অধ্যায় ৩৩

বস্তুতই, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের সম্পাদিত কার্য, এবং তাদের তিনি যা প্রদান করেছেন, সেই সাথে মানুষ যাকিছুর অধিকারী—এগুলির উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, মানুষের কাছে তাঁর চাহিদা অত্যধিক কিছু নয়, তাদের কাছ থেকে তিনি বেশি কিছু চান না। তাহলে, কীভাবে তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা না করে পারে? ঈশ্বর মানুষকে একশো শতাংশ প্রদান করেন, অথচ মানুষের কাছে তিনি দাবি করেন এক শতাংশেরও ভগ্নাংশ পরিমাণ মাত্র—তা কি খুব বেশি চাওয়া? ঈশ্বর কি অহেতুকই সমস্যার সৃষ্টি করছেন? প্রায়শই, মানুষ নিজেদেরই জানে না; ঈশ্বরের সম্মুখে তারা নিজেদের পরীক্ষা করে দেখে না, এবং সেহেতু অনেক সময়ই তারা ফাঁদে আটকা পড়ে—একে কীভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে সহযোগিতা করা বলে বিবেচনা করা যায়? ঈশ্বর মানুষের উপর গুরুভার বোঝা স্থাপন করেননি এমন কোনো সময়কাল যদি থাকতো, তাহলে তারা কাদামাটির মতো ভেঙে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়তো, এবং নিজে থেকে করার মতো কোনো কাজ খুঁজে পেতো না। মানুষ এমনই—হয় নিষ্ক্রিয় নয়তো নেতিবাচক, সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে সততই অক্ষম, সর্বদাই পরাজয় স্বীকার করার উদ্দেশ্যে কোনো নেতিবাচক কারণের সন্ধান করছে। তুমি কি সত্যিই এমন একজন যে সকল কাজ নিজের জন্য না করে বরং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করে? তুমি কি প্রকৃতই এমন কেউ যে আবেগের উপর ভরসা করে না, যার নিজস্ব কোনো ব্যক্তিগত বাছবিচার নেই, এবং যে ঈশ্বরের কার্যের প্রয়োজন পূরণ করে? “মানুষ নিয়তই কেন আমার সাথে দরাদরি করার চেষ্টা করে? আমি কি কোনো ব্যবসায় কেন্দ্রের সাধারণ ব্যবস্থাপক? এমন কেন হয় যে, মানুষের চাহিদা আমি সর্বান্তঃকরণে পূরণ করা সত্ত্বেও, তবু মানুষের কাছে আমার যাচ্ঞা বিফলেই যায়?” ঈশ্বর কেন বারংবার পর্যায়ক্রমে এজাতীয় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন? কেন তিনি হতাশায় এভাবে চিৎকার করে ওঠেন? মানুষের মধ্যে ঈশ্বর কিছুই লাভ করেননি; তিনি শুধুই তাদের বাছাবাছির পর নির্বাচিত কাজটি দেখতে পান। ঈশ্বর কেন বলেন “তবু মানুষের কাছে আমার যাচ্ঞা বিফলেই যায়”? নিজেদের প্রশ্ন করো: যে কাজ করা তার কর্তব্য, যে কাজের ক্ষেত্রে তার আদৌ বাছাই করার কোনো অধিকার নেই, সেই কাজ, আরম্ভ থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত, কে সম্পন্ন করতে পারে? কে-ই বা তার অন্তরের অনুভূতির দরুন ক্রিয়াশীল হয় না? মানুষ তাদের ব্যক্তিত্বকে অবাধ স্বাধীনতা দেয়, তাদের কর্মে কখনো অবিরাম অধ্যবসায় প্রয়োগ করে না, যেন তিনদিন মৎস্যশিকার করার পর জাল পরিত্যাগ করে পরবর্তী দুইদিন অলসভাবে অতিবাহিত করে। তারা পালাক্রমে বিপরীত মনোভাব প্রদর্শন করে: যখন তারা উষ্ণ তখন ধরাধামের সকলকিছু ভস্মীভূত করতে পারে, এবং যখন তারা শীতল তখন ধরণীবক্ষের সমুদয় জলভাগকে হিমায়িত করে বরফে রূপান্তরিত করতে সক্ষম। এটি মানুষের কর্ম নয়, তবু মানুষের অবস্থার বিষয়ে এটিই সবচেয়ে সুপ্রযুক্ত উপমা। এ-ই কি বাস্তব সত্য নয়? আমার হয়তো মানুষের সম্পর্কে “পূর্বধারণা” রয়েছে, হয়তো তাদের বিরুদ্ধে আমি কুৎসারটনা করছি—কিন্তু যা-ই হোক না কেন, “সত্যকে সঙ্গে রাখলে তুমি সারা পৃথিবী ঘুরতে পার, সত্য বিনা তুমি কোথাও পৌঁছতে পারবে না”। এটি এক মানবীয় প্রবচন হলেও, আমার মনে হয় এখানে এটির প্রয়োগ সুসঙ্গত। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের উদ্দীপনাকে স্তিমিত এবং তাদের কৃতকর্মকে নাকচ করছি না। কিছু প্রশ্নের ব্যাপারে তোমাদের পরামর্শ নেওয়া যাক: ঈশ্বরের কার্যকে কে তার নিজের কর্তব্যপ্রসূত কাজ বলে গণ্য করে? কে বলতে পারে, “যতক্ষণ আমি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম, ততক্ষণ আমি আমার সর্বস্ব প্রদান করবো”? কে বলতে সক্ষম, “অন্যেরা যা-ই করুক, ঈশ্বরের সকল প্রয়োজন আমি সম্পন্ন করবো, এবং ঈশ্বরের কার্যের ব্যাপ্তিকাল দীর্ঘ বা হ্রস্ব যাই হোক না কেন, আমি আমার দায়িত্ব পূরণ করবো; তাঁর কার্যকে এক সমাপ্তিতে নিয়ে আসা ঈশ্বরের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়, এবং এই নিয়ে চিন্তায় আমি নিজেকে ব্যাপৃত করবো না”? কে-ই বা এমনতর জ্ঞানের অধিকারী? তোমরা কী মনে করো তাতে কিছু এসে যায় না—তুমি হয়তো উচ্চতর অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী, সেক্ষেত্রে আমি বিনা আপত্তিতে মেনে নেবো, আমি পরাজয় স্বীকার করবো—তবু আমি তোমাদের বলবোই যে, ঈশ্বর যা চান তা হল এক অনুগত হৃদয়, এমন এক হৃদয় যা আন্তরিক ও আবেগপূর্ণ, নেকড়ের কৃতঘ্ন হৃদয় নয়। এই “দরাদরি”-র বিষয়ে তোমরা কী জানো? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, তোমরা “বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করেছো”। এই মুহূর্তে তোমরা চিরবসন্তের শহর “কুনমিং”-এ রয়েছো, এবং চোখের পলকে তোমরা পৌঁছে গিয়েছো পীড়াদায়ক রকমের শীতল, তুষার-আচ্ছাদিত “দক্ষিণ মেরু”-তে। কখনো নিজের অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়নি এমন কে-ই বা আছে? ঈশ্বর যা চান তা হল “আমৃত্যু বিশ্রাম না নেওয়ার” মতো এক তেজস্বী মনোভাব; তিনি চান এমন এক উদ্দীপিত মানসিকতা যেখানে মানুষ “যতক্ষণ না কোনো অনতিক্রম্য বাধার সম্মুখীন হয়, ততক্ষণ সম্মুখের দিকে এগিয়ে চলে”। স্বভাবতই, ঈশ্বরের অভিপ্রায় এমন নয় যে মানুষ ভ্রান্ত পথে চলুক, বরং তিনি চান যে তারা এহেন এক তেজোদীপ্ত মনোভাব পরিগ্রহ করুক। ঠিক যেমনটি ঈশ্বর বলেন, “আমি যখন আমার সামগ্রীর সাথে তাদের প্রদত্ত ‘উপঢৌকনগুলি’ তুলনা করি, তখন মানুষ তৎক্ষণাৎ আমার মহার্ঘতা মেনে নেয়, এবং একমাত্র তখনই তারা আমার অপরিমেয়তাকে প্রত্যক্ষ করে।” এই বাক্যগুলি কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? উপরের বাক্যগুলি পাঠের মাধ্যমে সম্ভবত তুমি কিছু জ্ঞান লাভ করো, কারণ ঈশ্বর যখন ব্যবচ্ছেদের মানসে মানুষের সমগ্র হৃদয়কে নিষ্কাশন করে আনেন, সেই সময়েই মানুষ এই বাক্যগুলির সম্বন্ধে উপলব্ধ হয়। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যসমূহের নিগূঢ় অন্তর্নিহিত অর্থের কারণে, মানুষ পুরাতন দেহের তাৎপর্যের বিষয়ে সংশয়ান্বিতই থেকে যায়, কারণ তারা কোনো চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন করেনি, এবং তারা প্রত্নতত্ত্ববিদও নয়, এবং সেকারণেই এই নতুন পরিভাষাটি তাদের কাছে বোধগম্যতার অতীত বলে মনে হয়—এবং কেবল তখনই তারা কিছুটা আত্মসমর্পণ করে। কারণ পুরাতন দেহের কাছে মানুষ অসহায়; যদিও তা কোনো হিংস্র জন্তু নয়, অথবা কোনো পারমাণবিক বোমার মতো মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতেও সক্ষম নয়, কিন্তু এই পুরাতন দেহকে নিয়ে কী করণীয় তা তারা জানে না, এবং মনে হয় যেন তারা নির্বল। কিন্তু আমার কাছে, পুরাতন দেহের সাথে মোকাবিলার বহুবিধ পন্থা রয়েছে। মানুষ কখনো কোনো পাল্টা-ব্যবস্থা ভেবে বের করার প্রচেষ্টা না করায় তাদের বিবিধ অস্বাভাবিকতাগুলি আমার দৃষ্টিপথে ক্রমাগত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে; ঠিক ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন: “আমার সমগ্রতা যখন আমি তাদের কাছে প্রদর্শন করি, তখন বিস্ফারিত চক্ষে তারা আমার দিকে চায়, এক লবণস্তম্ভের মতো আমার সম্মুখে নিথর দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের এই অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে, হাস্যনিবারণ করাই আমার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। যেহেতু তারা হস্ত প্রসারণ করে আমার কাছে জিনিসপত্র প্রার্থনা করছে, সেহেতু আমার হস্তধৃত সামগ্রীগুলি আমি তাদের প্রদান করি, এবং তারা তা বক্ষে ধারণ করে, নবজাতক শিশুর মতন সেগুলিকে লালন করে, কিন্তু কেবল ক্ষণিকের তরেই তারা সেই গতিশীলতায় নিরত হয়।” এগুলি কি পুরাতন দেহের ক্রিয়া নয়? একথা সত্য যে মানুষের আজ উপলব্ধি এসেছে, তবু কেন তারা বর্জন করার পরিবর্তে এখনো চালিয়ে যায়? বস্তুত, ঈশ্বরের চাহিদাগুলির একাংশ মানুষের পক্ষে অনর্জনীয় নয়, তবু এর প্রতি মানুষ ভ্রূক্ষেপমাত্র করে না, কারণ “মানুষকে আমি লঘুভাবে শাস্তিদান করি না। এই কারণেই মানুষ সর্বদাই তাদের দৈহিক বাসনাকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। তারা আমার ইচ্ছার পালন করে না, বরং চিরকাল আমার বিচারের আসনের সম্মুখে মিষ্টি কথার দ্বারা আমায় প্রতারিত করেছে।” এ-ই কি মানুষের আত্মিক উচ্চতা নয়? এমন নয় যে ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবে তুচ্ছ বিষয়ে খুঁতখুঁত করছেন, বরং এ হল বাস্তব সত্য—ঈশ্বরকে কি তা ব্যাখ্যা করতেই হবে? ঠিক যেমন ঈশ্বর বলেন, “মানুষের ‘বিশ্বাস’ এত মহান বলেই তারা ‘প্রশংসনীয়’।” এই কারণেই, আমি ঈশ্বরের বন্দোবস্তকে মান্য করি, আর তাই এবিষয়ে বেশি কিছু বলি না; মানুষের “বিশ্বাসের” দরুন, আমি তা সাগ্রহে গ্রহণ করি, তাদের বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে দিয়ে তাদের কর্তব্যকর্ম সম্পন্ন করাই, আমার স্মরণ করানোর প্রয়োজন হয় না। এমন করা কি ভুল? ঈশ্বরের যা প্রয়োজন এ কি ঠিক তা-ই নয়? হয়তো, এই বাক্যগুলি শ্রবণের পর কিছু মানুষ বীতশ্রদ্ধ বোধ করতে পারে—তাই, তাদের কিছুটা অব্যাহতি দিতে, আমি অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা করবো। যখন সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঈশ্বরের সকল মনোনীত লোকজন শাস্তির মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হবে, এবং মানুষের অভ্যন্তরীন অবস্থা যখন সংশোধিত হবে, তখন মানুষ সঙ্গোপনে তাদের অন্তঃকরণে উৎফুল্ল বোধ করবে, যেন-বা তারা মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। সেই মুহূর্তে, মানুষ নিজেরা আর কোনো বাছবিচার করবে না, কারণ ঈশ্বরের অন্তিম কার্য চলাকালীন ঠিক এই ফলাফলই অর্জিত হয়। তাঁর কার্যের ধাপগুলি আজকের দিন অবধি অগ্রসর হওয়ার ফলে, ঈশ্বরের পুত্রগণ ও লোকজনেরা সকলেই শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে, এবং ইসরায়েলবাসীরাও এই পর্যায়কে এড়িয়ে যেতে পারে না, কারণ মানুষ নিজেদের অভ্যন্তরের অশুদ্ধির দ্বারা কলুষিত, এবং সেই কারণেই ঈশ্বর পরিমার্জনের জন্য সকল মানুষকে মহিমান্বিত বিগালক চুল্লির দিকে চালিত করেন, যা হল এক প্রয়োজনীয় পন্থা। একবার তা অতিক্রান্ত হলে, মানুষ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবে, ঠিক যে বিষয়টি ঈশ্বর পূর্বাহ্নেই “সপ্ত আত্মার উচ্চারণমালা”-য় ব্যক্ত করেছেন। মানুষ যাতে বৈরিভাবাপন্ন হয়ে না ওঠে তাই এবিষয়ে আমি আর কোনো বাক্যোচ্চারণ করবো না। যেহেতু ঈশ্বরের কার্য বিস্ময়কর, সেহেতু ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি পরিশেষে অবশ্যই অর্জিত হবে; ঈশ্বর যখন মানুষকে তাদের পূর্বধারণাগুলি আরেকবার উল্লেখ করতে বলেন, তখন মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে, এবং সেহেতু কারোরই উদ্বিগ্ন বা চিন্তাকুল হওয়া উচিত নয়। ঠিক যেমনটি আমি বলেছিলাম, “আমার যাবতীয় কার্যের ভিতর, এমন একখানি ধাপও কি কখনো ছিল যা মানুষের হস্তের দ্বারা নিষ্পন্ন হয়েছে?” এই বাক্যগুলির সারমর্ম কি তুমি উপলব্ধি করো?

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৩২

পরবর্তী: অধ্যায় ৩৫

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন