স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১

ঈশ্বরের কর্তৃত্ব (১)

আমার সর্বশেষ বেশ কয়েকটি আলাপ-আলোচনা ছিল ঈশ্বরের কার্য, ঈশ্বরের স্বভাব, এবং স্বয়ং ঈশ্বর বিষয়ে। এই আলাপ-আলোচনাগুলি শ্রবণ করার পর, তোমাদের কি মনে হয় যে ঈশ্বরের স্বভাব সম্পর্কে তোমরা একটি উপলব্ধি ও জ্ঞান অর্জন করেছো? কতখানি উপলব্ধি ও জ্ঞান তোমরা অর্জন করেছো? তোমাদের উপলব্ধির মাত্রাটি কি তোমরা সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করতে পারো? এই আলাপ-আলোচনাগুলি কি ঈশ্বরের সম্বন্ধে তোমাদের এক গভীরতর উপলব্ধি দান করেছে? এমন কি বলা যেতে পারে যে এই উপলব্ধি ঈশ্বর বিষয়ে এক প্রকৃত জ্ঞান? এমন বলা কি যুক্তিযুক্ত যে ঈশ্বরের সম্পর্কে এই জ্ঞান ও উপলব্ধিই ঈশ্বরের সমগ্র সারসত্য, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা সেই সমস্তকিছুর বিষয়ে জ্ঞান? না, স্পষ্টতই তা নয়! তার কারণ, এই আলাপ-আলোচনাগুলি কেবল ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা তা-র কিছু অংশের বিষয়ে একটা উপলব্ধি প্রদান করেছিল—সামগ্রিকভাবে তার সবটার বিষয়ে নয়। এই আলাপ-আলোচনাগুলি অতীতে ঈশ্বরের সম্পাদিত কার্যের কিছু অংশকে প্রণিধান করতে তোমাদের সমর্থ করেছিল; এই আলাপ-আলোচনাগুলির মাধ্যমে, তোমরা ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, এবং তাঁর সম্পাদিত সকল কার্যের পশ্চাতে নিহিত দৃষ্টিকোণ ও চিন্তাভাবনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলে। কিন্তু এ হল ঈশ্বরের বিষয়ে শুধুমাত্র এক আক্ষরিক, বাচনিক উপলব্ধি, এবং এর কতটা অংশ যে বাস্তব সে ব্যাপারে তোমরা তোমাদের হৃদয়ে অনিশ্চিতই থেকে যাও। এই জাতীয় বিষয়ে মানুষের উপলব্ধির মধ্যে কোনো বাস্তবতা আছে কি না তা প্রধানত কীসের দ্বারা নির্ধারিত হয়? তা নির্ধারিত হয় তাদের প্রকৃত অভিজ্ঞতার কালে ঈশ্বরের বাক্য ও স্বভাবের বিষয়ে ঠিক কতখানি তারা প্রকৃতই অনুভব করেছে, এবং এই বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলির সময় ঠিক কতখানি তারা দেখতে ও জানতে সমর্থ হয়েছে—এই দুইয়ের দ্বারা। এই ধরনের কথা কি কেউ বলেছে: “শেষ দিকের বেশ কিছু আলাপ-আলোচনা আমাদের ঈশ্বরের সম্পাদিত কার্যাবলী, ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা, উপরন্তু, মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব এবং তাঁর কার্যকলাপের ভিত্তি ও নীতিসমূহ প্রণিধান করার সুযোগ দিয়েছিল; আর তাই আমরা ঈশ্বরের স্বভাবকে উপলব্ধি করতে পেরেছি, এবং সমগ্র ঈশ্বরকে জেনে গেছি”? একথা বললে কি সঠিক বলা হবে? স্পষ্টতই, হবে না। কেন আমি বলছি যে একথা বলা ঠিক নয়? তাঁর সম্পাদিত কার্য ও তাঁর উচ্চারিত বাক্যের মধ্যেই ঈশ্বরের স্বভাব ও তাঁর যা আছে ও তিনি যা তা অভিব্যক্ত হয়। ঈশ্বরের নিষ্পন্ন কার্যাদি ও তাঁর কথিত বাক্যাবলীর মধ্য দিয়ে মানুষ ঈশ্বরের যা আছে ও তিনি যা তা দর্শন করতে সক্ষম হয়, কিন্তু এই কথার মাধ্যমে শুধু এটুকুই বোঝানো হয় যে, ঈশ্বরের কার্য ও বাক্য মানুষকে ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, সেসবের শুধু একটি অংশমাত্রই উপলব্ধি করতে সক্ষম করে। মানুষ যদি ঈশ্বর বিষয়ে আরো ব্যাপকতর ও গভীরতর উপলব্ধি লাভ করতে চায়, তাহলে মানুষকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য ও কার্যের সম্পর্কে আরো বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। মানুষ যখন ঈশ্বরের বাক্য বা কার্যের অংশবিশেষের অভিজ্ঞতা লাভ করে তখন যদিও সে ঈশ্বরের সম্বন্ধে এক আংশিক উপলব্ধি লাভ করে, কিন্তু এই আংশিক উপলব্ধি কি ঈশ্বরের প্রকৃত স্বভাবকে উপস্থাপিত করে? তা কি ঈশ্বরের সারসত্যের প্রতিনিধিত্ব করে? নিশ্চিতরূপেই তা ঈশ্বরের সত্যিকারের স্বভাব, এবং ঈশ্বরের সারসত্যকে তুলে ধরে; এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। স্থান-কাল, বা ঈশ্বরের কার্য সম্পাদনের ধরন, বা কোন রূপে তিনি মানুষের কাছে আবির্ভূত হন, বা কী প্রকারে তিনি তাঁর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন—এই সকলকিছু নির্বিশেষে যা তিনি প্রকাশ ও অভিব্যক্ত করেন তা-র সবই স্বয়ং ঈশ্বরের, ঈশ্বরের সারসত্যের, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তাকে উপস্থাপিত করে। তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা-র সাহায্যে, এবং তাঁর প্রকৃত স্বরূপে, ঈশ্বর তাঁর কার্য নির্বাহ করেন; একথা সম্পূর্ণ সত্য। তা সত্ত্বেও, আজ, তাঁর বাক্যের মধ্য দিয়ে, এবং ধর্মালোচনা শ্রবণের সময় যা তাদের কর্ণগোচর হয় তা থেকে, ঈশ্বরের বিষয়ে মানুষ কেবল এক আংশিক উপলব্ধি লাভ করেছে, আর তাই কিছুদূর পর্যন্ত, এই উপলব্ধিকে কেবল এক তত্ত্বগত জ্ঞান বলা যায়। তোমার প্রকৃত অবস্থার প্রেক্ষিতে, ঈশ্বর বিষয়ে যে বোধ বা জ্ঞানের কথা তুমি আজ শ্রবণ করেছো, দর্শন করেছো, বা তোমার অন্তরে জেনেছো ও বুঝেছো তা একমাত্র তখনই তুমি যাচাই করে দেখতে পারো যদি তোমাদের প্রত্যেকে তোমাদের সত্যিকারের অভিজ্ঞতায় এর মধ্য দিয়ে যাও, এবং একটু একটু করে একে জানতে পারো। এই কথাগুলি আমি যদি তোমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করতাম, তাহলে কি তোমরা কেবলমাত্র তোমাদের অভিজ্ঞতাসমূহের মাধ্যমে ঈশ্বরের বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হতে? আমার আশঙ্কা, তা করে ওঠা খুবই কষ্টসাধ্য হতো। কারণ, কীভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায় তা জানতে গেলে মানুষকে সর্বপ্রথম অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে লাভ করতে হবে। যত বেশি সংখ্যক ঈশ্বরের বাক্য মানুষ ভোজন করে, ঠিক ততখানি অভিজ্ঞতাই তারা বাস্তবে লাভ করতে সক্ষম। ঈশ্বরের বাক্যনিচয় সম্মুখবর্তী পথে চালিত করে, এবং মানুষকে তার অভিজ্ঞতার মাঝে পথনির্দেশ করে। সংক্ষেপে, যাদের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে, এই সর্বশেষ আলাপ-আলোচনাগুলি তাদের সত্যের বিষয়ে এক গভীরতর উপলব্ধি, এবং ঈশ্বরের বিষয়ে এক আরো বাস্তবানুগ জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করবে। কিন্তু যাদের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই, কিম্বা সদ্য যারা তাদের অভিজ্ঞতার পথে পাড়ি দিয়েছে, অথবা সবেমাত্র বাস্তবতার কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে, তাদের জন্য এটি একটি বৃহৎ পরীক্ষা।

শেষ কয়েকটি আলাপ-আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু ছিল “ঈশ্বরের স্বভাব, ঈশ্বরের কার্য, এবং স্বয়ং ঈশ্বর” সম্পর্কিত। আমার সকল বক্তব্যের মুখ্য ও প্রধান অংশগুলিতে তোমরা কী দেখেছিলে? এই আলাপ-আলোচনাগুলির মাধ্যমে, তোমরা কি এটি বুঝে ঊঠতে সক্ষম হয়েছিলে যে যিনি কার্য সম্পাদন করেছিলেন, যিনি এইসব স্বভাবগুলি ব্যক্ত করেছিলেন, তিনিই স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর যিনি যাবতীয় কিছুর উপর সার্বভৌমত্বকে ধারণ করেন? তোমাদের জবাব যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে কোন বিষয়গুলি তোমাদের এরকম একটি সিদ্ধান্তের দিকে চালিত করে? এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে, কতগুলি দিক তোমরা বিবেচনা করেছিলে? কেউ কি আমাকে বলতে পারো? আমি জানি যে সর্বশেষ কিছু আলাপ-আলোচনা তোমাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল, এবং ঈশ্বর-জ্ঞান বিষয়ে তোমাদের অন্তরে এক নতুন সূচনা প্রদান করেছিল, যেটা খুবই চমৎকার কথা। কিন্তু যদিও, আগের তুলনায়, তোমাদের ঈশ্বর-উপলব্ধির ক্ষেত্রে তোমরা অনেকটাই উন্নতি করেছো, কিন্তু ঈশ্বরের স্বরূপ বিষয়ে তোমাদের সংজ্ঞা এখনো বিধানের যুগের যিহোবা ঈশ্বর, অনুগ্রহের যুগের প্রভু যীশু, এবং রাজ্যের যুগের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নামগুলি অতিক্রম করে অগ্রসর হতে পারেনি। অর্থাৎ, “ঈশ্বরের স্বভাব, ঈশ্বরের কার্য, এবং স্বয়ং ঈশ্বর”-এর বিষয়ে এই আলাপ-আলোচনাগুলি যদিও তোমাদের কিছুটা উপলব্ধি প্রদান করেছিল অতীতে একসময় ঈশ্বরের দ্বারা উচ্চারিত বাক্যসমূহের বিষয়ে, একদা কখনো ঈশ্বর সম্পাদিত কার্যাবলীর বিষয়ে, এবং কোনো একসময় ঈশ্বর যে সত্তা ও সম্পদকে প্রকাশ করেছিলেন তার বিষয়ে, কিন্তু “ঈশ্বর” শব্দটির একটি প্রকৃত সংজ্ঞা এবং নির্ভুল স্থিতি নির্ণয় করতে তোমরা অক্ষম। উপরন্তু, স্বয়ং ঈশ্বরের মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়েও, অর্থাৎ সকল বস্তুর মাঝে এবং সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঈশ্বরের যে মর্যাদা, সে সম্পর্কেও তোমাদের কোনো সম্যক ও নির্ভুল অবস্থান ও জ্ঞান নেই। এর কারণ হলো, স্বয়ং ঈশ্বর ও ঈশ্বরের স্বভাব বিষয়ে পূর্ববর্তী আলাপ-আলোচনাগুলিতে, সমগ্র বিষয়বস্তুটিরই ভিত্তি ছিল বাইবেলে লিপিবদ্ধ ঈশ্বরের অতীত অভিব্যক্তি ও উদ্ঘাটন। কিন্তু তাঁর মানবজাতির ব্যবস্থাপনা ও পরিত্রাণের সময়কালে, বা তার বাইরে, যে সত্তা ও সম্পদ ঈশ্বরের দ্বারা প্রকাশিত ও অভিব্যক্ত হয়েছিল তা আবিষ্কার করা মানুষের পক্ষে দুরূহ। তাই, অতীতে তাঁর সম্পাদিত কার্যের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের যে অস্তিত্ব ও সম্পদ প্রকাশিত হয়েছিল তা যদি তোমরা উপলব্ধি করেও থাকো, তবু ঈশ্বরের পরিচয় ও মর্যাদা বিষয়ে তোমাদের সংজ্ঞা এখনো “অনন্য ঈশ্বর, সেই অদ্বিতীয় যিনি সকলকিছুর উপর সার্বভৌমত্বের অধিকারী” তাঁর থেকে অনেক দূরবর্তী, এবং তা “সৃষ্টিকর্তা”-র সংজ্ঞা থেকে আলাদা। শেষ কয়েকটি আলাপ-আলোচনা প্রত্যেকের মনে একই রকম অনুভূতির সৃষ্টি করেছে: মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে জেনে উঠতে পারে? কেউ যদি সত্যিই তা জানতে পারতো, তবে সেই ব্যক্তি তো অতি অবশ্যই ঈশ্বরই হতেন, কারণ একমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরই তাঁর চিন্তাভাবনার বিষয়ে অবগত, এবং একমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরই তাঁর প্রতিটি কার্যের অন্তর্নিহিত ভিত্তি ও পদ্ধতি সম্বন্ধে অবহিত। তোমরা যদিও মনে করো এই রকম একটা উপায়ে ঈশ্বরের পরিচয় শনাক্ত করা সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত, কিন্তু ঈশ্বরের স্বভাব ও কার্য থেকে কে নিরূপণ করতে সক্ষম যে এটি কোনো মানুষের কাজ নয়, এটি সত্যিই স্বয়ং ঈশ্বরের সম্পাদিত কার্য, এমন কার্য যা ঈশ্বরের তরফে মানুষের দ্বারা করে ওঠা অসম্ভব? কে উপলব্ধি করতে পারে যে এই কার্য সেই তাঁরই সার্বভৌমত্বের অধীন যিনি ঈশ্বরের সারসত্য ও ক্ষমতার অধিকারী? অর্থাৎ, কোন লাক্ষণিক বৈশিষ্ট্য বা সারসত্যের ভিত্তিতে তুমি বুঝতে পারো যে তিনিই সেই স্বয়ং ঈশ্বর, যাঁর মধ্যে ঈশ্বরের পরিচয় রয়েছে, এবং যিনি যাবতীয় বস্তুর উপর সার্বভৌমত্বকে ধারণ করেন। এই ব্যাপারে তুমি কি কখনো চিন্তাভাবনা করে দেখেছো? যদি না করে থাকো, তাহলে তা থেকে এই সত্যই প্রমাণিত হয়: শেষ কয়টি আলাপ-আলোচনা তোমাদের কেবল ঈশ্বরের কার্য সম্পাদনের ইতিহাসের এক খণ্ডাংশ বিষয়ে, এবং সেই কার্যসাধন কালীন ঈশ্বরের কার্যের পদ্ধতি, উদ্ভাস, ও উদ্ঘাটনের বিষয়ে কিছু উপলব্ধি দান করেছে মাত্র। যদিও এজাতীয় উপলব্ধি তোমাদের সকলকেই সন্দেহাতীতভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম করে যে কার্যের এই দুটি পর্যায় যে অদ্বিতীয় নিষ্পন্ন করেছিলেন তিনি স্বয়ং সেই ঈশ্বর যাঁকে তোমরা বিশ্বাস ও অনুসরণ করো, যাঁর অনুগমন নিয়তই তোমাদের করতেই হবে। কিন্তু তোমরা এখনো বুঝে উঠতে অক্ষম যে তিনিই সেই ঈশ্বর যিনি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকাল থেকে অস্তিমান এবং যিনি শাশ্বতকাল ব্যাপী বিরাজ করবেন, এবং তোমরা এটাও বুঝে উঠতে পারো না যে তিনিই সেই অদ্বিতীয় যিনি পথপ্রদর্শন করেন এবং সমগ্র মানবজাতির উপর সার্বভৌমত্বকে ধারণ করেন। নিশ্চিতভাবেই তোমরা এই সমস্যাটির বিষয়ে কখনো চিন্তাভাবনা করোনি। সে তিনি যিহোবাই হন কি প্রভু যীশু, সারসত্য ও উদ্ভাসের কোন দিকগুলির মাধ্যমে তোমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হও যে তিনি কেবল তোমাদের অনুসরণীয় ঈশ্বরই নন, একই সাথে তিনি সেই অদ্বিতীয়ও যিনি মানবজাতিকে নেতৃত্ব দেন এবং মানবজাতির নিয়তির উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করেন, তদুপরি, তিনিই সেই অনন্য ঈশ্বর যিনি আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্তকিছুর উপর সার্বভৌমত্ব ধরে রাখেন? কোন সূত্রগুলির মারফৎ তোমরা বুঝতে পারো যে, যে অদ্বিতীয়কে তোমরা বিশ্বাস করো এবং যাঁর অনুগমন করো তিনিই সেই স্বয়ং ঈশ্বর যিনি যাবতীয় কিছুর উপর সার্বভৌমত্বের অধিকারী? যে ঈশ্বরে তোমরা বিশ্বাস করো তাঁর সাথে যে ঈশ্বর মানবজাতির নিয়তির উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করেন তাঁকে তোমরা কোন মাধ্যমগুলির সূত্রে সম্পর্কযুক্ত করো? কীসের সাহায্যে তোমরা এই উপলব্ধিতে উপনীত হও যে, যে ঈশ্বরে তোমরা বিশ্বাস করো তিনিই স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর, যাঁর অধিষ্ঠান স্বর্গে ও ধরণীবক্ষে, এবং সমস্ত কিছুর মাঝে? এই সমস্যাটিই আমি পরবর্তী বিভাগে সমাধান করবো।

এমন হতেই পারে যে, যে সমস্যাগুলির বিষয়ে তোমরা কক্ষনো চিন্তা করোনি বা তোমরা ভাবতেই পারো না সেগুলিই হয়তো ঈশ্বর-জ্ঞানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেগুলির মধ্যেই হয়তো মানুষের কাছে অতল সত্যের সন্ধান করা যেতে পারে। এই সমস্যাগুলি যখন তোমাদের উপর এসে পড়ে, যার দরুন তোমাদের এগুলির মোকাবিলা করার ও একটি বিকল্প বেছে নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন তোমরা যদি তোমাদের নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞানতার কারণে, অথবা তোমাদের অভিজ্ঞতা খুবই উপরিগত এবং তোমাদের প্রকৃত কোনো ঈশ্বর-জ্ঞান নেই বলে, এগুলির পূর্ণ মীমাংসা করতে অসমর্থ হও, তখন এই সমস্যাগুলিই তোমাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের পথে সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধক ও অন্তরায় হয়ে উঠবে। আর তাই এই বিষয়টির উপর তোমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা আমার খুবই আবশ্যক বলে মনে হয়। তোমরা কি এখন তোমাদের সমস্যাটি শনাক্ত করতে পেরেছো? আমি কোন সমস্যাগুলির কথা বলছি তা কি তোমাদের কাছে পরিষ্কার? তোমরা কি এই সমস্যাগুলিরই সম্মুখীন হবে? এগুলিই কি সেই সমস্যা যা তোমরা উপলব্ধি করো না? এগুলিই কি এমন সমস্যা যাদের বিষয়ে কোনো চিন্তা কখনো তোমাদের মনে উদয় হয়নি? এই সমস্যাগুলি কি তোমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? এগুলি কি সত্যিই কোনো সমস্যা? এই ব্যাপারটা তোমাদের কাছে এক বড়োসড়ো বিভ্রান্তির উৎস, আর তা প্রমাণ করে যে, যে ঈশ্বরে তোমরা বিশ্বাস করো তাঁর বিষয়ে তোমাদের প্রকৃত কোনো উপলব্ধি নেই, এবং প্রমাণ করে তোমরা তাঁকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করো না। কেউ কেউ বলে, “আমি জানি তিনি ঈশ্বর, আর তাই আমি তাঁর অনুসরণ করি, কারণ তাঁর বাক্যসমূহ ঈশ্বরের অভিব্যক্তি। এটাই যথেষ্ট প্রমাণ। এর অতিরিক্ত আর কোন প্রমাণের দরকার? ঈশ্বরের বিষয়ে সংশয়ের অবতারণা করা নিশ্চয়ই আমাদের পক্ষে বিধেয় নয়? নিশ্চয়ই ঈশ্বরকে যাচাই করাটা আমাদের পক্ষে অনুমোদনযোগ্য নয়? নিশ্চিতভাবেই আমাদের ঈশ্বরের সারসত্য ও স্বয়ং ঈশ্বরের স্বরূপের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোনো প্রয়োজন নেই?” তোমরা এভাবে চিন্তা করো বা না করো, ঈশ্বরের বিষয়ে তোমাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে, বা তাঁকে যাচাই করার দিকে তোমাদের প্রণোদিত করার উদ্দেশ্যে যে এ ধরনের প্রশ্নগুলি আমি তোমাদের কাছে পেশ করছি তা নয়, ঈশ্বরের স্বরূপ ও সারসত্যের বিষয়ে তোমাদের মনে সংশয়ের উদ্রেক করার কোনো উদ্দেশ্য তো আমার একেবারেই নেই। বরং এ কাজ করার পিছনে আমার উদ্দেশ্য হল তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরের সারসত্য বিষয়ে এক গভীরতর উপলব্ধি এবং ঈশ্বরের মর্যাদা সম্পর্কে এক দৃঢ়তর নিশ্চয়তা ও আস্থাকে উৎসাহিত করা, ঈশ্বর যাতে তাঁর সকল অনুগামীদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত সেই অদ্বিতীয় হয়ে উঠতে পারেন, এবং যাতে সৃষ্টিকর্তা, সকলকিছুর নিয়ন্ত্রক, ও স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর হিসাবে ঈশ্বরের আদি মর্যাদাকে সকল প্রাণীর অন্তরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। একই সাথে এটি আমার পরবর্তী আলাপ-আলোচনার মূল বিষয়বস্তুও বটে।

এবার, বাইবেল থেকে নিম্নলিখিত শাস্ত্রবাক্যগুলির পাঠ শুরু করা যাক।

১. ঈশ্বর সব কিছু সৃষ্টি করার জন্য বাক্যসমূহের ব্যবহার করেন

আদিপুস্তক ১:৩-৫ ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে তিনি দীপ্তিকে পৃথক করলেন এবং দীপ্তির নাম দিন ও অন্ধকারের নাম রাখলেন রাত্রি। রাত্রি ও দিনের অবসানে সমাপ্ত হল প্রথম দিবস।

আদিপুস্তক ১:৬-৭ ঈশ্বর বললেন, সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে! ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার ঊর্ধ্বস্থিত জলরাশি থেকে নিম্নস্থ জলরাশিকে পৃথক করলেন: ঠিক তেমনই ঘটল।

আদিপুস্তক ১:৯-১১ ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি! ঠিক তেমনি ঘটল। ঈশ্বর শুষ্ক ভূমির নাম স্থল ও সংহত জলরাশির নাম রাখলেন সমুদ্র। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার। তিনি বললেন স্থলভূমিতে উৎপন্ন হোক উদ্ভিদ। উৎপন্ন হোক বিভিন্ন শ্রেণীর শস্য এবং সকল শ্রেণীর সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ: ঠিক তেমনই ঘটল।

আদিপুস্তক ১:১৪-১৫ ঈশ্বর বললেন, রাত্রি থেকে দিনকে পৃথক করার জন্য আকাশ মণ্ডলে সৃষ্ট হোক জ্যোতিষ্করাজি। সেগুলি চিহ্ন, দিন, ঋতু ও বর্ষের সূচনা করবে। পৃথিবীতে আলোক বিতরণের জন্য সেগুলি আকাশে প্রতিষ্ঠিত হোক আলোকবর্তিকারূপে! ঠিক তেমনই ঘটল।

আদিপুস্তক ১:২০-২১ ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন বৃহদাকার সামুদ্রিক জীব এবং সকল শ্রেণীর জলচর প্রাণী। তারা দলে দলে জলধিবক্ষে বিচরণ করতে লাগল। তিনি সৃষ্টি করলেন সকল জাতির পক্ষীকুল। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।

আদিপুস্তক ১:২৪-২৫ ঈশ্বর বললেন, পৃথিবী সকল জাতির প্রাণী—বন্য ও গৃহপালিত পশু এবং সরীসৃপ সহ সকল জীব উৎপন্ন করুক। তেমনই ঘটল। ঈশ্বর এইভাবে সকল জাতির বন্য ও গৃহপালিত পশু এবং বিভিন্ন জাতির ভূচর প্রাণী ও সরীসৃপ সহ সকল জীব সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।

প্রথম দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বদান্যতায় মানবজাতির দিন এবং রাতের সূচণা হয় এবং অবিচল থাকে

প্রথম অনুচ্ছেদটির প্রতি দৃষ্টিপাত করা যাকঃ: “ঈশ্বর বললেন, দীপ্তি হোক! দীপ্তির হল আবির্ভাব। ঈশ্বর দেখলেন, চমৎকার এই দীপ্তি। অন্ধকার থেকে তিনি দীপ্তিকে পৃথক করলেন এবং দীপ্তির নাম দিন ও অন্ধকারের নাম রাখলেন রাত্রি। রাত্রি ও দিনের অবসানে সমাপ্ত হল প্রথম দিবস” (আদিপুস্তক ১:৩-৫)। এই অনুচ্ছেদে সৃষ্টির সূচনালগ্নে ঈশ্বরের প্রথম কার্যের বর্ণনা করা হয়েছে, এবং ঈশ্বর প্রথম যে দিবস অতিবাহিত করেছিলেন সেখানে ছিল এক সন্ধ্যা ও এক সকাল। তবে সেটি ছিল এক অনন্যসাধারণ দিবস: ঈশ্বর সকল বস্তুর জন্য আলোক প্রস্তুত করেছিলেন, উপরন্তু, তিনি আলোকে অন্ধকার থেকে পৃথক করেছিলেন। ঐ দিন, ঈশ্বর কথা বলতে শুরু করেন, এবং তাঁর বাক্যসমূহ ও কর্তৃত্ব একযোগে অস্তিত্বধারণ করে। সকল বস্তুর মধ্যে তাঁর কর্তৃত্ব প্রতীয়মান হতে শুরু করে, এবং তাঁর বাক্যসমূহের কারণে সকল বস্তুর মধ্যে তাঁর শক্তি প্রসারিত হয়। এই দিন থেকেই, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, আর ঈশ্বরের শক্তির কারণে সকল বস্তু গঠিত হয় ও অবিচল থাকে, এবং ঈশ্বরের বাক্যসমূহ, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, ও ঈশ্বরের শক্তির কারণে সেগুলি ক্রিয়াশীল হয়। যখন ঈশ্বর এই বাক্যগুলি বলেন “দীপ্তি হোক”, তখন সেখানে আলোক প্রতীয়মান হল। ঈশ্বর যে কোনো কর্মসূচী আরম্ভ করেছিলেন, এমন নয়; আলোকের আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁর বাক্যসমূহের ফল হিসাবে। এই ছিল সেই আলোক ঈশ্বর যাকে দিবস বলেছিলেন, নিজ অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মানুষ আজও যার উপরে নির্ভর করে থাকে। ঈশ্বরের আদেশে, এর সারসত্য এবং মূল্য কখনোই বদলায়নি, আর তা কখনোই অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এর অস্তিত্ব ঈশ্বরের কর্তৃত্ব আর ক্ষমতাকে প্রকাশ করে, এবং সৃষ্টিকর্তার ঘোষিত করে। এটি বারে বারে সৃষ্টিকর্তার পরিচয় ও অবস্থান সুনিশ্চিত করে। এটি ইন্দ্রিয়াতীত কিংবা অলীক নয়, বরং এটি একটি বাস্তব আলোক যা মানুষ চাক্ষুষ করতে পারে। সেই সময় থেকেই, এই শূন্য বিশ্বচরাচরে, যেখানে “পৃথিবী ছিল বিশৃঙ্খল। সেখানে প্রাণের চিহ্নমাত্র ছিল না।”—সেই প্রথম কোনো বস্তুগত পদার্থের উৎপত্তি হয়। সেই পদার্থ উদ্ভূত হয় ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাক্যসমূহ থেকে, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও উচ্চারণসমূহের কারণে সকল বস্তুর সৃষ্টিকার্যের প্রথম অঙ্ক হিসাবে তা আবির্ভূত হয়। এর ঠিক পরেই, ঈশ্বর আলোক এবং অন্ধকারকে পৃথক হয়ে যাওয়ার আদেশ দেন…। ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কারণ সবকিছু বদলে যায় ও সম্পূর্ণ হয়…। ঈশ্বর এই আলোকে বললেন “দিবস”, এবং অন্ধকারকে বললেন “রাত্রি”। এই সময়ে, ঈশ্বর যে পৃথিবী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন সেখানে প্রথম প্রভাত ও প্রথম সন্ধ্যার উৎপত্তি হয়। এই দিবসটি ছিল সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রথম দিবস, এবং তা ছিল সকল বস্তুর সৃষ্টির সূচনা, আর ঠিক সেই দিবস থেকেই তাঁর সৃষ্ট পৃথিবীতে প্রথমবার সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছিল।

এই বাক্যগুলির মধ্য দিয়ে, মানুষ ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং ঈশ্বরের বাক্যসমূহ সহ ঈশ্বরের ক্ষমতা চাক্ষুষ করতে সক্ষম হয়। যেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরই এহেন ক্ষমতার অধিকারী, সেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই এহেন কর্তৃত্ব রয়েছে; যেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরই এইরকম কর্তৃত্বের অধিকারী, সেহেতু শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই এইরকম ক্ষমতা রয়েছে। কোনো মানুষ কিংবা কোনো বস্তুর কি এমন কর্তৃত্ব অথবা ক্ষমতা থাকতে পারে? তোমাদের অন্তরে কি এর কোনো উত্তর আছে? ঈশ্বর ছাড়া, কোনো সৃষ্ট কিংবা অ-সৃষ্ট সত্তার কি এহেন কর্তৃত্ব রয়েছে? তোমরা কি কোনো গ্রন্থ কিংবা প্রকাশনায় এমন কোনো পদার্থের উদাহরণ পেয়েছ? এমন কোনো প্রমাণ কি রয়েছে যে কেউ এই আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছে? এটি অন্য কোনো গ্রন্থ অথবা নথিতে দেখতে পাওয়া যায় না; এগুলি অবশ্যই ঈশ্বরের এই পৃথিবীর চোখ-ধাঁধানো সৃষ্টি সম্পর্কে একমাত্র কর্তৃত্বপূর্ণ এবং ক্ষমতাশালী বাক্যসমূহ, যা বাইবেলে লিপিবদ্ধ হয়েছে; এই বাক্যগুলি ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্ব আর পরিচয়ের কথা বলে। এই ধরনের কর্তৃত্ব আর পরিচয়কে কি ঈশ্বরের অনন্য পরিচয়ের প্রতীক বলে বলা যেতে পারে? এগুলিকে কি ঈশ্বরের এবং একমাত্র ঈশ্বরেরই অধিকৃত বলে বলা যেতে পারে? নিঃসন্দেহে, এই প্রকার কর্তৃত্ব এবং শক্তি শুধুমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরেরই অধিকৃত হতে পারে! এই কর্তৃত্ব আর শক্তি কোনো সৃষ্ট কিংবা অ-সৃষ্ট সত্তার অধিকৃত অথবা প্রতিস্থাপিত হতে পারে না! এটি কি স্বয়ং অনন্য ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্যগুলিরই একটি? তোমরা কি এটিকে প্রত্যক্ষ করেছ? এই বাক্যসমূহ খুব শীঘ্র এবং স্পষ্টভাবে মানুষকে এই বিষয়ে উপলব্ধি করিয়ে দেয় যে, ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্ব, এবং তাঁর অনন্য শক্তি রয়েছে, রয়েছে সর্বোচ্চ পরিচয় ও অবস্থান। উপরের আলোচনা থেকে, তোমরা কি বলতে পারো যে, তোমরা যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করো তিনিই স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর?

দ্বিতীয় দিবসে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব জলরাশির আয়োজন করে, এবং তৈরি করে নভোমণ্ডল এবং মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে মৌলিক একটি স্থান আবির্ভূত হয়

বাইবেলের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটি পাঠ করা যাক: “ঈশ্বর বললেন, সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে! ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার ঊর্ধ্বস্থিত জলরাশি থেকে নিম্নস্থ জলরাশিকে পৃথক করলেন: ঠিক তেমনই ঘটল।” (আদিপুস্তক ১:৬-৭)। কী কী পরিবর্তন ঘটল যখন ঈশ্বর বললেন “সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল, বিভক্ত করুক জলরাশিকে”? শাস্ত্রে বলা হয়েছে: “ঈশ্বর এইভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করে তার ঊর্ধ্বস্থিত জলরাশি থেকে নিম্নস্থ জলরাশিকে পৃথক করলেন।” ঈশ্বর যখন এই বাক্য বললেন ও তা সম্পাদন করলেন, তখন তার ফল কী হয়েছিল? এর উত্তর নিহিত আছে অনুচ্ছেদের শেষ অংশে: “ঠিক তেমনই ঘটল।”

এই দু’টি সংক্ষিপ্ত বাক্য চমৎকার একটি দুর্দান্ত ঘটনাকে নথিবদ্ধ করে, এবং বর্ণনা করে একটি বিস্ময়কর দৃশ্য—সেই অসাধারণ উদ্যোগ যার মধ্যে ঈশ্বর জলরাশিকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন, এবং সৃষ্টি করেছিলেন এমন এক স্থান যেখানে মানুষের অস্তিত্ব বজায় থাকতে পারে …

এই চিত্রটিতে মুহূর্তের মধ্যে ঈশ্বরের চোখের সামনে জলরাশি ও নভোমণ্ডল আবির্ভূত হয়, এবং তা ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কর্তৃত্ব বিভক্ত হয়ে যায়, এবং ঈশ্বরের নিযুক্ত পন্থায় এক “ঊর্ধ্ব” ও এক “অধঃ”-তে পৃথক হয়ে যায়। অর্থাৎ, ঈশ্বর-সৃষ্ট আকাশমণ্ডল শুধু নিচের জলরাশিকে আচ্ছাদিতই করেনি, বরং জলরাশিকে উপরেও তুলে ধরেছে…। এতে মানুষ তাঁর কর্তৃত্বের শক্তিময়তা এবং সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক জলরাশিকে সঞ্চালিত ও আদিষ্ট আদেশ করা এবং নভোমণ্ডল সৃষ্টি করার দৃশ্যের বিভূতির প্রতি শুধু হতবাক হয়ে চেয়ে থেকেছে, আর প্রশংসায় শিহরিত হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহের মধ্যে দিয়ে, ঈশ্বরের শক্তির মধ্য দিয়ে, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের মধ্যে দিয়ে, ঈশ্বর আরও এক মহান কীর্তি অর্জন করেছিলেন। তা কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের শক্তি নয়? ঈশ্বরের কাজগুলির বিশ্লেষণের জন্য শাস্ত্রের ব্যবহার করা যাক: ঈশ্বর তাঁর বাক্যসমূহ বলেন, আর ঈশ্বরের এই বাক্যসমূহের কারণে জলরাশির মধ্যস্থলে এক গগনপট বিদ্যমান হয়। ঠিক একই সময়ে, ঈশ্বরের এই বাক্যসমূহের কারণেই, এই স্থানে এক অসাধারণ পরিবর্তন ঘটে, এবং তা কোনো সাধারণ অর্থে পরিবর্তন ছিল না, ছিল একপ্রকার প্রতিস্থাপন, যেখানে শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়েছিল একটা কিছুর। তা ছিল সৃষ্টিকর্তার চিন্তাপ্রসূত, এবং শূন্য থেকে কিছু একটায় পরিণত হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার উচ্চারিত বাক্যসমূহের কারণেই, উপরন্তু, সেই মুহূর্ত থেকেই, তা সৃষ্টকর্তার নিমিত্তই বিদ্যমান ও অবিচল থাকবে, এবং সৃষ্টিকর্তার চিন্তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে তা স্থানান্তরিত, পরিবর্তিত, এবং পুনর্নবীকৃত হবে। এই অনুচ্ছেদটির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার এই সমগ্র বিশ্বজগৎ-সৃষ্টিতে তাঁর দ্বিতীয় কার্যটি বর্ণিত হয়। তা ছিল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও শক্তির অন্য এক অভিব্যক্তি, সৃষ্টিকর্তার অপর এক অগ্রণী উদ্যোগ। তা ছিল বিশ্বপ্রতিষ্ঠার পর থেকে সৃষ্টিকর্তার অতিবাহিত দ্বিতীয় দিবস, আর এটি তাঁর জন্য ছিল এক বিস্ময়কর দিবস: তিনি আলোকের মধ্যে হেঁটে গিয়েছিলেন, তিনি গগনমণ্ডল আহূত করেছিলেন, তিনি জলরাশির আয়োজন তথা জলরাশিকে শাসন করেছিলেন, এবং তাঁর কার্য, তাঁর কর্তৃত্ব, এবং তাঁর শক্তি নিযুক্ত হয়েছিল নতুন দিবসে …

ঈশ্বর তাঁর বাক্যসমূহ বলার পূর্বে কি জলরাশির মধ্যস্থলে নভোমণ্ডল ছিল? একেবারেই নয়! এবং কী হল ঈশ্বরের এই বাক্যগুলি বলার পর: “সৃষ্ট হোক নভোমণ্ডল”? ঈশ্বর যে বস্তুগুলি চেয়েছিলেন সেগুলি অবির্ভূত হল; জলরাশির মধ্যস্থলে দেখা দিল নভোমণ্ডল, এবং জলরাশি পৃথক হয়ে গেল, কারণ ঈশ্বর বললেন: “বিভক্ত করুক জলরাশিকে”। এইভাবে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ অনুসরণ করে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং শক্তির ফলস্বররূপ সকল জিনিসের মাঝে মাঝে দু’টি নতুন বস্তু, দু’টি সদ্যজাত পদার্থের আবির্ভাব ঘটল। এই দু’টি নতুন বস্তুর আবির্ভাব সম্পর্কে তোমরা কী অনুভব করো? তোমরা কি সৃষ্টিকর্তার শক্তির মাহাত্ম্য অনুভব করো? তোমরা কি সৃষ্টিকর্তার অনন্য ও অসামান্য বলবত্তা অনুভব করো? ঈশ্বরের কর্তৃত্বের কারণেই এহেন বলবত্তা তথা ক্ষমতার মাহাত্ম্য, এবং এই কর্তৃত্ব হল স্বয়ং ঈশ্বরেরই এক উপস্থাপনা, এবং স্বয়ং ঈশ্বরেরই এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।

এই অনুচ্ছেদটি কি তোমাদের আরও একবার ঈশ্বরের অনন্যতার এক সুগভীর চেতনা প্রদান করে? সত্যি বলতে কি, এটা একেবারেই যথেষ্ট নয়; সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও শক্তি এর বাইরেও বহুদূর ব্যাপ্ত। তাঁর অনন্যতা নিছকই এই কারণে নয় যে তাঁর অধিকৃত সারসত্য অন্য যেকোনো জীবের চেয়ে আলাদা, বরং এই কারণেও, যে, তাঁর কর্তৃত্ব ও শক্তি অসাধারণ, সীমাহীন, সকলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, এবং সকলের চেয়ে উচ্চে দণ্ডায়মান, উপরন্তু, কারণ তাঁর কর্তৃত্ব, এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, তা জীবন সৃষ্টি করতে ও অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে, এবং সৃষ্টি করতে পারে প্রতিটি আকর্ষণীয় ও অসামান্য মুহুর্ত ও লহমা। ঠিক একই সময়ে, তিনি তাঁর সৃষ্ট প্রাণকে শাসন করতে ও অলৌকিক ঘটনাগুলির উপর এবং তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি মুহুর্ত ও লহমার উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করতে সক্ষম।

তৃতীয় দিবসে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ জন্ম দেয় পৃথিবী এবং সমুদ্রের এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিশ্বে প্রাণসঞ্চার করে

এরপর, পাঠ করা যাক আদিপুস্তক ১:৯-১১-এর প্রথম বাক্যটি: “ঈশ্বর বললেন, আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি!” ঈশ্বর শুধু এই বাক্য বলার পর কী কী বদল ঘটে, “আকাশের নীচে সমস্ত জলরাশি এক স্থানে সংহত হোক, প্রকাশিত হোক শুষ্ক ভূমি”? এবং এই স্থানে আলোক এবং নভোমণ্ডল ছাড়া আর কী ছিল? শাস্ত্রে লেখা আছে: “ঈশ্বর শুষ্ক ভূমির নাম স্থল ও সংহত জলরাশির নাম রাখলেন সমুদ্র। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” অর্থাৎ, এই স্থানে এখন ছিল স্থলভূমি ও সমুদ্র, এবং স্থলভাগ ও সমুদ্রকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছিল। এই নতুন বস্তুগুলির আবির্ভাব ঘটেছিল ঈশ্বরের মুখ নিঃসৃত আদেশ “ঠিক তেমনি ঘটল।”-এর পর। শাস্ত্রে কি বর্ণনা করা হয়েছে যে এটি করাকালীন ঈশ্বর ব্যতিব্যস্ত হয়েছিলেন? সেখানে কি ঈশ্বরকে কায়িক শ্রমে নিযুক্ত হয়েছেন বলে বর্ণনা করা হয়েছে? তাহলে, ঈশ্বর কীভাবে তা করেছিলেন? ঈশ্বর কীভাবে এই নতুন বস্তুগুলির উৎপন্ন হওয়া সম্ভবপর করেছিলেন? এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, ঈশ্বর এইসমস্ত কিছু অর্জন করতে, এই সবকিছু সৃষ্টি করতে, বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন।

উপরের তিনটি অনুচ্ছেদে, আমরা তিনটি মহান ঘটনা সংঘটনের বিষয়ে জেনেছি। এই তিনটি মহান ঘটনা ঘটেছিল এবং এগুলির সৃষ্টি হয়েছিল ঈশ্বরের বাক্যসমূহের মাধ্যমে, এবং তাঁর বাক্যসমূহের কারণেই একের পর এক এক এই ঘটনাগুলি ঈশ্বরের চোখের সামনে আবির্ভূত হয়েছিল। এইভাবে দেখা যায় ঈশ্বরের এই বাক্যসমূহ: “ঈশ্বর যা বলেন তা অর্জিত হবেই; তিনি আদেশ দিলে তা অবিচল থাকবেই”, শূন্যগর্ভ নয়। ঈশ্বরের এই সারসত্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে যে তাঁর চিন্তাগুলি তৈরী হয়েছে, এবং ঈশ্বর যখন বাচনের উদ্দেশ্যে তাঁর মুখমণ্ডল অবারিত করেন, তখন তাঁর সারসত্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়।

এই অনুচ্ছেদের চূড়ান্ত বাক্যটি পাঠ করা যাক: “তিনি বললেন স্থলভূমিতে উৎপন্ন হোক উদ্ভিদ। উৎপন্ন হোক বিভিন্ন শ্রেণীর শস্য এবং সকল শ্রেণীর সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ: ঠিক তেমনই ঘটল।” ঈশ্বর যখন কথন করছিলেন, ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার পরেই, এই সকল বস্তু সৃষ্ট হয়েছিল, এবং তৎক্ষণাৎ, একগুচ্ছ বিবিধ, ক্ষীণ ও ক্ষুদ্র প্রাণসত্ত্বা মৃত্তিকাগর্ভ থেকে স্খলিতভাবে মাথা তুলে বেরিয়ে আসতে এসেছিল, এবং নিজ-নিজ শরীর থেকে ধূলিকণা ঝেড়ে ফেলার আগেই তারা পরস্পরকে সাগ্রহে আভিবাদন জানাচ্ছিল, বিশ্বের প্রতি হাসিমুখে মাথা দোলাচ্ছিল। তারা সৃষ্টিকর্তাকে তাদের এই জীবনদানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিল, এবং বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেছিল যে, তারাও সবকিছুর একটা অংশ, এবং যে, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রকাশ করতে তারা প্রত্যেকে নিজ-নিজ জীবন উৎসর্গ করবে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ বলা হলে, স্থলভূমি শ্যামলিমায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল, মানুষের উপভোগ্য সকল প্রকার তৃণলতা মাটি ফুঁড়ে উঠে এল, এবং পার্বত ও সমতলভূমি আচ্ছাদিত হল গভীর অরণ্যানী দ্বারা…। এই ঊষর পৃথিবী, যেখানে প্রাণের চিহ্নমাত্র বিদ্যমান ছিল না, তা সত্বর পরিপূর্ণ হল তৃণ, লতাপাতা ও বৃক্ষরাজির দ্বারা, চতুর্দিক প্লাবিত হল শ্যামলিমায়…। তৃণের সৌরভ ও মৃত্তিকার সুবাস ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে, এবং বাতাস সঞ্চালনের সাথে সাথ প্রাণলাভ করল বিবিধ উদ্ভিদে, আরম্ভ হল তাদের বৃদ্ধিপ্রক্রিয়া। একইসাথে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কারণে, এবং ঈশ্বরের ভাবনা অনুসরণ করে, সকল উদ্ভিদরাশি অনন্ত জীবন চক্র শুরু করল, যেখানে তাদের বৃদ্ধি ঘটে, মুকুলিত ও ফলবান হয়, এবং তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে। তারা কঠোরভাবে নিজ নিজ জীবনধারা পালন করতে শুরু করে, শুরু করে সমস্তকিছুর মধ্যে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে…। তাদের সকলের জন্ম নেওয়ার ও বেঁচে থাকার কারণ ছিল সৃষ্টিকর্তার বাক্যসমূহ। তারা সৃষ্টিকর্তার বিরামহীন সংস্থান ও পরিপোষণ পাবে এবং সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রকাশ করার লক্ষ্যে সর্বদা ভূ-ভাগের সর্বত্র দৃঢ়ভাবে উদ্বর্তিত হবে, এবং তারা সর্বদা সৃষ্টিকর্তার তাদেরকে দেওয়া জীবন-শক্তি প্রদর্শন করবে …

সৃষ্টিকর্তার জীবন অসাধারণ, তাঁর চিন্তা অসাধারন আর তাঁর কর্তৃত্ব অসাধারণ, আর তাই, যখন তাঁর বাক্যসমূহ উচ্চারিত হল, তাঁর চূড়ান্ত ফল ছিল “ঠিক তেমনই ঘটল।” স্পষ্টতই, ঈশ্বর যখন কার্য সম্পাদন করেন, তখন তাঁকে তা স্বহস্তে সাধিত করতে হয় না; তিনি নিছকই তাঁর চিন্তার দ্বারা আজ্ঞা করেন, তথা, তাঁর বাক্যের দ্বারা আদেশ করেন, এবং এইভাবেই বিষয়গুলি অর্জিত হয়। এই দিবসে, ঈশ্বর জলরাশিকে একটি স্থানে একত্রিত করেছিলেন, এরপর, ঈশ্বর স্থলভূমিকে তৃণে পরিপূর্ণ করার পর, সেখানে বেড়ে উঠল বীজধারী উদ্ভিজ্জ, ফল-ধারণকারী বৃক্ষ, এবং ঈশ্বর তাদের প্রত্যেককে প্রকার অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করলেন, এবং প্রতিটির মধ্যে বহন করালেন সেগুলির নিজ নিজ বীজ। এই সমস্তকিছুই ঈশ্বরের চিন্তা ও ঈশ্বরের বাক্যসমূহের আদেশ অনুযায়ী উপলব্ধ হয়েছিল, এবং একাদিক্রমে প্রতিটির আবির্ভাব ঘটেছিল এই নতুন জগতে।

যখন ঈশ্বর তাঁর কার্য আরম্ভ করেননি, তখনই তাঁর মনের মধ্যে তিনি কী অর্জন করতে চান তার একটা চিত্র ছিল, এবং যখন ঈশ্বর সেই বিষয়গুলি অর্জন করতে শুরু করেন, ঠিক তখনই আবার ঈশ্বর সেই চিত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কথন করতে তাঁর মুখ উন্মুক্ত করেছিলেন, তখন ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং শক্তির দৌলতে সমস্তকিছুর মধ্যে বদল ঘটতে শুরু করে। ঈশ্বর তা কীভাবে করেছিলেন, কিংবা কীভাবে তিনি তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন সেসব নির্বিশেষে, সবকিছুই ঈশ্বরের পরিকল্পনামাফিক পর্যায়ক্রমে অর্জিত হয়েছিল, এবং ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ও কর্তৃত্বের কারণে তথা পর্যায়ক্রমে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল। এই পরিবর্তন তথা সঙ্ঘটন সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব এবং সৃষ্টিকর্তার জীবনের ক্ষমতার অসাধারণত্ব ও মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। তাঁর চিন্তাগুলি কোনো সহজ ধারণা নয়, নয় কোনো শূন্য চিত্র, বরং জীবনিশক্তি ও অসাধারণ কর্মশক্তির অধিকারী এক কর্তৃত্ব, এবং এগুলি হল সবকিছুর পরিবর্তন, পুনরুজ্জীবন, পুনর্নবীকরণ ও ধ্বংসসাধনের ক্ষমতা। এই কারণে, সমস্তকিছু তাঁর চিন্তার দ্বারা ক্রিয়াশীল হয়, এবং, তদসহযোগে, তাঁর মুখনিঃসৃত বাক্যসমূহের দ্বারাই অর্জিত হয় …

সকল বস্তুর আবির্ভাবের পূর্বে, ঈশ্বরের চিন্তায় অনেক আগে থেকেই একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা গঠিত হয়ে গিয়েছিল, এবং বহু পূর্বেই এক নতুন বিশ্ব অর্জিত হয়ে গিয়েছিল। যদিও তৃতীয় দিবসে স্থলভূমিতে সকল প্রকার উদ্ভিজ্জ আবির্ভূত হয়েছিল, তা ঈশ্বরের এই পৃথিবী সৃষ্টির কার্যের পর্যায়গুলি থামাবার কোনো কারণ ছিল না; তিনি তাঁর বাক্যসমূহ বলে যাওয়া অব্যাহত রাখতে, প্রতিটি নতুন বস্তুর সৃষ্টি অর্জন করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি কথন করতেন, তাঁর আদেশ জারি করতেন, এবং তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতেন, এবং প্রকাশ করতেন তাঁর শক্তি, এবং তিনি সকল বস্তু তথা মানবজাতির উদ্দেশ্যে যাকিছু প্রস্তুত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, যাকিছু তিনি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তা প্রস্তুত করেছিলেন …

চতুর্থ দিবসে, ঈশ্বর আবার তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করায় মানবজাতির বিভিন্ন ঋতু, দিন এবং বছরগুলি সৃষ্টি হয়

সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা সম্পাদনের জন্য তাঁর বাক্যসমূহের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এইভাবে তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিবস অতিবাহিত করেছিলেন, ঈশ্বরকে ব্যতিব্যস্ত হতে কিংবা নিজেকে পরিশ্রান্ত করে ফেলতে দেখা যায়নি; পক্ষান্তরে, তিনি তাঁর পরিকল্পনার প্রথম তিন দিন অত্যন্ত চমৎকারভাবে কাটিয়েছিলেন, এবং বিশ্বচরাচরের আমূল রূপান্তরের আরব্ধ মহান কর্ম অর্জন করেছিলেন। তাঁর দৃষ্টির সম্মুখে সম্পূর্ণ নতুন এক বিশ্বের আবির্ভাব ঘটেছিল, এবং, তাঁর চিন্তার মধ্যে নিহিত অপরূপ চিত্রটি অবশেষে, একাদিক্রমে ঈশ্বরের বাক্যসমূহে প্রকাশ পেল। প্রতিটি নতুন বস্তুর আবির্ভাব ছিল এক নবজাতকের জন্মসম, এবং সৃষ্টিকর্তা একসময় তাঁর চিন্তার মধ্যে নিহিত থাকা, অথচ এখন প্রাণপ্রতিষ্ঠ চিত্রটি উপভোগ করেছিলেন। এই সময়ে, তাঁর হৃদয়ে কিঞ্চিৎ পরিতৃপ্তি জাগে বটে, কিন্তু তখন তাঁর পরিকল্পনা সবেমাত্র আরম্ভ হয়েছিল। এক পলকে এক নতুন দিবসের আবির্ভাব ঘটেছিল—এবং কী ছিল সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনার পরবর্তী পৃষ্ঠায়? তিনি কী বলেছিলেন? কীভাবে তিনি তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন? ইতিমধ্যে, এই নতুন পৃথিবীতে নতুন আর কী কী বস্তুর আগমন ঘটেছিল? সৃষ্টিকর্তার পথপ্রদর্শন অনুসরণ করে, আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় ঈশ্বরের সকলকিছু সৃষ্টির চতুর্থ দিবসের উপর, যা ছিল আরও এক নতুন সূচনা। অবশ্যই, সৃষ্টিকর্তার জন্য তা ছিল নিঃসন্দেহে আরও এক চমৎকার দিন, এবং তা ছিল আজকের মানবজাতির জন্যও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আরও একটি দিবস। অবশ্যই দিনটির মূল্য ছিল অপরিমেয়। কীভাবে এটি চমৎকার ছিল, কীভাবে এটি এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আর কীভাবে এর মূল্য অপরিমেয় ছিল? প্রথমেই শ্রবণ করা যাক সৃষ্টিকর্তা কথিত বাক্যগুলি …

“ঈশ্বর বললেন, রাত্রি থেকে দিনকে পৃথক করার জন্য আকাশ মণ্ডলে সৃষ্ট হোক জ্যোতিষ্করাজি। সেগুলি চিহ্ন, দিন, ঋতু ও বর্ষের সূচনা করবে। পৃথিবীতে আলোক বিতরণের জন্য সেগুলি আকাশে প্রতিষ্ঠিত হোক আলোকবর্তিকারূপে!” (আদিপুস্তক ১:১৪-১৫)। তা ছিল ঈশ্বরের কর্তৃত্বের আরও এক প্রয়োগ যা তাঁর শুষ্ক ভূমি ও তাতে উদ্ভিদরাশি সৃষ্টির পর প্রাণীসমূহ দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। ঈশ্বরের কাছে, এহেন একটি কার্য নির্বাহ করা ছিল তাঁর পূর্বে সম্পাদিত কার্যের মতই সহজ, কারণ ঈশ্বর এমনই ক্ষমতার অধিকারী; ঈশ্বর তাঁর বাক্যসমূহের মতই উত্তম, এবং তাঁর বাক্য সাধিত হবে। ঈশ্বর আলোকে আকাশে আবির্ভূত হওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন, এবং এই আলোকরাশি যে শুধু আকাশ আর পৃথিবীর উপরিভাগকে আলোকিত করেছিল তা-ই নয়, সেগুলি ছিল দিবস ও রাত্রির, বিভিন্ন ঋতুর এবং বছরের চিহ্নও। এইভাবে, ঈশ্বর তাঁর বাক্যসমূহ বলার সাথে সাথেই ঈশ্বর যা যা কার্য সম্পাদন করতে চেয়েছিলেন তার প্রতিটিই ঈশ্বরের অর্থ অনুযায়ী এবং ঈশ্বর দ্বারা নিযুক্ত পন্থায় পূর্ণ হয়েছিল।

আকাশের আলোকরাশি হল আকাশের সেই বস্তু যা আলোক বিকিরণ করতে পারে; এগুলি আকাশ, স্থলভূমি ও জলরাশি আলোকিত করতে পারে। এগুলি ঈশ্বর দ্বারা আদিষ্ট ছন্দ ও কম্পনাঙ্ক অনুযায়ী আবর্তিত হয়, এবং স্থলভূমির বিভিন্ন অংশকে সুনির্দিষ্ট সময়াকালে আলোকিত করে, আর এইভাবে আলোর এই আবর্তন চক্রের ফলে ভূভাগের পূর্বে ও পশ্চিমে সৃষ্টি হয় দিন ও রাতের, আর এগুলি যে শুধু দিন ও রাতেরই চিহ্ন তা-ই নয়, বরং এই বিভিন্ন চক্রের মধ্য দিয়ে এগুলি মানবজাতির বিভিন্ন উৎসব ও বিশেষ দিনগুলিকেও চিহ্নিত করে। এগুলি হল ঈশ্বর দ্বারা নিযুক্ত বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত—এই চারটি ঋতুর নিখুঁত পরিপূরক ও আনুষঙ্গিক, যেগুলির সঙ্গে একত্রে এই আলোকরাশি সুষমভাবে মানবজাতির চান্দ্রতিথি, সৌরতিথি ও বর্ষের নিয়মিত ও যথাযথ চিহ্ন হিসাবেও কাজ করে। যদিও কৃষিকার্যের উদ্ভবের পরেই মানবজাতি চান্দ্রতিথি, সৌরতিথি ও বর্ষকে উপলব্ধি করতে ও এগুলির সম্মুখীন হতে শুরু করেছিল, কার্যত চান্দ্রতিথি, সৌরতিথি ও বর্ষগুলি, যা আজ মানবজাতি উপলব্ধি করে, সেগুলির উৎপন্ন হওয়া আরম্ভ হয়েছিল বহুপূর্বেই, ঈশ্বরের সমস্তকিছু সৃষ্টির চতুর্থ দিবসেই, এবং মানুষের পরিচিত বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত ঋতুর পরিবর্তনশীল চক্রও বহুপূর্বেই, ঈশ্বরের সকলকিছু সৃষ্টির চতুর্থ দিবসেই, আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বর-সৃষ্ট আলোকরাশি মানুষকে নিয়মিত, যথাযথভাবে ও সুস্পষ্টরূপে দিন ও রাতের মধ্যে পার্থক্য করতে, আর তিথি গণনা করতে, এবং স্পষ্টভাবে চান্দ্রপক্ষ ও বর্ষের হিসাব রাখতে সক্ষম করেছিল। (পূর্ণিমাতিথিটি ছিল এক মাসের সমাপ্তি, এবং এর থেকে মানুষ জানত যে আলোকরাশির প্রদীপ্তি এক নতুন চক্রের পুনরায় আবর্তন ঘটবেবে; শুক্লপক্ষে প্রথমা তিথিটি ছিল এক পক্ষকালের সমাপ্তি, যা মানুষকে জানাতো যে এক নতুনচান্দ্রপক্ষের সূচনা হতে চলেছে, যা থেকে সে কতগুলি তিথি নিয়ে একটি চান্দ্রপক্ষ হয়, কত চান্দ্রপক্ষে এক ঋতু এবং এক বছরে কতগুলি ঋতু হয়, তা অনুমান করতে পারতো, এবং এই সকলই প্রকাশিত হতো অত্যন্ত ধারাবাহিকতা-সহ।) তাই মানুষ খুব সহজেই আলোকরাশির আবর্তন দ্বারা চিহ্নিত চান্দ্রপক্ষ, তিথি ও বর্ষের হিসাব রাখতে পারতো। এই সময়ে থেকে, মানবজাতি এবং সকল বস্তু নিজেদের অজান্তেই রাত্রি ও দিবসের সুশৃঙ্খল পরিবর্তন তথা আলোকরাশির আবর্তনের দ্বারা উৎপন্ন ঋতু-পরিবর্তনের মধ্যে বসবাস করতো। এ-ই ছিল চতুর্থ দিবসে সৃষ্টিকর্তার আলোকরাশি সৃষ্টির তাৎপর্য। অনুরূপভাবে, সৃষ্টিকর্তার এই কার্যের লক্ষ্য ও তাৎপর্য তখনও তাঁর কর্তৃত্ব ও শক্তি থেকে অবিচ্ছেদ্য ছিল। এবং সেহেতু, ঈশ্বর-সৃষ্ট আলোক, এবং মানুষের কাছে সেগুলি খুব শীঘ্রই যে মূল্য বহন করে আনতে চলেছিল, তা ছিল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব-বলবৎ করার উদ্দেশ্যেই গৃহীত অপরও একটি সুদক্ষ পদক্ষেপ।

এই নতুন পৃথিবীতে, যেখানে তখনও মানবজাতির আবির্ভাব ঘটেনি, সেখানে সৃষ্টিকর্তা শীঘ্রই যে নতুন জীবন সৃষ্টি করতে চলেছিলেন তার জন্য তিনি প্রস্তুত করেছিলেন সন্ধ্যা ও সকাল, গগনমণ্ডল, স্থলভূমি ও জলরাশি, তৃণভূমি, উদ্ভিদরাশি ও বিবিধ বৃক্ষরাজি, এবং আলোকরাশি, ঋতুকাল, দিবস ও বর্ষ। সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও শক্তি ব্যক্ত হয়েছিল তাঁর সৃজিত প্রতিটি নতুন বস্তুর মধ্যে, এবং তাঁর বাক্যসমূহ উচ্চারিত হাওয়ামাত্র তা অর্জিত হয়েছিল, ন্যূনতম ব্যত্যয় ছাড়াই, সামান্যতম বিরতি ছাড়াই। এই সকল নতুন বস্তুর আবির্ভাব তথা উৎপন্ন হওয়া ছিল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও শক্তির প্রমাণ: তিনি তাঁর বাক্যসমূহের মতই উত্তম, এবং তাঁর বাক্যসমূহ অর্জিত হবে, আর তাঁর অর্জিত সকলকিছুই চিরস্থায়ী হয়। এই বাস্তব কখনোই বদলায়নি: যেমনটা অতীতে ছিল, তেমনটাই আজও রয়েছে, এবং ঠিক তেমনটাই রয়ে যাবে অনন্তকাল যাবৎ। শাস্ত্রের সেইসব বাক্যের দিকে আরও একবার দৃকপাত করলে, সেগুলি কি তোমাদের কাছে নতুন হিসাবে প্রতিভাত হয়? তোমরা কি নতুন কোনো বিষয়বস্তু চাক্ষুষ করলে, এবং নতুন কোনোকিছু আবিষ্কার করলে? এর কারণ হল সৃষ্টিকর্তার কর্মসমূহ তোমাদের অন্তঃকরণ আলোড়িত করেছে, এবং তাঁর কর্তৃত্ব ও শক্তি সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞানের দিশায় পরিচালিতকরেছে, এবং অবারিত করেছে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে তোমাদের উপলব্ধির দুয়ার, এবং তাঁর কর্ম ও কর্তৃত্ব এই বাক্যগুলিতে প্রাণসঞ্চার করেছে। তাই এই সকল বাক্যে মানুষ সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের এক বাস্তব, প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি চাক্ষুষ করেছে, প্রকৃতপক্ষেই সাক্ষী থেকেছে সৃষ্টিকর্তার আধিপত্যের, এবং চাক্ষুষ করেছে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও শক্তির অসাধারণত্ব।

সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও শক্তি একাদিক্রমে অলৌকিল ঘটনাবলী সংঘটন করে চলে; তিনি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেন, এবং মানুষ তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ-সঞ্জাত চমকপ্রদ কীর্তিসমূহের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকে। তাঁর বিস্ময়কর শক্তি একের পর এক পুলক এনে দেয়, আর মানুষের চোখ ঝলসে যায়, তারা আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ে, প্রশংসায় শিহরিত হয়, বিস্মিত ও উল্লসিত হয়; উপরন্তু, মানুষ দৃশ্যতই উতলা হয়েছে এবং তার অন্তরে উৎপন্ন হয়েছে শ্রদ্ধা, সম্মানবোধ ও আশ্লেষ। সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব এবং কর্মসমূহ মানুষের আত্মায় এক প্রবল তথা পরিশোধনমূলক প্রভাব ফেলে, উপরন্তু, সেগুলি মানুষের আত্মাকে তৃপ্ত করে। তাঁর প্রতিটি চিন্তা, তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ, এবং তাঁর কর্তৃত্বের প্রতিটি উদ্ঘাটনই হল সকলকিছুর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম শিল্পকর্ম, এবং তা হল সৃষ্ট মানবজাতির সুগভীর উপলব্ধি ও জ্ঞানের যোগ্যতম এক মহান উদ্যোগ। আমরা যখন সৃষ্টিকর্তার প্রতিটি বাক্য দ্বারা জাত প্রতিটি জীবকে গণনা করি, আমাদের আত্মা আকৃষ্ট হয় ঈশ্বরের শক্তির চমকপ্রদতার প্রতি, এবং আমরা সৃষ্টিকর্তার পদচিহ্ন অনুসরণ করে উপনীত হই পরবর্তী দিবসটিতে: ঈশ্বরের সকলকিছু সৃষ্টির পঞ্চম দিবসে।

আমরা যত শাস্ত্রটির অনুচ্ছেদগুলি একটি একটি করে পড়ে যাব, তত আমরা সৃষ্টিকর্তার আরও কীর্তিসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করবব।

পঞ্চম দিবসে, বিবিধ এবং বৈচিত্র্যময় গঠনের জীবন বিভিন্ন উপায়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শন করে

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর বললেন, জলরাশি পূর্ণ হোক নানা জাতির জলচর প্রাণীতে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশে উড়ে বেড়াক পক্ষীকুল। ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন বৃহদাকার সামুদ্রিক জীব এবং সকল শ্রেণীর জলচর প্রাণী। তারা দলে দলে জলধিবক্ষে বিচরণ করতে লাগল। তিনি সৃষ্টি করলেন সকল জাতির পক্ষীকুল। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” (আদিপুস্তক ১:২০-২১)। শাস্ত্র আমাদের স্পষ্টভাবে বলে যে, এই দিনটিতে, ঈশ্বর জলের প্রাণী এবং আকাশের পাখি তৈরি করেছিলেন, অর্থাৎ তিনি বিভিন্ন মাছ ও পাখি সৃষ্টি করেছিলেন এবং সেগুলির প্রতিটিকে তাদের নিজ নিজ প্রকার অনুসারে শ্রেণিবদ্ধ করেছিলেন। এইভাবে, পৃথিবী, আকাশ এবং জল ঈশ্বরের সৃষ্টি দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছিল …

ঈশ্বরের বাক্যগুলি কথিত হওয়ামাত্র, সৃষ্টিকর্তার বাক্যসমূহের মাঝেই, ভিন্ন ভিন্ন আকারের সজীব নবীন প্রাণসত্তা জেগে উঠল। ঠেলাঠেলি, লাফালাফি ও আনন্দে নৃত্য করতে করতে তারা এই পৃথিবীতে এল…। সকল প্রকার আকার ও আকৃতির মাছ জলের মধ্যে সাঁতরে বেড়ানো শুরু করল; সকল প্রকার শামুক-জাতীয় খোলসে আবৃত জলজপ্রাণ বালি ফুঁড়ে উঠে এল; আঁশযুক্ত, খোলসযুক্ত ও অমেরুদণ্ডী জীবসকল ক্ষুদ্র, দীর্ঘ কিংবা খর্ব—নানাবিধ আকার ধারণ করে সত্বর বেড়ে উঠল। তেমনই বিবিধ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালও দ্রুত বেড়ে উঠতে শুরু করল, বিবিধ প্রজাতির জলজ প্রাণসত্তার জীবনের গতিতে দোদুল্যমান হয়ে, তরঙ্গায়িত হয়ে, স্থির জলরাশিকে যেন আর্জি জানিয়ে বলে উঠল: “তাড়াতাড়ি করো! তোমার বন্ধুদের নিয়ে এসো! কারণ তুমি আর কখনোই একা থাকবে না!” ঈশ্বর-সৃষ্ট বিভিন্ন জীবের জলে আবির্ভূত হওয়ার মুহূর্ত থেকে, প্রতিটি নতুন জীব এতদিন ধরে নিশ্চল হয়ে থাকা জলরাশিতে প্রাণশক্তি নিয়ে এল, এবং সূচনা ঘটাল এক নতুন যুগের…। সেই মুহূর্ত থেকে, তারা একে অপররকে আলিঙ্গন করল, এবং পরস্পরকে সঙ্গ দিতে আরম্ভ করল, নিজেদের মধ্যে আর কোনো ব্যবধান রাখলো না। জলরাশির বিদ্যমান হয়েছিল স্বীয় অভ্যন্তরস্থ জীবসমূহের উদ্দেশ্যেই, জলরাশি তার আলিঙ্গনে আবদ্ধ প্রতিটি প্রাণীকে পরিপোষণ করেছিল, এবং জলের জন্যই, জলের পরিপোষণেরকারণেই, প্রতিটি প্রাণীর অস্তিত্বলাভ সম্ভব হয়য়। প্রত্যেকে প্রত্যকেকে প্রাণ প্রদান করেছিল, এবং, সেই সাথে, একইভাবে প্রত্যেকেই ঈশ্বরের সৃষ্টির চমকপ্রদতা ও মাহাত্ম্যের, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অনতিক্রম্য শক্তির সাক্ষ্য বহন করেছিল …

সমুদ্র যেমন আর নীরব রইল না, তেমনই আকাশও প্রাণপূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করল। ছোট-বড় একের পর এক পাখি মাটি থেকে আকাশেরপানে উড়ে গেল। সমুদ্রের জীবসমূহ থেকে পৃথক এই পাখিদের ছিল ডানা এবং তাদের অস্থূল ও সুতনু অবয়বগুলি আবৃত ছিল পালকে। তারা সদম্ভে এবং গর্বভরে ডানা ঝাপটিয়ে তাদের পালকের আবরণ এবং সৃষ্টিকর্তার দ্বারা প্রাপ্ত বিশেষ ক্রিয়াকলাপ ও দক্ষতাগুলি প্রদর্শন করেছিল। তারা স্বাধীনভাবে ক্রমশ ঊর্ধ্বে উড্ডীন হল, এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে, তৃণভূমি ও অরণ্যময় বিচরণ শুরু করল…। তারা ছিল বাতাসের প্রিয়, তারা ছিল সকল বস্তুর প্রিয়পাত্র। অচিরেই তারা আকাশ ও পৃথিবীর সংযোগস্বরূপ হয়ে উঠতে চলেছিল, শীঘ্রই তারা সকল বস্তুর বার্তাবাহক হয়ে উঠতে চলেছিল…। তারা গান গাইল, তারা সানন্দে উড্ডীয়মান হল, তারা একদা শূন্য এই পৃথিবীতে নিয়ে এল আনন্দ, উল্লাস ও প্রাণবন্ততা…। প্রদত্ত জীবনের জন্য তারা সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করতে তাদের সুস্পষ্ট, সুরেলা সঙ্গীতের ব্যবহার করেছিল, ব্যবহার করেছিল তাদের অন্তরের কথাগুলি। তারা ঈশ্বরের সৃষ্টির যথাযথতা তথা চমকপ্রদতা প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে উল্লসিত হয়ে নেচে উঠেছিল, সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তাদের প্রতি প্রদত্ত সেই বিশিষ্ট প্রাণসত্তার মাধ্যমে তাঁর কর্তৃত্বের সাক্ষ্য বহন করার উদ্দেশ্যে তারা তাদের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করল …

জলচর কিংবা খেচর, সৃষ্টিকর্তার আদেশবলে জীবনের বিভিন্ন অবয়বে এই বিবিধ জীবসকল বিদ্যমান ছিল, এবং সৃষ্টিকর্তার আজ্ঞায়, নিজ নিজ প্রজাতি অনুযায়ী একত্রিত হয়েছিল—এবং এই বিধান, এই নিয়ম ছিল কোনো জীবের দ্বারা অপরিবর্তনীয়। তারা কখনোই সৃষ্টিকর্তা দ্বারা নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করার স্পর্ধা দেখায়নি, তারা তা করতে সক্ষমও ছিল না। সৃষ্টিকর্তা দ্বারা নির্ধারিত হিসাব অনুসারেই তারা বেঁচেছিল এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করেছিল, এবং আজ অবধি চিরকাল তারা সৃষ্টিকর্তা দ্বারা তাদের জন্য নির্ধারিত জীবনধারা ও বিধানগুলি কঠোরভাবে পালন করে এসেছে, এবং সজ্ঞানে তাঁর অব্যক্ত আদেশ এবং তাদেরকে সৃষ্টিকর্তার দেওয়া স্বর্গীয় অনুশাসন তথা কর্মবিধিসমূহ মান্য করে চলে। তারা তাদের নিজ-নিজ বিশেষ উপায়ে সৃষ্টিকর্তার সাথে কথোপকথন করেছিল, সৃষ্টিকর্তার অর্থের মর্ম উপলব্ধি করতে পেরেছিল, এবং তাঁর আদেশসমূহ পালন করেছিল। কেউ কখনও সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের সীমা লঙ্ঘন করেনি, এবং সৃষ্টিকর্তার চিন্তার মাধ্যমেই তাদের উপর তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শাসন প্রযুক্ত হয়েছিল; কোনো বাক্য জারি করা হয়নি, তবু ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্ব সমস্তকিছু নিয়ন্ত্রণ করে গিয়েছিল নিঃশব্দে, যার মধ্যে কোনো ভাষাগত ক্রিয়াকলাপ ছিল না, এবং যা ছিল মানুষের চেয়ে পৃথক। এই বিশেষ উপায়ে তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ মানুষকে এক নতুন জ্ঞান লাভ করতে, এবং সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্বের এক নতুন ব্যাখ্যা তৈরী করতে বাধ্য করেছিল। এখানে, আমাকে বলতেই হবে যে এই নতুন দিনটিতে, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের প্রয়োগ আরও একবার সৃষ্টিকর্তার অনন্যতা প্রদর্শন করেছিল।

এরপর, দেখে নেওয়া যাক শাস্ত্রের এই অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যটি: “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” তোমাদের এর অর্থ কী বলে মনে হয়? এই বাক্যগুলির মধ্যে ঈশ্বরের আবেগসমূহ নিহিত রয়েছে। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট সকলকিছু, যা তাঁর বাক্যসমূহের কারণেই প্রাণ পেয়েছিল, অবিচল ছিল, এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে শুরু করেছিল, সেগুলি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এই সময়ে, ঈশ্বর কি তাঁর বাক্যসমূহ দ্বারা প্রস্তুত বিবিধ বস্তু, এবং তাঁর অর্জিত বিবিধ কর্ম নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন? এর উত্তর হল যে “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” তোমরা এখানে কী দেখো? “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।”—এই শব্দবন্ধনী কিসের প্রতিনিধিত্ব করে? এটি কী চিহ্নিত করে? এর অর্থ হল, ঈশ্বর যা পরিকল্পনা করেছিলেন ও নির্দেশ দিয়েছিলেন তা সাধন করার, তথা তিনি যা সম্পাদন করবেন বলে নির্ধারণ করেছিলেন সেই লক্ষ্যগুলি সম্পাদন করার, ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা তাঁর রয়েছে। প্রতিটি করণীয় কাজ সম্পন্ন করার পর ঈশ্বর কি অনুশোচনা অনুভব করেছিলেন? এর উত্তর, এখনও, “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” প্রকারান্তরে বললে, শুধু যে তাঁর কোনো অনুশোচনা বোধ হয়নি তা-ই নয়, বরং, পরিবর্তে, তিনি সন্তুষ্ট বোধ করেছিলেন। তঁর কোনো অনুশোচনা বোধ না করার অর্থ কী? এর অর্থ হল, ঈশ্বরের পরিকল্পনা নিখুঁত, তাঁর শক্তি ও প্রজ্ঞা নিখুঁত, এবং কেবলমাত্র তাঁর কর্তৃত্ব দ্বারাই এহেন যথাযথতা অর্জন করা যায়। মানুষ যখন কোনো করণীয় কাজ সম্পাদন করে, সে কি তখন ঈশ্বরের মত সেটিকে ভালো হিসাবে দেখতে পায়? মানুষ যা কিছু করে তাতে কি সে যথাযথতা অর্জন করতে পারে? মানুষ কি একেবারে এবং চিরতরে কোনোকিছু সম্পূর্ণ করতে পারে? মানুষ যেমন বলে, “কিছুই নিখুঁত নয়, শুধু অন্য কিছুর চেয়ে বেশি ভালো,” তেমনই, মানুষের করা কোনো কাজই যথাযথতা অর্জন করতে পারে না। ঈশ্বর যখন দেখলেন যে তিনি যা যা সম্পাদন ও অর্জন করেছিলেন সে সকলই উত্তম, ঈশ্বরের করা সমস্তকিছুই তাঁর বাক্য দ্বারা নির্ধারিত, অর্থাৎ, যখন “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার”, তখন তাঁর সৃষ্ট সকলকিছুই চিরতরে একটি স্থায়ী রূপ ধারণ করল, প্রকার অনুযায়ী সেগুলি শ্রেণিবদ্ধ করা হল, এবং নির্দিষ্ট একটা অবস্থান, উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা প্রদান করা হল। উপরন্তু, সকল বস্তুর মধ্যে তাদের যা ভূমিকা, এবং ঈশ্বরের সকলকিছুর ব্যবস্থাপনা চলাকালীন তাদের আবশ্যিক যে যাত্রা, তা ইতিমধ্যেই ঈশ্বর দ্বারা নিরূপিত করা হয়ে গিয়েছিল, এবং সেগুলি ছিল অপরিবর্তনীয়। এ-ই ছিল ঈশ্বরের দ্বারা সকল বস্তুর প্রতি প্রদত্ত স্বর্গীয় বিধান।

“ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার”, এই সহজ, অবমূল্যায়িত, প্রায়শই উপেক্ষিত বাক্যগুলিই হল সকল প্রাণীকে ঈশ্বর প্রদত্ত স্বর্গীয় বিধান এবং স্বর্গীয় ফরমান-সমন্বিত বাক্যসমূহ। এগুলি হল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের ভিন্নতর এক প্রতিরূপ, যা অধিকতর বাস্তবিক ও গভীরতর। তাঁর বাক্যসমূহের মধ্য দিয়ে, সৃষ্টিকর্তা যে শুধুমাত্র তিনি যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন তা অর্জনে, এবং তিনি যা সাধন করতে চেয়েছিলেন তা সাধনেই সক্ষম ছিলেন, তা-ই নয়, বরং তিনি তাঁর সৃষ্ট সকল বস্তুকেই স্বহস্তে নিয়ন্ত্রণ, এবং তাঁর কর্তৃত্বের অধীনে সৃষ্ট সকল বস্তুর উপর শাসন করতে পারতেন, এবং, উপরন্তু, সকলকিছুই ছিল নিয়মাবদ্ধ ও নিয়মিত। সকল বস্তুই তাঁর বাক্য দ্বারা বিস্তারলাভ করেছিল, বিদ্যমান হয়েছিল এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, উপরন্তু তাঁর কর্তৃত্ব দ্বারা সেগুলি তাঁর প্রকাশিত বিধানের মধ্যেই বিদ্যমান ছিল, কেউই অব্যাহতি পায়নি! এই বিধানের সূচনা হয়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন, “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার”, এবং, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে, এই বিধান বিদ্যমান, অব্যাহত, এবং কার্যকারী রইবে যেদিন সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং তা প্রত্যাহার করবেন ততদিন পর্যন্ত! ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্ব শুধুমাত্র তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টি করার ক্ষমতা তথা সকল বস্তুকে সত্তায় পরিণত হওয়ার জন্য আদেশ দেওয়ার মধ্যেই প্রকাশ পায়নি, তা প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর সকল বস্তুকে শাসন করার এবং সকল বস্তুর উপর সার্বভৌমত্ব কায়েম করার, এবং সকল বস্তুর মধ্যে জীবন তথা প্রাণশক্তি সঞ্চার করার ক্ষমতায়, এবং, উপরন্তু, তা প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর পরিকল্পনায় তিনি যাকিছু সৃষ্টি করতে চলেছিলেন সেই সকল বস্তুর অনন্তকালের জন্য, তথা চিরতরে, তাঁর দ্বারা নির্মিত এই বিশ্বচরাচরে, সম্পূর্ণ যথাযথ আকৃতিতে, এবং যথাযথ এক জীবন-কাঠামোয় ও যথাযথ ভূমিকায়, উৎপত্তি ঘটানোর, এবং সেগুলিকে বিদ্যমান রাখার ক্ষমতার মধ্যেও। সৃষ্টিকর্তার চিন্তাভাবনাগুলির কোনও সীমাবদ্ধতার অধীনে না থাকার এবং সেগুলির স্থান-কাল বা ভৌগলিক সীমাবদ্ধতায় না থাকার মধ্যেও তা প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর কর্তৃত্বের মতই, সৃষ্টিকর্তার অনন্য পরিচয়ও শাশ্বত ও চিরন্তনই রয়ে যাবে। তাঁর কর্তৃত্ব সততই তাঁর পরিচয়ের এক প্রতিনিধি ও চিহ্ন হয়ে থাকবে, এবং তাঁর কর্তৃত্ব চিরকালই তাঁর পরিচয়ের পাশাপাশি বিদ্যমান রয়ে যাবে!

ষষ্ঠ দিবসে, সৃষ্টিকর্তা কথা বলেন, এবং তাঁর মনের মধ্যে থাকা প্রতিটি জীব একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়

ইন্দ্রিয়াতীতভাবে, সৃষ্টিকর্তার সমস্ত সৃষ্টিকার্য পাঁচ দিন ধরে অব্যাহত ছিল, ঠিক তার পরপরই সৃষ্টিকর্তা তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির ষষ্ঠ দিবসকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এই দিবসটি ছিল আরও এক নতুন সূচনা, এবং আরও একটি অসাধারণ দিন। তাহলে, এই নতুন দিবসের প্রাক্কালে, কী ছিল সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা? কোন কোন নতুন জীবের উদ্ভব ঘটাবেন, তথা সৃষ্টি করবেন তিনি? শ্রবণ করো, এই হল সৃষ্টিকর্তার কণ্ঠস্বর …

“ঈশ্বর বললেন, পৃথিবী সকল জাতির প্রাণী—বন্য ও গৃহপালিত পশু এবং সরীসৃপ সহ সকল জীব উৎপন্ন করুক। তেমনই ঘটল। ঈশ্বর এইভাবে সকল জাতির বন্য ও গৃহপালিত পশু এবং বিভিন্ন জাতির ভূচর প্রাণী ও সরীসৃপ সহ সকল জীব সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।” (আদিপুস্তক ১:২৪-২৫)। কোন কোন জীব অন্তর্ভুক্ত? শাস্ত্র বলে: গবাদি পশু, এবং উরঙ্গম, এবং পৃথিবীর বিবিধ পশু। যার অর্থ হল এ-ই, যে, এই দিবসটিতে পৃথিবীতে শুধু যে সকল প্রকার জীব ছিল তা-ই নয়, তাদের সকলকে প্রকারভেদে শ্রেণিবদ্ধ করাও হয়েছিল, এবং অনুরূপভাবেই, “ঈশ্বর দেখলেন, সবই চমৎকার।”

আগের পাঁচটি দিনের মতোই, সৃষ্টিকর্তা একই সুরে কথন করেছিলেন, এবং যে সকল জীবিত প্রাণী তিনি সৃজন করতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্মের আদেশ দিয়েছিলেন, যাতে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ প্রকারানুসারে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। সৃষ্টিকর্তা যখন তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন, তখন তাঁর কোন বাক্যই বিফলে যায় না, এবং সেহেতু, ষষ্ঠ দিবসে, যে সকল জীবিত প্রাণী তিনি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তারা নির্দিষ্ট সময়ে আবির্ভূত হয়েছিল। সৃষ্টিকর্তা যেইমাত্র বললেন “পৃথিবী সকল সকল প্রকার জীব উৎপন্ন করুক।” তৎক্ষণাৎ পৃথিবী পরিপূর্ণ প্রাণে, এবং স্থলভূমে সহসা জাগ্রত হল জীবন্ত সকল প্রাণীর প্রাণবায়ু…। শ্যামল তৃণাবৃত প্রান্তরে, স্ব-স্ব পুচ্ছসমূহ ইতিউতি আন্দোলিত করে, একাদিক্রমে, আবির্ভাব ঘটল পরিপুষ্ট গাভীর, ক্ষীণস্বরে ডাক দিতে দিতে একত্রিত হল মেষপাল, এবং হ্রেষারত অশ্বসমূহ আরম্ভ করল দৌড়ানো…। মুহূর্তের মধ্যে, সুবিশাল বিস্তীর্ণ নীরব তৃণভূমি উদ্বেলিত হল প্রাণশক্তিতে…। এই নানাবিধ গবাদি পশুর চেহারা শান্ত তৃণভূমির বুকে ফুটে উঠল এক সুন্দর দৃশ্যপট হয়ে, এবং তারা নিয়ে এল অসীম জীবনীশক্তি…। তারা হয়ে উঠবে তৃণভূমির সঙ্গী, এবং তৃণভূমির প্রভু, উভয়ই হবে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল; সেহেতু তারা পালক এবং রক্ষকও হয়ে উঠবে এই ভূমির, যা হবে তাদের স্থায়ী আবাস, এবং যা তাদের সকল প্রয়োজনীয় বস্তু সরবরাহ করবে, হবে তাদের অস্তিত্বের চিরন্তন পরিপোষণের একটি উৎস …

যেদিন এই বিবিধ প্রাণীসম্পদ সৃষ্ট হয়, সেই একই দিনে ঈশ্বরের বাক্যসমূহ দ্বারা বিবিধ কীটপতঙ্গও একাদিক্রমে আবির্ভূত হল। যদিও তারা ছিল সকল জীবের মধ্যে ক্ষুদ্রতম, অথচ তাদের জীবনীশক্তি ছিল সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক সৃষ্টি, এবং তাদের আগমনে অত্যধিক বিলম্ব ঘটেনি…। কেউ কেউ তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পক্ষগুলি সঞ্চালন করল, কেউ বা ধীরে ধীরে বুকে ভর দিয়ে এল; কেউ কেউ এল লম্ফঝম্প-সহযোহে, কেউ আবার স্খলিতপদে; কেউ কেউ অগ্রসর হল ক্ষিপ্রপদে, কেউ বা আবার আবার দ্রুত পশ্চাদপসরণ করত; কেউ কেউ কেউ চলনশীল হত পার্শ্বাভিমুখে, অন্য কেউ কেউ আবার চলত লাফিয়ে লাফিয়ে…। সবাই ব্যস্ত ছিল নিজ-নিজ আলয় খুঁজে নিতে: কেউ আবাসস্থল খুঁজে নিল তৃণ ভেদ করে, কেউ কেউ মাটিতে গর্ত খনন করা শুরু করল, কেউ কেউ উড়ে গেল গাছগাছালির মাঝে, লুকিয়ে পড়ল অরণ্যানীর ভিতর…। আকারে ক্ষুদ্র হলেও, তারা ক্ষুধার যন্ত্রণা সহনে তারা ছিল অনিচ্ছুক, এবং স্ব-স্ব আলয় খুঁজে পাওয়ার পর, ধাবমান হল তারা তাদের খাদ্য তথা ক্ষুন্নিবৃত্তির অন্বেষণে। ঘাসের নরম তৃণ ফলক ভক্ষণের উদ্দেশ্যে কেউ কেউ উঠল তৃণ বেয়ে, কেউ কেউ একমুঠো ধুলো গলাধঃকরণ করে পরম পরিতৃপ্তি ও আনন্দ সহকারে খেতে লাগল (তাদের কাছে ধুলো পর্যন্ত সুস্বাদু খাদ্য); কেউ কেউ লুকিয়ে পড়ল অরণ্যের ভিতরে, তবে তারা বিশ্রাম নিতে থামেনি, কারণ তাদের সুস্বাদু খাদ্য হল ঘন সবুজ চিকণ পর্ণের আভ্যন্তরীণ প্রাণরস…। সম্পূর্ণরূপে পরিতৃপ্ত হওয়ার পরেও, কীটপতঙ্গেরা তাদের কাজ বন্ধ করেনি; উচ্চতায় ক্ষুদ্র হলেও, তাদের ছিল অসাধারণ কর্মশক্তি এবং সীমাহীন উদ্দীপনা, তাই, সকল জীবের মধ্যে, তারাই ছিল সর্বাধিক সক্রিয় ও পরিশ্রমী। তারা কখনোই অলস থাকেনি, এবং কখনও বিশ্রামে লিপ্ত হয়নি। ক্ষুন্নিবৃত্তির পরেও নিজ-নিজ ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে তারা কঠোর পরিশ্রম করেছিল, আগামী দিনগুলির জন্য, উদ্বর্তনের উদ্দেশ্যে, শশব্যস্ত ও ত্বরান্বিত ভাবে বিচরণশীল থেকেছিল…। নিজেদের উৎসাহিত করতে তারা মৃদুস্বরে করে নানান সুরে ও ছন্দে গান গেয়ে যেত। তৃণরাশি, বৃক্ষরাজি, এবং তিলার্ধ মৃত্তিক্কাখণ্ডমাত্রকে অবধি তারা করেছিল পুলকিত, যা প্রতিটি দিবস, প্রতিটি বৎসরকালকে করে তুলেছিল অনন্য…। তাদের নিজ নিজ ভাষা এবং নিজ নিজ উপায় সহযোগে, তারা স্থলভূমির সমস্ত জীবের কাছে পৌঁছে দিত তথ্য। নিজেদের বিশেষ জীবনধারা ব্যবহার করে, তারা করেছিল চিহ্নিত সকলকিছুকে, যেখানে তারা রেখে যেত তাদের উপস্থিতির লেশ…। মৃত্তিকা, তৃণ ও অরণ্যের সঙ্গে তাদের ছিল এক নিবিড় সম্পর্ক, এবং তারা মৃত্তিকায়, তৃণে, তথা অরণ্যে এনে দিয়েছিল কর্মশক্তি ও প্রাণশক্তি। সকল জীবের কাছে তারা বহন করে এনেছিল সৃষ্টিকর্তার উপদেশ তথা অভিবাদন …

সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টি তাঁর সৃজিত সকলকিছুর উপরই ন্যস্ত ছিল, এবং যেই মুহূর্তে তাঁর চক্ষুদ্বয় অরণ্যানী এবং পর্বতরাজির উপর স্থিত হল, তৎক্ষণাৎ তাঁর চিন্তার মোড় ঘুরে গেল। তাঁর বাক্যসমূহ উচ্চারিত হলে, ঘন অরণ্যে, এবং পর্বতের উপরে, আবির্ভূত হল এমন এক প্রকার জীব যাদের ইতিপূর্বে দেখা যায়নি: তারা হল ঈশ্বরের মুখ থেকে উচ্চারিত বন্য প্রাণীকুল। দীর্ঘসময় ধরে প্রত্যাশিত সেই বন্য প্রাণীকুল নিজ নিজ অনন্য মুখমণ্ডল-বিশিষ্ট তারা প্রত্যেকে স্ব-স্ব মস্তক ও পুচ্ছ আন্দোলিত করল। তাদের কারো কারো ছিল রোমশ আস্তরণ, কেউ বা ছিল সাঁজোয়াযুক্ত, কেউ কেউ করত শ্বদন্ত প্রদর্শন, কারো কারো ছিল বিকশিত দন্ত, কারো কারো গ্রীবা ছিল দীর্ঘ, কেউ বা ছিল ক্ষুদ্রাকার পুচ্ছ-বিশিষ্ট, কারো কারো দৃষ্টিতে ছিল হিংস্রতা, আবার কারো কারো দৃষ্টি ছিল ভীরু, কেউ কেউ ছিল অবনত মস্তকে তৃণ-ভক্ষণে রত, কারো কারো মুখে লেগেছিল রক্তের দাগ, কেউ কেউ দুইপায়ে লম্ফ-ঝম্প করছিল, কেউ কেউ বা চারটি পায়ের চারটি ক্ষুরে ভর করে হয়েছিল ধাবমান, কেউ কেউ গাছের উঁচুতে বসে তাকিয়ে ছিল দূরে, কেউ কেউ আবার অরণ্যে শয়নরতভাবে অপেক্ষমাণ ছিল, কেউ কেউ ছিল বিশ্রামের উদ্দেশ্যে গুহার অন্বেষণে, কেউ কেউ ছিল সমতলভূমিতে ক্রীড়াময় ও উচ্ছল, কেউ কেউ আবার করছিল শিকারের সন্ধানে অরণ্যময় বিচরণ…; কেউ কেউ করছিল গর্জন, কেউ বা আর্তনাদ, কেউ কেউ করছিল তীক্ষ্ণ চিৎকার, কেউ করছিল নির্গত ক্রন্দনসম আওয়াজ…; কারো কণ্ঠস্বর ছিল চড়া, আর কারো ছিল মন্দ্র, কেউ কেউ ছিল উচ্চকণ্ঠ, কারো কারো কণ্ঠ ছিল স্পষ্ট এবং সুরেলা…; কেউ কেউ ছিল ভয়ালদর্শন, কেউ কেউ সুন্দর, কেউ বা ঘৃণা-উদ্রেককারী, কেউ কেউ ছিল মনোহর, কেউ বা ভয়ঙ্কর, কেউ বা ছিল চমকপ্রদভাবে সরল…। একে একে তারা সকলে বেরিয়ে এল। দেখো তারা কতটা প্রচণ্ড এবং পরাক্রমশালী, স্বাধীনচেতা, একে অপরের প্রতি অলসভাবে উদাসীন, পরস্পরের দিকে প্রতি ভ্রুক্ষেপমাত্র করতে চায় না…। সৃষ্টিকর্তার তাদের উপর ন্যস্ত বিশেষ জীবন, এবং তাদের নিজ নিজ বন্যতা এবং পাশবিকতা বহন করে তাদের প্রত্যেকের আবির্ভাব ঘটেছিল অরণ্যে ও পাহাড়ে। তারা ছিল সকলের প্রতি ঘৃণাপূর্ণ, সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাচারী—তা সত্ত্বেও, তারাই ছিল পাহাড় ও অরণ্যের প্রকৃত প্রভু। যে মুহূর্ত থেকে তাদের চেহারা সৃষ্টিকর্তার দ্বারা আদিষ্ট হয়েছিল, তারা অরণ্য এবং পাহাড়ের উপর “অধিকার ঘোষণা করেছিল”, কারণ সৃষ্টিকর্তা ইতিমধ্যেই তাদের সীমানা নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, এবং তাদের অস্তিত্বের প্রসার নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কেবল তারাই ছিল পাহাড় ও অরণ্যের প্রকৃত প্রভু, এবং সেই কারণেই, তারা এত বন্য, এত ঘৃণাপূর্ণ। তাদের “বন্য প্রাণী” বলা হত কেবলমাত্র এই কারণেই যে, প্রাণীকুলে তারাই ছিল প্রকৃতপক্ষে বন্য, পাশবিক এবং অদম্য। তাদের আয়ত্তে আনা যায়নি, তাই তাদের লালন-পালন করা যায়নি, এবং তারা মানবজাতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেনি, অথবা মানবজাতির হয়ে শ্রম দিতে পারেনি। যেহেতু তাদের পালন করা যায়নি, যেহেতু তারা মানবজাতির জন্য কাজ করতে পারেনি, সেহেতু তাদের মানবজাতির থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল, এবং মানুষও তাদের কাছে যেতে পারেনি। ফলস্বরূপ, যেহেতু তারা মানবজাতি থেকে দূরে বাস করত, এবং মানুষ তাদের কাছে যেতে পারেনি, সেহেতু তারা পালন করতে সক্ষম হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব: অর্থাৎ, পর্বত এবং অরণ্যের প্রহরাদান। তাদের বন্যতা পর্বতরাজি এবং অরণ্যানীকে রক্ষা করেছিল, এবং তা ছিল তাদের অস্তিত্বরক্ষা ও বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ সুরক্ষা ও নিশ্চয়তাস্বরূপ। আবার একই সাথে, তাদের এই বন্যতা সব কিছুর মধ্যে বজায় রেখেছিল এবং সুনিশ্চিত করেছিল ভারসাম্য। তাদের আগমন পর্বতে এবং অরণ্যে সমর্থন এবং দৃঢ়বদ্ধতা নিয়ে আসে; তাদের আগমনে স্তব্ধ ও শূন্য পর্বতে ও বনাঞ্চলে সীমাহীন প্রাণশক্তি ও প্রাণবন্ততা প্রসারিত হয়েছিল। সেই মুহূর্ত থেকে, পর্বত ও অরণ্যই হয়ে ওঠে তাদের স্থায়ী বাসস্থান, এবং আর কখনোই তারা আশ্রয়হীন হবে না, কারণ পর্বতের এবং অরণ্যের আবির্ভাব হয়েছিল এবং সেগুলি বিদ্যমান ছিল শুধু তাদের জন্যই; বন্য প্রাণীরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং সেগুলি প্রহরা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য করবে। তাই বন্য প্রাণীরাও তাদের ভূখণ্ড ধরে রাখার জন্য কঠোরভাবে সৃষ্টিকর্তার উপদেশ মেনে চলবে, এবং সৃষ্টিকর্তার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সকল বস্তুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তাদের পশুসুলভ প্রকৃতির ব্যবহার অব্যাহত রাখবে, এবং সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ঘোষণা করবে!

সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধীনে, সমস্ত জিনিসই নিখুঁত

পক্ষী ও মৎস্যের ন্যায় জঙ্গম তথা বৃক্ষ ও পুষ্পের ন্যায় স্থাবর উভয় প্রকার সত্ত্বাই, এবং ষষ্ঠ দিবসে সৃষ্ট গবাদি পশু, কীটপতঙ্গ এবং বন্যপ্রাণী সহ সকল জীবই ঈশ্বরসৃষ্ট—ঈশ্বরের চোখে এরা সকলেই ভালো ছিল, এবং উপরন্তু, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, এই সকল জীবই, তাঁর পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে, পরিপূর্ণতার চরম উৎকর্ষতা অর্জন করেছিল, এবং তারা যেসকল মান অর্জন করুক বলে ঈশ্বর চেয়েছিলেন, তারা তা অর্জন করতে পেরেছিল। সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী যেভাবে কাজটি করতে চেয়েছিলেন সেইভাবে ধাপে ধাপে কাজটি করেছিলেন। যে বস্তুসকল তিনি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, সেগুলি একাদিক্রমে আবির্ভূত হয়েছিল, এবং প্রতিটির আবির্ভাবই ছিল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের প্রতিফলন, তাঁর কর্তৃত্বের স্ফটিককরণ; এই স্ফটিককরণের কারণে, সকল জীব সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ এবং সংস্থানসমূহের কারণে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ না থেকে পারে না। ঈশ্বরের অলৌকিক কাজগুলি উদ্ভাসিত হওয়ামাত্রই, বিশ্বচরাচর ক্রমান্বয়ে, ঈশ্বর সৃষ্ট সকল বস্তুর সহ, স্ফীত হয়ে উঠেছিল, এবং তা এক চরম বিশৃঙ্খলা ও অন্ধকার থেকে স্বচ্ছতা ও উজ্জ্বলতায়, মৃত্যুসম স্তব্ধতা থেকে সজীবতায়, এবং সীমাহীন প্রাণশক্তির পরিপূর্ণতায় রূপান্তরিতে হয়েছিল। মহান থেকে ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র থেকে আণুবীক্ষণিক—সকল সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে এমন কিছুই ছিল না যা সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দ্বারা সৃজিত হয়নি, এবং প্রতিটি জীবের অস্তিত্বেরই একটি অনন্য এবং অন্তর্নিহিত প্রয়োজনীয়তা এবং মূল্য ছিল। আকৃতি ও গঠনের তারতম্য নির্বিশেষে, তাদের সৃষ্টি হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বে থাকার জন্যই। কখনও কখনও মানুষ কোনো কুৎসিত-দর্শন কীটকে দেখে বলবে, “পোকাটা কি ভয়ঙ্কর, এমন কুৎসিত জিনিস ঈশ্বরের দ্বারা তৈরি হতেই পারে না—তিনি এত কদর্য কোনোকিছু তৈরি করতেই পারেন না।” কি অজ্ঞ এই দৃষ্টিভঙ্গী! বরং তাদের বলা উচিত ছিল, “পোকাটি অত্যন্ত কুৎসিত চেহারার হলেও, এটি ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট, আর তাই এর নিশ্চয়ই নিজস্ব অনন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।” ঈশ্বরের ভাবনায়, তিনি তাঁর সৃষ্ট বিভিন্ন সজীব বস্তুকে সকল প্রকার অবয়ব, এবং সমস্ত ধরনের কার্যকারিতা ও উপযোগিতা প্রদান করতে চেয়েছিলেন, এবং সেহেতু, ঈশ্বরসৃষ্ট বস্তুগুলির কোনোটিই পরস্পর-সদৃশ নয়। বাহ্যিক চেহারা থেকে শুরু করে তাদের তাদের অভ্যন্তরীণ গঠন, তাদের জীবনযাপনের অভ্যাস থেকে শুরু করে তাদের দখলকৃত অবস্থান—সকলই পৃথক। গাভীর অবয়ব গাভীর ন্যায়, গর্ধভের অবয়ব গর্ধভের ন্যায়, মৃগের অবয়ব মৃগ-সদৃশ, এবং হস্তীর অবয়ব হস্তীসম। তুমি কি বলতে পার যে কোনটি দেখতে সবচেয়ে ভালো এবং কোনটি সবচেয়ে কুৎসিত? তুমি কি বলতে পার যে কোনটি সবচেয়ে দরকারি, এবং কোনটির অস্তিত্বের প্রয়োজন সবচেয়ে কম? কিছু কিছু মানুষ হাতিকে যেমন দেখতে, তা পছন্দ করে, অথচ ক্ষেতে চাষ করার জন্য কিন্তু কেউ হাতির ব্যবহার করে না; কিছু কিছু মানুষের পছন্দ সিংহ এবং বাঘের চেহারা, কারণ এদের চেহারা সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিত্তাকর্ষক, কিন্তু তুমি কি তাদের পোষা জন্তু হিসাবে রাখতে পার? সংক্ষেপে, যখন অগণিত সৃষ্টির কথা ওঠে, তখন মানুষের উচিত সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের প্রতি বিনম্রভাবে সমর্পণ করা, অর্থাৎ, সমস্ত কিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তার দ্বারা নির্ধারিত আদেশের প্রতি বিনম্রতা-সহযোগে সমপর্ণ করা; এটাই হল প্রাজ্ঞতম মনোভাব। সৃষ্টিকর্তার মূল অভিপ্রায়গুলির অনুসন্ধান এবং সেগুলির প্রতি আনুগত্যের মনোভাবই হল সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে প্রকৃত-অর্থে এবং সুনিশ্চিতভাবে গ্রহণ করা। এটি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে উত্তম, তাহলে মনুষ্যকর্তৃক ছিদ্রান্বেষণের হেতু কী?

এইভাবে, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধীন সকল বস্তুকে সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের নিমিত্ত এক নব ঐকতান গাইতে হবে, আরম্ভ করতে হবে নতুন দিবসে তাঁর কার্যের এক গৌরবান্বিত মুখবন্ধ, এবং, এই মুহূর্তে, সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরিচালনামূলক কার্যের এক নতুন পৃষ্ঠার উন্মোচনও করবেন। সৃষ্টিকর্তার নিযুক্ত বিধান অনুযায়ী, বসন্তে নবীন অঙ্কুরোদগম, গ্রীষ্মে পরিপক্কতা, শরতে ফসল আহরণ এবং শীতে তা সংরক্ষণের নিয়ম অনুসারে, সকল বস্তু সৃষ্টিকর্তার পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হবে, এবং তারা নিজ নিজ নতুন দিন, নবসূচনা ও নবীন জীবনধারাকে স্বাগত জানাবে। তারা বেঁচে থাকবে এবং সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধীনে প্রতিটি দিবসকে স্বাগত জানাতে অনন্তকাল ধরে ধারাবাহিকভাবে পুনরুৎপাদন করে যাবে …

সৃষ্ট এবং অসৃষ্ট কোনো জীবই সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের প্রতিস্থাপন করতে পারে না

ঈশ্বরের শক্তি তাঁর সকল বস্তু সৃষ্টির লগ্ন থেকেই প্রতিভাত এবং প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল, কারণ ঈশ্বর সকল বস্তু সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে বাক্যের ব্যবহার করেছিলেন। তিনি কী পন্থায় এবং কোন উদ্দেশ্যে সেসকল সৃষ্টি করেছিলেন তা নির্বিশেষে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের কারণেই সকল বস্তু সৃষ্টি হয়েছে এবং অটল ও বিদ্যমান রয়েছে; এ হল সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্ব। পৃথিবীতে মানবজাতির আবির্ভাবের পূর্বে, মানবজাতির জন্য সমস্ত কিছু প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা তাঁর ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন, এবং মানবজাতির জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ-সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর অনন্য পন্থাগুলি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি যা কিছু করেছিলেন তা সবই ছিল প্রস্তুতিগ্রহণ সেই মানবজাতির উদ্দেশ্যে, যে মানবজাতি অচিরের তাঁর প্রদত্ত প্রাণবায়ু গ্রহণ করতে চলেছিল। অর্থাৎ, মানবজাতির সৃষ্টির পূর্ববর্তী সময়ে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব মানবজাতি ব্যতিরেকে অপর সকল জীবের মধ্যে, আকাশ, আলোক, জলরাশি এবং স্থলভূমির মত মহান বস্তুসকল এবং পশু, পাখি এমনকি সকল প্রকার কীটপতঙ্গ, অণুজীব আর খালি চোখে দৃশ্যমান নয় এমনতর নানাবিধ ব্যাকটেরিয়ার মধ্যেও প্রতিভাত হয়েছিল। প্রতিটির মধ্যে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছিল সৃষ্টিকর্তার দ্বারা, প্রতিটির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছিল সৃষ্টিকর্তার বাক্যসমূহের কারণে, এবং তাঁর বাক্যসমূহের কারণেই প্রত্যেকে সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের অধীনে থেকেছিল। যদিও তারা সৃষ্টিকর্তার প্রাণবায়ু গ্রহণ করেনি, তবুও তারা তাদের ভিন্ন ভিন্ন আকার ও আকৃতির মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তাদেরকে প্রদত্ত জীবনীশক্তি প্রকাশ করেছিল; যদিও তারা সৃষ্টিকর্তার মানবজাতিকে দেওয়া বাচনক্ষমতা লাভ করেনি, তাদের প্রত্যেকে পেয়েছিল নিজেদের জীবন ব্যক্ত করার উপায় যা সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রদান করেছিলেন, এবং যা ছিল মানুষের ভাষা থেকে পৃথক। সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব যে শুধুমাত্র আপাতদৃষ্টিতে নিশ্চল বস্তুপদার্থসমূহে প্রাণশক্তির সঞ্চার ঘটিয়ে সেগুলির চিরস্থায়িত্ব সুনিশ্চিত করে তা-ই নয়, বরং তিনি প্রতিটি জীবকে পুনরুৎপাদন ও সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবৃত্তিও দেন, যাতে তারা কখনোই অবলুপ্ত না হয়ে যায়, এবং যাতে তারা সৃষ্টিকর্তার দ্বারা তাদের প্রতি প্রদত্ত উদ্বর্তনের বিধান ও নীতিসমূহ একাদিক্রমে আগত প্রজন্মগুলিকে দিয়ে যেতে পারে। সৃষ্টিকর্তা যে পন্থায় তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন তা কোনো উদার অথবা সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিকোণকে কঠোরভাবে মেনে চলে না, এবং তা নির্দিষ্ট কোনো আকারে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কর্মকাণ্ডের আজ্ঞা করতে এবং সকল বস্তুর জীবন ও মৃত্যুর উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করতে সক্ষম, এবং, উপরন্তু তিনি এমন উপায়ে সকল বস্তুকে চালিত করতে সক্ষম যাতে সেগুলি তাঁর সেবা করে; তিনি পর্বত, নদী ও হ্রদের সকল ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করতে পারেন, এবং তাদের অভ্যন্তরীণ সকল বস্তুর শাসন করেন, এবং, এছাড়াও, সকলের প্রয়োজনীয় সকল বস্তুর সরবরাহ করতে তিনি সক্ষম। এ হল মানবজাতি ছাড়াও সকল বস্তুর মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্বের প্রকাশ। এহেন প্রকাশ শুধু এক জীবনকালের জন্যই নয়; এই প্রকাশ নিরবিচ্ছিন্ন, অবিরত, এবং কোনো মানুষ অথবা বস্তু এর পরিবর্তন কিংবা ক্ষতিসাধন করতে পারে না, কোনো ব্যক্তি বা বস্তু এর সাথে কোনো ব্যত্যয় ঘটাতে পারে না—কারণ কেউই সৃষ্টিকর্তার পরিচয়কে বদলাতে পারে না, এবং সেহেতু, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব সৃষ্ট কোনো সত্তা দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না; তা অ-সৃষ্ট কোনো সত্তার অর্জনেরও অতীত। উদাহরণ হিসাবে, ঈশ্বরের বার্তাবহ এবং দূতদের ধরা যাক। ঈশ্বরের শক্তি তাদের অধিকৃত নয়, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধিকার থাকা তো দূরের কথা, এবং ঈশ্বরের শক্তি ও কর্তৃত্ব তাদের অধিকৃত না থাকার কারণ হল সৃষ্টিকর্তার সারসত্য তাদের অধিকৃত নয়। ঈশ্বরের বার্তাবহ এবং দূতদের মত অ-সৃষ্ট সত্তারা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে কিছু কিছু কাজ করতে পারলেও, তারা ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তাদের কাছে হয়ত এমন কিছু শক্তি থাকে যা মানুষের অধিকৃত নয়, কিন্তু ঈশ্বরের কর্তৃত্ব তাদেরও অনধিকৃত, সকল বস্তুর সৃষ্টি করতে, সকল বস্তুকে আজ্ঞাবদ্ধ করতে, এবং সকল বস্তুর উপর সার্বভোমত্ব ধারণের যে কর্তৃত্ব ঈশ্বরের, তার অধিকারী তারা নয়। ঈশ্বরের অনন্যতা যেমন কোনো অ-সৃষ্ট সত্তা দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না, অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং শক্তিও কোনো অ-সৃষ্ট সত্তা দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে না। বাইবেলে, তুমি কি ঈশ্বরের এমন কোনো বার্তাবহের বিষয়ে পড়েছ, যে সকল বস্তুর সৃষ্টি করেছে? ঈশ্বর কেন সকল বস্তু সৃষ্টি করতে তাঁর বার্তাবহ এবং দূতদের প্রেরণ করেননি? এর কারণ হল যে, তারা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধিকারী নয়, এবং সেহেতু তারা ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করার ক্ষমতারও অধিকারী নয়। সকল জীবের মতই, তারা সকলেই সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের তথা কর্তৃত্বের অধীনস্থ রয়েছে, এবং অনুরূপভাবেই, সৃষ্টিকর্তাই হলেন তাদেরও ঈশ্বর এবং তাদেরও উপর সার্বভৌম। তাদের প্রত্যেকের মধ্যে—অভিজাতই হোক অথবা অনভিজাত, বৃহৎ শক্তিধরই হোক অথবা নগণ্য ক্ষমতাসম্পন্ন—কেউই সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে অতিক্রম করে যেতে পারে না, এবং সেহেতু, তাদের মধ্যে কেউই সৃষ্টিকর্তার পরিচয় বদলাতে পারে না। তাদের কখনোই ঈশ্বর হিসাবে অভিহিত করা হবে না, এবং তারা কখনোই ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারবে না। এগুলি হল অপরিবর্তনীয় সত্য এবং বাস্তবিক তথ্য!

উপরের আলোচনার মধ্য দিয়ে, আমরা কি নিচের কথাগুলি নিশ্চিত করে বলতে পারি: সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা এবং অধীশ্বর, যিনি অনন্য কর্তৃত্ব এবং অনন্য শক্তির অধিকারী, শুধুমাত্র তাঁকেই স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর বলা যায়? এই মুহূর্তে, তোমাদের সকলে অনুভব করতে পার যে এহেন প্রশ্নটি অত্যন্ত গভীর। তোমরা, এই মুহূর্তে, তা উপলব্ধিতে অক্ষম, এবং অন্তরস্থ সারসত্য হৃদয়াঙ্গমে অপারগ, এবং সেহেতু, আপাতত তোমরা অনুভব করছ যে এর উত্তর দেওয়াটা কঠিন। সেক্ষেত্রে, আমি আমার সহকারিতা অব্যাহত রাখব। এরপর, আমি কেবলমাত্র ঈশ্বরের অধিকৃত কর্তৃত্বের ও শক্তির বহুবিধ দিকের প্রকৃত কাজগুলি চাক্ষুষ করার অনুমতি দেবো, এবং এইভাবে আমি তোমাদের ঈশ্বরের অনন্যতা এবং ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্বের অর্থ কী তা উপলব্ধি করার, কদর করার, এবং জানার অনুমতি দেবো।

২. মানুষের সঙ্গে এক সন্ধিচুক্তি স্থাপন করতে ঈশ্বর তাঁর বাক্যরাজির ব্যবহার করলেন

আদিপুস্তক ৯:১১-১৩ তাদের সঙ্গে আমি এক সন্ধি চুক্তি স্থাপন করব। তার শর্ত হবে এই যে, আর কখনো জলপ্লাবনে সমস্ত প্রাণী বিনষ্ট হবে না এবং আর কখনো পৃথিবীবিধ্বংসী প্লাবন হবে না। ঈশ্বর আরও বললেন, তোমাদের ও তোমাদের সঙ্গে যত প্রাণী আছে তাদের সঙ্গে পুরুষানুক্রমে স্থায়ী যে সন্ধি চুক্তি আমি স্থাপন করলাম, তার নিদর্শন হবে এই: আকাশের গায়ে আমি আমার ধনু স্থাপন করব, আর তা-ই হবে পৃথিবীর সঙ্গে স্থাপিত আমার সন্ধি চুক্তির প্রতীক।

তাঁর সকলকিছু সৃজন করার পর, মেঘধনু সন্ধিচুক্তির মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব আরেকবার প্রতিপন্ন ও প্রদর্শিত হল

সকল প্রাণীর মাঝে নিরন্তর সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রদর্শিত ও প্রযুক্ত হয়, এবং তিনি যে কেবল সকলকিছুর ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করেন তা নয়, উপরন্তু তিনি পরিচালনা করেন মানবজাতিকে, সেই বিশিষ্ট প্রাণীকে যাদের তিনি তাঁর নিজের হাতে সৃষ্টি করেছিলেন এবং যা এক স্বতন্ত্র জীবন-নির্মিতির অধিকারী এবং এক ভিন্ন জীবনরূপে বিদ্যমান। সকলকিছুকে সৃজন করার পর, তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে অভিব্যক্ত করতে ঈশ্বর বিরত হননি; তাঁর কাছে, যে কর্তৃত্ব নিয়ে তিনি সমস্ত কিছুর উপর এবং সমগ্র মানবজাতির নিয়তির উপর সার্বভৌমত্বকে ধারণ করেন তার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল শুধুমাত্র তখনই যে মুহূর্তে মানবজাতি প্রকৃতই তাঁর হস্ত থেকে জন্ম নিয়েছিল। তিনি মানবজাতিকে পরিচালনা করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন; মানবজাতিকে তিনি উদ্ধার করতে এবং প্রকৃত অর্থে অর্জন করতে চেয়েছিলেন, এমন এক মানবজাতিকে অর্জন করতে চেয়েছিলেন যা সকল বস্তুকে শাসন করতে পারবে; তিনি চেয়েছিলেন এরকম এক মানবজাতি তাঁর কর্তৃত্বের অধীনে জীবনযাপন করুক, এবং তাঁর কর্তৃত্বকে জানুক ও মান্য করুক। তাই, ঈশ্বর তাঁর বাক্যের সাহায্যে তাঁর কর্তৃত্বকে মানুষের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে আরম্ভ করলেন, এবং তাঁর বাক্যকে কার্যায়িত করতে তাঁর কর্তৃত্বের ব্যবহার শুরু করলেন। স্বভাবতই, এই প্রক্রিয়া চলাকালীন ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সর্বত্রই প্রদর্শিত হয়েছিল; আমি কেবল কিছু সুনির্দিষ্ট ও সুবিদিত দৃষ্টান্তকে বেছে নিয়েছি যেগুলি থেকে তোমরা ঈশ্বরের অনন্যতা এবং তাঁর অনন্য কর্তৃত্বকে বুঝে উঠতে ও জানতে পারো।

আদিপুস্তকের ৯:১১-১৩ স্তবকে বর্ণিত অনুচ্ছেদ এবং ঈশ্বরের বিশ্বসৃষ্টির নথি সমন্বিত পূর্ববর্ণিত অনুচ্ছেদগুলির মধ্যে একটি সাদৃশ্য আছে, আবার তাদের মধ্যে একটি পার্থক্যও রয়েছে। সাদৃশ্যটি কী? সাদৃশ্যটি নিহিত রয়েছে অভীষ্ট কার্য সিদ্ধ করার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা বাক্যের ব্যবহারের মধ্যে, এবং পার্থক্যটি হল এই যে এখানে উদ্ধৃত অনুচ্ছেদগুলি মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের এক কথোপকথনকে তুলে ধরে, যেখানে মানুষের সাথে তিনি এক সন্ধিচুক্তি স্থাপন করেছিলেন এবং ওই সন্ধিচুক্তির অন্তর্ধৃত বিষয়বস্তুগুলির ব্যাপারে মানুষকে অবহিত করেছিলেন। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের এই প্রয়োগ অর্জিত হয়েছিল মানুষের সাথে তাঁর সংলাপ চলাকালীন, অর্থাৎ, মানবজাতি সৃষ্টির পূর্বেই, যে প্রাণীদের তিনি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ছিল তাদের প্রতি জারিকৃত তাঁর আজ্ঞা ও নির্দেশ। কিন্তু এখন ঈশ্বরের বাক্যগুলি শ্রবণ করার মতো কেউ ছিল, আর তাই তাঁর বাক্যনিচয় একই সাথে মানুষের সাথে এক কথোপকথন এবং মানুষের উদ্দেশ্যে এক উপদেশ ও সতর্কীকরণও বটে। তদুপরি, ঈশ্বরের বাক্যগুলি তাঁর কর্তৃত্ববাহী সেই সব আদেশ যা সকল বস্তুর উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছিল।

এই অনুচ্ছেদে ঈশ্বরের কোন কার্যের কথা লিপিবদ্ধ আছে? এক জলপ্লাবনের দ্বারা পৃথিবীকে ধ্বংস করার পর ঈশ্বর মানুষের সাথে যে সন্ধিচুক্তি স্থাপন করেছিলেন এই অনুচ্ছেদে তারই বিবরণ রয়েছে; এর মাধ্যমে মানুষকে জানানো হয়েছে যে ঈশ্বর ধরিত্রীর উপর আর কখনো এজাতীয় ধ্বংসলীলা ডেকে আনবেন না, এবং, অন্তিমে, তিনি এক প্রতীকী চিহ্ন সৃজন করেছেন। প্রতীকটি কী ছিল? শাস্ত্রে বলা হয়েছে: “আকাশের গায়ে আমি আমার ধনু স্থাপন করব, আর তা-ই হবে পৃথিবীর সঙ্গে স্থাপিত আমার সন্ধি চুক্তির প্রতীক।” এগুলিই মানবজাতির উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তার উচ্চারিত বাক্যের অবিকৃত ভাষ্যরূপ। তিনি এই বাক্য উচ্চারণের সাথে সাথেই, মানুষের চোখের সম্মুখে এক মেঘধনুর উদয় ঘটলো, এবং আজ অবধি তা সেখানেই রয়ে গেছে। প্রত্যেকেই এধরনের এক মেঘধনু দর্শন করেছে, আর তুমি কি জানতে পারো তা কেমন করে আবির্ভূত হয়? বিজ্ঞান তা প্রমাণ করতে, বা তার উৎস নির্দেশ করতে, বা অবস্থান নিরূপণ করতে, অসমর্থ। তার কারণ, এই মেঘধনু সৃষ্টিকর্তা ও মানুষের মধ্যে স্থাপিত সন্ধিচুক্তির এক প্রতীক; এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তির প্রয়োজন নেই, এটি মানুষের দ্বারা নির্মিত হয় নি, এবং মানুষ এর পরিবর্তন ঘটাতেও সক্ষম নয়। এটি হল সৃষ্টিকর্তার বাক্যোচ্চারণের পর তাঁর কর্তৃত্বের এক নিরবচ্ছিন্নতা। মানুষের সঙ্গে তাঁর সন্ধিচুক্তি ও তাঁর অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সৃষ্টিকর্তা তাঁর নিজস্ব বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন, আর তাই তাঁর স্থাপিত সন্ধিচুক্তির এক প্রতীক হিসাবে সৃষ্টিকর্তার দ্বারা মেঘধনুর ব্যবহার হল এক ঐশ্বরিক অধ্যাদেশ এবং এমন এক বিধান যা চিরকাল অপরিবর্তিত রয়ে যাবে, সৃষ্টিকর্তা ও সৃজিত মানবজাতি উভয়ের পক্ষ থেকেই। বলতেই হবে যে, এই অপরিবর্তনীয় বিধান হল সৃষ্টিকর্তার দ্বারা সকলকিছুর সৃজনের পরবর্তী কালে তাঁর কর্তৃত্বের আরেকটি অকৃত্রিম বহিঃপ্রকাশ, এবং এও বলতেই হবে যে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সীমাহীন; প্রতীক হিসাবে তাঁর মেঘধনুর ব্যবহার সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের এক ধারাবাহিকতা ও সম্প্রসারণ। এটি ছিল তাঁর বাক্যের ব্যবহারের মাধ্যমে ঈশ্বরের দ্বারা সম্পাদিত আরেকটি কর্ম, এবং বাক্যের মাধ্যমে ঈশ্বর মানুষের সাথে যে সন্ধিচুক্তি স্থাপন করেন তারই এক প্রতীক। যা ঘটাতে তিনি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন এবং যেভাবে তা কার্যকর ও অর্জিত হওয়ার ছিল মানুষকে সে বিষয়ে তিনি অবহিত করেছিলেন। এইভাবে, ঈশ্বরের মুখ-নিঃসৃত বাক্য অনুসারেই বিষয়টি সম্পন্ন হয়েছিল। একমাত্র ঈশ্বরই এই ধরনের ক্ষমতার অধিকারী, এবং আজ, তাঁর এই বাক্যোচ্চারণের বহু সহস্র বছর পরেও, মানুষ এখনো ঈশ্বরের মুখে উচ্চারিত ওই মেঘধনুকে উপরে তাকিয়ে দেখতে পারে। ঈশ্বরের দ্বারা উচ্চারিত ওই বাক্যগুলির কারণেই, এই জিনিসটি আজ পর্যন্ত অবিকৃত ও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এই মেঘধনুকে কেউ সরিয়ে ফেলতে পারে না, এর বিধানসমূহকে কেউ পাল্টে দিতে পারে না, এবং শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের দরুনই এটি বিদ্যমান। সম্যক অর্থে এটিই ঈশ্বরের কর্তৃত্ব। “ঈশ্বর তাঁর বাক্যের মর্যাদা রাখেন, এবং তাঁর বাক্য নিষ্পন্ন হবেই, এবং তিনি যা নিষ্পন্ন করেন তা চিরকাল টিকে থাকে।” এধরনের বাক্যগুলি এখানে পরিষ্কারভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার এটি এক সুস্পষ্ট লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য। সৃজিত সত্তাদের মধ্যে কেউ এজাতীয় লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নয়, বা তাদের মধ্যে তা দৃষ্ট হয় না, এবং অসৃজিত সত্তাদের কারোর মধ্যেও তা পরিলক্ষিত হয় না। এই বৈশিষ্ট্য একমাত্র অনন্য ঈশ্বরেরই অধিকৃত, এবং শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার অধিকৃত স্বরূপ ও সারসত্যের সঙ্গে তা সৃজিত প্রাণীদের স্বরূপ ও সারসত্যের পার্থক্য নির্দেশ করে। একই সঙ্গে, তা এমন এক লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য, স্বয়ং ঈশ্বর ব্যতীত, কোনো সৃজিত বা অসৃজিত সত্তা যা কখনো ছাপিয়ে যেতেও পারে না।

মানুষের সঙ্গে তাঁর সন্ধিচুক্তি স্থাপন ঈশ্বরের সম্পাদিত এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্ম, এমন এক কর্ম যার মাধ্যমে তিনি মানুষকে এক সত্য জ্ঞাপন করতে চেয়েছিলেন এবং মানুষকে তাঁর ইচ্ছার কথা জানাতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে, তিনি এক অনন্য পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন, মানুষের সঙ্গে এক সন্ধিচুক্তি স্থাপন করতে এক বিশেষ প্রতীককে কাজে লাগিয়েছিলেন, যে প্রতীক ছিল মানুষের সঙ্গে স্থাপিত তাঁর সন্ধিচুক্তির এক অঙ্গীকার। তাহলে, এই সন্ধিচুক্তির স্থাপন কি এক মহান ঘটনা ছিল? ঘটনাটি ঠিক কতখানি মহান ছিল? ঠিক এটিই হচ্ছে সেই সন্ধিচুক্তির বিশেষত্ব: এটি দুটি মানুষের মধ্যে, বা দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে, বা দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে স্থাপিত কোনো সন্ধিচুক্তি নয়, বরং এ হল সৃষ্টিকর্তা ও সমগ্র মানবজাতির মধ্যে স্থাপিত সন্ধিচুক্তি, এবং যতদিন না সৃষ্টিকর্তা যাবতীয় কিছুর বিলোপ ঘটান ততদিন এই চুক্তি কার্যকর থাকবে। এই সন্ধিচুক্তির নির্বাহক হলেন সৃষ্টিকর্তা, এবং সৃষ্টিকর্তাই এর প্রতিপালক। সংক্ষেপে, মানবজাতির সঙ্গে স্থাপিত মেঘধনু সন্ধিচুক্তির পুরোটাই সাধিত ও অর্জিত হয়েছিল সৃষ্টিকর্তা ও মানবজাতির মধ্যে সংলাপ অনুযায়ী, এবং আজ অবধি তা তেমনই রয়ে গেছে। সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধীনে আত্মসমর্পণ করা, সেই কর্তৃত্বকে মান্য করা, বিশ্বাস করা, সমাদর করা, তাকে প্রত্যক্ষ করা, এবং তার বন্দনা করা ভিন্ন সৃষ্ট প্রাণীরা আর কী-ই বা করতে পারে? কারণ অদ্বিতীয় ঈশ্বর ব্যতিরেকে আর কেউই এজাতীয় এক সন্ধিচুক্তি স্থাপনের ক্ষমতার অধিকারী নয়। মেঘধনুর উদয়, যুগ-যুগান্ত ধরে বারংবার, মানবজাতির কাছে এক উদ্‌ঘোষণ এবং সৃষ্টিকর্তা ও মানবজাতির মধ্যে এই সন্ধিচুক্তির প্রতি তা মানবজাতির অভিনিবেশ আকর্ষণ করে। সৃষ্টিকর্তা ও মানবজাতির মধ্যে এই সন্ধিচুক্তির ক্রমাগত আবির্ভাবের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে যা প্রদর্শিত হয় তা কোনো মেঘধনু নয়, বা খোদ সন্ধিচুক্তিটিও নয়, বরং তা হল সৃষ্টিকর্তার অপরিবর্তনীয় কর্তৃত্ব। মেঘধনুর পৌনঃপুনিক অভ্যুদয় প্রচ্ছন্ন স্থানসমূহে সৃষ্টিকর্তার সুমহান ও অলৌকিক কার্যকলাপের প্রদর্শন ঘটায়, এবং, একই সঙ্গে, তা সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন, যে কর্তৃত্ব কোনো দিন ম্লান হবে না, এবং কখনো পরিবর্তিত হবে না। এ কি ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্বের আরেকটি দিকের প্রদর্শন নয়?

৩. ঈশ্বরের আশীর্বাদ

আদিপুস্তক ১৭:৪-৬ দেখ, তোমার সঙ্গে আমি সন্ধির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, সেই অনুযায়ী তুমি হবে বহুজাতির আদি পিতা। তোমার নাম আর অব্রাম (মহান পিতা) থাকবে না, তোমার নাম হবে অব্রাহাম। কারণ আমি তোমাকে বহু জাতির আদি পিতা করব। আমি তোমাকে প্রজাবন্ত করব, তোমা থেকে উৎপন্ন করব বহু জাতি। নৃপতিরা জন্মাবে তোমার বংশে।

আদিপুস্তক ১৮:১৮-১৯ অব্রাহাম হবে বিরাট ও শক্তিশালী এক জাতির জনক, তার মাধ্যমেই পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদ লাভ করবে। আমি তাকে এই উদ্দেশ্যে মনোনীত করেছি যেন সে তার পরিবার ও ভাবী বংশধরদের ধর্মসঙ্গত ও ন্যায্য আচরণ করার ও প্রভুর পথে চলার নির্দেশ দেয়, যাতে অব্রাহামের কাছে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি প্রভু পরমেশ্বর পূর্ণ করতে পারেন।

আদিপুস্তক ২২:১৬-১৮ তুমি যেহেতু এই কাজ করলে, তোমার একমাত্র পুত্রকে উৎসর্গ করতে দ্বিধা করলে না, সেই হেতু প্রভু পরমেশ্বর বলছেন, আমি আমারই নামে শপথ করে বলছি, আমি নিশ্চয়ই তোমাকে প্রচুর বর দান করব। আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব। তোমার বংশধরেরা শত্রুদের পুরী অধিকার করবে। তোমার বংশের মত আশীর্বাদ লাভের জন্য পৃথিবীর সকল জাতি বিনতি জানাবে। কারণ তুমি আমার আদেশ পালন করেছ।

ইয়োবে ৪২:১২ প্রভু পরমেশ্বর ইয়োবকে প্রথম জীবনের চেয়ে শেষ জীবনে আরও বেশী আশীর্বাদ করলেন। ইয়োব চোদ্দ হাজার মেষ, ছয় হাজার উট, দুহাজার বৃষ এবং এক হাজার গর্দভীর মালিক হলেন।

সৃষ্টিকর্তার উচ্চারণের অনন্য রীতি ও বৈশিষ্ট্য সৃষ্টিকর্তার অনন্য স্বরূপ ও কর্তৃত্বের এক প্রতীক

অনেকেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ অন্বেষণ করতে ও অর্জন করতে চায়, কিন্তু সকলেই এই আশীর্বাদ লাভ করতে পারে না, কারণ ঈশ্বরের নিজস্ব নীতিসমূহ রয়েছে, এবং তিনি তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে মানুষকে আশীর্বাদ দান করেন। মানুষের কাছে ঈশ্বর যে অঙ্গীকার করেন, এবং মানুষের উপর তিনি যে পরিমাণ অনুগ্রহ বর্ষণ করেন, তা মানুষের চিন্তাভাবনা ও ক্রিয়াকর্মের ভিত্তিতে বণ্টিত হয়। তাহলে, ঈশ্বরের আশীর্বাদের দ্বারা কী প্রদর্শিত হয়? এগুলির মধ্যে মানুষ কী দেখতে পায়? এই পর্যায়ে, কী ধরনের মানুষকে ঈশ্বর আশীর্বাদ দান করেন, এবং মানুষের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষণের নীতিসমূহের বিষয়ে আলোচনা দূরে সরিয়ে রাখা যাক। পরিবর্তে, ঈশ্বরের মানুষকে আশীর্বাদ প্রদানের বিষয়টির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে জানার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত থেকে।

শাস্ত্র থেকে উপরে উদ্ধৃত চারটি অনুচ্ছেদের সবগুলিই মানুষের প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বাদ সংক্রান্ত। এগুলিতে ঈশ্বরের আশীর্বাদের গ্রহীতাদের সম্পর্কে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়, যেমন অব্রাহাম ও ইয়োব, একই সঙ্গে, কী কারণে ঈশ্বর তাঁর আশীর্বাদ প্রদান করলেন, এবং সেই আশীর্বাদগুলিতে কী ছিল সে সম্বন্ধেও বলা আছে। ঈশ্বরের উচ্চারণের কণ্ঠস্বর ও ভঙ্গিমা, এবং যে পরিপ্রেক্ষিত ও অবস্থান থেকে তিনি বাক্যোচ্চারণ করেছিলেন, তা মানুষকে অনুধাবন করার সুযোগ দেয় যে যিনি আশীর্বাদ দান করেন এবং এরকম আশীর্বাদের যারা গ্রহীতা, তারা পরিচয়, মর্যাদা ও সারসত্যের দিক থেকে সুস্পষ্টভাবে স্বতন্ত্র। এই উচ্চারণগুলির কণ্ঠস্বর ও ভঙ্গিমা, এবং যে অবস্থান থেকে এগুলি উক্ত হয়, তা ঈশ্বরেরই অনন্য স্বত্ব, যিনি সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের অধিকারী। তাঁর কর্তৃত্ব ও শক্তিমত্তা আছে, সেই সাথে রয়েছে সৃষ্টিকর্তা রূপে তাঁর সম্মান, এবং সেই মহিমা যা কোনো মানুষের কোনো সংশয় বরদাস্ত করে না।

প্রথমে আদিপুস্তকের সপ্তদশ অধ্যায়ের চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ চরণগুলির দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক: “দেখ, তোমার সঙ্গে আমি সন্ধির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, সেই অনুযায়ী তুমি হবে বহুজাতির আদি পিতা। তোমার নাম আর অব্রাম (মহান পিতা) থাকবে না, তোমার নাম হবে অব্রাহাম। কারণ আমি তোমাকে বহু জাতির আদি পিতা করব। আমি তোমাকে প্রজাবন্ত করব, তোমা থেকে উৎপন্ন করব বহু জাতি। নৃপতিরা জন্মাবে তোমার বংশে।” এই বাক্যগুলি অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের স্থাপিত সন্ধিচুক্তি, এবং অব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বচনও বটে: ঈশ্বর অব্রাহামকে জাতিসমূহের জনকে পরিণত করবেন, তাকে বহুসংখ্যক সন্তানসন্ততি দান করবেন, এবং তার বংশধরদের মধ্য থেকে নানা জনগোষ্ঠীর উদ্ভব হবে, এবং তার বংশে অনেক নৃপতি জন্ম নেবে। এই বাক্যসমূহের মধ্যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব কি তোমাদের দৃষ্টিগোচর হয়? আর এজাতীয় কর্তৃত্বকে তোমরা কোন চোখে দেখো? ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সারসত্যের কোন দিকটি তোমরা প্রত্যক্ষ করো? এই বাক্যগুলি অভিনিবেশ সহকারে পাঠ করলে, এটি আবিষ্কার করা দুরূহ কিছু নয় যে ঈশ্বরের উচ্চারণের শব্দপ্রয়োগের মধ্যেই ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও পরিচয় সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর যখন বলেন “তোমার সঙ্গে আমি সন্ধির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, সেই অনুযায়ী তুমি হবে … আমি তোমাকে বহু জাতির আদি পিতা করব … আমি তোমাকে প্রজাবন্ত করব …”, তখন সেখানে “তুমি হবে” এবং “আমি করব” এই জাতীয় নিশ্চয়তাপ্রদানের শব্দবন্ধগুলি, যে শব্দগুলির চয়ন ঈশ্বরের পরিচয় ও কর্তৃত্বের সুস্পষ্ট স্বীকৃতি বহন করে, সেই শব্দবন্ধগুলি এক দিক থেকে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বস্ততার ইঙ্গিত; আরেক দিক থেকে, সেগুলি ঈশ্বর-প্রযুক্ত বিশেষ শব্দাবলী, যে ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তার পরিচিতির অধিকারী, একই সঙ্গে সেগুলি প্রথাগত শব্দভাণ্ডারের অংশও বটে। কেউ যদি বলে সে আশা করে যে অন্য আরেক ব্যক্তি বহুসংখ্যক সন্তানসন্ততি লাভ করবে, এবং সেই সন্ততি থেকে নানা জনগোষ্ঠী জন্ম নেবে, এবং তাদের মধ্যে থেকে অনেক রাজন্যবর্গের উদ্ভব হবে, তাহলে সন্দেহাতীতভাবে তা এক ধরনের শুভেচ্ছাজ্ঞাপন, কোনো অঙ্গীকার বা আশীর্বাদদান নয়। তাই, মানুষ এমন বলার স্পর্ধা করে না যে “আমি তোমাকে এটাসেটা বানিয়ে তুলবো, তুমি অমুকতমুক করবে”, কারণ তারা জানে যে তাদের এরকম কোনো ক্ষমতা নেই; এসব তাদের হাতে নেই, এবং তারা যদি এমন কথা বলেও ফেলে, তাহলে তাদের এই কথাগুলি হবে তাদের বাসনা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা-চালিত শূন্যগর্ভ অর্থহীন কথা মাত্র। কেউ যদি জানে যে নিজের শুভেচ্ছাকে বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা তার নেই, তবে কি সে এমন এক মহিমান্বিত কণ্ঠস্বরে বাক্যোচ্চারণ করার স্পর্ধা করে? প্রত্যেকেই নিজেদের বংশধরদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে, এবং আশা পোষণ করে যে তারা উৎকর্ষলাভ করবে এবং প্রভূত সাফল্য উপভোগ করবে। “তাদের কেউ যদি সম্রাট হয়ে ওঠে তাহলে কী বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার হবে! একজন যদি রাষ্ট্র-পরিচালক হয়ে ওঠে তাহলে সেটাও দারুণ ব্যাপার হবে—কেবল তারা গুরুত্বপূর্ণ কেউ একটা যেন হয়!” এই সবই হলো মানুষের ইচ্ছা, কিন্তু মানুষ কেবল ইচ্ছাপ্রকাশই করতে পারে যে তাদের বংশধররা আশীর্বাদধন্য হোক, কিন্তু তাদের কোনো প্রতিশ্রুতি তারা পূরণ বা বাস্তবায়িত করতে পারে না। মনে মনে, প্রত্যেকেই পরিষ্কার জানে যে এরকম কিছু অর্জন করার ক্ষমতা তার নেই, কারণ এর সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণের অতীত, তাহলে কেমন করে সে অন্যের নিয়তিকে শাসন করতে পারে? ঈশ্বর এমন বাক্য উচ্চারণ করতে পারেন কারণ ঈশ্বরের সেই কর্তৃত্ব রয়েছে, এবং মানুষের কাছে তিনি যাকিছু অঙ্গীকার করেন তার সবই তিনি সুসম্পন্ন ও বাস্তবায়িত করতে সক্ষম, এবং মানুষকে যে আশীর্বাদ তিনি প্রদান করেন তা-ও সত্যে পরিণত করতে সক্ষম। মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, আর তাই ঈশ্বরের পক্ষে কোনো ব্যক্তিকে প্রচুর সন্তানসন্ততি প্রদান করা ছেলেখেলা মাত্র; কারো উত্তরাধিকারীদের সমৃদ্ধশালী করে তুলতে তাঁর একটি বাক্যই যথেষ্ট। এরকম একটি কর্ম সম্পাদনের জন্য ঈশ্বরকে কখনোই স্বেদ নির্গমন পর্যন্ত পরিশ্রম করে যেতে হবে না, তাঁর মস্তিষ্ককে ভারাক্রান্ত করতে হবে না, অথবা বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন হতে হবে না; এটিই হল ঈশ্বরের ক্ষমতা, এটিই ঈশ্বরের কর্তৃত্ব।

আদিপুস্তকের অষ্টাদশ অধ্যায়ের ১৮-তম শ্লোক, “অব্রাহাম হবে বিরাট ও শক্তিশালী এক জাতির জনক, তার মাধ্যমেই পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদ লাভ করবে”, এটি পাঠ করার পর, তোমরা কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অনুভব করতে পারো? তোমরা কি সৃষ্টিকর্তার অনন্যসাধারণতাকে টের পাও? তোমরা কি সৃষ্টিকর্তার সর্বোচ্চ ক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে পারো? ঈশ্বরের বাক্যসমূহ ধ্রুব। ঈশ্বর সাফল্যের বিষয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাসের দরুন, বা এই আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক হিসাবে এজাতীয় বাক্য উচ্চারণ করেন না; বরং, এগুলি ঈশ্বরের উচ্চারণের কর্তৃত্বের প্রমাণ, এবং এমন এক আদেশ যা ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে কার্যায়িত করে। এখানে দুটি অভিব্যক্তি রয়েছে যেগুলি তোমাদের মনোযোগ দাবি করে। যখন ঈশ্বর বলেন “অব্রাহাম হবে বিরাট ও শক্তিশালী এক জাতির জনক, তার মাধ্যমেই পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্বাদ লাভ করবে”, তখন তাঁর এই বাক্যে কি দ্ব্যর্থকতার কোনো উপাদান রয়েছে? উদ্বেগের কোনো উপাদান রয়েছে? ভীতির কোনো উপাদান? তাঁর উচ্চারণের মধ্যে “হবে” ও “করবে” শব্দদ্বয়ের উপস্থিতির দরুন, উপরুল্লিখিত উপাদানগুলি, যেগুলি মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত এবং তাদের মধ্যে প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সেগুলি কখনোই কোনো সম্পর্কে অন্বিত হয়ে ওঠে নি। অন্যদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের সময় কেউই এরকম শব্দ প্রয়োগ করার সাহস করতো না, কেউই এহেন প্রত্যয়ের সাথে অপর কোনো ব্যক্তিকে বিরাট ও শক্তিশালী এক জাতি প্রদানের, বা তার মাধ্যমে পৃথিবীর সকল জনগোষ্ঠীর উপর সৌভাগ্য বর্ষণের প্রতিশ্রুতিদানের মতো আশীর্বাদ জ্ঞাপনের স্পর্ধা করতো না। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ যত বেশি সুনিশ্চিত, তত বেশি করে সেগুলি একটি বিষয়কে প্রতিপন্ন করে—আর সেই বিষয়টি কী? সেগুলি প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বর এহেন কর্তৃত্বের অধিকারী, প্রমাণ করে যে তাঁর কর্তৃত্ব এইসব কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম, এবং এগুলির নিষ্পাদন অনিবার্য। অব্রাহামকে তিনি আশীর্বাদস্বরূপ যাকিছু প্রদান করেছিলেন সেগুলির সম্পর্কে ঈশ্বর তাঁর অন্তরে সুনিশ্চিত ছিলেন, সংশয়ের লেশমাত্র ছিল না। তদুপরি, এর সমস্তটাই তাঁর বাক্য অনুযায়ী সম্পন্ন হতো, এবং কোনো শক্তি এর সিদ্ধিকে পরিবর্তিত, প্রতিহত, ক্ষতিগ্রস্ত, বা ব্যাহত করতে সক্ষম হতো না। অন্য যা কিছুই ঘটুক না কেন, কোনোকিছুই ঈশ্বরের বাক্যসমূহের সিদ্ধি ও নিষ্পাদনকে স্থগিত বা প্রভাবিত করতে পারতো না। এটাই সৃষ্টিকর্তার মুখোচ্চারিত বাক্যের, এবং সৃষ্টিকর্তার যে কর্তৃত্ব মানুষের প্রত্যাখ্যান সহ্য করে না সেই কর্তৃত্বের শক্তিমত্তা! এই বাক্যগুলি পাঠ করার পর, এখনো কি তুমি সংশয়ান্বিত? এই বাক্যগুলি ঈশ্বরের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল, এবং ঈশ্বরের বাক্যে নিহিত রয়েছে ক্ষমতা, মহিমা, এবং কর্তৃত্ব। এহেন শক্তিমত্তা ও কর্তৃত্ব, এবং ঘটনার সম্পাদনের ক্ষেত্রে এহেন অনিবার্যতা, কোনো সৃজিত বা অসৃজিত সত্তার অর্জনসাধ্য নয়, এবং কোনো সৃজিত বা অসৃজিত সত্তার পক্ষে অনতিক্রম্য। একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই মানবজাতির সঙ্গে এরকম কণ্ঠস্বর ও স্বরভঙ্গিমায় বাক্যালাপ করতে পারেন, এবং ঘটনাপ্রবাহ প্রতিপন্ন করেছে যে তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলি সারবত্তাহীন বাক্য, বা বৃথা দম্ভোক্তি নয়, বরং সেগুলি সেই অনন্য কর্তৃত্বের অভিব্যক্তি যা যে কোনো মানুষ, ঘটনা, বা বস্তুর পক্ষেই অনতিক্রম্য।

ঈশ্বর ও মানুষের উচ্চারিত বাক্যেসমূহের মধ্যে পার্থক্যটি কী? ঈশ্বরের উচ্চারিত এই বাক্যগুলি পাঠ করার সময়, তুমি ঈশ্বরের বাক্যের শক্তিমত্তা ও ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অনুভব করো। মানুষকে যখন এরকম কথা বলতে শোনো তখন তুমি কীরকম বোধ করো? তোমার কি তাদের অত্যধিক উদ্ধত ও প্রগলভ মনে হয়, নিজেদের জাহির করছে এমন মানুষ বলে মনে হয়? তাদের এই ক্ষমতা নেই বলে, তারা এরকম কর্তৃত্বের অধিকারী নয় বলে, এজাতীয় জিনিস অর্জন করতে তারা সম্পূর্ণ অক্ষম। তারা যে তাদের অঙ্গীকারের সম্বন্ধে এতদূর প্রত্যয়ী, এটাই তাদের মন্তব্যের সারশূন্যতাকে প্রতিপন্ন করে। কেউ যদি এধরনের কথাবার্তা বলে, তাহলে নিঃসন্দেহে সে উদ্ধত ও অতি আত্মবিশ্বাসী, এবং নিজেকে সে প্রধান দেবদূতের স্বভাবের এক ধ্রুপদী দৃষ্টান্ত হিসাবে প্রকাশ করছে। এই বাক্যগুলি ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত; এখানে কি তুমি ঔদ্ধত্যের কোনো উপাদান টের পাও? ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে কি তোমার নেহাতই কৌতুকের সামগ্রী বলে বোধ হয়? ঈশ্বরের বাক্যসমূহ হল কর্তৃত্ব, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ বাস্তব সত্য, এবং বাক্যগুলি তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার আগেই, অর্থাৎ, যখন তিনি কোনো কার্য সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেই মুহূর্তে কার্যটি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। বলা যায়, ঈশ্বর অব্রাহামকে যাকিছু বলেছিলেন সেটাই ছিল অব্রাহামের সাথে ঈশ্বরের স্থাপিত এক সন্ধিচুক্তি, এবং অব্রাহামের কাছে ঈশ্বর-কৃত এক অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার ছিল এক প্রতিষ্ঠিত সত্য, সেই সাথে এক নিষ্পন্ন সত্যও বটে, এবং এই সত্যগুলি ঈশ্বরের চিন্তায় ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হয়ে উঠেছিল। তাই, ঈশ্বরের পক্ষে এধরনের বাক্যোচ্চারণ তাঁর কোনো উদ্ধত স্বভাবের পরিচায়ক নয়, কারণ ঈশ্বর এধরনের কর্ম সাধনে সক্ষম। তাঁর সেই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে, এবং এই ক্রিয়াকর্মগুলি সম্পন্ন করতে ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে সক্ষম, এবং এগুলির সম্পাদন পুরোপুরি তাঁর সামর্থ্যের সীমার মধ্যেই রয়েছে। এই জাতীয় বাক্য যখন ঈশ্বরের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়, তখন সেগুলি ঈশ্বরের প্রকৃত স্বভাবের এক উদ্ঘাটন ও অভিব্যক্তি, ঈশ্বরের সারসত্য ও কর্তৃত্বের এক নির্ভুল উদ্ঘাটন ও বহিঃপ্রকাশ, এবং সৃষ্টিকর্তার পরিচিতির প্রমাণ হিসাবে এর চেয়ে উপযুক্ত ও যথাযোগ্য আর কিছু নেই। এজাতীয় উচ্চারণসমূহের ধরন, স্বরভঙ্গি, ও শব্দচয়ন অভ্রান্তভাবে সৃষ্টিকর্তার স্বরূপের বৈশিষ্ট্যসূচক নিশানা এবং ঈশ্বরের নিজস্ব পরিচয়ের অভিব্যক্তির সাথে তা নিখুঁতভাবে সঙ্গতিপূর্ণ; এই বাক্যগুলিতে কোনো ভান নেই, কোনো অশুচিতা নেই; এগুলি, সম্পূর্ণরূপে ও চূড়ান্তরূপে, সৃষ্টিকর্তার সারসত্য ও কর্তৃত্বের পূর্ণাঙ্গ প্রতিপাদন। সৃজিত প্রাণীদের ক্ষেত্রে, তাদের এই কর্তৃত্ব বা সারসত্য কোনোটিই নেই, ঈশ্বর-প্রদত্ত ক্ষমতা তো তাদের একেবারেই নেই। মানুষ যদি এধরনের আচরণ প্রদর্শন করে, তবে নিশ্চিতরূপেই তা হবে তার ভ্রষ্ট স্বভাবের এক উদ্গীরণ, এবং এর মর্মমূলে থাকবে মানুষের ঔদ্ধত্য ও লাগামছাড়া উচ্চাকাঙ্ক্ষার অনধিকারচর্চাজনিত অভিঘাত, এবং তা হবে একমাত্র শয়তানের বিদ্বেষপরায়ণ অভিপ্রায়ের অনাবৃতকরণ, যে শয়তান মানুষকে প্রতারিত করতে চায় এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে তাদের প্রলুব্ধ করে। এহেন ভাষার মাধ্যমে যা প্রকাশ পায় ঈশ্বর তাকে কীরূপ জ্ঞান করেন? ঈশ্বর বলবেন যে, তুমি তাঁর স্থান অন্যায়ভাবে অধিকার করতে চাও এবং নিজেকে ঈশ্বর বলে প্রতিপন্ন করতে ও তাঁকে প্রতিস্থাপিত করতে চাও। তুমি যখন ঈশ্বরের উচ্চারণের স্বরভঙ্গিমার অনুকরণ করো, তখন তোমার অভিপ্রায় হল মানুষের অন্তরে ঈশ্বরের স্থানকে প্রতিস্থাপিত করা, অন্যায়ভাবে মানবজাতির উপর নিজের দখল কায়েম করা, যে মানবজাতি বিধিসঙ্গতভাবে ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত। নিঃসন্দেহে এটি শয়তান ভিন্ন আর কারো কাজ নয়; এগুলি স্বর্গের কাছে দুর্বিষহ সেই প্রধান দেবদূতের বংশধরদের কার্যকলাপ! তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ রয়েছে যে কোনোদিন কিছু বাক্য উচ্চারণের মাধ্যমে কোনো বিশেষ উপায়ে, মানুষকে ভুল পথে চালিত ও প্রতারিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে, ঈশ্বরের অনুকরণ করেছে, যাতে মানুষের মনে হয় যেন এই লোকটির কথাবার্তা ও কার্যকলাপ ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও শক্তিমত্তা বহন করছে, যেন এই লোকটির সারসত্য ও পরিচিতি অনন্যসাধারণ, এবং এমনকি যেন এই লোকটির কথাবার্তার স্বরভঙ্গিমা ঈশ্বরের অনুরূপ? কখনো কি তোমরা এরকম কিছু করেছো? তোমাদের কথাবার্তায় তোমরা কি কোনোদিন এমন ইঙ্গিতময় কোনো অঙ্গভঙ্গি সহকারে ঈশ্বরের বাচনভঙ্গিমার অনুকরণ করেছো যা আপাতদৃষ্টিতে, তোমাদের ধারণা মতে যা শক্তিমত্তা ও কর্তৃত্ব সেটি সমেত, ঈশ্বরের স্বভাবের প্রতিনিধিত্ব করে? তোমাদের অধিকাংশ কি প্রায়শই এরকম আচরণ করো, বা করার পরিকল্পনা করো? এখন, সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে সম্যকরূপে দেখা, উপলব্ধি করা এবং জানার পর, তোমরা আগে যে কাজ করতে, এবং নিজেদের যে চরিত্রকে প্রকাশ করতে, তার দিকে যখন ফিরে তাকাও, তখন কি তোমাদের মধ্যে বমনেচ্ছার উদ্রেক হয়? তোমরা কি নিজেদের কদর্যতা ও নির্লজ্জতাকে শনাক্ত করতে পারো? এজাতীয় মানুষদের স্বভাব ও সারসত্যকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখার পর, এখন কি বলা যায় যে তারা নরকের অভিশপ্ত সন্তান মাত্র? এমন কি বলা যায় যে এমন কাজ যারা করে তাদের প্রত্যেকেই নিজেদের উপর অবমাননা ডেকে আনছে? তোমরা কি এই বিষয়টির চারিত্রিক গুরুত্বকে উপলব্ধি করতে পারছো? বিষয়টি ঠিক কতটা গুরুতর? যে লোকগুলি এইভাবে আচরণ করে তাদের অভিপ্রায় হল ঈশ্বরকে অনুকরণ করা। তারা ঈশ্বর হতে চায়, মানুষকে দিয়ে তারা নিজেদের ঈশ্বর জ্ঞানে অর্চনা করাতে চায়। মানুষের হৃদয়ে ঈশ্বরের স্থানটি তারা অবলুপ্ত করতে চায়, এবং মানুষের মাঝে কার্যরত ঈশ্বরের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, এবং এই কাজ তারা করে তাদের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার, মানুষকে গ্রাস করার, এবং মানুষকে নিজের দখলে আনার লক্ষ্যকে চরিতার্থ করার নিমিত্ত। প্রত্যেকের অবচেতনেই এধরনের বাসনা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা সুপ্ত রয়েছে, এবং প্রত্যেকেই এই প্রকারের ভ্রষ্ট শয়তানোচিত সারসত্যের মধ্যে বাস করে, সে এমন এক শয়তানসুলভ প্রকৃতি যেখানে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে বৈরিতার সম্পর্কে নিযুক্ত, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে, এবং ঈশ্বর হয়ে উঠতে চায়। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিষয়ে আমার আলোচনার পর, তোমরা কি এখনো ঈশ্বরের ছদ্মবেশ ধরার বা ঈশ্বরকে অনুকরণ করার ইচ্ছা বা উচ্চাশা পোষণ করো? তোমরা কি এখনো ঈশ্বর হয়ে ওঠার কামনা করো? এখনো কি তোমরা ঈশ্বর হয়ে উঠতে চাও? ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অনুকরণ করা মানুষের সাধ্য নয়, এবং ঈশ্বরের স্বরূপ ও মর্যাদাকে মূর্ত করে তোলাও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কণ্ঠস্বরে ঈশ্বর বাক্যোচ্চারণ করেন তার অনুকরণ করতে তুমি সক্ষম হলেও, ঈশ্বরের সারসত্যের অনুকরণ করতে তুমি পারবে না। ঈশ্বরের জায়গায় দাঁড়াতে ও তাঁর ছদ্মবেশ ধরতে তুমি সমর্থ হলেও, কোনোদিনই তুমি ঈশ্বর যা করতে মনস্থ করেন তা সম্পন্ন করতে, এবং সকলকিছুকে নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশদান করতে সক্ষম হবে না। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, তুমি চিরকাল এক নগণ্য প্রাণীই রয়ে যাবে, এবং তুমি যতোই দক্ষ ও সমর্থ হও না কেন, যত সংখ্যক প্রতিভার অধিকারীই তুমি হও না কেন, তোমার সমগ্র সত্তাই সৃষ্টিকর্তার আধিপত্যের অধীন। তুমি কিছু দুর্বিনীত কথাবার্তা বলতে সক্ষম হলেও, তা প্রতিপন্ন করে না যে তুমি সৃষ্টিকর্তার সারসত্যের অধিকারী, এবং এও উপস্থাপিত করে না যে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব তোমার অধিগত। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাই হল স্বয়ং ঈশ্বরের সারসত্য। সেগুলি বাহ্যিকভাবে শেখা বা সংযুক্ত করা হয়নি, সেগুলি হল স্বয়ং ঈশ্বরের সহজাত সারসত্য। আর সেই কারণেই সৃষ্টিকর্তা ও সৃজিত প্রাণীদের মধ্যের সম্পর্কটির পরিবর্তন ঘটানো কোনোদিনই সম্ভবপর নয়। জীবকুলের এক সদস্য হিসাবে, মানুষকে অবশ্যই তার নিজ অবস্থান ধরে রাখতে হবে, আর সচেতনভাবে আচরণ করতে হবে। ঈশ্বর তোমার উপর যা যা অর্পণ করেছেন, তা কর্তব্যের সাথে রক্ষা কর। কোনো অনুপযুক্ত কাজ কোরো না, কিংবা এমন কিছু কোরো না যা তোমার ক্ষমতার আয়ত্তের বাইরে অথবা যা ঈশ্বরের কাছে ঘৃণ্য। মহান হওয়ার, কিংবা অতিমানব হয়ে ওঠার, অথবা অন্যদের ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা কোরো না, ঈশ্বর হয়ে উঠতেও চেয়ো না। মানুষের এরকম কামনা করা উচিত নয়। মহান কিংবা অতিমানব হয়ে উঠতে চাওয়াটা অযৌক্তিক। ঈশ্বর হয়ে উঠতে চাওয়াটা তো আরোই লজ্জাজনক; এটি ন্যক্কারজনক, আর জঘন্য। যেটা প্রশংসনীয়, আর জীবকুলের অন্য কোনো কিছুর তুলনায় যা বেশি করে ধরে রাখা উচিত, তা হল, প্রকৃত জীব হয়ে ওঠা; এ-ই হল একমাত্র লক্ষ্য যা সকল মানুষের অনুসরণ করা উচিত।

সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব স্থান, কাল, বা ভৌগোলিক পরিসরের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়, এবং সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব গণনার অতীত

আদিপুস্তক ২২:১৭-১৮ শ্লোকদুটির দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। এটি যিহোবা ঈশ্বরের কথিত আরেকটি অনুচ্ছেদ, যেখানে তিনি অব্রাহামকে বলেছিলেন, “আমি নিশ্চয়ই তোমাকে প্রচুর বর দান করব। আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব। তোমার বংশধরেরা শত্রুদের পুরী অধিকার করবে। তোমার বংশের মত আশীর্বাদ লাভের জন্য পৃথিবীর সকল জাতি বিনতি জানাবে। কারণ তুমি আমার আদেশ পালন করেছ।” অব্রাহামকে যিহোবা ঈশ্বর অনেকবারই আশীর্বাদ প্রদান করেছেন যে তার সন্তান-সন্ততিরা বংশবিস্তার করবে—কিন্তু তারা কী পরিমাণ বংশবৃদ্ধি করবে? তাদের বংশ বৃদ্ধি পাবে শাস্ত্রে উল্লেখিত মাত্রায়: “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত”। অর্থাৎ, ঈশ্বর অব্রাহামকে আকাশের তারকারাজির মতো বিপুল সংখ্যক, এবং সমুদ্রসৈকতের বালুরাশির মতো অঢেল সংখ্যক অপত্যাদি প্রদান করতে চেয়েছিলেন। ঈশ্বর তাঁর বাক্যোচ্চারণে চিত্রকল্পের ব্যবহার করেছিলেন, এবং এই চিত্রকল্প থেকে এটি বুঝে ওঠা কষ্টকর কিছু নয় যে, ঈশ্বর অব্রাহামকে কেবল একটি, দুটি, বা এমনকি কয়েক হাজার মাত্রও নয়, বরং এমন এক অগণন সংখ্যক সন্তানসন্ততি প্রদান করবেন, যাতে তাদের মধ্য থেকে অজস্র জনগোষ্ঠী উঠে আসার পক্ষে তা পর্যাপ্ত হয়, এর কারণ ঈশ্বর অব্রাহামকে অসংখ্য জাতির জনকে পরিণত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। এখন, এই সংখ্যাটি কি মানুষের দ্বারা স্থিরীকৃত হয়েছিল, না কি ঈশ্বরের দ্বারা? মানুষ কি তার অপত্যাদির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? তা কি মানুষের হাতে? এমনকি গুটিকয়েক বংশধর থাকবে কি না সেটি ঠিক করার হকও মানুষের নেই, “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত” অগণিত সংখ্যক উত্তরপুরুষের কথা তো না তোলাই ভালো। আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের মতো অগণিত সংখ্যক বংশধর থাকুক তা কে না চায়? দুর্ভাগ্যক্রমে, আমরা যেমন চাই সবসময় তা হয়ে ওঠে না। মানুষ যতোই দক্ষ বা সমর্থ হোক না কেন, এই বিষয়টি তার আয়ত্তে নেই; ঈশ্বর যা পূর্বনির্ধারণ করে দিয়েছেন কেউই নিজেকে তার পরিসীমার বাইরে স্থাপন করতে পারে না। তিনি যতটুকু তোমায় অনুমোদন করবেন, ততটুকুই তুমি লাভ করবে: ঈশ্বর তোমায় যদি অল্প একটুখানি প্রদান করেন, তাহলে তার বেশি তুমি কখনোই পাবে না, আর ঈশ্বর যদি তোমায় প্রভূত পরিমাণে দেন, তাহলে তোমার কতটা আছে ভেবে তিক্ততা বোধ করে কোনো লাভ নেই। বিষয়টি এমনই নয় কি? এই সবকিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছাধীন, মানুষের নয়! মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা শাসিত হয়, এবং কেউই এর ব্যতিক্রম নয়!

ঈশ্বর যখন বলেছিলেন “আমি তোমার বংশবৃদ্ধি করব”, তখন তা ছিল অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বরের স্থাপিত এক সন্ধিচুক্তি, এবং মেঘধনু সন্ধিচুক্তির মতোই, এটি অনন্তকালের জন্য সম্পন্ন হবে, এবং সেই সাথে এটি অব্রাহামের কাছে ঈশ্বর-কৃত এক অঙ্গীকারও ছিল। একমাত্র ঈশ্বরই এই অঙ্গীকারকে বাস্তবায়িত করার যোগ্যতাসম্পন্ন ও সামর্থ্যের অধিকারী। মানুষ তা বিশ্বাস করুক বা না করুক, মানুষ তা স্বীকার করুক বা না করুক, এবং মানুষ যেভাবেই একে দেখুক বা বিবেচনা করুক না কেন, এর সবটাই ঈশ্বর কথিত বাক্য অনুসারে অক্ষরে অক্ষরে কার্যায়িত হবে। মানুষের ইচ্ছা বা পূর্বধারণা পাল্টে যাওয়ার দরুন ঈশ্বরের বাক্যাবলীর কোনো পরিবর্তন ঘটবে না, এবং কোনো ব্যক্তি, ঘটনা বা বস্তুর রূপান্তরের কারণে তার রদবদল ঘটবে না। সমস্ত বস্তুই অবলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যসকল অনন্তকাল রয়ে যাবে। বস্তুত, যেই দিন সমস্ত বস্তু অন্তর্হিত হবে ঠিক সেই দিনই ঈশ্বরের বাক্য সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হবে, কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের অধিকারী, সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতার অধিকারী, এবং তিনি যাবতীয় বস্তু ও সকল জীবনীশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন; তিনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বের উদ্ভব ঘটাতে, ও অস্তিত্বকে অনস্তিত্বে পর্যবসিত করতে সক্ষম, এবং জীবিত থেকে মৃত সকল বস্তুর রূপান্তরকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন; সেই ঈশ্বরের পক্ষে, কারো বংশবৃদ্ধি করার থেকে অনায়াসসাধ্য কাজ আর কিছু হতে পারতো না। মানুষের কাছে এটি কল্পনার মতো শোনায়, কোনো রূপকথার গল্পের মতো, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে, তিনি যা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন তা কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়, এবং কোনো রূপকথাও নয়। বরং, তা এমন এক ঘটনা যা ঈশ্বর ইতিমধ্যেই মানসচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন, এবং যা অবশ্যই নিষ্পন্ন হবে। তোমরা কি বিষয়টি উপলব্ধি করছো? এই বাস্তব সত্যগুলি কি প্রতিপন্ন করে যে অব্রাহামের বংশধরগণ সংখ্যায় সুপ্রচুর ছিল? সংখ্যায় তারা কী পরিমাণ সুপ্রচুর ছিল? তারা কি ঈশ্বর-কথিত “আকাশের নক্ষত্ররাজি ও সমূদ্রতটের বালুকারাশির মত” সুপ্রচুর ছিল? তারা কি সকল রাষ্ট্র ও সমস্ত অঞ্চল ব্যাপী, পৃথিবীর সকল স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল? কীসের মাধ্যমে এই ঘটনাটি সম্পন্ন হয়েছিল? এটি কি ঈশ্বরের বাক্যের কর্তৃত্বের দ্বারা সম্পন্ন হয়েছিল? ঈশ্বরের বাক্যগুলি উচ্চারিত হওয়ার বেশ কয়েক শত বা সহস্র বছর পরেও, ঈশ্বরের বাক্যগুলি পূর্ণ হয়ে চলেছিল, এবং ক্রমাগত বাস্তবে পরিণত হচ্ছিল; এটিই ঈশ্বরের বাক্যের শক্তিমত্তা, এবং এটিই ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রমাণ। শুরুতে ঈশ্বর যখন সকলকিছুর সৃজন ঘটিয়েছিলেন, তখন ঈশ্বর বললেন “আলোর অভ্যুদয় হোক”, এবং আলো আবির্ভূত হল। এটি খুব দ্রুত সংঘটিত হয়েছিল, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সাধিত হয়েছিল, এবং এর সম্পাদন ও পরিপূর্ণতার ক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব ঘটেনি; ঈশ্বরের বাক্যসমূহের ফলাফলগুলি ছিল তাৎক্ষণিক। উভয়ই ছিল ঈশ্বরের কর্তৃত্বের এক প্রদর্শন, কিন্তু ঈশ্বর যখন অব্রাহামকে আশীর্বাদ প্রদান করেছিলেন, মানুষকে তিনি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সারসত্যের আরেকটি দিক দেখার সুযোগ দিয়েছিলেন, এবং এই সত্যও জানিয়েছিলেন যে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব গণনার অতীত, উপরন্তু, মানুষকে তিনি সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের বাস্তবতর, আরো অপরূপ এক দিক প্রত্যক্ষ করার সুযোগও দিয়েছিলেন।

ঈশ্বরের বাক্যগুলি একবার উচ্চারিত হয়ে গেলে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এই কার্যের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয়, এবং ঈশ্বরের মুখ থেকে যে সত্য প্রতিশ্রুত হয়েছিল ধীরে ধীরে তা বাস্তবে পরিণত হতে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ, সকলকিছুর মধ্যে পরিবর্তনসমূহ প্রতীয়মান হয়ে উঠতে আরম্ভ করে, অনেকটা যেরকম ভাবে বসন্তের আগমনের সাথে সাথে তৃণগুল্ম শ্যামল হয়ে ওঠে, পুষ্পাদি প্রস্ফুটিত হয়, গাছপালা থেকে মুকুল উদ্গত হয়, পাখিরা গান গাইতে শুরু করে, বুনো হাঁসেরা প্রত্যাবর্তন করে, এবং কৃষিক্ষেত্রগুলি মানুষে মানুষে ছয়লাপ হয়ে ওঠে…। বসন্তের আগমনের সাথে সাথে সমস্ত কিছু নবযৌবন লাভ করে, এবং এটাই হল সৃষ্টিকর্তার অত্যদ্ভূত ক্রিয়াকর্ম। ঈশ্বর যখন তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেন, তখন স্বর্গ ও মর্ত্যের সকলকিছু ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী পুনঃনবায়িত ও রূপান্তরিত হয়—কেউই এর ব্যতিক্রম নয়। ঈশ্বরের মুখ থেকে যখন কোনো অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি উচ্চারিত হয়, তখন সকল বস্তু এর পরিপূরণের কাজে ব্রতী হয়, এবং এর সিদ্ধির স্বার্থে এদের দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা হয়; ঈশ্বরের আধিপত্যের অধীনে সকল সৃষ্টবস্তু সুসমন্বিত ও বিন্যস্ত হয়ে তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে এবং নিজ নিজ ক্রিয়াকর্ম সম্পাদন করে যায়। এটিই ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বহিঃপ্রকাশ। এর মধ্যে তুমি কী দেখতে পাও? ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে তুমি কীভাবে জানতে পারো? ঈশ্বরের কর্তৃত্বের কি কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমা আছে? এর কি কোনো সময়সীমা রয়েছে? একে কি একটি বিশেষ উচ্চতাবিশিষ্ট, বা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বলে চিহ্নিত করা যায়? একে কি কোনো নির্দিষ্ট আকারের বা নির্দিষ্ট শক্তিসম্পন্ন বলে উল্লেখ করা যায়? মানুষের মাত্রার ধারণা দিয়ে কি এর পরিমাপ করা যায়? ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সময়ের সাথে হ্রাস-বৃদ্ধি পায় না, আসা-যাওয়া করে না, এবং এমন কেউ নেই যে তাঁর কর্তৃত্বের সঠিক বিরাটত্ব পরিমাপ করতে পারে। কোনো মানুষকে যখন ঈশ্বর আশীর্বাদ করেন, তারপর যত দিনই অতিবাহিত হোক না কেন, এই আশীর্বাদের ক্রিয়া বহাল থাকবে, এবং এই নিরবচ্ছিন্নতাই ঈশ্বরের অমেয় কর্তৃত্বের সাক্ষ্য বহন করবে, এবং বারংবার, মানবজাতিকে তা সৃষ্টিকর্তার অনির্বাণ প্রাণশক্তির পুনরাবির্ভাবকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দেবে। তাঁর কর্তৃত্বের প্রতিটি প্রদর্শন তাঁর মুখনিঃসৃত বাক্যের নিখুঁত বহিঃপ্রকাশ, যা সকল বস্তু ও মানবজাতির সামনে প্রদর্শিত হয়। তদুপরি, তাঁর কর্তৃত্বের দ্বারা নিষ্পন্ন সমস্ত কিছু তুলনাতীত পর্যায়ের সৌন্দর্যসম্পন্ন, এবং চূড়ান্ত রকমের নিখুঁত। বলা যায়, তাঁর চিন্তাভাবনা, তাঁর বাক্য, তাঁর কর্তৃত্ব, এবং তাঁর দ্বারা সাধিত সকল কার্য—এদের সবকিছুই এক অতুলনীয় রকমের অভিরাম চিত্র, এবং সৃজিত প্রাণীদের জন্য, মানবজাতির ভাষা এর তাৎপর্য ও মূল্যকে সুস্পটভাবে ব্যক্ত করতে অক্ষম। ঈশ্বর যখন কোনো মানুষের কাছে কোনো অঙ্গীকার করেন, তখন সেই মানুষটির সম্পর্কিত সকলকিছুর বিষয়ে তিনি তাঁর নিজের হাতের তালুর মতো সুবিদিত, সে কোথায় বাস করে, বা কী কাজ করে, প্রতিশ্রুতি লাভের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কালে তার পশ্চাৎপট, কিম্বা তার বসবাসের পরিবেশ কত বড়ো ভাঙচুরের সম্মুখীন হয়েছে—সবই ঈশ্বরের জানা। ঈশ্বরের বাক্য উক্ত হওয়ার পর যত সময়ই অতিবাহিত হোক না কেন, তাঁর কাছে, মনে হয় যেন বাক্যগুলি সবেমাত্র উচ্চারিত হয়েছে। এর অর্থ, ঈশ্বরের ক্ষমতা রয়েছে, এবং সেই জাতীয় কর্তৃত্ব রয়েছে যার সাহায্যে মানবজাতির কাছে তাঁর প্রতিশ্রুত প্রতিটি অঙ্গীকারের বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল থাকেন, সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, এবং সেগুলির পরিপূরণ ঘটান, এবং অঙ্গীকারটি যাই হোক না কেন, এটির সামগ্রিক পরিপূরণ ঘটাতে যত সময়ই লাগুক না কেন, এবং, উপরন্তু, এর নিষ্পাদন যত প্রশস্ত পরিসর জুড়েই ব্যাপ্ত থাকুক না কেন—উদাহরণস্বরূপ, সময়, ভূগোল, জাতি, এবং এরকম আরো কিছু—এই অঙ্গীকারের সম্পাদন ও পরিপূরণ হবেই, এবং, তদুপরি, এর সম্পাদন ও পরিপূরণের জন্য তাঁর সামান্যতম প্রচেষ্টা প্রয়োগের প্রয়োজনও পড়বে না। এর থেকে কী প্রমাণ হয়? এতে প্রমাণ হয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বিস্তার সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে, এবং সমগ্র মানবজাতিকে, নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে যথেষ্ট। ঈশ্বর আলোর সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ঈশ্বর শুধুমাত্র আলোকেই পরিচালনা করেন, বা তিনি জল সৃষ্টি করেছিলেন বলে কেবল জলকেই পরিচালনা করেন, এবং এমন নয় যে বাকি সমস্ত কিছু ঈশ্বরের সঙ্গে অসম্পর্কিত। এমন ভাবলে তা কি এক ভ্রান্ত উপলব্ধি হতো না? অব্রাহামের উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষণের ঘটনাটি কয়েক শত বৎসর পর যদিও মানুষের স্মৃতিতে ধীরে ধীরে আবছা হয়ে এসেছিল, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে, ঐ অঙ্গীকার তখনো একই রকম রয়ে গিয়েছিল। তখনো তা সম্পাদনের প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল, এবং কখনো স্থগিত হয়নি। ঈশ্বর কীভাবে তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছিলেন, কীভাবে সকল বস্তুকে সুসমন্বিত ও বিন্যস্ত করা হয়েছিল, এবং সেই সময় ঈশ্বরের সৃষ্টির সকল বস্তুর মধ্যে কত বিস্ময়কর কাহিনী সংঘটিত হয়েছিল সেসব কথা মানুষ কখনো জানেও নি এবং শোনেও নি, কিন্তু ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রদর্শন ও তাঁর কৃতকর্মের উদ্ঘাটনের প্রতিটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত সকল বস্তুর মধ্যে সঞ্চালিত ও বন্দিত হয়েছিল, সকল বস্তু সৃষ্টিকর্তার অত্যদ্ভূত ক্রিয়াকলাপগুলি পরস্পরকে দেখিয়েছিল ও সে বিষয়ে কথা বলাবলি করেছিল, এবং সকল বস্তুর উপর সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বের প্রতিটি বহু-কথিত কাহিনী আরো অনন্তকাল ব্যাপী সকল বস্তুর দ্বারা উৎকীর্তিত হবে। যে কর্তৃত্বের সাথে ঈশ্বর সকল বস্তুর উপর আধিপত্য করেন, এবং ঈশ্বরের ক্ষমতা, সকল বস্তুকে দেখায় যে ঈশ্বর সর্বস্থানে ও সর্বকালে বিরাজমান। একবার যখন তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার সর্বব্যাপিতা প্রত্যক্ষ করে ফেলবে, তখন তুমি দেখতে পাবে যে ঈশ্বর সর্বত্র ও সর্বকালে বিরাজমান। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা কাল, দেশ, পরিসর, বা কোনো মানুষ, ঘটনা বা বস্তুর দ্বারা আরোপিত সীমার মধ্যে আবদ্ধ নয়। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রসার মানুষের কল্পনার সীমাকে অতিক্রম করে যায়; মানুষের কাছে তা দুর্জ্ঞেয়, মানুষের কাছে তা কল্পনাতীত, এবং মানুষ কোনোদিনই তা সম্পূর্ণরূপে জেনে উঠতে সক্ষম হবে না।

কিছু মানুষ অনুমান ও কল্পনা করতে পছন্দ করে, কিন্তু মানুষের কল্পনা কত দূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে? তা কি এই বিশ্বকে অতিক্রম করে যেতে পারে? মানুষ কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রামাণিকতা ও ভ্রমশূন্যতাকে অনুমান ও কল্পনা করতে সক্ষম? মানুষের অনুমান ও কল্পনা কি তাকে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ দান করতে সক্ষম? তারা কি মানুষকে ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করাতে ও সেই কর্তৃত্বের কাছে সমর্পণ করাতে সক্ষম? বাস্তব তথ্য প্রমাণিত করে যে মানুষের অনুমান ও কল্পনা কেবল মানুষের ধীশক্তি থেকে সঞ্জাত এক উপাদান, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের ক্ষেত্রে তা তিলমাত্র সহায়তা বা উপযোগিতা প্রদান করে না। কল্পবিজ্ঞানের গল্প পাঠ করার পর, কেউ কেউ চাঁদকে কল্পনা করতে, বা নক্ষত্ররা কীরকম তা কল্পনা করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে মানুষের কোনো উপলব্ধি আছে। মানুষের কল্পনা কেবল কল্পনাই। এই জিনিসগুলির সম্পর্কিত তথ্যের বিষয়ে, অর্থাৎ, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সঙ্গে তাদের সংযোগের বিষয়ে, মানুষের বিন্দুমাত্র কোনো উপলব্ধি নেই। তুমি যদি চাঁদেই গিয়ে থাকো তাতে কী এসে যায়? এতে কি প্রমাণ হয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিষয়ে তোমার এক বহুমাত্রিক উপলব্ধি আছে? এতে কি প্রতিপন্ন হয় যে তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ব্যাপ্তি কল্পনা করতে সক্ষম? মানুষের অনুমান ও কল্পনা যেহেতু মানুষকে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে জানার সুযোগ দিতে অক্ষম, তাহলে মানুষের কী করা উচিত? সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে অনুমান বা কল্পনা আদৌ না করা, অর্থাৎ ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে জানার ক্ষেত্রে মানুষ অবশ্যই কখনো কল্পনার উপর ভরসা এবং অনুমানের উপর নির্ভর করবে না। এখানে তোমাদের আমি ঠিক কী বলতে চাইছি? বলতে চাইছি যে, তোমার কল্পনার উপর নির্ভর করে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব, ঈশ্বরের ক্ষমতা, ঈশ্বরের আপন স্বরূপ, এবং ঈশ্বরের সারসত্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা যাবে না। যেহেতু ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে জানার ক্ষেত্রে তুমি কল্পনার উপর ভরসা করতে পারো না, তাহলে কোন উপায়ে তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে এক প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারো? এই জ্ঞান অর্জনের পথ হল ঈশ্বরের বাক্যকে ভোজন ও পান করার মাধ্যমে, সহকারিতার মাধ্যমে, এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে অনুভব করার মাধ্যমে। এইভাবে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সম্বন্ধে তুমি এক ক্রমিক অভিজ্ঞতা ও নিশ্চয়তা লাভ করবে এবং এ বিষয়ে তুমি এক ক্রমিক উপলব্ধি ও ক্রমবর্ধমান জ্ঞান অর্জন করবে। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের এটিই একমাত্র উপায়; আর কোনো সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই। তোমাদের কল্পনা না করতে বলার অর্থ তোমাদের নিষ্ক্রিয়ভাবে বসে বিনাশের জন্য অপেক্ষা করানো নয়, বা কোনো কাজ করা থেকে তোমাদের নিবৃত্ত করা নয়। চিন্তাভাবনা ও কল্পনা করার জন্য তোমার মস্তিষ্ককে ব্যবহার না করার অর্থ হল সিদ্ধান্তে আসার জন্য যুক্তির প্রয়োগ না করা, বিশ্লেষণ করার জন্য জ্ঞানের ব্যবহার না করা, ভিত্তি হিসাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার না করা, তার পরিবর্তে ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে, সত্যের মাধ্যমে, জীবনে যাকিছুর তুমি সম্মুখীন হও সেই সমস্ত কিছুর মাধ্যমে উপলব্ধি, যাচাই, ও প্রতিপন্ন করা যে, যে ঈশ্বরে তুমি বিশ্বাস করো তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে, প্রতিপন্ন করা যে তোমার নিয়তির উপর তিনি সার্বভৌমত্ব ধারণ করেন, এবং প্রতিপন্ন করা যে তাঁর ক্ষমতা সর্বক্ষণ তাঁকে স্বয়ং প্রকৃত ঈশ্বর বলে প্রমাণিত করে। একমাত্র এই উপায়েই কেউ ঈশ্বরের সম্পর্কে এক উপলব্ধি অর্জন করতে সক্ষম। কেউ কেউ বলে থাকে যে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা এক সহজ পদ্ধতি খুঁজে পেতে চায়, কিন্তু তোমরা কি এরকম কোনো পন্থা ভাবনাচিন্তা করে বের করতে পারো? আমি তোমায় বলছি, চিন্তা করার কোনো দরকার নেই: অন্য কোনো পন্থা নেই! একমাত্র পন্থা হল তাঁর কথিত প্রতিটি বাক্য ও তাঁর সম্পাদিত সকল কার্যের মাধ্যমে বিবেকনিষ্ঠ ও অবিচল ভাবে ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা সেই বিষয়ে অবহিত হওয়া ও তাকে প্রতিপন্ন করা। ঈশ্বরকে জানার এটিই একমাত্র পথ। কারণ ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা, এবং ঈশ্বরের সমস্তকিছুই, অন্তঃসারশূন্য ও শূন্যগর্ভ নয়, বরং বাস্তব।

সকল বস্তু ও জীবিত সত্তার উপর সৃষ্টিকর্তার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের ঘটনাটিই সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের বাস্তব অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়

অনুরূপভাবে, ইয়োবের উপর যিহোবার আশীর্বাদ বর্ষণের ঘটনাটি ইয়োবের পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে। ঈশ্বর ইয়োবকে কী প্রদান করেছিলেন? “প্রভু পরমেশ্বর ইয়োবকে প্রথম জীবনের চেয়ে শেষ জীবনে আরও বেশী আশীর্বাদ করলেন। ইয়োব চোদ্দ হাজার মেষ, ছয় হাজার উট, দুহাজার বৃষ এবং এক হাজার গর্দভীর মালিক হলেন।” (ইয়োব ৪২:১২)। মানুষের পরিপ্রেক্ষিত থেকে, ইয়োবকে যা প্রদান করা হয়েছিল সেই সামগ্রীগুলি কী? সেগুলি কি মানবজাতির দৃষ্টিতে ধনসম্পদ ছিল? এই সম্পত্তি লাভের পর, ইয়োব কি সেই যুগে অত্যন্ত ধনবান হয়ে উঠতো না? তাহলে, কীভাবে সে এরকম ধনসম্পদের অধিকারী হল? কীসের দরুন তার এই বিত্তলাভ ঘটলো? বলাই বাহুল্য—ঈশ্বরের আশীর্বাদের কারণেই ইয়োব এই সম্পত্তির অধিকার লাভ করেছিল। এই ধনসম্পদকে ইয়োব কোন দৃষ্টিতে দেখেছিল, এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ বিষয়েই বা তার বিবেচনা কীরূপ ছিল—এসব নিয়ে আমরা এখানে আলোচনা করবো না। ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রসঙ্গে বলতে হয়, সকল মানুষই, দিনরাত, ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা করে, অথচ তার জীবৎকালে কতখানি ধনসম্পদ সে অর্জন করতে সক্ষম, বা সে ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করতে পারে কি না তার উপর মানুষের কোনো হাত নেই—এটা একটা তর্কাতীত সত্য! ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা রয়েছে মানুষের উপর যেকোনো সম্পদ অর্পণ করার, মানুষকে যেকোনো আশীর্বাদ লাভের সুযোগ দেওয়ার, কিন্তু তবু ঈশ্বরের আশীর্বাদ দানের একটি নীতি আছে। কী ধরনের মানুষকে ঈশ্বর আশীর্বাদ দান করেন? নিশ্চিতভাবেই, যে মানুষদের তিনি পছন্দ করেন তাদেরই আশীর্বাদ দান করেন। অব্রাহাম ও ইয়োব দুজনেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করেছিল, কিন্তু তাদের প্রাপ্ত আশীর্বাদ অভিন্ন ছিল না। অব্রাহামকে ঈশ্বর বালুরাশি ও নক্ষত্ররাজির সমসংখ্যক বংশধর দানের মাধ্যমে আশীর্বাদধন্য করেছিলেন। অব্রাহামের উপর আশীর্বাদ বর্ষণের দ্বারা, তিনি একজন একক মানুষের বংশধরসমূহকে, এবং একটি রাষ্ট্রকে, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলেছিলেন। এর মাধ্যমে, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব মানবজাতিকে শাসিত করেছিল, সকল বস্তু ও জীবিত সত্তার মধ্যে যে মানবজাতি ঈশ্বরের শ্বাসবায়ুকে তার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে গ্রহণ করেছিল। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সার্বভৌমত্বের অধীনে, এই মানবজাতি ঈশ্বরের নির্ধারিত গতিতে বংশবৃদ্ধি করেছিল, এবং ঈশ্বর নির্ধারিত এক পরিসরের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। নির্দিষ্ট করে, এই রাষ্ট্রের টিকে থাকার ক্ষমতা, প্রসারণের হার, এবং সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল—এই সবকিছুই ছিল ঈশ্বরের বন্দোবস্তের অঙ্গ, এবং এই সবকিছুর নীতি অব্রাহামের নিকট ঈশ্বর যে অঙ্গীকার করেছিলেন সম্পূর্ণরূপে তার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। অর্থাৎ, পরিস্থিতি যা-ই হোক, ঈশ্বরের অঙ্গীকার অবাধে অগ্রসর হতো এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রযত্নের অধীনে বাস্তবায়িত হতো। অব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের অঙ্গীকার মতো, জগতে যতই উথাল-পাথাল ঘটুক না কেন, যুগকাল নির্বিশেষে, মানবজাতিকে যে বিপর্যয়ই সহ্য করতে হোক, অব্রাহামের বংশধরেরা কিন্তু সমূলে বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকির সম্মুখীন হতো না, এবং তাদের রাষ্ট্রও বিলুপ্ত হতো না। এদিকে, ইয়োবের উপর বর্ষিত ঈশ্বরের আশীর্বাদ তাকে অত্যন্ত বিত্তশালী করে দিল। তাকে ঈশ্বর যা প্রদান করেছিলেন তা হলো একদল জীবন্ত, শ্বাসরত প্রাণী, যেগুলির খুঁটিনাটি বিবরণও—তাদের সংখ্যা, বংশবিস্তারের হার, বেঁচে থাকার হার, তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ, ইত্যাদি—সবকিছুই ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই জীবন্ত সত্তাগুলির যদিও বাক্‌শক্তি ছিল না, তবু তারাও সৃষ্টিকর্তার বন্দোবস্তের অঙ্গ ছিল, এবং তাদের জন্য ঈশ্বরের বন্দোবস্তের অন্তরালবর্তী নীতিটি ইয়োবকে ঈশ্বর যে আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার ভিত্তিতেই সাব্যস্ত হয়েছিল। অব্রাহাম ও ইয়োবকে ঈশ্বর যে আশীর্বাদ দান করেছিলেন তাতে প্রতিশ্রুত বিষয়গুলি স্বতন্ত্র হলেও, যে কর্তৃত্ব নিয়ে সৃষ্টিকর্তা সকল বস্তু ও জীবন্ত সত্তাকে পরিচালিত করেছিলেন তা অভিন্ন ছিল। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রতিটি অনুপুঙ্খ অব্রাহাম ও ইয়োবের কাছে তাঁর ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গীকার ও আশীর্বাদের মধ্যে অভিব্যক্ত হয়, এবং আরেকবার তা মানবজাতির কাছে প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব মানুষের কল্পনার সীমাকে অতিক্রম করে বহুদূর প্রসারিত। এই অনুপুঙ্খগুলি মানুষকে আরেকবার জানায় যে, সে যদি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে অবগত হতে চায়, তাহলে একমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে দিয়ে ও ঈশ্বরের কার্যের অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমেই তা অর্জিত হতে পারে।

সকলকিছুর উপর সার্বভৌমত্বের বিষয়ে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব মানুষকে একটি বাস্তব সত্যকে প্রণিধান করার সুযোগ দেয়: এমন নয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব কেবলমাত্র এই বাক্যগুলির মধ্যেই অন্তর্ধৃত “এবং ঈশ্বর বললেন, আলোর আবির্ভাব হোক, আর আলোকের অভ্যুদয় হলো, এবং, নভোমণ্ডল গঠিত হোক, আর মহাকাশ সৃষ্টি হলো, এবং, স্থলভূমি দেখা দিক, আর শুকনো জমি মাথা চাড়া দিলো”, বরং, তদুপরি, যেভাবে তিনি আলোর বিদ্যমানতা অব্যাহত রাখলেন, নভোমণ্ডলকে অন্তর্হিত হতে দিলেন না, এবং স্থলভূমিকে চিরকাল জলরাশি থেকে পৃথক রাখলেন, এবং সেই সঙ্গে যেভাবে তিনি তাঁর সৃষ্ট বস্তুসকলের উপর, অর্থাৎ আলোক, মহাকাশ, ও স্থলভূমির উপর আধিপত্য করলেন ও সেগুলিকে পরিচালিত করলেন তার মধ্যেও তাঁর কর্তৃত্ব মূর্ত হয়ে ওঠে। মানবজাতির উপর ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রদানের মধ্যে আর কোন বিষয় তুমি লক্ষ্য করো? স্পষ্টতই, অব্রাহাম ও ইয়োবকে আশীর্বাদ প্রদানের পরেই ঈশ্বরের পদক্ষেপ স্থগিত হয়ে যায়নি, কারণ তখন সবেমাত্র তিনি তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে শুরু করেছিলেন, এবং তিনি তাঁর প্রতিটি বাক্যকে বাস্তবতায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন, এবং চেয়েছিলেন তাঁর কথিত প্রতিটি খুঁটিনাটি সত্য হয়ে উঠুক, আর তাই, পরবর্তী বছরগুলিতে, যা কিছু তাঁর অভিপ্রেত ছিল সেগুলির সম্পাদন তিনি অব্যাহত রাখেন। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব আছে বলেই হয়তো মানুষ মনে করে যে ঈশ্বরের কেবল বাক্যোচ্চারণ করাই যথেষ্ট, এবং কোনো অঙ্গুলিহেলন ব্যতিরেকেই, সমস্ত বিষয় ও সকলকিছু নিষ্পন্ন হয়ে যায়। এরকম কল্পনা নিতান্তই হাস্যকর! বাক্যের মাধ্যমে মানুষের সাথে ঈশ্বরের সন্ধিচুক্তি স্থাপন, এবং বাক্যের প্রয়োগে ঈশ্বরের সমস্তকিছু সম্পাদনের বিষয়ে তুমি যদি শুধুমাত্র একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গিই গ্রহণ করো, এবং যাবতীয় কিছুর অস্তিত্বের উপর ঈশ্বরের কর্তৃত্বই যে আধিপত্য ধারণ করে, তার ইশারা ও বাস্তব সত্যগুলি প্রত্যক্ষ করতে যদি অসমর্থ হও, তাহলে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে তোমার উপলব্ধি নেহাতই শূন্যগর্ভ ও হাস্যকর! মানুষ যদি ঈশ্বরকে এই রকম বলে কল্পনা করে, তাহলে, বলতেই হবে, ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান খাদের শেষ কিনারার দিকে চালিত হয়ে এক কানাগলিতে পৌঁছে গেছে, কারণ মানুষের কল্পিত ঈশ্বর নিছক নির্দেশ জারি করে এমন এক যন্ত্রবিশেষ, কর্তৃত্বের অধিকারী ঈশ্বর নন। অব্রাহাম ও ইয়োবের দৃষ্টান্তগুলির মাধ্যমে তুমি কী দেখেছো? তুমি কি ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বাস্তব দিকটি প্রত্যক্ষ করেছো? অব্রাহাম ও ইয়োবকে আশীর্বাদ দানের পর, ঈশ্বর আর সেই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকেন নি, বা তাঁর সংবাদবাহকদের কাজে নিযুক্ত করে ফলাফল দেখার জন্য অপেক্ষাও করেন নি। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীতবর্তী হয়ে, ঈশ্বর বাক্যোচ্চারণ করা মাত্র, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের নির্দেশনায়, সমস্তকিছু ঈশ্বরের মনোবাঞ্ছা পূরণের কাজ শুরু করে দিলো, এবং ঈশ্বরের দরকার মতো মানুষজন, জিনিসপত্র, ও সামগ্রী প্রস্তুত করা হল। অর্থাৎ, ঈশ্বরের মুখ থেকে বাক্যগুলি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই, সমগ্র ভূভাগ জুড়ে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রযুক্ত হতে শুরু করলো, এবং অব্রাহাম ও ইয়োবের কাছে যে অঙ্গীকার তিনি করেছিলেন সেগুলির সম্পাদন ও পরিপূরণের এক কার্যক্রম তিনি চালু করে দিলেন, এবং সেই সাথেই তাঁর অভীষ্ট কার্যের প্রতিটি ধাপ ও প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে যা যা করা প্রয়োজন সেগুলির জন্য সমস্ত রকমের যথোচিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও তিনি নিয়ে ফেললেন। এই সময়টায়, ঈশ্বর শুধুমাত্র তাঁর বার্তাবাহকদেরই সুদক্ষভাবে পরিচালিত করেননি, তাঁর সৃষ্ট সকল বস্তুকেও পরিচালিত করেছিলেন। অর্থাৎ, তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের পরিসরের মধ্যে কেবলমাত্র বার্তাবাহকরাই ছিল না, বরং সৃষ্টির সমস্ত বস্তুই ছিল, যেগুলো তাঁর অভীষ্ট কার্যের সিদ্ধির লক্ষ্যে সুকৌশলে পরিচালিত হয়েছিল; এগুলিই ছিল ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি। তোমাদের কল্পনায়, কারো কারো ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে পশ্চাদুল্লিখিত উপলব্ধি থাকতে পারে: ঈশ্বরের কর্তৃত্ব আছে, এবং ঈশ্বরের ক্ষমতাও রয়েছে, তাই ঈশ্বরের কেবল তৃতীয় স্বর্গে, বা কোনো একটা নির্দিষ্ট স্থানে থাকলেই চলে, এবং তাঁর কোনো সুনির্দিষ্ট কাজ করার দরকার নেই, এবং ঈশ্বরের সমগ্র ক্রিয়াকর্ম তাঁর ভাবনার মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়। কেউ কেউ এমনও ভাবতে পারে যে, ঈশ্বর যদিও অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর কিছু করারই প্রয়োজন পড়ে নি, এবং কেবল বাক্যোচ্চারণ করাই তাঁর পক্ষে যথেষ্ট ছিল। সত্যি কি এমনই ঘটেছিল? স্পষ্টতই না! ঈশ্বর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হলেও, তাঁর কর্তৃত্ব প্রকৃত ও বাস্তব, শূন্যগর্ভ নয়। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রামাণিকতা ও বাস্তবতা ক্রমান্বয়ে প্রকাশিত ও মূর্ত হয়ে ওঠে তাঁর সকলকিছুর সৃজনের মধ্যে, যাবতীয় কিছুর উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, এবং মানবজাতিকে পথপ্রদর্শন ও পরিচালিত করতে তাঁর অনুসৃত পদ্ধতির মধ্যে। মানবজাতি ও সকল বস্তুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রতিটি পদ্ধতি, প্রতিটি পরিপ্রেক্ষিত, এবং প্রতিটি অনুপুঙ্খ, এবং তাঁর দ্বারা নিষ্পন্ন সকল কার্য, আর সেই সাথে সকল বস্তু সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি—এই সবকিছুই আক্ষরিকভাবে প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা শূন্যগর্ভ বাগাড়ম্বর মাত্র নয়। তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা অবিরত, এবং সকল বস্তুর মধ্যেই, প্রদর্শিত ও প্রকাশিত হয়। এই প্রকাশ ও উদ্ঘাটনগুলি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বাস্তব অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়, কারণ তিনি তাঁর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করছেন তাঁর কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, সমস্তকিছুকে নির্দেশদান করতে, এবং সমস্তকিছুকে প্রতিটি মুহূর্তে শাসন করতে; স্বর্গদূতরাই হোক কি ঈশ্বরের বার্তাবহ—কারো পক্ষেই ঈশ্বরের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে প্রতিস্থাপিত করা সম্ভব নয়। অব্রাহাম ও ইয়োবেকে কোন আশীর্বাদ প্রদান করা হবে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ঈশ্বর—এই সিদ্ধান্ত ঈশ্বরকেই নিতে হতো। ঈশ্বরের বার্তাবহরা নিজেরা গিয়ে অব্রাহাম ও ইয়োবের সাথে সাক্ষাৎ করলেও, তাদের এই কাজের ভিত্তি ছিল ঈশ্বরের আদেশসমূহ, এবং তাদের পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছিল ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনে, এবং একইভাবে, এই দূতেরাও ছিল ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের অধীন। বাইবেলে লিপিবদ্ধ নথিতে যদিও মানুষ ঈশ্বরের বার্তাবাহকদেরই অব্রাহামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখে, যিহোবা ঈশ্বরকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু করতে সেখানে দেখা যায় না, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র যিনি সত্যিই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেন তিনি স্বয়ং ঈশ্বর, এবং এ ব্যাপারে কোনো মানুষের কোনো সংশয় অনুমোদনযোগ্য নয়! যদিও তুমি লক্ষ্য করেছো যে স্বর্গদূত ও বার্তাবাহকেরা প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী এবং তারা অলৌকিক কর্মও সম্পাদন করেছে, অথবা ঈশ্বরের দ্বারা অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালন করেছে, কিন্তু তাদের কাজকর্মগুলি করা হয় নিতান্তই ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বসমূহ সম্পন্ন করার স্বার্থে, এবং কোনোক্রমেই সেগুলি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের এক প্রদর্শন নয়—কারণ সমস্তকিছু সৃষ্টি করার ও শাসন করার যে কর্তৃত্ব সৃষ্টিকর্তার রয়েছে, তা কোনো মানুষ বা বস্তুর নেই, বা তারা এর অধিকারী নয়। সুতরাং, কোনো মানুষ বা বস্তুই সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে বা প্রদর্শন করতে পারে না।

সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব অপরিবর্তনীয় এবং অপ্রতিরোধ্য

ধর্মগ্রন্থের এই তিনটি অংশের মধ্যে তোমরা কী লক্ষ্য করেছো? ঈশ্বর কর্তৃক তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের যে একটি নীতি আছে তা কি তোমরা লক্ষ্য করেছো? উদাহরণস্বরূপ, মানুষের সঙ্গে এক সন্ধিচুক্তি স্থাপন করতে ঈশ্বর এক মেঘধনুকে ব্যবহার করেছিলেন—বিশ্বকে বিনাশ করতে তিনি যে আর কখনো কোনো প্লাবনকে কাজে লাগাবেন না মানুষকে এই বিষয়ে অবহিত করতে মেঘমালার মাঝে তিনি এক মেঘধনু স্থাপন করেন। মানুষ আজ যে মেঘধনু দেখে তা কি সেই ঈশ্বরের মুখে কথিত মেঘধনু? এর প্রকৃতি ও অর্থ কি পরিবর্তিত হয়েছে? নিঃসন্দেহে, তা হয় নি। এই কার্য নির্বাহ করতে ঈশ্বর তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ করেছিলেন, এবং মানুষের সঙ্গে যে সন্ধিচুক্তি তিনি স্থাপন করেছিলেন তা আজ অবধি কার্যকর রয়েছে, এবং কবে এই সন্ধিচুক্তির পরিবর্তন সাধন করা হবে, সেটিও, অতি অবশ্যই, ঈশ্বরেরই সিদ্ধান্ত হবে। “আকাশের গায়ে আমি আমার ধনু স্থাপন করব”, এ কথা বলার পর থেকে আজ অবধি, ঈশ্বর সততই এই সন্ধিচুক্তিকে মান্য করে চলেছেন। এর থেকে কী বোঝা যায়? বোঝা যায়, ঈশ্বর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হলেও, তাঁর ক্রিয়াকর্মে তিনি অত্যন্ত কঠোর ও নীতিনিষ্ঠ, এবং সর্বদাই তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পালন করেন। তাঁর এই কঠোর নিয়মনিষ্ঠতা, এবং তাঁর কার্যাদির নীতিসমূহ সৃষ্টিকর্তার অপ্রতিরোধ্যতা এবং তাঁর কর্তৃত্বের অনতিক্রম্যতাকে প্রতিপন্ন করে। যদিও তিনি সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী, এবং সমস্ত কিছুই তাঁর আধিপত্যের অধীন, এবং যদিও সকলকিছুকে শাসন করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে, তবু ঈশ্বর কখনো তাঁর নিজের পরিকল্পনাকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্যাহত করেননি, এবং যতবার তিনি তাঁর কর্তৃত্বের প্রয়োগ ঘটান, প্রত্যেকবার কঠোরভাবে তাঁর নিজস্ব নীতিসমূহ অনুসারেই তা করা হয়, এবং প্রতিবারই নির্ভুলভাবে তা তাঁর মুখ-নিঃসৃত বাক্যকে মেনে চলে এবং তাঁর পরিকল্পনার পদক্ষেপ ও উদ্দেশ্যসমূহের অনুসরণ করে। বলাই বাহুল্য, ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সকল বস্তুও ঈশ্বরের কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহকে মেনে চলে, এবং কোনো মানুষ বা সামগ্রী তাঁর কর্তৃত্বের ব্যবস্থাপনার বাইরে নয়, এবং তারা তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহের কোনো পরিবর্তন সাধনেও সক্ষম নয়। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, যারা আশীর্বাদধন্য তারা তাঁর কর্তৃত্বের দ্বারা সাধিত সৌভাগ্যের অধিকারী হয়, এবং যারা অভিশপ্ত ঈশ্বরের কর্তৃত্বের দরুনই তারা তাদের শাস্তি লাভ করে। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সার্বভৌমত্বের অধীনে, কোনো মানুষ বা বস্তু তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের থেকে অব্যাহতি পায় না, এবং তারা তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহের কোনো রদবদল ঘটাতেও সক্ষম নয়। কোনো উপাদানের পরিবর্তনের হেতু সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের কোনো পরিবর্তন হয় না, এবং একই ভাবে, তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নীতিসমূহও কোনো কারণের হেতু পাল্টে যায় না। স্বর্গ ও পৃথিবী ব্যাপক কোনো উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের তাতে কোনো রূপান্তর ঘটবে না; সকল কিছুই বিলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্ব কখনো অন্তর্হিত হবে না। এই হল সৃষ্টিকর্তার অপরিবর্তনীয় ও অপ্রতিরোধ্য কর্তৃত্বের সারসত্য, এবং এই হল সৃষ্টিকর্তার সেই অনন্যতা!

ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে জানার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বাক্যগুলি অত্যন্ত জরুরী, এবং নীচের আলাপ-আলোচনায় এর অর্থ পরিস্ফুট করা হল। আমাদের শাস্ত্রবাক্যের পাঠ চালিয়ে যাওয়া যাক।

৪. শয়তানের প্রতি ঈশ্বরের আদেশ

ইয়োবে ২:৬ প্রভু পরমেশ্বর শয়তানকে বললেন, ঠিক আছে, তোমার হাতেই তাকে আমি ছেড়ে দিলাম, তুমি শুধু তাকে প্রাণে মেরো না।

শয়তান কখনো সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করার স্পর্ধা করেনি, আর এই কারণেই, সমস্ত কিছু সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করে

এই উদ্ধৃতিটি ইয়োবের পুস্তক থেকে গৃহীত, এবং এই বাক্যে “সে” কথাটি ইয়োবেকে নির্দেশ করে। সংক্ষিপ্ত হলেও, এই বাক্যটি অনেকগুলি বিষয়ের ব্যাখ্যা দেয়। এটি আধ্যাত্মিক জগতে সংঘটিত ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যে এক বিশেষ কথোপকথনের বিবরণ দেয়, এবং আমাদের জানায় যে ঈশ্বরের বাক্যের লক্ষ্য ছিল শয়তান। ঈশ্বর সুনির্দিষ্টভাবে যা বলেছিলেন এতে সেটিও লিপিবদ্ধ আছে। ঈশ্বরের বাক্যগুলি ছিল শয়তানের প্রতি এক নির্দেশ এবং আজ্ঞা। এই আদেশটির সুনির্দিষ্ট বিবরণ ইয়োবের প্রাণ রক্ষার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে ইয়োবের জন্য শয়তানের আচরণে ঈশ্বর একটি সীমারেখা টেনে দিয়েছিলেন—শয়তান ইয়োবকে প্রাণে মারতে পারবে না। এই বাক্য থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমরা অবগত হই তা হল এটি শয়তানের প্রতি ঈশ্বরের উচ্চারিত বাক্য। ইয়োবের পুস্তকের মূল পাঠ অনুযায়ী, এমন বাক্যের পটভূমি ছিল এইরকম: শয়তান ইয়োবকে অভিযুক্ত করতে চেয়েছিল, আর তাই ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার আগে শয়তানকে ঈশ্বরের সম্মতি নিতে হতো। ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার জন্য শয়তানের অনুরোধে সম্মতি জ্ঞাপনের সময়, ঈশ্বর শয়তানের উপর শর্ত আরোপ করেন: “ইয়োবেকে তোমার হাতে অর্পণ করা হল বটে; কিন্তু তুমি তাকে প্রাণে মেরো না।” এই বাক্যগুলির চরিত্রটি কী রকম? স্পষ্টতই বাক্যগুলি একটা নির্দেশ, একটি হুকুম। এই বাক্যগুলির প্রকৃতিটি প্রণিধান করার পর, তোমার অবশ্যই উপলব্ধি করা উচিত যে এই হুকুম যিনি জারি করেছিলেন তিনি ছিলেন ঈশ্বর, আর এই আজ্ঞা যে গ্রহণ ও মান্য করেছিল সে ছিল শয়তান। বলাই বাহুল্য, এই বাক্যগুলি পাঠ করেছে এমন যে কারো কাছে, এই নির্দেশে ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যের সম্পর্কটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। নিঃসন্দেহে, এটি আধ্যাত্মিক জগতে ঈশ্বর ও শয়তানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কও, এবং একই সঙ্গে ঈশ্বর ও শয়তানের কথোকথনের সূত্রে শাস্ত্র-বর্ণিত ঈশ্বর ও শয়তানের পরিচয় ও মর্যাদার মধ্যে পার্থক্যও বটে, এবং এটি ঈশ্বর ও শয়তানের পরিচয় ও মর্যাদার মধ্যে সেই সুস্পষ্ট ফারাক যার বিষয়ে মানুষ আজও এই সুনির্দিষ্ট দৃষ্টান্ত ও মূল প্রামাণিক নথি থেকে অবহিত হতে পারে। এই পর্যায়ে এসে, আমাকে বলতেই হবে যে ঈশ্বরের পরিচয় ও মর্যাদার বিষয়ে মানুষের জ্ঞানের ক্ষেত্রে এই বাক্যগুলির লিখিত বিবরণ এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এবং এই বিবরণ মানবজাতির ঈশ্বর-জ্ঞানের বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। আধ্যাত্মিক জগতে সৃষ্টিকর্তা ও শয়তানের মধ্যে এই কথোপকথনের মধ্য দিয়ে, মানুষ সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের আরেকটি সুনির্দিষ্ট আঙ্গিক উপলব্ধি করতে সক্ষম। এই বাক্যগুলি সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্বের আরেকটি সাক্ষ্য।

আপাতদৃষ্টিতে, যিহোবা ঈশ্বর শয়তানের সঙ্গে এক কথোপকথনে নিরত হচ্ছেন। নির্যাসের দিক থেকে, যে ভঙ্গিমায় যিহোবা ঈশ্বর কথা বলেন এবং যে উচ্চতায় তিনি অধিষ্ঠান করেন, তা শয়তানের থেকে উচ্চতর। অর্থাৎ যিহোবা ঈশ্বর কর্তৃত্বের সুরে শয়তানকে নির্দেশ দিচ্ছেন, এবং শয়তানের কী করবে ও করবে না তা তাকে বলে দিচ্ছেন, বলছেন ইয়োবে ইতিমধ্যেই শয়তানের হস্তগত, এবং ইয়োবের প্রতি শয়তান তার ইচ্ছা মতো আচরণ করতে পারে—কিন্তু সে ইয়োবকে প্রাণে মারতে পারবে না। এর অন্তর্নিহিত অর্থটি হল, ইয়োবকে শয়তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তার প্রাণের অধিকার শয়তানকে হস্তান্তর করা হয়নি; ঈশ্বর অনুমতি না দিলে কেউই ইয়োবের প্রাণ ঈশ্বরের হাত থেকে কেড়ে নিতে পারে না। শয়তানের প্রতি তাঁর এই আদেশে ঈশ্বরের মনোভঙ্গি সুস্পষ্টভাবে উচ্চারিত হয়, এবং কোন অবস্থান থেকে যিহোবা ঈশ্বর শয়তানের সাথে কথা বলেন তাও এই আদেশ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত ও উদ্ঘাটিত করে। এখানে, যিহোবা ঈশ্বর শুধু যে সেই ঈশ্বরের মর্যাদা ধারণ করেন যিনি আলো ও বাতাস এবং সকল বস্তু ও জীবিত সত্তার সৃজন ঘটিয়েছিলেন, যে ঈশ্বর যাবতীয় বস্তু ও জীবিত সত্তার উপর সার্বভৌমত্বের অধিকারী, তা-ই নয়, বরং একই সঙ্গে তিনি সেই ঈশ্বরের মর্যাদাও ধারণ করেন যিনি মানবজাতির উপর এবং মৃতস্থানের উপর আধিপত্য করেন, যে ঈশ্বর সকল জীবিত বস্তুর জীবন ও মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করেন। আধ্যাত্মিক জগতে, ঈশ্বর ভিন্ন আর কে শয়তানের প্রতি এহেন এক আদেশ জারির দুঃসাহস দেখাতো? আর ঈশ্বর কেন স্বয়ং ব্যক্তিগতভাবে শয়তানের প্রতি তাঁর এই আদেশ জারি করেছিলেন? কারণ ইয়োবে সহ সকল মানুষের জীবনই ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ঈশ্বর শয়তানকে ইয়োবের ক্ষতি করার বা তার প্রাণহানি করার অনুমতি দেন নি, এমনকি শয়তানকে যখন ঈশ্বর ইয়োবেকে প্রলুব্ধ করার অনুমোদন দেন, তখনো তিনি নির্দিষ্টভাবে এরকম এক আদেশ জারি করতে ভোলেন নি, এবং আরেকবার তিনি শয়তানকে আদেশ দিয়েছিলেন যেন সে ইয়োবকে প্রাণে না মারে। শয়তান কখনোই ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করার স্পর্ধা করেনি, এবং তদুপরি, সতত সে অভিনিবেশ সহকারে ঈশ্বরের আদেশ ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশ শ্রবণ করেছে ও মান্য করেছে, কখনো সেগুলি অগ্রাহ্য করার সাহস করেনি, এবং নিশ্চিত ভাবেই, ঈশ্বরের কোনো আদেশকে স্বাধীনভাবে পরিবর্তিত করার সাহসও করেনি। শয়তানের জন্য ঈশ্বর অতখানি সীমারেখাই ধার্য করে দিয়েছেন, আর তাই শয়তান কখনো এই সীমারেখা অতিক্রম করার স্পর্ধা করেনি। এ কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের শক্তিমত্তা নয়? এ কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের সাক্ষ্য নয়? ঈশ্বরের প্রতি কেমন আচরণ করতে হবে এবং ঈশ্বরকে কোন দৃষ্টিতে দেখতে হবে সে বিষয়ে মানুষের অপেক্ষা শয়তানের অনেক স্বচ্ছতর উপলব্ধি রয়েছে, আর তাই, আধ্যাত্মিক জগতে, ঈশ্বরের মর্যাদা ও কর্তৃত্বকে শয়তান খুব পরিষ্কার চোখে দেখে, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের শক্তিমত্তা এবং তাঁর কর্তৃত্ব প্রয়োগের নেপথ্যের নীতিসমূহের বিষয়ে তার এক গভীর উপলব্ধি আছে। এগুলিকে উপেক্ষা করার দুঃসাহস সে আদৌ করে না, এবং কোনো ভাবে সেগুলিকে অমান্য করা, বা ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করে এমন কোনো কাজ করার স্পর্ধাও সে করে না, এবং কোনোভাবে ঈশ্বরের ক্রোধের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দুঃসাহস দেখায় না। প্রকৃতির দিক দিয়ে মন্দ ও উদ্ধত হলেও, শয়তান কখনো ঈশ্বরের নির্ধারিত তার গণ্ডি ও সীমারেখা অতিক্রম করার স্পর্ধা করেনি। লক্ষলক্ষ বছর ধরে এই সীমারেখাগুলি সে কঠোরভাবে মেনে চলেছে, তার প্রতি ঈশ্বরের প্রতিটি নির্দেশ ও আদেশ মান্য করেছে, এবং কখনো গণ্ডি লঙ্ঘন করার সাহস করেনি। বিদ্বেষপরায়ণ হলেও, শয়তান ভ্রষ্ট মানবজাতি অপেক্ষা অনেক বেশি বিচক্ষণ; সৃষ্টিকর্তার পরিচয় সে জানে, এবং নিজের সীমারেখাও তার জানা। শয়তানের এই “অনুগত” কাজকর্ম থেকে প্রতিভাত হয় যে ঈশ্বরের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হল শয়তানের পক্ষে অলঙ্ঘনীয় এক স্বর্গীয় অধ্যাদেশ, এবং সুনির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের অনন্যতা ও কর্তৃত্বের কারণেই সমস্ত কিছু এক সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয় এবং বংশবৃদ্ধি করে, মানবজাতি ঈশ্বরের স্থাপিত গতিপথের মধ্যে জীবনধারণ ও সংখ্যাবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়, যেখানে কোনো মানুষ বা সামগ্রী এই শৃঙ্খলাকে বিপর্যস্ত করতে অপারগ, এবং কোনো মানুষ বা বস্তু এই বিধানের পরিবর্তনেও অক্ষম—কারণ তারা সকলেই সৃষ্টিকর্তার করতল থেকে এবং সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ ও কর্তৃত্ব থেকে উদ্ভূত।

যিনি সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের অধিকারী, একমাত্র সেই ঈশ্বরই অনন্য কর্তৃত্ব ধারণ করেন

শয়তানের বিশেষ পরিচয়ের কারণে অনেক মানুষ তার বিভিন্ন দিকের উদ্ভাসের ব্যাপারে তীব্র কৌতূহল প্রদর্শন করে। এমনকি এমন অনেক নির্বোধ মানুষও আছে যারা ভাবে, ঈশ্বরের সাথেসাথে শয়তানও কর্তৃত্বের অধিকারী, কারণ শয়তান অলৌকিক ঘটনা প্রদর্শনে, এবং মানবজাতির অসাধ্য কর্ম সম্পাদনে সক্ষম। তাই, ঈশ্বরের আরাধনা করার পাশাপাশি মানবজাতি শয়তানের জন্যও তার অন্তরে একটা স্থান সংরক্ষিত করে রাখে, এবং এমনকি ঈশ্বর জ্ঞানে শয়তানের উপাসনাও করে। এই মানুষগুলি একই সঙ্গে করুণা ও ঘৃণার যোগ্য। তাদের অজ্ঞানতার কারণে তারা করুণার উদ্রেগকারী, এবং তাদের উৎপথগমন ও মজ্জাগত দুষ্ট উপাদানের কারণে তারা ঘৃণ্য। এই পর্যায়ে এসে, আমার মনে হয় কর্তৃত্ব কী, তা কী চিহ্নিত করে, এবং তা কীসের পরিচায়ক, এগুলি তোমাদের জানানোটা আবশ্যক। ব্যাপক অর্থে, স্বয়ং ঈশ্বরই কর্তৃত্ব, তাঁর কর্তৃত্ব ঈশ্বরের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সারসত্যকে চিহ্নিত করে, এবং স্বয়ং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ঈশ্বরের মর্যাদা ও স্বরূপের পরিচায়ক। যেহেতু বিষয়টি এরকম, তাহলে শয়তান কি একথা বলার স্পর্ধা রাখে যে সে নিজেই ঈশ্বর? শয়তান কি এমন দাবি করার স্পর্ধা রাখে যে সেই সকলকিছুর স্রষ্টা, এবং সকলকিছুর উপর সার্বভৌমত্ব ধারণ করে? অবশ্যই পারে না! কারণ সকলকিছুর সৃজন ঘটাতে সে অক্ষম; আজ পর্যন্ত, ঈশ্বর-সৃষ্ট কোনো কিছুই সে কখনো তৈরি করেনি, এবং জীবন আছে এমন কিছুও কখনো সৃষ্টি করেনি। যেহেতু শয়তানের ঈশ্বরের কর্তৃত্ব নেই, তাই সম্ভবত কখনোই ঈশ্বরের মর্যাদা ও স্বরূপের অধিকার লাভ করা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না, এবং এটি তার সারসত্যের দ্বারাই নির্ধারিত। শয়তানের কি ঈশ্বরের সমান ক্ষমতা আছে? অবশ্যই নেই! শয়তানের ক্রিয়াকলাপ ও অলৌকিকতার প্রদর্শনকে কী বলা যায়? তা কি ক্ষমতা? একে কি কর্তৃত্ব বলা চলে? নিশ্চিতভাবেই না! শয়তান মন্দের প্রবাহকে দিকনির্দেশনা দান করে, এবং ঈশ্বরের কার্যের প্রতিটি দিকে বিপর্যয়, হানি, ও ব্যাঘাতের সৃষ্টি করে। মানবজাতিকে কলুষিত ও অপপ্রযুক্ত করা, এবং মানুষ যাতে মৃত্যুর ছায়াচ্ছন্ন উপত্যকার অভিমুখে এগিয়ে চলে সেই উদ্দেশ্যে মানুষকে ভ্রষ্টাচারের দিকে ও ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করার দিকে প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করা ছাড়া, বিগত হাজার হাজার বছর ধরে শয়তান এমন কিছু কি করেছে যা মানুষের কাছে যৎসামান্যও স্মরণে রাখার, প্রশংসা করার, বা সযত্নে লালন করার যোগ্য? শয়তান যদি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী হতো, তাহলে কি মানবজাতি তার দ্বারা ভ্রষ্ট হতো? শয়তানের যদি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা থাকতো, মানবজাতি কি তবে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতো? শয়তানের যদি ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থাকতো, তাহলে কি মানুষ ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে মৃত্যুর দিকে মুখ ফেরাতো? শয়তানের যেহেতু কোনো কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা নেই, তাই তার সকল ক্রিয়াকর্মের সারসত্যের সম্বন্ধে আমাদের কোন সিদ্ধান্তে আসা উচিত? কিছু মানুষ আছে যারা শয়তানের সকল কাজকর্মকে নেহাতই চালাকি বলে সংজ্ঞায়িত করে থাকে, কিন্তু আমার মনে হয় এরকম একটি সংজ্ঞা ঠিক যথোপযুক্ত নয়। মানবজাতিকে কলুষিত করার লক্ষ্যে শয়তানের সকল মন্দ কাজকর্ম কি নিছকই চালাকি? যে দুষ্ট শক্তির সাহায্যে শয়তান ইয়োবের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিল, এবং ইয়োবকে নিগৃহীত ও গ্রাস করার জন্য তার যে তীব্র লালসা, সম্ভবত তা নিছক চাতুরীর দ্বারা অর্জনসাধ্য ছিল না। পিছন ফিরে দেখলে, ইয়োবের মালিকানাধীন যে পশুর পাল পাহাড়-পর্বত ছাড়িয়ে দূরদূরান্তে বিচরণ করতো, এক লহমায় তা বিলুপ্ত হয়ে গেল; এক মুহূর্তের মধ্যে, ইয়োবের বিপুল ঐশ্বর্য অন্তর্হিত হল। এটি কি নিছক চালাকির দ্বারা করে ওঠা সম্ভব ছিল? শয়তানের সকল কাজের প্রকৃতিই অনিষ্ট সাধন, বাধাসৃষ্টি, বিনষ্টিকরণ, ক্ষতিসাধন, দুষ্টতা, বিদ্বেষপরায়ণতা, এবং তমসার মতো নেতিবাচক শব্দের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও মানানসই, আর তাই যাবতীয় অধার্মিকতা ও মন্দের সংঘটন অমোঘভাবে শয়তানের কর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং শয়তানের মন্দ সারসত্যের থেকে তা অবিচ্ছেদ্য। শয়তান যতোই “শক্তিধর” হোক না কেন, যতোই সে দুর্বিনীত ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হোক, তার ক্ষতিসাধনের ক্ষমতা যত বিপুলই হোক, মানুষকে ভ্রষ্ট ও প্রলুব্ধ করার লক্ষ্যে সে যত বিচিত্র কৌশলই প্রয়োগ করুক, মানুষকে ভীতিপ্রদর্শন করতে তার কৌশল ও অভিসন্ধি যত চাতুর্যপূর্ণই হোক, যে রূপে সে অধিষ্ঠান করে সে যত পরিবর্তনশীলই হোক, কোনোদিন সে একটিমাত্র জীবন্ত বস্তু সৃষ্টি করতেও সক্ষম হয়নি, কোনোদিন সে সকলকিছুর অস্তিত্বের নিমিত্ত বিধান বা নিয়মাবলী প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়নি, এবং কোনোদিন জীবিত বা নির্জীব কোনো বস্তুকেই শাসন ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। মহাকাশ ও নভোমণ্ডলের মধ্যে, এমন একজন মানুষ বা এমন একটি বস্তুও নেই যা শয়তানের থেকে উদ্ভূত হয়েছিল বা তার দরুন বিদ্যমান; এমন একজন মানুষ বা এমন একটি বস্তুও নেই যা শয়তানের দ্বারা শাসিত বা নিয়ন্ত্রিত। উল্টে, তাকে যে শুধু ঈশ্বরের আধিপত্যের অধীনে বসবাস করতে হয় তা-ই নয়, তদুপরি ঈশ্বরের সকল নির্দেশ ও আদেশ মেনে চলতে সে বাধ্য। ঈশ্বরের অনুমতি ব্যতীত, ভূভাগের এক বিন্দু জল বা একটি বালুকণাকে স্পর্শ করাও শয়তানের পক্ষে দুরূহ; ঈশ্বরের অনুমোদন ব্যতিরেকে, ঈশ্বর-সৃষ্ট মানবজাতি দূরে থাক, ভূমির উপর এমনকি পিঁপড়েদের নড়ানোর স্বাধীনতাও শয়তানের নেই। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, পর্বতের লিলিফুল, বাতাসে উড়ন্ত পাখি, সমুদ্রের মাছ, পৃথিবীপৃষ্ঠের লার্ভাকীট অপেক্ষাও শয়তান নিকৃষ্ট। সকল বস্তুর মধ্যে শয়তানের ভূমিকা হল যাবতীয় কিছুর সেবা করা, এবং মানবজাতির জন্য কাজ করা, এবং ঈশ্বরের কার্য ও তাঁর ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনার সেবা করা। তার প্রকৃতি যতোই বিদ্বেষপরায়ণ হোক, এবং তার সারসত্য যতোই মন্দ হোক না কেন, একমাত্র যে কাজটি সে করতে পারে তা হল কর্তব্যপরায়ণ ভাবে নিজের কাজটির প্রতি বিশ্বস্ত থাকা: ঈশ্বরের সেবায় ব্যবহৃত হওয়া, এবং ঈশ্বরের প্রতিতুলনায় এক বিষম সত্তা হিসাবে নিজেকে উপস্থাপিত করা। এই হল শয়তানের উপাদান ও অবস্থান। শয়তানের সারসত্যের সাথে জীবনের কোনো সম্পর্ক নেই, ক্ষমতার সাথে তা সম্পর্করহিত, কর্তৃত্বের সাথেও তা সম্পর্কবিযুক্ত; শয়তান ঈশ্বরের হাতে নিছকই এক ক্রীড়নক, ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত এক যন্ত্র মাত্র!

শয়তানের প্রকৃত স্বরূপ প্রণিধান করার পরেও, কর্তৃত্ব যে কী তা অনেক মানুষ এখনো উপলব্ধি করে উঠতে পারে না, তাই আমিই তোমাকে বুঝিয়ে বলছি! কর্তৃত্ব বিষয়টিকেই ঈশ্বরের ক্ষমতা হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। প্রথমত, একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দুটি বিষয়ই ইতিবাচক। নেতিবাচক কোনোকিছুর সঙ্গে এদের কোনো সংযোগ নেই, এবং যেকোনো সৃজিত বা অসৃজিত সত্তার সঙ্গেও এরা সম্পর্করহিত। ঈশ্বরের ক্ষমতা যে কোনো আকৃতির জীবন্ত ও প্রাণসম্পন্ন বস্তু সৃষ্টি করতে সক্ষম, এবং তা ঈশ্বরের জীবনের দ্বারা নির্ধারিত হয়। ঈশ্বরই জীবন, তাই তিনিই সকল জীবিত সত্তার উৎস। তদুপরি, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সকল জীবিত সত্তাকে ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্য মেনে চলাতে পারে, অর্থাৎ, ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাক্য অনুযায়ী তাদের অস্তিত্ব লাভ করাতে পারে, এবং ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে তাদের জীবনধারণ ও বংশবিস্তার করাতে পারে, যার পর ঈশ্বর সকল জীবিত সত্তাকে শাসন ও নির্দেশদান করেন, এবং কোনোদিন এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না, চিরদিন ও অনন্তকাল ব্যাপী। কোনো মানুষ বা জড়বস্তু এই গুণগুলির অধিকারী নয়; কেবল সৃষ্টিকর্তাই এধরনের শক্তি অধিকার ও ধারণ করেন, আর সেই কারণেই একে কর্তৃত্ব বলা হয়। এটিই সৃষ্টিকর্তার অনন্যতা। সেই অর্থে, খোদ “কর্তৃত্ব” শব্দটিই হোক কি এই কর্তৃত্বের সারসত্য, উভয়কে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট করা যায়, কারণ তা সৃষ্টিকর্তার অনন্য পরিচয় ও সারসত্যের এক প্রতীক, এবং তা সৃষ্টিকর্তার পরিচয় ও পদমর্যাদাকে সূচিত করে; সৃষ্টিকর্তা ব্যতিরেকে, কোনো মানুষ বা জড়বস্তুকে “কর্তৃত্ব” শব্দটির সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত করা যায় না। এই হল সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্বের এক ব্যাখ্যা।

শয়তান ইয়োবের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকালেও, ঈশ্বরের অনুমোদন ব্যতীত সে ইয়োবের শরীরের একখানি চুলও স্পর্শ করার স্পর্ধা করেনি। শয়তান মজ্জাগতভাবে দুষ্ট ও নিষ্ঠুর হলেও, ঈশ্বর তাকে তাঁর আদেশ জারি করার পর, ঈশ্বরের নির্দেশ আদেশ মান্য করা ভিন্ন শয়তানের গত্যন্তর ছিল না। তাই, ইয়োবকে হাতে পাওয়ার পর শয়তান মেষের দঙ্গলের মাঝে এক নেকড়ের মতো উন্মত্ত হয়ে গেলেও, তার উপর ঈশ্বরের আরোপিত সীমারেখাকে বিস্মৃত হওয়ার দুঃসাহস সে করেনি, ঈশ্বরের আদেশকে লঙ্ঘন করার দুঃসাহস করেনি, এবং তার সকল কাজে, ঈশ্বরের বাক্যের সীমানা ও নীতিসমূহ থেকে বিচ্যুত হওয়ার স্পর্ধা শয়তান করেনি—এটি কি একটি বাস্তব সত্য নয়? এর থেকে প্রতিপন্ন হয় যে শয়তান যিহোবা ঈশ্বরের কোনো বাক্যের বিরুদ্ধাচরণ করার স্পর্ধা করে না। শয়তানের কাছে, ঈশ্বরের মুখ-নিঃসৃত প্রতিটি বাক্য একটি নির্দেশ, এক ঐশ্বরিক বিধান, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের এক অভিব্যক্তি—কারণ ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্যের নেপথ্যে তাঁর আজ্ঞার লঙ্ঘনকারীদের জন্য এবং ঐশ্বরিক বিধানসমূহের অমান্যকারী ও বিরুদ্ধাচরণকারীদের জন্য ঈশ্বরের শাস্তির বিধানটি অনুক্ত রয়েছে। শয়তান পরিষ্কার করে জানে যে সে যদি ঈশ্বরের আদেশ না মানে, তাহলে অবশ্যই তাকে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব উল্লঙ্ঘন এবং ঐশ্বরিক বিধানের বিরোধিতার ফলশ্রুতি স্বীকার করতে হবে। এই ফলশ্রুতিগুলি ঠিক কী কী? বলার অপেক্ষা রাখে না, এগুলি তার ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্তি। ইয়োবের প্রতি শয়তানের আচরণ ছিল তার দ্বারা মানুষের দূষণের নিছকই এক ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি, এবং শয়তানের এই সব কাজকর্মের নিষ্পাদনকালীন যে সীমারেখা ঈশ্বর ধার্য করেছিলেন এবং তার প্রতি যে আদেশ তিনি জারি করেছিলেন, তা ছিল তাঁর সকল কার্যের অন্তর্নিহিত নীতিসমূহের এক ক্ষুদ্র প্রতিরূপ মাত্র। তার উপর, এই বিষয়টায় শয়তানের ভূমিকা ও স্থিতি ছিল ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কার্যে তার ভূমিকা ও স্থিতিরই নিছক এক ক্ষুদ্রায়িত সংস্করণ, এবং ইয়োবকে প্রলুব্ধ করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রতি শয়তানের সম্পূর্ণ আনুগত্য ছিল ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কার্যে শয়তান যেভাবে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিরোধ সৃষ্টি করতেও সাহস করেনি তারই এক ক্ষুদ্রায়িত প্রতিচ্ছবি। এই ক্ষুদ্র প্রতিরূপগুলি তোমাদের কোন সতর্কবাণী জ্ঞাপন করে? শয়তানকে সুদ্ধ সমস্ত কিছুর মধ্যে, এমন কোনো মানুষ বা বস্তু নেই যে সৃষ্টিকর্তার প্রণীত ঐশ্বরিক বিধান ও অধ্যাদেশগুলি উল্লঙ্ঘন করতে পারে, এবং এমন কোনো মানুষ বা বস্তু নেই যে এই ঐশ্বরিক বিধান ও অধ্যাদেশগুলি অবমাননা করার স্পর্ধা করে, কারণ এগুলির অবমাননাকারীদের উপর যে শাস্তি সৃষ্টিকর্তা ধার্য করেন কোনো মানুষ বা বস্তু তার রদবদল করতে বা তাকে এড়াতে সক্ষম নয়। একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ঐশ্বরিক বিধান ও অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন, একমাত্র সৃষ্টিকর্তারই ক্ষমতা রয়েছে এগুলিকে লাগু করার, এবং একমাত্র সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতাই কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দ্বারা উল্লঙ্ঘিত হতে পারে না। এটিই হল সৃষ্টিকর্তার অনন্য কর্তৃত্ব, এবং এই কর্তৃত্ব সকলকিছুর মধ্যে সর্বোচ্চ, আর তাই, এ কথা বলা অসম্ভব যে “ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং শয়তানের স্থান দ্বিতীয়।” অনন্য কর্তৃত্বের অধিকারী সৃষ্টিকর্তা ব্যতিরেকে, অন্য কোনো ঈশ্বর নেই!

তোমরা কি এখন ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে কোনো নতুন জ্ঞান অর্জন করেছো? প্রথমত, ঈশ্বরের সদ্য উল্লিখিত কর্তৃত্ব ও মানুষের ক্ষমতার মধ্যে কি কোনো পার্থক্য রয়েছে? পার্থক্যটি কী? কেউ কেউ বলে থাকে যে এই দুইয়ের মধ্যে কোনো তুলনাই চলে না। একেবারেই সঠিক! যদিও মানুষ বলে যে এই দুইয়ের মধ্যে যে কোনো তুলনাই হয় না, কিন্তু তাদের চিন্তায় ও পূর্বধারণায়, মানুষের ক্ষমতাকে প্রায়শই কর্তৃত্বের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়, এবং প্রায়ই এই দুটিকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করা হয়। এখানে ঠিক কী ঘটছে? মানুষ কি অনবধানতাবশত একটিকে অন্যটির দ্বারা প্রতিস্থাপিত করার প্রমাদ ঘটাচ্ছে না? এরা দুটি অসম্পর্কিত বিষয়, এবং এদের মধ্যে তুলনার কোনো অবকাশ নেই, কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষ তুলনা না করে পারে না। কীভাবে এর মীমাংসা সম্ভব? তুমি যদি সত্যিই একটা সমাধান খুঁজে পেতে চাও, তাহলে তার একমাত্র পথ হল ঈশ্বরের অনন্য কর্তৃত্বকে উপলব্ধি করা ও জানা। সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বকে বোঝা ও জানার পর, মানুষের ক্ষমতা ও ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে তুমি আর তুল্যমূল্য জ্ঞান করবে না।

মানুষের ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়? সহজ কথায়, এটি হল সেই সামর্থ্য বা দক্ষতা যা মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব, কামনা-বাসনা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলিকে প্রসারিত হতে বা সর্বোচ্চ মাত্রায় অর্জিত হতে সক্ষম করে। একে কি কর্তৃত্ব বলে গণ্য করা যায়? কোনো মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা বাসনা যতোই স্ফীত বা আকর্ষক হোক না কেন, সেই মানুষটিকে কর্তৃত্বের অধিকারী বলা যায় না; এই স্ফীতি ও সাফল্য, বড়োজোর, মানুষের মাঝে শয়তানের হাস্যকর আচরণের এক প্রদর্শন মাত্র; খুব বেশি হলে তা এক প্রহসন, যেখানে শয়তান তার ঈশ্বর হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য তার নিজের পূর্বপুরুষের ভূমিকায় অভিনয় করে।

বর্তমানে ঠিক কোন চোখে তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে দেখো? যেহেতু এই বাক্যসমূহ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে, তাই ঈশ্বরের কর্তৃত্ব বিষয়ে তোমার এক নতুন জ্ঞান থাকা উচিত। তাহলে তোমাদের আমি জিজ্ঞেস করছি: ঈশ্বরের কর্তৃত্ব কিসের প্রতীক? তা কি স্বয়ং ঈশ্বরের স্বরূপকে প্রতীকায়িত করে? তা কি স্বয়ং ঈশ্বরের ক্ষমতার প্রতীকস্বরূপ? এটি কি স্বয়ং ঈশ্বরের অনন্য মর্যাদার পরিচায়ক? তাবৎ বস্তুর মাঝে, কোনটির মধ্যে তুমি ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে প্রত্যক্ষ করেছো? কীভাবেই বা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে? মানুষের অভিজ্ঞতায় দৃষ্ট চারটি ঋতুর পরিপ্রেক্ষিতে, কেউ কি বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ এবং শীতঋতুর পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের নিয়মকে পরিবর্তিত করতে পারে? বসন্তকালে, গাছপালা মুকুলিত হয় আর তাতে ফুল ফোটে; গ্রীষ্মে সেইসব গাছ পত্রপল্লবে ঢেকে যায়; শরতে সেগুলি ফলধারণ করে, এবং শীতকালে তাদের পল্লবদাম ঝরে পড়ে। কেউ কি এই বিধানের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম? এই বিষয়টি কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের একটি দিককে প্রতিবিম্বিত করে? ঈশ্বর বলেছিলেন “দীপ্তি হোক”, এবং আলোর অভ্যুদয় হয়েছিল। এখনো কি এই আলোর অস্তিত্ব রয়েছে? কীসের দরুন তার অস্তিত্ব রয়েছে? এর অস্তিত্ব রয়েছে, বলা বাহুল্য, ঈশ্বরের বাক্যের দরুন, এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বের কারণে। ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট বায়ু কি এখনো অস্তিমান? মানুষ তার শ্বাস-প্রশ্বাসে যে বায়ু গ্রহণ করে তা কি ঈশ্বরের থেকে আগত? যে বস্তুগুলি ঈশ্বর থেকে আগত তা কি কেউ কেড়ে নিতে পারে? কেউ কি সেগুলির সারসত্য ও কার্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে? ঈশ্বর নির্ধারিত রাত্রি ও দিনের যে বণ্টন এবং ঈশ্বরের আদিষ্ট রাত্রি ও দিনের যে বিধান, কেউ কি সেগুলিকে অব্যবস্থিত করার ক্ষমতা রাখে? শয়তান কি এমন কাজ করতে পারে? এমনকি তুমি যদি রাত্রিবেলা না ঘুমাও, এবং রাত্রিকালকে দিবস হিসাবে গ্রহণ করো, তবু তখনো তা রাত্রিই থাকে; তুমি তোমার প্রাত্যহিক কর্মপরম্পরায় পরিবর্তন আনতে পারো, কিন্তু রাত্রিকাল ও দিবাভাগের পারস্পরিক পরিবর্তনের নিয়মে কোনো রদবদল ঘটাতে তুমি অক্ষম—এই বাস্তব সত্যের পরিবর্তন ঘটানো কোনো মানুষের সাধ্যাতীত, তাই নয় কি? কেউ কি কোনো সিংহকে দিয়ে বলদের মতো করে জমিতে লাঙল টানাতে পারে? কেউ কি একটা হাতিকে গর্দভে রূপান্তরিত করতে সক্ষম? কেউ কি একটি মুরগিকে ঈগলের মতো করে বায়ু বেয়ে উচ্চাকাশে উড্ডীন করতে সক্ষম? কেউ কি এক নেকড়েকে দিয়ে ভেড়ার মতন করে ঘাস খাওয়াতে পারে? (না।) কেউ কি জলের মাছকে শুকনো ডাঙ্গায় বাস করাতে সক্ষম? মানুষের দ্বারা তা হওয়ার নয়? কেন নয়? কারণ ঈশ্বর মাছদের জলে থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর তাই তারা জলেই বাস করে। ডাঙ্গায় তারা বেঁচে থাকতে পারতো না, মারা যেতো; ঈশ্বরের আদেশের সীমারেখাকে লঙ্ঘন করতে তারা অক্ষম। সমস্ত বস্তুর অস্তিত্বের একটা বিধান ও সীমারেখা রয়েছে, এবং তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে। এগুলি সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত, এবং যেকোনো মানুষের পক্ষে পরিবর্তনের অসাধ্য ও অনতিক্রম্য। উদাহরণস্বরূপ, সিংহ সর্বদা, জনসমাজ থেকে একটা দূরত্বে, জঙ্গলেই বাস করবে, এবং মানুষের সাথে একত্রে থাকে ও কাজ করে যে বলদ, সিংহ কখনো সেই বলদের মতো বশংবদ ও বিশ্বস্ত হতে পারতো না। হাতি ও গর্দভ উভয়েই জন্তু, উভয়েরই চারটি করে পা রয়েছে, এবং উভয়েই শ্বাসগ্রহণকারী প্রাণী, কিন্তু তারা ভিন্ন প্রজাতির, কারণ ঈশ্বরের দ্বারা তারা ভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়েছিল, দুইজনেরই নিজ নিজ সহজাত প্রবৃত্তি রয়েছে, আর তাই কখনোই তারা পরস্পরপরিবর্তনীয় হবে না। মুরগির ঠিক ঈগলের মতোই দুটি পা ও ডানা থাকলেও, কখনোই তা আকাশে উড়ে বেড়াতে সক্ষম হবে না; বড়োজোর তা উড়ে গাছে এসে বসতে পারে—এটি মুরগির সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা নির্ধারিত। বলাই বাহুল্য, এই সবকিছুই হয় ঈশ্বরের কর্তৃত্বের নির্দেশের কারণে।

আজকে মানবজাতির উন্নয়নে, মানবজাতির বিজ্ঞান বিকশিত হচ্ছে বলা যায়, এবং মানুষের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের অর্জিত কৃতিত্বগুলিকে হৃদয়গ্রাহী বলে বর্ণনা করা যেতে পারে। বলতেই হবে, মানুষের সামর্থ্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, কিন্তু একটি যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্য রয়েছে যা মানুষ অর্জন করতে পারেনি: মানবজাতি বিমানপোত, বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ, এবং পারমাণবিক বোমা নির্মাণ করেছে, মানবজাতি মহাকাশে গেছে, চন্দ্রপৃষ্ঠে হেঁটেচলে বেড়িয়েছে, ইন্টারনেট আবিষ্কার করেছে, এবং এক উচ্চপ্রযুক্তির জীবনশৈলী যাপন করছে, তবুও মানবজাতি এক জীবন্ত, শ্বাসরত বস্তু সৃষ্টি করতে অক্ষম। প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীর সহজাত প্রবৃত্তি ও তাদের বেঁচে থাকার নিয়মকানুন, এবং সকল প্রকার জীবিত বস্তুর জীবন-মৃত্যুর চক্র—এই সমস্তকিছুই মানবজাতির বিজ্ঞানের ক্ষমতার অতীত, এবং তার নিয়ন্ত্রণসাধ্য নয়। এই পর্যায়ে, এটা বলতেই হবে যে মানুষের বিজ্ঞান যত উত্তুঙ্গ উচ্চতাতেই উপনীত হোক না কেন, সৃষ্টিকর্তার যেকোনো চিন্তার সাথেই তা তুলনীয় নয়, এবং সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির অলৌকিকতা ও তাঁর কর্তৃত্বের শক্তিমত্তা নির্ণয় করতে তা অক্ষম। ধরণীপৃষ্ঠে কত সমুদ্র রয়েছে, তবু কখনো সেগুলি তাদের সীমানা লঙ্ঘন করে ইচ্ছে মতো স্থলভূমিতে এসে উপস্থিত হয়নি, এবং এর কারণ হল ঈশ্বর তাদের প্রত্যেকের সীমানা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন; তাদের যেখানে অবস্থান করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন তারা সেখানেই রয়ে গিয়েছিল, এবং ঈশ্বরের অনুমতি ব্যতিরেকে তারা স্বাধীনভাবে এদিক-ওদিক বিচরণ করতে পারে না। ঈশ্বরের অনুমোদন ব্যতীত, তারা পরস্পরের এলাকার সীমা লঙ্ঘন করার ক্ষমতা রাখে না, এবং ঈশ্বর যখন বলেন একমাত্র তখনই তারা স্থানপরিবর্তন করতে পারে, এবং তারা কোথায় যাবে ও অবস্থান করবে তা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের দ্বারাই নির্ধারিত হয়।

সহজ কথায়, “ঈশ্বরের কর্তৃত্ব” বলতে বোঝায় বিষয়টি ঈশ্বরের নির্ধারণসাপেক্ষ। কোনোকিছু কীভাবে সম্পন্ন হবে তা স্থির করার অধিকার ঈশ্বরের, এবং তিনি যেরকম ইচ্ছা করেন সেভাবেই তা নিষ্পন্ন হয়। সকলকিছুর আইনকানুন ঈশ্বরের হাতে, তা মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়; এবং মানুষ এর পরিবর্তন ঘটাতেও পারে না। মানুষের ইচ্ছানুযায়ী এর নড়চড় করা যায় না, বরং তার বদল ঘটে ঈশ্বরের চিন্তা, ঈশ্বরের প্রজ্ঞা, এবং ঈশ্বরের আদেশের দ্বারা; এ এমন এক সত্য যা যেকোনো মানুষের কাছে অনস্বীকার্য। আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্ত কিছু, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, নক্ষত্রমণ্ডিত আকাশ, বছরের ঋতু চতুষ্টয়, মানুষের কাছে যাকিছু দৃশ্যমান ও দৃশ্যাতীত—এদের সকলেই অস্তিত্ব ধারণ করে, কার্য সম্পাদন করে, এবং এতটুকু ভ্রান্তি ব্যতিরেকে পরিবর্তিত হয়, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনে, ঈশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী, ঈশ্বরের আদেশ অনুসারে, এবং সৃষ্টির সূচনার সময়ের বিধান অনুযায়ী। একজন মানুষ বা একখানি বস্তুও তাদের নিয়মকানুনের, কিংবা যে সহজাত গতিপথ ধরে তারা তাদের কার্য পালন করে সেই গতিপথের পরিবর্তন সাধন করতে পারে না; তারা অস্তিত্ব লাভ করেছে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের দরুন, এবং বিনষ্টও হয় ঈশ্বরের কর্তৃত্বের দরুন। এটিই ঈশ্বরের সেই কর্তৃত্ব। এখন, এতখানি আলোচনার পরে, তোমার কি মনে হয় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব তাঁর স্বরূপ ও মর্যাদার প্রতীক? কোনো সৃজিত বা অসৃজিত সত্তা কি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধিকারী হতে পারে? এই কর্তৃত্ব কি কোনো মানব, বস্তু, বা সামগ্রীর দ্বারা অনুকরণ, নকল, বা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব?

ঈশ্বরের স্বরূপ অদ্বিতীয়, এবং তোমাদের বহু-ঈশ্বরবাদের ধারণাকে মান্য করা উচিত নয়

শয়তানের দক্ষতা ও সামর্থ্য যদিও মানুষের অপেক্ষা বেশি, যদিও সে মানুষের অসাধ্য কাজকর্ম সম্পাদনে সক্ষম, কিন্তু শয়তানের এইসব কার্যকলাপকে তুমি ঈর্ষা করো কিম্বা এগুলি সম্পাদনের বাসনা পোষণ করো বা না করো, এই সব কাজকর্মকে তুমি ঘৃণা করো কিম্বা এগুলির প্রতি বিতৃষ্ণা বোধ করো না করো, এই কাজকর্মগুলি প্রত্যক্ষ করতে তুমি সমর্থ হও বা না হও, এবং শয়তান যত সাফল্যই লাভ করুক, বা যত বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রতারিত করে তাদের দিয়ে সে নিজের উপাসনা ও আরাধনা করাক না কেন, এবং যেভাবেই তুমি তাকে সংজ্ঞায়িত করো না কেন, তুমি সম্ভবত এটা বলতে পারো না যে শয়তান ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। তোমার জানা উচিত যে ঈশ্বর হলেন ঈশ্বরই, কেবল একজন মাত্র ঈশ্বরই রয়েছেন, এবং তদুপরি, তোমার জানা উচিত যে একমাত্র ঈশ্বরেরই কর্তৃত্ব আছে, একমাত্র ঈশ্বরই সকলকিছুকে নিয়ন্ত্রণ ও শাসন করার ক্ষমতার অধিকারী। শুধুমাত্র এই কারণে যে শয়তানের মানুষকে প্রতারিত করার ও ঈশ্বরকে নকল করার ক্ষমতা রয়েছে, সে ঈশ্বরের অলৌকিক ও বিস্ময়কর কার্যাদি অনুকরণ করতে পারে, এবং সে ঈশ্বরের অনুরূপ কাজকর্ম সম্পন্ন করেছে, তাই ভ্রান্তিবশত তুমি বিশ্বাস করে বসো যে ঈশ্বর অনন্য নন, একাধিক ঈশ্বর রয়েছে, মনে করো যে এই বিভিন্ন ঈশ্বরগুলির দক্ষতার ক্ষেত্রেই কেবল কিছু তারতম্য রয়েছে, এবং ভেবে বসো যে এই ঈশ্বরগুলির অধিকৃত ক্ষমতার পরিসরের ক্ষেত্রেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাদের মাহাত্ম্যকে তুমি বিন্যস্ত করো তাদের আবির্ভাবের ক্রম অনুসারে এবং তাদের যুগ অনুযায়ী, এবং তুমি ভুলবশতঃ বিশ্বাস করো যে ঈশ্বরের পাশাপাশি অন্য আরো দেবদেবীও আছে, এবং ভাবো যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা অনন্য নয়। তোমার যদি এজাতীয় ধারণা থেকে থাকে, যদি তুমি ঈশ্বরের অনন্যতাকে উপলব্ধি না করো, যদি তোমার এই বিশ্বাস না থাকে যে একমাত্র ঈশ্বরই কর্তৃত্বের অধিকারী, এবং তুমি যদি কেবল বহু-ঈশ্বরবাদকেই মেনে চলো, তাহলে আমি বলবো যে তুমি সৃষ্টজীবের মধ্যে আবর্জনা মাত্র, শয়তানের সত্যিকারের মূর্ত প্রতিরূপ, এবং দুষ্টতার তুমি চূড়ান্ত প্রতিমূর্তি! এই কথাগুলো বলে তোমাদের আমি যা শেখাতে চাইছি তা কি তোমরা বুঝতে পারছো? স্থান, কাল, বা তোমার পটভূমি যেমনই হোক, তুমি অবশ্যই কখনো ঈশ্বরকে অন্য কোনো মানুষ, জিনিস, বা বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে ফেলবে না। ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও স্বয়ং ঈশ্বরের সারসত্যকে তোমার যতোই অজ্ঞেয় ও অনভিগম্য বলে মনে হোক না কেন, শয়তানের কাজকর্ম ও কথাবার্তা তোমার পূর্বধারণা ও কল্পনার সাথে যতোই সঙ্গতিপূর্ণ হোক না কেন, এগুলি তোমার কাছে যতোই তৃপ্তিকর হোক না কেন, বোকামি কোরো না, এই ধারণাগুলিকে গুলিয়ে ফেলো না, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার কোরো না, ঈশ্বরের পরিচয় ও মর্যাদাকে অস্বীকার কোরো না, ঈশ্বরকে বহিষ্কৃত করে ও শয়তানকে এনে তোমার অন্তরে তাঁর জায়গায় বসিয়ে তাকে তোমার ঈশ্বর করে তুলো না। এরকম করার ফলশ্রুতিগুলি কল্পনা করতে তোমরা যে সক্ষম সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই!

মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করা হলেও, এখনো সে সৃষ্টিকর্তার কর্তৃত্বের সার্বভৌমত্বের অধীনে বাস করে

হাজার হাজার বছর ধরে শয়তান মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে আসছে। অপরিমিত পরিমাণ মন্দ কাজ শয়তানের দ্বারা সাধিত হয়েছে, মানুষের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সে প্রতারিত করেছে, এবং পৃথিবীতে বহু ঘৃণ্য অপরাধ সম্পাদন করেছে। মানুষকে সে খারাপ কাজে ব্যবহার করেছে, মানুষকে প্রতারণা করেছে, মানুষকে ঈশ্বর-বিরোধিতায় প্রলুব্ধ করেছে, এবং এমন মন্দ কাজকর্ম সম্পাদন করেছে যা ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনাকে বারংবার বানচাল ও বিকল করেছে। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনে, সকল বস্তু ও জীবন্ত প্রাণী ঈশ্বরের স্থাপিত নিয়ম ও বিধান মান্য করে চলা অব্যাহত রাখে। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের তুলনায়, শয়তানের ভ্রষ্ট প্রকৃতি ও অনিয়ন্ত্রিত অনাচার অতি কুৎসিত, অত্যন্ত বিতৃষ্ণাজনক ও ঘৃণ্য, এবং নিতান্তই ক্ষুদ্র ও অরক্ষিত। ঈশ্বরের সৃষ্ট সকল বস্তুর মাঝে শয়তান পদচারণা করলেও, ঈশ্বরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মানুষ, সামগ্রী, ও বস্তুর মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তন সাধন করতেও সে সক্ষম নয়। বহু সহস্র বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, এবং মানবজাতি এখনো ঈশ্বর-প্রদত্ত আলো-বাতাসকে উপভোগ করে, এখনো স্বয়ং ঈশ্বর-নিঃসৃত শ্বাসবায়ু তারা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে, এখনো ঈশ্বর-সৃষ্ট পুষ্প, পক্ষী, মৎস্য ও পতঙ্গসমূহকে উপভোগ করে, এবং ঈশ্বর-প্রদত্ত সকল বস্তুকে উপভোগ করে; এখনো দিবা ও রাত্রি অবিরাম পরস্পরকে প্রতিস্থাপিত করে চলে; চারটি ঋতু যথারীতি পালাক্রমে পরিবর্তিত হয়; আকাশে উড়ন্ত বুনোহাঁসগুলি শীতঋতুতে বিদায় নেয়, এবং এখনো তারা পরের বসন্তে প্রত্যাবর্তন করে; জলের মাছ কখনো নদী ও হ্রদ—তাদের বাসগৃহ—পরিত্যাগ করে যায় না; ধরিত্রীবক্ষের ঘুর্ঘুরে পোকা গ্রীষ্মের দিবাভাগ জুড়ে প্রাণভরে গান গায়; ঘাসের ভিতর ঝিঁঝিঁ পোকা যথাসময়ে শরতের বাতাসে মৃদুস্বরে গুঞ্জন করে; বুনোহাঁসরা ঝাঁক বেঁধে একত্রিত হয়, অথচ ঈগল নিঃসঙ্গই থেকে যায়; শিকার করার মাধ্যমে সিংহদের দর্প অক্ষুণ্ণ থাকে; হরিণেরা ঘাস ও ফুল ছেড়ে অন্যত্র বিচরণ করে না…। সকল বস্তুর মধ্যে প্রত্যেক প্রকারের জীবন্ত প্রাণীই অন্তর্হিত হয় ও প্রত্যাবর্তন করে, এবং তারপর পুনরায় অন্তর্ধান করে, চোখের একটি নিমেষের মধ্যে লক্ষ নিযুত পরিবর্তন সংঘটিত হচ্ছে—কিন্তু এই প্রাণীদের সহজাত প্রবৃত্তি ও উদ্বর্তনের বিধানসমূহের কোনো রূপান্তর ঘটে না। ঈশ্বরের সংস্থান ও পরিপোষণের অধীনে তারা জীবনধারণ করে, এবং কেউই তাদের সহজাত প্রবৃত্তির কোনো বদল ঘটাতে পারে না, এবং কেউ তাদের উদ্বর্তনের নিয়মগুলিরও কোনো হানি সাধন করতে পারে না। সকলকিছুর মাঝে বাসরত মানবজাতি শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট ও প্রতারিত হয়েছে বটে, তবু ঈশ্বরের প্রস্তুত জল, এবং ঈশ্বরসৃষ্ট বায়ু, এবং ঈশ্বরের প্রস্তুত সকল বস্তুকে মানুষ এখনো বর্জন করতে পারে না, এবং আজও মানুষ ঈশ্বরের সৃষ্ট এই পরিসরের মধ্যেই জীবনধারণ ও বংশবিস্তার করে চলে। মানবজাতির সহজাত প্রবৃত্তি পরিবর্তিত হয়নি। আজও মানুষ দেখার কাজে তার চক্ষুদ্বয়, শোনার জন্য তার কর্ণদ্বয়, চিন্তাভাবনা করতে তার মস্তিষ্ক, উপলব্ধি করতে তার হৃদয়, চলাফেরা করতে তার দুই পা ও পায়ের পাতা, কাজ করার জন্য তার দুই হাত, ইত্যাদির উপর নির্ভর করে; মানুষ যাতে ঈশ্বর প্রদত্ত সংস্থান গ্রহণ করতে পারে তার জন্য ঈশ্বর মানুষকে যে সকল সহজাত প্রবৃত্তি প্রদান করেছিলেন সেগুলি অপরিবর্তিতই রয়েছে, যে সহজাত ক্ষমতাগুলির মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের সাথে সহযোগিতা করে তাদের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, এক সৃজিত জীবের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানবজাতির স্বাভাবিক দক্ষতার কোনো পরিবর্তন হয়নি, মানবজাতির আধ্যাত্মিক চাহিদা অপরিবর্তিত রয়েছে, তার উৎপত্তিস্থলগুলি খুঁজে বের করার জন্য মানবজাতির আকাঙ্ক্ষার কোনো রদবদল ঘটেনি, সৃষ্টিকর্তার দ্বারা উদ্ধার লাভের জন্য মানবজাতির যে বাসনা তাও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। যে মানবজাতি ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধীনে জীবনধারণ করে, এবং যে মানবজাতি শয়তানের সাধিত রক্তাপ্লুত বিনষ্টি সহ্য করেছে, সেই মানবজাতির বর্তমান পরিস্থিতি এমনই। যদিও মানবজাতি শয়তানের উৎপীড়নের শিকার হয়েছে, এবং সে আর সৃষ্টির সূচনালগ্নের সেই আদম ও হবা নয়, পরিবর্তে বরং জ্ঞান, কল্পনা, পূর্বধারণা, এবং এমনতরো নানান ঈশ্বর-বিরোধী সম্ভারে ভরপুর, এবং শয়তানোচিত ভ্রষ্ট স্বভাবে পরিপূর্ণ, তবুও ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মানবজাতি আজও তাঁর সৃষ্ট সেই একই মানবজাতিই রয়ে গেছে। মানবজাতি আজও ঈশ্বরের দ্বারাই শাসিত ও সমন্বিত হয়, এবং এখনও সে ঈশ্বরের প্রবর্তিত গতিপথের মধ্যেই জীবনধারণ করে, আর তাই, ঈশ্বরের নজরে, শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট মানবজাতি কেবল ময়লার আস্তরণে প্রলিপ্ত, যার উদরে অস্বস্তিকর শব্দ হয়, যার প্রতিক্রিয়াসমূহ কিছু মন্থর, স্মৃতিশক্তি আগের মতো ততোটা প্রখর নয়, এবং যার বয়স কিছুটা বেড়েছে—কিন্তু মানুষের সকল কার্যাবলী ও সহজাত প্রবৃত্তিসমূহ সম্পূর্ণ অক্ষতই রয়ে গেছে। এই সেই মানবজাতি যাকে ঈশ্বর উদ্ধার করার অভিপ্রায় পোষণ করেন। এই মানবজাতির কেবল সৃষ্টিকর্তার আহ্বান শোনার অপেক্ষা, এবং কেবল সৃষ্টিকর্তার কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হওয়ার অপেক্ষা, এবং তার পরেই সে উঠে দাঁড়াবে এবং ওই কণ্ঠস্বরের উৎসকে চিহ্নিত করতে ধাবিত হবে। মানবজাতিকে শুধু একবার সৃষ্টিকর্তার রূপ প্রত্যক্ষ করতে হবে, তাহলেই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার উদ্দেশ্যে, সে আর কোনোকিছুর পরোয়া করবে না, এবং সমস্তকিছুকে পরিত্যাগ করবে, এবং তাঁর জন্য এমনকি নিজের জীবনও বিসর্জন করবে। মানবজাতির হৃদয় যখন সৃষ্টিকর্তার আন্তরিকতাপূর্ণ বাক্যগুলি উপলব্ধি করবে, মানবজাতি তখন শয়তানকে প্রত্যাখ্যান করে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ অবলম্বন করবে; মানবজাতি যখন তার শরীর থেকে সকল কলুষ সম্পূর্ণরূপে প্রক্ষালিত করে ফেলবে, এবং আরেকবার সৃষ্টিকর্তার সংস্থান ও পরিপোষণ লাভ করবে, তখন মানবজাতির স্মৃতি পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে, এবং সেই ক্ষণে মানবজাতি প্রকৃত অর্থে সৃষ্টিকর্তার আধিপত্যে প্রত্যাবর্তন করবে।

ডিসেম্বর ১৪, ২০১৩

পূর্ববর্তী: ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব এবং স্বয়ং ঈশ্বর ৩

পরবর্তী: অনন্য ঈশ্বর স্বয়ং (২)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন