অনুশীলন (১)

অতীতে, মানুষ যেভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, তাতে প্রচুর বিচ্যুতি এবং এমনকি অযৌক্তিকতাও ছিল। তারা ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তার মানগুলি একেবারেই উপলব্ধি করতে পারেনি, তাই অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের অভিজ্ঞতা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল। ঈশ্বর মানুষের কাছে চান যে, তারা যেন স্বাভাবিক মনুষ্যসুলভ জীবনযাপন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য ও পোশাকের ক্ষেত্রে আধুনিক রীতিনীতি অনুসরণ করা, স্যুট এবং টাই পরিধান করা, আধুনিক শিল্পকলা সম্পর্কে কিছুটা অবগত হওয়া মানুষের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য এবং অবসর সময়ে তারা শিল্প, সংস্কৃতি এবং বিনোদন উপভোগ করতে পারে। তারা স্মরণীয় মুহূর্তগুলির ছবি তুলতে পারে, পড়তে আর প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারে, এবং তাদের তুলনামূলকভাবে ভাল জীবনযাপনের পরিবেশও রয়েছে। এগুলি হল এমন সব ব্যাপার, যা স্বাভাবিক মানবোচিত জীবনের ক্ষেত্রে সুপ্রযুক্ত, অথচ মানুষ এগুলিকে ঈশ্বরের দ্বারা ঘৃণ্য বস্তু হিসাবে দেখে, এবং এগুলি করা থেকে নিজেদের বিরত রাখে। তাদের অনুশীলনের মধ্যে রয়েছে নিছকই কিছু নিয়মের অনুসরণ, যা এমন এক জীবনের দিকে নিয়ে যায় যা ডোবার জলের মতোই নিস্তরঙ্গ এবং সম্পূর্ণ অর্থহীন। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর এমনটা কখনোই দাবি করেননি যে মানুষ এইভাবে কাজ করুক। মানুষ শুধুই তাদের নিজস্ব স্বভাবকে সংকুচিত করতে চায়, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিজেদের আত্মার অভ্যন্তরে অবিরাম প্রার্থনা করে চলে, তাদের মন ক্রমাগত চিন্তা করে চলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিয়ে, তাদের চোখ ক্রমাগত এটা-সেটা পর্যবেক্ষণ করে এক প্রবল ভীতি নিয়ে যে, ঈশ্বরের সাথে তাদের সংযোগ কোনো না কোনো ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই সমস্ত সিদ্ধান্তে মানুষ নিজেরাই উপনীত হয়েছে; এগুলি হল মানুষের দ্বারা তাদের নিজেদের জন্য নির্ধারিত নিয়ম মাত্র। তুমি যদি তোমার নিজ প্রকৃতি ও সারমর্ম সম্পর্কে অবগত না থাকো, আর তুমি যদি তোমার নিজের অনুশীলন কোন স্তরে পৌঁছাতে পারে তা উপলব্ধি করতে না পারো, তাহলে তোমার কাছে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় থাকবে না যে ঈশ্বর মানুষের জন্য ঠিক কোন মানগুলি চান, এবং তোমার কাছে অনুশীলনের সঠিক পথও থাকবে না। যেহেতু তুমি উপলব্ধি করতে পারো না যে ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে ঠিক কী চান, তাই তোমার মন সর্বদাই অস্থির হয়ে থাকে, তুমি ঈশ্বরের অভিপ্রায় বিশ্লেষণ করতে করতে নিজের মস্তিষ্ক-পীড়ন ঘটাও, এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা প্রণোদিত ও আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার কোনো উপায় খুঁজতে গিয়ে অসহায় ভাবে বিচলিত হয়ে পড়। ফলস্বরূপ, তুমি অনুশীলনের এমন কয়েকটি উপায় তৈরী করো, যা তোমার উপযুক্ত বলে মনে হয়। ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে ঠিক কী চান, সে বিষয়ে তোমার কোনোই ধারণা নেই; তুমি শুধু নির্দ্বিধায় তোমার নিজস্ব অনুশীলনগুলি চালিয়ে যাও, তার পরিণাম সম্পর্কে তোমার খুব একটা যায়-আসে না, এবং এমনকি তোমার অনুশীলনে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে কি না, তা নিয়ে তো তোমার আরোই কিছু যায়-আসে না। এইভাবে, তোমার অনুশীলন স্বাভাবিকভাবেই যথাযথ হয় না, তা হয় নীতিহীন। এতে বিশেষভাবে, স্বাভাবিক মানবীয় হেতুবোধ এবং বিবেক, এবং সেইসাথে ঈশ্বরের প্রশংসা এবং পবিত্র আত্মার সমর্থনের অভাব রয়েছে। নিছকই তোমার নিজের পথ বেছে নেওয়াটা অত্যন্ত রকমের সহজ হয়ে যায়। এই ধরনের অনুশীলন হল শুধুমাত্র নিয়ম অনুসরণ করা, বা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে সীমাবদ্ধ করার জন্য এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিজের উপর আরও বোঝা চাপিয়ে নেওয়া। তবুও তুমি মনে করো যে তোমার অনুশীলন সম্পূর্ণরূপে যথাযথ ও নিখুঁত, তুমি জানো না যে তোমার অধিকাংশ অনুশীলন জুড়েই রয়েছে অপ্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া বা আচারসমূহ। এমন অনেকেই আছে যারা বছরের পর বছর ধরে এইরকম অনুশীলন করে চললেও মূলত তাদের স্বভাবের কোন পরিবর্তন হয় না, হয় না কোনো নতুন উপলব্ধি আর কোনো নতুন প্রবেশ। তারা নিজেদের অজান্তে সেই একই পুরোনো ভুলগুলি পুনরায় করে এবং নিজেদের পাশবিক স্বভাবকে বিকাশের সম্পূর্ণ সুযোগ দেয়, এবং তা তারা এত মাত্রায় করে যে, অনেক সময়ই তারা অযৌক্তিক, অমানবিক কাজ করে বসে, করে এমন আচরণ করে যা মানুষকে সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্ত ও বিহ্বল করে দেয়। এমন মানুষের কি স্বভাবগত রূপান্তরের অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে বলা যেতে পারে?

এখন, ঈশ্বরবিশ্বাস ঈশ্বরের বাক্যের যুগে প্রবেশ করেছে। তুলনামূলকভাবে বলতে গেলে, মানুষ এককালে যতটা প্রার্থনা করেছিল এখন আর ততটা করে না; ঈশ্বরের বাক্যগুলি সত্যের সমস্ত দিক এবং অনুশীলনের উপায়গুলিকে স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তাই মানুষকে আর অনুসন্ধান করতে এবং অসহায় ভাবে হাতড়ে বেড়ানোর কোনো দরকার নেই। রাজ্যের যুগের জীবনে, ঈশ্বরের বাক্যগুলি মানুষকে সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে যায়, এবং এ হল এমন এক জীবন, যেখানে তারা সবকিছু সুস্পষ্টরূপে দেখতে সক্ষম হয়—কারণ ঈশ্বর স্পষ্টভাবে সবকিছুর আয়োজন করেছেন, এবং মানুষকে আর জীবনের মধ্যে দিয়ে তাদের চলার পথ হাতড়ে বেড়াতে হয় না। বিবাহ, পার্থিব ঘটনা, জীবন, খাদ্য, পোশাক ও আশ্রয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের মতো বিষয়ে কীভাবে এমন উপায়ে সেবা প্রদান করা যায়, যা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করে, কীভাবে দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করতে পারে, ইত্যাদি বিষয়গুলির মধ্যে কোনটি ঈশ্বর তোমাদের ব্যাখ্যা করেননি? তোমাদের কি এখনও প্রার্থনা আর অন্বেষণ করে যাওয়ার প্রয়োজন আছে? সত্যিই এর কোনো প্রয়োজন নেই! তুমি যদি এখনও এগুলি করে যাও, তার মানে তুমি নিছকই অনাবশ্যক কাজ করছ। এমন কাজ অজ্ঞতা এবং মূর্খতায় পরিপূর্ণ, এবং তা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়! শুধু যাদের ধীশক্তির অত্যন্ত অভাব, আর যারা ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করতে অক্ষম, তারাই অবিরাম প্রার্থনা করে চলে। সত্যের অনুশীলনের মূল চাবিকাঠি হল তুমি প্রত্যয়ের অধিকারী কি না। কেউ কেউ তাদের কাজের মধ্যে তাদের দৈহিক ইচ্ছাগত পছন্দগুলি অনুসরণ করার উপর জোর দেয়, এমনটা জেনেও যে, তা সত্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এতে তাদের নিজেদের জীবনের অগ্রগতি অবরুদ্ধ হয়, আর প্রার্থনা ও অন্বেষণ করার পরেও তারা সেই দেহসর্বস্বতার প্রতিই আনুগত্য প্রদর্শন করতে চায়। এমনটা করে, তারা কি জ্ঞাতসারেই পাপ সংঘটন করছে না? যারা দৈহিক সুখের অভিলাষী ও অর্থলিপ্সু হওয়া সত্ত্বেও যারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বলে: “ঈশ্বর! আপনি কি আমাকে জৈবিক সুখের আভিলাষী হতে আর অর্থের লালসা করতে অনুমোদন করবেন? এ কি আপনারই ইচ্ছা, যে আমি এই ভাবে অর্থ উপার্জন করি?” এটা কি প্রার্থনা করার উপযুক্ত উপায়? যারা এমনটা করে থাকে তারা খুব ভালো করেই জানে যে তাদের এসমস্তই পরিত্যাগ করা উচিত, কিন্তু নিজেদের অন্তরে তারা আগের থেকেই ঠিক করে রেখেছে কোন বিষয়গুলিকে তারা আঁকড়ে ধরে থাকে, এবং প্রার্থনা ও অন্বেষণকালে তারা চেষ্টা করতে থাকে ঈশ্বরকে বাধ্য করতে তাদের এহেন আচরণ অনুমোদিত করার। মনে মনে তারা হয়ত এ-ও দাবি করে যে, ঈশ্বর যেন এগুলির সমর্থন করে কিছু বলেন—ঠিক একেই বলা হয় বিদ্রোহী আচরণ। কেউ কেউ এমনও আছে যারা গির্জার ভ্রাতা ও ভগিনীদের নিজেদের দলে টেনে নিয়ে নিজ-নিজ স্বতন্ত্র রাজ্যপাট গড়ে তোলে। তুমি খুব ভালো করেই জানো যে এই ধরনের কাজগুলি হল ঈশ্বরের বিরোধিতা করা, কিন্তু তুমি এমনতর কিছু করার সংকল্প নিয়ে ফেলার পরেও তুমি ঈশ্বরের অন্বেষণ এবং তাঁর নিকট প্রার্থনা করে চলো, শান্ত ও নির্ভীক ভাবে। তুমি যে কতটা নির্লজ্জ আর বেহায়া! জাগতিক বিষয়সমূহ পরিহারের প্রসঙ্গেও, এমনটাই বহু পূর্বে বলা হয়ে গিয়েছিল। কেউ কেউ আছে যারা সুস্পষ্টরূপে জানে যে ঈশ্বর জাগতিক বিষয়সকল ঘৃণা করেন, তবুও তারা প্রার্থনা করে বলে: “হে ঈশ্বর! আমি উপলব্ধি করি যে আপনি চান না যে আমি পার্থিব বিষয়সকলের অনুষঙ্গী হই, কিন্তু আমি এগুলি করি যাতে আপনাকে লজ্জিত হতে না হয়; আমি এমনটা করি যাতে জাগতিক বিশ্বের মানুষ আমার মধ্যে আপনার মহিমা চাক্ষুষ করতে পারে।” এ কেমন প্রার্থনা? তোমরা বলতে পারো? এই প্রার্থনার উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরকে বাধ্য করা আর ঈশ্বরের উপর জোর খাটানো। এইভাবে প্রার্থনা করতে তোমার লজ্জা করে না? যারা এইভাবে প্রার্থনা করে, তারা জেনেবুঝে ঈশ্বরের বিরোধিতা করছে, আর এমনৎর প্রার্থনার উদ্দেশ্য আদ্যোপান্ত প্রশ্নাসাপেক্ষ তো বটেই; এটা প্রকৃতপক্ষে এক শয়তানোচিত স্বভাবেরই প্রকাশ। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ স্ফটিকস্বচ্ছ, বিশেষত যেগুলি তাঁর ইচ্ছা, তাঁর স্বভাব, আর তিনি বিবিধ প্রকার মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে, তা উচ্চারিত করে। তুমি যদি সত্য উপলব্ধি করতে না পারো, তাহলে তোমাকে ঈশ্বরের বাক্যসমূহ আরো বেশি করে পাঠ করতে হবে—নিছক অন্ধভাবে প্রার্থনা আর অন্বেষণ করে চলার চেয়ে এর পরিণাম শ্রেয়তর। এমন অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে অন্বেষণ ও প্রার্থনার পরিবর্তে ঈশ্বরের বাক্যসমূহ আরও বেশি করে পাঠ করা এবং সত্যের বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। নিয়মিত প্রার্থনায়, তোমাকে ভাবতে এবং নিজেকে ঈশ্বরের বাক্যের ভিতর থেকে জানার চেষ্টা করতে হবে। জীবনে অগ্রগতির জন্য তোমার পক্ষে তা অধিকতর হিতকর। তুমি যদি এখনও স্বর্গপানে চেয়ে থেকে অন্বেষণ করে যাও, তাহলে কি তা এটাই দর্শায় না, যে তুমি এখনও এক অনিশ্চিত ঈশ্বরে বিশ্বাস করে চলেছ? পূর্বকালে তুমি তোমার অন্বেষণ ও প্রার্থনায় ফল পেয়েছিলে, এবং পবিত্র আত্মা তোমার আত্মাকে কিছুটা হলেও সঞ্চালিত করেছিলেন, কারণ তা ছিল অনুগ্রহের যুগ। তুমি ঈশ্বরকে চাক্ষুষ করতে পারোনি, তাই সম্মুখপানে হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যাওয়া এবং সেভাবেই অন্বেষণ করে চলা ছাড়া তোমার আর কোনো উপায় ছিল না। এখন ঈশ্বর মানব-মাঝে অবতীর্ণ হয়েছেন, বাক্য দেহে আবির্ভুত হয়েছে, এবং তুমি ঈশ্বরদর্শন করেছো; তাই পবিত্র আত্মা আর আগের মতো করে কার্য সম্পাদন করেন না। যুগের বদল ঘটেছে, আর ঠিক তেমনই পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে পবিত্র আত্মার কার্য সম্পাদনের পন্থায়ও। যদিও মানুষ আর আগের মত অতটা প্রার্থনা করে না, কারণ ঈশ্বর পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন, মানুষের এখন ঈশ্বরকে ভালোবাসার একটা সুযোগ রয়েছে। মানবজাতি ঈশ্বরকে ভালোবাসার যুগে প্রবেশ করেছে এবং তারা নিজেদের অন্তরেই স্বাভাবিকভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে: “হে ঈশ্বর! আপনি সত্যিই এত সুন্দর, এবং আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই!” শুধুমাত্র সামান্য কয়েকটি সুস্পষ্ট বাক্য মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে বিদ্যমান ঈশ্বর-প্রেমকে কন্ঠস্বর প্রদান করে; এই প্রার্থনা উচ্চারিত হয় শুধুমাত্র মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে প্রেমকে আরও সুগভীর করে তোলার জন্যই। কখনও কখনও তুমি নিজেকে বিদ্রোহী আচরণ প্রকাশ করতে দেখতে পারো, আর বলতে পারো: “হে ঈশ্বর! আমি এত ভ্রষ্ট কেন?” তুমি নিজেকে বেশ কয়েকবার আঘাত করার একটা শক্তিশালী তাগিদ অনুভব করো, তোমার চোখ জলে ভেসে যায়। এই রকম সময়ে, তুমি নিজের অন্তরে অনুশোচনা এবং পীড়া অনুভব করো, কিন্তু এই অনুভূতিগুলি প্রকাশ করার কোনো উপায়ই থাকে না তোমার। এ-ই হল পবিত্র আত্মার বর্তমান কার্য, যা শুধু তারাই অর্জন করতে পারবে, যারা জীবনের অন্বেষণ করে। তুমি অনুভব করো যে ঈশ্বর তোমায় অত্যন্ত ভালোবাসেন, এবং তোমার অন্তরে এক বিশেষ প্রকার অনুভূতি বিরাজ করে। তোমার কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রার্থনা করার মতো শব্দ না থাকলেও তুমি সর্বদাই অনুভব করো যে, ঈশ্বরের প্রেম মহাসমুদ্রের মতই গভীর। এই অবস্থা প্রকাশ করার কোনো যথোপযুক্ত বাক্য নেই, এবং এই অবস্থা আত্মার অভ্যন্তরে প্রায়শই উদ্ভূত হয়। কাউকে নিজের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী করার উদ্দেশ্যে এই যে প্রার্থনা ও সহকারিতা, তা-ই স্বাভাবিক।

যদিও মানুষের অসহায় ভাবে হাতড়ানো আর অন্বেষণ করাটা এখন অতীত মাত্র, তবে এর অর্থ এই নয় যে, তাদের আর প্রার্থনা বা অন্বেষণের আর কোনো প্রয়োজন নেই, বা, তা এ-ও নয় যে, তাঁর কার্য সম্পাদন অব্যাহত রাখার পূর্বে ঈশ্বরের নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছার জন্য মানুষকে প্রতীক্ষা করতে হবে না আর; এগুলি নিছকই মানুষের ভ্রান্ত ধারণা। ঈশ্বর মানুষের মাঝে অবতীর্ণ হয়েছেন তাদের সাথে বসবাস করার, তাদের আলো, জীবন, ও পথ হয়ে ওঠার উদ্দেশ্যেই: এ হল এক বাস্তব ঘটনা। অবশ্যই ঈশ্বরের মর্ত্যলোকে আগমনের মধ্যে দিয়ে তিনি নিশ্চিতভাবে মানবজাতিকে তাদের উচ্চতার সঙ্গে মানানসই একটি ব্যবহারিক পথ ও জীবন এনে দিয়েছেন—মানুষের সমস্ত অনুশীলন ভেস্তে দিতে আসেননি তিনি। মানুষ আর অসহায় ভাবে হাতড়ে হাতড়ে আর খুঁজে ঝুঁজে বেঁচে থাকে না, কারণ এই সমস্তকিছুই প্রতিস্থাপিত হয়েছে স্বীয় কার্য সম্পাদনের এবং স্বীয় বাক্য কথনের উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীতে আবির্ভাবের মাধ্যমে। তিনি এসেছেন মানুষকে তাদের যাপন করা অন্ধকার ও অস্পষ্ট জীবন থেকে মুক্ত করতে, আলোকময় এক জীবন লাভে তাদের সক্ষম করতে তুলতে। বর্তমান কার্য হল বিষয়সকল সুস্পষ্টরূপে দেখিয়ে দেওয়া, সুস্পষ্টরূপে বক্তব্য রাখা, প্রত্যক্ষ ভাবে জানিয়ে দেওয়া, এবং বিষয়সকল স্পষ্টভাবে সংগায়িত করা, যাতে মানুষ এই বিষয়সকল অনুশীলন করতে পারে, ঠিক যেমন যিহোবা ঈশ্বর ইসরায়েলের মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের বলে দিয়েছিলেন কীভাবে উৎসর্গ নিবেদন করতে হয় ও কীভাবে মন্দির নির্মাণ করতে হয়। অতএব, প্রভু যীশুর চলে যাওয়ার পর তোমরা যেরকম একান্ত অন্বেষণ করেছিলে তোমাদের তা করার প্রয়োজন নেই আর। তোমাদের কি ভবিষ্যতে সুসমাচার প্রচারের কাজের মাধ্যমেই নিজেদের পথ অনুভব করতে হবে? তোমাদের কি জীবনযাপনের একটা যথাযথ উপায় অন্বেষণের চেষ্টায় অসহায় ভাবে হাতড়াতে হবে? তোমাদের কি নিজেদের কর্তব্য কীভাবে পালন করা উচিত তা উপলব্ধি করতে গিয়েও হাতড়েই বেড়াতে হবে? তোমরা কীভাবে সাক্ষ্য বহন করবে, তা জানার জন্য কি তোমাদের ষষ্টাঙ্গে প্রণত হয়ে অন্বেষণ করার দরকার আছে? তোমাদের কীভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করা বা জীবনযাপন করা উচিত, তা জানতে কি উপবাস ও প্রার্থনা করার প্রয়োজন রয়েছে? তোমাদের কি ঈশ্বর দ্বারা বিজিত হওয়াকে কীভাবে স্বীকার করা উচিত তা জানতে স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে অবিরাম প্রার্থণা করে চলাটা প্রয়োজনীয়? তোমাদের কি ঈশ্বরকে কীভাবে মান্য করবে তা জানতে দিবারাত্র অবিরাম প্রার্থনা করতে চলতেই হবে? তোমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা বলে যে, তোমরা উপলব্ধি করতে পারো না বলেই অনুশীলনে অক্ষম। মানুষ আজকের দিনে ঈশ্বরের কার্যের প্রতি একেবারেই মনোযোগী নয়! বহু পূর্বে আমি অনেক বাক্য উচ্চারণ করেছি, কিন্তু তোমরা সেসমস্ত পাঠ করার প্রতি এতটুকুও মনোযোগ দাওনি, আর তাই, একে আশ্চর্যের কিছুই নেই যে, তোমরা কীভাবে অনুশলন করতে হয় তা জানো না। আজকের যুগে, অবশ্যই, পবিত্র আত্মা এখনও মানুষকে উপভোগ করার অনুমতি দেন, এবং তিনি মানুষের সঙ্গেই বাস করেন। এটিই হল উৎস সেই সমস্ত[ক] বিশেষ, আনন্দদায়ক অনুভূতির, যেগুলি তোমার জীবনে প্রায়শই অনুভূত হয়ে থাকে। কিছু দিন অন্তর অন্তর এমন এক-একটা দিন আসে, যখন তুমি অনুভব করো যে, ঈশ্বর কতই না মনোহর, এবং তুমি তাঁর কাছে শুধু এই প্রার্থনাটুকুই করতে পারো: “হে ঈশ্বর! আপনার প্রেম কত না মনোরম, এবং আপনার প্রতিমূর্তি কতই না মহান। আমি আপনাকে আরও গভীরভাবে ভালোবাসতে চাই। আমি আমার সবটুকু সঁপে দিয়ে আমার সমগ্র জীবন ব্যয় করতে চাই। আমি আপনার প্রতি আমার সবকিছু সঁপে দিতে চাই, যতদিন তা আপনার তরে, যতদিন তা করে আমি আপনাকে ভালোবেসে যেতে পারব…”। এ হল পবিত্র আত্মার তোমাকে প্রদত্ত সুখানুভূতি। এটা আলোকপ্রাপ্তি নয়, প্রদীপ্তিও নয়; এ হল সঞ্চালিত হওয়ার অভিজ্ঞতা। এই ধরনের অভিজ্ঞতা প্রায়শই ঘটবে: কখনও কখনও কর্মস্থলে যাওয়ার পথে, তুমি প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হবে, আর তুমি সেই বিন্দু অবধি সঞ্চালিত হবে যে, তোমার মুখমণ্ডল অশ্রুসিক্ত করে তুলবে, এবং তুমি সমস্ত আত্ম-নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে, তুমি অধীর হবে এমন একটি উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতে চেয়ে, যেখানে তুমি তোমার হৃদয়ের সমস্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারো…। কখনও কখনও প্রকাশ্য কোনো স্থানে থাকাকালীন তুমি অনুভব করবে যে, তুমি ঈশ্বরের ভালোবাসা এতটাই উপভোগ করছ যে, তোমার পরিস্থিতি একেবারেই নিছক সাধারণ নয়, এমনকী তুমি অন্য যে কারো থেকে আরো বেশি অর্থবহ জীবন যাপন করছ। তুমি গভীরভাবে জানতে পারবে যে ঈশ্বর তোমাকে সমুন্নত করে তুলেছেন, এবং এ হল তোমার প্রতি ঈশ্বরের মহান ভালোবাসা। নিজের হৃদয়ের গহীন নিভৃতাবাসে তুমি অনুভব করবে যে, ঈশ্বরের ভিতর এমন একপ্রকার প্রেম রয়েছে, যা মানুষের পক্ষে অবর্ণণীয় এবং অগাধ, যেন তুমি তা জানো অথচ তা প্রকাশ করার কোনো উপায়ই তোমার নেই, তা সর্বদাই তোমায় চিন্তাভাবনা করার অবসর দেয়, কিন্তু তুমি তা পূর্ণত প্রকাশে অপারগ। এমতাবস্থায়, কোথায় রয়েছ তা-ও বিস্মৃত হয়ে বলে উঠবে: “হে ঈশ্বর! আপনি কতই না অগাধ আর কতই না প্রিয়!” এতে মানুষ বিভ্রান্ত হবে, কিন্তু এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। তোমরা এমনতর অভিজ্ঞতা কতবারই না লাভ করেছ। পবিত্র আত্মা আজ তোমাকে এই জীবনই প্রদান করেছেন, এবং এই জীবনই তোমার এখন যাপন করা উচিত। এর উদ্দেশ্য তোমার জীবনযাপনকে বিরত করা নয়, বরং তোমার জীবনযাপনের পথ বদলে দেওয়া। এ হল এক অবর্ণনীয়, অপ্রকাশ্য অনুভূতি। এ-ই হল মানুষের প্রকৃতও অনুভূতিও, এবং এমনকি, আরও বেশি করে, এ হল পবিত্র আত্মার কার্য। তোমার হৃদয়ে এর উপলব্ধি হতে পারে, কিন্তু কারো কাছে এই অনুভূতি প্রকাশ করার কোনো উপায় তোমার নেই। এর কারণ এই নয় যে তুমি কথনে মন্থর বা কথা বলার সময় তুমি হোঁচট খাও, এর কারণ হল এই যে, এ হল এমন একপ্রকার অনুভূতি, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তুমি আজ এই বিষয়গুলি উপভোগ করতে পারছ, আর এই জীবনই তোমার যাপন করা উচিত। তোমার জীবনের অন্যান্য দিকগুলি অবশ্যই অসার নয়; আসলে, সঞ্চালিত হওয়ার এই যে অভিজ্ঞতা, তা তোমার জীবনে এতটাই আনন্দের হেতু হয়ে দাঁড়ায় যে, তুমি সর্বদাই পবিত্র আত্মার কাছ থেকে এইরকম অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে চাও। কিন্তু তোমাকে জানতে হবে যে, এইভাবে সঞ্চালিত হওয়াটা এই কারণে সংঘটিত হয় না যাতে তুমি দেহকে অতিক্রম করে তৃতীয় স্বর্গে উপনীত হতে পারো বা সমগ্র বিশ্বময় ভ্রাম্যমাণ হতে পারো। বরং এর উদ্দেশ্য হল যাতে তুমি অনুভব ও আস্বাদন করতে করতে পারো সেই ঈশ্বরপ্রেমের, যা তুমি আজ উপভোগ করো, অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারো ঈশ্বরের বর্তমান কাজের গুরুত্বের, এবং নিজেকে পুনরায় পরিচিত করাতে পারো ঈশ্বরের যত্ন ও সুরক্ষার সঙ্গে। এইসবের কারণ হল, যাতে তুমি ঈশ্বরের সম্পাদিত বর্তমান কার্যের বিষয়ে বৃহত্তর জ্ঞান লাভ করতে পারো—ঈশ্বরের এই কার্যের এটাই লক্ষ্য।

অসহায়ভাবে অন্বেষণ করা আর হাতড়ানোই ছিল ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণের পূর্ববর্তী সময়কালীন জীবনধারণের উপায়। সেই সময়ে, মানুষ ঈশ্বরকে চাক্ষুষ করতে পারেনি, এবং সেহেতু তাদের কাছে অন্বেষণ করা আর অসহায়ভাবে হাতড়ে চলা ছাড়া আর কোনোই উপায় ছিল না। আজ তুমি ঈশ্বরদর্শন করেছো, এবং তিনি তোমাকে প্রত্যক্ষভাবেই বলছেন যে কীভাবে অনুশীলন করা উচিত; ঠিক এই কারণেই তোমার আর অসহায়ভাবে হাতড়ে চলার বা অন্বেষণ করার প্রয়োজন নেই। তিনি মানুষকে যে পথে এগিয়ে নিয়ে চলেন তা হল সত্যের পথ, এবং তিনি মানুষকে যা যা বলেন ও মানুষ যা যা গ্রহণ করে, তা হল জীবন আর সত্য। তোমার কাছে পথ রয়েছে, রয়েছে জীবন ও সত্য, তাহলে সর্বত্র অন্বেষণ করে বেড়াবার আর কী প্রয়োজন আছে? পবিত্র আত্মা কার্যের দুটি পর্যায় একত্রে সম্পাদন করবেন না। আমি যখন আমার বাক্যসমূহের কথন সমাপ্ত করেছি, তখন যদি মানুষ ঈশ্বরের বাক্য সতর্কভাবে ভোজন ও পান না করে এবং যথাযথভাবে সত্যের সাধনা না করে, অনুগ্রহের যুগে তারা যেমনটা করেছিল ঠিক তেমনটাই যদি করে চলে, অন্ধের মত হাতড়ে বেড়ায় আর অবিরাম প্রার্থনা ও অন্বেষণ করে চলে, তার মানে কি এই দাঁড়ায় না যে আমার কার্যের এই পর্যায়—বাক্যসমূহের কার্য—সবটাই বৃথা? আমার বাক্যসমূহ কথন সমাপ্ত হয়ে গিয়ে থাকলেও, মানুষ তা পূর্ণত উপলব্ধি করতে পারে না এখনো, এবং এর কারণ হল তাদের মধ্যে থাকা ধীশক্তির অভাব। এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে গির্জা-জীবন যাপন করে, এবং একে অপরের সঙ্গে সহকারিতার মাধ্যমে। এর পূর্বে, অনুগ্রহের যুগে, ঈশ্বর অবতাররূপে অবতীর্ণ হলেও তিনি বাক্যসমূহের কার্য করেননি, পবিত্র আত্মা সেইভাবে কাজ করেছিলেন কার্য অব্যাহত রাখতেই। সেই সময় প্রাথমিকভাবে পবিত্র আত্মাই কার্য করেছিলেন, কিন্তু এখন পবিত্র আত্মার কার্যের স্থান গ্রহণ করে কার্য করছেন স্বয়ং অবতাররূপী ঈশ্বর। এর পূর্বে, মানুষ যতদিন প্রায়শই প্রার্থনা করে গিয়েছে, তারা শান্তি ও আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে; সেখানে যেমন ভর্ৎসনা ছিল, তেমনই আবার ছিল অনুশাসনও। এই সবটাই ছিল পবিত্র আত্মার কার্য। এখন এই অবস্থাগুলির আর প্রায়শই উপক্রম হয় না। পবিত্র আত্মা কোনো একটি যুগে এক প্রকার কার্যই করতে পারেন। তিনি যদি দুই প্রকার কার্য একসঙ্গে সম্পাদন করতেন, অবতাররূপ এক প্রকার কার্যে রত, আর পবিত্র আত্মা মানুষের মধ্যে অপর প্রকার কার্যে রত থাকতেন, এবং অবতাররূপ যা বলেছিলেন তা যদি গণ্য না করে, শুধুমাত্র আত্মা যা করেছিল তা-ই গণ্য করা হত, তাহলে খ্রীষ্টের কোনো সত্যতা থাকত না, থাকত না কোনো পথ, বা বলার মতো কোনো জীবন। তা হত এক প্রকার স্ববিরোধিতা। পবিত্র আত্মা কি এইভাবে কাজ করতে পারতেন? ঈশ্বর হলেন সর্বশক্তিমান ও সকল প্রজ্ঞার অধিকারী, পবিত্র ও ধার্মিক, এবং তাঁর কোনোমতেই কোনোরকম ভুল হতে পারে না।

মানুষের অতীত অভিজ্ঞতায় অজস্র বিচ্যুতি আর ভ্রান্তি ছিল। কিছু কিছু বিষয় ছিল যা স্বাভাবিক মানবতা-সম্পন্ন মানুষের থাকতে বা করতে হত, নাহলে এমন ভ্রান্তি ঘটে যেত যা মানবজীবনের পক্ষে এড়িয়ে যাওয়াটা হয়ে পড়ত দুষ্কর, এবং যখন এইগুলি অদক্ষ ভাবে সামলানো হত, মানুষ তার দায়িত্ব চাপিয়ে দিত ঈশ্বরের উপরে। এক ভগিনীর গৃহে কিছু অতিথি এসেছিলেন। তার ভাপা রুটিগুলি ভালো করে ভাপানো হয়নি, সে তখন ভাবল: “এটা সম্ভবত ঈশ্বরের অনুশাসন। ঈশ্বর আবারও আমার দাম্ভিক হৃদয়কে শাসন করছেন; আমার দম্ভ সত্যিই অত্যন্ত প্রবল”। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারা হল, বাড়িতে অতিথি সমাগম হলে, তুমি উতলা হয়ে পড়ো আর তাড়াহুড়ো করো, ফলে, যা-ই করো তা এলোমেলো হয়ে যায়, আর তাই ভাত পুড়ে যাওয়া কিংবা খাবারে লবণের আধিক্য ঘটা—এসব তো শুধুই সময়ের অপেক্ষা। অত্যধিক উত্তেজনা থেকেই এসব ঘটে থাকে, কিন্তু মানুষ সেটাকে “ঈশ্বরের অনুশাসন”-এর মধ্যে ফেলে দেয়। সত্যি বলতে কি, এসবই হল মানব জীবনে সংঘটিত ভ্রান্তিসমূহ। তুমি যদি ঈশ্বর-বিশ্বাসী না হতে, তাহলে তুমিও কি প্রায়শই এমনতর বিষয়গুলির সম্মুখীন হতে না? যে সমস্যাগুলি ঘটে থাকে তার অধিকাংশই হল মানুষের করা ভুল—এমন ভ্রান্তিগুলি কোনোমতেই পবিত্র আত্মা দ্বারা সংঘটিত নয়। এই ধরনের ভুলগুলির সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন খাবার খেতে খেতে তুমি যখন নিজের জিভ কামড়ে ফেলো—তা কি ঈশ্বরের অনুশাসন হতে পারে? ঈশ্বরের অনুশাসনের নীতি রয়েছে, এবং তা সাধারণত চাক্ষুষ করা যায় যখন তুমি জেনেশুনে অপরাধ করো। যখন তুমি এমন কিছু কাজ করো যার সঙ্গে ঈশ্বরের নাম জড়িয়ে রয়েছে, বা যা তাঁর সাক্ষ্য বহন করা কিংবা তাঁর কার্য সম্পর্কিত, শুধুমাত্র তখনই তিনি তোমাকে অনুশাসন করবেন। মানুষ এখন সত্যের যথেষ্টই উপলব্ধি করে যাতে তাদের নিজেদের কাজের ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ সচেতনতা থাকে। উদাহরণস্বরূপ: তুমি যদি গির্জার অর্থ আত্মসাৎ করো, বা তা বেপরোয়াভাবে ব্যয় করে ফেলো, তাহলে কি এমন সম্ভব, যে তুমি কিছুই অনুভব করবে না? তা করার সময় তুমি কিছু একটা তো অনুভব করবেই। এটা সম্ভবই নয় যে শুধুমাত্র কাজটা করা হয়ে গেলে তবেই কিছু অনুভূতি হবে। নিজের অন্তরে তুমি তোমার বিবেকবোধের বিরুদ্ধে যায় এরকম কাজগুলির ব্যাপারে একেবারেই স্বচ্ছ। কারণ মানুষের নিজ নিজ পছন্দ আর পক্ষপাত রয়েছে, তারা সত্যের অনুশীলন কীভাবে করতে হয় তা স্পষ্ট জানা সত্ত্বেও নিজেদের প্রশ্রয় দেয়। এমতাবস্থায়, কোনো কিছু করে ফেলার পর, তাদের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো ভর্ৎসনার অনুভূতি হয় না, বা তারা কোনো সুস্পষ্ট অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে যায়ও না। এর কারণ হল যে, তারা জ্ঞাতসারে কোনো অপরাধ করলেই যে ঈশ্বর তাদের অনুশাসন করেন, এমন নয়; যখন ধার্মিক বিচার উপনীত হবে, ঈশ্বরের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের উপর যথাযোগ্য প্রতিফল বর্তাবে—প্রত্যেকের নিজ নিজ কর্ম অনুযায়ী। এই মুহূর্তে এমন কিছু কিছু মানুষ আছে যারা গির্জার অর্থ তছরূপ করে, কেউ কেউ পুরুষ ও নারীর মধ্যে সুস্পষ্ট সীমানা বজায় রাখে না, আর কেউ কেউ গোপনে ঈশ্বরের কাজকে বিচার করে, অস্বীকার করে, ধ্বংস করার চেষ্টা করে। তাদের সাথে এখনও সবকিছু ঠিক আছে কেন? এমন কাজ করার সময়, তাদের মধ্যে সচেতনতা থাকে আর নিজেদের অন্তরে তারা ভর্ৎসনা অনুভব করে, এবং সেহেতু কখনও কখনও তারা শাস্তি ও পরিমার্জনা ভোগ করে, কিন্তু তারা অত্যন্ত নির্লজ্জ! ঠিক যেমন মানুষ যখন অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়—তারা সেই সময় কী করছে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকে, কিন্তু তাদের লালসা এতটাই তীব্র হয় যে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পবিত্র আত্মা তাদের অনুশাসন করলেও, তা বিফলেই যাবে, তাই পবিত্র আত্মা অনুশাসন প্রণোদন করবে না। পবিত্র আত্মা যদি সেই সময়ে তাদের অনুশাসন না করেন, তারা যদি কোনোরকম ভর্ৎসনা অনুভব না করে, এবং তাদের দেহের যদি কিছু না ঘটে, তারপর তাহলে সেখানে আর কী-ই বা ভর্ৎসনা থাকতে পারে? কাজটা তো করা হয়ে গিয়েছে—তবে আর কী-ই বা অনুশাসন থাকতে পারে? এতে শুধু এটাই প্রমাণিত হয় যে তারা অত্যন্ত নির্লজ্জ, এবং তাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের ভীষণ রকমের অভাব রয়েছে, এবং তারা অভিশাপ ও শাস্তি ভোগের যোগ্য! পবিত্র আত্মা অযথা কাজ করেন না। তুমি যদি সত্য সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত থাকো অথচ তার অনুশীলন না করো, তুমি যদি মন্দ কর্ম সংঘটনে সক্ষম হও, তাহলে তুমি শুধু সেই দিনটির আগমনের প্রতীক্ষাই করতে পারো, যেদিন মন্দ কর্ম সংঘটনকারীদের পাশাপাশি তোমাকেও শাস্তি প্রদান করা হবে। এটাই হবে তোমার পক্ষে উপযুক্ততম সমাপ্তি! এখন আমি বারংবার বিবেকবোধের বিষয়ে উপদেশ দিয়েছি, যা কি না ন্যূনতম মানদণ্ড। মানুষের মধ্যে যদি বিবেকবোধের অভাব ঘটে, তাহলে তারা পবিত্র আত্মার অনুশাসন হারিয়েছে; তারা তাদের যা ইচ্ছা তা-ই করলেও ঈশ্বর তাদের ব্যাপারে নিরুত্তাপ থাকেন। যাদের মধ্যে প্রকৃতই বিবেক ও হেতুবোধ রয়েছে, তারা কোনো ভুল করলে সেই বিষয়ে সচেতন থাকে। নিজেদের বিবেকের কাছে সামান্য ভর্ৎসনা অনুভব করলেই তারা অস্বচ্ছন্দ বোধ করবে; তাদের অন্তরে এমন লড়াই চলবে, এবং শেষোবধি তারা দৈহিক ইচ্ছা ত্যাগ করবে। তারা সেই বিন্দুতে পৌঁছবেই না যেখানে তারা গুরুতরভাবে ঈশ্বরের ঈশ্বরবিরোধী কোনো কাজ করে বসবে। পবিত্র আত্মা তাদের অনুশাসন বা শাস্তি প্রদান করুন বা না করুন, সব মানুষই কোনো ভুল করার সময়ে কিছু না কিছু অনুভব করবেই। অতএব, মানুষ এখন সকল প্রকার সত্য উপলব্ধি করে, এবং তারা যদি সেগুলির অনুশীলন না করে, তাহলে তা একটি মনুষ্যসুলভ সমস্যা। এমন মানুষের ব্যাপারে আমি বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া দেখাই না, আর না রাখি তাদের প্রতি কোনোরকম আশা। তুমি তোমার যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারো!

যখন কিছু কিছু মানুষ একত্রিত হয়, তারা ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে একপার্শ্বে সরিয়ে রাখে, এবং সর্বদাই কোনো অমুক ব্যক্তি কেমন, সেই নিয়েই কথাবার্তা বলতে থাকে। একটু বিচার করার ক্ষমতা রাখাটা অবশ্যই ভালো, যাতে তুমি যেখানেই যাও না কেন, খুব সহজে প্রতারণার বা ছলচাতুরীর শিকার না হও কিংবা বোকা না বনে যাও—মানুষের এই দিকটিও থাকা উচিত। কিন্তু তোমায় শুধু এই দিকটির প্রতি মনোনিবেশ করলেই চলবে না। এ হল বিষয়সকলের নেতিবাচক দিকটির সাথে সম্পর্কিত, এবং তুমি নিজের দৃষ্টি সর্বদা অন্যান্য মানুষের উপরেই নিবদ্ধ রেখে যেতে পারো না। তোমার এখন পবিত্র আত্মা কীভাবে কাজ করেন সে সম্পর্কে খুব সামান্যই জ্ঞান রয়েছে, ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসও অগভীর, এবং তোমার মধ্যে সদর্থক বিষয়ও রয়েছে খুব সামান্যই। তুমি যাঁকে বিশ্বাস করো তিনি হলেন ঈশ্বর, এবং তোমাকে যাকে উপলব্ধি করা প্রয়োজন তিনিও হলেন ঈশ্বরই, শয়তান নয়। তুমি যদি শয়তান কীভাবে কাজ করে, মন্দ আত্মা কী কী উপায়ে কাজ করে—এসবই কেবল চিনতে পারো, অথচ তোমার যদি ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো জ্ঞানই না থাকে, তাহলে তাতে কী লাভ হবে? তুমি কি আজ ঈশ্বরে বিশ্বাস করো না? তোমার জ্ঞান কেন এই সমস্ত সদর্থক বিষয়সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে না? না তুমি প্রবেশের সদর্থক দিকগুলির প্রতি কোনোরকম গরজ করো, আর না আছে তোমার এই বিষয়ে কোনো উপলব্ধি, তাহলে নিজের বিশ্বাস দ্বারা তুমি ঠিক কী অর্জন করতে চাইছো? তুমি কি জানো না যে কীভাবে অন্বেষণ করা উচিত তোমার? নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে তুমি অনেক কিছুই জানো, অথচ প্রবেশের সদর্থক দিক সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে তুমি ব্যর্থ, তাহলে তোমার উচ্চতা কখনও কীভাবে বৃদ্ধি পাবে? তোমার মতো কোনো মানুষ, যে কিনা শুধুই শয়তানের সঙ্গে লড়াইয়ের কথাই বলে চলে, তার বিকাশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী-ই বা থাকতে পারে? তোমার প্রবেশ কি অত্যন্ত সেকেলে হয়ে যাবে না? তা করে বর্তমান কাজ থেকে তুমি কী-ই বা অর্জন করতে সক্ষম হবে? এখন যেটা মুখ্য সেটা হল তোমার উপলব্ধি করা যে, ঈশ্বর এখন কী করতে চান, মানুষের কীভাবে সহযোগিতা করা উচিত, কীভাবে তাদের ঈশ্বরকে ভালোবাসা উচিত, কীভাবে তাদের পবিত্র আত্মার কাজ উপলব্ধি করা উচিত, ঈশ্বরের আজকের বলা বাক্যগুলিতে তারা কীভাবে প্রবেশ করবে, কীভাবেই বা তারা সেগুলি ভোজন ও পান করবে, সেগুলির অভিজ্ঞতা লাভ করবে ও সেগুলি উপলব্ধি করবে, কীভাবে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করবে, ঈশ্বর দ্বারা সম্পূর্ণভাবে বিজিত হবে এবং ঈশ্বরের সম্মুখে সমর্পণ করবে…। তোমার উচিত এইগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া, এবং এগুলিতেই এইক্ষণে প্রবিষ্ট হওয়া। তুমি কি তা উপলব্ধি করেছ? শুধু অন্যান্য মানুষের প্রতি বিচক্ষণ হয়ে কী হবে? তুমি এখানে শয়তানকে, ওখানে মন্দ আত্মাকে চিনতে পারো—মন্দ আত্মার বিষয়ে তোমার সম্পূর্ণ উপলব্ধি থাকতে পারে, কিন্তু তুমি যদি ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে কিছুই বলতে সক্ষম না হও, তাহলে সেই বিচক্ষণতা কি ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে? আমি এর পূর্বে মন্দ আত্মার কাজের অভিব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করেছি, কিন্তু এটা তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল না। মানুষের কিছুটা বিচক্ষণতা তো অবশ্যই থাকা উচিত, এবং মূর্খতাপূর্ণ কাজ করা ও ঈশ্বরের কাজ ব্যহত করা এড়াতে ঈশ্বরের সেবা-প্রদানকারীদের এই দিকটিও থাকা উচিত। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করা। তোমার অন্তরে ঈশ্বরের কাজের এই ধাপ সম্পর্কে কী জ্ঞান রয়েছে? ঈশ্বর ঠিক কী করেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তোমার নিজের ত্রুটিগুলি কী আর তোমাকে কী কী বিষয়ের দ্বারা প্রস্তুত হতে হবে, সেসব সম্পর্কে তুমি কি কিছু বলতে পারো? তোমার নবতম প্রবেশ কী, তা কি তুমি বলতে পারো? তোমার উচিত হল নতুন প্রবেশে ফল লাভ করা এবং উপলব্ধি অর্জন করা। বিভ্রান্তির ভান কোরো না; নিজস্ব গভীরতর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের উদ্দেশ্যে নতুন প্রবেশে তোমাকে আরও উদ্যোগী হতে হবে, এবং তোমাকে আরও বেশি করে বর্তমান নবতম প্রবেশগুলি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের সঠিকতম উপায়টি উপলব্ধি করতে হবে। উপরন্তু, নতুন কার্য আর নতুন প্রবেশের মাধ্যমে, তোমার পূর্বের সেকেলে ও বিচ্যুত অনুশীলন সম্পর্কে তোমায় বিচক্ষণ হতে হবে, অন্বেষণ করতে হবে যে, নতুন অভিজ্ঞতায় প্রবেশের লক্ষ্যে কীভাবে সেগুলিকে নির্মূল করা যায়। এই বিষয়গুলিই তোমাকে এখন দ্রুত উপলব্ধি করতে এবং এগুলিতে প্রবেশ করতে হবে। তোমাকে পুরানো ও নতুন প্রবেশগুলির মধ্যে পার্থক্য এবং সম্পর্ক উপলব্ধি করতে হবে। এই বিষয়গুলি সম্পর্কে তোমার কোনো উপলব্ধি না থাকলে, তোমার উন্নতিরও আর কোনো পথ থাকবে না, কারণ পবিত্র আত্মার কাজের সঙ্গে তুমি পাল্লা দিতে সক্ষম হবে না। তোমাকে ঈশ্বরের বাক্য স্বাভাবিক ভাবে ভোজন ও পান করতে ও স্বাভাবিক সহকারিতা করতে, এবং সেগুলিকে ব্যবহার করে নিজের পূর্বকালীন অনুশীলনের সেকেলে উপায়গুলি ও পুরানো প্রথাগত পূর্বধারণাগুলি বদলে ফেলতে সক্ষম হতে হবে যাতে, তুমি প্রবেশ করতে পারো এক নতুন অনুশীলনে, ঈশ্বরের নতুন কার্যে। এই বিষয়সকল তোমার অর্জনীয়। নিজেকে তুমি কীভাবে পরিমাপ করবে, এখন আমি তোমাকে নিছকই তা সঠিকভাবে নিরূপণ করতে বলছি না; সেটা লক্ষ্য নয়। বরং বলছি সত্য অনুশীলন ও জীবনে প্রবেশের বিষয়ে নিজের উপলব্ধিকে গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করতে বলছি। নিজেকে জানার তোমার যে ক্ষমতা তা তোমার প্রকৃত আত্মিক উচ্চতার উপস্থাপনা নয়। তুমি যদি ঈশ্বরের কার্যের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারো, যদি তোমার ঈশ্বরের বাক্যের সত্যতার অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থাকে, আর যদি তুমি তোমার পূর্বেকার ব্যক্তিগত ধারণা এবং ভ্রান্তিগুলি ঠাহর করতে পারো, তাহলে এটাই হল তোমার প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা, এবং তোমাদের প্রত্যেকেরই তা অর্জনীয়।

অনেক পরিস্থিতিতেই তোমরা জানোই না যে কীভাবে অনুশীলন করতে হয়, আর পবিত্র আত্মা কীভাবে কাজ করেন, তা তো তোমরা আরোই কম জানো। কখনও কখনও তোমরা এমন কাজ করে ফেলো যা স্পষ্টই পবিত্র আত্মার প্রতি অবাধ্যতা প্রদর্শন করে। ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করার মধ্যে দিয়ে, উদ্ভূতবিষয়টির নীতিসমূহ সম্পর্কে ইতিমধ্যেই তোমাদের একটা উপলব্ধি রয়েছে, তাই তোমাদের অন্তরে ভর্ৎসনা ও উৎকণ্ঠার একটা অনুভূতি রয়েছে; অবশ্যই এ হল এমন এক অনুভূতি, যা শুধুমাত্র সত্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ভিত্তিতেই অনুভূত হবে। মানুষ যদি ঈশ্বরের বর্তমান বাক্যসমূহের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সহযোগিতা বা অনুশীলন না করে, তাহলে তারা পবিত্র আত্মার কাজে বাধা দিচ্ছে, এবং তারা ভিতরে ভিতরে অবশ্যই উৎকণ্ঠা অনুভব করবে। ধরা যাক, তুমি নির্দিষ্ট কোনো একটি দিকের নীতি উপলব্ধি করো ঠিকই, কিন্তু সেইমত অনুশীলন করো না, তাহলে তুমি ভিতরে ভিতরে এক প্রকার ভর্ৎসনা অনুভব করবে। তুমি যদি নীতিটি উপলব্ধি না করো এবং সত্যের এই দিকটি সম্পর্কে একেবারেই অবগত না হও, তাহলে এই বিষয়ে তোমার ভর্ৎসনার অনুভূতি না-ও হতে পারে। পবিত্র আত্মার ভর্ৎসনা সর্বদাই পূর্বাপর সম্বন্ধযুক্ত। তুমি ভাবো যে, যেহেতু তুমি প্রার্থনা করোনি এবং পবিত্র আত্মার কাজের সঙ্গে সহযোগিতা করোনি, তাই তুমি কাজটিকে বিলম্বিত করেছো। কিন্তু আসলে, এই কাজকে বিলম্বিত করা যায় না। পবিত্র আত্মা অন্য কাউকে সঞ্চালিত করবেন; পবিত্র আত্মার কাজ কারো দ্বারা সীমাবদ্ধ হতে পারে না। তোমার মনে হয় যে তুমি ঈশ্বরকে হতাশ করেছো, এবং এই অনুভূতিটা তোমার বিবেকবোধের মধ্যে থাকা উচিত। তুমি সত্য অর্জন করতে পারবে কি না তা তোমার নিজের ব্যাপার, এবং তা কোনোভাবেই ঈশ্বরের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত নয়। কখনও কখনও তোমার নিজের বিবেকেরই দংশন অনুভূত, তবে তা আলোকপ্রাপ্তি বা পবিত্র আত্মার প্রদীপ্তি নয়, পবিত্র আত্মার ভর্ৎসনাও নয়। বরং, তা হল মানুষের বিবেকবোধের মধ্যে নিহিত এক প্রকার অনুভূতি মাত্র। যদি তুমি ঈশ্বরের নাম, ঈশ্বরের সাক্ষ্য অথবা ঈশ্বরের কার্য জড়িত রয়েছে এমন বিষয়গুলিতে যদৃচ্ছ আচরণ করো, তাহলে ঈশ্বর তোমায় ছেড়ে দেবেন না। তবে এরও একটা সীমা আছে—ঈশ্বর সাধারণ, তুচ্ছ বিষয়ে তোমাকে বিব্রত করবেন না। তোমায় তিনি উপেক্ষা করবেন। তুমি যদি নীতি লঙ্ঘন করো, এবং যদি ঈশ্বরের কার্যকে ব্যহত এবং বিশৃঙ্খল করো, তিনি তোমার উপর তাঁর ক্রোধ উদ্গীরণ করবেন, এবং তোমাকে একেবারেই ছেড়ে দেবেন না। তোমার করা কিছু কিছু ভুল মানবজীবনের পথে এড়িয়ে যাওয়ার পথে অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, তুমি রুটিগুলি সঠিকভাবে না ভাপিয়ে বলে দাও যে, তা হল ঈশ্বরের তোমায় অনুশাসন করা—এটা হল আদ্যোপান্ত অযৌক্তিক একটা কথা। তুমি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করার পূর্বে কি এহেন ঘটনাগুলি ঘটত না? তুমি অনুভব করো যে, যদিও তা পবিত্র আত্মার অনুশাসন বলেই মনে হয়, কিন্তু আসলে বিষয়টা (ব্যতিক্রমী কয়েকটি পরিস্থিতি ব্যতিরেকে) তেমন নয়, কারণ এই কাজটি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র আত্মা থেকে নয়, বরং মানুষের অনুভূতিগুলি থেকেই আগত। তবে, বিশ্বাসী মানুষদের কাছে এইভাবে চিন্তা করাটা স্বাভাবিক। ঈশ্বরে তোমার বিশ্বাস না থাকলে তুমি এই ভাবে ভাবতে পারতে না। তুমি একবার ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে উঠলেই, তুমি এই ধরনের ভাবনা-চিন্তায় অধিক সময় অতিবাহিত করবে, এবং স্বাভাবিক ভাবেই, তোমার চিন্তাভাবনাও সেই পথেই এগোবে। এগুলি স্বাভাবিক মানুষের চিন্তাভাবনা থেকে উদ্ভূত হয়, এবং এগুলি তাদের মানসিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু আমি তোমাকে বলব, এই চিন্তাভাবনা পবিত্র আত্মার কার্যের পরিসরের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ হল পবিত্র আত্মার দ্বারা মানুষকে তাদের চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে প্রদত্ত এক স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ; কিন্তু তোমাকে উপলব্ধি করতে হবে যে, এই প্রতিক্রিয়া পবিত্র আত্মার কার্য নয়। এই ধরণের “জ্ঞান” থাকাটা এটা প্রমাণ করে না যে তোমার পবিত্র আত্মার কার্য রয়েছে। তোমার জ্ঞান পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি থেকে উদ্ভূত নয়, তা পবিত্র আত্মার কাজ তো আরোই নয়। তা নিছকই স্বাভাবিক মানুষের চিন্তার ফসল, এবং এর সঙ্গে পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি বা প্রদীপ্তির একেবারেই কোনো সম্পর্ক নেই—এগুলি স্পষ্টতই স্বতন্ত্র ঘটনা মাত্র। এই ধরনের স্বাভাবিক মানবীয় চিন্তাভাবনা পুরোপুরি পবিত্র আত্মা থেকে উদ্ভূত হয় না, তিনি সাধারণত তাদের ঈশ্বরের কার্যের, এবং তাদের প্রকৃত প্রবেশ ও প্রকৃত অবস্থার জ্ঞান প্রদান করেন। তিনি মানুষকে ঈশ্বরের জরুরি উদ্দেশ্য এবং মানুষের কাছ থেকে তাঁর বর্তমানের প্রয়োজনীয়তাগুলিও উপলব্ধি করান, যাতে তারা স্থিরসংকল্প হয় নিপীড়ন ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হলেও ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে নিজেদের সবকিছু বিসর্জন দিতে, ঈশ্বরকে ভালোবাসতে স্থিরসংকল্প হয়, এবং রক্তপাত ঘটলেও কিংবা প্রাণ দিতে হলেও ঈশ্বরের সাক্ষ্যে অবিচল থাকতে, এবং এই সমস্ত কিছু কোনো রকম অনুশোচনা ছাড়াই করতে। তোমার যদি এই প্রকার প্রত্যয় থাকে, এর অর্থ হল এই যে, তোমার অন্তরে প্রেরণার উদ্রেক ঘটেছে এবং পবিত্রা আত্মার কার্য রয়েছে—কিন্তু জেনে রেখো, প্রতিটি ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তেই তোমার ভিতরে যে এহেন প্রেরণার উদ্রেক ঘটে, তেমনটা কিন্তু নয়। কখনও কখনও তুমি সমাবেশে প্রার্থনা করো এবং ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করো, তুমি অত্যন্ত সঞ্চালিত হও এবং অনুপ্রাণিত বোধ করো। অন্যেরা যখন তাদের অভিজ্ঞতা ও ঈশ্বরের বাক্যের উপলব্ধির বিষয়ে কিছু কিছু আলোচনা ভাগ করে নেয়, তখন কতই না নতুন ও সতেজ বোধ করো, আর তোমার হৃদয় নিখুঁত ভাবে পরিষ্কার আর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এ সবই হল পবিত্রা আত্মার কার্য। তুমি যদি নেতা হয়ে থাকো এবং গির্জার কাজ করার সময় পবিত্র আত্মার দ্বারা যদি তুমি ব্যক্তিক্রমী রকমের আলোকপ্রাপ্ত এবং আলোকিত হও, পবিত্র আত্মা যদি তোমায় গির্জার ভিতরের সমস্যাগুলির সম্যক দর্শন করান, সেগুলির সমাধানকল্পে কীভাবে সত্যের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে তা জানার অনুমতি দেন, তা যদি তোমায় নিজের কাজে অত্যন্ত আন্তরিক, দায়িত্বশীল এবং ঐকান্তিক করে তোলে, তবে এই সকলই হল পবিত্র আত্মার কার্য।

পাদটীকা:

ক. মূল রচনায় লিখিত আছে “এইগুলি হল কয়েকটি।”

পূর্ববর্তী: বাইবেল সম্পর্কিত (৪)

পরবর্তী: অনুশীলন (২)

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন