অধ্যায় ১৫

সকল মানুষই আত্মজ্ঞানহীন প্রাণী, এবং তারা নিজেদের জানতে অক্ষম। তবু, অন্য সকলকে তারা তাদের হাতের তালুর মতো চেনে, যেন অন্যেরা যা কিছু করেছে বা বলেছে প্রথমে তা তাদের দ্বারা, তাদের ঠিক সামনেই, “নিরীক্ষিত” হয়েছে, এবং তা ঘটেছে তাদের অনুমতিক্রমেই। ফলে, দেখে মনে হয় বুঝি তারা বাকি সকলের একেবারে মনস্তাত্বিক অবস্থা পর্যন্ত সবকিছুরই পুরোপুরি মাপজোখ করে ফেলেছে। সমস্ত মানুষই এরকম। যদিও আজ তারা রাজ্যের যুগে প্রবেশ করেছে, তবু তাদের প্রকৃতি রয়ে গিয়েছে অপরিবর্তিতই। এখনও তারা আমার সম্মুখে আমি যা করি তা-ই করে, কিন্তু আমার অলক্ষ্যে তারা তাদের নিজস্ব অনন্য “কাজকারবার” চালানো শুরু করে দেয়। কিন্তু, পরবর্তীকালে, আমার সামনে যখন এসে দাঁড়ায়, তখন যেন তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ, আপাতদৃষ্টিতে ধীরস্থির ও অকুতোভয়, প্রশান্ত মুখাবয়ব ও সুস্থিত হৃদস্পন্দন সমন্বিত। সম্যকভাবে এই বিষয়টিই কি মানুষকে এতো ঘৃণার্হ করে তোলে না? কত মানুষ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ ধারণ করে থাকে—আমার সামনে একটা, আর অন্যটা আমার আড়ালে। তাদের কতজন আমার সামনে যখন থাকে তখন সদ্যোজাত মেষশাবকের মতো আচরণ করে, কিন্তু আমার পশ্চাতে তারা ভয়ঙ্কর বাঘে পরিণত হয় এবং পরবর্তীকালে পাহাড়ে পাহাড়ে উৎফুল্লচিত্তে উড়ে বেড়ানো ছোট্ট পাখিদের মতো আচরণ করে। আমার সম্মুখে কত মানুষ উদ্দেশ্য ও সংকল্প প্রদর্শন করে। কত মানুষ আমার বাক্যের সন্ধানে তৃষ্ণা ও আকাঙ্ক্ষা সহকারে আমার সম্মুখে সমাগত হয়, কিন্তু আমার আড়ালে গেলেই, বাক্যগুলির প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে সেগুলিকে পরিত্যাগ করে, যেন আমার উচ্চারণগুলি ছিল বোঝাবিশেষ। কতবার, মনুষ্যজাতিকে আমার শত্রুর দ্বারা ভ্রষ্ট হতে দেখে, মানুষের উপর ভরসা করা আমি ছেড়ে দিয়েছি। কতবার, সাশ্রুনয়নে মার্জনাভিক্ষা করতে তাদের আমার সম্মুখে উপনীত হতে দেখে, আমি তবু, তাদের আত্মমর্যাদার অপ্রতুলতা ও জেদী সংশোধনাতীততার কারণে, ক্রোধে তাদের কার্যকলাপের দিকে চক্ষু উন্মীলন করেও দেখিনি, এমনকি, যখন তাদের হৃদয় অকৃত্রিম ও তাদের অভিপ্রায় আন্তরিক, তখনও। কতবার, আমার সাথে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে মানুষকে আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখেছি, যাদের, আমার সম্মুখে, মনে হয় যেন আমার আলিঙ্গনে আবদ্ধ, যেন এই আলিঙ্গনের উষ্ণতা আস্বাদন করছে। কতবার, আমার মনোনীত লোকদের অপাপবিদ্ধতা, প্রাণবন্ততা, ও প্রেমার্হতা প্রত্যক্ষ করার পরেও, কীভাবে আমি এগুলির দরুন পরম পরিতোষ বোধ না করে পারতাম? মানুষ জানে না কীভাবে আমার করতলগত তাদের জন্য পূর্বনির্ধারিত আশীর্বাদকে উপভোগ করতে হয়, কারণ “আশীর্বাদ” ও “যন্ত্রণাভোগ” বলতে সঠিক কী বোঝায় উভয়ের অর্থই তারা বোঝে না। এই কারণেই, আমার জন্য তাদের অন্বেষণে মানুষ আদৌ আন্তরিক নয়। যদি আগামীদিনের অস্তিত্ব না থাকতো, তাহলে আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান তোমাদের মধ্যে কোনজন বায়ুতাড়িত তুষারের মতো বিশুদ্ধ এবং জেড পাথরের মতো নিষ্কলঙ্ক হতে? এমন কি হতে পারে যে আমার প্রতি তোমাদের ভালোবাসা নিছক এমন কিছু, যা সুস্বাদু কোনো আহারের সঙ্গে, উৎকৃষ্ট মানের একপ্রস্থ পোশাকের সাথে, বা পর্যাপ্ত বেতনবিশিষ্ট উচ্চ পদমর্যাদার কোনো চাকুরির সাথে বিনিময় করা যায়? তোমার প্রতি অন্যদের ভালোবাসা দিয়ে কি একে বিনিময় করা যায়? এমন কি যথার্থই হতে পারে যে চলতি বিচারগুলি আমার প্রতি তাদের প্রেমকে পরিত্যাগ করতে মানুষকে প্ররোচিত করবে? যন্ত্রণা ও কষ্টভোগের কারণে তারা কি আমার আয়োজনের ব্যাপারে নালিশ জানাবে? আমার মুখগহ্বরে যে শাণিত তরবারি রয়েছে, কেউ কখনো তার যথাযথ সমাদর করেনি: যে অনিবার্য ফলশ্রুতি তা ধারণ করে তা উপলব্ধি না করে তারা শুধু তার উপরিগত অর্থটুকুই জানে। মানুষ যদি প্রকৃতই আমার তরবারির তীক্ষ্ণতা অনুভব করতে সক্ষম হতো, তাহলে তারা ইঁদুরের মতো ক্ষিপ্রবেগে ছুটে তাদের বিবরে আশ্রয় নিতো। তাদের সাড়হীনতার কারণে, মানুষ আমার বাক্যের প্রকৃত অর্থের কিছুই উপলব্ধি করে না, আর তাই আমার উচ্চারণগুলি যে কত নিদারুণ, কিংবা মানুষের প্রকৃতির ঠিক কতখানি তা প্রকাশ করে, এবং ঐ বাক্যগুলির দ্বারা তাদের নিজেদের অনাচার কতমাত্রায় বিচার করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই নেই। এই কারণেই, আমার বক্তব্যের বিষয়ে তাদের অসম্পূর্ণ ধারণার দরুন, অধিকাংশ মানুষ এক ঐকান্তিকতাহীন মনোভাব গ্রহণ করেছে।

রাজ্যের মাঝে, শুধু যে আমার মুখগহ্বর থেকে উচ্চারণসমূহ বিনির্গত হয় তা নয়, উপরন্তু আমার পদযুগল ভূমণ্ডল জুড়ে সর্বত্র সাড়ম্বরে দলিত করে বেড়ায়। এইভাবে, সকল অপরিচ্ছন্ন ও ক্লেদাক্ত ভূমিতে আমি জয়যুক্ত হয়েছি, যার ফলে শুধু যে স্বর্গ পরিবর্তিত হচ্ছে তা-ই নয়, বরং পৃথিবীও রূপান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, এবং পরবর্তীকালে তা নবায়িত হয়। জ্যোতিষ্কলোকে, আমার মহিমার উদ্ভাসে সকলকিছু নতুনের মতো ঝকমক করে, এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যরূপ উপস্থাপিত হয় যা ইন্দ্রিয়সমূহকে বিমুগ্ধ করে এবং মানুষের উদ্দীপনা বাড়িয়ে তোলে, মানুষের কল্পলোকে যেভাবে প্রতিভাত হয়, যেন তা স্বর্গসমূহের ঊর্ধ্বে আরেক স্বর্গে বিরাজমান, যেন তা শয়তানের দ্বারা অনুপদ্রুত এবং বহিঃশত্রুর হামলা থেকে মুক্ত। ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বতম পরিসরে, অজস্র তারকারাজি আমার নির্দেশক্রমে তাদের নির্ধারিত স্থান গ্রহণ করে, তিমিরাচ্ছন্ন সময়ে তারা নাক্ষত্রমণ্ডল দিয়ে তাদের আলোক বিকীর্ণ করে। একটি সত্তাও অবাধ্য হওয়ার চিন্তা পোষণের স্পর্ধা রাখে না, আর তাই, আমার প্রশাসনিক ফরমানসমূহের উপাদান অনুসারে, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিপুণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং নিয়মানুবর্তী থাকে: কখনো কোনো বিশৃঙ্খলা উদ্ভূত হয়নি, বা জ্যোতিষ্কলোক কখনো বিভাজিতও হয়নি। তারকারাজির ঊর্ধ্বে আমি দীর্ঘ উল্লম্ফন দিই, এবং সূর্য যখন তার রশ্মিসমূহ নিক্ষেপ করে, আমার করতল থেকে প্রবহমান হাঁসের পালকের আকৃতির তুষারকণার অতিকায় ঝাপটা পাঠিয়ে সেগুলির উষ্ণতা আমি মুছে দিই। আবার যখন আমি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি, তখন সেই সমস্ত তুষার গলে এক নদীতে পরিণত হয়, এবং ক্ষণিকের মধ্যে দেখা যায়, আকাশের নীচে সর্বত্র বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে এবং পান্নার মতো হরিদ্বর্ণ পৃথিবীর বুক জুড়ে সমগ্র প্রেক্ষাপটকে রূপান্তরিত করেছে। নভোমণ্ডলের ঊর্ধ্বে আমি বিচরণশীল হই, এবং তৎক্ষণাৎ, আমার আকারের কারণে, পৃথিবী ঘোরকৃষ্ণ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়: কোনো আগাম সতর্কবার্তা ব্যতিরেকেই, “রাত্রি” উপস্থিত হয়, এবং সারা পৃথিবী জুড়ে অন্ধকার এত ঘনিয়ে আসে যে নিজের মুখের সামনে ধরা হাতখানিও দৃষ্টিগোচর হয় না। আলো একবার নিভে গেলে, মানুষ পারস্পরিক ধ্বংসলীলায় মত্ত হতে, একে অপরের থেকে ছিনতাই ও লুঠতরাজে প্রবৃত্ত হতে এই মুহূর্তটির সুযোগ সাগ্রহে গ্রহণ করে। বিশ্বের রাষ্ট্রগুলি তখন এক নৈরাজ্যময় অনৈক্যে আপতিত হয়, এবং এক পঙ্কিল অস্থিরাবস্থার মধ্যে প্রবেশ করে, যতক্ষণ না তাদের পরিত্রাণের সকল সম্ভাবনার বিলোপ ঘটে। তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে মানুষ সংগ্রাম করে, তাদের বেদনার মাঝে কাতরাতে ও গোঙাতে থাকে, নিদারুণ মানসিক যাতনায় সকরুণ বিলাপ করে, ব্যাকুলভাবে কামনা করে যাতে মানবজগতে আকস্মিক আরেকবার আলোকের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে আঁধারময় দিনগুলির অবসান ঘটে, এবং পূর্বের প্রাণবন্ততা ফিরে আসে। কিন্তু আমি, অনেক আগেই, মানুষকে অনায়াসে পরিত্যাগ করেছি, পৃথিবীর অবিচারগুলির জন্য আর কখনো আমি তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করবো না: বহুকাল যাবৎ সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে চলেছি, সেখানকার পরিস্থিতির দিকে ভ্রূক্ষেপমাত্র করি না, মানুষের প্রতিটি চালচলন ও অঙ্গভঙ্গিমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি, এবং তাদের অপরিপক্বতা ও অকপট সারল্য দেখে আমি আর আনন্দ উপভোগ করি না। পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করতে আমি আরেকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, যাতে আরো শীঘ্র এই নতুন বিশ্বের পুনর্জন্ম ঘটে, যাতে আর কখনো তা নিমজ্জিত না হয়। মানুষের মাঝে, কতসব অদ্ভুত পরিস্থিতি আমার দ্বারা সংশোধিত হবে বলে অপেক্ষায় রয়েছে, কত ত্রুটিবিচ্যুতি আছে যেগুলির সংঘটন আমায় ব্যক্তিগতভাবে নিবারণ করতে হবে, কত না ধুলোবালি আমায় সাফ করতে হবে, এবং কতই না রহস্য রয়েছে যা আমায় উদ্ঘাটন করতে হবে। সকল মানুষ আমার জন্য প্রতীক্ষারত, এবং আকুলভাবে আমার আগমনের আকাঙ্ক্ষা করে।

পৃথিবীর বুকে, আমি স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বর যিনি মানুষের হৃদয়ে অধিষ্ঠান করেন; স্বর্গলোকে, আমি সমগ্র সৃষ্টির অধিপতি। আমি পর্বতে আরোহণ করেছি, পায়ে হেঁটে পেরিয়ে এসেছি নদনদী, এবং ভাসতে ভাসতে মানুষের মধ্যিখানে এসে ফের নিষ্ক্রান্ত হয়েছি। প্রকাশ্যে স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের বিরোধিতা করার স্পর্ধা রাখে কোনজন? কোনজন সর্বশক্তিমানের সার্বভৌমত্ব থেকে পালানোর স্পর্ধা করে? এমন দাবি করার দুঃসাহস কে করে যে, সন্দেহাতীতভাবেই আমি স্বর্গে বিরাজমান? তদুপরি, এরকম ঘোষণার স্পর্ধা কে করে যে, তর্কাতীতভাবে, আমি পৃথিবীর বুকেই বিদ্যমান? সকল মানুষের মধ্যে এমন কেউই নেই যে স্পষ্ট উচ্চারণে, সুবিস্তারিতভাবে, বলতে সক্ষম, আমার বাসস্থান কোথায়। এমন কি হতে পারে যে, যখনই আমি স্বর্গে অধিষ্ঠিত, তখনই আমি স্বয়ং অতিপ্রাকৃতিক ঈশ্বর, আর যখন আমি মর্ত্যে রয়েছি, তখন আমি স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বর? আমি যে সমগ্র সৃষ্টির শাসনকর্তা, অথবা আমি যে মনুষ্যজগতের দুঃখযন্ত্রণা অনুভব করি, এই সত্যের দ্বারা আমি স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বর কিনা, তা নিশ্চিতভাবে নিরূপণ করা যায় না, যায় কি? তা-ই যদি হত, তাহলে মানুষ কি অতি নৈরাশ্যজনকভাবে অনবহিত হত না? আমি স্বর্গে বিরাজমান, কিন্তু আমি মর্ত্যেও আছি; আমি রয়েছি সৃষ্টির বিপুল সংখ্যক বস্তুর মধ্যে, আবার মনুষ্যসাধারণের মধ্যেও আমিই বিরাজমান। মানুষ প্রতিদিন আমায় স্পর্শ করতে পারে; অধিকন্তু, নিয়ত তারা আমায় দর্শনও করতে পারে। মানুষের চিন্তাভাবনা মতো, আমায় কখনো প্রচ্ছন্ন এবং কখনো-বা দৃশ্যমান বলে মনে হয়; মনে হয় বুঝি বস্তুতই আমার অস্তিত্ব রয়েছে, তবু মনে হয়, আমি যেন নেই। আমার মধ্যে মানুষের কাছে দুর্জ্ঞেয় রহস্যসকল রয়েছে। মনে হয় আমার মধ্যে আরো বেশি রহস্য আবিষ্কার করার মানসে সকল মানুষ যেন এক অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মধ্যে উঁকি দিয়ে আমায় অবলোকন করছে, এইভাবে তাদের অন্তর থেকে ওই অস্বস্তিকর অনুভূতিটি বিদূরিত করার আশা পোষণ করছে। কিন্তু, তারা যদি রঞ্জন রশ্মিও ব্যবহার করতো, তবু যে রহস্যসকল আমি ধারণ করি, তা-র একটিকেও মানুষ কীভাবে উন্মোচিত করতে পারতো?

ঠিক যে মুহূর্তে আমার লোকজন, আমার কার্যের দরুন, আমারই পাশাপাশি মহিমা অর্জন করবে, অতিকায় লাল ড্রাগনের বিশ্রামস্থল তখন উদ্ঘাটিত হবে, সকল ক্লেদ ও কলুষ বিদূরিত করা হবে, এবং অগুন্তি বৎসরব্যাপী জমে ওঠা সমস্ত দুষিত জল আমার জ্বলন্ত আগুনের তাপে শুকিয়ে যাবে, তার আর কোনো অস্তিত্ব রইবে না। অতঃপর, অতিকায় লাল ড্রাগন জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে বিনষ্ট হবে। যাতে ড্রাগন তোমাদের ছিনিয়ে নিতে না পারে, তার জন্য কি তোমরা প্রকৃতই আমার স্নেহময় তত্ত্বাবধানে থাকতে ইচ্ছুক? তোমরা কি সত্যিই তার কপট কৌশলকে ঘৃণা করো? কে আমার প্রতি এমন সুদৃঢ় সাক্ষ্য বহনে সক্ষম? আমার সুনামের খাতিরে, আমার আত্মার খাতিরে, এবং আমার সমগ্র পরিচালনামূলক পরিকল্পনার খাতিরে, কে তার সর্বশক্তি এর প্রতি উৎসর্গ করতে পারে? আজ, রাজ্য যখন মনুষ্যজগতে সমাগত, এখনই হল সেই সময় যখন আমি সশরীরে মানুষের মাঝে আবির্ভূত হয়েছি। তা যদি না হতো, তাহলে এমন কেউ কি আছে, যে নিষ্কম্পচিত্তে আমার নিমিত্ত যুদ্ধক্ষেত্রে ঝঁপিয়ে পড়তে পারতো? রাজ্য যাতে সুসংগঠিত হয়, আমার হৃদয় যাতে পরিতৃপ্ত হয়, এবং, অধিকন্তু, যাতে আমার দিবসের আগমন ঘটে, যাতে সেই ক্ষণ এসে সমুপস্থিত হয় যখন সৃষ্টির অগণন সামগ্রী পুনর্জন্ম গ্রহণপূর্বক প্রাচুর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, যাতে দুঃখযন্ত্রণার পাথার থেকে মানুষকে উদ্ধার করা যায়, যাতে ভাবীকাল এসে উপনীত হয়, এবং যাতে তা বিস্ময়কর রকমের সুন্দর হয়ে ওঠে, আর পুষ্পিত ও বিকশিত হয়, এবং, উপরন্তু, যাতে আগামী সময়কে উপভোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়, তার জন্য সকল মানুষ তাদের যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, আমার নিমিত্ত নিজেদের উৎসর্গ করতে যথাসম্ভব করছে। বিজয় যে ইতিমধ্যেই আমার করায়ত্ত, এ কি তারই এক ইঙ্গিত নয়? এ কি আমার পরিকল্পনার সম্পূরণের এক চিহ্ন নয়?

অন্তিম সময়ে, মানুষ যত বেশি কাল যাবৎ অস্তিমান রইবে, তত বেশি করে তারা পৃথিবীর শূন্যতাকে অনুভব করবে, এবং জীবন যাপন করার মনোবল তাদের তত কমে আসবে। এই কারণে, অগণন মানুষ হতাশায় মৃত্যুবরণ করেছে, আরো অগুন্তি মানুষ তাদের অনুসন্ধানে বিফলমনোরথ হয়েছে, এবং আরো অগুন্তি মানুষ শয়তানের হস্তের দ্বারা চালিত হয়ে নিজেদের যন্ত্রণাপীড়িত করে চলেছে। কত মানুষকে আমি উদ্ধার করেছি এবং তাদের অনেককে অবলম্বনও জুগিয়েছি, এবং, মাঝে মাঝেই, মানুষ যখন আলোক হারিয়ে ফেলেছে, তখন আমি তাদের আলোকিত স্থানে ফিরিয়ে এনেছি, যাতে আলোকের মাঝে তারা আমায় চিনতে পারে এবং আনন্দ সহকারে আমায় উপভোগ করতে পারে। আমার আলোকের অভ্যুদয়ের কারণে, আমার রাজ্যে বসবাসকারী মানুষের হৃদয়ে সম্ভ্রমবোধ বৃদ্ধি পায়, কারণ আমি এমন এক ঈশ্বর, যাঁকে মানুষ ভালোবাসতে পারে—এমন এক ঈশ্বর যাঁর সাথে মানুষ প্রেমময় অনুরাগে সংলগ্ন থাকে—এবং আমার অবয়বের এক চিরস্থায়ী প্রতিচ্ছবি তাদের হৃদয়কে ভরিয়ে তোলে। তবু, সমস্তকিছু বিচারবিবেচনার পর, এটি আত্মার কর্ম নাকি দেহরূপী অবতারের কোনো কার্যকলাপ তা উপলব্ধি করে এমন একজনও নেই। শুধু এই একটিমাত্র বিষয়কে বিশদে অনুভব করতে মানুষের সমগ্র এক জীবৎকাল লেগে যাবে। তাদের হৃদয়ের নিগূঢ়তম প্রান্তে মানুষ কখনো আমাকে ঘৃণা করেনি; বরং, তাদের আত্মার গভীরে তারা আমায় আঁকড়ে ধরে থাকে। আমার প্রজ্ঞার কারণে তারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে, যে বিস্ময়কর কার্যগুলি আমি সম্পন্ন করি তারা তা চক্ষুভরে উপভোগ করে, এবং আমার বাক্য শ্রবণে তারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যায়, তবু সেগুলিকে তারা অতি সযত্নে লালন করে। আমার বাস্তবতা মানুষকে বিহ্বল, হতবাক ও হতবুদ্ধি করে তোলে, কিন্তু তবু তারা তা মেনে নিতে ইচ্ছুক। এটাই কি সম্যকভাবে মানুষের প্রকৃত পরিমাপ নয়?

মার্চ ১৩, ১৯৯২

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ১৪

পরবর্তী: অধ্যায় ১৭

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।👇

সম্পর্কিত তথ্য

পরিশিষ্ট ১ ঈশ্বরের আবির্ভাব এক নতুন যুগের সূচনা করেছে

ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা শেষ হতে চলেছে, এবং যারা তাঁর আবির্ভাবের পথ চেয়ে আছে তাদের সকলের জন্য স্বর্গের দ্বার ইতিমধ্যেই...

রাজ্যের যুগই হল বাক্যের যুগ

রাজ্যের যুগে, যে পদ্ধতিতে তিনি কাজ করেন তা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে, এবং সমগ্র যুগের কাজ সম্পাদন করার জন্য, ঈশ্বর নতুন যুগের সূচনা করতে বাক্যের...

সর্বশক্তিমানের দীর্ঘশ্বাস

তোমার হৃদয়ে এক বিশাল গোপন বিষয় আছে যার ব্যাপারে তুমি কখনও সচেতন ছিলে না, কারণ তুমি বেঁচে আছ আলোকহীন এক জগতে। তোমার হৃদয় আর তোমার আত্মাকে...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন