অধ্যায় ৩২
মানুষ যখন আমার সাথে একত্রে সমবেত হয়, আমার হৃদয় আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তৎক্ষণাৎ, মানুষের মাঝে আমি নিজ হস্তধৃত আশীর্বাদসমূহ অর্পণ করি, যাতে মানুষ আমার সঙ্গে মিলিত হতে পারে, এবং আমায় অমান্যকারী শত্রু না হয়ে তারা আমার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সুহৃদ হয়ে উঠতে পারে। সে কারণেই, আমিও মানুষের সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করি। আমার কার্যে, মানুষকে এক উচ্চ-পর্যায়ের সংস্থার সদস্য হিসাবে দেখা হয়, তাই তার প্রতি আমি বেশি মনোযোগ দিই, কারণ সে সর্বদাই ছিল আমার কার্যের লক্ষ্যবস্তু। মানুষের অন্তরে আমি আমার স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি, যাতে তাদের হৃদয় আমায় প্রীতিপূর্ণ শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতে পারে—তবু আমার এই কার্যের হেতু সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অবিদিতই রয়ে যায়, এবং অপেক্ষা করা ভিন্ন আর কিছুই করে না। মানুষের অন্তরে আমার প্রতিষ্ঠিত একটি স্থান রয়েছে বটে, কিন্তু তারা আবশ্যকবোধ করে না যে সেখানে আমি বসবাস করি। পরিবর্তে, তাদের হৃদয়ের “পবিত্র অদ্বিতীয়”-র আকস্মিক আবির্ভাবের অপেক্ষায় থেকে যায়। আমার পরিচয় নেহাতই “নগণ্য” হওয়ায় মানুষের চাহিদার সঙ্গে আমি মানানসই নই এবং সেই কারণেই তারা আমায় পরিহার করে। তারা কেবল অত্যুচ্চ ও শক্তিমান “আমাকেই” আকাঙ্ক্ষা করেছিল, কিন্তু আগমনকালে আমি মানুষের দৃষ্টিতে সেরকম রূপে আবির্ভূত হই নি, এবং সেকারণেই তারা সুদূরপানে চেয়ে তাদের অন্তরের সেই অদ্বিতীয়ের জন্যই অপেক্ষাতুর রয়ে গিয়েছিল। আমি যখন মানুষের কাছে এসেছিলাম, জনতার সম্মুখে তারা আমায় প্রত্যাখ্যান করেছিল। মানুষের দ্বারা “মোকাবিলা”-র সম্মুখীন হওয়ার অপেক্ষায় একপাশে দাঁড়িয়ে থাকার অতিরিক্ত কিছুই আমি করে উঠতে পারি নি, আমার মতো এই অবম “পদার্থটি” নিয়ে মানুষ শেষ পর্যন্ত কী করে সেটাই দেখার জন্য লক্ষ্য রাখছিলাম। মানুষের ক্ষতচিহ্নের দিকে না তাকিয়ে আমি বরং তাদের অক্ষত অঙ্গের দিকেই নজর দিই, এবং তা থেকে আমি সন্তোষ লাভ করি। মানুষের দৃষ্টিতে, আমি আকাশ থেকে অবতরণ করা নেহাতই এক “ক্ষুদ্র তারকা”; আমি গগনমণ্ডলের নিছকই তুচ্ছতম সদস্য মাত্র, এবং ধরাধামে আজ আমার এই আবির্ভাব ঈশ্বরের অর্পিত এক দায়িত্ব ছিল। ফলস্বরূপ, মানুষ “আমি” ও “ঈশ্বর” শব্দদ্বয়ের আরো অনেক ব্যাখ্যা উদ্ভাবন করেছে, ঈশ্বর ও আমাকে এক ও অভিন্ন বিবেচনা করতে তারা ভীষণ রকমের শঙ্কিত। আমার প্রতিমূর্তি যেহেতু ঈশ্বরের অবয়বের কোনোকিছুই বহন করে না, সেহেতু সকল মানুষ বিশ্বাস করে যে আমি ঈশ্বরের পরিবার-বহির্ভূত এক পরিচারক, এবং তারা বলে যে আমি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি নই। সম্ভবত ঈশ্বরকে দেখেছে এমন মানুষ রয়েছে—কিন্তু ধরাধামে আমার অন্তর্দৃষ্টির অভাবের কারণে, ঈশ্বর কখনো আমার সম্মুখে “আবির্ভূত” হন নি। হয়তো আমার “আস্থা” অতি নগণ্য, এবং সেই কারণেই মানুষ আমায় তুচ্ছজ্ঞান করে। মানুষ কল্পনামাফিক, কেউ ঈশ্বর হলে তিনি নিশ্চিতরূপেই মানুষের ভাষায় নিপুণ হবেন, কারণ ঈশ্বর হলেন সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু বাস্তব সত্যটি ঠিক বিপরীত: আমি যে শুধু মানুষের ভাষায় সুদক্ষ নই তা-ই নয়, উপরন্তু সময় বিশেষে এমনকি আমি মানুষের “অভাবগ্রস্ততার” দরুন “সংস্থান যোগাতে”-ও অসমর্থ হই। ফলস্বরূপ, আমি কিঞ্চিৎ “অপরাধী” বোধ করি, কারণ মানুষের “দাবি” অনুযায়ী আমি কাজ করি না, বরং নিছক তাদের “ঘাটতি” অনুসারে দ্রব্যাদি প্রস্তুত ও কার্য সম্পাদন করি। মানুষের কাছে আমার পেশ করা চাহিদাগুলি কোনোমতেই বৃহৎ নয়, কিন্তু মানুষ উল্টোটাই বিশ্বাস করে। তাদের “দীনতা” এভাবে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রকাশ পায়। তাদের প্রবণতা হল সর্বদা আমার সামনে-সামনে চলার, আমায় পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার, তারা নিদারুণ শঙ্কিত যে আমি বুঝি হারিয়ে যাবো, আতঙ্কিত যে আমি বুঝি পথভ্রষ্ট হয়ে পর্বতের অভ্যন্তরে আদিম অরণ্যের মধ্যে প্রবেশ করবো। ফলস্বরূপ, মানুষ সদাই আমায় পথপ্রদর্শন করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, গভীর আশঙ্কিত যে আমি হয়তো হাঁটতে হাঁটতে ভূগর্ভস্থ অন্ধকূপে প্রবেশ করবো। মানুষের বিশ্বাস নিয়ে আমার কিছুটা “অনুকূল ধারণা” রয়েছে, কারণ আহার-নিদ্রার চিন্তা ভুলে তারা আমার নিমিত্ত “কঠোর পরিশ্রম করেছে”, এতটাই যে আমার জন্য পরিশ্রমের দরুন তাদের দিবারাত্রি বিনিদ্র কেটেছে এবং এমনকি তাদের কেশ পলিত হয়ে গিয়েছে—এটাই পর্যাপ্তরূপে প্রমাণ করে যে, তাদের বিশ্বাস বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের “সীমা ছাড়িয়েছে”, “অতিক্রম করেছে” যুগযুগান্তের প্রেরিত শিষ্য ও নবীদের।
মানুষের বিপুল দক্ষতার কারণে আমি উল্লাসে করতালি দিই না, আবার তাদের অক্ষমতার দরুন আমি তাদের দিকে নিরুত্তাপ দৃষ্টিতেও তাকাই না। আমার আয়ত্তে যা রয়েছে, শুধু সেটুকুই করি। কারো প্রতি আমি বিশেষ পক্ষপাত প্রদর্শন করি না, বরং আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করি মাত্র। তবু মানুষ আমার ইচ্ছার বিষয়ে অনবহিত এবং আমার কাছে ক্রমাগত নানান জিনিসের প্রার্থনা করে চলে, যেন-বা যে ঐশ্বর্য আমি তাদের প্রদান করেছি তা তাদের প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম, যেন-বা চাহিদা ছাপিয়ে গিয়েছে যোগানকে। কিন্তু বর্তমান যুগে, সকল মানুষ অনুভব করে যে “মুদ্রাস্ফীতি” রয়েছে—ফলস্বরূপ, উপভোগের নিমিত্ত আমি তাদের যা প্রদান করেছি তাতে তাদের দু’হাত পরিপূর্ণ। এই কারণেই আমার সম্পর্কে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, সেহেতু তাদের জীবন হয়েছে বিশৃঙ্খলাময়, তারা হয়ে পড়েছে ভক্ষ্য-অভক্ষ্য জ্ঞানরহিত। কেউ কেউ তো এমনকি স্বীয় উপভোগের নিমিত্ত আমার প্রদত্ত সামগ্রীগুলি আঁকড়ে ধরেছে, মনোযোগ সহকারে সেগুলিকে লক্ষ্য করছে। মানুষ একদা দুর্ভিক্ষে কষ্ট পেত বলে, আজকের উপভোগসমূহ হাতে পাওয়া তাদের কাছে কোনো সহজ ব্যাপার নয়, তারা সকলেই “অশেষ কৃতজ্ঞ”, এবং আমার প্রতি তাদের মনোভাবে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আমার সম্মুখে তারা ক্রমাগত অশ্রুবিসর্জন করে চলে; আমি তাদের এতকিছু দিয়েছি বলে, বারংবার আমার হাত ধরে তারা “কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপক ধ্বনি” নির্গত করে। আমি ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বে উঠে আসি, এবং হাঁটতে হাঁটতে আমি সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের মানুষদের পর্যবেক্ষণ করি। ধরণীবক্ষের লোকারণ্যের মাঝে, কখনো এমন কেউ ছিল না যে আমার কার্যের উপযুক্ত বা যে প্রকৃতই আমায় ভালোবাসে। তাই, এই মুহূর্তে হতাশ হয়ে আমি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করি, এবং মানুষ তৎক্ষণাৎ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, আর কখনো তারা একত্রিত হয় না, গভীর আশঙ্কায় ভোগে যে আমি “একবার জাল নিক্ষেপ করেই তাদের সকলকে ধরে ফেলবো”। এই সুযোগকে আমি ব্যবহার করি মানুষের মাঝে আসার জন্য, ছত্রভঙ্গ জনতার মাঝে আমার কার্য—যথোচিত কার্য—সম্পাদনের জন্য, সেই মানুষগুলিকে আমি বেছে নিই যারা তাদের অভ্যন্তরে আমার কার্যসাধনের উপযুক্ত। আমার শাস্তির মাঝে মানুষকে আমি এমনভাবে “নিরুদ্ধ করতে” চাই না যে তারা কখনোই নিষ্কৃতি পেতে পারবে না। আমি শুধু আমার অবশ্যকরণীয় কার্যটুকু সম্পাদন করি। আমি মানুষের “সহায়তা” চাইতে এসেছি; আমার ব্যবস্থাপনায় মানুষের ক্রিয়াকর্মের অভাব রয়েছে বলে সাফল্যমণ্ডিতভাবে আমার কার্য সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়, যা আমার কার্যের ফলপ্রদ অগ্রগতিকে প্রতিহত করে। আমার একমাত্র প্রত্যাশা যে মানুষ যেন আমার সঙ্গে সহযোগিতা করার মতো দৃঢ়সঙ্কল্পের অধিকারী হয়। তাদের আমি আমার জন্য উত্তম খাদ্য রন্ধন করতে, বা উপযুক্ত কোনো মাথা রাখার স্থানের আয়োজন করতে বলি না, অথবা আমার জন্য সুন্দর বসন প্রস্তুত করতেও বলি না—এই জিনিসগুলি নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র চিন্তাভাবনা নেই। মানুষ যখন আমার ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে পারবে এবং আমার সাথে, আমার পাশাপাশি, অগ্রসর হবে, তখনই নিজ অন্তরে আমি পরিতুষ্ট হবো।
ধরাতলে কে-ই বা কবে আমায় অন্তর থেকে গ্রহণ করেছে? কে কোনদিন আমায় তার হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছে? মানবপ্রেম সর্বদাই তরলিত; এমনকি আমিও “জানি না” তাদের ভালোবাসাকে কেন বিশুষ্ক তথা জল-বিমুক্ত করা যায় না। তাই, মানুষের মধ্যে প্রভূত “রহস্য”-ও আধৃত রয়েছে। সৃজিত সত্তাদের মধ্যে মানুষকে “বিস্ময়কর” ও “অতল” গণ্য করা হয়, এবং তাই আমার চোখে তার “যোগ্যতা” আছে, যেন-বা সে আমার সমমর্যাদার অধিকারী—কিন্তু তার এই “মর্যাদা”-র বিষয়ে সে আশ্চর্যের কিছু দেখে না। এক্ষেত্রে, বিষয়টি এমন নয় যে মানুষকে আমি এই অবস্থানে দাঁড়ানোর এবং তা উপভোগ করার অনুমোদন করি না, বরং আমি চাই তাদের একটা শিষ্টতাবোধ থাকুক, তারা যেন নিজেদের সম্বন্ধে অতিরিক্ত উচ্চ ধারণা পোষণ না করে; স্বর্গ ও মর্ত্যলোকের মধ্যে একটি দূরত্ব রয়েছে, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে দূরত্বের বিষয়টি না-ই বা উল্লেখ করলাম। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে ব্যবধানটি কি আরো প্রশস্ততর নয়? ধরাধামে, মানুষ ও আমি “একই নৌকায়” রয়েছি, এবং আমরা “একত্রে ঝঞ্ঝা উত্তীর্ণ হই”। নিজ পরিচয়ের দরুন আমি মানবজগতের দুঃখকষ্টের অভিজ্ঞতালাভ থেকে অব্যাহতি পাই না, এবং এই কারণেই আমার বর্তমান এই পরিস্থিতির মধ্যে আপতিত হয়েছি। ধরিত্রীবক্ষে শান্তিতে বসবাসের মতো কোনো স্থান কখনো আমার ছিল না, সেকারণেই মানুষ বলে থাকে, “মনুষ্যপুত্রের কখনো কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না”। ফলস্বরূপ, মানুষ আমার জন্য অনুকম্পার অশ্রুও বিসর্জন করেছে এবং আমার নিমিত্ত এক “ত্রাণ তহবিল”-এর জন্য গণ্ডাকতক মুদ্রাও তুলে রেখেছে। শুধু এই কারণেই আমার বিশ্রাম নেওয়ার একটি স্থান আছে; মানুষের “সহায়তা” না পেলে, আমার কোথায় গিয়ে দাঁড়াতাম কে জানে!
আমার কার্য যখন সমাপ্ত হবে, তখন আমি আর মানুষের কাছ থেকে এই “আর্থিক ত্রাণ” চাইবো না; পরিবর্তে, আমি আমার সহজাত কার্যাদি সম্পাদন করবো, এবং “আমার গৃহের সামগ্রীর” সমস্তকিছু আমি মানুষের কাছে তাদের উপভোগের নিমিত্ত নামিয়ে আনবো। আজ, আমার বিচারের মাঝে প্রত্যেকের পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমার হস্ত যখন আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষের উপর এসে পড়বে, মানুষ আমায় আর সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখবে না, বরং আমার প্রতি সঘৃণ আচরণ করবে, এবং সেই মুহূর্তে আমি তৎক্ষণাৎ এক নমুনা হিসাবে তাদের হৃদয়গুলি উৎপাটিত করবো। মানবহৃদয়কে আমি এক “অণুবীক্ষণ” যন্ত্রের নিচে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখি—তার মধ্যে আমার প্রতি প্রকৃত কোনো প্রেম নেই। বহু বছর যাবৎ, মানুষ আমায় প্রতারণা করে ও বোকা বানিয়ে আসছে—দেখা যাচ্ছে যে তাদের বাম অলিন্দ ও দক্ষিণ নিলয় উভয়ের মধ্যেই আমার প্রতি ঘৃণার হলাহল রয়েছে। তাহলে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই যে তাদের প্রতি আমি এহেন মনোভাব পোষণ করি। এবং তা সত্ত্বেও তারা এবিষয়ে সম্পূর্ণ অবিদিত রয়ে যায়, এমনকি তা স্বীকারটুকুও করে না। যখন তাদের আমার অনুসন্ধানের ফলাফল প্রদর্শন করি, তখনো তারা জাগ্রত হয় না; মনে হয় বুঝি, তাদের মনোজগতে, এই সমস্তকিছুই অতীতের বিষয়, এবং বর্তমানে সেগুলির পুনরুত্থাপন বিধেয় নয়। সেহেতু, এই “পরীক্ষাগার-লব্ধ ফলাফলগুলি”-র দিকে মানুষ কেবল ঔদাসীন্যের চোখে চেয়ে দেখে। হিসেবপত্রটি জমা দিয়ে তারা দীর্ঘ পদক্ষেপে নিষ্ক্রান্ত হয়। অধিকন্তু, তারা এধরনের কথাও বলে, “এগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমার স্বাস্থ্যের উপর এর কোনো প্রভাব নেই”। তারা তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁড়ে দেয়, এবং তারপর তাদের দৃষ্টিতে সামান্য ভীতিপ্রদর্শনের চাহনি লক্ষিত হয়, যেন আভাসে জানাচ্ছে যে আমার অকপট হওয়া উচিত নয়, বলতে চাইছে যে আমাকে অবশ্যই আন্তরিকতাশূন্য হতে হবে। মনে হয় বুঝি তাদের আভ্যন্তরীন গোপন বিষয়গুলি উদ্ঘাটনের মাধ্যমে আমি মানুষের “বিধান” ভঙ্গ করেছি, এবং সেহেতু আমার প্রতি তারা বিতৃষ্ণ হয়ে পড়েছে। কেবল তখনই আমি মানুষের ঘৃণার উৎসটি দেখতে পাই। এর কারণ আমার পর্যবেক্ষণকালে তাদের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, এবং তাদের শরীরের ধমনীগুলির মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হওয়ার পর তা হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে, এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই আমি এক নতুন “আবিষ্কার” অর্জন করি। তবু এ ব্যাপারে মানুষ কোনো চিন্তা করে না। তারা সম্পূর্ণ উদাসীন এবং স্বীয় লাভ-লোকসানের বিষয়ে তারা তিলার্ধ ভাবিত নয়, যা পর্যাপ্তরূপে তাদের “স্বার্থশূন্য” সমর্পণের মানসিকতার প্রমাণ দেয়। নিজেদের স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিষয়ে তারা কোনো বিবেচনা প্রদান করে না, এবং আমার নিমিত্ত “দিগ্বিদিকে ধাবিত হয়”। এটি তাদের “বিশ্বস্ততা”-ও বটে, যা তাদের এক “প্রশংসনীয়” গুণ, অতএব আরেকবার তাদের উদ্দেশ্যে আমি এক “প্রশংসা” পত্র প্রেরণ করি, যাতে এটি পেয়ে তারা খুশি হতে পারে। কিন্তু এই “পত্র” পাঠমাত্র তারা কিঞ্চিৎ বিরক্ত বোধ করে, কারণ আমার নীরব পত্রে তাদের সকল কাজকর্মকে খারিজ করা হয়েছে। তাদের ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনকালে সর্বদাই মানুষকে আমি পরিচালিত করেছি, তবু মনে হয় আমার বাক্যকে তারা বুঝি ঘৃণাভরে পরিহার করে; তাই, আমি মুখব্যাদান করামাত্র, তারা তাদের চোখ সজোরে বন্ধ করে ফেলে, দুহাতে কান চাপা দেয়। আমার ভালোবাসার কারণে আমায় তারা শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে না, বরং চিরকালই আমায় ঘৃণা করে, কারণ আমি তাদের ঘাটতিগুলির প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করেছি, তাদের অধিকারস্থ সকল পণ্যাদি অনাবৃত করেছি, এবং সেহেতু তাদের কারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং তাদের জীবিকার সংস্থান অন্তর্হিত হয়েছে। সেই কারণে, আমার প্রতি তাদের ঘৃণা বর্ধিত হয়।
এপ্রিল ১৪, ১৯৯২