মুখবন্ধ
ঈশ্বরের বাক্যের এই অংশটি চারটি ভাগে বিভক্ত, যেগুলি সবই ১৯৯২ সালের জুন থেকে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে খ্রীষ্টের দ্বারা ব্যক্ত হয়েছিল। এর মধ্যে অধিকাংশই গির্জাগুলিতে ভ্রমণকালীন খ্রীষ্টের ধর্মোপদেশ এবং আলাপ-আলোচনার রেকর্ডিং-এর উপরে ভিত্তি করে রচিত। কোনোভাবেই সেগুলির কোনো রূপান্তর করা হয়নি বা পরবর্তীকালে তা খ্রীষ্টের দ্বারা পরিবর্তিতও হয় নি। অবশিষ্ট অংশগুলি ব্যক্তিগতভাবে খ্রীষ্টের দ্বারা লিখিত হয়েছিল (খ্রীষ্ট যখন লেখেন, তখন তিনি চিন্তাভাবনার অবকাশমাত্র গ্রহণ না করে বা কোনো সংশোধন-পরিমার্জন ব্যতিরেকেই, একটি একক অধিবেশনে তা শেষ করেন, এবং তাঁর বাক্যগুলি নিঃসন্দেহে সামগ্রিকভাবে পবিত্র আত্মার অভিব্যক্তি)। এই দুই ধরনের উচ্চারণকে বিচ্ছিন্ন রাখার পরিবর্তে, এদের প্রকাশকালের আদি অনুক্রম বজায় রেখে আমরা এগুলি একত্রে উপস্থাপিত করেছি; এরকম উপস্থাপন আমাদের ঈশ্বরের উচ্চারণের সামগ্রিকতার পরিপ্রেক্ষিত থেক তাঁর কার্যের ধাপগুলি দেখার, এবং প্রতিটি পর্যায়ে তিনি কীভাবে কাজ করেন তা বোঝার সুযোগ করে দেয়, যা ঈশ্বরের কার্যের পর্যায়সমূহ এবং ঈশ্বরের প্রজ্ঞা বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের ক্ষেত্রে উপযোগী।
“গির্জা পরিভ্রমণকালে খ্রিষ্টের বাক্যসমূহ I”-র প্রথম আটটি অধ্যায়কে একত্রে ‘পথ’ হিসাব অভিহিত করা হয়—এগুলি খ্রীষ্টের কথিত বাক্যের একটি ক্ষুদ্র অংশ যখন তিনি মানুষের সঙ্গে সমান অবস্থানে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের আপাত স্বাদহীনতা সত্ত্বেও এগুলি মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসা এবং উদ্বেগে পরিপূর্ণ। এর আগে, ঈশ্বর তৃতীয় স্বর্গের পরিপ্রেক্ষিত থেকে কথা বলেছিলেন, যা তাঁর এবং মানুষের মধ্যে একটি বড় ব্যবধান উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, এবং যার কারণে মানুষ ঈশ্বরের সান্নিধ্যে যেতে ভয় পেতে শুরু করেছিল, তাঁর কাছে গিয়ে জীবনের সংস্থান প্রার্থনা করা তো দূর অস্ত। “পন্থা”-য় তাই, ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে তাদের সমপর্যায়ের হয়ে কথা বলেছিলেন এবং পথের দিকনির্দেশ করেছিলেন, এইভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে তার প্রকৃত অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছিলেন; মানুষ আর সন্দেহ করেনি যে ঈশ্বর তখনো কথা বলার একটা পদ্ধতির ব্যবহার করছিলেন কিনা, এবং মৃত্যুর পরীক্ষার আতঙ্কে তারা আর শঙ্কাতাড়িত ছিল না। ঈশ্বর তৃতীয় স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, মানুষ জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদ থেকে ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে এসে হাজির হয়েছিল, সেবা-প্রদানকারীদের ভূতকে তারা বর্জন করেছিল, এবং নবজাত গোবৎসের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে তারা ঈশ্বরের বাক্যের দীক্ষা গ্রহণ করেছিল। তখনই একমাত্র, ঈশ্বর তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে কথা বলতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাদের জীবন সরবরাহের কার্য আরো বেশি করে করতে পেরেছিলেন। ঈশ্বরের নিজেকে মানুষের স্তরে নামিয়ে আনার উদ্দেশ্য ছিল মানুষের কাছাকাছি যাওয়া, তাদের থেকে তাঁর দূরত্ব হ্রাস করা, নিজেকে মানুষের স্বীকৃতি এবং আস্থা অর্জনের সুযোগ দেওয়া এবং মানুষের মধ্যে জীবনের অন্বেষণ এবং ঈশ্বরের অনুসরণ করার মতো প্রত্যয় জাগিয়ে তোলা। এককথায় “পন্থা” র আটটি অধ্যায়কে মানুষের হৃদয়ের দ্বার উন্মোচনের জন্য ঈশ্বরের হাতের চাবিকাঠি বলা যেতে পারে এবং অধ্যায়গুলি একত্রে চিনি-প্রলিপ্ত এক বড়ি তৈরি করে, যা মানুষকে তিনি প্রদান করেন। কেবলমাত্র ঈশ্বরের এই কাজের কারণেই ঈশ্বরের পুনরাবৃত্ত শিক্ষাদান এবং তিরস্কারের প্রতি মানুষ গভীর মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়। বলা যায়, কেবল এরপরেই ঈশ্বর কার্যের এই চলতি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জীবন সরবরাহের এবং সত্য প্রকাশের কাজ শুরু করেছিলেন, যে সময় তিনি উচ্চারণ করে চলেছিলেন: “বিশ্বাসীদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত” এবং “ঈশ্বরের কাজের পথে”…। এইরকম এক পদ্ধতি কি ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং তাঁর আন্তরিক অভিপ্রায়কে প্রদর্শন করে না? এটি খ্রীষ্টের জীবন সরবরাহের একেবারে শুরুর দিক, তাই এই সত্যগুলি পরবর্তী পর্বের তুলনায় কিছুটা অগভীর। এর পশ্চাতে নিহিত নীতিটি খুবই সরল: ঈশ্বর মানবজাতির চাহিদা অনুযায়ী কার্য সম্পন্ন করেন। তিনি অন্ধের মত কাজ করেন না বা কথাও বলেন না; একমাত্র ঈশ্বরই সম্পূর্ণরূপে মানুষের চাহিদা উপলব্ধি করতে পারেন, এবং অন্য কারোরই মানুষের তরে অধিকতর প্রেম ও উপলব্ধি নেই।
“কাজ এবং প্রবেশ”-এর এক থেকে দশ পর্যন্ত উচ্চারণগুলিতে ঈশ্বরের বাক্য এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে। এর ফলে, এই উচ্চারণগুলিকে শুরুতে রাখা হয়েছে। পরবর্তীকালে, “গির্জা পরিভ্রমণকালে খ্রিষ্টের বাক্যসমূহ II” কথিত হয়েছিল। এই পর্যায়ে, ঈশ্বর তাঁর অনুসরণকারীদের কাছে আরো সবিস্তার দাবি রেখেছিলেন, যে দাবিগুলির মধ্যে ছিল মানুষের জীবনশৈলী সম্পর্কে জ্ঞান, তাদের যোগ্যতার কাছ থেকে কী প্রয়োজন, ইত্যাদি। যেহেতু এই মানুষগুলি ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর ছিল, এবং ঈশ্বরের স্বরূপ ও সারসত্য সম্পর্কে তাদের আর কোন সন্দেহ ছিল না, তাই ঈশ্বরও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের তাঁর নিজের পরিবারের সদস্য মনে করতে শুরু করেছিলেন, সৃষ্টির আদি থেকে আজ পর্যন্ত ঈশ্বরের কার্যের নেপথ্য সত্য বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছিলেন, বাইবেলের পশ্চাতে নিহিত সত্য প্রকাশ করেছিলেন, এবং ঈশ্বরের অবতাররূপ গ্রহণের প্রকৃত তাৎপর্য বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এই অংশে ঈশ্বরের উচ্চারণ মানুষকে তাঁর এবং তাঁর কার্যের সারসত্য সম্পর্কে এক উন্নততর উপলব্ধি দান করেছিল, এবং এটি তাদের অনুধাবন করার সুযোগ দিয়েছিল যে ঈশ্বরের পরিত্রাণ থেকে যা তারা অর্জন করেছে তা সমগ্র অতীত ব্যাপী নবী এবং প্রেরিত শিষ্যদের অর্জনকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরের বাক্যের প্রতিটি ছত্র থেকে, তুমি তাঁর প্রজ্ঞার প্রতিটি বিন্দু উপলব্ধি করতে পারবে, পাশাপাশি, মানুষের জন্য তাঁর বিবেকবান ভালোবাসা এবং উদ্বেগও টের পাবে। এই বাক্যগুলি ব্যক্ত করার পাশাপাশি, ঈশ্বর সর্বসমক্ষে একের পর এক মানুষের পূর্বলব্ধ ধারণা এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস, এবং এমন সব জিনিস যা মানুষ আগে কল্পনাও করেনি, সেই সঙ্গে মানুষকে ভবিষ্যতে যে পথে হাঁটতে হবে সেটাও প্রকাশ করেছিলেন। সম্ভবত, সম্যকভাবে এই ‘সংকীর্ণ’ প্রেমটিই মানুষ অনুভব করতে সক্ষম! সর্বোপরি, ঈশ্বর মানুষকে তার প্রয়োজনীয় সমস্তকিছুই দিয়েছিলেন এবং তারা যা চেয়েছিল তার সবই দিয়েছিলেন, নির্দ্বিধায় এবং বিনিময়ে কোনকিছুর প্রত্যাশা না করেই দিয়েছিলেন।
এই অংশে বেশ কিছু বিশেষ অধ্যায় বাইবেলের উল্লেখ করে। বহু সহস্র বছর ধরে বাইবেল মানব ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে আছে। অধিকন্তু, মানুষ বাইবেলকে ঈশ্বর জ্ঞান করে, এতটাই যে অন্তিম সময়ে এসে তা ঈশ্বরের স্থান গ্রহণ করেছে, যা ঈশ্বরকে বিরক্ত করে তোলে। তাই, অবসর মতো বাইবেলের নেপথ্যকাহিনী এবং উৎসের প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা দিতে ঈশ্বর বাধিত বোধ করেছিলেন; তিনি যদি তা না করতেন, তবে বাইবেল মানুষের হৃদয়ে ঈশ্বরের স্থান অধিকার করেই থাকত, এবং লোকেরা ঈশ্বরের কাজের পরিমাপ ও দোষ ধরতে বাইবেলের বাক্যসমূহ ব্যবহার করত। বাইবেলের সারসত্য, গঠন এবং ত্রুটিগুলি ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে, ঈশ্বর বাইবেলের অস্তিত্বকে কোনোক্রমেই অস্বীকার করছিলেন না, বা এর সমালোচনাও করছিলেন না; বরং, তিনি একটি যথাযথ ও সঙ্গত বিবরণ দিচ্ছিলেন, যা বাইবেলের আদি ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করেছিল, বাইবেল সম্পর্কে মানুষের যে ভুল ধারণাগুলি ছিল তিনি তার মোকাবিলা করেছিলেন, এবং মানুষকে বাইবেল সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিলেন, যাতে তারা আর বাইবেলকে পূজা না করে, এবং পথবিচ্যুত থেকে না যায়; অর্থাৎ, যাতে তারা বাইবেলের প্রতি তাদের অন্ধ বিশ্বাসকে আর ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও ঈশ্বরের আরাধনা ভেবে ভুল না করে, আর যেন এমনকি বাইবেলের প্রকৃত পটভূমি এবং ব্যর্থতাগুলির সম্মুখীন হতেও ভয় না পায়। একবার যদি মানুষের বাইবেল সম্পর্কে এক নিখাদ উপলব্ধি তৈরি হয়ে যায়, তখন তারা কোনোরকম বিবেক-দংশন ছাড়াই এটিকে পরিত্যাগ করে সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের নতুন বাক্যগুলি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এই অধ্যায়সমূহে এটাই ঈশ্বরের লক্ষ্য। যে সত্যটি ঈশ্বর মানুষকে এখানে বলতে চান, সেটি হল, কোনো তত্ত্ব বা তথ্যই ঈশ্বরের বর্তমান কার্য বা বাক্যের জায়গা নিতে পারে না, এবং কোনকিছু ঈশ্বরের স্থানে দাঁড়াতেও পারে না। মানুষ যদি বাইবেলের ফাঁদ এড়াতে না পারে, তাহলে তারা কোনোদিনই ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে পারবে না। যদি তারা ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই প্রথমে নিজেদের হৃদয় থেকে সেই সবকিছুকে ধুয়ে-মুছে ফেলতে হবে যা ঈশ্বরকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে; তাহলেই তারা ঈশ্বরের কাছে সন্তোষজনক হবে। যদিও, ঈশ্বর এখানে শুধুমাত্র বাইবেলই ব্যাখ্যা করেন, তবু ভুলে যেও না যে, বাইবেলকে বাদ দিয়েও এমন আরো অনেক ভ্রান্ত বস্তু রয়েছে মানুষ প্রকৃতই যাদের উপাসনা করে; যেগুলি সত্যই ঈশ্বরের থেকে আগত কেবল সেগুলিরই উপাসনা তারা করে না। ঈশ্বর বাইবেলকে শুধু এক উদাহরণ ব্যবহার করেন মানুষকে এ কথা স্মরণ করাতে যে, তারা যেন ভ্রান্ত পথ অবলম্বন না করে, এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করাকালীন এবং তাঁর বাক্যকে গ্রহন করাকালীন তারা যেন আবার কোনো চরমপন্থা অবলম্বন করে বিভ্রান্তির শিকার না হয়।
ঈশ্বর মানুষকে যে বাক্যগুলি প্রদান করেন, সেগুলি অগভীর থেকে গভীরে যায়। তাঁর কথনের বিষয়বস্তু মানুষের বাহ্যিক আচরণ এবং ক্রিয়াকলাপ থেকে তাদের কলুষিত স্বভাবের দিকে ক্রমাগত অগ্রগমন ঘটায়, যেখান থেকে ঈশ্বর তাঁর ভাষাগত বল্লমের অগ্রভাগকে মানুষের আত্মার গভীরতম অংশ, অর্থাৎ তাদের উপাদানের দিকে নিশানা করেন। “গির্জা পরিভ্রমণকালে খ্রিষ্টের বাক্যসমূহ III”-এর উচ্চারণকালে, ঈশ্বরের উচ্চারণ মানুষের সারসত্য এবং স্বরূপ, এবং একজন সত্যিকারের মানুষ হওয়া কাকে বলে—মানুষের জীবন-প্রবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত এই গভীরতম সত্য এবং অত্যাবশ্যক প্রশ্নগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করে। নিশ্চিত ভাবেই, “গির্জা পরিভ্রমণকালে খ্রিষ্টের বাক্যসমূহ I”-এ ঈশ্বর মানুষকে যে সত্য প্রদান করেছিলেন, সেকথা পুণঃস্মরণ করলে দেখা যায় “গির্জা পরিভ্রমণকালে খ্রিষ্টের বাক্যসমূহ III”-এর বিষয়বস্তু তুলনামূলকভাবে বিস্ময়কর রকমের গভীর। এই পর্বের বাক্যগুলি মানুষের ভবিষ্যৎ পন্থা এবং কীভাবে তাদের নিখুঁত করা যায়, এই বিষয়গুলিকে ছুঁয়ে যায়; একই সঙ্গে তা মানবজাতির ভবিষ্যৎ গন্তব্য, এবং ঈশ্বর ও মানুষ একত্রে কীভাবে স্থিতাবস্থায় প্রবেশ করবে, সে বিষয়েও আলোচনা করে। (এটা বলা যেতে পারে, আজ পর্যন্ত, এইগুলিই সবচেয়ে সহজবোধ্য বাক্য যা ঈশ্বর মানুষের কাছে তাদের উপাদান, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য বিষয়ে ব্যক্ত করেছেন।) ঈশ্বরের আশা, সেই মানুষেরাই এই বাক্যগুলি পড়বে যারা নিজেদেরকে মানবিক পূর্বধারণা এবং কল্পনা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, যারা তাদের হৃদয়ের গভীরে ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্যের বিশুদ্ধ উপলব্ধি লাভে সক্ষম। তদুপরি, তিনি আশা করেন যে, যারা এই বাক্যগুলি পাঠ করবে তারা সকলেই তাঁর উচ্চারণগুলিকে সত্য, পন্থা এবং জীবন হিসাবে গ্রহণ করতে পারবে এবং ঈশ্বরকে তারা লঘুভাবে নেবে না বা তাঁকে মিষ্টি কথার দ্বারা প্রতারিত করবে না। মানুষ যদি ঈশ্বরকে পরীক্ষা করার বা যাচাই করার মনোভাব নিয়ে এই বাক্যগুলি পাঠ করে, তবে এই উচ্চারণগুলি থেকে তাদের কোনো উপলব্ধিই অর্জিত হবে না। একমাত্র যারা সত্যের অন্বেষণ করে, যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে দৃঢ়সংকল্প এবং যাদের মনে তাঁর বিষয়ে লেশমাত্র সন্দেহ নেই, তারাই এই কথাগুলি গ্রহণ করার উপযুক্ত।
“গির্জা পরিভ্রমণকালে খ্রিষ্টের বাক্যসমূহ IV” হল ঈশ্বরের দৈব উচ্চারণের আরেকটি শ্রেণী যা “সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি ঈশ্বরের বাক্য”-র জের অনুসরণ করে। এই বিভাগে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি ঈশ্বরের উপদেশ, শিক্ষা, উদ্ঘাটনসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: “যতক্ষণে তুমি যীশুর আধ্যাত্মিক দেহ প্রত্যক্ষ করবে, ততক্ষণে ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করে ফেলবেন”, “যারা খ্রীষ্টের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ তারা অবশ্যই ঈশ্বরের বিরোধীপক্ষ”। এতে মানবজাতির কাছে ঈশ্বরের সুনির্দিষ্টতম চাহিদাগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: “তোমার নিয়তির জন্য যথাযথ সৎকার্যসমূহ প্রস্তুত করো”, “তিনটি সাবধানবাণী”, “অধর্ম মানবজাতিকে নরকের দিকে নিয়ে যাবে”। বিভিন্ন দিক আলোচিত হয়, যেমন সব ধরণের লোকেদের জন্য উদ্ঘাটন ও বিচার এবং ঈশ্বরকে কীভাবে জানা যায় সে বিষয়ে কথাবার্তা। বলা যেতে পারে যে, এই অংশটি হল মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের বিচারের সারকথা। ঈশ্বরের উচ্চারণের এই অধ্যায়টির সবচেয়ে অবিস্মরণীয় অংশ হল, ঈশ্বর যখন তাঁর কার্যে যবনিকাপাত ঘটাতে চলেছেন, তখনই তিনি মানুষের একেবারে অস্থিমজ্জায় যা রয়েছে তা প্রকাশ করেছিলেন: রয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা। তাঁর উদ্দেশ্য হল মানুষ যেন নীচের সত্যটি সবার শেষে জানে এবং তাদের হৃদয়ের গভীরতম অংশে তা এক চিরস্থায়ী রেখাপাত করে: কতদিন ধরে তুমি ঈশ্বরের অনুসরণ করছ তাতে কিছু যায় আসে না—এখনো তোমার প্রকৃতি হল ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। অন্যভাবে বললে, ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করাটা মানুষের স্বভাবেই রয়েছে, কারণ মানুষ তাদের জীবনে চূড়ান্ত পরিপক্বতা অর্জন করতে অক্ষম, এবং তাদের স্বভাবে কেবল কিছু আপেক্ষিক পরিবর্তনই সাধিত হতে পারে। যদিও এই দুই অধ্যায়, “বিশ্বাসঘাতকতা (১)” এবং “বিশ্বাসঘাতকতা (২)” মানুষকে বড় একটি আঘাত দেয়, তবু এগুলি প্রকৃতই মানুষের প্রতি ঈশ্বরের সবচেয়ে যথাযথ ও হিতৈষী সতর্কবাণী। অন্ততপক্ষে, মানুষ যদি আত্মতৃপ্ত এবং আত্মগর্বে গর্বিত হয়, তাহলে এই দুটি অধ্যায় পাঠ করার পরে, তাদের পাপাচারকে সংযত করবে এবং তারা শান্ত হয়ে উঠবে। এই দুটি অধ্যায়ের মাধ্যমে, ঈশ্বর সমস্ত মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তোমার জীবন যতই পরিণত হোক না কেন, তোমার অভিজ্ঞতা যতই গভীর হোক না কেন, তোমার আত্মবিশ্বাস যত প্রবলই হোক না কেন, তোমার জন্মস্থান ও গন্তব্য নির্বিশেষে, ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার যে প্রকৃতি তোমার মধ্যে নিহিত তা যে কোন সময় এবং যে কোন স্থানে আত্মপ্রকাশ করতে বাধ্য। ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে যা বলতে চান, তা হল: ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা প্রতিটি মানুষের জন্মগত প্রকৃতি। বলাই বাহুল্য, এই দুটি অধ্যায় প্রকাশ করার পিছনে ঈশ্বরের অভিপ্রায় মানবজাতিকে পরিত্যাগ করা বা অভিযুক্ত করার অজুহাত খোঁজা নয়, বরং মানুষকে মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে আরো সচেতন করা, যাতে ঈশ্বরের পথনির্দেশনা পাওয়ার জন্য তারা সবসময় তাঁর সম্মুখে সতর্কভাবে জীবনযাপন করতে পারে, যা তাদের ঈশ্বরের সান্নিধ্য হারিয়ে ফেলা থেকে এবং প্রত্যাবর্তনরহিত পথে পদার্পণ করা থেকে নিবৃত্ত করবে। যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করে তাদের সকলের জন্য এই দুটি অধ্যায় এক বিপদ সঙ্কেত। আশা করি, মানুষ ঈশ্বরের আন্তরিক অভিপ্রায় বুঝতে পারবে; যতোই হোক, এই বাক্যগুলি সবই অবিসংবাদিত সত্য—তাহলে ঈশ্বর কখন এবং কীভাবে এগুলি ব্যক্ত করেছিলেন তা নিয়ে মানুষের তর্কাতর্কি করার দরকারটা কী? ঈশ্বর যদি এই সমস্ত কিছু নিজের মনেই চেপে রাখতেন এবং তাঁর এগুলি উচ্চারণ করার উপযুক্ত সময় হয়েছে বলে কবে মানুষের মনে হবে তার জন্য অপেক্ষা করতেন, তাহলে কি খুব দেরি হয়ে যেত না? সেই উপযুক্ততম সময় কবে আসতো?
এই চারটি অধ্যায়ে ঈশ্বর একাধিক পদ্ধতি এবং পরিপ্রেক্ষিত কাজে লাগান। উদাহরণস্বরূপ, কখনো তিনি ব্যঙ্গবিদ্রুপের ব্যবহার করেন, এবং কখনো তিনি প্রত্যক্ষ সংস্থান এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতি ব্যবহার করেন; কখনো তিনি উদাহরণ প্রয়োগ করেন, এবং কখনো বা তিনি রূঢ় তিরস্কার ব্যবহার করেন। সব মিলিয়ে, বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতির সবগুলিই রয়েছে, যার লক্ষ্য হল মানুষের বিভিন্ন অবস্থা এবং রুচির চাহিদা পূরণ করা। তাঁর কথনের বিষয়বস্তু এবং পদ্ধতির বদলের সাথে সাথে তাঁর কথা বলার পরিপ্রেক্ষিতও বদলে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কখনো তিনি বলেন, “আমি” বা “আমাকে”; অর্থাৎ, তিনি মানুষের সঙ্গে স্বয়ং ঈশ্বরের পরিপ্রেক্ষিত থেকে কথা বলেন। কখনো তিনি তৃতীয় পুরুষে কথা বলেন, যেমন, ‘ঈশ্বর’ এইরকম বা ওইরকম, ইত্যাদি, আর অন্য কিছু সময়ে তিনি মানুষের পরিপ্রেক্ষিত থেকেও কথা বলেন। যে পরিপ্রেক্ষিত থেকেই তিনি কথা বলুন না কেন, তাঁর সারসত্য কখনো বদলায় না, কারণ যেভাবেই তিনি কথা বলুন না কেন, যাকিছু তিনি প্রকাশ করেন তার সবটুকুই স্বয়ং ঈশ্বরের সারসত্য—এটাই সার্বিক সত্য এবং মানবজাতির এরই প্রয়োজন।