অনুশীলন (৭)
তোমাদের মনুষ্যত্বে অনেক ঘাটতি রয়েছে, তোমাদের জীবনযাত্রাও খুব নিম্নস্তরীয় ও হীনমূল্যের, তোমাদের কোনোরকম মনুষ্যত্বই নেই, এবং তোমাদের অন্তর্দৃষ্টি নেই। ঠিক এই কারণেই তোমাদের স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের উপাদানসমূহের দ্বারা নিজেদের সজ্জিত করতে হবে। বিবেকবোধ, যুক্তিবোধ এবং অন্তর্দৃষ্টি থাকা; কীভাবে কথা বলতে ও কিছু প্রত্যক্ষ করতে হয় তা জানা; পরিচ্ছন্নতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া; একজন স্বাভাবিক মানুষের মত আচরণ করা—এইসবই হল স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের বিষয়ে জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। যখন তোমরা এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রে যথাযথ আচরণ করো, তখন তোমাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের একটা গ্রহণযোগ্য স্তর রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। তোমাদের অবশ্যই নিজেদেরকে আধ্যাত্মিক জীবনের লক্ষ্যেও প্রস্তুত করতে হবে। পৃথিবীতে ঈশ্বরের কার্যের সামগ্রিকতা সম্পর্কে তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে এবং তাঁর বাক্যগুলি অনুভব করতে হবে। তোমার জানা উচিত কীভাবে তাঁর বন্দোবস্তসমূহকে মান্য করতে হয় এবং কীভাবে সৃজিত সত্তার কর্তব্য পালন করতে হয়। তোমার আজ এই দুটি দিকেই প্রবেশ করা উচিত—এক মনুষ্যত্বময় জীবনের জন্য নিজেকে সজ্জিত করা এবং এক আধ্যাত্মিকতার জীবনের জন্য অনুশীলন করা। এই দুই-ই অপরিহার্য।
কিছু কিছু মানুষ উদ্ভট: তারা কেবল মনুষ্যত্বের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে নিজেদের সজ্জিত করতে জানে। তাদের আকারে প্রকারে কোন ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যাবে না; তাদের বক্তব্য বিষয় এবং তাদের বাচনরীতি যথাযথ, এবং তাদের বেশভূষা অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত এবং যথোপযুক্ত। কিন্তু তাদের ভিতরটা শূন্য; নিছক বাইরে থেকেই তাদের স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের অধিকারী বলে মনে হয়। কেউ কেউ শুধুই কী খাওয়া উচিত, কী পরা উচিত, কী বলা উচিত সেদিকেই মনোযোগী। এমনকি এরকমও কিছু মানুষ আছে যারা কেবল মেঝে ঝাঁট দেওয়া, বিছানা করা এবং সাধারণ পরিচ্ছন্নতার মতো বিষয়গুলির প্রতিই বিশেষভাবে মনোযোগী। তারা হয়ত এই সমস্ত কাজে অত্যন্ত নিপুণ, কিন্তু তুমি যদি তাদের ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কার্য, কিংবা শাস্তি এবং বিচার, বা পরীক্ষা এবং পরিমার্জন সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিয়ে কথা বলতে বলো, তাহলে তারা সম্ভবত সামান্যতম অভিজ্ঞতাও প্রদর্শন করবে না। তুমি তাদের হয়ত জিজ্ঞাসা করলে: “পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রাথমিক কার্যের বিষয়ে কি তোমার কোনো উপলব্ধি আছে? ঈশ্বরের আজকের অবতাররূপের কার্য যীশুর কার্যের থেকে কীভাবে আলাদা? যিহোবার কার্যের থেকেই বা কীভাবে আলাদা? তারা কি একই ঈশ্বর? তিনি কি এই যুগের পরিসমাপ্তি ঘটানোর লক্ষ্যেই এসেছেন, নাকি মানবজাতিকে উদ্ধার করতে?” কিন্তু এই ধরনের মানুষদের এইসকল বিষয়ে কথা বলার মত কিছুই থাকে না। কেউ কেউ নিজেদের সুন্দর করে অথচ অগভীরভাবে সাজিয়ে তোলে: ভগিনীরা নিজেদের ফুলের মত সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে, এবং ভ্রাতারা যুবরাজ অথবা ধনী তরুণ বাবুদের মত বেশভূষা করে। তারা শুধুমাত্র বাহ্যিক জিনিস নিয়েই ভাবিত, যেমন তাদের খাদ্যবস্তু বা পরিধেয়; ভিতরে ভিতরে, তারা কিন্তু নিঃস্ব এবং ঈশ্বরের বিষয়ে সামান্যতম জ্ঞানও তাদের নেই। এর মধ্যে কী অর্থ থাকতে পারে? এবং এরকমও কেউ কেউ আছে যাদের বেশভূষা দরিদ্র ভিক্ষুকদের মত—তাদের সত্যিই পূর্ব এশীয় ক্রীতদাসদের মত দেখায়! তোমাদের কাছ থেকে আমি কী চাই তা কি তোমরা সত্যিই উপলব্ধি করো না? নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করো: তোমরা আসলে কী অর্জন করেছ? এতগুলি বছর ধরে তোমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এসেছ, অথচ এই হল তোমাদের অর্জিত ফসল—তোমরা কি অপ্রতিভ নও? তোমরা কি লজ্জিত নও? এই এতগুলি বছর ধরে তোমরা প্রকৃত পথ অনুসরণ করে চলেছো, অথচ এখনও তোমাদের আধ্যাত্মিক উচ্চতা একটি চড়ুই পাখির চেয়েও কম! তোমাদের মধ্যে থাকা তরুণ যুবতীদের দেখো, বেশভূষা আর প্রসাধনে ছবির মত সুন্দর, নিজেদের একে অপরের সঙ্গে তুলনা করছ—আর কী তুলনা করছ? তোমাদের পরিতোষ? তোমাদের চাহিদা? তোমাদের কি মনে হয় আমি নমুনা-সুন্দরীদের নিয়োগ করতে এসেছি? তোমাদের কোনো লজ্জা নেই! কোথায় তোমাদের জীবন? তোমরা যা অন্বেষণ করে চলেছ তা কি কেবল তোমাদের নিজেদেরই অসংযত বাসনা নয়? তুমি নিজেকে অত্যন্ত সুন্দরী বলে মনে করো, কিন্তু তোমার বেশভূষা সবরকমভাবে জমকালো হলেও, আদপে কি তুমি গোবরের স্তূপে জন্মানো কিলবিলে লার্ভাকীট নও? আজ, তুমি যে এই স্বর্গীয় আশীর্বাদসমূহ উপভোগ করার সৌভাগ্য লাভ করেছ, তা তোমার এই মিষ্টি মুখশ্রীর জন্য নয়, বরং ঈশ্বর তোমার উত্তরণ ঘটিয়ে একটি ব্যতিক্রম ঘটাচ্ছেন। তুমি কোথা থেকে এসেছো তা এখনও তোমার কাছে পরিষ্কার নয়? জীবনের উল্লেখমাত্র, তুমি নিজের মুখ বন্ধ করে ফেলো আর রা কাড়ো না, মূর্তিবৎ মূক হয়ে যাও, অথচ এখনও তোমার নিজেকে সাজিয়ে তোলার ঔদ্ধত্য রয়েছে! এখনও তুমি তোমার মুখশ্রীতে প্রসাধনী লেপনেই আগ্রহী! আর তোমাদের মধ্যে যারা সব ফুলবাবু তাদের দিকে দেখো, বিপথগামী সব পুরুষ, যারা সারাটা দিন কাটিয়ে দেয় শুধুমাত্র অলস গতিতে ঘুরে বেড়িয়ে, উচ্ছৃঙ্খলভাবে, নির্বিকার মুখে। একজন ব্যক্তির আচরণ কি এমন হওয়া উচিত? পুরুষ অথবা মহিলা নির্বিশেষে, তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের মনোযোগ সারাদিন কীসের দিকে নিবেদিত থাকে? তোমরা কি জানো নিজেদের খাবারের জন্য তোমরা কার উপর নির্ভর করো? নিজের পরিচ্ছদের দিকে তাকাও, তুমি তোমার হাত দিয়ে কী ফলিয়েছ, পেটে হাত বুলিয়ে দেখো—এত বছর যাবৎ বিশ্বাসের কালে রক্ত ও ঘামের মূল্যের বিনিময়ে তুমি কী লাভ করেছ? তুমি এখনও পর্যটনে যাওয়ার কথা ভাবছ, তুমি এখনও নিজের দুর্গন্ধযুক্ত শরীরকে অলঙ্কৃত করার কথা ভাবছ—যত অর্থহীন অন্বেষণ! তোমাকে স্বাভাবিকতা সম্পন্ন একজন মানুষ হয়ে ওঠার কথা বলা হয়, অথচ বর্তমানে তুমি যে শুধুই অস্বাভাবিক তা নয়, তুমি বিপথগামীও। এরকম মানুষের স্পর্ধা হয় কী করে আমার সামনে আসার? এইরকম একটা মনুষ্যত্ব নিয়ে, নিজের আকর্ষণী শক্তি ও শরীরকে জাহির করে বেড়িয়ে, সবসময় দৈহিক লালসার মধ্যে বাস করে—তুমি কি ক্লিন্ন দানব ও অশুভ আত্মারই সন্তান নও? এইরকম এক নোংরা দানবকে আমি বেশিদিন অস্তিমান থাকতে দেবো না! আর এটা ভেবো না যে তুমি নিজের অন্তরে কী ভাবো তা আমি জানি না। তুমি নিজের লালসা ও নিজের শরীরকে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখলেও, তোমার হৃদয়ের গভীরে পোষণ করা চিন্তাগুলি কি আমার কাছে অবিদিত থাকতে পারে? তোমার চোখের কামনা-বাসনা আমি জানব না, তা কী করে সম্ভব? তোমরা, যুবতীরা কি নিজ নিজ শরীর প্রদর্শনের লক্ষ্যেই নিজেদের এত সুন্দর করে সাজিয়ে তোলো না? পুরুষরা তোমাদের কী উপকারে আসে? তারা কি তোমাদের এই ক্লেশ-সমুদ্র থেকে উদ্ধার করতে পারবে? তোমাদের মধ্যে যারা ফুলবাবু, তোমরা সকলেই নিজেদের ভদ্রজনোচিত ও স্বতন্ত্র দেখাবার লক্ষ্যেই পোশাক পরিধান করো, কিন্তু এটা কি তোমাদের সুদর্শন চেহারার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত একটা কৌশল নয়? তোমরা এটা কার জন্য করছ? মহিলারা তোমাদের কী উপকারে আসে? তারাই কি তোমাদের পাপের উৎস নয়? তোমরা পুরুষ ও নারীসকল, আমি তোমাদের কাছে অনেক বাক্য উচ্চারণ করেছি, অথচ তোমরা সেগুলির মধ্যে কয়েকটি মাত্রই মেনে নিয়েছ। তোমরা শ্রবণশক্তি হারিয়েছ, তোমাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে, এবং তোমাদের হৃদয় এমনই কঠিন হয়ে উঠেছে যেখানে শারীরিক লালসা ছাড়া আর কিছুই নেই, যার ফলে তুমি এর জালে আটকা পড়ে গিয়েছ, যেখান থেকে তুমি বেরিয়ে আসতে অক্ষম। তোমাদের মত আবর্জনা আর পাঁকের মধ্যে কিলবিল করতে থাকা পোকামাকড়ের লার্ভার ধারেকাছে কে-ই বা যেতে চায়? ভুলে যেও না যে আমি যাদের গোবরের স্তূপ থেকে তুলে এনেছিলাম তোমরা তাদের চেয়ে বেশি কিছু নও, ভুলে যেও না যে তোমরা শুরুতে স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের অধিকারী ছিলে না। আমি তোমাদের কাছ থেকে শুধুই স্বাভাবিক মনুষ্যত্ব চাই যা আদিতে তোমাদের অধিকারে ছিল না, আমি চাই না যে তোমরা নিজেদের লালসার প্রদর্শন করো কিংবা নিজেদের পূতিগন্ধময় শরীরকে লাগামছাড়া করে তোলো, যে শরীর শয়তান দ্বারা বহু বছর প্রশিক্ষিত হয়ে এসেছে। তোমরা যখন নিজেদের সাজিয়ে তোলো, তখন তোমাদের কি এই ভয় হয় না যে তোমরা এই জালে আরও গভীরভাবে আটকা পড়ে যাবে? তোমরা কি জানো না যে তোমরা মূলত পাপী ছিলে? তোমরা কি জানো না যে তোমাদের শরীর রিরংসায় এতটাই পরিপূর্ণ যে তা তোমাদের পোশাক থেকেও চুঁইয়ে পড়ে, এই ভাবে তোমাদের অসহনীয় রকমের কুৎসিত এবং নোংরা দানবের দশাকে প্রকাশ করে? তোমরাই কি এটা সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট করে জানো না? তোমাদের অন্তর, তোমাদের চোখ, ওষ্ঠ—সবকিছুই কি নোংরা দানব দ্বারা আবিল হয়ে যায়নি? তোমাদের এই অঙ্গগুলি কি কলুষিত নয়? তুমি কি মনে কর যে যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি কার্যত কিছু করছো ততক্ষন তুমিই পবিত্রতম? তোমার কি মনে হয় যে নয়নাভিরাম পোশাকপরিচ্ছদ তোমাদের হীন আত্মাগুলিকে লুকিয়ে রাখবে? তাতে কোনো কাজ হবে না! আমি তোমাদের আরও বেশি বাস্তববাদী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি: প্রতারক ও মেকি মানুষ হোয়ো না, এবং নিজেদের জাহির কোরো না। তোমরা পরস্পরের কাছে লালসার প্রদর্শন করবে, কিন্তু তার বিনিময়ে একমাত্র যা পাবে তা হল চিরন্তন ক্লেশ ও নির্মম শাস্তি! একে অপরের দিকে চোখ মটকে প্রণয়ে লিপ্ত হওয়ার কী দরকার? এটাই কি তোমাদের নৈতিক সততার পরিমাপ, তোমাদের ন্যায়পরায়ণতার ব্যাপ্তি? তোমাদের মধ্যে যারা অশুভ ওষুধ ও যাদুবিদ্যায় লিপ্ত আমি তাদের ঘৃণা করি; আমি তোমাদের মধ্যে সেইসব যুবক-যুবতীকে ঘৃণা করি যারা নিজেদের শরীরকে ভালোবাসে। তোমরা নিজেদের সংযত করলে ভালো করতে, কারণ তোমাদের এখন স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের অধিকারী হতে হবে, এবং তোমাদের লালসা প্রদর্শন করার অনুমোদন নেই—তবুও তোমরা এর প্রতিটি সুযোগ গ্রহণ করো, কারণ তোমাদের দেহ যেমন বাহুল্যপূর্ণ, তেমনি প্রবল তোমার রিরংসাও!
বাইরে থেকে, তোমার মনুষ্যত্বের জীবন খুবই ভালোভাবে বিন্যস্ত, কিন্তু তোমার জীবনের জ্ঞান সম্পর্কে কথা বলতে বলা হলে তোমার কিছুই বলার থাকে না; আর এই জ্ঞানের ক্ষেত্রে তুমি হতদরিদ্র। তোমাকে অবশ্যই সত্যের দ্বারা সজ্জিত হতে হবে! তোমার মনুষ্য জীবন ক্রমশ উন্নত হয়েছে, এবং তাই তোমার ভিতরের জীবনকেও বদলাতে হবে; তোমার চিন্তাভাবনাকে বদলে ফেলো, ঈশ্বর-বিশ্বাস বিষয়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গিকে রূপান্তরিত করো, তোমার অভ্যন্তরের জ্ঞান ও চিন্তাকে পাল্টাও, এবং বদলে ফেলো তোমার পূর্বধারণার মধ্যে বিদ্যমান ঈশ্বরের জ্ঞান। পরিচালিত হওয়ার মাধ্যমে, উদ্ঘাটন ও পুষ্টিসাধনের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তোমার নিজের বিষয়ে, মানব জীবন সম্বন্ধে এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস সম্পর্কে তোমার জ্ঞানের বদল ঘটাও; তোমার উপলব্ধিকে শুদ্ধতায় সক্ষম করে তোলো। এইভাবে, মানুষের অভ্যন্তরস্থ চিন্তাভাবনার বদল ঘটে, তার দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে, বদল ঘটে তার মানসিক মনোভাবের। শুধুমাত্র একেই জীবন চরিত্রের পরিবর্তন বলা যেতে পারে। তোমাকে সারাটা দিনমান ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করে, কিংবা জামা-কাপড় কাচাকাচি ও ধোয়াধুয়ি করে কাটিয়ে দিতে বলা হচ্ছে না। একটা স্বাভাবিক মনুষ্যজীবনকে ন্যূনতম স্বাভাবিকভাবেই সহনীয় হতে হবে। উপরন্তু, বাহ্যিক বিষয়গুলি সামলাবার সময়, তোমাকে তখনও অবশ্যই কিছুটা অন্তর্দৃষ্টি ও যুক্তির ব্যবহার করতে হবে; তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেকে জীবনের সত্য দ্বারা সজ্জিত করা। নিজেকে জীবনের জন্য সজ্জিত করে তোলার সময়, তোমাকে মনোযোগ দিতে হবে ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ভোজন ও পান করার প্রতি, তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বর-জ্ঞানের বিষয়ে কথা বলতে, মানুষের জীবন সম্পর্কে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে এবং বিশেষ করে, অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের দ্বারা সম্পাদিত কার্য বিষয়ে তোমার জ্ঞানের কথা বলতে সক্ষম হতে হবে। তুমি যেহেতু জীবনের অন্বেষণ করো, সেহেতু তোমাকে অবশ্যই এইসমস্ত কিছু দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করে তুলতে হবে। তুমি যখন ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ভোজন ও পান করো, তখন তোমাকে অবশ্যই সেই বাক্যসমূহের বিপরীতে তোমার নিজের অবস্থার বাস্তবতার পরিমাপ করতে হবে। অর্থাৎ, যখন তুমি তোমার বাস্তব অভিজ্ঞতার পথে তোমার নিজ দোষত্রুটিগুলি আবিষ্কার করবে, তখন তোমাকে অবশ্যই অনুশীলনের একটা পথ খুঁজে পেতে, তোমার ভুল অনুপ্রেরণা ও পূর্বধারণাগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হতে হবে। তুমি যদি সবসময় এই বিষয়গুলির জন্য প্রচেষ্টা করে চলো এবং এগুলি অর্জনের লক্ষ্যে মনপ্রাণ ঢেলে দাও, তাহলে অনুসরণ করার মতো তোমার একটি পথ থাকবে, তুমি রিক্ত বোধ করবে না, এবং এইভাবে তুমি একটি স্বাভাবিক জীবন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। শুধুমাত্র তখনই তুমি এমন একজন মানুষ হয়ে উঠতে পারবে যে নিজের জীবনে একটি দায়িত্বভার বহন করে নিয়ে চলে, যার বিশ্বাস রয়েছে। কিছু মানুষ ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করার পরেও কেন সেগুলির অনুশীলনে অক্ষম হয়? এই জন্যই কি নয় যে তারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিই অনুধাবন করতে পারে না? এই জন্যই কি নয় যে তারা জীবনকে গুরুত্বসহকারে নেয় না? তারা যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উপলব্ধি করতে পারে না এবং তাদের যে অনুশীলন করার কোন পথ নেই তার কারণ হল, তারা যখন ঈশ্বরের বাক্যগুলি পাঠ করে তখন তারা তাদের নিজস্ব পরিস্থিতির সাথে বাক্যগুলিকে সম্পর্কিত করতে পারে না, এবং তারা তাদের নিজস্ব পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতেও পারে না। কিছু কিছু মানুষ বলে: “আমি ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করি এবং তাদের সাথে আমার অবস্থার সম্পর্কস্থাপন করতে পারি, এবং আমি জানি যে আমি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দুর্বল ক্ষমতার অধিকারী, কিন্তু আমি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম।” তুমি শুধুমাত্র উপরিতলটুকুই দেখেছ; এমন অনেক বাস্তব জিনিস আছে যা তুমি জানো না: কীভাবে দেহের উপভোগকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়, কীভাবে নিজেকে বদলাবে, কীভাবে নিজের নৈতিকতা বিষয়ে ঔদ্ধত্যকে দূরে সরিয়ে রাখবে, কীভাবে এই বস্তুগুলিতে প্রবেশ করবে, কীভাবে তোমার ক্ষমতা বর্ধিত করবে, এবং কোন দিক থেকে শুরু করবে। তুমি শুধু উপরিভাগের কিছু কিছু জিনিসই উপলব্ধি করো, এবং তুমি শুধু জানো যে তুমি সত্যিই অত্যন্ত ভ্রষ্ট। তুমি যখন তোমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের সাথে সাক্ষাৎ করো, তখন তুমি যে কতটা ভ্রষ্ট তা নিয়ে তুমি কথা বলো, এবং দেখে মনে হয় যেন তুমি নিজেকে জানো এবং নিজের জীবনের একটা বড় দায়িত্বভার বহন করো। সত্যি বলতে কি, তোমার ভ্রষ্ট স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি, যা প্রমাণ করে যে তুমি অনুশীলনের পথ খুঁজে পাওনি। তুমি যদি গির্জার নেতৃত্ব দাও, তোমাকে অবশ্যই তাহলে তোমাকে ভ্রাতা ও ভগিনীদের অবস্থা উপলব্ধি করতে ও সেগুলির প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করতে সক্ষম হতে হবে। তাদের শুধু এইটুকু বললেই কি হবে: “তোমরা হলে আনুগত্যহীন এবং অনগ্রসর!”? না, তাদের আনুগত্যহীনতা এবং অনগ্রসরতা কীভাবে প্রকাশ পায় সে সম্পর্কেও তোমাকে নির্দিষ্ট করে বলতে হবে। তোমাকে অবশ্যই তাদের আনুগত্যহীন অবস্থা, তাদের অবাধ্য আচরণ এবং তাদের শয়তানসুলভ স্বভাব সম্পর্কে কথা বলতে হবে এবং তোমাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি এমনভাবে বলতে হবে যাতে তারা তোমার বাক্যের সত্যতা বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে প্রতীত হয়। তোমার বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাস্তব তথ্য এবং উদাহরণগুলি ব্যবহার করো, এবং ঠিক কীভাবে তারা বিদ্রোহী আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে তা বলো এবং অনুশীলনের পথ নির্দেশ করো—এইভাবেই মানুষকে প্রতীত করাতে হয়। যারা তা করে একমাত্র তারাই অন্যদের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম; সত্যের বাস্তবতা কেবল তাদেরই আছে।
তোমাদের এখন আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক সত্য জানানো হয়েছে, এবং তোমাকে অবশ্যই সেগুলির মূল্যায়ন করতে হবে। তোমাকে এই সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হতে হবে যে সাকুল্যে কতগুলি সত্য রয়েছে। একবার তুমি একজন মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের যে বিভিন্ন দিকগুলি থাকা উচিত সে সম্পর্কে, একজনের জীবন চরিত্র পরিবর্তন বা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে গভীরতা আনার প্রধান দিকগুলির বিষয়ে, এবং জ্ঞানার্জন ও অভিজ্ঞতা লাভের লক্ষ্যে যে ভ্রান্ত উপায়গুলি মানুষ যুগযুগান্ত ধরে প্রয়োগ করেছে সেগুলির সম্পর্কে জেনে গেলে এবং সেগুলির মধ্যে নিজেনিজেই পার্থক্যনির্ণয় করতে পারলে—শুধুমাত্র তখনই তুমি সঠিক পথে থাকবে। ধার্মিক মানুষেরা এমনভাবে বাইবেলের উপাসনা করে যেন এটাই ঈশ্বর; বিশেষ করে, নতুন নিয়মের চারটি সুসমাচারকে তারা মনে করে যেন সেগুলি যীশুর চারটি ভিন্ন ভিন্ন মুখ, এবং তারা পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মার ত্রয়ী রূপের কথা বলে। এই সবই অত্যন্ত হাস্যকর, এবং তোমাদের সকলকে এর গূঢ়মর্ম অনুধাবন করতে হবে; তার চেয়েও বড়ো কথা, তোমার ঈশ্বরের দেহরূপে পরিণত হওয়ার সারসত্যের এবং অন্তিম সময়ের কার্যের বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। এছাড়া অনুশীলনের সেই পুরানো পদ্ধতিগুলি, অনুশীলনের সাথে সম্পর্কিত সেই ভ্রান্ত যুক্তি এবং বিচ্যুতিগুলিও রয়েছে—যেমন, আত্মার মধ্যে বাস করা, পবিত্র আত্মার দ্বারা পূর্ণ হওয়া, যা-ই আসুক না কেন তার কাছে আত্মসমর্পণ করা, কর্তৃত্বের কাছে বশ্যতা স্বীকার করা—এগুলোও তোমাকে অবশ্যই জানতে হবে; মানুষ আগে কীভাবে অনুশীলন করত, এবং আজই বা মানুষকে কীভাবে অনুশীলন করতে হবে তাও তোমার জানা উচিত। গির্জায় নেতা ও কর্মীদের কীভাবে সহযোগিতা করা উচিত; কীভাবে নিজের নৈতিকতা বিষয়ে ঔদ্ধত্য এবং মেকি অনুকম্পাবোধকে একপাশে সরিয়ে রাখা যায়; কীভাবে ভ্রাতা ও ভগিনীদের পরস্পরের পাশাপাশি বসবাস করা উচিত; কীভাবে অন্যান্য মানুষের সাথে এবং ঈশ্বরের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায়; কীভাবে মানুষের জীবনে স্বাভাবিকতা অর্জন করতে হয়; আধ্যাত্মিক জীবনে মানুষের যা যা থাকা উচিত; কীভাবে তাদের ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করা উচিত; ঈশ্বরের কোন বাক্যগুলি জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত, কোনটির সম্পর্ক দর্শনের সাথে এবং কোনটিই বা অনুশীলনের পথের সাথে সম্পর্কিত—এই সবকিছুর বিষয়েই কি আলোচনা করা হয়নি? এই বাক্যগুলি তাদের সকলের জন্য উন্মুক্ত যারা সত্যের অন্বেষণ করে, এবং কাউকেই কোনোরকম অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। আজ, তোমার উচিত নির্ভরতার মানসিকতার উপর নির্ভর না করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ক্ষমতার চর্চা করা। ভবিষ্যতে, যখন তোমাদের পথ প্রদর্শনের কেউ থাকবে না, তখন তুমি আমার এই বাক্যগুলির কথা চিন্তা করবে। নিদারুণ ক্লেশের সময়ে, যখন গির্জার জীবন যাপন করা সম্ভব হয় না, যখন ভ্রাতা ও ভগিনীরা পরস্পরের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করতে পারে না, তাদের মধ্যে অধিকাংশই একলা থাকে, খুব বেশি হলে শুধুমাত্র নিজেদের স্থানীয় মানুষদের সাথেই বাক্বিনিময় করতে পারে, ঠিক এই সময়গুলিতেই তোমাদের বর্তমান অবস্থানের প্রেক্ষিতে, তোমরা কিছুতেই দৃঢ় অবস্থানে অবিচল থাকতে পারবে না। ক্লেশের মধ্যে, দৃঢ় থাকতে পারাটা অনেকের কাছেই কঠিন বলে মনে হয়। শুধুমাত্র তারাই উন্নতি করে যেতে এবং ধীরে ধীরে পরিশুদ্ধি ও রূপান্তর অর্জন করতে পারে যারা জীবন যাপনের রীতি জানে ও পর্যাপ্ত সত্য দ্বারা যারা সজ্জিত। ক্লেশের মধ্য দিয়ে যাওয়াটা মুখের কথা নয়; মাত্র কয়েকটা দিনেই যদি তুমি সেসব পেরিয়ে আসবে বলে মনে করো, তাহলে তোমার চিন্তাভাবনার বালখিল্যতাই প্রতিপন্ন হয়! তুমি মনে করো যে প্রচুর মতবাদ উপলব্ধি করলেই তুমি দৃঢ় অবস্থানে অবিচল থাকতে পারবে, কিন্তু বিষয়টি আদপেই সেরকমটা নয়! তুমি যদি ঈশ্বরের বাক্যগুলির মধ্যে থেকে অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলি চিনে নিতে না পারো, তুমি যদি সত্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি উপলব্ধি করতে না পারো, এবং তোমার যদি অনুশীলনের কোনো পথ না থাকে, তাহলে যখন সময় আসবে এবং তুমি অনভিপ্রেত কিছুর সম্মুখীন হবে, তখন তুমি বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়বে। তুমি শয়তানের প্রলোভন প্রতিরোধ করতে পারবে না, এবং পরিমার্জনার সূত্রপাত সহ্য করার ক্ষমতাও তোমার থাকবে না। তোমার মধ্যে যদি এতটুকুও সত্য না থাকে এবং যদি তোমার দর্শনের ঘাটতি থাকে, তাহলে সময় এলে, নিজের অধঃপতন তুমি কিছুতেই ঠেকাতে পারবে না। সকল আশা ত্যাগ করে তুমি বলবে, “ঠিক আছে, আমি যদি সেই মারাই যাই, তাহলে আমি বরং শাস্তির শেষ অবধি স্বীকার করে যাবো! শাস্তি পাওয়াই হোক, অথবা জ্বলন্ত হ্রদে নির্বাসিত হওয়াই হোক, তাই হোক তবে—যা-ই আসুক আমি সবই স্বীকার করে নেবো!” এটা সেবা-প্রদানকারীদের সময়ের মতই: কেউ কেউ ভাবতো যা-ই হোক না কেন তারা সেবা-প্রদানকারীই থাকবে, তাই তারা আর জীবনের অন্বেষণ করত না। তারা ধূমপান, পানাহার করত, নিজেদের দৈহিক ভোগ-বিলাস চরিতার্থ করত এবং যা মন চাইত তাই করত। কেউ কেউ সোজা কর্মের জগতে ফিরে যেত। আতিথ্যহীন পরিবেশও এইরকমই; যদি তুমি একে পরাভূত করতে না পারো, তবে যেইমাত্র নিজের উপর সামান্যতম নিয়ন্ত্রণ তুমি হারিয়ে, তখন তুমি সকল আশাও হারিয়ে ফেলবে। তুমি যদি শয়তানের প্রভাবকে কাটিয়ে উঠতে না পারো, তবে বুঝে ওঠার আগেই শয়তানের হাতে বন্দী হয়ে আবার তুমি ধ্বংসের হেফাজতে প্রেরিত হবে। সুতরাং, আজই তোমাকে সত্যের দ্বারা সজ্জিত হতে হবে; তোমাকে স্বাধীন জীবনযাপনে সক্ষম হয়ে উঠতে হবে; এবং, যখন ঈশ্বরের বাক্যগুলি পাঠ করবে, তখন তোমাকে অবশ্যই অনুশীলনের জন্য একটি পথের সন্ধান করতে সক্ষম হতে হবে। যদি তোমাকে জলসিঞ্চিত ও পরিচালিত করার মতো কোনো নেতা কিংবা কর্মী না থাকে, তাহলেও তোমাকে অনুসরণের একটি পথ খুঁজে পেতে, নিজের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি শনাক্ত করতে, যে সত্যের দ্বারা তোমার নিজেকে সজ্জিত করা উচিত এবং যে সত্য অনুশীলন করা উচিত তা খুঁজে বের করতে সক্ষম হতে হবে। পৃথিবীতে আগমনের পর ঈশ্বর কি অবিরাম মানুষকে সঙ্গ দিতে পারেন? তাদের পূর্বধারণা মতে, কেউ কেউ বিশ্বাস করে: “ঈশ্বর, তুমি যদি একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত আমাদের উপর কাজ না করো, তাহলে তোমার কাজ সমাপ্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হতে পারে না, কারণ শয়তান তোমাকে দোষারোপ করছে।” আমি তোমাদের বলি, একবার আমার বাক্যগুলির উচ্চারণ শেষ হলেই আমার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে যাবে। আমার কাজ তখনই শেষ হয়ে যাবে যখন আমার আর কিছু বলার থাকবে না। আমার কাজের সমাপ্তিই হবে শয়তানের পরাজয়ের প্রমাণ, এবং সেই অর্থে বলা যেতে পারে যে, শয়তানের কোনো অভিযোগ ছাড়াই এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আমার কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি তখনও তোমাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন না হয়, তবে তোমাদের মতো মানুষ পরিত্রাণের অতীত এবং তোমাদের বহিষ্কার করা হবে। আমি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কোনো কাজ করব না। আমি পৃথিবীতে আমার কাজ চালিয়ে যাব না যতক্ষণ না একটি মাত্রা পর্যন্ত তোমাদের জয় করা সম্পন্ন হয়েছে, এবং তোমরা সকলেরই সত্যের প্রতিটি দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছো, এবং তোমাদের ক্ষমতার উন্নতি ঘটেছে এবং তোমরা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে সাক্ষ্য বহন করছো। সেটা করা অসম্ভব হবে! আজ, আমি তোমাদের মধ্যে যে কাজ করি তা তোমাদের স্বাভাবিক মনুষ্যত্বের জীবনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য; এই কাজ হল একটি নতুন যুগকে আহ্বান করে আনার কাজ এবং মানবজাতিকে নতুন যুগের জীবনে চালিত করার কাজ। কাজটি ধাপে ধাপে সম্পাদিত হয় এবং সরাসরি তোমাদের মধ্যে বিকশিত হয়: আমি তোমাদের সামনা-সামনি শিক্ষা দিই; আমি তোমাদের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাই; তোমরা যাকিছু উপলব্ধি করো না আমি তা ব্যাখ্যা করি, তোমাদের যাকিছুর অভাব তা তোমাদের প্রদান করি। এটা বলা যেতে পারে যে, তোমাদের কাছে, এই সমস্ত কাজই হল তোমাদের জীবনের সংস্থান, যা তোমাদের একটি স্বাভাবিক মনুষ্য জীবনের পথও দেখায়; এর লক্ষ্যই ছিল বিশেষ করে অন্তিম সময়ে মানুষের এই গোষ্ঠীর জীবনের পুষ্টিসাধন করা। আমার কাছে, এই সমগ্র কাজের উদ্দেশ্য পুরনো যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করা; শয়তানের ক্ষেত্রে, আমি তাকে পরাজিত করতেই দেহরূপে পরিণত হয়েছিলাম। আমি এখন তোমাদের মধ্যে যে কাজ করি তা হল তোমাদের আজকের পুষ্টিসাধন এবং সময় মতো পরিত্রাণ করা, কিন্তু এই অল্প কয়েকটি বছরে, আমি তোমাদের সমস্ত সত্য, সমগ্র জীবননরীতি, এমনকি ভবিষ্যতের কার্যের কথাও বলব; এটা ভবিষ্যতে তোমাদের সকলকিছু স্বাভাবিকভাবে অনুভব করতে সক্ষম করে তোলার জন্য যথেষ্ট হবে। আমার সমস্ত বাক্যই শুধু তোমাদের হাতে আমি ভরসা করে অর্পণ করেছি। আমি অন্য কোন উপদেশ দিই না; আজ, আমি তোমাদের যে বাক্যগুলি বলি সেই সমস্তই হল তোমাদের প্রতি আমার উপদেশ, কারণ আজ আমার বলা অনেক বাক্যের সম্পর্কেই তোমাদের কোনও অভিজ্ঞতা নেই, এবং সেগুলির অন্তর্নিহিত অর্থও তোমরা উপলব্ধি করো না। একদিন, আমার আজকের কথা মতোই তোমাদের অভিজ্ঞতা ফলপ্রসূ হয়ে উঠবে। এই বাক্যগুলি হল তোমাদের আজকের জন্য কার্যকরী দর্শন, এবং সেগুলির উপরই তোমরা ভবিষ্যতে নির্ভর করবে; এগুলি হল আজকের জীবনের জন্য সংস্থান এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি উপদেশ, এবং এর চেয়ে ভালো উপদেশ আর কিছু হতে পারে না। এর কারণ, পৃথিবীবক্ষে আমার কার্যকাল ততটা দীর্ঘ নয় যতটা সময় ধরে তোমাদের আমার বাক্যগুলির অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে; আমি শুধু আমার কাজটুকু সম্পূর্ণ করছি, সেখানে তোমরা জীবনের অন্বেষণ করছ, যা এমন এক প্রক্রিয়া যার সঙ্গে একটি দীর্ঘ জীবনযাত্রা জড়িত। শুধুমাত্র অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা লাভ করার পরেই তোমরা জীবনরীতিকে সম্পূর্ণরূপে অর্জন করতে সক্ষম হবে; শুধুমাত্র তখনই তোমরা আমার আজকের বলা বাক্যগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ আঁচ করতে পারবে। যখন আমার বাক্যগুলিকে তোমরা করায়ত্ত করে ফেলবে, যখন তোমাদের প্রত্যেকে আমার সমস্ত অর্পিত দায়িত্ব গ্রহণ করে নেবে, একবার যখন আমি তোমাদের হাতে আমার যে দায়িত্ব অর্পণ করার ছিল তা সবই অর্পণ করে দেব, এবং যখন বাক্যের কাজ সমাপ্ত হয়ে যাব, তার মাধ্যমে যত বড় প্রভাবই অর্জিত হোক না কেন, তখনই ঈশ্বরের ইচ্ছার বাস্তবায়নও অর্জিত হবে। বিষয়টা তুমি যেমন কল্পনা করছ সেরকম নয়, এমন নয় যে তোমাকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পরিবর্তন করতে হবে; ঈশ্বর তোমার পূর্বধারণা অনুযায়ী কাজ করেন না।
মানুষ মাত্র কয়েকটা দিনেই তাদের জীবনে বিকাশ অর্জন করে ফেলে না। তারা প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করলেও, তা যথেষ্ট নয়। তাদেরকে নিজ নিজ জীবনে বিকাশের একটা পর্যায়ের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। এটা একটা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া। আজ মানুষের ক্ষমতা যেরকম, তার ভিত্তিতে তারা কী অর্জন করতে পারে? ঈশ্বর মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করেন, তাদের সহজাত ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত চাহিদা জ্ঞাপন করেন। ধরা যাক এই কাজটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একদল মানুষের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছে: সেক্ষেত্রে কথিত বাক্যগুলি তোমাদের প্রতি উচ্চারিত বাক্যগুলির চেয়ে উচ্চতর মার্গের হবে, দর্শন হবে উচ্চতর, এবং সত্যও হবে অনেক উচ্চতর। কিছু কিছু বাক্যকে হতে হবে আরো বেশি কঠোরতর, যা মানুষের জীবনে সংস্থান সরবরাহের কাজে আরও বেশি করে সক্ষম, আরও বেশি করে সক্ষম রহস্যের উদ্ঘাটনে। এইরকম মানুষজনের মধ্যে কথা বলার সময়, ঈশ্বর তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্থান করবেন। তোমাদের কাছে আজ যা চাহিদা রাখা হচ্ছে সেগুলিকে কঠোরতম বলা যেতে পারে; যদি এই কাজটি উচ্চতর ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের মাঝে সম্পাদিত হতো, তাহলে চাহিদাগুলিও হতো আরো বৃহত্তর। ঈশ্বরের সকল কার্যই মানুষের সহজাত ক্ষমতা অনুযায়ী সম্পাদিত হয়। মানুষ আজ যতদূর পর্যন্ত পরিবর্তিত ও বিজিত হয়েছে সেটাই হল সর্বোচ্চ অর্জনসাধ্য পরিমাণ; কার্যের এই পর্যায়টি কতটা কার্যকর হয়েছে তার পরিমাপ করতে নিজের পূর্বধারণাগুলির ব্যবহার কোরো না। তোমাদের মধ্যে সহজাতভাবে যা যা রয়েছে সেগুলির সম্পর্কে তোমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত, এবং নিজেদের সম্বন্ধে অতি উচ্চ ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। মূলত, তোমাদের মধ্যে কেউই জীবনের অন্বেষণ করোনি, বরং তোমরা ছিলে পথে-ঘাটে ধুরে বেড়ানো ভিক্ষুক মাত্র। তুমি যতদূর কল্পনা কর ঈশ্বরের তোমাদের উপর ততখানি কাজ করাটা, তোমাদের সকলকে সম্পূর্ণরূপে প্রতীত করে ভক্তিতে ভূম্যবলুণ্ঠিত করাটা, যেন তোমরা এক মহান দৃশ্য চাক্ষুষ করেছ—এটা নেহাতই অসম্ভব হবে! এটা এই জন্যই অসম্ভব যে, ঈশ্বরের অলৌকিক কার্যগুলি যে চাক্ষুষ করেনি সে আমার সকল কথা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে পারে না। এমনকি তোমরা যদি আমার বাক্যগুলি খুব খুঁটিয়ে পরীক্ষাও করতে, তাহলেও তোমরা সেগুলি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে না; এটাই হল মানুষের প্রকৃতি। যারা সত্যের অন্বেষণ করে তারা কিছু কিছু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাবে, সেখানে যারা সত্যের অন্বেষণ করে না তাদের একসময় যেটুকুও বা বিশ্বাস ছিল তা-ও খর্ব হয়ে যাবে এবং এমনকি অদৃশ্য হয়ে যেতেও পারে। তোমাদের সাথে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, তোমরা ঈশ্বরের বাক্যগুলির পূর্ণ রূপায়ণ না দেখা অবধি সেগুলি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারো না, এবং তাঁর অলৌকিক কার্যগুলি চাক্ষুষ না করা অবধি প্রতীত হও না। এইসব চাক্ষুষ না করে, কে-ই বা ঈশ্বরের সম্পূর্ণ অনুগত হতে পারে? আর তাই আমি বলি যে তোমরা যাকে বিশ্বাস করো তিনি ঈশ্বর নন, সে হল অলৌকিকতা। আমি এখন সত্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে স্পষ্ট কথা বলেছি; সেগুলির প্রতিটিই সম্পূর্ণ, এবং সেগুলির প্রতিটির মধ্যে একটি ঘনিষ্ট সংযোগ রয়েছে। তোমরা সেগুলি দেখেছ, এবং এখন তোমাকে সেগুলির অনুশীলন করতে হবে। আজ আমি তোমাকে পথ দেখাই, এবং ভবিষ্যতে তোমার নিজেকেই তার অনুশীলন করতে হবে। আমি এখন যে বাক্যগুলি বলি তা মানুষের প্রকৃত পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে মানুষের কাছে চাহিদা স্থাপন করে, এবং আমি তাদের প্রয়োজন ও তাদের অন্তর্নিহিত গুণাবলী অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করি। ব্যবহারিক ঈশ্বর পৃথিবীতে এসেছেন ব্যবহারিক কার্য সম্পাদন করতে, মানুষের প্রকৃত পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করতে। তিনি অযৌক্তিক নন। ঈশ্বর যখন কার্য করেন, তখন তিনি মানুষকে বলপ্রয়োগের দ্বারা বাধ্য করেন না। উদাহরণস্বরূপ, তুমি বিবাহ করবে কিনা তা তোমার পরিস্থিতির বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে স্থিরীকৃত হওয়া উচিত; তোমার কাছে সত্যকে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করা হয়েছে, এবং আমি তোমাকে বিরত করি না। কিছু কিছু মানুষের পরিবার তাদের উপর এমন নিপীড়ন চালায় যে তারা বিবাহ না করা পর্যন্ত ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে সক্ষম হয় না। এইভাবে, বিবাহ, বিপরীতক্রমে, তাদের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে। অন্যদের ক্ষেত্রে, বিবাহ কোনো কাজেই আসে না, বরং তাদের এক সময়ে যা ছিল তাও তাদের খোয়াতে হয়। তোমার নিজের ক্ষেত্রে বিষয়টি তোমার প্রকৃত পরিস্থিতি ও তোমার নিজস্ব সংকল্পের দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে। আমি এখানে তোমাদের উপর চাহিদা আরোপ করার জন্য নিয়ম ও প্রবিধান উদ্ভাবন করতে আসিনি। অনেকেই ক্রমাগত বলে চলে: “ঈশ্বর ব্যবহারিক; তাঁর কাজ বাস্তব-নির্ভর, এবং আমাদের পরিস্থিতির বাস্তবিকতার উপরও নির্ভর করে”—কিন্তু তুমি কি জানো ঠিক কী এই কাজটিকে বাস্তব করে তোলে? যথেষ্ট হয়েছে তোমাদের এইসব ফাঁকা বুলি! ঈশ্বরের কাজ বাস্তব ও বাস্তবিকতা ভিত্তিক; এর কোনো মতবাদ নেই, বরং এ হল সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত, এর সবটুকুই প্রকাশ্য এবং অকপট। এই নীতিকয়টির নির্দিষ্ট খুঁটিনাটিগুলি কী? তুমি কি বলতে পারো ঈশ্বরের কাজের কোন অংশগুলো ব্যবহারিক? তোমাকে অবশ্যই সবিস্তারে বলতে হবে, তোমার অবশ্যই একাধিক অভিজ্ঞতামূলক সাক্ষ্য থাকতে হবে, এবং তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের কার্যের এই বৈশিষ্ট্যটি সম্পর্কে অত্যন্ত স্পষ্ট হতে হবে—তোমাকে অবশ্যই বিষয়টা জানতে হবে, এবং একমাত্র তবেই তুমি এই কথাগুলি বলার যোগ্যতা লাভ করবে। তুমি কি উত্তর দিতে পারতে যদি কেউ তোমাকে জিজ্ঞাসা করতো: “পৃথিবীর বুকে অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের অবতার কী কাজ করেছেন? কেন তোমরা তাকে বাস্তববাদী ঈশ্বর বলে ডাকো? এখানে ‘বাস্তববাদী’ বলতে কী বোঝায়? তুমি কি তাঁর বাস্তববাদী কাজের বিষয়ে, তার মধ্যে নির্দিষ্টভাবে কী আছে সে বিষয়ে বলতে পারো? যীশু হলেন ঈশ্বরের মানব দেহে পরিণত হওয়া, এবং আজকের ঈশ্বরও হলেন ঈশ্বরের দেহরূপে পরিণত হওয়া, তাহলে তাঁদের মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে? আর সাদৃশ্যগুলিই বা কী? তাঁদের উভয়েই কী কাজ সম্পন্ন করেছেন?” এইসবই সাক্ষ্য বহন সম্পর্কিত প্রশ্ন! এই বিষয়গুলি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ো না। কেউ কেউ আবার বলে: “আজকের ঈশ্বরের কার্য হল বাস্তব। তা কখনই অলৌকিকতা ও বিস্ময়কর ঘটনার প্রদর্শন নয়”। তিনি কি সত্যিই অলৌকিক ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটান না? তুমি কি নিশ্চিত? তুমি কি জানো আমার কার্য সত্যিই কী? কেউ বলতেই পারে যে তিনি অলৌকিক ও বিস্ময়কর কাজ করেন না, কিন্তু তিনি যে কার্য করেন এবং যে বাক্যগুলি উচ্চারণ করেন সেসবই কি অলৌকিক নয়? কেউ বলতেই পারে যে তিনি অলৌকিক ও বিস্ময়কর কাজ করেন না, কিন্তু তা নির্ভর করে কীভাবে এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এটা কার প্রতি নির্দেশিত তার উপর। গির্জায় না গিয়ে, তিনি মানুষের অবস্থা অনাবৃত করে দেখিয়েছেন, এবং বাক্য উচ্চারণ ছাড়া আর কোনো কার্য না করেই তিনি মানুষকে সামনের দিকে চালিত করে নিয়ে গিয়েছেন—এগুলিও কি অলৌকিক ঘটনা নয়? শুধুমাত্র বাক্যের দ্বারাই তিনি মানুষকে জয় করেছেন, এবং মানুষ কোনো সম্ভাবনা বা আশা ছাড়াই সানন্দে তাঁকে অনুসরণ করে—এটাও কি একটা অলৌকিক ঘটনা নয়? যখন তিনি কথা বলেন, তাঁর বাক্যগুলি তখন মানুষের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট মানসিক অবস্থা সৃষ্টি করে। যদি তারা আনন্দ অনুভব না করে তবে তারা বিষণ্ণতা অনুভব করে; যদি তারা পরিমার্জনের অধীন না হয় তবে তারা শাস্তির অধীন। শুধুমাত্র মর্মভেদী কয়েকটি বাক্য দ্বারা, তিনি মানুষের উপর শাস্তি বহন করে আনেন—এটি কি অতিপ্রাকৃত নয়? মানুষ কি এমন কাজ করতে পারে? তুমি এত বছর ধরে বাইবেল পড়েছ, অথচ তুমি তার কিছুই উপলব্ধি করোনি, কোনো অন্তর্দৃষ্টি লাভ করোনি; তুমি বিশ্বাসের সেই সেকেলে, প্রথাগত উপায়গুলি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে অক্ষম ছিলে। তোমার কাছে বাইবেলের অর্থ নিরূপণ করার কোনোই উপায় নেই। অথচ তিনি বাইবেলকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পারেন—এটা কি অতিপ্রাকৃত কিছু নয়? পৃথিবীতে যখন ঈশ্বরের আগমন হয় তখন যদি তাঁর মধ্যে অতিপ্রাকৃত কিছু না থাকতো, তাহলে তিনি কি তোমাদের জয় করতে সক্ষম হতেন? তাঁর অসাধারণ, ঐশ্বরিক কাজ ছাড়া, তোমাদের মধ্যে কারই বা প্রত্যয় জন্মাতো? তোমার নজরে, মনে হয় যেন একজন স্বাভাবিক মানুষ তোমাদের সঙ্গে কাজ করছেন ও বসবাস করছেন—বাইরে থেকে, তাঁকে একজন স্বাভাবিক, সাধারণ মানুষ বলে মনে হয়; তুমি যা দেখছ তা সাধারণ মনুষ্যত্বের একটি বাহ্যিক চেহারা মাত্র, কিন্তু আসলে, এটি কর্মরত দেবত্ব। এটা স্বাভাবিক মনুষ্যত্ব নয়, এ হল দেবত্ব; এ হল কার্যরত স্বয়ং ঈশ্বর, যে কার্য তিনি স্বাভাবিক মনুষ্যত্ব ব্যবহার করে সম্পাদন করেন। এইভাবে, তাঁর কাজ একইসঙ্গে স্বাভাবিক, আবার তা অতিপ্রাকৃতও বটে। তিনি যে কাজ করেন তা মানুষের দ্বারা করা সম্ভব নয়; এবং যেহেতু কোনো স্বাভাবিক মানুষ তা করতে পারে না, তাই তা সম্পাদিত হয় এক অনন্যসাধারণ সত্তা দ্বারা। অথচ মনুষ্যত্ব নয়, দেবত্বই হল অনন্যসাধারণ; দেবত্ব, মনুষ্যত্ব থেকে পৃথক। যে ব্যক্তি পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত হয় সেও সাধারণ, স্বাভাবিক মনুষ্যত্ব, কিন্তু তারা এই কাজটি করতে অক্ষম। পার্থক্যটা এখানেই নিহিত। তুমি বলতে পারো: “ঈশ্বর কোনো অতিপ্রাকৃত ঈশ্বর নন; তিনি অতিপ্রাকৃত কিছুই করেন না। আমাদের ঈশ্বর এমন বাক্য বলেন যা ব্যবহারিক ও বাস্তব। তিনি বাস্তব এবং ব্যবহারিক কার্য সম্পাদন করতে গির্জায় আসেন। প্রতিদিন, তিনি আমাদের সাথে মুখোমুখি কথা বলেন, এবং মুখোমুখি বসে, তিনি আমাদের অবস্থাগুলির প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেন—আমাদের ঈশ্বর বাস্তব! তিনি আমাদের সঙ্গে বসবাস করেন, তাঁর সমস্তকিছুই সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক। তাঁর চেহারায় কোনোকিছুই তাঁকে ঈশ্বর হিসাবে স্বতন্ত্র করে তোলে না। কখনও কখনও এমনও হয় যে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং আমরা তাঁর ক্রোধের মহিমা দেখতে পাই, আবার কখনও কখনও তিনি হাসেন, এবং আমরা তাঁর স্মিত আচরণ অবলোকন করি। তিনি আকার ও আকৃতিসম্পন্ন স্বয়ং ঈশ্বর, রক্ত-মাংসে নির্মিত, যিনি বাস্তব ও প্রকৃত।” তুমি যখন এইভাবে সাক্ষ্য বহন করো, তখন এটা একটি অসম্পূর্ণ সাক্ষ্য। এটা অন্যদের কীভাবে সাহায্য করবে? তুমি যদি স্বয়ং ঈশ্বরের কার্যের অন্তর্নিহিত কাহিনী এবং সারসত্যের সাক্ষ্য দিতে না পারো, তাহলে তোমার এই “সাক্ষ্য” সাক্ষ্য বলে পরিগণিত হওয়ার অযোগ্য!
ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করা হল মুখ্যত ঈশ্বরের কার্য সম্পর্কে তোমার জ্ঞানের কথা বলা, ঈশ্বর কীভাবে মানুষকে জয় করেন, কীভাবে মানুষকে উদ্ধার করেন, কীভাবে মানুষকে রূপান্তরিত করেন সেসব বিষয়ে কথা বলা; সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশে মানুষকে কীভাবে তিনি পথ প্রদর্শন করেন, তাদের বিজিত হওয়ার, নিখুঁত হয়ে ওঠার, এবং উদ্ধার পাওয়ার সুযোগ প্রদান করেন সে বিষয়ে কথা বলা। সাক্ষ্য বহন করার অর্থ হল তাঁর কার্য ও তুমি যা কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করেছ সে সম্পর্কে কথা বলা। শুধুমাত্র তাঁর কার্যই তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, এবং শুধুমাত্র তাঁর কার্যই তাঁকে সর্বসমক্ষে সামগ্রিকভাবে প্রকাশ করতে পারে, তাঁর কার্য তাঁর সাক্ষ্য বহন করে। তাঁর কার্য ও উচ্চারণসমূহ প্রত্যক্ষ্যরূপে তাঁর আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে; তাঁর কার্য আত্মার দ্বারা সম্পন্ন হয় এবং তাঁর উচ্চারিত বাক্যসমূহ আত্মার দ্বারা উক্তহয়। এগুলি কেবল ঈশ্বরের অবতাররূপের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় মাত্র, কিন্তু, বাস্তবে, এগুলি হল আত্মার অভিব্যক্তি। তাঁর সম্পাদিত সকল কার্য এবং তাঁর কথিত সকল বাক্য তাঁর সারসত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। দেহরূপ ধারণ করেবং মানুষের মাঝে আসার পর, ঈশ্বর যদি কোনো বাক্য উচ্চারণ কিংবা কার্য সম্পাদন না করেই তোমাদের তাঁর বাস্তবতা, তাঁর স্বাভাবিকতা, এবং তাঁর সর্বশক্তিমানতা জানতে বলতেন, তাহলে তুমি কি তা করতে সক্ষম হতে? তুমি কি আত্মার সারসত্য কী তাজানতে সক্ষম হতে? তুমি কি তাঁর দেহরূপের বৈশিষ্ট্যগুলি কী তা জানতে সক্ষম হতে? শুধুমাত্র তোমরা তাঁর কার্যের প্রতিটি পর্যায়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ বলেই তিনি তোমাদের তাঁর সাক্ষ্য বহন করতে বলেন। যদি তোমাদের এই ধরনের অভিজ্ঞতা না থাকত, তাহলে তিনি তোমাদের সাক্ষ্য বহন করার জন্য জোর করতেন না। তাই, তুমি যখন ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করছ, তখন তুমি শুধুই তাঁর স্বাভাবিক মানবতার বহিরাঙ্গেরই সাক্ষ্য দিচ্ছ না, বরং তিনি যে কার্য করেন এবং তিনি যে পথে পরিচালিত করেন তারও সাক্ষ্য দিচ্ছ; তিনি কীভাবে তোমাকে জয় করেছেন এবং কোন কোন দিক দিয়ে তোমাকে নিখুঁত করে তোলা হয়েছে তার সাক্ষ্য তোমায় দিতে হবে। ঠিক এইরকম সাক্ষ্যই তোমার বহন করা উচিত। যেখানেই তুমি যাও সেখানেই যদি এই বলে চিৎকার করে ওঠো: “আমাদের ঈশ্বর কার্য সম্পাদন করতে এসেছেন, এবং তাঁর কাজ সত্যিই বাস্তবিক! তিনি আদৌ কোনো অতিপ্রাকৃত কাজ ছাড়াই, কোনোরকম অলৌকিক এবং বিস্ময়কর ঘটনা ছাড়াই আমাদের অর্জন করেছেন!”, অন্যেরা তখন জিজ্ঞাসা করবে: “তিনি অলৌকিক ও বিস্ময়কর কার্য করেন না বলে তুমি কী বোঝাতে চাইছো? অলৌকিক ও বিস্ময়কর কাজ না করে কীভাবে তিনি তোমাদের জয় করতে পেরেছেন?” আর তুমি জবাব দাও: “তিনি বাক্য উচ্চারণ করেন, এবং কোনোরকম বিস্ময়কর কিংবা অলৌকিক কিছুর প্রদর্শন ছাড়াই, তিনি আমাদের জয় করেছেন। তাঁর কার্য আমাদের জয় করেছে।” সবশেষে, তুমি যদি সারসত্য সম্পর্কে কোনোকিছু বলতে না পারো, তুমি যদি নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে না পারো, তাহলে তা কি প্রকৃত সাক্ষ্য? ঈশ্বরের অবতাররূপ যখন মানুষকে জয় করেন, তখন তা সম্পাদন করে তাঁর ঐশ্বরিক বাক্যগুলিই। মানবজাতি এটা সম্পন্ন করতে পারে না; কোনো নশ্বর জীবের পক্ষে অর্জনসাধ্য কাজ তা নয়, এবং এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী তারাও এটি করতে অক্ষম, কারণ তাঁর দেবত্ব যে কোনও সৃজিত সত্তার চেয়ে উচ্চতর। মানুষের কাছে এই কাজ অনন্যসাধারণ; যতোই হোক, স্রষ্টা যেকোনো সৃজিত সত্তার থেকে মহত্তর। সৃজিত সত্তারা সৃষ্টিকর্তার চেয়ে উচ্চতর হতে পারে না; তুমি যদি তাঁর চেয়ে উচ্চতর হতে, তাহলে তিনি তোমাকে জয় করতে সক্ষম হতেন না, এবং তিনি যে তোমাকে জয় করতে পারেন তার একমাত্র কারণ তিনি তোমার চেয়ে উচ্চতর। যিনি সকল মানবজাতিকে জয় করতে পারেন তিনি হলেন সৃষ্টিকর্তা, এবং তিনি ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারে না। এই বাক্যগুলি হল “সাক্ষ্য”—এমন সাক্ষ্যই তোমার বহন করা উচিত। ধাপে ধাপে, তুমি শাস্তি, বিচার, পরিমার্জনা, পরীক্ষা, বিপত্তি এবং ক্লেশের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ, এবং তোমাকে জয় করা হয়েছে; তুমি দেহের প্রত্যাশা, তোমার ব্যক্তিগত প্রেষণা, এবং দেহের অন্তরতম স্বার্থগুলি একপাশে সরিয়ে রেখেছ। অন্য কথায়, ঈশ্বরের বাক্যগুলি তোমার হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে জয় করেছে। যদিও তুমি তোমার জীবনে তাঁর চাহিদা মতো বিকাশ লাভ করনি, তবে তুমি এই সমস্ত কিছুই জানো এবং তিনি যা করেন তাতে তুমি সম্পূর্ণরূপে প্রতীত। সুতরাং, একে সাক্ষ্য বলা যেতে পারে, এমন সাক্ষ্য যা বাস্তব এবং সত্য। ঈশ্বর যে কার্য সম্পাদন করতে এসেছেন, বিচার ও শাস্তি প্রদানের কাজ, তা মানুষকে জয় করার জন্যই, কিন্তু তিনি তাঁর কাজ শেষ করেও আনছেন, যুগের অবসান ঘটাচ্ছেন এবং সমাপ্তির কার্য সম্পাদন করছেন। তিনি সমগ্র যুগের অবসান ঘটাচ্ছেন, সমগ্র মানবজাতিকে পরিত্রাণ করছেন, মানবজাতিতে শেষবারের মত পাপের হাত থেকে উদ্ধার করছেন; তাঁরই সৃষ্ট মানবজাতিকে তিনি সম্পূর্ণরূপে অর্জন করছেন। তোমার উচিত এই সমস্তকিছুর সাক্ষ্য বহন করা। তুমি ঈশ্বরের কার্যের এতকিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ, তুমি তা স্বচক্ষে দেখেছ এবং ব্যক্তিগতভাবে তা অনুভব করেছ; একেবারে শেষলগ্নে পৌঁছে যাওয়ার পর, উপর অর্পিত কর্তব্য পালনে তোমার অক্ষম হলে চলবে না। সেটা হলে আফসোসের শেষ থাকবে না! ভবিষ্যতে, যখন সুসমাচার প্রচার করা হবে, তখন তোমাকে নিজের জ্ঞানের কথা বলতে, নিজের অন্তরে তুমি যা অর্জন করেছ সকলের কাছে তার সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হতে হবে, এবং এই লক্ষ্যে কোনো প্রয়াসই বাদ দেওয়া যাবে না। একজন সৃজিত সত্তার এটাই অর্জনীয় হওয়া উচিত। ঈশ্বরের কার্যের এই পর্যায়ের প্রকৃত তাৎপর্য কী? এর ফলাফলই বা কী? আর মানুষের মধ্যে এর কতটাই বা সম্পাদিত হয়েছে? মানুষের কী করা উচিত? তাঁর পৃথিবীতে আগমনের পর থেকে ঈশ্বরের অবতারের দ্বারা সম্পাদিত সমস্ত কার্য সম্পর্কে যখন তোমরা সুস্পষ্টভাবে কথা বলতে পারবে, তখনই তোমাদের সাক্ষ্য সম্পূর্ণ হবে। তুমি যখন এই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বক্তব্য রাখতে পারবে, যথা: তাঁর কার্যেজের তাৎপর্য; তার বিষয়বস্তু; তার সারসত্য; কাজটি যে স্বভাবের প্রতিনিধিত্ব করছে; এবং তার নীতিসমূহ, তখনই প্রমাণিত হবে যে তুমি ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করার যোগ্য, প্রমাণিত হবে যে সত্যিই তুমি জ্ঞানের অধিকারী। তোমাদের কাছ থেকে আমার চাহিদা খুব বেশি উচ্চ নয়, এবং যারা যথার্থই অন্বেষণ করে তাদের সকলের দ্বারাই এগুলি অর্জনসাধ্য। তুমি যদি ঈশ্বরের একজন সাক্ষ্য হয়ে উঠতে স্থিরসংকল্প হও, তাহলে ঈশ্বর কোনটি ঘৃণা করেন ও কোনটি ভালোবাসেন তা তোমাকে উপলব্ধি করতে হবে। তুমি তাঁর কার্যের অনেককিছুর বিষয়েই অভিজ্ঞতা লাভ করেছ; এই কার্যের মধ্য দিয়ে, তোমাকে অবশ্যই তাঁর স্বভাব সম্পর্কে অবহিত হতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে তাঁর ইচ্ছা ও মানবজাতির কাছে তাঁর চাহিদাসমূহ, এবং এই জ্ঞানকে তাঁর সম্পর্কে সাক্ষ্য দানে ও তোমার কর্তব্য পালনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। তুমি হয়ত শুধু বলবে: “আমরা ঈশ্বরকে জানি। তাঁর বিচার ও শাস্তি খুবই কঠিন। তাঁর বাক্যগুলি অত্যন্ত কঠোর; তা ধার্মিক ও মহিমান্বিত, এবং যেকোনো মানুষের কাছে তা অপ্রতিরোধ্য,” কিন্তু পরিণামে এই বাক্যগুলি কি মানুষের জন্য সংস্থানকারী? মানুষের উপর এগুলির প্রভাব কী? তুমি কি সত্যিই জানো যে বিচার ও শাস্তির এই কার্যটি তোমার পক্ষে সর্বাধিক উপযোগী? ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তি তোমার বিদ্রোহী মনোভাব ও দুর্নীতিকেই অনাবৃত করছে, তাই নয় কি? বাক্যগুলি তোমার অন্তরের সেই নোংরা ও কলুষিত জিনিসগুলোকে প্রক্ষালিত করে বিদূরিত করতে পারে, তাই না? যদি কোন বিচার এবং শাস্তি না থাকত, তাহলে তোমার কী অবস্থা দাঁড়াতো? শয়তান যে তোমাকে সুগভীরতম মাত্রায় ভ্রষ্ট করেছে এই সত্যটা কি তুমি আদপেই উপলব্ধি করতে পেরেছ? আজ, তোমাদের এই জিনিসগুলির দ্বারা নিজেদের সজ্জিত করা এবং সেগুলিকে ভালভাবে জানা উচিত।
বর্তমান দিনে ঈশ্বর-বিশ্বাস বিষয়টা তোমার কল্পনায় বিশ্বাসের যে ধারণা তার মতো নাও হতে পারে—অর্থাৎ শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করা, প্রার্থনা করা, নৃত্য-গীত করা, তোমাদের কর্তব্য পালন করা এবং স্বাভাবিক মানবতার জীবনযাপন করাটাই যথেষ্ট নাও হতে পারে। বিশ্বাস কি এতটাই সহজ হতে পারে? ফলাফলগুলিই হল চাবিকাঠি। কিছু করার ক্ষেত্রে কতগুলি উপায় তোমার জানা আছে সেটা বিবেচ্য নয়; বরং, আসল কথাটা হল ঠিক কীভাবে তুমি সেরা ফলাফলটি অর্জন করতে পারো। তুমি হয়তো ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ধারণ করে রাখতে এবং তোমার সঞ্চিত জ্ঞানের কিছু কিছুর ব্যাখ্যা করতে সক্ষম, কিন্তু সেগুলিকে বাদ দিলে তোমার আর কিছুই বলার থাকে না। এটি এটাই দর্শায় যে তুমি শুধুই পাণ্ডিত্যপূর্ণ জ্ঞান ও মতবাদসমূহ সম্পর্কে কথা বলতেই সক্ষম, কিন্তু তোমার মধ্যে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের অভাব রয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ তা তুমি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে আজ চলবে না—বাস্তবতায় প্রবেশের জন্য উপলব্ধি করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ! নিজেকে এইভাবে প্রশিক্ষিত করতে শুরু কর: প্রথমে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করো; সেগুলির অন্তর্নিহিত আধ্যাত্মিক পরিভাষাগুলি ভালো করে জানো; সেগুলির মধ্যস্থ মূল দর্শনগুলি খুঁজে বের করো; অনুশীলন সম্পর্কিত অংশগুলি চিহ্নিত করো; এই সকল উপাদানগুলিকে এক এক করে একত্রিত করো; তোমার অভিজ্ঞতার অভ্যন্তরে সেগুলির মধ্যে প্রবেশ করো। এইগুলিই সেই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা তোমাকে উপলব্ধি করতেই হবে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ভোজন ও পান করার সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলনটি হল: ঈশ্বরের বাক্যসমূহের একটি পরিচ্ছেদ পাঠ করে ফেলার পর তোমাকে অবশ্যই দর্শন সম্পর্কিত মুখ্য অংশগুলি খুঁজে বের করতে সক্ষম হতে হবে, এবং একই সঙ্গে অনুশীলন সংক্রান্ত মুখ্য অংশগুলি খুঁজে পেতেও তোমাকে অবশ্যই সক্ষম হতে হবে; দর্শনগুলিকে ভিত হিসাবে ব্যবহার করো, এবং অনুশীলনকে ব্যবহার করো জীবনে তোমার পথপ্রদর্শক হিসাবে। তোমাদের মধ্যে এইগুলিরই সবচেয়ে বেশি অভাব রয়েছে, এবং এইগুলিই হল তোমাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা; তোমাদের অন্তরে, তোমরা কদাচিৎ এই বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দাও। সাধারণত, তোমাদের সকলেই অবস্থান কর এক আলস্যপূর্ণ অনুপ্রেরণাবিহীন অবস্থার মধ্যে, ব্যক্তিগত কোনো ত্যাগস্বীকারে তোমরা অনিচ্ছুক; অথবা তোমরা নিষ্ক্রিয়ভাবে অপেক্ষা কর, কেউ কেউ তো অভিযোগও জানায়; তারা ঈশ্বরের কাজের লক্ষ্য ও তাৎপর্যগুলি উপলব্ধি করে না, এবং তাদের পক্ষে সত্য অন্বেষণ করাটা কঠিন। এইধরনের মানুষ সত্যকে ঘৃণা করে এবং এদের অবশেষে বহিষ্কার করা হবে। এদের মধ্যে কাউকেই নিখুঁত করে তোলা যাবে না, এবং এদের কেউই হয়ত টিকে থাকবে না। মানুষের মধ্যে যদি শয়তানের শক্তিকে প্রতিহত করার মতো এতটুকুও স্থিরসংকল্প না থাকে, তাহলে তাদের কোনো আশা নেই!
এখন, তোমাদের অন্বেষণ ফলপ্রসূ হয়েছে কিনা তা পরিমিত হয় তোমরা বর্তমানে কীসের অধিকারী তার নিরিখে। তোমাদের ফলাফল নির্ণয় করতে এটাই ব্যবহৃত হয়; অর্থাৎ, তোমরা যা যা ত্যাগস্বীকার করেছ এবং তোমরা যা যা কাজ করেছ তার মাধ্যমেই তোমাদের ফলাফল প্রকাশিত হয়। তোমাদের অন্বেষণ, তোমাদের বিশ্বাস এবং তোমাদের কর্মের দ্বারাই তোমাদের ফলাফল জ্ঞাপন করা হবে। তোমাদের সকলের মধ্যে, এরকম অনেকেই আছে যারা ইতিমধ্যেই পরিত্রাণ লাভের ঊর্দ্ধে, কারণ আজ হল মানুষের পরিণাম উদ্ঘাটনের দিন, এবং আমি আমার কাজে কোনোরকম মূঢ়তার পরিচয় দেব না; আমি তাদের নেতৃত্ব দেব না যারা পরবর্তী যুগে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণের অতীত। একটা সময় আমার কাজ সমাপ্ত হবে। আমি সেইসব দুর্গন্ধযুক্ত, নির্জীব শবদেহের উপর কাজ করব না যেগুলির পরিত্রাণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়; এখনই হল মানুষের উদ্ধার লাভের অন্তিম সময়, এবং আমি কোনো অনর্থক কাজ করব না। নিজ ব্যর্থতার কারণে স্বর্গ-মর্ত্যকে গালি কোরো না—বিশ্বের সমাপ্তিলগ্ন ঘনিয়ে আসছে। এটা অনিবার্য। পরিস্থিতি এই পর্যায়েই উপনীত হয়েছে, আর মানুষ হিসাবে তুমি কিছুতেই এটা থামাতে পারবে না; তুমি তোমার ইচ্ছামত পরিস্থিতির বদল ঘটাতে পারো না। অতীতে, সত্য অন্বেষণের জন্য তুমি কোনো মূল্য চোকাওনি এবং তুমি বিশ্বস্তও ছিলে না; আজ, সময় হয়েছে, এখন তুমি পরিত্রাণের ঊর্ধ্বে; আর আগামীকাল, তোমাকে বহিষ্কার করা হবে, এবং তোমার পরিত্রাণ লাভের আর কোনো অবকাশই থাকবে না। যদিও আমি কোমল-হৃদয় এবং তোমার উদ্ধারের জন্য আমি নিরতিশয় চেষ্টা করছি, কিন্তু তুমি যদি তোমার নিজের দিক থেকে কোনো প্রচেষ্টাই না করো কিংবা নিজের জন্য কিছুই না ভাবো, তাহলে আমার কী-ই বা করার থাকতে পারে? যারা শুধুমাত্র নিজেদের ঐহিক দেহের কথাই ভাবে এবং স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করে; যারা বিশ্বাস করে বলে মনে হলেও আদপে সত্যিই বিশ্বাস করে না; যারা মন্দ ঔষধ ও যাদুবিদ্যায় রত; যারা লম্পট, শতচ্ছিন্ন এবং জরাজীর্ণ; যারা যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত সামগ্রী ও তাঁর সম্পদ চুরি করে নেয়; যারা উৎকোচ ভালোবাসে; যারা অলসভাবে স্বর্গারোহণের স্বপ্ন দেখে; যারা উদ্ধত এবং দাম্ভিক, যারা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত খ্যাতি এবং ঐশ্বর্যের জন্য সংগ্রাম করে; যারা অসঙ্গত গুজব রটায়; যারা স্বয়ং ঈশ্বরের নিন্দা করে; যারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিচার এবং অপবাদ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করে না; যারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপদল গঠন করে এবং স্বাধীনতা চায়; যারা নিজেদেরকে ঈশ্বরের ঊর্ধ্বে স্থাপন করে; সেই সকল লঘুচিত্ত যুবা, মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক নর-নারী যারা পরকীয়ার জালে আটকা পড়ে আছে; সেই সমস্ত নারী-পুরুষ যারা ব্যক্তিগত খ্যাতি এবং বিত্ত উপভোগ করে এবং অন্যদের মধ্যে ব্যক্তিগত মর্যাদার অন্বেষণ করে; সেইসব অনুতাপহীন মানুষ যারা পাপের ফাঁদে আটকা পড়েছে—তারা সকলেই কি পরিত্রাণের অতীত নয়? ব্যাভিচার, পাপাচার, অশুভ ওষুধ, যাদুবিদ্যা, অভক্তি এবং অশিষ্ট কথা—এই সবই তোমাদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে; তোমাদের মধ্যে সত্য এবং জীবনের বাক্যসমূহ পদদলিত হয়েছে, এবং পবিত্র ভাষা হয়ে উঠেছে অপবিত্র। তোমরা, অইহুদীরা, কলুষ ও অবাধ্যতায় স্ফীত হয়ে উঠেছ! তোমাদের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে? যারা পার্থিব দেহকে ভালোবাসে, যারা দেহ নিয়ে যাদুবিদ্যায় রত হয় এবং যারা ব্যাভিচারী পাপের ফাঁদে আটকা পড়ে থাকে, তাদের বেঁচে থাকার ধৃষ্টতা হয় কীভাবে! তুমি কি জানো না যে তোমাদের মতো মানুষ হল এমন কীটাণুকীট যারা পরিত্রাণের অতীত? এটা-ওটা দাবি করার অধিকার তোমরা পাও কী করে? আজ পর্যন্ত, যারা সত্যকে ভালোবাসে না বরং শুধু দেহকেই ভালোবাসে তাদের মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তনটুকুও ঘটেনি—এরকম মানুষগুলি কীভাবে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে? যারা জীবনপ্রণালীকে ভালোবাসে না, যারা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করে না এবং তাঁর সাক্ষ্য বহন করে না, যারা নিজেদের পদমর্যাদার খাতিরে নানাবিধ ফন্দি-ফিকির করে, যারা নিজেদের গুণকীর্তণে রত—তারা কি আজও একই রকম রয়ে যায়নি? তাদের উদ্ধার করার মূল্য কী? তুমি পরিত্রাণ লাভ করতে পারবে কিনা তা তুমি কতটা বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা তুমি কত বছর যাবৎ কাজ করে আসছ তার উপর নির্ভর করে না, তুমি কতগুলি শংসাপত্র সংগ্রহ করেছ তার উপর তো তা আরোই নির্ভর করে না। বরং, এটা নির্ভর করে তোমার অন্বেষণ ফল দিয়েছে কিনা তার উপর। তোমার জানা উচিত যে যারা পরিত্রাণ পায় তারা হল সেইসব “গাছ” যাতে ফল ধরে, সেইসব গাছ নয় যাতে সবুজ পল্লবদাম এবং প্রচুর ফুল থাকা সত্ত্বেও কোনো ফল ধরে না। তুমি যদি বহু বছর পথ-পথে ঘুরে বেড়িয়ে অতিবাহিত করে থাকো, তাতে কীই বা আসে যায়? তোমার সাক্ষ্য কোথায়? ঈশ্বরের প্রতি তোমার শ্রদ্ধাবোধ তোমার নিজের প্রতি ভালোবাসা এবং তোমার লালসাপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার তুলনায় অনেক কম—এই ধরনের মানুষ কি অধঃপতিত নয়? তারা কীভাবে পরিত্রাণ লাভের ক্ষেত্রে একটি নমুনা এবং আদর্শ হতে পারে? তোমার প্রকৃতি সংশোধনাতীত, তুমি অত্যন্ত বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন, তুমি পরিত্রাণ লাভের অতীত! এই ধরনের মানুষজনই কি তারা নয় যাদের বহিষ্কার করা হবে? আমার কার্যের সমাপ্তির কালই কি তোমার অন্তিম দিনের অভ্যাগমের সময় নয়? আমি তোমাদের মধ্যে এত কাজ করেছি এবং এত অজস্র বাক্য বলেছি—এর কতটুকু সত্যিই তোমাদের কর্ণগোচর হয়েছে? এর কতটুকু তুমি আজ অবধি মান্য করেছ? যখন আমার কাজ সমাপ্ত হবে, তখনই সেই সময় আসবে যখন তুমি আমার বিরোধিতা করা বন্ধ করবে, যখন তুমি আমার বিরুদ্ধাচরণে ক্ষান্ত হবে। আমার কাজ করাকালীন, তোমরা ক্রমাগত আমার বিরুদ্ধাচরণ করে চলো; তোমরা কখনই আমার বাক্যসমূহ পালন করো না। আমি আমার কাজ করি, আর তুমিও নিজের “কাজ” করে যাও, তৈরী করে নাও তোমার নিজের ছোট্ট একটা সাম্রারাজ্য। তোমরা একদল শৃগাল কিংবা সারমেয় ছাড়া আর কিছুই নও, সমস্তকিছুই করছ আমার বিরুদ্ধাচার করে! যারা তোমাদের একান্তভাবে ভালোবাসে তাদের নিজের আলিঙ্গনে আনতে তোমরা অবিরাম চেষ্টা করে চলেছ—কোথায় তোমাদের শ্রদ্ধাবোধ নিবেদন? তোমাদের সকল কাজই প্রতারণাপূর্ণ! তোমাদের না আছে কোনো আজ্ঞাকারিতা, আর না আছে কোনো শ্রদ্ধাবোধ, এবং তোমাদের করা সমস্ত কাজই শুধু প্রতারণাপূর্ণ ও ঈশ্বরনিন্দাসূচক! এরকম মানুষরা কি উদ্ধার লাভ করতে পারে? যে সকল পুরুষ যৌনতার দিক দিয়ে নৈতিকতাবিবর্জিত ও লম্পট তারা সবসময়ই নিজেদের ভোগবিলাসের জন্য ছলাকলায় দক্ষ পতিতাদের কাছে টানতে চায়। যৌনতার দিক থেকে নৈতিকতাহীন এইধরনের শয়তানদের আমি কখনই পরিত্রাণ দেব না। আমি তোমাদের, এই জাতীয় কলুষিত দানবদের ঘৃণা করি, এবং তোমাদের এই কামলোলুপতা ও ছিনালিপনা তোমাদের নরকে নিমজ্জিত করবে। আত্মপক্ষ সমর্থনে তোমাদের কী-ই বা আর বলার আছে? তোমরা, এই কলুষিত দানব আর অশুভ আত্মারা ঘৃণা উদ্রেককর! তোমরা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক! এইরকম আবর্জনারা কীকরে উদ্ধার পেতে পারে? যারা পাপের জালে আটকা পড়ে আছে তারপরেও কি তাদের উদ্ধার করা যায়? আজ, এই সত্য, এই পথ, এবং এই জীবন তোমাদের আকর্ষণ করে না; বরং তোমরা আকৃষ্ট হও পাপাচারের প্রতি; অর্থের প্রতি; প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি আর মুনাফার প্রতি; দৈহিক উপভোগের প্রতি; পুরুষদের সুদর্শন চেহারা ও মহিলাদের মনমুগ্ধকর সৌন্দর্যের প্রতি। আমাদের রাজ্যে প্রবেশের জন্য তোমাদের কোন যোগ্যতা রয়েছে? তোমাদের প্রতিমূর্তি ঈশ্বরের চেয়েও বড়, তোমাদের পদমর্যাদা এমনকি ঈশ্বরের চেয়েও উচ্চতর, মানুষের মাঝে তোমাদের প্রতিপত্তি সম্পর্কে তো আরোই কিছু বলার নেই—তোমরা এমন এক উপাস্যবস্তুতে পরিণত হয়েছ মানুষ যার আরাধনা করে। তুমি কি একজন প্রধান দেবদূতে পরিণত হওনি? যখন মানুষের ফলাফলসমূহ প্রকাশিত করা হবে, ঠিক সেই সময়টায় পরিত্রাণের কাজও সমাপ্তির মুখে এসে পৌঁছবে, তখন তোমাদের মধ্যে অনেকেই পরিত্রাণের অতীত শবদেহে পরিণত হবে এবং অবশ্যই তাদের বহিষ্কার করা হবে। পরিত্রাণের কার্যের সময়, সকল মানুষের প্রতি আমি সদয় ও কল্যাণকর। কার্য যখন সমাপ্ত হবে, বিভিন্ন ধরনের মানুষের ফলাফলও তখন প্রকাশ করা হবে, এবং সেই সময়, আমি আর সদয় ও সদাশয় থাকব না, কারণ মানুষের ফলাফলগুলি তখন প্রকাশিত হয়ে যাবে, এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ প্রকার অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে যাবে, এবং তখন পরিত্রাণের আর কোনো কার্য সম্পাদনের কোনো উপযোগিতা থাকবে না, কারণ পরিত্রাণের যুগ তখন অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে, এবং, একবার অতিক্রান্ত হয়ে গেলে, তা আর ফিরবে না।