অধ্যায় ৩

আজ আর অনুগ্রহের যুগ নেই, করুণার যুগও নেই, বরং এ হল সেই রাজ্যের যুগ যেখানে ঈশ্বরের লোকজনদের প্রকাশিত করা হয়, যে যুগে ঈশ্বর সরাসরি দেবত্বের মাধ্যমে কার্যাদি সম্পাদন করেন। তাই, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের এই অধ্যায়ে, যারা তাঁর বাক্য গ্রহণ করে তাদের সকলকে তিনি পথপ্রদর্শন করে আধ্যাত্মিক জগতে নিয়ে যান। প্রারম্ভিক অনুচ্ছেদে, তিনি অগ্রিম এই প্রস্তুতিগুলি গ্রহণ করেছেন, এবং কেউ যদি ঈশ্বরের বাক্য বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী হয়, তাহলে তরমুজ পাওয়ার জন্য ঠিকই সে লতার অনুসরণ করবে, এবং ঈশ্বর তাঁর লোকজনের মধ্যে কী অর্জন করতে চান তা সরাসরি উপলব্ধি করে নেবে। পূর্বে, “সেবা-প্রদানকারী” নামে অভিহিত করার মাধ্যমে মানুষকে পরীক্ষা করা হতো, আর আজ, বিচারের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রশিক্ষণ আরম্ভ হয়। অধিকন্তু, অতীতের বাক্যসমূহের বুনিয়াদের উপর ভিত্তি করে মানুষকে অবশ্যই ঈশ্বরের কার্য সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান লাভ করতে হবে, এবং বাক্যসমূহ ও ছবিকে, এবং আত্মা ও ছবিকে, তাদের অবশ্যই দেখতে হবে এক অবিচ্ছেদ্য সমগ্র হিসাবে—এক মুখ, এক হৃদয়, এক কর্ম, এবং এক উৎস হিসাবে। সৃষ্টির পর থেকে এটিই মানুষের কাছে ঈশ্বরের সর্বোচ্চ চাহিদা। এর থেকে বোঝা যায় যে ঈশ্বর তাঁর প্রচেষ্টার একাংশ তাঁর লোকদের উপর ব্যয় করতে চান, তাদের মধ্যে তিনি কিছু নিদর্শন ও অলৌকিক কাণ্ড প্রদর্শন করতে চান, এবং, আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে, সকল মানুষকে দিয়ে তিনি ঈশ্বরের সামগ্রিক কার্য ও বাক্যগুলি মান্য করাতে চান। এক দিক থেকে, ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর সাক্ষ্য তুলে ধরেছেন, এবং আরেক দিক থেকে, তাঁর লোকেদের কাছে তিনি চাহিদা উত্থাপন করেছেন, ও প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণের উপর ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানসমূহ জারি করেছেন: সুতরাং, যবে থেকে তোমাদের আমার লোক বলে ডাকা হয়, তবে থেকে বিষয়গুলি আর আগের মতো নেই; তোমাদের উচিত আমার আত্মার উচ্চারণগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া ও সেগুলিকে মান্য করা, এবং আমার কার্যকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করা; আমার আত্মা ও আমার দেহকে পৃথক করার অনুমোদন তোমাদের নেই, কারণ সহজাতভাবে আমরা অভিন্ন, এবং প্রকৃতিগতভাবে অখণ্ড। এখানে, ঈশ্বরের অবতারকে অবহেলা করা থেকে মানুষকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে, এই বাক্যের উপর আরেকবার গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে “কারণ সহজাতভাবে আমরা অভিন্ন, এবং প্রকৃতিগতভাবে অখণ্ড”; যেহেতু এজাতীয় অবহেলা মানুষের ব্যর্থতা, তাই তা আরও একবার ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানসমূহের তালিকাভুক্ত হয়। এরপর, ঈশ্বর কোনোকিছু গোপন না করেই মানুষকে ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানসমূহ লঙ্ঘন করার পরিণামের বিষয়ে অবহিত করেন এই উক্তির মাধ্যমে, “তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং কেবল নিজের তিক্ত পাত্র থেকে পান করতেই সক্ষম হবে।” মানুষ যেহেতু দুর্বল, তাই এই বাক্যগুলি শোনার পর তার অন্তরে সে ঈশ্বরের বিষয়ে অধিকতর সতর্ক না হয়ে পারে না, কারণ “তিক্ত পাত্র” শব্দবন্ধটি মানুষকে কিছু সময়ের জন্য ভাবিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। মানুষের কাছে ঈশ্বর-কথিত এই “তিক্ত পাত্র”-এর নানান ব্যাখ্যা রয়েছে: বাক্যের দ্বারা বিচারপ্রাপ্ত হওয়া বা রাজ্য থেকে বহিষ্কৃত হওয়া, কিংবা কিছুকালের জন্য সঙ্গ-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, কিংবা কারো দেহের শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট ও মন্দ আত্মাদের দ্বারা অধিকৃত হয়ে পড়া, অথবা ঈশ্বরের আত্মা কর্তৃক পরিত্যক্ত হওয়া, কিংবা কারো দৈহিক অস্তিত্ব সমাপ্ত হয়ে যাওয়া ও মৃতস্থানে নির্বাসিত হওয়া। মানুষের চিন্তার দ্বারা এই ব্যাখ্যাগুলিই অর্জনসাধ্য, আর তাই তাদের কল্পনায়, মানুষ এগুলির বাইরে যেতে অক্ষম। কিন্তু ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা মানুষের থেকে স্বতন্ত্র; অর্থাৎ, “তিক্ত পাত্র” উপরের কোনোটিই নির্দেশ করে না, বরং তা ঈশ্বরের মোকাবিলা গ্রহণের পর ঈশ্বরের বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের মাত্রাকে নির্দেশ করে। আরো স্পষ্ট করে বললে, কেউ যখন ঈশ্বরের আত্মা ও তাঁর বাক্যসমূহকে যদৃচ্ছভাবে পৃথক করে, কিংবা বাক্যসমূহ ও ছবিকে, বা আত্মা ও নিজেকে আচ্ছাদিত করতে আত্মার ব্যবহৃত দেহটিকে বিযুক্ত করে, তাহলে সেই মানুষটি শুধু যে ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে ঈশ্বরকে জানতে অক্ষম তা-ই নয়, উপরন্তু, সে যদি ঈশ্বরের বিষয়ে যৎসামান্যও সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ে, তবে প্রতিটি মোড়ে সে তার দৃষ্টিশক্তি হারাবে। মানুষের কল্পনা মতো মোটেই তাকে সরাসরি অপসৃত করা হয় না; বরং, ক্রমান্বয়ে সে ঈশ্বরের শাস্তির মধ্যে পতিত হয়—অর্থাৎ, সে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে অবতরণ করে, এবং কেউই তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে না, যেন সে মন্দ আত্মার দ্বারা অধিকৃত হয়েছে, এবং যেন সে কোনো মস্তকহীন মক্ষিকা, যেখানেই যাচ্ছে জিনিসপত্রের সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে ধাক্কা খাচ্ছে। এতদসত্ত্বেও, তখনও সে প্রস্থান করতেও অসমর্থ। তার অন্তরে, বিষয়গুলি অবর্ণনীয় রকমের দুঃসহ, তার হৃদয়ে যেন অকথ্য যন্ত্রণা রয়েছে—তবু সে তার মুখ খুলতে পারে না, এবং সারাটা দিন সে এক আচ্ছন্ন অবস্থায় অতিবাহিত করে, ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারে না। এই রকম পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানসমূহ তাকে ভীতিপ্রদর্শন করে, যার ফলে কোনো আনন্দ না পাওয়া সত্ত্বেও সে গির্জা ত্যাগ করতে সাহস করে না—একেই বলা হয় এক “অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত আক্রমণ”, মানুষের পক্ষে যা সহ্য করা ভয়ানক রকমের কষ্টসাধ্য। এখানে যা বলা হয়েছে তা মানুষের পূর্বধারণার থেকে ভিন্ন—এবং এর কারণ, ওই পরিস্থিতিতে সে তখনো ঈশ্বরের অনুসন্ধান করতে জানে, এবং এটা তখনই ঘটে যখন ঈশ্বর তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ হল, ঠিক একজন অবিশ্বাসীর মতোই, ঈশ্বরকে অনুভব করতে সে সম্পূর্ণ অক্ষম। ঈশ্বর এই জাতীয় মানুষদের সরাসরি উদ্ধার করেন না; তাদের তিক্ত পাত্র যখন নিঃশেষিত হয়, ঠিক তখনই তাদের শেষ দিন এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু সেই মুহূর্তে, তারা তখনো ঈশ্বরের ইচ্ছার অন্বেষণ করে চলে, শুধুমাত্র আরেকটু বেশি উপভোগ করতে চায়—কিন্তু এই সময়টি অতীতের থেকে আলাদা, যদি কোনো বিশেষ পরিস্থিতি না থাকে।

এর পর, ঈশ্বর সকলের কাছে ইতিবাচক দিকসমুহও ব্যাখ্যা করেছেন, এবং এইভাবে আরেকবার তারা জীবন লাভ করেছে—কারণ, বিগত দিনে, ঈশ্বর বলেছিলেন সেবা-প্রদানকারীদের জীবন বলে কিছু নেই, কিন্তু আজ ঈশ্বর হঠাৎ “অভ্যন্তরীন জীবনের” বিষয়ে বলছেন। শুধুমাত্র জীবনের বিষয়ে কথাবার্তার মাধ্যমেই মানুষ অবহিত হয় যে এখনও তাদের অভ্যন্তরে ঈশ্বরের জীবন থাকতে পারে। এই ভাবে, তাদের ঈশ্বর-প্রেম বেশ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়, এবং ঈশ্বরের ভালোবাসা ও করুণার বিষয়ে তারা এক বৃহত্তর জ্ঞান লাভ করে। এইভাবে, এই বাক্যসমূহ প্রত্যক্ষ করার পর, সকল মানুষ তাদের অতীতের ভুলের দরুন অনুশোচনা বোধ করে, এবং গোপনে অনুতাপের অশ্রু বিসর্জন করে। অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে কৃতসংকল্পও হয়। কখনো কখনো, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ মানুষের হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশকে বিদ্ধ করে, মানুষের পক্ষে সেগুলি গ্রহণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, এবং শান্তিতে থাকাও তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ আন্তরিক ও ঐকান্তিক, এবং মানুষের হৃদয়ে তা এতটাই উষ্ণতার সঞ্চার করে যে সেগুলি পাঠের পর তারা হারিয়ে যাওয়ার বহু বছর পর পুনরায় মাকে দেখতে পাওয়া এক মেষশাবকের মতো আনন্দ অনুভব করে। তাদের চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হয়, তারা আবেগাভিভূত হয়ে পড়ে, এবং ফোঁপানো কান্নায় বেদনাদীর্ণ হয়ে তারা ঈশ্বরের আলিঙ্গনে নিজেদের নিক্ষেপ করতে ব্যাকুল, বহু বছর ব্যাপী তাদের হৃদয়ে নিহিত বর্ণনাতীত যন্ত্রণাকে এইভাবে তারা মুক্তি দেয়, যাতে ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করা যায়। সেই বেশ কয়েক মাসের পরীক্ষার দরুন, তারা কিছুটা অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়েছে, যেন সদ্যই তাদের কোনো স্নায়বিক আক্রমণ পোহাতে হয়েছে, এমন এক পঙ্গুর মতো যে বহু বছর শয্যাশায়ী। ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি বিশ্বাসে তাদের অবিচলচিত্ত করে তুলতে, ঈশ্বর বহুবার নিম্নলিখিত বাক্যগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন: “আমার কার্যের পরবর্তী ধাপ যাতে মসৃণ ও বাধাহীন ভাবে অগ্রসর হতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমার গৃহের সকলকে পরীক্ষা করার মানসে আমি বাক্যের পরিমার্জন প্রয়োগ করি।” ঈশ্বর এখানে বলেছেন “আমার গৃহের সকলকে পরীক্ষা করার মানসে”; গভীরভাবে পাঠ করলে আমরা বুঝতে পারি যে মানুষ যখন সেবা-প্রদানকারী হিসাবে কাজ করছে, তখনো তারা ঈশ্বরের গৃহের মানুষই রয়েছে। তদুপরি, এই বাক্যগুলি “ঈশ্বরের লোক” অভিধাটির প্রতি ঈশ্বরের সত্যনিষ্ঠার উপর জোর দেয়, যা মানুষের হৃদয়ে কিছু পরিমাণ স্বস্তি এনে দেয়। এবং তাহলে, মানুষ ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করার পর, বা “ঈশ্বরের লোক” আখ্যাটি যখন প্রকাশিত হওয়া বাকি আছে, তখন মানুষের মধ্যে পরিলক্ষিত নানান বৈশিষ্ট্যগুলির প্রতি ঈশ্বর বারংবার অঙ্গুলিনির্দেশ করেন কেন? এর একমাত্র উদ্দেশ্য কি শুধু প্রদর্শন করা যে ঈশ্বর হলেন সেই ঈশ্বর যিনি মানুষের অন্তরের গভীরে দৃষ্টিপাত করেন? এটি আংশিক কারণ মাত্র—এবং এখানে, গুরুত্বের দিক দিয়ে এটি নিছকই গৌণ। ঈশ্বর এমন করেন সকল মানুষকে সম্পূর্ণরূপে প্রতীত করতে, যাতে প্রতিটি মানুষ ঈশ্বরের বাক্যসমূহ থেকে জীবন সম্পর্কে তাদের নিজস্ব অপর্যাপ্ততা ও তাদের পূর্বতন ঘাটতিগুলির বিষয়ে অবগত হতে পারে, এবং, আরো গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যটি হল, যাতে কার্যের পরবর্তী ধাপের ভিত্তি স্থাপন করা যায়। মানুষ একমাত্র আত্মজ্ঞানের বুনিয়াদের উপর ভিত্তি করেই ঈশ্বরকে জানার প্রচেষ্টা করতে এবং ঈশ্বরের অনুকরণের অন্বেষণ করতে পারে। এই বাক্যগুলির কারণে, মানুষের নেতিবাচক ও নিষ্ক্রিয় মানসিকতা বদলে গিয়ে ইতিবাচক ও সক্রিয় হয়ে ওঠে, এবং তা ঈশ্বরের কার্যের দ্বিতীয় পর্বকে দৃঢ়মূল হতে সক্ষম করে তোলে। বলা যেতে পারে, কার্যের এই ধাপটি ভিত্তি রূপে থাকায়, ঈশ্বরের কার্যের দ্বিতীয় পর্বটি সহজসাধ্য হয়ে পড়ে, তার জন্য প্রয়োজন থাকে শুধু যৎসামান্য প্রচেষ্টার। এইভাবে, মানুষ যখন তাদের অন্তর থেকে বিমর্ষতাকে বিদূরিত করে ইতিবাচক ও কর্মোদ্যমী হয়ে ওঠে, ঈশ্বর তখন তাঁর লোকেদের উপর অন্য চাহিদাগুলি স্থাপন করতে এই সুযোগটি গ্রহণ করেন: “আমার বাক্যসমূহ যেকোনো স্থানে বা যেকোনো কালে বিমুক্ত ও অভিব্যক্ত করা হয়, আর তাই, তোমাদেরও সর্বদাই উচিত আমাকে জানার পূর্বে নিজেদের জানা। কারণ, বর্তমান সময়টি, সর্বোপরি, পূর্ববর্তী সময়ের থেকে আলাদা, এবং তুমি আর তোমার ইচ্ছামতো যে কোনো কিছু সম্পন্ন করতে সমর্থ নও। পরিবর্তে, আমার বাক্যের নির্দেশনার অধীনে, তোমাকে অবশ্যই নিজের দেহকে বশীভূত করতে সমর্থ হতে হবে; আমার বাক্যকে অবশ্যই তুমি তোমার প্রধান সহায় হিসাবে ব্যবহার করবে, এবং তুমি অসংযত কাজকর্ম করতে পারবে না।” এতে, ঈশ্বর মুখ্যত “আমার বাক্যসমূহ”-এর উপর জোর দিয়েছেন; অতীতেও, বহুবার তিনি “আমার বাক্যসমূহ”-এর উল্লেখ করেছেন, আর এই কারণেই, প্রত্যেক মানুষ এর প্রতি কিছুটা মনোযোগ না দিয়ে পারে না। এইভাবে ঈশ্বরের কার্যের পরবর্তী ধাপের কেন্দ্রস্থলটি নির্দেশ করা হয়: সকল ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্যের উপর তাদের মনোযোগ নিবিষ্ট করবে; এবং অন্য কোনো বিষয়ে তাদের আসক্তি থাকা চলবে না। ঈশ্বরের মুখোচ্চারিত বাক্যসমূহকে সকলে অবশ্যই লালন করবে, এবং সেগুলিকে লঘুভাবে গ্রহণ করবে না; এভাবে গির্জায় পূর্ববর্তী পরিস্থিতির অবসান ঘটবে, যখন একজন মানুষ ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতো এবং অনেকে আমেন বলতো ও আজ্ঞাকারী হয়ে থাকতো। সেই সময়, মানুষ ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে জানতো না, বরং সেগুলিকে আত্মরক্ষার এক অস্ত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিল। এই অবস্থাকে বিপরীতে নিয়ে যেতে, ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের কাছে নতুন, উচ্চতর দাবি রাখেন। ঈশ্বরের কাঙ্খিত উচ্চ মান ও কঠোর চাহিদাগুলি দেখে মানুষের নেতিবাচক ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া বন্ধ করতে, ঈশ্বর বহুবার এই কথা বলে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন: “বিষয়গুলি যেহেতু আজকের মতো এক পরিস্থিতিতে এসে উপনীত হয়েছে, তাই নিজেদের অতীতের কার্যকলাপ ও ক্রিয়াকর্মের বিষয়ে তোমাদের নিরতিশয় দুঃখিত ও অনুতপ্ত বোধ করার প্রয়োজন নেই। আমার মহানুভবতা সাগর ও আকাশের মতো সীমাহীন—মানুষের সামর্থ্য ও আমার সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের বিষয়ে আমি নিজের হাতের তালুর মতো পরিচিত হবো না এমন কী করে সম্ভব?” এই ঐকান্তিক ও আন্তরিক বাক্যগুলি সহসা মানুষের মনকে অবারিত করে দেয়, এবং হতাশাবোধ থেকে তাদের অবিলম্বে নিয়ে আসে ঈশ্বর-প্রেমের দিকে, ইতিবাচক ও উদ্যমশীল হওয়ার দিকে, কারণ ঈশ্বর মানুষের অন্তরের দুর্বলতাকে দৃঢ়মুষ্টিতে চেপেধরে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে না জেনে, নিজেদের অতীত কার্যকলাপের দরুন ঈশ্বরের সম্মুখে মানুষ সর্বদা লজ্জিত বোধ করে, এবং বারংবার তারা অনুতাপ প্রকাশ করে। এইভাবে, ঈশ্বর এই বাক্যগুলিকে সবিশেষ সহজ ও স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ করেছেন, যাতে মানুষ ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে অনমনীয় ও নীরস না ভাবে, বরং যুগপৎ কঠোর ও কোমল, এবং উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত মনে করে।

সৃষ্টির পর থেকে আজ অবধি, ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগত থেকে মানুষের জন্য নিঃশব্দে সকলকিছুর আয়োজন করেছেন, কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতের সত্য কখনো তিনি মানুষের কাছে বর্ণনা করেননি। তবুও, আজ, ঈশ্বর অকস্মাৎ সেখানকার প্রবল লড়াইয়ের এক সাধারণ রূপরেখা প্রদান করেন, যার ফলে মানুষ স্বভাবতই ধন্দের মধ্যে পড়ে, এবং তাদের এই বোধ আরো দৃঢ়মূল হয় যে ঈশ্বর সুগভীর ও অগাধ, এবং তাদের পক্ষে ঈশ্বরের বাক্যসমূহের উৎস খুঁজে বার করা কঠিনতর হয়ে পড়ে। বলা যেতে পারে, আধ্যাত্মিক জগতের যুদ্ধরত অবস্থা সকল মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। ভবিষ্যতের কার্যের এটিই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশে মানুষকে সমর্থ করে তোলার সূত্র। এর থেকে দেখতে পাওয়া যায় যে ঈশ্বরের কার্যের পরবর্তী` পর্যায় মূলত আত্মাকে লক্ষ্যবস্তু করে, যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল দেহরূপে ঈশ্বরের আত্মার সম্পাদিত অলৌকিক কার্যকলাপগুলির বিষয়ে সকল মানুষকে বিস্তৃততর জ্ঞান প্রদান করা, এইভাবে ঈশ্বরের অনুগত সকলকে শয়তানের নির্বুদ্ধিতা ও প্রকৃতির বিষয়ে বৃহত্তর জ্ঞান প্রদান করা। যদিও তারা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে জন্মগ্রহণ করেনি, তবু তাদের মনে হয় তারা যেন শয়তানকে দর্শন করেছে, এবং তাদের মধ্যে একবার এই অনুভূতি এসে গেলে, ঈশ্বর তৎক্ষণাৎ অন্য এক বাচনরীতি অবলম্বন করেন—এবং মানুষ একবার এই চিন্তন-প্রণালী অর্জন করে ফেললে, ঈশ্বর জিজ্ঞাসা করেন: “আমি তোমাদের এমন জরুরি ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি কেন? কেন তোমাদের আমি আধ্যাত্মিক জগতের ঘটনাগুলির কথা বলি? কেন তোমাদের আমি বারংবার স্মরণ করিয়ে দিই এবং উৎসাহিত করি?” এবং এরকম আরও—এক পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নপরম্পরা যা মানুষের মনে নানান প্রশ্নের উদ্রেক করে: ঈশ্বর এই সুরে কথা বলেন কেন? গির্জা নির্মাণের সময়কালে মানুষের কাছে তাঁর দাবিসমূহ নিয়ে কোনো বাক্যালাপ না করে কেন তিনি আধ্যাত্মিক জগতের বিষয়াদি নিয়ে আলাপচারিতা করেন? ঈশ্বর কেন রহস্যাবলী উদ্ঘাটনের মাধ্যমে মানুষের পূর্বধারণাগুলির উপর আঘাত হানেন না? শুধুমাত্র আরেকটু বেশি চিন্তাশীল হওয়ার মাধ্যমে, মানুষ ঈশ্বরের কার্যের ধাপগুলির বিষয়ে কিছুটা জ্ঞান লাভ করে, এবং এইভাবে, ভবিষ্যতে যখন তারা প্রলোভনের সম্মুখীন হয়, তাদের মধ্যে তখন শয়তানের প্রতি এক সত্যিকারের ঘৃণাবোধ জন্ম নেয়। এমনকি ভবিষ্যতে যখন তারা বিচারের মুখোমুখি হয়, তখনো তারা ঈশ্বরকে জানতে এবং আরো নিবিড়ভাবে শয়তানকে ঘৃণা করতে, আর এভাবে শয়তানকে অভিসম্পাত দিতে সক্ষম হয়।

অন্তিমে, মানুষের কাছে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করা হয়: “তোমার আত্মার মধ্যে আমার প্রতিটি বাক্যকে বদ্ধমূল, প্রস্ফুটিত ও ফলদায়ী হওয়ার, এবং, আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে, আরো ফলবান হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এর কারণ হল, আমার চাহিদা উজ্জ্বল, গুচ্ছময় ফুলের নয়, বরং সুপ্রচুর ফলের জন্য, যে ফল তার পক্বতা হারিয়ে ফেলে না।” তাঁর লোকেদের কাছে ঈশ্বরের সকল পুনরাবৃত্ত দাবিগুলির মধ্যে, এটিই সবচেয়ে সর্বাঙ্গীন, এটিই কেন্দ্রবিন্দু, এবং একে এক সোজাসাপ্টা রীতিতে পেশ করা হয়েছে। আমি স্বাভাবিক মানবতায় কার্য সম্পাদন থেকে পূর্ণদেবত্বে কর্মসাধনের দিকে সঞ্চালিত হয়েছি; তাই, অতীতে, আমার সহজবোধ্য বাক্যগুলির ক্ষেত্রে, আমার অতিরিক্ত কোনো ব্যাখ্যা সংযোজনের প্রয়োজন ছিল না, এবং অধিকাংশ মানুষ আমার বাক্যগুলির অর্থ অনুধাবন করতে সক্ষম ছিল। এর ফল ছিল এই যে সেই সময়ে শুধুই যা প্রয়োজন ছিল তা হল মানুষের আমার বাক্যগুলি জানা এবং বাস্তবতার বিষয়ে কথা বলতে সমর্থ হওয়া। এই ধাপটি অবশ্য বিপুলভাবেই ভিন্নতর। আমার দেবত্ব সম্পূর্ণরূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, এবং মানবতার জন্য কোনো ভূমিকা পালনের এতটুকু অবকাশ রাখেনি। তাই, আমার লোকেদের মধ্যে থেকে সেইসব লোকেরা যদি আমার বাক্যসমূহের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে চায়, তাহলে কাজটি তাদের পক্ষে রীতিমতো দুরূহ। একমাত্র আমার উচ্চারণসমূহের মধ্য দিয়েই তারা আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তি লাভ করতে পারে, এবং এই মাধ্যম দিয়ে ছাড়া আমার বাক্যসমূহের লক্ষ্য উপলব্ধি করার যেকোনো চিন্তা নেহাতই অলস দিবাস্বপ্ন মাত্র। আমার উচ্চারণগুলি গ্রহণ করার পর সকল মানুষ যখন আমার বিষয়ে এক বৃহত্তর জ্ঞানের অধিকারী হয়, তখনই আমার লোকেরা আমায় যাপন করে, এই সেই সময় যখন দেহরূপে আমার কার্য সম্পূর্ণ হয়েছে, এবং এই সেই সময় যখন আমার দেবত্ব দেহের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে যাপিত হয়েছে। সেই মুহূর্তে, সমুদয় মানুষ দেহরূপে আমাকে জানবে, এবং প্রকৃত অর্থে বলতে সক্ষম হবে যে ঈশ্বর দেহে আবির্ভূত হয়েছেন, এবং এটাই হবে কাঙ্খিত ফলাফল। গির্জা নির্মাণের বিষয়ে ঈশ্বর যে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছেন, এটি তারই আরো প্রমাণ—অর্থাৎ, “কাচ-ঘরের ফুলগুলি সংখ্যায় যদিও তারকারাজির মতো অগণন, এবং যদিও সকল বিমুগ্ধ জনতাকে সেগুলি আকৃষ্ট করে, কিন্তু একবার সজীবতা হারিয়ে ফেলার পর, সেগুলি শয়তানের চতুর অভিসন্ধির মতোই শতচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এবং সেগুলির প্রতি তখন কেউ আর কোনো আগ্রহ দেখায় না।” যদিও গির্জা নির্মাণ চলাকালীন ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবেও কাজ করেছিলেন, কিন্তু যেহেতু তিনি সততই চিরনবীন ঈশ্বর, এবং কখনো পুরাতন হন না, তাই বিগতদিনের বিষয়গুলির জন্য তাঁর কোনো স্মৃতিকাতরতা নেই। অতীতের চিন্তা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে, তিনি এই শব্দগুলি প্রয়োগ করেছিলেন: “শয়তানের চতুর অভিসন্ধির মতোই শতচ্ছিন্ন”, যা প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বর মতবাদ মেনে চলেন না। কিছু মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছার ভুল ব্যাখ্যা করে প্রশ্ন তুলতে পারে: এই কাজ স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা সম্পাদিত হওয়া সত্ত্বেও, কেন তিনি বললেন “একবার ফুলগুলি সজীবতা হারিয়ে ফেলার পর, সেগুলির প্রতি তখন কেউ আর কোনো আগ্রহ দেখায় না”? এই বাক্য মানুষকে এক উদ্ঘাটন প্রদান করে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যা তা হল এগুলি সকল মানুষকে এক নতুন, এবং সঠিক, সূচনাবিন্দু লাভের সুযোগ দান করে; একমাত্র তখনই তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করতে সক্ষম হবে। পরিশেষে, ঈশ্বরের লোকেরা ঈশ্বরকে সেই স্তুতি নিবেদন করতে সক্ষম হবে যা অকৃত্রিম, আরোপিত নয়, এবং যা তাদের অন্তর থেকে নিঃসৃত। ঈশ্বরের ৬,০০০ বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার মর্মস্থলে এটিই রয়েছে। অর্থাৎ, এটিই হল এই ৬,০০০ বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার স্ফটিকীকরণ: সকল মানুষকে ঈশ্বরের অবতাররূপের তাৎপর্য জানতে দেওয়া—তাদের ব্যবহারিকভাবে জানতে দেওয়া যে ঈশ্বর দেহে পরিণত হয়েছেন, অর্থাৎ, ঈশ্বরের দেহরূপে সম্পাদিত ক্রিয়াকর্মগুলির বিষয়ে জানতে দেওয়া—যাতে অনিশ্চিত ঈশ্বরকে তারা অস্বীকার করে, এবং সেই ঈশ্বরের বিষয়ে অবগত হয় যিনি আজকের এবং একই সাথে বিগতদিনের, এবং তদুপরি, অনাগতদিনেরও, প্রকৃতই ও বস্তুতই যিনি অনন্ত থেকে শাশ্বতে বিরাজ করেছেন। একমাত্র তখনই ঈশ্বর বিশ্রামে প্রবেশ করবেন!

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ১

পরবর্তী: অধ্যায় ৪

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন