অধ্যায় ৩৫

বর্তমানে, সকল মানুষ, বিভিন্ন মাত্রায়, শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে। ঠিক যেমন ঈশ্বর বলেছিলেন, “মানুষের সঙ্গে আমি পাশাপাশি অগ্রসর হই।” একথা সর্বৈব সত্য, তবু মানুষ এখনো বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে অক্ষম। ফলস্বরূপ, মানুষের কৃতকর্মের একাংশ অনাবশ্যক হয়ে পড়েছে। ঈশ্বর বলেছিলেন, “তাদের আত্মিক উচ্চতা অনুযায়ী আমি তাদের অবলম্বন দিই ও রসদ সরবরাহ করি। যেহেতু আমার সমগ্র পরিচালনামূলক পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় চরিত্র হল মানুষ, সেহেতু ‘মনুষ্যের’ ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য যারা মনোনীত হয়েছে তাদের আমি অধিক নির্দেশনা প্রদান করি, যাতে তারা ঐকান্তিকভাবে ও তাদের সর্বসামর্থ্য দিয়ে চরিত্রটি পরিবেশন করতে পারে”, তিনি এ-ও বলেছিলেন, “কিন্তু, সরাসরি তাদের বিবেকের সমালোচনা করতে আমি অস্বীকার করি; বরং, আমি ধৈর্যসহকারে ও নিয়মানুগভাবে তাদের পথপ্রদর্শনা দান অব্যাহত রাখি। যতোই হোক, মানুষ দুর্বল, কোনো কর্মসাধনে অক্ষম।” ঈশ্বরের চিন্তাটি হল নিম্নরূপ: এমনকি অন্তিমে যদি তিনি এই সকল মানুষকে ধ্বংসও করতেন, তাহলেও ধরাধামে তাঁর কার্য তখনো তাঁর আদি পরিকল্পনা অনুযায়ীই অব্যাহত থাকতো। ঈশ্বর অপ্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করেন না; তাঁর সকল কার্যই সৎকর্ম। পিতর যেমন বলেছিলেন, “এমনও যদি হয় যে ঈশ্বর খেলনা ভেবে মানুষের সাথে ক্রীড়ারত হয়েছিলেন, তাহলেই বা মানুষের কী অনুযোগ থাকতে পারতো? তাদের কোন অধিকার থাকতো?” বর্তমান সময়ে, মানবজাতির সঙ্গে ঈশ্বর কি এটাই অর্জন করছেন না? প্রকৃতই মানুষের কি এরকম এক অভিমত থাকতে পারে? যে পিতর কয়েক হাজার বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল, সে এমন এক উক্তি উচ্চারণে সক্ষম, অথচ এই উচ্চপ্রযুক্তি-সমন্বিত আধুনিক যুগে বাসরত বর্তমানের “পিতরেরা” কেন তা পারে না? ইতিহাস অগ্রসর হচ্ছে নাকি পশ্চাদ্গমন করছে, তা নিশ্চিতরূপে বলতে আমি অক্ষম, এবং বিজ্ঞান সম্মুখপানে না পশ্চাদভিমুখে সঞ্চারমান, এই প্রশ্নের উত্তর এখনও কেউ দিতে পারে না। মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের সম্পাদিত সকল কার্যের উদ্দেশ্য ছিল তাদের ইতিবাচক করে তোলা এবং তাদের জীবনকে পূর্ণবিকশিত হওয়ার সুযোগ দান করা। মানুষ কি তা প্রণিধানে অপারগ? যাকিছু তোমায় নেতিবাচক করে তোলে তা তোমার এক দুর্বলতা, অত্যাবশ্যক এক অরক্ষিত স্থান যা শয়তানের আক্রমণের লক্ষ্য হবে। তুমি কি সুস্পষ্টভাবে তা দেখতে পাও? ঈশ্বর এভাবে কেন বলেছিলেন? “পূর্ণ ঐকান্তিকতা ও আন্তরিকতা সহকারে মানবজাতির কাছে আমি এই মিনতি জানাই। আমি যা চাই তার সম্পাদনে তারা কি যথার্থই অক্ষম?” এই বাক্যগুলির অর্থ কী? ঈশ্বর কেন এই প্রশ্ন করেছিলেন? এটি প্রতিপাদন করে যে, মানুষের মধ্যে খুব বেশি নেতিবাচক দিক রয়েছে, এবং কেবল একটি ঋণাত্মক উপাদানই মানুষের পদস্খলনের পক্ষে পর্যাপ্ত। নেতিবাচক থাকলে ফল কী হবে তা তুমি নিজেও একবার তাকিয়ে দেখতে পারো। ঈশ্বর যাকিছু করেন সকলই মানবজাতিকে নিখুঁত করার স্বার্থে। এই বাক্যগুলির আর কোনো ব্যাখ্যার কি প্রয়োজন রয়েছে? না—আমার মনে হচ্ছে কোনো প্রয়োজন নেই! বলা যেতে পারে যে, মানুষ শয়তানের দ্বারা অধিকৃত হয়েছে, কিন্তু এমন বলা আরো যথাযথ হবে যে, মানুষ নেতিবাচকতার দ্বারা অধিকৃত হয়েছে। এ হল মানবজাতির অন্যতম উদ্ভাস, মানবদেহের এক আনুষঙ্গিক উপাঙ্গ। তাই, সকল মানুষই অচেতনভাবে নেতিবাচকতার মধ্যে, এবং পরবর্তীকালে শাস্তির মধ্যে পতিত হয়। এ হল মনুষ্যজাতির জন্য ঈশ্বর-আয়োজিত এক ফাঁদ, এবং এই সময়েই মানুষ সর্বাধিক যন্ত্রণাভোগ করে। মানুষ নেতিবাচকতার মধ্যে বাস করে বলে তাদের পক্ষে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। অধুনা বিষয়সমূহ কি ঠিক এমনই নয়? কিন্তু মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের এই বাক্যগুলি উপেক্ষা করতে পারে, “ইদানিংকালে, শয়তান চরম মাত্রায় উদ্দাম হয়ে উঠেছে। আমার কার্যের কেন্দ্রবিন্দুটি প্রদর্শন করতে ও আমার শক্তি প্রকাশ করতে এই সুযোগটি আমি গ্রহণ করি না কেন?” স্মরণ করানোর জন্য আমি দু-একটি বাক্য উচ্চারণ করি, এবং, তৎক্ষণাৎ, গির্জার লোকজন শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করে। এই কারণেই, ঈশ্বরের কার্য দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও, মানুষ এখনও অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রূপান্তরিত হয়নি। তারা শুধু তাদের মনের সাহায্যে ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে বিশ্লেষণ করে, তবু তাদের অবস্থার বস্তুত আদৌ কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। তারা নেতিবাচকই রয়েছে। এর ফলে, ঈশ্বর যখন উল্লেখ করেন যে শাস্তির কাল সন্নিকটবর্তী, তখন মানুষ তৎক্ষণাৎ সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে, তারা ভাবে: “ঈশ্বরের দ্বারা আমার পূর্ববিহিত করা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না, এই শাস্তির অধীনে আমি অবিচল থাকতে পারবো কি না, তা-ও আমার জানা নেই। মানুষকে শাস্তিদান করতে কোন পদ্ধতি ঈশ্বর ব্যবহার করবেন, তা জানা তো আরোও কঠিন কাজ।” শাস্তির ব্যাপারে সকল মানুষই শঙ্কিত, তবু তারা পরিবর্তিত হতে অক্ষম। তারা কেবল নিঃশব্দে যন্ত্রণাভোগ করে, কিন্তু একই সঙ্গে শঙ্কিত যে তারা হয়তো অকম্পিত থাকতে অসমর্থ হবে। এহেন পরিস্থিতিতে, শাস্তির সম্মুখীন না হয়েই এবং বাক্যের নিপীড়ন ব্যতিরেকেই, মানুষ তাদের অজ্ঞাতসারে শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাই, তারা সকলেই সন্ত্রস্ত ও বিচলিত। একেই বলা হয় “যেমন কর্ম তেমনই ফল”, কারণ মনুষ্যেরা ঈশ্বরের কার্যকে আদৌ উপলব্ধি করে না। বস্তুত, এই মানুষগুলির উপর ঈশ্বর আর কোনো বাক্যের অপচয় করতে অনিচ্ছুক; মনে হয় ঈশ্বর বুঝি তাদের মোকাবিলার জন্য এক ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, এমন এক পদ্ধতি যা যথার্থ শাস্তি নয়। মানুষ যখন কোনো কুক্কুটশাবককে ধরে হাতে তুলে পরীক্ষা করে দেখে তা মুরগি নাকি মোরগ, এ হল সেই রকম; তা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে নাও হতে পারে, কিন্তু, তৎসত্ত্বেও, ওই ক্ষুদ্র কুক্কুটশাবকটি এতই ভয় পাবে যে নিজেকে মুক্ত করার জন্য সংগ্রাম করবে, যেন ছানাটি আতঙ্কিত যে তার মালিক বুঝি সেটিকে হত্যা করে ভক্ষণ করবে। কারণ কুক্কুটশাবকটির কোনো আত্মজ্ঞান নেই। মাত্র কয়েক ছটাক ওজনের এক কুক্কুটশাবককে কেন কেউ হত্যা করে ভক্ষণ করতে যাবে? তা কি অর্থহীন কাজ হবে না? বিষয়টি ঠিক ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন: “তাহলে, মানুষ কেন ক্রমাগত আমায় এড়িয়ে চলে? তা কি এই কারণে যে তাদেরকে আমি কুক্কুটশাবক গণ্য করে আচরণ করবো, ধরামাত্র হত্যা করবো?” সুতরাং, মানুষের যন্ত্রণাভোগ কেবলই “নিঃস্বার্থ” আত্মসমর্পণ, এবং একে এক নিরর্থক মূল্য পরিশোধ বলা যেতে পারে। মানুষ নিজেদের জানে না বলেই তারা শঙ্কিত বোধ করে; ফলস্বরূপ, তারা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে না। এ-ই হল মনুষ্যজাতির দুর্বলতা। ঈশ্বরের এই যে উক্তি, “পরিশেষে, মানুষকে নিজেদের জানতে দাও। এটাই আমার অন্তিম লক্ষ্য”, তা কি সেকেলে হয়ে পড়েছে? কার-ই বা প্রকৃত আত্মজ্ঞান রয়েছে? কেউ যদি নিজেকেই না জানে, তাহলে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার অধিকার পায় কীভাবে? উদাহরণস্বরূপ মেষশাবকদের কথা ধরা যাক। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে মেষে পরিণত না হলে কীভাবে তাদের বধ করা যায়? ফলবান হয়নি এমন এক বৃক্ষকে মানুষ কীভাবে উপভোগ করতে পারে? সকলেই “টীকাকরণ”-এর উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে। তাই, মানুষ উপবাসকার্য সম্পাদনার্থে অভুক্ত রয়েছে। এ হল কর্মানুসারে ফললাভের, নিজের ক্ষতিসাধনের এক দৃষ্টান্ত, এবং তা ঈশ্বরের নিষ্ঠুরতা বা অমানবিকতা নয়। একদিন, মানুষ অকস্মাৎ যদি নিজেদের জানতে পারে এবং ঈশ্বরের সম্মুখে শঙ্কায় প্রকম্পিত হয়, তখন ঈশ্বর তাদের শাস্তিদান শুরু করবেন। একমাত্র এভাবেই মানুষ হৃদয়ে ও বাক্যে আজ্ঞানুবর্তী হয়ে কৃচ্ছ্রসাধনকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করবে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতিটি কেমন? শিশুদের দিয়ে আহার প্রস্তুত করানোর মতন সকল মানুষ অনিচ্ছাসহকারে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। অবস্থা এরূপ হলে, তাদের অস্বস্তি বোধ হওয়াই স্বাভাবিক। সকলেই চিন্তা করে, “আচ্ছা ঠিক আছে! যতক্ষণ শাস্তিপ্রাপ্ত হচ্ছি, ততক্ষণ আমি তো মাথা অবনত করে দোষ স্বীকারও করতে পারি! আমার কী-ই বা করার আছে? ক্রন্দনরত হলেও, তবু আমায় ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে হবে, তাহলে আমার কী করণীয়? ভালো-মন্দ যা-ই হোক, এখন আমি এই পথে রয়েছি। ঠিক আছে! একে আমি শুধু আমার দুর্ভাগ্য বলেই ধরে নেবো!” মানুষ কি এভাবেই চিন্তা করে না?

ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন, “মানবজাতি অত্যন্ত সুশীল; কেউ আমার বিরোধিতা করার স্পর্ধা করে না। আমার নির্দেশনার অধীনে, সকলেই আমার দ্বারা নির্ধারিত ‘কার্য’ সম্পন্ন করে।” এতে পর্যাপ্তরূপে প্রমাণ হয় যে একজন মানুষও স্বেচ্ছায় শাস্তিপ্রাপ্ত হয় না, এবং অধিকন্তু, এই শাস্তি আগত হয় ঈশ্বরের থেকে, কারণ সকল মানুষই চায় অবসরের মাঝে জীবনধারণ করতে, গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে নয়। ঈশ্বর বলেছিলেন, “মৃত্যুভয়ে কে ভীত নয়? মানুষ কি প্রকৃতই নিজেদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে?” তা সম্পূর্ণ সঠিক; সকলেই মৃত্যুভয়ে ভীত, অবশ্যই যদি না ক্রোধ বা হতাশা তাদের সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলে। এ হল মনুষ্যজাতির উপাদান, এবং এর সমাধান করা অত্যধিক দুরূহ কাজ। সম্যকভাবে, ঈশ্বর আজ এই অপ্রীতিকর অবস্থার মীমাংসাকল্পেই আগমন করেছেন। সকল মানুষই নির্বল, তাই তাদের মাঝে ঈশ্বর এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসালয় স্থাপন করেছেন যেখানে এই রোগ থেকে তারা নিরাময় লাভ করতে পারে। এই অসুস্থতার ফাঁদ থেকে মানুষ নিজেদের মুক্ত করতে পারে না, সেকারণেই তারা সকলেই এত উদ্বিগ্ন যে তাদের মুখ আতপ্ত এবং তাদের উদর স্ফীত হয়ে উঠেছে। ক্রমশ, তাদের উদরে গ্যাসের আয়তন বৃদ্ধি পায়, ফলে চাপ ঊর্ধ্বমুখী হয়, এবং অবশেষে, পাকস্থলী বিদীর্ণ হয়ে তাদের সকলেরই মৃত্যু ঘটে। সুতরাং, ঈশ্বর তখন মানুষের এই গুরুতর পীড়ার উপশম করে ফেলবেন, কারণ সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। এটা কি মানুষের অবস্থার এক প্রতিকার নয়? ঈশ্বর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কার্য সম্পন্ন করতে এসেছেন। মৃত্যুভয়ে মানুষ ভীষণ শঙ্কিত বলেই স্বয়ং ঈশ্বর মানুষের সাথে একত্রে এই কার্য সম্পাদন করতে এসেছেন; তাদের সাহসিকতা এত নগণ্য বলেই তাদের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তিনি এক চাক্ষুষ প্রতিপাদনের আয়োজন করেছেন। একমাত্র ঈশ্বরের পূর্বদৃষ্টান্ত দর্শনের পরেই মানুষ মান্য করতে আগ্রহী হয়। এই কারণেই, ঈশ্বর বলেছিলেন, “আমার কার্য নিষ্পন্ন করতে কেউই সক্ষম হতো না বলে, শয়তানের সাথে জীবন-মৃত্যু সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে আমি স্বয়ং রণক্ষেত্রে পদার্পণ করেছি।” এ হল এক নির্ণায়ক লড়াই, সুতরাং হয় মাছটি মারা পড়ে, নয়তো জাল ছিন্ন হয়। এটুকু অন্ততঃপক্ষে নিশ্চিত। অন্তিমে যেহেতু আত্মাই বিজয়ী হবে, সেহেতু মৃত্যু অবধারিতরূপে দেহের দখল নেবেই। এর নিহিতার্থ কি তোমরা প্রণিধান করো? তবু অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হোয়ো না। উপরোক্ত বাক্যটি হয়তো সরল, কিংবা হয়তো তা জটিল। যা-ই হোক না কেন, মানুষ তার তল পায় না—অন্ততঃপক্ষে এটুকু সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়। যন্ত্রণাভোগের মধ্যে, মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের পরিমার্জন স্বীকার করতে পারে, একে কেউ তার সৌভাগ্য বলতে পারে, আবার কেউ তার দুর্ভাগ্যও বলতে পারে। তবু এখনো আমি স্মরণ করাবো যে ঈশ্বরের অভিপ্রায়, এতদসত্ত্বেও, নির্ভুল—তা মানুষের অভিপ্রায়ের অনুরূপ নয়, যা সর্বদাই তাদের নিজেদের স্বার্থে পরিকল্পনা ও আয়োজন করে। বিষয়টি অতি সুবোধ্য হওয়া উচিত; অনন্ত চিন্তায় পতিত হোয়ো না। সম্যকভাবে এ-ই কি মানবীয় দুর্বলতা নয়? তারা সকলেই এই প্রকারের; ঈশ্বরের প্রতি প্রভূত ভালোবাসার পরিবর্তে, তাদের সুপ্রচুর ভালোবাসা রয়েছে নিজেদের প্রতি। তিনি এমন এক ঈশ্বর যিনি মানুষের প্রতি ঈর্ষাকাতর, তাই সর্বদাই তিনি তাদের উপর চাহিদা স্থাপন করেন। মানুষ যত বেশি নিজেদের ভালোবাসবে, ঈশ্বরও তত বেশি করে তাঁকে ভালোবাসার জন্য দাবি জানাবেন, এবং তাদের কাছে তাঁর চাহিদাও ততই কঠোর হবে। মনে হয় ঈশ্বর বুঝি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মানুষকে উত্যক্ত করছিলেন। মানুষ প্রকৃতই তাঁকে ভালোবাসলেও মনে হয় তিনি যেন তাদের স্বীকৃতি দেন না। এই কারণেই, হতবুদ্ধি হয়ে মানুষ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে। এ হল ঈশ্বরের স্বভাবের এক বৃত্তান্ত, দু-একটি বিষয়ে কেবল এক সংক্ষিপ্ত উল্লেখ। এটিই ঈশ্বরের ইচ্ছা। এ-ই হল সেই বিষয় যা নিয়ে ঈশ্বর মানুষের অবগতি দাবি করেন, এবং এ হল আশুকর্তব্য। এ এক নতুন কর্মভার, এবং অন্তরায় অতিক্রম করে নব অগ্রগতি লাভের জন্য মানুষকে একাজে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তোমরা কি তা উপলব্ধি করো? তোমরা কি মনে করো যে এ বিষয়ে আমার অধিকতর বাক্যোচ্চারণ আবশ্যক?

পূর্ববর্তী যুগ সম্পর্কে ঈশ্বর বলেছিলেন, “একজন মানুষও কখনো আমার দ্বারা মনোনীত হয়নি; সকলেই আমার নীরব পত্রের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। এর কারণ, অতীতদিনে মানুষ এককভাবে শুধুমাত্র আমারই সেবা করেনি, তাই আমিও, প্রতিদানে, একান্তভাবে কেবল তাদেরই ভালোবাসিনি। তারা শয়তানের ‘উপঢৌকন’ গ্রহণ করেছিল এবং তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই উপহারই তারা আমাকে উৎসর্গ করেছিল। একাজ কি আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া নয়?” এই বাক্যগুলি কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? বিষয়টি ঈশ্বরের এই উক্তি অনুসারী: “সকল প্রতিভার উৎস শয়তান।” বিগত প্রজন্মের প্রেরিত শিষ্য ও নবীগণ তাদের কার্য সম্পাদনের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিভার উপর নির্ভরশীল ছিল, এবং যুগযুগান্ত ধরে, তাঁর কার্য পরিচালনা করার জন্য ঈশ্বর তাদের প্রতিভাকে ব্যবহার করেছেন। এই কারণেই বলা হয় যে সকল প্রতিভাধর মানুষের দ্বারা নিষ্পন্ন সেবাকার্য শয়তানের থেকেই আগত। অবশ্য, ঈশ্বরের প্রজ্ঞার কারণে, “শয়তানের শঠতাকে আমি আমার প্রতিতুলনার উপমেয় হিসাবে ব্যবহার করি।” তাই, প্রতিভাধর মানুষের সেবাকে ঈশ্বর “শয়তানের উপটৌকন” হিসাবে অভিহিত করেছেন, এবং তারা শয়তানের অধিকৃত বলেই এই কার্যকে ঈশ্বর “কুৎসারটনা” আখ্যা দেন। মানুষের বিরুদ্ধে এটি কোনো ভিত্তিহীন অভিযোগ নয়, বরং এ এক সুপ্রতিষ্ঠিত ও যথাযথ ব্যাখ্যা। সুতরাং, “আমি আমার বিতৃষ্ণা প্রকাশ করিনি; বরং, এই ‘উপঢৌকনগুলি’-কে আমার ব্যবস্থাপনার সামগ্রীর সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের অভিসন্ধিকে আমি আমার নিজস্ব কার্যসিদ্ধির উপকরণে রূপান্তরিত করেছিলাম। পরবর্তীকালে, একবার তারা যন্ত্রের দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়ে গেলে, অভ্যন্তরীন ধাতুমল আমি ভস্মীভূত করবো।” এই-ই হল ঈশ্বরের কার্যের চমৎকারিত্ব। মানুষের পূর্বধারণার সাথে এই বিষয়টি ন্যূনতম সঙ্গতিপূর্ণ, কারণ এমন কেউই চিন্তা করে না যে রাজা হিসাবে যারা আধিপত্য করে তারা প্রতিভাবিহীন ব্যক্তি, বা প্রতিভাহীন ব্যক্তিকেই ঈশ্বর ভালোবাসেন। যা দেখা যাচ্ছে, সাক্ষী লী এবং প্রহরী নী-র সকল ভাবাদর্শ বা আশাআকাঙ্ক্ষা-ই ভস্মীভূত হয়েছে, এবং আজকের প্রতিভাধর ব্যক্তিগণের ক্ষেত্রেও বাক্যটি প্রযোজ্য। ঈশ্বর এখন এই কার্যের সূচনা করেছেন, এবং যে মানুষগুলি তাঁর কার্যের প্রতিতুলনায় উপমানের ভূমিকা পালন করে তাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার সম্পাদিত সকল কার্য ক্রমশ তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। যখন ঈশ্বরের কার্য সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত হবে, তখন এই মানুষগুলি সকলেই তাদের আদি অবস্থানে প্রত্যাবর্তন করবে। যা-ই হোক, আমার বাক্যের দরুন হঠকারী আচরণ করতে মানুষকে আমি নিষেধ করি। তোমাদের উচিত ঈশ্বরের কার্যের পর্যায় অনুসারে বিষয়াদির স্বাভাবিক গতিপথ অনুসরণ করা, এই কার্য যাতে বিঘ্নিত না হয়। তোমরা কি বিষয়টি প্রণিধান করো? কারণ এগুলিই হল ঈশ্বরের কার্যের পর্যায় ও পদ্ধতি। ঈশ্বর যখন এই “উপটৌকনসমূহ” “প্রক্রিয়াজাত” করে “তৈরি পণ্যে” রূপান্তরিত করবেন, তখন তাঁর সমুদয় অভিপ্রায় সুস্পষ্ট হবে, এবং তাঁর সেবায় ব্যবহৃত সকল উপঢৌকনাদি অপসৃত হবে; কিন্তু, তৈরি পণ্যগুলি ঈশ্বরের উপভোগের নিমিত্ত রয়ে যাবে। তোমরা কি বিষয়টি উপলব্ধি করো? ঈশ্বর চান তৈরি পণ্য, তাঁর উদ্দেশ্যে মানুষের নিবেদিত বিপুল উপহারসামগ্রী তিনি চান না। একমাত্র প্রত্যেকে যখন তার যথাযথ অবস্থান গ্রহণ করে ফেলবে, অর্থাৎ ঈশ্বর যখন তাঁর আদি অবস্থানে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং শয়তানও তার নিজের আসনে উপবিষ্ট হবে, সেই সাথে ব্যত্যয়হীনভাবে দেবদূতেরাও তা করবে—কেবল তখনই ঈশ্বরের অভিব্যক্তিতে এক চরিতার্থতার হাসি দৃশ্যমান হবে, কারণ তাঁর অভিপ্রায় তখন সিদ্ধ হবে, তাঁর লক্ষ্য অর্জিত হবে। ঈশ্বর তখন আর “শয়তানের” কাছে “সহায়তা” চাইবেন না, কারণ ঈশ্বরের অভিপ্রায়সমূহ মানুষের কাছে প্রকাশ্যে উদ্ঘাটিত হবে, এবং মানুষকে দিয়ে আর কখনো তা জ্ঞাপন করানো হবে না। সেই ক্ষণে, মানুষের জাগতিক দেহ তাদের আত্মার সাথে এক হয়ে যাবে। এমনটাই ঈশ্বর মানুষের নিকট প্রকাশ করেন; এ হল আত্মা, অহম্‌ ও দেহের অন্তিম গন্তব্য। “মানবতা”-র আদি অর্থের এ হল এক সংক্ষিপ্তসার। এ বিষয়ে বিশদ গবেষণা নিষ্প্রয়োজন; এর সম্বন্ধে অল্প একটুখানি অবগতিই যথেষ্ট। তোমরা কি তা উপলব্ধি করেছো?

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৩৩

পরবর্তী: অধ্যায় ৩৬

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন