পথ … (৭)
আমাদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতায় আমরা দেখি যে, অনেকবারই ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য কোনো একটি পথ খুলে দিয়েছেন, যাতে আমাদের পায়ের নীচের পথ আরও বেশী শক্ত ও বাস্তবিক হতে পারে। কারণ এই পথই ঈশ্বর আমাদের জন্য খুলে দিয়েছেন অনাদিকাল থেকে, এবং এই পথ দশ হাজার বছরের পরেও আমাদের প্রজন্মের কাছে ধারাবাহিক ভাবে চলে এসেছে। এইভাবে, আমরা অনুসরণ করেছি আমাদের পূর্বপুরুষদের পথ, যে পথের শেষ পর্যন্ত তারা হাঁটেনি। এই পথের সর্বশেষ পর্যায়ে হাঁটার জন্য ঈশ্বর আমাদের বেছে নিয়েছেন। এবং সেহেতু, এই পথটি ঈশ্বর আমাদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করেছেন, এবং আমরা আশীর্বাদপ্রাপ্ত অথবা দুর্ভাগ্য-কবলিত যা-ই হই না কেন, এই পথে আমরা ছাড়া অন্য কেউ হাঁটতে পারবে না। এখানে আমি আমার অন্তর্দৃষ্টিটি যুক্ত করছি: অন্য কোনো জায়গায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো না, বা অন্য কোনো পথ খোঁজার চেষ্টা করো না, এবং মর্যাদার অভিলাষী হয়ো না, বা নিজের রাজ্যপাট প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করো না—কারণ এগুলি সবই অলীক কল্পনা। আমার বাক্যের সম্পর্কে তোমার পূর্ববর্তী কিছু ধারণা থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আমি তোমাকে এত হতবিহ্বল না হওয়ারই পরামর্শ দেব। এই বিষয়টিকে নিয়ে আরো বেশি করে চিন্তাভাবনা করাই তোমার পক্ষে শ্রেয় হবে; অতিচালাক হওয়ার চেষ্টা করো না, এবং ভালো ও খারাপকে গুলিয়ে ফেলো না। ঈশ্বরের পরিকল্পনা সুসম্পন্ন হলে তুমি তা নিয়ে আফসোস করবে। আমি শুধু বলতে চাইছি যে, যখন ঈশ্বরের রাজ্য আসবে, তখন পৃথিবীর সব দেশ ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। সেইসময়ে তুমি দেখতে পাবে যে তোমার নিজস্ব পরিকল্পনাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে, এবং যাদের শাস্তি দেওয়া, হয়েছে তারা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, এবং এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর স্বভাবকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করবেন। আমার মনে হয় যে, যেহেতু এই বিষয়গুলি আমার কাছে একেবারে স্পষ্ট, তাই আমার উচিত এইগুলি তোমাদের জানিয়ে দেওয়া, যাতে তোমরা পরবর্তীকালে আমাকে দোষারোপ না করো। আমরা এই পথে যে এতদিন হাঁটতে সক্ষম হয়েছি, তা ঈশ্বরের আজ্ঞাতেই, তাই ভেবোনা যে তুমি বিশেষ কেউ, অথবা আবার নিজেকে দুর্ভাগ্যবানও ভেবো না—ঈশ্বরের বর্তমান কার্য নিয়ে কেউই দৃঢ়ভাবে বলতে পারে না, নয়ত সে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। আমি ঈশ্বরের কার্য দ্বারা আলোকিত হয়েছি: যাই হয়ে যাক না কেন, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের এই দলকে সম্পূর্ণ করবেনই, তাঁর কাজ পুনরায় কখনো পরিবর্তিত হবে না এবং তিনি এই মানবগোষ্ঠীকে পথের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাবেন, এবং এই পৃথিবীতে তাঁর কাজ সমাপ্ত করবেন। আমাদের সকলেরই তা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। বেশীরভাগ মানুষ “সামনের দিকে তাকাতে” ভালোবাসে, এবং তাদের ক্ষুধার অন্ত নেই। তাদের কারোরই ঈশ্বরের বর্তমান জরুরি ইচ্ছা সম্পর্কে উপলব্ধি নেই, এবং তাই তারা সকলেই পালানোর কথা ভাবে। তারা পলায়নপর অশ্বের ন্যায়, যারা কেবল বিজনপ্রদেশে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে; খুব অল্প লোকই কনান দেশের পবিত্র ভূমিতে স্থায়ী হয়ে মানবজীবনের পথের সন্ধান করতে চায়। দুগ্ধ ও মধুর প্রবাহপূর্ণ এমন দেশে প্রবেশ করে, যদি মানুষ তা উপভোগ না করে, তাহলে তারা এর থেকে বেশী আর কী চায়? সত্যি কথা বলতে, কনান দেশের পবিত্রভূমির বাইরে কেবলই ধূ ধূ মরুভূমি অবস্থিত। এমনকি মানুষ বিশ্রামস্থলে প্রবেশ করেও যখন নিজের কর্তব্য পালন করতে পারে না; তারা কী কেবলই গণিকা নয়? যদি তুমি এখানে ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হয়ে ওঠার সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলো, তবে সারাজীবন ধরেই এটার জন্য আফসোস করবে, তোমার আক্ষেপের কোনো সীমা থাকবে না। তুমি হয়ে উঠবে মোশির মতো, যে কনান দেশের পবিত্র ভূমিতে দৃষ্টিপাত করা সত্ত্বেও তা উপভোগ করতে পারেনি, তার হাত ছিল মুষ্টিবদ্ধ এবং তার মৃত্যু ছিল অনুশোচনাময়—তোমার কি তা লজ্জাজনক মনে হয় না? তোমার কী মনে হয় না যে অন্যের উপহাসের পাত্র হওয়া লজ্জার বিষয়? তুমি কি অন্যদের দ্বারা অপমানিত হতে চাও? তুমি কি নিজের ভালো চাও না? তুমি কি হয়ে উঠতে চাও না এমন একজন সম্মানীয় ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষ, যে ঈশ্বরের দ্বারা ত্রুটিমুক্ত হয়েছে? তুমি কি সত্যিই কোনোকিছু ব্যাকুল ভাবে কামনা করো না? তুমি অন্য পথগুলিতে যেতে চাও না; তুমি কি তোমার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা অভিষিক্ত পথেও যেতে চাও না? তুমি কি স্বর্গের ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস দেখাতে চাও? তোমার “দক্ষতা” যতই মহান হোক না কেন, তুমি কী সত্যিই স্বর্গকে ক্ষুব্ধ করতে পারো? আমার মনে হয় আমাদের নিজেদেরকে যথাযথ ভাবে জানার চেষ্টা করাই শ্রেয়। ঈশ্বরের এক বাক্যেই স্বর্গ ও মর্ত্য পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাঁর চোখে একজন কৃশকায় ক্ষুদ্র ব্যক্তি আর এমন কী?
আমার নিজের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি যে, তুমি যত বেশি ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করবে, ঈশ্বর তত বেশি তাঁর মহিমান্বিত স্বভাব প্রদর্শন করবেন, এবং ততোধিক বেশি হবে সেই শাস্তির পরিমাপ, যা ঈশ্বর তোমাকে “পরিবেশন” করবেন; যত বেশি তুমি তাঁকে মান্য করবে, তিনি ততই বেশী তোমায় ভালোবাসবেন ও রক্ষা করবেন। ঈশ্বরের স্বভাব হল একপ্রকার দণ্ডদানকারী যন্ত্রের মতো: তুমি তাঁকে মান্য করলে সর্বদা সুরক্ষিত ও অক্ষত থাকবে; কিন্তু যখন তুমি তাঁকে অমান্য করো—যখন সর্বদা জাহির করতে চাও এবং ছলাকলা করো—তৎক্ষণাৎ ঈশ্বরের স্বভাব বদলে যায়। তিনি হলেন মেঘলা দিনে সূর্যের মতো, তিনি নিজেকে তোমার থেকে লুকিয়ে রাখবেন এবং তোমাকে তাঁর ক্রোধ প্রদর্শন করবেন। একইভাবে তাঁর স্বভাব হল জুন মাসের আবহাওয়ার মতো, যখন আকাশ বহুদূর অবধি পরিষ্কার থাকে এবং ঢেউগুলি জলের উপরিভাগে ক্ষুদ্র তরঙ্গের মতো থাকে, যতক্ষণ না সহসা স্রোত করে বেড়ে যায় এবং জল ঘূর্ণিপাক খেয়ে উথালপাথাল হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের এহেন স্বভাবের সম্মুখেও কী তুমি এতটা বেপরোয়া হওয়ার সাহস দেখাবে? তোমাদের অভিজ্ঞতায়, তোমরা, ভাই ও বোনেরা, অধিকাংশজনই দেখেছো যে, যখন পবিত্র আত্মা দিনের আলোয় কাজ করে, তখন তোমার মধ্যে পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকে—কিন্তু তারপর সহসা ঈশ্বরের আত্মা তোমায় পরিত্যাগ করেন, এবং তুমি এতটাই পীড়িত হয়ে ওঠো যে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করো, এবং তাঁর আত্মা কোন অভিমুখে অদৃশ্য হয়েছেন, তা-ই তুমি খুঁজতে থাকো। তুমি যা-ই করো না কেন, কোথায় তাঁর আত্মা গমন করল তা তুমি কিছুতেই খুঁজে পাওনা—কিন্তু তখনই তিনি আবার তোমার সামনে হঠাৎ প্রকট হয়ে ওঠেন এবং তুমি পরমানন্দিত হয়ে ওঠো, ঠিক যেমন আরেকবার প্রভু যীশুকে দেখে পিতর আনন্দিত হয়েছিল, আনন্দের আতিশয্যে তোমার কেঁদে ফেলার উপক্রম হয়। এতবার এই অভিজ্ঞতা হওয়ার পরেও কি তুমি তা ভুলে গেছো? প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, যিনি দেহধারণ করছিলেন, যাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, এবং তারপর যিনি পুনরুত্থিত হয়ে স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন, তিনি কিছুকাল তোমার সামনে নিয়ত লুক্কায়িত থাকেন, এবং তারপর কিছু সময়ের জন্য তোমার সামনেই আবির্ভূত হন। তোমার ন্যায়পরায়ণতার কারণেই তিনি নিজেকে তোমার সামনে প্রকাশ করেন, এবং তোমার পাপের কারণে-ই তিনি তোমার থেকে বিদায় নেন, তাহলে তুমি তাঁর কাছে আরো বেশী করে প্রার্থনা কেন করো না? তুমি কী জানো না যে, পঞ্চাশত্তোমী পর্বের পরে এই পৃথিবীতে প্রভু যীশু খ্রীষ্টের উপর আরও একটি অর্পিত দায়িত্ব হয়েছিল? তুমি কেবল এটুকুই জানো যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দেহধারণ করেছিলেন, এই পৃথিবীতে তাঁর আগমন হয়েছিল, এবং তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। তুমি কখনোই উপলব্ধি করতে পারোনি যে, তুমি আগে যে যীশুর ওপর বিশ্বাস করতে, তিনি তাঁর কর্মভার বহুপূর্বেই অন্য একজনের হাতে সঁপে দিয়েছেন, এবং যে, সেই কাজ অনেক আগেই সমাপ্ত হয়ে গেছে, তাই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর কাজের অপর এক অংশ সম্পন্ন করতে দেহধারণ করে পুনরায় মর্ত্যে আগমন করেছেন। আমি এখানে কিছু যুক্ত করতে চাই—তোমরা বর্তমানে এই স্রোতে থাকা সত্ত্বেও, আমি হলফ করে বলতে পারি তোমাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনই বিশ্বাস করো যে, ইনিই হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা তোমাদের উপর আশীর্বাদস্বরূপ বর্ষিত হয়েছেন। তোমরা কেবল তাঁকে উপভোগ করতে জানো; তোমরা স্বীকার করো না যে, ঈশ্বরের আত্মা পুনর্বার এই মর্ত্যে আবির্ভূত হয়েছেন, এবং এটাও স্বীকার করো না যে, আজকের ঈশ্বর আসলে হাজার হাজার বছর আগের যীশু খ্রীষ্ট। এবং তাই আমি বলি যে তোমরা সবাই চোখ বন্ধ করে হাঁটছ—তোমরা যেখানে অবশেষে থামো, সেটাই মেনে নাও—এবং তোমরা এই বিষয়ে একটুও মনোযোগী নও। সুতরাং, তোমরা যীশুকে শুধু কথাতেই বিশ্বাস করো, কিন্তু ঈশ্বর আজ যাঁর সাক্ষ্য বহন করেন, তাঁকে নির্লজ্জভাবে বাধা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাও। তুমি কি নির্বোধ নও? বর্তমানের ঈশ্বর তোমার ভুলত্রুটি পরোয়া করে না, তিনি তোমার নিন্দা করেন না। তুমি বলো যে তুমি যীশুর প্রতি বিশ্বাস রাখো, তার মানে কি এই, যে, তোমার প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমায় নিস্তার দেবেন? তোমার কি মনে হয় যে, ঈশ্বর হলেন এমন এক স্থান, যেখানে এসে মনের ক্ষোভ উদ্গীরণ করা যায়, যায়, মিথ্যা বলা যায়, আর ঠকানো যায়? যখন তোমার প্রভু যীশু খ্রীষ্ট পুনরায় নিজেকে প্রকাশ করবেন, তখন তিনি তোমার বর্তমান আচরণের ভিত্তিতেই বিচার করবেন যে তুমি ধার্মিক না মন্দ। “আমার ভাই ও বোনেরা” বলতে আমি যাদের উল্লেখ করি, তা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ অপধারণা পোষণ করে এবং বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের কার্যসাধনের উপায়ান্তর পরিবর্তিত হবে। এই ধরনের মানুষ কি মৃত্যুকামনা করছে না? ঈশ্বর কি শয়তানের কাছে স্বয়ং ঈশ্বর রূপে সাক্ষ্য দিতে পারেন? তুমি কি মনে করো যে, যে-কেউই স্বয়ং ঈশ্বর হয়ে উঠতে পারে? যদি তুমি সত্যিই তা জানতে, তাহলে কোনো পূর্বধারণাই পোষণ করতে না। বাইবেলের এই নিম্নলিখিত অংশ: সব কিছু তাঁর জন্য, সব কিছুর উৎপত্তিও তাঁর থেকে। তিনি অনেক পুত্রকে গৌরবান্বিত করবেন এবং তিনিই আমাদের অধিনায়ক…। তাই আমাদের ভাই বলে সম্বোধনে তাঁর কোনো লজ্জা নেই। এইভাবে আমাদের নিজের ভাই বলে ডাকতে তাঁর কোনো লজ্জা নেই। তুমি সহজেই এই বাক্যগুলি মনে মনে পড়তে পারলেও, এই বাক্যগুলির আসল অর্থ কী, তা তুমি বোঝো না। তুমি কি অন্ধের মতো ঈশ্বরে বিশ্বাস করছো না?
আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের প্রজন্ম সৌভাগ্যবান, কারণ তারা তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অসম্পূর্ণ পথে হাঁটতে সক্ষম হয়েছে, এবং সহস্রাধিক বছর অতীতের ঈশ্বরের পুনরাবির্ভাব প্রত্যক্ষ করেছে—এমন এক ঈশ্বর যিনি আমাদের মধ্যে এবং সকল বস্তুর মধ্যে বিরাজমান। তুমি এই পথে হাঁটবে এমনটা হয়ত কখনো কল্পনাই করতে পারোনি—তুমি কি এই পথে হাঁটতে আদৌ সক্ষম? এই পথ পবিত্র আত্মার দ্বারা সরাসরি পরিচালিত, এটি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সপ্তগুণ তীব্রতর আত্মার দ্বারা চালিত, এবং এই পথই বর্তমানের ঈশ্বর তোমার জন্য উন্মোচন করেছেন। এমনকি তোমার অলীকতম স্বপ্নেও তুমি কল্পনা করতে পারোনি যে, সহস্রাধিক বছর পূর্বের যীশু তোমার সম্মুখে পুনরাবির্ভূত হবেন। তোমার কি নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে হয় না? কে পারে ঈশ্বরের মুখোমুখি এমন আসতে? আমি প্রায়শই ঈশ্বরের কাছে আমাদের গোষ্ঠীর জন্য অধিকতর আশীর্বাদপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করি, যেন আমরা তাঁর আনুকূল্য লাভ করতে পারি, এবং তাঁর দ্বারা অর্জিত হতে পারি, কিন্তু অনেকসময়ই এরকম হয়েছে যে, আমি আমাদের জন্য তিক্ত অশ্রু বর্ষণ করেছি, ঈশ্বরকে অনুরোধ করেছি আমাদের আরও আলোকিত করতে, যাতে আমরা মহানতর প্রকাশসমূহ প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হই। যখন আমি এমন মানুষ দেখি, যে ঈশ্বরকে বোকা বানানোর নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যায় এবং কখনোই আকুলভাবে কিছু কামনা করে না, বা যারা দৈহিক চিন্তায় মগ্ন, বা যারা কেবলই নিজেকে আকর্ষণের কেন্দ্র করে তুলতে স্বার্থপূরণ ও যশ-অর্জনের আশা করে, তখন আমার হৃদয়ে প্রবল বেদনা হবে না—এমনটা কি হতে পারে? মানুষ কেমন করে এত অনুভূতিহীন হতে পারে? আমার কাজের কি সত্যি কোনো প্রভাবই পড়েনি? যদি তোমার সন্তানেরা তোমার প্রতি বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করত এবং অসন্তানোচিত আচরণ করত, যদি তাদের বিবেকবোধ কম থাকত, যদি তারা কেবল নিজেদের কথাই ভাবত এবং তোমার অনুভূতির বিষয়ে বিন্দুমাত্র সহানুভূতিশীল না হতো এবং যদি বড় হওয়ার পরে তোমাকেই ঘরছাড়া করে দিত, তখন, সেই মুহূর্তে, তোমার কেমন অনুভূতি হতো? তখন তাদেরকে বড় করে তোলার জন্য যে রক্ত-ঘাম তুমি ঝরিয়েছ এবং যে ত্যাগস্বীকার তুমি করেছো, তা ভেবে কি তোমার চোখ থেকে অশ্রুধারা নেমে আসত না? তাই আমি অসংখ্যবার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি এই বলে যে: “প্রিয় ঈশ্বর! কেবল তুমিই জানো যে আমি তোমার কাজের দায়িত্বভার বহন করি কিনা। কোথায় আমার কাজ তোমার ইচ্ছার সাথে সঙ্গত হয় নি, তুমি আমায় অনুশাসন করো, নিখুঁত করে তোলো এবং আমায় অবগত করো। তোমার কাছে আমার একমাত্র অনুরোধ, তুমি এই মানুষদের আরও বেশি করে চালিত করো, যাতে তুমি আরও দ্রুত নিজের গৌরব অর্জন করতে পারো, এবং যাতে তারা তোমার দ্বারা অর্জিত হতে পারে, যার ফলে তুমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারো, এবং যাতে তোমার পরিকল্পনা আগেই সম্পূর্ণ করা যেতে পারে।” ঈশ্বর মানুষকে শাস্তির মাধ্যমে জয় করতে চান না, তিনি সবসময় মানুষকে সরাসরি পরিচালিত করতে চান না। তিনি চান যে, মানুষ তাঁর বাক্য মান্য করুক, অনুশাসিত ভাবে কাজ করুক, এবং, এর মাধ্যমে, তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করুক। কিন্তু মানুষের কোনো লজ্জা নেই, এবং তারা তাঁর বিরুদ্ধে নিরন্তর বিদ্রোহ করে। আমার মনে হয় যে তাঁকে সন্তুষ্ট করার সহজতম রাস্তা খুঁজে বের করা, অর্থাৎ, তাঁর সমস্ত আয়োজনকে মান্য করাই আমাদের পক্ষে শ্রেয়। তুমি যদি সত্যিই তা অর্জন করতে পারো, তাহলে তুমি হয়ে উঠবে নিখুঁত। এ কি এক সহজ ও আনন্দদায়ক বিষয় নয়? তোমার যে পথে যাওয়া উচিত সেই পথেই যাও, অন্যরা কে কী বলল তা গ্রাহ্য কোরো না, এবং বেশি চিন্তা করো না। তোমার ভবিষ্যৎ ও তোমার নিয়তি কী তোমার নিজের হাতে আছে? তুমি সর্বদা পালানোর চেষ্টা করো, জাগতিক পথ বেছে নিতে চাও—কিন্তু কেন তুমি বেরোতে পারো না? কেন তুমি চৌমাথায় এসে অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্ব পেরিয়ে শেষে আবার এই পথটাই বেছে নাও? এত বছর উদ্দেশ্যহীন ভ্রমণের পর কেন তুমি নিজের বাড়িতে না গিয়ে এই গৃহেই প্রত্যর্পণ করলে? এই সবই কি তোমার হাতে রয়েছে? এই স্রোতে যারা আমায় বিশ্বাস করো না, তারা শোনো: যদি তুমি চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করো, দেখো ঈশ্বর তোমায় যেতে দেন কিনা, দেখো পবিত্র আত্মা কীভাবে তোমায় চালিত করেন—নিজেই তার অভিজ্ঞতা লাভ করো। স্পষ্টভাবে বললে, যদি তোমায় দুর্ভাগ্য ভোগ করতে হয়, সেটাও তোমাকে এই স্রোতেই ভোগ করতে হবে, এবং যদি কষ্ট পাওয়ার থাকে, তাহলে তা তোমাকে অবশ্যই এখানে, আজকেই ভোগ করতে হবে, তুমি অন্য কোথাও যেতে পারবে না। এটা কি তোমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে? তুমি আর যাবেই বা কোথায়? এ হল ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমান। তোমার কি মনে হয় যে, ঈশ্বর নিরর্থকভাবেই এই লোকেদের গোষ্ঠীকে বেছে নিয়েছেন? ঈশ্বরের বর্তমান কাজে, তিনি সহজে ক্রুদ্ধ হন না—কিন্তু যদি মানুষ তাঁর পরিকল্পনা ব্যাহত করতে চেষ্টা করে, তবে তাঁর মুখমণ্ডল চকিতে উজ্জ্বল থেকে তমসাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তাই আমি তোমাদের পরামর্শ দেব যে, সুস্থির হয়ে ঈশ্বরের অভিলাষে নিজেকে সমর্পণ করো, এবং তাঁকে তোমায় সম্পূর্ণ করে তুলতে দাও। যে সমস্ত মানুষ এমনটা করে, কেবলমাত্র তারাই বুদ্ধিমান।