ইসরায়েলীদের মতোই সেবা করো
আজকালকার দিনে, অনেক লোকই, অন্যান্যদের সাথে সমন্বয়ের সময়, শিক্ষণীয় বিষয়ে মনোযোগ দেয় না। আমি আবিষ্কার করেছি যে, তোমাদের অনেকেই অন্যান্যদের সাথে সমন্বয়ের সময় কোনো শিক্ষাই লাভ করতে পারো না; তোমাদের অধিকাংশই নিজস্ব ধারণায় আটকে থাকো। গির্জায় কাজ করার সময়, তুমি তোমার কথা ব্যক্ত কর, অন্যান্যরা তাদের কথা ব্যক্ত করে, এবং একে অপরের সাথে কোনো সম্পর্কই থাকে না; আসলে তোমরা একেবারেই সহযোগিতা করো না। তোমরা শুধুমাত্র নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি ব্যক্ত করার বিষয়ে, অথবা নিজেদের অন্তঃস্থ “দায়ভার” মুক্ত করার বিষয়ে, এতই নিমজ্জিত থাকো যে, ন্যূনতম উপায়েও জীবনের অনুসন্ধান করো না। তুমি কেবল বেপরোয়াভাবেই কাজ করে যাও, সর্বদা বিশ্বাস করো, যে যাই করুক বা বলুক না কেন, তোমার নিজের পথেই চলা উচিত; তুমি ভাবো যে, অন্যান্যদের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, পবিত্র আত্মা যেভাবে নির্দেশিত করে, সেই ভাবেই তোমার আলাপ-আলোচনা করা উচিত। তুমি যেমন অন্যান্যদের ক্ষমতা আবিষ্কার করতে অপারগ, তেমনই নিজেদের পরীক্ষা করতেও অক্ষম। তোমাদের কোনো বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা সত্যিই বিচ্যুতিপূর্ণ এবং ভ্রান্ত। বলা যায় যে, পুরনো রোগ আবার মাথা চাড়া দেওয়ার মতোই, এখনও তোমাদের মধ্যে বহুল পরিমাণে নিজেদের নৈতিকতার বিষয়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হয়। সম্পূর্ণ উন্মুক্ততা অর্জন করা যেতে পারে, এমন উপায়ে তোমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করো না। উদাহরণস্বরূপ, নির্দিষ্ট গির্জায় কাজ করে তুমি কী ধরনের ফলাফল অর্জন করেছ, বা তোমার অভ্যন্তরীণ অবস্থার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি কী, ইত্যাদির বিষয়ে তুমি কখনোই আলোচনা করো না। নিজের ধারণা বর্জন করা বা নিজেদের পরিত্যাগ করার মতো অনুশীলনে তোমার কোনোরকম নিয়োগ থাকে না। নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীরা কেবলমাত্র নিজেদের ভাই-বোনেদের নেতিবাচক হওয়া থেকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, এবং কীভাবে তাদেরকে জোরালোভাবে অনুসরণ করানো যায়, সেই বিষয়েই ভাবনাচিন্তা করে। তথাপি, তোমরা সকলেই মনে করো যে, কেবলমাত্র জোরালোভাবে অনুসরণ করাই যথেষ্ট, এবং মৌলিকভাবে, নিজেকে জানা এবং নিজেকে পরিত্যাগ করার অর্থ কী, সে বিষয়ে তোমার কোনও উপলব্ধি নেই, অন্যদের সাথে সমন্বয় করে সেবা করার অর্থ তো তোমরা আরোই কম বোঝো। তুমি কেবলমাত্র নিজে থেকে ঈশ্বরকে তাঁর ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার ইচ্ছা থাকার কথা ভাবো, পিতরের শৈলীতে জীবনযাপনের ইচ্ছার বিষয়ে ভাবো। এসব বিষয় ছাড়া, তুমি আর কিছুই ভাবো না। এমনকি তুমি একথাও বলো যে, অন্যান্যরা যাই করুক না কেন, তুমি অন্ধভাবে নিজেকে সমর্পণ করবে না, এবং অন্যান্যরা যেমনই হোক না কেন, তুমি নিজেই ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁতকরণের অন্বেষণ করবে, আর তেমনটাই হবে যথেষ্ট। তবে, সত্য হল এই যে, তোমার ইচ্ছা বাস্তবে কোনোভাবেই সাকার অভিব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ পায় নি। তোমরা আজকাল যে আচরণ করো, এগুলো সবই কি সেই ধরনের আচরণ নয়? তোমরা প্রত্যেকে নিজেদের অন্তর্দৃষ্টি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকো, আর সকলেই নিখুঁত হতে চাও। আমি দেখি যে, তোমরা এত দীর্ঘ সময় ধরে সেবা করেও বিশেষ অগ্রগতি করতে পারো নি; বিশেষ করে, একসাথে মিলেমিশে কাজ করার বিষয়ে তোমরা একেবারে কোনোকিছুই অর্জন করতে পারো নি! গির্জায় যাওয়ার সময়, তুমি তোমার নিজস্ব উপায়ে বার্তালাপ করো, অন্যরা তাদের মতো করে বার্তালাপ করে। সুসমন্বয় কদাচিৎই ঘটে, আর এই বিষয়টা তোমার অধস্তন অনুগামীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সত্য। অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে খুব কম লোকই ঈশ্বরের সেবা করা বলতে কী বোঝায়, বা কীভাবে ঈশ্বরের সেবা করা উচিত—তা উপলব্ধি করো। তোমরা ছন্নমতি এবং এই ধরনের শিক্ষাকে তুচ্ছ বিষয় বলে বিবেচনা করো। এমনকি অনেক লোক রয়েছে, যারা শুধু যে সত্যের এই দিকটি অনুশীলন করতে ব্যর্থ হয় তা-ই নয়, বরং জেনেশুনেও ভুল করে। এমনকি যারা বহু বছর ধরে সেবা করেছে, তারাও একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র করে, এবং একে অপরের প্রতি ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব পোষণ করে; এটা এমন, যেন প্রত্যেক মানুষ রয়েছে তার নিজের জন্যই, এবং তারা বিন্দুমাত্রও সহযোগিতা করে না। এই সব বিষয় কি তোমাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতার প্রতিনিধিত্ব করে ন? তোমাদের মতো লোক, যারা দৈনন্দিন ভিত্তিতে একত্রে সেবা করছ, তারা ঠিক ইসরায়েলীদের মতো, যারা প্রতিদিন মন্দিরে সরাসরি স্বয়ং ঈশ্বরের সেবা করত। তোমরা, যারা ঈশ্বরের সেবা করো, তাদের কীভাবে সমন্বয় করতে হবে বা সেবা করতে হবে—সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই, এমনটা কীভাবে হতে পারে?
অতীতে, ইসরায়েলীরা সরাসরি মন্দিরেই যিহোবার সেবা করত, আর তাদের পরিচয় ছিল যাজকের। (অবশ্যই, সকলেই যাজক ছিল না; শুধুমাত্র যারা মন্দিরের মধ্যে যিহোবার সেবা করত, তাদেরই এই পরিচয় থাকত)। তারা যিহোবার দ্বারা অর্পিত মুকুট পরিধান করত (অর্থাৎ, তারা এই মুকুট যিহোবার প্রয়োজনীয়তা মেনে তৈরি করেছিল; এমনটা নয় যে যিহোবা প্রত্যক্ষভাবে তাদের এই মুকুটগুলি দিয়েছিলেন)। এছাড়াও তারা যিহোবার দ্বারা অর্পিত যাজকের পোশাক পরে, নগ্নপদে সরাসরি মন্দিরের মধ্যে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত তাঁর সেবা করত। যিহোবার প্রতি তাদের সেবা এলোমেলো ছিল না, আর এতে অন্ধভাবে ছুটে চলাও অন্তর্ভুক্ত ছিল না; পরিবর্তে, তাঁর প্রত্যক্ষ সেবাকারীদের পক্ষে অলঙ্ঘনীয় সমস্ত নিয়ম অনুসারেই তা করা হয়েছিল। তাদের সকলকে এই বিধানগুলি মেনে চলতে হত; অন্যথায়, তাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যেত। তাদের মধ্যে কেউ মন্দিরের নিয়ম ভঙ্গ করলে—অর্থাৎ, কেউ যিহোবার আদেশ অমান্য করলে—সেই ব্যক্তির সাথে যিহোবার জারি করা আদেশ অনুযায়ী আচরণ করতে হত, এবং কারোর এতে আপত্তি করার বা অধর্মকারীকে রক্ষা করার অনুমতি ছিল না। তারা যত বছরই ঈশ্বরের সেবা করুক না কেন, তাদের সকলকেই এই নিয়ম মেনে চলতে হত। এই কারণেই, যিহোবা এই যাজকদের প্রতি কোনো বিশেষ আচরণ না করলেও, অনেক যাজকই যাজকের পোশাক পরে সারা বছর ধরে ক্রমাগত এই পদ্ধতিতে যিহোবার সেবা করত। এমনকি তারা এমনকি পূজাবেদীর সামনে এবং মন্দিরের অভ্যন্তরে তাদের পুরো জীবনটাই উৎসর্গ করে দিত। এটি ছিল তাদের আনুগত্য ও সমর্পণের বহিঃপ্রকাশ। যিহোবা যে তাদের প্রতি এই ধরনের আশীর্বাদ বর্ষণ করেছিলেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই; একমাত্র তাদের আনুগত্যের কারণেই তারা সাহায্য লাভ করেছিল এবং যিহোবার সমস্ত কাজ প্রত্যক্ষ করেছিল। অতীতে, যিহোবা ইসরায়েলে তাঁর মনোনীত লোকেদের মধ্যে কাজ করার সময়, তিনি তাদের উপর বেশ কঠিন দাবি আরোপিত করেছিলেন। তারা সবাই ছিল খুব আজ্ঞাকারী এবং বিধানের দ্বারা সীমাবদ্ধ; এই বিধানগুলি তাদের যিহোবাকে সম্মান করার ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখার কাজ করেছিল। এগুলো সবই ছিল যিহোবার প্রশাসনিক ফরমান। এই যাজকদের মধ্যে যদি কেউ বিশ্রামবার পালন না করত বা যিহোবার আদেশ লঙ্ঘন করত, আর সেগুলি যদি সাধারণ লোকেরা জানতে পারত, তাহলে সেই ব্যক্তিকে অবিলম্বে পূজাবেদীর সামনে নিয়ে যাওয়া হত এবং পাথর মেরে হত্যা করা হত। সেই মৃতদেহগুলিকে মন্দিরের মধ্যে বা তার চারপাশে রাখারও অনুমতি ছিল না; যিহোবা সেই অনুমতি দেন নি। কেউ এমন কাজ করলে, তার সাথে “ধর্মবিগর্হিত উৎসর্গ”-কারী লোকের মতো আচরণ করা হত, এবং তাকে বিশাল গহ্বরে মৃত্যুর মুখে নিক্ষেপ করা হত। অবশ্যই, এরা সকলেই মৃত্যুবরণ করত, কেউই রেহাই পেত না। এমনকি এদের মধ্যে “ধর্মবিগর্হিত অগ্নিসংযোগকারী” লোকেরাও থাকত; অন্যভাবে বললে, যিহোবার নির্ধারিত দিনগুলিতে যারা উৎসর্গ করত না, তারা তাদের উৎসর্গের যে সামগ্রী বেদীতে রাখার অনুমতি ছিল না, সেগুলি সহ তাঁর আগুনে ভস্ম হয়ে যেত। যাজকদের প্রতি এইসব দাবি ছিল: আগে পা না ধুয়ে, তাদের মন্দির বা মন্দির সংলগ্ন চত্বরেও প্রবেশের অনুমতি ছিল না; যাজকের পোশাক না পরলে; যাজকের মুকুট না পরা থাকলে; মৃতদেহ ছুঁয়ে ফেললে; কোনো অধার্মিক ব্যক্তির হাত স্পর্শ করার পরে হাত না ধুয়ে তারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারত না; এবং নারীসঙ্গে অপবিত্র হওয়ার পর (তিন মাসের জন্য, চিরতরের জন্য নয়) তারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারত না, তাদের যিহোবার মুখ দেখার অনুমতিও দেওয়া হত না। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলে—অর্থাৎ, তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরেই কেবল তাদের শুদ্ধ যাজকের পোশাক পরার অনুমতি মিলত—তারপর মন্দিরে প্রবেশ করার আগে এবং যিহোবার মুখ দর্শনের আগে তাদের সাত দিন মন্দির চত্বরে সেবা দান করতে হত। যিহোবার মন্দিরকে অপবিত্র হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে, তাদের এই যাজকের পোশাক কখনোই বাইরে নয়, শুধুমাত্র মন্দিরের মধ্যেই পরার অনুমতি ছিল। যাজকেদের সকলকেই যিহোবার বিধান লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের যিহোবার পূজাবেদীর সামনে উপস্থিত করতে হত, যেখানে তারা সাধারণ মানুষের হাতে নিহত হত; অন্যথায়, অপরাধ প্রত্যক্ষকারী যাজকের উপরেই আগুন বর্ষিত হত। এইভাবে, তারা যিহোবার প্রতি অব্যর্থভাবে অনুগত ছিল, তার কারণ, তাঁর বিধান তাদের পক্ষে অত্যন্ত কঠোর ছিল, এবং তারা একেবারে কখনোই লঘুচিত্তে তাঁর প্রশাসনিক ফরমানসমূহ লঙ্ঘন করার সাহস করত না। ইসরায়েলীরা যিহোবার প্রতি অনুগত ছিল, কারণ তারা তাঁর শিখা দেখেছিল, যে হাত দিয়ে তিনি লোকেদের শাস্তি দিতেন তা প্রত্যক্ষ করেছিল, এছাড়াও তারা সত্যিই তাঁর প্রতি এমন সম্ভ্রম পোষণ করেছিল। সুতরাং, তারা কেবল যিহোবার শিখাই লাভ করেনি, বরং তাঁর যত্ন, সুরক্ষা এবং আশীর্বাদও লাভ করেছিল। তারা তাদের সমস্ত কাজে যিহোবার বাক্য মেনে চলেছিল, কেউই অমান্য করে নি—এমনই ছিল তাদের আনুগত্য। কোনোরকম আনুগত্যহীনতা দেখা গেলেও অন্যান্যরা তখনও যিহোবার বাক্যই মেনে চলত, অর্থাৎ যিহোবার বিরুদ্ধাচরণকারীকে তাঁর থেকে একেবারেই আড়াল না করে তাকে হত্যা করত। যারা বিশ্রামবার লঙ্ঘন করত, যারা অশ্লীলতার দোষে দোষী এবং যারা যিহোবাক প্রদত্ত উৎসর্গ চুরি করত, তাদের বিশেষভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়া হত। বিশ্রামবারের লঙ্ঘনকারীদের তাদের (সাধারণ মানুষদের) দ্বারা পাথর মেরে হত্যা করা হত, বা চাবুক মেরে হত্যা করা হত, এতে কোনো ব্যতিক্রম হত না। ব্যভিচারী ব্যক্তি—এমনকি যারা আকর্ষণীয় নারীদের প্রতি লুব্ধ হয়েছিল বা দুষ্ট নারীদের দেখে কুৎসিত চিন্তা করেছিল, অথবা যুবতী নারীদের দেখে কামাতুর হয়ে উঠেছিল—তাদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। কোনো যুবতী মহিলা আবরণ বা ঘোমটা না পরে, কোনো পুরুষকে অবৈধ আচরণে প্রলুব্ধ করলে, সেই মহিলাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। এই ধরণের বিধান লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি যাজক হলে (এমন কেউ, যে যে মন্দিরের সেবাকারী), তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হত বা ফাঁসি দেওয়া হত। এই ধরনের কাউকে বাঁচার অনুমতি দেওয়া হত না, এবং এদের কেউই যিহোবার থেকে অনুগ্রহ লাভ করত না। এই ধরনের লোকেদের আত্মীয়রা, তার মৃত্যুর পর তিন বছর পূজাবেদীর সামনে যিহোবার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার অনুমতি পেত না, অথবা তারা সাধারণ লোকেদের উদ্দেশ্যে যিহোবার দেওয়া উৎসর্গের অংশীদারও হতে পারত না। সেই সময়কাল পেরিয়ে যাওয়ার পরেই তারা যিহোবার পূজাবেদীতে উচ্চ মানের গবাদি পশু বা মেষ উৎসর্গ করতে পারত। অন্য কোনো অধর্ম সংঘটন করলে, তাদেরকে, যিহোবার অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য, তাঁর সামনে তিন দিন উপবাস করতে হত। শুধুমাত্র যিহোবার বিধান এত কঠোর এবং কড়া ছিল বলেই যে তারা তাঁর উপাসনা করেছিল, এমনটা নয়; তারা তাঁর অনুগ্রহ এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যের কারণেই তা করেছিল। তাই, আজ অবধি, তারা সেবার ক্ষেত্রে একইরকম অনুগত থেকে গিয়েছে, এবং কখনোই যিহোবার সামনে প্রার্থনা করা থেকে পিছপা হয় নি। বর্তমানে, ইসরায়েলের লোকেরা এখনও তাঁর যত্ন এবং সুরক্ষা লাভ করে, তিনি এখনও তাদের অনুগ্রহ করেন, সর্বদা তাদের সাথে থাকেন। তারা সকলেই জানে কীভাবে তাদের যিহোবাকে শ্রদ্ধা করা উচিত, কীভাবে তাঁর সেবা করা উচিত, তাঁর যত্ন ও সুরক্ষা পাওয়ার জন্য কীভাবে কাজ করা উচিত; কারণ তারা সকলেই অন্তর থেকে তাঁকে সম্মান করে। কেবলমাত্র সম্ভ্রমই হল তাদের সকল সেবার সাফল্যের গোপন রহস্য। তাহলে, বর্তমানে তোমরা কেমন? ইসরায়েলের লোকদের সাথে তোমার কোনও সাদৃশ্য রয়েছে কি? তুমি কি মনে করো যে, বর্তমানে সেবার প্রক্রিয়াটি কোনও মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বকে অনুসরণের সামিল? তোমাদের মধ্যে কণামাত্রও সম্ভ্রম বা আনুগত্য নেই। তোমরা যথেষ্ট পরিমাণে অনুগ্রহ লাভ করো, আর প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরকে সেবা করার কারণে, তোমরা সকলেই ইসরায়েলী যাজকদের সমতুল্য। যদিও তোমরা মন্দিরে প্রবেশ করো না, তবু তোমাদের প্রাপ্তি বা দর্শনের পরিমাণ মন্দিরে যিহোবার সেবাকারী যাজকদের থেকে অনেক বেশি। তথাপি, তুমি তাদের থেকে অনেক বেশিবার বিদ্রোহ বা প্রতিরোধ করো। তোমাদের সম্ভ্রমের পরিমাণ তিলমাত্র, আর তারই ফলস্বরূপ, তুমি স্বল্প অনুগ্রহই লাভ করো। তোমরা স্বল্প নিবেদন করলেও, তোমাদের প্রাপ্তির পরিমাণ ইসরায়েলীদের সর্বোচ্চ প্রাপ্তির থেকেও অনেক বেশি। এই সবের মধ্যে, তোমাদের সাথে কি সদয় আচরণ করা হয় না? ইসরায়েলের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছিল, তখন নিজেদের ইচ্ছামত যিহোবাকে বিচার করার সাহস লোকেদের ছিল না। তবে, তোমাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন? আমি বর্তমানে তোমাদের জয় করার জন্য যে কাজটি করছি, এটা যদি তার স্বার্থে না হত, তাহলে তোমরা যে নিদারুণভাবে আমার নামের অপমান করেছ, তা আমি কীভাবে সহ্য করতে পারতাম? তোমরা যে যুগে বাস করো, তা যদি বিধানের যুগ হত, তবে এহেন কথাবার্তা ও কাজের জন্য তোমাদের একজনও জীবিত থাকত না। তোমাদের সম্ভ্রম কণামাত্র! তোমাদের উপর বহুল পরিমাণে আনুকূল্য বর্ষণ না করার জন্য তোমরা সর্বদা আমাকে দোষারোপ করছ, এমনকি তোমরা এই দাবিও করো যে, আমি তোমাদের পর্যাপ্ত আশীর্বাদের বাক্য প্রদান করি না, এবং যে, তোমাদের জন্য আমার কাছে কেবল অভিশাপই রয়েছে। আমার প্রতি তোমাদের মধ্যে এত অল্প সম্ভ্রম থাকার পরে তোমাদের পক্ষে যে আমার আশীর্বাদ গ্রহণ করা অসম্ভব—তা কি তোমরা জানো না? তোমরা কি জানো না যে, তোমাদের সেবার নিদারুণ দুরবস্থার জন্যেই আমি ক্রমাগত তোমাদের অভিশাপ এবং বিচার দান করেছি? তোমাদের সকলেরই কি মনে হয় যে তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে? একদল লোক, যারা বিদ্রোহী এবং যারা সমর্পণ করে না, তাদের উপর আমি কীভাবে আমার আশীর্বাদ বর্ষণ করব? যারা আমার নামের অমর্যাদা করে, আমি তাদের কীভাবে নিশ্চিন্তে আমার অনুগ্রহ প্রদান করতে পারি? তোমাদের সাথে ইতিমধ্যেই প্রচণ্ড উদার আচরণ করা হয়েছে। ইসরায়েলীরা যদি বর্তমানের তোমাদের মত বিদ্রোহী হত, তাহলে আমি তাদের অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন করে দিতাম। তবুও, আমি তোমাদের সাথে সহনশীল আচরণই করি। এটা কি বদান্যতা নয়? তোমরা কি এর থেকেও বেশি আশীর্বাদ চাও? যিহোবা শুধুমাত্র তাদেরই আশীর্বাদ করেন, যারা তাঁকে সম্মান করে। যারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তিনি তাদের শাস্তি দেন, তাদের কাউকেই কখনো ক্ষমা করেন না। বর্তমানের তোমরা, যারা জানো না কীভাবে সেবা করতে হয়, হৃদয়ের অভিমূখ সম্পূর্ণ বিপরীত করার জন্য তোমাদেরই কি আরো বেশি করে শাস্তি ও বিচারের প্রয়োজন নয়? এই ধরনের বিচার ও শাস্তিই কি তোমাদের দেওয়ার পক্ষে শ্রেষ্ঠ ধরনের আশীর্বাদ নয়? এগুলিই কি তোমার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সুরক্ষা নয়? এগুলি ব্যতীত, তোমাদের মধ্যে একজনও কি যিহোবার অগ্নি সহ্য করতে পারতে? তোমরা সত্যিই ইসরায়েলীদের মতো অনুগত হয়ে সেবা করতে পারলে, অনুগ্রহ কি তোমাদেরও সর্বক্ষণের সঙ্গী হত না? তোমরা কি মাঝেমধ্যেই আনন্দ এবং যথেষ্ট আনুকূল্য লাভ করতে না? কীভাবে সেবা করতে হয়, তা কি তোমাদের সকলের জানা রয়েছে?
তোমাদের থেকে বর্তমানে যা চাওয়া হয়—অর্থাৎ, একসাথে মিলেমিশে কাজ করা—তা যিহোবা ইসরায়েলীদের থেকে যে সেবা চেয়েছিলেন, তারই অনুরূপ: অন্যথায়, সেবা করা বন্ধই করে দাও। যেহেতু তোমরাই ঈশ্বরকে সরাসরি সেবা করো, তাই সেবার ক্ষেত্রে তোমাদের ন্যূনতম আনুগত্য ও সমর্পণের সক্ষমতা থাকা উচিত, এবং অবশ্যই ব্যবহারিক উপায়ে শিক্ষাগ্রহণে সক্ষম হওয়া উচিত। বিশেষত, যারা গির্জায় কাজ করো, তাদের ক্ষেত্রে, তোমাদের অধস্তন ভাই ও বোনেরা কি তোমাদের সাথে মোকাবিলা করার সাহস করবে? কেউ কি মুখের ওপর তোমার ত্রুটি উল্লেখ করার সাহস করবে? তোমরা সকলের থেকে ঊর্ধ্বে অবস্থান করো; ঠিক রাজাদের মতোই রাজত্ব করো! তোমরা না করো পড়াশুনা অথবা এই ধরনের ব্যবহারিক পাঠে প্রবেশ, তা সত্ত্বেও এখনও তোমরা ঈশ্বরের সেবা করার কথা বলো! বর্তমানে, তোমাকে বেশ কিছু গির্জায় নেতৃত্বদান করতে বলা হয়, কিন্তু তুমি যে কেবল নিজেকে সমর্পণ করো না তা-ই নয়, বরং নিজের ধারণা এবং মতামত আঁকড়ে ধরে থাকো, এই ধরনের কথা বলতে থাকো, “আমার মনে হয় এই জিনিসটা এইভাবে করা উচিত, কারণ ঈশ্বর বলেছেন আমাদের অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত নয় এবং বর্তমানে আমাদের অন্ধভাবে সমর্পণ করাও উচিত নয়।” সুতরাং, তোমরা প্রত্যেকে নিজেদের মতামত আঁকড়ে থাকো, এবং কেউই কাউকে মান্য করো না। তোমার প্রদত্ত সেবা যে অচলাবস্থায় রয়েছে, তা স্পষ্টত জানা সত্ত্বেও তুমি এখনও বলো, “আমি যেভাবে দেখি, তাতে আমার পথটাও কিন্তু খুব বেশি তফাতে নয়। যেকোনো ক্ষেত্রেই, আমাদের প্রত্যেকেরই একটা করে দিক রয়েছে: তুমি তোমার দিকটা বলো, আর আমি আমারটা বলব; তুমি তোমার দর্শনের বিষয়ে আলোচনা করো, আর আমি আমার প্রবেশের বিষয়ে কথা বলব।” যে সমস্ত বিষয়ে তোমার মোকাবিলা করা উচিত, সেসব বিষয়ে তুমি কখনোই দায়িত্ব নাও না, অথবা তোমরা প্রত্যেকে সহজেই নিজস্ব মতামত প্রকাশ করে চলো এবং বিচক্ষণভাবে নিজের মর্যাদা, খ্যাতি এবং মুখ রক্ষা করে চলো। তোমাদের কেউই নিজেদের বিনীত করতে ইচ্ছুক নও, আর কোনো পক্ষই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজেদের হার স্বীকার করতে এবং একে অপরের ঘাটতি পূরণ করে জীবনের দ্রুততর অগ্রগতির সাধন করো না। যখন তোমরা একসাথে সমন্বয় করছ, তখন তোমাদের সত্য অন্বেষণের শিক্ষা লাভ করা উচিত। তুমি হয়তো বলতে পারো, “সত্যের এই দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আমার স্পষ্ট জ্ঞান নেই। তোমার এই বিষয়ে কী অভিজ্ঞতা রয়েছে?” অথবা এমন বলতে পারো, “এই দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আমার থেকে তোমার বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে, তুমি কি আমায় অনুগ্রহ করে কিছু পথনির্দেশ দিতে পারো?” সেই বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সেটা কি ভালো উপায় হবে না? তোমরা অনেক ধর্মোপদেশ শুনেছ, এবং সেবা করার বিষয়ে তোমাদের কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। তোমরা যদি একে অপরের কাছ থেকে শিক্ষা না নাও, একে অপরকে সাহায্য না করো, গির্জায় কাজ করার সময় একে অপরের খামতি পূরণ না করো, তবে তোমরা কীভাবে কোনো শিক্ষালাভ করতে পারবে? কোনো কিছুর সম্মুখীন হলে, তোমাদের একে অপরের সাথে আলোচনা করা উচিত, যাতে তা তোমাদের জীবনে উপকারে লাগে। তদুপরি, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, তোমাদের যেকোনো ধরনের জিনিসের সম্পর্কে সতর্কভাবে আলোচনা করা উচিত। শুধুমাত্র এমনটা করাই হল নিছক দায়সারাভাবে কাজ না করে সঠিকভাবে গির্জার দায়িত্ব নেওয়া। সমস্ত গির্জা পরিদর্শন করার পরে, তোমার আবিষ্কৃত সমস্ত সমস্যা এবং কাজের ক্ষেত্রে হওয়া যেকোনো সমস্যার বিষয়ে, তোমাদের একত্রিত হয়ে আলোচনা করা উচিত, এবং তারপরে তোমার প্রাপ্ত আলোকপ্রাপ্তি এবং প্রদীপ্তির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা উচিত—এটা সেবার ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য অনুশীলন। ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্যে, গির্জার উপকারের জন্য এবং তোমার ভাই ও বোনদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য, তোমাদের অবশ্যই সুষ্ঠু সহযোগিতা অর্জন করতে হবে। তোমাকে অপরের সাথে সমন্বয় করতে হবে, কাজের ভালো ফলাফল পেতে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার যত্ন নিতে একে অপরকে সংশোধন করতে হবে। এটাই হল প্রকৃত সহযোগিতা, আর যারা এতে নিযুক্ত হয়, শুধু তারাই প্রকৃত প্রবেশ লাভ করবে। সহযোগিতার সময়, তোমার বলা কিছু কথা হয়তো অনুপযুক্ত হতে পারে, তবে তাতে কিছু আসে যায় না। এই বিষয়ে পরে আলোচনা কোরো, এবং স্পষ্ট ধারণা অর্জন কোরো; তা উপেক্ষা কোরো না। এই ধরনের আলোচনার পরে, তুমি তোমার ভাই-বোনেদের ঘাটতি পূর্ণ করতে পারবে। শুধুমাত্র নিজের কাজে এমনভাবে আরও গভীরে অনুপ্রবেশ করলে তবেই তুমি ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে। ঈশ্বরের সেবাকারী হিসেবে তোমাদের প্রত্যেককে নিজের সমস্ত কাজে নিছকই নিজের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে গির্জার স্বার্থরক্ষায় সক্ষম হতে হবে। একে অপরকে তাচ্ছিল্য করে, একা একা কাজ করার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। এই ধরনের আচরণকারীরা ঈশ্বরের সেবার উপযুক্ত নয়! এই ধরনের মানুষদের স্বভাব খুবই খারাপ; তাদের মধ্যে এক আনাও মানবতা অবশিষ্ট নেই। তারা একশো শতাংশ শয়তান! তারা নরাধম! এমনকি এখনও, এই বিষয়গুলি তোমাদের মধ্যে প্রতীয়মান; এমনকি তোমরা আলোচনার সময় একে অপরকে আক্রমণ করতে এতদূর এগিয়ে যাচ্ছ যে, ইচ্ছাকৃতভাবে অজুহাত খুঁজে সামান্য বিষয়েও রোষকষায়িত হয়ে তর্ক করে চলেছ, কোনো পক্ষই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে ইচ্ছুক হচ্ছ না, প্রত্যেকেই অন্যের কাছ থেকে নিজের অভ্যন্তরীণ চিন্তাগুলিকে গোপন করে, অন্য পক্ষকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চলেছ এবং সর্বদা সতর্ক রয়েছ। এই ধরনের স্বভাব কি ঈশ্বরের সেবার জন্য উপযুক্ত? তোমার এই ধরনের কাজ কি তোমার ভাই বোনেদের কিছু সরবরাহ করতে পারে? তুমি যে শুধু মানুষকে সঠিক জীবনধারার দিকে পরিচালিত করতে অক্ষম তা-ই নয়, বরং নিজের কলুষিত স্বভাবও তুমি তোমার ভাই ও বোনদের মধ্যে ঢুকিয়ে দাও। তুমি কি অন্যদের আঘাত করছ না? তোমার বিবেক ঘৃণার্হ, এবং তার গোড়াতেই রয়েছে গলদ! তুমি বাস্তবে প্রবেশ করো না, সত্য অনুশীলনও করো না। উপরন্তু, তুমি নির্লজ্জভাবে নিজের শয়তানোচিত প্রকৃতি অন্যদের কাছে প্রকাশ করো। তোমার লজ্জাশরম কিছুই নেই! এই ভাই-বোনেদের দায়িত্ব তোমার উপরেই অর্পিত, তবুও তুমি তাদের নরকে নিয়ে চলেছ। তুমি কি এমন একজন নও, যার বিবেকে পচন ধরেছে? তোমার বিন্দুমাত্রও লজ্জা নেই!