অধ্যায় ১

ঠিক যেমন ঈশ্বর বলেছিলেন, “আমার বাক্যসমূহের মূল উপলব্ধি করতে কেউই সক্ষম নয়, এবং সেগুলির উচ্চারণের পশ্চাতে নিহিত আমার উদ্দেশ্যও তাদের অজানা”, ঈশ্বরের আত্মার পথনির্দেশনা না থাকলে, এবং তাঁর উচ্চারণসমূহের আগমন না ঘটলে, সকল মানুষ তাঁর শাস্তির দরুন ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো। সমুদয় মানুষের পরীক্ষা নিতে ঈশ্বর এত দীর্ঘ সময় নিয়েছেন কেন? কেন সুদীর্ঘ পাঁচ মাস লাগলো? সুনির্দিষ্টভাবে এটিই আমাদের সহভাগিতার কেন্দ্রীয় বিষয়, একই সঙ্গে ঈশ্বরের প্রজ্ঞার এক কেন্দ্রবিন্দুও বটে। নিম্নলিখিত বক্তব্যকে আমরা স্বতঃসিদ্ধ হিসাবে গ্রহণ করতে পারি: মানুষকে বিচার করার এই সময়কালটি না থাকলে, এবং ভ্রষ্ট মানবজাতির উপর ঈশ্বরের কঠোর আঘাত, হত্যা, ও নিষ্ঠুরভাবে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া না থাকলে, যদি গির্জার নির্মাণ আজ অবধি অব্যাহত থাকতো, তাহলে ফলাফল কী হতো? তাই প্রথম বাক্যেই ঈশ্বর সোজা মূল বিষয়ে প্রবেশ করেছেন, সরাসরি এই কয়েক মাসের কার্যের কাঙ্ক্ষিত প্রভাবের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেছেন—বস্তুতই তিনি প্রথম আঘাতেই রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছেন! এই কয়েক মাসের সময়কালব্যাপী ঈশ্বরের ক্রিয়াকর্মের প্রজ্ঞা এতেই যথেষ্টরূপে প্রতিপন্ন হয়: এই কার্যকলাপগুলি বিচারের মধ্যে দিয়ে সকলকে শিখতে সক্ষম করেছে কীভাবে সমর্পণ করতে হয় এবং কেমন করে আন্তরিকতার সাথে নিজেদের ব্যয় করতে হয়, একই সঙ্গে তা শিখিয়েছে কী করে যন্ত্রণাক্লিষ্ট পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে আরো ভালোভাবে জানা যায়। মানুষ যত বেশি হতাশ বোধ করে, তত ভালোভাবে তারা নিজেদেরকে জানতে পারে। এবং সত্যি বলতে, যত বেশি করে তারা যন্ত্রণাপূর্ণ পরিমার্জনের সম্মুখীন হয়, তত বেশি তারা নিজেদের ভ্রষ্টতার বিষয়ে অবহিত হয়, শেষ পর্যন্ত তারা এই উপলব্ধিতে উপনীত হয় যে এমনকি ঈশ্বরের সেবা-প্রদানকারী হওয়ার যোগ্যতাও তাদের নেই, এবং সেবা-প্রদানের অর্থ হল তাঁর দ্বারা উন্নীত হওয়া। এবং সেকারণেই, এই ফলাফল অর্জিত হওয়ার পর, মানুষ যখন নিজের প্রতিটি অঙ্গকে নিঃশেষে ব্যবহার করে ফেলেছে, তখনই ঈশ্বর কোনোকিছু গোপন না করে সরাসরি করুণার স্বরে মুখর হয়ে ওঠেন। অনায়াসেই এটি প্রত্যক্ষ করা যায় যে এই কয়েক মাসের পর, ঈশ্বরের কার্য-পদ্ধতি বর্তমান সময়টিকে তার সূচনাবিন্দু হিসাবে গ্রহণ করেছে; এই বিষয়টি তিনি সকলের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করে তুলেছেন। অতীতে ঈশ্বর যেহেতু প্রায়শই বলেছেন যে “ঈশ্বরের লোক বলে বিদিত হওয়ার অধিকার অর্জন করা সহজসাধ্য নয়”, সেহেতু সেবা-প্রদানকারী বলে উল্লিখিত মানুষগুলির মধ্যে এই বাক্যটিই তিনি নিশ্চিত করেছেন, যা পর্যাপ্তরূপে প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বরের আস্থাভাজনতার বিষয়ে সন্দেহের ছায়াপাতের কোনো অবকাশ নেই। ঈশ্বর যা-কিছু বলেন, বিভিন্ন মাত্রায় হলেও, তা বাস্তবায়িত হবে, এবং কোনোক্রমেই তা অন্তঃসারশূন্য উক্তি নয়।

সকল মানুষ যখন দুঃখ-শোকে পূর্ণ হয়ে মানসিক বিক্ষেপের সীমায় উপনীত হয়, তখনই ঈশ্বরের এজাতীয় বাক্যগুলি কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করে, নিজেদের হতাশার মধ্য থেকে তাদের সকলকে আবার পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। মানুষের মন থেকে আরো কোনো সংশয় বিদূরিত করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বর নিচের বাক্যটি সংযোজিত করেছেন: “যদিও তাদের আমার লোক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবু এই উপাধিটি কোনভাবেই আমার ‘পুত্র’ হিসাবে অভিহিত হওয়ার তুলনায় ন্যূন নয়।” এই বাক্যটি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে একমাত্র ঈশ্বরই তাঁর নিজের কর্তৃত্ব সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম, এবং একবার এই বাক্য পাঠ করার পর মানুষ আরো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে যে এটি কোনো কার্যপদ্ধতি তো নয়-ই, বরং এ এক বাস্তব সত্য। আর এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলা যায়, যাতে মানুষের দর্শন নির্মেঘ থাকতে পারে, তাই তাঁর নতুন কার্যপদ্ধতিতে প্রত্যেকের পরিচয় সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়। ঈশ্বরের প্রজ্ঞাকে এটি পর্যাপ্তরূপে প্রদর্শন করে এবং মানুষকে তা আরো ভালোভাবে জানতে সক্ষম করে যে ঈশ্বর মানুষের অন্তঃকরণ অবধি দেখতে পারেন; নিজেদের চিন্তা-ভাবনা ও ক্রিয়াকর্মে মানুষ পুতুলনাচের পুতুল মাত্র, যেখানে ঈশ্বর তাদের রজ্জু আকর্ষণ করে নিয়ন্ত্রণ করছেন, এবং এটি সুনিশ্চিত ও প্রশ্নাতীত।

সূচনাকালে ফিরে গেলে দেখা যায়, শুরু থেকেই ঈশ্বর প্রত্যক্ষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেখিয়েছিলেন যে তাঁর কার্যের প্রথম ধাপ, অর্থাৎ “গির্জার পরিশোধন”-এর কাজ, ইতিমধ্যেই পরিসমাপ্ত হয়েছে। “পরিস্থিতি এখন আগের মতো নেই, এবং আমার কাজ এক নতুন সূচনাবিন্দুতে প্রবেশ করেছে।” এই বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে ঈশ্বরের কার্য এক নতুন প্রারম্ভবিন্দুতে প্রবেশ করেছে, যার অব্যবহিত পরেই তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে তাঁর কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপের নকশাটি নির্দেশ করেছেন—গির্জার নির্মাণ সমাপ্ত হয়ে গেলে, রাজ্যের যুগের জীবনের সূত্রপাত ঘটবে, “কারণ এখন আর গির্জা নির্মাণের যুগ নয়, বরং এ হল সেই যুগ যেখানে রাজ্য সফলভাবে নির্মিত হয়েছে।” উপরন্তু, তিনি বলেছেন যে মানুষ যেহেতু এখনো পৃথিবীতেই রয়েছে, সেহেতু তাদের সমাবেশগুলিকে গির্জা নামে অভিহিত করা অব্যাহত থাকবে, এইভাবে সকলের কল্পনা অনুসারী এক বাস্তবতাহীন “রাজ্য”-এর বাস্তবায়ন পরিহার করেছেন। এরপর আসছে দর্শন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সহভাগিতা।

যদিও এখন এটি রাজ্য-নির্মাণের যুগ, এবং গির্জা-নির্মাণের যুগের অবসান ঘটেছে, তবু এখনও কেন সমস্ত সমাবেশকে গির্জা বলেই অভিহিত করা হয়? অতীতে বলা হয়েছে যে গির্জা হল রাজ্যের অগ্রদূত, এবং গির্জা ব্যতিরেকে রাজ্যের বিষয়ে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়। রাজ্যের যুগের সূত্রপাত হল দেহরূপে ঈশ্বরের সেবাব্রতের সূচনা, এবং ঈশ্বরের অবতারই রাজ্যের যুগের সূত্রপাত করেন। তিনি যা নিয়ে আসেন তা হল রাজ্যের যুগ, এবং তা রাজ্যের আনুষ্ঠানিক অবতরণ নয়। বিষয়টি কল্পনা করা দুরূহ কিছু নয়; ঈশ্বরের লোক বলতে আমি রাজ্যের যুগের মানুষজনকে বোঝাই, খোদ রাজ্যের মানুষদের নয়। এই কারণেই এ-কথা বলা যুক্তিযুক্ত যে পৃথিবীর সমাবেশগুলিকে এখনও গির্জা বলেই অভিহিত করা উচিত। অতীতে, তিনি তাঁর স্বাভাবিক মানবতার মধ্যে ক্রিয়াকর্মাদি সম্পন্ন করেছিলেন, এবং তখনো তাঁকে স্বয়ং ঈশ্বর হিসাবে সাক্ষ্য দেওয়া হয়নি, সেকারণেই মানুষের মাঝে তখন রাজ্যের যুগের সূত্রপাত ঘটেনি; অর্থাৎ, যেমনটা আমি বলেছি, আমার আত্মা তখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আমার অবতাররূপী দেহে কার্যসম্পাদন শুরু করেনি। বর্তমানে যেহেতু স্বয়ং ঈশ্বর হিসাবে তাঁর সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তাই মানুষের মাঝে রাজ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে আমি আমার দেবত্বের মধ্যে কার্যসাধন শুরু করবো, এবং তাই যে মানুষগুলি আমার কথিত বাক্য ও দেবত্বের ভিতর আমার সম্পাদিত কার্যাবলীর মূল্য উপলব্ধি করতে পারে, তারা রাজ্যের যুগে আমার লোক বলে পরিচিত হবে। এখান থেকেই “ঈশ্বরের লোকেরা” এসেছে। এই পর্যায়ে, মূলত আমার দেবত্বই কাজ করে ও কথা বলে। মানুষ বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না, এবং সে আমার পরিকল্পনাকে বিঘ্নিত করতেও পারে না। ঈশ্বর যখন তাঁর কথা বলার এক নির্দিষ্ট পর্যায়ে উপনীত হবেন, তখন তাঁর নামে সাক্ষ্যদান করা হবে, এবং সেই ক্ষণ থেকে তিনি মানবজাতির বিচার শুরু করবেন। এটিই ঈশ্বরের কার্যে নিহিত প্রজ্ঞার শীর্ষবিন্দু। এটি পরবর্তী পর্যায়ের সূচনার ও সেইসাথে পূর্ববর্তী পর্যায়ের সমাপ্তির এক সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে ও সেই লক্ষ্যে শিকড় সম্প্রসারিত করে। এটি এমন এক বিষয়, যা মানুষ হিসাবে কেউই সম্ভবত পূর্বানুমান করতে পারেনি; এটি বিচারের যুগের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশের মিলনবিন্দু। এই কয়েক মাস যদি আমি মানুষের পরিমার্জনের কাজে ব্যয় না করতাম, তাহলে আমার দেবত্বের কাছে কাজ করার আর কোনো উপায় থাকতো না। এই বেশ কয়েক মাসের পরিমার্জন আমার কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপের পথ খুলে দিয়েছিল। এই কয়েক মাসের কার্যের সমাপ্তি ইঙ্গিত দেয় যে কার্যের পরবর্তী পর্যায় আরো নিগূঢ়তর হবে। সত্যিই যদি কেউ ঈশ্বরের বাক্যগুলি উপলব্ধি করে, তাহলে সে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে এই কয়েক মাসের সময়কালকে তিনি নিজ কার্যের পরবর্তী ধাপের সূত্রপাত ঘটাতে ব্যবহার করছেন, এবং এভাবে ওই কার্যকে তিনি আরও ভালো ফলাফল অর্জনের সামর্থ্য দান করছেন। যেহেতু আমার মানবতাজনিত অন্তরায় আমার কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপে এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, তাই, এই কয়েক মাস কষ্টভোগ-দ্বারা-পরিমার্জনের মধ্যে দিয়ে, উভয় পক্ষই উন্নত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে উপকৃত হয়েছে। যার ফলস্বরূপ, সবেমাত্র এখন মানুষ তাদের উল্লেখ করার আমার এই পদ্ধতিকে মূল্যবান জ্ঞান করতে শুরু করেছে। সেকারণেই, ঈশ্বর যখন তাঁর লেখনীর এক আঁচড়ে জানালেন যে মানুষকে তিনি আর “সেবা-প্রদানকারী” বলে অভিহিত করবেন না, বরং তাদের “ঈশ্বরের লোক” বলবেন, তখন সকল মানুষ আনন্দে আপ্লুত হয়ে উঠেছিল। এটিই ছিল মানুষের গুরুতর দুর্বলতা। সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের এই গুরুতর দুর্বলতাটি অনুধাবন করার উদ্দেশ্যেই ঈশ্বর ওই ভাবে তাঁর বক্তব্য রেখেছিলেন।

সমুদয় মানুষকে জয় করার ও তাদের ঐকান্তিক বিশ্বাস অর্জন করার কাজটি আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, এবং কিছু মানুষের নিষ্ঠায় যে অশুদ্ধির অপমিশ্রণ রয়েছে এই সত্যের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করার জন্য, ঈশ্বর যাবতীয় রকমের মানবিক কদর্যতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার অতিরিক্ত পদক্ষেপটি গ্রহণ করেছেন, এবং তা করার মাধ্যমে তিনি তাঁর এই বাক্যগুলির বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন: “আমায় ভালোবাসার ক্ষেত্রে কতজন আন্তরিক? কে-ই বা নিজের ভবিষ্যতের স্বার্থে কাজ করছে না? নিজের বিচারের কালে কে-ই বা কখনোই অভিযোগ না করে থেকেছে?” এজাতীয় বাক্যগুলি থেকে প্রত্যেকেই নিজের অবাধ্যতা, আনুগত্যহীনতা, ও সন্তানোচিত নিষ্ঠার অভাব শনাক্ত করতে পারে, এবং এর মাধ্যমে প্রণিধান করে যে যারা ঈশ্বরের অনুসন্ধান করে, তাঁর করুণা ও প্রেমময় উদারতা পথের প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের সকলের অনুসরণ করে। নিম্নলিখিত বাক্যসমূহে তা পরিলক্ষিত হয়: “কেউ কেউ যখন পশ্চাদপসরণের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে, যারা আশা করে যে আমি আমার কথা বলার ধরণ পরিবর্তন করবো তারা সকলে যখন যখন আশা হারিয়ে ফেলেছে, সে সময় আমি পরিত্রাণের বাণী উচ্চারণ করি, আন্তরিকভাবে যারা আমায় ভালোবাসে তাদের সকলকে আমার রাজ্যে, আমার সিংহাসনের সম্মুখে ফিরিয়ে আনি।” এখানে, “যারা আমায় আন্তরিকভাবে ভালোবাসে” এই বাক্যবন্ধ, এবং “কতজন আমায় আন্তরিকভাবে ভালোবাসে?” এই আলঙ্কারিক প্রশ্নটি, পরস্পরের পরিপন্থী নয়। “আন্তরিকতা” এই প্রসঙ্গে কীভাবে অশুদ্ধি ধারণ করে এগুলি সেটাই পরিস্ফূট করে তোলে। এমন নয় যে ঈশ্বর কিছুই জানেন না; বরং, সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থল অবধি দেখতে পারেন বলেই ঈশ্বর “আন্তরিকতা”-র মতো শব্দ প্রয়োগ করেন, যা আসলে ভ্রষ্ট মানবজাতির প্রতি এক বিদ্রুপ, যাতে ঈশ্বরের কাছে নিজেদের ঋণবদ্ধতাকে প্রত্যেকে আরো গভীরভাবে অনুভব করে এবং নিজেদের আরো রূঢ়ভাবে ভর্ৎসনা করে, ও সেইসাথে এই সত্যটিও উপলব্ধি করে যে তাদের অন্তরের অভিযোগগুলি সম্পূর্ণরূপে শয়তানের থেকে আসে। যখন তারা “নিষ্ঠা”-র মতো একটি শব্দ দেখে, তখন সকলেই বিস্মিত হয়, মনে-মনে ভাবে: “বহুবার আমি আকাশ ও পৃথিবীর বিরুদ্ধে কটুকাটব্য করেছি, এবং বহুবার প্রস্থান করতে চেয়েছি, কিন্তু যেহেতু ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানগুলির সম্বন্ধে আমার ভীতিবোধ ছিল, তাই কোনোক্রমে আমি বিষয়গুলির মোকাবিলা করতাম শুধুমাত্র যাতে সেগুলি কাটিয়ে উঠে ভিড়ের স্রোতে পা মেলানো যায়, অপেক্ষা করতাম ঈশ্বর কখন আমার মোকাবিলা করবেন, ভাবতাম, পরিস্থিতি যদি প্রকৃতপক্ষেই নিরাশাব্যঞ্জক হয়ে ওঠে, তাহলেও ধীরে-ধীরে পিছু হঠার মতো পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু ঈশ্বর এখন আমাদের তাঁর প্রতি সমর্পিত মানুষ বলে অভিহিত করছেন। এই ঈশ্বর কি যথার্থই তেমন এক ঈশ্বর হতে পারেন যিনি মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থল অবধি প্রত্যক্ষ করেন?” এই ধরনের ভ্রান্ত উপলব্ধি এড়ানোর লক্ষ্যেই ঈশ্বর শুধু একেবারে শেষে বিভিন্ন প্রকারের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, তারা অন্তরে সন্দিহান অথচ বাইরে আনন্দ প্রকাশ করছে এরকম এক অবস্থা থেকে তাদের প্রত্যেকের রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন এমন এক অবস্থায় যেখানে তারা হৃদয়ে, কথায়, ও দর্শনে প্রতীত। এইভাবে, ঈশ্বরের বাক্য সম্পর্কে মানুষের ধারণা গভীরতা লাভ করেছে, যার স্বাভাবিক ফলশ্রুতি হিসাবে মানুষ হয়ে উঠেছে আরো কিছুটা শঙ্কিত, আরো একটু শ্রদ্ধাশীল, উপরন্তু ঈশ্বরের বিষয়ে এক উৎকৃষ্টতর উপলব্ধি অর্জন করেছে। সর্বশেষে, মানুষের উদ্বেগ লাঘব করার মানসে ঈশ্বর বলেছিলেন: “কিন্তু অতীত যেহেতু অতীতই, এবং বর্তমান ইতিমধ্যেই আগত, তাই আর বিগতদিবসের স্মৃতিমেদুর আকাঙ্ক্ষায় আকুল হওয়ার, বা ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করার দরকার নেই।” এই ধরনের উত্তেজনাময়, সমন্বয়পূর্ণ, অথচ সারগর্ভ বাচনরীতির আরো বৃহত্তর একটি প্রভাব রয়েছে, এর ফলে তাঁর বাক্যসমূহের সকল পাঠকেরা অতীতের হতাশার মধ্যে থেকে আরেকবার আলোকের দর্শন পায়, যতদিন না তারা ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও ক্রিয়াকর্ম প্রত্যক্ষ করে, “ঈশ্বরের লোক” পদবী অর্জন করে, তাদের অন্তর থেকে সংশয়ের মেঘরাজিকে অপসারিত করে, এবং তারপর তাদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার পরিবর্তনশীল নকশা থেকে নিজেদেরকে জেনে উঠতে পারে। এই পরিস্থিতিগুলি পালাক্রমিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, জন্ম দেয় শোক ও দুঃখের, সুখ ও আনন্দের। এই অধ্যায়ে ঈশ্বর মানুষের এক জীবন্ত ও প্রাণবন্ত রূপরেখা এত আনুপুঙ্খিকভাবে অঙ্কন করেছেন যে তা উৎকর্ষের চূড়ান্ত সীমায় এসে পৌঁছেছে। সত্যিই এটি মানুষের অর্জনসাধ্য কোনো বিষয় নয়, এটি এমন এক বিষয় যা মানব-হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশের গোপনীয়তাকে প্রকৃতই অনাবৃত করে। এ কি মানুষের সম্পাদনসাধ্য কোনো বিষয় হতে পারে?

এর ঠিক পরেই নিচের অনুচ্ছেদটি আসে, যা আরো গুরুত্বপূর্ণ, যা মানুষের কাছে সরাসরি ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানগুলি প্রকাশ করে, এবং উপরন্তু, যা সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ অংশ: “মানুষ হিসাবে, যে বাস্তবতার বিরুদ্ধে যায় এবং আমার নির্দেশনা অনুসারে কাজ না-করে, তার পরিণতি ভালো হয় না, সে নিজের উপরই সমস্যা ডেকে আনবে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু ঘটে তার মধ্যে এমন কিছুই নেই যেখানে আমার রায়ই চূড়ান্ত নয়।” এই কি ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমান নয়? এটি পর্যাপ্তরূপে দেখায় যে যারা এই প্রশাসনিক ফরমান লঙ্ঘন করে তাদের উদাহরণ সংখ্যায় বিপুল। উপরোক্ত বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে, ঈশ্বর সকলকে নিজেদের নিয়তির ব্যাপারে চিন্তা না করার অনুরোধ করেন। কেউ যদি ঈশ্বরের সমন্বয়সাধন ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার কথা চিন্তা করার স্পর্ধা করে, তাহলে তার ফল অচিন্তনীয় রকমের ভয়াবহ হবে। যেসব মানুষ এই বাক্যগুলির মাধ্যমে আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তির অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তাদের সকলকে এরপর এটি সমর্থ করে ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানগুলি আরো প্রকৃষ্টভাবে বুঝতে, এবং সেইসাথে উপলব্ধি করতে যে তাঁর মহিমাকে অসন্তুষ্ট করা যায় না, এবং এইভাবে তারা আরো পোক্ত ও দৃঢ় হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে ঝড়-ঝঞ্ঝা ও তুষারপাতের দ্বারা পোক্ত হয়ে ওঠা কোনো পাইন বৃক্ষের মতো সতেজ-সবুজ, যে বৃক্ষ তীব্র ঠাণ্ডার হুমকির বিরুদ্ধে স্পর্ধিতের মতো খাড়া থাকে, প্রকৃতির সমৃদ্ধশালী শ্যামল প্রাণশক্তিতে নিজের অবদান অব্যাহত রাখে। এই অনুচ্ছেদটির সম্মুখীন হয়ে অধিকাংশ মানুষ এমন বিমূঢ় বোধ করে যেন তারা কোনো প্রকার গোলকধাঁধার মধ্যে বিচরণ করছে; এর কারণ, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের বিষয়বস্তু অপেক্ষাকৃত দ্রুতহারে পরিবর্তিত হয়, এবং তাই প্রতি দশজনের মধ্যে নয়জন মানুষ যখন নিজেদের ভ্রষ্ট স্বভাবকে বোঝার চেষ্টা করে তখন তারা এক বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করে। কার্যটি ভবিষ্যতে যাতে আরো মসৃণভাবে অগ্রসর হয়, সকল মানুষের হৃদয়ের সংশয়গুলি যাতে নির্মূল হয়, এবং ঈশ্বরের আস্থাভাজনতায় তাদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সকলে যাতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে তিনি এই অনুচ্ছেদটির শেষের দিকে জোর দিয়ে বলেন: “যারা আমাকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে তাদের প্রত্যেকে নিশ্চিতভাবে আমার সিংহাসনের সামনে ফিরে আসবে।” এইভাবে, যে মানুষগুলি বেশ কয়েক মাস যাবৎ তাঁর কার্যের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তাদের মন মুহূর্তের মধ্যে নিজেদের আশঙ্কা থেকে কিয়দংশে উপশম লাভ করে। তদুপরি, তাদের হৃদয়, যা ত্রিশঙ্কুর মতো মধ্যাকাশে প্রলম্বিত ছিল, তা আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে, যেন এক গুরুভার প্রস্তরখণ্ড মাটিতে খসে পড়েছে। তাদেরকে আর নিজেদের নিয়তির বিষয়ে ভাবিত হতে হয় না; উপরন্তু, তারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর আর কখনো অন্তঃসারশূন্য বাক্যাদি উচ্চারণ করবেন না। মানুষ যেহেতু নিজের নৈতিকতা বিষয়ে উদ্ধত, তাই এমন একজনও নেই যে মনে করে না যে ঈশ্বরের প্রতি সে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা প্রদর্শন করে; একারণেই ঈশ্বর সুচিন্তিতভাবে জোর দেন “আন্তরিকভাবে” কথাটির উপর—যাতে এক উৎকৃষ্টতর ফলাফল অর্জন করা যায়। এর উদ্দেশ্য হল তাঁর কার্যের পরবর্তী পদক্ষেপের পথ প্রস্তুত করা ও তার ভিত্তি স্থাপন করা।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৪৭

পরবর্তী: অধ্যায় ৩

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন