সংযোজন: অধ্যায় ১

যা আমি তোমাদের করতে বলি তা কোনো অস্পষ্ট ও শূন্যগর্ভ তত্ত্বকথা নয়, তা মানুষের মস্তিষ্কের পক্ষে অকল্পনীয় বা মানবদেহের পক্ষে অসাধ্য কিছুও নয়। কে আমার গৃহের অভ্যন্তরে পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শনে সমর্থ? আর কে-ই বা আমার রাজ্যের অভ্যন্তরে সর্বস্ব উৎসর্গ করতে পারে? আমার ইচ্ছার উদ্ঘাটন ব্যতিরেকে, তোমরা কি সত্যই আমার অন্তরকে পরিতুষ্ট করার দাবি করতে পারো? কেউ কখনো আমার অন্তরকে বুঝতে পারেনি, এবং কেউ কখনো আমার ইচ্ছাকে উপলব্ধি করেনি। কে কবে আমার মুখাবয়ব দর্শন করেছে বা আমার কণ্ঠস্বর শ্রবণ করেছে? পিতর, পৌল, যোহন বা যাকোব কি করেছিল? কে কবে আমার দ্বারা সজ্জিত, বা আমার দ্বারা অধিকৃত, বা আমার দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে? যদিও আমার প্রথম দেহধারণ ঘটেছিল দেবত্বের মধ্যে, তবু যে দেহের দ্বারা আমি নিজেকে আচ্ছাদিত করেছিলাম তা মানুষের দুঃখযন্ত্রণার কথা জানতো না, কারণ আমি কোনো বিশেষ রূপে অবতারত্ব লাভ করি নি, আর তাই এমন বলা যায় না যে দেহরূপে আমার ইচ্ছার সম্পূর্ণ পরিপূরণ ঘটেছিল। এক স্বাভাবিক মানবতার মানুষের মধ্যে যেভাবে আমি কার্য সম্পাদন বা বাক্য উচ্চারণ করতাম, আমার দেবত্ব যখন, কোনো প্রতিবন্ধকতা বা অন্তরায় ব্যতিরেকে, সেভাবেই কাজ করতে বা কথা বলতে সমর্থ হয়, একমাত্র তখনই বলা যায় যে দেহরূপে আমার ইচ্ছা চরিতার্থতা পেয়েছে। আমার স্বাভাবিক মানবতা আমার দেবত্বকে আড়াল করে রাখতে সক্ষম বলেই আমার বিনম্র ও প্রচ্ছন্ন হওয়ার লক্ষ্য অর্জিত হয়। দেহরূপে কার্য সম্পাদনের পর্যায় চলাকালীন, দেবত্ব প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়া করলেও, শুধুমাত্র স্বাভাবিক মানবতার জীবন ও ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ার কারণেই মানুষের পক্ষে এই কাজগুলি দেখতে পাওয়া সহজসাধ্য নয়। বর্তমান অবতাররূপ প্রথম অবতাররূপের মতো ৪০ দিন যাবৎ অনশনরত রইতে পারেন না, বরং তিনি স্বাভাবিকতার সঙ্গেই কাজকর্ম করে ও কথাবার্তা বলেন; বর্তমান অবতাররূপ রহস্যের উদ্ঘাটন করলেও, তিনি অত্যন্ত স্বাভাবিক; মানুষ যেমন কল্পনা করে থাকে তেমন নয়—তাঁর কণ্ঠস্বর বজ্রনির্ঘোষের মতো নয়, তাঁর মুখমণ্ডল আলোয় ঝলমল করে না, এবং তাঁর পদসঞ্চালনে স্বর্গসমূহ প্রকম্পিত হয় না। তা যদি হতো, তাহলে এতে আমার প্রজ্ঞার কোনো প্রকাশ থাকতো না, এবং শয়তানকে লজ্জিত ও পরাভূত করা অসম্ভব হয়ে পড়তো।

স্বাভাবিক মানবতার আড়াল থেকে যখন আমি নিজের দেবত্বের প্রদর্শন করি, তখন আমি পূর্ণ মহিমা লাভ করি, আমার মহান কার্য নিষ্পন্ন হয়, এবং কোনোকিছুই কোনো অন্তরায় হয়ে ওঠে না। এর কারণ আমার অবতাররূপের মূল লক্ষ্য হল আমায় যারা বিশ্বাস করে তাদের সকলকে আমার দেহরূপে সম্পাদিত দেবত্বের কার্যাদি দর্শন করানো, এবং স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরকে চাক্ষুষ করার সুযোগদান করা, এইভাবে মানুষের অন্তঃকরণে দর্শনাতীত ও ইন্দ্রিয়াতীত ঈশ্বরের অধিকৃত স্থানটি বিলুপ্ত করা। যেহেতু আমি যেকোনো স্বাভাবিক মানুষের মতোই আহার করি, পোশাকের দ্বারা নিজেকে আচ্ছাদিত করি, নিদ্রারত হই, বসবাস করি, এবং ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন করি, যেহেতু আমি যেকোনো স্বাভাবিক মানুষের মতোই বাক্যোচ্চারণ করি, হেসে উঠি এবং যেহেতু আমার প্রয়োজনগুলিও একজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই, এবং, একই সঙ্গে, আমি পূর্ণ দেবত্বের সারসত্যেরও অধিকারী, সেহেতু আমাকে “বাস্তববাদী ঈশ্বর” বলা হয়। এটি কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়, এবং এটি উপলব্ধি করা সহজ; এর মধ্যেই দেখা যায় আমার কার্যের মর্মস্থলটি কোন অংশে নিহিত, এবং কার্যের কোন পর্যায়ের উপর নিবদ্ধ রয়েছে আমার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুটি। আমার অবতাররূপের প্রধান লক্ষ্য হল স্বাভাবিক মানবতার মধ্য দিয়ে আমার দেবত্বকে প্রকাশ করা। এটা বুঝতে পারা কষ্টসাধ্য নয় যে, আমার কার্যের কেন্দ্রবিন্দু বিচারের যুগের দ্বিতীয় অংশেই নিহিত।

আমার মধ্যে কোনোদিন মানবজীবন ছিল না, মানবতার চিহ্নমাত্রও ছিল না। আমার মধ্যে মানবজীবনের কখনোই কোনো স্থান ছিল না, এবং কখনোই তা আমার দেবত্বের উদ্ঘাটনকে নিরুদ্ধ করেনি। তাই, যত বেশি করে আমার স্বর্গীয় কণ্ঠস্বর ও আমার আত্মার ইচ্ছা অভিব্যক্ত হয়, তত বেশি করে শয়তানকে লজ্জা দেওয়া যায়, আর এইভাবে, স্বাভাবিক মানবতার মধ্যে আমার ইচ্ছার পরিপূরণ আরো সহজসাধ্য হয়ে ওঠে। একমাত্র এটাই শয়তানকে পরাস্ত করেছে; শয়তান ইতিমধ্যেই পুরোদস্তুর অপদস্থ হয়েছে। আমি প্রচ্ছন্ন হলেও, তা আমার দেবত্বের উচ্চারণ ও কার্যাবলীকে ব্যাহত করে না—আমি যে বিজয়ী হয়েছি ও পূর্ণ মহিমা অর্জন করেছি, এ-ই হল তার পর্যাপ্ত প্রমাণ। আমার দেহরূপে সাধিত কার্য যেহেতু অপ্রতিহত, এবং বাস্তববাদী ঈশ্বর বর্তমানে যেহেতু মানুষের হৃদয়ে একটি স্থান করে নিয়েছেন এবং তাদের অন্তরে শিকড় সঞ্চালিত করেছেন, সেহেতু এতেই সম্পূর্ণরূপে প্রতিপন্ন হয় যে শয়তান আমার দ্বারা পরাভূত হয়েছে। এবং শয়তান যেহেতু মানুষের মাঝে আর কিছু করতে অক্ষম, এবং যেহেতু মানুষের দেহে শয়তানের বৈশিষ্ট্য সংস্থাপন করা দুষ্কর, সে কারণেই আমার ইচ্ছা কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই অগ্রবর্তী হয়ে চলে। আমার কার্যের বিষয়বস্তু, মুখ্যত, সকল মানুষকে আমার বিস্ময়কর কার্যাবলী অবলোকন করানো এবং আমার প্রকৃত অবয়ব দর্শন করানো: আমি নাগালের বাইরে নয়, সবকিছুকে ছাড়িয়ে আকাশের মাঝে আমি উত্তুঙ্গ হয়ে দণ্ডায়মান নই, আমি নিরাকার ও অনিয়তাকারও নই। বাতাসের মতো আমি অদৃশ্য নই, এবং বায়ুতাড়িত হয়ে সহজেই উড্ডীয়মান ভাসমান মেঘের সদৃশও নই আমি; বরং, মানুষের মাঝেই বসবাস এবং মিষ্টতা, অম্লতা, তিক্ততা, ও উগ্রতার অভিজ্ঞতা নেওয়া সত্ত্বেও, আমার দেহ মানবদেহের থেকে উপাদানগতভাবে পৃথক। আমার সঙ্গে মেলামেশা করতে অধিকাংশ মানুষ অসুবিধা বোধ করে, তা সত্ত্বেও তাদের অধিকাংশই আমার ঘনিষ্ঠ হওয়ার বাসনা পোষণ করে। মনে হয় যেন ঈশ্বরের অবতারের মধ্যে বিপুল, দুর্জ্ঞেয় সব রহস্যাবলী রয়েছে। দেবত্বের প্রত্যক্ষ উদ্ঘাটনের কারণে, এবং মানবসুলভ দেহাকৃতির অন্তরালের কারণে, মানুষ আমার থেকে এক সম্ভ্রমপূর্ণ দূরত্ব বজায় রাখে, তারা ভাবে যে আমি এক করুণাঘন ও প্রেমময় ঈশ্বর, অথচ আমার মহিমা ও ক্রোধের হেতু তারা শঙ্কিতও বটে। তাই, তাদের অন্তরে, তারা আমার সঙ্গে ঐকান্তিকভাবে কথা বলতে চায়, অথচ তাদের মন যা চায় তা তারা করতে পারে না—তাদের হৃদয় যা কামনা করে, তা তারা তাদের শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে, এমনই হল সকলের অবস্থা—মানুষ যত বেশি করে এবম্প্রকারের হয়, আমার স্বভাবের বিভিন্ন অভিমুখের উদ্ঘাটনের প্রমাণও তত জোরদার হয়, এবং এইভাবে, মানুষের ঈশ্বরের বিষয়ে অবগতির লক্ষ্যটি অর্জিত হয়। কিন্তু এ এক গৌণ বিষয়; মূল বিষয়টি হল আমার দেহরূপে সম্পাদিত কার্যাদির মাধ্যমে আমার বিস্ময়কর ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা, ঈশ্বরের সারসত্যের বিষয়ে তাদের বিদিত করা; মানুষের কল্পনামাফিক আমি অস্বাভাবিক ও অতিপ্রাকৃততিক কিছু নই। বরং, আমি হলাম সেই বাস্তববাদী ঈশ্বর যিনি সকল বিষয়েই স্বাভাবিক। মানুষের পূর্বধারণায় আমার যে স্থিতি তার নিরসন করা হয়, এবং আমায় তারা বাস্তবিকতার মধ্যে জানতে পারে। একমাত্র তখনই আমি মানুষের মনে আমার সম্যক আসন গ্রহণ করি।

সকল মানুষের সম্মুখে, শুধু যে আমি কখনোই মানুষের দ্বারা লালিত কোনো অতিপ্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করি নি তাই-ই নয়, উপরন্তু আমি চূড়ান্ত রকমের সাদামাটা ও স্বাভাবিক; উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই আমার অবতাররূপের মাঝে মানুষকে আমি এমন কিছু দর্শনের সুযোগ আমি দিই না যাতে ঈশ্বরের ইঙ্গিতমাত্র রয়েছে। কিন্তু আমার বাক্যের দরুন, মানুষ সম্পূর্ণরূপে বিজিত হয়, এবং তারা আমার সাক্ষ্যের নিকট তারা নিজেদের সমর্পণ করে। একমাত্র এভাবেই, কোনো সংশয় ব্যতিরেকে এবং ঈশ্বরের যথার্থ বিদ্যমানতায় পূর্ণ বিশ্বাসের ভিত্তিতে, মানুষ দেহরূপধারী আমায় জানতে পারে। এই প্রকারে, আমার বিষয়ে মানুষের জ্ঞান বাস্তবতর, সুস্পষ্টতর, এবং সম্পূর্ণরূপে তাদের সুশীল আচরণের সংক্রমণমুক্ত হয়ে ওঠে; এই সবকিছুই আমার দেবত্বের প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার ফল, মানুষকে যা আমার দেবত্বের বিষয়ে এক গভীরতর প্রজ্ঞা দান করে, কারণ কেবল দেবত্বই হল ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ তথা ঈশ্বরের সহজাত বৈশিষ্ট্য। মানুষের তা প্রত্যক্ষ করা উচিত। আমি শুধু সেই সকল বাক্যাবলী, কার্যাদি, ও ক্রিয়াকর্ম চাই যা দেবত্বের মধ্যে অধিষ্ঠিত—মানবতার মধ্যে উচ্চারিত বাক্যনিচয় ও সম্পাদিত কার্যকলাপে আমার কোনো অভিরুচি নেই। আমার লক্ষ্য হল দেবত্বের মধ্যে বসবাস ও কার্য সম্পাদন করা—মানবতার মধ্যে শিকড় সঞ্চালিত করে অঙ্কুরিত হয়ে ওঠার কোনো বাসনা আমি পোষণ করি না, এবং মানবতার মাঝে বসবাসের ইচ্ছাও আমার নেই। আমার বক্তব্য কি তোমরা প্রণিধান করছো? মানবতার মাঝে আমি একজন অতিথি হলেও, এ আমি চাই না; আমি পূর্ণ দেবত্বের মধ্যে কার্য সম্পাদন করি; এবং একমাত্র এভাবেই মানুষ আমার প্রকৃত স্বরূপের সম্যকতর উপলব্ধি লাভ করতে পারে।

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৯

পরবর্তী: অধ্যায় ১০

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন