তুমি একজন “ফয়েল”[*] হতে চাও না কেন?
যাদের জয় করা হয়েছে, তারা সকলেই ফয়েল, অর্থাৎ ঈশ্বরের বৈপরীত্যের বস্তু হিসাবে ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করে, এবং শুধুমাত্র ত্রুটিমুক্ত হওয়ার পরেই মানুষ অন্তিম সময়ের কাজের উদাহরণ ও নমুনা হয়ে ওঠে। সম্পূর্ণ হয়ে ওঠার আগে তারা হল কার্যসাধনের সামগ্রী, ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করার বস্তু, ও সেবার সামগ্রী। ঈশ্বরের দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিজিত ব্যক্তিরা হল তাঁর পরিচালনামূলক কার্যের ফলে নিষ্কাশিত নির্যাস, ও সেইসাথে উদাহরণ ও নমুনা। এই ধরনের মানুষদের বিবরণ দেওয়ার সময় আমি যা বলেছি তা হয়তো একেবারেই বিশেষত্বহীন, কিন্তু সেগুলির মধ্যে দিয়ে অনেক আকর্ষণীয় কাহিনীও প্রকাশ পায়। তোমাদের মতো স্বল্প বিশ্বাস সম্পন্ন লোকেরা সবসময় বিশেষত্বহীন একটা উপাধি নিয়ে মুখ লাল না হওয়া পর্যন্ত তর্ক করে যাবে, এবং এর ফলে মাঝে মাঝে সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। যদিও এটা শুধুই একটা ক্ষুদ্র উপাধি, কিন্তু তোমাদের মননে ও বিশ্বাসে, এটা শুধু যে একটা গুরুত্বহীন উপাধির চেয়ে অনেক বেশি তা-ই নয়, বরং তোমাদের ভাগ্যের সাথে যুক্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই যারা বিচক্ষণ নয়, তারা প্রায়শই এই রকম তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বহুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়—অর্থাৎ স্বল্প সঞ্চয় করার জন্য প্রভূত ক্ষতি স্বীকার। শুধুমাত্র এক তাৎপর্যহীন উপাধির কারণে তোমরা পলায়ন করবে, এবং আর কখনো ফিরবে না। তার কারণ হল, তোমরা জীবনকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু তোমাদের যে নামে ডাকা হয় তাতেই অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করো। তাই তোমাদের আধ্যাত্মিক জীবন, এমনকি ব্যবহারিক জীবনেও, পদমর্যাদা বিষয়ে তোমাদের পূর্বধারণার কারণে প্রায়শই জটিল ও অদ্ভুত কাহিনীর জন্ম হয়। তোমরা হয়তো স্বীকার করবে না, কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, বাস্তব জীবনে সত্যিই এই ধরনের মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে, যদিও তোমরা ব্যক্তিগতভাবে তাদের সংস্পর্শে আসনি। এই ধরনের ঘটনা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ঘটেছে। যদি তোমাদের বিশ্বাস না হয়, নিচে যেকোনো বোন (বা ভাই)-এর জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখো। এমনও হতে পারে যে আসলে তুমিই সেই ব্যক্তি, অথবা হয়তো এমন কেউ যার সাথে তুমি তোমার জীবনে সুপরিচিত। আমার যদি ভুল না হয়, এই সংক্ষিপ্ত বিবরণে এমন কোনো একটা অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে যা তোমার ইতিমধ্যে হয়েছে। এই বিবরণে কোনো অসম্পূর্ণতা নেই, কোনো একটাও ধারণা বা চিন্তাধারা বাদ দেওয়া হয়নি, সমস্তই সামগ্রিকভাবে এই কাহিনীতে নথিবদ্ধ রয়েছে। বিশ্বাস না হলে প্রথমে শুধু এটা পড়ে দেখো।
এটা একজন “আধ্যাত্মিক ব্যক্তির” একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা।
গির্জায় ভাই-বোনেদের অনেক কাজ ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গত নয় দেখে সে উদ্বিগ্ন বোধ করছিল, তাই সে তাদের তিরস্কার করতে শুরু করল: “হতভাগার দল! তোমাদের কি বিবেক বলে কিছু নেই? তোমরা অযৌক্তিক কাজকর্ম কেন করছ? নিজেদের যা ইচ্ছা তাই না করে তোমরা কেন সত্যের সন্ধান করো না? … তোমাদের উদ্দেশ্য করেই আমি এগুলো বলছি বটে, কিন্তু একইসাথে আমি নিজেকেও ঘৃণা করি। আমি ঈশ্বরকে ধৈর্যহীনতায় দগ্ধ হতে দেখি এবং নিজের মধ্যে দহন অনুভব করি। আমি সত্যিই ঈশ্বরের দ্বারা আমার উপর অর্পিত কাজ সম্পূর্ণভাবে নির্বাহ করতে চাই এবং তোমাদের সেবাতেও লাগতে চাই। শুধুমাত্র এই মুহূর্তে আমি খুবই দুর্বল। ঈশ্বর আমাদের জন্য এত সময় ব্যয় করেছেন, এত বাক্য বলেছেন, কিন্তু আমরা একই রয়ে গিয়েছি। আমার অন্তরে, সর্বদাই মনে হয় ঈশ্বরের কাছে আমি প্রভূতভাবে ঋণী…”। (সে আর বলতে পারে না, কাঁদতে শুরু করে।) তারপর সে প্রার্থনা করতে শুরু করে: “হে ঈশ্বর! আমি প্রার্থনা করছি তুমি আমাকে আরও শক্তি দাও, আমাকে আগের চেয়ে আরও বেশি চালিত করো, এবং তোমার আত্মা আমার মধ্যে কাজ করুক। আমি তোমার সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। যদি শেষ পর্যন্ত তুমি গৌরব লাভ করো, তার জন্য আমি এই মুহূর্তে তোমার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে অর্পণ করতে ইচ্ছুক, এমনকি যদি সেজন্য আমাকে জীবন দিতে হয় তবুও। আমরা প্রভূত স্তুতি নিবেদন করতে চাই, যাতে আমাদের ভাই ও বোনেরা তোমার পবিত্র নামের বন্দনা করার জন্য, তোমাকে মহিমান্বিত করার জন্য, তোমাকে প্রকাশিত করার জন্য সানন্দে সঙ্গীত ও নৃত্যে মেতে উঠতে পারে, প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে তোমার কাজ সত্য, এবং যে ভার তুমি বহন করো তার বিনিময়ে সকল যত্ন তোমাকে প্রদান করার জন্য…”। সে আন্তরিকতা সহকারে এইভাবে প্রার্থনা করেছিল এবং পবিত্র আত্মা সত্যিই তাকে একটি দায়ভার অর্পণ করেছিলেন। এই সময় সে ভীষণ পরিমাণে ভারগ্রস্ত ছিল এবং পড়া, লেখা ও শোনার কাজে সারা দিন অতিবাহিত করতো। তার পক্ষে যতদূর সম্ভব সে ততদূর ব্যস্ত ছিল। তার আধ্যাত্মিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো ছিল, এবং অন্তরে সে সর্বদা উদ্যমী ও কাজের ভারগ্রস্ত থাকতো। সময়ে সময়ে সে দুর্বল হয়ে বাধাপ্রাপ্ত হলেও অনতিবিলম্বেই সে তার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেত। কিছু সময় এরকমভাবে অতিবাহিত হওয়ার পরে, তার দ্রুত উন্নতি হয়েছিল, সে ঈশ্বরের অনেক বাক্য সম্বন্ধে কিছুটা উপলব্ধি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং সে দ্রুত স্তবগানও শিখে নিয়েছিল—সামগ্রিকভাবে, তার আধ্যাত্মিক অবস্থা ছিল চমৎকার। যখন সে দেখল যে গির্জার অনেক কিছুই ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তখন উদ্বিগ্ন হয়ে তার ভাই ও বোনদের তিরস্কার করে বলল: “এটাই কি তোমাদের কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা? এত সামান্য মূল্যও তোমরা দিতে পারছ না কেন? যদি তোমরা এ কাজ করতে না চাও, তাহলে আমিই করব…”।
যখন সে ভারগ্রস্ত ছিল, তখন পবিত্র আত্মার সম্পাদিত আরও বেশি কাজের ফলে তার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছিল। কখনও কখনও সে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতো এবং নেতিবাচক হয়ে পড়ত, কিন্তু এইসব সে অতিক্রম করতেও সক্ষম ছিল। অর্থাৎ, যখন সে পবিত্র আত্মার কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, সেই সময় যখন তার অবস্থা ভালোও থাকতো, তখনও কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া বা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়াকে সে এড়াতে পারত না। এই ধরনের বিষয় ঘটা অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু এই সমস্ত পরিস্থিতি থেকে সে অনতিবিলম্বেই বেরিয়ে আসতে পারত। দুর্বল বোধ হলে সে প্রার্থনা করত এবং অনুভব করতে পারতো যে তার নিজের আত্মিক উচ্চতা সত্যিই অপর্যাপ্ত, কিন্তু সে ঈশ্বরের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক ছিল। ঈশ্বর যা-ই করুন না কেন, সে তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করতে ও তাঁর সমস্ত ব্যবস্থা মান্য করতে ইচ্ছুক ছিল। কেউ কেউ তার বিষয়ে কিছু মতামত ও পূর্বধারণা পোষণ করলেও, সে নিজেকে একপাশে সরিয়ে রেখে তাদের সাথে সক্রিয়ভাবে আলাপ-আলোচনায় অংশ নিতে সক্ষম ছিল। পবিত্র আত্মার স্বাভাবিক কাজ সম্পাদনকালে মানুষের অবস্থা এমনই হয়। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে ঈশ্বরের কাজ পরিবর্তিত হতে শুরু করেছিল, আর সমস্ত মানুষ কাজের অন্য একটি ধাপে প্রবেশ করেছিল, যে ধাপে তাদের কাছ থেকে ঈশ্বরের প্রয়োজন ছিল ভিন্ন। সুতরাং তখন মানুষের কাছ থেকে নতুন দাবি করার জন্য নতুন বাক্য কথিত হয়েছিল: “… তোমাদের জন্য আমার মনে শুধু ঘৃণাই রয়েছে, কখনোই আশীর্বাদ নেই। আমি কখনোই তোমাদের আশীর্বাদ করার কথা ভাবি নি, অথবা তোমাদের সম্পূর্ণ করে তোলার চিন্তাও করি নি, কারণ তোমরা অত্যন্ত বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন। যেহেতু তোমরা কুটিল এবং প্রতারক, এবং যেহেতু তোমাদের যোগ্যতার অভাব রয়েছে আর তোমাদের মর্যাদাও নিম্নমানের, তাই আমার দৃষ্টিসীমায় বা আমার হৃদয়ে তোমরা কখনোই স্থান পাও নি। একমাত্র তোমাদের তিরস্কার করার উদ্দেশ্যেই আমার কাজ সম্পাদিত হয়; আমার হাত কখনোই তোমাদের থেকে দূরে যায় নি, আর আমার শাস্তিও নয়। আমি তোমাদের বিচার ও অভিসম্পাত করা অব্যাহত রেখেছি। যেহেতু আমার সম্পর্কে তোমাদের কোনো উপলব্ধিই নেই, তাই আমার ক্রোধ সর্বদাই তোমাদের ওপর বর্ষিত হয়েছে। যদিও আমি সর্বদাই তোমাদের মাঝে কাজ করেছি, কিন্তু তোমাদের প্রতি আমি কী মনোভাব পোষণ করি, তা তোমাদের জানা উচিত। তা হল শুধুই ঘৃণা—এছাড়া অন্য কোনো মনোভাব বা মতামত নেই। আমি শুধু চাই তোমরা আমার প্রজ্ঞা ও আমার সুবিশাল শক্তিকে মহিমান্বিত করার জন্য তার বৈপরীত্য হিসাবে—অর্থাৎ ফয়েল হিসাবে—কাজ করো। তোমরা আমার ফয়েল—অর্থাৎ আমাকে মহিমান্বিত করার জন্য আমার বৈপরীত্যের বস্তু—ছাড়া আর কিছুই নও, কারণ আমার ন্যায়পরায়ণতা তোমাদের বিদ্রোহী মনোভাবের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। আমার কাজকে মহিমান্বিত করার জন্য তার বিপরীতের বস্তু, অর্থাৎ ফয়েল হিসাবেই আমার কাছে তোমরা রয়েছ, আমার কাজের আনুষঙ্গিক বস্তু হওয়ার জন্য…”। “আনুষঙ্গিক বস্তু” এবং “ফয়েল” এই শব্দগুলি দেখামাত্রই সে ভাবতে শুরু করল: “এই শব্দগুলির আলোকে আমার কীভাবে অনুসরণ করা উচিত? এহেন মূল্য পরিশোধ করার পরেও আমি এখনও শুধু একজন ফয়েল, তাঁর কাজকে মহিমান্বিত করার জন্য তার বৈপরীত্যের বস্তু। একজন ফয়েল কি নিছক একজন সেবাপ্রদানকারীই নয়? আগে বলা হয়েছিল যে আমরা সেবাপ্রদানকারী হব না, আমরা হব ঈশ্বরের ব্যক্তি, তবু আমরা কি এখনও সেবাপ্রদানকারীর ভূমিকাই পালন করছি না? সেবাপ্রদানকারীদের কি জীবনের অভাব থাকে না? আমি যত কষ্টই সহ্য করি না কেন, ঈশ্বর তার জন্য আমার প্রশংসা করবেন না! একজন ফয়েল হিসাবে, অর্থাৎ তাঁকে মহিমান্বিত করার জন্য তাঁর বিপরীতের বস্তু হিসাবে আমার কাজ হয়ে গেলে কি সবই শেষ হয়ে যাবে না? …” সে যতই এই বিষয়ে ভাবছিল, ততই হতাশ হয়ে পড়ছিল। গির্জায় এসে ভাই-বোনেদের অবস্থা দেখে তার আরোই খারাপ লাগল: “তোমরা ঠিক নেই! আমি ঠিক নেই! আমি নেতিবাচক হয়ে পড়েছি। উফ! কী করা যায়? ঈশ্বর এখনও আমাদের চান না। তিনি এই ধরনের কাজ করলে নেতিবাচক না হয়ে আমাদের উপায় নেই। জানি না আমার কি সমস্যা হচ্ছে। এমনকি প্রার্থনা করতেও আমার ইচ্ছা হয় না। যাইহোক, আমি এখন সঠিক অবস্থায় নেই, আর আমি সত্যিই আমার আন্তরিক উদ্যম একত্রিত করে উঠতে পারছি না। আমি অনেকবার প্রার্থনা করেছি কিন্তু আমি তবুও পারছি না, আর আমি তা চালিয়ে যেতেও অনিচ্ছুক। আমি এভাবেই বিষয়টা দেখছি। ঈশ্বর বলছেন যে আমরা ফয়েল, তাঁর মহিমাকে প্রোজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত করার জন্য তাঁর বৈপরীত্যের বস্তু, তাহলে এই বস্তুরা কি শুধুই সেবা প্রদানকারী নয়? ঈশ্বর বলছেন আমরা ফয়েল, তাঁর পুত্র নই, তাঁর ব্যক্তিও নই। আমরা তাঁর পুত্র নই, তাঁর প্রথমজাত পুত্রও নই। আমরা কিছুই নই, শুধু ফয়েল, তাঁর মহিমাকে প্রোজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত করার জন্য তাঁর বৈপরীত্যের বস্তু। আমরা যদি শুধু তাই হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের অনুকূল ফলাফল লাভের কোনো সম্ভাবনা আদৌ আছে কি? এই ফয়েলদের কোনো আশা নেই, কারণ তাদের কোনো জীবনই নেই। আমরা যদি তাঁর পুত্র, তাঁর জনগণ হতাম, তাহলে কিছু আশা থাকতো—আমাদের সম্পূর্ণ করে তোলা হতে পারতো। যারা শুধুই ফয়েল, ঈশ্বরের মহিমাকে প্রোজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত করার জন্য তাঁর বৈপরীত্যের বস্তু, তারা কি ঈশ্বরের জীবনকে বহন করতে পারে? যারা ঈশ্বরের সেবা করে, তিনি কি তাদের মধ্যে জীবন সঞ্চার করতে পারেন? যারা তাঁর জীবনের অধিকারী তিনি তাদেরই ভালোবাসেন, আর শুধুমাত্র যাদের মধ্যে তাঁর জীবন রয়েছে তারা হল তাঁর পুত্র, তাঁর জনগণ। যদিও আমি নেতিবাচক ও দুর্বল, কিন্তু আশা করি তোমরা সবাই নেতিবাচক নও। আমি জানি যে এইভাবে পশ্চাদ্বর্তী ও নেতিবাচক হওয়া ঈশ্বরের ইচ্ছাকে পূরণ করতে পারে না, তবে আমি একজন ফয়েল, অর্থাৎ ঈশ্বরকে মহিমান্বিতরূপে প্রকাশিত করার জন্য তাঁর বৈপরীত্যের বস্তু, হতেও ইচ্ছুক নই। ফয়েল হতে আমি ভয় পাই। যাইহোক, আমার এতটুকুই শক্তি আছে, এবং আমি এখন আর এগিয়ে চলতে পারছি না। আশা করি আমি যা করেছি তোমরা কেউই তেমন কাজ করবে না, বরং আমার কাছ থেকে কিছু পরিমাণ অনুপ্রেরণা লাভ করতে পারবে। আমার মনে হচ্ছে, আমি হয়তো মারাও যেতে পারি! মৃত্যুর সাথে আমার সাক্ষাৎ হওয়ার আগে আমি তোমাদের জন্য কিছু শেষ কথা রেখে যাবো—আশা করি, তোমরা ফয়েল হিসাবে একেবারে শেষ পর্যন্ত কাজ করতে পারবে; হয়তো শেষে গিয়ে ঈশ্বর ফয়েলদের, অর্থাৎ তাঁর মহিমা প্রকাশের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃতদের প্রশংসা করবেন…”। ভাই ও বোনেরা যখন এটা দেখল, তারা বিস্মিত হল: “ও কীভাবে এতটা নেতিবাচক হতে পারে? গত কয়েকদিন ধরে ও কি পুরোপুরি ভালো ছিল না? হঠাৎ করে ও সমস্ত উৎসাহ কেন হারিয়ে ফেলেছে? কেন স্বাভাবিক হচ্ছে না?” সে উত্তরে বলেছিল: “আমি স্বাভাবিক আচরণ করছি না তা বোলো না। আসলে, আমি আমার অন্তরের সকল বিষয়ে স্পষ্ট। আমি জানি যে আমি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করতে পারি নি, কিন্তু তার কারণ কি শুধু এটাই নয় যে আমি ফয়েল হিসাবে কাজ করতে চাই না? আমি খারাপ কিছু করি নি। হয়তো একদিন ঈশ্বর ‘ফয়েল’দের নাম পরিবর্তন করে তাদের ‘জীব’ হিসাবে আখ্যা দেবেন, এবং শুধু তা-ই নয়, বরং তাঁর দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত তাঁর সকল সৃষ্ট জীবের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে। এতে কি কিছু আশা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না? আশা করি তোমরা নেতিবাচক বা নিরুৎসাহিত হবে না, এবং ঈশ্বরকে অনুসরণ করা অব্যাহত রাখতে পারবে, আর ফয়েল হিসাবে তাঁর মহিমাকে প্রোজ্জ্বলভাবে উপস্থাপিত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। যাইহোক, আমি কোনোমতেই আর চালিয়ে যেতে পারব না। আমার কার্যকলাপ যেন তোমাদের বাধাপ্রদান না করে”। অন্যরা একথা শুনে বলল, “তুমি তাঁকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিলেও আমরা চালিয়ে যাব, কারণ ঈশ্বর কখনও আমাদের সাথে অন্যায় আচরণ করেন নি। আমরা তোমার নেতিবাচকতায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পড়ব না”।
কিছুকাল এইরকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরও সে ফয়েল হওয়ার বিষয়ে একই রকম নেতিবাচক অবস্থায় ছিল, তাই আমি তাকে বললাম: “আমার কাজ সম্বন্ধে তোমার কোনো ধারণা নেই। আমার বাক্যের অন্তর্নিহিত সত্য, সারমর্ম, অথবা অভিপ্রেত ফলাফলের বিষয়ে তোমার কোনো ধারণা নেই। তুমি আমার কাজের লক্ষ্য বা তার প্রজ্ঞা সম্পর্কে অজ্ঞ। আমার ইচ্ছার বিষয়ে তোমার কোনো উপলব্ধি নেই। তুমি শুধু পশ্চাদপসরণ করতে জানো কারণ তুমি একজন ফয়েল, আমার মহিমাকে প্রোজ্জ্বল করার জন্য ব্যবহৃত বস্তু—তুমি নিজেকে বড় বেশিই মর্যাদা দাও! তুমি কত বড়ো মূর্খ! অতীতে আমি তোমাকে অনেক কিছু বলেছি। আমি যে তোমাকে নিখুঁত করে তুলব বলেছি তা কি ভুলে গেছো? ফয়েলের কথা আদৌ উল্লেখ করার আগে কি আমি নিখুঁত করে তোলার বিষয়ে উল্লেখ করি নি?” “একটু দাঁড়ান, আমাকে এই বিষয়ে একটু ভেবে নিতে দিন। হ্যাঁ, ঠিকই তো! ফয়েলদের কথা উল্লেখ করার আগেই আপনি এসব কথা বলেছিলেন বটে!” “নিখুঁত হয়ে ওঠার কথা বলার সময়, আমি কি বলিনি যে মানুষকে জয় করার পরেই তাদের নিখুঁত করা হবে?” “হ্যাঁ!” “আমার কথা কি আন্তরিক ছিল না? সেগুলো কি সরল বিশ্বাসে বলা হয় নি?” “হ্যাঁ! আপনি এমন একজন ঈশ্বর যিনি কখনও অসৎ বাক্য বলেননি—কেউই তা অস্বীকার করার সাহস করতে পারে না। কিন্তু আপনি বহু বিভিন্ন উপায়ে কথা বলেন।” “আমার কথা বলার ধরন কি কাজের বিভিন্ন ধাপ অনুসারে পরিবর্তিত হয় না? আমি যা বলেছি, তা কি তোমার চাহিদার ভিত্তিতেই বলা বা করা হয়নি?” “আপনি মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করেন এবং আপনি তাদের যা প্রয়োজন তা সরবরাহ করেন। এ কথা মিথ্যা নয়!” “তাহলে আমি তোমাকে যা বলেছি তা কি উপকারে লাগেনি? আমার শাস্তি কি তোমাদের স্বার্থেই নির্বাহ করা হয় নি?” “এখনও কী করে বলছেন যে এটা আমার নিজের স্বার্থে করা হয়েছে! আপনি আমাকে প্রায় মৃত্যুর কাছে পৌঁছে যাওয়া পর্যন্ত শাস্তি দিয়েছেন—আমি আর বাঁচতে চাই না। আজ আপনি একরকম বলেন, আর আগামীকাল অন্যরকম। আমি জানি, আপনি আমার নিজের স্বার্থেই আমাকে নিখুঁত করতে চান, কিন্তু আপনি আমাকে নিখুঁত করে তোলেননি—আপনি ফয়েল হিসাবে আমাকে রেখে দিয়েছেন এবং এখনও আমাকে শাস্তি দিয়ে চলেছেন। আপনি আমাকে ঘৃণা করেন, তাই না? কেউই আপনার বাক্য বিশ্বাস করতে সাহস করে না, আর এতদিনে আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি যে আপনার শাস্তির উদ্দেশ্য শুধু আপনার অন্তরের ঘৃণা থেকে মুক্তি পাওয়া, আমাকে উদ্ধার করা নয়। আপনি অতীতে আমার কাছ থেকে সত্য গোপন করেছিলেন; আপনি বলেছিলেন যে আমাকে নিখুঁত করে তুলবেন এবং এই শাস্তি আমাকে নিখুঁত করে তোলার জন্যই ছিল। তাই আমি সর্বদা আপনার শাস্তি মান্য করেছি; আমি কখনো কল্পনা করিনি যে আজ আমাকে ফয়েল উপাধি বহন করতে হবে। ঈশ্বর, এর বদলে আমাকে অন্য কোনো কাজ করতে দিলে কি ভালো হত না? এই ফয়েল উপাধি আমাকে কি আপনার দিতেই হবে? এমনকি রাজ্যের দ্বাররক্ষী হতেও আমি রাজি হয়ে যেতাম। আমি ছুটে বেড়িয়েছি আর নিজেকে ব্যয় করেছি, কিন্তু পরিশেষে এখন আমার হাত শূন্য—আমি একেবারেই কপর্দকশূন্য। তবুও আপনি এখনও বলছেন যে আমাকে ফয়েল হিসাবে, অর্থাৎ আপনার মহিমা প্রকাশের উদ্দেশ্যে আপনার বৈপরীত্যের বস্তু হিসাবেই কাজ করাবেন। আমি কীভাবে মুখ দেখাবো?” “কী বলছ তুমি? আমি অতীতে প্রচুর বিচারের কাজ করেছি, তুমি তা বোঝো না? তোমার কি নিজের বিষয়ে প্রকৃত উপলব্ধি আছে? এই ‘ফয়েল’, অর্থাৎ ‘আমার মহিমাকে প্রোজ্জ্বল করার জন্য আমার বৈপরীত্যের বস্তু’ নামক উপাধি প্রদানও কি বাক্যের দ্বারা সম্পাদিত বিচার নয়? তুমি কি ভাবো, ফয়েলদের বিষয়ে আমার সমস্ত কথা তোমাকে বিচার করারই একটা উপায়, অন্য আর একটা পদ্ধতি? তাহলে তুমি কীভাবে আমাকে অনুসরণ করবে?” “আমি কীভাবে আপনাকে অনুসরণ করব সে বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। প্রথমে আমাকে জানতে হবে: আমি কি একজন ফয়েল, নাকি নয়? ফয়েলদেরও কি নিখুঁত করে তোলা যায়? এই ‘ফয়েল’, অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের মহিমাকে প্রোজ্জ্বলতর করার জন্য ব্যবহৃত বস্তু’, এই উপাধি কি পরিবর্তন করা যায়? আমি কি একজন ফয়েল হওয়ার মাধ্যমে জোরালো সাক্ষ্য দিতে পারি, এবং তারপর কি এমন একজন হয়ে উঠতে পারি যাকে নিখুঁত করে তোলা হয়েছে, যে ঈশ্বরকে ভালবাসবার এক উদাহরণস্বরূপ, এবং যে ঈশ্বরের অন্তরঙ্গ? আমাকে কি সম্পূর্ণ করে তোলা যাবে? আমাকে সত্যি কথা বলুন!” “বিষয়গুলি যে সদা উন্নয়নশীল, সদা পরিবর্তনশীল, সে কথা কি তুমি জানো না? যতক্ষণ তুমি ফয়েল হিসাবে, অর্থাৎ আমার মহিমাকে উজ্জ্বল করে তোলার মতো একজন হিসাবে নিজের ভূমিকায় অনুগত থাকতে চাইবে, ততক্ষণ তুমি পরিবর্তনে সক্ষম হবে। তুমি একজন ফয়েল কিনা, তার সাথে তোমার নিয়তির কোনো সম্পর্ক নেই। মূল বিষয় হল, তুমি এমন একজন হয়ে উঠতে পারো কিনা যার জীবন চরিত্রে পরিবর্তন ঘটেছে।” “আপনি আমাকে নিখুঁত করে তুলতে পারেন কি না, সেটা কি বলতে পারেন?” “যতদিন তুমি শেষ অবধি অনুসরণ করবে এবং মান্য করবে, আমি নিশ্চিতভাবে তোমাকে নিখুঁত করে তুলতে পারব।” “আর আমাকে কী ধরনের কষ্ট ভোগ করতে হবে?” “তুমি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হবে, তার পাশাপাশি বাক্যের দ্বারা বিচার ও শাস্তিও লাভ করবে, বিশেষ করে বাক্যের দ্বারা শাস্তি, যা ফয়েল হওয়ার, অর্থাৎ আমার বৈপরীত্যে থেকে আমাকে মহিমান্বিত করার বস্তু হওয়ার শাস্তিরই সমান!” “সেই ফয়েল হওয়ার শাস্তি? বেশ, যদি প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেলে আপনার দ্বারা নিখুঁত হয়ে উঠতে পারি, যদি কোনোরকম আশা থাকে, তাহলে ঠিক আছে। এমনকি যদি তা শুধু আশার লেশমাত্রও হয়, তাহলেও তা ফয়েল হওয়ার চেয়ে ভাল। এই ‘ফয়েল’—অর্থাৎ, ‘বৈপরীত্যের মাধ্যমে অপরকে উজ্জ্বল করে তোলার বস্তু’—উপাধিটি বড়ই খারাপ শোনায়। আমি কোনোমতেই ফয়েল হতে চাই না।” “ফয়েল হওয়ার মধ্যে এত খারাপ কী আছে? ফয়েলরা কি নিজেদের মতো করে যথেষ্টই ভালো নয়? তারা কি আশীর্বাদ লাভের অযোগ্য? যদি আমি বলি যে ফয়েলরা আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারবে, তাহলে তার মানে তুমিও আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারবে। এ কথা কি সত্যি নয় যে আমার কাজের জন্যেই মানুষের উপাধির পরিবর্তন হয়? তবুও শুধু একটা উপাধি তোমাকে এতো উদ্বিগ্ন করছে? আসলে তুমি যে এরকম একজন ফয়েল, তুমি তাই হওয়ারই যোগ্য। তুমি কি অনুসরণ করতে ইচ্ছুক নাকি ইচ্ছুক নও?” “বেশ, আপনি কি আমাকে সম্পূর্ণ করতে পারবেন নাকি পারবেন না? আপনি কি আমাকে আপনার আশীর্বাদ উপভোগ করার অনুমতি দিতে পারবেন?” “তুমি কি শেষ পর্যন্ত আমাকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক নাকি নও? তুমি কি নিজেকে অর্পণ করতে ইচ্ছুক?” “আমাকে এই বিষয়ে ভাবতে দিন। একজন ফয়েল, অর্থাৎ আপনার বৈপরীত্যে অবস্থান করে আপনার মহিমাকে উজ্জ্বল করা যার কাজ, তেমন একজনও আপনার আশীর্বাদ উপভোগ করতে পারে, এবং তাকেও সম্পূর্ণ করে তোলা হতে পারে। সম্পূর্ণ হয়ে ওঠার পর আমি আপনার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবো এবং আপনার ইচ্ছাকে তার সামগ্রিকতা সমেত উপলব্ধি করতে পারব, এবং আমি আপনার অধিকারে থাকা সমস্ত কিছুর অধিকারী হব। আপনি যা উপভোগ করেন তা আমি উপভোগ করতে সক্ষম হব, এবং আপনি যা জানেন তা আমি জানতে পারব। … প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর এবং নিখুঁত হয়ে ওঠার পর, আমি আশীর্বাদ উপভোগ করতে সক্ষম হব। তাহলে আমি আসলে কী কী আশীর্বাদ উপভোগ করব?” “কী কী আশীর্বাদ তুমি উপভোগ করবে, সে বিষয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না। আমি তোমাকে তা বললেও, সেসব তোমার কল্পনার বাইরে। আমার বিপরীত অবস্থানে থাকার মাধ্যমে আমার মহিমাকে আরো উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত করার কাজ ভালোভাবে সম্পাদনের পর, তোমাকে জয় করা হবে এবং তুমি একজন সফল ‘ফয়েল’ হয়ে উঠবে। যারা বিজিত হয়েছে এটা তাদের একটা নমুনা ও উদাহরণ, কিন্তু অবশ্যই, শুধুমাত্র তোমাকে জয় করার পরেই তুমি নমুনা ও উদাহরণ হয়ে উঠতে পারবে।” “নমুনা ও উদাহরণ বলতে কী বোঝায়?” “এটা সমস্ত অইহুদিদের জন্য, অর্থাৎ যাদের জয় করা হয় নি, তাদের জন্য নমুনা ও উদাহরণকে বোঝায়।” “এরকম কতজন রয়েছে?” “অনেকেই রয়েছে। নিছক তোমাদের মতো চার বা পাঁচ হাজার লোক নয়—সমগ্র বিশ্বের মধ্যে যারা এই নাম গ্রহণ করে, তাদের সকলকে অবশ্যই জয় করা হবে।” “তাহলে তা শুধু পাঁচ বা দশটি শহরের ব্যাপার নয়!” “এ বিষয়ে এখনই দুশ্চিন্তা কোরো না, আর নিজেকে এতো বেশি উদ্বিগ্ন কোরো না। কীভাবে এখনই প্রবেশ লাভ করবে শুধু সেই বিষয়ে লক্ষ্য স্থির রাখো! আমি নিশ্চয়তা প্রদান করছি যে তোমাকে সম্পূর্ণ করে তোলা যাবে।” “কত দূর পর্যন্ত? এবং কী কী আশীর্বাদ আমি উপভোগ করতে পারবো?” “তুমি এত চিন্তা করছ কেন? আমি তোমাকে নিশ্চয়তা প্রদান করেছি যে তোমাকে সম্পূর্ণ করা যাবে। আমি যে বিশ্বাসযোগ্য, সেটা তুমি কি ভুলে গেছো?” “এ কথা সত্যি যে আপনি বিশ্বাসযোগ্য, কিন্তু আপনার কথা বলার কিছু কিছু পদ্ধতি সদা পরিবর্তনশীল। আজ আপনি নিশ্চিতভাবে বলছেন যে আমাকে সম্পূর্ণ করে তোলা যাবে, কিন্তু কাল হয়তো আপনি বলবেন যে তা অনিশ্চিত। আর কিছু জনের কাছে আপনি বলেন ‘আমি নিশ্চিত যে তোমার মতো মানুষকে সম্পূর্ণ করে তোলা যাবে না।’ আপনার বাক্যে কি চলছে তা আমি জানি না। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করতে সাহস পাই না।” “তাহলে তুমি কি নিজেকে উৎসর্গ করতে পারবে, নাকি পারবে না?” “কী উৎসর্গ করব?” “নিজের ভবিষ্যৎ এবং আশা উৎসর্গ করো।” “সেই সমস্ত ত্যাগ করা সহজ! প্রধান বিষয়টা হল ‘ফয়েল’, অর্থাৎ ‘আপনার বৈপরীত্যে থেকে আপনাকে মহিমান্বিত করার বস্তু’র উপাধি—আমি সত্যিই সেটা চাই না। আপনি যদি আমার উপর থেকে এই উপাধি সরিয়ে দেন, তাহলে আমি যে কোনো কিছুতেই রাজি থাকব, যে কোনো কিছুই করতে পারব। এগুলো কি নিছকই তুচ্ছ বিষয় নয়? আপনি কি সেই উপাধিটা সরিয়ে নিতে পারেন?” “সেটা করা খুবই সহজ হবে, তাই নয় কি? যদি আমি তোমাকে একটা উপাধি দিতে পারি, তাহলে আমি নিশ্চিতভাবে সেটা ফিরিয়েও নিতে পারি। কিন্তু এখন সেটার সময় নয়। তোমাকে অবশ্যই প্রথমে কাজের এই পর্যায়ের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ করতে হবে, আর কেবল তখনই তুমি এক নতুন উপাধি অর্জন করতে পারবে। যে যত তোমার মতো, তাদের ফয়েল হওয়ার প্রয়োজন ততই বেশি। তুমি ফয়েল হওয়ার বিষয়ে যত বেশি ভীত হবে, আমি তত তোমাকে সেই আখ্যাই দেবো। তোমার মতো মানুষকে অবশ্যই কঠোরভাবে অনুশাসন ও মোকাবিলা করতে হবে। যে যত বিদ্রোহী মনোভাবাপন্ন, সে ততই বেশি সেবা প্রদানকারী হয়ে উঠবে, আর পরিশেষে, তারা কিছুই অর্জন করবে না”। “আমি যে খুবই অধ্যবসায় সহকারে অন্বেষণ করছি এ কথা ধরে নিলে, আমি এই ‘ফয়েল’ উপাধি কেন সরাতে পারছি না? আমরা এত বছর ধরে আপনাকে অনুসরণ করেছি, এবং কম যন্ত্রণা সহ্য করি নি। আমরা আপনার জন্য অনেক কিছু করেছি। আমরা প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে দিয়ে গেছি; নিজেদের যৌবনের উপান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। আমরা বিবাহ করিনি, সন্তান-সন্ততি লাভ করিনি আর আমাদের মধ্যে যারা এগুলো করেছিল, তারও এর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমি স্কুলে পড়াশুনা করেছি, হাই স্কুল পর্যন্ত গেছি, কিন্তু যেই আপনার আগমনবার্তা আমার কানে গেছে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হাতছাড়া করে দিয়েছি। আর আপনি বলছেন যে আমরা শুধু ফয়েল, নিজের বিপরীতে আপনার মহিমা উজ্জ্বল করাই আমাদের একমাত্র কাজ! আমরা প্রচুর কিছু হারিয়েছি! আমরা এই সমস্ত কিছু করি, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে আমরা শুধুই আপনার ফয়েল, আপনার মহিমাকে উজ্জ্বল করে প্রকাশিত করার যন্ত্র। এর ফলে আমার প্রাক্তন সহপাঠী এবং সহকর্মীরা আমার বিষয়ে কী ভাবে? তারা যখন আমাকে দেখবে এবং আমার অবস্থান ও মর্যাদার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবে, তখন তাদের এসব বলতে কি আমি লজ্জাবোধ করবো না? প্রথমে, আমি আপনার প্রতি আমার বিশ্বাসের কারণে যেকোনো মূল্য দিয়েছিলাম, এবং অন্যরা আমাকে নির্বোধ বলে উপহাস করেছিল। কিন্তু আমি তবুও আপনাকে অনুসরণ করেছিলাম এবং সেই সময়ের আকাঙ্খা করেছিলাম যখন আমার দিন আসবে, যখন আমি তাদের সবাইকে দেখাতে পারবো যারা বিশ্বাস করেনি। কিন্তু এর পরিবর্তে, আজ আপনি আমাকে বলছেন যে আমি একজন ফয়েল, শুধু আপনাকে মহিমান্বিত দেখানোর বস্তু। যদি আপনি আমাকে সবচেয়ে নিম্নস্তরের উপাধি দান করতেন, যদি আমাকে রাজ্যের মানুষদের একজন হওয়ার অনুমতি দিতেন, তা হলেও হত! এমনকি আমি যদি আপনার শিষ্য বা আস্থাভাজন না-ও হতে পারতাম, তাহলেও শুধুমাত্র আপনার অনুগামী হয়েই ভালো থাকতাম! আমরা এত বছর ধরে আপনাকে অনুসরণ করেছি, নিজেদের পরিবার বিসর্জন দিয়েছি, এবং এখনও পর্যন্ত সমস্ত অন্বেষণ চালিয়ে যাওয়াটাও কত কঠিন হয়েছে, আর এর বিনিময়ে আমাদের দেখানোর মতো আছে শুধু এই ‘ফয়েল’ উপাধি! আমি আপনার জন্য সবকিছু পরিত্যাগ করেছি; সমস্ত পার্থিব সম্পদ ত্যাগ করেছি। এর আগে, এক সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর সাথে কেউ একজন আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সে ছিল সত্যিই সুদর্শন, সুসজ্জিত; সে ছিল একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকের সন্তান। সেই সময়ে আমি তার প্রতি আগ্রহীও ছিলাম। কিন্তু যেই আমি শুনলাম যে ঈশ্বর আবির্ভূত হয়েছেন এবং তাঁর কার্য নির্বাহ করছেন, শুনলাম আপনি আমাদের রাজ্যে নিয়ে যাবেন এবং আমাদের নিখুঁত করে তুলবেন, এবং সময় নষ্ট না করে আমাদের সবকিছু ছেড়ে চলে আসার সংকল্প করতে বলেছেন, তখন আমার কী করা উচিত তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারপরে আমি নিজেকে ইস্পাতকঠিন করে সেই বিবাহের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। তারপরে সেই ছেলেটি আমার পরিবারকে অনেকবার উপহার পাঠিয়েছিল, কিন্তু আমি সেগুলির প্রতি দৃকপাতও করি নি। আপনার কি মনে হয় যে আমি তখন মর্মাহত ছিলাম? এত ভালো একটা ব্যাপার শেষ পর্যন্ত শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছিল। আমার কি মর্মাহত হওয়ার কথা নয়? আমি এই বিষয়ে অনেক দিন ধরে এতই মর্মাহত ছিলাম যে রাতে ঘুমোতেও পারতাম না, কিন্তু পরিশেষে আমি সেখান থেকেও বেরিয়ে এসেছিলাম। প্রত্যেকবার প্রার্থনা করার সময় আমি পবিত্র আত্মার দ্বারা চালিত হতাম, যিনি বলতেন: ‘তুমি কি আমার জন্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করতে ইচ্ছুক? আমার জন্য নিজেকে ব্যয় করতে ইচ্ছুক?’ আমি যতবার আপনার এই কথাগুলি ভাবতাম, আমি কেঁদে ফেলতাম। আমি যে কতবার আবেগতাড়িত হয়েছি এবং দুঃখে কেঁদেছি, তার ইয়ত্তা নেই। এক বছর পরে আমি শুনেছিলাম যে, সেই মানুষটি বিবাহ করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমার অবস্থা খুবই দুঃখজনক ছিল, কিন্তু তবু আমি তখনও আপনার স্বার্থে তা ত্যাগ করেছিলাম। এবং আমার খাবার এবং পোশাক-পরিচ্ছদ যে নিকৃষ্ট মানের, সেটুকু পর্যন্ত উল্লেখ না করে, আমি আমার বিবাহের সুযোগ পরিত্যাগ করেছিলাম, সবকিছু ছেড়ে দিয়েছিলাম, শুধুমাত্র যাতে আপনি আমাকে দিয়ে ‘ফয়েল’ হিসাবে কাজ না করান! আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, অর্থাৎ বিবাহের সুযোগটুকুও আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম, সবই আপনার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার স্বার্থে। একজন ব্যক্তির সমগ্র জীবন একজন ভালো সঙ্গী খুঁজে পাওয়া এবং একটি সুখী পরিবার লাভ করার চেয়ে বেশি আর কিছুই নয়। আমি তা ছেড়ে দিয়েছিলাম, সব কিছুর মধ্যে শ্রেষ্ঠ জিনিসটা ছেড়ে দিয়েছিলাম, এবং এখন আমার কিছুই নেই, আমি একেবারেই একা। আপনি আমাকে কোথায় পাঠাতে চান? আমি আপনাকে অনুসরণ করার শুরু থেকেই যন্ত্রণা ভোগ করেছি। একটা ভালো জীবন পাইনি। আমি আমার পরিবার, কর্মজীবন, সেইসাথে সমস্ত দৈহিক আনন্দ পরিত্যাগ করেছি, আর আমরা সকলে যে এত ত্যাগস্বীকার করেছি, এখনও তা আপনার আশীর্বাদ উপভোগের জন্য যথেষ্ট নয়? তাই এখন এই ‘ফয়েল’এর বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। ঈশ্বর, আপনি অনেক দূরে চলে গেছেন! আমাদের দিকে তাকান—এই পৃথিবীতে আমাদের নির্ভর করার মতো কিছুই নেই। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের সন্তান, কাজ, জীবনসঙ্গী,[ক] এবং এমন কত কিছু ত্যাগ করেছে; আমরা সমস্ত দৈহিক সুখ পরিত্যাগ করেছি। আমাদের জন্য আর কী আশা আছে? আমরা কীভাবে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো? আমাদের এই সমস্ত ত্যাগস্বীকারের কি এক কানাকড়িও মূল্য নেই? এগুলো কি একেবারেই আপনার চোখে পড়ে না? আমাদের মর্যাদা কম, ক্ষমতার অভাব রয়েছে—সেটা আমরা স্বীকার করি, কিন্তু এমন কি কখনো হয়েছে যে আপনি আমাদের দিয়ে যা করাতে চেয়েছেন আমরা তা শুনিনি? এখন আপনি নির্দয়ভাবে আমাদের ত্যাগ করছেন এবং ‘ফয়েল’ উপাধি দিয়ে আমাদের ‘প্রতিদান’ দিচ্ছেন? আমাদের সমস্ত আত্মত্যাগের প্রতিদানে আমরা এতটুকুই পেলাম? শেষ পর্যন্ত, লোকে যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে আমি কী অর্জন করেছি, আমি কি সত্যিই তাদের এই ‘ফয়েল’ উপাধি দেখাতে পারি? আমি কীভাবে মুখ ফুটে একথা বলতে পারি যে আমি একজন ‘ফয়েল’, আমার বিপরীতে আপনাকে উজ্জ্বল করে প্রকাশিত করাই আমার একমাত্র ভূমিকা? আমি তা আমার পিতামাতা এবং প্রাক্তন সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীকেও ব্যাখ্যা করে বলতে পারব না। আমি এত বড় মূল্য দিয়েছি, আর প্রতিদানে পেলাম শুধু নিজের বিপরীতে আপনাকে মহিমান্বিত করে প্রকাশিত করার ভূমিকা! আহ! আমার খুবই দুঃখ হয়!” (সে তার ঊরু চাপড়ে কাঁদতে শুরু করে।) “যদি আমি বলতাম যে এখন আমি তোমাকে ‘ফয়েল’ উপাধি দিচ্ছি না, তার পরিবর্তে বরং তোমাকে আমার জনগণের একজন করে নিতাম ও তোমাকে সুসমাচার প্রসারের নির্দেশ দিতাম, যদি কাজ করার জন্য তোমাকে পদমর্যাদাও প্রদান করতাম, তুমি কি সে কাজ করে উঠতে পারতে? এই কাজের প্রতিটি ধাপে তুমি আসলে কী অর্জন করেছ? এবং তবুও আজ তুমি এখানে নিজের কাহিনী শুনিয়ে আমাকে বিনোদন প্রদান করছ—তোমার কোনো লজ্জা নেই! তুমি বলছ যে তুমি অনেক মূল্য প্রদান করেছ, কিন্তু কিছুই অর্জন করো নি। কোনো ব্যক্তিকে অর্জন করার জন্য আমার শর্তগুলি তোমাকে বলতে অবহেলা করেছি, এমনটা কি হতে পারে? আমার কাজ কাদের জন্য? তুমি জানো? এখন তুমি পুরানো অভিযোগ আবার তুলছ! তোমাকে কি এখন আর মানুষ হিসাবেও গণ্য করা যায়? তোমার নিজের সিদ্ধান্তের জন্য তুমি যে কষ্টভোগের অভিজ্ঞতা লাভ করেছ তা কি তুমি বহন করোনি? সেই যন্ত্রণা কি আশীর্বাদ লাভের জন্যই তুমি গ্রহণ করোনি? তুমি কি আমার প্রয়োজনগুলো পূরণ করেছ? তুমি শুধু আশীর্বাদই অর্জন করতে চাও। তোমার কোনো লজ্জা নেই! তোমার কাছ থেকে আমার চাহিদাগুলো কি কখনো বাধ্যতামূলক ছিল? যদি তুমি আমাকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হও, তাহলে তোমাকে অবশ্যই সমস্ত বিষয়ে আমাকে মান্য করতে হবে। শর্তগুলি নিয়ে কোনোরকম দরদস্তুর করার চেষ্টা কোরো না। সর্বোপরি, আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম যে এই পথ কষ্টের পথ। এ পথে ভয়ানক বিপদের সম্ভাবনা, মঙ্গলের সম্ভাবনা সামান্যই। তুমি কি ভুলে গেছো? এ কথা আমি বহুবার বলেছি। তুমি যদি কষ্ট পেতে ইচ্ছুক থাকো, তবেই আমাকে অনুসরণ করো। আর যদি কষ্ট করতে রাজি না থাকো, তবে থেমে যাও। আমি তোমাকে জোর করছি না—আসা বা যাওয়ার বিষয়ে তুমি স্বাধীন! যাইহোক, এইভাবেই আমার কাজ সম্পন্ন হয় এবং তোমার ব্যক্তিগত বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে আমি আমার সম্পূর্ণ কাজকে বিলম্বিত করতে পারি না। তুমি মান্য করতে ইচ্ছুক না হতেই পারো, কিন্তু অন্য অনেকেই তাতে প্রস্তুত। তোমরা সবাই বেপরোয়া লোকজন! তোমরা কোনোকিছুতেই ভয় পাও না! তুমি আমার সাথে শর্ত নিয়ে দরদস্তুর করছ—তুমি কি বেঁচে থাকতে চাও নাকি চাও না? তুমি নিজের জন্যই পরিকল্পনা করো এবং নিজের খ্যাতি ও সুবিধার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ো। আমার সকল কাজই কি তোমাদের জন্য নয়? তুমি কি অন্ধ? দেহধারণের আগে তুমি আমাকে দেখতে পেতে না, আর এই সমস্ত কথা তখন বললে তা ক্ষমা করা যেত, কিন্তু এখন আমি দেহধারণ করেছি এবং তোমাদের মধ্যে কাজ করছি, তবু এখনও তুমি দেখতে পাচ্ছ না? তুমি কোন বিষয়টা বুঝতে পারছ না? তুমি বলছ যে তোমার অনেক ক্ষতি হয়েছে; তাই আমি তোমাদের মত বেপরোয়া মানুষদের উদ্ধারের জন্য দেহধারণ করেছি এবং প্রচুর কাজ করেছি, আর তুমি এখনও অভিযোগ করে চলেছ—তুমি কি একথা বলবে না যে আমিও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি? আমি যা কিছু করেছি, সে সমস্ত কি তোমাদের জন্যই নয়? আমি মানুষের বর্তমান আত্মিক উচ্চতার ভিত্তিতে তাদের এই উপাধি প্রদান করি। আমি যদি তোমাকে ‘ফয়েল’ বলে ডাকি, তাহলে অবিলম্বেই তুমি একজন ‘ফয়েল’ হয়ে উঠবে। তেমনই, যদি আমি তোমাকে ‘ঈশ্বরের জনগণের একজন’ বলে ডাকি, তুমি অবিলম্বে তা-ই হয়ে উঠবে। আমি তোমাকে যা বলেই ডাকি, তুমি আসলে সেটাই। এ সবই কি আমার মুখনিঃসৃত কয়েকটি বাক্যের দ্বারাই অর্জিত নয়? আর আমার এই কয়েকটা বাক্য তোমায় এত ক্রুদ্ধ করে তুলছে? ঠিক আছে তাহলে, আমাকে ক্ষমা করো! যদি তুমি এখন আমাকে মান্য না করো, তাহলে পরিশেষে তুমি অভিশপ্ত হবে—তাহলে কি তুমি খুশি হবে? তুমি জীবনের পদ্ধতিতে মনোযোগ দাও না, বরং শুধু মর্যাদা ও উপাধির প্রতিই মনোনিবেশ করো; এ তোমার কী ধরণের জীবন? তুমি প্রভূত মূল্য প্রদান করেছ সে কথা আমি অস্বীকার করি না, কিন্তু একবার নিজের আত্মিক উচ্চতা ও অভ্যাসের দিকে তাকিয়ে দেখো—আর এখনো তুমি শর্তগুলির বিষয়ে দরদস্তুর করার চেষ্টা করছ। এই তোমার সঙ্কল্পের মাধ্যমে অর্জিত আত্মিক উচ্চতা? তোমার মধ্যে কি এখনও সততা অবশিষ্ট আছে? বিবেকবোধ আছে? আমিই কি কিছু ভুল করেছি? তোমার প্রতি আমার সমস্ত চাহিদাই কি ভুল ছিল? তাহলে, কী সেই চাহিদা? আমি তোমাকে কিছুদিনের জন্য জন্য ফয়েল হিসাবে আমার মহিমা উজ্জ্বলতর করে প্রকাশিত করার জন্য কাজ করতে বলছি আর তুমি তাতেও ইচ্ছুক নও। এটা কী ধরনের সঙ্কল্প? তোমাদের ইচ্ছাশক্তি দুর্বল, তোমরা কাপুরুষ! তোমার মতো মানুষকে শাস্তি দেওয়াটা এখন খালি সময়ের অপেক্ষা!” আমি একথা বলার পরে সে আর একটিও কথা বলে নি।
এখন এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করে, তোমরা নিশ্চয়ই ঈশ্বরের কাজের পর্যায় এবং মানুষকে রূপান্তরিত করার জন্য তাঁর পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা উপলব্ধি করেছ। সে উপলব্ধি থাকাই রূপান্তরিত হওয়ার পথে ফলাফল অর্জন করার একমাত্র উপায়। তোমাদের অন্বেষণে তোমাদের মধ্যে বড় বেশি ব্যক্তিগত পূর্বধারণা, আশা এবং ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা থাকে। বর্তমানের কাজ হল তোমাদের মর্যাদার প্রতি আকাঙ্ক্ষা এবং মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশার মোকাবিলা করার জন্য। প্রত্যাশা, মর্যাদার আকাঙ্খা, এবং পূর্বধারণা, সবই শয়তানোচিত স্বভাবের চিরাচরিত প্রদর্শন। মানুষের মনে এইসব থাকার একমাত্র কারণ হল শয়তানের বিষ সর্বদাই মানুষের চিন্তাধারাকে ক্ষয় করছে, আর মানুষ কোনোসময়েই শয়তানের এই সমস্ত প্রলোভন দূর করতে সক্ষম হয় না। তারা পাপের মধ্যেই বাস করছে, কিন্তু সেটাকে পাপ বলে বিশ্বাস করে না, আর এখনও মনে করে: “আমরা ঈশ্বরের বিশ্বাস করি, তাই তিনি অবশ্যই আমাদের উপর আশীর্বাদ অর্পণ করবেন এবং আমাদের জন্য যথাযথভাবে সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করে দেবেন। আমরা ঈশ্বরবিশ্বাসী, তাই আমরা অবশ্যই বাকিদের থেকে উন্নত, আর বাকিদের থেকে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি মর্যাদা ও উৎকৃষ্ট ভবিষ্যত থাকা উচিত। যেহেতু আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তাই তাঁকে অবশ্যই আমাদের অগণিত আশীর্বাদ প্রদান করতে হবে। অন্যথায়, একে ঈশ্বরবিশ্বাস বলা যাবে না”। বহু বছর ধরে, মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত চিন্তাভাবনার উপর নির্ভর করেছে, সেগুলি তাদের অন্তরকে এমন অবস্থা পর্যন্ত ক্ষয় করেছে যে তারা বিশ্বাসঘাতক, কাপুরুষ ও ঘৃণ্য হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে যে ইচ্ছাশক্তি ও সঙ্কল্পের অভাব রয়েছে, তা-ই নয়, বরং তারা হয়ে উঠেছে লোভী, অহংকারী এবং স্বেচ্ছাচারী। তাদের মধ্যে এমন সংকল্পের খুবই অভাব যা তাদের নিজস্ব সত্তাকে অতিক্রম করতে পারে, এবং তদুপরি, তাদের এতটুকুও সাহস নেই এই অন্ধকার প্রভাবের বন্ধন ঝেড়ে ফেলার। মানুষের চিন্তাভাবনা ও জীবনে এতটাই পচন ধরেছে যে ঈশ্বরে বিশ্বাসের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অসহনীয় রকমের ঘৃণ্য, এবং মানুষ যখন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলে, সেটাও শোনার পক্ষে একেবারেই অসহনীয়। সকল মানুষই কাপুরুষ, অযোগ্য, ঘৃণ্য, এবং ভঙ্গুর। তারা অন্ধকারের শক্তির প্রতি বিতৃষ্ণা অনুভব করে না, আলোক এবং সত্যের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে না; পরিবর্তে, তারা সেগুলিকে বহিষ্কার করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে। তোমাদের বর্তমান চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি কি ঠিক এইরকমই নয়? “যেহেতু আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, আমার উপর আশীর্বাদ বর্ষিত হওয়া উচিত, এবং নিশ্চিত করা উচিত যে আমার মর্যাদা যেন না কমে, তা যেন অবিশ্বাসীদের চেয়ে উচ্চতর থাকে।” তুমি যে শুধু দুয়েক বছর ধরে এরকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে আসছ তা নয়, অনেক বছর ধরেই করছ। তোমাদের লেনদেন বিষয়ক চিন্তাধারা বেশিই বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও তুমি আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছ, তবু তোমরা এখনও কিন্তু পদমর্যাদার মোহ ত্যাগ করোনি, বরং এই বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য ক্রমাগত সচেষ্ট থেকেছ, প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করে গেছো, তোমাদের মনের গভীরে ভয় থেকে গেছে যে একদিন তোমার মর্যাদা হারিয়ে যাবে এবং তোমার সুনাম বিনষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ কখনোই সহজে তাদের আকাঙ্খা পরিত্যাগ করেনি। তাই, আজ আমি যখন এইভাবে তোমাদের বিচার করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের কাছে কত পরিমাণ উপলব্ধি থাকবে? তোমরা বলবে যে তোমাদের মর্যাদা উচ্চ না হলেও তোমরা ঈশ্বরের দ্বারা উন্নত হওয়া উপভোগ করেছ। নিম্নবর্গে জন্মানোর কারণে, তোমাদের মধ্যে মর্যাদা নেই, ঈশ্বর তোমাদের উন্নত করেন বলেই তোমরা মর্যাদা অর্জন করো—এই মর্যাদা তিনিই তোমাদের অর্পণ করেছেন। বর্তমানে তোমরা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের প্রশিক্ষণ, তাঁর শাস্তি, ও তাঁর বিচার লাভ করতে সক্ষম। এটাই আরও বেশি করে তাঁর উন্নতিসাধন। তোমরা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর পরিশোধন ও দহন প্রাপ্ত করতে সক্ষম। এটাই ঈশ্বরের মহৎ প্রেম। বহুযুগ ধরে একজনও তাঁর পরিশোধন ও দহন প্রাপ্ত হয় নি, এবং একজনও তাঁর বাক্যের দ্বারা নিখুঁত হয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি। ঈশ্বর এখন তোমাদের সাথে সামনাসামনি কথা বলছেন, তোমাদের পরিশোধন করছেন, তোমাদের অন্তর্নিহিত বিদ্রোহী মনোভাব প্রকাশ করছেন—এসব প্রকৃতই তাঁর উন্নতিসাধন। তোমাদের মধ্যে কী কী গুণ রয়েছে? দাউদের পুত্র বা মোয়াবের বংশধর, যে-ই হোক না কেন, সংক্ষেপে বলতে গেলে, মানুষ হল সৃষ্ট সত্তা, যাদের মধ্যে দম্ভ করার যোগ্য কিছুই নেই। যেহেতু তোমরা ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব, তাই তোমাদের সেই জীবের কর্তব্য অবশ্যই পালন করতে হবে। তোমাদের কাছ থেকে আর কোনো চাহিদা নেই। তোমাদের এইভাবে প্রার্থনা করা উচিত: “হে ঈশ্বর! আমার মর্যাদা থাকুক বা না থাকুক, আমি এখন নিজেকে বুঝি। আমার মর্যাদা যদি উচ্চ হয় তা তোমার উন্নতিসাধনের ফলেই হয়েছে, আর তা নিম্ন হলে, তা-ও তোমার আয়োজনেই হয়েছে। সবই তোমার হাতে। আমার না আছে কোনো পছন্দ, না কোনো অভিযোগ। তুমিই আয়োজন করেছিলে যে আমি এই দেশে, এই মানুষের মাঝে জন্ম নেব, আর আমাকে শুধুই তোমার আধিপত্যে সম্পূর্ণভাবে অনুগত হতে হবে, কারণ সমস্তকিছু তোমারই আয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। আমি মর্যাদার কথা চিন্তা করি না; সর্বোপরি, আমি একটা সৃষ্ট জীব ছাড়া তো কিছু নই। তুমি যদি আমাকে অতল গহ্বরে স্থান দাও, জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে রাখো, তবুও আমি একজন সৃষ্ট জীব ছাড়া কিছুই নই। তুমি যদি আমাকে ব্যবহার করো, তবু আমি একজন সৃষ্ট জীব। তুমি যদি আমাকে নিখুঁত করে তোলো, আমি তবুও এক সৃষ্ট জীব। যদি তুমি আমাকে নিখুঁত করে না তোলো, তাহলেও আমি তোমাকে ভালোবাসব কারণ আমি একটি সৃষ্ট জীব ছাড়া আর কিছু নই। আমি সৃষ্টির প্রভুর দ্বারা সৃষ্ট একটি ক্ষুদ্র জীব ছাড়া আর কিছুই নই, সমস্ত সৃষ্ট মানুষের মধ্যে নিছকই একজন। যে আমাকে সৃষ্টি করেছিল সে-ও তুমি, এবং এখন তুমিই আমাকে আরও একবার নিজের হাতে স্থান দিয়েছ যাতে তোমার ইচ্ছায় আমাকে ব্যবহার করতে পারো। আমি তোমার সরঞ্জাম এবং তোমার ফয়েল হতে ইচ্ছুক, কারণ সবকিছু তুমিই নির্ধারিত করেছ। কেউই তা পরিবর্তন করতে পারে না। সমস্ত বস্তু এবং সমস্ত ঘটনাই তোমার হাতে”। যখন এমন সময় আসবে যে তুমি আর মর্যাদা নিয়ে চিন্তা করবে না, তখনই তুমি এটার থেকে মুক্ত হবে। তবেই তুমি আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী হয়ে অন্বেষণ করতে সক্ষম হবে, এবং শুধু তখনই তোমার হৃদয় যে কোনোরকম বাধা থেকে মুক্ত হতে পারবে। একবার মানুষ এসব থেকে মুক্ত হয়ে গেলে তাদের আর কোনো উদ্বেগ থাকবে না। এই মুহূর্তে তোমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের কী কী উদ্বেগ রয়েছে? তোমরা সর্বদাই মর্যাদার দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং ক্রমাগত নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তোমরা সর্বদাই ঈশ্বরের কথনের পৃষ্ঠাগুলি উলটে যেতে থাকো, মানবজাতির গন্তব্য বিষয়ক কথাবার্তা পড়তে চাও, এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী ও তোমাদের গন্তব্য কী হবে সে বিষয়ে জানতে চাও। তুমি ভাবো, “আমার কি সত্যিই কোনো সম্ভাবনা আছে? ঈশ্বর কি সেগুলি ফিরিয়ে নিয়েছেন? ঈশ্বর শুধু বলেন যে আমি একজন ফয়েল, আমার কাজ শুধু বৈপরীত্যের মাধ্যমে তাঁর মহিমাকে উজ্জ্বলতর করে তোলা; তাহলে আমার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী?” তোমাদের পক্ষে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুসম্ভাবনা ও নিয়তির চিন্তা সরিয়ে রাখা দুষ্কর। তোমরা এখন অনুগামী, আর কাজের এই পর্যায়ের বিষয়ে তোমরা কিছু উপলব্ধি অর্জন করেছ। তবে, তোমরা এখনও নিজেদের মর্যাদা বিষয়ক আকাঙ্ক্ষা সরিয়ে রাখো নি। তুমি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হলে তুমি অন্বেষণ করো, কিন্তু নিম্ন মর্যাদাসম্পন্ন হলে তুমি আর অন্বেষণ করো না। মর্যাদা বিষয়ক আশীর্বাদের চিন্তা তোমার মনে সবসময় থাকে। অধিকাংশ মানুষ নেতিবাচকতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারে না কেন? হতাশাজনক ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাই কি অনিবার্যভাবে এ প্রশ্নের উত্তর নয়? ঈশ্বরের কথন জারি হওয়ার সাথে সাথে তোমরা ব্যস্ত হয়ে নিজেদের প্রকৃত মর্যাদা ও পরিচয় দেখতে চাও। তোমরা মর্যাদা ও পরিচয়কে অগ্রাধিকার দাও, এবং দর্শনকে দ্বিতীয় স্থানে নির্বাসিত করো। যেখানে তোমাদের প্রবেশ করা উচিত সেই বিষয়গুলি থাকে তৃতীয় স্থানে, এবং চতুর্থ স্থানে থাকে ঈশ্বরের বর্তমান ইচ্ছা। তোমরা প্রথমেই দেখো, ঈশ্বরের তোমাদেরকে দেওয়া “ফয়েল” উপাধি পরিবর্তিত হয়েছে কিনা। তোমরা পড়ো, পড়তেই থাকো, আর যখন দেখো যে “ফয়েল” উপাধি অপসৃত হয়েছে, তখন আনন্দিত হয়ে ওঠো, ঈশ্বরকে প্রচুর ধন্যবাদ দাও, এবং তাঁর মহান শক্তির প্রশংসা করো। কিন্তু যদি তোমরা দেখো যে এখনও তোমরা ফয়েলই রয়ে গেছ, অর্থাৎ তোমাদের কাজ শুধু নিজেদের তাঁর বৈপরীত্যে রাখার মাধ্যমে তাঁর মহিমাকে উজ্জ্বলতর করাই রয়ে গেছে, তখন তোমরা দুঃখিত বোধ করো এবং তোমাদের অন্তরের উদ্যম অবিলম্বে অন্তর্হিত হয়। তোমরা এইভাবে যতই অন্বেষণ করবে, তোমাদের অর্জনের পরিমাণ ততই কম হবে। মানুষের মর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষা যত বেশি হবে, তাদের তত গুরুত্ব সহকারে মোকাবিলা করতে হবে এবং ততই তাদের ব্যাপক পরিমার্জনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এরকম মানুষেরা মূল্যহীন! তারা যাতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এইসব পরিত্যাগ করতে পারে, সেজন্য তাদের সাথে যথাযথ পরিমাণে মোকাবিলা করতে হবে এবং তাদের বিচার করতে হবে। যদি এইভাবে শেষ পর্যন্ত অন্বেষণ চালিয়ে যাও, তবে তোমরা কিছুই লাভ করবে না। যারা জীবনের অন্বেষণ করে না তাদের সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত করা যায় না, আর যারা সত্যের জন্য তৃষ্ণার্ত নয় তারা সত্য অর্জন করতে পারে না। তুমি ব্যক্তিগত পরিবর্তন ও প্রবেশের দিকে মনোযোগ দিও না, পরিবর্তে সেইসব মাত্রাতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা এবং বিষয়ের প্রতিই লক্ষ্য নিবদ্ধ রাখো, যেগুলি ঈশ্বরের প্রতি তোমার ভালোবাসাকে অবরুদ্ধ করে এবং তোমাকে তাঁর কাছাকাছি আসতে বাধা দেয়। এই বিষয়গুলি কি তোমাকে পরিবর্তিত করতে পারে? এগুলি কি তোমাকে রাজ্যে নিয়ে আসতে পারে? তোমার অন্বেষণের উদ্দেশ্য যদি সত্যের সন্ধান না হয়, তাহলে তোমার এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সাধারণ জগতেই ফিরে যাওয়া উচিত। এইভাবে সময় নষ্ট করা সত্যিই মূল্যহীন—নিজের প্রতি অত্যাচার করবে কেন? এটা কি সত্যি নয় যে তুমি এই সুন্দর পৃথিবীর সমস্ত ধরনের জিনিস উপভোগ করতে পারো? অর্থ, সুন্দরী রমণী, মর্যাদা, সম্মান, পরিবার, সন্তানসন্ততি, ইত্যাদি—এগুলো কি এই পৃথিবীতে তোমার পক্ষে সবচেয়ে উপভোগ্য বস্তু নয়? সুখে থাকার মতো একটা জায়গার সন্ধানে এখানে ঘুরে বেরিয়ে কী লাভ? মনুষ্যপুত্রেরই মাথা রাখার কোনো জায়গা নেই, তাহলে তুমি স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা কীভাবে পাবে? তিনি কীভাবে তোমার জন্য সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা তৈরি করতে পারেন? তা কি সম্ভব? আমার বিচার ব্যতীত বর্তমানে তুমি আর শুধুমাত্র সত্যের বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারো। তুমি আমার কাছ থেকে স্বাচ্ছন্দ্য পাবে না, দিনরাত যে সুখের জীবন কামনা করো তা পাবে না। আমি তোমার উপর পৃথিবীর যাবতীয় ধনসম্পদ বর্ষণ করব না। যদি তুমি প্রকৃতরূপে অন্বেষণ করো, তবে আমি তোমাকে জীবনের সমগ্র পথ প্রদান করতে ইচ্ছুক, যাতে তুমি জলে ফিরে আসা মাছের মতো স্বস্তি অনুভব করো। তুমি প্রকৃতরূপে অন্বেষণ না করলে আমি সবই ফিরিয়ে নেব। আমি আমার মুখনিঃসৃত বাক্য তাদের প্রদান করতে ইচ্ছুক নই যারা স্বাচ্ছন্দ্যের লোভ করে, যারা নিছক শূকর ও কুকুরের মতো!
পাদটীকা:
ক. মূল রচনায় লিখিত আছে “স্ত্রী”।
*অনুবাদকের মন্তব্য: যে ব্যক্তি নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের মহিমাকে প্রোজ্জ্বল করে প্রস্ফুটিত করে।