অধ্যায় ৩৯
প্রতিদিন আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উপর উঠে আসি, আমার হাতে সৃষ্ট সকলকিছুকে পর্যবেক্ষণ করি। স্বর্গসমূহের ঊর্ধ্বে আমার বিশ্রামস্থল, এবং নিম্নে আমার বিচরণভূমি। যাকিছু আছে তার সকলকিছুকে আমি নিয়ন্ত্রণ করি, সমুদয় বস্তুর মধ্যে যাবতীয়কিছুকে আমি আদেশ করি, যাকিছু রয়েছে সেসকলকে আমি প্রাকৃতিক গতিপথ অনুসরণ করতে ও প্রকৃতির নির্দেশের কাছে সমর্পণ করতে বাধ্য করি। যারা আনুগত্যহীন তাদের আমি ঘৃণা করি বলে, এবং যারা আমার বিরোধিতা করে ও তাদের নিজস্ব শ্রেণীবিভাগে আপতিত হয় না তাদের প্রতি বিতৃষ্ণা পোষণ করি বলে, প্রতিরোধ ছাড়াই, সকলকিছুকে আমার বন্দোবস্তের কাছে সমর্পণ করাবো, ব্রহ্মাণ্ডের উপর ও অভ্যন্তরের যাবতীয়কিছুকে সুশৃঙ্খল করবো। এখনো স্বেচ্ছাচারীভাবে আমায় প্রতিরোধ করার স্পর্ধা কে করবে? আমার হস্তকৃত বিন্যাসকে অমান্য করার স্পর্ধা কে দেখাবে? আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পিছনে মানুষের কোনো “স্বার্থ” কীভাবে থাকতে পারে? মানুষকে আমি তাদের “পিতৃপুরুষদের” সামনে আনীত করাবো, তাদের পিতৃপুরুষকে দিয়ে তাদেরকে চালিত করে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাবো, এবং তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আমার পাশে প্রত্যাবর্তন করার অনুমোদন দেওয়া হবে না। এমনই আমার পরিকল্পনা। আজ, আমার আত্মা পৃথিবীব্যাপী বিচরণ করে, সকল প্রকারের মানুষের জন্য ক্রমাঙ্ক ধার্য করেন, প্রত্যেক ধরনের মানুষের উপর ভিন্ন ভিন্ন মান-সূচক সংখ্যা আরোপ করেন, যাতে তাদের পূর্বপুরুষরা সাফল্যের সঙ্গে তাদেরকে পথ দেখিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, এবং আমায় আর তাদের বিষয়ে অবিরাম “উদ্বিগ্ন হওয়া”-র প্রয়োজন না থাকে, যে কাজটা খুবই বিরক্তিকর; এইভাবে, একই সঙ্গে আমি শ্রম বিভাজন করে দিই, এবং প্রচেষ্টা বণ্টন করে দিই। এ হল আমার পরিকল্পনার অংশ, এবং কোনো মানুষের দ্বারা তা বিঘ্নিত হতে পারে না। সকল বস্তুর পরিচালনার উদেশ্যে, যা কিছু আছে তাদের মধ্য থেকে আমি উপযুক্ত প্রতিনিধি বেছে নেবো, এবং আমার সম্মুখে সকলকিছুর সুশৃঙ্খল সমর্পণ ঘটাবো। প্রায়শই আমি স্বর্গসমূহের ঊর্ধ্বদেশে ইতস্তত পরিভ্রমণ করি, এবং প্রায়শই তাদের নিম্নদেশে পদচারণা করি। যে সুবিশাল ভুবনে মানুষ যায় আর আসে তাকে দেখে, পৃথিবীর বুকে ঠাসবোঝাই হয়ে থাকা মানবজাতিকে পর্যবেক্ষণ করে, এবং এই গ্রহে বাসরত পশুপাখিদের দেখে, আমার হৃদয়ে আমি আবেগাপ্লুত না হয়ে পারি না। সৃষ্টিলগ্নে আমি সকলকিছু নির্মাণ করেছিলাম বলে, এবং সেই সকল বস্তু সামগ্রিকভাবে আমার আয়োজনসমূহের অধীনে স্ব-স্ব স্থানে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে বলে, ঊর্ধ্ব থেকে আমি হেসে উঠি, এবং স্বর্গের নিম্নস্থ সকল বস্তু যখন আমার সেই হাস্যরোল শ্রবণ করে, তৎক্ষণাৎ তারা অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে, কারণ সেই মুহূর্তে আমার কর্মোদ্যোগ সম্পূর্ণ হয়। মানুষের অভ্যন্তরে আমি স্বর্গীয় প্রজ্ঞা সন্নিবিষ্ট করে, তাদেরকে দিয়ে সকল বস্তুর মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করাই, কারণ মানুষ আমার প্রতিনিধি হবে বলেই আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম, আমাকে অমান্য না করে বরং তাদের অন্তরের গভীরে আমার বন্দনা করবে বলেই। এবং কে এই সহজ বাক্যগুলি অর্জন করতে সক্ষম? মানুষ সর্বদা কেন তাদের হৃদয়কে আত্মমগ্ন রাখে? তাদের হৃদয় কি আমার নিমিত্ত নয়? এমন নয় যে মানুষের কাছে শর্তহীনভাবে আমি কিছু চাইছি, বরং মানুষ নিয়ত আমারই অধিকারভুক্ত ছিল। যা আমারই অধিকারভুক্ত, তা আমি কীভাবে সহসা অন্যকে দিয়ে দিতে পারি? যে “পরিধেয়” আমি প্রস্তুত করেছি, কীভাবে তা অন্যকে পরিধান করতে দিতে পারি? মানুষের দৃষ্টিতে মনে হবে, যেন আমি উন্মাদ হয়ে গিয়েছি, কোনো মানসিক রোগে ভুগছি, এবং মানবিক রীতিনীতির কিছুই বুঝি না; যেন আমি কোনো জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। আর তাই, মানুষ সবসময় আমাকে একজন সাদাসিধা স্থূলবুদ্ধি মানুষ হিসাবে গণ্য করে, কিন্তু আমায় কখনো তারা প্রকৃত অর্থে ভালোবাসে না। মানুষ যা কিছু করে সবই সুচিন্ততভাবে আমাকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যেই করে বলে, ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে সমগ্র মনুষ্যজাতিকে আমি নিশ্চিহ্ন করে দিই। আমার সকল সৃজিত বস্তুর মধ্যে, একমাত্র মনুষ্যজাতি সতত আমায় প্রবঞ্চিত করার কৌশলসমূহ উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা করে চলেছে, এবং কেবলমাত্র এই কারণেই আমি বলি যে, মানুষ সমস্তকিছুর “শাসনকর্তা”।
আজ, পরিমার্জিত হয়ে ওঠার জন্য সকল মানুষকে আমি “বৃহৎ অগ্নিকুণ্ডে” নিক্ষেপ করি। মানুষ যখন আগুনে দগ্ধ হয়, ঊর্ধ্বে দাঁড়িয়ে আমি তাদের ঘনিষ্ঠভাবে অবলোকন করি, এবং, বহ্নিশিখার দহন-তাড়নায় মানুষ প্রকৃত সত্য নিবেদন করে। আমার কার্য সম্পাদনের এটি অন্যতম উপায়। এরকম না হলে, মানুষ নিজেদের “বিনয়ী” হিসেবে দাবি করতো, এবং কেউই তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা বলার জন্য সবার আগে মুখ খুলতে চাইতো না, বরং সকলেই কেবল পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করতো। সম্যকভাবে এটিই আমার প্রজ্ঞার স্ফটিকীকরণ, কারণ আজকের বিষয়গুলি বহুযুগ আগেই আমি পূর্ববিহিত করেছিলাম। তাই, মানুষ তাদের অজ্ঞাতসারেই অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করে, যেন তাদের কোনো রজ্জু দ্বারা আকর্ষণ করা হয়েছে, যেন তারা অসাড় হয়ে পড়েছে। অগ্নিশিখার সেই প্রচণ্ড হামলা কেউ এড়াতে পারে না, তারা পরস্পরকে “আক্রমণ” করে, তারা “আহ্লাদে ছোটাছুটি করে”, তখনো, সেই অগ্নিকুণ্ডেও, তারা তাদের নিজেদের অদৃষ্ট বিষয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করে, তীব্র ভয় পায় যে তাদের বুঝি পুড়িয়ে মারা হবে। যখন সেই আগুনে আমি ইন্ধন প্রয়োগ করি, তৎক্ষণাৎ তা লেলিহান হয়ে আকাশের দিকে ধাবিত হয়, এবং সেই শিখা প্রায়শই আমার পরিচ্ছদকে লেহন করে, যেন সেগুলিকে অগ্নিকুণ্ডের ভিতর আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। মানুষ চক্ষু বিস্ফারিত করে আমায় অবলোকন করে। তৎক্ষণাৎ, সেই বহ্নিশিখা অনুসরণ করে আমি অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করি, এবং, সেই মুহূর্তে, সেই শিখা প্রলম্বিত হয়ে ওঠে, এবং মানুষ আর্তরব করে ওঠে। প্রোজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার মাঝে আমি বিচরণ করি। শিখাগুলির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে, কিন্তু আমার ক্ষতি করার কোনো অভিপ্রায় তাদের নেই, এবং আমি পুনরায় আমার অঙ্গের পরিচ্ছদগুলি শিখাসমূহের করপুটে অর্পণ করি—তবু তারা আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। কেবল তখনই মানুষ শিখার আলোকে আমার প্রকৃত মুখমণ্ডল সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত দেখতে পায়। যেহেতু তারা অগ্নিকুণ্ডের নিদাঘের মধ্যে রয়েছে, তাই আমার মুখমণ্ডলের কারণে চতুর্দিকে পলায়ন করে, এবং তৎক্ষণাৎ অগ্নিকুণ্ড “ফুটতে” শুরু করে। শিখার মধ্যে যারা রয়েছে, তারা সকলে মনুষ্যপুত্রকে দর্শন করে, যিনি প্রোজ্জ্বল বহ্নির দ্বারা পরিমার্জিত। যদিও তাঁর দেহে পরিহিত পোশাকাদি সাধারণ, তবু তা সর্বাধিক সৌন্দর্যময়; যদিও তাঁর চরণের পাদুকা বিশেষত্বহীন, তবু তা বিলক্ষণ ঈর্ষার উদ্রেক করে; তাঁর মুখমণ্ডল থেকে এক অগ্নিকল্প দ্যুতি বিচ্ছুরিত হয়, তাঁর চক্ষু ঝলমল করে, এবং মনে হয় তাঁর চোখের জ্যোতির কারণেই মানুষ তাঁর প্রকৃত মুখাবয়ব সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়। মানুষ শ্রদ্ধায় অভিভূত, এবং তারা তাঁর দেহোপরি শ্বেতবর্ণের পোশাক দেখতে পায়, এবং দেখে যে, তাঁর পশমের ন্যায় শুভ্র কেশদাম তাঁর স্কন্ধের অবধি প্রলম্বিত। লক্ষণীয়ভাবে, তাঁর বক্ষকে বেষ্টন করে এক স্বর্ণবলয় চোখধাঁধানো আলোকরশ্মি বিকীর্ণ করে, আর তাঁর পায়ের পাদুকা এমনকি আরো মনোহর। এবং মনুষ্যপুত্র দ্বারা পরিহিত পাদুকাদ্বয় অগ্নিমধ্যে স্থিত বলে, মানুষ তাদের বিস্ময়কর জ্ঞান করে। কেবলমাত্র যন্ত্রণায় বিদীর্ণ হতে হতেই মানুষ মনুষ্যপুত্রের মুখশ্রী অবলোকন করে। যদিও তারা বহ্নির পরিমার্জনের মধ্যে রয়েছে, তবু মনুষ্যপুত্রের মুখনিঃসৃত কোনো বাক্য তারা উপলব্ধি করে না, এবং সেহেতু, সেই ক্ষণে, মনুষ্যপুত্রের মধুর কণ্ঠস্বর তারা আর শ্রবণ করে না, বরং দেখতে পায় তাঁর মুখের অভ্যন্তরে রক্ষিত ক্ষুরধার এক তরবারি, এবং তিনি আর কোনো বাক্যোচ্চারণ করেন না, কেবল তাঁর তরবারি মানুষকে আহত করে। অগ্নিশিখায় অবরুদ্ধ হয়ে, মানুষ যন্ত্রণা সহ্য করে। তাদের কৌতূহলের কারণে, তারা তখনো মনুষ্যপুত্রের অনন্যসাধারণ অবয়বের দিকে চেয়ে থাকে, এবং কেবল সেই মুহূর্তেই, তারা আবিষ্কার করে যে, তাঁর হস্তধৃত সপ্ততারকা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। যেহেতু মনুষ্যপুত্র রয়েছেন অগ্নিকুণ্ডের ভিতর, পৃথিবীবক্ষে নয়, সেগুলি তাঁর হাতের সাতটি তারা নিয়ে নেওয়া হয়েছে, কারণ সেগুলি এক রূপক মাত্র। সেই মুহূর্তে, সেগুলি আর উল্লেখিত হয় না, বরং মনুষ্যপুত্রের বিভিন্ন অঙ্গে আবণ্টিত হয়। মানুষের স্মৃতিতে, সপ্ততারকার উপস্থিতি অস্বস্তি বয়ে আনে। আজ, মানুষের কাছে বিষয়গুলিকে আমি আর দুরূহ করে তুলি না, মনুষ্যপুত্রের কাছ থেকে সপ্ততারকাকে আমি নিয়ে নিই, মনুষ্যপুত্রের সকল অংশকে এক সামগ্রিকতায় একত্রিত করি। কেবল সেই মুহূর্তেই, মানুষ আমার সামগ্রিক রূপ প্রত্যক্ষ করে। মানুষ আমার আত্মাকে আর আমার দেহ থেকে বিযুক্ত করবে না, কারণ পৃথিবী থেকে আমি ঊর্ধ্বলোকে আরোহন করেছি। মানুষ আমার প্রকৃত মুখাবয়ব অবলোকন করেছে, তারা আমায় আর ভেঙে খণ্ডিত করে না, এবং আমি আর মানুষের কুৎসারটনা সহ্য করবো না। যেহেতু আমি মানুষের পাশাপাশি হেঁটে বৃহৎ অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করি, সেহেতু, তারা এখনও আমার উপর ভরসা করে, তাদের চেতনায় তারা আমার অস্তিত্ব উপলব্ধি করে। এইভাবে, যাকিছু বিশুদ্ধ সোনা, প্রোজ্জ্বলিত বহ্নির মধ্যে ক্রমশ তা আমার সম্মুখে স্তূপীকৃত হয়, এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রত্যেকে প্রকার অনুসারে শ্রেণিবিভক্ত হয়। প্রত্যেক প্রকারের “ধাতু”-কে আমি বর্গ অনুসারে পৃথক করি, আর তাদের সকলকে নিজেদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাই, এবং কেবল তখনই সকল বস্তু পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে শুরু করে …
মানুষ এত কলুষিত বলেই দগ্ধীভূত হওয়ার জন্য আমি তাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি। কিন্তু বহ্নিশিখার দ্বারা তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না, বরং পরিমার্জিত হয়, যাতে তাদের বিষয়ে আমি আনন্দিত হতে পারি—কারণ আমি এমনকিছু চাই যা বিশুদ্ধ সোনায় নির্মিত, যার মধ্যে খাদ নেই, যা মলিন বা দুষিত বস্তু নয়। মানুষ আমার মর্জি বোঝে না, তাই, “অস্ত্রোপচারের টেবিল”-এ আরোহনের পূর্বে, তারা দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যেন, তাদের কাটাছেঁড়া করার পর, আমি তক্ষুনি সেখানেই, অস্ত্রোপচার টেবিলে শায়িত অবস্থাতেই, তাদের হত্যা করতে চলেছি। আমি মানুষের মেজাজ বুঝি, আর তাই আমাকে মানবজাতিরই এক সদস্য বলে মনে হয়। মানুষের “দুর্ভাগ্যের” প্রতি আমার প্রভূত সমবেদনা রয়েছে, এবং মানুষ কেন “অসুস্থ হয়ে পড়েছে” তা আমার জানা নেই। মানুষ যদি নীরোগ হতো, কোনো বিকলঙ্গতা না থাকতো, তাহলে মূল্য পরিশোধ করার, এবং আস্ত্রোপচার টেবিলের উপর সময় অতিবাহিত করার, কী দরকার পড়তো? কিন্তু বাস্তব ঘটনাকে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না—মানুষকে কে বলেছিল “খাদ্য সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি”-র প্রতি কোনো মনোযোগ না দিতে? স্বাস্থ্যবান হওয়ার ব্যাপারে কোনো মনোযোগ না দিতে মানুষকে কে বলেছিল? আজ, আমার অন্য কী উপায় আছে? মানুষের প্রতি আমার সহমর্মিতা প্রদর্শনের জন্য, তার সাথে একত্রে আমি “অস্ত্রোপচার কক্ষে” প্রবেশ করি—এবং আমায় কে-ই বা বলেছিল মানুষকে ভালোবাসতে? তাই, আমি নিজে “শল্যচিকিৎসকের ছুরি” তুলে নিই, এবং রোগের পরবর্তী কোনো পরিণাম নিবারণের উদ্দেশ্যে মানুষের উপর “অস্ত্রোপচার” করতে শুরু করি। মানুষের প্রতি আমার আনুগত্যের কারণে, মানুষ আমার প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা দেখাতে, ব্যথার মাঝে অশ্রু বিসর্জন করে। মানুষ ভাবে যে, আমি ন্যায়পরায়ণতাকে মূল্য দিই, ভাবে যে, আমার “মিত্রগণ” সমস্যায় পড়লে আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবো, এবং, আমার সদাশয়তার হেতু, মানুষ আরো বেশি কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে, এবং বলে যে, রোগনিরাময় হয়ে গেলে তারা আমায় “উপহার” প্রেরণ করবে—কিন্তু অভিপ্রায়ের এমনতর অভিব্যক্তির প্রতি আমি কোনো কর্ণপাত করি না, পরিবর্তে মানুষের উপর অস্ত্রোপচার করার দিকে মনোনিবেশ করি। মানুষের শারীরিক দৌর্বল্যের কারণে, ছুরির প্রভাবে, সে সজোরে চোখ বন্ধ করে অস্ত্রোপচারের টেবিলে সন্ত্রস্ত ভাবে শুয়ে থাকে—তবু আমি তাকিয়েও দেখি না, আমি শুধু আমার উপস্থিত কাজ করে যাই। অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ হলে, মানুষ “বাঘের চোয়াল” থেকে নিস্কৃতি পেয়ে যায়, এবং পরিপোষক খাদ্য দিয়ে আমি তাদের পুষ্টিবিধান করি, এবং, তারা তা না জানলেও, তাদের শরীরে পুষ্টিদায়ক উপাদান ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তারপর আমি তাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি, এবং তারা তাদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে ফেলার পরেই শুধু সুস্পষ্টভাবে আমার প্রকৃত মুখাবয়ব দর্শন করে, ফলে তারা আমায় আরো বেশি করে ভালোবাসে, তারা আমাকে তাদের পিতা হিসাবে গ্রহণ করে—এবং এ-ই কি স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝে সংযোগ নয়?
মে ৪, ১৯৯২