অধ্যায় ৩৭
যুগযুগান্ত ধরে আমি যে সকল কার্য সম্পাদন করেছি, তার প্রতিটি পর্যায়ের সাথে আমার উপযুক্ত কার্যপ্রণালী সংশ্লিষ্ট ছিল। এই কারণে, আমার প্রিয় মানুষজনকে বিশুদ্ধ থেকে বিশুদ্ধতর এবং আমার ব্যবহারের পক্ষে যথাযোগ্যতর করে তোলা গিয়েছে। কিন্তু, সেই একই কারণে, “দুর্ভাগ্যজনক বিষয়”-টি হল, আমার কার্যপ্রণালী যত বৃদ্ধি পায়, মানুষের সংখ্যা তত কমে আসে, এবং এর ফলে তারা গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত হয়। নিশ্চিতভাবেই, আজকের এই কার্যও কোনো ব্যতিক্রম নয়, এবং অধিকাংশ মানুষ আরেকবার ভাবনায় পড়ে গিয়েছে; সঠিক অর্থে, আমার পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে, এখনো কিছু মানুষকে সরে যেতে হবে। ব্যাপারটা এই ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: বিষয়টি হল এমনকিছু, কিছু যা আমার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত, কিন্তু আমার দ্বারা সম্পাদিত নয়। সৃষ্টির পর থেকে, আমার কার্যপদ্ধতির ফলস্বরূপ, বহু মানুষ অধঃপতিত হয়েছে, এবং বহু মানুষ তাদের পথ হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু, মানুষ কী করে না-করে আমি তার পরোয়া করি না—তারা আমায় নির্মম বা অতি নিষ্ঠুর যা-ই মনে করুক না কেনো—তাদের উপলব্ধি সঠিক হোক বা না হোক, কোনো ব্যাখ্যাদানে আমি পরাঙ্মুখ। প্রথমে এই আলোচনার মুখ্য বিষয়টির উপর সহকারিতা করা যাক যাতে, প্রত্যেকেই একটা আনুপুঙ্খিক উপলব্ধি লাভ করতে পারে, যাতে তাদের কষ্টভোগের কারণ সম্পর্কে তাদের অনুপলব্ধির অপনোদন করা যায়। মানুষকে আমি মূকগণের ন্যায় নীরবে কষ্টভোগ করতে বাধ্য করবো না; বরং আমি সমস্তকিছু পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবো, যাতে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে না পারে। একদিন, সকলকে দিয়ে আমি, তাদের শাস্তির মাঝেও, আন্তরিক প্রশংসাবাক্য উচ্চারণ করাবো। এই পদ্ধতি তোমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য কি? তা কি মানুষের চাহিদা পূরণ করে।
শাস্তির যুগের প্রস্তাবনায়, মানুষকে প্রথমে আমি এই “যুগ”-এর পশ্চাতে নিহিত সাধারণ অর্থটি জ্ঞাপন করবো যাতে তারা আমায় অসন্তুষ্ট না করে ফেলে। যেমন, আমি আমার কার্যের যে আয়োজন করবো, তা কারও দ্বারা পরিবর্তিত হবে না, এবং যে এর পরিবর্তন করবে, নিশ্চিতভাবেই তাকে আমি লঘুভাবে অব্যহতি দেবো না: তাকে আমি দোষী সাব্যস্ত করবো। বিষয়টি তোমাদের স্মরণে থাকবে তো? এই সবই হল “টিকাকরণ”। এই নতুন পদ্ধতিতে, সকল মানুষকে প্রথমেই বুঝতে হবে যে, সর্বাগ্রে অর্জনীয় লক্ষ্য হল তাদের নিজেদের প্রকৃত অবস্থা বিষয়ে একটা উপলব্ধি লাভ। কিছুটা আত্মোপলব্ধি অর্জন করার পূর্বে কাউকেই গির্জার ভিতর লঘুচিত্তে কথা বলতে দেওয়া হবে না, এবং এই নিয়ম যে লঙ্ঘন করবে, তাকে আমি নিশ্চিতভাবে শাস্তি দেবো। আজ থেকে, সকল প্রেরিত-শিষ্যকে গির্জাগুলিতে তালিকাভুক্ত করা হবে, এবং তারা স্বেচ্ছায় যত্রতত্র চলাফেরা করতে পারবে না—এতে বিশেষ কিছু কাজের কাজ হবে না। তারা সকলেই তাদের কর্তব্য পালন করছিল বলে মনে হলেও, আসলে তারা আমায় প্রতারণা করছিল। যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, আজ সেসকল অতীত, এবং সেই বিষয়গুলি অবশ্যই আর কখনো উত্থাপিত হবে না। আজ থেকে, “প্রেরিত শিষ্য” পরিভাষাটি লোপ পাবে, এবং আর কখনো ব্যবহৃত হবে না, যাতে সকল মানুষ তাদের “পদ” থেকে নেমে এসে নিজেদের জানতে পারে। এই সিদ্ধান্ত, অবশ্যই, তাদের পরিত্রাণের স্বার্থে। একটা “পদ” কোনো রাজমুকুট নয়; তা নিছক এক সম্বোধানসূচক শব্দ মাত্র। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছো তো? গির্জাগুলিকে যারা নেতৃত্ব দেয়, তারা এখনো নিজ নিজ গির্জায় গির্জার জীবনই যাপন করে, যদিও স্বভাবতই তা কোনো অবশ্যপালনীয় বিধি নয়। প্রয়োজন হলে, পূর্বতন প্রেরিত শিষ্যদের সাথে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে তারা গির্জাগুলি পরিদর্শন করতে পারে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, গির্জার সহকারিতা বৃদ্ধি করতে হবে—যদি না বিষয়টি এমন হয় যে, তাদের কোনো সদস্যই প্রকৃত গির্জার জীবন যাপন করছে না। তা সত্ত্বেও, আমি জোর দিয়ে বলছি, আত্মদর্শনে, এবং অতিকায় লাল ড্রাগনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে, তোমরা সকলে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হবে: এমনটাই আমার ইচ্ছা। মানুষ কতটা কথা বলে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমার সকল লোকজন যেন পরস্পরের সাথে একাত্মভাবে কাজ করতে সমর্থ হয়, কারণ যথার্থ সাক্ষ্যদানের এ-ই হল একমাত্র পথ। অতীতে, সকল মানুষ বলেছিল যে, তারা নিজেদেরকে জানতে পারবে, তবু আমি অগণন বাক্য উচ্চারণ করেছি—আর তোমরা নিজেদের কতটা উপলব্ধি করতে পেরেছো? যে যত উচ্চপদে আসীন, তার পক্ষে নিজের অহমবোধ সরিয়ে রাখা তত কঠিন, তার প্রত্যাশা তত বৃহৎ, এবং দণ্ডিত হলে সে তদধিক কষ্টভোগ করবে। এ-ই হল মানবজাতির প্রতি আমার পরিত্রাণ। বোঝা গেছে? বিষয়টিকে কেবল আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ কোরো না; করলে তা খুবই উপরিগত হয়ে যাবে, এবং কোনো মূল্য থাকবে না। তোমরা কি এর অন্তর্নিহিত গূঢ়ার্থসমূহ ধরতে পারছো? গির্জার সদস্যেরা যদি সত্যিই আত্মোপলব্ধিতে সক্ষম হয়, তাহলে প্রতিপন্ন হবে যে সেই ধরনের মানুষগুলি আমায় যথার্থই ভালোবাসে। অর্থাৎ, তোমরা যদি মানুষের সাথে একত্রে খাদ্যগ্রহণ না করো, তোমরা তাদের দুঃখকষ্ট উপলব্ধি করবে না। এই বিষয়টিকে তোমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করো? অন্তিমে, তাদের শাস্তির, সময় সকল মানুষকে আমি আত্মোপলব্ধি করাবো, এবং তা ঘটার সময় তাদের হাস্যগীতিমুখর রাখবো। আমায় তৃপ্ত করার মতো বিশ্বাস কি তোমাদের সত্যিই থাকবে? তাহলে, অনুশীলনের ক্ষেত্রে, তোমাদের কী করা উচিত? এখন থেকে, প্রত্যেক গির্জার কাজকর্ম ঐ গির্জার উপযুক্ত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হবে, এবং প্রেরিত-শিষ্যেরা কেবল গির্জার জীবন যাপন করবে। একে “জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করা” বলে। তোমরা কি তা উপলব্ধি করেছো?
মানুষের উপর শাস্তি আনুষ্ঠানিকভাবে নেমে আসার আগে, আমি মানুষের উপর প্রথমে “সম্ভাষণ জ্ঞাপনের কার্য” সম্পন্ন করবো, যাতে অন্তিমে, তারা সকলে আমায় পরিতুষ্ট করতে পারে। এমনকি যারা নিজেদের প্রত্যাহার করতে চলেছে, চলে যাওয়ার আগে তাদেরকেও কষ্টভোগ ও সাক্ষ্যদান সম্পূর্ণ করতে হবে, না হলে আমি তাদের সহজে নিস্তার দেবো না। এ হল মানুষের অপরাধের প্রতি আমার অসহিষ্ণু স্বভাব, এবং, একই সঙ্গে, তা আমি যা বলি তা সম্পন্ন করার স্বভাবকে প্রদর্শন করে। বস্তুত, আমি অবশ্যই আমার এই অঙ্গীকারকে পূরণ করবো যে, “আমি যা বলি ভেবেচিন্তে বলি, আমি যা বলি তা সম্পন্ন হবে, এবং আমি যা করি তা চিরকাল অটুট থাকবে।” বাক্যগুলি যখনই আমার মুখ থেকে নিঃসৃত হয়, তখনই আমার আত্মা তাঁর কার্য শুরু করেন। যে “খেলনাগুলি” তারা তাদের হাতে ধারণ করে রয়েছে, সজ্ঞানে সেগুলি নিয়ে ক্রীড়ারত হওয়ার স্পর্ধা কে দেখাবে? প্রত্যেককেই বিনয় ও আনুগত্যসহকারে আমার শাস্তি স্বীকার করে নিতে হবে। এর হাত থেকে কে-ই বা রেহাই পেতে পারে? আমার পন্থা ব্যাতীত অপর কোনো পথ থাকতে পারে কি? আজ আমি তোমাকে পৃথিবীর বুকে আসতে দিয়েছি, আর তুমি আহ্লাদ করছো; আগামীকাল তোমায় আমি স্বর্গে প্রবেশের অনুমোদন দেবো, আর তুমি সাধুবাদ দেবে। তার পরের দিন, তোমাকে আমি পাতালে প্রেরণ করবো, যেখানে তুমি শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। এসকলই কি আমার কার্যের জন্য আবশ্যক নয়? কে-ই বা আমার প্রয়োজনের স্বার্থে দুর্ভাগ্যযাপন ও আশীর্বাদলাভ করে না? তোমরা কি তার ব্যতিক্রম হতে পারো? পৃথিবীর বুকে আমার লোকজন হিসাবে, আমার চাহিদা ও ইচ্ছার খাতিরে তোমাদের কী করা উচিত? এমন কি হতে পারে যে, তুমি মুখে আমার পবিত্র নামের গুণগান করছো, কিন্তু অন্তরে আমায় ঘৃণা করছো? আমার জন্য কাজ করা ও আমার হৃদয়কে তুষ্ট করা, একই সাথে নিজেদেরকে উপলব্ধি করা ও অতিকায় লাল ড্রাগনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা—এগুলো কোনো সহজ কাজ নয়, এবং এগুলো সম্পন্ন করার জন্য তোমাদের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যখন আমি “মূল্য”-শব্দটি বলি, তখন আমি কী বোঝাতে চাইছি বলে তোমাদের মনে হয়? এ বিষয়ে এখন আমি আলোচনা করবো না, এবং মানুষকে আমি কোনো দ্ব্যর্থহীন জবাবও দেবো না। বরং, তাদের আমি বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মনে মনে ভেবে দেখার, এবং পরবর্তীকালে, তাদের কাজ ও আচরণের মধ্য দিয়ে ব্যবহারিকভাবে আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ দেবো। তোমরা কি তা করতে সক্ষম?
এপ্রিল ২৭, ১৯৯২