অধ্যায় ৯

মানুষের কল্পনায়, ঈশ্বর হলেন ঈশ্বর আর মানুষ হল মানুষ। ঈশ্বর মানুষের ভাষায় কথা বলেন না, মানুষও ঈশ্বরের ভাষায় কথা বলতে পারে না। ঈশ্বরের কাছ থেকে মনুষ্যজাতির চাহিদাগুলি পূরণ করা ঈশ্বরের পক্ষে অত্যন্ত সহজসাধ্য বিষয়—এক-এক বারে এক-একটা সহজ পদক্ষেপ—যেখানে মনুষ্যজাতির কাছ থেকে ঈশ্বরের চাহিদাগুলি পূরণ করা মানুষের পক্ষে অসাধ্য এবং অভাবনীয়। তবে, সত্যিটা হল এর ঠিক বিপরীত: ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে শুধুমাত্র “০.১ শতাংশ” দাবী করেন। মানুষের কাছে এ শুধু অত্যাশ্চর্যই নয়, বরং এতে তারা অত্যন্ত হতবুদ্ধিও হয়ে যায়, যেন তারা সকলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র ঈশ্বরের আলোকপ্রাপ্তি এবং অনুগ্রহের সৌজন্যেই মানুষ ঈশ্বরের অভিপ্রায় সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান লাভ করেছে। তবে, ১লা মার্চ তারিখে, সকলে আরও একবার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল আর কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না; ঈশ্বর তাঁর লোকেদের উজ্জ্বল তুষারের মতো হয়ে উঠতে বলেছিলেন, ভাসমান মেঘমালার মতো নয়। তাহলে, এই “তুষার” বলতে কী বোঝায়? এবং “ভাসমান মেঘমালা” কী নির্দেশ করে? এই পর্যায়ে, ঈশ্বর এই শব্দগুলির গভীরতর অর্থ ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রকাশ করছেন না। তা মানুষকে বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত করে, আর এইভাবে তারা জ্ঞান অন্বেষণ করতে চাওয়ায় তাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়—কারণ ঈশ্বরের লোকেদের কাছ থেকে এটি একটি নির্দিষ্ট দাবী, তা ছাড়া কিছুই নয়; সকল মানুষ তাই দেখে যে তারা অজান্তেই এই অতল শব্দগুলির গভীর চিন্তায় আরও বেশি সময় অতিবাহিত করছে। এর পরিণতি হিসাবে, তাদের মস্তিষ্কে নানান রকমের ধারণা অঙ্কুরিত হয়, তাদের চোখের সামনে ঝলক দিয়ে ওঠে ভাসমান তুষারকণা, আর তাদের মনের মধ্যে তৎক্ষণাৎ আকাশের ভাসমান মেঘমালার আবির্ভাব ঘটে। ঈশ্বর তাঁর লোকেদের কেন তুষারের মতো হতে বলেন, ভাসমান মেঘমালার মতো নয়? এখানে এর গূঢ়ার্থ ঠিক কী? এই শব্দগুলি সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক কী নির্দেশ করে? “তুষার” শুধুমাত্র প্রকৃতিকে সুন্দর দেখতেই করে তোলে না, এটি কৃষিজমির পক্ষেও ভালো; এটি রোগজীবাণু নির্মূল করার পক্ষে উপকারী। ভারী তুষারপাতের পর, সকল রোগজীবাণু উজ্জ্বল তুষারে ঢেকে যায়, আর সমগ্র এলাকা তৎক্ষণাৎ কানায়-কানায় জীবনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। একইভাবে, ঈশ্বরের লোকেদেরও শুধু ঈশ্বরের অবতাররূপকে জানলেই হবে না, তাদের ঈশ্বরের অবতাররূপের সত্যের উপর নিজেদের অনুশাসিতও করতে হবে; তা করার মাধ্যমে, তারা স্বাভাবিক মানবতার জীবন যাপন করবে। এইভাবেই তুষার প্রকৃতিকে সুন্দর করে তোলে; পরিশেষে, ঈশ্বরের লোকেদের পরিপক্কতা অতিকায় লাল ড্রাগনের সমাপ্তি ডেকে আনবে, পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করবে ঈশ্বরের রাজ্য, এবং ঈশ্বরের পবিত্র নামের প্রচার ও নামকে মহিমান্বিত করবে, যাতে পৃথিবীতে সমগ্র রাজ্য ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণতায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তাঁর প্রভায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, এবং ঝলমল করে ওঠে তাঁর মহিমায়। সর্বত্র থাকবে শান্তি এবং পরিতৃপ্তি, সুখ ও পরিপূর্ণতা, এবং অবিরাম নতুন হতে থাকা সৌন্দর্যের দৃশ্য। বর্তমানে বিদ্যমান বিভিন্ন মহামারী—ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাব যেমন অধার্মিকতা, কুটিলতা এবং প্রতারণা, মন্দ কামনা, ইত্যাদি—সবকিছুই উৎখাত করা হবে, এবং এইভাবে স্বর্গ ও পৃথিবী উভয়ই পুনর্নবীকৃত হবে। এই হল “ভারী তুষারপাতের পর”-এর প্রকৃত অর্থ। যারা ভাসমান মেঘমালার মতো তারা সেই ধরণের মানুষের সদৃশ যারা ঈশ্বরের উল্লিখিত দলকে অনুসরণ করে; যদি শয়তানের কোনো প্রলোভন অথবা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে কোনো পরীক্ষা থাকে, তারা তৎক্ষণাৎ সরে যাবে, তাদের আর অস্তিত্বই থাকবে না। এমনকি তাদের কোনো উপাদানও বেঁচে থাকবে না, অনেক পূর্বেই তার অস্তিত্ব হারিয়ে গিয়েছে। মানুষ যদি ভাসমান মেঘমালার মতো হয়, তাহলে তারা যে শুধু ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে না তাই নয়, তারা তাঁর নামকেও লজ্জিত করবে, কারণ এইসব মানুষকে যেকোনো সময়ে অথবা স্থানে ছিনিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি থাকে; তারা হল শয়তানের খাদ্য—আর শয়তান যখন তাদের বন্দী বানাবে, তখন তারা ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে আর শয়তানের সেবা করবে। এতে সুস্পষ্টরূপেই ঈশ্বরের নামকে লজ্জিত করা হয়, আর সবকিছুর মধ্যে ঈশ্বর এটিই সর্বাধিক ঘৃণা করেন; এইরকম মানুষই হল ঈশ্বরের শত্রু। সুতরাং, তাদের স্বাভাবিক মানুষের সারমর্ম নেই এবং কোনোরকম ব্যবহারিক মূল্যও নেই। এই কারণেই ঈশ্বর তাঁর লোকেদের কাছ থেকে এরকম প্রয়োজনীয়তা দাবী করেন। তবে, এই বাক্যগুলির কিছুটা উপলব্ধি করার পর, মানুষ এরপর কী করবে তা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, কারণ ঈশ্বরের বাক্যসমূহের বিষয়টি স্বয়ং ঈশ্বরের দিকে ঘুরে গেছে, যা তাদের একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করে তোলে: “যেহেতু আমি পবিত্র ভূমি থেকে এসেছি, তাই আমি পদ্মের মত নই, যার শুধু নাম আছে, নির্যাস নেই, কারণ তা আসে পঙ্ক থেকে, পবিত্র ভূমি থেকে নয়।” তাঁর লোকেদের কাছ থেকে তাঁর প্রয়োজনীয়তার কথা বলার পর, ঈশ্বর কেন তাঁর নিজ জন্মের কথা বর্ণনা করেছেন? এমন কি হতে পারে যে এই দুইয়ের মধ্যে কোনো সংযোগ রয়েছে? অবশ্যই, এগুলির মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত সংযোগ রয়েছে; যদি না থাকতো, তাহলে ঈশ্বর মানুষকে তা বলতেন না। সবুজ পাতার মাঝে, পদ্ম আন্দোলিত হয় মৃদুমন্দ বাতাসে। দৃশ্যটি নয়নাভিরাম, এবং তা সযত্নে হৃদয়ে লালিত হয়। মানুষের মন এতে ভরে না, এবং তারা ছটফট করতে থাকে জলে সাঁতরে গিয়ে একটি প্রস্ফুটিত পদ্ম তুলে নিয়ে এসে আরও কাছ থেকে সেটি দেখার জন্য। তবে, ঈশ্বর বলেন এই পদ্মের আগমন পঙ্ক থেকে, আর এর শুধু নাম আছে, নির্যাস নেই; মনে হয় যেন ঈশ্বর পদ্মফুলকে কোনোরকম গুরুত্ব দেননি, এবং তাঁর বাক্যসমূহে আরও স্পষ্ট হয় যে এগুলিকে তিনি এক নির্দিষ্টরূপ ঘৃণা করেন। যুগে যুগে, অনেকেই পদ্মের অমিতব্যয়ী প্রশংসা করেছে কারণ তারা পাঁক থেকে অকলুষিতভাবে নির্গত হয়, এমনকি এই আভাসও দিয়েছে যে পদ্ম কোনো তুলনার অতীত এবং তা বর্ণনাতীতভাবে বিস্ময়কর। যদিও, ঈশ্বরের চোখে পদ্ম মূল্যহীন—ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে পার্থক্যও নির্দিষ্টভাবে ঠিক এটিই। সুতরাং দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য আকাশ মণ্ডল ও পৃথিবীর ভিতের দূরত্বের মতই বিশাল। পদ্ম যেহেতু পঙ্ক থেকে আগত, তাই তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলিও সেখান থেকেই আসে। আসলে, পদ্ম নিজেকে ছদ্ম-আবরণে মুড়ে রাখতে সক্ষম বলেই তা চোখের পক্ষে মনোহর হয়ে ওঠে। অনেকেই শুধু পদ্মের নয়নাভিরাম বহিরঙ্গই দেখে, কিন্তু কেউই দেখে না যে তার অভ্যন্তরে লুক্কায়িত জীবন আবর্জনাময় ও অপবিত্র। এইভাবে, ঈশ্বর বলেছেন যে এর শুধু নাম আছে, নির্যাস নেই—যা সম্পূর্ণ সঠিক ও সত্য। ঈশ্বরের লোকেরা কি আজ ঠিক এরকমই নয়? ঈশ্বরের প্রতি তাদের সমর্পণ আর বিশ্বাস শুধুই অগভীর। ঈশ্বরের সম্মুখে তারা চাটুকারিতা করে আর নিজেদের জাহির করে, যাতে ঈশ্বর তাদের উপর সন্তুষ্ট হন; তবে, ভিতরে ভিতরে তারা ভ্রষ্ট, শয়তানোচিত স্বভাবে পূর্ণ, এবং তাদের অভ্যন্তর পূর্ণ অশুদ্ধতায়। এই কারণেই ঈশ্বর মানুষের সম্মুখে প্রশ্ন তুলে ধরেন, জানতে চান যে ঈশ্বরের প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা অশুদ্ধতায় কলঙ্কিত নাকি তা শুদ্ধ ও ঐকান্তিক। তারা যখন সেবা-প্রদানকারী ছিল, অনেকেই তখন মুখে ঈশ্বরের প্রশংসা করলেও অন্তরে তাঁকে অভিসম্পাতই করেছিল। নিজেদের কথায় তারা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করেছিল, কিন্তু হৃদয়ে তারা তাঁকে অমান্য করেছিল। তাদের মুখ থেকে নির্গত হতো নেতিবাচক কথাবার্তা, আর অন্তরে, তারা পোষণ করত ঈশ্বরের বিরোধিতা। এমনকি এরকম মানুষও ছিল যাদের কাজকর্ম ছিল সমন্বিত: তাদের মুখ থেকে আর হাতের অঙ্গভঙ্গীতে প্রকাশিত হয়েছে অশ্লীলতা, চূড়ান্ত লাম্পট্য, এবং অতিকায় লাল ড্রাগনের প্রকৃত মুখমণ্ডলকে তারা দিয়েছে এক সুস্পষ্ট ও জীবন্ত অভিব্যক্তি। এইসব মানুষ সত্যিই অতিকায় লাল ড্রাগনের বংশধর বলে অভিহিত হওয়ারই যোগ্য। তবে, আজ, তারা অনুগত সেবা-প্রদানকারীদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আর এমন আচরণ করছে যেন তারা ঈশ্বরের অনুগত লোক—কতটা নির্লজ্জ! যদিও তাতে বিস্ময়ের কিছুই নেই; তারা এসেছে পঙ্ক থেকে, তাই তাদের প্রকৃত রঙ না দেখিয়ে তারা পারে না। ঈশ্বর যেহেতু পবিত্র ও বিশুদ্ধ, এবং বাস্তব ও সত্য, তাই তাঁর দেহ এসেছে আত্মা থেকে। এটি নিশ্চিত এবং অকাট্য। শুধুমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরের জন্য সাক্ষ্য দিতে সক্ষম হওয়াই নয়, সেইসাথে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণেও সক্ষম হওয়া: এটি ঈশ্বরের সারসত্যের একটি দিককে উপস্থাপিত করে। দেহ একটি প্রতিমূর্তি সহ আত্মা থেকে আগত হওয়ার অর্থ হল, আত্মা যে দেহ দ্বারা নিজেকে আবৃত রাখেন তা মানুষের শরীরের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক, আর এই পার্থক্য প্রাথমিকভাবে নিহিত রয়েছে তাদের আত্মায়। “প্রতিমূর্তি সহ আত্মা” যা নির্দেশ করছে তা হল, স্বাভাবিক মানবতার দ্বারা আবৃত হওয়ার ফল হিসাবে, দেবত্ব কীভাবে ভিতর থেকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সক্ষম। এটি এতটুকুও অতিপ্রাকৃত নয়, এবং মানবতার দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। "আত্মার প্রতিমূর্তি" পূর্ণ দেবত্বকে নির্দেশ করে, এবং তা মানবতার দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। অর্থাৎ, ঈশ্বরের অন্তর্নিহিত স্বভাব ও প্রকৃত প্রতিমূর্তি অবতাররূপ দেহের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে যাপন করা যেতে পারে, যা শুধু স্বাভাবিক ও স্থিতিশীলই নয়, মহিমা এবং ক্রোধের অধিকারীও। প্রথম অবতাররূপ দেহ শুধুমাত্র সেই ঈশ্বরকেই উপস্থাপিত করতে পারত যাঁকে মানুষ কল্পনা করতে পারত; অর্থাৎ, তিনি শুধুই অলৌকিক ও অত্যাশ্চর্য কার্যকলাপ ঘটাতে, এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম ছিলেন। সুতরাং, তিনি ঈশ্বরের বাস্তবিকতাকে সম্পূর্ণরূপে যাপন করেননি, আর তাই তিনি একটি প্রতিমূর্তি সহ আত্মার মূর্ত রূপ ছিলেন না; তিনি ছিলেন দেবত্বের প্রত্যক্ষ আবির্ভাব। উপরন্তু, যেহেতু তিনি স্বাভাবিক মানবতাকে অতিক্রম করে গিয়েছিলেন, তাই তাঁকে সম্পূর্ণ বাস্তববাদী ঈশ্বর স্বয়ং বলে অভিহিত করা হয়নি, বরং তাঁর মধ্যে স্বর্গের অস্পষ্ট ঈশ্বরের সামান্যকিছু ছিল; তিনি ছিলেন মানুষের পূর্বধারণার ঈশ্বর। এই হল দু’টি অবতাররূপ দেহের মধ্যে উপাদানগত পার্থক্য।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে, ঈশ্বর মনুষ্যজাতির প্রতিটি পদক্ষেপ এবং মানুষ যা যা বলে ও করে সেই সমস্তকিছুর উপর নজর রাখেন। এমনকি তিনি তাদের অন্তরতম সকল চিন্তাভাবনাগুলিও চূড়ান্ত স্বচ্ছতা সহ পর্যবেক্ষণ করেন, কখনোই সেগুলি অলক্ষিত থাকে না; যেমন, তাঁর বাক্যসমূহ মানুষের একেবারে অন্তর ভেদ করে, তাদের প্রতিটি চিন্তায় আঘাত করে, এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলি বিচক্ষণতাপূর্ণ ও ত্রুটিহীন। “আমার আত্মাকে যদিও মানুষ ‘জানে’, তবুও তারা আমার আত্মাকে ক্ষুব্ধ করে। আমার বাক্য নগ্ন করে সকল মানুষের কুৎসিত চেহারা, সেইসাথে তাদের অন্তরতম চিন্তা, যার ফলে পৃথিবীর সকলে ভূপতিত হয় আমার নিরীক্ষণের মাঝে।” এর থেকে এটি স্পষ্ট যে যদিও মানুষের কাছ থেকে ঈশ্বরের প্রয়োজনগুলি খুব বেশি চাহিদার কিছু নয়, মানুষ তবুও ঈশ্বরের আত্মার নিরীক্ষণ সহ্য করতে অক্ষম। “তবে, পতিত হলেও, তাদের হৃদয় আমার কাছ থেকে দূরে থাকার সাহস করে না। আমার কর্মের ফলস্বরূপ, সৃষ্টির বস্তুসকলের মাঝে এমন কেউ কি আছে যে আমাকে ভালোবাসে না?” এটি ঈশ্বরের সম্পূর্ণ প্রজ্ঞা ও সর্বশক্তিমত্তার আরও বেশি ইঙ্গিতবাহী, এবং এইভাবে তা ঈশ্বরের লোকেরা যখন সেবা-প্রদানকারীর অবস্থানে ছিল তখন তারা যা যা ভেবেছিল সেই সবকিছু প্রকাশ করে: ব্যর্থতার মধ্যে শেষ হওয়া একটি “বিনিময়”-এর পর, তাদের মাথায় থাকা “সহস্র সহস্র” অথবা “লক্ষ লক্ষ”-এর কিছুই কোনো কাজে আসেনি। তবে, ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানসমূহ এবং ঈশ্বরের মহিমা ও ক্রোধের কারণে—যদিও তারা বিষন্নতায় নিজেদের মাথা নুইয়ে রেখেছিল—তারপরেও ঈশ্বরকে তারা নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সেবা প্রদান করেছিল, এবং তাদের অতীতের সমস্ত অনুশীলন শুধুই শূন্যগর্ভ কথায় পরিণত হয়ে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছিল। তার পরিবর্তে, নিজেদের আমোদিত রাখতে, সময় কাটাতে অথবা অলসতায় কালাতিপাত করতে তারা ইচ্ছামত এমন কাজ করেছিল যা তাদের নিজেদের এবং অন্যান্য প্রত্যেককে খুশি করেছিল।… মানুষের মাঝে সত্যি যা ঘটে চলেছিল তা এই। তাই, ঈশ্বর মানবজাতির কাছে উন্মুক্ত হয়েছেন এবং বলেছেন, “আমার বাক্যের ফলস্বরূপ, কে এমন আছে যে আমার জন্য আকুল হয় না? এমন কে আছে, আমার ভালোবাসার ফলে যার মধ্যে আমার প্রতি আসক্তিবোধ জন্মায় না?” সত্যি কথা বলতে, সকল মানুষই ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করতে আগ্রহী, এবং তাদের মধ্যে এমন একজনও নেই যে ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করতে পছন্দ করে না; শুধু তারা ঈশ্বরের বাক্যসমূহের অনুশীলনে অক্ষম, কারণ তাদের প্রকৃতিই তাদের বাধা দেয়। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করার পর, অনেকেই তা থেকে দূরে সরে থাকা সহ্য করতে পারে না, এবং তাদের অভ্যন্তরে ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। এইভাবে, ঈশ্বর আরও একবার শয়তানকে অভিসম্পাত করেন, আরও একবার তার কুৎসিত চেহারা অনাবৃত করেন। “এই যুগ যেখানে শয়তান অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করে এবং সে উন্মাদের মতো স্বেচ্ছাচারী” আবার ঠিক সেই যুগও যেখানে ঈশ্বর পৃথিবীতে তাঁর আনুষ্ঠানিক মহান কার্যের সূচনা করেন। এরপর, তিনি পৃথিবী ধ্বংসের কার্য শুরু করেন। অন্য কথায় বলা যায়, শয়তান যত অনিয়ন্ত্রিত উন্মত্ত হয়ে উঠবে, ঈশ্বরের দিনও তত শীঘ্রই উপনীত হবে। এইভাবে, ঈশ্বর যত বেশি করে শয়তানের উশৃঙ্খলতার কথা বলেন, সেই দিনও ততই নিকটবর্তী হতে থাকে যেদিন ঈশ্বর বিশ্বকে নিশ্চিহ্ন করবেন। শয়তানের প্রতি এটিই ঈশ্বরের ঘোষণা।

ঈশ্বর কেন বারংবার বলেছেন, “…উপরন্তু, আমার পশ্চাতে, তারা সেই সমস্ত ‘প্রশংসনীয়’ কদর্য কাজকর্মে লিপ্ত হয়। তুমি কি মনে কর, এই দেহ, যা দ্বারা আমি নিজেকে আবৃত করি, তা তোমার কাজকর্ম, তোমার আচরণ, এবং তোমার কথাবার্তার কিছুই জানে না?” তিনি এই বাক্যগুলি শুধু এক-দুইবার বলেননি। কেন? একবার মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা সান্ত্বনা পেলে, আর মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের বিষন্নতার বিষয়ে অবহিত হলে, সংগ্রাম করে সামনের দিকে এগিয়ে চলার সময় অতীতকে ভুলে যাওয়া তাদের পক্ষে সহজ হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর মানুষের প্রতি সামান্যতমও নমনীয় নন: তিনি তাদের চিন্তাভাবনাকে নিশানা করা অব্যাহত রাখেন। তাই, তিনি বার বার মানুষকে বলেছেন নিজেদের জানতে, তাদের লাম্পট্য বন্ধ করতে, এইরকম প্রশংসনীয় কদর্য কাজকর্মে আর লিপ্ত না হতে, এবং ঈশ্বরের দেহরূপী অবতারকে আর কখনও প্রতারণা না করতে। যদিও মানুষের প্রকৃতি বদলায় না, তবুও তাদের কয়েকবার মনে করিয়ে দেওয়ায় লাভ আছে। এর পর, মানুষের হৃদয়ের রহস্যগুলি প্রকাশ করতে ঈশ্বর মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন: “বহু বছর আমি ঝড় ও বৃষ্টি সহ্য করেছি, এবং একইভাবে আমি মনুষ্য জগতের তিক্ততাও অনুভব করেছি; তবে, আরও নিবিড় প্রতিফলনে, কোনো পরিমাণ কষ্টভোগই দেহসম্পন্ন মনুষ্যজাতিকে আমার উপর থেকে আশা হারাতে দেবে না, কোনো প্রকার মাধুর্য তো রক্তমাংসের মনুষ্যজাতিকে আমার প্রতি শীতল, বিষন্ন, অথবা অবজ্ঞাপূর্ণ হতে আরোই দেবে না। আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা কি সত্যিই কষ্টভোগের অভাব অথবা মাধুর্যের অভাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?” “সূর্যের তলদেশের সবকিছুই শূন্যগর্ভ”—এই বাক্যের সত্যিই অন্তর্নিহিত অর্থ রয়েছে। এইভাবে, ঈশ্বর বলছেন যে কোনোকিছুই ঈশ্বরের প্রতি মানুষকে আশা হারাতে দিতে অথবা তাঁর প্রতি নিরাসক্ত করে তুলতে পারে না। মানুষ যদি ঈশ্বরকে ভালো না বাসে, তাহলে তারা মৃতও হতে পারে; তারা যদি ঈশ্বরকে ভালো না বাসে, তাহলে তাদের কষ্টভোগ বৃথা এবং তারা যে সুখ ভোগ করে তা শূন্যগর্ভ, আর সেসব তাদের পাপের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেহেতু একজন মানুষও ঈশ্বরকে প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসে না, তাই তিনি বলেছেন, “আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা কি সত্যিই কষ্টভোগের অভাব অথবা মাধুর্যের অভাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?” মানুষের জগতে, কোনো কষ্টভোগ অথবা মাধুর্য ছাড়া কেউ কীভাবে থাকতে পারে? বার বার, ঈশ্বর বলেছেন, “একজন মানুষও কখনোই সত্যিই আমার মুখ চাক্ষুষ করেনি অথবা কখনোই সত্যিই আমার কণ্ঠস্বর শ্রবণ করেনি, কারণ মানুষ আমাকে প্রকৃত অর্থে জানে না”। ঈশ্বর বলেছেন যে মানুষ তাঁকে প্রকৃত অর্থে জানে না, কিন্তু তিনি কেন মানুষকে বলেন তাঁকে জানতে? এ কি স্ববিরোধ নয়? ঈশ্বরের প্রতিটি বাক্যেরই একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে। মানুষ অসাড় হয়ে পড়েছে বলে, ঈশ্বর মানুষের মধ্যে তাঁর কার্যের ১০০ শতাংশই সম্পাদন করার নীতি প্রয়োগ করেন, যাতে অবশেষে তাদের প্রত্যেকের অন্তরের ০.১ শতাংশ অধিকার করা যায়। ঈশ্বর যে পদ্ধতিতে কার্য সম্পাদন করেন তা এমনই, এবং ঈশ্বরকে তাঁর লক্ষ্য অর্জন করতে এইভাবেই কাজ করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে এটিই আবার ঈশ্বরের বাক্যসমূহের প্রজ্ঞাও। তোমরা কি তা উপলব্ধি করেছো?

ঈশ্বর বলেছেন: “যখন আমি আমার রহস্যময়তা প্রত্যক্ষভাবে প্রকাশ করি এবং দেহরূপে আমার ইচ্ছা সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান করে তুলি, তোমরা তা লক্ষ্য করো না; তোমরা ধ্বনি শ্রবণ করো, কিন্তু তাদের অর্থ উপলব্ধি করো না। আমি অত্যন্ত বিষন্ন। যদিও আমি দেহরূপে রয়েছি, কিন্তু আমি দেহের সেবাব্রতের কার্য সম্পাদনে অক্ষম।” এক দিক থেকে, মানুষকে, তাদের অসাড়তার কারণে, এই বাক্যগুলিই ঈশ্বরের সঙ্গে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেওয়ায়; অপর দিকে, দেহরূপ অবতারের মধ্যে ঈশ্বর তাঁর দেবত্বের প্রকৃত রূপ প্রকাশ করেন। যেহেতু মানুষের আত্মিক উচ্চতা অত্যন্ত ক্ষুদ্র, তাই ঈশ্বর যখন দেহরূপে রয়েছেন সেই সময়কালে দেবত্বের প্রকাশ ঘটে শুধুমাত্র মানুষের তা গ্রহণ করার ক্ষমতার সাথে সঙ্গতি রেখেই। কার্যের এই ধাপ চলাকালীন, অধিকাংশ মানুষই তা সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করতে অক্ষম থেকে যায়, যা পর্যাপ্তরূপে দেখায় যে তারা কতদূর গ্রহণক্ষমতাহীন। এইভাবে, এই কার্যকালে, দেবত্ব তার সকল মূল কাজগুলি সম্পাদন করে না; এটি শুধুই তার ক্ষুদ্র একটি অংশ সম্পাদন করে। এটি দেখায় যে ভবিষ্যতের কার্যে, মানুষের পুনরুদ্ধারের অবস্থা অনুসারে দেবত্ব ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবে। তবে, দেবত্ব ধীরে ধীরে বিকশিত হয় না; বরং, তা রয়েছে ঈশ্বরের অবতাররূপের সারসত্যেই, এবং মানুষের আত্মিক উচ্চতা থেকে তা ভিন্ন।

ঈশ্বরের মনুষ্যজাতিকে সৃষ্টি করার একটি উদ্দেশ্য ও অর্থ ছিল, সেকারণেই তিনি বলেছেন, “যদি সমগ্র মনুষ্যজাতি আমার ক্রোধের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো, তাহলে আমার আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির তাৎপর্য কী হতো?” মানুষ ভ্রষ্ট হওয়ার পর, ঈশ্বর তাঁর নিজ মনোরঞ্জনের জন্য তাদের একটি অংশকে অর্জন করার পরিকল্পনা করেন; সব মানুষকে ধ্বংস করা তাঁর অভিপ্রায় ছিল না, ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানসমূহের সামান্য লঙ্ঘন ঘটলেই যে তাদের নির্মূল করা হবে তেমনও নয়। ঈশ্বরের এমন ইচ্ছা নয়; ঈশ্বর যেমন বলেছেন, তা হবে অর্থহীন। ঠিক এই “অর্থহীনতা”-র কারণেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা সুস্পষ্ট করা হয়েছে। এমনকি ঈশ্বরের সমস্ত মানুষকে শাস্তি দেওয়ার, বিচার করার এবং আঘাত করার জন্য, শেষ পর্যন্ত যারা তাঁকে সত্যিই ভালোবাসে তাদেরকে বেছে নেওয়ার জন্য, নানাবিধ উপায়ে কথা বলার এবং কাজ করার মধ্যেও কি এর চেয়ে বেশি তাৎপর্য নেই? ঠিক এই প্রকারেই ঈশ্বরের কর্মসমূহ প্রকাশিত হয়, আর তাই মানুষের সৃষ্টিও আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুতরাং, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের অধিকাংশই বলা হয় শুধুমাত্র তাদেরকে পাশ কাটিয়ে যাতে ভেসে যায় সেই জন্য; তা করা হয় একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্যই, আর ঠিক এটিই হল তাঁর বাক্যসমূহের একটি অংশের বাস্তবতা।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৮

পরবর্তী: সংযোজন: অধ্যায় ১

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন