গির্জার জীবন এবং বা্স্তব জীবন নিয়ে আলোচনা
মানুষ মনে করে যে তারা কেবল গির্জার র জীবনের মধ্যেই চারিত্রিক রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম। যদি তারা গির্জার জীবনের মধ্যে না থাকে, তাহলে তারা রূপান্তর ঘটাতে অক্ষম, যেন বাস্তব জীবনে রূপান্তর ঘটানো সম্ভব নয়। তোমরা কি এতে কোনও সমস্যা দেখতে পাও? আমি আগেই ঈশ্বরকে বাস্তব জীবনে নিয়ে আসার বিষয়ে আলোচনা করেছি; যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী তাদের জন্য ঈশ্বরের বাক্যর প্রকৃত সত্যতে প্রবেশ করার জন্য এটাই পথ। প্রকৃতপক্ষে, গির্জার জীবন মানুষকে নিখুঁত করার একটি সীমিত উপায় মাত্র। মানুষকে নিখুঁত করার প্রাথমিক পরিবেশ এখনও পর্যন্ত বাস্তব জীবন। এটি হল প্রকৃত অনুশীলন এবং প্রশিক্ষণ যে সম্পর্কে আমি বলেছিলাম, যেটা মানুষকে দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক মানবজীবন এবং একজন সত্যকার মানূষের মতো জীবনযাপন করতে দেয়। একদিকে, যেমন একজনকে অবশ্যই অধ্যয়ন করতে হবে নিজের শিক্ষার স্তরের উন্নয়নসাধন করতে, ঈশ্বরের বাণী বুঝতে, এবং সেটি গ্রহণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে। আবার অন্যদিকে সেই ব্যক্তিকে একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাভাবিক মানবতার অন্তর্দৃষ্টি এবং যুক্তি অর্জন করতে অবশ্যই প্রয়োজনীয় মৌলিক জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে, কারণ মানুষের মধ্যে এই ক্ষেত্রগুলিতে প্রায় পুরোপুরি অভাব পরিলক্ষিত হয়। অধিকন্তু, কোনও ব্যক্তিকে অবশ্যই গির্জার জীবনের মাধ্যমে ঈশ্বরের বাণীর মর্মার্থ গ্রহণ করতে হবে, এবং ধীরে ঘীরে সত্যের স্পষ্ট উপলব্ধি পেতে হবে।
কেন বলা হয় যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে হলে, ঈশ্বরকে বাস্তব জীবনে আনতে হবে? এটা শুধুই গির্জার জীবন নয় যা মানুষের চারিত্রিক রূপান্তর ঘটায়; আরও গুরুত্বপূর্ণ, বাস্তব জীবনের প্রকৃত সত্যকে মানুষের জানতে হবে। তোমরা সর্বদা তোমাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বাস্তব জীবনের অনেক অনুশীলন এবং সেগুলিতে জড়িত হওয়াকে অবহেলা করো। তুমি প্রতিদিন লিখছো, প্রতিদিন শুনছো, এবং প্রতিদিন পড়ছো। এমন কি তুমি রান্না করার সময় প্রার্থনা করছো: “হে, ঈশ্বর! তুমি আমার হৃদয়ে অবস্থান করে আমার জীবন হয়ে ওঠো। আজ যেমনটাই যাক না কেন, দয়া করে আমাকে আশীর্বাদ করে জ্ঞানদান করো। তুমি আমাকে আজকের বিষয়ে যা কিছু জ্ঞান দান করবে, তা দয়া করে আমাকে এই মুহূর্তে উপলব্ধি করার সুযোগ দাও, যাতে তোমার বাক্য আমার জীবনের পাথেয় হয়।” তুমি রাতের খাবার খাওয়ার সময়ও প্রার্থনা করেছিলে: “হে ঈ্শ্বর! তুমি আমাদের এই খাবার দিয়েছো। আমাদের আশীর্বাদ করো। আমেন! আমরা যেন তোমার দয়ায় জীবন কাটাতে পারি, তুমি আমাদের সঙ্গে থেকো। আমেন”! তোমার খাওয়া শেষে থালা-বাসন পরিষ্কার করার সময়, তুমি অসংলগ্নভাবে বলতে থাকো: “হে ঈশ্বর! আমি এই বাটির মতোই। এখন আমরা শয়তান দ্বারা কলুষিত আর তাই এই ব্যবহৃত বাটিগুলিকে যেমন জল দিয়ে পরিষ্কার করতেই হয় তেমনই আমাকেও নিষ্কলঙ্ক হতে হবে। তুমি হলে সেই জল, এবং তোমার বাক্যগুলি হল সেই প্রাণশক্তিসম্পন্ন জল যা আমার জীবন প্রদান করে।” তুমি কিছু বোঝার আগেই, তোমার ঘুমানোর সময় হয়ে যায় এবং তুমি আবার অসংলগ্নভাবে বলতে শুরু করো: “হে ঈশ্বর! আমি তোমার আশীর্বাদ ধন্য এবং তুমি আমাকে সারাদিন পথ দেখিয়েছো। আমি সত্যই তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। ...” এইভাবেই তুমি তোমার দিন কাটিয়েছো – এবং তারপর ঘুমিয়ে পড়েছো। বেশিরভাগ মানুষ তার দৈনন্দিন জীবন এমনভাবেই কাটায়, এবং এমনকি এখনও তারা প্রকৃত প্রচেষ্টার পথকে অবহেলা করে, শুধুমাত্র প্রার্থনা করার সময় বলা কথার উপরেই মনোযোগ দেয়, এটিই হল তাদের পূর্বজন্ম তাদের প্রাক্তন জীবন। এবং অধিকাংশই এরকম; তাদের প্রকৃত শিক্ষার অভাব আছে, এবং তারা খুব কমই বাস্তব রূপায়নের মধ্যে দিয়ে যায়। তারা কেবল প্রার্থনা করে, শুধুমাত্র কথার মাধ্যমেই তারা ঈশ্বর-সান্নিধ্যে পৌঁছাতে চায়, উপলব্ধি করে না কোন কিছুই। সবচেয়ে সহজ উদাহরণ হল-তোমার ঘর পরিপাটি করা। তুমি তোমার অগোছালো ঘর দেখেও সেখানে বসে প্রার্থনা শুরু করলে: “হে ঈশ্বর! শয়তান আমার যে অধঃপতন ঘটিয়েছে তা তুমি দেখো। আমি ঠিক এই ঘরের মতোই মলিন। হে ঈশ্বর! আমি তোমার স্তব করে তোমাকে ধন্যবাদ জানাই। তোমার ত্রাণ এবং প্রজ্ঞা ছাড়া আমি এই সত্যকে উপলব্ধি করতে পারতাম না।” তুমি কেবল সেখানে বসে অনেকক্ষণ প্রার্থনা করলে, এবং তারপরে তুমি এমন আচরণ করো যেন কিছুই হয়নি, যেন তুমি একজন বিভ্রান্ত বৃদ্ধা। তুমি বাস্তবে কোনও সত্য উপলব্ধি না করেই কিছু অগভীর অভ্যাসের মধ্য দিয়ে তোমার আধ্যাত্মিক জীবন অতিবাহিত করেছো! মানুষের বাস্তব জীবন এবং তাদের ব্যবহারিক অসুবিধাগুলির সাথে পরিচিত হওয়ার প্রকৃত প্রশিক্ষণই হল – তাদের চারিত্রিক পরিবর্তন করার একমাত্র উপায়। বাস্তব জীবন ছাড়া মানুষ পরিবর্তিত হতে পারে না। শুধু প্রার্থনা করে কী লাভ? মানুষের স্বভাবকে না বুঝলে সব কিছুই হল সময়ের অপচয়, এবং অনুশীলনের পথ ছাড়া, সব পরিশ্রমই বৃথা! সাধারণ প্রার্থনা মানুষকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে তারা সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত হতে পারে না। মানুষের নিজেকে জানা, ধার্মিকতা, অহংকার, ঔদ্ধত্য, এবং মানুষের কলুষিত স্বভাব সম্পর্কে জানা – এই সমস্ত জ্ঞান প্রার্থনার মাধ্যমে জানা যায়না – এগুলি বাস্তব জীবনে ঈশ্বরের বাক্যউপলব্ধি করার মাধ্যমে এবং পবিত্র আত্মার থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের মাধ্যমে জানা যায়। আজকাল মানুষরা বেশ ভাল কথা বলতে পারে, এবং তারা মহৎ ধর্ম প্রচার শুনেছে – যুগে যুগে অন্যের চেয়ে আরও উচ্চতর – তথাপি তাদের বাস্তব জীবনে এগুলির খুব কমই রূপায়ণ ঘটে। অর্থাৎ তাদের বাস্তব জীবনে ঈশ্বর নেই; তারা তাদের চারিত্রিক রূপান্তরের পর নতুন মানুষের জীবন ধারণ করে না। তাদের বাস্তব জীবন সত্যবিহীন, তারা ঈশ্বরকে বাস্তব জীবনে নিয়ে আসে না। তারা নরকের সন্তানের মতো জীবনযাপন করে। এটি কি স্পষ্ট বিচ্যুতি নয়?
একজন সাধারণ মানুষের মত স্বাভাবিক মানবিকতা অর্জন করার জন্য মানুষ শুধুমাত্র নিজেদের কথার মাধ্যমে ঈশ্বরকে খুশি করতে পারেনা। এমনটি করে তারা শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষতিই করে, এবং এটি তাদের উপলব্ধি অথবা রূপান্তরের ক্ষেত্রে কোনো কাজেই আসে না। তাই, রূপান্তরিত হওয়ার জন্য, মানুষকে ধীরে ধীরে অনুশীলন করতে হবে। তাদের অবশ্যই ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে হবে, একটু একটু করে অনুধাবন এবং অন্বেষণ করতে হবে, ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে, এবং সত্যের পথে বাস্তব জীবনযাপন করতে হবে; একজন সন্তের জীবনযাপনের মতো। তারপরে বাস্তব বিষয়, বাস্তব ঘটনা, এবং বাস্তব পরিবেশ মানুষকে ব্যবহারিক উপলব্ধির সুযোগ দেবে। শুধু কথার মাধ্যমে মানুষের প্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই; পরিবর্তে তাদের বাস্তব পরিবেশে শিক্ষা নিতে হবে। মানুষকে প্রথমে বুঝতে হবে যে তাদের বুদ্ধিমত্তা নগণ্য, এবং তারপর স্বাভাবিকভাবে দৈনিক তিনবেলা আহার গ্রহণের মত তারা ঈশ্বরের বাক্যকে ভোজন ও পান করবে এবং সেইসাথে স্বাভাবিকভাবে অনুশীলন শুরু করবে; শুধুমাত্র এইভাবে তারা বাস্তবতা পেতে পারে, এবং এইভাবেই ঈশ্বরের বাক্যর উপলব্ধি আরও দ্রুত ঘটতে পারে। মানুষকে বাস্তবসম্মত উপায়েই পরিবর্তিত হতে হবে; তাদের অবশ্যই বাস্তব বিষয়, বাস্তব ঘটনা, এবং বাস্তব পরিবেশে অনুশীলন করতে হবে। শুধুমাত্র গির্জার জীবনের উপর নির্ভর করে কেউ কি সত্যকারের উপলব্ধি করতে পারে? মানুষ কি এইভাবে বাস্তবে প্রবেশ করতে পারে? না! মানুষ যদি বাস্তব জীবনে প্রবেশ করতে না পারে, তারা তাদের পুরানো জীবনধারা এবং কাজ করার পদ্ধতিকে পরিবর্তিত করতে পারবে না। এটি সম্পূর্ণরূপে মানুষের আলস্য এবং অধিক মাত্রার নির্ভরতার কারণে নয়, বরং এটি এই কারণে যে মানুষের জীবন-ধারণের কোনও ধারণাই নেই, উপরন্তু, তারা বোঝেই না যে ঈশ্বরের পছন্দের মানই হল সাধারণ মানুষ। অতীতে মানুষ সর্বদা আলাপ-আলোচনা করতো, কথা বলতো, যোগাযোগ করতোএবং তারা “বাগ্মী”ও হয়ে উঠতো – তথাপি তাদের মধ্যে কেউই তাদের জীবনের স্বাভাবিক প্রবণতাকে পরিবর্তিত করতে চায়নি; পরিবর্তে তারা অন্ধভাবে গভীর তত্ত্বের সন্ধান করেছিল। সুতরাং, আজকের মানুষকে তাদের জীবনে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে এই ধর্মীয় রীতিকে পরিবর্তন করতে হবে। তাদের অবশ্যই একটি ঘটনা, একটি বস্তু, একটি ব্যক্তিতে মনোনিবেশ করে অনুশীলন করতে হবে। তাদের অবশ্যই মনোযোগ সহকারে এটি করতে হবেতবেই তারা ফলাফল পেতে পারে। মানুষের রূপান্তর শুরু হয় তাদের প্রকৃতির পরিবর্তনের মাধ্যমে। এই কাজটি অবশ্যই মানুষের প্রকৃতি, তাদের জীবন, এবং তাদের আলস্য, নির্ভরশীলতা, এবং কলুষতার দিকে লক্ষ্য রেখে করতে হবে – একমাত্র এইভাবেই তারা রূপান্তরিত হতে পারে।
যদিও গির্জার জীবনে কিছু ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যায়, তবুও মূল বিষয় হল বাস্তব জীবনই মানুষকে পরিবর্তিত করতে পারে। বাস্তব জীবন ছাড়া কোনও মানুষের পুরানো স্বভাব পরিবর্তিত হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, দয়ার যুগেযীশু যে কাজ করেছিলেন। যীশু তখন পূর্ববর্তী আইনসমূহ বাতিল করে নতুন যুগের আইন প্রতিষ্ঠা করেন, এবং তিনি বাস্তব জীবন থেকেই প্রকৃত উদাহরণ ব্যবহার করে কথা বলেছিলেন। যীশু যখন এক বিশ্রামের দিনে তাঁর শিষ্যদের গম ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর শিষ্যরা ক্ষুধার্ত হয়ে শষ্যের ডগা ছেঁড়ে খাবার জন্য। ফরীশীরা এটি দেখে বলে যে তারা বিশ্রাম-এর দিন পালন করছে না। তারা আরও বলে যে বিশ্রামের দিন গর্তে পড়ে যাওয়া বাছুরকেও বাঁচানোর অনুমতি নেই, অর্থাৎ বিশ্রামবারে কোনও কাজ করা যাবে না। যীশু ধীরে ধীরে নতুন যুগের আদেশ ঘোষণা করার জন্য এই ঘটনাগুলি উল্লেখ করেছেন। সেই সময়, তিনি মানুষকে বুঝতে এবং রূপান্তরিত হতে সাহায্য করার জন্য অনেক বাস্তব বিষয় ব্যবহার করেছিলেন। এই সেই নীতি যার দ্বারা পবিত্র আত্মা তাঁর কাজ সম্পাদন করেন, এবং এটিই একমাত্র উপায় যা মানুষকে রূপান্তরিত করতে পারে। ব্যবহারিক বিষয় ব্যতীত, মানুষ শুধুমাত্র একটি তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উপলব্ধি লাভ করতে পারে – রূপান্তরেরএএটি কোনোকার্যকর উপায় নয়। তাহলে কীভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করে? মানুষ কি শুধুমাত্র শোনা, পড়া, এবং তাদের বোধ বৃদ্ধির দ্বারা জ্ঞান এবং অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারে? এটি কী ভাবে হতে পারে? মানুষকে তা বাস্তব জীবনেই বুঝতে এবং অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে! সুতরাং, মানুষকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে এবং বাস্তব জীবনে থাকতে হবে। মানুষকে অবশ্যই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে মনযোগ দিতে হবে এবং বিবিধ বিষয়ে প্রবেশ করতে হবে: শিক্ষার স্তর, অভিব্যক্তি, জিনিস দেখার ক্ষমতা, ঈশ্বরের বাক্য বোঝার ক্ষমতা, সাধারণজ্ঞান এবং সর্বজনীন মূল্যবোধ এবং মানবতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সব কিছুই মানুষকে অর্জন করতে হবে। উপলব্ধি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, মানুষকে প্রবেশের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, এবং তবেই রূপান্তর লাভ করা যেতে পারে। যদি কেউ উপলব্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করার স্বত্ত্বেও অনুশীলনকে অবহেলা করে, তাহলে কীভাবে রূপান্তর ঘটবে? বর্তমানে, মানুষ অনেক কিছু বোঝে, কিন্তু তারা বাস্তবে বাস করে না; এইরূপে, তারা ঈশ্বরের বাক্যর অপরিহার্য় উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত হয়। তুমি শুধুমাত্র সীমিত পরিমান জ্ঞানদীপ্ত হয়েছো; তুমি পবিত্র আত্মার কাছ থেকে সামান্য বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান পেয়েছো, তবুও তুমি বাস্তব জীবনে প্রবেশ করোনি--অথবা হয়তো তুমি প্রবেশের বিষয়ে চিন্তাও করো না--এইভাবে তোমার পরিবর্তন হওয়া হ্রাস পেয়েছে। এত দীর্ঘ সময় পরে, মানুষ অনেক বিষয় বোঝে। তারা তাদের তত্ত্বের জ্ঞান সম্পর্কে অনেক কথা বলতে পারে, কিন্তু তাদের বাহ্যিক স্বভাব একই রকম তেকে গেছে, এবং তাদের মূল চারিত্রিক গুণ আগের মতোই রয়েছে, সামান্যতম অগ্রগতিও হয় নি। যদি এমনই হয়, তাহলে কবে তুমি চূড়া্ন্তভাবে প্রবেশ করবে?
গির্জার জীবন হল শুধুমাত্র একধরণের জীবন যেখানে মানুষ ঈশ্বরের বাক্য উপভোগ করার জন্য একত্রিত হয়, এবং শুধুমাত্র এটি কোন মানুষের জীবনে খুব সামান্য উন্নতি ঘটায়। যদি মানুষের বাস্তব জীবনও তাদের গির্জার জীবনের মতো হতে পারতো – তৎসহ স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন, স্বাভাবিকভাবে ঈশ্বরের বাক্য উপভোগ করা, প্রার্থনা করা এবং স্বাভাবিকভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া, বাস্তব জীবন অতিবাহিত করা যেখানে সবকিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী ঘটে, এমন বাস্তব জীবন কাটানো যেখানে সব কিছু সত্য ও ন্যায়ের সাথে সম্পন্ন হয়, এমন বাস্তব জীবন যেখানে প্রার্থনার এবং ঈশ্বরের সামনে প্রশান্ত থাকার অনুশীলন সম্ভব, ঈশ্বরের স্তবের অনুশীলন করা – তাহলে সেটিই ই হতো সেই ধরণের জীবন যা তাদের ঈশ্বরের বাক্যগুলি র জীবনে আনতো। বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাইরের জীবনকে “গ্রাহ্য” না করে শুধুমাত্র গির্জার জীবনের কতিপয় ঘণ্টার উপর মনোনিবেশ করে, যেন এটি নিয়ে তাদের কোনও চিন্তা নেই। এমনও অনেক ব্যক্তি আছে যারা কেবল ঈশ্বরের বাক্য ভোজন এবং পান করা, স্তব করা, অথবা প্রার্থনা করার সময় সাধুর জীবনের মতো আচরণ করে. কিন্তু সেই সময় কাটানো হয়ে গেলেই তারা আগের ব্যক্তিত্বে ফিরে যায়। এইভাবে জীবনধারণ মানুষকে পরিবর্তিত করতে পারে না, তারা ঈশ্বরের সম্পর্কে খুব অল্পই জানতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, মানুষ যদি তাদের স্বভাবের পরিবর্তন করতে চায়, তাহলে বাস্তব জীবন থেকে নিজেদের কখনও বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। বাস্তব জীবনে, নিজেকে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত করতে সক্ষম হওয়ার আগে তোমাকে অবশ্যই নিজেকে জানতে হবে, ত্যাগ করতে হবে, সত্যের অনুশীলন করতে হবে, সেইসাথে নীতি, সাধারণ জ্ঞান, এবং প্রতিটি বিষয়ে আত্ম – আচরণের নিয়মগুলি শিখতে হবে। তুমি যদি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞানের দিকে মনোনিবেশ করো এবং বাস্তবের গভীরে না গিয়ে, বাস্তব জীবনে প্রবেশ না করে, শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার – অনুষ্ঠানে জীবন কাটাও তাহলে তুমি কখনই বাস্তবে প্রবেশ করতে পারবে না, কখনই নিজেকে, সত্যকে, অথবা ঈশ্বরকে জানতে পারবে না, তুমি চিরকাল বিচারবুদ্ধিহীন ও অজ্ঞ থাকবে। মানবজাতির পরিত্রাণে ঈশ্বরের কাজ তাদের অল্প সময় পরে স্বাভাবিক মানবজীবন অতিবাহিত করতে দেওয়া নয় বা তাদের ভ্রান্ত ধারণা বা বিশ্বাসের পরিবর্তন করা নয়। বরং, তাঁর উদ্দেশ্য হল মানুষের সহজাত মন ও চরিত্রের পরিবর্তন করা, তাদের পুরানো জীবনধারার সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা, এবং তাদের চিন্তাভাবনা ও মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির সকল পুরানো পদ্ধতির পরিবর্তন করা। শুধুমাত্র গির্জার জীবনের উপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে মানুষের পুরানো জীবনের অভ্যাসের পরিবর্তন আনা যাবে না বা তারা দীর্ঘকাল ধরে যেভাবে জীবন কাটিয়েছে তার পরিবর্তন করা যাবে না। যাই হোক না কেন, মানুষ তার বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না। ঈশ্বর চান যে মানুষ কেবল গির্জার জীবনে নয়, বাস্তব জীবনেও যেন স্বাভাবিক মানবিকতা বজায় রাখে; তারা বাস্তব জীবনে সত্যের মধ্যে বাস করবে, শুধুমাত্র গির্জার র জীবনে নয়; এবং তারা বাস্তব জীবনেই তাদের কাজকর্ম নির্বাহ করবে, গির্জার জীবনে নয়। বাস্তব জীবনে প্রবেশ করার জন্য, সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই সবকিছু বাস্তবজীবনের দিকে ফেরাতে হবে। যদি, ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, মানুষ বাস্তব জীবনে প্রবেশের মাধ্যমে নিজেকে চিনতে না পারে, এবং যদি তারা বাস্তবে স্বাভাবিক মানব জীবন যাপন না করতে পারে, তবে তারা ব্যর্থ হবে। যে সকল ব্যক্তি ঈশ্বরকে অমান্য করে তারা বাস্তব জীবনে প্রবেশ করতে পারে না। তারা সকলেই মানবতার কথা বলে, কিন্তু তারা মন্দ আত্মার দাস। তারা সকলেই সত্যের কথা বলে কিন্তু পরিবর্তে একটি বিশ্বাসকেই মেনে জীবন কাটায়। যারা বাস্তব জীবনে সত্যের অনুসরণ করে না তারাই ঈশ্বর বিশ্বাসী নয়, বরঞ্চ ঈশ্বর তাদের অপছন্দ করেন এবং প্রত্যাখ্যান করেন। তোমাকে বাস্তব জীবনে প্রবেশের অনুশীলন করতে হবে, নিজের ঘাটতি, অবাধ্যতা, এবং অজ্ঞতাকে জানতে হবে, এবং নিজের মানবিক অস্বাভাবিকতা ও দুর্বলতাগুলি জানতে হবে। এইভাবে, তোমার জ্ঞান তোমার প্রকৃত অবস্থা এবং অসুবিধাগুলির মধ্যে একত্রিত হবে। শুধুমাত্র এই ধরণের জ্ঞানই হল বাস্তব এবং তোমার নিজের অবস্থার সত্য উপলব্ধি এবং স্বভাবগত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে পারে।
এখন মানুষকে নিখুঁত করা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে, তোমাকে অবশ্যই বাস্তব জীবনে প্রবেশ করতে হবে। সুতরাং, পরিবর্তিত হওয়ার জন্য, তোমাকে অবশ্যই প্রথমে বাস্তব জীবনে প্রবেশ করতে হবে, এবং তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তিত করতে হবে। যদি তুমি স্বাভাবিক মানব জীবন এড়িয়ে যাও এবং শুধু আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথা বল, তাহলে সবকিছু শুষ্ক ও একঘেয়ে মনে হবে; সবকিছুই অবাস্তব বোধ হবে এবং তারপর মানুষ কী ভাবে পরিবর্তিত হবে? এখন তোমাকে বলা হয়েছে বাস্তব জীবনে প্রবেশের অনুশীলন করার জন্য, যাতে সত্য অভিজ্ঞতায় প্রবেশের ভিত্তি স্থাপন করা যায়। মানুষকে কী করতে হবে এটি তার একটি পথ। পবিত্র আত্মার কাজ প্রধানত মানুষকে পথ দেখানো, বাকিটা নির্ভর করে মানুষের অনুশীলন এবং প্রবেশের উপর। প্রত্যেকেই বিভিন্ন পথের মধ্যে দিয়ে বাস্তব জীবনে প্রবেশ করতে পারে, যাতে তারা ঈশ্বরকে বাস্তব জীবনে আনতে পারে, এবং প্রকৃত স্বাভাবিক মানব জীবন যাপন করতে পারে। এটিই হল অর্থবহ জীবনের ধরণ!