অধ্যায় ৩১
মানুষের অন্তরে আমার কখনোই কোনো স্থান ছিল না। সত্যই যখন আমি মানুষের সন্ধান করি, তখন তাদের চক্ষু তারা সজোরে রুদ্ধ করে রাখে এবং আমার ক্রিয়াকর্মকে উপেক্ষা করে, যেন আমার যাবতীয় কার্য তাদের প্রসন্ন করার এক প্রচেষ্টা মাত্র, যার ফলে আমার কার্যকলাপের প্রতি সর্বদাই তারা বীতশ্রদ্ধ। মনে হয় যেন আমার কোনো আত্মসচেতনতা নেই, যেন সর্বদাই আমি মানুষের সামনে নিজেকে জাহির করে চলেছি, আর তার দরুন সেই “ন্যায়নিষ্ঠ ও ধার্মিক” মানুষগুলিকে ক্ষিপ্ত করে তুলছি। তবু এমন এক প্রতিকূল অবস্থাতেও আমি টিকে থাকি, এবং আমার কার্য চালিয়ে যাই। সে জন্যই, আমি বলি যে মানবীয় অভিজ্ঞতার মিষ্ট, অম্ল, তিক্ত, ও ঝাল সকল রকমের স্বাদই আমি আস্বাদন করেছি, এবং হাওয়ার মাঝে আমি এসে উপস্থিত হই এবং বৃষ্টির সাথে প্রস্থান করি; আমি বলি যে পারিবারিক নিপীড়নের অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি, জীবনের উত্থান-পতনকে প্রত্যক্ষ করেছি, এবং দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা অনুভব করেছি। কিন্তু, আমি যখন পৃথিবীতে এসেছিলাম, তাদের জন্য যে দুঃখকষ্ট আমি ভোগ করেছিলাম তার দরুন আমাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর পরিবর্তে, মানুষ “মার্জিতভাবে” আমার শুভ অভিপ্রায়সমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। কীভাবে এতে আমি ব্যথিত না হয়ে পারতাম? কীভাবে ক্ষুব্ধ না হয়ে পারতাম? এমন কি হতে পারে যে, সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে বলেই আমি অবতাররূপ ধারণ করেছিলাম? মানুষ আমাকে কেন ভালোবাসে না? আমার ভালোবাসা কেন মানুষের ঘৃণার দ্বারা প্রত্যর্পিত হয়েছে? এমন কি হতে পারে যে, আমার এভাবেই কষ্টভোগ করার কথা? পৃথিবীবক্ষে আমার দুঃখকষ্টের কারণে মানুষ সহানুভূতির অশ্রু বিসর্জন করেছে, এবং আমার দুর্দৈবজনিত অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবু কবেই বা কে আমার হৃদয়কে বাস্তবিক জানতে পেরেছে? আমার অনুভূতিকে কে কোনদিন প্রণিধান করতে পারে? আমার প্রতি একসময় মানুষের এক গভীর অনুরাগ ছিল, এবং একদা মানুষ তার স্বপ্নে প্রায়শই আমায় আকাঙ্ক্ষা করতো—কিন্তু মর্ত্যলোকেরমানুষ কীভাবেই বা স্বর্গে আমার ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে পারতো? যদিও মানুষ একদাআমার শোকানুভূতিকে অন্তরঙ্গম করেছিল, কিন্তু, একজন সমদুঃখভোগী হিসাবে, আমার ক্লেশের প্রতি কার-ই বা কবে সহানুভূতি ছিল? এমন কি সম্ভব যে ধরাধামে মানুষের বিবেকবোধ আমার শোকার্ত হৃদয়কে বিচলিত ও পরিবর্তিত করতে পারে? ধরণীবক্ষের মানুষ কি তাদের হৃদয়ের অন্তর্নিহিত অকথনীয় দুঃখকষ্টের কথা আমায় জানাতে অক্ষম? মানুষের আত্মাসমূহ ও ঈশ্বরের আত্মা পরস্পরের উপর নির্ভরশীল, কিন্তু দেহজনিত প্রতিবন্ধকের কারণে, মানুষের মস্তিষ্ক “নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে”। মানুষকে একদা আমি আমার সম্মুখে আসার কথা স্মরণ করিয়েছিলাম, কিন্তু আমার এই আহ্বান মানুষকে দিয়ে আমার চাহিদা পূরণ করাতে পারেনি; তারা শুধু অশ্রুপূর্ণ চক্ষু তুলে আকাশের অন্দরে দৃষ্টিপাত করেছিল, যেন তারা অনুচ্চার্য দুর্ভোগ বহন করছিল, যেন কিছু একটা তাদের পথ আটকে দাঁড়িয়েছিল। তাই, তাদের দুই হাত জোড়বদ্ধ করে আমার কাছে বিনীত যাচ্ঞায় তারা স্বর্গের নীচে মাথা অবনত করেছিল। আমি করুণাঘন বলে মানুষের মাঝে আমি আশীর্বাদ বর্ষণ করি, এবং চোখের পলকে, মানুষের মাঝে আমার ব্যক্তিগত অভ্যাগমের মুহূর্ত এসে উপস্থিত হয়—তবু বহু আগেই মানুষ স্বর্গের কাছে তার শপথের কথা বিস্মৃত হয়েছে। ঠিক এটাই কি মানুষের আনুগত্যহীনতা নয়? মানুষ সততই “স্মৃতিভ্রংশ রোগে” ভোগে কেন? আমি কি তাকে ছুরিকাহত করেছি? আমি কি আঘাতের দ্বারা তার শরীরকে ভূপাতিত করেছি? মানুষকে আমি আমার অন্তঃকরণের অনুভূতির কথা বলি; কেন সে নিয়ত আমায় এড়িয়ে যায়? মানুষের স্মৃতিতে, মনে হয় তারা কিছু একটা যেন হারিয়ে ফেলেছে, এবং তা কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু এমনও মনে হয় যে, তাদের স্মৃতিই বুঝিবা ভ্রমাত্মক। তাই, মানুষ তাদের জীবনে সর্বদাই বিস্মৃতিতে ভোগে, এবং সমগ্র মানবজাতির জীবনের দিনগুলি বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ। অথচ, এর প্রতিবিধানের নিমিত্ত কেউ কোনো প্রচেষ্টা চালায় না; মানুষ কেবল একে অপরকে পদদলিত ও হত্যা করে, যা আজকের এক বিপর্যয়কারী পর্যুদস্ত পরিস্থিতির দিকে চালিত করেছে, এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকলকিছুকে কলুষিত জল ও কর্দমের মধ্যে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে, পরিত্রাণের সম্ভাবনামাত্র না রেখে।
যখন আমি সকল মানুষের মাঝে আবির্ভূত হয়েছিলাম, ঠিক সেই মুহূর্তেই মানুষ আমার প্রতি অনুগত হয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে, অতিকায় লাল ড্রাগনও মানুষের উপর তার ঘাতক হস্ত স্থাপন করতে শুরু করেছিল। ওই “আমন্ত্রণ” আমি গ্রহণ করেছিলাম, এবং আমার উদ্দেশ্যে মানবজাতির প্রদত্ত “আমন্ত্রণ পত্র” হাতে করে, মানুষের মাঝে “ভোজসভার আসনে উপবেশন করতে” উপস্থিত হয়েছিলাম। আমায় দেখেও মানুষ আমার প্রতি কোনো মনোযোগ দেয় নি, কারণ আমি নিজেকে বিলাসবহুল পরিচ্ছদে সজ্জিত করি নি এবং মানুষের সাথে এক পঙক্তিতে উপবেশন করতে শুধুমাত্র আমার “পরিচয় পত্রটি” হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম। আমার মুখমণ্ডলে কোনো ব্যয়বহুল প্রসাধনী ছিল না, আমার মস্তকে ছিল না কোনো কিরীট, এবং আমার পায়ে আমি শুধুমাত্র এক জোড়া সাধারণ মানের গৃহে-প্রস্তুত পাদুকা পরিধান করেছিলাম। মানুষকে সবথেকে বেশি যা আশাহত করেছিল তা হল আমার মুখে ওষ্ঠরঞ্জনীর অনুপস্থিতি। উপরন্তু, আমি মার্জিত বাক্য উচ্চারণ করি নি, এবং আমার জিহ্বা সদাতৎপর কোনো লেখকের লেখনী ছিল না; পরিবর্তে, আমার প্রতিটি বাক্য মানুষের অন্তরের গহীনতম প্রদেশে গিয়ে বিদ্ধ করেছিল, যা আমার মুখের বিষয়ে মানুষের “অনুকূল” ধারণায় কিছু অতিরিক্ত ইন্ধন যোগ করেছিল। আমার প্রতি “বিশেষ আচরণ” প্রদান করার জন্য মানুষের কাছে আমার ঐ উপরুল্লিখিত বেশবাসই যথেষ্ট ছিল, আর সেই কারণেই তারা আমায় গ্রামাঞ্চল থেকে আগত, পৃথিবী বিষয়ে জ্ঞানগম্যিবিবর্জিত, প্রজ্ঞাহীন এক সাদাসিধে অমার্জিত লোক বলে গণ্য করেছিল। তবু সকলে যখন “আর্থিক উপঢৌকন” প্রদান করলো, তখনও মানুষ আমাকে সম্মানীয় বলে জ্ঞান করেনি, বরং কোনো শ্রদ্ধাবোধ ব্যতিরেকেই তারা নিছকই আমার সম্মুখে এসেছিল, অনিচ্ছায় ও বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে। আমার হস্ত যখন প্রসারিত হল, তৎক্ষণাৎ তারা বিস্ময়বিমূঢ় হয়েছিল, এবং নতজানু হয়ে বসে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে উঠেছিল। আমার সকল “আর্থিক উপহার” তারা একত্রে জড়ো করেছিল। পরিমাণটি বৃহৎ ছিল বলে, তৎক্ষণাৎ তারা আমায় এক ক্রোড়পতি ভেবে বসেছিল এবং আমার সম্মতি ছাড়াই আমার শরীর থেকে শতচ্ছিন্ন পোশাকগুলি ছিঁড়ে ফেলে সেগুলিকে নতুন পরিচ্ছদ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছিল—তবু তা আমায় আনন্দিত করেনি। কারণ এজাতীয় আয়েসী জীবনে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না, এবং এই “প্রথম শ্রেণীর” আপ্যায়নের প্রতি ঘৃণাবোধ হয়েছিল, কারণ আমি ছিলাম পবিত্র গৃহে জাত, এবং, বলা যায়, আমি “দারিদ্র্যের” মধ্যে জন্ম নিয়েছিলাম বলে বিলাসবহুল জীবনে, যেখানে আমার প্রতিটি প্রয়োজন মেটাতে মানুষ তৎপর হয়ে অপেক্ষা করে, তেমন জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম না। আমি কেবল চাই যে মানুষ আমার হৃদয়ের অনুভূতি উপলব্ধি করতে সক্ষম হোক, চাই আমার মুখনিঃসৃত অস্বস্তিকর সত্যকে গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে তারা কিছুটা কৃচ্ছ্রসাধনে সমর্থ হোক। কারণ আমি কখনো তত্ত্বকথা বলতে সক্ষম হইনি, মানুষের সাথে মেলামেশা করার নিমিত্ত মানবজাতির সমাজের মাঝে নিজেকে পরিচালিত করার গূঢ় পদ্ধতিও ব্যবহার করেতে সমর্থ হইনি, এবং যেহেতু আমি মানুষের মুখভাব বা তাদের মনস্তত্ত্ব অনুযায়ী আমার বাক্যকে কাটছাঁট করতে অক্ষম, তাই মানুষ সবসময় আমাকে ঘৃণা করেছে, আমাকে পারস্পরিক মেলামেশার অযোগ্য বলে মনে করেছে, এবং বলেছে যে, আমার জিহ্বা নাকি অতি শাণিত ও সর্বদাই তা মানুষকে আহত করে। তা সত্ত্বেও আমার কোনো বিকল্প নেই: একবার আমি মানুষের মনস্তত্ত্ব “পাঠ করেছিলাম”, একদা মানুষের জীবনযাপনের দর্শনকে “অনুকরণ করেছিলাম”, এবং মানুষের ভাষা শেখার জন্য একবার “ভাষা মহাবিদ্যালয়ে” গিয়েছিলাম, যাতে আমি মানুষের কথা বলার পদ্ধতি রপ্ত করতে পারি, এবং তাদের মুখভাবের সঙ্গে মানানসই কথাবার্তা বলতে পারি—কিন্তু বহু প্রচেষ্টা ব্যয় এবং অনেক “বিশেষজ্ঞের” সাথে দেখা করার পরেও, সবকিছুই বিফল হল। আমার মধ্যে কোনোদিনই মানবতার কিছু ছিল না। এত বৎসর ব্যাপী আমার এই প্রচেষ্টাসমূহ কোনোদিনও সামান্যতম কোনো ফল প্রদান করেনি, এবং মানুষের ভাষায় কখনও আমি বিন্দুমাত্র দক্ষতাও অর্জন করি নি। তাই, “কঠোর পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয়” বলে মানুষের মধ্যে যে প্রবাদ প্রচলিত, তা আমার ক্ষেত্রে “প্রতিহত হয়ে” ফিরে এসেছে, এবং ফলস্বরূপ, পৃথিবীর বুকেই প্রবাদটির পরিসমাপ্তি ঘটেছে। মানুষের অজ্ঞাতসারেই, এমনতর প্রবচন যে বাস্তবে খাটে না তা পর্যাপ্তরূপে যাচাই করে দেখার পর, এই প্রবচনটি স্বর্গীয় ঈশ্বরের দ্বারা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের কাছে সেহেতু আমি দুঃখপ্রকাশ করি, কিন্তু কিছু করার নেই—এত “নির্বোধ” হওয়ার দরুন এটাই আমার প্রাপ্য। মানুষের ভাষা শিখতে, জীবনযাপনের দর্শনে সুনিপুণ হতে, মানুষের সঙ্গে সামাজিকতায় রত হতে আমি অক্ষম। মানুষকে আমি শুধু পরামর্শ দিই ধৈর্যশীল হতে, তাদের অন্তরের ক্রোধকে দমন করতে, আমার নিমিত্ত নিজেদের আহত না করতে। কে আমাদের পারস্পরিক কথোপকথনে বাধ্য করেছে? কে এই মুহূর্তে আমাদের সাক্ষাৎ ঘটিয়েছে? কে-ই বা একই আদর্শের সহভাগী করেছে?
আমার স্বভাব আমার সকল বাক্য জুড়ে প্রবাহিত হয়, তবু মানুষ আমার বাক্যের মধ্যে তা অনুধাবনে অসমর্থ। তারা কেবল আমি যা বলি তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে—তা কোন কাজে লাগে? আমার বিষয়ে তাদের পূর্বধারণা কি তাদের নিখুঁত করে তুলতে পারবে? পৃথিবীবক্ষের বস্তুসমূহ কি আমার ইচ্ছা সিদ্ধ করতে পারতো? কীভাবে আমার বাক্য উচ্চারণ করতে হয়, তা আমি মানুষকে শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু মনে হচ্ছিল মানুষ যেন বাক্রুদ্ধ, এবং যেভাবে আমি চাইতাম সেভাবে আমার বাক্য উচ্চারণ করা শিখে নিতে কখনই সে সমর্থ ছিল না। আমি তাকে হাতে ধরে শিক্ষা দিয়েছিলাম, তবু কোনোদিনই সে শিখতে সক্ষম হয়নি। কেবল তার পরেই আমি এক নতুন আবিষ্কার করেছিলাম: পৃথিবীর মানুষ কেমন করে স্বর্গের বাক্য উচ্চারণ করে পারে? তা কি প্রকৃতির নিয়মসমূহকে লঙ্ঘন করে না? কিন্তু, আমার প্রতি মানুষের উদ্দীপনা ও অনুসন্ধিৎসার কারণে, আমি মানুষের উপর কার্যের আরেকটি অংশে প্রবৃত্ত হলাম। তার অপারগতার হেতু মানুষকে কখনো আমি লজ্জা দিইনি, উল্টে বরং তার ঘাটতি অনুযায়ী মানুষকে আমি রসদ যুগিয়ে থাকি। একমাত্র এই কারণেই মানুষের আমার সম্পর্কে কিছুটা অনুকূল ধারণা রয়েছে, এবং মানুষকে পুনরায় একত্রে সমাবিষ্ট করার উদ্দেশ্যে আমি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করি, যাতে আমার ঐশ্বর্যের অপর এক অংশ তারা উপভোগ করতে পারে। এক্ষণে, আরো একবার মানুষ আকাশের মাঝে নানা-বর্ণে রঞ্জিত মেঘেদের চারিপাশে ভেসে চলা আনন্দ, উল্লাস ও হাস্যকৌতুকে নিমগ্ন। মানুষের হৃদয়কে আমি উন্মুক্ত করি, এবং মানুষ তৎক্ষণাৎ নতুন প্রাণশক্তি পায়, এবং আমার কাছ থেকে সে আর লুকিয়ে থাকতে অনিচ্ছুক, কারণ মধুর মিষ্ট স্বাদের নমুনা সে আস্বাদন করেছে, এবং সেহেতু, সে তার যাবতীয় বাতিল জিনিসপত্র বের করে আনে বিনিময়ের মানসে—যেন আমি কোনো আবর্জনা সংগ্রাহক বিন্দু, বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছি। এইভাবে, প্রচারিত “বিজ্ঞাপনসমূহ” দেখার পর, আমার সম্মুখে এসে মানুষ সাগ্রহে অংশগ্রহণ করে, কারণ মনে হয় বুঝি তারা চিন্তা করে যে তারা কিছু “স্মারক” সংগ্রহে সক্ষম হবে, তাই তারা সকলেই আমাকে “পত্র” প্রেরণ করে, যাতে আমার আরব্ধ অনুষ্ঠানসমূহে তারা যোগদান করতে পারে। এই মুহূর্তে তারা লোকসানের ভয়ে শঙ্কিত নয়, কারণ এই সব কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত “মূলধনের” পরিমাণ অধিক কিছু নয়, এবং সেই কারণেই তারা অংশীদার হওয়ার ঝুঁকি গ্রহণের সাহস দেখায়। অংশগ্রহণের মাধ্যমে লভ্য কোনো স্মারক যদি না থাকতো, তাহলে মানুষ অনুষ্ঠানক্ষেত্র পরিত্যাগ করে চলে যেতো, এবং তাদের অর্থ ফেরত চাইতো, এবং আমার কাছে কতখানি “সুদ” তাদের পাওনা, তা-ও তারা হিসাব কষে বের করতো। যেহেতু বর্তমান জীবনযাত্রার মান বর্ধিত হয়ে “সমৃদ্ধির এক পরিমিত পর্যায়ে” উপনীত হয়েছে ও “আধুনিকীকরণ” অর্জিত হয়েছে, এবং যেহেতু “ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা” কাজের বন্দোবস্ত করতে স্বয়ং “গ্রামাঞ্চলে যাচ্ছে”, সেহেতু মানুষের বিশ্বাস তৎক্ষণাৎ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে—এবং যেহেতু তাদের “গঠনতন্ত্র” উত্তরোত্তর উৎকৃষ্ট থেকে উৎকৃষ্টতর হচ্ছে, সেহেতু তারা আমাকে সম্ভ্রমের চোখে দেখছে, এবং আমার আস্থা অর্জনের উদ্দেশ্যে তারা আমার সঙ্গে মেলামেশা করতে ইচ্ছুক।
এপ্রিল ১১, ১৯৯২