অধ্যায় ৩২
ঈশ্বরের বাক্যসমূহ মানুষকে হতভম্ব করে ছাড়ে; ঈশ্বর যখন বাক্যোচ্চারণ করেন, তখন মনে হয় তিনি যেন মানুষকে পরিহার করে বাতাসের সাথে বাক্যালাপ করছেন, মনে হয় তাঁর বুঝি মানুষের কৃতকর্মের প্রতি আর কোনো অভিনিবেশ দানের আদৌ কোনো অভিপ্রায়ই আদৌ নেই, এবং মানুষের আত্মিক উচ্চতার বিষয়ে তিনি সর্বাংশে উদ্বেগশূন্য, যেন-বা তাঁর উক্তিগুলি মানুষের পূর্বধারণাসমূহের প্রতি উদ্দিষ্ট নয়, বরং ঈশ্বরের আদি অভিপ্রায় অনুসারে সেগুলি মানুষকে এড়িয়ে চলে। অগণিত কারণ হেতু, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ও দুষ্প্রবেশ্য। এটি আশ্চর্য কিছু নয়। ঈশ্বরের সকল বাক্যের আদি লক্ষ্য এমনটি নয় যে মানুষ সেগুলি থেকে বিশেষ দক্ষতা লাভ করুক কিংবা কৌশল শিক্ষা করুক; পরিবর্তে, সেগুলি হল অন্যতম উপায় যার সহায়তায় ঈশ্বর প্রারম্ভ থেকে অদ্যাবধি কার্য সম্পাদন করেছেন। নিশ্চিতরূপে, ঈশ্বরের বাক্য থেকে মানুষ কিছু জিনিস তো লাভ করেই: রহস্য সম্পর্কিত ব্যাপার, অথবা পিতর, পৌল, ও ইয়োবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি—কিন্তু এগুলি এমন বিষয় যা তাদের অর্জনীয়, এবং যা অর্জন করতে তারা সমর্থও, এই বিষয়গুলি অর্জনের ক্ষেত্রে তাদের আত্মিক উচ্চতা অনুসারে তারা ইতিমধ্যেই অগ্রসর হয়েছে। এমন কেন হয় যে, ঈশ্বর যে ফলাফল অর্জনের কথা বলেন তা অনুচ্চ হওয়া সত্ত্বেও তিনি এত বেশি বাক্যোচ্চারণ করেছেন? যে শাস্তির কথা তিনি বলেন, এটি তা-র সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং স্বাভাবিকভাবেই, এই সকলই অর্জিত হয় মানুষের অজান্তেই। বর্তমানে, মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের আক্রমণের অভিঘাতে তীব্রতর যন্ত্রণা সহ্য করে। উপরিগতভাবে, তাদের কারো সাথেই মোকাবিলা করা হয়েছে বলে মনে হয় না, তাদের কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে মানুষকে স্বাধীনতা দেওয়ার সূচনা হয়েছে, এবং সেবা-প্রদানকারীদের ঈশ্বরের লোকের অভিধায় উন্নীত করা হয়েছে—এতে, মানুষের কাছে প্রতিভাত হয় যেন তারা উপভোগের মধ্যে প্রবেশ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, বাস্তবটি হল, পরিমার্জনের থেকে তারা সকলেই কঠোরতর শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করেছে। ঠিক যেমন ঈশ্বর বলেন, “আমার কার্যের ধাপগুলির একটি পরেরটির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্বন্ধযুক্ত, প্রত্যেকটিই ক্রমাগত উচ্চতর।” ঈশ্বর সেবা-প্রদানকারীদের অতল গহ্বর থেকে উত্তোলিত করে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে নিক্ষেপ করেছেন, যেখানে শাস্তি আরো নিদারুণ। তাই, তারা কঠোরতর দুঃখকষ্ট ভোগ করে, যা থেকে নিস্তারলাভে তারা প্রায় পূর্ণতই অক্ষম। এমনতরো শাস্তি কি আরো মর্মান্তিক নয়? উচ্চতর এক ক্ষেত্রে প্রবিষ্ট হয়েও কেন মানুষ আনন্দের পরিবর্তে বরং দুঃখবোধ করে? এমন কেন বলা হয় যে, শয়তানের হাত থেকে গ্রহণ করে তাদের অতিকায় লাল ড্রাগনের হাতে অর্পণ করা হয়? তোমাদের কি স্মরণে আছে ঈশ্বর যখন বলেছিলেন, “কার্যের অন্তিম অংশটি অতিকায় লাল ড্রাগনের গৃহে সম্পূর্ণ করা হয়”? তোমরা কি স্মরণে আনতে পারো যখন ঈশ্বর বলেছিলেন, “অন্তিম ক্লেশভোগটি হল অতিকায় লাল ড্রাগনের সম্মুখে জোরদার ও আলোড়ন-সৃষ্টিকারী সাক্ষ্য বহন করা”? মানুষকে যদি অতিকায় লাল ড্রাগনের হাতে অর্পণ করা না হতো, তাহলে কীভাবে তারা ড্রাগনের সম্মুখে সাক্ষ্য বহন করতো? নিজেকে হত্যা করার পর এমনতরো কথা কে বলেছে যে “আমি শয়তানকে পরাভূত করেছি”? আপন দেহকে শত্রু গণ্য করা, এবং তারপর নিজেকে হত্যা করা—এই কাজের ব্যবহারিক তাৎপর্য কোথায়? ঈশ্বর এমন উক্তি কেন করেছিলেন? “মানুষের ক্ষতচিহ্নের দিকে না তাকিয়ে আমি বরং তাদের অক্ষত অঙ্গের দিকেই নজর দিই, এবং তা থেকে আমি সন্তোষ লাভ করি।” এমন যদি সত্য হতো যে, ঈশ্বর চান ক্ষতহীন ব্যক্তিরাই হোক তাঁর অভিব্যক্তি, তাহলে কেন তিনি মানুষের পরিপ্রেক্ষিত থেকেই মানুষের পূর্বধারণাসমূহকে প্রত্যাঘাত উদ্দেশ্যে এত পরিমাণ বাক্য তিনি ধৈর্য ও আন্তরিকতা সহকারে উচ্চারণ করেছেন? কেন তিনি সেই বিষয়ে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করবেন? এহেন কিছু করার অপ্রয়োজনীয় ক্লেশের মধ্যে তিনি যাবেন কেন? এভাবে এটি প্রদর্শন করা হয় যে ঈশ্বরের অবতাররূপের এক বাস্তব তাৎপর্য রয়েছে, এবং দেহে পরিণত হয়ে তাঁর কার্য সম্পূর্ণ করার পর দেহকে তিনি “খারিজ” করে দেবেন না। এমন কেন বলা হয় যে, “সোনা বিশুদ্ধ হতে পারে না এবং মানুষ নিখুঁত হতে পারে না”? এই বাক্যকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? ঈশ্বর মানুষের উপাদানগত বিষয়ে আলোচনা করাকালীন তাঁর বাক্যগুলি কোন অর্থ ধারণ করে? মানুষের স্থূল দৃষ্টিতে মনে হয় দেহ বুঝি কোনোকিছুই করতে সমর্থ নয়, নয়তো মনে হয় দেহের বহুকিছু ঘাটতি রয়েছে। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, তা আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়—তবু মানুষের কাছে, এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। মনে হয় তারা যেন-বা এর মীমাংসা করতে সম্পূর্ণ অক্ষম, বুঝি-বা এই বিষয়ে কোনো স্বর্গীয় সংস্থার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ অপরিহার্য—এ কি এক মানবীয় পূর্বধারণা নয়? “মানুষের দৃষ্টিতে, আমি আকাশ থেকে অবতরণ করা নেহাতই এক ‘ক্ষুদ্র তারকা’; গগনমণ্ডলের এক ক্ষুদ্র তারকা, এবং ধরাধামে আজ আমার এই আবির্ভাব ঈশ্বরের অর্পিত এক দায়িত্ব ছিল। ফলস্বরূপ, মানুষ ‘আমি’ ও ‘ঈশ্বর’ শব্দদ্বয়ের আরো অনেক ব্যাখ্যা উদ্ভাবন করেছে।” যেহেতু মানুষের কোনো তাৎপর্যই নেই, তাহলে ঈশ্বর বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে কেন তাদের পূর্বধারণাগুলি উদ্ঘাটিত করেন? এ-ও কি ঈশ্বরের প্রজ্ঞা হতে পারে? এরকম বাক্যগুলি কি হাস্যকর নয়? ঈশ্বর যেমন বলেন, “মানুষের অন্তরে আমার প্রতিষ্ঠিত একটি স্থান রয়েছে বটে, কিন্তু তারা আবশ্যকবোধ করে না যে সেখানে আমি বসবাস করি। পরিবর্তে, তাদের হৃদয়ের ‘পবিত্র অদ্বিতীয়’-র আকস্মিক আবির্ভাবের অপেক্ষায় থেকে যায়। আমার পরিচয় নেহাতই ‘নগণ্য’ হওয়ায় মানুষের চাহিদার সঙ্গে আমি মানানসই নই এবং সেই কারণেই তারা আমায় পরিহার করে।” যেহেতু ঈশ্বরের সম্বন্ধে মানুষের মূল্যায়ন “অত্যুচ্চ”, তাই অনেককিছুই ঈশ্বরের “অসাধ্য”, যা তাঁকে “সমস্যায়” ফেলে। মানুষ জানে না যে ঈশ্বরকে তারা যা যা করতে সমর্থ হতে বলে তা তাদের পূর্বধারণা। এ-ই কি “একজন চতুর মানুষ তার নিজের চাতুরীরই শিকার হতে পারে” প্রবচনটির যথার্থ অর্থ নয়? তা সত্যিই “সচরাচর চালাক, কিন্তু এবার নির্বোধ”-এর এক দৃষ্টান্ত! ধর্মপ্রচারে তোমরা মানুষকে বলো তাদের পূর্বধারণাপ্রসূত ঈশ্বরকে পরিহার করতে, কিন্তু তোমাদের নিজেদের পূর্বধারণাসঞ্জাত ঈশ্বর কি বিদায় নিয়েছেন? ঈশ্বরের এই যে উক্তি “মানুষের কাছে আমার পেশ করা চাহিদাগুলি কোনোমতেই বৃহৎ নয়”—একে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? মানুষকে নেতিবাচক ও অসচ্চরিত্র করে ফেলা উক্তিটির উদ্দেশ্য নয়, বরং এর উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়ে তাদের এক বিশুদ্ধ উপলব্ধি দান করা—তোমরা কি তা উপলব্ধি করো? ঈশ্বরের অবতার কি বস্তুতই মানুষের কল্পনামাফিক “সুউচ্চ ও শক্তিমান আমি”?
যদিও এমন মানুষ আছে যারা ঈশ্বরোক্ত সকল বাক্য পাঠ করেছে এবং সেগুলির এক সাধারণ রূপরেখা প্রদান করতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের চূড়ান্ত লক্ষ্যটি কী, সে বিষয়ে কথা বলতে কে সক্ষম? এ-ই হল মানবজাতির ঘাটতি। যে পরিপ্রেক্ষিত থেকেই ঈশ্বর বাক্য উচ্চারণ করুন না কেন, তাঁর সার্বিক লক্ষ্য মানুষকে দেহরূপী ঈশ্বরের বিষয়ে অবগত করা। তাঁর মধ্যে যদি মানবতার কিছুই না থাকতো—তাঁর মধ্যে যদি শুধুমাত্র স্বর্গস্থ ঈশ্বরের গুণাবলীই বর্তমান থাকতো—তাহলে ঈশ্বরের এত বেশি বাক্য উচ্চারণের কোনো প্রয়োজন হতো না। বলা যেতে পারে, মানুষের যা ঘাটতি তা-ই ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রত্যক্ষ উপাদানের ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে যা উদ্ভাসিত হয় তা-ই হল মানুষের পূর্বধারণা বিষয়ক ঈশ্বরের বক্তব্যের পশ্চাদ্ভূমি, এবং এইভাবে, মানুষ ঈশ্বরের উচ্চারণসমূহের সেবা করে। স্বভাবতই, তা মানুষের পূর্বধারণা বিষয়ে ঈশ্বরের বক্তব্যের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত—একমাত্র এভাবেই একে তত্ত্ব ও বাস্তবিকতার সমাহার বলা যায়; একমাত্র তখনই মানুষকে আরো কার্যকরীভাবে নিজেদের জানার ব্যাপারে ঐকান্তিক করে তোলা যায়। দেহরূপী ঈশ্বর যদি মানুষের ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতেন, এবং ঈশ্বরও যদি তাঁর সাক্ষ্য দিতেন, তাহলে কোন উদ্দেশ্যই বা সাধিত হতো? সম্যকভাবে ঠিক এই কারণেই ঈশ্বর নেতিবাচক দিক থেকে কার্য সম্পাদন করেন, তাঁর মহান ক্ষমতাকে সকলের দৃষ্টিগোচর করে তুলতে মানুষের পূর্বধারণাকে ব্যবহার করেন। এটি কি ঈশ্বরের প্রজ্ঞা নয়? প্রত্যেকের জন্য ঈশ্বর যাকিছু করেন তা-র সকলই মঙ্গলকর—এবার কেন তাহলে তাঁর মহিমাকীর্তন করো না? পরিস্থিতি যদি এক নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছাতো, কিংবা সেই দিন যদি আসতো, তাহলে পিতরের মতো তুমিও কি বিচারের মাঝে তোমার অন্তঃকরণের গভীর থেকে প্রার্থনাবাক্য উচ্চারণ করতে সক্ষম হতে? শয়তানের হস্তগত থাকাকালীনও, পিতরের মতোই তুমিও ঈশ্বরের বন্দনা করতে সক্ষম হলে তবেই একমাত্র “শয়তানের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়া, দৈহিক বাসনাকে জয় করা, এবং শয়তানকে জয় করা” প্রকৃতপক্ষেই অর্থপূর্ণ হয়ে উঠবে। তা কি ঈশ্বরের বাস্তবতর এক সাক্ষ্য নয়? একমাত্র এ-ই হল “কর্মসাধনে দেবত্বের সক্রিয় যোগদান ও মানুষের অভ্যন্তরে সাতগুণ তীব্রতর আত্মার কার্যের” দ্বারা অর্জিত প্রভাব, এবং সেকারণেই, এটি “আত্মার দেহ থেকে নির্গমনের” দ্বারা অর্জিত ফলাফলও বটে। এজাতীয় ক্রিয়াকর্মগুলি কি বাস্তব নয়? বাস্তবিকতার প্রতি মনোযোগ প্রদানে তোমরা অভ্যস্ত ছিলে, কিন্তু আজ কি তোমরা বাস্তবিকতার প্রকৃত জ্ঞান লাভ করেছো? “মানুষের কাছে আমার পেশ করা চাহিদাগুলি কোনোমতেই বৃহৎ নয়, কিন্তু মানুষ উল্টোটাই বিশ্বাস করে। তাদের ‘দীনতা’ এভাবে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রকাশ পায়। তাদের প্রবণতা হল সর্বদা আমার সামনে-সামনে চলার, আমায় পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার, তারা নিদারুণ শঙ্কিত যে আমি বুঝি হারিয়ে যাবো, আতঙ্কিত যে আমি বুঝি পথভ্রষ্ট হয়ে পর্বতের অভ্যন্তরে আদিম অরণ্যের মধ্যে প্রবেশ করবো। ফলস্বরূপ, মানুষ সদাই আমায় পথপ্রদর্শন করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, গভীর আশঙ্কিত যে আমি হয়তো হাঁটতে হাঁটতে ভূগর্ভস্থ অন্ধকূপে প্রবেশ করবো।” এই সরল বাক্যগুলির বিষয়ে তোমাদের জ্ঞানের পরিধি কতখানি—এগুলির মধ্যে ঈশ্বরের বাক্যের শিকড়টি কি তোমরা প্রকৃতই অনুধাবনে সক্ষম? তোমাদের কোন পূর্বধারণাগুলির সম্বন্ধে ঈশ্বর এবম্প্রকার বাক্যগুলি উচ্চারণ করেছেন তার প্রতি কি তোমরা মনোনিবেশ করেছো? তোমরা কি প্রত্যহ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপর মনোযোগ স্থাপন করো? এর কিছু পরেই, পরবর্তী অংশের এক বাক্যে ঈশ্বর বলেন, “তবু মানুষ আমার ইচ্ছার বিষয়ে অনবহিত এবং আমার কাছে ক্রমাগত নানান জিনিসের প্রার্থনা করে চলে, যেন-বা যা আমি তাদের প্রদান করেছি তা তাদের প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম, যেন-বা চাহিদা ছাপিয়ে গিয়েছে যোগানকে।” এই বাক্যে, তোমাদের মধ্যে পূর্বধারণাগুলি কী তা বুঝতে পারা যায়। বিগত দিনে তোমরা কী করেছিলে ঈশ্বর তা স্মরণে রাখেন না বা তা নিয়ে তদন্ত করেন না, তাই অতীতের বিষয়ে আর চিন্তা কোরো না। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হল ভবিষ্যতের পথে তোমরা “অন্তিম যুগের পিতরের আত্মাটি” সৃজন করতে সক্ষম কিনা—তোমাদের কি তা অর্জন করার মতো বিশ্বাস রয়েছে? মানুষকে ঈশ্বর শুধুমাত্র পিতরের সমকক্ষ হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করতে বলেন, বলেন যে মানুষ পরিশেষে যেন অতিকায় লাল ড্রাগনকে অপদস্থ করার মতো একটি পথ নির্মাণ করতে পারে। এই কারণেই ঈশ্বর বলেন, “আমার একমাত্র প্রত্যাশা যে মানুষ যেন আমার সঙ্গে সহযোগিতা করার মতো দৃঢ়সঙ্কল্পের অধিকারী হয়। তাদের আমি আমার জন্য উত্তম খাদ্য রন্ধন করতে, বা উপযুক্ত কোনো মাথা রাখার স্থানের আয়োজন করতে বলি না…।” এই বিশ্বে, মানুষকে বলা হয় “লি ফেং-এর আত্মা-কে” ১৯৯০-য়ের দশকে নিয়ে আসতে, কিন্তু ঈশ্বরের গৃহে, ঈশ্বর তোমাদের “পিতরের অনন্য শৈলী” সৃজন করতে বলেন। তোমরা কি ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করেছো? তোমরা কি সত্যিই এর জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করতে সক্ষম?
“আমি ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বে উঠে আসি, এবং হাঁটতে হাঁটতে আমি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের মানুষদের পর্যবেক্ষণ করি। ধরণীবক্ষের লোকারণ্যের মাঝে, কখনো এমন কেউ ছিল না যে আমার কার্যের উপযুক্ত বা যে প্রকৃতই আমায় ভালোবাসে। তাই, এই মুহূর্তে হতাশ হয়ে আমি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করি, এবং মানুষ তৎক্ষণাৎ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, আর কখনো তারা একত্রিত হয় না, গভীর আশঙ্কায় ভোগে যে আমি ‘একবার জাল নিক্ষেপ করেই তাদের সকলকে ধরে ফেলবো।’” সম্ভবত, এই বাক্যগুলি উপলব্ধি করা অধিকাংশ মানুষের কাছে অত্যন্ত দুরূহ বলে বোধ হয়। তারা জিজ্ঞাসা করে, মানুষের কাছে ঈশ্বরের চাহিদা অধিক না হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি তাঁর কার্যের জন্য উপযুক্ত কেউ নেই বলে হতাশায় দীর্ঘশ্বাস মোচন করেন কেন? এখানে কি কোনো স্ববিরোধ রয়েছে? আক্ষরিক অর্থে বললে, রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো স্ববিরোধ নেই। সম্ভবত তোমাদের স্মরণে থাকতে পারে ঈশ্বর যখন বলেছিলেন, “আমার সকল বাক্য আমার বাসনা অনুযায়ী প্রভাব লাভ করবে।” ঈশ্বর যখন দেহরূপে কার্যসাধন করেন, তখন তিনি ঠিক কী করতে চলেছেন তা দেখার জন্য তাঁর প্রতিটি কার্যকলাপ মানুষ স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে। আধ্যাত্মিক জগতে শয়তানকে লক্ষ্য করে ঈশ্বর যখন তাঁর নতুন কার্য সম্পন্ন করেন, তখন, প্রকারান্তরে বললে, দেহরূপী ঈশ্বরের কারণে মর্ত্যলোকে মানুষের মধ্যে যাবতীয় রকমের পূর্বধারণা উদ্ভূত হয়। ঈশ্বর যখন হতাশায় দীর্ঘশ্বাস মোচন করেন—অর্থাৎ, তিনি যখন সকল মানুষের পূর্বধারণাসমূহের বিষয়ে বাক্যোচ্চারণ করেন, তখন মানুষ সেগুলির মোকাবিলায় যথাসাধ্য করে, এবং এমনকি এমন মানুষও রয়েছে যারা বিশ্বাস করে যে তারা সকল আশা বিরহিত, কারণ ঈশ্বর বলেছেন যে তাঁর সম্পর্কে পূর্বধারণার বশবর্তী সকল মানুষই তাঁর শত্রু—তাহলে কীভাবে-ই বা মানুষ এর কারণে “ছত্রভঙ্গ” না হয়ে পারে? বিশেষত আজ, যখন শাস্তির আগমন ঘটেছে, মানুষ এখন আরো সন্ত্রস্ত যে, ঈশ্বর তাদের নিশ্চিহ্ন করবেন। তাদের বিশ্বাস, শাস্তি সম্পন্ন হলে, ঈশ্বর “একবার জাল নিক্ষেপ করেই তাদের সকলকে ধরে” ফেলবেন। তবু বাস্তব সত্য তা নয়: ঈশ্বর যেমন বলেন, “আমার শাস্তির মাঝে মানুষকে আমি এমনভাবে ‘নিরুদ্ধ করতে’ চাই না যে তারা কখনোই নিষ্কৃতি পেতে পারবে না। আমার ব্যবস্থাপনায় মানুষের ক্রিয়াকর্মের অভাব রয়েছে বলে সাফল্যমণ্ডিতভাবে আমার কার্য সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়, যা আমার কার্যের ফলপ্রদ অগ্রগতিকে প্রতিহত করে।” ঈশ্বরের এমন ইচ্ছা নয় যে, সকল মানুষের মৃত্যুর পর তাঁর কার্যের পরিসমাপ্তি ঘটবে—তাতে কোন উদ্দেশ্য-ই বা সিদ্ধ হবে? মানুষের মধ্যে কার্য সম্পাদন করে এবং তাদের শাস্তি দিয়ে, তারপর ঈশ্বর তাদের মাধ্যমেই তাঁর কার্যকলাপকে প্রাঞ্জল করে তোলেন। ঈশ্বরের বাক্যের বাচনভঙ্গিমায় যে ইতিমধ্যেই শাস্তি রয়েছে, তা মানুষ কখনো উপলব্ধি করেনি বলেই তারা কখনো নিজেদের সচেতনতার ভিতর প্রবেশাধিকার পায়নি। মানুষ নিজেদের সঙ্কল্পকে প্রকাশ করতে অক্ষম হওয়ায়, ঈশ্বর শয়তানের সম্মুখে কিছু বলতে পারেন না, এবং তা ঈশ্বরের কার্যের অগ্রগতিকে প্রতিহত করে। তাই ঈশ্বর বলেন, “মানুষকে একদা আমি এক অতিথি হিসাবে আমার গৃহে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, তবু আমার আহ্বানের কারণে সে ইতস্তত ধাবিত হয়েছিল—যেন-বা, অতিথি হিসাবে নিমন্ত্রণ করার পরিবর্তে, তাকে আমি কোনো ফাঁসির ময়দানে নিয়ে এসেছিলাম। আমার গৃহ তাই শূন্য পড়ে ছিল, কারণ মানুষ সর্বদাই আমায় পরিহার করে চলতো, এবং সততই আমার বিষয়ে তারা সতর্ক থাকতো। এর দরুন আমার কার্যের অংশবিশেষ সম্পন্ন করার কোনো উপায় আমার হাতে ছিল না।” কাজকর্মে মানুষের ভ্রান্তির কারণেই ঈশ্বর মানুষের প্রতি তাঁর চাহিদা স্পষ্টভাবে পেশ করেন। এবং মানুষ কার্যের এই ধাপটি নিষ্পাদনে ব্যর্থ হওয়ার দরুনই ঈশ্বর আরো উচ্চারণসমূহ সংযুক্ত করেন—সম্যকভাবে এটিই হল ঈশ্বর-কথিত সেই “মানুষের উপর কার্যের অপর এক অংশ”। কিন্তু ঈশ্বরোক্ত “একবার জাল নিক্ষেপ করেই তাদের সকলকে ধরার” বিষয়ে আমি বিস্তারিতভাবে কোনো আলোচনা করবো না, কারণ এর সাথে আজকের কার্যের কিছুটা সম্পর্ক আছে। স্বভাবতই, “সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি ঈশ্বরের বাক্যসমূহ”-তে তাঁর অনেক বাক্যের উপজীব্য হল মানুষ—কিন্তু মানুষকে অবশ্যই ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে হবে; উচ্চারণ নির্বিশেষে, তাঁর অভিপ্রায় সর্বদাই শুভ। বলা যেতে পারে, ঈশ্বরের কথনের পদ্ধতি নানাবিধ বলেই ঈশ্বরের বাক্য বিষয়ে মানুষ একশো শতাংশ নিশ্চিত নয়, এবং তারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বরের অধিকাংশ বাক্য তাঁর কার্যের প্রয়োজনে উক্ত হয়, এবং তাতে বাস্তব বস্তু যৎসামান্যই থাকে। এর ফলে তারা বিভ্রান্ত ও চিন্তা-ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে—তাদের পূর্বধারণা মতে ঈশ্বর যেহেতু অতীব প্রাজ্ঞ, এবং সম্পূর্ণরূপে তাদের নাগালের অতীত, সেহেতু মনে হয় বুঝি তারা কিছুই জানে না, ঈশ্বরের বাক্য কীভাবে ভোজন করতে হয় সে বিষয়ে তাদের কোনোই ধারণা নেই। মানুষ ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে বিমূর্ত ও দুরূহ করে ফেলে—ঈশ্বর যেমন বলেন, “মানুষ সর্বদা আমার উচ্চারণসমূহের সাথে স্বাদগন্ধ যুক্ত করতে চায়”। তাদের চিন্তাভাবনা যেহেতু অত্যন্ত জটিল, এবং ঈশ্বরের পক্ষে তা “কোনোক্রমে আয়ত্তসাধ্য মাত্র”, সেহেতু ঈশ্বরের বাক্যসমূহের অংশবিশেষ মানুষের দ্বারা সীমাবদ্ধ, ফলত, সহজবোধ্য এক রীতিতে বাক্যোচ্চারণ ব্যতীত তাঁর কোনো বিকল্প থাকে না। যেহেতু মানুষের দাবি “অত্যুচ্চ”, এবং তাদের কল্পনা নিরতিশয় সমৃদ্ধ—যেন-বা তারা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে গিয়ে শয়তানের ক্রিয়াকলাপ চাক্ষুষ করে আসতে সক্ষম—সেহেতু তা ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে অবনমিত করেছে, কারণ ঈশ্বর যত অধিক বাক্যোচ্চারণ করেন, মানুষের মুখমণ্ডল তত বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেগুলির উদ্দেশ্যের বিষয়ে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হওয়ার পরিবর্তে, কেন তারা সেগুলিকে কেবল মান্য করে না? এতে উপকারিতা কোথায়?