অধ্যায় ১৯

মানুষের কল্পনায় মনে হয়, ঈশ্বর বুঝি অত্যুচ্চ এবং বুঝি তিনি অতল। মনে হয় যেন ঈশ্বর মানুষের মাঝে বসবাস করেন না, এবং যেন তিনি এত সুউচ্চ বলেই মানুষকে অবজ্ঞা করেন। অবশ্য, ঈশ্বর, মানুষের পূর্বধারণাসমূহকে ধূলিসাৎ করেন ও সেগুলির সমস্তকে নির্মূল করে “কবরে” সমাধিস্থ করেন, যেখানে তা ভস্মে পরিণত হয়। মানুষের পূর্বধারণার প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব মৃতব্যক্তির প্রতি তাঁর মনোভাবের অনুরূপ, ইচ্ছামতো তিনি সেগুলিকে সংজ্ঞায়িত করেন। দেখে মনে হয় “পূর্বধারণাসমূহের” কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না; তাই, বিশ্বসৃষ্টির পর থেকে আজ অবধি ঈশ্বর এই কার্য সম্পাদন করে চলেছেন এবং কখনোই স্থগিত হন নি। তাদের ঐহিক দেহের কারণে, মানুষ শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়, এবং পৃথিবীর বুকে শয়তানের ক্রিয়াকলাপের কারণে, মানুষ তাদের অভিজ্ঞতাসূত্রে যাবতীয় প্রকারের পূর্বধারণা গঠন করে। একেই বলে “প্রাকৃতিক গঠন”। মর্ত্যলোকে ঈশ্বরের কার্যের এটিই হল শেষ পর্যায়, তাই তাঁর কার্যের পন্থা চরমে পৌঁছেছে, এবং মানুষের প্রশিক্ষণকে তিনি তীব্রতর করে তুলছেন, যাতে তাঁর অন্তিম কার্যের দ্বারা তাদের সম্পূর্ণ করা যায়, এবং পরিণামে ঈশ্বরের অভিপ্রায় পূর্ণ করে। পূর্বে, মানুষের মাঝে শুধুমাত্র ঈশ্বরের আত্মার আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তি ছিল, কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা কোনো বাক্য উক্ত হয়নি। ঈশ্বর যখন স্বকণ্ঠে কথা বললেন, তখন সকলে বিস্মিত হয়েছিল, এবং আজকের বাক্যগুলি আরো বেশি বিহ্বলকর। এগুলির অর্থের তল পাওয়া দুরূহতর, এবং মানুষকে দেখে স্তম্ভিত মনে হয়, কারণ তাঁর বাক্যের পঞ্চাশ শতাংশকে উদ্ধৃতিচিহ্নের মধ্যেই অবস্থান করতে দেখা যায়। “আমি যখন কথা বলি, একাত্ম অভিনিবেশ সহকারে মানুষ আমার কণ্ঠস্বর শ্রবণ করে; যদিও, আমি যখন নীরব হয়ে যাই, তারা আবার তাদের নিজস্ব ‘কারবার’ শুরু করে।” এই অনুচ্ছেদে উদ্ধৃতিচিহ্নের মধ্যে একটি শব্দ দেখা যায়। ঈশ্বর যত বেশি করে কৌতুকচ্ছলে কথা বলেন, যেমন তিনি এখানে করেছেন, তত বেশি করে তা মানুষকে বাক্যগুলি পাঠ করার দিকে আকৃষ্ট করতে পারে। মানুষ যখন নিরুদ্বেগ থাকে, তখন তারা তাদের মোকাবিলা করাটা মেনে নিতে পারে। যদিও প্রাথমিকভাবে, এর উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের বাক্যকে উপলব্ধি না করলে অধিক মানুষকে নিরুৎসাহিত বা নিরাশ হওয়া থেকে নিবৃত্ত করা। শয়তানের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের লড়াইয়ে এটি এক কৌশল। একমাত্র এভাবেই মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আগ্রহী রইবে, এবং খেই ধরতে না পারলেও এগুলির প্রতি মনোযোগ প্রদান অব্যাহত রাখবে। কিন্তু, তাঁর যে সকল বাক্য উদ্ধৃতি চিহ্ন বিরহিত সেগুলিরও অসম্ভব মনোহারিত্ব আছে, আর তাই এগুলি আরো বেশি লক্ষ্যণীয়, এবং এগুলি ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে আরো বেশি ভালোবাসতে ও নিজেদের অন্তর দিয়ে তাঁর বাক্যের মিষ্টতাকে অনুভব করতে মানুষকে প্রণোদিত করে। ঈশ্বরের বাক্যগুলি বিভিন্ন রূপে আগত হয় বলে, এবং সেগুলি সমৃদ্ধ ও বিচিত্র বলে, এবং ঈশ্বরের বিবিধ বাক্যে ব্যবহৃত বিশেষ্যগুলির ক্ষেত্রে কোনো পুনরাবৃত্তি নেই বলে, মানুষ, তাদের তৃতীয় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে, অনুভব করে যে ঈশ্বর চিরন্তন এবং কখনোই তিনি পুরাতন নন। উদাহরণস্বরূপ: “মানুষকে আমি নিছক “উপভোক্তা” হতে বলি না; একই সঙ্গে তাদের আমি সেই ‘উৎপাদক’ হতেও বলি যারা শয়তানকে পরাভূত করে।” ওই বাক্যে “উপভোক্তা” ও “উৎপাদক” শব্দগুলি অর্থের দিক দিয়ে পূর্বে বহুবার কথিত কিছু শব্দের অনুরূপ, কিন্তু ঈশ্বর অনমনীয় নন; বরং, মানুষকে তিনি তাঁর সতেজতার বিষয়ে সচেতন করে তোলেন এবং এভাবে ঈশ্বরের ভালোবাসাকে মহামূল্য জ্ঞান করতে বাধ্য করান। ঈশ্বরের বক্তব্যের কৌতুকরস তাঁর বিচার ও মানুষের কাছে তাঁর চাহিদাগুলিকে ধারণ করে। ঈশ্বরের সকল বাক্যের উদ্দেশ্য আছে বলে, সেগুলির অর্থ আছে বলে, কেবলমাত্র পরিবেশকে লঘু করে তোলা বা মানুষকে অট্টহাস্যে মুখর করে তোলা তাঁর কৌতুকের একমাত্র লক্ষ্য নয়, নিছক তাদের পেশিগুলিকে আরাম দেওয়াও এর উদ্দেশ্য নয়। পরিবর্তে, ঈশ্বরের কৌতুকের অভিপ্রায় হল মানুষকে পাঁচ হাজার বছরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করা, যাতে তারা আর কখনো বাঁধা না পড়ে, যাতে ঈশ্বরের বাক্যকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তারা অধিক সামর্থ্যবান হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের পদ্ধতি হল ওষুধকে গলা দিয়ে নামাতে তাতে এক চামচ চিনি ব্যবহার করা; মানুষকে জোর করে তিনি তিক্ত ঔষধ গিলতে বাধ্য করেন না। মিষ্টত্বের মধ্যে তিক্ততা আছে, এবং তিক্ততার মধ্যেও মিষ্টত্ব রয়েছে।

“পূর্বদিগন্তে যখন আলোর এক আবছা দীপ্তি প্রতিভাত হয়, ব্রহ্মাণ্ডের সকল মানুষ তখন এর দিকে আরেকটু বেশি মনোযোগ দেয়। মানুষ আর নিদ্রায় নিমগ্ন না থেকে পূর্বদিকের এই আলোর উৎসকে পর্যবেক্ষণ করতে এগিয়ে যায়। তাদের সীমিত ক্ষমতার কারণে, এখনো পর্যন্ত কেউই আলোর উৎপত্তিস্থলটি দেখতে সমর্থ হয়নি।” ব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র এটি সংঘটিত হচ্ছে, কেবল ঈশ্বরের সন্ততি ও তাঁর লোকজনের মধ্যেই নয়। ধর্মীয় পরিমণ্ডলের মানুষ ও অবিশ্বাসী লোকজন সকলেরই এই প্রতিক্রিয়া হয়। যে মুহূর্তে ঈশ্বরের আলোক দীপ্যমান হয়, তাদের প্রত্যেকের হৃদয় ক্রমশ পরিবর্তিত হয়, এবং তাদের অজ্ঞাতসারেই তারা আবিষ্কার করতে শুরু করে যে তাদের জীবন নিরর্থক, মানবজীবন মূল্যহীন। মানুষ ভবিষ্যতের অন্বেষণ করে না, আগামীদিনের কথা তারা বিবেচনা করে না, বা অনাগত কালের বিষয়েও তারা উদ্বিগ্ন নয়; বরং, তারা এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকে যে, “তরুণ” থাকতে থাকতেই তাদের আরো বেশি করে পান-ভোজন করা উচিত, এবং অন্তিম দিনটির আগমন পর্যন্ত এটুকুই যথেষ্ট পাওয়া। মানুষের বিশ্বকে পরিচালনা করার কিছুমাত্র বাসনা নেই। বিশ্বের প্রতি মানবজাতির ভালোবাসার প্রাণশক্তি “শয়তান” সম্পূর্ণরূপে হরণ করেছিল, কিন্তু মূল বিষয়টি যে কী, তা কেউই জানে না। তারা কেবল এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে পরস্পরকে সংবাদ জ্ঞাপন করতে পারে, কারণ এখনো ঈশ্বরের দিন আসেনি। একদিন, সকলেই যাবতীয় দুর্জ্ঞেয় রহস্যের উত্তর পেয়ে যাবে। ঈশ্বর ঠিক এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন, “মানুষ তখন সুসুপ্তি ও স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠে, এবং কেবল তখনই তারা উপলব্ধি করে যে আমার দিবস ক্রমে ক্রমে তাদের নিকট সমাগত হয়েছে।” সেই দিনটি যখন আসবে, ঈশ্বরের সকল লোকজন তখন শ্যামল পল্লবরাজির মতো হয়ে উঠবে “যতদিন আমি পৃথিবীতে অধিষ্ঠিত আছি, আমার নিমিত্ত তাদের নিজস্ব ভূমিকা পালনের জন্য তারা অপেক্ষারত।” ঈশ্বর তাঁর বক্তব্য উচ্চারণ করার পর চীনদেশে ঈশ্বরের লোকজনের অনেকেই এখনো পুনরায় রোগাক্রান্ত হয়, এবং সেকারণেই ঈশ্বর বলেন, “তবু, যা সত্য তার পরিবর্তনে অক্ষম হওয়ায়, আমার দণ্ডাদেশ ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করা ভিন্ন আর কিছুই তারা করে উঠতে পারে না।” তাদের মধ্যে তখনো এমন কিছু মানুষ রয়ে যাবে যারা বহিষ্কৃত হবে—সবকিছুই যে অপরিবর্তিত রইবে, তা নয়। বরং, একমাত্র পরীক্ষিত হওয়ার পরেই মানুষ আদর্শমান অর্জন করতে পারে, যার মাধ্যমে তাদের “গুণগত মানের শংসাপত্র” প্রদান করা হয়; তা না হলে, তারা আবর্জনার স্তূপের জঞ্জালে পরিণত হবে। ঈশ্বর ক্রমাগত মানুষের প্রকৃত অবস্থার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেন, যাতে মানুষ উত্তরোত্তর আরো বেশি করে ঈশ্বরের রহস্যময়তাকে অনুভব করতে পারে। “যদি তিনি ঈশ্বর না-ই হবেন, তাহলে কীভাবে তিনি আমাদের প্রকৃত অবস্থা এত ভালো করে জানতে সক্ষম হলেন?” তবু, মানুষের দুর্বলতার কারণে, “মানুষের হৃদয়ে, আমি মহিমান্বিতও নই, আবার নিতান্ত সামান্যও নই। তাদের কাছে, আমার অস্তিত্ব থাকুক কি না থাকুক তাতে কোনো ফারাক পড়ে না।” সম্যকভাবে এটাই কি সকল মানুষের বাস্তবের সঙ্গে সবচেয়ে সুপ্রযুক্ত পরিস্থিতি নয়? মানুষের চিন্তায়, যখন তারা তাঁর সন্ধান করে তখনই ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, এবং যখন তারা সন্ধান করে না তখন তিনি অস্তিত্বহীন। বাক্যান্তরে, যে মুহূর্তে মানুষের ঈশ্বরের সহায়তার প্রয়োজন হয় তখনই তিনি তাদের অন্তরে বিরাজ করেন, কিন্তু যখন তাদের প্রয়োজন ফুরায়, তখন আর তাঁর অস্তিত্ব থাকে না। মানুষের হৃদয়ের অন্তরে এই-ই রয়েছে। বাস্তবে, সমস্ত “নাস্তিক” সমেত পৃথিবীর সকলে এরকমই চিন্তা করে, এবং তাদের ঈশ্বর-বিষয়ক “ভাবমূর্তি”-ও আবছা ও অস্বচ্ছ।

“এই কারণেই, পর্বতসমূহ স্থলভূমির উপর অবস্থিত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সীমানা হয়ে ওঠে, বিভিন্ন ভূখণ্ডের মানুষগুলিকে বিচ্ছিন্ন রাখার ক্ষেত্রে জলরাশি প্রতিবন্ধকের কাজ করে, এবং বায়ু পৃথিবীর উপরিস্থ পরিসরে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে প্রবহমান বস্তু হয়ে ওঠে।” বিশ্বসৃষ্টির সময়কালে ঈশ্বর এই কার্যই সম্পন্ন করেছিলেন। এখানে এর উল্লেখ মানুষের কাছে হতবুদ্ধিকর: এমন কি সম্ভব, যে ঈশ্বর আরেকটি বিশ্ব সৃজন করতে চান? এটা বলা ন্যায্য যে: যতবার ঈশ্বর বক্তব্য রাখেন, তাঁর বাক্যসমূহে বিশ্বের সৃষ্টি, ব্যবস্থাপনা, এবং বিনাশের প্রসঙ্গ থাকে; কেবল বক্তব্যগুলি কখনো স্পষ্ট, এবং কখনো বা সেগুলি অস্পষ্ট। ঈশ্বরের সকল ব্যবস্থাপনা তাঁর বাক্যের অঙ্গীভূত; কেবল মানুষ সেগুলি আলাদা করে চিনে উঠতে পারে না। যে আশীর্বাদ ঈশ্বর মানুষকে অর্পণ করেন তাদের বিশ্বাসকে তা শতগুণে বিকশিত করে। বাইরে থেকে, মনে হয় ঈশ্বর যেন তাদের কাছে কোনো অঙ্গীকার করছেন, কিন্তু সারমর্মগতভাবে, এ হল তাঁর রাজ্যের লোকজনের কাছে ঈশ্বরের চাহিদার পরিমাপ। যারা ব্যবহারের উপযুক্ত তারা টিকবে, আর যারা নয়, স্বর্গ-প্রেরিত বিপর্যয় তাদের গ্রাস করবে। “আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া বজ্রনিনাদ মানুষদের আঘাত করবে; উত্তুঙ্গ পর্বতরাজি পতনকালে তাদের প্রোথিত করবে; ক্ষুৎকাতর বন্য জন্তুরা তাদের গোগ্রাসে গিলে খাবে; এবং উত্তাল সমুদ্র তাদের ঘিরে ফেলে নিমজ্জিত করবে। মানুষ যখন ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত হবে, তখন তাদের মধ্য থেকে উদ্ভূত দুর্যোগে সকল মানুষ নিজেদের বিনাশ প্রার্থনা করবে।” এই “বিশেষ ব্যবহার” তাদের সাথেই করা হবে যারা কাঙ্ক্ষিত মানের অধিকারী নয়, এবং যারা পরবর্তীকালে ঈশ্বরের রাজ্যে পরিত্রাণ লাভ করবে না। ঈশ্বর যত বেশি করে এজাতীয় বাক্য উচ্চারণ করেন যে, “তোমরা নিশ্চিতভাবে, আমার আলোকের পথপ্রদর্শনের অধীনে, অন্ধকারের বাহিনীর নাগপাশ ছিন্ন করে বিনির্গত হবে। অন্ধকারের মধ্যে, তুমি নিশ্চয়ই যে আলো তোমাদের পথপ্রদর্শক সেই আলোকে হারিয়ে ফেলবে না,” মানুষ তত বেশি করে নিজেদের শ্রদ্ধালাভের উপযুক্ততার বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে; সে অর্থে, নতুন জীবনের সন্ধানে তারা অধিকতর বিশ্বাসের অধিকারী হয়। ঈশ্বরের কাছে মানুষের প্রার্থনা অনুসারে তিনি তাদের সংস্থানের যোগান দেন। তিনি তাদের একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত অনাবৃত করার পর, তিনি তাঁর বাচনভঙ্গী পরিবর্তিত করেন, সর্বোত্তম ফলাফল লাভের উদ্দেশ্যে এক আশীর্বাদের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করেন। মানুষের কাছে এভাবে চাহিদা রাখার মাধ্যমে আরো ব্যবহারিক ফল লব্ধ হয়। যেহেতু সকল মানুষ তাদের পরিপূরক মানুষদের সঙ্গে ব্যবসায়িক কথাবার্তা চালাতে ইচ্ছুক—ব্যবসায় তারা সবাই অতি সুচারু—তাই এই বাক্যগুলি উচ্চারণের মাধ্যমে ঈশ্বর ঠিক এই লক্ষ্যের দিকেই অগ্রসর হন। তাহলে, “আসোয়ান”-এর বিষয়বস্তুটি কী? এখানে ঈশ্বর পৃথিবীতে শয়তানের দ্বারা কলুষিত রাজ্যটির প্রতি নির্দেশ করেন না, বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত সকল দেবদূতের এক সমাবেশের প্রতি নির্দেশ করেন। “দৃঢ় ও অকম্পিতভাবে দণ্ডায়মান হবে” বাক্যাংশটি ইঙ্গিত করে যে দেবদূতগুলি শয়তানের সকল শক্তিকে তছনছ করে দেবে, এই ভাবে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে আসোয়ান রাজ্য স্থাপন করবে। তাই, আসোয়ান শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল পৃথিবীতে কর্মরত সকল দেবদূতের এক সমাবেশ, এবং এখানে যে দেবদূতগুলি পৃথিবীতে রয়েছে তাদের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং, পৃথিবীর বুকে পরবর্তীকালে যে রাজ্যটি বিরাজ করবে তাকে “আসোয়ান” নামে ডাকা হবে, “রাজ্য” নামে নয়। মেদিনীবক্ষে “রাজ্য” কথাটির কোনো প্রকৃত অর্থ নেই; সারমর্মগত ভাবে, তা হল আসোয়ান। এইভাবে, একমাত্র আসোয়ানের সংজ্ঞার সাথে সম্বন্ধযুক্ত করেই কোনো ব্যক্তি এই বাক্যটির প্রকৃত অর্থ জানতে পারে, “নিশ্চিতরূপে তুমি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে আমার মহিমা বিকিরণ করবে।” এটি ভবিষ্যৎ সময়ে পৃথিবীর সকল মানুষের পদমর্যাদাক্রমিক অবস্থানকে প্রতিপন্ন করে। পৃথিবীর সকল মানুষের শাস্তিভোগের অবসান হলে, আসোয়ানের সকল লোকজন রাজা হয়ে তাদের শাসন করবে। আসোয়ানের লোকজনের ব্যবস্থাপনার কারণে পৃথিবীতে সকলকিছু স্বাভাবিকভাবে ক্রিয়াশীল থাকবে। এ হল পরিস্থিতিটির এক খসড়া চিত্রায়ণ মাত্র। সকল মানুষ ঈশ্বরের রাজ্যে অধিষ্ঠান করবে, যার অর্থ তাদের আসোয়ানে রাখা হবে। পৃথিবীর মানুষ দেবদূতদের সঙ্গে বার্তাবিনিময় করতে সমর্থ হবে। সেই অর্থে, স্বর্গ ও পৃথিবী সংযুক্ত রইবে; বা, প্রকারান্তরে বললে, পৃথিবীর সকল মানুষ, স্বর্গের দেবদূতদের মতোই, ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত হবে ও তাঁকে ভালোবাসবে। সেই সময়ে, পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে ঈশ্বর প্রকাশ্যে আবির্ভূত হবেন এবং তাদের চর্মচক্ষে তাঁর প্রকৃত অবয়বকে দর্শন করার সুযোগ দান করবেন, এবং যে কোনো সময় তিনি তাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ১৮

পরবর্তী: অধ্যায় ২০

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন