অধ্যায় ৩৬

বলা হয় যে ঈশ্বর এখন মানুষকে শাস্তিদান করতে আরম্ভ করেছেন, কিন্তু এই শাস্তিদানের আদি অভিপ্রায়টি মানুষের উপর নেমে এসেছে কি না তা কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না, কেউই এর কোনো পরিষ্কার উত্তর দিতে পারে না। ঈশ্বর বলেন, “আমার শাস্তির মধ্যে মানুষ কখনো কিছু আবিষ্কার করেনি, কারণ নিজের কাঁধের জোয়ালটি দুই হাতে আঁকড়ে ধরা ব্যতীত আর কিছুই সে করে না, দুই চক্ষু আমার উপর নিবদ্ধ রাখে, যেন-বা কোনো শত্রুকে নিরীক্ষণ করছে—এবং কেবল সেই মুহূর্তেই আমি লক্ষ্য করি সে কতখানি কঙ্কালসার। এই কারণেই আমি বলি যে পরীক্ষার মাঝে কেউই কখনো অবিচল থাকেনি।” যে শাস্তি এখনও মানুষের উপর আপতিত হয়নি, সেই শাস্তি সংক্রান্ত সত্যগুলির বিষয়ে ঈশ্বর মানুষকে অবগত করেন, এবং তিনি তা করেন অত্যন্ত আনুপুঙ্খিকভাবে, কোনোকিছু বাদ দেন না। মনে হয় বুঝি মানুষ শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে এবং দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে সত্যিই অক্ষম। ঈশ্বর মানুষের কুৎসিত অবয়বের এক প্রাণবন্ত, জীবন্ত চিত্রায়ণ প্রদান করেন। এই কারণেই মানুষ মানসিক চাপ অনুভব করে: যেহেতু ঈশ্বর বলেন যে পরীক্ষার মাঝে তারা কখনো অবিচল থাকেনি, তাহলে আমি-ই বা কীভাবে বিশ্ব-রেকর্ড ভঙ্গকারী ব্যক্তিটি হতে পারি, চিরাচরিত প্রথা লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও কীভাবে আমি গৃহীত হতে পারি? বাস্তবটি হল, ঠিক যেমন ঈশ্বর বলেন: “আমি কি তাদের পথের প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছি?” বস্তুতই, সকল মানুষকে ঈশ্বর পথের প্রান্তে এনে হাজির করেছেন, এবং সেকারণেই, তাদের চেতনায়, মানুষ নিয়তই বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর নিষ্ঠুর ও অমানবিক। সকল মানুষকে ঈশ্বর জাগতিক দুঃখকষ্টের পারাবার থেকে টেনে তুলেছেন, তারপর, “কোনো দুর্ঘটনা নিবারণার্থে, ধরা পড়া সমস্ত ‘মৎস্য’-কে আমি হত্যা করেছিলাম, তার পর থেকে মৎস্যগুলি আজ্ঞাকারী হয়ে উঠেছিল, এবং তাদের সামান্যতম অনুযোগ ছিল না।” এ কি বাস্তব সত্য নয়? সমুদয় মানুষকে মৃত্যুর তিক্ত সিন্ধু থেকে টেনে তুলে ঈশ্বর তাদের মরণের আরেক রসাতলে নিক্ষেপ করেন, তাদের সকলকে সবলে আকর্ষণ করে তিনি “ঘাতকের যূপকাষ্ঠ”-এ নিয়ে গিয়েছেন, তাদেরকে তিনি পথের প্রান্তে উপনীত হতে বাধ্য করেছেন—অন্যান্য পুত্র ও ঈশ্বরের লোকেদের ক্ষেত্রে তিনি এমন করেন না কেন? অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে এমন ধারার কার্য সম্পন্ন করার পিছনে তাঁর অভিপ্রায় কী? ঈশ্বরের হস্ত কেন এতো “বিদ্বেষপরায়ণ”? এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে “যখন আমার মানুষের প্রয়োজন হয়, তখন সে সততই লুক্কায়িত। মনে হয় যেন-বা কখনোই সে আশ্চর্যজনক দৃশাবলী প্রত্যক্ষ করেনি, বুঝি বা গ্রামাঞ্চলে তার জন্ম হয়েছিল এবং নাগরিক বিষয়াদি সম্পর্কে কিছুমাত্র অবগত নয়।” বস্তুত, তাদের অন্তঃকরণে মানুষ প্রশ্ন করে: “এই কার্য সম্পাদনের নেপথ্যে ঈশ্বরের পরিকল্পনা কী? তিনি কি আমাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন না? এবং এতে লাভ-ই বা কী? তাঁর কার্যের পদক্ষেপগুলি কেন ক্ষিপ্রগতিতে ও বিপুল হারে এসে উপস্থিত হয়, এবং আমাদের প্রতি কেন তিনি সামান্যতমও ক্ষমাশীল নন?” তবু মানুষ তা ব্যক্ত করার স্পর্ধা করে না, এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলি যেহেতু এই ধরনের বিচার-বিবেচনাসমূহ পরিহার করতে তাদের বাধ্য করে, আরো চিন্তা-ভাবনার সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করে, সেহেতু এজাতীয় অধিকতর চিন্তা-ভাবনাকে দূরে সরিয়ে রাখা ভিন্ন অন্য বিকল্প তাদের নেই। আসলে ব্যাপারটা হল, ঈশ্বর মানুষের যাবতীয় পূর্বধারণাকে প্রকাশ করেন, এবং সেকারণেই মানুষ তাদের পূর্বধারণাসমূহকে বলপূর্বক নিবৃত্ত করে রাখে, সেগুলিকে নির্গত হতে দেয় না। ইতিপূর্বেই বলা হয়েছিল যে এই লোকগুলি অতিকায় লাল ড্রাগনের সন্তানসন্ততি। বস্তুত, সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, তারা হল অতিকায় লাল ড্রাগনের মূর্ত রূপ। ঈশ্বর যখন বলপূর্বক পথের প্রান্তে নিয়ে গিয়ে তাদের হত্যা করেন, তখন—নিঃসন্দেহে—অতিকায় লাল ড্রাগনের আত্মার আর তাদের অভ্যন্তরে কর্ম সম্পাদনের কোনো সুযোগ থাকে না। এইভাবে, মানুষ যখন পথের প্রান্তে এসে উপনীত হয়, ঠিক তখনই পরিশেষে অতিকায় লাল ড্রাগনের মৃত্যু ঘটে। বলা যায় যে মৃত্যুর মাধ্যমে সে ঈশ্বরের “সুমহান সদাশয়তা”-র ঋণ পরিশোধ করছে—যা অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে ঈশ্বরের কার্যের লক্ষ্য। মানুষ যখন তাদের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত, তখন সমস্তকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায়, এবং কেউই তাদের পরাভূত করতে পারে না। জীবনের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কী-ই বা হতে পারে? সেকারণেই, শয়তান মানুষের মধ্যে আর কিছু করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, মানুষকে নিয়ে তার করার মতো কিছুই থাকে না। যদিও “দেহ”-এর সংজ্ঞায় বলা হয় যে দেহ শয়তানের দ্বারা কলুষিত, কিন্তু মানুষ যদি নিজেদেরকে প্রকৃত অর্থেই উৎসর্গ করে, এবং শয়তানের দ্বারা চালিত না হয়, তাহলে কেউই তাদের পরাভূত করতে পারে না—এবং সেই মুহূর্তে, দেহ তা-র অন্য এক কর্ম সাধন করবে, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বরের আত্মার নির্দেশনা গ্রহণ করতে আরম্ভ করবে। এ এক আবশ্যক পদ্ধতি, এটি অবশ্যই ধাপে-ধাপে সংঘটিত হবে; নচেৎ, অবাধ্য দেহের উপর কার্যসাধনের কোনো উপায় ঈশ্বরের থাকবে না। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এমনই। এইভাবে, সকল মানুষ তাদের অজ্ঞাতসারেই বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করেছে। এবং মানুষকে যিনি “পথের প্রান্ত”-এ এনে হাজির করেছেন তিনি কি ঈশ্বরই নন? তা কি মানুষের দ্বারা উন্মোচিত এক নব পন্থা হতে পারে? তোমাদের অভিজ্ঞতাসমূহের দিকে তাকিয়ে মনে হয় যেন-বা তোমাদের মধ্যে ঈশ্বর নিষ্ঠুরতম পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করেন, যার দ্বারা ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতা প্রতিপন্ন হয়। কেমন করে তোমরা সাধুবাদ না দিয়ে পারো? তোমাদের মধ্যে ঈশ্বর যে কার্য সম্পাদন করেন, মানুষকে তা ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাব দর্শনের সুযোগদান করে; এ-ই কি তোমাদের ঈশ্বর-বন্দনার পর্যাপ্ত কারণ নয়? অধুনা, এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যখন পুরাতন যুগ আজও বিদ্যমান এবং নবযুগ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, কীভাবে তোমরা ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করবে? এরকম এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি গভীর বিচার-বিবেচনার যোগ্য নয়? এখনও কি তোমরা অন্যান্য অসংশ্লিষ্ট বাহ্যিক বিষয়ে চিন্তামগ্ন? ঈশ্বর কেন বলেন যে, “যদিও মানুষ একদা ‘উপলব্ধি দীর্ঘজীবী হোক’ বলে আওয়াজ তুলেছিল, কিন্তু ‘উপলব্ধি’ শব্দটি বিশ্লেষণ করার পিছনে কেউই অধিক সময় ব্যয় করেনি, যা থেকে প্রতিপন্ন হয় যে আমাকে ভালোবাসার কোনো বাসনা মানুষের নেই”? ঈশ্বর যদি এমন উক্তি না করতেন, তাহলে কি তোমরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে ঈশ্বরের হৃদয়কে উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে না?

যদিও সাম্প্রতিককালে কিছু মানুষ হয়তো ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণের লক্ষ্য ও হেতুর বিষয়ে খানিকটা অবগত হয়েছে, তবু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, ঈশ্বর যদি সহজবোধ্য রীতিতে মানুষের উদ্দেশ্যে বক্তব্য না রাখতেন, তাহলে কেউই ঈশ্বরের অবতারত্বের লক্ষ্যাদি ও হেতু অনুমান করতে সক্ষম হতো না। এই বাক্য সন্দেহাতীত। এখনও কি তা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়? মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের সম্পাদিত সকল কার্যই তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনার অঙ্গ—তথাপি তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা নির্ভুলভাবে অনুধাবন করতে অক্ষম। এ হল মানুষের ঘাটতি, কিন্তু ঈশ্বর দাবি করেন না যে মানুষকে সকল বিষয়ে কর্মক্ষম হতে হবে, তিনি শুধু চান যে তারা “চিকিৎসকের সাবধানবাণীসমূহ” শ্রবণ করুক। এই হল ঈশ্বরের চাহিদা। সকল মানুষকে তিনি প্রকৃত মানবজীবন বিষয়ে অবগত হতে বলেন, কারণ “তাদের অন্তরে ‘মানবজীবন’ শব্দটির অস্তিত্ব নেই, এর বিষয়ে তাদের কোনো বিবেচনাই নেই, এবং আমার বাক্যসমূহ শ্রবণ করে তারা কেবলই ক্লান্ত বোধ করে, যেন-বা আমি কথাবার্তায় অসংলগ্ন কোনো বৃদ্ধা মহিলায় পরিণত হয়েছি।” মানুষের দৃষ্টিতে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ দৈনন্দিন ব্যবহৃত বাসনকোসনের অনুরূপ, সেগুলিকে সে মোটেই গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করে না। সেকারণেই, ঈশ্বরের বাক্যগুলি মানুষ পালন করতে পারে না—তারা কদর্য দুরাত্মায় পরিণত হয়েছে, যারা সত্যের বিষয়ে সচেতন, অথচ তা পালন করে না। সুতরাং মানুষের এই ত্রুটিটিই এককভাবে কিছুকালের জন্য ঈশ্বরের বিরক্তি উৎপাদনের পক্ষে যথেষ্ট, এবং সেকারণেই তিনি বারংবার বলেন যে মানুষ তাঁর বাক্যসমূহের প্রতি কর্ণপাত করে না। অথচ তাদের পূর্বধারণায়, মানুষ এরকম চিন্তা করে: “প্রতিদিন আমরা ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ ও বিশ্লেষণ করি, তাহলে কীভাবে বলা যায় যে সেগুলির প্রতি আমরা কর্ণপাত করি না? তা কি আমাদের উপর এক অবিচার করা নয়?” কিন্তু তোমাদের হয়ে বিষয়টি আমায় একটু ব্যবচ্ছেদ করতে দাও—মানুষের মুখ তাহলে রক্তবর্ণ ধারণ করবে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পঠনকালে তারা নিজেদের মাথা নাড়ে, ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে, কোনো গৃহপোষ্য কুকুর যেমন তা-র মালিকের নির্দেশে পুচ্ছ আন্দোলিত করে। সেহেতু, এই মুহূর্তে, মানুষ নিজেদের অযোগ্য বোধ করে, তাদের মুখমণ্ডল বেয়ে অঝোরে অশ্রু প্রবাহিত হয়, মনে হয় তারা বুঝি অনুতপ্ত হয়ে পুনরায় নতুন করে শুরু করতে চায়—কিন্তু এই সময়কালটি একবার অতিক্রান্ত হয়ে গেলে, তাদের দাস্যভাব তৎক্ষণাৎ অন্তর্হিত হয়, তা প্রতিস্থাপিত হয় নেকড়ে-সুলভ এক আচরণের দ্বারা; ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে তারা একপাশে সরিয়ে রাখে, এবং সততই বিশ্বাস করে যে তাদের নিজস্ব বিষয়গুলি অগ্রাধিকার পায়, এবং ঈশ্বরের বিষয়গুলি গুরুত্বক্রমে সর্বশেষে আসে, এবং তাদের এই ক্রিয়াকলাপের দরুন, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে তারা কখনোই সমর্থ নয়। বাস্তব সত্যগুলি সমাগত হলে, তারা তাদের কনুই বহির্মুখে প্রসারিত করে ধরে[ক]—এ হল তাদের আপনজনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা—এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ঈশ্বর বলেন, তারা “বেঁচে থাকার উপাদানের জন্য আমার উপর ভরসা করলেও, তারা ‘অন্য পথে হাঁটে’”। শুধুমাত্র এর থেকেই বোঝা যায় যে ঈশ্বরের বাক্যসমূহে সামান্যতম মিথ্যাচার নেই, এগুলি সর্বতোভাবে সত্য, এগুলির মধ্যে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই, তবুও এগুলি কিছুটা কমিয়ে বলা হয়েছে বলে মনে হয়, কারণ মানুষের আত্মিক উচ্চতা অতিশয় খর্ব, এগুলি সহ্য করতে সে অক্ষম। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ইতিমধ্যেই মানুষের অভ্যন্তরীন ও বাহ্যিক উভয় বিষয়েরই এক স্ফটিকস্বচ্ছ বিবরণ প্রদান করেছে; সম্পূর্ণ সুস্পষ্টরূপে সেগুলি খোদাই করেছে, এক জীবন্ত প্রতিমান চিত্রিত করেছে যা শয়তানের আদি চেহারার হুবহু অনুরূপ। আসলে বর্তমান পর্যায়ে, মানুষ এখনো সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখেনি, এবং সেকারণেই বলা হয় যে তারা নিজেদের জেনে উঠতে পারেনি। এই কারণেই আমি বলি যে এই পাঠ অবশ্যই অব্যাহত থাকবে; তা স্থগিত হতে পারে না। মানুষ যখন নিজেদের বিষয়ে অবগত হবে, তখনই ঈশ্বর মহিমা অর্জন করবেন। বিষয়টি সহজেই বোধগম্য—আমার বিশদে ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজন নেই। অবশ্য, একটি বিষয় রয়েছে যা আমি তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেবো, যদিও প্রথমে অবশ্যই ঈশ্বরের এই বাক্যগুলি পাঠ করতে হবে: “আজকের দিনে, মানুষ কখনো আমায় মূল্যবান গণ্য করেনি, তাদের অন্তরে আমার কোনো স্থান নেই। আসন্ন দুঃখযন্ত্রণার দিনে তারা কি আমার প্রতি এক প্রকৃত ভালোবাসা প্রদর্শন করতে পারবে?” এই বাক্যগুলির অর্থ কী? ঈশ্বর বলছেন যে মানুষের উপর এখনো শাস্তি নেমে আসেনি, যা প্রতিপন্ন করে যে “নিজেকে জানা” শব্দবন্ধটির আরো একটি অভ্যন্তরীণ অর্থ রয়েছে—তুমি কি তা ধরতে পেরেছো? দুঃখকষ্ট ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে না গিয়ে, মানুষ কীভাবে নিজেদের জানতে পারে? এগুলি কি ফাঁকা বুলি নয়? তুমি কি সত্যিই ঈশ্বর-কথিত সকল বাক্যে আস্থা রাখো? তুমি কি ঈশ্বরের বাক্যসমূহের মর্মোদ্ধার করতে পারো? ঈশ্বর বারংবার এজাতীয় উক্তি কেন করেন যে “মানুষের ক্রিয়াকলাপ প্রত্যক্ষ করার পর, আমার হাতে একমাত্র বিকল্প থাকে প্রস্থান করা,” এবং এও বলেন যে, “কেবল যখন পর্বতরাজি পতিত এবং ধরিত্রী ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়, একমাত্র তখনই মানুষ আমার বাক্যনিচয়ের বিষয়ে চিন্তা করে, শুধু তখনই তারা তাদের স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠে, কিন্তু সময় ইতিমধ্যেই উপনীত হয়েছে, ভয়ঙ্কর বন্যা তাদের গ্রাস করে, তাদের শবদেহগুলি জলতলে ভাসতে থাকে”? কেন-ই বা ঈশ্বর বলেন “মানুষ…চিন্তা করে” এবং তিনি কেন বলেন না “মানুষ আমার বাক্যসমূহ মান্য করে”? এ কি সত্যি যে পর্বতরাজি পতিত এবং ধরিত্রী ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়? এই ধরনের বাক্যের প্রতি মানুষ কোনো কর্ণপাত করে না, এগুলিকে তারা বিনা অভিনিবেশে হাতছাড়া হতে দেয়, সেহেতু ঈশ্বরের বাক্যের দরুন তারা প্রভূত “যন্ত্রণাভোগ” করে। এর কারণ, তারা নিরতিশয় বিচারবিবেচনাহীন। মানুষের এই ত্রুটির কারণেই ঈশ্বর বলেন, “আমি, অশ্রুনালী বিরহিত এই ‘কিম্ভূতকিমাকার ব্যক্তি’, মানুষের নিমিত্ত অনেক অশ্রু বিসর্জন করেছি। মানুষ, অবশ্য, এর কিছুই জানে না।” যেহেতু ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি মানুষ কোনো মনোযোগ প্রদান করে না, সেহেতু তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে এবং তাদের “সহায়তা” লাভ করতে ঈশ্বর এই উপায় অবলম্বন করেন।

আপাতত আমি বিশ্বের ক্রমবিকাশ বিষয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করবো না, কিন্তু নিয়তির বিষয়ে কিছু আগাম বার্তা দেবো। মানুষকে কি আমি নিজেদের বিষয়ে অবগত হতে বলিনি? একে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? মানুষের কীভাবে নিজেদের সম্পর্কে অবগত হওয়া উচিত? ঈশ্বর যখন মানুষকে এতোটাই “নিপীড়ন” করেন যে তারা জীবন ও মৃত্যুর মাঝে দোদুল্যমান থাকে, তখনই তারা মানবজীবনের অর্থ কিছু পরিমাণে উপলব্ধি করতে শুরু করে, এবং মানবজীবন সম্পর্কে তারা ক্লান্ত, মনে করে যে কোনো মানুষের সমগ্র জীবন এক স্বপ্ন ভিন্ন আর কিছুই নয়। তারা বিশ্বাস করে যে মানুষের জীবন নিদারুণ যাতনাময়, এবং কোনোদিন কোনোকিছু অর্জন না করেই তাদের মৃত্যু ঘটবে, নিজেদের জীবনকে তারা নিরর্থক ও মূল্যহীন মনে করে। মানবজীবন নিছকই এক স্বপ্ন, এমন এক স্বপ্ন যেখানে সুখ-দুঃখ আসে আর যায়। বর্তমানে, মানুষ ঈশ্বরের নিমিত্ত জীবনধারণ করে, কিন্তু যেহেতু তারা মানবজগতে বসবাস করে, সেহেতু তাদের প্রাত্যহিক জীবন অন্তঃসারশূন্য ও মূল্যহীনই রয়ে যায়, ফলত সকল মানুষ অবগত হয় যে ঈশ্বরকে উপভোগ করা হল এক ক্ষণস্থায়ী সান্ত্বনা মাত্র—কিন্তু, যখন তারা ঈশ্বরকে উপভোগ করে না, তখন যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও দেহরূপেই বাস করে, তাহলে কী লাভ? দেহরূপে, মানুষের কাছে সমস্তকিছুই অন্তঃসারশূন্য। মানবজীবনের উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতা লাভের পর, বৃদ্ধ বয়সের অভ্যাগমের সাথে মানুষের কেশদাম পলিত হয়, তার মুখমণ্ডল ভরে ওঠে বলিরেখায়, তার দুই হাত জুড়ে কড়া পড়ে। যদিও সে এক বৃহৎ মূল্য পরিশোধ করেছে, কিন্তু বস্তুত সে কিছুই অর্জন করেনি। অতএব, আমার বাক্যসমূহ আরেক ধাপ অগ্রসর হয়: যারা স্থূল দেহে জীবনধারণ করছে, তাদের কাছে সমস্তকিছুই সারশূন্য। এটি সন্দেহাতীত, এবং তোমার তা বিশদে নিরীক্ষা করা নিষ্প্রয়োজন। এই হল মানবজীবনের আসল চেহারা, ঈশ্বর বারংবার যার উল্লেখ করেছেন। মানুষের দুর্বলতার কারণবশত ঈশ্বর এই বাক্যগুলি এড়িয়ে যান না, বরং তাঁর আদি পরিকল্পনা অনুসারে কার্যসাধন করে যান। কিছু বাক্য হয়তো মানুষকে অবলম্বন ও উপলব্ধি প্রদান করে, এবং অন্য কিছু বাক্য সম্ভবত এর ঠিক বিপরীত কার্য করে, ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে এক মৃত্যময় আবহাওয়ার মধ্যে বাস করতে বাধ্য করে—এবং ঠিক এই কারণেই তারা কষ্ট পায়। এইভাবে, সম্ভবত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই, ঈশ্বর “জনশূন্য নগরীর কৌশল”[খ] গ্রহণ করেন, কিন্তু তারা আদৌ তা দেখতে পায় না, অন্ধকারেই রয়ে যায়। এবং তবুও, সকলকিছুই ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণাধীন, মানুষ তা জানলেও, এর বিরুদ্ধে কীভাবেই বা তারা আত্মরক্ষা করতে পারে? সেকারণেই, কেউই শাস্তি থেকে রেহাই পেতে সক্ষম নয়—কী-বা তারা করতে পারতো? তারা শুধুই ঈশ্বরের আয়োজনের কাছে আত্মসমর্পণ করতে পারে—এবং তা কি এই কারণেই নয় যে ঈশ্বর তাদেরকে ধরে ফেলেছেন এবং ছাড়বেন না? একমাত্র ঈশ্বরের ভীতিপ্রদর্শনের অধীনেই সমুদয় মানুষ প্রকৃতির গতিপথ অনুসরণ করতে সক্ষম হয়—বিষয়টি কি বস্তুতই তা নয়? ঈশ্বরের আয়োজন না থাকলে মানুষ স্বেচ্ছায় কীভাবে পরাজয় স্বীকার করতে পারতো? তা কি এক রসিকতা হতো না? মানবজীবন অন্তঃসারশূন্য হলেও, তাদের যাপন যখন আরামপ্রদ, তখন কে-ই বা নীরবে মনুষ্যজগত পরিত্যাগ করে ঈশ্বরের সন্তুষ্টিবিধানের নিমিত্ত প্রয়াসী হতে ইচ্ছুক? মানুষ অসহায়তার মাঝে মৃত্যুবরণ করে—কাঙ্ক্ষিত সকলকিছুই থাকা সত্ত্বেও কে-ই বা কবে প্রাচুর্যের মাঝে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে? শুধুমাত্র নভোমণ্ডল থেকে অবতীর্ণ কোনো “নক্ষত্র”-ই এর এক ব্যতিক্রম হতে পারে। তৃতীয় স্বর্গে নক্ষত্রটি যে জীবন উপভোগ করেছিল তার তুলনায় ধরাধামের জীবন হবে মৃতস্থানে বসবাসের সামিল—একমাত্র এহেন পরিস্থিতিতেই সেই নক্ষত্রটি মৃত্যুবরণে ইচ্ছুক হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে কে-ই বা স্বর্গের তারকা? এ বিষয়ে আমিও “অনিশ্চিত”। চারপাশে সন্ধান করে দেখা যাক এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় কি না। যদি তা যায়, তাহলে আমার উপরোক্ত বাক্যানুসারে কার্য সম্পাদনে সে ইচ্ছুক কি না তা অনুসন্ধানের বিষয়ে মানুষকে আমি সহায়তা করতে বলি। তবু তোমাদের প্রত্যেকের প্রতি আমার একটি সাবধানবাণী রয়েছে: তোমাদের কেউ কখনোই “নায়ক”-এর ভূমিকা পালন করতে গিয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে যেও না, বুঝতে পেরেছো?

পাদটীকা:

ক. “কনুই বহির্মুখে প্রসারিত করে ধরে” হল এক চৈনিক বাগ্‌ধারা, যার অর্থ কোনো ব্যক্তি তার পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি, আত্মীয়স্বজন বা ভ্রাতা-ভগিনীর মতো নিকটজনের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে অন্যদের সাহায্য করছে।

খ. “জনশূন্য নগরীর কৌশল” হল প্রাচীন চীনদেশে প্রচলিত শত্রুকে বিভ্রান্ত করার ছত্রিশটি রণকৌশলের মধ্যে ৩২-তমটি। এই কৌশলে শত্রুকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতির অভাব গোপন করে এক ছলনাপূর্ণ নির্ভীক সৈন্যসমাবেশ প্রদর্শন করা হয়।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৩৫

পরবর্তী: অধ্যায় ৩৮

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন