অধ্যায় ৩১

ঈশ্বরের স্বভাব ঈশ্বরের সকল উচ্চারণময় প্রবাহিত, কিন্তু তাঁর বাক্যের মূলসূত্রটি হল সমগ্র মানবজাতির বিদ্রোহী মনোভাবকে প্রকাশিত করা এবং তাদের আনুগত্যহীনতা, অবাধ্যতা, অসমীচীন আচরণ, অন্যায়পরায়ণতা, এবং যথার্থ ঈশ্বরপ্রেমের অধিকারী হওয়ার অক্ষমতার মতো বিষয়গুলিকে অনাবৃত করা, এতটাই যে, ঈশ্বরের বাক্যগুলি এমন এক পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে, যেখানে তিনি বলেন যে, মানুষ তার শরীরের প্রতিটি রোমকূপে ধারণ করেছে ঈশ্বর-বিরোধিতা, তিনি বলেন যে, এমনকি তাদের কৈশিক নালীগুলির মধ্যেও রয়েছে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। মানুষ যদি এই বিষয়গুলিকে সতর্কতার সঙ্গে নিরীক্ষণ করার চেষ্টা না করে, তাহলে নিজেদের জানতে তারা সবসময়ই অসমর্থ হবে, এবং এগুলিকে বর্জন করতে কখনোই সক্ষম হবে না। অর্থাৎ, ঈশ্বর-বিরোধিতার যে ভাইরাস, তা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে এবং পরিশেষে, মনে হবে যেন তাদের শ্বেত রক্ত-কণিকাগুলি লোহিত রক্ত-কণিকাগুলিকে গ্রাস করেছে, ফলে তাদের সমগ্র দেহ লোহিত রক্ত-কণিকা শূন্য হয়ে গিয়েছে; অন্তিমে, তারা লিউকেমিয়ায় মারা পড়বে। এটাই হল মানুষের প্রকৃত অবস্থা, এবং কেউই তা অস্বীকার করতে পারে না। অতিকায় লাল ড্রাগন যেখানে কুণ্ডলিত হয়ে শায়িত আছে সেই দেশে জন্ম নেওয়ার ফলে, প্রত্যেক মানুষের ভিতর অন্তত একটা এমন কোনো বস্তু রয়েছেই যা অতিকায় লাল ড্রাগনের বিষের প্রতিনিধিত্ব করে ও তার দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়। তাই, কার্যের এই পর্যায়ে, ঈশ্বরের বাক্য জুড়ে মূলসূত্রটি হল নিজেকে জানা, নিজের কামনা-বাসনাকে পরিহার করা, নিজেকে পরিত্যাগ করা, এবং নিজেকে হত্যা করা। বলা যায় যে, অন্তিম সময়ে এটাই হল ঈশ্বরের প্রাথমিক কার্য, এবং কার্যের এই দফাটি সকল দফার মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ও আনুপুঙ্খিক—এটি প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বর যুগটির পরিসমাপ্তি ঘটানোর পরিকল্পনা করছেন। কেউই তা আশা করেনি, কিন্তু একই সঙ্গে, এ হল এমন এক বিষয় যা তারা তাদের অনুভূতির মধ্যে পূর্বানুমান করেছে। ঈশ্বর ততটা স্পষ্টভাবে না বললেও, মানুষের বোধশক্তি অতীব প্রখর—সময় যে সংক্ষিপ্ত, তা তারা সর্বদাই অনুভব করে। বলা যায় যে, কোনো মানুষ যত বেশি করে তা অনুভব করে, যুগটির বিষয়ে তার ততই পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। এটা জগতকে স্বাভাবিক বলে মনে করে ঈশ্বরের বাক্যকে নাকচ করা নয়; বরং, এ হল ঈশ্বরের কার্যসাধন প্রণালীর মাধ্যমে ঈশ্বরের কার্যের বিষয়বস্তুকে জানা। ঈশ্বরের বাক্যের স্বরভঙ্গির দ্বারা এটি নির্ধারিত হয়। ঈশ্বরের উচ্চারণের স্বরক্ষেপের মধ্যে এক গোপন রহস্য রয়েছে, যা কেউ আবিষ্কার করেনি, এবং সম্যকভাবে এটি সেই বিষয়টিও বটে, যেখানে প্রবেশ মানুষের পক্ষে দুরূহতম। মানুষ কেন ঈশ্বরের বাক্যকে উপলব্ধি করতে পারে না তার মূল কথাটি হল, যে স্বরভঙ্গিতে ঈশ্বর কথন করেন, সেই বিষয়ে তারা অনবহিত রয়ে যায়—এই নিগূঢ় প্রক্রিয়াটি যদি তারা রপ্ত করতে পারে, তাহলে তারা ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়ে কিছু জ্ঞান অর্জন করতে সমর্থ হবে। ঈশ্বরের বাক্য সবসময় একটি নীতিকে অনুসরণ করেছে: মানুষকে অবগত করা যে ঈশ্বরের বাক্যই হল সমস্তকিছু, এবং ঈশ্বরের বাক্যের সাহায্যে মানুষের সকল জটিলতার নিরশন ঘটানো। আত্মার পরিপ্রেক্ষিত থেকে, ঈশ্বর তাঁর কাজকর্মকে সহজবোধ্য রাখেন; মানুষের পরিপ্রেক্ষিত থেকে, তিনি মানুষের পূর্বধারণাগুলি অনাবৃত করেন; আত্মার দৃষ্টিকোণ থেকে, তিনি বলেন যে মানুষ তাঁর ইচ্ছার বিষয়ে সচেতন নয়; মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, তিনি বলেন যে মানবীয় অভিজ্ঞতার মিষ্ট, অম্ল, তিক্ত, ও ঝাল সকল প্রকার আস্বাদনই তিনি গ্রহণ করেছেন, এবং তিনি বাতাসের মাঝে এসে উপস্থিত হন এবং বৃষ্টির সাথে প্রস্থান করেন, বলেন যে, পারিবারিক নিপীড়নের অভিজ্ঞতা তিনি লাভ করেছেন, এবং জীবনের উত্থান-পতনকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এগুলি হল ভিন্ন-ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে উক্ত বাক্য। যখন তিনি ঈশ্বরের লোকেদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, তখন বিষয়টা এমন হয়, যেন কোনো গৃহের তত্ত্বাবধায়ক ক্রীতদাসদের ভর্ৎসনা করছে, বা কোনো ব্যঙ্গচিত্রের মতো; তাঁর বাক্যসমূহ মানুষের মুখমণ্ডলকে রক্তবর্ণ করে তোলে, লজ্জায় সে কোথাও তারা মুখ লুকানোর জায়গা পায় না, যেন কঠোর নিপীড়নের মুখে কোনো স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বিগত আমলের কোনো সামন্ততান্ত্রিক কর্তৃপক্ষের দ্বারা তাদের আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি যখন ঈশ্বরের লোকেদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রতিবাদমুখরছাত্রেরা কেন্দ্রীয় সরকারের আভ্যন্তররীণ অপকর্মগুলিকে অনাবৃত করে তাদের মতোই লাগামছাড়া। ঈশ্বরের সকল বাক্যই যদি বিদ্রূপাত্মক হতো, তাহলে মানুষের পক্ষে সেগুলি গ্রহণ করা আরো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো; তাই, ঈশ্বরকথিত বাক্যগুলি সোজাসাপটা; এগুলি মানুষের জন্য কোনো সংকেতলিপি ধারণ করে না, বরং সরাসরি মানুষের বাস্তব অবস্থার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে—এতে প্রমাণিত হয় যে, ঈশ্বরের মানব-প্রেম নিছক বাক্যমাত্র নয়, বরং তা বাস্তব। মানুষ বাস্তবতাকে মূল্য দিলেও, তাদের ঈশ্বর-প্রেমে বাস্তব কিছুই নেই। মানুষের মধ্যে এই ঘাটতিই রয়েছে। মানুষের ঈশ্বর-প্রেম যদি বাস্তব না হয়, তাহলে সকলকিছুর সমস্তটাই শূন্যগর্ভ ও অলীক হয়ে পড়বে, যেন সেই কারণেই সবকিছু অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাদের ঈশ্বর-প্রেম যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ছাপিয়ে যায়, তখন তাদের মর্যাদা ও পরিচিতিও বাস্তব হবে, শূন্যগর্ভ রইবে না, এবং এমনকি এই বাক্যগুলিও শূন্যগর্ভ না হয়ে বাস্তব হবে—তোমরা কি তা অনুধাবন করো? তোমরা কি মানুষের কাছে ঈশ্বরের চাহিদাগুলি উপলব্ধি করেছো? শুধুমাত্র পদমর্যাদার সুবিধাগুলি উপভোগ করা মানুষের উচিত নয়, তাদের উচিত পদমর্যাদার বাস্তবিকতাকে যাপন করা। ঈশ্বরের লোকেদের ও সকল মানুষের কাছ থেকে ঈশ্বর এটাই দাবি করেন, এবং এ কোনো জমকালো শূন্যগর্ভ তত্ত্বকথা নয়।

ঈশ্বর এই ধরনের বাক্য কেন উচ্চারণ করেন, “যেন আমার যাবতীয় কার্য তাদের প্রসন্ন করার এক প্রচেষ্টা মাত্র, যার ফলে আমার কার্যকলাপের প্রতি সর্বদাই তারা বীতশ্রদ্ধ”? তুমি কি ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ঘৃণার বাস্তব বহিঃপ্রকাশগুলির বিষয়ে কথা বলতে সক্ষম? মানুষের পূর্বধারণায়, মানুষ ও ঈশ্বর “হার্দিক প্রণয়পাশে আবদ্ধ”, এবং আজ, ঈশ্বরের বাক্যের নিমিত্ত মানুষের আকাঙ্ক্ষা এমন এক স্তরে উপনীত হয়েছে যে, তারা সাগ্রহে ঈশ্বরকে এক গ্রাসে গলাধঃকরণ করতে চায়—তবু ঈশ্বর এবম্প্রকার বাক্য উচ্চারণ করেন: “মানুষ আমায় ঘৃণা করে। আমার ভালোবাসা কেন মানুষের ঘৃণার দ্বারা প্রত্যর্পিত হয়েছে?” এ কি মানুষের হৃদয়ে প্রোথিত এক খনিজ ভাণ্ডার নয়? এ কি সেই বস্তু নয় যা খনন করে উত্তোলন করা উচিত? মানুষের অনুসরণের ক্ষেত্রে এ-ই হল ত্রুটি; এ হল এক মুখ্য বিষয় যার সমাধান করা কর্তব্য, এবং এ-ই হল সেই সিংহ যা মানুষের ঈশ্বর-জ্ঞানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং মানুষের নিমিত্ত যাকে অবশ্যই বিদূরিত করতে হবে—এ-ই কি করণীয় কাজ নয়? কোনো শূকরের মতোই, মানুষেরও যেহেতু কোনো স্মৃতি নেই, এবং যেহেতু সর্বদাই সে আমোদ-আহ্লাদের কামনা করে, সেহেতু ঈশ্বর মানুষকে স্মৃতিভ্রংশের ঔষধ প্রদান করেন—তিনি আরো বাক্য উচ্চারণ করেন, আরো বক্তব্য রাখেন, এবং মানুষের কান ধরে তিনি তাদের এই বাক্যগুলি মনোযোগ সহকারে শ্রবণে বাধ্য করেন, এবং তিনি তাদের শ্রুতিসহায়ক যন্ত্রে সজ্জিত করেন। তাঁর কিছু বাক্যের ক্ষেত্রে, কেবল একবার বললেই সমস্যার সমাধান হয় না; সেই বাক্যগুলিকে অবশ্যই বারংবার বলতে হবে, কারণ “মানুষ তাদের জীবনে সর্বদাই বিস্মৃতিতে ভোগে, এবং সমগ্র মানবজাতির জীবনের দিনগুলি বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ।” এইভাবে, মানুষকে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা যায় যেখানে “তাদের হাতে সময় থাকলে তারা পাঠ করে, অবসর থাকলে শ্রবণ করে, এবং যখন অবকাশ নেই তখন এগুলির দিকে ফিরেও তাকায় না; বাক্যগুলি যদি আজই উক্ত হয়, তবে তারা মনোযোগ দেয়, কিন্তু আগামীকাল সেগুলি পুনরায় কথিত না হলে, সেগুলিকে তারা তাদের মানের পিছনের সারিতে ঠেলে দেয়।” মানুষের প্রকৃতির বিষয়ে বলতে গেলে, আজ যদি ঈশ্বর তাদের প্রকৃত অবস্থা বিষয়ক বক্তব্য রাখতেন এবং সেই ব্যাপারে তারা এক পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান অর্জন করতে পারতো, তবে তাদের হৃদয় অনুশোচনায় পূর্ণ হয়ে উঠতো—কিন্তু পরবর্তীকালে, ঈশ্বরের বাক্যগুলি বাতাসে নিক্ষেপ করে তারা পুনরায় তাদের পুরাতন পথেই ফিরে যেতো, এবং শুধুমাত্র স্মরণ করিয়ে দিলে তবেই উপরিবর্ণিত দৃশ্যটির পুনরানুষ্ঠান করতো। তাই, যখন তুমি কাজ করছো বা কথা বলছো, তখন মানুষের এই উপাদানটির কথা বিস্মৃত হোয়ো না; কার্যরত অবস্থায় এই উপাদানটি দূরে সরিয়ে রাখা হবে প্রমাদস্বরূপ। যে কোনো কাজ করতে গেলে, কথা বলার সময় মানুষের পূর্বধারণাগুলির বিষয়ে উল্লেখ সবিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্দিষ্ট করে, ঈশ্বরের বাক্যগুলির সাথে তোমার নিজস্ব পরিজ্ঞান যোগ করে সেগুলির সঙ্গে তোমার ভাববিনিময় করা উচিত। এ-ই হল মানুষকে সংস্থান সম্প্রদান ও তাদের নিজেদের বিষয়ে জানতে দেওয়ার উপায়। ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে মানুষকে সংস্থান সরবরাহের সময়, তুমি অবধারিতভাবে তাদের বাস্তব অবস্থাটি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে, মানুষের বাস্তব অবস্থাটি উপলব্ধি করা এবং তাদের তদনুযায়ী সংস্থান সরবরাহ করাটুকুই যথেষ্ট—আর সেই কারণেই, “পৃথিবীবক্ষে এক ভোজসভায় উপবেশন করার আমন্ত্রণটি ঈশ্বর গ্রহণ করেছিলেন”—এই তথ্যটির দিকে ইঙ্গিত করার পর ঈশ্বরের বাক্য বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৩০

পরবর্তী: অধ্যায় ৩২

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন