সূচনা কালে খ্রীষ্টের বাক্য—অধ্যায় ১৫
সকল গির্জায় ইতিমধ্যে ঈশ্বরের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। একমাত্র আত্মাই সমস্তকিছু ব্যক্ত করছেন; তিনি হলেন এক প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, তিনি মহিমা ধারণ করেন এবং বিচার করেন। তিনি মনুষ্যপুত্র, তাঁর পায়ের পাতা অবধি ঝুলন্ত পোশাকে আচ্ছাদিত এবং তাঁর বক্ষদেশ একটি সোনার বন্ধনীতে বাঁধা। তাঁর মস্তক ও কেশ পশমের ন্যায় শ্বেত এবং তাঁর চক্ষু অগ্নিশিখা-সদৃশ; তাঁর পা মসৃণ পিতলের মতো, যেন হাপরে গড়া, এবং তাঁর কণ্ঠস্বর বিপুল জলরাশির শব্দের ন্যায়। তাঁর দক্ষিণহস্ত ধারণ করেছে সপ্ততারকা, এবং তাঁর মুখে রয়েছে এক দুই দিকে ধার-বিশিষ্ট তলোয়ার, এবং তাঁর মুখাবয়ব জ্বলন্ত সূর্যের ন্যায় সুতীব্ররূপে উজ্জ্বল!
মনুষ্যপুত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া গিয়েছে, এবং ঈশ্বর স্বয়ং প্রকাশ্যে আবির্ভূত হয়েছেন। ঈশ্বরের মহিমা জারি হয়েছে, এবং তা জ্বলন্ত সূর্যের ন্যায় প্রখররূপে প্রজ্জ্বল! তার মহিমান্বিত মুখমণ্ডল চোখধাঁধানো আলোকে প্রোজ্জ্বল; তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে, এমন স্পর্ধা কার চোখে রয়েছে? প্রতিরোধ মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়! তোমরা তোমাদের মনে যাই ভাব, যে কথাই বল, বা যা কিছুই কর, কোনোকিছুকেই বিন্দুমাত্রও করুণার করা হয় না। তোমরা সবাই তা একদিন বুঝতে পারবে এবং দেখতে পাবে যে তোমরা কী পেয়েছ—তা আমার বিচার ব্যাতিরেকে আর কিছুই নয়! তোমরা যখন আমার বাক্য ভোজন ও পান করার কোনো প্রকার চেষ্টা কর না, এবং তার পরিবর্তে যথেচ্ছ বাধা দাও এবং আমার নির্মাণকে বিনষ্ট কর, আমি কি তখন তা মেনে নিতে পারি? আমি এই ধরনের ব্যক্তির সাথে অবশ্যই কোমল আচরণ করব না! আর তোমার আচরণের যদি আরও গুরুতর অধঃপতন ঘটে তাহলে, তুমি আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে! সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এক আধ্যাত্মিক দেহে আত্মপ্রকাশ করেন, মস্তক থেকে পদাঙ্গুলি অবধি সংযোগকারী সামান্যতম মাংস অথবা রক্ত ছাড়াই। বিশ্বজগৎ অতিক্রম করে তিনি তৃতীয় স্বর্গে মহিমান্বিত সিংহাসনে উপবিষ্ট হন, সকল কিছুর পরিচালনা করেন! এই মহাবিশ্ব এবং সমস্ত কিছু আমার হাতের মধ্যে। আমি যা বলব, তাই হবে। আমি যা আদেশ দেব, তাই হবে। শয়তানের স্থান আমার পায়ের নিচে; অতল গহ্বরে! যখন আমার কণ্ঠস্বর জারি হয়, তখন স্বর্গ ও পৃথিবীর লয়প্রাপ্ত হবে এবং বিলুপ্ত হয়ে যাবে! সব কিছু নতুন করে জন্ম নেবে; এ হল এক অপরিবর্তনীয় সত্য যা সম্পূর্ণরূপে সঠিক। আমি জগতকে জয় করেছি আর সেইসাথে সমস্ত মন্দদেরও জয় করেছি। আমি এখানে বসে তোমাদের সাথে কথা বলছি, এবং যাদের কান রয়েছে তাদের প্রত্যেকেরশ্রবণ করা উচিত এবং যারা জীবিত রয়েছে তাদের প্রত্যেকের গ্রহণ করা উচিত।
এই দিনগুলোর একদিন অবসান ঘটবে; এই জগতের সব কিছু লুপ্ত হয়ে যাবে, এবং সমস্ত কিছু নতুন করে জন্ম নেবে। এটা মনে রেখো! ভুলে যেও না! এ বিষয়ে কোনো দ্ব্যার্থতা নেই! স্বর্গ আর পৃথিবী একদিন অবলুপ্ত হবে, কিন্তু আমার বাক্য রয়ে যাবে! আমি আবারও তোমাদেরকে অনুরোধ করছি: অযথা এদিক ওদিক ছুটো না! জাগো! অনুতাপ কর, এবং পরিত্রাণ আসন্নপ্রায়! আমি ইতিমধ্যে তোমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়েছি, এবং আমার কণ্ঠস্বর জাগ্রত হয়েছে। তোমাদের সামনে আমার কন্ঠস্বর ধ্বনিত হয়েছে; প্রত্যহ তোমরা তার মোকাবিলা কর, মুখোমুখি, নিয়ত তা হয় তাজা এবং নতুন। তুমি আমায় দেখতে পাও এবং আমিও তোমায় দেখি; আমি অবিরত তোমাদের সাথে কথা বলি, এবং তোমার মুখোমুখি হই। তবুও, তুমি আমায় প্রত্যাখ্যান কর এবং আমাকে চিনতে পারো না। আমার মেষগণ আমার কণ্ঠস্বর শুনতে পায়, তবু তোমরা ইতস্তত কর! দ্বিধাবোধ কর! তোমাদের অন্তরের বোধশক্তি লোপ পেয়েছে, শয়তান তোমাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছে, এবং তোমরা আমার মহিমান্বিত মুখ দেখতে পাও না—কতই না করুণার যোগ্য তোমরা! কী দুঃখজনক!
আমার সিংহাসনের সামনের সপ্ত আত্মাকে পৃথিবীর সমস্ত কোণায় পাঠানো হয়েছে এবং আমি আমার দূতকে গির্জার সাথে কথা বলার জন্য পাঠাব। আমি ধর্মনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসী; আমি হলাম সেই ঈশ্বর যিনি মানুষের হৃদয়ের গভীরতম অংশের পরীক্ষা নেন। পবিত্র আত্মা গির্জার সাথে কথা বলেন, এবং আমার পুত্রের অন্তর থেকে যাই জারি হয় তা আমারই বাক্য; যাদের কান রয়েছে তাদের সকলেরই শ্রবণ করা উচিত! যারা জীবিত তাদের সকলেরই স্বীকার করা উচিত! শুধু তা থেকে ভোজন এবং পান কর, এবং সন্দেহ কোরো না। যারা নিজেকে সমর্পণ করে এবং আমার বাক্য মান্য করে তারা সকলেই পরমরূপে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে! যারা আন্তরিকভাবে আমার মুখ অনুসন্ধান করে তারা অবশ্যই নতুন আলো, নতুন আলোকপ্রাপ্তি, এবং নতুন অন্তর্দৃষ্টিসমূহ পাবে; সমস্তকিছু সতেজ এবং নতুন হবে। আমার বাক্যসমূহ যে কোনো সময়ে তোমার কাছে আবির্ভূত হবে, এবং তা তোমার আত্মার চক্ষু উন্মোচিত করবে যাতে আধ্যাত্মিক জগতের সকল রহস্য তুমি দেখতে পাও, এবং দেখতে পাও যে মানুষেরই মাঝে রয়েছে আমার রাজত্ব। আশ্রয়ে প্রবেশ কর, এবং সকল অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ তোমাতেই বর্ষিত হবে; দুর্ভিক্ষ এবং মহামারী তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না, এবং নেকড়ে, সাপ, বাঘ এবং চিতাবাঘ তোমার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। তুমি আমার সঙ্গে যাবে, আমার সঙ্গে হাঁটবে, এবং আমার সঙ্গে মহিমাতে প্রবেশ করবে!
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর! তাঁর মহিমান্বিত দেহ প্রকাশ্যে আবির্ভূত হল, পবিত্র আধ্যাত্মিক দেহ উদিত হল, এবং তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর! জগত এবং দেহ উভয়ই পরিবর্তিত হয়েছে, এবং পর্বতপৃষ্ঠে তাঁর রূপান্তরই হল ঈশ্বরের মানব রূপ। তিনি স্বীয় শিরোপরে পরিধান করে রয়েছেন সোনার মুকুট, তাঁর পোশাক বিশুদ্ধ শ্বেতবর্ণ, তাঁর বক্ষজুড়ে রয়েছে এক সোনার বন্ধনী, এবং সমগ্র জগৎ ও সকল কিছু হল তাঁর পাদপীঠ। তাঁর চক্ষু অগ্নিশিখা-সম, তিনি তাঁর মুখে ধারণ করেছেন এক দুই দিকে ধার-সমন্বিত তলোয়ার, এবং তাঁর দক্ষিণহস্তে রয়েছে সপ্ত-তারকা। রাজ্যের পথ অপরিসীমরূপে উজ্জ্বল, এবং তাঁর মহিমা জাগ্রত তথা জাজ্বল্যমান; পর্বতসকল আনন্দময় এবং জলরাশি হাস্য করে, এবং সূর্য-চন্দ্র-তারকারাজি সকলই স্বীয় সুশৃঙ্খল বিন্যাসে আবর্তিত হয়, স্বাগত জানায় সেই অনন্য, সত্য ঈশ্বরকে, যাঁর বিজয়ীরূপে প্রত্যাবর্তন তাঁর ছয়-হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সমাপ্তি ঘোষণা করে। সকলকিছু আনন্দে লম্ফমান ও নৃত্যরত হয়! উল্লাস কর! সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর মহিমান্বিত সিংহাসনে আসীন! গীত কর! মহিমান্বিত, প্রকাণ্ড সিয়োন পর্বতের ঊর্দ্ধে, সুউচ্চে, সর্বশক্তিমানের বিজয়কেতন উড্ডীয়মান! সকল রাষ্ট্র উল্লাস করছে, সকল মানব গীত গাইছে, সিয়োন পর্বত সহর্ষে হাস্য করছে, এবং ঈশ্বরের মহিমা উত্থিত হয়েছে! আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে আমি ঈশ্বরের মুখ দেখতে পাব, তবু, আজ আমি তা দেখতে পেয়েছি। প্রত্যহ তাঁর সম্মুখীন হয়ে, আমি তাঁর নিকটে নিজ হৃদয় উজার করে দিই। তিনি প্রভূত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ করেন। জীবন, কথা, কাজ, চিন্তা, ধারণা—তাঁর মহিমান্বিত আলোকে এই সকলকিছুআলোকিত হয়। তিনি যাত্রাপথের প্রতিটি পদক্ষেপে পথপ্রদর্শন করেন, এবং তাঁর বিচার যে কোনও বিদ্রোহী হৃদয়ে অবিলম্বে বাস্তবায়িত হয়।
একত্রে ভোজন ও বসবাস করা, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে একত্রে জীবনযাপন করা, একত্রে চলা, একত্রে উপভোগ করা, একত্রে গৌরব ও আশীর্বাদ অর্জন করা, তাঁর সাথে রাজত্ব ভাগ করে নেওয়া এবং সেই রাজ্যে একত্রে থাকা—আহা, তা কতই না সুখের বিষয়! আহা, তা কত মধুর! আমরা নিয়ত তাঁর মুখোমুখি হই, নিয়ত তাঁর সাথে বার্তালাপ করি এবং ক্রমাগত কথা বলে চলি, এবং প্রত্যহ আমাদের নতুন আলোকপ্রাপ্তি ও নতুন অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা হয়। আমাদের আধ্যাত্মিক চক্ষু উন্মোচিত হয়েছে, এবং আমরা সমস্তকিছু দেখতে পাই; আত্মার সকল রহস্য আমাদের কাছে প্রকাশিত। পবিত্র জীবন যথার্থরূপেই চিন্তামুক্ত; সবেগে ধাবমান হও, এবং থেম না, এবং ক্রমাগত এগিয়ে চলো—সম্মুখে একআশ্চর্যতর জীবন বিদ্যমান। নিছক মধুর স্বাদে মুগ্ধ হয়ো না; ঈশ্বরের অন্তরে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাও। তিনি সর্বব্যাপী এবং প্রাচুর্যমণ্ডিত এবং আমাদের মধ্যে যা কিছুর অভাব রয়েছে সে সকল বস্তুই তাঁর কাছে রয়েছে। সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা কর এবং তাঁর মধ্যে প্রবেশ কর, এবং কোনোকিছুই আর কখনো পূর্ববৎ রইবে না। আমাদের জীবন অতীন্দ্রিয় হয়ে উঠবে, এবং কোনো ব্যক্তি, বস্তু অথবা পদার্থ আমাদের বিরক্ত করতে পারবে না।
অতীন্দ্রিয়তা! অতীন্দ্রিয়তা! প্রকৃত অতীন্দ্রিয়তা! ঈশ্বরের অতীন্দ্রিয় জীবন রয়েছে অভ্যন্তরে, এবং সকল বস্তু যথার্থরূপেই স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠেছে! আমরা স্বামী বা সন্তানদের প্রতি কোনপ্রকার আসক্তি অনুভব না করে জগত ও জাগতিক বিষয়সমূহকে অতিক্রম করি। আমরা অসুস্থতা এবং পরিবেশের নিয়ন্ত্রণকে অতিক্রম করি। শয়তান আমাদের বিব্রত করার স্পর্ধা রাখে না। আমরা সকল বিপর্যয় সম্পূর্ণরূপে অতিক্রম করি। ঈশ্বরকে রাজপদ অধিকার করতে দেওয়ার ফলাফল এমনই! আমরা শয়তানকে পদদলিত করি, গির্জার সপক্ষে সাক্ষ্যে দণ্ডায়মান হই, এবং শয়তানের কুৎসিত মুখ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রকাশ করি। গির্জার নির্মাণ খ্রীষ্টের মধ্যেই রয়েছে এবং মহিমান্বিত দেহ উত্থিত হয়েছে—এই হল উন্নীত অবস্থায় জীবনযাপন!