অধ্যায় ২৭

বর্তমানে ঈশ্বরের বাক্যগুলি চূড়ান্ত সীমায় এসে পৌঁছেছে, অর্থাৎ, বিচারের যুগের দ্বিতীয় পর্ব তার শিখরে উপনীত হয়েছে। কিন্তু এটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নয়। অধুনা ঈশ্বরের স্বরভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে—তা আর বিদ্রূপাত্মক বা কৌতুকপূর্ণ নয়, এবং তা শাসনমূলক বা তিরস্কারসূচকও নয়; ঈশ্বর তাঁর বাক্যাবলীর স্বরভঙ্গি লঘু করেছেন। ঈশ্বর এখন মানুষের সাথে “ভাবানুভূতি বিনিময়” করতে শুরু করেন। ঈশ্বর বিচারের যুগের কার্য অব্যাহত রাখছেন, এবং একই সাথে, কার্যের পরবর্তী পর্বের পথ উন্মুক্ত করছেন, যাতে তাঁর কার্যের সকল পর্বগুলি পরস্পরের সাথে বিজড়িত হয়ে থাকে। একদিকে তিনি মানুষের “একগুঁয়েমি আর অপরাধপ্রবণতা”-র কথা বলেন, অন্যদিকে “মানুষের থেকে বিযুক্ত হয়ে পরে পুনর্মিলিত হওয়ার আনন্দ-বেদনা”-র কথাও বলেন—এই সবকিছুই মানুষে হৃদয়ে এক প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক করে, এমনকি সবচেয়ে অসাড় মানব-হৃদয়কেও তা বিচলিত করে। এই বাক্যগুলি বলার পিছনে ঈশ্বরের প্রাথমিক লক্ষ্য হল অন্তিমে সকল মানুষকে ঈশ্বরের সামনে নিঃশব্দে ভূপতিত হতে বাধ্য করা, এবং কেবল তার পরেই “আমি আমার কর্মগুলি প্রকাশ্যে আনি, প্রত্যেককে নিজের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে আমাকে জানতে বাধ্য করি”। এই পর্যায়ে ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে উপরিগত; তা প্রকৃত জ্ঞান নয়। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও, ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণে তারা অক্ষম। আজ, ঈশ্বরের বাক্য তার শীর্ষ ছুঁয়েছে, কিন্তু মানুষ প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে, আর সেকারণেই তারা বর্তমান স্থান ও কালের উচ্চারণগুলির গভীরে প্রবেশ করতে অক্ষম—এতে প্রমাণিত হয় যে ঈশ্বর ও মানুষ যতদূর সম্ভব ততখানিই পৃথক। এই তুলনার ভিত্তিতে, ঈশ্বরের বাক্যাবলী যখন সমাপ্তিতে এসে ঠেকবে, তখন মানুষ কেবল ঈশ্বর-নির্ধারিত আদর্শ মানের ন্যূনতমটুকু অর্জন করতে সমর্থ হবে। এই পদ্ধতিতেই ঈশ্বর অতিকায় লাল ড্রাগনের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে কলুষিত মানুষদের ভিতর কাজ করেন, এবং সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনের জন্য ঈশ্বরকে এভাবেই কাজ করতে হবে। গির্জার লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যগুলির প্রতি আরেকটু বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে, কিন্তু ঈশ্বরের অভিপ্রায় হল তারা যেন তাঁর বাক্যের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে জানতে পারে—বিষয়দুটির মধ্যে কি কোনো পার্থক্য নেই? যাইহোক, পরিস্থিতি এখন যা দাঁড়িয়েছে তাতে ঈশ্বর আর মানুষের দুর্বলতা নিয়ে ভাবিত নন, এবং মানুষ তাঁর বাক্যগুলি গ্রহণ করতে পারুক বা না পারুক, তিনি তাঁর বাক্যোচ্চারণ অব্যাহত রাখেন। ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে, তাঁর বাক্যোচ্চারণ যখন স্থগিত হবে, ঠিক সেই ক্ষণেই ধরাধামে তাঁর কার্যও সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু এই সময়ের কাজ অতীতের মতো নয়। সকলের অগোচরেই ঈশ্বরের উচ্চারণ পরিসমাপ্তিতে এসে পৌঁছাবে; তাঁর কার্য যখন সমাপ্ত হবে, সে বিষয়ে সকলে তখন অনবহিতই রয়ে যাবে, এবং ঈশ্বরের রূপ যখন পরিবর্তিত হবে, তখন কেউই তা জানবে না। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এমনই। শয়তানের কোনো অভিযোগ বা শত্রু শক্তির কোনো হস্তক্ষেপ এড়াতে, সকলের অজ্ঞাতসারেই ঈশ্বর কার্যসাধন করেন, এবং এই মুহূর্তে পৃথিবীর মানুষদের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যদিও ঈশ্বরের রূপান্তরের লক্ষণগুলির কথা একবার বলা হয়েছিল, কিন্তু কেউ তা উপলব্ধি করতে সক্ষম নয়, কারণ মানুষ বিস্মৃত হয়েছে, এবং এ বিষয়ে কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। অভ্যন্তর ও বাহির উভয় দিক থেকে আক্রমণের কারণে—বাহ্যিক জগতের বিপর্যয় ও ঈশ্বরের বাক্যের দহন ও পরিশোধনের কারণে—মানুষ আর ঈশ্বরের নিমিত্ত পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক নয়, কারণ নিজেদের বিষয়গুলি নিয়ে তারা অত্যন্ত ব্যস্ত। সকল মানুষ যখন অতীতের জ্ঞান ও সাধনাকে অস্বীকার করার মতো এক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, সমস্ত মানুষ যখন নিজেদের পরিষ্কারভাবে দেখে ফেলবে, তখন তারা ব্যর্থ হবে এবং তাদের হৃদয়ে তখন আর নিজেদের আত্ম-সত্তার কোনো স্থান থাকবে না। একমাত্র তখনই মানুষ আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে আকাঙ্ক্ষা করবে, একমাত্র তখনই ঈশ্বরের বাক্যগুলি তাদের হৃদয়ে সত্যিকারের একটা জায়গা করে নেবে, এবং একমাত্র তখনই ঈশ্বরের বাক্যগুলি তাদের অস্তিত্বের উৎস হয়ে উঠবে—সেই মুহুর্তটিতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ হবে। কিন্তু আজকের মানুষ এখনো এই পর্যায়ে এসে উপনীত হওয়া থেকে অনেক দূরবর্তী। তাদের কেউ কেউ এক ইঞ্চিও অগ্রসর হয়েছে কিনা সন্দেহ, আর তাই ঈশ্বর একে “অপরাধপ্রবণতা” বলে অভিহিত করেছেন।

ঈশ্বরের সকল বাক্যে বহুসংখ্যক প্রশ্ন রয়েছে। ঈশ্বর কেন এই ধরনের প্রশ্ন করতে থাকেন? “মানুষ কেন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়ে পুনর্জন্ম গ্রহণে অপারগ? কোনো কর্দমমুক্ত স্থানের পরিবর্তে কেন তারা সর্বদাই জলাভূমিতে থেকে যেতে চায়? …” অতীতে, বিষয়গুলির প্রতি সরাসরি অঙ্গুলিনির্দেশ বা প্রত্যক্ষভাবে সেগুলিকে উদ্ঘাটিত করার মাধ্যমে ঈশ্বর কার্য সম্পাদন করতেন। কিন্তু মানুষ অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করার পর থেকে ঈশ্বর সরাসরি আর এভাবে কথা বলেননি। এই প্রশ্নগুলির মধ্যে মানুষ একই সাথে নিজস্ব ঘাটতিগুলি প্রত্যক্ষ করে এবং অনুশীলনের পথটি খুঁজে পায়। যেহেতু মানুষ সহজলভ্য খাদ্য গ্রহণ করতে পছন্দ করে, তাই ঈশ্বর তাদের চাহিদা অনুসারে বাক্যোচ্চারণ করেন, তাদের কাছে চিন্তা করার মতো বিষয়ের অবতারণা করেন, যাতে সেগুলি তারা ভেবে দেখতে পারে। এটি হল ঈশ্বরের প্রশ্নগুলির তাৎপর্যের একটি দিক। স্বভাবতই, এটি তাঁর অন্য কিছু প্রশ্নের ক্ষেত্রে তাৎপর্যবাহী নয়, যেমন: এমন কি হতে পারে যে তাদের সাথে আমি খারাপ আচরণ করেছি? এমন কি হতে পারে যে তাদের আমি ভ্রান্ত দিশায় পথনির্দেশ করেছি? এমন কি সম্ভব যে তাদের আমি নরকের দিকে নিয়ে চলেছি? এ ধরনের প্রশ্নগুলি মানব-হৃদয়ের গহীনে বদ্ধমূল পূর্বধারণাগুলিকে প্রদর্শন করে। যদিও মুখ ফুটে তারা এই পূর্বধারণাগুলি প্রকাশ করে না, কিন্তু তাদের অধিকাংশের অন্তরে সংশয় রয়েছে, এবং তাদের বিশ্বাস যে ঈশ্বরের বাক্যগুলি তাদের নিতান্তই অযোগ্য বলে চিত্রিত করে। স্বভাবতই, এরকম মানুষগুলি নিজেদেরকে জানে না, কিন্তু অন্তিমে তারা ঈশ্বরের বাক্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করবে—এ অবশ্যম্ভাবী। এই প্রশ্নগুলি করার পর, ঈশ্বর আরো বলেন, “সমস্ত রাষ্ট্রকে আমি ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে চাই, মানুষের পরিবারের কথা তো বলাই বাহুল্য”। মানুষ যখন ঈশ্বরের নাম গ্রহণ করবে, ফলস্বরূপ তখন সমুদয় রাষ্ট্র কেঁপে উঠবে, মানুষ ধীরে ধীরে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনবে, এবং পরিবারের মধ্যে পিতা-পুত্র, মাতা-কণ্যা ও স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্কগুলির অস্তিত্ব লোপ পাবে। সেই সাথে, পরিবারের লোকজনের মধ্যে সম্পর্কগুলি আরো পরস্পর-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে; তারা মহান পরিবারটিতে যোগ দেবে, এবং প্রায় সমস্ত পরিবারের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক রীতিনীতিগুলি বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। এর ফলে, মানুষের অন্তরে “পরিবার”-এর ধারণাটি উত্তরোত্তর আরো অস্পষ্ট হয়ে পড়বে।

ঈশ্বরের আজকের বাক্যে মানুষের সাথে “ভাবাবেগ বিনিময়”-এর বিষয়টির উপর এতখানি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে কেন? স্বভাবতই, এটাও করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জনের উদ্দেশ্যে, যা থেকে বোঝা যায় যে ঈশ্বরের হৃদয় উদ্বেগে পূর্ণ। ঈশ্বর বলেন, “আমিই যখন বিষণ্ণ, তখন কে-ই বা নিজ অন্তর দিয়ে আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারে?” ঈশ্বরের এই বাক্য উচ্চারণের কারণ তাঁর অন্তর শোকে অভিভূত। মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি যাবতীয় তত্ত্বাবধান দানে অপারগ, এবং সর্বদাই তারা ইন্দ্রিয়পরায়ণ, তারা নিজেদের সংবরণ করতে পারে না, তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো কাজকর্ম করে; তারা নিতান্তই অধম, তারা নিজেদের সবসময় মার্জনা করে দেয় এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি যত্নশীল নয়। কিন্তু যেহেতু মানুষ অদ্যাবধি শয়তানের দ্বারা কলুষিত হয়ে এসেছে, এবং যেহেতু তারা নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম নয়, তাই ঈশ্বর বলেন: “কীভাবেই বা তারা ক্ষুধার্ত নেকড়ের চোয়াল থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে? কীভাবেই বা তারা এর ভীতিপ্রদর্শন ও প্রলোভন থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে?” মানুষ দৈহিকভাবে জীবনযাপন করে, যার অর্থ হল ক্ষুধার্ত নেকড়ের মুখে জীবন নির্বাহ করা। এই কারণে, এবং মানুষের কোনো আত্মসচেতনতাবোধ নেই বলে, এবং তারা সর্বদাই নিজেদের প্রশ্রয় দেয় ও ভোগবাসনার কাছে নতিস্বীকার করে বলে, ঈশ্বর উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। মানুষকে ঈশ্বর যত বেশি করে স্মরণ করিয়ে দেন, নিজেদের অন্তরে তারা তত বেশি সুস্থ বোধ করে, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে বিজড়িত হতে তারা তত বেশি ইচ্ছুক হয়ে ওঠে। কেবল তখনই মানুষ ও ঈশ্বর পরস্পরের মধ্যে কোনো বিচ্ছেদ বা দূরত্ব ব্যতিরেকে একে অপরের সাথে সুসমঞ্জসভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে উঠবে। সমগ্র মানবজাতি আজ ঈশ্বরের দিনটির আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করছে, এবং সেকারণেই মানবজাতি কখনো অগ্রসর হয়নি। তবু ঈশ্বর বলেন: “ন্যায়পরায়ণতার সূর্য যখন উদিত হবে, তখন পূর্বাকাশ আলোকিত হয়ে উঠবে, এবং এরপর তা সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে আলোকিত করবে, সকলের কাছে পৌঁছে যাবে।” অন্যভাবে বলা যায়, ঈশ্বর যখন তাঁর রূপ পরিবর্তন করবেন, তখন পূর্ব দিগন্ত সবার আগে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং প্রাচ্যের রাষ্ট্রটিকে সর্বপ্রথম বিস্থাপিত করা হবে, এর পর বাদবাকি দেশগুলিকে দক্ষিণ থেকে শুরু করে উত্তরের দিকে ক্রমান্বয়ে নবায়িত করা হবে। এই হল নির্ধারিত ক্রম, এবং সমস্তকিছুই ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী সম্পন্ন হবে। এই পর্ব একবার মিটে গেলেই সকল মানুষ তা দেখতে পাবে। ঈশ্বর এই ক্রম অনুসারেই কার্যসাধন করেন। সেই দিনটি প্রত্যক্ষ করার পর মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত হবে। ঈশ্বরের জরুরি অভিপ্রায় থেকে বোঝা যায় যে এই দিনটি বেশি দূরবর্তী নয়।

আজ এখানে কথিত বাক্যগুলির দ্বিতীয় ও তৃতীয় অংশ সকল ঈশ্বর-প্রেমী মানুষের চক্ষে যন্ত্রণার অশ্রুধারা এনে দেয়। তাদের হৃদয় তৎক্ষণাৎ ছায়ার অবগুণ্ঠনে আচ্ছাদিত হয়, এবং তারপর সকল মানুষ ঈশ্বরের অন্তরের কথা ভেবে নিদারুণ বেদনায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ধরাধামে ঈশ্বর তাঁর কার্যটি সম্পন্ন না করা পর্যন্ত তারা কোনো স্বস্তি বোধ করবে না। এটিই হল সাধারণ প্রবণতা। “আমার হৃদয়ের অভ্যন্তরে ক্রোধের মাত্র ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, তার সাথে মিশে থাকে ক্রমবর্ধমান এক দুঃখের অনুভূতি। আমার দৃষ্টি যখন মানুষের কীর্তিসমূহ এবং তাদের প্রতিটি কথায় ও কাজে কলুষতার স্পর্শ দেখতে পায়, তখন আমার ক্রোধ উথলে ওঠে, এবং আমার হৃদয়ে মানব-জগতের অবিচারগুলির বিষয়ে এক গভীরতর বোধ জন্ম নেয়, যা আমাকে আরো দুঃখাতুর করে তোলে; আমি তক্ষুনি মানুষের দৈহিকতার অবসান কামনা করি। আমি জানি না কেন মানুষ দৈহিকরূপে নিজেদের পরিশুদ্ধ করতে অক্ষম, কেন তারা দৈহিকরূপে নিজেদের ভালোবাসতে পারে না। এমন কি হতে পারে যে দৈহিকতার নির্দিষ্ট ‘ক্রিয়া’-টি এতই সুমহান?” তাঁর আজকের বাক্যে ঈশ্বর মানুষের কাছে প্রকাশ্যে নিজ অন্তরের উদ্বেগগুলি ব্যক্ত করেছেন, কোনোকিছুই গোপন করেননি। তৃতীয় স্বর্গের দেবদূতেরা যখন তাঁর উদ্দেশ্যে সঙ্গীত বাদন করে, তখনও ঈশ্বর পৃথিবীর মানুষদের জন্য আকুল হন, এবং এই কারণেই তিনি বলেন, “দেবদূতেরা যখন আমার স্তুতিতে গীতবাদ্য করে, তখন তা মানুষের প্রতি আমার সহানুভূতি জাগ্রত না করে পারে না। আমার হৃদয় তৎক্ষণাৎ দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, এবং এই যন্ত্রণাদায়ক আবেগ থেকে নিজেকে মুক্ত করা অসম্ভব।” এই কারণেই তিনি পরবর্তী বাক্যগুলি উচ্চারণ করেন: “মানবজগতের অন্যায়সমূহের আমি প্রতিবিধান করবো। সারা বিশ্ব জুড়ে স্বহস্তে আমি আমার কার্যনির্বাহ করবো, শয়তানকে পুনর্বার আমি আমার লোকদের ক্ষতিসাধন করতে দেবো না, পুনরায় যদৃচ্ছ আচরণ করা থেকে শত্রুদের আমি নিবৃত্ত করবো। আমি পৃথিবীতে রাজা হব এবং সেখানে আমার সিংহাসনটি নিয়ে আসবো, আমার সকল শত্রুকে ধরাশায়ী করে আমারই সম্মুখে তাদের অপরাধ কবুল করতে আমি বাধ্য করবো।” ঈশ্বরের বিমর্ষতা শয়তানদের প্রতি তাঁর ঘৃণার মাত্রা বর্ধিত করে, আর তাই শয়তানদের পরিণতি কী হবে তা তিনি পূর্বাহ্নেই জনসাধারণের কাছে উদ্ঘাটিত করে দেন। এ হল ঈশ্বরের কার্যধারা। ঈশ্বর সর্বদাই সকল মানুষের সাথে পুনর্মিলিত হওয়ার এবং পুরাতন যুগের পরিসমাপ্তি ঘটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে সকল মানুষ সঞ্চরমান হতে শুরু করেছে—অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সকল মানুষ ঈশ্বরের পথনির্দেশনায় প্রবেশ করছে। ফলস্বরূপ, তাদের চিন্তাভাবনা তাদের সম্রাটদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দিকে মোড় নেয়। অচিরেই, বিশ্বের জনগণ বিশৃঙ্খলায় ফেটে পড়বে এবং সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে পলায়ন করবে, পরিশেষে তাদেরই প্রজারা তাদের গিলোটিনে টেনে নিয়ে যাবে। শয়তানের রাজাদের এটাই শেষ পরিণতি; অন্তিমে তাদের কেউই নিস্তার পেতে সক্ষম হবে না, তাদের সকলকেই এই পরিণতির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আজ, যারা “চতুর” তারা পিছু হঠতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয় বুঝে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা পিছু হঠে গিয়ে বিপর্যয়ের দুর্ভোগ এড়ায়। কিন্তু আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, অন্তিম সময়ে ঈশ্বর যে কার্যসাধন করেন তা মূলত মানুষের শাস্তিবিধানের কাজ, তাহলে কীভাবেই বা এই লোকগুলি রেহাই পেতে পারে? আজকের দিনটি হল প্রথম ধাপ। একদিন ব্রহ্মাণ্ডের সমস্তকিছু যুদ্ধের কলরোলে ডুবে যাবে; বিশ্বের মানুষদের কোনোদিন আর নেতা থাকবে না, সমগ্র জগত হয়ে দাঁড়াবে এক আলগা বালির স্তূপের মতো, কর্তৃত্ব করার কেউ থাকবে না, এবং মানুষ শুধুমাত্র তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে ভাবিত হবে, অন্য কারো পরোয়া করবে না, কারণ সমস্তকিছু ঈশ্বরের হস্তের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়—সেকারণেই ঈশ্বর বলেন, “সমগ্র মানবজাতি আমার ইচ্ছানুসারে বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলিকে বিখণ্ডিত করে ফেলছে।” এখানে ঈশ্বর-উল্লেখিত দেবদূতদের তূর্যধ্বনি হল এক প্রতীক—মানুষদের উদ্দেশ্যে তারা বিপদসঙ্কেত নিনাদিত করছে, আর এই তূর্য পুনর্বার ধ্বনিত হলে পৃথিবীর অন্তিম দিন এসে উপনীত হবে। সেসময়, ঈশ্বরের সকল শাস্তি সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর উপর নেমে আসবে; তা হবে এক নির্মম বিচার, এবং শাস্তির যুগের আনুষ্ঠানিক সূচনা। ইসরায়েলবাসীদের ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর প্রায়শই নানাবিধ পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে তাদের পথনির্দেশনা দান করবে, এবং একইভাবে দেবদূতেরাও তাদের কাছে গিয়ে দৃশ্যমান হবে। ইসরায়েলবাসীদের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করে তোলা হবে, এবং যেহেতু তাদের অতিকায় লাল ড্রাগনের বিষ থেকে নিজেদের মুক্ত করার পদক্ষেপটির মধ্য দিয়ে যেতে হবে না, তাই বিভিন্ন প্রকার নির্দেশনার অধীনে সঠিক পথে পা রাখা তাদের পক্ষে সহজ হবে। ইসরায়েলের ঘটনা পরম্পরা থেকে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের পরিস্থিতি টের পাওয়া যায়, এবং এর থেকেই বোঝা যায় ঈশ্বরের কার্যের পদক্ষেপগুলি কতখানি ক্ষিপ্র। “সময় এসে গেছে! আমার কাজ শুরু হবে! মানবজাতির মধ্যে আমি রাজা হিসাবে রাজত্ব করব!” অতীতে ঈশ্বর কেবল স্বর্গেই রাজত্ব করতেন। আজ তিনি ধরাধামে রাজত্ব করেন; ঈশ্বর তাঁর সকল কর্তৃত্ব ফিরিয়ে নিয়েছেন, আর সেকারণেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে সমগ্র মনুষ্যজাতি আর কখনো স্বাভাবিক মানব-জীবন যাপন করবে না, কারণ আকাশ ও পৃথিবীকে ঈশ্বর পুনর্বিন্যস্ত করবেন, এবং কোনো মানুষ এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকারী নয়। সেকারণেই ঈশ্বর মাঝেমাঝেই মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন যে “সময় এসে গেছে”। যেদিন সকল ইসরায়েলবাসীরা স্বদেশে ফিরে যাবে—যেদিন ইসরায়েল রাষ্ট্রটিকে সর্বাঙ্গীণভাবে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে—সেই দিন ঈশ্বরের মহান কার্য সম্পূর্ণতা লাভ করবে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সারা ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে মানুষজন বিদ্রোহ করবে, এবং সমগ্র বিশ্বভুবন ব্যাপী রাষ্ট্রগুলি আকাশের নক্ষত্ররাজির মতো খসে পড়বে; মুহূর্তের মধ্যে, সেগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। রাষ্ট্রগুলির সাথে মোকাবিলা করার পর, ঈশ্বর তাঁর হৃদয়ের প্রিয় রাজ্যটি নির্মাণ করবেন।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ২৬

পরবর্তী: অধ্যায় ২৮

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন