স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর (৪)
ঈশ্বরের পবিত্রতা (১)
এর আগের আসরে আমরা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিষয়ে আরো কিছু আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। আপাতত, আমরা ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতার বিষয়ে আলোচনা করব না। আমরা আজ যা নিয়ে আলোচনা করব তা সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয়—ঈশ্বরের পবিত্রতা। ঈশ্বরের পবিত্রতা হল ঈশ্বরের অনন্য সারসত্যের আরো একটি দিক, সুতরাং আমাদের এই বিষয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিপূর্বে আমি ঈশ্বরের সারসত্যের আরও দুটি দিক নিয়ে আলোচনা করেছি—ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাব এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব; এই দিকগুলি, এবং আজ আমি যে বিষয়ে আলোচনা করব, তা সকলই কি অনন্য? (হ্যাঁ।) ঈশ্বরের পবিত্রতাও অনন্য, অতএব আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হবে, এই অনন্যতার ভিত্তিতে এবং মূলে যা রয়েছে। আজ আমরা ঈশ্বরের যে অনন্য সারসত্যের বিষয়ে আলোচনা করতে চলেছি তা হল—তাঁর পবিত্রতা। সম্ভবত, তোমাদের মধ্যে কারও কারও মনে কিছু সংশয় রয়েছে, এবং তারা জিজ্ঞাসা করছে, “কেন আমরা ঈশ্বরের পবিত্রতার বিষয়ে আলোচনা করব?” চিন্তা কোরো না, আমি মন্থরগতিতে এই বিষয়টি নিয়ে তোমাদের বলব। আমার বক্তব্য শোনা হয়ে গেলে, তোমরা বুঝতে পারবে কেন আমার এই বিষয়ে আলোচনা করা এত প্রয়োজনীয়।
সবার আগে, “পবিত্র” শব্দটির সংজ্ঞা দেওয়া যাক। তোমাদের বোধ এবং তোমাদের অর্জিত সকল জ্ঞান অনুসারে, তোমরা “পবিত্র” শব্দটির সংজ্ঞা বলতে কী বোঝ? (“পবিত্র” অর্থে নিষ্কলঙ্ক, যা পূর্ণত মানুষের কলুষ বা ত্রুটি থেকে মুক্ত। সকল যা কিছু ইতিবাচক, তা চিন্তা হোক, কিংবা বক্তৃতা অথবা কর্ম, তার বিচ্ছুরণ ঘটায় পবিত্রতা।) ভালো কথা। (“পবিত্র” হল দৈবিক, অমলিন, মানুষের দ্বারা অলঙ্ঘনীয়। তা অনন্য, একান্তই ঈশ্বরের, এবং তা হল তাঁর প্রতীক।) এইটিই তোমাদের দেওয়া সংজ্ঞা। প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়ে, এই “পবিত্র” শব্দের একটি পরিসর, একটি সংজ্ঞা এবং একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। অন্ততপক্ষে, তোমরা যখন “পবিত্র” শব্দটি দেখ, তখন তোমাদের মন খালি থাকে না। তোমাদের কাছে এই শব্দটির সংজ্ঞার একটি সুনির্দিষ্ট পরিসর রয়েছে, এবং কিছু ব্যক্তির বক্তব্য কিছুটা হলেও ঈশ্বরের স্বভাবের সারসত্যকে সংজ্ঞায়িত করার কাছাকাছি আসে। তা খুবই ভালো কথা। অধিকাংশ ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে “পবিত্র” শব্দটি ইতিবাচক, এবং অবশ্যই তা যথার্থ। কিন্তু আজ, ঈশ্বরের পবিত্রতা সম্পর্কে আমাদের এই আলোচনায়, আমি কেবলমাত্র সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যার বিষয়েই বলে যাব না। পরিবর্তে, কেন আমি বলি ঈশ্বর পবিত্র, এবং কেন আমি ঈশ্বরের সারসত্য বর্ণনার সময়ে “পবিত্র” শব্দটি ব্যবহার করি, সেই তথ্যাবলি প্রামাণ্যরূপে উপস্থাপন করব৷ আমাদের আলোচনা যখন শেষ হবে, ততক্ষণে তুমি অনুভব করবে, যে “পবিত্র” শব্দটি ঈশ্বরের সারসত্যের সংজ্ঞা দেওয়ার জন্য, এবং ঈশ্বরের প্রসঙ্গে, প্রয়োগ করা ন্যায্য ও যথোপযুক্ত। অন্ততপক্ষে, মানুষের বর্তমান ভাষাগত প্রেক্ষাপটে, ঈশ্বরকে বোঝানোর জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা বিশেষভাবে উপযুক্ত—মানুষের ভাষার সমস্ত শব্দের মধ্যে, এই শব্দটির মাধ্যমেই সম্পূর্ণ যথাযথ ভাবে ঈশ্বরকে বোঝানো যায়। এই শব্দটি যখন ঈশ্বরকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তখন তা নিছক শূন্যগর্ভ শব্দ নয়, বা তা কোনো ভিত্তিহীন প্রশংসা অথবা অন্তঃসারশূন্য স্তাবকতা প্রকাশের শব্দ নয়। আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য হল যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি ঈশ্বরের সারমর্মের এই দিকটির সত্যতা স্বীকার করতে পারে। ঈশ্বর মানুষের উপলব্ধির বিষয়ে ভীত নন, তিনি মানুষের ভুল বোঝার বিষয়ে ভীত। ঈশ্বরের ইচ্ছা হল এই, যে প্রতিটি ব্যক্তি জানুক তাঁর সারসত্য, জানুক তাঁর যা আছে এবং তিনি যা। অতএব, যখনই আমরা ঈশ্বরের সারসত্যের একটি দিকের উল্লেখ করি, তখনই আমরা বহু তথ্য প্রদর্শন করতে পারি যার থেকে মানুষ দেখতে পায়, যে প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের সারসত্যের এই দিকটির অস্তিত্ব রয়েছে।
এখন যেহেতু আমাদের কাছে “পবিত্র” শব্দটির একটি সংজ্ঞা রয়েছে, তাহলে কিছু উদাহরণসহ আলোচনা করা যাক। মানুষ, তার পূর্বধারণা অনুসারে, বহু বস্তু ও ব্যক্তিকে “পবিত্র” হিসাবে কল্পনা করে। উদাহরণস্বরূপ, মানবজাতির অভিধানসমূহে কুমারী বালক-বালিকাদের পবিত্র হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্তু তারা কি বস্তুতই পবিত্র? এই যে সকল তথাকথিত “পবিত্র”, এবং যে “পবিত্র” নিয়ে আমরা আজ আলোচনা করব, তা কি এক ও অভিন্ন? মানুষের মধ্যে যাদের জোরালো নৈতিকতা রয়েছে, যাদের কথাবার্তা পরিমার্জিত তথা সংস্কৃতিবান, যারা কখনও কাউকে আঘাত করে, না এবং যাদের কথা শুনে অপরে স্বচ্ছন্দ ও প্রীতিপ্রদ বোধ করে—তারা কি পবিত্র? যারা প্রায়শই সৎকর্ম করে, যারা দানশীল এবং অপরকে প্রভূত সহায়তা প্রদান করে, যারা মানুষের জীবনে অঢেল আনন্দ নিয়ে আসে—তারা কি পবিত্র? যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কোনো চিন্তা পোষণ করে না, যারা কারও প্রতি অত্যুগ্র চাহিদা রাখে না, যারা সকলের প্রতি সহিষ্ণু—তারা কি পবিত্র? যারা কখনো কারও সাথে বচসা করেনি, অথবা কারও থেকে অযাচিত ভাবে সুবিধা গ্রহণ করেনি—তারা কি পবিত্র? আর তাদের সম্পর্কে কী বলা যায়, যারা অপরের হিতসাধনের উদ্দেশ্যে কর্ম করে, যারা পরোপকারী এবং সকল বিষয়ে অপরের নৈতিক উন্নতিসাধন করে—তারা কি পবিত্র? যারা তাদের জীবনের সকল সঞ্চয় অপরকে দান করে এবং সাধারণভাবে জীবনযাপন করে, যারা নিজের বিষয়ে কঠোর, কিন্তু অপরের সাথে উদার আচরণ করে—তারা কি পবিত্র? (না।) তোমাদের সকলেরই স্মরণে রয়েছে যে কীভাবে তোমাদের মায়েরা তোমাদের যত্ন নিত এবং সমস্ত সম্ভাব্য উপায়ে তোমাদের পরিচর্যা করত—তারা কি পবিত্র? তোমাদের যে সকল ভক্তির পাত্রগণ রয়েছে, তারা যশস্বী ব্যক্তিগণই হোক কিংবা সর্বজনপরিচিত অথবা মহাপুরুষ—তারা কি পবিত্র? (না।) এবারে দেখা যাক বাইবেলের সেই সকল নবীর দিকে যারা ভবিষ্যতের বিষয়ে এমন অনেক কিছুই বলতে পারত যা ছিল বহু মানুষের কাছে অজানা—এই ব্যক্তিগণ কি পবিত্র ছিল? যে ব্যক্তিগণ বাইবেলে ঈশ্বরের বাক্য এবং তাঁর কাজের তথ্য লিপিবদ্ধ করতে পেরেছিল—তারা কি পবিত্র ছিল? মোশি কি পবিত্র ছিল? অব্রাহাম কি পবিত্র ছিল? (না।) ইয়োবের বিষয়ে কী বলা যায়? সে কি পবিত্র ছিল? (না।) ঈশ্বর ইয়োবকে একজন ধার্মিক মানুষ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন, তবে কেন এমনকি তাকেও পবিত্র বলা যায় না? যারা ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে, তারা কি যথার্থই পবিত্র নয়? তারা কি পবিত্র, নাকি নয়? (না।) তোমরা কিঞ্চিৎ সংশয়াপন্ন, তোমরা উত্তর সম্পর্কে নিশ্চিত নও, এবং তোমাদের “না” বলার স্পর্ধা নেই, আবার তোমরা “হ্যাঁ” বলারও সাহস রাখ না, অতএব, শেষ পর্যন্ত তোমরা দায়সারা ভাবে বলে ওঠো: “না।” তোমাদের আরেকটি প্রশ্ন করা যাক। ঈশ্বরের বার্তাবাহক—অর্থাৎ ঈশ্বর যে দূতগণকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন—তারা কি পবিত্র? দেবদূতগণ কি পবিত্র? (না।) শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট না হওয়া মানবজাতি—তারা কি পবিত্র? (না।) তোমরা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই “না” বলে চলেছ। কিসের ভিত্তিতে? তোমরা বিভ্রান্ত, তাই নয় কি? তাহলে কেন এমনকি দেবদূতগণকেও পবিত্র বলা যায় না? তুমি এখন সংশয় বোধ করছ, তাই নয় কি? কোন ভিত্তিতে একথা বলা হল যে এই সকল পুর্বোক্ত ব্যক্তি, বস্তু বা অসৃষ্ট সত্তা পবিত্র নয়, তা কি তোমরা নির্ধারণ করতে পার? আমি নিশ্চিত যে তোমরা তা করতে অক্ষম। তাহলে, তোমাদের এই “না” বলাটা কি কিছুটা দায়িত্বজ্ঞানশূন্য নয়? তোমরা কি অন্ধভাবে উত্তর দিচ্ছ না? কোনো কোনো ব্যক্তি ভাবছে: “যেহেতু আপনার প্রশ্নটিকে আপনি এমনভাবে সাজিয়েছেন, সেহেতু উত্তরটি নিশ্চয়ই ‘না’ হবে।” আমায় চটজলদি উত্তর দিও না। উত্তরটি “হ্যাঁ” হবে নাকি “না”, সে বিষয়ে যত্নসহকারে বিবেচনা কর। যখন আমাদের পরবর্তী বিষয়বস্তুটি নিয়ে আলোচনা শেষ হবে, তখন তোমরা উত্তরটির “না” হওয়ার কারণ সম্বন্ধে অবগত হবে। আমি তোমাদের অনতিবিলম্বে উত্তরটি দেব। প্রথমে, ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু অংশ পাঠ করা যাক।
১. মানুষের প্রতি যিহোবার আদেশ
আদিপুস্তক ২:১৫-১৭ প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে এদন উদ্যানে কৃষিকর্ম ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করলেন। প্রভু পরমেশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিলেন, তুমি এই উদ্যানের যে কোনো ফল খেতে পারো কিন্তু সৎ এবং অসৎ জ্ঞানদায়ী যে বৃক্ষটি রয়েছে, তার ফল খেও না। যেদিন সেই বৃক্ষের ফল তুমি খাবে, নিশ্চিত জেনো, সেই দিনই হবে তোমার মৃত্যু।
২. সর্প দ্বারা নারীর প্রলোভন
আদিপুস্তক ৩:১-৫ প্রভু পরমেশ্বরের সৃষ্ট ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সর্প ছিল সবচেয়ে চতুর। সে নারীকে বলল, ঈশ্বর কি সত্যিই বলেছেন, “তোমরা এই উদ্যানের কোনো ফল খেও না”? নারী সর্পকে বললেন, আমরা এই উদ্যানের সব গাছের ফল খেতে পারি, কিন্তু উদ্যানের মাঝখানে যে গাছ আছে, সেটি সম্পর্কে ঈশ্বর বলেছেন, “তোমরা তার ফল খাবে না, এমন কি ছোঁবেও না, তাহলে মরবে”। সর্প নারীকে বলল, কক্ষনো মরবে না। ঈশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা ঐ ফল খাবে, সেই দিনই তোমাদের চোখ খুলে যাবে এবং তোমরা সৎ ও অসৎ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে ঈশ্বরের সমকক্ষ হবে!
বাইবেলের আদিপুস্তক থেকে এই দুইটি ছত্র উদ্ধৃত করা হল। তোমরা সকলে কি এই দুই ছত্রের সাথে পরিচিত? এগুলি আদিতে, যখন মানবজাতি প্রথম সৃষ্ট হয়েছিল, সেই সময়কালের ঘটনাবলী বিবৃত করে; এই ঘটনাগুলি বাস্তবেই ঘটেছিল। সর্বাগ্রে দেখা যাক, যিহোবা ঈশ্বর আদম ও হবাকে কী ধরনের আদেশ দিয়েছিলেন; এই আদেশের বিষয়বস্তু আমাদের আজকের বিষয়ের পক্ষে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। “যিহোবা ঈশ্বর মানুষকে নির্দেশ দিলেন, তুমি এই উদ্যানের যে কোনো ফল খেতে পারো কিন্তু সৎ এবং অসৎ জ্ঞানদায়ী যে বৃক্ষটি রয়েছে, তার ফল খেও না। যেদিন সেই বৃক্ষের ফল তুমি খাবে, নিশ্চিত জেনো, সেই দিনই হবে তোমার মৃত্যু।” এই ছত্রটিতে মানুষের প্রতি ঈশ্বর যে আদেশ করছেন, তার নিহিতার্থ কী? প্রথমত, ঈশ্বর মানুষকে তার কী কী ভোজনীয় তা বলছেন, যেমন বহুবিধ বৃক্ষের ফল। সে সকল ভক্ষণে কোনোপ্রকার বিপদ নেই এবং সেগুলিতে কোনো বিষ নেই; মানুষ নিঃসংশয়ে ও নির্দ্বিধায় এসকল যদৃচ্ছ ভক্ষণ করতে পারে। এ হল ঈশ্বরের আদেশের একটি অংশ। অপর অংশটি হল একটি সতর্কীকরণ। এই সতর্কীকরণের মাধ্যমে, ঈশ্বর মানুষকে বলেছেন যে, সে যেন কোনোমতেই সৎ এবং অসৎ জ্ঞানদায়ী বৃক্ষের ফল ভক্ষণ না করে। এই গাছের ফল সে খেয়ে ফেললে কী হবে? ঈশ্বর মানুষকে বলেছেন: যদি তুমি তা ভক্ষণ করো, তবে নিশ্চিতরূপেই তোমার মৃত্যু ঘটবে। এই বাক্য কি যথেষ্ট স্পষ্ট নয়? যদি তোমায় ঈশ্বর এই কথা বলেন, কিন্তু তুমি তার কারণ উপলব্ধি করতে না পেরে থাকো, তাহলে কি তুমি তাঁর বাক্যকে কোনো নিয়ম অথবা নির্দেশ হিসাবে মান্য করবে? এই ধরনের বাক্য মান্য করা উচিত। কিন্তু মানুষ মান্য করতে সমর্থ হোক বা না হোক, ঈশ্বরের বাক্যগুলি দ্ব্যর্থহীন। ঈশ্বর মানুষকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই বলেছেন যে তার কী ভোজনীয় এবং কী ভোজনীয় নয়, এবং যা তার ভোজনীয় নয় তা সে ভোজন করলে তার কী হবে। এই যে অল্প কিছু বাক্য ঈশ্বর বলেছেন, তার থেকে কি তুমি ঈশ্বরের স্বভাবের কিয়দংশ দেখতে পাচ্ছ? ঈশ্বরের এই বাক্যসমূহ কি সত্য? এতে কি কোনোপ্রকার ছলচাতুরী রয়েছে? কোনো অসত্য রয়েছে? কোনোপ্রকার ভীতিপ্রদর্শন রয়েছে? (না।) ঈশ্বর সততার সাথে, সত্য ভাবে, এবং আন্তরিকভাবে মানুষকে তার কী ভক্ষ্য এবং কী অভক্ষ্য তা বলছেন। ঈশ্বর সুস্পষ্ট এবং অকপট বচনে তাঁর বক্তব্য রেখেছেন। এই সকল বাক্যে কি কোনো প্রচ্ছন্ন অর্থ রয়েছে? এই বাক্যগুলি কি সহজসরল নয়? অনুমানের কোনো প্রয়োজন রয়েছে কি? অনুমানের কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলির অর্থ এক নজরেই স্পষ্ট হয়ে যায়। পাঠ করা মাত্র এগুলির অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রাঞ্জল হয়। অর্থাৎ, ঈশ্বর যা বলতে চান এবং যা প্রকাশ করতে ইচ্ছুক, তা তাঁর অন্তঃকরণ থেকে উদ্ভূত। ঈশ্বর যা প্রকাশ করেন, তা প্রাঞ্জল, অকপট এবং সুস্পষ্ট। সেগুলির কোনো প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য নেই, অথবা কোনো প্রচ্ছন্ন অর্থ নেই। তিনি সরাসরি মানুষকে সম্ভাষিত করেন, তার কী ভক্ষ্য এবং কী অভক্ষ্য তা তাকে বলেন। অর্থাৎ, ঈশ্বরের এই বাক্যসমুহের মাধ্যমে, মানুষ দেখতে পায় যে ঈশ্বরের হৃদয় স্বচ্ছ এবং সত্য। এখানে কোনো মিথ্যাচারের লক্ষণমাত্র নেই; বিষয়টি এমন নয় যে যা ভক্ষ্য তা তোমাকে খেতে বারণ করা হচ্ছে, অথবা যা ভক্ষণযোগ্য নয় তার বিষয়ে বলা হচ্ছে “এমনটা করো এবং দেখো কী হয়”। ঈশ্বরের বক্তব্যের অর্থ এইরূপ নয়। ঈশ্বর তাঁর অন্তঃকরণে যা ভাবেন, তিনি তা-ই বলেন। যদি আমি বলি যে ঈশ্বর পবিত্র কারণ তিনি এই বাক্যগুলির মাধ্যমে নিজেকে এইভাবে প্রদর্শন এবং প্রকাশ করেন, তাহলে তুমি ভাবতে পার যে আমি অত্যুক্তি করছি, বা আমি একটি সামান্য বিষয়কে বড় করে তুলছি। যদি তা-ই হয়, চিন্তা কোরো না; আমাদের আলোচনা এখনো শেষ হয়ে যায় নি।
এইবারে “সর্প দ্বারা নারীর প্রলোভন” বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক। সর্পটি কে? সে হল শয়তান। সে হল এমন একজন যার বিপরীতেই ঈশ্বরের ছয়-হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনায় পরিস্ফুট হয়, এবং তার এই ভূমিকাটি ঈশ্বরের পবিত্রতা সম্পর্কে আলোচনায় আমাদের উল্লেখ করতে হবে। একথা কেন বলছি? শয়তানের দুষ্টতা ও অনাচার সম্বন্ধে না জানলে, শয়তানের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত না হলে, পবিত্রতাকে স্বীকার করে নেওয়ার কোনোই উপায় নেই তোমার, এবং তুমি এ-ও জানতে পারবে না যে, পবিত্রতা আদতে কী। ভ্রান্তিবশতঃ, মানুষ বিশ্বাস করে যে শয়তান যা করে তা সঠিক, এর কারণ হল যে, তারা এই প্রকার বিকৃত স্বভাবের ভিতরেই জীবনযাপন করে। পবিত্রতার বিপরীতে তুলনার জন্য কোনো বস্তু তথা কোনো উপমেয় বিন্দু ব্যতিরেকে, তুমি জানতে পারবে না যে পবিত্রতা কী। এই কারণে এখানে শয়তানের কথা উল্লেখনীয়। এই উল্লেখ নিছকই অন্তঃসারশূন্য কথন নয়। শয়তানের কথা ও কাজের মাধ্যমে আমরা দেখব যে শয়তান কীভাবে কাজ করে, শয়তান কীভাবে মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে, এবং শয়তানের প্রকৃতি ও অবয়ব কীরূপ। তাহলে, নারী সর্পকে কী বলেছিল? যিহোবা ঈশ্বর তাকে যা বলেছিলেন, নারী সর্পকে তার-ই বিবরণ দিয়েছিল। যখন সে এই কথাগুলো বলেছিল, তখন কি সে নিশ্চিত ছিল যে ঈশ্বর তাকে যা বলেছিলেন তা সত্য? সে নিশ্চিত হতে পারেনি। সদ্য সৃষ্ট একজন হিসাবে, তার ভালো-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা ছিল না, এবং তার পারিপার্শ্বিক কোনোকিছুর বিষয়েই তার চৈতন্য হয় নি। সে সর্পকে যা বলেছিল তার নিরিখে, ঈশ্বরের বাক্যের যথার্থতার বিষয়ে সে অন্তর থেকে সুনিশ্চিত হতে পারে নি; তেমনটাই ছিল তার মনোভাব। অতএব, সর্পটি যখন দেখতে পেল যে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অনিশ্চয়তার মনোভাব রয়েছে নারীর, সে বলল: “কক্ষণো মরবে না। ঈশ্বর জানেন, যেদিন তোমরা ঐ ফল খাবে, সেই দিনই তোমাদের চোখ খুলে যাবে এবং তোমরা সৎ ও অসৎ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে ঈশ্বরের সমকক্ষ হবে!” এই কথাগুলির মধ্যে সমস্যার কিছু রয়েছে কি? এই বাক্যটি পাঠের সময়ে, তোমরা কি সর্পটির অভিপ্রায় উপলব্ধি করতে পার? কী সেই অভিপ্রায়? সে এই নারীকে প্রলুব্ধ করতে চেয়েছিল, চেয়েছিল তাকে ঈশ্বরের বাক্য মেনে চলা থেকে বিরত করতে। কিন্তু, সে সরাসরি এ কথা বলেনি। অতএব, আমরা বলতে পারি যে সে ছিল অতিশয় ধূর্ত। সেই সর্পটির মনের গোপনে, মানুষের থেকে প্রচ্ছন্ন যে অভীষ্ট রয়েছে, তা সিদ্ধির অভিপ্রায়ে সেটি এক চতুর ও ছলনাপূর্ণ উপায়ে তার বক্তব্যের সারার্থ প্রকাশ করে—এমনই সর্পটির ধূর্ততা। শয়তান সর্বদা এই উপায়েই কথা বলে এসেছে এবং ভান করে চলেছে। কোনোকিছু সুনিশ্চিত না করেই, সে বলে ওঠে “নিশ্চয়ই নয়”। কিন্তু এই উক্তি শ্রবণমাত্র, সেই অজ্ঞ নারীর অন্তর আলোড়িত হল। তার কথা কাঙ্খিত প্রভাব বিস্তার করেছে দেখে সর্পটি তুষ্ট হল—এমনই ছিল সেই সর্পের ধূর্ত অভিপ্রায়। উপরন্তু, সে এমন একটি পরিণতির প্রতিশ্রুতি দেয়, যা মানুষের নিকট কাঙ্খিত হিসাবে প্রতিভাত হয়, যখন সে নারীকে এই বলে প্রলুব্ধ করে, “যেদিন তোমরা ঐ ফল খাবে, সেই দিনই তোমাদের চোখ খুলে যাবে।” তাই, সেই নারী ভাবে “আমার চক্ষু উন্মোচিত হয়ে যাবে—সে তো উত্তম বিষয়!” এবং তারপর সর্পটি এমন কিছু বলে যা ছিল আরো লোভনীয়, যে বাক্য ইতিপূর্বে মানুষ কখনও শোনে নি, যে বাক্য শ্রবণকারীদের চরমভাবে প্রলুব্ধ করে: “তোমরা সৎ ও অসৎ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে ঈশ্বরের সমকক্ষ হবে!” এই উক্তি কি মানুষের পক্ষে প্রবলভাবে প্রলোভনসঙ্কুল নয়? যেন কেউ তোমায় বলছে: “তোমার মুখের আদল চমৎকার, তবে নাকের হাড়টি কিঞ্চিৎ খর্ব। তুমি যদি তা সংশোধন করে নাও, তাহলে তুমি একজন বিশ্বমানের সুন্দরী হয়ে উঠবে! আগে কখনো কসমেটিক সার্জারি করানোর ইচ্ছা পোষণ করেনি, এমন কোনো ব্যক্তির অন্তঃকরণ কি এই ধরনের কথায় আলোড়িত হবে? এই কথাগুলি কি প্রলোভন উদ্রেককারী নয়? এই প্রলোভন কি তোমায় প্রলুব্ধ করে না? এবং এ কি প্রলোভন নয়? (হ্যাঁ।) ঈশ্বর কি এই ধরনের কিছু বলেন? ঈশ্বরের যে বাক্য আমরা এখনই দেখলাম, তাতে এই ধরনের কোনো ইঙ্গিত ছিল কি? ঈশ্বর কি অন্তরে যা ভাবেন, তা-ই বলেন? মানুষ কি ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে তাঁর অন্তঃকরণটি দেখতে পায়? (হ্যাঁ।) কিন্তু তুমি কি সেই সর্পটির অন্তঃকরণ দেখতে পেয়েছিলে, যখন সে সেই নারীকে এই কথাগুলি বলেছিল? না। এবং মানুষ তার অজ্ঞতার কারণে সহজেই সর্পের কথায় প্রলুব্ধ হয়েছিল ও সহজেই প্রতারিত হয়েছিল। তুমি কি তবে শয়তানের উদ্দেশ্য দেখতে পেয়েছিলে? তুমি কি শয়তানের বক্তব্যের নিহিত অভিপ্রায় দেখতে সক্ষম হয়েছিলে? তুমি কি শয়তানের চক্রান্ত ও কৌশল দেখতে সমর্থ হয়েছিলে? (না।) শয়তানের কথা বলার এহেন কৌশল থেকে কোন ধরনের স্বভাব প্রতিভাত হয়? এই কথাগুলোর মাধ্যমে তুমি শয়তানের কোন ধরনের সারমর্ম দেখতে পেয়েছ? তা কি প্রচ্ছন্ন ও বিপজ্জনক নয়? হয়তো বাহ্যিকভাবে সে তোমার প্রতি স্মিত হাস্য করে, অথবা সম্ভবত সে কোনো প্রকার অভিব্যক্তিই প্রকাশ করে না। কিন্তু সে অন্তরে তার অভীষ্টসিদ্ধির উপায় হিসাব কষে চলেছে, এবং সেই অভীষ্ট তোমরা দেখতে অক্ষম। সে তোমায় যে সকল প্রতিশ্রুতি দেয়, যে সমস্ত সুবিধার বিবরণ দেয়, তা আসলে তার প্রলোভনের ছদ্মবেশ। সেগুলোকে ভালো হিসাবে দেখার কারণে তুমি মনে করো যে তার বক্তব্য ঈশ্বরের বক্তব্যের অপেক্ষা অধিকতর কার্যকর এবং সারগর্ভ। এমনটি যখন ঘটে, তখন কি মানুষ এক বশ্যতাপূর্ণ বন্দীতে পরিণত হয় না? যে কৌশলটি শয়তান প্রয়োগ করেছে, তা কি নারকীয় নয়? তুমিই নিজেকে অধঃপতনে নিমজ্জিত হতে দাও। শয়তানের বিনা অঙ্গুলিহেলনে, শুধুমাত্র তার এই দুটো কথাতেই, তুমি খুশিমনে শয়তানের অনুসরণ করো, তার বাধ্য হয়ে চলো। শয়তানের উদ্দেশ্য এই উপায়েই সিদ্ধ হয়েছে। এই উদ্দেশ্য কি অশুভ নয়? তা কি শয়তানের আদিমতম চেহারা নয়? মানুষ শয়তানের কথার মাধ্যমে তার অশুভ উদ্দেশ্য, তার কদর্য অবয়ব, এবং তার সারমর্ম দেখতে পায়। তাই নয় কি? এই কথাগুলির সাথে তুলনা করলে, তুমি কোনো বিশ্লেষণ না করেই মনে করতে পারো যে, যিহোবা ঈশ্বরের বাক্যগুলি নিস্তেজ, অতি সাধারণ ও অকিঞ্চিৎকর, এবং সেগুলি ঈশ্বরের সততার বন্দনায় অত্যুৎসাহী হওয়াকে ন্যায্যতা প্রদান করে না। তবে, যখন আমরা শয়তানের কথা এবং তার ঘৃণ্য অবয়বকে তুলনীয় হিসাবে গ্রহণ করি, তখন কি ঈশ্বরের এইসকল বাক্য বর্তমানের মানুষের পক্ষে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে না? (হ্যাঁ।) এই তুলনার মাধ্যমে, মানুষ ঈশ্বরের বিশুদ্ধ ত্রুটিহীনতা উপলব্ধি করতে পারে। শয়তানের প্রতিটি কথা, সেইসাথে শয়তানের উদ্দেশ্য, অভিপ্রায় এবং কথা বলার ধরন—সকলই অশুদ্ধ। শয়তানের বাচনভঙ্গির প্রধান বৈশিষ্ট্য কী? তোমায় তার দ্বিচারিতা দেখতে না দিয়ে, বা তার উদ্দেশ্য বুঝতে না দিয়ে, শয়তান তোমাকে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে বাকচাতুরী প্রয়োগ করে; শয়তান তোমায় টোপটা গিলতে দেয় ঠিকই, কিন্তু প্রতিদানে তোমাকেও তার স্তবস্তুতি করতে হয় আর তার গুণগান গাইতে হয়। এই চক্রান্ত কি শয়তানের অভ্যাসগতভাবেই পছন্দের উপায় নয়? (হ্যাঁ।) এইবারে দেখা যাক, শয়তানের অন্যান্য কী কী কথাবার্তা ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে মানুষ তার ঘৃণ্য চেহারা দেখতে পায়। ধর্মগ্রন্থ থেকে আরও কিছুটা পাঠ করা যাক।
৩. শয়তান ও যিহোবা ঈশ্বরের কথোপকথন
ইয়োবে ১:৬–১১ একদিন স্বর্গদূতেরা প্রভু পরমেশ্বরের সাক্ষাতে সমবেত হল। শয়তানও ছিল তাদের সঙ্গে। প্রভু পরমেশ্বর শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথা থেকে আসছ? শয়তান বলল, আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম। প্রভু পরমেশ্বর তাকে বললেন, তুমি কি আমার ভক্ত ইয়োবকে দেখেছ? তার মত সৎ ও বিশ্বস্ত লোক পৃথিবীতে কেউ নেই। সে আমার ভক্ত, মন্দের পথ সে পরিহার করে চলে। শয়তান বলল, ইয়োব কি বিনা স্বার্থে ঈশ্বরের উপাসনা করে? আপনি তাকে এবং তার পরিবারের সকলকে সর্বদা রক্ষা করছেন, আপনার আশীর্বাদে সে সকল কাজে সাফল্য লাভ করছে। তার ধনসম্পত্তি ও পশুপাল বেড়েই চলেছে। কিন্তু আপনি যদি এখন তার ধনসম্পদ ও সর্বস্ব কেড়ে নেন তাহলে সে আপনার মুখের উপরেই আপনাকে অভিসম্পাত দেবে।
ইয়োবে ২:১–৫ আর একদিন প্রভু পরমেশ্বরের সাক্ষাতে স্বর্গদূতদের সমাবেশে শয়তানও তাঁদের সঙ্গে প্রভুর সামনে উপস্থিত হল। প্রভু পরমেশ্বর শয়তানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথা থেকে আসছ? শয়তান বলল, আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম। প্রভু পরমেশ্বর তাকে বললেন, তুমি কি আমার ভক্ত ইয়োবকে লক্ষ্য করেছ? পৃথিবীতে তার মত সৎ ও বিশ্বস্ত কেউ নেই। সে আমার উপাসনা করে এবং মন্দের পথ পরিহার করে চলে। যদিও অকারণে তুমি তার ক্ষতি করার অনুমতি আমার কাছ থেকে নিয়েছ তবুও দেখ, সে তার বিশ্বাসে অবিচল রয়েছে। শয়তান তখন প্রভুকে বলল, মানুষ নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু এবার আপনি তার দেহে আঘাত করুন, দেখবেন সে আপনার মুখের উপরেই আপনাকে দোষারোপ করবে।
এই দুইটি ছত্র পূর্ণত ঈশ্বর এবং শয়তানের মধ্যে একটি কথোপকথন দ্বারা গঠিত; এগুলি নথিবদ্ধ করেছে যে ঈশ্বর কী বলেছিলেন এবং শয়তান কী বলেছিল। ঈশ্বর অধিক কিছু বলেননি, এবং তিনি খুব সহজভাবেই তাঁর বক্তব্য রেখেছিলেন। আমরা কি তাঁর সরল বাক্যের ভিতর ঈশ্বরের পবিত্রতা দেখতে পাই? কেউ কেউ বলবে যে তা সহজসাধ্য নয়। তাহলে, আমরা কি আমরা শয়তানের প্রত্যুত্তরের মধ্যে তার কদর্যতা দেখতে পাই? সর্বাগ্রে দেখে নেওয়া যাক যিহোবা ঈশ্বর শয়তানকে কী ধরনের প্রশ্ন করেছিলেন। “তুমি কোথা থেকে আসছ?” এই প্রশ্নটি কি অকপট নয়? এর কি কোনোপ্রকার গুহ্য অর্থ রয়েছে? না; এটি নিতান্তই একটি অকপট প্রশ্ন। আমি যদি তোমাদের জিজ্ঞাসা করতাম: “তুমি কোথা থেকে আসছ?”, তোমরা তাহলে কীভাবে তার উত্তর দিতে? এই প্রশ্নের উত্তর কী খুবই কঠিন? তোমরা কি তার উত্তরে বলতে: “পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম”? (না।) তোমরা এমন উত্তর দিতে না। তাহলে, তোমরা যখন শয়তানকে এমন ভাবে উত্তর দিতে দেখ, তখন তোমরা কেমন অনুভব কর? (আমরা অনুভব করি যে শয়তান অযৌক্তিকতা এবং সেইসাথে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে।) তোমরা কী বলতে পার যে আমি কেমন অনুভব করছি? যখনই আমি শয়তানের এই কথাগুলি দেখি, আমার বিতৃষ্ণার উদ্রেক হয়, কারণ শয়তান কথা বলে, কিন্তু তার কথায় কোনো সারবস্তু নেই। শয়তান কি ঈশ্বরের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল? না, শয়তান যে কথাগুলি বলেছিল তা কোনো উত্তর ছিল না, সেগুলির থেকে কিছুই পাওয়া যায় না। সেগুলি ঈশ্বরের প্রশ্নের উত্তর ছিল না। “আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম।” তুমি এই কথাগুলির বিষয়ে কী উপলব্ধি করো? শয়তান ঠিক কোথা থেকে এসেছিল? তোমরা কি এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পেয়েছ? (না।) এ হল শয়তানের শঠ ফন্দি আঁটার “প্রতিভা”—আদতে সে কী বলছে, তা কাউকে আবিষ্কার করতে না দেওয়া। এই কথাগুলি শুনে তবুও তুমি বুঝতে পারবে না সে ঠিক কী বললো, যদিও তার উত্তর দেওয়া শেষ হয়ে গেছে। অথচ শয়তান বিশ্বাস করে সে যথাযথভাবেই উত্তর দিয়েছে। তাহলে, তোমার কেমন লাগছে? বীতশ্রদ্ধ? (হ্যাঁ।) তাহলে এখন তুমি সেই কথার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিতৃষ্ণা অনুভব করা আরম্ভ করেছ। শয়তানের কথাগুলির একটি সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে: শয়তান যা বলে তা তোমাকে বিভ্রান্ত করে দেয়, তুমি তার কথাগুলির উৎস বুঝতে পারো না। কখনো কখনো শয়তানের কোনো উদ্দেশ্য থাকে এবং সে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই কথা বলে, আবার কখনো কখনো তার স্বভাবের চালনায়, এই কথাগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হয়, এবং শয়তানের মুখ থেকে সরাসরি নির্গত হয়। শয়তান এই ধরনের কথার পরিমাপ করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে না; বরং, চিন্তা না করেই সে সেগুলি অভিব্যক্ত করে। ঈশ্বর যখন জিজ্ঞাসা করলেন যে কোথা থেকে তার আগমন ঘটেছে, তখন শয়তান কিছু দ্ব্যর্থবোধক কথায় তার উত্তর দেয়। কোথা থেকে শয়তানের আগমন ঘটছে সেই বিষয়ে কখনোই অবগত না হয়ে তুমি অত্যন্ত বিহ্বল বোধ কর। তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ রয়েছ যারা এইভাবে কথা বলে? এ কী কোনো কথা বলার উপায়? (এ হল দ্ব্যর্থবোধক এবং তা কোনো একটি নির্দিষ্ট উত্তর প্রদান করে না।) এই ভাবে কথা বলাকে বর্ণনা করার জন্য আমাদের কী ধরনের শব্দ প্রয়োগ করা উচিত? এ হল চিত্তবিক্ষেপকারী এবং বিভ্রান্তিকর। ধর, কেউ গতকাল কী করেছে তা সে অন্যদের জানতে দিতে চাইছে না। তুমি তাদের জিজ্ঞাসা কর: “গতকাল আমি তোমায় দেখলাম। কোথায় যাচ্ছিলে?” তারা তোমাকে সরাসরি বলে না কোথায় গিয়েছিল। বরং, বলে: “কি যে এক দিন ছিল গতকাল। বড়ই ক্লান্তিকর ছিল তা!” তারা কি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিল? দিল বটে, কিন্তু তোমার কাম্য উত্তরটা দিল না। এটিই মানুষের বাকচাতুর্যের “প্রতিভা”। তুমি কখনোই তাদের কথার অর্থ আবিষ্কার করতে পারবে না, সেই কথাগুলির উত্স অথবা অভিপ্রায়ও অনুধাবন করতে পারবে না। তুমি জানতেও পারবে না যে তারা কী এড়িয়ে যেতে চাইছে, কারণ তাদের অন্তরে তাদের নিজস্ব আখ্যান রয়েছে—এ হল কাপট্য। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে রয়েছে যে প্রায়শই এইভাবে কথা বলে? (হ্যাঁ।) তাহলে তোমাদের অভিপ্রায় কি? তা কি কখনও নিজের স্বার্থরক্ষা, কখনো তোমাদের নিজেদের অহমিকা, অবস্থান, এবং ভাবমূর্তি বজায় রাখা, নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষা করা? অভিপ্রায় যাই হোক না কেন, তা তোমার স্বার্থের থেকে অবিচ্ছেদ্য, তোমার স্বার্থের সাথে যুক্ত। এমনটাই কি মানুষের প্রকৃতি নয়? যাদের এই ধরনের প্রকৃতি রয়েছে, তারা সকলেই হয় শয়তানের পরিবারভুক্ত, অথবা তার সাথে ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা বিষয়টা এমন ভাবে উপস্থাপন করতে পারি, পারি না কি? সাধারণভাবে বললে, এই অভিব্যক্তি বিতৃষ্ণা উদ্রেককারী এবং ঘৃণার্হ। তোমারাও এখন বীতশ্রদ্ধ বোধ করছ, তাই নয় কি? (হ্যাঁ।)
পরবর্তী ছত্রগুলি দেখা যাক। শয়তান পুনরায় যিহোবার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলে: “ইয়োব কি বিনা স্বার্থে ঈশ্বরের উপাসনা করে?” শয়তান ইয়োবের বিষয়ে যিহোবার মূল্যায়নের উপর আক্রমণ শুরু করছে, এবং সেই আক্রমণ বৈরিতার রঙে রঞ্জিত। “আপনি তাকে এবং তার পরিবারের সকলকে সর্বদা রক্ষা করছেন” এই হল ইয়োবের উপর যিহোভার করা কার্যের বিষয়ে শয়তানের বোধ এবং মূল্যায়ন। সেই মূল্যায়ন শয়তান এই কথাগুলির মাধ্যমে করছে: “আপনার আশীর্বাদে সে সকল কাজে সাফল্য লাভ করছে। তার ধনসম্পত্তি ও পশুপাল বেড়েই চলেছে। কিন্তু আপনি যদি এখন তার ধনসম্পদ ও সর্বস্ব কেড়ে নেন তাহলে সে আপনার মুখের উপরেই আপনাকে অভিসম্পাত দেবে।” শয়তান সর্বদাই অস্পষ্টভাবে কথা বলে, কিন্তু এখানে সে বেশ নিশ্চিতভাবে কথা বলছে। যাই হোক, যদিও এই কথাগুলি বেশ নিশ্চিতভাবেই বলা, কিন্তু কথাগুলি যিহোবা ঈশ্বরের উপর, স্বয়ং ঈশ্বরের উপর, আক্রমণ, নিন্দা, এবং বিরুদ্ধাচরণমূলক কাজ। তোমরা যখন এই কথাগুলি শ্রবণ কর তখন তোমাদের কেমন অনুভূতি হয়? ঘৃণা বোধ হয় কি? তোমরা কি শয়তানের অভিপ্রায় স্পষ্টভাবে দেখতে পাও? প্রথমত, ইয়োব—যে এমন একজন ব্যক্তি যে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলে—তার সম্বন্ধে যিহোবার মূল্যায়নকে শয়তান অস্বীকার করছে। তারপর ইয়োব যা বলে এবং যা করে তা সকলই শয়তান অস্বীকার করছে, অর্থাৎ, সে যিহোবার প্রতি ইয়োবের ভীতিকে অস্বীকার করছে। এটা কি অভিযুক্ত করা নয়? যিহোবা যা কিছু বলেন এবং করেন, তা নিয়ে শয়তান অভিযোগ করেছে, অস্বীকার করছে, এবং সন্দিহান হচ্ছে। সে বিশ্বাস করছে না, বলছে, “বিষয়টি যদি আপনার কথামতোই হয়ে থাকে, তাহলে আমি কেমন করে তা দেখতে পেলাম না? আপনি তাকে অঢেল আশীর্বাদ দিয়েছেন, তাহলে সে কীভাবে আপনাকে ভয় না করে থাকতে পারে?” এটা কি ঈশ্বর যা কিছু করেন তার সবকিছুই অস্বীকার করা নয়? অভিযোগ, অস্বীকার, ঈশ্বরনিন্দা—শয়তানের কথাগুলি কি আক্রমণ নয়? সেগুলি কি শয়তানের অন্তরের চিন্তার প্রকৃত প্রকাশ নয়? এই কথাগুলি অবশ্যই আমরা একটু আগেই যে কথাগুলি পাঠ করেছিলাম—“আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম।”—তার সমতুল্য নয়। এই কথাগুলি পূর্ণত ভিন্নতর। এই কথাগুলির মাধ্যমে, শয়তান তার অন্তরের নিহিত বিষয়বস্তু নগ্নরূপে উন্মোচিত করেছে—ঈশ্বরের প্রতি তার মনোবৃত্তি, এবং ইয়োবের ঈশ্বরভীতির প্রতি তার ঘৃণা। এমনটি যখন ঘটে, তখন তার বিদ্বেষ এবং দুষ্ট প্রকৃতি পূর্ণত অনাবৃত হয়। যারা ঈশ্বরে ভীত, তাদের সে ঘৃণা করে, যারা মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে তাদেরও সে ঘৃণা করে, এবং অধিকতর ঘৃণা সে করে যিহোবাকে, মানুষকে আশীর্বাদ প্রদান করার জন্য। সে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ধ্বংস করতে চায় ইয়োবকে, যাকে ঈশ্বর স্বহস্তে প্রতিপালন করেছেন, তার বিনাশ করতে চায় এই বলে: “আপনি বলছেন যে ইয়োব আপনাকে ভয় করে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলে। আমি কিন্তু বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছি।” সে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে যিহোবাকে প্ররোচিত এবং উত্তেজিত করার উদ্দেশ্যে, এবং যিহোবা ঈশ্বর যাতে ইয়োবকে শয়তানের হাতে তুলে দেন সেই উদ্দেশ্যে বিবিধ কূটকৌশল প্রয়োগ করে, যাতে সে ইয়োবকে যদৃচ্ছ প্রভাবিত করতে, ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং অপব্যবহৃত করতে পারে। সে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ঈশ্বরের নজরে ন্যায়পরায়ণ এবং নিখুঁত এই ব্যক্তিটিকে ধ্বংস করতে চায়। শয়তান যে এহেন অন্তঃকরণের অধিকারী, তা কি নিছকই এক ক্ষণস্থায়ী প্রবৃত্তির ফলে? না, বিষয়টি তেমন নয়। দীর্ঘকাল ধরে বিষয়টি এমন হয়ে উঠেছে। ঈশ্বর যখন তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন, কোনো ব্যক্তির প্রতি যত্নবান হন, এবং সেই ব্যক্তিকে পরীক্ষা করেন, এবং যখন সেই ব্যক্তির প্রতি সমর্থন এবং অনুমোদন প্রদান করেন, শয়তান নিকটে থেকেই অনুসরণ করে, সেই ব্যক্তিকে ঠকানোর এবং তার ক্ষতিসাধনের জন্য সচেষ্ট থাকে। ঈশ্বর যদি সেই ব্যক্তিকে অর্জন করতে চান, তাহলে শয়তানও তখন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, নানাবিধ কূটচক্রান্তের মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কর্মকে প্রলোভন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত তথা ব্যহত ও বিঘ্নিত করে, তার গোপন অভিপ্রায় সার্থক করার উদ্দেশ্যে। কী এই অভিপ্রায়? সে চায় না যে ঈশ্বর কাউকে অর্জন করুন; ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে আকাঙ্ক্ষা করেন, সে তাদের ছিনিয়ে নিজের অধিকারে আনতে চায়, সে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাদের নেতৃত্ব দিতে চায় যাতে তারা তারই উপাসনা করে, যাতে মন্দ কর্ম সংঘটনে এবং ঈশ্বরের বিরোধিতায় তারা তার সাথে যুক্ত হয়। এ কি শয়তানের অশুভ অভিপ্রায় নয়? তোমরা প্রায়শই বলো যে শয়তান অত্যন্ত দুষ্ট, অত্যন্ত খারাপ, কিন্তু তোমরা কি সেটা দেখেছ? মানবজাতি কত খারাপ তা তোমরা দেখতে পারো; আসল শয়তান যে কত খারাপ, তা তোমরা দেখো নি। তবুও, ইয়োবের বিষয়ে তোমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলে শয়তান ঠিক কতটা দুষ্ট। এই বিষয়টি শয়তানের ঘৃণ্য চেহারা ও তার সারমর্ম অতিশয় স্পষ্ট করে তুলেছে। ঈশ্বরের সাথে যুদ্ধ এবং তাঁর অনুগমনের মাধ্যমে, শয়তানের উদ্দেশ্য হল সেই সকল কার্যের ধ্বংসসাধন যা ঈশ্বর করতে চান, ঈশ্বর যাঁদের অর্জন করতে চান তাদের অধিগ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণ, এবং ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে চান তাদের প্রত্যেকের নির্বাপণ। তারা নির্বাপিত না হলে, তখন শয়তান তাদের দখল করে নেয়, যাতে সে তাদের ব্যবহার করতে পারে—এই হল তার উদ্দেশ্য। এবং ঈশ্বর কী করেন? এই ছত্রটিতে ঈশ্বর কেবলমাত্র একটিই স্পষ্ট বাক্য বলেন; এই মর্মে কিছু নথিবদ্ধ নেই যে ঈশ্বর এর অধিক কিছু করেছিলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে শয়তানের বক্তব্যের এবং কর্মের একাধিক নথি রয়েছে। ধর্মগ্রন্থের পরবর্তী ছত্রে যিহোবা শয়তানকে প্রশ্ন করছেন, “তুমি কোথা থেকে আসছ?” এর উত্তরে শয়তান কী বলছে? (এইবারেও উত্তরটি একই: “আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম।”) সেই উক্তিটি এখনও একই রয়ে যাচ্ছে। এটাই হয়ে উঠেছে শয়তানের মূলমন্ত্র, তার পরিচয়বাহক। তা কেমন করে হল? শয়তান কি ঘৃণ্য নয়? এই জঘন্য কথাটি মাত্র একবার বললেই তা যথেষ্ট হত। তবু কেন শয়তান তা বারংবার বলতে থাকে? এর থেকে একটি বিষয় প্রতিপন্ন হয়: শয়তানের স্বভাব অপরিবর্তনীয়। শয়তান ছলনার মাধ্যমে তার কদর্যতাকে গোপন করতে পারে না। ঈশ্বর তাকে একটি প্রশ্ন করেন, এবং এইভাবে সে তার উত্তর দেয়। বিষয়টি যেহেতু এমন, তাহলে মানুষের সাথে সে নিশ্চিতরূপেই কী প্রকার আচরণ করবে তা কল্পনা করে দেখো! শয়তানের ঈশ্বরভীতি নেই, সে ঈশ্বরকে ভয় পায় না, এবং ঈশ্বরকে মান্য করে না। তাই সে সাহস দেখায় ঈশ্বরের সম্মুখে যথেচ্ছ দাম্ভিক হওয়ার, ঈশ্বরের প্রশ্নকে খারিজ করতে একই কথা বারবার ব্যবহার করার, ঈশ্বরের প্রশ্নে বারংবার এই একই উত্তর ব্যবহার করার, ঈশ্বরকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই উত্তরটি প্রয়োগের চেষ্টা করার—এ-ই হল শয়তানের কদর্য অবয়ব। সে ঈশ্বরের সর্বশক্তিমানতায় বিশ্বাসী নয়, ঈশ্বরের কর্তৃত্বে বিশ্বাসী নয়, এবং অবশ্যই ঈশ্বরের আধিপত্যের অধীনে সমর্পণ করতে অনিচ্ছুক। সে ক্রমাগত ঈশ্বরের বিরোধিতায় রত, ক্রমাগত ঈশ্বরের যা করেন তার সমস্ত কিছুর প্রতি আক্রমণ হানে, ঈশ্বর যা করেন সেই সকল কর্মের ধ্বংসসাধনে উদ্যত হয়—এ-ই হল তার দুষ্ট অভিপ্রায়।
ইয়োবের গ্রন্থে যেমন নথিবদ্ধ রয়েছে, শয়তানের উচ্চারিত বক্তব্যের এই দুটি অনুচ্ছেদ এবং শয়তান যা যা করেছে, তা ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শয়তানের প্রতিরোধকে উপস্থাপিত করে—এখানে, শয়তানের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। তুমি কি বাস্তব জীবনে শয়তানের কথা ও কাজ প্রত্যক্ষ করেছ? তুমি যখন সেগুলি দেখো, তখন তুমি সেগুলিকে শয়তানের কথিত বিষয় হিসাবে নাও ভাবতে পারো, বরং পরিবর্তে এমনও মনে করতে পারো যে সেগুলি মানুষের কথিত। মানুষ যখন এমন কথাবার্তা বলে, তখন তা কীসের প্রতিনিধিত্ব করে? তা শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করে। এমনকি তুমি যদি তা চিনতেও পার, তবুও তুমি ধারণা করতে পারবে না যে সেকথা আসলে শয়তান বলছে। কিন্তু তুমি এখন দ্ব্যর্থহীনভাবে দেখেছ শয়তান নিজে কী বলেছে। শয়তানের কদর্য চেহারা এবং তার দুষ্ট দিক সম্বন্ধে তুমি এখন এক দ্ব্যর্থহীন, স্ফটিক-স্বচ্ছ উপলব্ধির অধিকারী হয়েছ। তাহলে, শয়তানের প্রকৃতি সম্বন্ধে অবগত হতে মানুষের সহায় হওয়ার কারণে শয়তান দ্বারা উচ্চারিত এই দুইটি ছত্র কি মানুষের পক্ষে মূল্যবান? এই দুই ছত্র কি বর্তমানের মানবজাতিকে শয়তানের ঘৃণ্য চেহারার সাথে পরিচিত হতে, শয়তানের আসল, বাস্তবিক মুখাবয়ব চিনে নিতে সমর্থ করার কারণে, সযত্নে সংরক্ষণ করা উচিত? যদিও মনে হতে পারে যে এগুলি বলার পক্ষে অনুপযুক্ত, তবুও এই শব্দগুলি যখন এইভাবে অভিব্যক্ত হয়, তখন এগুলি যথাযথ বলেই বিবেচনা করা যায়। প্রকৃতপক্ষে, আমি একমাত্র এই উপায়েই এই ধারণাটি প্রকাশ করতে পারি, এবং তোমরা যদি তা উপলব্ধি করতে পারো, তাহলেই যথেষ্ট। যিহোবা যা করেন শয়তান পুনঃপুনঃ তার উপর আক্রমণ শানায়, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের ভীতির বিষয়ে অভিযোগ নিক্ষেপ করে। শয়তান বিবিধ উপায়ে যিহোবাকে প্ররোচিত করতে চেষ্টা করে, যাতে তার ইয়োবকে প্রলুব্ধ করাকে যিহোবা ক্ষমার্হ্য হিসাবে বিবেচনা করেন। অতএব, তার উক্তিগুলি প্রবলভাবে প্ররোচনামূলক প্রকৃতির। তাহলে, আমায় বলো, শয়তান এই উক্তিগুলি করা মাত্রই, ঈশ্বরের কাছে শয়তানের উদ্দেশ্য কি স্পষ্টতই প্রতিভাত হচ্ছে? (হ্যাঁ।) ইয়োব নামক এই ব্যক্তি, ঈশ্বর তাঁর অন্তরে যাকে নিরীক্ষণ করেন—ঈশ্বরের এই সেবক, ঈশ্বর যাকে একজন ধার্মিক, নিখুঁত মানুষ হিসাবে গণ্য করেন সে কি এরকম প্রলোভনের সামনে নিজ অবস্থানে দৃঢ় থাকতে পারে? (হ্যাঁ।) ঈশ্বর কেন এই বিষয়ে এত সুনিশ্চিত? ঈশ্বর কি সর্বদা মানুষের অন্তরকে পরীক্ষা করে চলেছেন? (হ্যাঁ।) তাহলে শয়তান কি মানুষের অন্তঃকরণ পরীক্ষা করে দেখতে সক্ষম? শয়তান তা পারে না। এমনকি যদিও বা শয়তান তোমার অন্তর দেখতে পায়, তার মন্দ প্রকৃতি তাকে কখনোই এই মর্মে বিশ্বাস করতে দেবে না যে, পবিত্রতা আদতে পবিত্রতাই, অথবা হীনতা আদতে হীনতাই। দুষ্ট শয়তান পবিত্র, ধার্মিক, অথবা সমুজ্জ্বল কোনো কিছুকেই মূল্যবান মনে করতে পারে না। শয়তান তার প্রকৃতি, ও মন্দতা অনুসারে এবং তার অভ্যাসগত পদ্ধতির মাধ্যমে অক্লান্তভাবে কাজ না করে থাকতে পারে না। এমনকি ঈশ্বরের দ্বারা দণ্ডিত অথবা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মূল্যেও, সে অনমনীয়ভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে যেতে দ্বিধা বোধ করে না—এটা মন্দতা, এটাই শয়তানের প্রকৃতি। তাই, এই অনুচ্ছেদে শয়তান বলছে: “মানুষ নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু এবার আপনি তার দেহে আঘাত করুন, দেখবেন সে আপনার মুখের উপরেই আপনাকে দোষারোপ করবে।” শয়তান ভাবে যে, মানুষের ঈশ্বরভীতির কারণ হল যে মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে অঢেল সুবিধা পেয়েছে। মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার কারণেই সে ঈশ্বরকে ভালো বলে। কিন্তু ঈশ্বর উত্তম বলে নয়, বরং মানুষ এত সুবিধা লাভ করে বলেই সে ঈশ্বরকে এমন ভাবে ভয় পেতে পারে। ঈশ্বর তাকে সেই সুবিধাগুলি থেকে একবার বঞ্চিত করলেই সে ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে। শয়তান তার মন্দ প্রকৃতিবশতঃ বিশ্বাস করে না যে মানুষের হৃদয় প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরে ভীত হতে পারে। তার মন্দ প্রকৃতির কারণে, সে জানে না যে পবিত্রতা কী, ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা বিষয়টি সম্বন্ধে তো সে আরোই অবগত নয়। সে জানে না ঈশ্বরকে মান্য করা কাকে বলে অথবা ঈশ্বরভীতির অর্থ কী। সে এসকল বিষয়ে অবগত নয় বলেই সে মনে করে মানুষও ঈশ্বরকে ভয় পেতে পারে না। বলো তো, শয়তান কি দুষ্ট নয়? আমাদের গির্জা ব্যতীত, বিভিন্ন ধর্ম এবং সম্প্রদায় অথবা ধর্মীয় ও সামাজিক গোষ্ঠীর কেউই ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, আরোই বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর দেহে আবির্ভূত হয়েছেন এবং বিচারকার্য সম্পাদন করছেন, তাই তারা মনে করে তুমি যাতে বিশ্বাস করো তা ঈশ্বর নয়। কোনো ব্যভিচারী ব্যক্তি তার পারিপার্শ্বিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এবং দেখতে পায় যে অন্যান্য সকলেও তারই ন্যায় ব্যভিচারী। কোনো মিথ্যাচারী ব্যক্তি তার পারিপার্শ্বিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কেবলই অসততা এবং মিথ্যাচার দেখতে পায়। কোনো দুষ্ট ব্যক্তি অপর সকলকে মন্দ রূপে দেখে, এবং সে যাকে দেখে তারই সাথে দ্বন্দ্বের উপক্রম করে। যারা কিছু মাত্রায় সততার অধিকারী, তারা অপর সকলকে সৎ হিসাবে দেখে, তাই তারা নিয়ত প্রতারিত হয়, সর্বদা প্রবঞ্চিত হয়, এবং এ বিষয়ে তাদের কিছুই করার নেই। আমি তোমাদের প্রত্যয়কে দৃঢ়সংবদ্ধ করে তোলার উদ্দেশ্যে এই কয়েকটি উদাহরণ দিলাম: শয়তানের দুষ্ট প্রকৃতি কোনো ক্ষণস্থায়ী বাধ্যতা নয়, বা তা পরিস্থিতি দ্বারাও নির্ধারিত হয় না, বা তা কোনো হেতু অথবা প্রাসঙ্গিক কারণ থেকে উদ্ভূত কোনো ক্ষণস্থায়ী প্রকাশ নয়। একেবারেই নয়! শয়তান এমনতর না হতে নিতান্তই অপারগ! সে কোনো ভালো কাজই করতে পারে না। এমনকি যখন সে শ্রুতিমধুর কোনো কথা বলে, তা শুধু তোমাকে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যেই বলে। তার কথাগুলি যতই মধুর হয়, যতই তা হয় কৌশলী এবং নম্র, ততই অধিক বিদ্বেষপূর্ণ হয় তাদের নিহিত অশুভ অভিপ্রায়। এই দুটি অনুচ্ছেদে শয়তান তার কী ধরনের চেহারা, কী ধরনের প্রকৃতি প্রদর্শন করে? (বিপজ্জনক, বিদ্বেষপূর্ণ, এবং দুষ্ট।) শয়তানের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হল মন্দতা; অন্য সব বৈশিষ্টের চেয়ে বেশি করে, শয়তান দুষ্ট ও বিদ্বেষপরায়ণ।
এখন যেহেতু আমাদের শয়তান বিষয়ক আলোচনা আমরা শেষ করেছি, তাহলে এবারে ঈশ্বর-বিষয়ক আলোচনায় ফিরে আসা যাক। ঈশ্বরের ছয়-হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সময়কালে, ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ কথন অতি অল্পই বাইবেলে নথিবদ্ধ রয়েছে, এবং যতটুকু রয়েছে তা অতীব সহজ। সূচনাকাল থেকেই আরম্ভ করা যাক। ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর থেকে মানবজাতির জীবনের পথপ্রদর্শন করে চলেছেন। মানবজাতিকে আশীর্বাদ প্রদান করাই হোক, বা মানুষের উদ্দেশ্যে বিধান ও আদেশসমূহ প্রণয়ন করাই হোক, বা তা হোক জীবনের বিভিন্ন নিয়ম নির্ধারণ করা, তোমরা কি জান যে এই কর্মসকল সংঘটনে ঈশ্বরের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য কী? প্রথমত, তুমি কি সুনিশ্চিতরূপে বলতে পার যে ঈশ্বর যা করেন তা সকলই মানবজাতির মঙ্গলের উদ্দেশ্যেই করেন? এগুলি সাড়ম্বর, অন্তঃসারশূন্য কথার মতো মনে হতে পারে, কিন্তু অন্তর্নিহিত বিশদ বিবরণ পরীক্ষা করে দেখলে, ঈশ্বর যা কিছু করেন তা সকলই কি মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের পথে নেতৃত্ব দেওয়ার এবং পরিচালিত করার উদ্দেশ্যেই নয়? মানুষকে তাঁর নিয়ম মেনে চালিত করাই হোক, অথবা মানুষকে দিয়ে তাঁর বিধানসমূহ মান্য করানোই হোক, ঈশ্বরের লক্ষ্য হল, মানুষ যেন শয়তানের উপাসক হয়ে না পড়ে, এবং সে যেন শয়তানের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; এটাই সবচেয়ে মৌলিক, এবং একেবারে আদিতে এটাই করা হয়েছিল। সৃষ্টির আদিতে, মানুষ যখন ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারেনি, তখন ঈশ্বর সকল ধারণাযোগ্য বিষয়েই কিছু সহজ বিধান এবং নিয়ম বানিয়েছিলেন, এবং তৈরি করেছিলেন কিছু প্রবিধান। এই নিয়মগুলি সহজ, তবু তাদের মধ্যে ঈশ্বরের ইচ্ছা নিহিত। ঈশ্বর মানবজাতিকে মূল্যবান জ্ঞান করেন, লালন করেন, এবং অত্যন্ত ভালবাসেন। তাহলে আমরা কি বলতে পারি যে তাঁর হৃদয় পবিত্র? আমরা কি বলতে পারি যে তাঁর অন্তঃকরণ পরিশুদ্ধ? (হ্যাঁ।) ঈশ্বরের কি কোনো অতিরিক্ত উদ্দেশ্য রয়েছে? (না।) তাহলে তাঁর এই লক্ষ্য কি সঠিক ও ইতিবাচক? ঈশ্বরের কাজ চলাকালীন, তিনি যে সকল প্রবিধান তৈরি করেছেন, মানুষের উপর তাদের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে, সেগুলো মানুষকে পথ দেখায়। তাহলে ঈশ্বরের মনে কি কোনো আত্ম-সেবামূলক চিন্তা রয়েছে? মানুষের বিষয়ে কি ঈশ্বরের কোনো অতিরিক্ত অভীষ্ট রয়েছে? ঈশ্বর কি কোনো উপায়ে মানুষকে ব্যবহার করতে চান? বিন্দুমাত্রও না। ঈশ্বর যা বলেন তা-ই করেন, এবং তাঁর কথা ও কাজ তাঁর অন্তরের ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর উদ্দেশ্য কলঙ্কিত নয়, তাতে কোনো আত্ম-সেবামূলক চিন্তা নেই। তিনি যা করেন তার কিছুই তাঁর নিজের জন্য নয়; তিনি যা কিছু করেন, তা তিনি মানুষের উদ্দেশ্যেই করেন, কোনোপ্রকার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ছাড়াই। যদিও তাঁর পরিকল্পনা এবং অভিপ্রায় রয়েছে, তা তিনি মানুষের উপরই স্থাপন করেন, তার কোনোকিছুই তাঁর নিজের স্বার্থে নয়। তিনি যা করেন তা সম্পূর্ণরূপে মানবজাতির স্বার্থে, মানবজাতির সুরক্ষার্থে, মানবজাতিকে বিপথগামী হওয়া থেকে বিরত করার উদ্দেশ্যেই কৃত। তাহলে তাঁর এই হৃদয় কি মহার্ঘ নয়? শয়তানের মধ্যে কি তুমি এমন মূল্যবান হৃদয়ের সামান্যতম চিহ্নমাত্র দেখতে পাও? শয়তানের মধ্যে তুমি এর সামান্যতম ইঙ্গিতও দেখতে পাও না, একেবারেই দেখতে পাও না। ঈশ্বর যা কিছু করেন, তা স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশিত হয়। এখন, ঈশ্বর যে পথে কাজ করেন সেদিকে একটু তাকানো যাক; কীভাবে তিনি তাঁর কার্য নির্বাহ করেন? ঈশ্বর কি এইসকল বিধান এবং তাঁর বাক্যগুলিকে প্রতিটি মানুষের মাথার চারদিকে শক্তভাবে বেঁধে দেন, সেই বন্ধনী শক্ত করা মন্ত্রের[ক] মতো, প্রতিটি মানুষের উপর সেগুলি আরোপিত করেন? তিনি কী এইভাবে কাজ করেন? (না।) তাহলে কোন পন্থা অনুসারে ঈশ্বর তাঁর কার্য নির্বাহ করেন? তিনি কি ভীতিপ্রদর্শন করেন? তোমার সাথে বাক্যালাপের সময়ে কি তিনি মূল বিষয়টি বাদ দিয়ে অবান্তর প্রসঙ্গে কথা বলতে থাকেন? (না।) যখন তুমি সত্যকে উপলব্ধি করতে পারো না, তখন ঈশ্বর কীভাবে তোমায় পথ দেখান? তিনি তোমার উপর একটি আলো উদ্ভাসিত করেন, তোমায় স্পষ্টভাবে বলেন যে তুমি যা করছ তা সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এবং তারপর তিনি তোমার কী করা উচিত তা তোমায় বলেন। ঈশ্বরের কার্যসাধনের এই উপায়গুলি থেকে, তোমার নিজের সাথে ঈশ্বরের সম্পর্ক কীরূপ মনে হয়? তোমার কি মনে হয় যে ঈশ্বর নাগালের বাইরে? (না।) তাহলে, তুমি যখন ঈশ্বরের কার্যসিদ্ধির এই উপায়গুলি দেখ, তখন তোমার কী ধরনের অনুভূতি হয়? ঈশ্বরের বাক্য সবিশেষরূপে বাস্তবিক, এবং মানুষের সাথে তাঁর সম্পর্ক বিশেষভাবে স্বাভাবিক। ঈশ্বর তোমার অত্যন্ত নিকটেই রয়েছেন; তোমার আর ঈশ্বরের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই। যখন ঈশ্বর তোমায় পথ দেখান, যখন তিনি তোমার জন্য সংস্থান দেন, তোমার সহায়তা করেন ও সমর্থন করেন, তখন তুমি অনুভব করো ঈশ্বর কত সৌহার্দপূর্ণ, কত সম্মান তিনি জাগিয়ে তোলেন; তুমি অনুভব কর তিনি কত মনোরম, তুমি তাঁর উষ্ণতা অনুভব কর। কিন্তু যখন তোমার দুর্নীতির কারণে ঈশ্বর তোমায় ভর্ৎসনা করেন, অথবা যখন তিনি তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে তোমার বিচার ও অনুশাসন করেন, তখন তিনি কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন? তিনি কি বাক্যের মাধ্যমে তোমায় তিরস্কার করেন? তিনি কি তোমার পরিবেশের, এবং মানুষ, ঘটনাবলী ও বস্তুসমূহের মাধ্যমে তোমায় অনুশাসন করেন? (হ্যাঁ।) ঈশ্বর তোমায় কতমাত্রায় শাসন করেন? শয়তান যে মাত্রায় মানুষের ক্ষতিসাধন করে, ঈশ্বরও কি সেই একই অনুপাতে মানুষকে অনুশাসিত করেন? (না, ঈশ্বর মানুষকে ততটাই অনুশাসন করেন যতটুকু মানুষের পক্ষে সহনীয়।) ঈশ্বর কোমল, সূক্ষ্ম, প্রেমময়, এবং যত্নশীল উপায়ে কাজ করেন, এমন এক উপায় যা অভূতপূর্বরূপে সুপরিমিত এবং সঠিক। তাঁর কার্যের পন্থা তোমার মধ্যে এরকম তীব্র মানসিক প্রতিক্রিয়া প্ররোচিত করে না: “ঈশ্বর অবশ্যই আমায় এই কাজটা করতে দেবেন” বা “ঈশ্বর অবশ্যই আমাকে সেই কাজটা করতে দেবেন”। ঈশ্বর কখনও তোমার মনের বা আবেগের উপর এমনতর তীব্রতা আরোপ করেন না যা তোমার পক্ষে অসহনীয়। তাই নয় কি? এমনকি যখন তুমি ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তির বাক্যগুলি স্বীকার কর, তখন তুমি কেমন অনুভব কর? যখন তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা উপলব্ধি কর, তখন তোমার কীরূপ অনুভূতি হয়? ঈশ্বর যে ঐশ্বরিক এবং অলঙ্ঘনীয়, তা কি তুমি অনুভব কর? তুমি কি সেই সকল সময়কালে নিজের সাথে ঈশ্বরের দূরত্ব অনুভব কর? তুমি কি ঈশ্বরভীতি অনুভব কর? না—বরং, তোমার ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা অনুভূত হয়। মানুষ যে এই সমস্তকিছু অনুভব করে তা কি ঈশ্বরের কাজের কারণেই নয়? পরিবর্তে যদি শয়তান কর্মরত হত, তাহলে কি তারা এই প্রকার অনুভব করতো? একেবারেই নয়। ঈশ্বর তাঁর বাক্য, তাঁর সত্য এবং তাঁর জীবনের ক্রমাগত ব্যবহার করে চলেন মানুষকে সংস্থান প্রদানের জন্য, মানুষকে সমর্থনের উদ্দেশ্যে। মানুষ যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, মানুষ যখন হতাশ বোধ করে, তখন ঈশ্বর অবশ্যই কঠোরভাবে কথা বলেন না, তিনি এমন বলেন না: “নিরাশ হয়ো না। এতে হতাশ হওয়ার কী আছে? তুমি দুর্বল কেন? দুর্বল হওয়ার কোনো কারণ রয়েছে কী? তুমি সর্বদাই এত দুর্বল, এবং সর্বক্ষণ এত নেতিবাচক! তোমার বেঁচে থেকে লাভ কী? বরং মরে যাও, আর সমস্যা শেষ করো!” ঈশ্বর কি এইভাবে কাজ করেন? (না।) ঈশ্বরের কি এইভাবে কাজ করার কর্তৃত্ব রয়েছে? হ্যাঁ, তাঁর তা রয়েছে। তবুও ঈশ্বর এইভাবে কাজ করেন না। ঈশ্বরের এইভাবে কাজ না করার কারণ হল তাঁর সারমর্ম, ঈশ্বরের পবিত্রতার নির্যাস। তাঁর মানবপ্রেম, মানুষকে তাঁর মূল্যবান মনে করা এবং লালিত করা, এগুলি মাত্র দুয়েক বাক্যে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যায় না। এটি মানুষের দম্ভের দ্বারা সংঘটিত হয় না, বরং এ হল এমন কিছু যা ঈশ্বর বাস্তবে প্রয়োগ করেন; এ হল ঈশ্বরের সারমর্মের উদ্ঘাটন। ঈশ্বরের কর্মের এই সকল উপায়ের মধ্যে ঈশ্বরের পবিত্রতা দেখতে পায় কি? ঈশ্বরের কাজ করার এই সমস্ত উপায়, যেমন ঈশ্বরের মঙ্গলজনক অভিপ্রায়, মানুষের উপর যে প্রভাব তিনি তৈরী করার আশা করেন, মানুষের উপর কাজ করার যে বিভিন্ন পন্থা তিনি গ্রহণ করেন, যে ধরণের কার্য তিনি নির্বাহ করেন, মানুষের কাছে যে উপলব্ধির তিনি আশা করেন—এই সবকিছুর মধ্যে, তুমি ঈশ্বরের মঙ্গলজনক অভিপ্রায়ে মন্দ কিছু বা কোনো প্রতারণা কি দেখতে পেয়েছ? (না।) তাই, ঈশ্বর যা কিছু করেন, ঈশ্বর যা কিছু বলেন, তিনি তাঁর অন্তরে যা কিছু চিন্তা করেন, সেইসাথে ঈশ্বরের সকল সারসত্য যা তিনি প্রকাশ করেন, সেই সবকিছুর মধ্যে—আমরা কি ঈশ্বরকে পবিত্র হিসাবে অভিহিত করতে পারি? (হ্যাঁ।) কোনো মানুষ কি কখনো জগতে অথবা নিজ অভ্যন্তরে এই পবিত্রতা চাক্ষুষ করেছে? তুমি কি ঈশ্বর ব্যতীত অপর কোনো মানুষের মধ্যে, বা শয়তানের মধ্যে, কখনও এমন দেখেছ? (না।) আমাদের এই পর্যন্ত যে আলোচনা হল তার ভিত্তিতে, আমরা কি ঈশ্বরকে অনন্য, পবিত্র ঈশ্বর স্বয়ং বলতে পারি? (হ্যাঁ।) ঈশ্বর মানুষকে যা যা প্রদান করেন, যেমন ঈশ্বরের বাক্য, মানুষের উপর যে বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বর কাজ করেন, ঈশ্বর মানুষকে যা বলেন, ঈশ্বর যে বিষয়ে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি যে উপদেশ এবং উত্সাহ প্রদান করেন, সেইসব সমেত—তার সকলই একটিমাত্র সারসত্য থেকে উদ্ভূত: ঈশ্বরের পবিত্রতা। যদি এমন কোনো পবিত্র ঈশ্বর না থাকতেন, তবে যে কাজ তিনি করেন তা করার জন্য কোনো মানুষই তাঁর স্থান গ্রহণ করতে পারত না। এই মানুষদের যদি ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে শয়তানের হাতে তুলে দিতেন, তবে তোমরা আজ কী ধরনের পরিস্থিতিতে থাকতে, তা কি তোমরা কখনও ভেবে দেখেছ? তেমন হলে কি তোমরা এখানে, এইরূপ সম্পূর্ণ ও অক্ষত ভাবে বসে থাকতে পারতে? তোমরাও কি এইরূপ বলতে: “আমি পৃথিবীর চতুর্দিক পরিভ্রমণ করে এলাম”? তুমি কি এতটাই নির্লজ্জ হতে, এতটাই অতি-নিশ্চিত ও দম্ভে পরিপূর্ণ হতে, যে ঈশ্বরের সামনে তুমি এরকম কথা উচ্চারণ করতে আর নির্লজ্জ আস্ফালন করতে? নিশ্চিতভাবে তুমি তা-ই করতে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই! মানুষের প্রতি শয়তানের মনোভাবের ফলে মানুষ দেখতে পায় যে শয়তানের প্রকৃতি এবং সারমর্ম ঈশ্বরের তুলনায় সম্পূর্ণ পৃথক। শয়তানের সারসত্যে কী রয়েছে যা ঈশ্বরের পবিত্রতার বিপরীত? (শয়তানের মন্দতা।) শয়তানের মন্দ প্রকৃতিই রয়েছে ঈশ্বরের পবিত্রতার বিপরীতে। অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরের এই প্রকাশ এবং ঈশ্বরের পবিত্রতার এই সারসত্য স্বীকার করে না তার কারণ তারা জীবনযাপন করে চলেছে শয়তানের আধিপত্যের অধীন হয়ে, শয়তানের অনাচারের মাঝে, এবং শয়তানের জীবনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ হয়ে। পবিত্রতা কী, বা পবিত্রতাকে কীরূপে সংজ্ঞায়িত করতে হয়, সেই বিষয়ে তারা অবগত নয়। এমনকি যখন ঈশ্বরের পবিত্রতা তুমি উপলব্ধি করতে পারো, তখনও তুমি নিশ্চয়তার সাথে তাকে ঈশ্বরের পবিত্রতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে পারো না। এ হল মানুষের ঈশ্বরের পবিত্রতা সম্বন্ধিত জ্ঞানের এক অন্তর্নিহিত বৈষম্য।
মানুষের উপর শয়তানের কাজের বৈশিষ্ট্য কী? তোমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই তা শিখতে সক্ষম হওয়া উচিত—তা হল শয়তানের আদিঅকৃত্রিম বৈশিষ্ট্য, সে যা বারংবার করে চলে, সে যা প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে করার চেষ্টায় রত। তোমরা সম্ভবত এই বৈশিষ্ট্যটি দেখতে পাও না, তাই শয়তান কত ভয়াল ও ঘৃণ্য—তা তোমরা অনুভব করো না। কেউ কি জানো সেই বৈশিষ্ট্যটি কি? (সে মানুষকে প্রলুব্ধ, প্ররোচিত, এবং পথভ্রষ্ট করে।) একদম ঠিক; এইসব বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমেই এই বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান হয়। এছাড়াও শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে, আক্রমণ করে এবং অভিযুক্ত করে—এসকলই তার প্রকাশ। আরও কিছু রয়েছে কি? (সে মিথ্যা বলে।) প্রতারণা এবং মিথ্যাচার শয়তানের কাছে সবচেয়ে স্বাভাবিক। সে প্রায়শই এসকল করে। এছাড়াও মানুষের উপর কর্তৃত্ব ফলানো, তাদের প্ররোচিত করা, তাদের বিভিন্ন কাজে বাধ্য করা, তাদের আদেশ করা, এবং বলপূর্বক তাদের দখল নেওয়া। এইবার আমি এমন কিছুর বর্ণনা দেব যা শুনে তোমাদের রোমকূপ শিহরিত হয়ে উঠবে, কিন্তু আমি তোমাদের ভয় দেখানোর জন্য এমন করছি না। ঈশ্বর তাঁর মনোভাব এবং তাঁর হৃদয় উভয় দ্বারাই মানুষের উপর কাজ করেন এবং মানুষকে লালন করেন। অন্যদিকে, শয়তান মানুষকে আদৌ লালন করে না, এবং সে মানুষের ক্ষতিসাধনের উপায় চিন্তা করেই তার সমস্ত সময় অতিবাহিত করে। তাই নয় কি? যখন সে মানুষের ক্ষতিসাধনের উপায় চিন্তা করে, তখন কি সে খুবই তাগিদের সাথে তা করে? (হ্যাঁ।) অতএব, মানুষের উপর শয়তানের কাজের বিষয়ে, আমি দুটি কথা বলতে পারি যা যথাযথভাবে শয়তানের মন্দ এবং ক্ষতিকারক মনোভাব বর্ণনা করতে পারে, যা তোমাদের শয়তানের বিদ্বেষপূর্ণতা সম্বন্ধে সম্যকরূপে অবগত হতে দেয়: মানুষের প্রতি শয়তানের আচরণে, সে সর্বদা চায় প্রতিটি মানুষকে বলপূর্বক দখল এবং অধিকার করতে, এতমাত্রায় যাতে সে মানুষের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে পারে এবং মানুষকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যাতে সে তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে পারে এবং তার উদগ্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করতে পারে। “বলপূর্বক দখল করা” বলতে কী বোঝায়? তা কি তোমার সম্মতিক্রমে হয়, নাকি তোমার সম্মতি ছাড়াই ঘটে যায়? তা কি তোমার জ্ঞাতসারে ঘটে, না অজ্ঞাতসারে? এর উত্তর হল, তা পূর্ণত তোমার অজান্তেই ঘটে যায়! তা এমন পরিস্থিতিতে ঘটে যখন তুমি অবহিত থাকো না, হয়তো কোনো কথা না বলে, তোমার সাথে কোনোকিছু না করে, কোনো প্রসঙ্গ বা পটভূমি ছাড়াই—শয়তানের আবির্ভাব ঘটে, তোমাকে বেষ্টন করতে থাকে, চারিপাশ থেকে ঘিরে ধরতে থাকে। সে শোষণের সুযোগ সন্ধান করে চলে, এবং অতঃপর তা বলপূর্বক তোমার দখল নেয়, তোমায় অধিকার করে, এইভাবে তোমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করার এবং তোমার ক্ষতিসাধন করার তার উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলে। মানবজাতিকে ঈশ্বরের থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য সংগ্রামের পথে এ-ই হল শয়তানের সবচেয়ে সাধারণ অভিপ্রায় ও আচরণ। একথা শুনে তোমাদের কেমন অনুভূতি হয়? (আমরা অন্তরে আতঙ্কিত এবং ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ি।) তোমরা কি বিতৃষ্ণ বোধ কর? (হ্যাঁ।) এই বিতৃষ্ণা অনুভবের সময়ে, তোমাদের কি মনে হয় যে শয়তান নির্লজ্জ? তোমাদের যখন মনে হয় যে শয়তান নির্লজ্জ, তখন কি তোমরা তোমাদের পারিপার্শ্বিকের যে সকল ব্যক্তিগণ সর্বদা তোমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, যাদের মর্যাদা এবং স্বার্থসিদ্ধির উদগ্র উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ বোধ কর? (হ্যাঁ।) তাহলে শয়তান মানুষকে বলপূর্বক দখল করা এবং অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে? তোমাদের কি এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রয়েছে? যখন তুমি “বলপূর্বক দখল করা” এবং “অধিগ্রহণ” এই শব্দদুটি শ্রবণ করো, তখন তুমি বিতৃষ্ণ বোধ করো, এবং তুমি এই শব্দগুলিতে নিহিত মন্দতা উপলব্ধি করতে পারো। তোমার সম্মতি এবং তোমার অবগতি উভয় ব্যতিরেকেই, শয়তান তোমায় অধিকৃত করে, বলপূর্বক তোমার দখল নেয়, এবং তোমায় ভ্রষ্ট করে। তোমার হৃদয়ে তুমি কী অনুভব করছো? তুমি কি ঘৃণা এবং বিতৃষ্ণা অনুভব করছো? (হ্যাঁ।) যখন তুমি শয়তানের এই সকল পদ্ধতির কারণে ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা অনুভব কর, তখন ঈশ্বরের প্রতি তোমার অনুভূতি কেমন হয়? (কৃতজ্ঞতার অনুভূতি।) তোমায় উদ্ধার করার কারণে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি। অতএব এখন, এই মুহুর্তে, তোমার কী এমন আকাঙ্ক্ষা অথবা ইচ্ছা হচ্ছে যে তুমি যা কিছু এবং তোমার যা কিছু আছে, সকলই ঈশ্বরের দ্বারা অধিগৃহিত এবং নিয়ন্ত্রিত হোক? (হ্যাঁ।) কোন প্রসঙ্গে তুমি এই প্রকারের উত্তর দিচ্ছ? তুমি কী শয়তানের দ্বারা বলপূর্বক দখলীকৃত এবং অধিগৃহীত হওয়ার ভয়েই “হ্যাঁ” বলছ? (হ্যাঁ।) তোমার একেবারেই এই প্রকার মানসিকতা থাকা উচিত নয়; এটা ঠিক নয়। ভীত হয়ো না, কারণ ঈশ্বর রয়েছেন। ভীত হওয়ার মতো কিছু নেই। একবার যখন তুমি শয়তানের দুষ্ট সারমর্ম উপলব্ধি করবে, তখন তুমি ঈশ্বরের প্রেম, ঈশ্বরের শুভ অভিপ্রায়, ঈশ্বরের সহানুভূতি ও মানুষের প্রতি সহিষ্ণুতা, এবং ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাবের বিষয়ে যথার্থতর উপলব্ধি এবং গভীরতর যত্নশীলতা অর্জন করতে পারবে। শয়তান এতমাত্রায় ঘৃণার্হ, তবুও যদি তা এখনও তোমার ঈশ্বরপ্রেম এবং ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরশীলতা ও আস্থাকে অনুপ্রাণিত না করে, তাহলে তুমি কেমন ব্যক্তি? তুমি কি শয়তানকে তোমার ক্ষতি করতে দিতে ইচ্ছুক? শয়তানের মন্দতা ও কদর্যতা দেখার পর আমরা ঘুরে দাঁড়াই এবং ঈশ্বরের প্রতি দৃষ্টিপাত করি। এখন কি তোমার ঈশ্বরজ্ঞানে কোনো প্রকার পরিবর্তন ঘটেছে? আমরা কি বলতে পারি যে ঈশ্বর পবিত্র? আমরা কি বলতে পারি যে ঈশ্বর ত্রুটিবিহীন? “ঈশ্বর হলেন অনন্য পবিত্রতা”—এই অভিধা যে প্রত্যাশা বহন করে তা কি ঈশ্বর পূর্ণ করতে পারেন? (হ্যাঁ।) সুতরাং, এই পৃথিবীতে এবং সকল কিছুর মাঝে, কেবলমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরই কি পারেন না, মানুষের ঈশ্বর-বিষয়ক যে উপলব্ধি রয়েছে, তা অনুসারে প্রত্যাশা পূর্ণ করতে? (হ্যাঁ।) তাহলে ঈশ্বর মানুষকে ঠিক কী দেন? তিনি কি তোমার অজ্ঞাতসারে তোমাকে শুধু কিছুটা যত্ন, মনোযোগ, এবং তোমার জন্য খানিক বিবেচনাই প্রদান করেন? ঈশ্বর মানুষকে কী দিয়েছেন? ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছেন জীবন, দিয়েছেন সকলকিছু, এবং তা সকলই তিনি প্রদান করছেন নিঃশর্তে, বিনা দাবীতে, কোনোপ্রকার নিহিত অভিপ্রায় ছাড়াই। মানুষকে শয়তানের ক্ষয়ক্ষতির থেকে, শয়তানের প্রদত্ত প্রলোভন এবং প্ররোচনার থেকে দূরে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে, মানুষের নেতৃত্ব ও পথপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে, ঈশ্বর প্রয়োগ করেছেন সত্যের, করেছেন তাঁর বাক্যের, এবং করেছেন তাঁর জীবনের, যার ফলে মানুষের পক্ষে শয়তানের দুষ্ট প্রকৃতি এবং কদর্য মুখাবয়ব সুস্পষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করা সম্ভবপর হয়েছে। মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের প্রেম এবং উদ্বেগ কি প্রকৃত? তার অভিজ্ঞতা কি তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই অর্জন করতে পার? (হ্যাঁ।)
এখন পর্যন্ত তোমরা যে জীবন যাপন করে এসেছ তার দিকে ফিরে তাকাও, ফিরে তাকাও তোমার বিশ্বাসী-জীবনের এতগুলি বছর ধরে ঈশ্বর তোমার উপর যে কর্মসকল করেছেন, তার দিকে। এর থেকে তোমার যে অনুভূতির জাগরণ ঘটে, তা গভীর হোক কিংবা অগভীর, তা কি সেই বস্তুই নয় যা তোমার পক্ষে সর্বাধিকরূপে অপরিহার্য ছিল? এটাই কি তোমার অর্জন করা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ছিল না? (হ্যাঁ।) এ কি সত্য নয়? এ-ই কি জীবন নয়? (হ্যাঁ।) তোমায় আলোকপ্রাপ্তি প্রদানের পর, ঈশ্বর কি কখনোই তোমায় তিনি যা কিছু দিয়েছেন তার বিনিময়ে কোনো প্রতিদানের দাবী রেখেছেন? (না।) তাহলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী? ঈশ্বর কেন এমন করেন? ঈশ্বরের কি তোমায় দখল করার উদ্দেশ্য রয়েছে? (না।) ঈশ্বর কি মানুষের হৃদয়ের অন্তরে তাঁর যে সিংহাসন রয়েছে, তাতে আরোহণ করতে চান? (হ্যাঁ।) তাহলে ঈশ্বরের দ্বারা তাঁর সিংহাসনে আরোহণ এবং শয়তানের দ্বারা বলপূর্বক অধিগ্রহণের মধ্যে পার্থক্যটা কী? ঈশ্বর মানবহৃদয় অর্জনে ইচ্ছুক, তিনি মানুষের হৃদয় অধিকার করতে চান—এর অর্থ কি? এর অর্থ কি এই, যে ঈশ্বর চান মানুষ তাঁর ক্রীড়নক হয়ে পড়ুক, তাঁর যন্ত্রে পরিণত হোক? (না।) তাহলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি? ঈশ্বরের মানবহৃদয় অধিকারের ইচ্ছার সাথে কি শয়তানের বলপূর্বক মানবহৃদয় অধিকার অথবা মানুষকে অধিগ্রহণ করার কোনো পার্থক্য রয়েছে? (হ্যাঁ।) কি সেই পার্থক্য? তোমরা কি তা আমায় সুস্পষ্টরূপে বলতে পার? (শয়তান তা বলপূর্বক উপায়ে নির্বাহ করে, যেখানে ঈশ্বর মানুষকে স্বেচ্ছায় তা করতে দেন।) এ-ই কি সেই পার্থক্য? ঈশ্বরের কাছে তোমার হৃদয়ের কী উপযোগিতা রয়েছে? এবং তোমায় অধিকার করেই বা ঈশ্বর কী করবেন? “ঈশ্বর মানুষের হৃদয় অধিকার করেন”—এই বিষয়টিকে নিজ-নিজ অন্তঃকরণে তোমরা কীরূপে উপলব্ধি কর? এইখানে ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের কথায় আমাদের ন্যায্য হতে হবে, আমাদের অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে, অন্যথায় মানুষ সর্বদা ভুল বুঝবে এবং ভাববে: “ঈশ্বর সর্বদা আমায় অধিকার করতে চান। কী কারণে তিনি আমায় অধিকার করতে চান? আমি অধিকৃত হতে চাই না, আমি শুধুই নিজের মালিক হয়ে থাকতে চাই। আপনি বলছেন যে শয়তান মানুষের দখল নেয়, কিন্তু ঈশ্বরও তো দেখছি মানুষকে অধিকার করেন। উভয় পন্থাই কি অনুরূপ নয়? আমি কাউকে আমায় দখল করতে দিতে চাই না। আমি আমি-ই!” এখানে, তফাৎটা কি? এই বিষয়ে কিছুটা চিন্তা কর। আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করি, “ঈশ্বর মানুষকে অধিকার করেন”—এটা কি নিছকই এক শূন্যগর্ভ বাক্যাংশ? মানুষের উপর ঈশ্বরের অধিকারের অর্থ কি এই যে তিনি তোমার অন্তরে বসবাস করেন, এবং তোমার প্রতিটি কথা এবং প্রতিটি পদক্ষেপকে নিয়ন্ত্রিত করেন? যদি তিনি তোমায় বসতে বলেন, তাহলে তুমি দাঁড়ানোর সাহস করবে না? তিনি যদি তোমার পূর্ব দিকে যেতে বলেন, তবে তুমি পশ্চিমে যাওয়ার সাহস দেখাবে না? এই “অধিকার” শব্দের অর্থ কি এইধরনের কিছুর দিকে ইঙ্গিত করে? (না, তা করে না। ঈশ্বর চান যে, ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা, মানুষ তা নিয়েই জীবন যাপন করুক।) এই যে এত বছর ধরে ঈশ্বর মানুষকে পরিচালনা করেছেন, এই যে এখন এই অন্তিম পর্যায় পর্যন্ত মানুষের উপর ঈশ্বর তাঁর কাজ করে চলেছেন, সেখানে তাঁর কথিত বাক্যের মানুষের উপর অভিপ্রেত প্রভাব কী হয়ে এসেছে? তা কি এই যে ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা, তা নিয়েই মানুষ জীবন যাপন করুক? “ঈশ্বরের মানুষের হৃদয় অধিকার করেন”—এই কথার আক্ষরিক অর্থ দেখলে মনে হয় ঈশ্বর হয়তো মানুষের হৃদয়কে অধিগ্রহণ করেন এবং তা অধিকার করেন, তাতে বসবাস করেন, এবং আর কখনোই নিষ্ক্রান্ত হন না; তিনিই মানুষের মালিক হয়ে ওঠেন এবং মানবহৃদয়ে যদৃচ্ছ আধিপত্য বিস্তারে এবং তার এমন সুকৌশল ব্যবহারে সক্ষম হন যে ঈশ্বর মানুষকে যা-ই করতে বলুন না কেন, মানুষের জন্য তা অবশ্যকরণীয় হয়ে ওঠে। এই অর্থ অনুসারে দেখলে, মনে হবে যেন প্রত্যেক ব্যক্তিই ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারে, এবং প্রত্যেকেই তাঁর সারসত্য এবং স্বভাবের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। তাহলে, সেক্ষেত্রে মানুষ কি ঈশ্বরের কর্মগুলিও সম্পাদন করতে সক্ষম? “অধিকার” বিষয়টিকে কী এইভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে? (না।) তাহলে বিষয়টা আদতে কি? আমি তোমাদের কাছে এই প্রশ্নটি রাখি: ঈশ্বর মানুষকে যে সকল বাক্য এবং সত্যের যোগান দেন, তা সকলই কি ঈশ্বরের সারসত্য, এবং তাঁর যা আছে এবং তিনি যা, তার-ই প্রকাশ? (হ্যাঁ।) এটা অবশ্যই সত্য। কিন্তু এমনটাও কি আবশ্যিক যে ঈশ্বর মানুষকে যেসকল বাক্য সরবরাহ করেন, স্বয়ং তাঁকেও তা অনুশীলন এবং অধিকার করতেই হবে? এই বিষয়ে কিছুটা চিন্তা কর। ঈশ্বর যখন মানুষের বিচার করেন, তখন তিনি কেন করেন সেই বিচার? এই বাক্যগুলি কীভাবে সৃষ্ট হল? ঈশ্বর মানুষের বিচারের সময়ে যে বাক্যগুলি বলেন, সেগুলির বিষয়বস্তু কী? সেগুলির ভিত্তি কী? সেগুলির ভিত্তি কি মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব? (হ্যাঁ।) তাহলে, ঈশ্বরের মানুষকে বিচার করার মাধ্যমে যে প্রভাব অর্জিত হয়, তা কি ঈশ্বরের সারসত্যের উপর ভিত্তি করে? (হ্যাঁ।) তাহলে ঈশ্বরের “মানুষকে অধিকার করা” কি নিছকই এক শূন্যগর্ভ কথা? অবশ্যই নয়। তাহলে কেন ঈশ্বর মানুষকে এই বাক্যগুলি বলেন? এই বাক্যগুলি বলায় তাঁর উদ্দেশ্য কী? তিনি কি চান যে এই বাক্যসমূহ মানুষের প্রাণস্বরূপ হয়ে উঠুক? (হ্যাঁ।) ঈশ্বর তাঁর এই সকল বাক্যের মাধ্যমে ব্যক্ত সকল সত্যকে এমনভাবে ব্যবহার করতে চান যাতে সেগুলি মানুষের জীবন হিসাবে কাজ করে। মানুষ যখন এই সকল সত্য ও ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করে এবং সেগুলিকে নিজের জীবনে রূপান্তরিত করে, তখন কি মানুষ ঈশ্বরকে মান্য করতে পারে? তখন কি মানুষ ঈশ্বরে ভীত হতে পারে? তখন কি মানুষ মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে পারে? মানুষ যখন এই পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন কি সে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও আয়োজনকে মান্য করতে পারে? তখন কি মানুষ তাহলে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি সমর্পিত হওয়ার অবস্থানে পৌঁছে যায়? ইয়োব অথবা পিতরের ন্যায় কোনো ব্যক্তি যখন তার পথের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়, যখন এমন ধরা যেতে পারে যে তার জীবন পরিণত অবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তারা ঈশ্বর-বিষয়ক প্রকৃত উপলব্ধি অর্জন করেছে—তখনও কি শয়তান তাকে বিপথে পরিচালিত করতে পারে? তখনও কি শয়তান তাকে অধিকার করতে পারে? তখনও কি শয়তান তাকে বলপূর্বক অধিগ্রহণ করতে পারে? (না।) তাহলে, সে কোন ধরনের মানুষ? সে কি এমন কেউ যে পূর্ণতই ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হয়েছে? (হ্যাঁ।) অর্থের এই স্তর অনুসারে, ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অর্জিত হয়েছে এমন ধরনের ব্যক্তিকে তোমরা কীভাবে দেখ? এহেন পরিস্থিতিতে, ঈশ্বরের পরিপ্রেক্ষিত থেকে, তিনি ইতিমধ্যেই সেই ব্যক্তির হৃদয় অধিকার করেছেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি কী অনুভব করে? তা কি এই যে ঈশ্বরের বাক্য, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং ঈশ্বরের পথ মানুষের অভ্যন্তরে জীবনস্বরূপ হয়ে ওঠে, যে এই জীবনই তখন মানুষের সমগ্র সত্তা অধিকার করে, যা তার যাপনের বিষয়বস্তুগুলিকে, এবং তার সারমর্মকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টিবিধানের পক্ষে পর্যাপ্ত করে তোলে? ঈশ্বরের পরিপ্রেক্ষিত থেকে, ঠিক এই মুহূর্তে কি মানবজাতির হৃদয় তাঁর দ্বারা অধিকৃত? (হ্যাঁ।) তোমরা এই স্তরের অর্থটিকে কীভাবে উপলব্ধি কর? তা কি ঈশ্বরের আত্মা যা তোমাকে অধিকার করে? (না, যা আমাদের অধিকার করে রয়েছে তা হল ঈশ্বরের বাক্য।) ঈশ্বরের পথ ও ঈশ্বরের বাক্য তোমার জীবন হয়ে উঠেছে, এবং সত্য-ই তোমার জীবন হয়ে উঠেছে। এই সময়ে, মানুষ ঈশ্বরের থেকে আগত জীবনের অধিকারী ঠিকই, তবে আমরা এমন বলতে পারি না যে এই জীবন হল ঈশ্বরের জীবন। প্রকারান্তরে বললে, আমরা এমন বলতে পারি না যে, মানুষের যে জীবন ঈশ্বরের বাক্য থেকে অর্জনীয় তা ঈশ্বরের জীবন। তাই মানুষ যত দীর্ঘকাল ধরেই ঈশ্বরকে অনুসরণ করুক না কেন, মানুষ ঈশ্বরের কাছ থেকে যত পরিমানেই বাক্য লাভ করুক না কেন, মানুষ কখনোই ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারে না। এমনকি ঈশ্বর যদি একদিন বলেন, “আমি তোমার হৃদয়কে অধিকার করেছি, তুমি এখন আমার জীবনের অধিকারী”, তাহলে কি তুমি নিজেকে ঈশ্বররূপে অনুভব করবে? (না।) তাহলে তুমি কি হয়ে উঠবে? ঈশ্বরের প্রতি কি তোমার পরম আনুগত্য থাকবে না? তোমায় ঈশ্বর যে জীবন দান করেছেন, তাতে কি তোমার হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে না? তা হবে ঈশ্বর মানুষের হৃদয় অধিকার করলে যা ঘটে তার এক অত্যন্ত স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ। এটাই সত্য। তাহলে, সেই দিক থেকে দেখলে, মানুষ কি ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারে? মানুষ যখন ঈশ্বরের বাক্যের বাস্তবতা অনুসারে জীবন যাপনে সক্ষম হয়, এবং এমন একজন হয়ে ওঠে যে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে, তখন কি মানুষ ঈশ্বরের জীবনের সারসত্য এবং ঈশ্বরের পবিত্রতার অধিকারী হয়ে উঠতে পারে? একেবারেই না। যাই ঘটুক না কেন, সবকিছু বিচার করলে মানুষ তবুও মানুষই রয়ে যায়। তুমি হলে সৃষ্টির এক সত্তা; তুমি যখন ঈশ্বরের কাছ থেকে ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করেছ এবং ঈশ্বরের পথ গ্রহণ করেছ, তুমি কেবল সেই জীবনেরই অধিকারী হয়েছ যার আগমন ঘটে ঈশ্বরের বাক্য থেকেই, তুমি হয়ে উঠেছ এমন একজন যে ঈশ্বরের দ্বারা প্রশংসিত, কিন্তু তুমি কখনোই ঈশ্বরের জীবনের সারসত্যের অধিকারী হবে না, ঈশ্বরের পবিত্রতার অধিকারী তো নয়ই।
এইবারে আবার ফিরে আসবো সেই বিষয়বস্তুতে, যা নিয়ে আমরা সদ্য আলোচনা করলাম। সেই আলোচনার সময়ে, আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন করেছিলাম—অব্রাহাম কি পবিত্র, ইয়োব কি পবিত্র? (না।) এই “পবিত্রতা” ঈশ্বরের সারসত্য এবং তাঁর স্বভাবের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং মানুষ এর থেকে বহুদূর পিছিয়ে। মানুষ ঈশ্বরের সারসত্য অথবা ঈশ্বরের স্বভাবের অধিকারী নয়। এমনকি মানুষ যখন ঈশ্বরের সকল বাক্যের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং সেগুলির বাস্তবিকতার দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করেছে, তখনও সে কোনোমতেই ঈশ্বরের পবিত্র সারসত্যের অধিকারী হয়ে উঠতে পারে না; মানুষ মানুষ-ই রয়ে যায়। তোমরা উপলব্ধি করতে পারছ, তাই নয় কি? তাহলে, “ঈশ্বর মানুষের হৃদয় অধিকার করেন”—এই কথাগুলির বিষয়ে এখন তোমাদের কী উপলব্ধি? (এটি ঈশ্বরের বাক্য, ঈশ্বরের পথ এবং তাঁর সত্য যা মানুষের জীবন হয়ে ওঠে।) তোমরা এই বাক্যগুলি মুখস্থ করে নিয়েছ। আমি আশা রাখি যে তোমাদের গভীরতর উপলব্ধি ঘটবে। কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারে, “তাহলে, এমন কেন বলা হল যে ঈশ্বরের বার্তাবাহক এবং দেবদূতগণ পবিত্র নয়?” এই প্রশ্নটির বিষয়ে তোমরা কী ভাব? সম্ভবত, তোমরা ইতিপূর্বে এটা বিবেচনা করে দেখ নি। আমি একটা সহজ উদাহরণ ব্যবহার করব: যখন তুমি একটা রোবটকে চালু কর, তখন সেটি নাচতে এবং কথাও বলতে পারে, এবং সেটি যা বলে তা তুমি বুঝতে পারো। তুমি তাকে সুন্দর বলতে পার অথবা উচ্ছ্বল বলতে পার, কিন্তু সেটি তা বুঝতে পারবে না কারণ তার প্রাণ নেই। তুমি যদি সেটির বিদ্যুত-সংযোগ বন্ধ করে দাও, তাহলে কি সেটি আর নড়াচড়া করতে পারবে? এই রোবটটিকে যখন সক্রিয় করা হয় তখন তুমি দেখতে পাও যে সেটি উচ্ছ্বল এবং সুন্দর। তুমি সেই বিষয়ে একটি মূল্যায়ন করো, তা সে সারগত ভাবেই হোক বা অগভীর, কিন্তু যেভাবেই তা করো না কেন, তুমি দেখতে পাও যে সেটি চলমান। কিন্তু যেই তুমি বিদ্যুৎ-সরবারহ বন্ধ করে দিচ্ছ, তখন কি আর তুমি সেটির মধ্যে কোনোপ্রকার ব্যক্তিসত্তা দেখতে পাও? তখন কি তুমি সেটিকে কোনোপ্রকার সারসত্যের অধিকারী হিসাবে দেখতে পাও? আমি যা বলছি তার অর্থ কি তোমরা উপলব্ধি করতে পারছ? এমন বলা যেতে পারে যে, যদিও এই রোবটটি চলতে ও থামতে পারে, তুমি কখনোই সেটিকে কোনো প্রকার সারসত্যের অধিকারী হিসাবে বিবেচনা করতে পার না। তাই নয় কি? এখন, আমরা আর এই বিষয়ে অধিকতর আলোচনা করব না। এই অর্থটির বিষয়ে তোমাদের একটি সাধারণ উপলব্ধি থাকাই যথেষ্ট। আমাদের আলোচনা এখানেই শেষ করা যাক। বিদায়!
ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩
পাদটীকা:
ক. “বন্ধনী শক্ত করা মন্ত্র” হচ্ছে চীনাভাষার উপন্যাস “পশ্চিমের পথে যাত্রা”-তে ভিক্ষু তাং সানজাং এর ব্যবহৃত একটি মন্ত্র। সান উকং কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই মন্ত্র তিনি ব্যবহার করেন, তার মাথার চারিদিকে একটি ধাতব পাত মন্ত্রের দ্বারা শক্ত করে তাকে প্রচণ্ড শিরঃপীড়া দিয়ে, এবং এইভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে। মানুষকে বেঁধে রাখে এরকম কোনো বস্তুকে বর্ণনা করার জন্য এটা একটা রূপকে পরিণত হয়েছে।