অধ্যায় ১৮
ঈশ্বরের সকল বাক্য তাঁর প্রকৃতির অংশকে ধারণ করে। ঈশ্বরের প্রকৃতিকে বাক্যের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অভিব্যক্ত করা যায় না, যা তাঁর মধ্যে যে ঠিক কতটা ঐশ্বর্য আছে তা প্রদর্শন করার পক্ষে যথেষ্ট। মানুষ যা দর্শন ও স্পর্শ করতে পারে মোটের উপর তা সীমিত, মানুষের সামর্থ্যও তা-ই। যদিও ঈশ্বরের বাক্য সুস্পষ্ট, তবুও মানুষ তা সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে অক্ষম। উদাহরণস্বরূপ এই বাক্যগুলিকে নিতে পারো: “বিদ্যুতের একটা ঝলকে, প্রতিটি প্রাণীর প্রকৃত রূপ প্রকাশিত হয়। একইভাবে, আমার আলোকে প্রদীপ্ত হয়ে মানুষ সেই পবিত্রতা ফিরে পেয়েছে একসময় তারা যার অধিকারী ছিল। আহা, পুরাতন ভ্রষ্ট পৃথিবী! অবশেষে, ক্লেদাক্ত জলে তা উল্টে পড়েছে, জলের তলায় ডুবে গিয়ে গলে কাদায় পরিণত হয়েছে!” ঈশ্বরের সকল বাক্য তাঁর সত্তাকে ধারণ করে, এবং যদিও সকল মানুষ এই বাক্যগুলির বিষয়ে অবগত, কিন্তু কেউ কখনো তাদের অর্থ বোঝে নি। ঈশ্বরের নজরে, যারা তাঁকে প্রতিরোধ করে তারা সকলেই তাঁর শত্রু, অর্থাৎ, দুষ্ট আত্মার দ্বারা যারা অধিকৃত তারা পশু। এর থেকে যে-কেউ গীর্জার প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। সকল মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা প্রদীপ্ত হয়, এবং এই আলোয়, অন্যের ভাষণ বা শাসন বা প্রত্যক্ষ অননুমোদনের পাত্র না হয়ে, কর্ম সম্পাদনের অন্য মানবিক পদ্ধতির মুখোমুখি না হয়ে, এবং অন্যের অঙ্গুলিনির্দেশের অবর্তমানে তারা নিজেদের নিরীক্ষণ করে। “আণুবীক্ষণিক দৃষ্টিকোণ” থেকে, তারা খুব স্পষ্টভাবে দেখে তাদের ভিতরে ঠিক কতখানি অসুস্থতা রয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যে সকল প্রকার আত্মা তার আদি রূপে শ্রেণীবিভক্ত ও প্রকাশিত হয়; যারা দেবদূতের আত্মার অধিকারী তারা অধিকতর আলোকিত ও প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে, সে-কারণেই ঈশ্বরের এই বাক্য, “সেই পবিত্রতা ফিরে পাওয়া একসময় তারা যার অধিকারী ছিল।” এই বাক্যগুলি ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত অন্তিম ফলাফলের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মুহূর্তে এই ফলাফল অবশ্য এখনো সম্পূর্ণভাবে অর্জন করা যাবে না—এটা কেবল একটু পূর্বাস্বাদন, যার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রত্যক্ষ করা যায়। এক বৃহৎ সংখ্যক মানুষ যে ঈশ্বরের বাক্যে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে এবং সকল মানুষের পবিত্রীকরণের ধারাবাহিক পদ্ধতিতে পর্যুদস্ত হবে তা দেখানোর জন্য এই বাক্যগুলিই যথেষ্ট। এখানে, “গলে কাদায় পরিণত হওয়া” শব্দবন্ধটি ঈশ্বরের আগুনের সাহায্যে বিশ্বকে ধ্বংস করার সাথে কোনো বৈপরীত্য প্রকাশ করে না, এবং “বিদ্যুতের ঝলক” ঈশ্বরের ক্রোধকে সূচিত করে। ঈশ্বর যখন তাঁর ভয়ানক ক্রোধের বাঁধন খুলে দেবেন, ফলস্বরূপ সারা পৃথিবী তখন যাবতীয় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, যেন একটা আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হচ্ছে। ঊর্ধ্বে আকাশের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে দেখা যাবে, পৃথিবীতে সব ধরনের দুর্দৈব ক্রমশ সমগ্র মানবজাতির সমীপবর্তী হয়, প্রতিদিন তারা আরো নিকটে আসে। ঊর্ধ্ব থেকে নিম্নের দিকে তাকালে, পৃথিবী বিভিন্ন ধরনের দৃশ্য প্রদর্শন করে, ভূমিকম্পের আগে যেমন দেখা যায় তার মতো। তরল অগ্নি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ধাবিত হয়, লাভা অবাধে প্রবাহিত হয়, পর্বত স্থানচ্যুত হয়, আর সবকিছুর উপর এক শীতল আলো ঝলমল করে। সমগ্র পৃথিবী নিমজ্জিত হয়েছে আগুনে। এ হলো ঈশ্বরের তাঁর ক্রোধকে অর্গলমুক্ত করার দৃশ্য, এবং এটা তাঁর বিচারের সময়। রক্ত-মাংসের শরীরের অধিকারী যারা তারা কেউ পালাতে পারবে না। তাই, সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস করার জন্য রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রয়োজন পড়বে না; পরিবর্তে, ঈশ্বরের শাস্তির দোলনার মধ্যে বিশ্ব “সচেতনভাবে নিজেকে উপভোগ” করবে। কেউ পালাতে পারবে না একের পর এক প্রত্যেকটি মানুষকে এই অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তার পর, সমগ্র মহাবিশ্ব আরেকবার পবিত্র প্রভায় ঝলমল করে উঠবে এবং সমগ্র মানবজাতি আরেকবার নতুন জীবন শুরু করবে। এবং মহাবিশ্বের ঊর্ধ্বে ঈশ্বর বিশ্রামরত রইবেন ও প্রতিদিন সকল মানুষকে আশীর্বাদ করবেন। স্বর্গ অসহনীয় রকমের জনমানবশূণ্য হবে না, বরং ধরণী সৃষ্টির পর থেকে যে প্রাণশক্তি সে হারিয়েছিল আবার তা ফিরে পাবে, এবং “ষষ্ঠ দিন”-এর আগমন হলে ঈশ্বর এক নতুন জীবন শুরু করবেন। ঈশ্বর ও মানবজাতি উভয়েই বিশ্রামাবস্থায় প্রবেশ করবে এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আর পঙ্কিল ও ক্লেদাক্ত থাকবে না, বরং নবায়িত হবে। এই কারণেই ঈশ্বর বলেছিলেন: “পৃথিবী আর মৃত্যুবৎ নিথর ও নিস্তব্ধ নয়, স্বর্গ আর জনশূণ্য ও বিমর্ষ নয়।” স্বর্গরাজ্যে কোনোদিন অন্যায়পরায়ণতা বা মানবিক আবেগ, বা মানবজাতির কোনো ভ্রষ্ট স্বভাব ছিল না, কারণ সেখানে শয়তানের উপদ্রব অনুপস্থিত। সকল “মানুষ” ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করতে সমর্থ, এবং স্বর্গের জীবন এক আনন্দময় জীবন। স্বর্গের সকলের ঈশ্বরসুলভ প্রজ্ঞা ও মর্যাদা রয়েছে। স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে পার্থক্যের কারণে স্বর্গের অধিবাসীদের “মানুষ” বলা হয় না; বরং ঈশ্বর তাদের “আত্মা” বলে অভিহিত করেন। এই দুটি শব্দের মধ্যে মূলগত পার্থক্য আছে—যাদের এখন “মানুষ” বলা হয় তারা শয়তানের দ্বারা কলুষিত হয়েছে, কিন্তু “আত্মারা” কলুষিত হয়নি। অন্তিমে, ঈশ্বর পৃথিবীর মানুষকে স্বর্গের আত্মাদের বৈশিষ্ট্যসমন্বিত এক সত্তায় রূপান্তরিত করবেন, এবং তখন তারা আর শয়তানের উপদ্রবের শিকার হবে না। এটাই হল এই বাক্যগুলির প্রকৃত অর্থ, “আমার পবিত্রতা সারা মহাবিশ্ব জুড়ে প্রসারিত হয়েছে।” “পৃথিবী তার আদিম অবস্থায় স্বর্গের অধিকারভুক্ত, এবং স্বর্গ পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত। মানুষ স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে সংযোগকারী রজ্জু, এবং মানুষের শুদ্ধতার কারণে, মানুষের নবায়নের কারণে, স্বর্গ আর পৃথিবীর থেকে প্রচ্ছন্ন নয়, এবং পৃথিবী আর স্বর্গের প্রতি নীরব নয়।” এ কথা বলা হয়েছে সেই মানুষদের বিষয়ে যারা দেবদূতসুলভ আত্মার অধিকারী, এবং এই মুহূর্তে, “দেবদূতরা” আরেকবার শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে এবং তাদের আদি অবস্থা ফিরে পেতে সমর্থ হবে, আর তারা তাদের দেহের কারণে স্বর্গলোক ও বিশ্বলোকের ক্ষেত্রের মধ্যে বন্টিত হবে না। পৃথিবীর “দেবদূতরা” স্বর্গের দেবদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হবে, পৃথিবীর মানুষ স্বর্গের রহস্য বিষয়ে অবগত হবে, এবং স্বর্গের দেবদূতরা মানবজগতের গুপ্তকথাগুলি জানবে। স্বর্গ ও পৃথিবী একত্রিত হবে, তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকবে না। রাজ্যের বাস্তবায়নের এটাই সৌন্দর্য। এটাই ঈশ্বর সম্পূর্ণ করবেন, এবং এর জন্যই সকল মানুষ ও আত্মা আকুল আকাঙ্খা করে। কিন্তু ধর্মীয় জগতের ব্যক্তিরা এ বিষয়ে কিছু জানে না। তারা কেবল অপেক্ষা করছে কখন রক্ষাকর্তা যীশু সাদা মেঘের উপর আবির্ভূত হয়ে তাদের আত্মাকে নিয়ে যাবেন, এবং “জঞ্জাল”-সমূহকে পৃথিবীর উপর বিক্ষিপ্ত ফেলে রেখে যাবেন (এখানে “জঞ্জাল” শব্দটি শবদেহকে নির্দেশ করছে)। এটাই কি সমস্ত মানুষের মধ্যে প্রচলিত সাধারণ ধারণা নয়? এই কারণেই ঈশ্বর বলেছিলেন: “হায়, ধর্মীয় জগৎ! পৃথিবীর বুকে আমার কর্তৃত্বের দ্বারা কীভাবে তা ধ্বংস না হয়ে পারে?” পৃথিবীতে ঈশ্বরের লোকদের সম্পূর্ণ করে তোলার কারণে ধর্মীয় জগৎ ওলট-পালট হয়ে যাবে। ঈশ্বর যে “কর্তৃত্ব”-এর কথা বলেছেন, এটাই তার প্রকৃত অর্থ। ঈশ্বর বলেছিলেন: “এমন কেউ কি আছে, যে আমার সময়ে, আমার নামকে কালিমালিপ্ত করে? সকল মানুষের সসম্ভ্রম দৃষ্টি আমায় লক্ষ্য করে, এবং, তাদের অন্তরে, গোপনে তারা আমার উদ্দেশ্যে আর্তনাদ করে।” ধর্মীয় জগতের বিনাশের ফলশ্রুতির বিষয়ে একথাই তিনি বলেছিলেন। ঈশ্বরের বাক্যের কারণে সামগ্রিকভাবে তা ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে আত্মসমর্পণ করবে, এবং একটা সাদা মেঘের অবতরণের জন্য অপেক্ষা করবে না বা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে না, পরিবর্তে বরং ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে বিজিত হবে। সেই কারণেই এই কথাগুলির অবতারণা, “তাদের অন্তরে, গোপনে তারা আমার উদ্দেশ্যে আর্তনাদ করে”—এই হবে ধর্মীয় জগতের পরিণাম, ঈশ্বর যাকে সম্পূর্ণভাবে জয় করবেন। ঈশ্বরের সর্বশক্তিমানতা এর প্রতিই নির্দেশ করে—সকল ধর্মীয় মানুষকে বিনষ্ট করা, যারা মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে বিদ্রোহীভাবাপন্ন, যাতে আর কখনো তারা তাদের এই পূর্বধারণাকে আঁকড়ে থাকতে না পারে যে তারা হয়তো ঈশ্বরকে জানে।
ঈশ্বরের বাক্য যদিও বারংবার রাজ্যের সৌন্দর্যের পূর্বাভাস দিয়েছে, এর বিভিন্ন দিকের কথা বলেছে এবং নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে এর বর্ণনা দিয়েছে, কিন্তু এখনো তারা রাজ্যের যুগের প্রত্যেকটি অবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে অভিব্যক্ত করতে পারে না কারণ মানুষের গ্রহণ করার ক্ষমতায় প্রভূত ঘাটতি আছে। তাঁর উচ্চারণের সমস্ত বাক্য বলা হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষ ফ্লুরোস্কোপের মধ্য দিয়ে, রঞ্জন-রশ্মির সাহায্য নিয়ে সেভাবে কখনো বাক্যগুলির অভ্যন্তরে তাকিয়ে দেখেনি, আর তাই তারা স্বচ্ছতা ও উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত, এবং এমনকি হতবুদ্ধিও বটে। এটাই মরদেহের সবচেয়ে বড়ো ত্রুটি। যদিও তাদের অন্তরে মানুষ ঈশ্বরকে ভালোবাসতে চায়, কিন্তু শয়তানের ব্যাঘাতের কারণে তারা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে, ঈশ্বর তাই বারংবার মানুষের অসাড় ও ক্ষুদ্রমতি হৃদয়কে স্পর্শ করেছেন যাতে তাদের পুনরুজ্জীবিত করা যায়। ঈশ্বর একমাত্র যা অনাবৃত করেন তা হল শয়তানের কদর্যতা, তাঁর বাক্য যত রূঢ়তর হয়, শয়তান তত বেশি অপমানিত হয়, মানুষের হৃদয় তত কম আবদ্ধ হয়ে ওঠে, এবং তত বেশি করে মানুষের ভালোবাসাকে জাগ্রত করা যায়। এভাবেই ঈশ্বর কার্য করেন। শয়তানকে যেহেতু অনাবৃত করা হয়েছে এবং তার প্রকৃতি যেহেতু ধরা পড়ে গেছে, তাই সে আর মানুষের হৃদয়কে কব্জা করার সাহস করে না, এবং এই কারণেই দেবদূতদের আর নাজেহাল হতে হয় না। এইভাবে, ঈশ্বরকে তারা তাদের সমগ্র হৃদয় ও মন দিয়ে ভালোবাসে। একমাত্র এই সময়েই এটা স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে, দেবদূতরা প্রকৃতিগতভাবে ঈশ্বরের অনুগত ও তাঁকে ভালোবাসে। একমাত্র এই পথেই ঈশ্বরের ইচ্ছা সাধিত হতে পারে। “সকল মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে, তাদের হৃদয়গর্ভে এখন আমার জন্য একটা স্থান আছে। মানুষের মধ্যে আমি আর অনীহা বা প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হবো না, কারণ আমার মহান কার্য ইতিমধ্যেই সমাধা হয়েছে, এবং তা আর ব্যাহত নয়।” উপরে যা বিবৃত হয়েছে, এই হল তার অর্থ। শয়তানের হয়রানির কারণে মানুষ ঈশ্বরকে ভালোবাসার অবকাশ পায় না এবং সবসময় পার্থিব বিষয়ে বিজড়িত থাকে ও শয়তানের দ্বারা প্রতারিত হয়ে বিভ্রান্তিবশত কাজ করে। এই কারণেই ঈশ্বর বলেছেন যে মানবজাতি “জীবনের কত দুখঃকষ্টের মধ্য দিয়ে, বিশ্বের কতশত অবিচারের মধ্য দিয়ে, মানব জগতের কত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু এখন তারা আমার আলোর মধ্যে বাস করে। বিগতদিনের অবিচারের কথা চিন্তা করে কে-ই বা ক্রন্দন করে না?” মানুষ যখন এই কথাগুলো শোনে, তারা অনুভব করে যেন ঈশ্বর তাদের দুঃখকষ্টের সাথী, যেন তাদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করছেন, এবং, সেই সময়ে, তাদের অভিযোগ ভাগ করে নিচ্ছেন। তারা সহসা মানবজগতের বেদনা অনুভব করে এবং ভাবে: “কথাটা কত বাস্তব—এই পৃথিবীতে আমি কখনো কিছু উপভোগ করিনি। মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত, আমি মানবজীবনের অভিজ্ঞতা বয়ে চলেছি এবং আমি কিছুই অর্জন করিনি, কেবল অশেষ যন্ত্রণা ভোগ করেছি। সবটাই এতো রিক্ত! আর এখন আমি শয়তানের হাতে এতো কলুষিত! ওহো! ঈশ্বরের পরিত্রাণ না পেলে, মৃত্যুর সময়, আমার গোটা জীবনটা কি বিফলেই যাপিত হতো না? মানবজীবনের কি কোনো অর্থ আছে? আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে ঈশ্বর বলেছেন সূর্যের নীচে সবকিছুই শূণ্য। ঈশ্বর যদি আজ আমায় আলোকিত না করতেন, আমি এখনো অন্ধকারেই থাকতাম। কী জঘন্য ব্যাপার!” এই পর্যায়ে, তাদের হৃদয়ে এক সংশয়ের উদয় হয়: “ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি যদি আমি লাভ করতে না পারি, তাহলে কীভাবে আমি জীবনের অভিজ্ঞতা অব্যাহত রাখবো?” এই বাক্যগুলি যারা পাঠ করবে, প্রার্থনা করার সময় তাদের সকলের চোখেই জল আসবে। মানুষের অন্তরাত্মা এমনই। এই বাক্যগুলি পাঠ করার পরেও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানো কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়, যদি না তারা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়। প্রতিদিন, ঈশ্বর সকল ধরনের মানুষের পরিস্থিতি প্রকাশিত করেন। কখনো কখনো, তাদের হয়ে তিনি ক্ষোভ উগরে দেন। মাঝে মাঝে, মানুষকে তিনি কোনো বিশেষ পরিস্থিতিকে জয় করতে ও সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে সাহায্য করেন। মাঝে মাঝে মানুষকে তিনি তাদের “রূপান্তর” অঙ্গুলিনির্দেশ করে দেখিয়ে দেন। তা না হলে, জীবনে তারা কতটা বিকাশ লাভ করেছে মানুষ তা জানতে পারতো না। মাঝে মাঝে ঈশ্বর মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেন, আবার কখন তিনি তাদের অপর্যাপ্ততা ও ত্রুটির প্রতি ইঙ্গিত করেন। কখনো তাদের কাছে তিনি নতুন চাহিদা রাখেন, আবার কখনো তারা তাঁকে কতখানি উপলব্ধি করে তার মাত্রাকে নির্দেশ করেন। যা-ই হোক, ঈশ্বর এ-ও বলেছেন: “অনেক মানুষের মুখ থেকে আমি আন্তরিকতাপূর্ণ বাক্য শুনেছি, অনেক মানুষের কাছে তাদের যন্ত্রণার বেদনার্ত অভিজ্ঞতার বিবরণ শুনেছি; বহু মানুষকে আমি দেখেছি, কঠোরতম পরিস্থিতির মধ্যেও, অব্যর্থভাবে আমাকে তাদের আনুগত্য নিবেদন করে, এবং অনেককে লক্ষ্য করেছি, প্রস্তরাকীর্ণ পথে চলার সময়, প্রস্থানের একটা পথ খোঁজে।” এটি ইতিবাচক চরিত্রের একটি বর্ণনা। “মানব ইতিহাসের নাট্য”-এর প্রতিটি পর্বে, শুধু যে ইতিবাচক চরিত্র ছিল তা নয়, নেতিবাচক চরিত্রও ছিল। তাই, ঈশ্বর এই নেতিবাচক চরিত্রগুলির কদর্যতা উদ্ঘাটনে প্রবৃত্ত হন। তাই, কেবলমাত্র “বিশ্বাসঘাতকদের” সাথে তাদের বৈপরীত্যপ্রদর্শনের মাধ্যমেই “ন্যায়পরায়ণ মানুষদের” অনমনীয় আনুগত্য ও নির্ভীক সাহসিকতা উদ্ঘাটিত হয়। সকল মানুষের জীবনে, নেতিবাচক উপাদান আছে, এবং ব্যতিক্রমহীন ভাবে, ইতিবাচক উপাদানও আছে। সকল মানুষের বিষয়ে সত্যকে প্রকাশ করার জন্য ঈশ্বর উভয়কেই ব্যবহার করেন, যাতে বিশ্বাসঘাতকরা মাথা নত করে তাদের পাপ স্বীকার করে, এবং যাতে ন্যায়পরায়ণ মানুষরা, উৎসাহদানের ফলে, অনুগত রয়ে যায়। ঈশ্বরের বাক্যের ব্যঞ্জনার্থ খুবই গভীর। কখনো কখনো সেগুলি পাঠ করার পর মানুষ হাসিতে ফেটে পড়ে, আবার কখনো, তারা কেবল নীরবে মাথা নত করে থাকে। মাঝে মাঝে তারা স্মৃতিচারণ করে, কখনো বা বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে ও তাদের পাপ স্বীকার করে, কখনো তারা হাতড়ে বেড়ায়, এবং কখনো অন্বেষণ করে। মোটের উপর, যে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঈশ্বর কথা বলেন তার কারণে মানুষের প্রতিক্রিয়াও পাল্টে যায়। কোনো মানুষ যখন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে, তখন কখনো হয়তো পার্শ্ববর্তী মানুষরা ভ্রান্তিবশত এমনকি এ-ও বিশ্বাস করতে পারে যে লোকটা মানসিকভাবে অসুস্থ। এই বাক্যগুলি বিবেচনা করো: “আর তাই, পৃথিবীতে আর বিবাদমূলক বিরোধ নেই, এবং, আমার বাক্যের নিষ্ক্রমণের পর, আধুনিক যুগের বিবিধ ‘অস্ত্র’ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।” এই “অস্ত্র” শব্দটা একা সারাদিনের হাসির ইন্ধন যোগাতে পারে, এবং কেউ যখন ঘটনাক্রমে “অস্ত্র” শব্দটা স্মরণ করবে, মনে মনে তারা বেজায় হাসবে। তাই নয় কি? শব্দটা দেখে তুমি কীকরে না হেসে থাকতে পারছো?
যখন তুমি হাসো, মানবজাতির কাছে ঈশ্বরের কী চাহিদা তা উপলব্ধি করতে ভুলে যেও না, এবং গীর্জার প্রকৃত অবস্থা অবলোকন করতে ভুলে যেও না: “সমগ্র মানবজাতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং এক নতুন জীবনে পদার্পণ করেছে। নতুন একটা পরিমণ্ডলে বাস করতে এসে, প্রচুর সংখ্যক মানুষ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে, মনে করে যেন তারা সম্পূর্ণ একটা নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে, আর এই কারণে, তারা তাদের বর্তমান পরিবেশে তৎক্ষণাৎ মানিয়ে নিতে বা তক্ষুনি সঠিক পথে প্রবেশ করতে পারে না।” এটাই গীর্জার সাম্প্রতিক প্রকৃত অবস্থা। বেশি উতলা হয়ে সকল মানুষকে অচিরাৎ সঠিক পথে প্রবেশ করাতে যেও না। পবিত্র আত্মার কার্য একবার একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে গেলে, সকল মানুষ তাদের অজান্তেই এতে প্রবেশ করবে। ঈশ্বরের বাক্যের সারসত্য উপলব্ধি করলেই তুমি জানতে পারবে তাঁর আত্মা কোন পর্যায় পর্যন্ত কার্য করেছেন। ঈশ্বরের অভিপ্রায় হল: “মানুষের অধার্মিকতা অনুযায়ী আমি শুধু উপযুক্ত একটা ‘শিক্ষা’-র বিধান দিই, যেটা প্রত্যেককে সঠিক পথে পা ফেলার সামর্থ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ভালো।” এটা ঈশ্বরের কথা বলার ও কাজ করার পদ্ধতি, এবং এটা মানবজাতির অনুশীলনের নির্দিষ্ট পথও বটে। এরপর, তিনি মানুষের জন্য মানবজাতির আরেকটি অবস্থার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন: “আমার মধ্যে যে পরমানন্দ আছে মানুষ যদি তা উপভোগ করতে অনিচ্ছুক হয়, তাহলে তারা যেখানে তাদের হৃদয়কে স্থাপন করেছে আমি শুধু তা মেনে নিতে পারি এবং তাদের অতল গহ্বরে পাঠাতে পারি।” ঈশ্বর পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে কথা বলেছেন এবং মানুষের অভিযোগ করার সামান্যতম অবকাশ রাখেননি। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য ঠিক এখানেই। ঈশ্বর মানুষের উদ্দেশ্যে সর্বদাই অকপটে ও অকুণ্ঠচিত্তে কথা বলে চলেছেন। ঈশ্বর যা-কিছু বলেন তার সমস্তটার মধ্যেই তাঁর আন্তরিক হৃদয় পরিলক্ষিত হয়, মানুষকে যা তাঁর হৃদয়ের সাপেক্ষে তাদের নিজেদের হৃদয়কে পরিমাপ করতে প্রণোদিত করে, এবং তাঁর কাছে তাদের হৃদয় উন্মোচিত করতে সমর্থ করে, যাতে তিনি জানতে পারেন ইন্দ্রধনুকের বর্ণচ্ছটার ঠিক কোনখানে তাদের অবস্থান। ঈশ্বর কখনো কোনো ব্যক্তির বিশ্বাস বা প্রেমকে অভিনন্দিত করেননি, বরং সবসময় তিনি মানুষের কাছে চাহিদা ব্যক্ত করেছেন এবং তাদের কদর্য দিককে অনাবৃত করেছেন। এটাই প্রমাণ করে মানুষের “আত্মিক উচ্চতা” কতটা ক্ষুদ্র এবং তাদের “মানসিক গঠন”-এর মধ্যে কতটা ঘাটতি আছে। তাদের এই অসম্পূর্ণতাগুলি পূরণ করার জন্য তাদের আরো “মানসিক চর্চা”-র প্রয়োজন, এই কারণেই ঈশ্বর মানুষের উপর ক্রমাগত “তাঁর ক্রোধকে অর্গলমুক্ত করেন”। একদিন, ঈশ্বর যখন মানবজাতির বিষয়ে সামগ্রিক সত্য প্রকাশিত করে ফেলবেন, মানুষ সেদিন সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে, এবং ঈশ্বর হবেন উদ্বেগশূণ্য। মানুষ আর ঈশ্বরকে স্তোকবাক্যে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে না, এবং তিনিও আর তাদের “শিক্ষাদান” করবেন না। এর পর থেকে, মানুষ “স্বাধীন জীবনযাপন” করতে সমর্থ হবে, কিন্তু এখনো সে সময় আসেনি। মানুষের মধ্যে এখনো অনেককিছু রয়ে গেছে যাকে “নকল” বলা যায়, এবং আরো বেশ কয়েক দফা পরীক্ষার প্রয়োজন, আরো বেশ কিছু “চেকপয়েন্ট” যেখানে তাদের “শুল্ক” যথাযথভাবে মিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এখনও যদি কোনো নকল পণ্য রয়ে যায়, তাহলে তাদের বাজেয়াপ্ত করা হবে যাতে তা বিক্রীত না হয়, এবং তারপর চোরাচালান করা সামগ্রীর ওই গুচ্ছটিকে বিনষ্ট করা হবে। এটা কি কার্য সম্পাদনের একটা ভালো পদ্ধতি নয়?