যারা প্রকৃতই ঈশ্বরকে ভালোবাসে তারাই হল সেইসব মানুষ যারা তাঁর ব্যবহারিকতার প্রতি চূড়ান্ত ভাবে সমপর্ণ করতে পারে
ব্যবহারিকতার জ্ঞান এবং ঈশ্বরের কার্যের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ উপলব্ধি অর্জন—এই দুটোই তাঁর বাক্যে দেখা যায়, এবং শুধুমাত্র এই উচ্চারণগুলির মাধ্যমেই তুমি আলোকপ্রাপ্তি লাভ করতে পারো। তাই ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা নিজেকে সজ্জিত করার জন্য তোমাকে আরও বেশি প্রচেষ্টা করতে হবে। আলাপ-আলোচনার সময় ঈশ্বরের বাক্যসমূহ সম্পর্কে তোমার উপলব্ধি জ্ঞাপন কর, এবং এইভাবে, তুমি অন্যদের আলোকিত করতে পারবে এবং তাদের একটি উপায় দিতে পারবে—এটি একটি ব্যবহারিক পথ। ঈশ্বর তোমার জন্য একটি পরিবেশের বন্দোবস্ত করার পূর্বে, তোমাদের প্রত্যেককে প্রথমে তাঁর বাক্যসমূহের দ্বারা নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রত্যেকেরই তা করা উচিত; এটি একটি জরুরি অগ্রাধিকার। প্রথমে, এমন একটা জায়গায় পৌঁছাও যেখানে তুমি ঈশ্বরের বাক্যসমূহ কীভাবে ভোজন ও পান করতে হয় তা জানো। তুমি যা যা করতে অক্ষম তার জন্য, অনুশীলনের একটা পথ পেতে তাঁর বাক্যসমূহের অন্বেষণ কর আর এমন কোনো বিষয় যা তুমি বুঝতে পারো না অথবা তোমার যেকোনও অসুবিধার ক্ষেত্রে এই উচ্চারণগুলি ভালো করে খুঁজে দেখো। ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে নিজের রসদ করে তোলো এবং তোমার ব্যবহারিক অসুবিধা এবং সমস্যাগুলির সমাধানে সেগুলিকে তোমার সাহায্য করতে দাও; এছাড়াও তাঁর বাক্যসমূহকে তোমার জীবনের সহায় হয়ে উঠতে দাও। এইগুলি করতে হলে তোমার পক্ষ থেকে প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করার ক্ষেত্রে, তোমাকে অবশ্যই ফলাফল অর্জন করতে হবে; তুমি অবশ্যই তাঁর সম্মুখে নিজের হৃদয়কে শান্ত করতে সক্ষম হবে, এবং যখনই তুমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হবে তখনই তোমাকে অবশ্যই তাঁর বাক্যসমূহ অনুসারেই অনুশীলন করতে হবে। কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হলে, তোমার নিজেকে শুধুমাত্র তাঁর বাক্য ভোজন এবং পান করাতেই নিরত রাখা উচিৎ। কখনও কখনও তুমি প্রার্থনা করতে এবং ঈশ্বরের ভালোবাসার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পার, তাঁর বাক্যসমূহ সম্পর্কে তোমার উপলব্ধি আলাপ-আলোচনায় ভাগ করে নিতে পার এবং তুমি তোমার অন্তরে যে আলোকপ্রাপ্তি এবং প্রদীপ্তি অনুভব কর এবং এই উচ্চারণগুলি পড়ার সময় তোমার যে প্রতিক্রিয়াগুলি হয় সেসব জ্ঞাপন করতে পার। উপরন্তু, তুমি মানুষকে সমাধানের একটি উপায় দিতে পার। শুধুমাত্র এটাই হল ব্যবহারিক। এটি করার লক্ষ্য হল ঈশ্বরের বাক্যগুলিকে তোমার ব্যবহারিক সংস্থান হয়ে উঠতে দেওয়া।
একদিনে, তুমি সত্যি সত্যি ঈশ্বরের সম্মুখে থাকার জন্য কত ঘন্টা ব্যয় কর? তোমার দিনের কতটুকু প্রকৃতই ঈশ্বরকে সমর্পিত হয়? শরীরকেই বা কতটা দেওয়া হয়? কারো হৃদয়কে সর্বদা ঈশ্বরের অভিমুখী করাই হল তাঁর দ্বারা নিখুঁত হওয়ার লক্ষ্যে সঠিক পথে চলার দিকে প্রথম পদক্ষেপ। তুমি যদি তোমার হৃদয়, শরীর এবং তোমার সমস্ত অকৃত্রিম ভালবাসা ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গ করতে পার, সেগুলিকে তাঁর সম্মুখে নিবেদন করতে পার, তাঁর প্রতি সম্পূর্ণরূপে অনুগত হতে পার, এবং তাঁর ইচ্ছার প্রতি পরিপূর্ণভাবে সহানুভূতিশীল হও—দৈহিক কামনার জন্য নয়, পরিবারের জন্য নয়, আর তোমার নিজের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার জন্যও নয়, বরং ঈশ্বরের পরিবারের স্বার্থের জন্য, সমস্তকিছুতে ঈশ্বরের বাক্যকে নীতি এবং ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করে—তাহলে এর মাধ্যমে, তোমার উদ্দেশ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি সবই সঠিক স্থিতিতে থাকবে এবং তুমি তখন ঈশ্বরের সম্মুখে স্থিত ও তাঁর প্রশংসাধন্য এক মানুষে পরিণত হবে। ঈশ্বর তাদেরই পছন্দ করেন যারা তাঁর প্রতি নির্বিকল্প; কেবলমাত্র তারাই এককভাবে তাঁর প্রতি নিবেদিত হতে পারে। ঈশ্বর তাদেরই ঘৃণা করেন যারা তাঁর প্রতি শিথিলউদ্যম এবং যারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তিনি তাদের ঘৃণা করেন যারা তাঁকে বিশ্বাস করে এবং সর্বদা তাঁকে উপভোগ করতে চায় যদিও তাঁর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ব্যয় করতে অসমর্থ। তিনি তাদের ঘৃণা করেন যারা বলে যে তারা তাঁকে ভালবাসে কিন্তু যারা তাদের অন্তরে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে; তিনি তাদের ঘৃণা করেন যারা প্রতারণা করার জন্য বাগ্মীসুলভ, অলঙ্কারবহুল বাক্য ব্যবহার করে। যারা সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত নয় বা যারা সত্যই তাঁর সামনে আত্মসমর্পণ করেনি তারা বিশ্বাসঘাতক এবং অত্যধিক অহংকারী প্রকৃতির। যারা স্বাভাবিক, ব্যবহারিক ঈশ্বরের সামনে প্রকৃত অর্থে আজ্ঞানুবর্তী হতে পারে না তারা আরও বেশি অহংকারী এবং তারা বিশেষ করে শ্রেষ্ঠ দেবদূতের কর্তব্যপরায়ণ বংশধর। যারা সত্যিকার অর্থে ঈশ্বরের জন্য নিজেদের ব্যয় করে তারা তাদের সমগ্র সত্তাকে তাঁর সামনে বিছিয়ে দেয়; তারা সত্যিকার অর্থে তাঁর সমস্ত উচ্চারণের কাছে আত্মনিবেদন করে এবং তাঁর বাক্যসমূহকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। তারা ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে স্বীকার করে এবং তাদের অস্তিত্বের ভিত্তি হিসাবে তা গ্রহণ করে এবং কোন অংশগুলি অনুশীলন করতে হবে তা খুঁজে বের করার জন্য তারা ঈশ্বরের বাক্যগুলির মধ্যে আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করতে সক্ষম হয়। এই ধরনের মানুষই প্রকৃতই ঈশ্বরের সম্মুখে জীবনযাপন করে। তুমি এটি করলে তা তোমার জীবনে প্রবেশের পক্ষে হিতকারী হবে এবং তাঁর বাক্য ভোজন এবং পান করার মাধ্যমে তুমি তোমার অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং অপ্রতুলতাগুলি পূরণ করতে পারবে যাতে তোমার জীবন চরিত্র রূপান্তরিত হয়, তখন এটি ঈশ্বরের ইচ্ছাও পূরণ করবে। তুমি যদি ঈশ্বরের চাহিদা অনুযায়ী কাজ কর, এবং যদি তুমি দেহকে সন্তুষ্ট না করে বরং তাঁর ইচ্ছাকে সন্তুষ্ট কর, তাহলে এর মাধ্যমে তুমি তাঁর বাক্যসমূহের বাস্তবতায় প্রবেশ করে ফেলবে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহের বাস্তবতায় প্রবেশ করার অর্থ হল তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করতে এবং ঈশ্বরের কার্যের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। শুধুমাত্র এই ধরণের ব্যবহারিক কর্মকেই তাঁর বাক্যসমূহের বাস্তবতায় প্রবেশ বলা যেতে পারে। তুমি যদি এই বাস্তবতায় প্রবেশ করতে সক্ষম হও, তাহলে তুমি সত্যের অধিকারী হবে। এটি হল বাস্তবে প্রবেশের সূচনা; তোমাকে প্রথমে এই প্রশিক্ষণটি গ্রহণ করতে হবে, এবং তাহলেই তুমি আরও গভীর বাস্তবতায় প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। কীভাবে আদেশসমূহ পালন করতে হয় এবং কীভাবে ঈশ্বরের সামনে অনুগত হতে হবে তা বিবেচনা কর; তুমি কখন রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে তা নিয়ে অনবরত চিন্তা কোরো না। যদি তোমার স্বভাব পরিবর্তিত না হয়, তাহলে তুমি যা-ই ভাববে তা বৃথা হবে! ঈশ্বরের বাক্যসমূহের বাস্তবতায় প্রবেশ করতে হলে তোমাকে প্রথমে সেখানে পৌঁছাতে হবে যেখানে তোমার সমস্ত ধারণা এবং চিন্তাভাবনা ঈশ্বরের জন্য নিবেদিত—এটাই ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা।
বর্তমানে, এমন অনেক মানুষ আছে যারা পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে এবং ঈশ্বরের কার্য বোঝে না, কিন্তু আমি তোমাকে বলছি: তুমি যদি এটি না বোঝ, তাহলে তোমার এটির সম্পর্কে বিচার না করাই ভাল। হয়তো এমন একদিন আসবে যখন সত্য তার সমগ্রতা সহ প্রকাশ পাবে, এবং তখন তুমি বুঝতে পারবে। বিচার না করাই তোমার পক্ষে হিতকর হবে, অথচ তুমি কেবল নিষ্ক্রিয়ভাবে অপেক্ষা করতে পার না। তোমাকে সক্রিয়ভাবে প্রবেশের জন্য প্রয়াসী হতে হবে; তবেই তুমি সত্যি সত্যি প্রবেশ করতে পারবে। তাদের বিদ্রোহপ্রবণতার স্ কারণে, মানুষ সর্বদা ব্যবহারিক ঈশ্বর সম্পর্কে পূর্বধারণা তৈরি করে। এই কারণেই সকল মানুষের জন্য বিনয়ী হতে শেখাটা প্রয়োজন, কারণ ব্যবহারিক ঈশ্বর হলেন মানবজাতির জন্য একটি বিশাল পরীক্ষা। তুমি যদি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে না পার, তাহলে সবকিছু শেষ; তুমি যদি ব্যবহারিক ঈশ্বরের ব্যবহারিকতা সম্পর্কে উপলব্ধি না কর, তাহলে তুমি ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হয়ে উঠতে পারবে না। মানুষ নিখুঁত হইয়ে উঠতে পারে কিনা সে বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল ঈশ্বরের ব্যবহারিকতা সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি। ঈশ্বরের অবতারের পৃথিবীতে আবির্ভাবের ব্যবহারিকতা প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই একটি পরীক্ষা; তুমি যদি এই বিষয়ে দৃঢ় থাকতে সক্ষম হও, তাহলে তুমি এমন একজন হয়ে উঠবে যে ঈশ্বরকে জানে এবং যে তাঁকে প্রকৃতই ভালোবাসে। তুমি যদি এই বিষয়ে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে না পার, এবং তুমি যদি শুধুমাত্র আত্মায় বিশ্বাস কর আর ঈশ্বরের ব্যবহারিকতায় বিশ্বাস করতে অক্ষম হও, তাহলে ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাস যত বড়ই হোক না কেন, তা নিষ্ফল হবে। তুমি যদি দৃশ্যমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে না পার, তাহলে কি তুমি ঈশ্বরের আত্মায় বিশ্বাস করতে পার? তুমি কি কেবল ঈশ্বরকে বোকা বানানোর চেষ্টাই করছ না? তুমি দৃশ্যমান এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ঈশ্বরের সামনে বিনয়ী নও, তাহলে তুমি কি আত্মার সামনে সমর্পণ করতে সক্ষম? আত্মা অদৃশ্য এবং ইন্দ্রিয়াতীত, তাই তুমি যখন বল যে তুমি ঈশ্বরের আত্মার কাছে আত্মসমর্পণ কর, তখন তুমি কি শুধু অর্থহীন কথাই বলছ না? আদেশসমূহ পালনের চাবিকাঠি হল ব্যবহারিক ঈশ্বরকে বোঝা। একবার ব্যবহারিক ঈশ্বর সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলেই, তুমি আদেশসমূহ পালন করতে সক্ষম হবে। এগুলি মান্য করার জন্য দুটি উপাদান রয়েছে: একটি হল তাঁর আত্মার সারসত্যকে আঁকড়ে থাকা, এবং আত্মার সম্মুখে, আত্মার পরীক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হওয়া; অন্যটি হল অবতাররূপী দেহের বিষয়ে প্রকৃত উপলব্ধি লাভে সক্ষম হওয়া, এবং প্রকৃত বিনম্রতা অর্জন করা। দেহরূপী অবতারের কাছেই হোক বা আত্মার কাছে, সর্বদাই ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ এবং শ্রদ্ধার ভাব পোষণ করতে হবে। কেবলমাত্র এই ধরনের কোনো ব্যক্তিই নিখুঁত হয়ে ওঠার যোগ্য। তোমার যদি ব্যবহারিক ঈশ্বরের ব্যবহারিকতা সম্পর্কে একটা উপলব্ধি থাকে—অর্থাৎ, তুমি যদি এই পরীক্ষায় দৃঢ় থাক—তাহলে তোমার পক্ষে কোনো কিছুই অত্যধিক হয়ে উঠবে না।
কিছু কিছু মানুষ বলে, “আদেশসমূহ পালন করা সহজ; ঈশ্বরের সামনে থাকাকালীন তোমাকে শুধুমাত্র অকপটে এবং ভক্তিপূর্ণ ভাবে কথা বলতে হবে, কোন অঙ্গভঙ্গী করলে চলবে না; আদেশ পালন করা হল এটাই।” এটা কি সঠিক? তাহলে, তুমি যদি ঈশ্বরের আড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক কোনো কাজ কর, তাহলে তা কি আদেশ পালন হিসাবে গণ্য হবে? আদেশগুলি পালন করার সঙ্গে কী জড়িত থাকে সে বিষয়ে তোমার অবশ্যই একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা থাকতে হবে। এটা ঈশ্বরের ব্যবহারিকতা সম্পর্কে তোমার প্রকৃত উপলব্ধি আছে কিনা তার সঙ্গে সম্পর্কিত; তোমার যদি ব্যবহারিকতার উপলব্ধি থাকে এবং এই পরীক্ষার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে না যাও, তাহলে তোমার শক্তিশালী সাক্ষ্য রয়েছে বলে গণ্য করা যেতে পারে। ঈশ্বরের জন্য একটি শক্তিশালী সাক্ষ্য বহন করা প্রাথমিকভাবে তোমার ব্যবহারিক ঈশ্বরের বিষয়ে উপলব্ধি আছে কিনা এবং তুমি এই ব্যক্তির সামনে সমপর্ণ করতে সক্ষম কিনা, যিনি কেবল সাধারণই নন, উপরন্তু স্বাভাবিক, এবং এমনকি আমৃত্যু সমর্পিত থাকতে সক্ষম কিনা তার সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি, এই সমপর্ণের মাধ্যমে, তুমি সত্যই ঈশ্বরের সাক্ষ্য প্রদান কর, তার অর্থ হল তুমি ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হয়েছ। যদি তুমি আমৃত্যু সমর্পণ করতে পার এবং, তাঁর সামনে, অভিযোগহীন থাকতে পার, যদি বিচার না কর, কুৎসা রটনা না কর, কোনো পূর্বধারণা না রাখ এবং তোমার কোনো প্রচ্ছন্ন অভিসন্ধি যদি না থাকে, তাহলে এইভাবে ঈশ্বর মহিমা অর্জন করবেন। একজন সাধারণ ব্যক্তির সামনে সমর্পণ করা, যাকে মানুষ অবজ্ঞা করে, এবং কোনো পূর্বধারণা ছাড়াই আমরণ সমর্পিতথাকতে সক্ষম হওয়া—এই হল যথার্থ সাক্ষ্য। ঈশ্বর যে বাস্তবতায় মানুষকে প্রবেশ করাতে চান তা হল এই যে তুমি তাঁর কথা মেনে চলতে, সেগুলিকে কাজে লাগাতে, ব্যবহারিক ঈশ্বরের সামনে মাথা নত করতেও তোমার নিজের কলুষতা জানতে, তাঁর সামনে তোমার হৃদয় উন্মুক্ত করতে এবং পরিশেষে, তাঁর এই বাক্যগুলির মাধ্যমে তাঁর দ্বারা অর্জিত হতে সক্ষম হবে। ঈশ্বর তখনই মহিমা অর্জন করেন যখন এই উচ্চারণগুলি তোমাকে জয় করে এবং তোমাকে সম্পূর্ণরূপে তাঁর অনুগত করে তোলে; এর মাধ্যমে তিনি শয়তানকে লজ্জা দেন এবং তাঁর কাজ সম্পন্ন করেন। যখন ঈশ্বর অবতারের ব্যবহারিকতা বিষয়ে তোমার কোনো পূর্বধারণা থাকে না—অর্থাৎ, যখন তুমি এই পরীক্ষায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছ—তখনই তুমি এই সাক্ষ্যটি ভালভাবে প্রদান করেছ। যদি এমন কোনো দিন আসে যখন ব্যবহারিক ঈশ্বর সম্পর্কে তোমার সম্পূর্ণ উপলব্ধি হবে এবং তুমি পিতরের মতো আমৃত্যু সমর্পিত থাকতে পারবে, তখন তুমি ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত এবং নিঁখুত হয়ে উঠবে। তোমার ধারণাগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন যা কিছু ঈশ্বর করেন তা-ই হল তোমার জন্য একটি পরীক্ষা। যদি ঈশ্বরের কার্য তোমার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হত, তাহলে তোমার কষ্ট পাওয়ার বা পরিমার্জিত হওয়ার প্রয়োজন হত না। তাঁর কাজ এতটা ব্যবহারিক এবং তোমার ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেই তোমার এই ধরনের ধারণাগুলি পরিত্যাগ করার দরকার হয়। এই কারণেই এটি তোমার জন্য একটি পরীক্ষা। ঈশ্বরের ব্যবহারিকতার কারণেই সব মানুষ পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে; তাঁর কাজ ব্যবহারিক, অতিপ্রাকৃত নয়। কোনো পূর্বধারণা ছাড়াই তাঁর ব্যবহারিক বাক্যসমূহ এবং তাঁর ব্যবহারিক উচ্চারণগুলি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার মাধ্যমে, এবং তাঁর কার্য যখন আরো বেশি ব্যবহারিক হয়ে ওঠে তখনও তাঁকে সত্যিকারেরর ভালবাসতে সক্ষম হওয়ার মাধ্যমে, তুমি তাঁর দ্বারা অর্জিত হবে। ঈশ্বরকে জানে এমন একদল মানুষকেই ঈশ্বর অর্জন করবেন; অর্থাৎ, যে মানুষগুলি তাঁর ব্যবহারিকতাকে জানে। অধিকন্তু, তারা হল সেই মানুষ যারা ঈশ্বরের ব্যবহারিক কাজের কাছে আত্মসমর্পণ করতে সক্ষম।
ঈশ্বরের দেহরূপে অবস্থানের সময়কালে, তিনি মানুষের কাছ থেকে যে সমর্পণ চান তার সাথে বিচার করা বা প্রতিরোধ করা থেকে বিরত থাকা সম্পর্কিত নয়, যেমনটি তারা কল্পনা করে থাকে; বরং, তিনি চান যে মানুষ তাঁর বাক্যসমূহকে তাদের জীবনযাপনের নীতি হিসাবে এবং তাদের বেঁচে থাকার ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করুক, তারা তাঁর বাক্যের সারসত্যকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবে প্রয়োগ করুক এবং তারা সম্পূর্ণরূপে তাঁর ইচ্ছাকে পূরণ করুক। মানুষের ঈশ্বরের অবতাররূপের কাছে সমর্পণ করার প্রয়োজনের একটি দিক তাঁর বাক্যসমূহ বাস্তবে প্রয়োগ করাকে নির্দেশ করে, সেখানে আরেকটি দিক তাঁর স্বাভাবিকতা এবং ব্যবহারিকতার প্রতি সমর্পণ করতে সক্ষম হওয়াকে নির্দেশ করে। এই দুটি দিককেই চরম পর্যায়ের হতে হবে। যারা এই উভয় দিকই অর্জন করতে পারে তারাই তাদের অন্তরে ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা পোষণ করে। তারা সকলেই ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত মানুষ, এবং তারা সকলেই ঈশ্বরকে তেমনই ভালবাসে যেমন তারা নিজেদের জীবনকে ভালবাসে। ঈশ্বরের অবতার তাঁর কার্যে স্বাভাবিক ও ব্যবহারিক মানবতা বহন করেন। এইভাবে, স্বাভাবিক এবং ব্যবহারিক উভয় প্রকারের মানবতা দিয়ে নির্মিত তার বাহ্যিক খোলক মানুষের কাছে একটি বিশাল পরীক্ষা হয়ে ওঠে; এটি তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু, ঈশ্বরের স্বাভাবিকতা এবং ব্যবহারিকতা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তিনি একটি সমাধান খোঁজার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর স্বাভাবিক মানবতার বাহ্যিক খোলক থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। এর কারণ, যতই হোক না কেন, তিনি হলেন সেই দেহরূপধারী ঈশ্বর, স্বর্গের আত্মার ঈশ্বর নন। তিনি সেই ঈশ্বর নন যাকে মানুষ দেখতে পায় না, বরং সেই ঈশ্বর যিনি সৃষ্টির এক সদস্যের আবরণে আচ্ছাদিত। তাই, নিজেকে তাঁর স্বাভাবিক মানবতার খোলক থেকে মুক্ত করা কোনভাবেই সহজ হবে না। অতএব, যাই হোক না কেন, তিনি এখনও সেই কাজই করেন যা তিনি দেহগত দৃষ্টিকোণ থেকে করতে চান। এই কাজটিই হল স্বাভাবিক এবং ব্যবহারিক ঈশ্বরের অভিব্যক্তি, তাই মানুষের সমর্পণ না করাটা কীভাবে উচিৎ কাজ হতে পারে? ঈশ্বরের কাজ বিষয়ে মানুষের কীই বা করার থাকতে পারে? তিনি যা করতে চান তাই করেন; তিনি যাতে খুশি হন সেটাই সঠিক। মানুষ যদি সমর্পণ না করে, তাহলে তাদের আর কী যুক্তিযুক্ত পরিকল্পনা থাকতে পারে? এখনও পর্যন্ত, শুধুমাত্র সমর্পণ করাটাই মানুষকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে; কারোরই আর অন্য কোন বুদ্ধিদীপ্ত সংকল্পনা নেই। ঈশ্বর যদি মানুষকে পরীক্ষা করতে চান, তাহলে মানুষ সেই ব্যাপারে কী করতে পারে? তবে, এই সব কিছুই কিন্তু স্বর্গস্থ ঈশ্বর চিন্তা করেননি; এসব ছিল ঈশ্বরের অবতাররূপের চিন্তার ফসল। তিনি এটি করতে চান, তাই কেউ এর পরিবর্তন করতে পারে না। স্বর্গের ঈশ্বর ঈশ্বরের অবতার যা করেন তাতে হস্তক্ষেপ করেন না, তাই মানুষের কি এই কারণেই আরও বেশি করে তাঁর কাছে সমর্পণ করা উচিত নয়? যদিও তিনি ব্যবহারিক এবং স্বাভাবিক দুই-ই, তবু তিনি সম্পূর্ণত দেহরূপী ঈশ্বর। তাঁর নিজের ধারণার উপর ভিত্তি করে, তিনি যা চান তাই করেন। স্বর্গের ঈশ্বর তাঁর হাতে সমস্ত কাজ অর্পণ করেছেন; তিনি যা করেন তার প্রতি তোমাকে সমর্পণ করতেই হবে। যদিও তাঁর মানবিকতা আছে এবং তিনি খুবই স্বাভাবিক, তিনি সুচিন্তিতভাবে এই সমস্ত ব্যবস্থা করেছেন, তাহলে মানুষ কীভাবে অননুমোদনের মনোভাব নিয়ে চোখ বড় বড় করে তীব্র দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতে পারে? তিনি স্বাভাবিক হতে চান, তাই তিনি স্বাভাবিক। তিনি মানবতার মধ্যে থাকতে চান, তাই তিনি মানবতার মাঝে বাস করেন। তিনি দেবত্বের মধ্যে থাকতে চান, তাই তিনি দেবত্বের মধ্যে বাস করেন। মানুষ যেভাবে খুশি দেখতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর সর্বদা ঈশ্বরই থাকবেন এবং মানুষ সর্বদা মানুষই থাকবে। তার সারসত্য কিছু ছোটখাট খুঁটিনাটির কারণে অস্বীকার করা যায় না, বা কোনো সামান্য কারণে তাকে ঈশ্বরের “ছবির” বাইরে ঠেলে বের করে দেওয়া যায় না। মানুষের মনুষ্য সত্তার স্বাধীনতা আছে, আর ঈশ্বরের ঐশ্বরিক মর্যাদা আছে; এগুলি একে অপরকে ব্যাহত করে না। মানুষ কি ঈশ্বরকে একটু স্বাধীনতা দিতে পারে না? তারা কি ঈশ্বরের আরেকটু বেশি খাপছাড়া হওয়া মেনে নিতে পারে না? ঈশ্বরের প্রতি এত কঠোর হয়ো না! প্রত্যেকেরই একে অপরের প্রতি সহনশীলতা থাকা উচিত; তাহলে কি সবকিছু মিটে যাবে না? কোন বিচ্ছিন্নতাবোধ কি তখনও থাকবে? এমন তুচ্ছ বিষয় যদি কেউ সহ্য করতে না পারে, তাহলে তারা কীভাবে “একজন প্রধান মন্ত্রীর হৃদয় নৌকা চালনার পক্ষে যথেষ্ট বড়”-র মত কথা বলতে পারে? তারা কীভাবে একজন সত্যিকারের মানুষ হতে পারে? ঈশ্বর মানুষের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করেন না, বরং মানবজাতিই ঈশ্বরের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে। তারা সর্বদা তিলকে তাল করে সবকিছু পরিচালনা করে। কোথাও কিছু না হলেও তারা কিছু একটা বানিয়ে ছাড়ে, এবং এর কোনো দরকারই নেই! ঈশ্বর যখন স্বাভাবিক ও ব্যবহারিক মানবতার মধ্যে কাজ করেন, তখন তিনি যা করেন তা মানবজাতির কাজ নয়, ঈশ্বরের কাজ। তবে, মানুষ তাঁর কাজের সারসত্য দেখতে পায় না; তারা সবসময় শুধু তাঁর মনুষ্যত্বের বাহ্যিক খোলসটাই দেখতে পায়। তারা এত বড় কাজ দেখেনি, তবুও তারা তাঁর সাধারণ এবং স্বাভাবিক মনুষ্যত্বকে দেখার জন্য জোরাজুরি করে এবং বিষয়টির ইতি টানতে চায় না। এটাকে কীভাবে ঈশ্বরের সম্মুখে সমর্পণ করা বলা যায়? স্বর্গের ঈশ্বর এখন পৃথিবীতে ঈশ্বরে “পরিণত হয়েছেন” এবং পৃথিবীর ঈশ্বর এখন স্বর্গের ঈশ্বর। তাদের বাহ্যিক চেহারা একই কিনা তা বিবেচ্য নয়, ঠিক কীভাবে তাঁরা কাজ করেন তাও বিবেচ্য নয়। অন্তিমে, যিনি ঈশ্বরের নিজের কাজ করেন তিনি নিজেই ঈশ্বর। তুমি চাও বা না চাও তোমাকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে—এটি এমন কোনো বিষয় নয় যেখানে তোমার পছন্দ-অপছন্দ খাটবে! মানুষকে অবশ্যই ঈশ্বরকে মেনে চলতে হবে, এবং মানুষকে সামান্যতম ভণ্ডামি ছাড়াই ঈশ্বরের কাছে চূড়ান্তভাবে সমর্পণ করতেই হবে।
ঈশ্বরের অবতার আজ যে কয়জন মানুষকে অর্জন করতে চান তারা তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের কেবলমাত্র তাঁর কাজের প্রতি সমর্পিত হতে হবে, এবং স্বর্গের ঈশ্বরের বিষয়ে চিন্তাভাবনার মাধ্যমে নিজেদের ক্রমাগত উদ্বিগ্ন রাখা, অস্পষ্টতায় থাকা আর ঈশ্বরের দেহরূপের জন্য সবকিছু আরও দুরূহ করে তোলা বন্ধ করতে হবে। যারা তাঁর বাক্যসমূহ সম্পূর্ণরূপে শ্রবণ করে এবং তাঁর ব্যবস্থাপনার নিকট আত্মসমর্পণ করে তারাই তাঁকে মান্য করতে সক্ষম। এই ধরনের মানুষ স্বর্গের ঈশ্বর সত্যই কেমন হতে পারেন বা স্বর্গের ঈশ্বর বর্তমানে মানবজাতির মধ্যে কী ধরনের কাজ সম্পাদন করছেন তা নিয়ে মোটেও চিন্তা করে না; তারা পৃথিবীর ঈশ্বরের কাছে তাদের হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে এবং তারা তাদের সমস্ত স্বত্বাকে তাঁর সামনে স্থাপন করে। তারা কখনোই তাদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে না, কিংবা তারা কখনোই দেহরূপ ঈশ্বরের স্বাভাবিকতা ও ব্যবহারিকতা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বাকবিতণ্ডা করে না। যারা দেহরূপ ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করে তারা তাঁর দ্বারা নিখুঁত হয়ে উঠতে পারে। যারা স্বর্গের ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তাদের কিছুই লাভ হবে না। কারণ যিনি মানুষকে প্রতিশ্রুতি ও আশীর্বাদ প্রদান করেন, তিনি স্বর্গের ঈশ্বর নন, বরং পৃথিবীর ঈশ্বর। মানুষের সর্বদা স্বর্গের ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করা এবং পৃথিবীর ঈশ্বরকে একজন নিছকই গড়পড়তা ব্যক্তি হিসাবে দেখা উচিৎ নয়; এটি অন্যায্য। স্বর্গের ঈশ্বর মহান ও বিস্ময়কর এবং তিনি অবিশ্বাস্য জ্ঞানের অধিকারী, তবুও এর আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই; পৃথিবীর ঈশ্বর খুব গড়পড়তা ও নগণ্য, এবং একই সঙ্গে অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাঁর অসাধারণ একটি মনন নেই বা তিনি পৃথিবী-কাঁপানো কাজকর্ম করেন না; তিনি শুধুমাত্র খুব স্বাভাবিক এবং ব্যবহারিক রীতিতে কার্য সম্পাদন করেন ও কথা বলেন। যদিও তিনি বজ্রপাতের মাধ্যমে কথা বলেন না বা বাতাস এবং বৃষ্টিকে আহ্বান করেন না, তবুও তিনি সত্যই স্বর্গের ঈশ্বরের অবতার, এবং তিনি সত্যিই মানুষের মধ্যে বসবাসকারী ঈশ্বর। মানুষ যাকে বুঝতে সক্ষম এবং যে তাদের নিজস্ব কল্পনার সাথে মিলে যায় তাকে ঈশ্বর হিসাবে বিবর্ধিত করা এবং যাকে তারা গ্রহণ করতে পারে না ও আদৌ কল্পনা করতে পারে না তাকে হীন বলে গণ্য করা মানুষের উচিত কাজ নয়। এই সবকিছু মানুষের বিদ্রোহী মনোভাব থেকে আসে; এটিই হল ঈশ্বরের প্রতি মানবজাতির প্রতিরোধের যাবতীয় উৎস।