ভূমিকা
যদিও অনেক মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, কিন্তু খুব কম মানুষই জানে ঈশ্বরে বিশ্বাসের অর্থ কী এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণের জন্য তাদের কোন কাজটি অবশ্যই করতে হবে। এর কারণ হল, যদিও মানুষ “ঈশ্বর”-এর মতো শব্দ এবং “ঈশ্বরের কাজ”-এর মতো বাক্যাংশের সাথে পরিচিত, কিন্তু তারা ঈশ্বরকে জানে না এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে তো আরওই কম জানে। তাহলে যারা ঈশ্বরকে জানে না, তারা সকলেই যে তাঁর উপর তাদের বিশ্বাসের বিষয়ে বিভ্রান্ত, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। মানুষ ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাসকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে না, এবং এর প্রধান কারণ হল, তাদের কাছে ঈশ্বর বিশ্বাস খুবই অপরিচিত, খুবই অদ্ভুত। এইভাবে তারা ঈশ্বরের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, মানুষ যদি ঈশ্বরকে না জানে, এবং তাঁর কাজকে না জানে, তাহলে তারা ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য যথোপযুক্ত নয়, এবং তাঁর ইচ্ছা পূরণে আরোই অক্ষম। “ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস”-এর অর্থ একজন ঈশ্বর রয়েছেন তা বিশ্বাস করা; ঈশ্বরে বিশ্বাস করা সম্পর্কে এটিই সবথেকে সহজ ধারণা। উপরন্তু, একজন ঈশ্বর আছেন বলে বিশ্বাস করা আর ঈশ্বরে প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস করা এক নয়; বরং, এটা দৃঢ় ধর্মীয় অভিব্যক্তি সহ এক ধরনের সরল বিশ্বাস। ঈশ্বরের ওপর প্রকৃত বিশ্বাসের অর্থ নিম্নরূপ: সব কিছুর উপর ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব রয়েছে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে, কেউ তাঁর বাক্য ও তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করে, তার ভ্রষ্ট স্বভাবকে শুদ্ধ করে, ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করে এবং ঈশ্বরকে জানতে পারে। শুধুমাত্র এই ধরনের একটি যাত্রাকেই “ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস” বলা যেতে পারে। তবুও লোকেরা প্রায়শই ঈশ্বরের উপর বিশ্বাসকে একটি সহজ এবং তুচ্ছ বিষয় হিসাবে দেখে। যারা এইভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করার অর্থ হারিয়ে ফেলেছে, এবং যদি তারা শেষ অবধি এই বিশ্বাস ধরেও রাখতে পারে, তবুও তারা কখনোই ঈশ্বরের অনুমোদন পাবে না, কারণ তারা ভুল পথে চলেছে। আজও কিছু লোক আছে যারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরের আক্ষরিক অর্থে, এবং ফাঁপা অন্তঃসারশূন্য মতবাদে। তারা জানে না যে তাদের ঈশ্বরে বিশ্বাসের সারসত্যের অভাব রয়েছে, এবং তারা ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে পারে না। তবুও তারা নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত অনুগ্রহের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। এসো আমরা থামি, আমাদের হৃদয়কে শান্ত করি এবং নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করি: ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কি সত্যিই পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ জিনিস? এমনটা কি হতে পারে যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করার অর্থ ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রচুর অনুগ্রহ পাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়? যারা ঈশ্বরকে না জেনেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে বা যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও তাঁর বিরোধিতা করে তারা কি সত্যিই ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করতে সক্ষম?
ঈশ্বরের সাথে মানুষের কখনোই তুলনা করা যায় না। তাঁর সারসত্য এবং তাঁর কাজ মানুষের কাছে ধারণাতীত এবং অজ্ঞেয়। ঈশ্বর যদি নিজে মানুষের জগতে তাঁর কাজ না করেন এবং তাঁর বাক্য না বলেন, তাহলে মানুষ কখনোই ঈশ্বরের ইচ্ছা বুঝতে সক্ষম হবে না। এবং তাই, যারা তাদের সমগ্র জীবন ঈশ্বরের জন্য উৎসর্গ করেছে, তারাও তাঁর অনুমোদন পেতে সক্ষম হবে না। যদি ঈশ্বর কাজ করার জন্য প্রস্তুত না হন, তবে মানুষ যতই ভালো কাজ করুক না কেন, তা সম্পূর্ণ নিষ্ফল হবে, কারণ ঈশ্বরের চিন্তা সর্বদা মানুষের চিন্তার চেয়ে উচ্চতর এবং ঈশ্বরের জ্ঞান মানুষের বোধগম্যতার বাইরে। আর তাই আমি বলি যে যারা ঈশ্বর এবং তাঁর কাজকে “পুরোপুরি বোঝে” বলে দাবি করে তারা অযোগ্য ব্যক্তি; তারা সকলেই দাম্ভিক ও অজ্ঞ। মানুষের ঈশ্বরের কাজকে সংজ্ঞায়িত করা উচিত নয়; অধিকন্তু, মানুষ ঈশ্বরের কাজকে সংজ্ঞায়িত করতে অক্ষম। ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মানুষ পিঁপড়ার মতই নগণ্য; তাহলে মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের কাজের গভীরতা নির্ণয় করতে পারে? যারা ক্রমাগত বলতে পছন্দ করে, “ঈশ্বর এভাবে বা ওভাবে কাজ করেন না,” বা “ঈশ্বর এইরকম বা ওইরকম”—তারা কি অহংকার করে কথা বলছে না? আমাদের সকলেরই জানা উচিত যে মানুষ, যে আসলে রক্তমাংসের তৈরী, শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে। মানবজাতির স্বভাবই হল ঈশ্বরের বিরোধিতা করা। মানবজাতি ঈশ্বরের সমকক্ষ হতে পারে না, মানবজাতি ঈশ্বরের কাজে পরামর্শ দেওয়ার আশা করতে পারে না। ঈশ্বর কীভাবে মানুষকে পথ দেখাবেন, তা স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ। এটাই সঙ্গত যে এটা-ওটা দৃষ্টিভঙ্গি স্বীকার না করে মানুষের উচিত আত্মসমর্পণ করা, কারণ মানুষ ধূলিকণা ব্যতীত আর কিছুই নয়। যেহেতু ঈশ্বরের সন্ধান করা আমাদের অভিপ্রায়, তাই ঈশ্বরের বিবেচনার জন্য আমাদের ধারণাগুলিকে তাঁর কাজের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়, উপরন্তু, আমাদের ভ্রষ্ট স্বভাবকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের কাজের বিরোধিতা করার জন্য প্রয়োগ করা তো আরোই অনুচিত। তার ফলে কি আমরা খ্রীষ্টবিরোধী হয়ে পড়বো না? এই ধরনের মানুষ কীভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারে? যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি যে একজন ঈশ্বর আছেন, এবং যেহেতু আমরা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে চাই এবং তাঁকে দেখতে চাই, তাই আমাদের সত্যের পথ অনুসন্ধান করা উচিত এবং ঈশ্বরের সাথে সুসংগত হওয়ার পথের সন্ধান করা উচিত। আমাদের তাঁর বিরুদ্ধে একগুঁয়ে বিরোধিতা করা উচিত নয়। এই ধরনের কাজের থেকে কীই বা লাভ হতে পারে?
আজ, ঈশ্বর নতুন কাজ করেছেন। তুমি এই বাক্যগুলি গ্রহণ করতে সক্ষম নাও হতে পারো এবং সেগুলি তোমার কাছে অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে, তবে আমি তোমাকে তোমার স্বাভাবিকতা প্রকাশ না করার পরামর্শই দেবো, কারণ যারা ঈশ্বরের সামনে ন্যায়পরায়ণতার জন্য প্রকৃতপক্ষেই ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত বোধ করে, শুধুমাত্র তারাই সত্য লাভ করতে পারে, এবং যারা সত্যিকারের ভক্ত তারাই তাঁর দ্বারা আলোকিত ও পরিচালিত হতে পারে। সংযমী প্রশান্তির মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধান করলেই ফলাফল লাভ করা যায়, দ্বন্দ্ব ও বিরোধের মাধ্যমে নয়। যখন আমি বলি যে, “আজ, ঈশ্বর নতুন কাজ করেছেন,” তখন আমি ঈশ্বরের দেহরূপে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি বলছি। হতে পারে এই কথাগুলি তোমার উপর কোনও প্রভাব ফেলে না; হতে পারে তুমি সেগুলিকে অবজ্ঞা করো; অথবা হতে পারে সেগুলি তোমার অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়। যাই হোক না কেন, আমি আশা করি যারা ঈশ্বরের আবির্ভাবের জন্য সত্যিকারের আকুল, তারা এই ঘটনাটির সম্মুখীন হতে পারবে এবং সেটি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে সেগুলি ভালো করে যাচাই করতে উদ্যোগী হবে; একজন জ্ঞানী ব্যক্তির এটাই করা উচিত।
এইরকম একটি বিষয়ে অনুসন্ধান করা কঠিন নয়, কিন্তু এর জন্য আমাদের প্রত্যেকের এই সত্যটি জানতে হবে: যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের সারসত্যের অধিকারী হবেন, এবং যিনি ঈশ্বরের অবতার তিনি ঈশ্বরের অভিব্যক্তির অধিকারী হবেন। যেহেতু ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছেন, সেহেতু তিনি সেই কাজ নিয়ে আসবেন যা তিনি করতে চান, এবং যেহেতু তিনি দেহরূপে এসেছেন, তিনি যা তা তিনি স্বরূপ প্রকাশ করবেন এবং সেই সত্যটি মানুষের সামনে নিয়ে আসতে সমর্থ হবেন, তাকে জীবন দান করবেন এবং তার জন্য পথ চিহ্নিত করবেন। যে দেহরূপে ঈশ্বরের সারসত্য নেই তাকে ঈশ্বরের অবতার বলে গণ্য করা হয় না; এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা তা যদি মানুষ অনুসন্ধান করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই যে স্বভাব তিনি প্রকাশ করেন এবং যে সকল বাক্য তিনি বলেন, তার থেকেই তা জানতে হবে। অর্থাৎ, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কিনা, এবং এটিই প্রকৃত পথ কিনা, তা সুনিশ্চিত করতে অবশ্যই তাঁর সারসত্যের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে। এবং তাই, কেউ ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার কি না, তা নির্ণয় করার মূল বিষয়টি তাঁর বাহ্যিক চেহারার পরিবর্তে তাঁর সারসত্য (তাঁর কাজ, তাঁর কথন, তাঁর স্বভাব এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ের), উপর নির্ভরশীল। মানুষ যদি শুধু তাঁর বাইরের চেহারাটাই খুঁটিয়ে দেখে, এবং এর ফলে তাঁর সারসত্যকে উপেক্ষা করে, তাহলে এটাই প্রমাণিত হয় যে সেই মানুষটি অজ্ঞানতিমিরে আচ্ছন্ন এবং অজ্ঞ। বাইরের চেহারা কখনই সারসত্য নির্ণয় করতে পারে না; উপরন্তু, ঈশ্বরের কাজ কখনোই মানুষের ধারণার সাথে সঙ্গত হতে পারে না। যীশুর বাহ্যিক চেহারা কি মানুষের ধারণার বিপরীত ছিল না? তাঁর মুখমণ্ডল ও পোশাক কি তাঁর আসল পরিচয় সম্পর্কে কোনো সূত্র দিতে অক্ষম ছিল না? প্রথম দিকের ফরিশীরা যে যীশুর বিরোধিতা করেছিল তার সুনির্দিষ্ট কারণ কি এটাই ছিল না যে তারা শুধুমাত্র তাঁর বাহ্যিক রূপই দেখেছিল আর তাঁর মুখনিঃসৃত বাক্যকে নিজেদের অন্তরে গ্রহণ করেনি? আমি আশা করি যে প্রত্যেক ভাই এবং বোন যারা ঈশ্বরের আবির্ভাবের সন্ধান করে তারা এই বিয়োগান্তক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে না। তোমরা কিছুতেই যেন আধুনিক কালের ফরিশীদের মতো হয়ে উঠে আবার ঈশ্বরকে ক্রুশবিদ্ধ কোরো না। কীভাবে ঈশ্বরের প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানাবে তা তোমার যত্ন সহকারে বিবেচনা করা উচিত, এবং কীভাবে তুমি সত্যের কাছে আত্মসমর্পণকারী একজন ব্যক্তি হয়ে উঠবে সে সম্পর্কে তোমার পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। যারা যীশুর মেঘে চড়ে ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছে, এটা তাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব। আমাদের উচিত আমাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে ঘষেমেজে পরিষ্কার করে নেওয়া, এবং অতিরঞ্জিত কাল্পনিক কথায় বিভ্রান্ত না হওয়া। আমাদের উচিত ঈশ্বরের ব্যবহারিক কাজ সম্পর্কে চিন্তা করা এবং ঈশ্বরের ব্যবহারিক দিকটি একবার দেখে নেওয়া। দিবাস্বপ্নে নিজেকে হারিয়ে ফেলো না, সর্বদা সেই দিনের জন্য আকুল হও যেদিন প্রভু যীশু, মেঘের উপর চড়ে, হঠাৎ তোমাদের মধ্যে নেমে আসবেন, এবং তোমরা যারা তাঁকে কখনও চেনোনি বা দেখোনি এবং কীভাবে তার ইচ্ছা পূরণ করবে তা জানো না, তাদের নিয়ে যাবেন। আরো ব্যবহারিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে!
তুমি হয়তো গবেষণার উদ্দেশ্যে বইটা খুলেছ, অথবা হয়তো গ্রহণ করবার অভিপ্রায় নিয়ে; তোমার মনোভাব যাই হোক না কেন, আশা করি তুমি এটি শেষ পর্যন্ত পড়বে এবং সহজে এটিকে একপাশে সরিয়ে দেবে না। সম্ভবত, এই কথাগুলি পড়ার পরে, তোমার মনোভাব পরিবর্তিত হবে, তবে এটি তোমার প্রেরণা ও তোমার বোঝার মাত্রার উপর নির্ভর করে। যাইহোক, একটি জিনিস তোমার জানা উচিত: ঈশ্বরের বাক্যকে মানুষের বাক্য হিসেবে প্রমাণ করা যায় না, মানুষের বাক্যকে ঈশ্বরের বাক্য হিসাবে প্রমাণ করা তো আরোই অসম্ভব। ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত একজন মানুষ ঈশ্বরের অবতার নয়, এবং ঈশ্বরের অবতার ঈশ্বর দ্বারা ব্যবহৃত মানুষ নন। এর মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। সম্ভবত, এই কথাগুলি পড়ার পরে, তুমি এগুলিকে ঈশ্বরের বাক্য বলে স্বীকার করবে না, বরং শুধুমাত্র মানুষের অর্জিত জ্ঞান হিসাবে বিবেচনা করবে। সে ক্ষেত্রে, তুমি অজ্ঞতার বেড়াজালে অন্ধ হয়ে রয়েছ। মানুষ যে জ্ঞান অর্জন করেছে তা কীভাবে ঈশ্বরের বাক্যের সমতুল্য হতে পারে? ঈশ্বরের অবতারের বাক্য একটি নতুন যুগের সূচনা করে, সমস্ত মানবজাতিকে পথ দেখায়, রহস্য উদ্ঘাটন করে, এবং মানুষকে নতুন যুগে নিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশ করে। মানুষ যে আলোকপ্রাপ্তি অর্জন করেছে তা শুধুমাত্র অনুশীলন বা জ্ঞানের কিছু সহজ নির্দেশ। তা সমস্ত মানবজাতিকে এক নতুন যুগের পথ দেখাতে পারে না বা স্বয়ং ঈশ্বরের রহস্য প্রকাশ করতে পারে না। যখন সমস্ত কিছু বলা এবং করা হয়ে যায়, তখন ঈশ্বর থাকেন ঈশ্বরই, এবং মানুষ থাকে মানুষই। ঈশ্বরের মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের সারসত্য এবং মানুষের মধ্যে রয়েছে মানুষের সারসত্য। মানুষ যদি ঈশ্বরের দ্বারা উচ্চারিত বাক্যগুলিকে পবিত্র আত্মার কাছ থেকে প্রাপ্ত সহজ জ্ঞান হিসাবে দেখে, এবং বাণীপ্রচারক ও নবীদের কথাকে স্বয়ং ঈশ্বরের কথিত বাক্য হিসাবে গ্রহণ করে, তা হবে মানুষের ভুল। যাই হোক না কেন, তোমার কখনোই ঠিক এবং ভুলকে মিশ্রিত করা উচিত নয়, বা উঁচুকে নীচু বলে বোঝানো উচিত নয়, বা গভীরকে অগভীর বলে ভুল করা উচিত নয়; যাই হোক না কেন, যা তুমি সত্য বলে জানো কখনোই তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করবে না। যারা বিশ্বাস করে ঈশ্বর আছেন, তাদের সকলের উচিত সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাগুলির অনুসন্ধান করা, এবং ঈশ্বরের নতুন কাজ ও তাঁর নতুন বাক্যগুলিকে তাঁর সৃষ্ট সত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করা; অন্যথায়, ঈশ্বর তাদের পরিহার করবেন।
যিহোবার কাজের পরে, যীশু মানুষের মধ্যে তাঁর কাজ করার জন্য দেহরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর কাজ বিচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হয়নি, বরং তা যিহোবার কাজের ভিত্তির উপরেই গড়ে উঠেছিলো। এই কাজ ছিল এক নতুন যুগের জন্য, যা ঈশ্বর আইনের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটানোর পর করেছিলেন। একইভাবে, যীশুর কাজ শেষ হওয়ার পরে, ঈশ্বর পরবর্তী যুগের জন্য তাঁর কাজ চালিয়ে নিয়ে যান, কারণ ঈশ্বরের সমগ্র ব্যবস্থাপনা সর্বদা এগিয়ে চলেছে। যখন পুরানো যুগ চলে যাবে, তখন এটি একটি নতুন যুগ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে এবং একবার পুরানো কাজ শেষ হয়ে গেলে, ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন কাজের উদ্ভব হবে। এই অবতার হল ঈশ্বরের দ্বিতীয় অবতার রূপ, যিনি যীশুর কাজের অনুসরণ করেন। অবশ্যই, এই অবতারত্ব স্বাধীনভাবে ঘটে না; এটি আইনের যুগ এবং অনুগ্রহের যুগের পরে কাজের তৃতীয় স্তর। প্রতিবার যখন ঈশ্বর কাজের একটি নতুন পর্যায়ের সূচনা করেন, তখন সর্বদা এক নতুন সূচনা হবে এবং তা সর্বদা এক নতুন যুগকে নিয়ে আসবে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে ঈশ্বরের স্বভাব, তাঁর কাজ করার পদ্ধতি, তাঁর কাজের স্থান, এবং তাঁর নামেও একই রকম পরিবর্তন হয়েছে। তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, নতুন যুগে ঈশ্বরের কাজকে মেনে নেওয়া মানুষের পক্ষে কঠিন। কিন্তু মানুষ যেভাবেই তাঁর বিরোধিতা করুক না কেন, ঈশ্বর সর্বদা তাঁর কাজ করছেন এবং সর্বদা সমগ্র মানবজাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যীশু যখন মানুষের জগতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, তিনি অনুগ্রহের যুগের সূচনা করেছিলেন এবং আইনের যুগের অবসান ঘটিয়েছিলেন। অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর আরও একবার দেহরূপে আবির্ভূত হয়েছেন এবং এই অবতারের মাধ্যমে তিনি অনুগ্রহের যুগের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যের যুগের সূচনা করেছেন। যারা ঈশ্বরের দ্বিতীয় অবতারকে গ্রহণ করতে সক্ষম তাদের সকলকে রাজ্যের যুগে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেইসাথে তারা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের নির্দেশনা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। যদিও যীশু মানুষের মধ্যে অনেক কাজ করেছিলেন, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র সমস্ত মানবজাতির মুক্তি সম্পূর্ণ করেছিলেন এবং মানুষের পাপস্খালনের বলি হয়েছিলেন; তিনি মানুষকে তার সমস্ত ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে মুক্তি দেননি। শয়তানের প্রভাব থেকে মানুষকে পুরোপুরি মুক্ত করার জন্য শুধু যীশুর পাপস্খালনের বলি হওয়া আর মানুষের পাপ বহন করার প্রয়োজন ছিল তাই নয়, বরং মানবজাতিকে সম্পূর্ণরূপে তার শয়তানোচিত ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরের আরো মহত্তর কর্মের প্রয়োজন ছিল। এবং তাই, এখন যখন মানুষ তার পাপের ক্ষমা পেয়েছে, ঈশ্বর মানুষকে নতুন যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেহরূপে ফিরে এসেছেন এবং শাস্তি ও বিচারের কাজ শুরু করেছেন। এই কাজ মানুষকে এক উচ্চতর জগতে নিয়ে এসেছে। যারা তাঁর রাজত্বের অধীনে আত্মসমর্পণ করে তারা উচ্চতর সত্য উপভোগ করবে এবং বৃহত্তর আশীর্বাদ লাভ করবে। তারা প্রকৃতপক্ষেই আলোতে বাস করবে, এবং তারা সত্য, পথ ও জীবন লাভ করবে।
মানুষ যদি অনুগ্রহের যুগে আটকে থাকে, তবে তারা কখনই তাদের ভ্রষ্ট স্বভাব থেকে মুক্তি পাবে না, ঈশ্বরের অন্তর্নিহিত স্বভাবকে জানা তো দূরের কথা। মানুষ যদি সর্বদা অনুগ্রহের প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করে, কিন্তু তাদের কাছে জীবনের সঠিক পথ না থাকে যা তাদের ঈশ্বরকে জানার বা তাঁকে সন্তুষ্ট করার অনুমোদন দেয়, তাহলে তারা তাদের বিশ্বাসের মাধ্যমে তাঁকে সত্যিকারের লাভ করতে পারবে না। এই ধরনের বিশ্বাস সত্যিই দুঃখজনক। যখন তুমি এই বইটি পড়া শেষ করবে, যখন তুমি রাজ্যের যুগে ঈশ্বরের কাজের প্রতিটি ধাপের অভিজ্ঞতা লাভ করবে, তখন তুমি অনুভব করবে যে তোমার বহু বছর ধরে থাকা আকাঙ্ক্ষাগুলি অবশেষে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তুমি অনুভব করবে যে শুধুমাত্র এখনই তুমি সত্যই ঈশ্বরকে সামনাসামনি দেখেছো; শুধুমাত্র এখনই তুমি তাঁর মুখের দিকে তাকিয়েছ, তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চারণ শুনেছ, তাঁর কাজের প্রজ্ঞার প্রশংসা করেছ এবং সত্যই উপলব্ধি করেছ যে তিনি কতটা বাস্তব ও সর্বশক্তিমান। তুমি অনুভব করবে যে তুমি এমন অনেক কিছু অর্জন করেছ যা অতীতের লোকেরা কখনও দেখেনি বা পায়নি। এই সময়ে, তুমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবে যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কী, এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গত হওয়াই বা কী। অবশ্যই, যদি তুমি অতীতের মতামতকে আঁকড়ে ধরে থাকো এবং ঈশ্বরের দ্বিতীয় অবতারের সত্যটিকে প্রত্যাখ্যান বা অস্বীকার করো, তবে তুমি শূন্য হাতেই থেকে যাবে, কিছুই অর্জন করবে না, এবং শেষ পর্যন্ত তোমাকে ঈশ্বরের বিরোধিতা করার দোষে দোষী বলে ঘোষণা করা হবে। যারা সত্যকে মেনে চলতে এবং ঈশ্বরের কাজের কাছে আত্মসমর্পণ করতে সক্ষম তাদের ঈশ্বর—সর্বশক্তিমান এর দ্বিতীয় অবতারের অধীনস্থ হিসেবে অভিহিত করা হবে। তারা ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নির্দেশনা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে, আরও এবং উচ্চতর সত্য, সেইসাথে প্রকৃত জীবনও লাভ করবে। তারা এমন দৃশ্য দেখবে যা অতীতের লোকেরা আগে কখনও দেখেনি: “কার কণ্ঠস্বর আমাকে এ কথা বলছে তা দেখার জন্য আমি ঘুরে দাঁড়ালাম। দেখলাম, সাতটি স্বর্ণময় দীপাধার রয়েছে সেখানে। সেই সাতটি দীপাধারের মাঝখানে দেখলাম মানবপুত্রের মত এক পুরুষকে। তাঁর পরণে আপাদ লম্বিত বেশ স্বর্ণপট্টে বেষ্টিত তাঁর বক্ষ, মস্তক ও কেশ শ্বেত পশম ও তুষারের মত শুভ্র, নয়ন যেন বহ্ণিশিখা। তাঁর চরণদুটি অগ্নিশোধিত পিতলের মত উজ্জ্বল এবং কণ্ঠস্বর যেন জলপ্রপাতের গম্ভীর গর্জন। তাঁর দক্ষিণ হস্ত বিধৃত সপ্ত নক্ষত্র, মুখ থেকে নির্গত দ্বি-ধার তীক্ষ্ণ এক তরবারি, মুখমণ্ডল পূর্ণদীপ্ত সূর্যের মত” (প্রকাশিত বাক্য ১:১২-১৬)। এই দৃশ্যই হল ঈশ্বরের সমগ্র স্বভাবের অভিব্যক্তি, আর তাঁর সমগ্র স্বভাবের অভিব্যক্তিই আবার ঈশ্বরের বর্তমান অবতারের কাজের অভিব্যক্তি। শাস্তি ও বিচারের প্রবাহে, মানবপুত্র বিভিন্ন উচ্চারণের মাধ্যমে তাঁর অন্তর্নিহিত স্বভাব প্রকাশ করেন, যারা তাঁর শাস্তি ও বিচার গ্রহণ করে, এটি তাদের সকলকে মানবপুত্রের আসল চেহারা দেখতে দেয়, যা যোহনের দেখা মানবপুত্রের মুখের একটি বিশ্বস্ত রুপায়ণ। (অবশ্যই, এই সমস্ত কিছুই যারা রাজ্যের যুগে ঈশ্বরের কাজকে স্বীকার করে না, তাদের কাছে অদৃশ্য থাকবে।) ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ মানুষের ভাষা ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না, এবং তাই ঈশ্বর সেই উপায়গুলি ব্যবহার করেন যা তাঁর অন্তর্নিহিত প্রকৃত চেহারা এবং স্বভাবকে মানুষের কাছে প্রকাশ করে। যার অর্থ হল, যারা মানবপুত্রের অন্তর্নিহিত স্বভাবের সমাদর করতে পেরেছে, তারা সকলেই মানবপুত্রের প্রকৃত রূপ দেখেছে, কারণ ঈশ্বর অত্যন্ত মহান এবং মানুষের ভাষা ব্যবহার করে তা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। একবার মানুষ রাজ্যের যুগে ঈশ্বরের কাজের প্রতিটি পদক্ষেপের অভিজ্ঞতা লাভ করলে, তারপরে যোহনের কথার প্রকৃত অর্থ জানতে পারবে, যা সে প্রদীপদানিগুলোর মাঝে মানবপুত্রের সম্পর্কে বলেছিল: “মস্তক ও কেশ শ্বেত পশম ও তুষারের মত শুভ্র, নয়ন যেন বহ্ণিশিখা। তাঁর চরণদুটি অগ্নিশোধিত পিতলের মত উজ্জ্বল এবং কণ্ঠস্বর যেন জলপ্রপাতের গম্ভীর গর্জন। তাঁর দক্ষিণ হস্ত বিধৃত সপ্ত নক্ষত্র, মুখ থেকে নির্গত দ্বি-ধার তীক্ষ্ণ এক তরবারি, মুখমণ্ডল পূর্ণদীপ্ত সূর্যের মত”। সেই সময়ে, তুমি সমস্ত সন্দেহের ঊর্ধ্বে জানতে পারবে যে এই সাধারণ দেহ, যিনি এতগুলো কথা বলেছেন, তিনিই নিঃসন্দেহে ঈশ্বরের দ্বিতীয় অবতার। তদুপরি, তুমি প্রকৃত অর্থে উপলব্ধি করবে যে তুমি কতটা ধন্য এবং নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে করবে। তুমি কি এই আশীর্বাদগ্রহণ করতে ইচ্ছুক নও?