অধ্যায় ৪১

ঈশ্বর কীভাবে মানুষের উপর কার্যসাধন করেন? তুমি কি তা নির্ণয় করতে পেরেছো? বিষয়টি কি তোমার কাছে পরিষ্কার? এবং গির্জাতেই বা তিনি কীভাবে কার্যসাধন করেন? এই বিষয়গুলিতে তোমার অভিমত কী? এই প্রশ্নগুলি কখনো কি তুমি বিবেচনা করে দেখেছো? গির্জায় তাঁর কার্যের মাধ্যমে তিনি কী অর্জন করতে চান? এই সমস্ত বিষয় কি তোমার কাছে স্পষ্ট? তা যদি না হয়, তাহলে তোমার সকল কাজ নিষ্ফল ও অন্তঃসারশূন্য! এই বাক্যগুলি কি তোমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে? নিষ্ক্রিয়ভাবে পশ্চাদপসরণ ব্যতিরেকে নিছকই সক্রিয় অগ্রগমন—তা কি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করবে? অন্ধ সহযোগিতাই কি পর্যাপ্ত? দর্শনক্ষমতায় তুমি যদি অস্বচ্ছ হও তাহলে কী করা উচিত? আর কোনো অনুসন্ধান না করাই কি বিধেয় হবে? ঈশ্বর বলেন, “একদা মানুষের মাঝে আমি এক মহান উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম, কিন্তু তারা খেয়াল করেনি, তাই স্বীয় বাক্যের ব্যবহারের মাধ্যমে আমাকে তা তাদের কাছে ধাপে ধাপে প্রকাশ করতে হয়েছিল। তথাপি মানুষ আমার বাক্যের অর্থ উপলব্ধি করতে পারেনি, এবং আমার পরিকল্পনার উদ্দেশ্যের বিষয়ে অনবহিতই রয়ে গিয়েছিল।” এই বাক্যগুলির অর্থ কী? এই উদ্দেশ্যের বিষয়ে কখনো চিন্তা করেছো? সত্যিই কি আমি তা নিশ্চেতন ও লক্ষ্যশূন্যভাবে সম্পন্ন করেছিলাম? তা-ই যদি হয়, তবে এতে লাভ কী হবে? এই উদ্দেশ্যটি যদি তোমার কাছে অস্পষ্ট ও বোধাতীত হয়, তাহলে সত্যিকারের সহযোগিতা কেমন করে অর্জিত হবে? ঈশ্বর বলেন যে সকল মানুষের অন্বেষণ রয়েছে অকূল পাথারের ঊর্ধ্বে, শূন্যগর্ভ বাক্যে লিখিত মতবাদসমূহের মধ্যিখানে। তোমাদের সাধনাসমূহের বিষয়ে বলতে হয়, সেগুলি যে কোন বর্গের অন্তর্ভুক্ত তার ব্যাখ্যাদানে তুমিও অপারগ। মানুষের মধ্যে ঈশ্বর কোন সিদ্ধিলাভ করতে চান? এই বিষয়গুলির সম্বন্ধে তোমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। এ কি শুধুই এক নেতিবাচক উপায়ে অতিকায় লাল ড্রাগনকে লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে? অতিকায় লাল ড্রাগনকে লজ্জিত করার পর ঈশ্বর কি কেবল শূন্যহস্তে পর্বতমাঝে গমনপূর্বক সেথায় নির্জনবাস করবেন? তাহলে, ঈশ্বর কী চান? তিনি কি যথার্থই মানুষের হৃদয় চান? নাকি তাদের জীবন চান? নাকি তাদের ধনদৌলত ও সম্পত্তি? এগুলি কোন উদ্দেশ্য সাধন করবে? ঈশ্বরের কাছে এসবের কোনো কার্যকারিতা নেই। ঈশ্বর যে মানুষের উপর এতো কার্যসাধন করেছেন, তা কি শুধুমাত্র তাকে শয়তানের বিরুদ্ধে তাঁর বিজয়লাভের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহারের নিমিত্ত, যাতে তিনি তাঁর “সামর্থ্যসমূহ” প্রতীয়মান করে তুলতে পারেন? তাহলে কি ঈশ্বরকে নেহাতই “হীনচেতা” মনে হবে না? ঈশ্বর কি সেই প্রকারের ঈশ্বর? তিনি কি তেমন এক শিশুর মতো, অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে যে বড়োদের টেনে আনে? তাতে কী লাভ হবে? ঈশ্বরের পরিমাপ করতে মানুষ নিরন্তর নিজের পূর্বধারণাসমূহের প্রয়োগ করে। ঈশ্বর একদা বলেছিলেন, “বছরে চারটি ঋতু রয়েছে, এবং প্রত্যেক ঋতুতে রয়েছে তিনটি করে মাস।” বাক্যটি শ্রবণের পর মানুষ তা কণ্ঠস্থ করে নিয়েছিল, এবং প্রতিনিয়তই বলতো যে একটি ঋতুতে তিনটি মাস এবং এক বছরে চারটি ঋতু রয়েছে। ঈশ্বর যখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এক বছরে কয়টি ঋতু রয়েছে? এবং একটি ঋতুতে কয়টি মাস রয়েছে?”, মানুষ সমস্বরে জবাব দিয়েছিল, “চারটি ঋতু, তিনটি মাস।” মানুষ সততই ঈশ্বরকে নিয়মাবলী আকারে সংজ্ঞায়িত করতে প্রয়াসী, এবং অধুনা, “বছরে তিনটি ঋতু, ঋতুতে চারটি মাস”-এর যুগে প্রবেশের পর, মানুষ নিশ্চেতনই রয়ে যায়, বুঝি-বা সে অন্ধ হয়ে গিয়েছে, সমস্তকিছুর মধ্যে নিয়মের সন্ধান করছে। এবং মনুষ্যজাতি আজ ঈশ্বরের উপরে তাদের “নিয়মাবলী” প্রয়োগের প্রচেষ্টা করে! তারা প্রকৃতই অন্ধ! তারা কি খেয়াল করে না যে এখন কোনো “শীতঋতু” নেই, কেবল “বসন্ত, গ্রীষ্ম, ও হেমন্ত” রয়েছে? মানুষ প্রকৃতই নির্বোধ! এমন এক পরিস্থিতিতে এসে উপনীত হওয়ার পরেও ঈশ্বরকে জানার উপায় সম্পর্কে অনবহিত থেকে যাওয়া, ব্যাপারটি ১৯২০-র দশকের কোনো মানুষের মতন, পরিবহন ব্যবস্থাকে যে বিড়ম্বনা গণ্য করতো, এবং ভাবতো যে সকল মানুষের পদব্রজে, বা হ্রস্বকায় কোনো গর্দভকে চালনা করে ভ্রমণ করা উচিত, কিংবা মনে করতো যে মানুষের তেলের প্রদীপ ব্যবহার করা উচিত, অথবা বিশ্বাস করতো যে আদিম এক জীবনরীতি আজও বিরাজমান। এই সবই কি মানুষের মস্তিষ্কে নিহিত পূর্বধারণা নয়? আজও কেন তারা করুণা ও মায়ামমতার কথা বলে? তা কী কাজে লাগে? এ যেন কোনো বয়স্ক মহিলার নিজের অতীত বিষয়ে অসংলগ্ন কথাবার্তা মাত্র—এসব কথার কী মূল্য আছে? যতোই হোক, বর্তমান তো বর্তমানই; সময়কে কি ২০ বা ৩০ বছর পিছিয়ে দেওয়া যায়? সকল মানুষই প্রচলিত ধারার অনুসরণ করে; তারা তা মেনে নিতে এতো অনীহ কেন? শাস্তিদানের বর্তমান যুগে, করুণা ও মায়ামমতার বিষয়ে কথাবার্তা বলে কী লাভ? করুণা ও মায়ামমতা—ঈশ্বরের কি শুধু এটুকুই সম্বল? এই “চাল-আটা”-র যুগে মানুষ কেন “বাজরার ভুসি ও জংলা শাকসব্জি”-র পরিবেশন অব্যাহত রাখে? যে কাজ করতে ঈশ্বর অনিচ্ছুক, মানুষ তাঁকে তা করতে বাধ্য করে। তিনি বিরোধিতা করলে, তাঁর উপর “প্রতিবিপ্লববাদী”-র তকমা সেঁটে দেওয়া হয়, এবং ঈশ্বর যে অন্তঃপ্রকৃতিগতভাবে আদৌ করুণাঘন বা প্রেমময় ঈশ্বর নন তা বারংবার জানানো হলেও, শোনে কে? মানুষ একেবারেই উদ্ভট। মনে হয় বুঝি ঈশ্বরের বাক্য প্রভাববিবর্জিত। আমার বাক্যসমূহকে মানুষ সততই এক ভিন্নতর আলোকে দর্শন করে। ঈশ্বর মানুষের দ্বারা নিরন্তর পীড়িত হয়েছেন, যেন-বা কোনো নির্দোষ মানুষের উপর ভিত্তিহীনভাবে অপরাধের অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে—তাহলে কে-ই বা ঈশ্বরের সঙ্গে সমমনস্ক হতে পারে? তোমরা নিয়তই ঈশ্বরের করুণা ও মায়ামমতার মাঝে জীবনযাপনে ইচ্ছুক, তাহলে মানুষের অবমাননা সহ্য করা ব্যতীত ঈশ্বরের কী-ই বা আর করার রয়েছে? কিন্তু আমি আশা রাখি, ঈশ্বরের সাথে বাদানুবাদে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে পবিত্র আত্মার কার্যসাধন পদ্ধতিটি তোমরা আনুপুঙ্খিকভাবে নিরীক্ষা করে দেখবে। তথাপি আমি তোমায় ঈশ্বরের বাক্যের আদি অর্থটি মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করতে তাড়না দিই—ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে “তরলীকৃত” মনে করে নিজেকে চালাক ভেবো না। তার কোনো প্রয়োজন নেই! ঈশ্বরের বাক্য কতখানি “তরলীকৃত” তা কে বলতে পারে? যদি না ঈশ্বর সরাসরি তা বলেন কিংবা সেবিষয়ে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেন। নিজের সম্বন্ধে এতো উচ্চ ধারণা পোষণ কোরো না। তাঁর বাক্যের মধ্যে তুমি যদি অনুশীলনের পথ দেখতে পাও, তাহলে তুমি তাঁর চাহিদাসমূহ পূরণ করে ফেলেছো। আর কী তুমি দেখতে চাও? ঈশ্বর বলেছিলেন, “মানুষের ক্ষীণতার দরুন কোনো করুণাপ্রদর্শনে আমি ক্ষান্তি দেবো।” তুমি যদি এই পরিষ্কার ও সরল বিবৃতিটির অর্থ উপলব্ধিতেও অসমর্থ হও, তাহলে আরো অধ্যয়ন ও অনুসন্ধানের কোনো যৌক্তিকতা থাকে কি? যন্ত্রবিজ্ঞানের এমনকি প্রাথমিকতম জ্ঞান ব্যতিরেকেই কি তুমি রকেট নির্মাণের যোগ্যতা অর্জন করতে পারো? এজাতীয় লোকগুলি কি নিষ্ফল বড়াই করছে না? ঈশ্বরের কার্যসাধনের উপযুক্ত সম্বল মানুষের নেই; ঈশ্বরই তাকে মর্যাদাপূর্ণ করে তোলেন। তাঁর পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে চৈতন্যহীন থেকে শুধুই তাঁর সেবা করে যাওয়া—তা কি বিপর্যয়ের এক প্রস্তুতপ্রণালী নয়? মানুষের নিজেদের জানে না, অথচ নিজেদের অনন্যসাধারণ মনে করে। নিজেদের তারা কী গণ্য করে! ভালো-মন্দ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই! অতীতের কথা চিন্তা করো, এবং সম্মুখবর্তী ভবিষ্যতের দিকে তাকাও—পরামর্শটি কেমন শোনাচ্ছে? এর পর, নিজের সম্বন্ধে অবগত হও।

মানুষের অভিপ্রায় ও লক্ষ্যসমূহ সম্বন্ধে ঈশ্বর অনেককিছু প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, “কেবল তখনই আমি মানুষের অভিপ্রায় ও লক্ষ্যসমূহ সুস্পষ্টরূপে প্রণিধান করেছিলাম। মেঘরাজির মধ্য থেকে আমি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করেছিলাম: মানুষ সততই কেন নিজেদের নিমিত্ত কর্মসাধন করে? আমার শাস্তিসমূহ কি তাদের নিখুঁত করার উদ্দেশ্যে নয়? আমি কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ইতিবাচক মনোভঙ্গিতে আঘাত হানছি?” এই বাক্যগুলি থেকে নিজের সম্পর্কে তুমি কতখানি জ্ঞানার্জন করেছো? মানুষের অভিপ্রায় ও লক্ষ্যসমূহ কি সত্যই অপগত হয়েছে? তোমরা কি নিজের চোখে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেছো? তোমরা চাইলে ঈশ্বরের সম্মুখে এসেও বিষয়টি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে পারো: তোমাদের উপর ঈশ্বর-সম্পাদিত শাস্তিদানের কার্যের মাধ্যমে কোন ফলাফল অর্জিত হয়েছে? তোমরা কি তার সারসংক্ষেপ করেছো? ফলাফল সম্ভবত অণুমাত্র; নচেৎ ইতিমধ্যেই তোমরা এবিষয়ে গালভরা কথাবার্তা বলতে। ঈশ্বর তোমাদের কী অর্জন করাতে পেরেছেন? তোমাদের প্রতি উচ্চারিত এতো সংখ্যক বাক্যের মধ্যে কতগুলি ফলপ্রসু হয়েছে; এবং কতগুলি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে? ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, তাঁর বাক্যসমূহের শুধু অল্প কিছুই চরিতার্থতা লাভ করেছে; এর কারণ মানুষ চিরকালই তাঁর বাক্যসমূহের মূল অর্থটি অনুধাবন করতে অক্ষম, এবং সে কেবলই কোনো দেয়াল থেকে প্রতিক্ষিপ্ত বাক্যসমূহের প্রতিধ্বনিগুলিকে গ্রহণ করে। এ-ই কি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার পদ্ধতি? নিকট ভবিষ্যতে, ঈশ্বরের কাছে মানুষের করণীয় আরো কার্য থাকবে; তার বর্তমান ক্ষুদ্র আত্মিক উচ্চতা নিয়ে মানুষ কি সেই কার্য সম্পন্ন করতে সমর্থ হবে? হয় বিচ্যুত হচ্ছে, নাহলে ভুল করছে, নয়তো উদ্ধত হয়ে উঠছে—মনে হবে, এমনটাই বুঝি মানুষের প্রকৃতি। এটি হৃদয়ঙ্গম করা আমার পক্ষে দুরূহ মনে হয়: ঈশ্বরের এতো উক্তি সত্ত্বেও মানুষ সেগুলির কিছুই কেন অন্তরে গ্রহণ করে না? কোনো ফলাফল লাভের আকাঙ্ক্ষা ব্যতিরেকেই ঈশ্বর কি মানুষের সাথে নিছক পরিহাসছলে বাক্যালাপ করছিলেন? নাকি মানুষকে দিয়ে “আনন্দ, ক্রোধ, দুঃখ, ও সুখ” নামাঙ্কিত কোনো নাটকের অভিনয় করাচ্ছিলেন? কিয়ৎক্ষণের জন্য মানুষকে সুখী করে তুলে, পরমুহূর্তেই তাকে কাঁদিয়ে ছাড়েন—এবং অতঃপর, মঞ্চ পরিত্যাগ করলে মনমতো কর্মসম্পাদনে মানুষের আর কোনো বাধা নেই? এর পরিণতি কী হবে? “মানুষের কাছে আমার দাবিগুলি সর্বদাই নিষ্ফল হয় কেন? এমন কি হতে পারে যে এক সারমেয়কে আমি বৃক্ষারোহণের নির্দেশ দিচ্ছি? আমি কি ক্ষুদ্র বিষয়কে অযথা বৃহৎ করে তুলছি?” ঈশ্বরের সকল বাক্য মানুষের প্রকৃত অবস্থার অভিমুখী। কে ঈশ্বরের বাক্যের ভিতর জীবনযাপন করছে তা জানার জন্য সকল মানুষের অন্দরে দৃষ্টিপাত করলে কোনো হানি নেই। “এমনকি এখনো, ভূখণ্ডের ব্যাপক অংশ জুড়ে পরিবর্তন ঘটে চলেছে। একদিন এই ভূখণ্ড সত্যিই যদি প্রকৃতিগতভাবে রূপান্তরিত হয়, তাহলে আঙুলের একটি টোকায় একে আমি পরিহার করবো—বর্তমান পর্যায়ে সম্যক অর্থে এই-ই কি আমার কার্য নয়?” বস্তুত, ঈশ্বর এখনও এই কার্যে ব্যাপৃত রয়েছেন; অবশ্য, “আঙুলের টোকায় একপাশে নিক্ষেপ করা”-র বিষয়ে তাঁর উক্তিটি ভবিষ্যৎকে উদ্দেশ করে, কারণ সমস্তকিছুরই অবশ্যই একটি পদ্ধতি থাকবে। ঈশ্বরের সাম্প্রতিক কার্যের ঝোঁক এই অভিমুখেই—বিষয়টি তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে কি? মানুষের অভিপ্রায়ে খামতি রয়েছে, এবং অপরিচ্ছন্ন আত্মারা অন্তর্প্রবেশের এই সুযোগ সাগ্রহে গ্রহণ করেছে। এই সময়েই, “ভূখণ্ড প্রকৃতিগতভাবে রূপান্তরিত হয়”। মানুষ তখন এক গুণগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হবে, উপাদানগতভাবে যদিও তারা অবিকৃতই রইবে, কারণ উন্নত ধরাধামে থাকবে অন্য বস্তুসকল। বাক্যান্তরে, আদি ধরিত্রী অপকৃষ্ট ছিল, কিন্তু উন্নতিবিধানের পর তা ব্যবহারযোগ্য হবে। কিন্তু, কিছুকাল ব্যবহারের পর যদি ফের অব্যবহৃত ফেলে রাখা হয়, তাহলে ক্রমশ পুনরায় তা পুরাতন অবস্থায় ফিরে যাবে। এ হল ঈশ্বরের কার্যের পরবর্তী পর্যায়ের এক সারসংক্ষেপ। ভবিষ্যৎ কার্য হবে আরো জটিল, কারণ সকল বস্তুকে সেসময় তাদের প্রকারভেদ অনুসারে পৃথক করা হবে। মিলনস্থলে, যখন বিষয়সমূহ সমাপ্তিতে এসে উপনীত হবে, তখন অনিবার্যভাবে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, এবং মানুষ হবে সুদৃঢ় কোনো প্রত্যয়বিবর্জিত। ঠিক যেমনটি ঈশ্বর বলেছেন: “মানুষেরা সকলেই মনোরঞ্জনকারী কলাকার মাত্র, যে সুর বাজানো হয় তাতেই তারা কণ্ঠারোপ করে।” যে সুর বাজানো হয় তাতেই কণ্ঠারোপ করার সামর্থ্য মানুষের রয়েছে, তাই তাঁর কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপটি গ্রহণ করার প্রয়োজনে ঈশ্বর তাদের ঠিক এই ত্রুটিটিই কাজে লাগান, এইভাবে সকল মানুষকে এই ত্রুটিটির প্রতিবিধানে সক্ষম করে তোলেন। তাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা নেই বলে মানুষ প্রাচীরগাত্রে গজিয়ে ওঠা তৃণমাত্র হয়ে পড়ে। তারা যদি সত্যিই আত্মিক উচ্চতা লাভ করতো, তাহলে গগনস্পর্শী অত্যুচ্চ বৃক্ষে পরিণত হতো। মানুষদের একটি অংশকে নিখুঁত করে তুলতে ঈশ্বর দুষ্ট আত্মাদের কার্যের একটি অংশকে ব্যবহার করতে অভিলাষী, এইভাবে এই মানুষগুলিকে তিনি শয়তানের পাপাচারসমূহের মর্ম সম্পূর্ণরূপে অবধারণে সক্ষম করে তুলতে চান, যাতে সকল মানুষ তাদের “পিতৃপুরুষদের” যথার্থভাবে জানতে পারে। একমাত্র এই উপায়েই মানুষ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে পারে, শুধুমাত্র শয়তানের সন্তানসন্ততিদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের দ্বারা নয়, সেইসাথে এমনকি শয়তানের পূর্বপুরুষদেরও বর্জনের মাধ্যমে। অতিকায় লাল ড্রাগনকে পুরোদস্তুর পর্যুদস্ত করার মাধ্যমে ঈশ্বর প্রকৃতপক্ষে এই উদ্দেশ্যই সিদ্ধ করতে চান, এমনভাবে তা করতে চান যাতে সকল মানুষ অতিকায় লাল ড্রাগনের যথার্থ স্বরূপটি জানতে পারে, এর মুখোশটি সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন করে প্রকৃত অবয়বটি তিনি তাকিয়ে দেখতে চান। ঈশ্বর এই অভিপ্রায় অর্জনেই অভিলাষী, এ-ই হল ধরাধামে তাঁর সম্পাদিত সকল কার্যের অন্তিম লক্ষ্য, এবং যা তিনি সকল মানুষের মধ্যে সুসম্পন্ন করে তুলতে সঙ্কল্পবদ্ধ। একেই বলা হয় ঈশ্বরের অভীষ্টের সেবায় সমস্তকিছুকে সংহত করা।

ভবিষ্যৎ কার্যের ক্ষেত্রে, কেমন করে তা নিষ্পন্ন হবে সে বিষয়ে তোমরা কি পরিষ্কার? এই বিষয়গুলি অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: ঈশ্বর কেন বলেন যে মানুষ কখনোই তাদের যা করণীয় কাজে মনোনিবেশ করে না? তিনি কেন বলেন এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা আমার অর্পিত ঘরের কাজ সমাপন করে উঠতে অকৃতকার্য হয়? এই বিষয়গুলি কীভাবে অর্জন করা যায়? এই প্রশ্নগুলি কখনো কি তুমি বিবেচনা করে দেখেছো? এগুলি কি কখনো তোমার আলাপ-আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে? কার্যের এই পর্যায়ে, মানুষকে অবশ্যই ঈশ্বরের বর্তমান অভিপ্রায়সমূহ উপলব্ধিতে সক্ষম করে তুলতে হবে। একবার তা অর্জিত হয়ে গেলে অন্য বিষয়গুলি আলোচনা করা যাবে—এটি কি কার্যে প্রবৃত্ত হওয়ার এক চমৎকার পদ্ধতি নয়? মানুষের মধ্যে ঈশ্বর যা অর্জন করতে চান তা সুস্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন, অন্যথায় সমস্তকিছুই নিষ্ফল হবে, এবং মানুষ তা অর্জন করা তো দূর অস্ত, এর মধ্যে প্রবেশ করতেই অসমর্থ হবে, এবং সকলই শূন্যগর্ভ বাগাড়ম্বরে পর্যবসিত হবে। ঈশ্বরের সাম্প্রতিক উক্তির প্রসঙ্গে—তোমরা কি অনুশীলন করার মতো কোনো পথ খুঁজে পেয়েছো? ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়ে সকল মানুষেরই এক উৎকণ্ঠাবোধ রয়েছে। এগুলি তারা সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করতে পারে না, তথাপি ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করতেও ভয় পায়। এখনও পর্যন্ত ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ভোজন ও পান করার কতগুলি উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে? ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে কীভাবে ভোজন ও পান করতে হয় অধিকাংশ মানুষ তা জানে না; কীভাবে এর মীমাংসা সম্ভব? অধুনার বাক্যসমূহের মধ্যে ভোজন ও পান করার কোনো উপায় কি তুমি খুঁজে পেয়েছিলে? বর্তমানে কীভাবে তুমি এই কার্যে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছো? এবং একবার তোমরা সকলেই বাক্যগুলি ভোজন ও পান করে ফেলার পর, কোন পদ্ধতিতে সেগুলির বিষয়ে তোমাদের চিন্তাভাবনা আলোচনা করবে? তা কি মানুষের করণীয় কার্য নয়? কোনো নির্দিষ্ট অসুস্থতার ক্ষেত্রে যথাযথ ঔষধটি কীভাবে বিহিত করা হয়? এখনো কি তোমরা ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ কোনো উচ্চারণ ব্যক্ত করার প্রয়োজন বোধ করো? তা কি আবশ্যক? পূর্বোল্লেখিত সমস্যাটি কীভাবে সমূলে উৎপাটিত করা যায়? নিজেদের ব্যবহারিক কাজকর্মে তোমরা পবিত্র আত্মার সঙ্গে সহযোগিতায় সক্ষম কি না, বিষয়টি তার উপর নির্ভরশীল। উপযুক্ত সহযোগিতা পেলে, পবিত্র আত্মা অভাবনীয় কার্য সম্পন্ন করবেন। কিন্তু উপযুক্ত সহযোগিতার পরিবর্তে কেবল বিভ্রান্তি পেলে, পবিত্র আত্মা তাঁর ক্ষমতা অর্গলমুক্ত করার অবস্থানে থাকবেন না। “তুমি যদি নিজেকে জানো এবং তোমার শত্রুকে জানো, তাহলে সর্বদাই তুমি জয়যুক্ত হবে।” এই বাক্যটি সর্বপ্রথম যে-ই ব্যক্ত করে থাকুক, তোমাদের ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায়। সংক্ষেপে, তোমাদের শত্রুকে জানার আগে তোমাদের অবশ্যই নিজেদেরকে জানতে হবে, এবং একমাত্র উভয়ই সম্পন্ন হওয়ার পরই তোমরা প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ করবে। এই সমস্তকিছুর সম্পাদনে তোমাদের সক্ষম হওয়া উচিত। ঈশ্বর তোমাদের কাছে যা-ই চান না কেন, তোমাদের কেবল সর্বশক্তি দিয়ে এই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া প্রয়োজন, এবং আমি আশা রাখি অন্তিমে ঈশ্বরের সম্মুখে এসে তোমরা নিজেদের যথাসাধ্য নিষ্ঠা নিবেদনে সক্ষম হবে। যতক্ষণ তুমি সিংহাসনাসীন ঈশ্বরের পরিতৃপ্ত হাসি দেখতে পাও, তা যদি তোমার নির্ধারিত মৃত্যুক্ষণও হয়, তবু চক্ষুনিমীলনকালে তোমার হাস্যময় রইতে সক্ষম হওয়া উচিত। ধরাধামে অধিষ্ঠানকালে তোমায় অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি তোমার অন্তিম দায়িত্ব নিষ্পন্ন করতে হবে। অতীতে, ঈশ্বরের নিমিত্ত পিতরকে উল্টো-করে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল; কিন্তু পরিশেষে তোমার ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা, এবং তাঁর স্বার্থে নিজের সকল শক্তি নিঃশেষিত করা উচিত। ঈশ্বরের নিমিত্ত কোনো সৃজিত সত্তা কী-ই বা করতে পারে? সুতরাং, তোমার উচিত কালবিলম্ব না করে ঈশ্বরের নিকট নিজেকে সমর্পিত করা, যাতে তাঁর ইচ্ছামতো তিনি তোমার বিহিত করতে পারেন। যতক্ষণ ঈশ্বরকে তা আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত করে, ততক্ষণ তোমার সাথে তাঁর যা অভিলাষ তা-ই করতে দাও। অনুযোগবাক্য জ্ঞাপনের কোন অধিকার মানুষের রয়েছে?

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৪০

পরবর্তী: অধ্যায় ৪২

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন