুলি এমন বিষয় যা স্বাভাবিক মানবতা অর্জন করার জন্য প্রয়োজন, এবং এগুলিকে নিয়ম হিসাবে গণ্য করা হয় না। আইন আর নিয়ম আলাদা। আমি যে নিয়মগুলির কথা বলছি তা আচার-অনুষ্ঠান, আনুষ্ঠানিকতা বা মানুষের বিচ্যুত এবং ভ্রান্ত অনুশীলনের সাথে প্রাসঙ্গিক; এগুলি হল কিছু প্রবিধান যা মানুষের কোনো সাহায্য করে না, তার কোনো উপকারে লাগে না; এগুলি শুধুমাত্র একটি নিরর্থক কার্যক্রম তৈরি করে। এটিই হল নিয়মের সারবত্তা এবং এই জাতীয় নিয়মগুলি অবশ্যই বর্জন করা উচিত, কারণ এগুলি মানুষের পক্ষে উপকারী নয়। মানুষের জন্য যেটা উপকারী সেটাই বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।