ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: ঈশ্বরের কাজ সম্বন্ধে জানা | উদ্ধৃতি 206

পূর্ববর্তী দুটি যুগের মধ্যে এক পর্বের কাজ হয়েছিল ইসরায়েলে, অন্য পর্বটি যিহুদীয়াতে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এই কাজের কোনোটিই ইসরায়েলের বাইরে হয়নি আর প্রতিটি কাজই প্রথম নির্বাচিত ব্যক্তিদের ওপরেই সম্পন্ন হয়েছিল। ফলত, ইসরায়েলবাসীদের বিশ্বাস, যে যিহোবা কেবল ইসরায়েলবাসীদেরই ঈশ্বর। যেহেতু যীশুর কর্মক্ষেত্র ছিল যিহুদীয়া এবং সেখানেই তাঁর ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজ হয়েছিল, তাই ইহুদিরা মনে করে যে যীশু হলেন ইহুদি জনগণের মুক্তিদাতা। তারা ভাবে যে তিনি কেবল ইহুদিদেরই প্রভু, অন্য কারো নন; তিনি ইংরেজদের, এমন কি আমেরিকানদের মুক্তিদাতাও নন, তিনি একমাত্র ইসরায়েলবাসীদেরই প্রভু। কারণ, ইসরায়েলে তিনি কেবল ইহুদিদেরই মুক্তিদান করেছিলেন। আসলে, ঈশ্বর এই বিশ্বের সমস্ত কিছুরই মালিক, সৃষ্ট প্রতিটি অস্তিত্বের ঈশ্বর। তিনি কেবল ইসরায়েলবাসীদের বা ইহুদিদের নন; যা কিছুই সৃষ্ট হয়েছে তিনি তাদের সবার ঈশ্বর। যেহেতু তাঁর পূর্ববর্তী দুটি পর্বের কাজ ইসরায়েলেই চলেছিল, তাই সেখানকার মানুষের মনে এই ধারণা হয়েছিল যে, যিহোবার কার্যকলাপও যেহেতু ইসরায়েলেই হয়েছে এবং যীশু নিজেও দেহরূপে তাঁর কাজ যিহুদীয়াতে করেছেন—এবং অন্যান্য নানা কারণে, তাঁর এই কাজ ইসরায়েলের বাইরে সম্প্রসারিত হয়নি। তাই তাদের ধারণা, মিশরীয় বা ভারতীয়দের মধ্যে ঈশ্বর তাঁর কাজ করেন নি; তাঁর কাজ শুধুমাত্র ইসরায়েলবাসীদের জন্যই। এইভাবেই, মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে বিচিত্র সব ধারণা। এবং ঈশ্বরের কর্ম-পরিধিকে তারা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই গণ্ডীবদ্ধ রাখতে চেয়েছে। তাদের ধারণা, ঈশ্বর শুধুমাত্র তাঁর নির্বাচিত জনগোষ্ঠী এবং ইসরায়েলেই তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন। ইসরায়েলবাসী ছাড়া অন্য কেউই বা অন্য কোনও স্থানেই তাঁর কর্মের কোনও বৃহত্তর অবকাশ নেই। তারা এমনই গোঁড়া যে ঈশ্বরের অবতারের কর্ম-পরিধিকে তারা ইসরায়েলের ভৌগোলিক সীমার বাইরেও যেতে দিতে চায় না। এগুলি কি নেহাতই তুচ্ছ মানবোচিত ধারণা নয়? আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্ত কিছু যেখানে তাঁর সৃষ্টি, সেক্ষেত্রে তাঁর কাজ কি কেবলমাত্র ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে? যদি তাই হত, তাহলে তাঁর এই বিশ্বজোড়া সৃষ্টির অর্থ কী? তিনি জগতের সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর ছয় হাজার বছর ব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা কেবলমাত্র ইসরায়েলের জন্য হতে পারে না, তা বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্যই। তারা চীন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য বা রাশিয়া যেকোনো স্থানের বাসিন্দাই হোক না কেন, তারা আদমের বংশধর; প্রত্যেকেই ঈশ্বরের সৃষ্টি। এবং কেউই তাঁর সৃষ্টি-সীমা লঙ্ঘন করতে পারে না, অস্বীকার করতে পারে না “আদমের বংশধর” হিসাবে নিজের পরিচয়। তারা সবাই ঈশ্বরের জীব, প্রত্যেকেই আদমের সন্ততি, এবং সকলেই আদম ও হবার ভ্রষ্ট বংশধরও বটে। কেবল ইসরায়েলবাসীরাই ঈশ্বর-সৃষ্ট নন, বিশ্বের সব মানুষই তাঁর সৃষ্টি; পার্থক্য হল, কেউ বা অভিশপ্ত আর কেউ কেউ তাঁর আশীর্বাদ-ধন্য। তবে ইসরায়েলবাসীদের সাথে সহমত হওয়ার মতো অনেক যুক্তি আছে; সবচেয়ে কম ভ্রষ্ট হওয়ার কারণে তাদের মধ্যেই ঈশ্বর প্রথম তাঁর কাজ শুরু করেন। চীনারা তাদের তুলনায় নেহাতই নগণ্য এবং নিকৃষ্ট। তাই, ইসরায়েলবাসীদের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় এবং তাঁর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ কেবল যিহুদীয়াতেই পরিচালিত হয়েছিল—ফলে মানুষের মনে বিচিত্র সব ধারণা গড়ে উঠেছে এবং তৈরি হয়েছে নানা বিধি। ঈশ্বরকে যদি মানুষের ধারণা অনুসারে কাজ করতে হত, তাহলে তিনি কেবল ইসরায়েলবাসীদেরই ঈশ্বর থাকতেন। অইহুদি দেশগুলিতে প্রসারিত হত না তাঁর কর্মক্ষেত্র। সেক্ষেত্রে তিনি শুধুমাত্র ইসরায়েলবাসীদেরই আরাধ্য ঈশ্বর হতেন, সকল সৃষ্টির ঈশ্বর হতেন না। ভবিষ্যৎবাণী ছিল যে অইহুদি দেশগুলিতে যিহোবার নাম বিপুলভাবে বর্ধিত এবং প্রচারিত হবে। এমন ভবিষ্যৎবাণী কেন করা হয়েছিল? ঈশ্বর যদি কেবল ইসরায়েলবাসীদের ঈশ্বর হতেন তাহলে তো তাঁর কর্মকাণ্ড কেবল ইসরায়েলেই হওয়ার কথা। বিশ্বজুড়ে তাঁর কাজ এত বিস্তৃত করতেন না বা এমন এমন ভবিষ্যৎবাণীও করতেন না। যেহেতু তিনি এই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, তাই নিশ্চিতভাবেই তিনি সব অইহুদি রাষ্ট্রগুলিতে এবং বিশ্বের প্রতিটি দেশে ও স্থানে তাঁর কাজ প্রসারিত করবেন। যেহেতু এই ভবিষ্যৎবাণী তাঁরই করা, তাই তিনি অবশ্যই এটি করবেন; এটাই তাঁর পরিকল্পনা, কারণ, আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনিই এবং সৃষ্ট সব কিছুরই তিনি ঈশ্বর। ইসরায়েলবাসীদের মধ্যে বা সমগ্র যিহুদীয়া—যেখানেই তিনি কাজ করুন না কেন, তা সমগ্র বিশ্বের এবং সমগ্র মানবজাতির কাজ। অতিকায় লাল ড্রাগনের সেই দেশের মত এক অ-ইহুদি দেশেও তিনি বর্তমানে যে কাজ করে চলেছেন, তা-ও সমস্ত মানবজাতির জন্যই। পৃথিবীতে তিনি যে কাজ করেছেন, ইসরায়েল যদি বিশ্বজোড়া তাঁর সেই কাজের ভিত হয়ে থাকে তা হলে পরজাতীয় দেশগুলিতে তাঁর কাজের ভিত হয়ে উঠতে পারে চীন। “অইহুদি দেশগুলিতে যিহোবার নাম বিপুলভাবে বর্ধিত এবং প্রচারিত হবে” এই ভবিষ্যৎবাণী তিনি করেছিলেন, তা কি এখনও সফল হয়নি? অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে তিনি এখন যে কাজ করছেন তা হবে অইহুদি দেশগুলিতে তাঁর প্রথম পর্যায়ের কাজ। সাধারণ মানুষের ধারণার বিপরীতে ঈশ্বরের অবতার এই দেশে এবং এইসব অভিশপ্ত মানুষের মধ্যেই কাজ করবেন। অকিঞ্চন এবং সর্বার্থে তুচ্ছ এইসব মানুষদের প্রাথমিকভাবে যিহোবাও পরিত্যাগ করেছিলেন। মানুষ মানুষকে ছেড়ে যেতে পারে, কিন্তু তাদের যদি ঈশ্বরও পরিত্যাগ করেন, তাহলে তাদের মতো মর্যাদাহীন আর কেউ নেই, এত অকিঞ্চিৎকর আর কেউই হয় না। ঈশ্বরের সৃষ্ট যেকোনো প্রাণীই যদি শয়তান-অধিকৃত বা মানুষ দ্বারা পরিত্যক্ত হয় তবে তা নিশ্চিতরূপেই খুব পরিতাপের বিষয়। তবে স্রষ্টাই যদি তাকে পরিত্যাগ করেন, তবে তার মত অভাগা আর কেউ নেই। মোয়াবের অভিশপ্ত বংশধররা এই পিছিয়ে পড়া দেশেই যে জন্মগ্রহণ করেছিল সেকথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যে মানবগোষ্ঠী অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তাদের মধ্যে হীনতম হল মোয়াবের বংশধররা। এইসব মানুষ এত দিন পর্যন্ত নিতান্ত তুচ্ছতায় দিন কাটাচ্ছিল। তাই এদের নিয়ে ঈশ্বরের কাজ শুরু হলে, তা মানুষের বহু দিনের বহু ভুল ধারণা সবচেয়ে ভালো ভাবে ভেঙে ফেলতে সক্ষম হবে আর সেটাই হবে ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণ। এই ধরনের কাজ করাই হল মানুষের পূর্বধারণাসমূহ ধ্বংস করার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়, এবং এর মাধ্যমেই একটি যুগের সূচনা করেন ঈশ্বর। প্রথাগত সব ভ্রান্ত ধারনার অবসান ঘটিয়ে সমাপ্ত করবেন তাঁর অনুগ্রহের যুগ। তাঁর প্রথম কর্মসম্পাদনা হয়েছিল যিহুদীয়াতে, ইসরায়েলের সীমার মধ্যে; নতুন যুগের সূচনার জন্য অইহুদি দেশগুলিতে তিনি কাজ করেন নি। তাঁর চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুধুমাত্র অইহুদিদের মধ্যেই হবে না বরঞ্চ আরো বেশি প্রসারিত হবে সব অভিশপ্ত মানবগোষ্ঠীর জন্য। এই একটি ঘটনাই নির্দ্বিধায় প্রমাণ করবে শয়তানের চূড়ান্ত লাঞ্ছনা এবং এই ভাবেই তিনি “হয়ে উঠবেন” বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টির ঈশ্বর, প্রতিটি বস্তুকণার প্রভু এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উপাস্য।

—বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, ঈশ্বর সকল সৃষ্টির প্রভু

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: মানবজাতির দুর্নীতি উদ্ঘাটিত করা | উদ্ধৃতি 329

পূর্বে, ঈশ্বরের স্বর্গে থাকাকালীন, মানুষের কার্যকলাপ ছিল ঈশ্বরের প্রতি প্রতারণামূলক। আজ, ঈশ্বর মানুষের মধ্যেই রয়েছেন—কেউ জানে না কত বছর...

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: গন্তব্য ও পরিণতি | উদ্ধৃতি 612

তুমি কি এখন বুঝতে পারছ বিচার কী এবং সত্য কী? বুঝতে পারলে আমি তোমাকে বিচারের জন্য মাথা নত করে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিচ্ছি, অন্যথায় তুমি...

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: কর্মের তিনটি পর্যায় | উদ্ধৃতি 12

ছ’হাজার বছরব্যাপী পরিচালনামূলক পরিকল্পনা তিন পর্যায়ের কার্যে বিভক্ত। কোনো একটি পর্যায় তিনটি পর্যায়ের কার্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না,...

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: জীবনে প্রবেশ | উদ্ধৃতি 454

ঈশ্বরের অর্পিত সমগ্র মানবজাতির মুক্তির কার্যের দায়িত্ব সম্পাদন করতে যীশু সমর্থ ছিলেন, কারণ তিনি নিজের জন্য কোনো পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা না...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন