অনুশীলন (৩)
তোমাদের অবশ্যই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ক্ষমতা থাকতে হবে, নিজে থেকে ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করতে, নিজে থেকে ঈশ্বরের বাক্য অনুভব করতে, এবং অন্যদের নেতৃত্ব ছাড়াই একটি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য, প্রকৃত অভিজ্ঞতায় প্রবেশ করতে, এবং প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের জন্য, তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের উপর নির্ভর করতে সক্ষম হতে হবে। শুধুমাত্র তেমন হলে তবেই তুমি দৃঢ় হয়ে দাঁড়াতে পারবে। আজ, অনেক মানুষই ভবিষ্যত ক্লেশ ও পরীক্ষাগুলি পুরোপুরি উপলব্ধি করে না। ভবিষ্যতে, কিছু কিছু মানুষ ক্লেশ অনুভব করবে, এবং কেউ কেউ শাস্তি ভোগ করবে। এই শাস্তি হবে আরো কঠোর; তা হবে সত্যের আগমন। আজ, তুমি যা কিছু অনুভব, অনুশীলন, এবং প্রকাশ কর, তা ভবিষ্যতের পরীক্ষার ভিত্তি স্থাপন করে এবং অন্ততপক্ষে, তোমাকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে সক্ষম হতেই হবে। আজ, গির্জার অনেকের অবস্থা সাধারণভাবে নিম্নরূপ: যদি কাজ করার জন্য নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীরা থাকে, তাহলে তারা খুশি হয়, আর যদি না থাকে, তাহলে তারা অসন্তুষ্ট হয়। তারা না দেয় গির্জার কাজের প্রতি মনোযোগ, না দেয় তাদের নিজেদের আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে, এবং তারা সামান্যতম ভারবহনও করে না—তারা হানহাও পাখির মতো বিহ্বলভাবে চলতে থাকে।[ক] সত্যি কথা বলতে কি, বহু মানুষের মধ্যেই আমি যে কাজটি করেছি তা নিছকই বিজয়কার্য, কারণ অনেকেই মৌলিকভাবে নিখুঁত হওয়ার অযোগ্য। মানুষের একটা ক্ষুদ্র অংশকেই নিখুঁত করে তোলা যায়। এই বাক্যগুলি শুনে তুমি যদি মনে কর, “যেহেতু ঈশ্বরের কাজ শুধুমাত্র মানুষকে জয় করার জন্যই, তাই আমি শুধু পল্লবগ্রাহী ভাবেই অনুসরণ করব,” এহেন মনোভাব কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? তোমার মধ্যে যদি সত্যিই বিবেকবোধ থেকে থাকে, তাহলে তোমার অবশ্যই একটি দায়ভার এবং দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। তোমাকে অবশ্যই বলতে হবে: "আমাকে জয় করা হবে না নিখুঁত করে তোলা হবে তা নির্বিশেষে, আমাকে অবশ্যই সাক্ষ্যের এই পদক্ষেপটি যথাযথভাবে বহন করতে হবে।" ঈশ্বরের এক জীব হিসাবে, কাউকে ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে জয় করা যেতে পারে, এবং পরিণামে, সে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়, ঈশ্বরের ভালোবাসাকে ঈশ্বরের প্রতি প্রেমপূর্ণ হৃদয়ে পরিশোধ করে, এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গ করে। এ হল মানুষের দায়িত্ব, এ হল সেই কর্তব্য যা মানুষের পালন হওয়া উচিত, এবং সেই ভার যে মানুষের বহন করা উচিত, এবং এই অর্পিত দায়িত্ব মানুষকে সম্পূর্ণ করতে হবে। তবেই সে প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়। আজ, তুমি গির্জায় যা কর তা কি তোমার দায়িত্বপালন? তা নির্ভর করছে তুমি ভারগ্রস্ত কিনা তার উপর, এবং তোমার নিজের জ্ঞানের উপর। এই কাজের অভিজ্ঞতায়, মানুষকে যদি জয় করা হয় হয়, এবং তার যদি প্রকৃত জ্ঞান থাকে, তবে সে তার নিজের সম্ভাবনা বা ভাগ্য নির্বিশেষে আজ্ঞাকারিতায় সক্ষম হবে। এইভাবে, ঈশ্বরের মহান কার্যও সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধ হবে, কারণ তোমরা এর অধিক কিছু করতে সক্ষম নও, এবং কোনও উচ্চ চাহিদা পূরণ করতেও তোমরা অক্ষম। তবুও ভবিষ্যতে, কিছু কিছু মানুষকে নিখুঁত করে তোলা হবে। তাদের ক্ষমতা উন্নত হবে, তাদের আত্মা গভীরতর জ্ঞান প্রাপ্ত হবে, এবং তাদের জীবন বিকশিত হবে…। তবুও কেউ কেউ তা অর্জনে সম্পূর্ণ অক্ষম, এবং তাই তাদের উদ্ধার করা যাবে না। আমি যে তাদের উদ্ধার করা যাবে না বলি, তার একটি কারণ রয়েছে। ভবিষ্যতে, কাউকে কাউকে জয় করা হবে, কাউকে কাউকে নির্মূল করা হবে, কাউকে কাউকে নিখুঁত করে তোলা হবে, আর কাউকে কাউকে ব্যবহার করা হবে—এবং তাই কেউ কেউ ক্লেশ ভোগ করবে, কেউ বা শাস্তি ভোগ করবে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভাগ্য উভয়ই), কিছু কিছু মানুষকে নির্মূল করা হবে, এবং কিছু কিছু মানুষ টিঁকে যাবে। এর মাধ্যমে, প্রত্যেককে তাদের প্রকার অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে, যেখানে এক একটি গোষ্ঠী এক এক ধরনের ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করবে। সব মানুষকেই নির্মূল করা হবে না, এবং সব মানুষকে নিখুঁত করে তোলাও হবে না। এর কারণ হল চীনা মানুষদের ক্ষমতা খুবই নগণ্য, এবং তাদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই আছে যারা পৌলের মতো আত্ম-সচেতনতার অধিকারী। তোমাদের মধ্যে, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম, যারা পিতরের মতো ঈশ্বরকে ভালোবাসতে দৃঢ়সংকল্প, বা যাদের ইয়োবের অনুরূপ বিশ্বাস রয়েছে। তোমাদের মধ্যে এমন লোক খুব কমই আছে যারা দাউদের মতো যিহোবাকে ভয় আর সেবা করে, যাদের একই স্তরের আনুগত্য রয়েছে। কত শোচনীয় তোমরা!
বর্তমানে, নিখুঁত করে তোলার বিষয়টি কিন্তু নিছকই একটি দিকমাত্র। যা-ই ঘটুক না কেন, তোমাদের অবশ্যই সাক্ষ্যের এই ধাপটি যথাযথভাবে বহন করতে হবে। যদি তোমাদের মন্দিরে ঈশ্বরের সেবা করতে বলা হয়, তোমরা তা কীভাবে করবে? তুমি যদি একজন যাজক না হও, এবং তোমার যদি প্রথমজাত পুত্র অথবা ঈশ্বরের পুত্রদের মর্যাদা না থাকে, তবুও কি তুমি অনুগত থাকতে সক্ষম হবে? তবুও কি তুমি রাজ্য বিস্তারের কাজে তোমার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যয় করতে সক্ষম হবে? তবুও কি তুমি ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্বের কাজ সঠিকভাবে করতে সক্ষম হবে? তোমার জীবন যতই বিকশিত হোক না কেন, বর্তমানের কার্য তোমাকে অন্তর থেকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করাবে এবং তোমার সমস্ত পূর্বধারণাকে অপসৃত করবে। জীবনের অন্বেষণ করার জন্য যা প্রয়োজন তা তোমার থাকুক বা না থাকুক, ঈশ্বরের কাজ তোমাকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যয়ী করে তুলবে। কিছু কিছু মানুষ বলে: "আমি শুধু ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, এবং আমি বুঝতে পারি না যে জীবনের অন্বেষণ করার অর্থ কী।" এবং কেউ কেউ বলে: “আমি ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাসে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছি। আমি জানি যে আমাকে নিখুঁত করে তোলা যায় না, এবং তাই আমি শাস্তি পেতে প্রস্তুত।" এমনকি এই ধরনের মানুষ, যারা শাস্তি পেতে বা ধ্বংস হতে প্রস্তুত, তাদেরও স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমান কার্য ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত হয়। কিছু কিছু মানুষ এমনও বলে: “আমি আমায় নিখুঁত করে তুলতে বলি না, কিন্তু, আজ, আমি ঈশ্বরের সমস্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, এবং স্বাভাবিক মানবতাময় জীবনযাপন করতে, আমার ক্ষমতাকে উন্নত করতে, এবং ঈশ্বরের সকল আয়োজন মেনে চলতে ইচ্ছুক।" এতে, তারা বিজিতও হয়েছে এবং সাক্ষ্যও বহন করেছে, যা প্রমাণ করে যে, এই সব মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান রয়েছে। কার্যের এই পর্যায়টি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে, বিদেশে এটি দ্রুততর গতিতে সম্পন্ন করা হবে। বর্তমানে, বিদেশের মানুষজন সবাই অধীর হয়ে চীনের দিকে ছুটছে—এবং সেহেতু, যদি তোমাদের সম্পূর্ণ করা না যায়, তবে তোমরা বিদেশের মানুষজনের থেকেও পিছিয়ে পড়বে। সেই সময়ে, তোমরা কতটা ভালোভাবে প্রবেশ করেছ, বা তোমরা কীরকম, তা নির্বিশেষে, সময় এলেই আমার কাজ শেষ এবং সম্পূর্ণ হবে। আমার কাজ তোমাদের দ্বারা বিলম্বিত হবে না। আমি সকল মানবজাতির কার্য করি, এবং তোমাদের জন্য আমার অধিকতর সময় ব্যয় করার দরকার নেই! তোমাদের অনুপ্রেরণা অত্যন্ত কম, আত্ম-সচেতনতার খুবই অভাব! তোমরা নিখুঁত হওয়ার যোগ্য নও—তোমাদের কোনও সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে! ভবিষ্যতেও, মানুষ যদি এতটাই শিথিল এবং ঢিলেঢালা-অগোছালোই থেকে যায়, এবং নিজেদের দক্ষতার উন্নতি ঘটাতে না পারে, তবুও কিন্তু তা সমগ্র মহাবিশ্বের কাজকে ব্যাহত করবে না। যখন ঈশ্বরের কাজ শেষ করার সময় আসবে, তখন তা শেষ হবে, এবং যখন মানুষকে বিনাশ করার সময় আসবে, তখন তাদের বিনাশ করা হবে। অবশ্যই, যাদের নিখুঁত করে তোলা উচিত, এবং যারা নিখুঁত হয়ে ওঠার যোগ্য, তাদের নিখুঁত করাও হবে—কিন্তু তোমাদের যদি সত্যিই কোনো আশা না থাকে, তাহলে ঈশ্বরের কাজ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবে না! শেষ পর্যন্ত, যদি তোমাকে জয় করা হয়, তবে তা-ও সাক্ষ্য বহন করা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। ঈশ্বর তোমাদের কাছে যা চান তার সীমা-পরিসীমা রয়েছে; মানুষ যতটুকু উচ্চতাই অর্জন করতে সক্ষম হোক, তা হল তার পক্ষে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যেরই উচ্চতা। এহেন সাক্ষ্য যে মানুষের কল্পনামাফিক উচ্চতম ও প্রবল আলোড়নসৃষ্টিকারী হবে, তা কিন্তু নয়—তোমাদের চীনা মানুষজনের মধ্যে এটি অর্জনের কোন উপায়ই নেই। আমি এই পুরোটা সময় তোমাদের সাথে ব্যাপৃত ছিলাম, এবং তোমরা নিজেরাই তা দেখেছ: আমি তোমাদের বলেছি প্রতিরোধ না করতে, বিদ্রোহী না হতে, আমার আড়ালে এমন কোনও কাজ না করতে, যা বিঘ্ন বা ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। আমি এই বিষয়ে অনেকবার সরাসরি মানুষের কঠোর সমালোচনা করেছি, কিন্তু তা-ও যথেষ্ট নয়—পিছন ফিরেই তারা বদলে যায়, আবার কেউ কেউ গোপনে প্রতিরোধ করে, কোনো প্রকার বিবেক-দংশন ছাড়াই। তুমি কি মনে কর আমি এর কিছুই জানি না? তোমার কি মনে হয় যে তুমি আমার জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করবে আর এর কোনো পরিণাম হবে না? তুমি কি মনে কর যে, যখন তুমি আমার আড়ালে আমার কাজ ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা কর, তখন আমি তা জানতে পারি না? তুমি কি মনে কর যে তোমার তুচ্ছ কৌশলগুলি তোমার চরিত্রের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে? আপাতদৃষ্টিতে তুমি সবসময়ই আপাতদৃষ্টিতে আজ্ঞাকারী হলেও গোপনে বিশ্বাসঘাতক, তুমি তোমার হৃদয়ে অশুভ চিন্তা পোষণ কর, তোমার মত মানুষদের জন্য মৃত্যুও যথেষ্ট শাস্তি নয়! তুমি কি মনে কর যে তোমার মধ্যে পবিত্র আত্মার দ্বারা কৃত কিছু ক্ষুদ্র কাজই আমার জন্য তোমার শ্রদ্ধাকে প্রতিস্থাপন করার পক্ষে যথেষ্ট? তুমি কি মনে কর যে স্বর্গের সমালোচনা করার মাধ্যমে তুমি আলোকপ্রাপ্ত হয়েছ? তোমার কোনো লজ্জাই নেই! কতই না মূল্যহীন তুমি! তুমি! কি মনে কর যে তোমার "সৎকার্যসমূহ" স্বর্গে প্রেরিত হচ্ছিল, এবং যে, এর ফলে তিনি একটি ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন এবং যৎসামান্য প্রতিভা দান করে তোমায় এমন বাক্যবাগীশ করে তুলেছেন যে তুমি অপরকে এবং আমাকে প্রতারিত করতে পারো? কত যুক্তিহীন তুমি! তুমি কি জানো, যে তোমার আলোকপ্রাপ্তির উৎস কোথায়? তুমি কি জানো না, যে তুমি কার খাদ্য গ্রহণ করে বেড়ে উঠেছ? কত-ই না বিবেকবর্জিত তুমি! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ তো মোকাবিলা করার চার বা পাঁচ বছর পরেও বদলাওনি, আর তোমরা এইসব বিষয়ে সম্যকরূপে অবগত। তোমাদের উচিত নিজ-নিজ প্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছতা থাকা, এবং যখন, একদিন, তোমাদের পরিত্যাগ করা হবে, তখন আপত্তি না করা। কিছু কিছু মানুষ, যারা তাদের সেবায় তাদের চেয়ে উর্দ্ধে এবং নিম্নে অবস্থানরত সকলকেই প্রতারিত করে, তাদের অনেক মোকাবিলা করা হয়েছে; অর্থলোভী হওয়ায় কিছু কিছু মানুষেরও মোকাবিলার পরিমাণ সামান্য ছিলো না; পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে স্পষ্ট সীমানা বজায় না রাখার কারণে কিছু কিছু মানুষকে প্রায়শই মোকাবেলা করা হয়েছে; অলস, শুধুমাত্র দেহের প্রতি সচেতন, এবং গির্জা পরিদর্শন করাকালীন নীতি অনুসারে কাজ না করার জন্য কিছু কিছু মানুষের অনেক মোকাবিলা করা হয়েছে; কিছু কিছু মানুষ যেখানেই যায় সেখানেই সাক্ষ্য বহনে ব্যর্থ হওয়ার কারণে, তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে এবং বেপরোয়াভাবে কাজ করার কারণে, এবং এমনকি জ্ঞাতসারেই পাপ করার কারণেও, এই বিষয়ে তাদের বহুবার সতর্ক করা হয়েছে; কেউ কেউ যারা সমাবেশের সময় কেবলমাত্র বাক্যের এবং মতবাদের কথা বলে, অন্য সকলের প্রতি উন্নাসিক আচরণ করে, যাদের মধ্যে সত্যের বাস্তবতার সামান্যটুকুও নেই, এবং যারা নিজেদের ভ্রাতা ও ভগিনীদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চলে—তারা প্রায়শই এই কারণে উন্মোচিত হয়েছে। আমি এই বাক্যগুলি তোমাদের বহুবার বলেছি, আর আজ, আমি আর এসব বলব না—তোমরা যা চাও তাই করো! নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নাও! অনেকের ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র এক বা দুই বছরের জন্য এইভাবে মোকাবিলা করা যথেষ্ট হয়নি, কারো কারো ক্ষেত্রে তা করতে তিন-চার বছর লেগে গিয়েছে, আবার কেউ কেউ এমনও আছে যারা এক দশকেরও বেশি সময়কাল জুড়ে এহেন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তারা বিশ্বাসী হয়ে ওঠার পর তাদের মোকাবিলা করার পাত্রে পরিণতও করা হয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের মধ্যে পরিবর্তন সামান্যই হয়েছে। তুমি কী বলবে, তুমি কি শূকরের মত নও? এমন কি হতে পারে যে ঈশ্বর তোমার প্রতি অন্যায্য? মনে কোরো না যে তোমরা একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছতে অক্ষম হলে ঈশ্বরের কাজ শেষ হবে না। তোমরা ঈশ্বরের প্রয়োজন পূরণ করতে সক্ষম না হলেও কি ঈশ্বর তখনও তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন? আমি তোমাকে স্পষ্টভাবে বলছি—বিষয়টি এমনতর নয়। বিষয়সকল সম্পর্কে এমন আশাব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গি রেখো না! আজকের কার্যের একটি সময়সীমা রয়েছে, এবং ঈশ্বর যে নিছক তোমার সঙ্গে ক্রীড়ারত, তেমনটা কিন্তু নয়! পূর্বে, সেবা-প্রদানকারীদের বিচারের অভিজ্ঞতা লাভের ক্ষেত্রে, মানুষ মনে করত যে, তাদের যদি ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সাক্ষ্যে দৃঢ় হয়ে থাকতে এবং তাঁর দ্বারা বিজিত হতে হয়, তবে তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে হত—তাদের স্বেচ্ছায় এবং সানন্দে একজন সেবা-প্রদানকারী হতে হত, এবং তাদের নিয়ত ঈশ্বরের প্রশংসা করতে হত, এবং তারা সামান্য অসংযত বা বেপরোয়াও হতে পারত না। তারা ভেবেছিল যে শুধুমাত্র তখনই তারা সত্যিকারের সেবা-প্রদানকারী হয়ে উঠবে, কিন্তু ব্যাপারটা কি সত্যিই তাই? সেই সময়ে, নানা ধরনের মানুষকে অনাবৃত করা হয়েছিল; তারা সব ধরনের আচরণ প্রদর্শন করেছিল। কেউ কেউ অভিযোগ করেছিল, কেউ কেউ ধারণার প্রচার করেছিল, কেউ কেউ সমাবেশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল এবং কেউ কেউ গির্জার অর্থও বিতরণ করেছিল। ভ্রাতা আর ভগিনীরা একে অপরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিল। তা প্রকৃতপক্ষেই ছিল এক মহান বন্ধনমুক্তি, তবে এর একটি ভালো দিক ছিল: কেউ-ই পশ্চাদ্গমন করেনি। এটি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়বস্তু। এই কারণে তারা শয়তানের সম্মুখে সাক্ষ্যদানের একটি পর্যায়কে বহন করেছিল এবং অতঃপর ঈশ্বরের ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় লাভ করেছিল, এবং আজকের দিন পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছে। ঈশ্বরের কাজ তুমি যেমনটা কল্পনা কর তেমনটা নয়, বরং, যখন সময় শেষ হবে তখন কাজও শেষ হয়ে যাবে, তা সে তুমি যে অবধিই পৌঁছে থাকো না কেন। কিছু কিছু মানুষ বলতে পারে: "এমন আচরণ করে আপনি মানুষকে উদ্ধার করেন না বা তাদের ভালোবাসেন না—আপনি ধার্মিক ঈশ্বর নন।" আমি তোমায় স্পষ্টভাবে বলছি: আমার আজকের কার্যের কেন্দ্রবিন্দু হল তোমাকে জয় করা আর তোমাকে দিয়ে সাক্ষ্য বহন করানো। তোমাকে উদ্ধার করা এর একটি আনুষঙ্গিকমাত্র; তোমাকে উদ্ধার করা যাবে কিনা তা তোমার নিজস্ব অন্বেষণের উপর নির্ভর করে, এবং তা আমার সাথে সংযুক্ত নয়। তবুও আমাকে তোমায় জয় করতেই হবে; আমাকে নিয়ত সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা কোরো না—বর্তমানে আমি কাজ করি এবং তোমায় উদ্ধার করি, এর উল্টোটা নয়!
বর্তমানে, তোমরা যা উপলব্ধি করতে পেরেছ তা ইতিহাস জুড়ে এমন যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে উচ্চতর যাকে নিখুঁত করা হয়নি। তা তোমার পরীক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানই হোক অথবা ঈশ্বরে বিশ্বাস, তা সবই ঈশ্বরে বিশ্বাসী যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে উচ্চতর। পরিবেশের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার আগে তোমরা যা জানতে পারো, তোমরা সেটাই উপলব্ধি করতে পারো, কিন্তু তোমাদের প্রকৃত উচ্চতা সেগুলির সঙ্গে একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তোমরা যা জান তা তোমরা যা অনুশীলন করছ তার তুলনায় উচ্চতর। যদিও তোমরা বলো যে, ঈশ্বরবিশ্বাসীদের ঈশ্বরপ্রেমীও হতে হবে, এবং আশীর্বাদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং শুধুমাত্র ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যেই প্রচেষ্টা করা উচিত, তোমাদের জীবনে যা প্রকাশিত হয়েছে তা কিন্তু এর চেয়ে অনেকটাই আলাদা, এবং তা ব্যাপকভাবে কলঙ্কিত। অধিকাংশ মানুষই শান্তি ও অন্যান্য সুবিধার জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। ঈশ্বরবিশ্বাস তোমার উপকারে না এলে তুমি ঈশ্বরবিশ্বাসী হও না, এবং তুমি যদি ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে না পারো, তাহলেই তোমার মুখ ভার হয়ে যায়। তুমি যা বলেছো তা কীভাবে তোমার প্রকৃত উচ্চতা হতে পারে? অনিবার্য পারিবারিক ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে, যেমন শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়া, প্রিয়জনদের হাসপাতালে ভর্তি করা, ফসলের খারাপ ফলন, এবং পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতন, এমনকি এইসব প্রায়শই ঘটে যাওয়া, নৈমিত্তিক বিষয়গুলি তোমার সামলাবার পক্ষে অত্যন্ত বেশি হয়ে পড়ে। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে, তুমি আতঙ্কিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ো—আর বেশিরভাগ সময়ই, তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করো। তুমি অভিযোগ করো যে ঈশ্বরের বাক্য তোমাকে প্রতারিত করেছে, ঈশ্বরের কাজ তোমাকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে। তোমাদের কি এমন চিন্তার উদ্রেক ঘটে না? তুমি কি মনে করো যে তোমাদের মধ্যে এমন ঘটনা কদাচিৎই ঘটে? তোমরা এই ধরনের ঘটনাগুলির মধ্যেই প্রতিদিন জীবন অতিবাহিত করো। তুমি নিজের ঈশ্বরবিশ্বাসকে সার্থক করে তোলা এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করার সম্পর্কে সামান্যতম চিন্তাও করো না। তোমাদের প্রকৃত মানসিক উচ্চতা অত্যন্ত কম, তা এমনকি কোনও ছোট মুরগীছানার থেকেও কম। যখন তোমার পারবারিক ব্যবসায় আর্থিক লোকসান ঘটে তখন তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করো, যখন তুমি এমন কোনও পরিবেশের সম্মুখীন হও যেখানে ঈশ্বরের সুরক্ষা নেই, তখনও তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করো, আর এমনকি তোমার খামারের কোনো একটি মুরগীছানা মারা গেলে বা কোনো বৃদ্ধ গাভী অসুস্থ হলেও তুমি অভিযোগ করো। যখন তোমার ছেলের বিয়ের সময় আগত, অথচ তোমার পরিবারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই, তখন তুমি অভিযোগ করো; তুমি অতিথিসেবার দায়িত্ব পালন করতে চাও, অথচ তা বহন করার সামর্থ তোমার নেই, তখনও তুমি অভিযোগ করো। তোমার অভিযোগের কোনো শেষ নেই, এবং এই কারণেই তুমি কখনও কখনও সমাবেশে যোগ দাও না বা ঈশ্বরের বাক্য ভোজন আর পান করো না, কখনও কখনও দীর্ঘ সময়ের জন্য নেতিবাচক হয়ে পড়ো। তোমার সাথে বর্তমানে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনারই তোমার সম্ভাবনাসমূহের বা ভাগ্যের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই; তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও এই ঘটনাগুলি ঘটত, তবুও আজ তুমি সেই সবের দায়ভার ঈশ্বরের হাতে তুলে দাও এবং জোর দিয়ে বলো যে ঈশ্বর তোমার বিনাশ করেছেন। তোমার ঈশ্বরবিশ্বাস নিয়ে কী বলা যায়? তুমি কি সত্যিই নিজের জীবন নিবেদন করেছ? তোমাদেরকে যদি ইয়োবের অনুরূপ পরীক্ষাসমূহের কষ্টভোগ করতে হত, তাহলে তোমরা, যারা আজ ঈশ্বরের অনুগামী, তাদের মধ্যে কেউই দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হবে না, সকলেরই পতন ঘটবে। এবং তোমাদের ও ইয়োবের মধ্যে, খুব সহজভাবেই, বিস্তর ফারাক রয়েছে। আজ, যদি তোমাদের অর্ধেক সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়, তোমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখাবে; যদি তোমাদের সন্তানদের তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়, তোমরা তোমাদের উপর অবিচার করা হয়েছে, এই মর্মে প্রবল অভিযোগ জানাবে; যদি তোমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়টিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়, তখন তুমি ঈশ্বরের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবে; তুমি প্রশ্ন করবে যে কেন আমি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য শুরুতে এত বাক্য বলেছিলাম। হেন কার্য নেই যা এই সময়ে তোমরা করার স্পর্ধা দেখাবে না। এর থেকে এটাই বোঝা যায় যে, তোমরা কোনও প্রকৃত অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করোনি এবং তোমাদের কোনো প্রকৃত মানসিক উচ্চতাও নেই। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে পরীক্ষাগুলি বিদ্যমান সেগুলি সুবিশাল, তোমরা অনেক বেশি জানো, কিন্তু তোমরা যেটা উপলব্ধি করো সেটা তোমরা যা জানো তার হাজার ভাগের এক ভাগও নয়। নিছক উপলব্ধি ও জ্ঞান লাভেই থেমে থেকেও না; তুমি প্রকৃতপক্ষেই কতটা অনুশীলন করতে পারো, স্বীয় কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি এবং প্রদীপ্তির কতটা অংশ অর্জিত হয়েছিল, এবং তোমার অনুশীলনের কতগুলির দ্বারা তুমি তোমার নিজ সংকল্প উপলব্ধি করেছো, তা তোমায় দেখতে হবে। তোমায় নিজের আত্মিক উচ্চতা এবং অনুশীলনকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে। তোমার ঈশ্বরবিশ্বাসে, তুমি কারোর জন্য নিছকই দায়সারা ভাবে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না—শেষ পর্যন্ত তুমি সত্য এবং জীবন অর্জন করতে পারবে কিনা, তা নির্ভর করছে তোমার নিজস্ব অন্বেষণের উপর।