অবতাররূপের রহস্য (১)

অনুগ্রহের যুগে যোহন যীশুর পথ প্রশস্ত করেছিল। স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ যোহন করতে পারে নি, শুধু মানুষ হিসাবে তার কর্তব্য পালন করেছিল। যোহন প্রভুর অগ্রদূত হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে নি; সে ছিল কেবল পবিত্র আত্মার দ্বারা ব্যবহৃত একজন মানুষ। যীশু বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করার পরে পবিত্র আত্মা কপোতের রূপ ধারণ করে তাঁর উপরে অবতরণ করলেন। তারপরে তিনি তাঁর কার্যের সূচনা করেন, অর্থাৎ খ্রীষ্টের সেবাব্রতের কাজ সম্পাদন করতে শুরু করেন। এই কারণেই তিনি ঈশ্বরের পরিচয় ধারণ করেছিলেন, কারণ তাঁর আগমন ঈশ্বরের থেকেই হয়েছিল। ইতিপূর্বে তাঁর বিশ্বাসের প্রকৃতি কেমন ছিল তা নির্বিশেষে—হয়তো কখনও তা দুর্বল, বা কখনও দৃঢ় হয়ে থাকলেও—সবই সেই স্বাভাবিক মানব জীবনেরই অন্তর্গত ছিল, যে জীবন তিনি তাঁর সেবাব্রত সম্পাদনের আগে অতিবাহিত করেছিলেন। বাপ্তিষ্ম গ্রহণের পরে (অর্থাৎ, অভিষিক্ত হওয়ার পরে), তিনি অবিলম্বে ঈশ্বরের শক্তি ও মহিমা লাভ করেন, এবং তাই তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন করতে শুরু করেন। তিনি সংকেত ও বিস্ময়কর কার্য সম্পাদন করতে, বা অলৌকিক কাজ সম্পাদন করতে পারতেন, এবং তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ছিল, কারণ তিনি প্রত্যক্ষভাবে স্বয়ং ঈশ্বরের হয়ে কাজ করছিলেন; আত্মার পরিবর্তে তিনিই আত্মার কাজ করছিলেন এবং আত্মার কণ্ঠস্বর প্রকাশ করছিলেন। অতএব, অবিসংবাদিত ভাবে তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর। যোহন এমন একজন ব্যক্তি ছিল যে পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল। সে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে নি, বা ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করা তার পক্ষে সম্ভবও ছিল না। সে তা করতে চাইলেও, পবিত্র আত্মা তা অনুমোদন করতেন না, কারণ ঈশ্বর স্বয়ং যে কাজটি সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন, তা করতে সে অক্ষম ছিল। সম্ভবত তার মধ্যে অনেক মনুষ্যোচিত আকাঙ্ক্ষা বা বিচ্যুতকারী কিছু বিষয় ছিল; কোনো অবস্থাতেই সে সরাসরি ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারতো না। তার ভ্রান্তি এবং অযৌক্তিকতা শুধুমাত্র তার নিজের প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু তার কাজ ছিল পবিত্র আত্মার প্রতিনিধি। তবুও, তুমি বলতে পারবে না যে তার সম্পূর্ণ অংশই ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। তার বিচ্যুতি এবং ভুলভ্রান্তিও কি ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? মানুষের প্রতিনিধিত্বে ভুল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু কেউ যদি ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্বে বিচ্যুত হয়, তাহলে তা কি ঈশ্বরের প্রতি অসম্মানজনক হবে না? এটা কি পবিত্র আত্মার নিন্দা করা হবে না? পবিত্র আত্মা মানুষকে হালকা ভাবেও ঈশ্বরের স্থানে দাঁড়ানোর অনুমতি দেয় না, সে যদি অন্যদের দ্বারা উন্নীত হয়, তাহলেও না। সে ঈশ্বর না হলে, শেষ পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। পবিত্র আত্মা মানুষকে তার খুশি মতো ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দেয় না! উদাহরণস্বরূপ, পবিত্র আত্মাই যোহনের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং পবিত্র আত্মাই তাকে যীশুর পথ প্রশস্ত করার মতো ব্যক্তি হিসাবে প্রকাশিত করেছিলেন, কিন্তু পবিত্র আত্মা তার উপর যে কাজ করেছিলেন তা ছিল পরিমিত। যোহনকে কেবলমাত্র যীশুর পথ প্রশস্ত করতে বলা হয়েছিল, তাঁর জন্য পথ প্রস্তুত করতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ, পবিত্র আত্মা শুধুমাত্র পথ প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে তার কাজ সমর্থন করেছিলেন এবং তাকে শুধুমাত্র এই ধরনের কাজ করার অনুমতিদিয়েছিলেন—অন্য কোনও কাজ করার অনুমতি তাকে দেওয়া হয়নি। যোহন এলিয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এবং ছিল এমন একজন নবীর প্রতিনিধি যে পথ প্রশস্ত করেছিল। পবিত্র আত্মা এতে তাকে সমর্থন করেছিলেন; যতক্ষণ তার কাজ ছিল পথ প্রশস্ত করা, পবিত্র আত্মা তাকে সমর্থন করেছিলেন। তবে, যদি সে নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করত এবং বলত যে সে উদ্ধারের কাজ শেষ করতে এসেছে, তাহলে পবিত্র আত্মা তাকে শাসন করতেন। যোহনের কাজ যতই মহান হোক না কেন, এবং এমনকি যদিও তা পবিত্র আত্মা দ্বারা সমর্থিত ছিল, কিন্তু তার কাজ সীমানাবিহীন ছিল না। পবিত্র আত্মা প্রকৃতপক্ষে তার কাজকে সমর্থন করেছিলেন এ কথা মানলেও, সেই সময়ে তাকে দেওয়া শক্তি কেবল পথ প্রশস্ত করার কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সে অন্য কোনও কাজ করতে পারে নি, কারণ সে ছিল যোহন, যে কেবল পথ প্রশস্ত করেছিল, এবং সে যীশু ছিল না। অতএব, পবিত্র আত্মার সাক্ষ্য একটি মুখ্য বিষয়, কিন্তু পবিত্র আত্মা মানুষকে যে কাজের অনুমতি দেন তা আরও গুরুত্বপূর্ণ। যোহন কি সেই সময়ে জোরালো সাক্ষ্য পায় নি? তার কাজও কি মহান ছিল না? কিন্তু তার কাজ যীশুর কাজকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি, কারণ সে পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু ছিল না এবং সে সরাসরি ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে নি, আর তাই তার সম্পাদিত কাজটি ছিল সীমিত। সে তার পথ প্রশস্ত করার কাজ শেষ করার পরে পবিত্র আত্মা আর তার সাক্ষ্য দেননি, কোনও নতুন কাজ তাকে দেওয়া হয় নি, এবং ঈশ্বর নিজে কাজ শুরু করার সাথে সাথে সে প্রস্থান করে।

কিছু মানুষ মন্দ আত্মার দ্বারা অধিকৃত এবং তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে জানায়, “আমিই ঈশ্বর!” তারা অনাবৃত হয়, কারণ তারা যার প্রতিনিধিত্ব করে তা ভুল। তারা শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং পবিত্র আত্মা তাদের প্রতি কোনও মনোযোগ দেন না। তুমি নিজেকে যতই উন্নীত ভাবো, অথবা যত জোরেই চিৎকার করো, তুমি কেবলমাত্র একটি সৃষ্ট সত্তা এবং এমন একজন যে শয়তানের কবলিত। আমি কখনো চিৎকার করি না, যে “আমিই ঈশ্বর, আমিই ঈশ্বরের প্রিয় মনুষ্যপুত্র!” কিন্তু আমি যে কাজ করি তা ঈশ্বরের কাজ। আমার কি চিৎকার করার দরকার আছে? মহিমান্বিত করার কোনও প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর কাজ করেন এবং মানুষের কাছ থেকে আলাদা মর্যাদা বা সম্মানজনক উপাধি পাওয়ার প্রয়োজন তাঁর নেই: তাঁর কাজই তাঁর পরিচয় ও মর্যাদার প্রতিনিধিত্ব করে। বাপ্তিষ্মের আগেও যীশু কি স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন না? তিনি কি ঈশ্বরের অবতার ছিলেন না? নিশ্চয়ই এটা বলা যায় না যে সাক্ষ্য পাওয়ার পরই তিনি ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র হয়ে উঠেছিলেন? তিনি তাঁর কাজ শুরু করার অনেক আগে থেকেই কি যীশু নামে একজন মানুষ ছিলেন না? তুমি নতুন পথের সূচনা করতে বা আত্মার প্রতিনিধিত্ব করতে অক্ষম। তুমি আত্মার কাজ বা তাঁর কথিত বাক্য প্রকাশে অক্ষম। স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ করতে তুমি অক্ষম, এবং আত্মার কাজ করতেও তুমি অক্ষম। ঈশ্বরের প্রজ্ঞা, বিস্ময় ও অতলতা, এবংঈশ্বরের স্বভাবের সমগ্রতা যার দ্বারা তিনি মানুষকে শাস্তিপ্রদান করেন—এসব তোমার প্রকাশ করার ক্ষমতার বাইরে। তাই নিজেকে ঈশ্বর হিসাবে দাবি করার চেষ্টা অর্থহীন; তুমি হয়তো শুধু নামটুকুই পাবে কিন্তু সারবত্তার কোনোকিছুই পাবে না। স্বয়ং ঈশ্বর এসেছেন, কিন্তু কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি, তবুও তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আত্মার প্রতিনিধি হিসাবে তা করছেন। তুমি তাঁকে মানুষ বা ঈশ্বর ডাকো, প্রভু বা খ্রীষ্ট ডাকো, বা তাঁকে বোন ডাকো, তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু তিনি যে কাজ করেন তা হল আত্মার কাজ এবং তিনি স্বয়ং ঈশ্বরের কাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। মানুষ তাঁকে কী নামে ডাকছে সে বিষয়ে তিনি পরোয়া করেন না। সেই নাম কি তাঁর কাজ নির্ধারণ করতে পারে? তুমি তাঁকে যে নামেই ডাকো না কেন, ঈশ্বরের বিষয়ে একমাত্র বিবেচ্য হলো, তিনি হলেন ঈশ্বরের আত্মার অবতাররূপী দেহ; তিনি আত্মার প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তিনি আত্মা দ্বারা অনুমোদিত। তুমি যদি নতুন যুগের জন্য পথ তৈরি করতে না পারো, বা পুরাতনের সমাপ্তি ঘটাতে না পারো বা নতুন যুগের সূচনা করতে বা নতুন কাজ করতে না পারো, তবে তোমাকে ঈশ্বর বলে অভিহিত করা যাবে না!

এমনকি পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত একজন মানুষও স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। শুধু এই নয় যে এরকম একজন মানুষ ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, বরং সে যে কাজ করে তাও প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। অন্য ভাবে বলতে গেলে, মানুষের অভিজ্ঞতা সরাসরি ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনায় স্থান পেতে পারে না, এবং তা ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার প্রতিনিধিত্বও করে না। ঈশ্বর স্বয়ং যে কাজ করেন তা সম্পূর্ণভাবে তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনায় তিনি যা করতে চান সেই কাজ, এবং তা মহৎ ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত। মানুষের কাজ তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সমাহারে গঠিত হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে বিগত মানুষদের চিরাচরিত অভিজ্ঞতা অতিক্রম করে এক নতুন পথের সন্ধান, এবং পবিত্র আত্মার নির্দেশনার মধ্যে থাকা অবস্থায়, তাদের ভাই ও বোনদের পথ দেখানোর মতো বিষয়। এই মানুষেরা যা দেয় তা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অথবা আধ্যাত্মিক মানুষদের আধ্যাত্মিক লেখা। এই মানুষেরা পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত হলেও, তারা যে কাজ করে তা ছয়-হাজার বছরের পরিকল্পনার অন্তর্গত মহান ব্যবস্থাপনার কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। তারা কেবল পবিত্র আত্মার দ্বারা বিভিন্ন সময়কালে প্রতিপালিত হয়েছে, যাতে তারা পবিত্র আত্মার স্রোতে জনগণকে নেতৃত্ব দিতে পারে, যতক্ষণ না যে কাজ তারা নির্বাহ করতে সক্ষম তা শেষ হয়ে যায়, অথবা তাদের জীবৎকাল শেষ হয়ে যায়। তাদের একমাত্র কাজ হল স্বয়ং ঈশ্বরের জন্য উপযুক্ত পথ প্রস্তুত করা অথবা পৃথিবীতে স্বয়ং ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে নিরবচ্ছিন্ন রাখা। নিজেদের পরিধিতে, এই মানুষেরা তাঁর ব্যবস্থাপনার বৃহত্তর কাজ করতে অক্ষম, বা তারা নতুন পথও উন্মুক্ত করতে পারে না, আর তাদের মধ্যে কেউই পূর্বের যুগে ঈশ্বরের সমস্ত কাজকে উপসংহারে আনতে আরোই অপারগ। তাই, তাদের সম্পাদিত কাজ যেন একটি সৃষ্ট সত্তার নিজের সম্পাদিত কাজকেই উপস্থাপিত করে এবং তা স্বয়ং ঈশ্বরের সেবাব্রতর প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ তারা যে কাজ করে তা স্বয়ং ঈশ্বরের কাজের থেকে ভিন্ন। একটি নতুন যুগের সূচনার কাজটি ঈশ্বরের পরিবর্তে মানুষের দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভবপর নয়। তা স্বয়ং ঈশ্বর ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। মানুষের দ্বারা সম্পন্ন সমস্ত কাজ একটি সৃষ্ট সত্তার কর্তব্যের সমাহার, এবং তা পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত বা আলোকপ্রাপ্ত হলেই সম্পাদিত হয়। এই ব্যক্তিরা যে পথনির্দেশ প্রদান করে তা সম্পূর্ণরূপে মানুষকে তার দৈনন্দিন জীবনে অনুশীলনের পথ প্রদর্শন এবং তার কীভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গত থেকে কাজ করা উচিত, সেই নির্দেশ দিয়েই গঠিত। মানুষের কাজ ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত নয় বা আত্মার কাজের প্রতিনিধিত্বও করে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাক্ষী লি এবং প্রহরী নি-এর কাজ ছিল পথের নেতৃত্ব দেওয়া। পথ নতুন বা পুরাতন যাই হোক না কেন, কাজটি বাইবেলের সাথে সঙ্গত থাকার নীতির ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছিল। স্থানীয় গির্জা পুনরুদ্ধার বা স্থানীয় গির্জা নির্মাণ, যাই হোক না কেন, তাদের কাজ গির্জা প্রতিষ্ঠার সাথেই সম্পর্কিত ছিল। তারা সেই কাজ নির্বাহ করেছিল যে কাজ অনুগ্রহের যুগে যীশু এবং তাঁর প্রেরিতজনেরা অসমাপ্ত রেখেছিলেন বা বিকশিত করেন নি। তারা যে কাজ করেছিল তা হচ্ছে, সেইসব পুনরুদ্ধার করা যা যীশু তাঁর সময়কালে পরবর্তী প্রজন্মকে বলেছিলেন, যেমন তাদের মাথা আচ্ছাদিত রাখা, বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করা, রুটি টুকরো করে গ্রহণ করা, বা সুরা পান করা। বলা যেতে পারে যে, তাদের কাজ ছিল বাইবেলের সাথে সঙ্গত থাকা এবং বাইবেলের মধ্যেই পথের অনুসন্ধান করা। তারা কোনো ধরনের নতুন অগ্রগতি করেনি। সুতরাং, তাদের কাজের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় শুধুমাত্র বাইবেলের মধ্যে নতুন পথ আবিষ্কার, এবং আরও ভালো এবং আরও বাস্তবসম্মত অনুশীলনের আবিষ্কার। কিন্তু তাদের কাজে ঈশ্বরের বর্তমান ইচ্ছা দেখতে পাওয়া যায় না, অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের কর্ম পরিকল্পনার সন্ধান পাওয়া তো আরোই দুষ্কর। এর কারণ তারা সেই প্রাচীন পথই অনুসরণ করে চলেছিল—এতে কোনও পুনর্নবীকরণ বা অগ্রগতি হয় নি। তারা এই সত্যকেই মেনে চলত যে যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, তারা মানুষদের অনুতাপ এবং পাপ স্বীকার করতে বলার অভ্যাস পালন করে চলত, এই সকল কথন মেনে চলত যে শেষ পর্যন্ত যে সহ্য করবে সেই উদ্ধার পাবে, এবং পুরুষ হল নারীর প্রভু, নারীকে অবশ্যই তার স্বামীর বাধ্য হতে হবে, এবং সেইসাথে মেনে চলত আরও কিছু প্রথাগত ধারণা, যেমন বোনেরা প্রচার করতে পারবে না, শুধুমাত্র আনুগত্য স্বীকার করবে। যদি নেতৃত্ব দানের এই পদ্ধতি অব্যাহত থাকত, তবে পবিত্র আত্মা কখনোই নতুন কাজ করতে, মানুষকে নিয়মের থেকে মুক্ত করতে, বা তাদের স্বাধীনতা ও সৌন্দর্যের রাজ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম হত না। কাজেই, যুগ পরিবর্তনকারী কাজের এই পর্যায়ে যুগের প্রয়োজনে স্বয়ং ঈশ্বরকে কাজ করতে এবং বাক্য উচ্চারণ করতে হবে; অন্যথায় তাঁর পরিবর্তে কোনও মানুষ তা করতে পারে না। এখন পর্যন্ত, এই স্রোতের বাইরে পবিত্র আত্মার সমস্ত কার্য স্থবির হয়ে পড়েছে, এবং যারা পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল তারা তাদের তাদের পথ হারিয়েছে। তাই, যেহেতু পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত মানুষদের কার্য স্বয়ং ঈশ্বরের কার্য থেকে ভিন্ন, তাই তাদের পরিচয় এবং যে বিষয়বস্তুর পক্ষ থেকে তারা কাজ করে সেগুলোও একইভাবে ভিন্ন। এর কারণ হল, পবিত্র আত্মার যে কাজ করতে চান তা ভিন্ন, এবং এই কারণে যারা অনুরূপ কাজ করে তাদের বিভিন্ন পরিচয় এবং মর্যাদা দেওয়া হয়। পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত মানুষেরা হয়ত একেবারে নতুন কিছু কাজ করতে পারে এবং হয়তো পূর্ব যুগের কিছু কাজকেও তা অপসারিত করতে পারে, কিন্তু তারা যা করে তা নতুন যুগে ঈশ্বরের স্বভাব ও ইচ্ছাকে প্রকাশ করতে পারে না। তারা শুধুমাত্র পূর্বের যুগের কাজকে শেষ করার জন্যই কাজ করে, নতুন কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে স্বয়ং ঈশ্বরের স্বভাবকে প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশের উদ্দেশ্যে নয়। সুতরাং, তারা যতই অপ্রচলিত প্রথা বাতিল করুক বা যত নতুন প্রথাই চালু করুক না কেন, তারা তবুও মানুষ এবং সৃষ্টিকূলেরই প্রতিনিধিত্ব করে। স্বয়ং ঈশ্বর যখন কার্য সম্পাদন করেন, তখন তিনি প্রকাশ্যে পুরাতন যুগের অনুশীলনের বিলুপ্তির কথা ঘোষণা করেন না বা প্রত্যক্ষভাবে নতুন যুগের সূচনার কথা ঘোষণা করেন না। তিনি তাঁর কর্মে স্পষ্ট এবং অকপট থাকেন। তিনি তাঁর আকাঙ্ক্ষিত কর্ম সম্পাদনে অবিচল; অর্থাৎ, যে কাজ তিনি সম্পাদন করেছেন তা প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ করেন, মূল অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রত্যক্ষভাবে তাঁর কাজ নির্বাহ করেন, এবং এর মাধ্যমে তাঁর সত্তা ও স্বভাব অভিব্যক্ত করেন। মানুষ দেখে, তাঁর স্বভাব, এবং তাঁর কাজও, অতীতের যুগের থেকে ভিন্ন। তবে, স্বয়ং ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি শুধুমাত্র তাঁর কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং তার ক্রমবিকাশ। যখন ঈশ্বর স্বয়ং কর্মসম্পাদন করেন, তখন তিনি তাঁর বাক্য প্রকাশ করেন এবং সরাসরি নতুন কাজের সূচনা করেন। অপরদিকে মানুষ যখন কাজ করে, তখন তা করে চিন্তাভাবনা এবং অধ্যয়নের দ্বারা, অথবা জ্ঞানের সম্প্রসারণ এবং অন্যের কাজের উপর প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিগত অনুশীলনের মাধ্যমে। অর্থাৎ, মানুষের সম্পাদিত কাজের সারমর্ম হল একটি প্রতিষ্ঠিত নিয়মের অনুসরণ করা এবং “নতুন জুতো পরে পুরাতন পথে চলা”। এর অর্থ হল পবিত্র, আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত মানুষেরা যে পথে হেঁটেছে, সেই পথটিও স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা স্থাপিত পথের উপরেই তৈরী হয়েছে। সুতরাং, সবকিছু বিচার করে বলা যায়, মানুষ এখনও মানুষই, এবং ঈশ্বর এখনও ঈশ্বরই।

যেমন ইসহাক অব্রাহামের কাছে জন্মগ্রহণ করেছিল, তেমনই যোহনের জন্ম হয়েছিল প্রতিশ্রুতি থেকে। সে যীশুর পথ প্রশস্ত করার পাশাপাশি আরও অনেক কাজ করেছিল, কিন্তু সে ঈশ্বর ছিল না। বরং, সে ছিল নবীদের একজন, কারণ সে শুধুমাত্র যীশুর জন্য পথ প্রশস্ত করেছিল। তার কাজও ছিল মহান, এবং সেই কাজ হয়েছিল শুধুমাত্র যীশুর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার পথ প্রশস্ত করার পর। এর নির্যাস হলো, সে কেবল যীশুর জন্যই পরিশ্রম করেছিল, এবং তার কাজ যীশুর কাজের সেবাতেই নিয়োজিত ছিল। তার পথ প্রশস্ত করা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, যীশু তাঁর আরও নতুন, আরও বাস্তব, এবং বিস্তারিত কর্ম শুরু করেছিলেন। যোহন শুধুমাত্র কাজের প্রাথমিক অংশটুকুই সম্পাদিত করেছিল; নতুন কাজের বৃহত্তর অংশটি যীশুই সম্পন্ন করেছিলেন। যোহনও অবশ্য নতুন কাজ করেছিল, কিন্তু সে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে নি। যোহন প্রতিশ্রুতির দ্বারা জন্মগ্রহণ করে, এবং তার নামকরণ করেছিল এক দেবদূত। সেই সময়ে, কেউ কেউ তার বাবা সখরিয়র নামে তার নাম রাখতে চাইলেও তার মা বলেছিল, “এই শিশুটিকে ওই নামে ডাকা যাবে না। এর নাম হওয়া উচিত যোহন”। এই সমস্ত কিছু পবিত্র আত্মার নির্দেশেই হয়েছিল। যীশুরও নামকরণ করা হয়েছিল পবিত্র আত্মার নির্দেশেই, তিনি পবিত্র আত্মা থেকেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এবং তিনি পবিত্র আত্মার দ্বারা প্রতিশ্রুত ছিলেন। যীশু ছিলেন ঈশ্বর, খ্রীষ্ট, এবং মনুষ্যপুত্র। কিন্তু, যোহনের কাজ মহান হওয়া সত্ত্বেও, কেন তাকে ঈশ্বর বলে অভিহিত করা হল না? যীশুর সম্পাদিত কাজএবং যোহনের সম্পাদিত কাজের মধ্যে ঠিক কী পার্থক্য ছিল? এটাই কি একমাত্র কারণ ছিল যে যোহন যীশুর জন্য পথ প্রশস্ত করেছিল? নাকি এই জন্য যে এটা ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত ছিল? যদিও যোহনও একথা বলেছিল যে, “অনুতাপ কর: কারণ স্বর্গরাজ্য সমাগত”, এবং সে স্বর্গরাজ্যের সুসমাচারের প্রচারও করেছিল, কিন্তু তার কাজটি ক্রমে আরও বিকশিত হয়নি, কেবল একটি সূচনা প্রস্তুত করেছিল। অপরদিকে, যীশু একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন সেইসাথে পুরাতনের অবসান ঘটিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পুরাতন নিয়মের অনুশাসনও পূরণ করেছিলেন। তাঁর সম্পাদিত কর্ম যোহনের চেয়ে বৃহত্তর ছিল, উপরন্তু, তিনি সমস্ত মানবজাতিকে মুক্তি দিতে এসেছিলেন—কাজের সেই পর্যায়টি তিনি সম্পন্ন করেছিলেন। যোহন শুধু পথ প্রস্তুত করেছিল। যদিও তার কাজ ছিল মহৎ, তার কথিত বাক্যও অনেক, এবং তাকে অনুসরণকারী শিষ্যও অসংখ্য, কিন্তু তার কাজ মানুষের জন্য একটি নতুন সূচনা এনে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি। মানুষ যেমন তার কাছ থেকে জীবন, পথ বা গভীরতর সত্য কখনো পায়নি, তেমনই তার মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছার উপলব্ধিও লাভ করেনি। যোহন ছিল একজন মহান নবী (এলিয়) যে যীশুর কার্যের নতুন স্থান উন্মুক্ত করে দিয়েছিল এবং মনোনীত ব্যক্তিদের প্রস্তুত করেছিল; সে ছিল অনুগ্রহের যুগের অগ্রদূত। এই ধরনের বিষয়গুলি কেবল তাদের স্বাভাবিক মানবিক উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায় না। এটি আরও সুপ্রযুক্ত কারণ যোহনের সম্পাদিত কাজ যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ছিল, তাছাড়াও, সে পবিত্র আত্মা দ্বারা প্রতিশ্রুত হয়েছিল, এবং তার কাজ পবিত্র আত্মা সমর্থন করেছিলেন। এমন হওয়ার কারণে, শুধুমাত্র তাদের সম্পাদিত কাজের মাধ্যমেই তাদের নিজ নিজ পরিচয়ের পার্থক্য বোঝা যেতে পারে, কারণ একজন মানুষের বাহ্যিক চেহারা থেকে তার সারমর্ম জানার কোনও উপায় নেই, বা পবিত্র আত্মার সাক্ষ্য নির্ধারণ করারও কোনও উপায় নেই। যোহনের এবং যীশুর সম্পাদিত কাজ ছিল পৃথক এবং ভিন্ন প্রকৃতির। এ থেকেই কেউ নির্ধারণ করতে পারে যোহন ঈশ্বর ছিল কি না। যীশুর কাজ ছিল সূচনা করা, তা অব্যাহত রাখা, সমাপ্তি নিয়ে আসা, এবং ফলপ্রসূ করা। তিনি এই পদক্ষেপগুলির প্রতিটি সম্পন্ন করেছিলেন, যেখানে যোহনের কাজ কেবল সূচনা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সূচনা লগ্নে যীশু সুসমাচার প্রসার এবং অনুতাপের পথ প্রচার করেছিলেন, এবং তারপর মানুষকে বাপ্তিষ্ম করতে, অসুস্থদের নিরাময় করতে, এবং অপদেবতার বিতাড়ন করতে থাকেন। শেষে তিনি মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তিদান করেন এবং সমগ্র যুগের কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি সর্বত্র ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের কাছে প্রচার করতেন এবং স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার ছড়িয়ে দিতেন। এই বিষয়ে তিনি এবং যোহন অনুরূপ ছিলেন, শুধু পার্থক্যটি হল যীশু একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন এবং মানুষের জন্য অনুগ্রহের যুগ নিয়ে এসেছিলেন। অনুগ্রহের যুগে মানুষের কী অনুশীলন করা উচিত এবং মানুষের যে পথ অনুসরণ করা উচিত সে সম্পর্কে তাঁর মুখ থেকে বাক্য নিঃসৃত হয়েছিল, এবং শেষ পর্যন্ত, তিনি মুক্তির কার্য সুসম্পন্ন করেছিলেন। যোহন কখনোই এই কাজটি করতে পারেনি। এবং স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ যীশুই সম্পন্ন করেছিলেন, এবং তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর, এবং প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেন। মানুষের পূর্বধারণা বলে যে, যারা প্রতিশ্রুতিবশত জন্মগ্রহণ করে, আত্মার থেকে জন্মগ্রহণ করে, পবিত্র আত্মার দ্বারা সমর্থিত হয়, এবং নতুন পথ উন্মুক্ত করে তারাই হল ঈশ্বর। এই যুক্তি অনুসারে, যোহনও ঈশ্বর বিবেচিত হবে এবং মোশি, অব্রাহাম, এবং দাউদ…, সকলেই ঈশ্বর রূপে পরিগণিত হবে। এটা কি চূড়ান্ত রসিকতা নয়?

তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন করার আগে, যীশুও শুধুমাত্র একজন সাধারণ মানুষই ছিলেন যিনি পবিত্র আত্মার সম্পাদিত কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কাজ করেছিলেন। সেই সময়ে নিজের পরিচয়ের সচেতনতা নির্বিশেষেই, তিনি ঈশ্বর নির্দেশিত সমস্ত কিছু মান্য করে চলতেন। তাঁর সেবাব্রত শুরু হওয়ার আগে পবিত্র আত্মা তাঁর পরিচয় প্রকাশ করেননি। শুধুমাত্র তাঁর সেবাব্রত শুরু করার পরেই তিনি সেই নিয়মাবলী এবং বিধানসমূহকে বাতিল করেছিলেন, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন শুরু না করা পর্যন্ত তাঁর কথাগুলি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় আচ্ছন্ন ছিল না। শুধুমাত্র তাঁর সেবাব্রত শুরু করার পরেই তিনি একটি নতুন যুগ সূচনার কাজ শুরু করেছিলেন। এর আগে, পবিত্র আত্মা ২৯ বছর ধরে তাঁর মধ্যে গোপনে রয়েছিল, যে সময়ে তিনি ঈশ্বরের পরিচয় ছাড়াই শুধুমাত্র একজন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ঈশ্বরের কাজ শুরু হয়েছিল তাঁর কার্য এবং সেবাব্রত নির্বাহ করার মাধ্যমে, মানুষ তাঁর সম্পর্কে কতটা জানে তা বিবেচনা না করেই তিনি তাঁর অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা অনুসারে তাঁর কাজ করেছিলেন, এবং যে কাজ তিনি করেছিলেন তা ছিল স্বয়ং ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি। সেই সময়, যীশু তাঁর চারপাশে যারা ছিল তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কে, এ সম্বন্ধে তোমরা কি বল?” তাঁরা বললেন, “আপনি মহানতম নবী এবং আমাদের অসামান্য চিকিৎসক”। কেউ কেউ উত্তর দিল, “আপনি আমাদের মহাযাজক”, এরকম চলতে থাকল। সমস্ত রকমের উত্তরই দেওয়া হল, কেউ কেউ তো এমনও বলল যে তিনি যোহন, কেউ বলল তিনি এলিয়। তখন যীশু শিমোন পিতরের দিকে ফিরে বললেন, “আমি কে, এ সম্বন্ধে তুমি কি বল?” পিতর বলল, “আপনি স্বয়ং খ্রীষ্ট, জীবনময় ঈশ্বরের পুত্র”। তারপর থেকেই, মানুষ অবগত হলো যে তিনি ঈশ্বর। তাঁর পরিচয় যখন জানিয়ে দেওয়া হলো, পিতরই প্রথম এই বিষয়ে অবগত হয়েছিল এবং এ কথা তার মুখ থেকেই নির্গত হয়েছিল। তারপর যীশু বললেন, “তুমি যা বললে, কোন রক্তমাংসের মানুষ নয়, আমার স্বর্গস্থ পিতা স্বয়ং তোমার কাছে এ কথা প্রকাশ করেছেন”। তাঁর বাপ্তিষ্মের পরে, অন্যরা এ বিষয়ে জানে কি না তা নির্বিশেষে, যে কাজ তিনি করেছিলেন তা ছিল ঈশ্বরের পক্ষ থেকে সম্পাদিত। তিনি তাঁর কাজ সম্পাদন করার জন্য এসেছিলেন, তাঁর পরিচয় প্রকাশের উদ্দেশ্যে নয়। পিতর এই বিষয়ে বলার পরেই তাঁর পরিচয় প্রকাশ্যে জানা যায়। তিনিই যে স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন, এ কথা তুমি জানতে কিনা তা নির্বিশেষে উপযুক্ত সময় এলে তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন। এবং তোমার জানা বা না জানা নির্বিশেষেই, তিনি আগের মতোই তাঁর কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি তুমি যদি তা অস্বীকারও করতে, তবুও তিনি তাঁর কাজ সম্পাদন করতেন এবং যখন এটি করার সময় আসতো তখনই তা সম্পাদন করতেন। তিনি তাঁর কাজ এবং সেবাব্রত সম্পাদন করতে এসেছিলেন, এইজন্য নয় যাতে মানুষ তাঁর পার্থিব রূপ জানতে পারে, বরং তিনি এসেছিলেন যাতে মানুষ তাঁর কাজ গ্রহণ করতে পারে। যদি তুমি বর্তমানের কাজের পর্যায়টি স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ বলে চিনতে অক্ষম হও, তবে তার কারণ হল তোমার দর্শনের অভাব। তবুও, তুমি কাজের এই পর্যায়টি অস্বীকার করতে পারবে না; এটি চিনতে তোমার ব্যর্থতা একথা প্রমাণ করে না যে পবিত্র আত্মা কাজ করছেন না বা তাঁর কাজ ভুল। কিছু মানুষ আছে যারা এমনকি বাইবেলে বর্ণিত যীশুর কাজের সাথে বর্তমানের কাজটির তুলনা করে এবং কোনো অসঙ্গতি পেলে কাজের এই পর্যায়টি অস্বীকারের উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করে। এটা কি অন্ধের মতো কাজ নয়? বাইবেলে লিপিবদ্ধ বিষয়গুলি সীমিত আকারে রয়েছে; এগুলি ঈশ্বরের সামগ্রিক কার্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। চারটি সুসমাচারে সবমিলিয়ে একশোর থেকেও কম সংখ্যক অধ্যায় রয়েছে, যেগুলিতে সীমিত সংখ্যক ঘটনা লেখা আছে, যেমন যীশুর ডুমুর গাছকে অভিশাপ দেওয়া, পিতরের দ্বারা প্রভুকে তিনবার অস্বীকারের ঘটনা, ক্রুশবিদ্ধ হওয়া এবং পুনরুত্থানের পরে শিষ্যদের কাছে যীশুর আবির্ভাব, উপবাস সম্পর্কিত শিক্ষা, প্রার্থনা সম্পর্কিত শিক্ষা, বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কিত শিক্ষা, যীশুর জন্ম ও বংশতালিকা, যীশুর শিষ্যদের নিয়োগ, এবং এমন আরও অনেক কিছু। যাইহোক, মানুষ বাইবেলে লিপিবদ্ধ এই বিষয়গুলিকে সম্পদ হিসাবে শ্রদ্ধা করে, এমনকি বর্তমানের কাজকে এগুলির বিপরীতে তুলনা করে। এমনকি তারা বিশ্বাস করে যে যীশু তাঁর জীবৎকালে যে সমস্ত কাজ করেছিলেন তা কেবল এতটুকুই, যেন ঈশ্বর কেবল এতটুকুই করতে সক্ষম এবং এর বেশি করতে পারেন না। এটা কি অযৌক্তিক নয়?

পৃথিবীতে যীশুর সময়কাল ছিল সাড়ে তেত্রিশ বছরের, অর্থাৎ তিনি পৃথিবীতে সাড়ে তেত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন। এই সময়কালের মাত্র সাড়ে তিন বছর তাঁর সেবাব্রত সম্পাদনে ব্যয় হয়েছিল; বাকি সময় তিনি শুধু একজন সাধারণ মানুষের জীবন যাপন করেছেন। শুরুর দিকে, তিনি সমাজভবনের সেবায় যোগদান করতেন, সেখানে তিনি ধর্মযাজকদের মুখে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা এবং অন্যদের প্রচার শুনতেন। তিনি বাইবেল সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন: তিনি এই জ্ঞান সহ জন্মগ্রহণ করেননি, শুধুমাত্র পড়া এবং শোনার মাধ্যমে তা অর্জন করেছিলেন। বাইবেলে স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ আছে যে তিনি বারো বছর বয়সেই সমাজভবনের শিক্ষকদের প্রশ্ন করেছিলেন: প্রাচীন নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি কী ছিল? মোশির বিধানগুলি কী কী? পুরাতন নিয়ম কী? এবং মন্দিরে যাজকের পোশাক পরে ঈশ্বরের সেবা করা মানুষের বিষয়টা কী? … তিনি অনেক প্রশ্ন করেছিলেন, কারণ তাঁর জ্ঞান বা বোধশক্তি কোনোটাই ছিল না। তিনি পবিত্র আত্মার দ্বারা জন্মলাভ করলেও, সম্পূর্ণরূপে একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসাবেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন; কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও তিনি একজন সাধারণ মানুষই ছিলেন। আত্মিক উচ্চতা ও বয়সের অনুপাতে তাঁর প্রজ্ঞা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং তিনি একজন সাধারণ মানুষের জীবনের পর্যায়গুলি অতিক্রম করেছিলেন। মানুষের কল্পনায় যীশুকে শৈশব বা বয়ঃসন্ধির অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয়নি; তিনি যেন জন্মের সাথে সাথেই একজন ত্রিশ বছরের মানুষের মতো জীবনযাপন করতে শুরু করেছিলেন, এবং তাঁর কাজ শেষ হওয়ার পরে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। যেন তিনি একজন সাধারণ মানুষের জীবনের পর্যায়গুলি পার করেননি; তিনি খাদ্যগ্রহণও করতেন না অথবা অন্য লোকেদের সাথে যুক্তও ছিলেন না, এবং মানুষজনের পক্ষে তাঁকে এক ঝলক দেখতে পাওয়াও সহজ ছিল না। যেন তিনি অস্বাভাবিক কেউ ছিলেন, যাকে দেখলে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে, কারণ তিনি ঈশ্বর। মানুষের বিশ্বাস, দেহরূপে যে ঈশ্বর আসেন তিনি নিশ্চয়ই একজন সাধারণ ব্যক্তির মতো জীবনযাপন করেন না; তারা বিশ্বাস করে যে তিনি দাঁত না মেজে বা মুখ না ধুয়েই পরিচ্ছন্ন থাকেন, কারণ তিনি একজন পবিত্র ব্যক্তি। এগুলো কি নিছক মানুষের পূর্বধারণা নয়? বাইবেলে মানুষরূপী যীশুর জীবনের কোনও বিষয় লিপিবদ্ধ নেই, এতে শুধুমাত্র তাঁর কাজের বিবরণই রয়েছে, কিন্তু এতে প্রমাণ হয় না যে তাঁর স্বাভাবিক মানবতা ছিল না, বা তিনি ত্রিশ বছর বয়সের আগে স্বাভাবিক মানুষের জীবনযাপন করেননি। তিনি ২৯ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কার্যনির্বাহ শুরু করেন, কিন্তু তুমি সেই বয়সের পূর্বের একজন মানুষ হিসাবে তাঁর সম্পূর্ণ জীবন বাদ দিতে পারো না। বাইবেলের নথি থেকে সেই সময়কালকে শুধুমাত্র বাদ দেওয়া হয়েছে; যেহেতু তা একজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবন ছিল এবং তাঁর ঐশ্বরিক কাজের সময়কাল ছিল না, তাই তা লিখে রাখার প্রয়োজনও ছিল না। যীশুর বাপ্তিষ্মের পূর্বে পবিত্র আত্মা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেননি, বরং যীশুর সেবাব্রত সূচনার দিন পর্যন্ত একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে শুধুমাত্র তাঁর জীবন বজায় রেখেছিল। তিনি ঈশ্বরের অবতার হওয়া সত্ত্বেও একজন সাধারণ মানুষের মতো তিনিও সেই একই পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর এই পরিণত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি বাইবেল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এটি বাদ দেওয়া হয়েছিল কারণ এটি মানুষের জীবনের প্রগতিতে বিরাট কোনো সহায়তা প্রদানে অক্ষম। তাঁর বাপ্তিষ্মের পূর্বের সময়টি ছিল এক গোপন সময়কাল, যেখানে তিনি কোনো সংকেত বা বিস্ময়কর কাজ করেননি। বাপ্তিস্মের পরেই যীশু মানবজাতির মুক্তির সমস্ত কাজের সূচনা করেছিলেন, যে কাজ প্রচুর পরিমাণ অনুগ্রহ, সত্য, এবং প্রেম ও করুণায় পরিপূর্ণ। এই কাজের শুরুই নির্দিষ্টভাবে ছিল অনুগ্রহের যুগের সূচনা; এই কারণেই তা লিখিত হয়েছিল এবং বর্তমানের কাছে প্রবাহিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি প্রস্থানের পথ উন্মুক্ত করার জন্য, এবং অনুগ্রহের যুগে যারা সেযুগের পথ ও ক্রুশের পথে চলেছিল, তাদের সমস্ত কিছু ফলপ্রসূ করার জন্য। যদিও এ সমস্তই মানুষের লিখে রাখা তথ্য, কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ছোটোখাটো ভ্রান্তি ছাড়া এর প্রায় সবটাই সত্যি। তা সত্ত্বেও এসব লিপিবদ্ধ নথিকে অসত্য বলা যাবে না। লিপিবদ্ধ বিষয়গুলি সম্পূর্ণরূপে সত্য, শুধুমাত্র সেগুলি লেখার সময় মানুষের কিছু ভুল হয়েছিল। কেউ কেউ আছে যারা বলবে যে, যদি যীশু একজন স্বাভাবিক এবং স্বাভাবিক মানবতা সম্পন্ন ব্যক্তি হতেন, তাহলে তিনি কীভাবে সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনার প্রদর্শনে সক্ষম ছিলেন? যীশুর চল্লিশ দিনের প্রলোভনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এক অলৌকিক সংকেত ছিল, যা একজন সাধারণ মানুষ অর্জন করতে পারতো না। তাঁর সেই চল্লিশ দিনের প্রলোভন পবিত্র আত্মার কাজের প্রকৃতিতে নিহিত ছিল; তাহলে কেউ কীভাবে বলতে পারে যে তাঁর মধ্যে অতিপ্রাকৃতের সামান্য অংশও ছিল না? তাঁর সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করার ক্ষমতা প্রমাণ করে না যে তিনি একজন অতীন্দ্রিয় মানুষ ছিলেন, এবং সাধারণ মানুষ ছিলেন না; কেবলমাত্র পবিত্র আত্মা তাঁর মতো একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে কাজ করেছেন, তাই তাঁর পক্ষে অলৌকিক কাজ এবং আরও বৃহৎ কর্ম সঞ্চালন করা সম্ভব হয়েছে। যীশু নিজের সেবাব্রত সম্পাদন করার আগে, অথবা যেমনটা বাইবেলে উল্লিখিত রয়েছে, অর্থাৎ পবিত্র আত্মা তাঁর উপর অবতীর্ণ হওয়ার আগে, যীশু একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন, কোনোভাবেই অতিপ্রাকৃত ছিলেন না। যখন পবিত্র আত্মা তাঁর উপর অবতীর্ণ হলেন, অর্থাৎ যখন তিনি তাঁর সেবাব্রতর কাজ সম্পাদন করতে শুরু করেন, তখন তিনি অতিপ্রাকৃতিকরূপে রঞ্জিত হয়ে ওঠেন। এইভাবে, মানুষ এই বিশ্বাসে পৌঁছয় যে ঈশ্বরের দেহরূপ অবতারের স্বাভাবিক মানবতা নেই; তদুপরি, তাদের ভ্রান্ত ধারণা হলো, ঈশ্বর অবতারের কেবল দেবত্বই আছে, মানবতা নেই। আবশ্যিকভাবেই, ঈশ্বর যখন তাঁর কাজ করতে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, তখন মানুষ যা দেখতে পায় তা সবই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা। তাদের দৃষ্টিগোচর এবং শ্রুতিগোচর সমস্ত কিছুই অতিপ্রাকৃতিক, কারণ তাঁর কর্ম এবং বাক্য তাদের কাছে দুর্বোধ্য এবং অসাধ্য বলে মনে হয়। যদি স্বর্গের কিছু পৃথিবীতে আনা হয়, তবে তা অতিপ্রাকৃতিক ছাড়া অন্য কিছু কীভাবে হতে পারে? যখন স্বর্গরাজ্যের রহস্য পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়, যে রহস্য মানুষের কাছে দুর্বোধ্য এবং অতল, যেগুলি অত্যন্ত বিস্ময়কর ও জ্ঞানময়—সেগুলি সবই কি অতিপ্রাকৃত নয়? তবে, তোমার জানা উচিত যে যতই অতিপ্রাকৃত হোক না কেন, সবকিছুই তাঁর স্বাভাবিক মানবতার মধ্যেই সম্পন্ন হয়। ঈশ্বরের পার্থিব অবতার মানবিকতায় পূর্ণ; তিনি যদি তা না হতেন, তাহলে তিনি ঈশ্বরের দেহরূপ অবতার হতেন না। যীশু তাঁর সময়কালে অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তৎকালীন ইস্রায়েলীরা যা দেখেছিল, তা ছিল অতিপ্রাকৃতিক ঘটনায় পূর্ণ; তারা স্বর্গদূত ও বার্তাবাহকদের দেখেছিল, এবং যিহোবার কণ্ঠস্বর শুনেছিল। এগুলি সবই কি অতিপ্রাকৃতিক নয়? অবশ্যই, বর্তমানে কিছু অশুভ আত্মা মানুষকে অতিপ্রাকৃতিক বিষয়ের দ্বারা প্রতারিত করে; এটি কেবল অনুকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়, বর্তমানে পবিত্র আত্মাযে কাজ করেন না সেসব কাজের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারণার চেষ্টা মাত্র। অনেক লোক অলৌকিক কাজ করে, অসুস্থদের সুস্থ করে তোলে, এবং অপদেবতা বিতাড়ন করে; এগুলি দুষ্ট আত্মাদের কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ পবিত্র আত্মা বর্তমানে আর এমন কাজ করেন না, এবং যারা সেই সময়কাল থেকে পবিত্র আত্মার কাজকে অনুকরণ করে তারা সকলেই প্রকৃতপক্ষে দুষ্ট আত্মা। সেই সময়ে ইস্রায়েলে সম্পাদিত সমস্ত কাজই ছিল অতিপ্রাকৃতিক প্রকৃতির, কিন্তু পবিত্র আত্মা এখন এইভাবে কাজ করে না এবং এখন এই ধরনের যেকোনো কাজই হল শয়তানের অনুকরণ, তার ছদ্মরূপ এবং উপদ্রব। কিন্তু তুমি বলতে পারবে না যে অতিপ্রাকৃতিক সমস্ত কিছুরই উৎস দুষ্ট আত্মা—তা ঈশ্বরের কার্যের যুগের উপর নির্ভর করবে। বর্তমানের ঈশ্বরের অবতারের সম্পাদিত কাজের বিষয়ে বিবেচনা করে দেখো: এর কোন দিকটি অতিপ্রাকৃতিক নয়? তাঁর বাক্যগুলি তোমার পক্ষে দুর্বোধ্য ও অসাধ্য, এবং যে কাজ তিনি করেন তা কোনও মানুষ করতে পারে না। তিনি যা বোঝেন তা মানুষের বোঝার কোনও উপায় নেই, এবং তাঁর জ্ঞানের উৎস মানুষের অজানা। কেউ কেউ আছে যারা বলে, “আমিও তোমার মতোই স্বাভাবিক, কিন্তু তাহলে তুমি যা জানো তা আমি জানি না, এটা কীভাবে সম্ভব? আমি তোমার চেয়ে প্রবীণ এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকেও সমৃদ্ধ, তবুও আমি যা জানি না, তা তুমি কীভাবে জানলে?” মানুষের বিষয়ে বলতে গেলে, এ সবই হচ্ছে এমন কিছু যা অর্জন করার কোনো উপায় মানুষের নেই। তারপর এমন কিছু মানুষও আছে যারা বলে, “ইস্রায়েলে যে কাজটি করা হয়েছিল তার বিষয়ে কেউ জানে না, এমনকি বাইবেলের ব্যাখ্যাকারীরাও কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারে না; তুমি কিভাবে জানলে?” এগুলো কি সবই অতিপ্রাকৃতিক বিষয় নয়? তাঁর বিস্ময়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, অথচ তিনি সব জানেন; তিনি সবচেয়ে সহজে সত্য বাক্য বলেন এবং প্রকাশ করেন। এটি কি অতিপ্রাকৃতিক নয়? মানুষ যা অর্জন করতে পারে, তাঁর কাজ সেটাকে অতিক্রম করে যায়। এটি রক্তমাংসের দেহধারী যেকোনো মানুষের চিন্তাভাবনার পক্ষে অকল্পনীয় এবং যুক্তিসম্পন্ন মনের ক্ষেত্রে একেবারেই অচিন্তনীয়। যদিও তিনি কখনো বাইবেল পড়েননি, তা সত্ত্বেও তিনি ইস্রায়েলে ঈশ্বরের কাজ বোঝেন। এবং তিনি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে কথা বললেও, তৃতীয় স্বর্গের রহস্য সম্পর্কিত কথা বলেন। মানুষ যখন এই বাক্যগুলি পড়বে, তখন তার এই অনুভূতি হবে: “এটাই কি তৃতীয় স্বর্গের ভাষা নয়?” এই সমস্ত বিষয়ই কি কোনো সাধারণ মানুষের অর্জন করার ক্ষমতাকে অতিক্রম করে যায় না? সেই সময়, যীশু যখন চল্লিশ দিন উপবাস করেছিলেন, তখন তা কি অতিপ্রাকৃতিক ছিল না? তুমি যদি বলো যে চল্লিশ দিনের উপবাস সব ক্ষেত্রেই অতিপ্রাকৃতিক, এটি দুষ্ট আত্মাদের কাজ, তাহলে তুমিও কি যীশুকে নিন্দা করোনি? সেবাব্রত সম্পাদনের আগে, যীশু একজন সাধারণ মানুষের মতো ছিলেন। মানুষের মতো ছিলেন। তিনিও বিদ্যালয়ে গেছিলেন; না হলে কীভাবে তিনি পড়তে লিখতে শিখলেন? ঈশ্বর যখন দেহধারণ করেন, তখন আত্মা দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। তবুও, একজন সাধারণ মানুষ হওয়ার কারণে, তাঁর বৃদ্ধি এবং পরিণত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়া আবশ্যক ছিল, এবং তাঁর বোধগম্যতা পরিণত হওয়া এবং তিনি সমস্ত বিষয়ে বুঝতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত, তাঁকে একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারতো। শুধুমাত্র তাঁর মানবতা পরিণত হওয়ার পরেই তিনি তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন করতে পেরেছিলেন। তাঁর স্বাভাবিক মানবতা অপরিণত থাকাকালীন এবং যুক্তিবোধ অগভীর থাকাকালীন কীভাবে তিনি তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন করতে পারেন? নিশ্চয়ই তিনি ছয় বা সাত বছর বয়সে তাঁর সেবাব্রত করবেন বলে আশা করা যেত না! প্রথম দেহধারণের সময়ই কেন ঈশ্বর নিজেকে জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি? কারণ তাঁর স্বাভাবিক মানবতা তখনও অপরিণত ছিল; তাঁর দেহের জ্ঞান অর্জন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি স্বাভাবিক মানবতা, সম্পূর্ণরূপে তাঁর অধিকারে ছিল না। এই কারণে, তাঁর কাজ শুরু করার আগে, ততদূর স্বাভাবিক মানবতা এবং একজন সাধারণ মানুষের সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হওয়া তাঁর পক্ষে পরম প্রয়োজনীয় ছিল, যাতে তিনি দেহরূপে তাঁর কাজ গ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্তভাবে সজ্জিত হতে পারেন। যদি তিনি কাজের উপযুক্ত না হতেন, তবে তাঁকে অবশ্যই ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং পরিণত অবস্থা প্রাপ্ত করতে হতো। যীশু যদি সাত বা আট বছর বয়সে কাজ শুরু করতেন, তাহলে মানুষ কি তাঁকে একজন বিস্ময়কর প্রতিভা হিসেবে গণ্য করত না? সবাই কি তাঁকে শিশু মনে করত না? কে তাঁকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করতো? সাত বা আট বছরের একটি শিশু, যে মঞ্চের পিছনে সে দাঁড়িয়ে আছে সেটির থেকে লম্বা নয়—সে কি ধর্মোপদেশ দেওয়ার উপযুক্ত হতো? তাঁর স্বাভাবিক মানবতা পরিণত হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি কার্যের উপযুক্ত ছিলেন না। তাঁর মানবতা বিষয়ে বলতে গেলে, যা তখনও পর্যন্ত অপরিণত ছিল, কাজের একটি বৃহৎ অংশ তাঁর পক্ষে অর্জন করা একেবারেই সম্ভব ছিল না। দেহ রূপে ঈশ্বরের আত্মার কাজও তার নিজস্ব নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়। তিনি স্বাভাবিক মানবতার সাথে সজ্জিত হলেই কাজটি গ্রহণ করতে পারেন এবং পিতার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। তবেই তিনি তাঁর কাজ শুরু করতে পারেন। শৈশবে, প্রাচীনকালে যা ঘটেছিল তার অনেক কিছুই যীশু উপলব্ধি করতে পারেননি, এবং সমাজভবনের শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমেই তিনি তা বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি যদি কথা বলতে শেখার সাথে সাথেই তাঁর কর্ম শুরু করতেন, তাহলে তাঁর পক্ষে ভুল না করে থাকা কীভাবে সম্ভব হতো? কীভাবে ঈশ্বর ভুল পদক্ষেপ নিতে পারেন? তাই কাজ করতে সক্ষম হওয়ার পরেই তিনি তাঁর কর্ম শুরু করেছিলেন; তিনি কাজের দায়িত্বগ্রহণে সম্পূর্ণরূপে যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ সম্পাদিত করেন নি। ২৯ বছর বয়সে, যীশু ইতিমধ্যেই বেশ পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মানবতাও তাঁকে যে কাজ করতে হতো তার দায়িত্বগ্রহণ করার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বরের আত্মা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মধ্যে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। সেই সময়ে, যোহন তাঁর জন্য পথ উন্মুক্ত করতে সাত বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিল, এবং কাজ শেষ করার পরে, তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সেই ভার তখন সম্পূর্ণরূপে যীশুর উপর এসে পড়ে। তিনি যদি ২১ বা ২২ বছর বয়সে এই কাজটি হাতে নিতেন, এমন একটি সময়ে যখন তাঁর মানবতার অভাব ছিল, যখন তিনি কেবলমাত্র যৌবনে প্রবেশ করেছিলেন, এবং তখনও অনেক বিষয় ছিল যা তিনি বুঝতেন না, তবে তিনি সে কাজের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে অক্ষম হতেন। সেই সময়ে, যীশুর কাজ শুরু করার আগে যোহন ইতিমধ্যে কিছু সময়ের জন্য তাঁর কাজ চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সেই সময় ইতিমধ্যেই সে মধ্যবয়সে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই বয়সে, তাঁর স্বাভাবিক মানবতা তাঁর করণীয় কার্যের জন্য যথেষ্ট ছিল। এখন, ঈশ্বরের অবতারেরও স্বাভাবিক মানবতা আছে, এবং যদিও তা তোমাদের বয়স্কদের পরিণতভাবের তুলনায় অনেক দূরে, কিন্তু এই মানবতা ইতিমধ্যেই তাঁর কাজ হাতে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বর্তমানের কাজের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যীশুর সময়কালের পরিস্থিতির সাথে সম্পূর্ণ এক নয়। কেন যীশু বারোজন প্রেরিতকে বেছে নিয়েছিলেন? তা সবই ছিল তাঁর কাজের সহায়ক এবং এর সাথে সমন্বিত। একদিকে, এটি ছিল সেই সময়ে তাঁর কাজের ভিত্তি স্থাপন, অন্যদিকে এটি ছিল পরবর্তী দিনগুলিতে তাঁর কাজের ভিত্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া। সেই সময়ের কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে, যীশুর ইচ্ছাতেই বারোজন প্রেরিতজনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, কারণ তা ছিল স্বয়ং ঈশ্বরেরই ইচ্ছা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তাঁর বারোজন প্রেরিতকে বেছে নেওয়া উচিত এবং তারপর তাদের সর্বত্র প্রচারের জন্য নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু তোমাদের আজ এর কোনো প্রয়োজন নেই! ঈশ্বরের অবতার যখন দেহরূপে কাজ করেন, অনেক নীতি থাকে এবং এমন অনেক বিষয় থাকে যা মানুষ একেবারেই বোঝে না; মানুষ ক্রমাগত নিজের ধারণা ব্যবহার করে তাঁর পরিমাপ করে, অথবা ঈশ্বরের কাছে অতিরিক্ত দাবি জানায়। তবুও আজ অবধি, অনেক লোকই সম্পূর্ণ অনবগত যে তাদের জ্ঞান শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব পূর্বধারণা দ্বারা গঠিত। ঈশ্বর যে বয়সে বা যে স্থানেই অবতীর্ণ হোন না কেন, দেহরূপে তাঁর কাজের নীতিগুলি অপরিবর্তিত থাকে। দেহরূপে পরিণত হওয়া, আবার এদিকে তাঁর কাজে সেই দেহরূপকে অতিক্রম করা, তা তিনি পারেন না; দেহরূপে পরিণত হয়ে অথচ সেই দেহরূপের স্বাভাবিক মানবতার মধ্যে কাজ না করতেও তিনি পারেন না। অন্যথায়, ঈশ্বরের অবতারের গুরুত্ব শূন্যে পর্যবসিত হবে, এবং বাক্যের দেহে পরিণত হওয়া সম্পূর্ণ অর্থহীন হয়ে উঠবে। অধিকন্তু, শুধুমাত্র স্বর্গের পিতা (আত্মা) ঈশ্বরের অবতার সম্পর্কে জানেন, অন্য কেউই না, এমনকি দেহরূপ স্বয়ং বা স্বর্গের বার্তাবাহকও তা জানেন না। এইভাবে, অবতাররূপে ঈশ্বরের কাজ আরও স্বাভাবিক এবং এটি আরও ভালভাবে প্রমাণ করতে পারে যে সত্যিই বাক্যের দেহে আবির্ভাব হয়েছে এবং দেহ মানে একজন সাধারণ এবং স্বাভাবিক মানুষ।

কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে, “কেন একটি যুগকে স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা সূচিত হতে হবে? সৃষ্ট সত্তা কি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না?” তোমরা সকলেই অবগত যে ঈশ্বর একটি নতুন যুগের সূচনা করার স্পষ্ট উদ্দেশ্যের জন্যই অবতাররূপ ধারণ করেন, এবং অবশ্যই একটি নতুন যুগের সূচনা করার সময় একই সাথে তিনি পূর্ব যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। ঈশ্বরই সূচনা এবং সমাপ্তি; তিনি নিজেই তাঁর কাজকে গতিশীল করেন এবং তাই পূর্ব যুগের সমাপ্তিও স্বয়ং তাঁর হাতেই হতে হবে। এটাই তাঁর শয়তানকে পরাস্ত করার, এবং তাঁর বিশ্বজয়ের প্রমাণ। প্রতিবার তিনি স্বয়ং মানুষের মধ্যে কাজ করেন, এবং তা এক নতুন যুদ্ধের সূচনা। নতুন কাজের সূচনা না হলে স্বাভাবিকভাবেই পুরাতনের কোনো উপসংহার হবে না। এবং যখন পুরানোর উপসংহার হয় নি, তখন এটাই প্রমাণ যে শয়তানের সাথে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। শুধুমাত্র যদি ঈশ্বর নিজে আসেন, এবং মানুষের মধ্যে নতুন কাজ পরিচালনা করেন, তাহলেই মানুষ শয়তানের আধিপত্য থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে একটি নতুন জীবন এবং একটি নতুন সূচনা লাভ করতে পারে। অন্যথায়, মানুষ চিরকাল পুরাতন যুগেই থেকে যাবে এবং চিরকাল শয়তানের পুরাতন প্রভাবের অধীনেই থাকবে। ঈশ্বরের নেতৃত্বে চালিত প্রতিটি যুগের সাথে, মানুষের একটি অংশ মুক্ত হয়, এবং এইভাবে মানুষ ঈশ্বরের কার্যের সাথে সাথে নতুন যুগের অভিমুখে অগ্রসর হয়। ঈশ্বরের বিজয়ের অর্থ তাঁর সকল অনুসরণকারীদেরও বিজয়। যদি সৃষ্ট মানবজাতিকে যুগের পরিসমাপ্তি ঘটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে হোক বা শয়তানের দৃষ্টিকোণ থেকেই হোক, তা ঈশ্বরের বিরোধিতা বা তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কাজ ব্যতীত আর কিছুই হবে না, ঈশ্বরের আনুগত্যের কাজ তো নয়ই, এবং মানুষের কাজ শয়তানের অস্ত্র হয়ে উঠবে। যদি মানুষ ঈশ্বরের সূচিত যুগে ঈশ্বরের প্রতি অনুগত হয় এবং তাঁকে অনুসরণ করে, তবেই শয়তানকে সম্পূর্ণরূপে সম্মত করানো যেতে পারে, কারণ এটিই সৃষ্ট সত্তার কর্তব্য। অতএব, আমি বলছি যে তোমাদের শুধুমাত্র অনুসরণ এবং আনুগত্য প্রয়োজন, এবং এর থেকে বেশি কিছু তোমাদের কাছ থেকে প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকের নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করা এবং নিজের নিজের কার্য নির্বাহ করা বলতে এটাই বোঝায়। ঈশ্বর তাঁর নিজের কাজ করেন এবং তাঁর পরিবর্তে মানুষকে দিয়ে এটি করানোর প্রয়োজন তাঁর নেই, তেমনই সৃষ্ট সত্তার কাজেও তিনি অংশগ্রহণ করেন না। মানুষ তার নিজের দায়িত্ব পালন করে, এবং ঈশ্বরের কাজে অংশগ্রহণ করে না। কেবল এটিই আনুগত্য, এবং শয়তানের পরাজয়ের প্রমাণ। ঈশ্বর স্বয়ং নতুন যুগের সূচনার পর, আর মানবজাতির মধ্যে কর্ম সম্পাদনে অবতীর্ণ হন না। তখনই মানুষ তার কর্তব্য সম্পাদন করতে এবং সৃষ্ট সত্তা হিসাবে উদ্দেশ্য পালন করতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন যুগে পদার্পণ করে। এই নীতি অনুসারেই ঈশ্বর কাজ করেন, যা অলঙ্ঘনীয়। শুধুমাত্র এই ভাবে কাজ করাই উপযুক্ত এবং যুক্তিসঙ্গত। ঈশ্বরের কার্য স্বয়ং ঈশ্বরকেই সম্পাদন করতে হবে। তিনিই তাঁর কর্ম গতিশীল রাখেন, এবং তিনিই তা শেষ করেন। তিনিই কাজের পরিকল্পনা করেন, তিনিই পরিচালনা করেন, এবং আরও বড় কথা, তিনিই তা ফলপ্রসূ করেন। বাইবেলে যেমন বলা হয়েছে, “আমিই আদি ও অন্ত; আমিই বপনকারী ও কর্তনকারী”। ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত সমস্ত কিছু স্বয়ং ঈশ্বরই করেন। তিনি ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার নিয়ন্ত্রক; তাঁর পরিবর্তে কেউ এই কাজ করতে পারে না, কেউ তাঁর কাজ সমাপ্ত করতে পারে না, কারণ তিনিই তাঁর হাতে সবকিছু ধারণ করে রেখেছেন। জগৎ সৃষ্টি করে তিনি সমগ্র বিশ্বকে তাঁর আলোয় বসবাসের অভিমুখে চালনা করবেন, এবং তিনিই যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন, ও তার মাধ্যমে তাঁর সমগ্র পরিকল্পনা ফলপ্রসূ করবেন!

পূর্ববর্তী: ঈশ্বরের কাজের দর্শন (৩)

পরবর্তী: অবতাররূপের রহস্য (২)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন