অধ্যায় ২৬
ঈশ্বর-কথিত সকল বাক্য থেকে বোঝা যায়, যত দিন যায় ঈশ্বরের দিবস ততই নিকটবর্তী হয়। মনে হয় এই দিন যেন মানুষের চোখের ঠিক সামনে উপনীত, যেন তা আগামীকালই এসে উপস্থিত হবে। তাই, ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার পর, সকল মানুষ সন্ত্রস্ত, এবং তারা পৃথিবীর জনশূন্যতার একটা অংশেরও আঁচ পায়, হালকা বৃষ্টির সাথে মৃদুমন্দ হাওয়ার ঝরে পড়া পাতার মতো। চিহ্নমাত্র না রেখে মানুষ অন্তর্হিত হয়, যেন তারা সকলেই সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেছে। প্রত্যেকের মধ্যে অমঙ্গলের এক অনুভূতি ছেয়ে আছে, এবং সকল মানুষ ঈশ্বরের অভিপ্রায় পূরণ করতে সচেষ্ট ও আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও, এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের মসৃণ ও অবাধ অগ্রগতির স্বার্থে তাঁর অভিলাষ পূরণ করার জন্য প্রত্যেক মানুষ তাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করা সত্ত্বেও, এই ধরনের হৃদয়াবেগের সাথে সবসময় এক আসন্ন অমঙ্গলের আশঙ্কা মিশে থাকে। বর্তমান উচ্চারণসমূহের কথা ধরা যাক: যদি তা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সম্প্রচারিত করা হতো, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমক্ষে ঘোষণা করা হতো, সকল মানুষ তবে মাথা অবনত করে অশ্রুবিসর্জন করতো, কারণ “আমি সমগ্র বিশ্বের উপর নজর রাখবো, এবং, বিশ্বের প্রাচ্যে ন্যায়পরায়ণতা, মহিমা, ক্রোধ এবং শাস্তি সহ আবির্ভূত হয়ে, আমি অগণ্য মানবতার পৃষ্ঠপোষকদের কাছে আত্মপ্রকাশ করবো!” বাক্যসমূহের মধ্যে আধ্যাত্মিক বিষয়াদি উপলব্ধিতে সক্ষম সকল মানুষ হৃদয়ঙ্গম করে যে ঈশ্বরের শাস্তি কেঊ এড়াতে পারে না, এবং শাস্তির কষ্টভোগের অভিজ্ঞতা লাভের পরে সকলকে তাদের গোত্রানুসারে পৃথক করা হবে। যথার্থই এটি ঈশ্বরের কার্যের এক পদক্ষেপ, এবং কেউ এর পরিবর্তন করতে পারে না। ঈশ্বর যখন বিশ্ব সৃজন করেছিলেন, যখন তিনি মানুষকে পথনির্দেশ করেছিলেন, তখন তিনি তাঁর প্রজ্ঞা ও চমৎকারিত্ব প্রদর্শন করেছিলেন, এবং একমাত্র যখন তিনি এই যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন, তখনই মানুষ তাঁর প্রকৃত ন্যায়পরায়ণতা, মহিমা, ক্রোধ ও শাস্তি দেখতে পাবে। উপরন্তু, শুধুমাত্র শাস্তির মধ্য দিয়েই তারা তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, মহিমা ও ক্রোধ দর্শন করতে সমর্থ হবে; এই পথই গ্রহণ করতে হবে, ঠিক যেমন, অন্তিম সময়ে, ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণ প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য। সমগ্র মানবজাতির সমাপ্তি ঘোষণা করার পর, ঈশ্বর মানুষকে তাঁর বর্তমান কার্য প্রদর্শন করেন। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর বলেন, “পুরাতন ইসরায়েলের অস্তিত্ব আর নেই, এবং আজকের ইসরায়েল সমগ্র পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, এবং সমগ্র মানবজাতির হৃদয়ে তার উচ্চ স্থান অধিকার করেছে। আজকের ইসরায়েল নিশ্চিতভাবে আমার জনগণের মাধ্যমে তার অস্তিত্বের উৎস খুঁজে পাবে।” “হে ঘৃণাপূর্ণ মিশর! … কীভাবে তোমরা আমার শাস্তির অধীনে বিদ্যমান না থাকতে পারো?” উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঈশ্বর মানুষকে দুটি প্রতিতুলনামূলক রাষ্ট্র তাঁর হাতে যে পরিণাম লাভ করেছে তা প্রদর্শন করেন, এক অর্থে ইসরায়েলকে নির্দেশ করা হয়েছে, যেটা স্থূল অর্থ, এবং অপর অর্থে ঈশ্বরের সকল মনোনীত মানুষকে উদ্দেশ করা হয়েছে—অর্থাৎ, ইসরায়েলের রূপান্তরের সাথে সাথে ঈশ্বরের মনোনীত মানুষরা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ইসরায়েল যখন পরিপূর্ণভাবে তার আদি রূপে ফিরে যাবে, সকল মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ করে তোলা হবে—অর্থাৎ, ঈশ্বর যাদের ভালোবাসেন, ইসরায়েল তাদের এক অর্থপূর্ণ প্রতীক। অপরপক্ষে, ঈশ্বর যাদের ঘৃণা করেন মিশর তাদের প্রতিনিধিত্বমূলক সম্মিলনস্থল। এটি যত বেশি অবক্ষয়িত হয়, ঈশ্বরের দ্বারা ঘৃণিত ব্যক্তিরা তত বেশি ভ্রষ্ট হয়ে ওঠে—এবং পরবর্তীকালে ব্যাবিলনের পতন ঘটে। এর ফলে এক পরিষ্কার বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। ইসরায়েল ও মিশরের সমাপ্তি ঘোষণার মাধ্যমে ঈশ্বর সকল মানুষের নিয়তি উদ্ঘাটিত করেছেন; তাই, ইসরায়েলের উল্লেখ করার সময় ঈশ্বর মিশরের কথাও বলেছেন। এর থেকে বোঝা যায়, মিশরের বিনাশের দিনই হল বিশ্বের বিলয়ের দিন, যেদিন ঈশ্বর সকল মানুষকে শাস্তি দেবেন। এটি শীঘ্রই ঘটবে; ঈশ্বর এই কার্য সম্পূর্ণ করতে চলেছেন, যা মানুষের চর্মচক্ষের সম্পূর্ণ অগোচর হলেও অপরিহার্য ও অপরিবর্তনীয়। ঈশ্বর বলেন, “যারা আমার বিরোধিতা করবে তারা নিশ্চিতভাবে আমার দ্বারা অনন্তকালের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। কারণ আমি হলাম ঈর্ষাপরায়ণ ঈশ্বর এবং মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনোরকম নিষ্কৃতি দেবনা।” ঈশ্বর এমন চূড়ান্ত শর্তে কথা বলেন কেন? আর কেনই বা তিনি ব্যক্তিগতভাবে অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে দেহরূপ ধারণ করেছেন? ঈশ্বরের বাক্য থেকেই তাঁর লক্ষ্য অনুধাবন করা যেতে পারে: মানুষের উদ্ধারের জন্য, কিম্বা তাদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর জন্য, বা তাদের তত্ত্বাবধান করতে, বা তাদের সুরক্ষিত রাখতে তিনি অবতীর্ণ হননি—তিনি এসেছেন যারা তাঁর বিরোধিতা করে তাদের সকলকে শাস্তি প্রদান করার জন্য। কারণ ঈশ্বর বলেন, “কেউই আমার শাস্তি এড়াতে পারবে না।” ঈশ্বর দেহরূপে অবস্থান করেন, এবং তদুপরি, তিনি একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়নিষ্ঠভাবে তাঁকে জানতে অসমর্থ হওয়ার দরুন মানুষের দুর্বলতার হেতু মানুষকে তিনি ক্ষমা করেন না; পরিবর্তে, একজন “স্বাভাবিক মানুষ” হিসাবেই মানুষকে তিনি তাদের পাপের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন, যারা তাঁকে দেহরূপে দর্শন করেছে তাদের সকলকে তিনি দণ্ডিত মানুষে পরিণত করেন, এবং সেই মানুষগুলি এইভাবে, যারা অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশের মানুষ নয় তাদের সকলের বলির অর্ঘ্যে পরিণত হয়। কিন্তু এটি ঈশ্বরের অবতারের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলির অন্যতম নয়। মূলত অতিকায় লাল ড্রাগনের সঙ্গে সশরীরে লড়াই করার জন্য এবং লড়াইয়ের মাধ্যমে তাকে অসম্মানিত করার জন্যই ঈশ্বর দেহরূপ গ্রহণ করেছিলেন। আত্মা-রূপ অপেক্ষা দেহরূপে লড়াইয়ের মাধ্যমেই যেহেতু ঈশ্বরের অসামান্য ক্ষমতা বেশি করে প্রতীয়মান হয়, তাই তাঁর কর্মকাণ্ড ও সর্বশক্তিমানতা প্রদর্শন করতে ঈশ্বর দেহ-রূপে লড়াই করেন। অসংখ্য মানুষ “অপাপবিদ্ধভাবে” ঈশ্বরের অবতারের দ্বারা অভিযুক্ত হয়েছে, এবং অগণন মানুষ এইভাবে নরকে নিক্ষিপ্ত ও শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে, এবং দৈহিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে। ঈশ্বরের ধার্মিক প্রকৃতির এটি চাক্ষুষ প্রতিপাদন, এবং যারা ঈশ্বরবিরোধী তারা আজ যতই পরিবর্তিত হোক, ঈশ্বরের ধার্মিক প্রকৃতি কোনোদিনই পরিবর্তিত হবে না। একবার নিন্দিত হলে মানুষ চিরকালের জন্য নিন্দিত থেকে যায়, আর কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। মানুষের প্রকৃতি ঈশ্বরের মতো হতে পারে না। ঈশ্বর-বিরোধীদের প্রতি মানুষ পর্যায়ক্রমে ঊষ্ণ ও শীতল মনোভাব প্রদর্শন করে; তাদের অবস্থান ক্রমাগত ডাইনে ও বাঁয়ে আন্দোলিত হয়, কখনো উপরে ওঠে, কখনো বা নীচে নেমে আসে; তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা স্থির থাকতে পারে না, কখনো ঈশ্বরবিরোধীদের মজ্জায়-মজ্জায় ঘৃণা করে, আবার কখনো তাদের আত্মার অন্তরঙ্গ ভেবে নেয়। আজকের পরিস্থিতিটা যে এইরকম দাঁড়িয়েছে তার কারণ হল, মানুষ ঈশ্বরের কার্যকে বোঝে না। ঈশ্বর এমন কথা কেন বলেন যে, “দেবদূতরা তবু দেবদূতই, ঈশ্বর অন্তিমে সেই ঈশ্বর, দানবরা সবকিছুর পরেও সেই দানবই; অধার্মিক যারা তারা এখনো অধার্মিক; এবং পবিত্ররা এখনো পবিত্রই”? তোমরা কি একথার মর্মোপলব্ধি করতে পারো না? এমন কি হতে পারে যে ঈশ্বরের বিস্মরণ ঘটেছে? তাই, ঈশ্বর বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের প্রকার অনুযায়ী পৃথক হয়ে যায়, এবং নিজেদের অজান্তেই তারা তাদের পরিবারের মধ্যে পথ খুঁজে পায়।” এই উক্তি থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই আজ সমস্তকিছুকে তাদের গোত্রে শ্রেণীবিন্যস্ত করে ফেলেছেন, যার ফলে “অসীম বিশ্ব” বলে আজ আর কিছু নেই, এবং মানুষ আর অভিন্ন বৃহৎ পাত্র থেকে খাদ্যগ্রহণ করে না, বরং নিজ নিজ গৃহে নিজ কর্তব্য সম্পাদন করে, নিজস্ব ভূমিকা পালন করে যায়। বিশ্ব সৃষ্টির সময় এটাই ছিল ঈশ্বরের আদি পরিকল্পনা; গোত্র অনুসারে বিভক্ত হওয়ার পর মানুষরা “প্রত্যেকে তাদের স্বীয় খাদ্য ভক্ষণ করবে”, অর্থাৎ ঈশ্বর তাঁর বিচার শুরু করবেন। ফলস্বরূপ, ঈশ্বরের ওষ্ঠ থেকে এই বাক্যগুলি নিঃসৃত হয়েছে: “আমি সৃষ্টিকে তার পুরাতন অবস্থায় ফিরিয়ে আনবো; আমি সবকিছুকেই তাদের পুরাতন অবস্থায় পুনরধিষ্ঠিত করবো, গভীরভাবে পরিবর্তিত করবো সমস্তকিছুকে, যাতে সবকিছুই আমার পরিকল্পনার কেন্দ্রে ফিরে আসে।” সুনির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের সকল কার্যের এটাই লক্ষ্য, এবং তা উপলব্ধি করা দুরূহ কিছু নয়। ঈশ্বর তাঁর কার্য সম্পূর্ণ করবেন—মানুষ কি তাঁর কার্যের পথে অন্তরায় হতে পারে? এবং মানুষ ও তাঁর মধ্যে প্রবর্তিত যে চুক্তিপত্র, ঈশ্বর কি তা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিতে পারেন? ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা যে কার্য সম্পন্ন হয়েছে কে তার রদবদল করতে পারে? কোনো মানুষ আদৌ কি তা করতে সক্ষম?
মানুষ অতীতে ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে নিহিত একটি নিয়ম উপলব্ধি করেছিল: ঈশ্বরের বাক্য কথিত হয়ে গেলে অবিলম্বে তা বাস্তবায়িত হয়। এটা একেবারেই মিথ্যা নয়। ঈশ্বর যেহেতু বলেছেন তিনি সকল মানুষকে তিনি শাস্তি দেবেন, উপরন্তু, যেহেতু তিনি তাঁর প্রশাসনিক ফরমান জারি করেছেন, এর থেকে প্রমাণিত হয় যে ঈশ্বরের কার্য একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত সম্পন্ন হয়ে গেছে। সমস্ত মানুষের জন্য অতীতে যে সংবিধান জারি করা হয়েছিল সেখানে তাদের জীবন এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের মনোভাবের বিষয়গুলিকে বিবেচনা করা হয়েছিল। মূল পর্যন্ত তা প্রবেশ করেনি; এমনও বলা হয়নি যে তা ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারণের উপর প্রতিষ্ঠিত, বরং তা মানুষের তৎকালীন আচরণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। আজকের প্রশাসনিক ফরমানসমূহ অনন্যসাধারণ এবং তা আলোচনা করে কীভাবে “নিজস্ব প্রকার অনুযায়ী সমস্ত মানুষ বিভাজিত হবে, এবং তাদের কর্ম অনুযায়ী শাস্তির বিধান পাবে।” খুব ঘনিষ্টভাবে পাঠ না করলে এর মধ্যে কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হবে না। যেহেতু শুধুমাত্র অন্তিম যুগেই ঈশ্বর সমস্তকিছুকে তাদের গোত্র অনুসারে পৃথক করেছেন, তাই এই বাক্য পাঠ করার পর অধিকাংশ মানুষ বিহ্বল ও বিভ্রান্ত রয়ে যায়; এখনো তারা এই সময়ের আশু চাহিদা অনুধাবন না করে একটা ঐকান্তিকতাবিহীন শিথিল মনোভাব অবলম্বন করে, আর তাই একে তারা কোনো সাবধানবাণী বলে গণ্য করে না। কেনই বা ঠিক এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতি জ্ঞাপিত ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানকে মানুষের সমক্ষে আনতে হল? এই মানুষগুলি কি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে সকল সত্তার প্রতিনিধিত্ব করে? এমন কি হতে পারে যে ঈশ্বর পরবর্তীকালে এই মানুষগুলির প্রতি অধিক করুণা পোষণ করবেন? এই মানুষগুলি কি একের জায়গায় দুটি মস্তকের অধিকারী? ঈশ্বর যখন সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মানুষকে শাস্তিপ্রদান করবেন, যখন সকল প্রকারের বিপর্যয় এসে আঘাত হানবে, তখন এসকল বিপর্যয়ের ফলে সূর্যে ও চন্দ্রে পরিবর্তন সাধিত হবে, এবং এসকল বিপর্যয়ের অবসানে সূর্য ও চন্দ্র ইতিমধ্যেই রূপান্তরিত হয়ে যাবে—আর একেই “ক্রান্তিকাল” বলা হয়। বলাই বাহুল্য, ভবিষ্যতের বিপর্যয়সমূহ অতীব ভয়ানক হবে। হয়তো তখন রাত্রি এসে দিনের স্থলাভিষিক্ত হবে, হয়তো পুরো একটি বৎসর ব্যাপী সূর্যোদয় স্থগিত থাকবে, হয়তো মাসের পর মাস ধরে তীব্র দাবদাহ চলবে, মানবজাতির গগনপটে সতত সংলগ্ন থাকবে হয়তো ক্ষীয়মান এক চাঁদ, সূর্য ও চন্দ্রের একত্রে উদিত হওয়ার মতো এবম্বিধ আরো কত বিচিত্র অবস্থার প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। চক্রাকারে আবর্তনশীল এরকম বেশকিছু পরিবর্তনের পর, অবশেষে, সময়ের অতিক্রমণের সঙ্গে তারা নবায়িত হবে। শয়তানের অধিকৃত যারা তাদের জন্য তাঁর পরিকল্পনায় ঈশ্বর বিশেষ অভিনিবেশ আরোপ করেছেন। তাই, তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলেন, “এই বিশ্বের যেসব মানুষ শয়তানের অধীনে আছে তারা সকলেই নির্মূল হবে।” এই “মানুষগুলি” স্বরূপে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে ঈশ্বর সর্বদাই তাদের সেবাপ্রদানের কাজে ব্যবহার করেন; ফলস্বরূপ, তাদের কার্যকলাপের প্রতি তিনি কোনো মনোযোগ দেন না, তারা ভালো কাজ করলেও তিনি তাদের কোনো “পারিতোষিক” প্রদান করেন না, কাজকর্মে খারাপ প্রদর্শনের কারণেও তাদের “মজুরি”-তে তিনি কোনো কাটছাঁট করেন না। বস্তুত, তিনি তাদের উপেক্ষা করেন এবং তাদের প্রতি এক শীতল মনোভাব প্রদর্শন করেন। তাদের “সদাশয়তা”-র হেতু তাঁর মনোভাবের আকস্মিক কোনো পরিবর্তন ঘটে না, কারণ, স্থান-কাল নির্বিশেষে, মানুষের সারসত্যের রূপান্তর হয় না, ঠিক যেমন কোনো নড়চড় হয় না ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির, এবং অনুরূপভাবে, মানুষ যেমন বলে, “সমুদ্র শুকিয়ে গেলে এবং প্রস্তর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলেও, কিছু বদলাবে না।” তাই, ঈশ্বর ওই মানুষগুলিকে কেবল তাদের প্রকারভেদ অনুযায়ী বাছাই করেন এবং তাদের প্রতি তৎক্ষণাৎ কোনো মনোযোগ দেন না। সৃষ্টির সময় থেকে আজ অবধি, শয়তান কখনো যথাযথ আচরণ করে উঠতে পারেনি। সর্বদাই সে ব্যাঘাত, বিঘ্ন ও মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে। ঈশ্বর যখন কাজ করেন বা কথা বলেন, শয়তান সবসময় তাতে অংশগ্রহণের চেষ্টা করে, কিন্তু ঈশ্বর তাতে ভ্রূক্ষেপ করেন না। শয়তানের নামোল্লেখমাত্র ঈশ্বরের রোষ দুর্দমনীয়ভাবে ধেয়ে আসে; তারা একই আত্মা থেকে উদ্ভূত নয় বলে তাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই, শুধু দূরত্ব ও ব্যবধান আছে। সপ্ত সীলমোহরের উদ্ঘাটনের পরবর্তীকালে, পৃথিবীর অবস্থা সবসময়ই নিকৃষ্টতর হয়ে যায়, এবং সবকিছু “সপ্ত সীলমোহরের সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে এগিয়ে চলে”, সামান্যতমও পিছিয়ে পড়ে না। তাঁর সকল বাক্য জুড়ে, ঈশ্বর মানুষকে হতচেতন বলে গণ্য করেন, তবু আদৌ তারা জাগ্রত হয় না। এক উচ্চতর স্থিতিতে উপনীত হতে, সকল মানুষের শক্তিকে ফলপ্রসূ করতে, উপরন্তু, ঈশ্বরের চূড়ান্ত পর্যায়ের কার্যকে পরিসমাপ্তিতে নিয়ে যেতে, ঈশ্বর মানুষকে কিছু প্রশ্ন করেন, যেন তা দিয়ে তাদের উদরস্ফীতি ঘটাচ্ছেন, এবং এইভাবে তিনি সকল মানুষকে সমৃদ্ধ করেন। যেহেতু এই মানুষগুলির যথার্থ কোনো আত্মিক উচ্চতা নেই, তাই, বাস্তব পরিস্থিতির ভিত্তিতে, ঈশ্বরের প্রশ্নের দ্বারা যারা স্ফীত হয়েছে তারাই কাঙ্খিত আদর্শমান সমন্বিত সামগ্রী, আর যাদের স্ফীত করা হয়নি তারা অনাবশ্যক জঞ্জাল মাত্র। মানুষের কাছে এটাই ঈশ্বরের চাহিদা, এবং এটাই তাঁর কথা বলার পদ্ধতির লক্ষ্য। বিশেষত, ঈশ্বর যখন বলেন, “এমন কি হতে পারে যে পৃথিবীতে আমি আমার স্বর্গের রূপের থেকে আলাদা? এমন কি হতে পারে যে আমি স্বর্গে থাকলে পৃথিবীতে আর অবতরণ করতে পারি না? এমন কি হতে পারে যে আমি পৃথিবীতে থাকলে স্বর্গে আরোহণের যোগ্য থাকি না?”, তখন এই প্রশ্নগুলি ঈশ্বরকে জানার লক্ষ্যে মানুষকে এক স্পষ্টতর পথের দিশা দেখায়। ঈশ্বরের বাক্য থেকে ঈশ্বরের আশু অভিলাষ উপলব্ধ হয়; মানুষ তা অর্জনে অপারগ, এবং বারংবার শর্ত আরোপ করার মাধ্যমে ঈশ্বর সকল মানুষকে পৃথিবীতে আবির্ভূত স্বর্গীয় ঈশ্বরকে, ও যে ঈশ্বর স্বর্গস্থ কিন্তু পৃথিবীতে বাস করেন তাঁকে জানার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
ঈশ্বরের বাক্য থেকে মানুষের পরিস্থিতি অনুধাবন করা যায়: “আমার বাইরের রূপ দেখে সব মানুষই তাদের নিজের মত করে আমার বাক্যকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা সকলেই ব্যর্থ হয়, তাদের প্রচেষ্টা একেবারেই নিষ্ফল হয়, এবং এর পরিবর্তে তারা আমার বাক্যের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং আর উঠে দাঁড়াতে সাহস করে না।” ঈশ্বরের বিষাদ কে উপলব্ধি করতে পারে? কেই বা ঈশ্বরের হৃদয়কে সান্ত্বনা দিতে পারে? কোন মানুষ ঈশ্বরের অন্তরের আকাঙ্ক্ষার সাথে সহমত? মানুষ যখন বিফলকাম হয়, তখন তারা নিজেদের অস্বীকার করে এবং ঈশ্বরের সমন্বয়সাধনের কাছে সত্যিকারের আত্মসমর্পণ করে। ক্রমশ, যখন তাদের প্রকৃত হৃদয় প্রকাশিত হয়, প্রত্যেককে তখন তাদের গোত্র অনুসারে পৃথক করা হয়, আর এইভাবেই পরিলক্ষিত হয় যে দেবদূতদের উপাদান হল ঈশ্বরের প্রতি বিশুদ্ধ আনুগত্য। আর তাই ঈশ্বর বলেন, “মানবতা তার আদি রূপে প্রকাশিত হয়।” ঈশ্বরের কার্য যখন এই পর্যায়ে এসে উপনীত হবে, তখন সকল কার্য সমাপন হয়ে যাবে। তিনি স্বয়ং যে তাঁর সন্তান ও লোকদের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ, ঈশ্বর এরকম কিছু বলেননি বলে মনে হয়, পরিবর্তে সকল মানুষ যাতে তাদের আসল রূপ প্রদর্শন করে সেইদিকে তিনি তাঁর মনযোগ কেন্দ্রীভূত করেছেন। এই বাক্যগুলির সম্যক অর্থ তুমি কি উপলব্ধি করতে পারছো?