অবতাররূপের রহস্য (৪)

বাইবেলের নেপথ্য কাহিনী এবং তা নির্মাণের গল্প তোমাদের জেনে রাখা উচিত। যারা ঈশ্বরের নতুন কার্যকে স্বীকার করেনি, এই জ্ঞান তাদের কাছে নেই। তারা জানে না। তুমি যদি সুস্পষ্টভাবে তাদের সাথে সারসত্য সংক্রান্ত এইসকল বিষয় নিয়ে কথা বলো, তাহলে তারা আর তোমার সামনে বাইবেল বিষয়ে বিশুদ্ধবাদীর মতো আচরণ করবে না। তারা নিরন্তর ভবিষ্যদ্বাণীগুলির তদন্ত করে চলেছে: এই বিবৃতিটি কি বাস্তবায়িত হয়েছে? ওই বিবৃতিটি কি বাস্তবায়িত হয়েছে? তারা বাইবেল অনুসারে সুসমাচারগুলিকে গ্রহণ করে, এবং বাইবেল অনুযায়ীই সেগুলিকে প্রচার করে। ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বাস বাইবেলের বাক্যগুলির উপর নির্ভরশীল; বাইবেল ব্যতীত তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে না। এভাবেই বাইবেলের উপর তুচ্ছ তদন্ত করে তাদের জীবন কাটে। যখন তারা আবার বাইবেল খুঁড়ে তোমার কাছে ব্যাখ্যা চাইতে আসবে, তখন তুমি বোলো, “প্রথমত, চলুন আমরা প্রতিটি বিবৃতিকে যাচাই করা থেকে বিরত থাকি। পরিবর্তে, চলুন বরং দেখি পবিত্র আত্মা কীভাবে কার্য নির্বাহ করে। আমরা যে পথে চলি সেই পথকে সত্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যাক যে সেই পথটি সত্যিই পবিত্র আত্মার কার্য কিনা, এবং পবিত্র আত্মার কার্যকে অবলম্বন করে পরীক্ষা করা যাক সেই পথটি সঠিক কি না। যেমন ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল, এই বিবৃতি বা ওই বিবৃতি তেমনভাবেই ঘটেছে কি না, সে বিষয়ে আমাদের মানুষদের নাক গলানো উচিত নয়। বরং পবিত্র আত্মার কার্য এবং ঈশ্বর যে নবতম কার্য করে চলেছেন সে বিষয়ে কথা বলাই আমাদের পক্ষে শ্রেয়”। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি সেই সময়ের নবীদের দ্বারা ঈশ্বরের প্রেরিত বাক্য, এবং ঈশ্বর যাদের ব্যবহার করেছিলেন ও যারা অনুপ্রেরণা অর্জন করেছিল তাদের রচিত বাক্য; একমাত্র ঈশ্বর স্বয়ং সেই বাক্য ব্যাখ্যা করতে পারেন, শুধুমাত্র পবিত্র আত্মাই সেই বাক্যগুলির অর্থ প্রতীয়মান করতে পারে, এবং একমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরই পারেন সাতটি সীলমোহর ভেঙে গোটানো পুঁথি উন্মোচন করতে। তুমি বলো: “তুমি ঈশ্বর নও, আমিও নই, তাহলে ঈশ্বরের বাক্যকে লঘুভাবে ব্যাখ্যা করার সাহস কার আছে? তুমি কি সেই বাক্য ব্যাখ্যা করতে দুঃসাহস করো? এমনকি যদি নবী যিরমিয়, যোহন এবং এলিয়ও আসতো, তারাও সেই বাক্যগুলির ব্যাখ্যা করতে সাহস করতো না, কারণ তারা সেই মেষশাবক নয়। একমাত্র মেষশাবকই সাতটি সীলমোহর ভাঙতে ও গোটানো পুঁথি খুলতে পারে, আর অন্য কেউ তাঁর বাক্য ব্যাখ্যা করতে পারে না। আমি ঈশ্বরের নাম আত্মসাৎ করার দুঃসাহস করি না, ঈশ্বরের বাক্য ব্যাখ্যা করার সাহস তো আরোই করি না। আমি কেবল ঈশ্বরের আজ্ঞাপালনকারী হতে পারি। তুমি কি ঈশ্বর? ঈশ্বরের সৃষ্ট কোনো জীব সেই পুঁথি উন্মুক্ত করতে বা সেই বাক্য ব্যাখ্যা করতে সাহস করে না, এবং তাই আমিও সেগুলো ব্যাখ্যা করার সাহস দেখাই না। তোমার সেগুলিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা না করাই ভালো। কারোরই সেগুলিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। চলুন আমরা বরং পবিত্র আত্মার কার্য নিয়ে কথা বলি; মানুষ এটুকুই করতে পারে। আমি যিহোবা এবং যীশুর কার্য সম্বন্ধে সামান্য কিছুটা জানি, কিন্তু যেহেতু এই ধরনের কার্যের কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমার নেই, তাই এই বিষয়ে আমি খুব সামান্যই বলতে পারি। যিশাইয় বা যীশু তাঁদের সময়ে যে কথা বলেছিলেন, তার অর্থ সম্বন্ধে আমি কোনো ব্যাখ্যা দেব না। আমি বাইবেল চর্চা করি না, বরং আমি ঈশ্বরের বর্তমান কার্য অনুসরণ করি। তুমি আসলে বাইবেলকে ক্ষুদ্র পুঁথি হিসেবে গণ্য করো, কিন্তু এটা কি এমন একটা জিনিস নয়, যা একমাত্র মেষশাবকই খুলতে পারে? মেষশাবক ব্যতীত আর কে এটা খুলতে পারে? তুমিও মেষশাবক নও, আর আমিও নিজেকে স্বয়ং ঈশ্বর হিসেবে দাবী করতে সাহস করি না, তাই বাইবেলের বিশ্লেষণ বা তা নিয়ে তুচ্ছ তদন্ত আমাদের না করাই ভালো। এর চেয়ে পবিত্র আত্মার কৃত কার্য, অর্থাৎ স্বয়ং ঈশ্বর বর্তমানে যে কাজ করেছেন তা নিয়ে আলোচনা করা অনেক শ্রেয়। দেখা যাক ঈশ্বর কী কী নীতিতে কার্য নির্বাহ করেন, এবং তাঁর কার্যের সারমর্ম কী, এগুলিকে কাজে লাগিয়ে যাচাই করে নেওয়া যাক যে পথে আমরা আজ চলছি তা সঠিক কিনা, এবং এইভাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাক”। তোমরা যদি সুসমাচার প্রচার করতে চাও, বিশেষ করে ধর্মীয় জগতের মানুষদের কাছে, তাহলে তোমাদের বাইবেলকে বুঝতে হবে এবং এর ভিতরের কাহিনীগুলির উপর তোমাদের দক্ষতা থাকতে হবে; অন্যথায় তোমার সুসমাচার প্রচার করার কোনো রাস্তা নেই। একবার তুমি বৃহত্তর চিত্রটি আয়ত্ত করে ফেললে, বাইবেলের মৃত বাক্যগুলিকে তুচ্ছভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা থেকে বিরত হতে পারলে, এবং পরিবর্তে শুধুমাত্র ঈশ্বরের কার্যের কথা এবং জীবনের সত্যের কথা বললে তুমি সেইসব মানুষদের অর্জন করতে পারবে, যারা প্রকৃত হৃদয় দিয়ে অন্বেষণ করে।

যিহোবার কার্য, তিনি যে বিধানসমূহ প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি যে নীতির উপর ভিত্তি করে মানুষকে তাদের জীবনযাপনের দিশা দেখিয়েছিলেন, বিধানের যুগে তাঁর সম্পাদিত কার্যের তার বিষয়বস্তু, তাঁর বিধানসমূহ প্রণয়নের তাৎপর্য, অনুগ্রহের যুগের প্রতি তাঁর কার্যের তাৎপর্য, এবং অন্তিম পর্যায়ে ঈশ্বর যে কার্য নির্বাহ করেন: এগুলিই সেই বিষয় যা তোমাদের বুঝতে হবে। প্রথম পর্যায় হল বিধানের যুগের কার্য, দ্বিতীয় পর্যায় অনুগ্রহের যুগের কার্য, এবং তৃতীয় পর্যায় হল অন্তিম সময়ের কার্য। ঈশ্বরের কার্যের এই পর্যায়গুলির বিষয়ে তোমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত মোট তিনটি পর্যায় আছে। এই প্রত্যেক পর্যায়ের কার্যের সারমর্ম কী? ছয় হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনার কার্য কয়টি পর্যায়ে সম্পাদিত হয়? এই পর্যায়গুলি কীভাবে সম্পাদিত হয়, এবং প্রত্যেকটি পর্যায় কেন তার যথানির্দিষ্ট পদ্ধতিতেই সম্পাদিত হয়? এ সবই খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রতিটি যুগের কার্যের প্রতিনিধিত্বমূলক মূল্য রয়েছে। যিহোবা কোন কার্য নির্বাহ করেছিলেন? কেনই বা তিনি তা সেই নির্দিষ্ট উপায়েই করেছিলেন? তাঁকে যিহোবা নামে কেন সম্বোধন করা হতো? আবার, অনুগ্রহের যুগে যীশু কোন কার্য নির্বাহ করেছিলেন, এবং কী প্রকারে? কার্যের প্রতিটি পর্যায় এবং প্রতিটি যুগ দ্বারা ঈশ্বরের স্বভাবের কোন দিকগুলি প্রকাশিত হয়? বিধানের যুগে তাঁর স্বভাবের কোন দিকগুলি প্রকাশিত হয়েছিল? এবং অনুগ্রহের যুগে কোনগুলি? আর অন্তিম যুগেই বা কোনগুলি? এ সবই এমন কিছু অপরিহার্য প্রশ্ন, যেগুলির বিষয়ে তোমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনায় ঈশ্বরের সম্পূর্ণ স্বভাব সামগ্রিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শুধুমাত্র অনুগ্রহের যুগে প্রকাশিত হয়নি, বা কেবল বিধানের যুগেও নয়, অথবা শুধুমাত্র এই অন্তিম সময়ে তো একেবারেই নয়। অন্তিম সময়ের সম্পাদিত কাজ বিচার, ক্রোধ, এবং শাস্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে। অন্তিম সময়ে সম্পাদিত কার্য বিধানের যুগ বা অনুগ্রহের যুগের কার্যকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। যা-ই হোক, এই তিন আন্তঃসংযুক্ত পর্যায় মিলে একটি একক সত্তা নির্মাণ করে, এবং এই সবই সেই একক ঈশ্বরের কার্য। স্বাভাবিকভাবেই, এই কার্যের সম্পাদন বিভিন্ন যুগে বিভক্ত। অন্তিম সময়ের কার্য সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটায়; বিধানের যুগে যা করা হয়েছিল, তা ছিল সূচনামূলক কার্য; এবং অনুগ্রহের যুগের কার্য ছিল মুক্তির। এই সমগ্র ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনার কার্যের যে দর্শন, সে বিষয়ে কেউই অন্তর্দৃষ্টি বা উপলব্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি, এবং সেই দর্শন এখনো প্রহেলিকাই রয়ে গেছে। রাজ্যের যুগের সূচনার জন্য অন্তিম সময়ে শুধুমাত্র বাক্যের কাজ সম্পাদন করা হয়, কিন্তু এটি সকল যুগের প্রতিনিধি নয়। অন্তিম সময় অন্তিম সময়ের থেকে বেশি কিছু নয়, এবং রাজ্যের যুগের থেকেও বেশি কিছু নয়, এবং তা অনুগ্রহের যুগ বা বিধানের যুগের প্রতিনিধিত্ব করে না। শুধুমাত্র এটুকুই যে, অন্তিম সময় চলাকালীন, ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সামগ্রিক কার্য তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হয়। এটিই হল রহস্যের উন্মোচন। এটি এমন ধরনের রহস্য যা কোনো মানুষের দ্বারা উদ্ঘাটিত হতে পারে না। বাইবেল সম্বন্ধে মানুষের যত দারুণ উপলব্ধিই থাকুক না কেন, তা কতগুলি বাক্যসমষ্টির অতিরিক্ত আর কিছুই নয়, কারণ মানুষ বাইবেলের সারমর্ম উপলব্ধি করে না। বাইবেল পড়ে মানুষ হয়তো কিছু সত্য উপলব্ধি করতে পারে, কিছু কিছু বাক্যের ব্যাখ্যা করতে পারে, অথবা কিছু বিখ্যাত অংশ বা অধ্যায় নিয়ে তুচ্ছ অনুসন্ধান করতে পারে, কিন্তু সে কখনোই সেই বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থ উদ্ধার করতে পারবে না; কারণ মানুষ নিছক কতকগুলি নিষ্প্রাণ বাক্য দেখে, যিহোবা বা যীশুর কার্যের দৃশ্য নয়, এবং সেই কার্যের রহস্য উদ্ঘাটন করার কোনো উপায় মানুষের জানা নেই। অতএব, ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনার রহস্য হল সবচেয়ে দুরূহ ও নিগূঢ়তমভাবে প্রচ্ছন্ন রহস্য, এবং মানুষের কাছে তা সম্পূর্ণরূপে দুর্জ্ঞেয়। কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছাকে সরাসরি উপলব্ধি করতে পারে না, যদি না স্বয়ং ঈশ্বর তা মানুষের কাছে প্রকাশ এবং ব্যাখ্যা করেন; অন্যথায় এই বিষয়গুলি চিরকাল মানুষের কাছে প্রহেলিকা হয়েই রয়ে যাবে, এবং চিরদিন তা অনুদ্ঘাটিত রহস্যই থেকে যাবে। ধর্মীয় জগতে যারা আছে তাদের কথা তো বাদই দাও, আজ তোমাদের বলা না হলে তোমরাও এগুলি বুঝতে পারতে না। ছ’হাজার বছরব্যাপী এই কার্য সকল নবীদের সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীর চেয়েও বেশি রহস্যময়। সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান সময় অবধি সবচেয়ে বড় রহস্য হল এটি, এবং কোনো যুগের কোনো নবী একে অনুধাবন করে উঠতে পারেনি, কারণ এই রহস্য আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি, এবং একমাত্র অন্তিম যুগেই তা উন্মোচিত হবে। তোমরা যদি এই রহস্য উপলব্ধি করতে পারো, এবং একে সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করতে সক্ষম হও, তাহলে সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ এই রহস্যের দ্বারা বিজিত হবে। সকল দর্শনের মধ্যে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ; মানুষ একেই অনুধাবন করার জন্য সবচেয়ে ব্যগ্রভাবে আকাঙ্ক্ষা করে, অথচ এ বিষয়েই মানুষের ধারণা সবচেয়ে অস্পষ্ট। তোমরা যখন অনুগ্রহের যুগে ছিলে, তখন যিহোবা বা যীশুর সম্পাদিত কার্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তোমরা জানতে না। মানুষ বুঝতে পারেনি, কেন যিহোবা বিধান প্রণয়ন করেছিলেন, কেন তিনি জনগণকে সেই বিধান পালন করতে বলেছিলেন অথবা কেন মন্দির নির্মাণ করতে হয়েছিল, এবং তারা আরোই বুঝতে পারেনি, কেন ইসরায়েলবাসীদের মিশর থেকে প্রথমে জনহীন মরুভূমিতে এবং তারপর কনান দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সবেমাত্র আজ এসব বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে।

অন্তিম সময়ের কার্য হল তিন পর্যায়ের মধ্যে শেষতম। এটি অপর এক নতুন যুগের কার্য, এবং ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কার্যের প্রতিনিধিত্ব করে না। ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা তিন পর্যায়ের কার্যে বিভক্ত। কোনো একটি পর্যায় তিনটি পর্যায়ের কার্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, কেবল সমগ্রের একটিমাত্র অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। যিহোবা নামটি ঈশ্বরের সম্পূর্ণ স্বভাবের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তিনি বিধানের যুগে তাঁর কার্য নির্বাহ করেছিলেন, এতে প্রমাণিত হয় না যে ঈশ্বর কেবলমাত্র আইনের অনুশাসনেই ঈশ্বর হতে পারেন। যিহোবা মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলেন, এবং তাদের হাতে আদেশসমূহ হস্তান্তর করে মানুষকে মন্দির ও পূজাবেদী নির্মাণ করতে বলেছিলেন; তিনি যে কার্য সম্পন্ন করেছিলেন তা কেবল বিধানের যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। যে কার্য তিনি করেছেন তা প্রমাণ করে না যে ঈশ্বর শুধুমাত্র এমন ঈশ্বর যিনি মানুষকে বিধান মানতে বলেন, অথবা তিনি মন্দিরেরই ঈশ্বর, বা পূজাবেদীর সম্মুখেই ঈশ্বর। এ কথা বললে অসত্য-ভাষণ হবে। বিধানের অধীনে সম্পাদিত কার্য কেবলমাত্র একটি যুগেরই প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। অতএব, ঈশ্বর যদি কেবলমাত্র বিধানের যুগে কার্য নির্বাহ করতেন, তাহলে মানুষ ঈশ্বরকে এইরূপ সংজ্ঞায় আবদ্ধ করে ফেলত, “ঈশ্বর হলেন মন্দিরের ঈশ্বর, এবং তাঁর সেবা করতে হলে আমাদের অবশ্যই যাজকের বেশ পরিধান করে মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে”। যদি অনুগ্রহের যুগের কার্য কখনোই সম্পাদিত না হত এবং অনুশাসনের যুগই বর্তমানে চলত, তাহলে মানুষ জানতে পারত না যে এছাড়াও ঈশ্বর ক্ষমাশীল এবং প্রেমময়ও বটে। যদি বিধানের যুগের কার্য না করা হতো, শুধুমাত্র অনুগ্রহের যুগের কার্যই সম্পাদিত হতো, তাহলে মানুষ শুধু এটুকুই জানত যে ঈশ্বর শুধুমাত্র মানুষকে মুক্তি দিতে পারেন এবং মানুষের পাপ ক্ষমা করতে পারেন। মানুষ কেবল জানতে পারতো যে তিনি পবিত্র ও নিষ্পাপ, এবং মানুষের স্বার্থে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করতে ও ক্রুশবিদ্ধ হতে সক্ষম। মানুষ কেবল এগুলিই জানত, কিন্তু অন্য কোনো বিষয়ে তার কোনো ধারণা থাকত না। অতএব প্রত্যেকটি যুগ ঈশ্বরের স্বভাবের একেকটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। আর ঈশ্বরের স্বভাবের কোন বৈশিষ্টগুলি বিধানের যুগে, কোনটি অনুগ্রহের যুগে, এবং কোনটি এই বর্তমান পর্যায়ে প্রকাশিত হয়েছে সে প্রসঙ্গে বলা যায়: একমাত্র যখন তিনটি পর্যায় একত্রে সমন্বিত হবে, তখনই ঈশ্বরের স্বভাব সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হবে। মানুষ যখন তিনটি পর্যায়ের বিষয়েই জেনে যাবে, শুধুমাত্র তখনই সে সম্পূর্ণ রূপে তা বুঝতে পারবে। এই তিনটি পর্যায়ের কোনোটিই বাদ দেওয়া যাবে না। এই তিন পর্যায়ের কাজ সম্বন্ধে জানার পরই তুমি ঈশ্বরের স্বভাব সামগ্রিকভাবে দেখতে পাবে। বিধানের যুগে ঈশ্বর তাঁর কার্য সম্পন্ন করেছিলেন বলে এ কথা প্রমাণিত হয় না যে তিনি কেবলমাত্র আইনের অনুশাসনেই ঈশ্বর, এবং তিনি মুক্তিদানের কার্য সম্পন্ন করেছিলেন, এর অর্থ এই নয় যে তিনি চিরকাল মানবজাতিকে মুক্তি দিয়ে যাবেন। এগুলি সবই মানুষের তৈরী সিদ্ধান্ত। যেহেতু অনুগ্রহের যুগের অবসান ঘটেছে, ফলে তুমি এ কথা বলতে পারো না যে, ঈশ্বর শুধুমাত্র ক্রুশেরই অধিকারে, এবং শুধু ক্রুশই ঈশ্বরের পরিত্রাণের প্রতিনিধিত্ব করে। তা হবে ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করা। বর্তমান পর্যায়ে ঈশ্বর প্রধানত বাক্যের কার্য নির্বাহ করছেন, কিন্তু তুমি এটা বলতে পারো না যে, ঈশ্বর কখনোই ক্ষমাশীল ছিলেন না, এবং তিনি কেবল বিচার ও শাস্তিই নিয়ে এসেছেন। অন্তিম সময়ের কার্য যিহোবা ও যীশুর কার্য এবং মানুষের অবোধ্য সকল রহস্যকে প্রকাশ করে, যাতে মানবজাতির গন্তব্য এবং পরিসমাপ্তি প্রকাশিত হয় এবং মানবজাতির মধ্যে পরিত্রাণের সকল কার্য সমাপ্ত করা যায়। অন্তিম সময়ের কার্যের এই পর্যায়টি সবকিছুর সমাপ্তি ঘটায়। মানুষের অবোধ্য সকল রহস্য উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন, যাতে মানুষ সেগুলির গভীরতা পরিমাপ করতে পারে এবং তার হৃদয়ে এক সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। একমাত্র তখনই মানবজাতিকে প্রকারভেদে শ্রেণীবদ্ধ করা যাবে। একমাত্র ছয় হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পন্ন হওয়ার পরই মানুষ ঈশ্বরের স্বভাবকে তার সমগ্রতা নিয়ে বুঝতে পারবে, কারণ তাঁর ব্যবস্থাপনা ততদিনে সমাপ্তিতে পৌঁছে যাবে। এখন তোমরা যখন সর্বশেষ যুগে ঈশ্বরের কার্য অনুভব করেছ, তাহলে বলো ঈশ্বরের স্বভাব কী? তুমি কি এ কথা বলতে সাহস করো যে, ঈশ্বর এমন এক ঈশ্বর যিনি নিতান্তই বাক্য উচ্চারণ করেন আর তার বেশি কিছু নয়? তুমি এমন সিদ্ধান্ত পেশ করার সাহস কোরো না। কেউ কেউ হয়তো বলবে যে, ঈশ্বর এমন ঈশ্বর যিনি রহস্য উন্মোচন করেন, বলবে যে, ঈশ্বরই সেই মেষশাবক এবং তিনিই সেই একক যিনি সাতটি সীলমোহর ভাঙেন। কিন্তু কেউ এমন সিদ্ধান্ত পেশ করার সাহস করবে না। অন্যদিকে কেউ হয়তো বলবে যে ঈশ্বর হলেন অবতারের দেহরূপ, কিন্তু এটাও সঠিক নয়। এরপরেও কেউ হয়তো বলবে যে, ঈশ্বরের অবতার রূপ কেবল বাক্য উচ্চারণ করেন এবং প্রতীকি ও বিস্ময়কর কার্য নির্বাহ করেন না, কিন্তু এইভাবে কথা বলার সাহস তোমার আরোই কম হবে, কারণ যীশু অবতার রূপে এসেছিলেন এবং প্রতীকি ও বিস্ময়কর কার্য নির্বাহ করেছিলেন। তাই তুমি ঈশ্বরকে এত লঘুভাবে সংজ্ঞায়িত করার সাহস দেখাবে না। ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সকল কার্য এখন সম্পন্ন হয়েছে। এই সকল কার্য মানুষের কাছে উন্মোচিত হওয়ার পর, এবং মানবজাতির মাঝে নির্বাহিত হওয়ার পরই মানুষ ঈশ্বরের স্বভাব এবং তিনি কে ও তাঁর কী আছে, তা জানতে পারবে। এই পর্যায়ের কার্য পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার পর মানুষের অবোধ্য সকল রহস্য উন্মোচিত হবে, পূর্বের অজানা জীবনসত্য স্পষ্ট হবে, এবং মানবজাতিকে তাদের ভবিষ্যৎ পথ ও গন্তব্যের কথা জানানো হবে। এই হচ্ছে সম্পূর্ণ কাজ যা এই বর্তমান পর্যায়ে করতে হবে। যদিও মানুষ আজ যে পথে চলছে, তা ক্রুশ এবং কষ্টভোগেরও পথ, তবু মানুষ যা অনুশীলন করে, এবং আজ যা ভোজন, পান ও উপভোগ করে, তা বিধানের অধীনে এবং অনুগ্রহের যুগে মানুষের ভাগে যা পড়েছিল তার চেয়ে অনেক পৃথক। বর্তমানে মানুষের কাছ থেকে যা প্রত্যাশিত, তা অতীতকালের মত নয় এবং বিধানের যুগের প্রত্যাশার থেকে তা আরো বেশি পৃথক। এবার, ঈশ্বর যখন ইসরায়েলে তাঁর কার্য নির্বাহ করছিলেন, তখন বিধানের অধীনে থাকা মানুষের কাছে কী প্রত্যাশিত ছিল? এর চেয়ে বেশি কিছু নয় যে মানুষ যেন বিশ্রামবার পালন করে এবং যিহোবার বিধানগুলি মেনে চলে। বিশ্রামবারে কেউ যাতে পরিশ্রম না করে, এবং যিহোবার আইন লঙ্ঘন না করে। কিন্তু এখন এমনটা নয়। বিশ্রামবারে মানুষ কাজ করে, একত্রিত হয়, যথারীতি প্রার্থনা করে, এবং তাদের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। অনুগ্রহের যুগে যারা ছিল তাদের বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে হত, উপরন্তু তাদের বলা হত উপবাস করতে, রুটি ও আঙুর-রস খেতে, মস্তক ঢেকে রাখতে, এবং অন্যদের পা ধুইয়ে দিতে। এখন এসব নিয়ম বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষের কাছে বৃহত্তর চাহিদা তৈরি হয়েছে, কারণ ঈশ্বরের কার্য সর্বকালীন গভীরতর হয়েছে, এবং মানুষের প্রবেশ সর্বকালের চেয়ে উচ্চতর হয়েছে। অতীতে, মানুষের উপর হাত রেখে যীশু প্রার্থনা করেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে যখন সবকিছু বলা হয়ে গেছে, তখন আর হাত রাখার প্রয়োজন কী? বাক্যের দ্বারাই ফলাফল অর্জন করা যায়। অতীতে তিনি যখন মানুষের উপর তাঁর হাত রেখেছিলেন, তা ছিল মানুষকে আশীর্বাদ করার জন্য এবং তার রোগ নিরাময়ের জন্য। পবিত্র আত্মা সেই সময় এভাবে কার্য নির্বাহ করতেন, কিন্তু এখন আর এমন নয়। এখন কার্য নির্বাহ এবং ফলাফল অর্জন করার জন্য পবিত্র আত্মা কেবল বাক্য উচ্চারণ করেন। তাঁর বাক্যগুলি তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, এবং তোমাদের যেমনভাবে বলা হয়েছে, তোমাদের উচিত ঠিক তেমনভাবেই সেগুলো অনুশীলন করা। তাঁর বাক্যই তাঁর ইচ্ছা; সেগুলিই তাঁর কার্য যা তিনি নির্বাহ করতে চান। তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তুমি তাঁর অভিপ্রায় এবং তিনি তোমাকে কী অর্জন করতে বলছেন, তা বুঝতে পারবে, এবং তুমি হাত রাখার প্রয়োজন ছাড়াই তাঁর বাক্যগুলিকে প্রত্যক্ষভাবে অনুশীলন করতে পারবে। কেউ কেউ হয়তো বলবে, “আমার উপর তোমার হাত রাখো! আমার উপর তোমার হাত রাখো যাতে আমি তোমার আশীর্বাদ পেতে পারি এবং তোমার অংশ গ্রহণ করতে পারি”। এসব অতীতের সেকেলে অভ্যাস, যা এখন অপ্রচলিত, কারণ যুগের পরিবর্তন ঘটেছে। পবিত্র আত্মা যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কার্য নির্বাহ করেন, যথেচ্ছভাবে অথবা শুধুমাত্র নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নয়। যুগের পরিবর্তন হয়েছে, এবং একটি নতুন যুগ অপরিহার্যভাবে নতুন কার্য সঙ্গে করে নিয়ে আসে। এটি কার্যের প্রতিটি পর্যায়েই সত্য, আর তাই তাঁর কার্য কখনো পুনরাবৃত্ত হয় না। অনুগ্রহের যুগে যীশু রোগ নিরাময়, অপদেবতা তাড়ানো, মানুষের উপর হাত রেখে তার জন্য প্রার্থনা, এবং মানুষকে আশীর্বাদ দেওয়ার মতো কাজ প্রভূত পরিমানে করেছিলেন। সে যাই হোক, বর্তমান সময়ে এগুলি পুনরায় করা অর্থহীন হবে। সেই সময়ে পবিত্র আত্মা সেইভাবেই কার্য নির্বাহ করেছেন, কারণ সেটি ছিল অনুগ্রহের যুগ, এবং মানুষের উপভোগের জন্য যথেষ্ট অনুগ্রহ ছিল। তার কাছ থেকে কোনোরকম মূল্য চাওয়া হত না, এবং সে ততক্ষণ অবধি অনুগ্রহ পেত, যতক্ষণ তার মনে বিশ্বাস থাকত। সকলের সঙ্গে খুব সদয় আচরণ করা হত। এখন যুগের পরিবর্তন ঘটেছে, এবং ঈশ্বরের কার্য আরও অগ্রসর হয়েছে; ফলত শাস্তি এবং বিচারের মধ্য দিয়েই মানুষের বিদ্রোহ এবং তার অন্তঃস্থিত অপরিচ্ছন্নতা শুদ্ধ করা হবে। সেই যুগ মুক্তির যুগ হওয়ায় তা ঈশ্বরকে সেই উপায়ে কার্য নির্বাহ করতে প্ররোচিত করেছিল, যাতে মানুষকে তার উপভোগের জন্য যথেষ্ট অনুগ্রহ প্রদর্শন করা যায়, যাতে মানুষ পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে, এবং অনুগ্রহের মাধ্যমে তার পাপের ক্ষমা পেতে পারে। বর্তমান যুগ হলো শাস্তির মাধ্যমে, বিচারের মাধ্যমে, বাক্য দ্বারা প্রহারের মাধ্যমে এবং বাক্যের শৃঙ্খলা ও উদ্ঘাটনের মাধ্যমে মানুষের ভেতরের অধার্মিকতাকে উন্মোচিত করার যুগ, যাতে মানবজাতি ভবিষ্যতে উদ্ধার পেতে পারে। এই কাজ মুক্তির চেয়ে আরো গভীর। অনুগ্রহের যুগের যে অনুগ্রহ, তা মানুষের উপভোগের জন্য যথেষ্ট ছিল; কিন্তু মানুষ ইতিমধ্যেই সেই অনুগ্রহ উপভোগ করে ফেলায় এখন আর তা উপভোগ করে না। এখন এই কার্যের সময় পেরিয়ে গেছে, এবং আর তা করা হবে না। এখন মানুষকে বাক্যের বিচারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হবে। বিচার, শাস্তি এবং পরিশোধনের পর মানুষের স্বভাব অতঃপর পরিবর্তিত হবে। এ কি আমার বলা সেই বাক্যগুলোর কারণেই নয়? কার্যের প্রতিটি পর্যায় মানবজাতির অগ্রগতির সঙ্গে ও যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সম্পন্ন হয়। সমগ্র কার্যটিই তাৎপর্যপূর্ণ, এবং তা সবই করা হয় চূড়ান্ত পরিত্রাণের জন্যেই, যাতে ভবিষ্যতে মানবজাতি একটি সুষ্ঠু গন্তব্য পায়, এবং যাতে পরিশেষে মানবজাতি তার ধরণ অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ হতে পারে।

অন্তিম সময়ের কার্য হল বাক্য উচ্চারণ করা। বাক্যের দ্বারা মানুষের মধ্যে অসামান্য পরিবর্তন আনা যায়। এই বাক্যগুলি গ্রহণের মাধ্যমে এখন মানুষের মধ্যে যে সকল পরিবর্তন এসেছে, তা অনুগ্রহের যুগের প্রতীক ও বিস্ময়গুলিকে গ্রহণ করার ফলে মানুষের যে পরিবর্তন এসেছিল তার তুলনায় অনেক বৃহত্তর। কারণ অনুগ্রহের যুগে মানুষের উপর হাত রাখা এবং প্রার্থনার মাধ্যমে মন্দ আত্মা বহিষ্কার করা হত, কিন্তু মানুষের অন্তর্নিহিত ভ্রষ্ট স্বভাব তখনও থেকে যেত। মানুষকে তার অসুস্থতা থেকে নিরাময় করা হয়েছিল এবং তার পাপ ক্ষমা করা হয়েছিল, কিন্তু কেমন করে মানুষকে তার ভেতরের ভ্রষ্ট, শয়তানোচিত স্বভাবগুলি থেকে শুদ্ধ করা যাবে, সেই কাজ তখনও বাকি ছিল। মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছিল এবং তার পাপ ক্ষমা করা হয়েছিল কেবলমাত্র তার বিশ্বাসের জন্য, কিন্তু মানুষের পাপী প্রবৃত্তি ধ্বংস হয় নি এবং তা এখনো তার ভেতরে রয়ে গেছে। অবতাররূপ ঈশ্বরের মাধ্যমে মানুষের পাপ ক্ষমা করা হয়েছিল, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, মানুষের মধ্যে আর পাপ ছিল না। মানুষের পাপকে পাপ-উৎসর্গের মাধ্যমে ক্ষমা করা যেত, কিন্তু কীভাবে সে আর কখনো পাপ করবে না, অথবা কীভাবে তার পাপী প্রবৃত্তি ধ্বংস ও রূপান্তরিত হবে, এই সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় তার জানা ছিল না। মানুষের পাপ ক্ষমা করা হয়েছিল, এবং তা ঈশ্বরের ক্রুশবিদ্ধকরণের কার্যের কারণে, কিন্তু এরপরেও মানুষ তার পুরনো ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাবের মধ্যেই বেঁচে ছিল। এই কারণে, মানুষকে তার ভ্রষ্ট, শয়তানোচিত স্বভাব থেকে সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করতে হবে, যাতে তার পাপী প্রবৃত্তি পুরোপুরি নির্মূল করা যায়, আর কখনো তা বিকশিত হতে না পারে, এবং এইভাবে যাতে মানুষের স্বভাবকে রূপান্তরিত হতে সক্ষম করা যায়। এর জন্য মানুষের প্রয়োজন জীবনে অগ্রগতির পথ উপলব্ধি করা, জীবনের প্রকৃত পথ দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, এবং নিজের স্বভাব পরিবর্তনের জন্য প্রকৃত পন্থাকে আঁকড়ে ধরা। এছাড়াও, মানুষকে এই পথের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে, যাতে তার স্বভাব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় ও সে আলোর দীপ্তির নীচে বাঁচতে পারে, যাতে তার সব কাজ ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গত হয়, যাতে সে নিজের ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাবকে পরিহার করতে পারে, এবং যাতে শয়তানের অন্ধকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হয় ও তার ফলে পাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে তার উত্থান ঘটে। একমাত্র তখনই মানুষ সম্পূর্ণ পরিত্রাণ প্রাপ্ত করবে। যে সময়ে যীশু তাঁর কার্য নির্বাহ করছিলেন, তখনও তাঁর বিষয়ে মানুষের জ্ঞান ছিল আবছা ও অস্পষ্ট। মানুষ চিরকাল তাঁকে দায়ূদের পুত্র বলে বিশ্বাস করেছে, এবং তাঁকে একজন মহান নবী ও মানুষের পাপের মুক্তিদাতা হিতৈষী প্রভু হিসাবে ঘোষণা করেছে। কিছু মানুষ তাদের বিশ্বাসের জোরে কেবলমাত্র তাঁর পোশাকের প্রান্তের ছোঁওয়ায় নিরাময় লাভ করেছিল; অন্ধ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছিল, এমনকি মৃত ব্যক্তি প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। তা সত্বেও, মানুষ তার ভেতরে গভীরভাবে প্রোথিত ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাবকে আবিষ্কার করতে অক্ষম ছিল, আর সে এটাও জানতো না যে কিভাবে তাকে অপসারণ করতে হবে। মানুষ অনেক অনুগ্রহ পেয়েছিলো, যেমন দৈহিক শান্তি ও আনন্দ, পরিবারের একজনের বিশ্বাসের ফলে সমগ্র পরিবারের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসা, অসুস্থতার নিরাময়, এরকম অনেক কিছু। বাকিগুলি ছিল মানুষের সৎ কাজ এবং তার ঈশ্বরোচিত উপস্থিতি; কেউ যদি এইসবের ভিত্তিতে বেঁচে থাকতে পারতো, তাহলেই তাদের একজন গ্রহণযোগ্য বিশ্বাসী হিসেবে মনে করা হত। শুধুমাত্র এই ধরনের বিশ্বাসীরাই মৃত্যুর পর স্বর্গে প্রবেশ করতে পারতো, যার অর্থ তারা উদ্ধার পেয়েছে। কিন্তু জীবৎকালে এই মানুষেরা জীবনের প্রকৃত পথ একেবারেই বুঝতে পারে নি। তারা কেবল এক বৃত্তাকার পথ ধরে পাপ করেছে ও পাপস্বীকার করেছে, যে বৃত্তে তাদের স্বভাব পরিবর্তনের কোনো রাস্তা ছিল না: অনুগ্রহের যুগে এমনই ছিল মানুষের অবস্থা। মানুষ কি পরিপূর্ণ পরিত্রাণ পেয়েছে? না! অতএব, কাজের সেই পর্যায়টি সম্পন্ন হওয়ার পরেও বিচার এবং শাস্তির কার্য বাকি রয়ে গিয়েছিল। এই পর্যায়টি হল বাক্যের দ্বারা মানুষকে পবিত্র করা, এবং তার মাধ্যমে অনুসরণের জন্য তাকে একটি পথ প্রদান করা। এই পর্যায়টি ফলপ্রসূ বা অর্থবহ হয়ে উঠতে পারতো না যদি সেখানে শুধু অপদেবতা নির্মূল করার কাজই চলতে থাকতো, কারণ তা মানুষের পাপী প্রকৃতিকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হতো, এবং মানুষ তার পাপের ক্ষমাতেই স্থবির হয়ে পড়তো। পাপ-উৎসর্গের মধ্যে দিয়ে মানুষ তার পাপের ক্ষমা পেয়েছে, কারণ ক্রুশবিদ্ধকরণের কার্য ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে, এবং ঈশ্বর শয়তানের উপর জয়লাভ করেছেন। কিন্তু মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব এখনো তার মধ্যে রয়ে গেছে, মানুষ এখনও পাপ করতে পারে ও ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করতে পারে, এবং ঈশ্বর মানবজাতিকে অর্জন করেন নি। এই কারণে কার্যের এই পর্যায়ে ঈশ্বর বাক্যের দ্বারা মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব উন্মোচন করেন, যাতে সে সঠিক পথের সাথে সঙ্গতভাবে অনুশীলন করে। এই পর্যায়টি আগের পর্যায়ের চেয়ে বেশি অর্থবহ এবং ফলপ্রসূ, কারণ এখন এই বাক্যই মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে তার জীবনীশক্তি সরবরাহ করে, এবং তার স্বভাবকে সম্পূর্ণ নবীকরণে সক্ষম করে; এটি কাজের অনেক বেশি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যায়। অতএব, অন্তিম সময়ের অবতার ঈশ্বরের অবতার রূপগ্রহনের তাৎপর্য পূরণ করেছে, এবং মানুষের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনাকে সম্পন্ন করেছে।

ঈশ্বরের দ্বারা মানুষের উদ্ধার সরাসরি আত্মার পদ্ধতি ব্যবহার করে করা হয় না এবং আত্মার পরিচয়কে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহার করে করা হয় না, কারণ মানুষ তাঁর আত্মা দেখতে বা স্পর্শ করতে পারে না, কাছেও যেতে পারে না। তিনি যদি সরাসরি আত্মার পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতেন, মানুষ তাঁর পরিত্রাণ লাভ করতে পারতো না। ঈশ্বর যদি বাহ্যিকভাবে সৃষ্ট এক মানবের রূপ ধারণ না করতেন, তাহলে পরিত্রাণ লাভের কোনো উপায় মানুষের কাছে থাকত না। কারণ মানুষের তাঁর কাছে যাওয়ার উপায় নেই, ঠিক যেমন যিহোবার মেঘের কাছে কেউ যেতে পারত না। শুধুমাত্র একজন সৃষ্ট মানুষ হয়ে, অর্থাৎ তিনি যে দেহে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন সেই দেহে তাঁর বাক্য স্থাপন করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর অনুগামীদের মধ্যে বাক্য অনুযায়ী কার্য নির্বাহ করতে পারেন। একমাত্র তখনই মানুষ ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বাক্য দেখতে এবং শুনতে পারে, এবং অধিকন্তু তাঁর বাক্যের অধিকারে প্রবেশ করতে পারে, এবং এই উপায়ে পুরোপুরি উদ্ধার পেতে পারে। ঈশ্বর যদি দেহ ধারণ না করতেন, তাহলে রক্ত-মাংসের কোনো জীব এত মহৎ পরিত্রাণ লাভ করত না, এবং একজনও উদ্ধার পেত না। ঈশ্বরের আত্মা যদি মানবজাতির মাঝে সরাসরি কার্য নির্বাহ করতেন, তাহলে হয় সমগ্র মানবজাতি ভূপতিত হত, অথবা ঈশ্বরের সংস্পর্শে আসার কোনো উপায় না থাকায়, তারা সম্পূর্ণরূপে শয়তানের বন্দী হয়ে পড়ত। প্রথম অবতার এসেছিলেন মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দিতে, যীশুর নশ্বর দেহের মাধ্যমে তার মুক্তিদানের জন্য, অর্থাৎ তিনি ক্রুশের হাত থেকে মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন, কিন্তু মানুষের মধ্যে ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাব তখনও রয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় অবতাররূপ আর পাপস্খালনের বলি হিসাবে নয়, বরং পাপ থেকে যারা মুক্তি পেয়েছে তাদের সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করার জন্য। এটি করা হল যাতে, যারা ক্ষমা পেয়েছে, তাদের পাপ থেকে মুক্তি দেওয়া ও সম্পূর্ণ নিষ্কলুষ করা যায়, এবং পরিবর্তিত স্বভাব অর্জন করার মাধ্যমে তারা যাতে শয়তানের অন্ধকার প্রভাব ছিন্ন করে ঈশ্বরের সিংহাসনের সামনে প্রত্যাবর্তন করতে পারে। একমাত্র এই উপায়েই মানুষকে পুরোপুরি পবিত্র করা যেতে পারে। বিধানের যুগের অবসান এবং অনুগ্রহের যুগের সূচনার পর ঈশ্বর পরিত্রাণের কার্য শুরু করেছিলেন, যা অন্তিম সময় অবধি চলবে, যখন তিনি মানবজাতিকে তাদের বিদ্রোহের জন্য বিচার ও শাস্তিদানের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে শোধন করবেন। একমাত্র তখনই ঈশ্বর তাঁর পরিত্রাণের কার্য সম্পন্ন করে বিশ্রামে প্রবেশ করবেন। অতএব, কার্যের তিন পর্যায়ে, ঈশ্বর স্বয়ং মানুষের মাঝে কার্য নির্বাহের জন্য কেবলমাত্র দু’বার অবতার রূপ ধারণ করেছেন। এর কারণ, তিনটি পর্যায়ের মধ্যে শুধুমাত্র একটি পর্যায়েরই কাজ ছিল মানুষকে তার জীবনযাপনে দিশা দেখানো, বাকি দু’টি পর্যায়ে রয়েছে পরিত্রাণের কার্য। একমাত্র দেহরূপ ধারণ করেই ঈশ্বর মানুষের পাশে জীবনযাপন করতে পারেন, পৃথিবীর দুঃখকষ্ট অনুভব করতে পারেন, এবং এক সাধারণ দেহে জীবনযাপন করতে পারেন। একমাত্র এই উপায়েই তিনি মানুষকে বাস্তবসম্মত পথের যোগান দিতে পারেন, যা সৃষ্ট জীব হিসেবে তাদের প্রয়োজন। ঈশ্বরের অবতাররূপের মাধ্যমেই মানুষ ইশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ পরিত্রাণ লাভ করে, তার প্রার্থনার উত্তর হিসেবে সরাসরি স্বর্গ থেকে নয়। কারণ, মানুষ রক্ত-মাংসের জীব হওয়ায়, ঈশ্বরের আত্মাকে প্রত্যক্ষ করার, বা তাঁর আত্মার কাছে যাওয়ার কোনো উপায় তার নেই। মানুষ কেবলমাত্র ঈশ্বরের দেহরূপেরই সংস্পর্শে আসতে পারে, এবং কেবল এই উপায়েই মানুষ সকল পথ ও সকল সত্য উপলব্ধি করতে পারে, এবং সম্পূর্ণ পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। দ্বিতীয় অবতার রূপটি মানুষের পাপ দূর করে তাকে পুরোপুরি শুদ্ধ করে তোলার জন্য যথেষ্ট হবে। অতএব, দ্বিতীয় অবতাররূপের সাথে সাথে, দেহরূপে ঈশ্বরের কার্যের সামগ্রিকতায় উপসংহার টানা হবে, এবং ঈশ্বরের অবতাররূপের তাৎপর্য সম্পন্ন হবে। অতঃপর, ঈশ্বরের দেহরূপের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হবে। দ্বিতীয়বার দেহরূপের পর তিনি আর তাঁর কার্যের জন্য তৃতীয়বার দেহরূপ ধারণ করবেন না। কারণ তাঁর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হয়ে যাবে। অন্তিম সময়ের অবতার তাঁর নির্বাচিত লোকেদের সম্পূর্ণরূপে অর্জন করবেন, এবং অন্তিম সময়ে সমগ্র মানবজাতি তার ধরন অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ হয়ে যাবে। তিনি আর পরিত্রাণের কার্য নির্বাহ করবেন না, বা কোনো কার্য সম্পন্ন করতে দেহরূপ ধারণ করে প্রত্যাবর্তনও করবেন না। অন্তিম সময়ের কার্যে প্রতীক ও বিস্ময়ের প্রকাশের চেয়ে বাক্য বেশি শক্তিশালী, এবং বাক্যের কর্তৃত্ব প্রতীক ও বিস্ময়ের কর্তৃত্বকে ছাড়িয়ে যায়। বাক্য মানুষের হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভ্রষ্ট স্বভাবগুলিকে উন্মোচিত করে। সেগুলিকে নিজে থেকে চিনে নেওয়ার কোনো উপায় তোমার নেই। যখন সেগুলি বাক্যের দ্বারা তোমার সম্মুখে নগ্নভাবে রাখা হবে, তখন তুমি স্বাভাবিকভাবেই সেগুলিকে আবিষ্কার করতে পারবে; তুমি সেগুলিকে অস্বীকার করতে পারবে না, এবং তুমি পুরোপুরি নিশ্চিত হবে। এটি কি বাক্যের কর্তৃত্ব নয়? আজ বাক্যের দ্বারা যে কার্য সম্পাদিত হচ্ছে, এটা তারই ফলাফল। অতএব, অসুস্থের নিরাময় বা অপদেবতা বহিষ্কার করার দ্বারা মানুষকে তার পাপ থেকে উদ্ধার করা যায় না, বা প্রতীক ও বিস্ময়ের প্রকাশের দ্বারাও মানুষকে পুরোপুরিভাবে সম্পূর্ণ করে তোলা যায় না। অসুস্থতা নিরাময় বা অপদেবতা বহিষ্কারের কর্তৃত্ব মানুষকে কেবল অনুগ্রহ প্রদান করে, কিন্তু মানুষের শরীর তারপরেও শয়তানের অধিকারে থাকে, এবং শয়তানোচিত ভ্রষ্ট স্বভাব মানুষের মধ্যেই থেকে যায়। অন্যভাবে বললে, যা পরিশুদ্ধ হয় নি, তা পাপ ও কলুষের অধিকারেই থেকে যায়। একমাত্র বাক্যের দ্বারা পরিশোধনের পরেই মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হতে পারে ও পবিত্র হয়ে উঠতে পারে। মানুষের ভিতর থেকে যখন অপদেবতাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং সে মুক্তিলাভ করেছিল, তার অর্থ এইটুকুই ছিল যে, তাকে শয়তানের হাত থেকে ছিন্ন করে ঈশ্বরের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও, ঈশ্বরের দ্বারা পরিশুদ্ধ বা পরিবর্তিত না হওয়া অবধি সে একজন ভ্রষ্ট মানুষই থেকে যায়। মানুষের মধ্যে এখনো কলুষতা, বিরোধিতা ও বিদ্রোহ বিদ্যমান; মানুষ কেবল তাঁর দ্বারা মুক্তিলাভের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ফিরে গিয়েছে, কিন্তু ঈশ্বরের বিষয়ে তার ন্যূনতম জ্ঞানও নেই, এবং সে এখনও তাঁর প্রতিরোধ ও তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে সক্ষম। মুক্তিলাভের পূর্বে শয়তানের অনেক বিষ ইতিমধ্যেই মানুষের মধ্যে রোপণ করা হয়েছিল, এবং হাজার হাজার বছর ধরে শয়তানের দ্বারা কলুষিত হওয়ার পর তার মধ্যে এক ঈশ্বরবিরোধী চরিত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অতএব, মানুষ যখন মুক্তিলাভ করে, তা এমন এক মুক্তির চেয়ে বেশি কিছুই নয়, যেখানে তাকে উচ্চ মূল্যে ক্রয় করা হয়, কিন্তু তার বিষাক্ত চরিত্র নির্মূল হয় নি। মানুষ, যে এত অপবিত্র, ঈশ্বরের সেবা করার যোগ্য হওয়ার আগে তাকে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই বিচার ও শাস্তিদানের কার্যের মাধ্যমে মানুষ নিজের ভিতরের কলুষিত ও ভ্রষ্ট সত্তার সম্বন্ধে জানতে পারবে, এবং সে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত ও শুদ্ধ হতে সক্ষম হবে। একমাত্র এই উপায়েই মানুষ ঈশ্বরের সিংহাসনের সম্মুখে প্রত্যাবর্তনের যোগ্য হয়ে উঠবে। এখনকার দিনে যে সমস্ত কার্য সম্পাদিত হয়, তা সকলই মানুষকে শুদ্ধ ও পরিবর্তিত করার জন্য; বাক্য দ্বারা বিচার ও শাস্তির মাধ্যমে, এবং সেইসাথে পরিমার্জনের দ্বারা, মানুষ যাতে কলুষতা দূর করতে ও পরিশুদ্ধ হতে পারে। এই পর্যায়ের কাজকে পরিত্রাণের কাজ হিসেবে গণ্য না করে বরং শুদ্ধিকরণের কাজ বললে বেশি যথার্থ হবে। আসলে, এই পর্যায়টি হল বিজয়লাভের পর্যায়, এবং সেইসাথে পরিত্রাণের কার্যের দ্বিতীয় পর্যায়। মানুষ বাক্য দ্বারা বিচার ও শাস্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হওয়ার গন্তব্যে পৌঁছায়, এবং বাক্যের ব্যবহারের দ্বারাই পরিমার্জন, বিচার ও প্রকাশ ঘটে মানুষের হৃদয়ের অন্তর্নিহিত অশুদ্ধতা, ধারণা, উদ্দেশ্য, ও স্বতন্ত্র আকাঙ্ক্ষা, এইসবের। মানুষ যে কারণে হয়তো মুক্তিলাভ করেছে ও তার পাপের ক্ষমা পেয়েছে, তার কারণ একমাত্র এটাই হতে পারে যে, ঈশ্বর মানুষের অপরাধ মনে রাখেন নি, এবং মানুষের সঙ্গে সেই অপরাধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ব্যবহার করেননি। তথাপি, একজন মানুষ, যে একটি রক্ত-মাংসের দেহে বাস করে, যে এখনো পাপ থেকে মুক্তি পায়নি, সে শুধুমাত্র অবিরাম তার ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাব প্রকাশ করে পাপ করে যেতে পারে। মানুষ পাপ করা এবং ক্ষমা প্রাপ্ত হওয়ার এই অবিরাম চক্রে জীবনযাপন করে চলে। মানবজাতির অধিকাংশই সকালে পাপ করে সন্ধ্যায় তা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য। অতএব, যদিও পাপ-উৎসর্গ মানুষের জন্য সর্বদা কার্যকর, কিন্তু তা মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। পরিত্রাণের কার্যের কেবল অর্ধমাত্রই সম্পন্ন হয়েছে, কারণ মানুষের মধ্যে এখনো ভ্রষ্ট স্বভাব রয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষ যখন বুঝতে পারলো যে তারা মোয়াব থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তারা নিয়ে এলো অভিযোগ সম্বলিত বাক্য, স্থগিত রাখলো জীবনের অন্বেষণ, হয়ে উঠলো চূড়ান্তরকম নেতিবাচক। এর থেকে কি এটাই দেখা যায় না যে, মানবজাতি এখনো ঈশ্বরের আধিপত্যের অধীনে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করতে অক্ষম? এটিই কি বিশেষভাবে তাদের ভ্রষ্ট, শয়তানোচিত স্বভাব নয়? যখন তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয় নি, তখন তোমার হাত সবার চেয়ে উপরে তোলা থাকত, এমনকি যীশুর হাতের চেয়েও উপরে। এবং তুমি উচ্চস্বরে বলেছিলে: “ঈশ্বরের একজন প্রিয় পুত্র হও! ঈশ্বরের অন্তরঙ্গ হও! শয়তানের কাছে মাথা নত করার চেয়ে আমরা মৃত্যুবরণ করব! বৃদ্ধ শয়তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কর! অতিকায় লাল ড্রাগনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কর! অতিকায় লাল ড্রাগন যেন তার ক্ষমতা থেকে নিকৃষ্টভাবে পতিত হয়! ঈশ্বর আমাদের পরিপূর্ণ করুন!” তোমার চিৎকার সকলের চেয়ে জোরে ছিল। কিন্তু এরপর শাস্তির সময় এলো, এবং আরো একবার, মানবজাতির ভ্রষ্ট স্বভাব প্রকাশিত হল। তখন তাদের চিৎকার বন্ধ হল এবং তাদের সংকল্প ব্যর্থ হল। এই হল মানুষের ভ্রষ্টাচরণ; এটি পাপের চেয়েও গভীরতর, যা শয়তান দ্বারা রোপিত এবং মানুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। নিজের পাপের বিষয়ে অবগত হওয়া মানুষের জন্য খুব সহজ নয়; তার নিজের গভীরে প্রোথিত চরিত্র চিনতে পারার কোনো উপায় তার নেই, এবং এই ফলাফল লাভের জন্য তাকে বাক্যের বিচারের উপর নির্ভর করতেই হয়। একমাত্র এভাবেই সেইখান থেকে মানুষ ধীরে ধীরে পরিবর্তনের পথে এগোতে পারে। অতীতে মানুষ ঐভাবে চিৎকার করেছিল কারণ তার অন্তর্নিহিত ভ্রষ্ট স্বভাবের বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না। এগুলিই হল মানুষের মধ্যে বিদ্যমান অশুদ্ধতা। মানুষ এই বিচার এবং শাস্তির দীর্ঘ সময়কাল ধরে উদ্বেগের বাতাবরণের মধ্যে ছিল। এগুলির সবই কি বাক্যের মাধ্যমে অর্জিত ছিল না? সেবাপ্রদানকারীদের বিচারের আগে তুমিও কি উচ্চস্বরে চিৎকার করো নি? “রাজ্যে প্রবেশ করো! যারা এই নাম গ্রহণ করবে, তারা সকলেই রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে! সকলেই ঈশ্বরের শরিক হও!” যখন সেবাপ্রদানকারীদের বিচারের সময় এল, তখন তুমি আর চিৎকার করলে না। একদম শুরুতে সকলেই চিৎকার করেছিল, “হে ঈশ্বর! আপনি আমাকে যেখানেই প্রেরণ করুন, আমি আপনার দ্বারা চালিত হওয়ার জন্য আত্মসমর্পণ করব”। “কে আমার পৌল হবে?” ঈশ্বরের এই বাক্য পড়ে মানুষজন বলেছিল, “আমি হতে চাই!” এরপর “এবং ইয়োবের বিশ্বাসের কী হবে?” এই বাক্য পড়ে তারা বলেছিল, “আমি ইয়োবের বিশ্বাস নিজের উপর নিতে রাজি। ঈশ্বর, দয়া করে আমার পরীক্ষা নিন!” এরপর যখন সেবাপ্রদানকারীদের বিচার এল, তখন তারা তৎক্ষণাৎ ভেঙে পড়ল, এবং আর প্রায় দাঁড়াতেই পারল না। এরপর, খুব ধীরে ধীরে তাদের হৃদয়ের অশুদ্ধতা দূর হতে থাকল। এটি কি বাক্য দ্বারাই সাধিত হয় নি? অর্থাৎ, আজ তোমরা যে অভিজ্ঞতা লাভ করলে, তা হল বাক্য দ্বারা অর্জিত ফলাফল, যা এমনকি যীশু কৃত প্রতীক ও বিস্ময়ের কার্যের চেয়েও বেশি। তুমি ঈশ্বরের যে মহিমা এবং স্বয়ং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব দেখো, তা কেবল ক্রুশবিদ্ধকরণের মাধ্যমে, অসুস্থতা নিরাময়ের মাধ্যমে, বা মন্দ আত্মা অপসারণের মাধ্যমে দেখো না, বরং আরও বেশি করে তাঁর বাক্যের বিচারের মাধ্যমে দেখো। এটি তোমাকে দেখায় যে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রতীকী কার্য, রোগ নিরাময়, বা মন্দ আত্মা অপসারণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ঈশ্বরের বাক্যের বিচার আরো ভালো ভাবে তাঁর কর্তৃত্ব এবং সর্বশক্তিমানতার প্রতিনিধিত্ব করে।

মানুষ এখন যা অর্জন করেছে—তার বর্তমান উচ্চতা, জ্ঞান, প্রেম, বিশ্বস্ততা, আনুগত্য, এবং অন্তর্দৃষ্টি—এগুলি সবই বাক্যের বিচারের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। তুমি আনুগত্য পেতে সক্ষম হয়েছো এবং আজকের দিন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম আছো, এটি বাক্যের মাধ্যমেই সাধিত হয়েছে। এখন মানুষ দেখে যে ঈশ্বরের অবতার রূপের কার্য সত্যিই অসাধারণ, এবং এর মধ্যে অনেক কিছু আছে যা মানুষ অর্জন করতে পারে না, এবং সেগুলি রহস্য ও বিস্ময়। অতএব, অনেকেই সমর্পণ করেছে। কেউ কেউ তাদের জন্মের দিন থেকে কখনো কোনো মানুষের কাছে নতিস্বীকার করে নি, তবু তারা আজ যখন ঈশ্বরের বাক্য অবলোকন করে, তখন নিজের অজান্তেই, এবং কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অথবা অন্য কিছু না বলেই তারা পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করে। মানবজাতি বাক্যের অধীন হয়েছে, এবং বাক্যের বিচারকে নতমস্তকে গ্রহণ করেছে। ঈশ্বরের আত্মা যদি মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন, তাহলে সমগ্র মানবজাতি কোনো প্রকাশিত বাক্য ছাড়াই সেই কণ্ঠস্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করত, ঠিক যেমনভাবে দামেস্কের পথের আলোতে পৌল ভূপতিত হয়েছিল। ঈশ্বর যদি এই পন্থায় কার্য নির্বাহ করে যেতেন, তাহলে মানুষ কোনোদিনই বাক্যের বিচার দ্বারা নিজের ভ্রষ্টাচরণের কথা জানতে পারত না, এবং তার দ্বারা পরিত্রাণও লাভ করত না। একমাত্র অবতার রূপ ধারণ করেই ঈশ্বর তাঁর বাক্য প্রত্যেক মানুষের কানে ব্যক্তিগতভাবে পৌঁছতে পারেন, যাতে যাদের কান আছে তারা তাঁর বাক্য শুনতে পায় এবং তাঁর বাক্যের দ্বারা বিচারের কার্য লাভ করতে পারে। মানুষকে ভয় দেখিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য আত্মার প্রকট হওয়ার বদলে, একমাত্র এটিই তাঁর বাক্য দ্বারা অর্জিত ফলাফল। একমাত্র এই ব্যবহারিক তথা অসাধারণ কাজের দ্বারাই মানুষের ভিতরে বহু বছর ধরে লুকিয়ে থাকা পুরোনো স্বভাব পুরোপুরি প্রকাশিত হতে পারে, যাতে মানুষ তা চিনতে পারে এবং পরিবর্তন করতে পারে। এগুলি সবই ঈশ্বরের অবতাররূপের ব্যবহারিক কার্য, যেখানে তিনি ব্যবহারিক পদ্ধতিতে কথা বলে এবং বিচারকে কার্যকর করে, মানুষের উপর বাক্যের দ্বারা বিচারের ফলাফল অর্জন করেন। এই হল ঈশ্বরের অবতার রূপের কর্তৃত্ব এবং তাৎপর্য। এটি করা হয় ঈশ্বরের অবতার রূপের কর্তৃত্ব এবং বাক্যের কার্য দ্বারা অর্জিত ফলাফল জানাতে, এবং জানাতে যে, তাঁর আত্মা অবতার রূপ ধারণ করে এসেছেন এবং বাক্যের দ্বারা মানুষের বিচার করে তিনি নিজের কর্তৃত্ব প্রদর্শন করেন। যদিও তাঁর দেহ রূপ এক সাধারণ এবং স্বাভাবিক মানুষের বাহ্যিক আকৃতি, তাঁর বাক্যের মাধ্যমে অর্জিত ফলাফলই মানুষকে দেখায় যে তিনি কর্তৃত্ব দ্বারা পূর্ণ, তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর, এবং তাঁর বাক্য স্বয়ং ঈশ্বরের অভিব্যক্তি। এর সাহায্যে সমগ্র মানবজাতিকে দেখানো হয় যে তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর, যে তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর যিনি দেহধারণ করেছেন, তাঁকে কেউ ক্ষুব্ধ করতে পারে না, এবং কেউ তাঁর বাক্যের বিচার অতিক্রম করতে পারে না, এবং কোনো অন্ধকারের শক্তি তাঁর কর্তৃত্বকে পরাজিত করতে পারে না। মানুষ সম্পূর্ণভাবে তাঁর কাছে সমর্পন করে, কারণ তিনিই দেহে আবির্ভূত বাক্য, কারণ তাঁর কর্তৃত্ব আর বাক্যের দ্বারা তাঁর বিচার। তাঁর অবতাররূপ দেহ যে কার্য নিয়ে এসেছেন, তাই হল সেই কর্তৃত্ব যা তাঁর অধিকৃত। যে কারণে তিনি অবতার রূপ ধারণ করেন, তা এই যে, সেই অবতার রূপেরও কর্তৃত্ব থাকে, এবং তিনি এমন ব্যবহারিকভাবে মানবজাতির মাঝে কার্য নির্বাহ করতে সক্ষম, এমন ভাবে যা মানুষের কাছে দৃশ্যমান ও স্পর্শযোগ্য। ঈশ্বরের আত্মা, যিনি সকল কর্তৃত্বের অধিকারী, তাঁর সরাসরি সম্পাদিত কার্যের চেয়েও এটি বেশি বাস্তবসম্মত, এবং এর ফলাফলও স্পষ্ট। এর কারণ ঈশ্বরের অবতার রূপ ব্যবহারিক পদ্ধতিতে কথা বলতে এবং কার্য নির্বাহ করতে সক্ষম। তাঁর অবতার রূপের বাহ্যিক আকারের কোনো কর্তৃত্ব নেই এবং মানুষ তাঁর কাছে যেতে পারে, অপরদিকে তাঁর সারসত্য কর্তৃত্ব বহন করে, কিন্তু তাঁর কর্তৃত্ব কারও কাছে দৃশ্যমান নয়। যখন তিনি কথা বলেন এবং কার্য নির্বাহ করেন, মানুষ তাঁর কর্তৃত্বের অস্তিত্ব বুঝতে পারে না; এটি তাঁকে ব্যবহারিক প্রকৃতির কার্য নির্বাহ করতে সাহায্য করে। এই সকল ব্যবহারিক কার্য ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম। যদিও তাঁর কর্তৃত্ব কোনো মানুষ বুঝতে পারে না, অথবা বোঝে না যে তাঁকে ক্ষুব্ধ করা যায় না, বা তাঁর ক্রোধ দেখে না, তিনি তাঁর প্রচ্ছন্ন কর্তৃত্ব, অপ্রকাশ্য ক্রোধ, এবং খোলাখুলিভাবে কথিত বাক্যের দ্বারা অভিপ্রেত ফলাফল অর্জন করেন। অন্যভাবে বললে, মানুষ তাঁর কণ্ঠস্বরের ভঙ্গী, তাঁর বাচনভঙ্গির দৃঢ়তা এবং তাঁর বাক্যের সমস্ত প্রজ্ঞার দ্বারা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত। এইভাবে মানুষ ঈশ্বরের অবতার, যাঁর আপাতদৃষ্টিতে কোনো কর্তৃত্ব নেই, তাঁর বাক্যের কাছে আত্মসমর্পণ করে, ফলে ঈশ্বরের মানুষকে উদ্ধারের লক্ষ্য পূরণ হয়। এটি তাঁর অবতার রূপ ধারণের তাৎপর্যের আরেকটি দিক: আরও বেশি বাস্তবোচিত ভাবে কথা বলা এবং তাঁর বাক্যের বাস্তবতা দিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করা, যাতে মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করতে পারে। অতএব, এই কার্যগুলি অবতার রূপের দ্বারা সম্পাদিত না হলে সামান্যতম ফলাফলও অর্জিত হত না, এবং পাপী মানুষদের সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করা যেত না। ঈশ্বর যদি অবতার রূপ ধারণ না করতেন, তাহলে তিনি মানুষের কাছে যুগপৎ অদৃশ্য এবং অধরা আত্মা হয়েই থেকে যেতেন। মানুষ রক্ত-মাংসের জীব হওয়ায়, সে এবং ঈশ্বর দুই ভিন্ন জগতের অন্তর্গত, এবং ভিন্ন প্রকৃতির অধিকারী। ঈশ্বরের আত্মা মানুষের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ, যে মানুষ রক্তমাংসে তৈরী, এবং উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের কোনো উপায় নেই, আর একথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে মানুষ আত্মায় পরিণত হতে অক্ষম। এই কারণে, ঈশ্বরের আত্মাকে তাঁর আসল কার্য নির্বাহ করার জন্য সৃষ্ট জীবের রূপ নিতেই হয়। ঈশ্বর যুগপৎ সর্বোচ্চ স্থানে উন্নীত হতে পারেন, আবার মানুষের রূপে নিজেকে অবনমিত করে মানবজাতির মাঝে বসবাস এবং কার্য নির্বাহও করতে পারেন, কিন্তু মানুষ সর্বোচ্চ স্থানে উন্নীত হয়ে আত্মায় পরিণত হতে পারে না, আর সর্বনিম্ন স্থানে তো নামতেই পারে না। এই কারণেই ঈশ্বরকে তাঁর কার্য নির্বাহ করার জন্য অবতার রূপ ধারণ করতেই হয়। একই প্রতীকের দ্বারা, প্রথম অবতারের সময়, শুধুমাত্র ঈশ্বরের অবতার রূপই তাঁর ক্রুশবিদ্ধকরণের মাধ্যমে মানবজাতিকে মুক্তি দিতে পারতো, যেহেতু মানুষের জন্য পাপস্খালনের বলি হিসেবে ঈশ্বরের আত্মার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। ঈশ্বর সরাসরি অবতার রূপ ধারণ করে মানুষের পাপস্খালনের বলি হতে পারতেন, কিন্তু মানুষের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের প্রস্তুত করা পাপস্খালনের বলি গ্রহণ করার জন্য মানুষ সরাসরি স্বর্গে আরোহণ করতে পারত না। এই কারণে, একমাত্র সম্ভব ছিল ঈশ্বরকে বারংবার স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে যাতায়াত করতে বলা, যেহেতু মানুষ অধঃপতিত হয়েছিল তাই মানুষকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য স্বর্গে আরোহণ করতে না দেওয়া, এবং সর্বোপরি, মানুষ স্পষ্টতই স্বর্গে আরোহন করতে পারতো না, পাপস্খালনের বলি লাভ করতে তো নয়ই। অতএব, মানুষ যে কাজ সম্পন্ন করতে পারতো না, তা ব্যক্তিগতভাবে করার জন্যই যীশুর মানবজাতির মাঝে অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। ঈশ্বর যতবার অবতার রূপ ধারণ করেন, তা পরম আবশ্যিকতার জন্যই। এর কোনো পর্যায় যদি সরাসরি ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা সম্পাদিত হতে পারত, তাহলে তিনি অবতার রূপ ধারণের অমর্যাদার কাছে নতিস্বীকার করতেন না।

কার্যের এই অন্তিম পর্যায়ে বাক্যের মাধ্যমে ফলাফল অর্জিত হয়। বাক্যের মাধ্যমে অনেক রহস্য এবং অতীতের বহু প্রজন্মে ঈশ্বরের কৃত কার্যকে বুঝতে পারে; বাক্যের মাধ্যমে, মানুষ পবিত্র আত্মার দ্বারা আলোকিত হয়; বাক্যের মাধ্যমে মানুষ অনেক রহস্য বুঝতে পারে যা অতীত প্রজন্মের দ্বারা আগে কখনো অনাবৃত হয় নি, সেইসাথে বুঝতে পারে অতীতকালের নবী ও বাণীপ্রচারকদের কাজ, এবং যে নীতি অনুযায়ী তাঁরা কাজ করেছিলেন; বাক্যের মাধ্যমে মানুষ স্বয়ং ঈশ্বরের স্বভাব বুঝতে পারে, সেইসাথে বুঝতে পারে মানুষের বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ, এবং জানতে পারে নিজের সারমর্ম। কাজের এই সকল ধাপ এবং সমস্ত কথিত বাক্যের মাধ্যমে, মানুষ জানতে পারে আত্মার কাজ, ঈশ্বর দেহরূপে যে কাজ করেন, এবং এমনকি তার চেয়েও বেশি, তাঁর সমগ্র স্বভাব। তুমি ঈশ্বরের ছ’হাজার বছরব্যাপী ব্যবস্থাপনার কার্যের যে জ্ঞান লাভ করেছ, তা-ও বাক্যের মাধ্যমেই। তোমার পূর্ব ধারণা এবং সেগুলিকে দূর করার ক্ষেত্রে তোমার যে সাফল্য, সেই জ্ঞানও কি বাক্য দ্বারাই প্রাপ্ত হয় নি? এর পূর্ববর্তী পর্যায়টিতে যীশু প্রতীক ও বিস্ময়ের কার্য সম্পন্ন করেছিলেন, কিন্তু এই পর্যায়ে কোনো প্রতীক বা বিস্ময় নেই। ঈশ্বর কেন প্রতীক ও বিস্ময় প্রকাশ করেন না, সে বিষয়ে তোমার ধারণা কি বাক্যের মাধ্যমে অর্জিত ছিল না? অতএব, এই পর্যায়ের কথিত বাক্য অতীত প্রজন্মের নবী ও বাণীপ্রচারকদের কার্যকে অতিক্রম করে যায়। এমনকি নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীও এই ফলাফল অর্জন করতে পারে নি। নবীরা কেবলমাত্র ভবিষ্যদ্বাণী করত, অর্থাৎ ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা বলত, কিন্তু সেই সময়ে ঈশ্বর যে কার্য সম্পাদন করতে চান সে বিষয়ে বলতে পারত না। তারা মানবজাতিকে তাদের জীবনে দিশা দেখানোর জন্য, মানবজাতিকে সত্য প্রদান করার জন্য, অথবা তাদের কাছে রহস্য উন্মোচন করার জন্যও কিছু বলেনি, জীবন প্রদান করার জন্য আরোই নয়। এই পর্যায়ে বলা বাক্যের মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী এবং সত্য রয়েছে, কিন্তু এই বাক্যগুলি মূলত মানুষকে জীবন দান করার কাজ করে। বর্তমান সময়ের বাক্যগুলি নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীর মতো নয়। এটি মানুষের জীবনের জন্য কার্যের পর্যায়, মানুষের জীবন চরিত্র পরিবর্তনের জন্য, কেবলমাত্র ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করার স্বার্থে নয়। প্রথম পর্যায়টি ছিল যিহোবার কার্য: তাঁর কাজ ছিল মানুষের জন্য পৃথিবীতে ঈশ্বরের উপাসনার জন্য পথ প্রস্তুত করা। এটি ছিল পৃথিবীতে কার্যের উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করার জন্য সূচনামূলক কাজ। সেই সময়ে, যিহোবা ইসরায়েলবাসীদের বিশ্রামবার পালন করতে, মাতা-পিতাকে সম্মান করতে, এবং একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে শিখিয়েছিলেন। এর কারণ সেই সময়ের মানুষ বুঝত না মানুষ কীসের দ্বারা গঠিত, এটাও বুঝতো না যে পৃথিবীতে কীভাবে বসবাস করতে হয়। কাজের প্রথম পর্যায়ে, তাঁর জন্য মানবজাতিকে তার জীবনযাপনের পথে দিশা দেখানোর প্রয়োজন ছিল। যিহোবা তাদের যা বলেছিলেন, তার সমস্তটাই মানবজাতির ইতিপূর্বে জানা ছিল না, বা তা তাদের দখলে ছিল না। সেই সময়ে, ঈশ্বর ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য অনেক নবীকে গড়ে তুলেছিলেন, এবং তারা যিহোবার নির্দেশনায় সেটাই করেছিল। এটি ছিল ঈশ্বরের কার্যের মধ্যে একটি বিষয় মাত্র। প্রথম পর্যায়ে ঈশ্বর দেহ ধারণ করেন নি, এবং তাই তিনি সকল জাতি ও উপজাতিকে নবীদের মাধ্যমেই নির্দেশ দিতেন। যীশু যখন তাঁর সময়ে কার্য নির্বাহ করেছিলেন, তিনি বর্তমান সময়ের মতো এত কথা বলেন নি। অন্তিম সময়ে বাক্যের দ্বারা কাজের এই পর্যায় অতীতের কোনো যুগে বা প্রজন্মে হয় নি। যদিও যিশাইয়, দানিয়েল এবং যোহন অনেক ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করেছিল, কিন্তু তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ছিল আজকের কথিত বাক্যের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা যা বলেছিল, সেগুলি ছিল শুধুমাত্র ভবিষ্যদ্বাণী, কিন্তু এখনকার কথিত বাক্যগুলি তা নয়। আমিএখন যেসব বিষয়ে কথা বলি তার সবই যদি আমি ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিণত করতাম, তাহলে তোমরা কি বুঝতে পারতে? ধরা যাক আমি যা বলেছিলাম, তা ছিল আমার চলে যাওয়ার পরের কোনো বিষয় সম্পর্কে, তাহলে তুমি কী করে সেই উপলব্ধি অর্জন করতে পারতে? যীশুর সময়কালে অথবা বিধানের যুগে বাক্যের কার্য কখনোই সম্পাদিত হয় নি। কেউ হয়তো বলবে, “যিহোবাও কি তাঁর কার্যের সময়ে বাক্য উচ্চারণ করেন নি? রোগ নিরাময়, মন্দ আত্মা অপসারণ, এবং প্রতীক ও বিস্ময়ের কার্য নির্বাহ করা ছাড়াও, যীশুও কি তাঁর কাজ করার সময় বাক্য উচ্চারণ করেন নি?” যেসব কথা বলা হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। যিহোবার উচ্চারিত বাক্যগুলির সারমর্ম কী ছিল? তিনি কেবলমাত্র মানুষকে পৃথিবীতে জীবনযাপনের পথে দিশা দেখাচ্ছিলেন, যা জীবনের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলিকে ছুঁয়ে যায় নি। এ কথা কেন বলা হয় যে, যখন যিহোবা কথা বলেছিলেন, তা ছিল সকল স্থানের মানুষকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য? “নির্দেশ” দেওয়ার অর্থ স্পষ্টভাবে বলা এবং সরাসরি আদেশ করা। তিনি মানুষকে জীবনীশক্তি সরবরাহ করেন নি; বরং তিনি দৃষ্টান্তের দিকে বেশি না গিয়ে সোজাসুজি মানুষের হাত ধরেছিলেন এবং শিখিয়েছিলেন কীভাবে তাঁকে শ্রদ্ধা করতে হয়। ইসরায়েলে যিহোবা যে কাজ করেছিলেন তা মানুষের সাথে মোকাবিলা বা তাকে অনুশাসনে নিয়ে আসা নয়, অথবা তার বিচারের রায়দান ও শাস্তিপ্রদান নয়, তা ছিল তাকে পথনির্দেশ দেওয়া। যিহোবা মোশিকে তাঁর লোকেদের মরুভূমিতে মান্না সংগ্রহ করার জন্য বলতে আদেশ করেছিলেন। রোজ সকালে সূর্যোদয়ের আগে, তাদের শুধু সেই দিন খাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মান্না সংগ্রহ করতে হত। এই মান্না পরের দিন অবধি রাখা যেত না, কারণ তাহলে বাসী হয়ে এতে ছত্রাক জন্মে যেত। তিনি মানুষকে বক্তৃতা দেন নি বা তাদের স্বভাব প্রকাশ করেন নি, তাদের ধারণা ও চিন্তাভাবনাও অনাবৃত করেন নি। তিনি মানুষকে পরিবর্তন করেন নি, বরং তাদের জীবনযাপনে দিশা দেখিয়েছিলেন। সেই সময়ের জনগণ ছিল শিশুর মতো, কিছুই বুঝতো না এবং শুধুমাত্র কিছু প্রাথমিক যান্ত্রিক গতিবিধিতেই সক্ষম, আর তাই যিহোবা শুধু আইন জারি করেছিলেন জনগণকে দিশা দেখানোর জন্য।

সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে গেলে, যাতে যারা প্রকৃত হৃদয় দিয়ে অনুসন্ধান করে তারা সকলে বর্তমানের কৃত কার্যের জ্ঞান অর্জন করতে পারে, ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিশ্চিত হতে পারে, তোমাকে অবশ্যই প্রতিটি পর্যায়ে কৃত কার্যের ভেতরের কাহিনী, সারমর্ম, এবং তাৎপর্যের বিষয়ে স্পষ্ট বোঝাপড়ায় এসে পৌঁছতে হবে। এমনভাবে প্রস্তুত হও যাতে তোমার আলোচনা শুনে অন্যেরা যিহোবার কাজ উপলব্ধি করতে পারে, যীশুর কাজ উপলব্ধি করতে পারে, এমনকি তার চেয়েও বেশি, বর্তমানের ঈশ্বরের সমস্ত কাজ উপলব্ধি করতে পারে, এবং সেই সাথে তিনটি পর্যায়ের কাজের যোগসূত্র ও পার্থক্যগুলিও বুঝতে পারে। এমনভাবে তৈরি করো, যাতে শোনা শেষ হওয়ার পর বাকিরা দেখতে পায় যে, তিনটি পর্যায় একে অপরকে বাধা দেয় না, বরং দেখতে পায় যে সবই একই আত্মার কার্য। যদিও তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন যুগে কার্য করেন, তাঁদের কার্যের বিষয়বস্তু ভিন্ন, এবং যে বাক্য তাঁরা বলেন তা পৃথক, তবু যে নীতিতে তাঁরা কার্য নির্বাহ করেন, তা একক ও অভিন্ন। এই বিষয়গুলিই হল সবথেকে বড়ো দর্শন, যা ঈশ্বরের সকল অনুগামীরই বোঝা উচিত।

পূর্ববর্তী: অবতাররূপের রহস্য (৩)

পরবর্তী: দু’টি অবতার অবতাররূপের তাৎপর্য সম্পূর্ণ করে

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন