অধ্যায় ৪২

আজকের উচ্চারণসমূহে মানুষ কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে কিনা তা আমার জানা নেই। কিছু মানুষ অল্পবিস্তর লক্ষ্য করে থাকতে পারে, কিন্তু সেকথা সংশয়মুক্তভাবে বলার সাহস করে না। বাকিরা সম্ভবত কিছুই অনুভব করেনি। মাসের দ্বাদশ ও পঞ্চদশ দিনের মাঝে ঈশ্বরের উচ্চারণে এত ব্যাপক এক পরিবর্তন ঘটলো কেন? তোমরা কি তা চিন্তা করে দেখেছো? তোমাদের অভিমত কী? ঈশ্বরের সমুদয় উচ্চারণ থেকে তোমরা কি কিছু উপলব্ধি করেছো? দোসরা এপ্রিল ও পনেরোই মে-এর মধ্যে মূলত কোন কার্য সম্পন্ন হয়েছিল? আজকের মানুষ কেন সম্পূর্ণ খেইহীন এবং এতোটাই উদ্ভ্রান্ত যে তাদের মাথায় যেন মুগুর দিয়ে আঘাত করা হয়েছে? আজ “রাজ্যের লোকেদের কেচ্ছা” শিরোনামে কোনো সংবাদপত্রীয় নিবন্ধ নেই কেন? এপ্রিল মাসের দুই ও চার তারিখে ঈশ্বর মানুষের অবস্থার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেননি; একইভাবে, আজকের পরবর্তী বেশ কয়েকটি দিনেও তিনি মানুষের অবস্থার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেননি—এমন কেন হল? এখানে নিশ্চয় কোনো অমীমাংসিত প্রহেলিকা রয়েছে—এমন ১৮০-ডিগ্রী আবর্তনের কারণটি কী? প্রথমে ঈশ্বর এভাবে বাক্যোচ্চারণ করেছিলেন কেন তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। ঈশ্বরের প্রথম বাক্যটি লক্ষ্য করা যাক, যেখানে কালবিলম্ব না করে তিনি এই উক্তি করেছিলেন, “নবকার্যের সূচনামাত্র”। এই বাক্যটি তোমায় প্রথম ইঙ্গিত দেয় যে ঈশ্বরের কার্য এক নবসূচনায় প্রবেশ করেছে, আরেকবার তিনি নবকার্যের সূত্রপাত করেছেন। এতে বোঝা যায় যে শাস্তি ক্রমশ এক পরিসমাপ্তির নিকটবর্তী হচ্ছে; বলা যেতে পারে শাস্তির চূড়ান্ত মুহূর্তে ইতিমধ্যেই প্রবেশ করা হয়েছে, এবং সেহেতু শাস্তির যুগের কার্যের অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে লাভ করতে হলে তোমাদের অবশ্যই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে, যাতে তোমরা পিছিয়ে পড়ে পরিত্যক্ত না হও। এই সবই মানুষের কার্য, এবং এর নিমিত্ত মানুষের সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রয়োজন। শাস্তিকে সম্পূর্ণরূপে নির্বাসিত করার পর ঈশ্বর তাঁর কার্যের পরবর্তী অংশে পদার্পণ করতে শুরু করেন, কারণ ঈশ্বর বলেন, “… সুতরাং মানুষের মাঝে স্বীয় কার্য আমি অব্যাহত রেখেছি…। এক্ষণে, আমার হৃদয় বিপুল আনন্দে পরিপূর্ণ, কারণ মানুষের একটি অংশকে আমি অর্জন করেছি, এবং সেকারণেই আমার ‘উদ্যোগ’ আর মন্দা-আক্রান্ত নয়; তা আর অন্তঃসারশূন্য বাক্য-নির্মিত নয়।” বিগত দিনগুলিতে, ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে মানুষ তাঁর সনির্বন্ধ ইচ্ছা প্রত্যক্ষ করেছিল—এর মধ্যে কোনো মিথ্যা নেই—এবং বর্তমানে ঈশ্বর আরো দ্রুতবেগে স্বীয় কার্য সম্পাদন করেন। মানুষের দৃষ্টিতে, বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের চাহিদাগুলির সঙ্গে সুসঙ্গত বলে মনে হয়—কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, তাঁর কার্য ইতিমধ্যেই নিষ্পন্ন হয়ে গিয়েছে। মানুষের চিন্তাভাবনা অত্যন্ত ঘুরপথে চলে বলে, বিষয়াদির সম্বন্ধে তাদের অভিমতও প্রায়শই মাত্রাতিরিক্ত রকমের জটিল হয়। নিজেদের বিষয়ে মানুষ অত্যধিক চাহিদাসম্পন্ন, অথচ ঈশ্বর মানুষের কাছে এধরনের উচ্চ কোনো দাবি রাখেন না, এবং একারণেই, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে পার্থক্যটি যে কী বিশাল তা প্রত্যক্ষগোচর হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের সকল কার্যে মানুষের পূর্বধারণাগুলিকে অনাবৃত করা হয়। এমন নয় যে ঈশ্বর মানুষের কাছে উচ্চ চাহিদা জ্ঞাপন করেন এবং মানুষ তা অর্জনে অসমর্থ, বরং মানুষই ঈশ্বরের নিকট উত্তুঙ্গ দাবিসমূহ স্থাপন করে এবং সেগুলি অর্জন করতে ঈশ্বর অক্ষম। চিকিৎসান্তে, বহু সহস্র বৎসরব্যাপী শয়তানের দ্বারা কলুষিত মানবজাতির মধ্যে যেহেতু বিলম্বিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়ে গিয়েছে, সেহেতু মানুষ সততই ঈশ্বরের নিকট এরকম অত্যুচ্চ চাহিদাসমূহ জ্ঞাপন করেছে, এবং তারা কিছুমাত্র নমনীয় নয়, ঈশ্বর পরিতুষ্ট নন ভেবে গভীরভাবে শঙ্কিত। এইভাবে, অনেক বিষয়ে মানুষ যে কর্মসাধনের অযোগ্য, এই বাস্তব সত্যই তাদের কাছে নিজেদেরকে শাস্তি দেওয়ার একটা পদ্ধতি; তারা নিজেদের কর্মফল ভোগ করে—এ হল নিছকই যন্ত্রণাভোগ। যে দুঃখকষ্ট মানুষ সহ্য করে তা-র ৯৯%-এর-ও বেশি ঈশ্বরের ঘৃণার্হ। খোলাখুলি বললে, প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরের নিমিত্ত কেউ কখনো কষ্টভোগ করেনি। সকল মানুষ নিজেদের কর্মের পরিণামসমূহ বহন করে—নিঃসন্দেহে শাস্তির এই ধাপ কোনো ব্যতিক্রম নয়; এ হল মানুষের গাঁজিয়ে তোলা এক তিক্ত পেয়ালা, পানার্থে সে নিজেই যা তার ওষ্ঠের সম্মুখে তুলে ধরে। যেহেতু ঈশ্বর তাঁর শাস্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রকাশ করেননি, সেহেতু কিছু অভিশপ্ত মানুষ থাকলেও, তা শাস্তিপদবাচ্য নয়। কিছু মানুষ আশীর্বাদধন্য হলেও তার অর্থ এই নয় যে ভবিষ্যতেও তারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। মানুষের নজরে, মনে হয় ঈশ্বর বুঝি এমন এক ঈশ্বর যিনি তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেন না। উদ্বিগ্ন হোয়ো না। এই বাক্যগুলির মধ্যে হয়তো কিছুটা অতিরেক রয়েছে, তবু নেতিবাচক হোয়ো না। আমার উক্তিগুলি নিশ্চয়ই মানুষের দুঃখকষ্টের সঙ্গে কিছুটা সম্পর্কিত, তথাপি আমার মনে হয় ঈশ্বরের সঙ্গে তোমাদের অবশ্যই এক সুসম্পর্ক নির্মাণ করতে হবে। তোমাদের তাঁকে আরো “উপঢৌকন” প্রদান করা উচিত—তাতে নিশ্চিতরূপে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। আমার বিশ্বাস ঈশ্বরকে যারা “উপঢৌকন” প্রদান করে তিনি তাদের ভালোবাসেন। তোমাদের কী অভিমত? এই বাক্যসমূহ কি যথাযথ?

বর্তমানে, নিজেদের কতখানি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা তোমরা দূরে সরিয়ে রেখেছো? ঈশ্বরের কার্য শীঘ্রই সমাপ্ত হবে। সুতরাং নিজেদের প্রায় সমস্ত সম্ভাবনাই তোমাদের অবশ্যই দূরে সরিয়ে রাখতে হবে, তাই নয় কি? সেই সঙ্গে তোমরা নিজেদের পরীক্ষা করেও দেখতে পারো: তোমরা সর্বদাই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে, নিজের গুণগান গাইতে এবং নিজেদের জাহির করতে পছন্দ করো—এটা কী? আজ, মানুষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী তা এখনো আমি জানি না। মানুষ যদি সত্যই যন্ত্রণাসমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে জীবনধারণ করে, তাহলে যখন তারা দুঃখকষ্টের পরিমার্জনের মাঝে কিংবা নিপীড়নের বিভিন্ন উপকরণের ভীতিপ্রদর্শনের অধীনে বাস করে, অথবা আকাশপানে চেয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস মোচন করতে করতে তারা যখন সকল মানুষের প্রত্যাখ্যানের কালে জীবনযাপন করে, তখন, এরকম সময়ে তাদের চিন্তায় হয়তো তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাগুলি দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। এর কারণ হল আশাহীনতার মাঝে মানুষ এক বহির্জাগতিক কল্পস্বর্গের অনুসন্ধান করে, এবং আরামপ্রদ পরিস্থিতিতে কেউই তাদের নিজস্ব মনোরম স্বপ্নের অন্বেষণে কখনো ক্ষান্তি দেয় না। এমন চিন্তা হয়তো বাস্তবানুগ নয়, তবু মানুষের হৃদয়ে তা না থাকলেই আমি খুশি হতাম। জীবনযাপনকালে তোমরা কি এখনও উন্নীত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করো? দেহরূপে এখনো কি তোমরা রূপপরিবর্তনের বাসনা রাখো? তোমরাও একই অভিমত পোষণ করো কিনা আমার জানা নেই, কিন্তু বিষয়টি সততই আমার বাস্তবতাবিবর্জিত বলে বোধ হয়েছে—এজাতীয় চিন্তাসমূহ অতীব অসংযত মনে হয়। মানুষ এধরনের কথাবার্তা বলে থাকে: “নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রাখো, আরো বাস্তববাদী হও।” মানুষকে তুমি আশীর্বাদধন্য হওয়ার চিন্তা পরিহার করতে বলো—কিন্তু নিজের ক্ষেত্রেও কি তুমি তা করো? নিজে আশীর্বাদাকাঙ্ক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তুমি কি মানুষের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হওয়ার চিন্তাকে নাকচ করো? তুমি অপরের আশীর্বাদলাভ অনুমোদন করো না, অথচ নিজে অনুক্ষণ সঙ্গোপনে তার-ই চিন্তা করছো—এতে তোমার কী পরিচয় পাওয়া যায়? এক প্রবঞ্চকের! তুমি যখন এমনতরো আচরণ করো, তোমার বিবেক কি তখন অভিযুক্ত হয় না? নিজ অন্তরে তুমি কি ঋণগ্রস্ত বোধ করো না? তুমি কি এক প্রতারক নও? অন্যের মনের কথা তুমি খুঁড়ে বের করে আনো, অথচ নিজের মনোগত চিন্তা কখনো ব্যক্ত করো না—তুমি কতখানি মূল্যহীন এক আবর্জনাখণ্ড মাত্র! আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি কথা বলার সময় তোমরা নিজেদের অন্তরে কী চিন্তা করো—তোমরা কি পবিত্র আত্মার দ্বারা নিন্দিত হতে পারো না? তোমাদের মর্যাদাবোধকে কি তা বিচলিত করে না? তোমাদের জন্য কী শুভ তা সত্যিই তোমরা জানো না! তোমরা সকলে সর্বদাই ঠিক নানগুয়ো মহাশয়ের অনুরূপ ছিলে—ভণ্ড মাত্র। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে “তারা সকলেই ‘আত্মোৎসর্গ করতে’ ইচ্ছুক” বাক্যে “আত্মোৎসর্গ করতে” শব্দবন্ধটি উদ্ধৃতিচিহ্নের মধ্যে স্থাপন করেছেন। ঈশ্বর মানুষকে তাঁর নিজের হাতের তালুর মতো জানেন, এবং মানুষের প্রবঞ্চনা যতোই কৌশলপূর্ণ হোক না কেন—এমনকি তার অভিব্যক্তি যদি নির্বিকার হয় এবং মুখমণ্ডল রক্তবর্ণ ধারণ না করে কিংবা হৃৎস্পন্দনও যদি স্বাভাবিক থাকে—তবু ঈশ্বরের চক্ষুদ্বয় অত্যুজ্জ্বল, সেকারণেই ঈশ্বরের নজর এড়াতে মানুষ নিয়তই সমস্যায় পড়েছে। মনে হয় ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বুঝি রঞ্জনরশ্মি রয়েছে এবং মানুষের অভ্যন্তরীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি তিনি দেখতে পান, যেন-বা কোনো পরীক্ষা ব্যতিরেকেই তিনি তাদের শরীর ভেদ করে তাদের রক্তের বর্গ নির্ণয়ে সক্ষম। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এমনই, এবং এর অনুকরণ মানুষের আয়ত্তসাধ্য নয়। ঠিক ঈশ্বর যেমনটি বলে থাকেন, “এতো কর্ম আমি সম্পাদন করেছি, অথচ মানুষের মধ্যে তার কোনো নিদর্শন নেই কেন? আমি কি যথেষ্ট প্রচেষ্টা প্রয়োগ করিনি?” ঈশ্বরের সাথে মানুষের সহযোগিতায় মাত্রাতিরিক্ত রকমের ঘাটতি রয়েছে, এবং বলা যেতে পারে যে মানুষের মধ্যে অত্যধিক পরিমাণে নঞর্থকতা রয়েছে, এবং সদর্থকতার প্রকাশ তাদের মধ্যে ক্বচিৎ-ই দেখা যায়। নিছকই কালেভদ্রে তাদের সামান্য ইতিবাচকতা থাকে, কিন্তু তা-ও অতিমাত্রায় কালিমালিপ্ত। মানুষ ঈশ্বরকে কতখানি ভালোবাসে তা এতেই প্রমাণিত হয়; মনে হয় বুঝি তাদের হৃদয়ের দশ কোটি ভাগের মাত্র এক ভাগ অংশে ঈশ্বর-প্রেম রয়েছে, যার ৫০% এখনো খাদযুক্ত। এই কারণেই ঈশ্বর বলেন যে মানুষের মধ্যে তিনি কোনো প্রমাণ লাভ করেন না। সম্যকভাবে মানুষের অবাধ্যতার কারণেই ঈশ্বরের উচ্চারণসমূহের স্বরভঙ্গি এতো হৃদয়হীন ও নির্মম। যদিও ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে বিগতদিনের বিষয়ে বাক্যালাপ করেন না, তথাপি ঈশ্বরের সম্মুখে নিজেদের প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে মানুষ সততই স্মৃতিচারণ করতে চায়, এবং সর্বদাই তারা গতায়ু কালের বিষয়ে কথা বলতে অভিলাষী—কিন্তু ঈশ্বর কখনো মানুষের অতীতকে বর্তমান বলে বিবেচনা করেননি; পরিবর্তে চলতি সময়ের প্রেক্ষিতেই তিনি আজকের মানুষের প্রতি অভিগমন করেন। এ-ই হল ঈশ্বরের মনোভাব, এবং এতে, এই বাক্যগুলি ঈশ্বর সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে মানুষ এমন উক্তি না করে যে ঈশ্বর নিতান্তই যুক্তিবিমুখ। কারণ ঈশ্বর অযৌক্তিক কার্য করেন না, বরং মানুষকে তিনি বাস্তব সত্যগুলি অবগত করান, যাতে মানুষ দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে অক্ষম না হয়—কারণ, যতোই হোক, মানুষ দুর্বল। এই বাক্যগুলি শুনে তোমাদের কী মনে হয়: তোমরা কি পরামর্শ শুনে সমর্পণ করতে, এবং এবিষয়ে আর কোনো ভাবনাচিন্তা না করতে ইচ্ছুক?

উপরের বক্তব্যটি অপ্রাসঙ্গিক; এবিষয়ে আলোচনা হোক বা না-হোক তাতে কিছুই যায়-আসে না। আশা করি তোমরা আপত্তি করবে না, কারণ ঈশ্বর বাক্যের কার্য সাধন করে আসেন, এবং বিশ্বের যাবতীয় বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে তিনি পছন্দ করেন। অবশ্য আমার আশা, তৎসত্ত্বেও তোমরা এগুলি পাঠ করবে, এবং এই বাক্যগুলিকে উপেক্ষা করবে না। তোমরা কী বলো? তাই-ই করবে তো? কিছু পূর্বেই বলা হয়েছিল যে আজকের বাক্যে ঈশ্বর নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন: ঈশ্বরের কার্যপ্রণালী পরিবর্তিত হতে চলেছে। সেই অর্থে, এই অতি প্রাসঙ্গিক বিষয়টির উপর মনোনিবেশ করাই শ্রেয় হবে। বলা যেতে পারে, আজকের সমস্ত উচ্চারণ আগামীর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে; এই উচ্চারণসমূহে তাঁর কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ঈশ্বর যেভাবে আয়োজন করেন তা-ই বর্ণিত হয়েছে। গির্জার লোকেদের মধ্যে ঈশ্বর তাঁর কার্য প্রায় সমাপ্ত করে এনেছেন, এবং পরবর্তীকালে সকল মানুষের সম্মুখে তিনি সরোষে আবির্ভূত হবেন। ঈশ্বর যেমন বলেন, “ধরিত্রীর মানুষকে আমি আমার কৃতকর্মের মূল্যস্বীকারে বাধ্য করবো, এবং ‘বিচারের আসনের’ সম্মুখে আমার কার্যাবলী প্রমাণিত হবে, যাতে তা স্বীকৃত হয় বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে, যারা সকলেই হার মানবে।” এই বাক্যগুলির মধ্যে তোমরা কি কিছু দেখতে পেলে? এর মধ্যেই ঈশ্বরের কার্যের পরবর্তী অংশের সারসংক্ষেপ রয়েছে। প্রথমত, ঈশ্বর রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী সকল প্রহরী কুকুরকে আন্তরিকভাবে প্রতীত করবেন এবং ইতিহাসের মঞ্চ থেকে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তাদের সরে দাঁড়াতে বাধ্য করবেন, আর কখনো তারা পদমর্যাদার জন্য লড়াই করবে না, এবং আর কখনো দুরভিসন্ধি ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না। এই কার্য আবশ্যকভাবে ঈশ্বরের দ্বারাই, ধরাধামে নানান প্রকারের বিপর্যয় সৃষ্টির মাধ্যমে, সম্পন্ন হবে। কিন্তু বিষয়টি মোটেই এমন নয় যে ঈশ্বর আবির্ভূত হবেন। এই সময়ে, অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশ তখনো এক কলুষিত ভূমিই রয়ে যাবে, সেহেতু ঈশ্বর অবতীর্ণ হবেন না, বরং কেবল শাস্তির মাধ্যমে প্রকাশিত হবেন। ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাব এমনই, এর থেকে কেউই নিষ্কৃতি পেতে পারে না। এই সময়ে, অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশের সকল বাসিন্দারা দুর্বিপাকের সম্মুখীন হবে, এবং স্বভাবতই ধরাধামের রাজ্য (অর্থাৎ গির্জা)-ও এর অন্তর্ভুক্ত। ঠিক এই সময়েই বাস্তব ঘটনাসমূহ প্রকাশ্যে আসে, সেহেতু সকল মানুষই এর অভিজ্ঞতা লাভ করে, কেউ তা এড়াতে পারে না। ঈশ্বরের দ্বারা তা পূর্বনির্ধারিত। সম্যকভাবে কার্যের এই ধাপটির কারণেই ঈশ্বর বলেন, “এখন বৃহৎ পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের কাল।” যেহেতু, ভবিষ্যতে পৃথিবীর বুকে কোনো গির্জা থাকবে না, এবং বিপর্যয়ের অভ্যুদয়ের দরুন, মানুষ শুধুমাত্র তাদের সম্মুখবর্তী বিষয়েই চিন্তা করতে সক্ষম হবে, এবং বাকি সমস্তকিছুকে উপেক্ষা করবে, এবং বিপর্যয়ের মাঝে ঈশ্বরকে উপভোগ করা তাদের পক্ষে দুরূহ হবে। সেকারণেই, এই অপরূপ সময়ে মানুষকে তাদের সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরকে ভালোবাসতে বলা হয়, যাতে তারা সুযোগ না হারায়। এই ঘটনা সংঘটিত হয়ে গেলে, অতিকায় লাল ড্রাগনকে ঈশ্বর চূড়ান্তরূপে পরাস্ত করে ফেলবেন, এবং এইভাবেই ঈশ্বরের লোকেদের সাক্ষ্যদান-কার্য সমাপ্তিলগ্নে উপনীত হবে; এর পর, ঈশ্বর কার্যের পরবর্তী ধাপের সূচনা করবেন, অতিকায় লাল ড্রাগনের রাষ্ট্রকে ছারখার করবেন, এবং পরিশেষে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল মানুষকে ক্রুশকাষ্ঠে উল্টো করে পেরেকবিদ্ধ করবেন, তারপর সমগ্র মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করবেন—এগুলিই হল ঈশ্বরের কার্যের ভবিষ্যৎ ধাপসমূহ। সুতরাং, এই শান্তিপূর্ণ পরিমণ্ডলে ঈশ্বরকে ভালোবাসার যথাসাধ্য চেষ্টা করাই তোমাদের পক্ষে বিধেয়। ভবিষ্যতে, ঈশ্বরকে ভালোবাসার আর কোনো সুযোগ তোমরা পাবে না, কারণ একমাত্র দেহরূপেই মানুষ ঈশ্বরকে ভালোবাসার সুযোগ লাভ করে; তারা যখন ভিন্নতর এক বিশ্বে বসবাস করবে, তখন কেউই ঈশ্বরকে ভালোবাসার কথা বলবে না। এ-ই কি একজন সৃজিত সত্তার কর্তব্য নয়? তাহলে নিজ-নিজ জীবৎকালে কীভাবে তোমাদের ঈশ্বরকে ভালোবাসা উচিত? কখনো কি তুমি এবিষয়ে ভেবে দেখেছো? ঈশ্বরকে ভালোবাসার জন্য তুমি কি তোমার মৃত্যু না ঘটা অবধি অপেক্ষা করবে? এ কি সারবত্তাহীন কথাবার্তা নয়? বর্তমানে কেন তুমি ঈশ্বরকে ভালোবাসার অন্বেষণ করো না? ব্যস্ত থাকাকালীন ঈশ্বরকে ভালোবাসা কি প্রকৃত ঈশ্বর-প্রেম হতে পারে? শয়তানের সম্মুখে ঈশ্বর ইতিমধ্যেই সাক্ষ্য অর্জন করেছেন বলেই একথা বলা হয় যে ঈশ্বরের কার্যের এই পর্যায়টি শীঘ্রই পরিসমাপ্ত হবে। সেকারণেই, মানুষের কোনোকিছু করার প্রয়োজন নেই; মানুষকে শুধুমাত্র তার জীবদ্দশায় ঈশ্বর-প্রেমের অন্বেষণ করতে বলা হয়—এ-ই হল চাবিকাঠি। যেহেতু ঈশ্বরের চাহিদাসমূহ উচ্চ নয়, এবং তদুপরি, যেহেতু তাঁর হৃদয়ে এক জ্বালাদায়ী উদ্বেগ রয়েছে, সেহেতু কার্যের এই ধাপটি সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই কার্যের পরবর্তী ধাপটির বিষয়ে তিনি এক সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছেন, যার ফলে কতখানি সময় অবশিষ্ট রয়েছে তা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়; স্বীয় অন্তরে ঈশ্বর যদি উদ্বিগ্ন না হতেন, তাহলে কি তিনি এই বাক্যগুলি এতো শীঘ্র উচ্চারণ করতেন? সময় কম বলেই ঈশ্বর এইভাবে কার্য সম্পাদন করেন। প্রত্যাশা করা হয় যে ঈশ্বরকে তোমরা নিজেদের সম্পূর্ণ হৃদয়, সমগ্র মনন, এবং সর্বশক্তি দিয়ে ভালোবাসতে পারবে, ঠিক যেভাবে তোমরা নিজেদের জীবনকে লালন করো। এ-ই কি সবচেয়ে অর্থপূর্ণ জীবন নয়? অন্যত্র কোথায়-ই বা তুমি জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে পারো? তুমি কি সম্পূর্ণ অন্ধসুলভ আচরণ করছো না? তুমি কি ঈশ্বরকে ভালোবাসতে ইচ্ছুক? ঈশ্বর কি মানুষের ভালোবাসার যোগ্য? মানুষ কি মানুষের সমাদরের উপযুক্ত? তাহলে, তোমার কী করণীয়? সাহসিকতার সঙ্গে, কোনো প্রতিরোধ ব্যতিরেকে, ঈশ্বরকে ভালোবাসো, তারপর দেখো ঈশ্বর তোমার জন্য কী করেন। দেখো তিনি তোমায় হত্যা করেন কিনা। সংক্ষেপে, ঈশ্বরকে ভালোবাসার কার্যটি ঈশ্বরের নিমিত্ত নানানকিছু নকল ও লিপিবদ্ধ করা অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে তোমার সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া উচিত, যাতে তোমার জীবন আরো অর্থপূর্ণ ও আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে, এবং তারপর তোমার ঈশ্বরের “দণ্ডাদেশ”-এর জন্য অপেক্ষা করা উচিত। তোমার পরিকল্পনার ঈশ্বর-প্রেম অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা তা জানতে আমি কৌতূহলী। আমি কামনা করি সকলেই ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণ হয়ে ওঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করুক, এবং সেগুলির সকলই বাস্তবায়িত হোক।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৪১

পরবর্তী: অধ্যায় ৪৪ ও ৪৫

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন