একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন সম্পর্কে
ঈশ্বরে বিশ্বাসের জন্য একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবনের প্রয়োজন, যা ঈশ্বরের বাণীগুলির অভিজ্ঞতা অর্জন এবং বাস্তবে প্রবেশের ভিত্তি। তোমাদের এখনকার সমস্ত প্রার্থনা, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া, স্তোত্র-গান, প্রশংসা, ধ্যান এবং ঈশ্বরের বাণী নিয়ে ধ্যান করার অভ্যাস কি একটি "স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন" এর সমান? তোমরা কেউই তা জানো বলে মনে হয় না। একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন কেবল প্রার্থনা করা, স্তোত্র গাওয়া, গির্জার জীবনে অংশগ্রহণ করা এবং ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করার মতো অভ্যাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং, তাতে অন্তর্ভুক্ত থাক একটি নতুন এবং প্রাণবন্ত আধ্যাত্মিক জীবন যাপন। তোমরা কীভাবে অনুশীলন করো তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তোমাদের অনুশীলন কী ফল দেয় তাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ লোক বিশ্বাস করে যে প্রার্থনা করা, স্তোত্র গাওয়া, ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করা বা তাঁর বাক্যগুলি ধ্যান করা, ইত্যাদি একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, এই ধরনের অভ্যাসগুলি প্রকৃতপক্ষে কোন প্রভাব ফেলে কিনা বা সত্যিকারের বোধের দিকে পরিচালিত করে কিনা তা বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই। এইসব লোকেরা তাদের ফলাফল সম্পর্কে কোন চিন্তা না করেই বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান অনুসরণ করার দিকে মনোনিবেশ করে; তারা এমন ধরনের লোক যারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়েই মেতে থাকে, গির্জার ভিতরের অনুশাসন মেনে চলে না, এবং তারা সেই রাজত্বের লোক তো নয়ই। তাদের প্রার্থনা, স্তোত্র গান, এবং ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করা সবই কেবল নিয়ম-অনুসরণ, বাধ্যতামূলকভাবে এবং রীতি বজায় রাখার জন্য পালন করা, স্বেচ্ছায় বা হৃদয় থেকে নয়। এরা যতই প্রার্থনা করুক বা গান করুক, তাদের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে না, কারণ তারা যা পালন করে তা কেবল ধর্মের নিয়ম এবং আচারসমূহ; তারা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের বাক্য অনুশীলন করছে না। তারা কেবল কীভাবে অনুশীলন করবে তা নিয়ে হট্টগোল করার দিকেই মনোনিবেশ করে, এবং তারা ঈশ্বরের বাক্যকে সামান্য অনুসরণীয় নিয়ম হিসাবে বিবেচনা করে। এই ধরনের লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যকে বাস্তবে প্রয়োগ করছে না; তারা শুধু শরীরকে তৃপ্তি দিচ্ছে, এবং অন্য মানুষদের দেখানোর জন্য অভিনয় করছে। এই ধর্মীয় বিধি ও আচার-অনুষ্ঠান সবই মানুষের উৎপত্তি; এগুলি ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে না। ঈশ্বর নিয়ম অনুসরণ করেন না, তিনি কোনো আইনের অধীনও নন। বরং, তিনি প্রতিদিন নতুন কিছু করেন, ব্যবহারিক কাজ সম্পাদন করেন। তিন-সত্ত্বার গির্জার লোকেদের মতো, যারা প্রতিদিন সকালের উপাসনায় যোগদান, সন্ধ্যার প্রার্থনা এবং খাবারের আগে কৃতজ্ঞতার প্রার্থনা প্রদান এবং সমস্ত কিছুতে ধন্যবাদ জানানোর মতো অনুশীলনের মাঝেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে—তারা তা যতই করুক, এবং যতই দীর্ঘ সময় ধরে তারা তা করুক না কেন, তারা পবিত্র আত্মার কাজের ফল পাবে না। লোকেরা যখন নিয়মের মধ্যে বাস করে এবং তাদের হৃদয় অনুশীলনের পদ্ধতির ওপর নির্দিষ্ট হয়ে থাকে, তখন পবিত্র আত্মা কাজ করতে পারেন না, কারণ তাদের হৃদয় নিয়ম এবং তুচ্ছ জাগতিক ধারণা দ্বারা পূর্ণ হয়ে থাকে। তাই, ঈশ্বর হস্তক্ষেপ করতে এবং তাদের উপর কাজ করতে অক্ষম হন, এবং তারা শুধুমাত্র আইনের নিয়ন্ত্রণের অধীনে জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের লোকেরা চিরকাল ঈশ্বরের প্রশংসা গ্রহণ করতে অক্ষম।
একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন হলো ঈশ্বরের সামনে কাটানো একটি জীবন। প্রার্থনা করার সময়, একজন মানুষ ঈশ্বরের সামনে নিজের হৃদয়কে শান্ত করতে পারে, এবং প্রার্থনার মাধ্যমে, একজন মানুষ পবিত্র আত্মার জ্ঞানের সন্ধান করতে পারে, ঈশ্বরের কথা জানতে পারে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে পারে। তাঁর বাক্য ভোজন এবং পান করার মাধ্যমে, মানুষ ঈশ্বরের বর্তমান কাজ সম্পর্কে আরও পরিষ্কার এবং আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ উপলব্ধি লাভ করতে পারে। অনুশীলনের একটি নতুন পথও তারা অর্জন করতে পারে, এবং তারা পুরানোকে আঁকড়ে ধরে থাকবে না; তারা যা অনুশীলন করবে তা জীবনের বিকাশ অর্জনের জন্য হবে। প্রার্থনার ক্ষেত্রে বলতে হয়, কিছু সুন্দর শব্দ সাজিয়ে কথা বলা বা ঈশ্বরের সামনে তোমরা কতটা ঋণী তা নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ার জন্য প্রার্থনা নয়; বরং, এর উদ্দেশ্য হল আত্মার ব্যবহারে নিজেকে প্রশিক্ষিত করা, ঈশ্বরের সামনে একজনের হৃদয়কে শান্ত করার অনুমতি দেওয়া, সমস্ত বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য থেকে নির্দেশনা খোঁজার জন্য নিজেকে প্রশিক্ষিত করা, যাতে একজনের হৃদয় প্রতিদিন একটি নতুন বিশুদ্ধ আলোর দিকে আকৃষ্ট হতে পারে, এবং যাতে কেউ নিষ্ক্রিয় বা অলস না হয় এবং ঈশ্বরের কথাগুলিকে বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য সঠিক পথে পা রাখতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ আজকাল অনুশীলনের পদ্ধতিগুলিতে মনোনিবেশ করে, তবুও সত্যকে অনুসরণ এবং জীবনের বৃদ্ধি অর্জনের জন্য তারা তা করে না। এখানেই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। এমনও কিছু মানুষ আছে যারা নতুন আলো পেতে সক্ষম, কিন্তু তাদের অনুশীলনের পদ্ধতি পরিবর্তিত হয় না। যখন তারা আজকের ঈশ্বরের বাণী গ্রহণ করতে চায় তখন তারা তাদের সাথে তাদের পুরানো ধর্মীয় ধারণাগুলি নিয়ে আসে, তাই তারা যা পায় তা হলো ধর্মীয় ধারণায় আচ্ছন্ন মতবাদ; তারা সহজে আজকের আলো পাচ্ছে না। ফলে তাদের চর্চা কলূষিত হয়; যেগুলো নতুন মোড়কে আসলে সেই একই পুরানো অভ্যাস। তারা যতই ভালোভাবে চর্চা করুক, তারা ভণ্ড। ঈশ্বর মানুষকে প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস করার জন্য নেতৃত্ব দেন, তিনি চান যেন তারা প্রতিদিন নতুন অন্তর্দৃষ্টি এবং উপলব্ধির অধিকারী হয়, এবং তারা যেন একঘেয়ে এবং পুনরাবৃত্তিমূলক না হয়। তোমরা যদি বহু বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, তবুও তোমাদের অনুশীলনের পদ্ধতিগুলি একেবারেই পরিবর্তিত না হয়, এবং তোমরা যদি এখনও জাগতিক বিষয়ে উদ্যোগী এবং ব্যস্ত থাকো, তবুও ঈশ্বরের বাক্য উপভোগ করতে তাঁর সামনে আনার জন্য শান্ত হৃদয় না থাকে, তাহলে তোমরা কিছুই পাবে না। ঈশ্বরের নতুন কাজ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে, যদি তোমরা ভিন্নভাবে পরিকল্পনা না করো, নতুন উপায়ে তোমাদের অনুশীলনের বিষয়ে না এগোও, এবং কোনো নতুন উপলব্ধির অনুসরণ না করো, বরং পুরানোকে আঁকড়ে ধরে থাকো এবং কেবল সীমিত কিছু নতুনকে গ্রহণ করো, তোমাদের অনুশীলনের উপায় পরিবর্তন না করে, তবে তোমাদের মতো লোকেরা কেবল নামেই এই স্রোতে রয়েছে; প্রকৃতপক্ষে, তারা পবিত্র আত্মার প্রবাহের বাইরে ধর্মচারী ফরীশী।
একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করতে হলে, মানুষকে অবশ্যই প্রতিদিন নতুন আলো পাওয়া এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলির একটি সত্য উপলব্ধিকে অনুসরণ করতে সক্ষম হতে হবে। তাকে অবশ্যই সত্যকে স্পষ্টভাবে দেখতে হবে, সমস্ত বিষয়ে অনুশীলনের একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে, প্রতিদিন ঈশ্বরের বাণী পাঠের মাধ্যমে নতুন প্রশ্নসমূহ আবিষ্কার করতে হবে এবং নিজের অপূর্ণতাগুলি উপলব্ধি করতে হবে, যাতে তার একটি আকাঙ্ক্ষিত এবং অন্বেষণকারী হৃদয় গড়ে ওঠে, যা তার সমগ্র সত্তাকে স্পর্শ করবে, এবং যাতে সে ব্যক্তি পিছিয়ে পড়ার ভয়ে সর্বদা ঈশ্বরের সামনে শান্ত থাকতে পারে। এই ধরনের আকাঙ্ক্ষাকারী, অন্বেষণকারী হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি, যিনি অবিরত প্রবেশ করার অনুমতি অর্জন করতে ইচ্ছুক, তিনিই আধ্যাত্মিক জীবনের সঠিক পথে আছেন। যারা পবিত্র আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, যারা আরও ভাল করতে চায়, যারা ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হওয়ার অন্বেষণ করতে ইচ্ছুক, যারা ঈশ্বরের বাণীগুলির গভীরতর উপলব্ধি পেতে আকাঙ্ক্ষা করে, যারা অতিপ্রাকৃতের অন্বেষণ করে না বরং প্রকৃত মূল্য পরিশোধ করে, যারা সত্যই ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি যত্নবান, যারা প্রকৃতপক্ষে প্রবেশ অর্জন করে যাতে তাদের অভিজ্ঞতাগুলি আরও খাঁটি এবং বাস্তব হয়, যারা ফাঁকা বুলি এবং মতবাদের অনুসরণ করে না বা অতিপ্রাকৃতকে অনুভব করার চেষ্টায় অনুসরণ করে না, যারা কোন মহান ব্যক্তিত্বের উপাসনা করে না—তারাই একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশ করেছে। তারা যা কিছু করে সবই জীবনে আরও বৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্য নিয়ে, এবং তাদের আধ্যাত্মিকভাবে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং তারা সর্বদা সক্রিয়ভাবে প্রবেশাধিকার অর্জন করতে সক্ষম হয়। তারা না জেনেই সত্যকে উপলব্ধি করে এবং বাস্তবে প্রবেশ করে। যারা স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন ধারণ করে তারা প্রতিদিন আত্মিক মুক্তি এবং স্বাধীনতা খুঁজে পায়, এবং তারা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য মুক্ত উপায়ে ঈশ্বরের বাক্য অনুশীলন করতে পারে। এই লোকেদের জন্য, প্রার্থনা মানে কোন আনুষ্ঠানিকতা বা রীতিপদ্ধতি নয়; প্রতিদিন, তারা নতুন আলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ ঈশ্বরের সামনে তাদের হৃদয়কে শান্ত করার জন্য নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করে, এবং তাদের হৃদয় সত্যিই ঈশ্বরের সামনে শান্ত হতে পারে, এবং তারা কারো দ্বারাই অস্থির হতে পারে না। কোন ব্যক্তি, ঘটনা বা জিনিস তাদের স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবনকে সীমাবদ্ধ করতে পারে না। এই ধরনের প্রশিক্ষণ করানো হয় ফলাফল প্রাপ্তির অভিলাষে; মানুষকে নিয়ম অনুসরণ করানোর উদ্দেশ্যে নয়। এই অনুশীলনটি নিয়ম-অনুসরণের জন্য নয়, বরং এটি মানুষের জীবনে বিকাশকে উৎসাহিত করার জন্য। তুমি যদি এই অনুশীলনটিকে শুধু অনুসরণ করার জন্য নিয়ম হিসাবে দেখো, তবে তোমার জীবন কখনোই পরিবর্তিত হবে না। তুমি অন্যদের মতো একই অনুশীলনে নিযুক্ত হতে পারো, কিন্তু যখন তারা শেষ পর্যন্ত পবিত্র আত্মার কাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়, তখন তুমি পবিত্র আত্মার প্রবাহ থেকে বাদ পড়ে যাও৷ তোমরা কি নিজেদের প্রতারণা করছ না? এই কথাগুলির উদ্দেশ্য হল মানুষকে ঈশ্বরের সামনে তাদের হৃদয়কে শান্ত করার অনুমতি দেওয়া, তাদের হৃদয়কে ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তাদের মধ্যে ঈশ্বরের কাজ বাধাহীন হতে পারে এবং ফলপ্রসূ হতে পারে। কেবল তখনই মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতি রক্ষা করতে পারবে।