অনুশীলন (৫)

অনুগ্রহের যুগে, যীশু কিছু বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন এবং কার্যের একটি পর্যায় সম্পাদন করেছিলেন। সেগুলির সবকটির একটি পূর্বাপর সম্বন্ধ ছিল, এবং সেগুলি সবই মানুষের তৎকালীন অবস্থার জন্য উপযুক্ত ছিল; যীশু সেই সময়ের প্রসঙ্গক্রম অনুসারে কথন করেছিলেন এবং কার্য সম্পাদন করেছিলেন। তিনি কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যে সত্যের আত্মা অন্তিম সময়ে আসবেন এবং কাজের একটি পর্যায় সম্পন্ন করবেন। অর্থাৎ, সেই যুগে তিনি স্বয়ং যে কার্য সম্পাদন করবেন তার বাইরে তিনি কিছুই উপলব্ধি করেননি; অন্যভাবে বললে, ঈশ্বরের অবতার দ্বারা আনীত কার্য হল সীমিত। এইভাবে, তিনি স্বয়ং যে যুগে রয়েছেন শুধুমাত্র সেই যুগের কার্যই সম্পাদন করেন, এবং যে কার্যের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগ নেই তা তিনি সম্পাদন করেন না। সেই সময়ে, যীশু অনুভূতি বা দর্শন অনুযায়ী নয়, বরং সময় ও প্রসঙ্গ অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করেছিলেন। কেউ তাঁকে নেতৃত্ব দেয়নি বা তাঁকে পথ দেয়নি। তাঁর সামগ্রিক কাজই ছিল তাঁর নিজস্ব সত্তা—তা ছিল ঈশ্বরের অবতাররূপ আত্মা দ্বারা করণীয়, তথা অবতাররূপের দ্বারা প্রবর্তিত, যাবতীয় কার্য। যীশু নিজে যা দেখেছিলেন ও শুনেছিলেন শুধুমাত্র সেই অনুযায়ীই কার্য সম্পাদন করেছিলেন। প্রকারান্তরে বললে, আত্মা প্রত্যক্ষভাবে কার্য সম্পাদন করে; কোনো বার্তাবহের তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে স্বপ্ন দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো না, প্রয়োজন ছিলো না কোনো মহতী আলোকের তাঁর উপর ভাস্মর হওয়ার যাতে তিনি দেখতে পান। তিনি স্বাধীনভাবে এবং কোনো বাধা ছাড়া কার্য সম্পাদন করেছিলেন, কারণ তাঁর কার্য অনুভূতিভিত্তিক ছিলো না। প্রকারান্তরে বললে, কার্য সম্পাদন করাকালীন তিনি হাতড়ে বেড়াননি বা অনুমান করেননি, বরং তিনি অনায়াসেই কার্য সিদ্ধ করেছিলেন, তাঁর নিজস্ব ধারণা এবং স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা বিষয়াদি অনুযায়ী কার্য সম্পাদন ও বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন, তাঁকে অনুসরণকারী প্রতিটি শিষ্যের সংস্থান করেছিলেন। এ-ই হল ঈশ্বরের কার্য এবং মানুষের কাজের মধ্যে পার্থক্য: মানুষ কাজ করার সময়ে অন্বেষণ করে ও হাতড়ে বেরায়, গভীরতর প্রবেশ অর্জন করতে সর্বদাই অপরের স্থাপিত ভিত্তিকেই করে অনুকরণ করে, তা নিয়েই বিচার-বিবেচনা করে। ঈশ্বরের কার্য হল তিনি যা, তা-র সংস্থান, এবং তিনি স্বয়ং তাঁর দ্বারা করণীয় কার্যই করেন। তিনি কোনো মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের ব্যবহার করে গির্জার সংস্থানসাধন করেন না। বরং, তিনি মানুষের অবস্থার ভিত্তিতে বর্তমান কার্য সম্পাদন করেন। সুতরাং, এইভাবে কাজ করা হল মানুষের কাজের চেয়ে হাজার গুণ বেশি স্বাধীন। মানুষের এমনও মনে হতে পারে যে ঈশ্বর তাঁর কর্তব্য পালন করেন না, তিনি যদৃচ্ছ কাজ করেন—কিন্তু তাঁর করা সমস্ত কাজই নতুন। তবুও, তোমার জানা উচিত যে, ঈশ্বর অবতারের কাজ কখনই অনুভূতি-ভিত্তিক নয়। সেই সময়ে, যীশু তাঁর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কার্য সমাপ্ত করার পর, তাঁর অনুগামী শিষ্যগণ নিজেদের অভিজ্ঞতালাভের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে উপনীত হয়ে অনুভব করেছিল যে, ঈশ্বরের দিবস সমাগত, এবং তারা শীঘ্রই প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ করবে। এই অনুভূতিই তাদের হয়, এবং তাদের কাছে এই অনুভূতিটি ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মানুষের অন্তরের অনুভূতি নির্ভরযোগ্য নয়। তারা অনুভব করেছিল যে, সম্ভবত তারা পথের শেষ প্রান্তে পৌঁছতে চলেছে, অথবা তাদের কৃত সমস্তকিছুই, এবং তাদের ভোগ করা যাবতীয় কষ্টই, ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত। পৌলও বলেছিল যে, সে তার জীবনের সংগ্রাম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে, নিরূপিত পথের শেষ পর্যন্ত দৌড়েছে, এবং তার জন্য ন্যয়পরায়ণতার কিরীট গচ্ছিত রয়েছে। এ-ই ছিল তার অনুভব, সে পত্রগুলিতে সেকথা লিখে গির্জাগুলিতে প্রেরণ করেছিল। এহেন কর্ম তার গির্জার জন্য বহন করা দায়ভার থেকেই আসে, এবং সেহেতু পবিত্র আত্মা তা উপেক্ষা করেন। এই কথাগুলো বলার সময়ে সে কোনো অস্বস্তি বা আত্মগ্লানি অনুভব করেনি, এবং সেহেতু তার বিশ্বাস ছিল যে, এই ধরনের বিষয়গুলি খুবই স্বাভাবিক আর একেবারে সঠিক, সেগুলি এসেছে পবিত্র আত্মার কাছ থেকেই। কিন্তু আজ দেখা যায় যে সেগুলি আদৌ পবিত্র আত্মা থেকে আগত ছিল না। সেগুলি একজন মানুষের ভ্রম ছাড়া আর কিছুই ছিল না। মানুষের মধ্যে অনেক বিভ্রম রয়েছে, এবং যখন সেগুলি ঘটে তখন ঈশ্বর সেসবের প্রতি মনোযোগ দেন না বা কোন মতামত প্রকাশ করেন না। পবিত্র আত্মার অধিকাংশ কার্যই মানুষের অনুভূতির মাধ্যমে পরিচালিত হয় না—ঈশ্বরের অবতাররূপ পরিগ্রহের হওয়ার আগের কঠিন, অন্ধকার সময়গুলিতে বা কোনো প্রেরিত বা কর্মী না থাকার সময়কাল ব্যাতীত অন্য কোনো সময়ে পবিত্র আত্মা মানুষের অনুভূতির মধ্যে কার্য সম্পাদন করেন না। সেই পর্যায়ে পবিত্র আত্মার কার্য মানুষকে কিছু বিশেষ অনুভূতি দেয়। যেমন: যখন মানুষের কাছে ঈশ্বরের বাক্যগুলির পথনির্দেশ থাকে না, তখন প্রার্থনাকালে তাদের আনন্দের এক অবর্ণনীয় অনুভূতি হয়; তাদের হৃদয়ে উপভোগের অনুভূতি থাকে, তারা শান্তিতে ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে। বাক্যের দিকনির্দেশনা লাভের পর মানুষ তাদের অন্তরাত্মায় উজ্জ্বলতা অনুভব করে, নিজেদের কাজে-কর্মে অনুশীলনের একটা পথ পায়, এবং স্বাভাবিকভাবেই, তারা শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। বিপদের সম্মুখীন হলে, কিংবা ঈশ্বর তাদের বিশেষ কিছু করা থেকে বিরত রাখলে, মানুষ মনে মনে অস্থির ও অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করে। এগুলি সবই হল পবিত্র আত্মার মানুষকে প্রদান করা অনুভূতি। তবে, কোনো প্রতিকূল পরিবেশ আতঙ্কের বাতাবরণের জন্ম দিলে, সেখানে মানুষ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও ত্রস্ত হয়ে উঠলে, তা হল মানুষের এক স্বাভাবিক অভিব্যক্তি, এবং তা পবিত্র আত্মার কার্যের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়।

মানুষ সর্বদাই নিজ নিজ অনুভূতির মধ্যে বাস করে, এবং বহু বছর যাবত তারা এমনটাই করে এসেছে। মনের ভিতরে শান্তিতে থাকলে তারা কাজ করে (নিজেদের সাগ্রহ ইচ্ছাকে শান্তির অনুভূতি বলে বিশ্বাস করে), এবং অন্তরে শান্তিতে না থাকলে, করে না (তাদের অনিচ্ছা কিংবা অপছন্দকে অস্বস্তির অনুভূতি বলে বিশ্বাস করে)। সবকিছু অনায়াসে হতে থাকলে, তারা ভাবে যে তা-ই হল ঈশ্বরের ইচ্ছা। (প্রকৃতপক্ষে, এই বিষয়টা তো অনায়াসেই হওয়া উচিত, এটাই তো বস্তুসকলের স্বাভাবিক বিধান।) যখন কিছু সহজে ঘটে না, তারা ভাবে যে তা ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়। অনায়াসে না ঘটা কোনোকিছু সম্মুখীন হয়ে তারা থেমে যায়। এই অনুভূতিগুলি সঠিক নয়, এবং এই অনুভূতিগুলি অনুযায়ী কাজ-কর্ম করলে তা বহু বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। উদাহরণস্বরূপ, সত্যের অনুশীলন করতে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, বেশি করে তা হয় ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে হলে। ইতিবাচক অনেক কিছুই উপলব্ধি করা হয়ে উঠবে কঠিন। কথায় বলে, “কষ্ট বৈ ইষ্ট নেই”। মানুষের ব্যবহারিক জীবনে অনেক বেশি অনুভূতি থাকে, যা তাদের ক্রমাগত অনেক বিষয়ে বিভ্রান্ত ও অনিশ্চিত করে তোলে। সত্য উপলব্ধি না করলে মানুষের কাছে কিছুই স্পষ্ট হয় না। কিন্তু সাধারণভাবে, যখন তারা তাদের অনুভূতি অনুসারে কাজ করে বা কথা বলে, যতক্ষণ না তা প্রাথমিক নীতিগুলি লঙ্ঘন করে, পবিত্র আত্মা একেবারেই প্রতিক্রিয়া দেখান না। এটা সেই পৌল দ্বারা অনুভূত “ন্যয়পরায়ণতার কিরীট”-এর মতোই: বহু বছর ধরে, কেউই বিশ্বাস করেনি যে তার অনুভূতি ভুল ছিল বা পৌল নিজেও কখনও মনে করেনি যে তার অনুভূতি ভুল ছিল। মানুষের অনুভূতিগুলির উৎস কী? অবশ্যই, এগুলির উৎস হল প্রতিক্রিয়া, যার উৎপত্তি তাদের মস্তিষ্কে। নানাবিধ পরিবেশ এবং বিষয় অনুসারে বিভিন্ন রকমের অনুভূতি তৈরি হয়। বেশিরভাগ সময়, মানুষ একগুচ্ছ সূত্র লাভ করতে মানবোচিত যুক্তি দিয়ে অনুমান করে, যার ফলে তৈরী হয় নানান রকম মানবীয় অনুভূতি। তা উপলব্ধি না করেই, মানুষ তাদের নিজস্ব অনুমানভিত্তিক যৌক্তিকতায় প্রবেশ করে, এবং এইভাবে, মানুষের জীবন এই অনুভূতিগুলির উপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে; এগুলি তাদের জীবনে একটি আবেগসংক্রান্ত সম্বলে পরিণত হয়, যেমন পৌলের “ন্যায়পরায়ণতার কিরীট” বা সাক্ষী লি-র “বাতাসে প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ”। ঈশ্বরের পক্ষে, মানুষের এই অনুভূতিগুলির মধ্যস্থতা করার উপায় প্রায় নেই বললেই চলে, এবং অনুভূতিগুলিও ইচ্ছামত বিকাশ পেতে থাকে। আজ, আমি তোমার সঙ্গে সত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলেছি। তুমি যদি নিজের অনুভূতির উপর নির্ভর করেই চলতে থাকো, তাহলে তুমি কি এখনও অস্পষ্টতার মধ্যেই বাস করছ না? তুমি তোমার জন্য সুস্পষ্টরূপে নির্ধারিত বাক্যগুলি গ্রহণ করো না, এবং সর্বদাই নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতির উপর নির্ভর করো। এটা কি সেই অন্ধের হস্তি দর্শনই নয়? এবং শেষ পর্যন্ত তুমি কী অর্জন করবে?

ঈশ্বরের অবতারের আজকের করা সমস্ত কার্যই বাস্তব। এগুলি তুমি অনুভব কিংবা কল্পনাও করতে পারবে না, অনুমান করতে পারা তো দূরের কথা—যখন সত্য তোমার কাছে উপনীত হয়, শুধুমাত্র তখনই তুমি তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হও। কখনও কখনও, সেগুলি তোমার কাছে উপনীত হওয়া সত্ত্বেও, তুমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাও না, এবং ঈশ্বর যতক্ষণ না ব্যক্তিগতভাবে সক্রিয় হয়ে সত্য ঘটনাকে স্বচ্ছ করে না তুলছেন, ততক্ষণ মানুষ তা উপলব্ধি করবে না। একটা সময়ে, যিশুর অনুসরণকারীদের মধ্যে বহু ভ্রম ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল যে ঈশ্বরের দিন আগতপ্রায়, যে, অচিরেই তারা প্রভুর জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে প্রভু যিশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে। পিতর এই অনুভূতির জন্য সাত-সাতটি বছর অপেক্ষা করেছিল—কিন্তু সে দিন আসেনি। তারা অনুভব করেছিলো যে তাদের জীবন পরিণতি লাভ করেছে; তাদের অন্তরস্থ অনুভূতিগুলি বর্ধিত হয়েছিল এবং এই অনুভূতিগুলি ক্রমশ তীব্রতর হয়ে উঠেছিল, কিন্তু বহু ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়ে তারা সফল হতে পারেনি। তারা নিজেরাই জানতো না যে কী ঘটছে। যা সত্যই পবিত্র আত্মা থেকে আগত, তা কি অপূর্ণ থাকতে পারে? মানুষে অনুভূতিগুলি নির্ভরযোগ্য নয়। মানুষের নিজস্ব চিন্তাধারা এবং ধারণা রয়েছে বলে, তারা সেই সময়ের প্রেক্ষাপট ও অবস্থাগুলির উপর ভিত্তি করে নানাবিধ সমৃদ্ধ জোট তৈরী করে ফেলে। বিশেষ করে, যে সব মানুষে চিন্তাধারা স্বাস্থ্যকর তাদের যদি কিছু হয় তাহলে তারা অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং বাধ্য হয়েই তৈরী করে ফেলে সমৃদ্ধ জোট। এটি বিশেষত উচ্চ জ্ঞানসম্পন্ন, তত্ত্ববিদ “বিশেষজ্ঞদের” ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাদের জোটগুলি অনেক বছর ধরে পৃথিবীর বিবিধ বিষয় সামলাবার পর আরও বেশি প্রাচুর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে; তারা বুঝে ওঠার আগেই, এগুলি তাদের হৃদয় দখল করে নেয়, এগুলি তাদের অত্যন্ত শক্তিশালী অনুভূতিতে পরিণত হয়, এবং তারাও এগুলি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। মানুষ যখন কিছু করতে চায়, তখন তাদের মধ্যে অনুভূতি এবং কল্পনা প্রকাশ পাবে এবং তারা মনে করবে যে তারা সঠিক। পরে, সেগুলি পূরণ না হতে দেখে, মানুষ সম্যকভাবে বুঝতে পারে না কী ভুল হয়েছিল। সম্ভবত তারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর তাঁর পরিকল্পনা বদলে ফেলেছেন।

অনিবার্যভাবেই, সব মানুষেরই অনুভূতি রয়েছে। বিধানের যুগেও বহু মানুষেরই কিছু কিছু অনুভূতি ছিল, কিন্তু তাদের অনুভূতির মধ্যস্থ ত্রুটিগুলি ছিল এখনকার মানুষদের চেয়ে কম। এর কারণ হল, আগে, মানুষ যিহোবার উপস্থিতি চাক্ষুষ করতে সক্ষম ছিল; তারা বার্তাবহদের প্রত্যক্ষ করতে পারতো এবং তাদের স্বপ্ন ছিল। আজকের মানুষ দর্শন কিংবা বার্তাবহদের চাক্ষুষ করতে সক্ষম নয়, এবং সেহেতু তাদের অনুভূতি মধ্যস্থ ত্রুটিগুলিও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। আজকের মানুষ যখন কোনোকিছুকে সবিশেষরূপে সঠিক বলে অনুভব করে এবং তার অনুশীলন করে, পবিত্র আত্মা তাদের ভর্ৎসনা করেন না, এবং ভিতরে ভিতরে তারা খুব শান্তিতে থাকে। এটা ঘটে গেলে, শুধুমাত্র আলাপচারিতা বা ঈশ্বরের বাক্য পাঠের মাধ্যমেই তারা আবিষ্কার করে যে তারা ভুল ছিল। এর একটি দিক হল এই যে, কোনো বার্তাবাহক মানুষের সামনে উপস্থিত হয় না, তাদের স্বপ্নদর্শন খুবই কম ঘটে, এবং মানুষ আকাশের দর্শনগুলির কিছুই দেখতে পায় না। আরেকটি দিক হল যে, পবিত্র আত্মা মানুষের মধ্যে তাঁর ভর্ৎসনা ও অনুশাসন বৃদ্ধি করেন না; তাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার কার্যের কিছুই প্রায় নেই। এইভাবে, মানুষ যদি ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান না করে, যদি ব্যবহারিক উপায়ে সত্য অন্বেষণ না করে, এবং যদি অনুশীলনের পথ উপলব্ধি না করে, তাহলে তারা কোনো ফলই লাভ করবে না। পবিত্র আত্মার কার্যের নীতিগুলি হল এইরূপ: তিনি তাঁর কার্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন কোনোকিছুর প্রতিই মনোনিবেশ করেন না; যদি কোনোকিছু তাঁর এখতিয়ারভুক্ত না হয়, তাহলে তিনি কোনোভাবেই সেখানে হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্থতা করেন না, মানুষকে তাদের ইচ্ছামতো সমস্যা তৈরী করতে দেন। তুমি যেভাবেই আচরণ করো না কেন, এমন একদিন অবশ্যই আসবে যেদিন তুমি নিজেকে আতঙ্কিত ও বিহ্বল দশায় দেখতে পাবে। দেহরূপে ঈশ্বর অনন্যমনা হয়ে শুধুমাত্র তাঁর কার্যই সম্পাদন করেন, মানুষের কাজে তিনি কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করেন না। বরং, তিনি মানুষের পৃথিবীকে একটি সুবিস্তৃত পরিসর প্রদান করে স্বয়ং নিজের করণীয় কার্যটুকুই সম্পাদন করেন। তুমি যদি আজ ভুল কিছু করো তাহলে তোমাকে ভর্ৎসনা করা হবে না, আগামীকাল তুমি ভালো কিছু করলে তার জন্য তোমাকে পুরস্কৃতও করা হবে না। এগুলি হল মানবীয় বিষয়, এবং এর সঙ্গে পবিত্র আত্মার কার্যের লেশমাত্র সংযোগ নেই—তা কোনোভাবেই আমার কার্যের আওতার মধ্যে পড়ে না।

পিতর তার কাজ করার সময়ে বহু কথা বলেছিল এবং অনেক কাজ করেছিল। এগুলির কোনোটিই মনুষ্যসুলভ ধারণা থেকে আগত নয়, এমনটা কি সম্ভব? সেই সমস্তকিছুই পবিত্র আত্মা থেকে এসেছিল, এমনটা অসম্ভব। পিতর ছিল নিছকই ঈশ্বরের সৃষ্ট এক জীব, একজন অনুসরণকারী, সে ছিল পিতর, যীশু নয়, এবং উভয়ের সারসত্য এক ছিল না। পিতর পবিত্র আত্মা দ্বারা প্রেরিত হলেও, তার করা সমস্ত কিছুই কিন্তু পবিত্র আত্মা থেকে আগত নয়, কারণ, শেষ অবধি, সে ছিল একজন মানুষই। পৌলও অনেক কথা বলেছিল, সে-ও গির্জার জন্য কম পত্র রচনা করেনি, সেগুলির মধ্যে কিছু কিছু বাইবেলেও সংগৃহীত হয়েছে। পবিত্র আত্মা কোনো মতামত প্রকাশ করেননি, কারণ সেই সময়টা ছিল পৌলের পবিত্র আত্মার দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার সময়। সে কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান লাভ করেছিল, এবং সেগুলি সে প্রভুতে বিশ্বাসী ব্রাদার-সিস্টারদের জন্য লিখে রেখেছিল, তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। যীশুর কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। পবিত্র আত্মা তাকে সেই সময়ে থামাননি কেন? এর কারণ ছিল যে মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারা থেকে কিছু কিছু অশুদ্ধতা তৈরী হয়; তা হওয়া অবশ্যম্ভাবী। উপরন্তু, তার কাজকর্ম কোনোরকম অযাচিত হস্তক্ষেপের বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাত্রায় গিয়ে পৌঁছয়নি। যখন এইধরনের কিছু মানবোচিত কাজ করা হয়, তখন মানুষের পক্ষে তা গ্রহণ করাটা সহজতর হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারার অশুদ্ধতাগুলি যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো কিছুতে অযাচিত হস্তক্ষেপ না ঘটায়, ততক্ষণ সেগুলিকে স্বাভাবিক বলে গণ্য করা হয়। প্রকারান্তরে বললে, স্বাভাবিক চিন্তাধারা সম্পন্ন মানুষ এইভাবে ভাবনা-চিন্তা করতে সক্ষম। মানুষ যখন দেহের মধ্যে বেঁচে থাকে, তখন তাদের নিজস্ব একটা চিন্তাধারা থাকে, কিন্তু সেগুলি নির্মূল করার কোনো উপায় নেই। তবে, কিছুটা সময়ের জন্য ঈশ্বরের কার্য অনুভব করার এবং কিছু কিছু সত্য উপলব্ধি করার পর, এই ধরনের চিন্তাধারাগুলি কমে আসে। যখন মানুষ আরও অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা লাভ করে, তারা তখন আরও স্পষ্টরূপে দেখতে সক্ষম হয়, এবং সেহেতু কোনোকিছুতে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপও কম করে। অন্য কথায়, যখন মানুষের কল্পনা এবং অনুমানপ্রসূত যৌক্তিকতাগুলির খণ্ডণ করা হয়, তখন তাদের অস্বাভাবিক অনুভূতিগুলিও কমে যায়। যারা দেহের মধ্যে বাস করে তাদের সকলেরই নিজস্ব চিন্তাধারা রয়েছে, কিন্তু পরিশেষে, ঈশ্বর তাদের উপরে ততদূর অবধি কাজ করবেন যতক্ষণ তাদের সেই চিন্তাধারাগুলি তাদেরকে আর বিশৃঙ্খল করে তুলতে সক্ষম হবে না, তারা তাদের জীবনে আর অনুভূতির উপর নির্ভর করবে না, তাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, তারা বাস্তবিকতার মধ্যে ঈশ্বরের বাক্যগুলি অনুসারে জীবনযাপনে সক্ষম হবে, তারা আর এমন কিছু করবে না যা অস্পষ্ট বা শূন্যগর্ভ, এবং তারপরে তারা এমন কোনো কাজও করবে না যেগুলি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এইভাবে, তাদের ভ্রমগুলিও কেটে যাবে, এবং সেই সময় থেকে তাদের কাজকর্মগুলিই হয়ে উঠবে তাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা।

পূর্ববর্তী: অনুশীলন (৪)

পরবর্তী: বিজয়কার্যের অন্তর্নিহিত সত্য (১)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন