অধ্যায় ২৯

মানুষের সম্পাদিত কিছু কাজ ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ নির্দেশে সম্পন্ন হয়, কিন্তু এমন কিছু কাজও রয়েছে যে বিষয়ে ঈশ্বর সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশ প্রদান করেন না, যা পর্যাপ্তরূপে প্রতিপন্ন করে যে ঈশ্বর-কৃত কার্যগুলি আজও সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত করা হয়নি—অর্থাৎ, অনেককিছুই প্রচ্ছন্ন রয়েছে এবং এখনও সর্বসমক্ষে আনা হয়নি। অবশ্য, কিছু বিষয় প্রকাশ্যে আনা দরকার, সেখানে অন্য কিছু বিষয়ে মানুষকে হতচকিত ও বিভ্রান্ত রাখা প্রয়োজন; ঈশ্বরের কার্যের ক্ষেত্রে এমন হওয়াটা আবশ্যক। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের স্বর্গ থেকে মানুষের মাঝে অবতীর্ণ হওয়ার ঘটনাটি ধরা যায়—কীভাবে তিনি আবির্ভূত হলেন, কোন মুহূর্তে আবির্ভূত হলেন, কিংবা আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্তকিছুর কোনো পরিবর্তন ঘটলো কি না—এই বিষয়গুলির ক্ষেত্রে মানুষের বিভ্রান্ত হওয়াটা আবশ্যক। এছাড়া এটি বাস্তব পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীলও বটে, কারণ মানবদেহ নিজে সরাসরি আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশে অপারগ। সেকারণেই, ঈশ্বর এমনকি যদি সুস্পষ্টভাবেই জানান কীভাবে তিনি স্বর্গ থেকে ধরিত্রীতে এসেছিলেন, কিংবা যখন তিনি বলেন, “যেদিন সকল বস্তুকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছিল, সেই দিন আমি মানুষের মধ্যে এসেছিলাম এবং তাদের সাথে চমৎকার কিছু দিন ও রাত্রি অতিবাহিত করেছিলাম”, তখন মনে হয় যেন কেউ কোনো বৃক্ষকাণ্ডের সঙ্গে বাক্যালাপ করছে—বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া নেই, কারণ ঈশ্বরের কার্যের পদক্ষেপগুলির বিষয়ে মানুষ অজ্ঞ। এমনকি যখন তারা প্রকৃত অর্থেই সচেতন, তখনও তারা মনে করে যে ঈশ্বর কোনো পরীর মতন স্বর্গ থেকে উড়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে মানুষের মাঝে পুনর্জাত হয়েছিলেন। মানুষের চিন্তার মাধ্যমে এটুকুই অর্জনীয়। এর কারণ মানুষের উপাদান এমনই যে ঈশ্বরের সারমর্ম উপলব্ধি করতে সে অক্ষম, এবং আধ্যাত্মিক জগতের বাস্তবতা অনুধাবনেও অপারগ। শুধুমাত্র নিজেদের উপাদানের সাহায্যে অন্যদের কাছে দৃষ্টান্তস্বরূপ আচরণ করতে মানুষ অসমর্থ হবে, কারণ মজ্জাগতভাবে তারা অভিন্ন, আলাদা কিছু নয়। সেকারণেই, আদর্শস্বরূপ একজন হয়ে উঠে মানুষকে অন্যদের অনুসরণ বা পালনযোগ্য কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে বলাটা বুদবুদে পর্যবসিত হয়, তা জল থেকে বাস্প-উদ্গমনের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে ঈশ্বর যখন “আমার যা আছে ও আমি যা সে সম্পর্কে কিছু জ্ঞান লাভের” কথা বলেন, তখন বাক্যটি নিতান্তই ঈশ্বরের দেহরূপে সম্পাদিত কার্যের উদ্ভাসের প্রতি উদ্দিষ্ট হয়; অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যটি ঈশ্বরের প্রকৃত মুখাবয়ব—তাঁর দেবত্বের প্রতি লক্ষিত হয়, যা মুখ্যত তাঁর ঐশ্বরিক স্বভাবকে সূচিত করে। অর্থাৎ, ঈশ্বর কেন এইভাবে কার্যসাধন করেন, ঈশ্বরের বাক্যনিচয়ের দ্বারা কোন উদ্দেশ্যসমূহ সাধিত হবে, পৃথিবীর বুকে ঈশ্বর কী অর্জন করতে চান, মানুষের মাঝে তিনি কী অর্জন করতে চান, ঈশ্বরের কথনের পদ্ধতিগুলি কী, মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী—এজাতীয় বিষয়গুলি মানুষকে উপলব্ধি করতে বলা হয়। বলা যেতে পারে, দম্ভ করার মতো কোনোকিছুই মানুষের মধ্যে নেই—অর্থাৎ, তার মধ্যে এমন কিছু নেই যা অন্যদের কাছে অনুসরণযোগ্য এক দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে।

যথাযথভাবে দেহরূপী ঈশ্বরের স্বাভাবিকতার কারণেই, এবং যে দেহরূপী ঈশ্বর স্বর্গস্থ ঈশ্বরের থেকে জাত বলে প্রতিভাত হয় না, সেই দেহরূপী ঈশ্বরের সাথে স্বর্গস্থ ঈশ্বরের বৈসাদৃশ্যের কারণেই, ঈশ্বর বলেন, “অনেকগুলো বছর মানুষের মধ্যে আমি অতিবাহিত করেছি, তবু তারা সর্বদা অনবহিত রয়ে গেছে, এবং কখনোই আমাকে জানতে পারেনি।” ঈশ্বর একথাও বলেন যে, “আমার পদক্ষেপ যখন মহাবিশ্ব জুড়ে এবং পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পদদলিত করবে, তখন মানুষ নিজেদের চিনতে শুরু করবে, এবং সকল মানুষ তখন আমার কাছে এসে আমার সামনে মাথা নত করবে ও আমার আরাধনা করবে। সেই দিনই হবে আমার মহিমা অর্জন করার দিন, আমার প্রত্যাবর্তনের দিন, এবং সেই সাথে আমার প্রস্থানের দিনও বটে।” একমাত্র ওই দিনেই ঈশ্বরের প্রকৃত অবয়ব মানুষের কাছে প্রদর্শিত হয়। তথাপি ফলস্বরূপ ঈশ্বর তাঁর কার্যে কালক্ষেপ করেন না, তিনি শুধু করণীয় কার্যটুকু সম্পন্ন করে যান। বিচারকালে, দেহরূপী ঈশ্বরের প্রতি মানুষের মনোভাবের ভিত্তিতে তিনি তাদের দোষী সাব্যস্ত করেন। এই সময়কালে ঈশ্বরের উচ্চারণে এটিই অন্যতম মুখ্য সূত্র। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর বলেন, “সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনার অন্তিম অঙ্কের কাজে প্রবৃত্ত হয়েছি। এই মুহূর্ত থেকে, কেউ যদি সতর্ক না হয় তবে তাদের নিষ্করুণ শাস্তিসাগরে নিমজ্জিত করা হবে, এবং যে-কোনো মুহূর্তে এটা ঘটতে পারে।” এটিই ঈশ্বরের পরিকল্পনার বিষয়বস্তু, এবং এটি অদ্ভুত বা বিস্ময়কর কিছু নয়, বরং এই সমস্তকিছুই তাঁর কার্যের ধাপসমূহের অঙ্গ মাত্র। ইতিমধ্যে, বিদেশে বসবাসকারী ঈশ্বরের লোক ও পুত্রদের ঈশ্বর বিচার করেন গির্জায় সম্পাদিত তাদের কাজের ভিত্তিতে, এবং এই কারণেই ঈশ্বর বলেন, “আমি যখন কাজ করি, সকল স্বর্গদূত আমার সাথে মিলে এই নির্ণায়ক যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয় এবং অন্তিম পর্যায়ে আমার অভিলাষ পূরণের সঙ্কল্প নেয়, যাতে পৃথিবীর মানুষ স্বর্গদূতদের মতোই আমার সামনে আত্মসমর্পণ করে, এবং তাদের আমার বিরোধিতা করার কোনো বাসনা না থাকে, এবং এমন কিছু না করে যা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বলে গণ্য হয়। মহাবিশ্ব জুড়ে এগুলোই আমার কার্যের চালিকাশক্তি।” বিশ্বব্যাপী ঈশ্বরের সম্পাদিত কার্যের এই-ই পার্থক্য; কার্যের লক্ষ্যবস্তুর তারতম্য অনুসারে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আজ, গির্জার সকল লোকজনের এক আকুল হৃদয় রয়েছে, এবং ঈশ্বরের বাক্যগুলি তারা ভোজন ও পান করতে শুরু করে—এতেই যথেষ্টরূপে প্রতিপন্ন হয় যে ঈশ্বরের কার্য পরিসমাপ্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আকাশ থেকে নিম্নাভিমুখে দৃষ্টি প্রসারণ করা হল আরেকবার বিশুষ্ক ডালপালা ও ঝরে-পড়া পাতা, হৈমন্তী বায়ু-বাহিত লোয়েসের বিষণ্ন দৃশ্যপটে দৃষ্টিক্ষেপের অনুরূপ। মনে হয় মানুষের উপর বুঝি এক মহাসর্বনাশ ঘনিয়ে আসছে, যেন-বা সমস্তকিছু এক উচ্ছিন্নতায় পর্যবসিত হতে চলেছে। হয়তো আত্মার সংবেদনশীলতার কারণেই, হৃদয়ে সততই এক নিরানন্দবোধ রয়ে গেছে, তবু, কিছুটা দুঃখ-মিশ্রিত হলেও, তা এক ফালি প্রশান্ত সান্ত্বনাও বহন করে। ঈশ্বরের এই যে বাক্য—“মানুষ জেগে উঠছে, পৃথিবীর সবকিছু সুশৃঙ্খলিত, এবং পৃথিবীর অস্তিত্ব বজায় রাখার দিন আর বাকি নেই, কারণ আমি এসে পৌঁছেছি!”—এটি তারই এক চিত্রায়ণ হতে পারে। এই বাক্যটি শ্রবণের পর মানুষ কিছুটা নেতিবাচক হয়ে উঠতে পারে, অথবা ঈশ্বরের কার্যের বিষয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়তে পারে, অথবা হয়তো তারা নিজেদের আত্মিক অনুভূতির উপর অতিরিক্ত মনোনিবেশ করতে পারে। কিন্তু ধরাধামে তাঁর কার্যের সমাপ্তির পূর্বেই, মানুষকে এহেন এক মোহাচ্ছন্ন বিভ্রান্তি প্রদানের মতো বোকামি ঈশ্বর সম্ভবত করতেন না। তোমার মধ্যে সত্যিই যদি এধরনের কোনো বোধ থাকে, তাহলে এতে প্রমাণ হয় যে ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রতি তুমি অত্যধিক মনোযোগ প্রদান করো, প্রমাণ হয় যে তুমি এমন একজন মানুষ যে নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করে এবং ঈশ্বরের প্রতি যার কোনো ভালোবাসা নেই; এতে প্রতিপন্ন হয় যে এজাতীয় মানুষগুলি অলৌকিকের উপর অতিরিক্ত মনোযোগ স্থাপন করে, এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের আদৌ কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। ঈশ্বরের হস্তপ্রসারণের কারণে, মানুষ যতই পালানোর চেষ্টা করুক না কেন, এই পরিস্থিতিকে তারা এড়াতে পারে না। কে-ই বা ঈশ্বরের হাত এড়াতে পারে? তোমার অবস্থান ও পরিস্থিতি ঈশ্বরের দ্বারা আয়োজিত হয়নি এমনটা কবে হয়েছে? তুমি কষ্টভোগই করো, বা আশীর্বাদধন্যই হও, ঈশ্বরের হাত এড়িয়ে কীভাবে তুমি অলক্ষিতে পালাতে পারো? এটি কোনো মানবীয় বিষয় নয়, বরং পুরোটাই ঈশ্বরের প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত—এর ফলস্বরূপ কে-ই বা মান্য না করে পারে?

“অইহুদিদের মধ্যে আমার কার্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি শাস্তি ব্যবহার করবো, অর্থাৎ, যারা অইহুদি তাদের সকলের উপর আমি শক্তি প্রয়োগ করবো। স্বভাবতই, মনোনীত ব্যক্তিদের মাঝে আমার কার্য সম্পাদনকালীন একই সময়ে এই কার্যও সম্পন্ন হবে।” এই বাক্যগুলি উচ্চারণের মাধ্যমে ঈশ্বর সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী এই কার্যে প্রবৃত্ত হন। ঈশ্বরের যে কার্য ইতিমধ্যেই এই পর্যায় পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে, এটি তার-ই এক ধাপ; কেউই এর মোড় ফেরাতে সক্ষম নয়। বিপর্যয় মানবজাতির একটি অংশের ব্যবস্থা নেবে, এই বিশ্বের সাথে তাদেরও ধূলিসাৎ করে ছাড়বে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যখন দস্তুর মতো শাস্তিপ্রাপ্ত হয়, তখনই ঈশ্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সকল মানুষের সামনে অবতীর্ণ হন। এবং তাঁর আবির্ভাবের দরুন, মানুষেরা শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। উপরন্তু, ঈশ্বর এও বলেন যে, “আমি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই গ্রন্থ উন্মোচন করি, সেটাই সেই সময় যখন মহাবিশ্বের সকল মানুষ শাস্তিপ্রাপ্ত হয়, যখন সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়।” এর থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে সপ্ত-সিলমোহরের আধেয়ই হল শাস্তির বিষয়বস্তু, অর্থাৎ, সপ্ত-সিলমোহরের অভ্যন্তরে বিপর্যয় রয়েছে। তাই, আজ সপ্ত-সিলমোহর এখনও উন্মোচিত করা হয়নি; এখানে “বিচার” বলতে মানুষের দুর্ভোগকে বোঝানো হয়েছে, এবং এই শাস্তির মাঝে এমন একদল মানুষকে অর্জন করা হবে যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঈশ্বর-প্রদত্ত “শংসাপত্র” গ্রহণ করেছে, এবং এইভাবে তারা ঈশ্বরের রাজ্যের লোক হয়ে উঠবে। এগুলিই হল ঈশ্বরের পুত্রগণ ও লোকেদের উৎসস্থল, এবং বর্তমানে এখনও তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাকি রয়েছে, তারা শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ অভিজ্ঞতাসমূহের নিমিত্ত ভিত্তি স্থাপন করছে। কেউ যদি প্রকৃত জীবনের অধিকারী হয়, তাহলে বিচার-কালে সে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণে সক্ষম হবে, এবং তার যদি জীবন না থাকে, তাহলে পর্যাপ্তরূপে প্রমাণিত হবে যে ঈশ্বরের কার্য তার উপর কোনো প্রভাব ফেলেনি, প্রমাণিত হবে সে শুধু ঘোলা জলে মৎস্য শিকার করে, ঈশ্বরের বাক্যে মনোনিবেশ করে না। যেহেতু এ হল অন্তিম সময়ের কাজ, যে সময়ের লক্ষ্য কার্যসাধন নয়, বরং লক্ষ্য হল এই যুগকে পরিসমাপ্তিতে এনে উপনীত করা, সেহেতু ঈশ্বর বলেন, “বাক্যান্তরে, এ সেই জীবন, সৃষ্টির সময় থেকে আজ অবধি মানুষ কখনো যার অভিজ্ঞতা লাভ করেনি, আর সেই কারণেই আমি বলি, আমি এমন কার্য সম্পাদন করেছি যা আগে কখনো করা হয়নি,” এবং তিনি এ-ও বলেন, “সমগ্র মানবজাতির সমীপে আমার দিন যেহেতু এগিয়ে আসছে, যেহেতু এটি আর দূরবর্তী নয়, বরং মানুষের দৃষ্টির সামনে সমাগত।” বিগত দিনে ঈশ্বর স্বয়ং অনেক নগরী ধ্বংস করেছিলেন, তথাপি অন্তিম দৃষ্টান্তে যেমনটি ঘটবে ওই নগরীগুলির কোনোটিকেই সেই ভাবে ধূলিসাৎ করা হয়নি। অতীতে ঈশ্বর সদোম নগরী বিধ্বস্ত করলেও, আজকের সদোমের প্রতি আচরণ বিগত দিনের অনুরূপ হবে না—একে সরাসরি ধ্বংস করা হবে না, বরং প্রথমে তা বিজিত হবে, তারপর তা-র বিচার করা হবে, এবং পরিশেষে তা চিরকালীন শাস্তির পাত্রে পর্যবসিত হবে। এগুলি হল কার্যের ধাপসমূহ, এবং শেষ পর্যন্ত, বিগতদিনে পৃথিবীর উৎসাদনের অনুরূপ একই পরম্পরাক্রমে তাকে নিশ্চিহ্ন করা হবে—এই হল ঈশ্বরের পরিকল্পনা। ঈশ্বরের আবির্ভাবের দিনটিই হল একালের সদোমের আনুষ্ঠানিক দণ্ডবিধানের দিন, এবং তাঁর এই আত্মপ্রকাশ আজকের এই নগরীর পরিত্রাণের নিমিত্ত নয়। সেকারণেই, ঈশ্বর বলেন, “আমি পবিত্র রাজ্যে আবির্ভূত হই, এবং কলুষিত ভূমি থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখি।” আজকের এই সদোম কলুষিত বলে, ঈশ্বর যে প্রকৃত অর্থেই এখানে আবির্ভূত হন এমনটা নয়, বরং এর শাস্তিপ্রদানের নিমিত্ত তিনি এই পন্থা অবলম্বন করেন—তোমরা কি সুস্পষ্টরূপেই তা প্রত্যক্ষ করোনি? বলা যেতে পারে, ধরাধামের কেউই ঈশ্বরের প্রকৃত মুখাবয়ব অবলোকনে সক্ষম নয়। ঈশ্বর কখনোই মানুষের সামনে আবির্ভূত হন নি, এবং স্বর্গের কোন স্তরে ঈশ্বরের অবস্থান তা কারোরই জানা নেই। এই কারণেই আজকের মানুষ এই পরিস্থিতিতে আপতিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। যদি তারা ঈশ্বরের মুখশ্রী অবলোকন করতো, তাহলে সেক্ষণেই নিশ্চিতভাবে তাদের পরিণতি উদ্ঘাটিত হয়ে যেতো, সেক্ষণেই প্রত্যেককে তার প্রকারভেদ অনুযায়ী শ্রেণীবিভক্ত করা হয়। আজ, দেবত্বের অভ্যন্তর থেকে বাক্যসমূহ সরাসরি মানুষের কাছে উপস্থাপিত হয়, যা আগাম জানিয়ে দেয় যে মানবজাতির অন্তিম দিবস সমাগত, এবং মানবজাতির আয়ুর খুব বেশি দিন আর অবশিষ্ট নেই। ঈশ্বর যখন সকলের সমক্ষে এসে অবতীর্ণ হন, তখন বিচারের কাছে মানুষের বশ্যতাস্বীকারের এ-ই হল তা-র অন্যতম লক্ষণ। সেকারণেই, ঈশ্বরের বাক্যসকল মানুষ উপভোগ করলেও, সততই তাদের মধ্যে এক দুর্লক্ষণসূচক বোধ কাজ করে, যেন-বা তাদের উপর এক প্রবল দুর্দৈব নেমে আসতে চলেছে। আজকের মানুষ বরফ-জমা ভূখণ্ডে চড়াই পাখিদের মতো, মৃত্যু এসে তাদের যেন কোনো ঋণ পরিশোধে বাধ্য করে এবং জীবনধারণের সকল অবলম্বন ছিনিয়ে নেয়। মৃত্যুর কাছে ঋণপাশে আবদ্ধ থাকার দরুন, সকল মানুষ ভাবে যে তাদের অন্তিম দিন বুঝি সমাগত। ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে মানুষের মনে এমনটাই ঘটে চলেছে, এবং তাদের মুখমণ্ডলে তা প্রকাশ না পেলেও, তাদের হৃদয়ে যা রয়েছে তা আমার চক্ষু এড়িয়ে যেতে পারে না—মানুষের বাস্তবতা এমনই। সম্ভবত, অনেক বাক্য সম্পূর্ণ যথাযথভাবে প্রযুক্ত হয় না—কিন্তু এই বাক্যগুলিই সমস্যাটিকে পর্যাপ্তরূপে তুলে ধরে। অতীতের হোক কি ইদানিংকার, ঈশ্বরের মুখোচ্চারিত প্রতিটি বাক্যই ফলপ্রসূ হবে; বাস্তব সত্যকে এগুলি মানুষের সম্মুখে নিয়ে আসবে—তাদের চক্ষু সার্থক হবে—সে সময় তাদের চোখ ধাঁধিয়ে যাবে এবং তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে। বর্তমানে কোন যুগ চলছে তা কি এখনও তোমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝে উঠতে পারোনি?

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ২৮

পরবর্তী: অধ্যায় ৩০

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।👇

সম্পর্কিত তথ্য

রাজ্যের যুগই হল বাক্যের যুগ

রাজ্যের যুগে, যে পদ্ধতিতে তিনি কাজ করেন তা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে, এবং সমগ্র যুগের কাজ সম্পাদন করার জন্য, ঈশ্বর নতুন যুগের সূচনা করতে বাক্যের...

পরিশিষ্ট ১: ঈশ্বরের আবির্ভাব এক নতুন যুগের সূচনা করেছে

ঈশ্বরের ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা শেষ হতে চলেছে, এবং যারা তাঁর আবির্ভাবের পথ চেয়ে আছে তাদের সকলের জন্য স্বর্গের দ্বার ইতিমধ্যেই...

শুধুমাত্র অন্তিম সময়ের খ্রীষ্ট মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন

জীবনের পথ কারো দখলে থাকতে পারে না, বা এটি সহজে অর্জন করতে পারার মতো বিষয়ও নয়। কারণ জীবন কেবল ঈশ্বর প্রদত্ত, অর্থাৎ, শুধুমাত্র ঈশ্বর নিজেই...

ঈশ্বরের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

মানুষ যখন ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে, এবং তাঁকে পরিতুষ্ট করে, তখন তারা তাদের হৃদয় দিয়ে ঈশ্বরের আত্মাকে স্পর্শ করে ও তার ফলে তাঁর...

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন