অধ্যায় ৪৬

এই সমস্ত বাক্যের মধ্যে, কোনোটিই বর্তমান বাক্যসমূহ অপেক্ষা অধিক অবিস্মরণীয় নয়। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পূর্বে মানুষের অবস্থা অথবা স্বর্গের রহস্যাবলীর উদ্ঘাটন ঘটিয়েছিল, তথাপি এই বর্তমান উচ্চারণ অতীতের মতো নয়। তা বিদ্রূপ বা কৌতুক করে না, বরং সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত কিছু: এ যেন ঈশ্বর উপবিষ্ট হয়ে শান্তভাবে মানুষের সাথে আলাপচারিতা করছেন। তাঁর অভিপ্রায় কী? তোমার কেমন উপলব্ধি হয় যখন ঈশ্বর বলেন, “আজ, ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বে আমি নবকার্যের সূত্রপাত করেছি। ধরাধামের মানুষকে এক নতুন সূচনা প্রদান করেছি, এবং তাদের সকলকে আমার বাসগৃহ পরিত্যাগ করতে বলেছি। এবং মানুষ সততই যেহেতু নিজেদের ভোগবাসনা চরিতার্থ করতে পছন্দ করে, সেহেতু আমি তাদের আত্মসচেতন হওয়ার, এবং আমার কার্যকে সর্বদাই বিঘ্নিত না করার পরামর্শ দিই”? এবং ঈশ্বর-কথিত এই “নতুন সূচনা”-টি কী? পূর্বেও ঈশ্বর মানুষকে প্রস্থান করার পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু তখন ঈশ্বরের অভিপ্রায় ছিল তাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা নেওয়া। সুতরাং আজ, যখন তিনি এক ভিন্ন স্বরভঙ্গিতে বাক্যোচ্চারণ করেন, তখন তিনি কি তাঁর বক্তব্যে আন্তরিক, না কি কাপট্যের আশ্রয় নিচ্ছেন? পূর্বে, ঈশ্বরোক্ত পরীক্ষাগুলির সম্পর্কে মানুষ অবগত ছিল না। কেবল সেবা-প্রদানকারীদের কার্যপর্যায়গুলির মধ্য দিয়েই তারা ঈশ্বরের পরীক্ষাসমূহকে চাক্ষুষ করেছিল এবং সেগুলির বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল। এই ভাবে, সেই সময় থেকে, পিতরের শত-শত পরীক্ষার দৃষ্টান্তের কারণে, ভ্রান্তিবশত মানুষ প্রায়শই “এটি ঈশ্বরের পরীক্ষা ছিল” ভেবে বসতো। তদুপরি, ঈশ্বরের বাক্যসমূহে বাস্তব তথ্যাদি কদাচিৎই প্রকাশ পেতো। সেকারণেই, মানুষ ঈশ্বরের পরীক্ষার বিষয়ে অন্ধ বিশ্বাসের মধ্যে আরো গভীরভাবে নিমজ্জিত হয়েছিল, সুতরাং ঈশ্বরোক্ত সকল বাক্যকে কখনোই তারা ঈশ্বর-সম্পাদিত সত্যের কার্য বলে বিশ্বাস করেনি; পরিবর্তে, মনে করেছিল যে, অন্য কোনো করণীয় কাজ না থাকায়, মানুষকে পরখ করার নিমিত্ত ঈশ্বর সুনির্দিষ্টভাবে বাক্যের ব্যবহার করছেন। এধরনের, নৈরাশ্যজনক তথাপি আশাপ্রদ বলে প্রতিভাত পরীক্ষাসমূহের মাঝে, মানুষ অনুসরণ চালিয়েছিল, এবং সেকারণেই ঈশ্বরের এই “যারা রয়ে যাবে তাদের দুর্ভাগ্য ভোগের সম্ভাবনা অধিক” উক্তিটির পরেও অনুসরণকার্যেই মানুষ তাদের মনোযোগ নিয়োজিত রেখেছিল, সেহেতু প্রস্থান করার কোনো অভিপ্রায় তাদের ছিল না। এরকম বিভ্রমের মাঝে মানুষ অনুসরণ করেছিল, তাদের একজনও এবিষয়ে সুনিশ্চিত হওয়ার সাহস করেনি যে কোনো আশাই ছিল না—এই হল ঈশ্বরের জয়লাভের আংশিক প্রমাণ। ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ প্রতিপন্ন করে যে সমস্তকিছুকে নিপুণ পরিচালনার দ্বারা তিনি স্বীয় সেবাকার্যে নিয়োজিত করেন। মানুষের বিভ্রমসমূহ, স্থান-কাল নির্বিশেষে, ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করা থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করে, সুতরাং এই পর্যায় চলাকালীন ঈশ্বর মানুষের ত্রুটিপূর্ণ প্রণোদনাসমূহকে তাদের দিয়ে স্বীয় সাক্ষ্যবহনের কাজে ব্যবহার করেন, ঈশ্বর যখন বলেন, “মানুষের একটি অংশকে আমি অর্জন করেছি”, তখন এই-ই হল সেই উক্তির গভীর তাৎপর্য। মানুষের প্রণোদনাসমূহকে শয়তান ব্যবহার করে বিঘ্নসৃষ্টির কাজে, সেখানে ঈশ্বর সেগুলি ব্যবহার করেন তাকে দিয়ে সেবাদান করাতে—এই-ই হল ঈশ্বরের এই বাক্যসমূহের সম্যক অর্থ যে “মানুষ মনে করে যে কৌশলপ্রয়োগে ভিতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে, কিন্তু তাদের নকল প্রবেশপত্রগুলি আমায় প্রদান করামাত্র আমি তৎক্ষণাৎ সেগুলি অগ্নিময় গহ্বরে নিক্ষেপ করি, এবং নিজেদের ‘অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টা’-কে দগ্ধীভূত হতে দেখে তারা আশা হারিয়ে ফেলে।” নিপুণ পরিচালনার দ্বারা ঈশ্বর সমস্তকিছুকে দিয়ে সেবাপ্রদানের কাজ করিয়ে নেন, এবং সেকারণেই মানুষের বিভিন্ন মতামতকে তিনি পাশ কাটিয়ে যান না, বরং বলিষ্ঠকণ্ঠে তাদের তিনি প্রস্থান করতে বলেন; এই-ই হল ঈশ্বরের কার্যের বিস্ময়করতা ও প্রজ্ঞা—অকপট বাক্যাবলী ও পদ্ধতিকে একত্রে সম্মিলিত করে মানুষকে তিনি বিহ্বল ও দিশেহারা করে ছাড়েন। এর থেকে দেখা যায় যে ঈশ্বর বস্তুতই মানুষকে তাঁর গৃহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হতে বলছেন, এই বাক্য কোনো প্রকারের পরীক্ষা নয়, এবং এই সুযোগকে গ্রহণ করে ঈশ্বর উচ্চারণ করেন, “তথাপি মানুষকে আমি এ-ও জানাই যে আশীর্বাদলাভে ব্যর্থ হলে কেউ যেন আমার সম্পর্কে অনুযোগ না করে।” ঈশ্বরের বাক্যসমূহ অকৃত্রিম নাকি অসত্য কেউই তা উপলব্ধি করতে পারে না, তথাপি এই সুযোগ ঈশ্বর ব্যবহার করেন মানুষকে সুস্থিত করতে, তাদের প্রস্থান-বাসনার অপনোদন ঘটাতে। সুতরাং, কোনোদিন তারা যদি অভিশপ্ত হয়, তাহলে ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা তারা পূর্বাহ্নেই সতর্ক থাকতে পারবে, ঠিক মানুষ যেমনটা বলে যে “শ্রুতিকটু বাক্য আখেরে ফলদায়ী”। বর্তমানে মানুষের ঈশ্বর-প্রেম ঐকান্তিক ও আন্তরিক, এবং সেহেতু যে বাক্যসমূহের সত্যাসত্যতা বিষয়ে তারা অনিশ্চিত, সেগুলির মাধ্যমেই তারা বিজিত হয় এবং ঈশ্বরকে ভালোবাসতে পারে, একারণেই ঈশ্বর বলেছিলেন “আমার মহান কার্য ইতিমধ্যেই আমি সম্পন্ন করেছি”। ঈশ্বর যখন বলেন, “আমার আশা তারা তাদের উদ্বর্তনের নিজস্ব পথ খুঁজে নেবে। এবিষয়ে আমি ক্ষমতাহীন”, তখন তা হল ঈশ্বরের এই সকল বাক্য উচ্চারণের বাস্তবিকতা—তথাপি মানুষ তদ্রুপ মনে করে না; পরিবর্তে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের প্রতি বিন্দুমাত্র মনোযোগ ব্যতিরেকেই তারা নিরন্তর অনুসরণ করেছে। সেই অর্থেই, ঈশ্বর যখন বলে, “ভবিষ্যতে, আমাদের মধ্যে আর কখনো কোনো বাক্যালাপ হবে না, আর কখনো আলাপচারিতা করার মতো আমাদের কিছু থাকবে না, একে অপরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে আমরা দুজনেই নিজ-নিজ রাস্তায় চলবো”, তখন এই বাক্যসমূহ বাস্তব, কিছুমাত্র কলুষিত নয়। মানুষ যা-ই ভাবুক না কেন, ঈশ্বরের “অযৌক্তিকতা” এমনই। শয়তানের সম্মুখে ঈশ্বর ইতিমধ্যেই সাক্ষ্য বহন করেছেন, এবং ঈশ্বর বলেছিলেন যে, স্থান-কাল নির্বিশেষে, তাঁকে পরিত্যাগ করে কোনো মানুষকেই তিনি যেতে দেবেন না—সুতরাং কার্যের এই ধাপটি সম্পূর্ণ হয়েছে, এবং মানুষের অনুযোগসমূহের প্রতি ঈশ্বর কোনো কর্ণপাত করেন না। তথাপি সূচনা থেকেই ঈশ্বর তা স্পষ্টতই ব্যক্ত করেছেন, ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে, বাধ্য হয়ে নিজেদের ক্রোধকে গলাধঃকরণ এবং জিহ্বাকে সংযত করতে হয়। ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যে লড়াইটি সম্পূর্ণত মানুষকে কেন্দ্র করে। নিজেদের উপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই; তারা নিতান্তই পুত্তলি মাত্র, সেখানে ঈশ্বর ও শয়তান দৃশ্যপটের অন্তরাল থেকে তাদের চালিত করেন। ঈশ্বর যখন স্বীয় সাক্ষ্য বহনের কার্যে মানুষকে ব্যবহার করেন, তখন তাদেরকে তাঁর সেবাকার্যে প্রযুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি চিন্তনীয় ও সম্ভাব্য যাবতীয় প্রচেষ্টা চালান, মানুষকে তিনি শয়তানের সুনিপুণ পরিচালনার, উপরন্তু ঈশ্বরের নির্দেশনার বশবর্তী করে তোলেন। এবং ঈশ্বরের কাঙ্ক্ষিত সাক্ষ্যবহন সমাপ্ত হয়ে গেলে মানুষকে তিনি একপাশে নিক্ষেপ করে যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় ফেলে রেখে যান, অথচ এমন ভান করেন যেন তাদের বিষয়ে তাঁর কিছুই করার নেই। পুনরায় যখন তিনি মানুষকে ব্যবহার করতে অভিলাষী হন, তখন আরেকবার তাদের তুলে এনে নিজকর্মে প্রযুক্ত করেন, এবং মানুষের এবিষয়ে লেশমাত্র সচেতনতা নেই। তারা নিছকই স্বীয় মালিকের ইচ্ছানুসারে ব্যবহৃত কোনো বৃষ বা অশ্বসন্নিভ, নিজেদের উপর তাদের কারোরই কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিষয়টি কিছুটা দুঃখজনক শোনাতে পারে, কিন্তু নিজেদের উপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকুক বা না-থাকুক, ঈশ্বরের নিমিত্ত সেবাদান এক গৌরবের বিষয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার মতো কিছু নয়। মনে হয় বুঝি ঈশ্বরের এমনতরো আচরণই বিধেয়। সর্বশক্তিমানের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হওয়া কি গর্ব অনুভব করার যোগ্য কোনো বিষয় নয়? তাহলে, তোমার কী মনে হয়? কখনো কি তুমি ঈশ্বরের নিমিত্ত সেবাপ্রদানের সংকল্প গ্রহণ করেছো? এমন কি হতে পারে যে আজও তুমি নিজের স্বাধীনতা-সন্ধানের অধিকারকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাও?

যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বরের সকল কার্য শুভ ও অনুকরণীয়, এবং চূড়ান্ত বিচারে, মানুষ ও ঈশ্বর স্বতন্ত্র। এর ভিত্তিতে, এক মানবিক হৃদয় নিয়ে তোমার ঈশ্বরকে ভালোবাসা উচিত, তোমার ভালোবাসার বিষয়ে ঈশ্বরের কোনো বিবেচনা থাকুক বা না-থাকুক। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ প্রদর্শন করে যে ঈশ্বরের অন্তঃকরণেও এক গভীর বেদনাবোধ রয়েছে। শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্যাবলীর কারণেই মানুষ পরিমার্জিত হয়। তবু, যতোই হোক, এই কার্যটি পূর্বেই নিষ্পন্ন হয়েছে—তাহলে, ঈশ্বর অতঃপর ঠিক কী করবেন? অদ্যাবধি তা এক অজ্ঞাত রহস্যই রয়ে গিয়েছে, এবং সেকারণেই মানুষ এখনো তা উপলব্ধি করতে, বা তা-র তল পেতে অপারগ, তারা শুধু যথাসময়ে ঈশ্বরের সুরে গান গাইতে পারে। যা-ই হোক, ঈশ্বরোক্ত সমস্তকিছুই বাস্তব, এবং এগুলির সমুদয়ই বাস্তবায়িত হয়—এবিষয়ে সন্দেহের অবকাশমাত্র নেই!

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৪৪ ও ৪৫

পরবর্তী: মুখবন্ধ

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন