অধ্যায় ১৬

মানুষকে আমি অনেক কিছু বলতে চাই, বহু বিষয় আছে যা তাদের আমায় বলতেই হবে। কিন্তু গ্রহণ করার সামর্থ্যের ক্ষেত্রে মানুষের প্রচুর ঘাটতি আছে; যেভাবে আমি সরবরাহ করি সেই অনুযায়ী আমার বাক্যকে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে মানুষ অসমর্থ, তারা কেবল একটিমাত্র দিক উপলব্ধি করে, অন্য দিকটি সম্বন্ধে অবিদিত থেকে যায়। তবু তাদের শক্তিহীনতার কারণে মানুষকে আমি মৃত্যুদণ্ড দিই না, তাদের দুর্বলতা আমায় ক্ষুব্ধও করে না। আমি কেবল আমার কাজ করে যাই, এবং যেভাবে সবসময় বলেছি সেইভাবেই বাক্য বলে যাই, যদিও মানুষ আমার ইচ্ছা বুঝে উঠতে পারে না; যখন সময় হবে, মানুষ তাদের অন্তরের গভীরে আমায় জানবে, এবং তাদের চিন্তায় আমায় স্মরণ করবে। এই পৃথিবী থেকে আমি যখন বিদায় নেবো, ঠিক তখনই আমি মানুষের হৃদয়ের সিংহাসনে আরোহন করবো, অর্থাৎ, তখনই সকল মানুষ আমায় জানবে। তাই, ওই সময়েই আমার পুত্র ও লোকজন পৃথিবী শাসন করবে। যারা আমায় জানে তারা নিশ্চিতভাবে আমার রাজ্যের স্তম্ভস্বরূপ হয়ে উঠবে, এবং একমাত্র তারাই আমার রাজ্যে শাসন করার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করার যোগ্যতাসম্পন্ন হবে। যারা আমায় জানে তারা সকলেই আমার সত্তার দ্বারা অধিকৃত হয়, এবং সকল মানুষের মধ্যে আমাকে যাপন করতে সমর্থ হয়। মানুষ আমায় কতটা জানে তা নিয়ে আমার গ্রাহ্য নেই: কেউ কোনো ভাবেই আমার আমার কার্যকে প্রতিহত করতে পারে না, এবং মানুষ আমায় কোনো সহায়তা প্রদান করতে পারে না, আমার জন্য তারা কিছুই করতে পারে না। মানুষ কেবল আমার আলোকে আমার পথপ্রদর্শন অনুসরণ করতে পারে, এবং সেই আলোয় আমার অভিপ্রায় সন্ধান করতে পারে। আজ মানুষের যোগ্যতা রয়েছে, এবং তারা ভাবে আমার সামনে তারা সদর্পে চলাফেরা করতে পারে, কোনোরকম সংকোচ না করে আমার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতে পারে, এবং আমাকে সমপর্যায়ের মানুষের মতো সম্বোধন করতে পারে। এখনও মানুষ আমায় জানে না, এখনও তারা মনে করে আমরা প্রকৃতিতে অভিন্ন, আমরা উভয়েই দেহজ সত্তা, এবং উভয়েই মানব-জগতে বাস করি। আমার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ অতি অল্প; যখন তারা আমার সামনে আসে, তখন আমায় শ্রদ্ধা করে, কিন্তু আত্মার সম্মুখে আমার সেবা করতে তারা অসমর্থ। মনে হয়, মানুষের কাছে আত্মার যেন আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই। সেই কারণেই, কোনো মানুষ কখনো আত্মাকে জানেই নি; আমার অবতারের মধ্যে মানুষ দেখে কেবল রক্ত-মাংসের একটা শরীর; এবং ঈশ্বরের আত্মাকে অনুভব করে না। আমার অভিপ্রায় কি আদৌ এইভাবে সিদ্ধ হতে পারে? আমায় প্রতারণা করতে মানুষ কুশলী; মনে হয় যেন আমাকে ঠকানোর জন্য তারা শয়তানের দ্বারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে। তবু শয়তানের বিষয়ে আমার কোনো উদ্বেগ নেই। সমগ্র মানবজাতিকে জয় করতে, এবং সকল মানুষের যে ভ্রষ্টকারী, তাকে পরাজিত করতে এখনও আমি আমার প্রজ্ঞাকে ব্যবহার করবো, যাতে পৃথিবীতে আমার রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।

মানুষের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা নক্ষত্রদের আয়তন বা মহাকাশের পরিমাপ নিরূপণ করার প্রচেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের গবেষণা কখনো সফল হয়নি, এবং তারা একমাত্র হতাশায়, নতমস্তকে স্বীয় ব্যর্থতাকেই স্বীকার করে নিতে পারে। সকল মানুষের মধ্যে সন্ধান করে এবং তাদের ব্যর্থতার মধ্যে মানুষের ঘাত-প্রতিঘাত পর্যবেক্ষণ করে আমি এমন একজনকেও দেখি না যে আমার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ স্থিতপ্রত্যয়, এমন একজনেও দেখি না যে আমায় মান্য করে, আমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। মানুষের উচ্চাকাঙ্খা কত অসংযত! সমুদ্রের সমগ্র পৃষ্ঠদেশ যখন অস্পষ্ট ছিল, মানুষের মধ্যে আমি জগতের তিক্ততার আস্বাদন শুরু করেছিলাম। আমার আত্মা সারা পৃথিবী ব্যাপী পর্যটন করে এবং সকল মানুষের হৃদয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করে, তবুও, তেমনই, আমি আমার অবতার দেহে মানবজাতিকে জয় করি। মানুষ আমায় দেখে না, কারণ তারা অন্ধ; মানুষ আমায় জানে না, কারণ তারা অসাড় হয়ে পড়েছে; মানুষ আমার বিরোধিতা করে, কারণ তারা অবাধ্য; মানুষ আমার সামনে অবনমিত হতে আসে, কারণ তারা আমার দ্বারা বিজিত হয়েছে; মানুষ আমায় ভালোবাসতে আসে, কারণ আমি সহজাতভাবে মানুষের ভালোবাসার যোগ্য; মানুষ আমাকে যাপন করে এবং আমাকে প্রতীয়মান করে, কারণ আমার ক্ষমতা ও আমার প্রজ্ঞা তাদের আমার ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে। মানুষের হৃদয়ে আমার একটা স্থান আছে, কিন্তু মানুষের কাছ থেকে আমি কখনো আমার জন্য সেই ভালোবাসা পাইনি যা তাদের আত্মায় বাস করে। মানুষের আত্মায় বস্তুতই কিছু বিষয় রয়েছে যা তারা অন্য সকলকিছুর থেকে বেশি ভালোবাসে, কিন্তুআমি সেই বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত নই, আর তাই মানুষের ভালোবাসা সাবানের বুদ্বুদের মতো: বাতাস বইলে তা ফেটে যায় ও অদৃশ্য হয়ে যায়, আর কখনো দেখা যায় না। মানুষের প্রতি আমার মনোভাবে আমি সবসময় স্থির ও অপরিবর্তনশীল থেকেছি। মানবজাতির মধ্যে কেউ কি এরকমই করে উঠতে পারতো? মানুষের চোখে আমি বাতাসের মতোই স্পর্শাতীত ও অদৃশ্য, আর এই কারণেই অধিকাংশ মানুষ শুধু সীমাহীন আকাশে, বা তরঙ্গায়িত সমুদ্রের উপর, বা নিথর হ্রদের উপর, অথবা শূণ্যগর্ভ শব্দার্থ ও মতবাদের ভিতরেই সন্ধান করে। এমন একজন মানুষও নেই যে মানবজাতির সারসত্যকে জানে, আমার অন্তর্গত রহস্যের বিষয়ে কিছু বলতে পারে এমন কেউ তো নেই-ই, এবং সেহেতু, তাদের কাছে যে সর্বোচ্চ মান আমি প্রত্যাশা করি বলে মানুষ কল্পনা করে, তা অর্জন করতে মানুষকে আমি বলি না।

আমার বাক্যের মাঝে পর্বতের পতন ঘটে, জল বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়, মানুষ বিনম্র হয়, এবং হ্রদ অবিরাম প্রবাহিত হতে শুরু করে। যদিও তরঙ্গায়িত সাগর সরোষে আকাশের দিকে স্ফীত হয়ে ওঠে, কিন্তু আমার বাক্যের মাঝে এমন সাগরও যেন কোনো হ্রদের উপরিতলের মতোই প্রশান্ত হয়ে যায়। আমার হাতের সামান্যতম আন্দোলনে প্রবল বাত্যাপ্রবাহ তৎক্ষণাৎ বেগ হারিয়ে ফেলে আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়, এবং মনুষ্যজগত আবার শান্তিমগ্নতায় প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু আমি যখন আমার ক্রোধকে অর্গলমুক্ত করি, পর্বতমালা তৎক্ষণাৎ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, মৃত্তিকা সেই মুহূর্তেই প্রকম্পিত হতে শুরু করে, জল তখনই বিশুষ্ক হয়ে যায়, এবং মানুষ অচিরাৎ বিপর্যয়-কবলিত হয়। আমার ক্রোধের কারণে, মানুষের আর্তনাদের দিকে আমি ভ্রূক্ষেপমাত্র করি না, তাদের ক্রন্দনের উত্তরে কোনো সহায়তা করি না, কারণ আমার রোষ ক্রমবর্ধমান। আমি যখন গগনমণ্ডলের মাঝে থাকি, আমার উপস্থিতিতে কখনো নক্ষত্ররাজি ত্রাসে জর্জরিত হয়নি। পরিবর্তে, আমার হয়ে তাদের কাজে তারা মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছে, আর তাই আমি তাদের আরো আলো অর্পণ করেছি এবং তাদের উজ্জ্বলতরভাবে উদ্ভাষিত করেছি, যাতে আমার হয়ে তারা বৃহত্তর মহিমা অর্জন করে। আকাশ যত উজ্জ্বলতর, নিম্নের পৃথিবী তত বেশি অন্ধকারময়; কত মানুষ অভিযোগ করেছে যে আমার আয়োজন যথোচিত নয়, তাদের কত মানুষ আমায় ত্যাগ করেছে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজের রাজ্য, যে রাজ্যকে তারা আমার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে ও এই অন্ধকার দশাকে উল্টে দিতে নিয়োজিত করে। তবু তাদের সঙ্কল্পবলে কে তা অর্জন করেছে? এবং তাদের সঙ্কল্পে কে সফল হয়েছে? আমার হস্তের দ্বারা যা বিন্যস্ত হয়েছে, কে তা উল্টে দিতে পারে? বসন্তকাল যখন ভূভাগ জুড়ে ব্যাপ্ত হয়, আমি গোপনে ও নিস্তব্ধে ধরাধামে আমার আলোক প্রেরণ করি, যাতে পৃথিবীর বুকে মানুষ বাতাসের মধ্যে সহসা এক সতেজতা অনুভব করে। তবু ঠিক সেই মুহূর্তেই, মানুষের চক্ষুকে আমি ঝাপসা করে দিই, যাতে তারা কেবল একটা কুয়াশা দেখতে পায় যা মৃত্তিকাকে আচ্ছাদিত করে, এবং সকল মানুষ ও সামগ্রী অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। মানুষ কেবল আপন মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে পারে, “আলোটা কেন শুধু এক মুহূর্তের জন্যই স্থায়ী হল? ঈশ্বর মানুষকে কেন কেবল কুয়াশা আর অস্পষ্টতাই দেন?” মানুষের হতাশার মাঝে, মুহূর্তের মধ্যে কুয়াশা বিদূরিত হয়, কিন্তু যখন তারা আলোর ক্ষীণ একটা আভার সন্ধান পায়, তাদের উপর এক মুষলধারা বৃষ্টির আগল খুলে দিই আমি, এবং তারা যখন ঘুমায়, ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতের শব্দে তাদের কর্ণপটহ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। আতঙ্ককবলিত হয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের সময় পায় না, এবং প্রবল বর্ষণ তাদের গ্রাস করে ফেলে। মুহূর্তের মধ্যে, আকাশের নীচে সকলকিছু আমার ক্রোধোন্মত্ত রোষের মাঝে প্রক্ষালিত হয়ে নির্মল হয়ে ওঠে। মানুষ আর প্রবল বর্ষণের সূত্রপাতের বিষয়ে অভিযোগ করে না, এবং তাদের সকলের মধ্যে শ্রদ্ধা জন্ম নেয়। বৃষ্টির সহসা এই প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে, অধিকাংশ মানুষ আকাশ থেকে বর্ষিত বারিধারায় নিমজ্জিত হয়, জলের ভিতর শবদেহে পরিণত হয়। সারা পৃথিবীর উপর দৃষ্টিপাত করি এবং দেখি যে অনেকে জাগ্রত হচ্ছে, অনেকে অনুতাপ করছে, অনেকে ছোট্ট নৌকায় চড়ে জলের উৎসের সন্ধান করছে, অনেকে আমার মার্জনা ভিক্ষা করে আমার কাছে প্রণত হচ্ছে, অনেকে ওই আলোক দেখেছে, অনেকে আমার মুখমণ্ডল দর্শন করেছে, অনেকের বেঁচে থাকার সাহস রয়েছে, এবং সমগ্র পৃথিবী রূপান্তরিত হয়েছে। মুষলধারায় এই প্রবল বৃষ্টির পর, সমস্তকিছু আমার মানসচক্ষে যেমন ছিল সেই অবস্থায় ফিরে এসেছে, এবং আর তারা অবাধ্য নয়। অতি শীঘ্রই, সমগ্র ভূভাগ হাস্যরোলে পরিপূর্ণ হল, পৃথিবীর সর্বত্র এক বন্দনার পরিমণ্ডল বিরাজমান হয়েছে, এবং কোনো স্থান আমার মহিমা-বিরহিত নয়। পৃথিবীর সর্বত্র এবং বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে আমার প্রজ্ঞা প্রসারিত হয়েছে। সমস্তকিছুর মধ্যে রয়েছে আমার প্রজ্ঞার ফসল, সকল মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে আমার প্রজ্ঞার শ্রেষ্ঠ শিল্পকীর্তি; সবকিছু হয়ে উঠেছে আমার রাজ্যের সকল কিছুর মতো, এবং আমার আকাশের নীচে সকল মানুষ শান্তিতে বসবাস করে, আমার চারণভুমির মেষদের মতো। সকল মানুষের ঊর্ধ্বে আমি বিচরণ করি এবং সর্বত্র আমি লক্ষ্য রাখছি। কোনোকিছুই আর কখনো পুরাতন দেখায় না, এবং কোনো মানুষই আর আগের মতো নেই। সিংহাসনের উপর আমি বিশ্রাম নিই, সমগ্র মহাবিশ্বের ঊর্ধ্বে আমি এলিয়ে পড়ি, এবং আমি সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত, কারণ সকল বস্তু আবার পবিত্রতা ফিরে পেয়েছে, এবং আরেকবার আমি শান্তিতে সিয়োনে বাস করতে পারি, এবং ধরিত্রীর মানুষ আমার পরিচালনার অধীনে প্রশান্ত, পরিতৃপ্ত জীবন যাপন করতে পারে। সকল মানুষ আমার হাতের সমস্তকিছু পরিচালনা করছে, সকল মানুষ তাদের আগেকার বুদ্ধিমত্তা ও আদি অবয়ব ফিরে পেয়েছে; তারা আর ধূলায় আচ্ছাদিত নয়, বরং আমার রাজ্যে তারা জেড পাথরের মতো পবিত্র, প্রত্যেকের মুখাবয়ব মানুষের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত পবিত্র ঈশ্বরের মতো, কারণ মানুষের মধ্যে আমার রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মার্চ ১৪, ১৯৯২

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ১৫

পরবর্তী: অধ্যায় ১৭

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন