ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর কাজের দ্বারা অর্জিত হতে চলা ফলাফল জানার উপায়

প্রথমে, এসো, একটা স্তোত্র গাওয়া যাক: রাজ্যের বন্দনাগীতি (১) রাজ্য মানবজগতে অবতরণ করেছে।

যন্ত্রানুসঙ্গ: জনতা আমাকে উদ্দীপিত করে, জনতা আমার মহিমাকীর্তন করে; সকল জিহ্বা একমাত্র সত্য ঈশ্বরের নামোচ্চারণ করে। রাজ্য মানবজগতে অবতরণ করে।

১ জনতা আমাকে উদ্দীপিত করে, জনতা আমার মহিমাকীর্তন করে; সকল জিহ্বা একমাত্র সত্য ঈশ্বরের নামোচ্চারণ করে, সকল মানুষ আমার কীর্তিসমূহ নিরীক্ষণের জন্য চক্ষু উত্তোলিত করে। রাজ্য মানবজগতে অবতরণ করে, আমার রূপ বিত্তশালী ও প্রাচুর্যপূর্ণ। কে এতে আনন্দ করবে না? আহ্লাদে কে-ই বা নৃত্য করবে না? হে সিয়োন! আমাকে উদযাপন করতে তোমার বিজয়দৃপ্ত পতাকা তুলে ধরো! আমার পবিত্র নাম প্রচার করতে তোমার বিজয়গাথা গাও!

২ পৃথিবীর প্রান্ত অবধি বিস্তৃত সকল সৃষ্টি, তোমরা শোনো! সত্ত্বর নিজেদের পরিশুদ্ধ করো, তোমাদের যাতে আমার প্রতি নিবেদিত অর্ঘ্যে পরিণত করা যায়! আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জ, তোমরা শোনো! নভোমণ্ডলে আমার পরাক্রমশালী ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে শীঘ্র তোমাদের অবস্থানে ফিরে যাও। পৃথিবীর মানুষের কণ্ঠস্বর আমি কান পেতে শুনি, আমার প্রতি ওদের সীমাহীন ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ ওরা সঙ্গীতের মধ্যে ঢেলে দেয়! আজকের দিনে, সমুদয় সৃষ্টি যখন জীবনে প্রত্যাবর্তন করে, আমি মনুষ্যজগতে অবতরণ করি। এই মুহূর্তে, এই নির্দিষ্ট সন্ধিক্ষণে, সমস্ত কুসুম বিচিত্র বর্ণে-গন্ধে প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে, সকল পাখি এক সুরে গান গায়, বস্তুসমুদয় আনন্দে প্রকম্পিত হয়! রাজ্যের অভিবাদন-ধ্বনিতে শয়তানের সাম্রাজ্য ভূপতিত হয়, রাজ্যের বন্দনাগীতির বজ্রনির্ঘোষে তা ধূলিসাৎ হয়ে যায়, কদাপি পুনরুত্থিত হয় না!

৩ উত্থিত হয়ে প্রতিরোধ করার দুঃসাহস পৃথিবীতে কারো আছে কি? আমি যখন পৃথিবীতে অবতরণ করি, আমি দহন নিয়ে আসি, নিয়ে আসি ক্রোধ, আনি সকল প্রকার বিপর্যয়। এই পার্থিব রাজ্যসমূহ এখন আমার রাজ্য! ঊর্ধ্বগগনে মেঘরাশি ছত্রভঙ্গ হয়ে ছোটে ও তরঙ্গায়িত হয়; আকাশের নিচে হ্রদ ও নদী উদ্বেল হয়ে ওঠে এবং পরম উল্লাসে এক রোমাঞ্চকর সুর মন্থন করে তোলে। বিশ্রামরত পশুরা তাদের গুহা থেকে বিনির্গত হয়, সকল মানুষকে আমি তাদের নিদ্রা থেকে জাগরিত করি। অগণন মানুষ যে দিনটির অপেক্ষায় ছিল, সেই দিন অবশেষে সমাগত! তারা আমায় সুন্দরতম সঙ্গীতগুলি নিবেদন করে!

—মেষশাবককে অনুসরণ করুন ও নতুন গীত গান

প্রত্যেকবার এই স্তোত্র উচ্চারণের সময় তোমাদের মনে কী আসে? (আমরা খুবই উত্তেজিত ও রোমাঞ্চিত বোধ করি, এবং আমরা ভাবি যে, রাজ্যের সৌন্দর্য কত মহিমময়, ঈশ্বর ও মানবজাতি কেমন করে চিরতরে একত্রে রইবে।) ঈশ্বরের সঙ্গে একসাথে থাকতে হলে মানুষকে কেমন রূপ অবশ্যই পরিগ্রহ করতে হবে, তা নিয়ে কি কেউ ভেবেছে? ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত হতে গেলে এবং রাজ্যের গৌরবময় জীবন উপভোগ করতে হলে, মানুষকে কেমন হতে হবে বলে তোমরা কল্পনা করো? (তাদের স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে।) তাদের স্বভাব তো পরিবর্তন করতে হবে, কিন্তু তা কতদূর অবধি? তাদের স্বভাব পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার পর তারা কেমন হবে? (তারা পবিত্র হয়ে উঠবে।) পবিত্রতার মানদণ্ড কী? (সকল চিন্তাভাবনা এবং বিচারবিবেচনা হতে হবে খ্রীষ্টের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।) কীভাবে এই সঙ্গতি প্রকাশিত হয়? (মানুষ ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে না বা ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে না, তাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করতে পারে, এবং ঈশ্বরের প্রতি তার হৃদয়ে থাকে এক ভয়মিশ্রিত সম্মানশীলতা।) তোমাদের কিছু কিছু উত্তর সঠিক দিশাতেই রয়েছে। তোমরা সকলে নিজেদের হৃদয় উন্মুক্ত করো, এবং যা বলতে চাও তা সোচ্চারে বলো। (যেসব মানুষ ঈশ্বরের সঙ্গে রাজ্যে বসবাস করে, তাদের বিশ্বস্ততার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হবে, সত্যের অন্বেষণের দ্বারা, এবং কোনো মানুষ, ঘটনাবলী বা বস্তুসমূহের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে। তখন তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে অন্ধকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া, নিজেদের হৃদয়কে ঈশ্বরের সঙ্গে সমন্বিত করা, এবং ঈশ্বরে ভীত হওয়া ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করা।) (বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ঈশ্বরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, এবং আমরা অন্ধকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারি। অন্ততপক্ষে, আমরা সেই অবস্থানে পৌঁছাতে পারি, যেখানে আমাদের শয়তানের দ্বারা শোষিত হতে হয় না, যেখানে আমরা যেকোনো ভ্রষ্ট স্বভাব পরিত্যাগ করতে পারি, এবং ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত হতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি যে মানুষের পক্ষে অন্ধকারের প্রভাবমুক্ত হওয়াটা অত্যাবশ্যক। যেসব মানুষ অন্ধকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারে না এবং শয়তানের বাঁধন এড়িয়ে যেতে পারে না, তারা ঈশ্বরের পরিত্রাণ অর্জন করেনি।) (ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় গুণমান অর্জন করতে হলে, মানুষকে অবশ্যই তাঁর সাথে সমভাব হতে হবে, এবং তাঁকে আর প্রতিরোধ করা চলবে না। তাদের অবশ্যই নিজেদেরকে জানতে সক্ষম হতে হবে, সত্যের পালন করতে হবে, ঈশ্বরের বিষয়ে উপলব্ধি অর্জন করতে হবে, ঈশ্বরকে ভালোবাসতে হবে, এবং ঈশ্বরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে। এর জন্য শুধু এটুকুই প্রয়োজন।)

মানুষের পরিণাম তাদের হৃদয়কে কতই না ভারাক্রান্ত করে

যে পথ তোমাদের মান্য করে চলা উচিত, মনে হচ্ছে যেন সে সম্পর্কে তোমাদের কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে, এবং সে বিষয়ে তোমাদের মনে কিছু ধারণা বা উপলব্ধিও হয়তো তৈরি হয়েছে। যাইহোক, তোমরা যেসব কথা বলেছ, সেগুলো সবই নিতান্ত ফাঁপা না বাস্তব, তা নির্ভর করছে তোমাদের দৈনন্দিনের অনুশীলনে মনোনিবেশের উপর। বছরের পর বছর ধরে, তোমরা সকলেই সত্যের প্রত্যেকটা দিক থেকে কিছু না কিছু ফল লাভ করেছ—মতবাদ এবং সত্যের প্রকৃত উপাদান, উভয় ক্ষেত্রেই। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, আজকাল মানুষ সত্যের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করার প্রতি অনেক বেশি জোর দিয়েছে, এবং, এর ফলে, সত্যের প্রতিটা দিক এবং উপকরণ কিছু কিছু মানুষের হৃদয়ে নিশ্চিতভাবে শিকড় বিস্তার করতে পেরেছে। যাইহোক, আমি কোন বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই? তা হল, যদিও সত্যের এই তত্ত্ব এবং বিষয়বস্তুগুলো তোমাদের হৃদয়ে বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও, সেগুলোর আসল বিষয়বস্তুতে উপাদান রয়েছে খুবই সামান্য। যখন তোমরা সমস্যায় পড়বে এবং পরীক্ষা ও বিকল্পের সম্মুখীন হবে, তখন এইসকল সত্যের বাস্তবিকতা তোমাদের কাছে কতখানি ব্যবহারিকভাবে উপযোগী হবে? তা কি তোমাদের নিজেদের সমস্যাগুলোকে অতিক্রম করতে এবং পরীক্ষাগুলো থেকে উত্তীর্ণ হতে সাহায্য করতে পারে, যাতে তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারো? তোমরা কি তোমাদের পরীক্ষার মাঝে দৃঢ় থেকে ঈশ্বরের জোরালো সাক্ষ্য দিতে পারবে? তোমরা কি কখনো এইসব বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছ? আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি: তোমাদের হৃদয়ে এবং তোমাদের প্রাত্যহিক চিন্তন ও মননে, তোমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী? তোমরা কি এই বিষয়ে কখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছ? তোমরা কোন বিষয়টাকে তোমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বাস করো? কিছু মানুষ বলে, “অবশ্যই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সত্যের পালন,” আবার অন্য কেউ বলে, “নিশ্চিতভাবেই, প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করাটাই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” কিছু মানুষ বলে, “প্রত্যহ ঈশ্বরের সম্মুখে এসে তাঁর কাছে প্রার্থনা করাই নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”, এবং কিছু মানুষ আছে যারা বলে “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিদিন নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাওয়া।” এমনকি কিছু মানুষ এমনও আছে যাদের বক্তব্য, তারা সর্বদা শুধুমাত্র ঈশ্বরকে কী প্রকারে সন্তুষ্ট করা যায়, কীভাবে তাঁকে সর্বক্ষেত্রে মান্য করা যায়, এবং কীভাবে তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলা যায়, সেই বিষয়েই চিন্তা করে থাকে। সেটা কি ঠিক? এর বেশি কি আর কিছু নেই? উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ বলে, “আমি কেবল ঈশ্বরের প্রতি সমর্পিত হতে চাই, কিন্তু কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই আমি আর তা পেরে উঠি না।” অন্যরা বলে, “আমি কেবলই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই, এবং কেবলমাত্র একবারও যদি আমি তা করতে পারতাম, তবে তা আমার পক্ষে অত্যন্ত সুখের হত—কিন্তু আমি কখনোই তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারি না।” কিছু মানুষ বলে, “আমি কেবল ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করতে চাই। পরীক্ষার সময়, আমি কোনোরকম অভিযোগ এবং অনুরোধ ছাড়াই কেবল তাঁর সমন্বয়সাধন, সার্বভৌমত্ব এবং ব্যবস্থাপনার প্রতি নিজেকে সমর্পণ করতে চাই। তবুও আমি প্রায় প্রতিবারই সমর্পণ করতে ব্যর্থ হই।” আবার কিছু মানুষ বলে, “যখন আমি সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হই, আমি কখনোই সত্যের পালনকে বেছে নিতে পারি না। আমি সর্বদা দৈহিক ইচ্ছা চরিতার্থ করতে চাই এবং আমার নিজের ব্যক্তিগত, স্বার্থপর বাসনাগুলোকে পূরণ করতে চাই।” এর কারণ কী? ঈশ্বরের পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার আগে কি তোমরা নিজেদের বারংবার যাচাই ও পরীক্ষার মাধ্যমে পরখ করে উঠতে পারবে? তোমরা ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃতভাবে সমর্পিত হতে পারছ কি না ও তাঁকে প্রকৃতই পরিতুষ্ট করতে পারছ কি না, এবং তোমরা যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা সে বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারছ কি না, তা দেখো; তোমরা নিজেদের সন্তুষ্ট করা বা নিজেদের স্বার্থপর বাসনা চরিতার্থ করা থেকে দূরে থাকতে পারছ কি না, এবং কোনো ব্যক্তিগত পছন্দকে বেছে না নিয়ে কেবল ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারছ কি না, সেটা দেখো। কেউ কি তা করে? প্রকৃতপক্ষে, শুধুমাত্র একটা বিষয়ই তোমাদের চোখের সামনে রাখা হয়েছে, এবং সেটাতেই তোমরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহী আর সেই বিষয়েই তোমরা সবচেয়ে বেশি করে জানতে চাও—তা হল, সকলের পরিণাম ও গন্তব্যের বিষয়। তোমরা হয়তো তা উপলব্ধি করতে পারো না, কিন্তু এ এমন এক বিষয়, যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। যখন মানুষের পরিণামগত সত্যের প্রসঙ্গ আসে, বা মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির প্রসঙ্গ এবং মানুষকে ঈশ্বর কী ধরনের গন্তব্যে আসতে চান সেই প্রসঙ্গ আসে, তখন, আমি জানি যে, কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই একাধিকবার এই সকল বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করেছে। আবার কিছু মানুষ রয়েছে যারা ক্রমাগত উত্তর খুঁজছে এবং তাদের মনের মধ্যে এই নিয়ে চিন্তা করছে, তবুও তারা কিছুই ভেবে উঠতে পারে না, বা হয়তো একটা অস্পষ্ট উপসংহারে গিয়ে পৌঁছয়। শেষ পর্যন্ত, তাদের জন্য কী পরিণাম অপেক্ষা করছে, সেই বিষয়ে তারা অনিশ্চিতই থেকে যায়। নিজেদের দায়িত্ব পালন করার সময়, অধিকাংশ মানুষই নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট উত্তর জানতে চায়: “আমার পরিণাম কী হবে? আমি কি অন্তিম অবধি এই পথে চলতে পারব? মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী?” কেউ কেউ তো আবার এই ভেবেও চিন্তিত হয় যে: “অতীতে, আমি কিছু কাজ করেছি, এবং কিছু কথা বলেছি; আমি ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্য হয়েছি, আমি এমন কাজ করেছি যা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছি, আমি তাঁর অনুভূতিতে আঘাত করেছি, এবং আমি তাঁকে হতাশ করেছি ও তাঁকে বাধ্য করেছি আমাকে ঘৃণা করতে ও আমার প্রতি বিরাগ পোষণ করতে। সম্ভবত, সেইজন্যই, আমার পরিণাম অজ্ঞাত।” এটা বলা সঙ্গত হবে যে বেশিরভাগ মানুষই তাদের নিজেদের পরিণাম সম্পর্কে অস্বস্তি বোধ করে। কেউ বলতে সাহস করে না, “আমি একশ শতাংশ নিশ্চিতভাবে অনুভব করতে পারি যে আমি টিকে যাবোই; আমি একশ শতাংশ নিশ্চিত যে আমি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি। আমি এমন একজন মানুষ যে ঈশ্বরের হৃদয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ; আমি এমন একজন, ঈশ্বর যার প্রশংসা করেন।” কিছু মানুষ মনে করে যে, ঈশ্বরের পথ অনুসরণ করা বিশেষভাবে কঠিন, এবং সত্যের পালন হল কঠিনতম কাজ। ফলত, এইসব মানুষেরা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে, তারা সকল সাহায্যের ঊর্ধ্বে, এবং তারা কোনো ভালো পরিণাম লাভের আশা রাখার সাহস করে না; বা সম্ভবত, তারা এটা বিশ্বাস করে, যে, তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করতে অপারগ, এবং সেহেতু, তারা টিকে যেতে পারবে না। সেই কারণে, তারা দাবি করে যে, তাদের কোনো পরিণাম নেই এবং তারা কোনো ভালো গন্তব্য অর্জন করতে পারবে না। মানুষ ঠিক কীভাবে চিন্তা করে তা নির্বিশেষেই বলা যায় যে, তারা তাদের ফলাফল সম্পর্কে বহুবারই চিন্তা করেছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত প্রশ্নে, এবং ঈশ্বর তাঁর কাজ শেষ করার পর তারা কী পাবে সেই বিষয়ে, তারা প্রতিনিয়ত জল্পনাকল্পনা করে চলেছে। কেউ দ্বিগুণ মূল্য দেয়; কেউ তার পরিবার ও চাকরী পরিত্যাগ করে; কেউ বিবাহবন্ধন ত্যাগ করে; কেউ কেউ ঈশ্বরের স্বার্থে নিজেকে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে পদত্যাগ করে; কিছু লোক নিজের কর্তব্য পালনের জন্য গৃহত্যাগ করে; কেউ কৃচ্ছ্রসাধন বেছে নেয়, এবং সবচেয়ে তিক্ত ও ক্লান্তিকর কাজগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ আরম্ভ করে; কেউ কেউ বেছে নেয় নিজের সম্পদ তথা যথাসর্বস্ব নিবেদন করাকে; এবং তারপরেও কিছু মানুষ থাকে, যারা সত্য অন্বেষণ এবং ঈশ্বরকে জানার উদ্দেশ্যে কঠোর প্রচেষ্টা করে চলে। যেমনভাবে অনুশীলন করাকেই তোমরা বেছে নাও না কেনো, যে পদ্ধতিতে তোমরা অনুশীলন করো, তা কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ? (না, তা তেমন নয়।) তাহলে কীভাবে আমরা এই “গুরুত্বহীনতা”-র ব্যাখ্যা করব? যদি অনুশীলনের পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে কোন বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ? (বাহ্যিক সু-আচরণ সত্যের বাস্তব অনুশীলনের প্রতিনিধি নয়।) (প্রত্যেক স্বতন্ত্র ব্যক্তির চিন্তাভাবনা গুরুত্বপূর্ণ নয়; এখানে মূল বিষয় হল, আমরা সত্যের পালন করেছি কি না, এবং আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি কি না।) (খ্রীষ্টবিরোধী এবং ভণ্ড নেতাদের পতন আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, বাহ্যিক আচরণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। উপরিভাগে তাদের দেখে মনে হয় যেন তারা অনেক কিছু পরিত্যাগ করেছে এবং মূল্য দিতে ইচ্ছুক, কিন্তু ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, তারা ঈশ্বরকে সম্মানটুকুও করে না, পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে তারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে, তারা সর্বদাই শয়তানের পক্ষ অবলম্বন করে, এবং ঈশ্বরের কাজে হস্তক্ষেপ করে। অতএব, এখানে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হল, সঠিক সময় এলে আমরা কোন পক্ষে দাঁড়াবো, এবং বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে।) তোমরা সকলেই সুন্দর কথা বলো, এবং তোমাদের দেখে মনে হয় যে, সত্যের পালন, ঈশ্বরের অভিপ্রায়, এবং মানবজাতির কাছে তাঁর চাহিদার প্রসঙ্গে, তোমাদের ইতিমধ্যেই একটা প্রাথমিক উপলব্ধি রয়েছে, রয়েছে অর্জনীয় গুণমান। তোমরা যে এইভাবে কথা বলতে সক্ষম, তা খুবই মর্মস্পর্শী। যদিও, তোমাদের কথার কিছু কিছু অংশ যথার্থ নয়, তবু তোমরা ইতিমধ্যেই সত্যের একটা সঠিক ব্যাখ্যার অধিকারী হওয়ার কাছাকাছি এসে পড়েছ—এবং এটা প্রমাণ করে, যে, তোমাদের চারিদিকের মানুষ, ঘটনাবলী ও বস্তুসমূহ সম্পর্কে, ঈশ্বরের আয়োজিত পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে, এবং যা কিছু তোমরা দেখতে পাচ্ছো সেইসব সম্পর্কে, তোমাদের নিজেদের উপলব্ধি তৈরি হয়েছে। এই উপলব্ধি সত্যের সন্নিকটস্থ। এমনকি, যদিও তোমরা যা যা বলেছ তা পুরোপুরি বোধগম্য নয়, এবং তোমাদের কিছু কথা খুব একটা যথাযথও নয়, তবু, তোমাদের অনুধাবন ইতিমধ্যেই সত্যের বাস্তবিকতার অনেকটাই কাছাকাছি যেতে পেরেছে। তোমাদের এইভাবে কথা বলতে শুনে আমার খুব ভালো লাগছে।

মানুষের বিশ্বাস সত্যের স্থান অধিকার করতে পারে না

কিছু মানুষ কৃচ্ছ্রসাধনে সক্ষম, মূল্য দিতে পারে, বাহ্যিকভাবে খুবই সদাচারী, এবং যথেষ্ট সুসম্মানিত, এবং তারা অন্যদের প্রশংসাও উপভোগ করে। তোমরা কি বলবে যে এই ধরনের বাহ্যিক আচরণকে সত্যের পালন বলা যায়? কেউ কি নিশ্চিত করতে পারবে, যে, এই ধরনের মানুষেরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করছে? কেন বারংবার মানুষ এই ধরনের ব্যক্তিদের দেখে মনে করে যে, তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করছে, সত্যের অনুশীলনের পথে হাঁটছে, এবং ঈশ্বরের পথে অবস্থান করছে? কেন কিছু মানুষ এমনটা ভাবে? এর একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে। কী সেই ব্যাখ্যা? তা হল যে, অনেক মানুষের জন্যই কিছু বিশেষ প্রশ্ন—যেমন, সত্যের পালন বলতে কী বোঝায়, ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা বলতে কী বোঝায়, এবং সত্যের বাস্তবতাকে প্রকৃতপক্ষে অধিকার করা বলতে কী বোঝায়—এসব খুব একটা স্পষ্ট নয়। সেজন্যই, কিছু মানুষ থাকে যারা বাহ্যত আধ্যাত্মিক, মহৎ, মহিমান্বিত ও মহান মনে হওয়া ব্যক্তিদের দ্বারা প্রায়শই প্রতারিত হয়ে থাকে। যারা আক্ষরিক অর্থ এবং মতবাদ সম্পর্কে বাকপটু, যাদের কথাবার্তা এবং কাজ প্রশংসার যোগ্য, তাদের দ্বারা যারা প্রতারিত হয়, তারা কখনোই সেইসব ব্যক্তিদের কাজের সারসত্য, বা কাজের নিহিত সারমর্ম বা তাদের কীর্তির নিহিত নীতি, অথবা তাদের লক্ষ্য কী, সেই বিষয়ে কখনোই দৃষ্টিপাত করেনি। তাছাড়া, তারা এই ব্যাপারটা নিয়েও নজর করেনি যে, এই এইসব ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করে কি না, বা তারা কখনো এটাও নির্ণয় করেনি যে, এইসব ব্যক্তি সত্যিই ঈশ্বরে ভীত কি না এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করেছে কি না। তারা কখনো এইসব মানুষের মনুষ্যত্বের সারসত্য বিবেচনা করে দেখেনি। বরং, তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রথম ধাপ থেকে শুরু করেই, তারা ধীরে ধীরে এই লোকেদের প্রশংসা ও শ্রদ্ধা করতে থাকে, এবং শেষ পর্যন্ত এইসকল ব্যক্তিগণই তাদের আদর্শ হয়ে ওঠে। এছাড়াও, কিছু মানুষের ধারণা হল যে, যেসব আদর্শ ব্যক্তিদের তারা উপাসনা করছে—এবং যারা তাদের পরিবার ও চাকরি ত্যাগ করতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করে, এবং যাদের উপর থেকে দেখে মনে হয় যে তারা মূল্য প্রদান করতে সক্ষম—সেইসব ব্যক্তি বস্তুতই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করছে, এবং তারা প্রকৃতপক্ষেই শুভ পরিণাম এবং সু-গন্তব্য অর্জন করতে পারবে। তারা মনে করে যে, তাদের এই আদর্শ ব্যক্তিদেরকেই ঈশ্বর প্রশংসা করেন। তাদের এমন বিশ্বাসের কারণ কী? এই বিষয়টার সারমর্ম কী? এর কী কী ফলাফল হতে পারে? প্রথমে, এর সারমর্ম নিয়েই আলোচনা করা যাক।

মূলত, জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের অনুশীলনের পদ্ধতি, অনুশীলনের জন্য তাদের বেছে নেওয়া নীতি, এবং তারা প্রত্যেকে যেসব বিষয়ে মনোযোগী, এই বিষয়গুলোর সাথে মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের চাহিদাগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। যতই অগভীর বা গভীর বিষয়ের প্রতি, বা আক্ষরিক অর্থ বা মতবাদ অথবা বাস্তবিকতার প্রতি, মানুষ মনোনিবেশ করুক না কেনো, তাদের যা সবচেয়ে বেশি মেনে চলা উচিত, তা তারা মেনে চলে না, এবং যে বিষয়টা তাদের সবচেয়ে বেশি করে জানা দরকার, সেটাই তারা জানে না। এর কারণ হল যে, মানুষ সত্যকে বিন্দুমাত্রও পছন্দ করে না; সুতরাং, ঈশ্বরের উচ্চারণসমূহে অনুশীলনের কথা পাওয়া যায়, সেগুলোর সন্ধান ও পালনের উদ্দেশ্যে সময় ও প্রচেষ্টা ব্যয় করতে তারা ইচ্ছুক নয়। পরিবর্তে, তারা হ্রস্বতর পন্থা অবলম্বন করতে পছন্দ করে, সু-অনুশীলন ও সু-আচরণ হিসাবে তারা যা জানে তার সংক্ষিপ্তসার করে নেয়; এই সংক্ষিপ্তসারই তখন তাদের নিজস্ব অন্বেষণের লক্ষ্য হয়ে ওঠে, সেটাকেই তারা পালনীয় সত্য হিসাবে গ্রহণ করে। এর প্রত্যক্ষ ফলাফল হল এই, যে, মানুষ সত্য পালনের বিকল্প হিসাবে সু-আচরণকে ব্যবহার করে, যেটা তাদের চাটুকারিতার মাধ্যমে ঈশ্বরের আনুকূল্য লাভের চেষ্টা করার আকাঙ্ক্ষাকেও পূর্ণ করে। এটাই তাদের সত্যের সঙ্গে লড়াই করার মূলধন যোগায়, যেটাকে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্তির লড়াই এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যেও ব্যবহার করে। একইসঙ্গে, মানুষ বিবেকবর্জিত ভাবে ঈশ্বরকে একপাশে সরিয়ে রাখে, নিজেদের পছন্দসই আদর্শদের দ্বারা তাঁর প্রতিস্থাপন করে। মানুষের এই অজ্ঞ ক্রিয়াকলাপ এবং দৃষ্টিভঙ্গির বা একপেশে ধারণা ও অনুশীলনের মূল কারণ একটাই—এবং আজ আমি তোমাদের সেটার সম্পর্কে বলব: সেই কারণটা হল যে, যদিও মানুষ হয়তো ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে পারে, তাঁর কাছে প্রতিদিন প্রার্থনা করতে পারে, এবং তাঁর উচ্চারণসমূহ প্রতিদিন পাঠ করতে পারে, কিন্তু তারা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারে না। এইখানেই নিহিত রয়েছে সমস্যার মূল। কেউ যদি ঈশ্বরের হৃদয়কে উপলব্ধি করতে পারত, এবং জানতে পারত যে, তিনি কী পছন্দ করেন, কী ঘৃণা করেন, কী চান, কী প্রত্যাখ্যান করেন, কোন ধরনের মানুষকে তিনি ভালোবাসেন, কোন ধরনের মানুষকে অপছন্দ করেন, মানুষের কাছে দাবি জানানোর সময় তিনি কেমন মান ব্যবহার করেন, এবং তাদের নিখুঁত করে তোলার সময় কী ধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করেন, তাহলে কি আর সে এখনো তার ব্যক্তিগত মতামত ধরে থাকত? এহেন মানুষ কি নিছকইগিয়ে অন্য কাউকে পূজা করতে পারে? একজন সাধারণ মানুষ কি তাদের উপাসনার আদর্শ হয়ে উঠতে পারে? যেসব মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করতে পারে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সামান্য অধিকমাত্রায় যুক্তিপূর্ণ হয়। তারা যদৃচ্ছ যেকোনো ভ্রষ্ট মানুষকে আদর্শজ্ঞান করে না, কিংবা সত্যের পালনের পথে চলার সময় তারা এমনটাও বিশ্বাস করে না, যে, অন্ধভাবে কিছু সাধারণ নিয়ম বা নীতি মেনে চলাই সত্য পালনের সমতুল্য।

মানুষের পরিণাম নির্ধারণে ঈশ্বর যে মান ব্যবহার করেন সেই সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে

এসো, আমরা আবার এই বিষয়ে ফিরে আসি এবং পরিণাম সম্পর্কিত আলোচনা চালিয়ে যাই।

এখন, যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তিই তাদের নিজেদের পরিণাম নিয়ে চিন্তিত, তখন তোমরা কি জানো, যে, ঈশ্বর কীভাবে এই পরিণাম নির্ণয় করেন? কোন পদ্ধতিতে ঈশ্বর কোনো ব্যক্তির পরিণাম নির্ণয় করেন? উপরন্তু, তা নির্ণয় করতে ঈশ্বর কী ধরনের মাপকাঠি ব্যবহার করেন? যখন কোনো ব্যক্তির পরিণাম নির্ধারণ করা বাকি থাকে, তখন ঈশ্বর তা প্রকাশ করার জন্য কী করেন? কেউ কি জানে? একটু আগেই আমি যেমন বললাম, কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই সুদীর্ঘ সময়কাল অতিবাহিত করেছে মানুষের পরিণাম সম্পর্কিত সূত্র, বা কোন কোন শ্রেণীতে এই পরিণামগুলো বিভক্ত, এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষের জন্য যে বিভিন্ন ধরনের পরিণাম অপেক্ষা করছে, সেসব খোঁজার প্রচেষ্টায় ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে গবেষণা করেছে। তারা এসবও খুঁজে পাওয়ার আশা করে, যে, কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য মানুষের পরিণামকে নিয়ন্ত্রিত করে, কী ধরনের মান তিনি ব্যবহার করেন, এবং ঠিক কীভাবে তিনি একজন ব্যক্তির পরিণাম নির্ধারণ করেন। যদিও, শেষ পর্যন্ত, এইসব মানুষেরা কখনোই কোনো উত্তর খুঁজে বের করে উঠতে পারে না। আসল ঘটনা হল, ঈশ্বরের উচ্চারণসমূহের মধ্যে এই বিষয়ে খুব সামান্যই বলা রয়েছে। এমনটা কেন? যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের পরিণাম প্রকাশ করা বাকি থেকে যায়, ততক্ষণ অবধি শেষে কী ঘটতে চলেছে তা ঈশ্বর কাউকে বলতে চান না, এবং সময়ের আগে তিনি কাউকে তার গন্তব্যের বিষয়েও জানাতে চান না—কারণ, তা জানালেও, মানবজাতির তাতে কোনোভাবেই কোনো উপকার হবে না। এখানে, এই মুহূর্তে, আমি তোমাদের শুধু বলতে চাই, যে পদ্ধতিতে ঈশ্বর মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করেন, মানুষের পরিণতি নিরূপণের উদ্দেশ্যে তাঁর কাজে তিনি যে নীতি প্রয়োগ করেন, এবং কোনো ব্যক্তি টিকে থাকতে পারবে কি না, তা নির্ণয়ের জন্য যে নির্দিষ্ট মান ব্যবহার করেন, সেই সম্পর্কে। এইসব প্রশ্নই কি তোমাদের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় নয়? তাহলে, ঈশ্বর কীভাবে মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করেন বলে মানুষ বিশ্বাস করে? তোমরা এইমাত্র তার কিছুটা অংশ উল্লেখ করেছ: তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছ যে, তা নিজ কর্তব্য বিশ্বস্তভাবে পালন করা এবং ঈশ্বরের জন্য নিজেকে ব্যয় করার সাথে সম্পর্কিত; কেউ বলেছ যে, তা ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করা ও তাঁকে সন্তুষ্ট করার সাথে যুক্ত; আবার কেউ বলেছ যে, ঈশ্বরের সমন্বয়সাধনের প্রতি নিবেদিত হওয়া হল এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং কেউ বলেছ যে, অনাড়ম্বর জীবনযাপনই হল মূল কথা…। যখন তোমরা এই সত্যগুলো পালন করো, এবং যখন তোমরা নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী যে নীতি সঠিক তা অনুসারে অনুশীলন করো, তোমরা কি জানো ঈশ্বর তখন কী ভাবেন? তোমরা কখনো ভেবে দেখেছ, যে, এইভাবে চলতে থাকা তাঁর ইচ্ছাকে পূর্ণ করছে কিনা? তা কি তাঁর প্রয়োজনীয় মান পূরণ করে? তা কি তাঁর দাবিগুলো মেটায়? আমার বিশ্বাস, বেশিরভাগ মানুষই এই নিয়ে খুব একটা চিন্তা করে না। তারা শুধু যান্ত্রিকভাবে ঈশ্বরের বাক্যের একটা অংশ, বা ধর্মোপদেশের একটা অংশ, অথবা যে সব আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বকে তারা আদর্শজ্ঞান করে তাদের গুণমানকেই প্রয়োগ করে, এবং নিজেদের বিভিন্ন রকম কার্যকলাপ করতে বাধ্য করে। তারা বিশ্বাস করে যে, এই পথই সঠিক, তাই তারা তাতেই অবিচল থাকে, এবং সেভাবেই কাজ করে যায়, শেষ পর্যন্ত যা-ই ঘটুক না কেনো। কিছু মানুষ ভাবে, “আমি বহু বছর ধরে বিশ্বাস করে এসেছি; আমি সবসময় এভাবেই অনুশীলন করে এসেছি। আমার মনে হয় যেন আমি সত্যিই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি, এবং আমার এমনও মনে হয় যেন আমি এর থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। তার কারণ হল, আমি এই সময়ে বহু সত্য, এবং সেইসাথে, আমার আগে না বোঝা অনেক বিষয়ও, এখন উপলব্ধি করতে পেরেছি। বিশেষত, আমার অনেক ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছে, জীবন-বিষয়ক মূল্যবোধও প্রভূতরূপে পরিবর্তিত হয়েছে, এবং এখন আমার এই জগত সম্পর্কে ভালো উপলব্ধি রয়েছে।” কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে এ হল এক ফসল, এবং এ-ই হল মানবজাতির উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের কাজের এক চূড়ান্ত ফলাফল। তোমাদের মতামত অনুযায়ী, এই গুণমান নিয়ে এবং তোমাদের সমস্ত অনুশীলন একত্রিত করে, তোমরা কি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ করছ? তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলবে, “অবশ্যই! আমরা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে অনুশীলন করছি; ঊর্দ্ধতনেরা যা প্রচার করেছেন ও যে বার্তা প্রেরণ করেছেন সেই অনুযায়ীই আমরা অনুশীলন করছি। আমরা সবসময় নিজেদের কর্তব্য পালন করছি এবং প্রতিনিয়ত ঈশ্বরকে অনুসরণ করছি, আমরা কখনোই তাঁকে পরিত্যাগ করিনি। তাই আমরা সম্পূর্ণ আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে পারি, যে, আমরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করছি। তাঁর অভিপ্রায়ের বা তাঁর বাক্যের কতটুকু আমরা উপলব্ধি করতে পারছি তা নির্বিশেষে, নিয়তই আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার অন্বেষণের পথে রয়েছি। যতক্ষণ আমরা সঠিক ভাবে কাজ করব, সঠিকভাবে অনুশীলন করব, ততক্ষণ আমরা নিশ্চিতভাবেই সঠিক পরিণাম অর্জন করব।” এই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তোমার কী মনে হয়? তা কি সঠিক? এমনও কেউ কেউ থাকতে পারে, যারা বলবে: “আমি আগে কখনো এসব বিষয় নিয়ে ভাবিনি। আমি শুধু মনে করি যে, যতক্ষণ আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি, এবং ঈশ্বরের বাক্যে বর্ণিত দাবিগুলোর সাথে সঙ্গতি রেখে কাজ করে চলেছি, ততক্ষণ আমি টিকে যেতে পারবই। আমি ঈশ্বরের হৃদয়কে সন্তুষ্ট করতে পারি কি না সেই প্রশ্ন নিয়ে আমি কখনো বিবেচনা করিনি, বা কখনো এটাও ভেবে দেখিনি যে, তাঁর নির্ধারিত মানদণ্ড আমি পূরণ করতে পারছি কি না। যেহেতু ঈশ্বর আমায় কখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেননি বা কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ দেননি, সেহেতু, আমি বিশ্বাস করি যে, যতক্ষণ আমি অবিরত ভাবে কাজ করে যাব, ঈশ্বর সন্তুষ্ট থাকবেন, এবং আমার কাছে কোনো অতিরিক্ত চাহিদা রাখবেন না।” এইসব বিশ্বাস কি সঠিক? আমার দিক থেকে বলতে গেলে, অনুশীলনের এই পদ্ধতি, এই চিন্তাধারা, এবং এইসব দৃষ্টিভঙ্গি—এই সকলকিছুর সাথে জড়িত রয়েছে কল্পনা, এবং সেইসাথে কিছুটা অন্ধত্বও। হয়তো, আমি এমনটা বলায়, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ খানিকটা মর্মাহত হবে, ভাববে, “অন্ধত্ব? এ যদি অন্ধত্ব হয়, তাহলে আমাদের পরিত্রাণ পাওয়া এবং টিকে থাকার আশাও খুবই ক্ষীণ এবং অনিশ্চিত, তাই নয় কি? এইভাবে বলে, আপনি কি আমাদের আশাহত করছেন না?” তোমরা যা-ই বিশ্বাস করো না কেনো, আমি যা বলি এবং করি তার উদ্দেশ্য এই নয়, যে, তোমরা আশাহত অনুভব করো। বরং, সেগুলোর উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের অভিপ্রায় সম্পর্কে তোমাদের ধারণার মান উন্নত করা, এবং, তিনি কী ভাবছেন, কী সম্পন্ন করতে চান, কী ধরনের মানুষকে পছন্দ করেন, কী ঘৃণা করেন, কী অবজ্ঞা করেন, কী ধরনের মানুষকে অর্জন করতে চান, এবং কী ধরনের মানুষকে প্রত্যাখ্যান করেন, সেইসব বিষয়ে তোমাদের উপলব্ধি আরো সম্যক করে তোলা। আমার বক্তব্যের ও কর্মের উদ্দেশ্য হল তোমাদের মনকে স্বচ্ছতা প্রদান করা, এবং তোমাদের প্রত্যেকের কর্ম ও চিন্তা ঈশ্বরের প্রয়োজনীয় গুণমানের চেয়ে কতদূর পথভ্রষ্ট হয়েছে, সে বিষয়ে তোমাদের পরিষ্কার ধারণা দেওয়া। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা কি খুব জরুরি? কারণ আমি জানি যে তোমরা বহুকাল ধরে বিশ্বাস করে এসেছ, এবং বহু প্রচার শুনেছ, কিন্তু মূলত এই বিষয়বস্তুগুলোরই অভাব থেকে গিয়েছে তোমাদের মধ্যে। যদিও তোমরা তোমাদের খাতায় সমস্ত সত্যই নথিভুক্ত করেছ, এবং তোমরা ব্যক্তিগতভাবে যেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করো, সেগুলোকে মুখস্থ করে মনের মধ্যে খোদাই করে নিয়েছ, এবং যদিও তোমরা ঠিক করেছ যে, অনুশীলনের সময় ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে এগুলোকে ব্যবহার করবে, ব্যবহার করবে নিজেদের প্রয়োজনে, সম্মুখে অপেক্ষমাণ কঠিন সময়কে অতিক্রম করতে, অথবা নিছকই তোমাদের জীবনযাপনের পথে সঙ্গদান করার কাজে, কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করো, তোমরা যেভাবেই তা করো না কেনো, এগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তাহলে, বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী? তা হল, অনুশীলনের সময় নিজের হৃদয়ের গভীরে তোমাকে সম্পূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে জানতে হবে যে, তুমি যা করছো তার প্রতিটা কাজ ঈশ্বর যা চান তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, এবং তোমার প্রতিটা কর্ম, প্রতিটা চিন্তা, এবং যে পরিণাম ও লক্ষ্য তুমি অর্জন করতে চাও, সেসকল আদতে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে এবং তাঁর দাবিসকল পূর্ণ করতে পারে কিনা, এবং সেইসাথে, তিনি সেগুলোকে অনুমোদিত করেন কিনা। এগুলোই হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।

ঈশ্বরের পথে চলো: ঈশ্বরে ভীত হও এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করো

একটা প্রবাদ আছে যা তোমাদের লিখে রাখা উচিত। আমার বিশ্বাস, এই প্রবাদটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা প্রতিদিন অসংখ্যবার আমার মনে আসে। কেন এমন হয়? কারণ, প্রতিবার আমি যখন আমি কারোর মুখোমুখি হই, কারোর কাহিনী শুনি, এবং কোনো ব্যক্তির ঈশ্বর বিশ্বাসের সাক্ষ্য বা অভিজ্ঞতা শুনি, তখন এই ধরনের ব্যক্তিকে ঈশ্বর পছন্দ করেন কি না বা এমন মানুষকে ঈশ্বর চান কি না, তা নিজের অন্তরে স্থির করার জন্য আমি এই প্রবাদ কাজে লাগাই। তাহলে, সেই প্রবাদটা কী? আমি এখন তোমাদের উত্তেজনার শীর্ষ মুহূর্তে নিয়ে এসেছি। প্রবাদটা কী, তা যখন আমি প্রকাশ করব, তোমরা হয়তো হতাশ বোধ করবে, কারণ এমন কেউ কেউ আছে, যারা বহু বছর ধরে কাজে না করে নিছকই এটা আউড়ে এসেছে। কিন্তু আমি কখনো একবারের জন্যেও এটা নিরর্থকভাবে আওড়াইনি। এই প্রবাদ আমার হৃদয়েই নিহিত রয়েছে। তাহলে কী সেই প্রবাদ? সেটা হল: “ঈশ্বরের পথে চলো: ঈশ্বরে ভীত হও এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করো।” এ কি নিছকই এক অত্যন্ত সাধারণ শব্দবন্ধনী নয়? তবুও, এর সাধারণত্ব সত্ত্বেও, যেসব মানুষের এই বাক্যের প্রতি সত্যিই গভীর উপলব্ধি রয়েছে, তারা অনুভব করবে, যে, এই বাক্য খুবই ওজনদার, এই প্রবাদ মানুষের অনুশীলনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, জীবনের ভাষার থেকে নেওয়া সত্যের বাস্তবতাপূর্ণ একটা উদ্ধৃতি, যারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চায় তাদের জন্য এ হল আজীবনের লক্ষ্যস্বরূপ, এবং এ হল এক জীবনব্যাপী পথ, যা ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের প্রতি বিবেচনাশীল সকলেরই অনুসরণীয়। তাহলে, তোমাদের কী মনে হয়: এই প্রবাদ কি সত্য নয়? এই প্রবাদের এমন তাৎপর্য রয়েছে না নেই? তাছাড়া, হয়তো তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এটা নিয়ে ভাবছ, এবং অর্থ বোঝার চেষ্টা করছ, আবার কেউ কেউ হয়তো এটা নিয়ে সংশয়েও আছো: এই প্রবাদ কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ? এটা কি খুব প্রয়োজনীয়? এটায় এত জোর দেওয়ার কি খুব দরকার আছে? তোমাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ থাকতে পারে, যারা এই প্রবাদটা খুব একটা পছন্দ করে না, কারণ তোমরা মনে করো যে, ঈশ্বরের পথ গ্রহণ করা এবং এই একটামাত্র প্রবাদে তাকে সংক্ষেপিত করা হল এক অতিসরলীকরণমাত্র। ঈশ্বরের সমস্ত বাক্য গ্রহণ করে সেগুলোর সারমর্ম এই একটামাত্র প্রবাদে নিবদ্ধ করা—তা কি ঈশ্বরকে অতিরিক্ত গুরুত্বহীন করে দেবে না? বিষয়টা কি এমনতরই? হয়তো তোমাদের মধ্যে অধিকাংশই এই বাক্যের গভীর তাৎপর্য অনুভব করতে পারোনি। যদিও তোমরা তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছ, কিন্তু তোমাদের কারোরই এটাকে হৃদয়ে সঞ্চিত করে রাখার অভিপ্রায় নেই; তোমরা শুধুমাত্র এটা তোমাদের খাতায় লিখে রেখেছ, যাতে অবসর সময়ে একবার চোখ বুলোনো বা চিন্তা করার যায়। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার এটাকে মুখস্থও করার কথাও ভাববেই না, এটার সদ্ব্যবহার করা তো দূরের কথা। আমি তবুও কেন এই প্রবাদটা উল্লেখ করতে চাই? তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তাভাবনা নির্বিশেষে, আমাকে এই প্রবাদটা উল্লেখ করতেই হত, কারণ ঈশ্বর কীভাবে মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করেন, সেই বিষয়ে এটা ভীষণরকম প্রাসঙ্গিক। এই প্রবাদ সম্পর্কে তোমাদের বর্তমানে ধারণা যা-ই হোক না কেনো, বা তোমরা যেভাবেই একে ব্যবহার করো না কেনো, আমি তবুও তোমাদের বলব যে: যদি মানুষ এই প্রবাদবাক্যের পালন করতে পারে ও এটাকে অনুভব করতে পারে, এবং ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগকে অর্জন করার অবস্থায় উপনীত হতে পারে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তারা অস্তিত্বরক্ষায় সমর্থ হবে এবং মঙ্গলময় পরিণাম অর্জন করবে। আর যদি তুমি এই প্রবাদে বর্ণিত গুণমান অর্জন করতে না পারো, তাহলে বলা যেতে পারে যে, তোমার পরিণাম অজ্ঞাত। তাই, আমি তোমাদের তোমাদের সাথে এই প্রবাদটার বিষয়ে বলছি, তোমাদের নিজেদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য, এবং যাতে তোমরা জানতে পারো যে, ঈশ্বর তোমাদের পরিমাপ করার জন্য কী ধরনের মানদণ্ড ব্যবহার করেন। যেমন তোমাদের এইমাত্র বললাম, এই প্রবাদ ঈশ্বরের মানবজাতিকে পরিত্রাণের বিষয়ে, আবার এর পাশাপাশি, ঈশ্বর কীভাবে মানুষের পরিণাম নির্ণয় করেন, সেই বিষয়েও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কীভাবে তা প্রাসঙ্গিক? জানলে তোমাদের সত্যিই ভালো লাগবে, তাই আজ আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করব।

মানুষ ঈশ্বরে ভীত কি না, এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে কি না, তা যাচাই করতে ঈশ্বর বিভিন্ন পরীক্ষা ব্যবহার করেন

ঈশ্বরের কার্যের প্রতি যুগে, তিনি মানুষদের কিছু বাক্য প্রদান করেন, এবং কিছু সত্যের বিষয়ে তাদের বলেন। এই সত্যগুলো সেই পথ হিসাবে কাজ করে, যে পথে মানুষের অবিচল থাকা উচিত, যে পথে তাদের চলা উচিত, যে পথ তাদের ঈশ্বরকে ভীত হতে ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে সক্ষম করে, যে পথ মানুষের অনুশীলন করা উচিত এবং যে পথে জীবনযাত্রায় অবিচল থাকা উচিত। এই কারণেই, ঈশ্বর মানবজাতির কাছে এই কথনসমূহ প্রকাশ করেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত এইসকল বাক্যে মানুষের অবিচল থাকা উচিত, এবং তাতে অবিচল থাকার অর্থই হল জীবন প্রাপ্ত হওয়া। যদি কোনো ব্যক্তি তাতে অবিচল না থাকে, সেগুলো পালন না করে, এবং ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী জীবনযাপন না করে, তাহলে সেই ব্যক্তি সত্যের পালন করে না। তাছাড়াও, মানুষ যদি সত্যের পালন না করে, তাহলে তারা ঈশ্বরে ভীতও নয় এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগও করে না, অথবা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতেও পারে না। যেসব মানুষ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম, তারা ঈশ্বরের প্রশংসা লাভ করতে পারে না, এবং এহেন মানুষদের কোনো পরিণামও নেই। তাহলে, তাঁর কাজের মাধ্যমে, ঈশ্বর কীভাবে কারোর পরিণাম নির্ণয় করেন? এই পরিণাম নির্ধারণের জন্য কোন পদ্ধতি তিনি প্রয়োগ করেন? হয়তো তোমরা এই বিষয়টা নিয়ে আপাতত কিছুটা ধোঁয়াশায় আছো, কিন্তু যখন আমি তোমাদের এই পদ্ধতির সম্পর্কে বলব, তখন তা একেবারেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে, কারণ ইতিমধ্যে তোমাদের মধ্যে অনেকেই এই অভিজ্ঞতা নিজেরাই লাভ করেছ।

তাঁর কর্মপরিসরে, সূচনালগ্ন থেকেই, ঈশ্বর সকল মানুষের জন্য—অথবা, তুমি বলতে পারো যে, তাঁকে অনুসরণ করে চলা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য—পরীক্ষা নির্ধারিত করে রেখেছেন, এবং এই পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন মাত্রার হয়। কিছু মানুষ রয়েছে, যারা তাদের পরিবারের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, অনেকে প্রতিকূল পরিস্থিতি সংক্রান্ত পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কোনো কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার ও অত্যাচারিত হওয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কিছু মানুষ আছে, যারা কঠিন বিকল্পের মুখোমুখি হওয়ার পরীক্ষার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, এবং কিছু মানুষ অর্থ ও পদমর্যাদার পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। সাধারণভাবে বলা যায় যে, তোমরা প্রত্যেকেই সবরকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছ। কেন ঈশ্বর এইভাবে কাজ করেন? কেন তিনি প্রত্যেকের সঙ্গে এহেন আচরণ করেন? কী ধরনের ফলাফলের তিনি সন্ধান করেন? ঠিক এই বিষয়টা নিয়েই আমি তোমাদের সাথে আলোচনা করতে চাই: ঈশ্বর দেখতে চান যে, সেই ব্যক্তি মানুষ কি না, যে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে। এর অর্থ হল, যখন ঈশ্বর তোমাকে কোনো পরীক্ষা র মধ্যে ফেলেন এবং কোনো না কোনো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেন, তখন তাঁর অভিপ্রায় হল পরীক্ষা করে দেখা যে, তুমি এমন একজন মানুষ কি না যে ঈশ্বরে ভীত এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে। যদি কেউ কোনো নৈবেদ্যকে সুরক্ষিত রাখা বিষয়ক দায়িত্বের সম্মুখীন হয়, এবং সেই দায়িত্ব তাকে ঈশ্বরের নৈবেদ্যর সংস্পর্শে নিয়ে আসে, তবে কি তুমি বলবে যে, এটা হল ঈশ্বরের আয়োজিত কোনো ঘটনা? নিঃসন্দেহে তাই! তুমি যা কিছুর মুখোমুখি হও, তার প্রত্যেকটারই আয়োজন ঈশ্বর করেছেন। যখন তুমি এই বিষয়টার সম্মুখীন হও, তখন ঈশ্বর তোমায় গোপনে পর্যবেক্ষণ করেন, দেখেন যে তুমি কোন বিকল্প বেছে নিচ্ছো, কীভাবে অনুশীলন করছো, এবং তোমার ভাবনাচিন্তা কী। ঈশ্বর যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী, তা হল অন্তিম পরিণাম, যেহেতু এই পরিণামই তাঁকে নির্ণয় করতে সাহায্য করবে, যে, সেই নির্দিষ্ট পরীক্ষাটাতে তুমি তাঁর মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পেরেছ কি না। তবে, মানুষ যখনই কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়, তারা প্রায় কখনোই ভাবে না যে তাদের কেন এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, ঈশ্বর তাদের কাছে কোন গুণমান প্রত্যাশা করেন, তিনি তাদের মধ্যে কী দেখতে চান, বা তিনি তাদের থেকে কী প্রাপ্ত হতে চান। সমস্যার সম্মুখীন হলে, এই ধরনের মানুষেরা কেবলই ভাবে যে, “আমার সামনে এই সমস্যা উপস্থিত হয়েছে; আমাকে সতর্ক হতে হবে, অসাবধান হলে চলবে না! এটা ঈশ্বরের নৈবেদ্য, এবং আমি তা স্পর্শ করতে পারব না।” এই ধরনের সরল চিন্তা পোষণকরা লোকেরা বিশ্বাস করে যে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। এই পরীক্ষার পরিণাম কি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করবে? বলো এ বিষয়ে তোমাদের কী বলার আছে। (যদি মানুষ অন্তর থেকে ঈশ্বরে ভীত হয়, তবে ঈশ্বরের নৈবেদ্যর সংস্পর্শে আসার মতো কোনো দায়িত্বের সম্মুখীন হলে, তারা বিবেচনা করবে যে ঈশ্বরের স্বভাবকে কুপিত করা ঠিক কতটা সহজ, এবং তা নিশ্চিত করবে যাতে তারা সতর্ক পদক্ষেপ নেয়।) তোমার উত্তরটা সঠিক দিশাতেই রয়েছে, তবে তা এখনও সম্পূর্ণ যথাযথ হয়নি। ঈশ্বরের পথে চলার অর্থ উপর-উপর কিছু নিয়ম মেনে চলা নয়; বরং, এর অর্থ হল যে, তুমি যখন কোনো সমস্যায় পড়বে, তখন তুমি সর্বাগ্রে সেটাকে ঈশ্বরের আয়োজিত এক পরিস্থিতি, বা ঈশ্বরপ্রদত্ত দায়িত্ব, বা ঈশ্বরের অর্পিত কাজ হিসাবে দেখবে। যখন তুমি সেই সমস্যার সম্মুখীন হবে, তখন সেটাকে ঈশ্বরের দ্বারা তোমার জন্য নির্ধারিত এক পরীক্ষা হিসাবেও দেখা উচিত। যখন তুমি এই সমস্যার মোকাবিলা করবে, তোমার অন্তরে একটা মানদণ্ড থাকতে হবে, এবং তোমাকে অবশ্যই ভাবতে হবে যে সেই বিষয়টা ঈশ্বরের থেকে আগত। তোমাকে অবশ্যই ভাবতে হবে যে, কীভাবে তুমি সেটার মোকাবিলা করবে, যাতে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করতে পারো, সেইসাথে কীভাবে তাঁকে রুষ্ট না করে বা তাঁর স্বভাবকে ক্ষুব্ধ না করে সেই কাজ করা যায়। এক মুহূর্ত আগেই আমরা নৈবেদ্য সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। এই বিষয়টা নৈবেদ্য এবং তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্যপ্রসঙ্গও জড়িত। তুমি এই কর্তব্যের প্রতি দায়বদ্ধ। তবু, এই সমস্যাটার সম্মুখীন হলে কি কোনো প্রলোভনও আসে? হ্যাঁ। কোথা থেকে আসে সেই প্রলোভন? সেই প্রলোভন আসে শয়তানের কাছ থেকে, তা আসে মানুষের মন্দ, ভ্রষ্ট স্বভাব। যেহেতু প্রলোভনের প্রসঙ্গ রয়েছে, সেহেতু, এই বিষয়টার সঙ্গে জড়িত মানুষের যে সাক্ষ্য বহন করা উচিত সেই সাক্ষ্যবহনে অটল থাকার বিষয়টাও, যা তোমার কর্তব্য এবং দায়িত্বও। কেউ কেউ বলবে, “এ তো খুবই তুচ্ছ বিষয়; এটাকে এত বড় করে দেখানো কি খুব প্রয়োজন?” এমনটা করা চরমভাবে জরুরি! এর কারণ হল, ঈশ্বরের পথে চলা অব্যাহত রাখার জন্য, আমরা আমাদের সাথে বা আমাদের চারপাশে ঘটছে এমন কোনো বিষয়কে উপেক্ষা করতে পারি না, এমনকি তুচ্ছ বিষয়গুলোকেও নয়; সেই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া আমরা উচিত না অনুচিত মনে করি তা নির্বিশেষে, যতক্ষণ বিষয়টা আমাদের সামনে উপস্থিত, ততক্ষণ আমাদের তা উপেক্ষা করা চলবে না। যা কিছু ঘটে, তা আমাদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের প্রদত্ত পরীক্ষা হিসাবেই বিবেচনা করা উচিত। বিষয়গুলোকে এইভাবে দেখা সম্পর্কে তুমি কী ভাবো? তোমার যদি এই ধরনের মনোভাব থাকে, তাহলে তা একটা তথ্যকে নিশ্চিত করে: হৃদয়ের গভীরে, তুমি ঈশ্বরে ভীত হতে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক। যদি তোমার ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার বাসনা থাকে, তবে তুমি বাস্তবে যা অনুশীলন করো তা ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দকর্ম পরিত্যাগ করার মানদণ্ড থেকে অত্যধিক দূরবর্তী হবে না।

প্রায়শই কিছু মানুষ দেখা যায়, যারা বিশ্বাস করে যে, যে বিষয়গুলোর প্রতি লোকজন সাধারণত খুব একটা মনোযোগ দেয় না বা উল্লেখ করে না, যেহেতু সেগুলো একেবারেই তুচ্ছ ছোটখাটো ঘটনা যার সঙ্গে সত্য পালনের কোনো সম্পর্ক নেই। নিছক এই ধরনের বিষয়ের মুখোমুখি হলে, তারা তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করে না, তারপর সেটা এড়িয়ে যায়। যদিও, প্রকৃতপক্ষে এই বিষয়টা তোমাদের জন্য একটা শিক্ষা—কীভাবে ঈশ্বরে ভীত হবে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করবে, তার শিক্ষা। তদুপরি, তোমাদের যে বিষয়ে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হতে হবে তা হল, এই ধরনের বিষয় তোমাদের সামনে যখন উপস্থিত হয় তখন ঈশ্বর কী করছেন তা জানা। ঈশ্বর ঠিক তোমার পাশেই রয়েছেন, তিনি তোমার প্রত্যেকটা কথা ও কাজ লক্ষ্য করছেন, এবং তুমি যা যা করছ এবং তোমার ভাবনাচিন্তায় কী পরিবর্তন আসছে, সবই তিনি নজরে রাখছেন—এ-ই হল ঈশ্বরের কাজ। কিছু মানুষ জিজ্ঞাসা করে, “যদি তা-ই হয়, তাহলে আমি তা অনুভব করিনি কেন?” তুমি তা অনুভব করোনি, কারণ তুমি ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার পথকে তোমার মুখ্য পথ হিসাবে গ্রহণ করে তাতে অবিচল থাকোনি; তাই, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের করা যে সূক্ষ্ম কাজ আপনা থেকেই মানুষের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা ও কর্ম অনুযায়ী প্রকাশ পায়, তা তোমার বোধগম্য নয়। তুমি অস্থিরমতি! গুরুতর বিষয় কোনটা? তুচ্ছ বিষয়ই বা কোনটা? ঈশ্বরের পথে চলার সাথে জড়িত বিষয়গুলোকে গুরুতর বা তুচ্ছ বলে আলাদা করা যায় না, তার সমস্তটাই গুরুত্বপূর্ণ—তোমরা কি সেটা স্বীকার করো? (হ্যাঁ, আমরা তা স্বীকার করি।) দৈনন্দিন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, এমন অনেক কিছু থাকে যা মানুষ খুব বড় এবং তাৎপর্যপূর্ণ হিসাবে দেখে, আবার কিছু বিষয়কে একেবারেই তুচ্ছ ঘটনা হিসাবে দেখা হয়। মানুষ প্রায়শই এই বড় বিষয়গুলোকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে, এবং তারা এগুলোকে ঈশ্বর ের প্রেরিত হিসাবে বিবেচনা করে। তবে, যখন সেই বৃহৎ বিষয়গুলো ঘটমান হয়, তখন মানুষের অপরিণত আত্মিক উচ্চতার জন্য, এবং তাদের দুর্বল ক্ষমতার কারণে, মানুষ প্রায়ই ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করতে পারে না, কোনো উদ্ঘাটন অর্জন করতে পারে না, এবং মূল্যবান কোনো প্রকৃত জ্ঞানও অর্জন করতে পারে না। যতক্ষণ ছোটোখাটো বিষয় জড়িত থাকে, ততক্ষণ মানুষ সেগুলোকে একেবারেই উপেক্ষা করে যায় এবং একে একে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এইভাবে, মানুষ ঈশ্বরের সামনে উপনীত হওয়ার এবং তাঁর দ্বারা পরীক্ষিত হওয়ার বহু সুযোগ হারিয়েছে। ঈশ্বর তোমার উদ্দেশ্যে যে যে মানুষ, ঘটনাবলী ও বস্তুসমূহের এবং যে পরিস্থিতির আয়োজন করেছেন, সেগুলোকে যদি তুমি সর্বদা উপেক্ষা করো, তবে তার অর্থ কী? তার অর্থ হল যে, ঈশ্বরের তোমাকে নিখুঁত করে তোলাকে, এবং সেইসাথে তাঁর নেতৃত্বকেও, নিত্য ও নিয়ত অস্বীকার করে চলেছ। যখনই ঈশ্বর তোমার জন্য কোনো পরিস্থিতির আয়োজন করেন, তিনি তখন নিভৃতে থেকে তোমাকে দেখছেন, তোমার হৃদয় লক্ষ্য করছেন, তোমার চিন্তাভাবনা ও বিচক্ষণতা পর্যবেক্ষণ করছেন, লক্ষ্য করছেন তুমি কীভাবে ভাবছ, এবং সেই পরিস্থিতিতে তোমার প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা করছেন। যদি তুমি একজন অসতর্ক প্রকৃতির মানুষ হও—হও এমন একজন যে কখনোই ঈশ্বরের পথ, তাঁর বাক্য, বা সত্যকে গুরুত্ব দেয়নি—তাহলে, ঈশ্বর যা সম্পূর্ণ করতে চান, অথবা ঈশ্বর তোমার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট পরিবেশের আয়োজন করেছেন, তখন তিনি কী সম্পূর্ণ করতে চেয়েছেন বা কোন প্রয়োজন তুমি পূর্ণ করবে বলে তিনি আশা করেছেন, তুমি এসব বিষয়ে সতর্ক হবে না বা তাতে মনোযোগ দেবে না। অথবা তুমি এও জানবে না, যে, তুমি যেসব মানুষ, ঘটনাবলী ও বস্তুসমূহের মুখোমুখি হও, সেগুলো কীভাবে সত্যের সাথে বা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সম্পর্কিত। বারংবার এইরকম পরিস্থিতির এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পরেও যদি ঈশ্বর তোমার মধ্যে কোনো ফলাফল দেখতে না পান, সেক্ষেত্রে তিনি কীভাবে এগোবেন? বারংবার পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, তুমি তোমার হৃদয়ে ঈশ্বরকে বৃহত্তর করে তোলোনি, অথবা ঈশ্বর তোমার জন্য যে পরিস্থিতির আয়োজন করেছেন সেগুলো আসলে কী তা দেখোনি: ঈশ্বরের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন। পরিবর্তে, তুমি ঈশ্বরপ্রদত্ত সকল সুযোগ একাদিক্রমে প্রত্যাখ্যান করে গিয়েছো, সেগুলোকে বারংবার দূরে সরে যেতে দিয়েছো। এ কি মানুষের প্রদর্শিত চূড়ান্ত অবাধ্যতা নয়? (হ্যাঁ, তা-ই।) ঈশ্বর কি এই কারণে আহত বোধ করবেন? (হ্যাঁ, করবেন।) ভুল, ঈশ্বর আহত হবেন না! আমাকে এমন বলতে শুনে তোমরা আবার একবার বিস্মিত হচ্ছো। তোমরা হয়তো ভাবছ: “আগে কি এমনটা বলা হয়নি, যে, ঈশ্বর সর্বদা আহত বোধ করেন? তাহলে কি তিনি এই কারণেও আহত বোধ করবেন না? তাহলে, কখন তিনি আহত বোধ করেন?” সংক্ষেপে, ঈশ্বর এই পরিস্থিতিতে আহত বোধ করবেন না। সেক্ষেত্রে, উপরোক্ত আচরণের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী হবে? যখন মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত বিচার ও পরীক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করে, এবং সেগুলোকে পরিহার করে, এই ধরনের মানুষের প্রতি ঈশ্বরের একটামাত্রই মনোভাব থাকে। কী সেই মনোভাব? ঈশ্বর এই ধরনের মানুষকে তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বর্জন করেন। “বর্জন” শব্দটার অর্থে দুটো স্তর রয়েছে। আমার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমি কীভাবে তা ব্যাখ্যা করব? গভীরে, “বর্জন” শব্দটা বিতৃষ্ণা ও ঘৃণার অর্থ বহন করে। এই শব্দটার অর্থের অন্য স্তরটা কী? সেই অংশটা বোঝায় কোনো কিছুর প্রতি হাল ছেড়ে দেওয়া। তোমরা সকলে জানো “হাল ছেড়ে দেওয়া” বলতে কী বোঝায়, তাই তো? সংক্ষেপে, যারা এহেন আচরণ করে, “বর্জন” শব্দটা তাদের প্রতি ঈশ্বরের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া ও মনোভাবকে উপস্থাপিত করে; এ হল তাদের প্রতি চূড়ান্ত ঘৃণা ও বিরক্তির প্রকাশ, এবং সেহেতু, এর ফলস্বরূপ, তাদের পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে কখনো ঈশ্বরের পথে চলেনি এবং কখনোই ঈশ্বরে ভীত হয়নি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করেনি, তার প্রতি এ-ই হল ঈশ্বরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আমি আগে যে প্রবাদবাক্যটার বিষয়ে উল্লখ করেছিলাম, তোমরা কি এখন কি সেটার গুরুত্ব দেখতে পাচ্ছ?

মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করতে ঈশ্বর কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তা কি তোমরা এখন বুঝতে পারছো? (তিনি প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির আয়োজন করেন।) তিনি ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির আয়োজন করেন—তা হল এমনকিছু, যা মানুষ অনুভব ও স্পর্শ করতে পারে। তাহলে, এই কাজের নেপথ্যে, ঈশ্বরের অভিপ্রায় কী? তাঁর অভিপ্রায় হল প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ও কালে বিবিধ পরীক্ষার সম্মুখীন করানো। পরীক্ষার সময় একজন ব্যক্তির কোন দিকগুলো পরীক্ষা করা হয়? কোনো পরীক্ষার মাধ্যমেই নির্ণয় করা হয় যে, তুমি ব্যক্তিগতভাবে যেসকল বিষয়ের সম্মুখীন হও, যেসকল বিষয়ে শোনো, যা দেখো, এবং যে অভিজ্ঞতা লাভ করো, সেই প্রতিটা বিষয়েই তুমি ঈশ্বরে ভীত হওয়া এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার মতো মানুষ কি না। প্রতিটা মানুষই এমন পরীক্ষার মুখোমুখি হবে, কারণ ঈশ্বর সব মানুষের প্রতিই ন্যায্য। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলো, “আমি বহুবছর ধরে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে আসছি, তাহলে আমি কেন কখনও-ই কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হইনি?” তোমার মনে হয় যে তুমি কোনো পরীক্ষার মধ্যে পড়োনি, কারণ যখনই ঈশ্বর তোমার জন্য পরিস্থিতিসকলের আয়োজন করেছেন, তখন তুমি সেগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দাওনি, এবং ঈশ্বরের পথে চলতে চাওনি। এই কারণেই, ঈশ্বরের পরীক্ষা তোমার বিন্দুমাত্র বোধগম্য হয় নি। কেউ কেউ বলে, “আমি কিছু পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু আমি জানিনা কীভাবে যথাযথ অনুশীলন করতে হয়। এমনকি যদিও আমি অনুশীলন করেছি, তবুও, আমি এখনও জানি না, যে, ঈশ্বরের পরীক্ষার সময় আমি দৃঢ় অবস্থান নিতে পেরেছি কি না।” এমন অবস্থার মধ্যে থাকা মানুষের সংখ্যা খুব কম নয়। তাহলে, কী সেই মানদণ্ড, যা দিয়ে ঈশ্বর মানুষকে পরিমাপ করেন? ঠিক যেমন আমি একটু আগেই বললাম: প্রতিটা কাজে, ভাবনায়, বা অভিব্যক্তিতে, তুমি ঈশ্বরকে ভীত কিনা এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করো কিনা, তা-ই হল এই মানদণ্ড। তুমি ঈশ্বরে ভীত কিনা বা মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করো কিনা, তা এভাবেই নির্ণয় করা হয়। ব্যাপারটা বেশ সহজ, তাই নয় কি? এটা বলা খুবই সহজ, কিন্তু কাজে অনুশীলন করার পক্ষে সহজ কি? (না, খুব একটা নয়।) কেন সহজ নয়? (কারণ, মানুষ ঈশ্বরকে জানে না, এবং কীভাবে ঈশ্বর মানুষকে নিখুঁত করে তোলেন তাও জানে না, তাই তারা যখন বিভিন্ন বিষয়ের সম্মুখীন হয়, তখন তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কীভাবে সত্যের অন্বেষণ করতে হবে তা তারা বুঝতে পারে না। ঈশ্বর-ভীতির বাস্তবতা অর্জন করার আগে তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা, পরিমার্জন, শাস্তি ও বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।) তোমরা বিষয়টা এভাবে ভাবতেই পারো, কিন্তু তবুও, ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ তোমাদের পক্ষে এখন খুব সহজ কাজ বলেই মনে হচ্ছে। কেন আমি এমন বলছি? কারণ, তোমরা অনেক উপদেশ শুনেছ এবং সত্যের বাস্তবিকতার দ্বারা যে সিঞ্চন লাভ করেছ, তা-ও কম নয়; তা থেকে তোমরা তাত্ত্বিকভাবে এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছ যে কীভাবে ঈশ্বরকে ভীত হতে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে হয়। কীভাবে ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার অনুশীলন করতে হয়, সেই বিষয়ে এই সমস্ত জ্ঞান তোমাদের জন্য খুবই সহায়ক হয়েছে, এবং তোমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে, যে, তা বুঝি সহজেই অর্জনীয়। তাহলে মানুষ কেন কখনোই তা প্রকৃতপক্ষে অর্জন করতে পারে না? কারণ, মানুষের প্রকৃতি ও সারসত্য ঈশ্বরে ভীত নয় এবং মন্দ কর্ম পছন্দ করে। এ-ই হল আসল কারণ।

ঈশ্বরে ভীতি না থাকা এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ না করার অর্থ ঈশ্বরের বিরোধিতা করা

“ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ” প্রবাদটা কোথা থেকে এসেছে, সেই প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক। (ইয়োবের গ্রন্থ থেকে।) যেহেতু আমরা ইয়োবের বিষয়ে উল্লেখ করলাম, সেহেতু তাকে নিয়ে কিছু আলোচনাও করা যাক। ইয়োবের সময়ে, ঈশ্বর কি মানবজাতির পরিত্রাণ ও তাদের জয় করার জন্য কাজ করতেন? না। তাই নয় কি? ইয়োবের ক্ষেত্রে যতদূর বলা যায়, সেকালে তার কতটুকুই বা আর ঈশ্বরজ্ঞান ছিল? (খুব বেশি নয়।) তোমাদের এই মুহূর্তে ঈশ্বরের সম্পর্কে যা জ্ঞান, তার থেকে ইয়োবের জ্ঞান বেশি ছিল না কম? তুমি উত্তর দিতে সাহস করছো না কেন? এটা তো খুব সহজ প্রশ্ন। কম! নিশ্চিতভাবেই! আজকের দিনে তোমরা ঈশ্বরের সম্মুখীন, এবং তাঁর বাক্যের মুখোমুখি; ইয়োবের থেকে তোমাদের জ্ঞান অনেক বেশি। আমি কেন এই প্রসঙ্গটা উত্থাপন করলাম? এসব বিষয়ে বলার নেপথ্যে আমার উদ্দেশ্য কী? একটা ব্যাপারে আমি তোমাদের ব্যাখ্যা করে বলতে চাই, কিন্তু তার আগে, আমি তোমাদের একটা প্রশ্নও করতে চাই: ইয়োব ঈশ্বর সম্পর্কে খুব অল্পই জানতো, কিন্তু তা সত্ত্বেও সে ঈশ্বরে ভীত ছিল এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে চলত; তাহলে আজ কেন মানুষ তেমনটা করতে ব্যর্থ হচ্ছে? (কারণ তারা গভীরভাবে ভ্রষ্ট।) তারা যে গভীরভাবে ভ্রষ্ট,—তা হল এই সমস্যার এক উপরিগত কারণ, কিন্তু আমি কখনোই বিষয়টা এইভাবে দেখি না। তোমরা প্রায়ই বহুব্যবহৃত মতবাদ ও পরিভাষা ব্যবহার করো, যেমন “গভীরভাবে ভ্রষ্ট”, “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ”, “ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীনতা”, “অবাধ্যতা”, “সত্যের প্রতি অনাসক্তি” ইত্যাদি, এবং প্রত্যেকটা বিষয়ের সারসত্য ব্যাখ্যা করতে এইসব বহুলপ্রচলিত বচন ব্যবহার করো। এ হল অনুশীলনের এক ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি। বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের ব্যাখ্যা করতে একই উত্তর ব্যবহার করা অনিবার্যভাবেই ঈশ্বরের সত্য সম্পর্কে ধর্মনিন্দাজনক সন্দেহ তৈরি করে; আমি এই ধরনের উত্তর শুনতে পছন্দ করি না। এই বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গভীরভাবে ভাবো! তোমাদের মধ্যে কেউই এই বিষয়ে ভাবোনি, কিন্তু আমি প্রতিদিনই তা দেখতে পাই, প্রত্যহ অনুভব করি তা। অতএব, তোমরা যখন কাজ করো, তখন আমি তোমাদের লক্ষ্য করি। তোমরা যখন তোমরা কোনোকিছু করো, তখন তোমরা সেটার সারসত্য উপলব্ধি করো না, কিন্তু যখন আমি তা দেখি, আমি সেটার সারসত্য দেখতে পাই, এবং তা অনুভবও করতে পারি। তাহলে, কী সেই সারসত্য? কেন এখনকার দিনের মানুষ ঈশ্বরে ভীত হতে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে অক্ষম? তোমাদের উত্তর এই সমস্যার সারমর্মকে ব্যাখ্যা করার ধারেকাছেও যায় না, বা সেটার সুরাহাও করতে পারে না। কারণ, এর এমন এক উৎস রয়েছে, যার বিষয়ে তোমরা জানো না। কী সেই উৎস? আমি জানি তোমরা সে বিষয়ে শুনতে চাও, তাই আমি তোমাদের এই সমস্যার উৎস সম্পর্কে বলব।

যখন থেকে ঈশ্বর কাজ শুরু করেছেন, তিনি মানুষকে কোন চোখে দেখেছেন? ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করেছেন; তিনি মানুষকে তাঁর পরিবারের সদস্যের মতো দেখেছেন, তাঁর কাজের বস্তু হিসাবে মনে করেছেন, তেমনভাবে দেখেছেন যাদের তিনি জয় করতে ও উদ্ধার করতে চেয়েছেন, এবং যাদের তিনি নিখুঁত করে তুলতে চেয়েছেন। তাঁর কাজের শুরুতে, মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের এই মনোভাবই ছিল। কিন্তু, সেই সময়ে, ঈশ্বরের প্রতি মানবজাতির মনোভাব কীরকম ছিল? ঈশ্বর মানুষের কাছে অপরিচিত ছিলেন, এবং তারা ঈশ্বরকে আগন্তুক বলে মনে করতো। বলা যেতে পারে যে ঈশ্বরের প্রতি তাদের মনোভাবের সঠিক ফলাফল উৎপন্ন করেনি, এবং ঈশ্বরের সাথে তাদের কেমন আচরণ করা উচিত, সেই সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। তারা তাঁর সঙ্গে নিজেদের ইচ্ছেমতো আচরণ করত, এবং তাদের যা খুশি তারা তাই করত। তাদের কি আদৌ ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো মতামত ছিল? প্রথমে ছিল না; তাদের তথাকথিত মতামত শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পূর্বধারণা ও অনুমানসর্বস্ব ছিল। তাদের পূর্বধারণার সাথে সঙ্গত বিষয়গুলোকেই তারা গ্রহণ করত, এবং, কোনোকিছু তাদের পূর্বধারণার সাথে না মিললে, তারা তা উপর-উপর ভাবে মেনে চললেও, হৃদয়ের গভীরে তারা সেবিষয়ে সুতীব্র টানাপড়েন অনুভব করতো, এবং সেটার বিরোধিতা করতো। প্রথমদিকে ঈশ্বর এবং মানুষের সম্পর্ক ছিল এহেন: ঈশ্বর তাদের তাঁর পরিবারের সদস্য হিসাবে দেখতেন, তবুও তারা ঈশ্বরের প্রতি আগন্তুকের মতো আচরণ করতো। তবে, ঈশ্বরের কাজ শুরু করার পর কিছু সময় অতিবাহিত হলে, মানুষ বুঝতে পেরেছিল ঈশ্বর কী অর্জন করতে চাইছিলেন, এবং তারা জেনেছিল যে তিনিই সত্য ঈশ্বর; এবং তারা এ-ও জানতে পেরেছিল, যে, ঈশ্বরের কাছ থেকে তারা কী অর্জন করতে পারে। সেই সময়ে ঈশ্বরকে মানুষ কোন চোখে দেখতো? তারা তাঁকে জীবনরেখা হিসাবে দেখত, এবং তাঁর অনুগ্রহ, আশীর্বাদ, ও প্রতিশ্রুতি লাভ করার প্রত্যাশা করত। সেই সময়, ঈশ্বর মানুষকে কোন চোখে দেখতেন? তিনি তাদের দেখতেন তাঁর বিজয়কার্যের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে। তাদের বিচার, পরীক্ষা, এবং তাদের দিয়ে কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন করানোর উদ্দেশ্যে ঈশ্বর বাক্য ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তবে, তখনকার মানুষের কাছে, তাদের নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য ঈশ্বর ছিলেন নিছকই এক বস্তুমাত্র। মানুষ দেখেছিল যে, ঈশ্বরের প্রকাশিত সত্য তাদের জয় এবং উদ্ধার করতে পারে, তারা দেখেছিল যে, তাদের কাছে একটা সুযোগ রয়েছে ঈশ্বরের কাছ থেকে তারা যা চায় তা প্রাপ্ত করার, এবং সেইসাথে, তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য লাভ করারও। এই কারণে, তাদের হৃদয়ে যৎসামান্য আন্তরিকতার উদ্রেক ঘটেছিল, এবং তারা সেই ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হয়ে উঠেছিল। সময় পার হল, এবং ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের কিছু ভাসাভাসা ও তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করার ফলে, বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বরের ও তাঁর কথিত বাক্যের সাথে, তাঁর প্রচারের সাথে, তাঁর প্রকাশিত সত্যের সাথে, ও তাঁর কাজের সাথে মানুষের কিছু “পরিচিতি” হতে শুরু করছিল। ফলত, তারপর তারা এই অপধারণার বশবর্তী হয়ে পড়েছিল, যে, ঈশ্বর আর অপরিচিত নন, এবং, যে, তারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে। এতক্ষণে, মানুষ সত্যের বিষয়ে অনেক উপদেশ শুনেছে এবং ঈশ্বরের কার্য বিষয়ক প্রভূত অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতির হস্তক্ষেপ তথা বাধাদানের কারণে, অধিকাংশ মানুষ সত্যের পালন করতে পারে না, এবং তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতেও অক্ষম। মানুষ আরো বেশি অলস হয়ে পড়েছে এবং তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাবও বেড়ে চলেছে। তাদের এই বোধ বৃদ্ধি পেয়েছে, যে, তাদের নিজে-নিজ পরিণামসমূহ অজ্ঞাত। কোন অসংযত ধারণার জন্ম দিতে তারা সাহস করে না, তারা এবং অগ্রগতির সন্ধানও করে না; তারা নিছকই অনিচ্ছাসহকারে অনুসরণ করে যায়, ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে। মানুষের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে, তাদের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী? তিনি কেবল এইসকল সত্য তাদের প্রদান করতে চান, এবং চান যে, তাঁর পথ তাদের অন্তরে সঞ্চারিত হোক, এবং তারপর তাদের বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পরিস্থিতির আয়োজন করতে চান। তাঁর লক্ষ্য হল এইসকল বাক্য, এইসকল সত্য, ও তাঁর কাজকে প্রয়োগ করার মাধ্যমে এমন এক পরিণাম নিয়ে আসা যার দ্বারা মানুষ তাঁর প্রতি ভীত হতে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগে সক্ষম হয়। আমার দেখা অধিকাংশ মানুষই ঈশ্বরের বাক্যগুলোকে গ্রহণ করে নিছকই কোনো মতবাদ, কাগজে লেখা কিছু অক্ষর, পালনীয় কিছু নিয়ম হিসাবে। তাদের ক্রিয়াকলাপ ও কথাবার্তায়, বা পরীক্ষার সম্মুখীন হলে, তারা ঈশ্বরের পথকে তাদের অনুসরণীয় হিসাবে গণ্য করে না। মানুষ যখন প্রবল কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, তখন এই বিষয়টা আরো সবিশেষভাবে প্রযোজ্য; আমি এমন কাউকে দেখিনি যে ঈশ্বরে ভীত হওয়া এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার পথে অনুশীলন করছে। সেই কারণেই, মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব অত্যন্ত ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ! বারংবার, এমনকি শত শত বারও, তিনি তাদের পরীক্ষা নেওয়া সত্ত্বেও, তাদের এখনও এমন কোনো স্পষ্ট মনোভাব নেই যার মাধ্যমে তাদের এই দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শিত হয়: “আমি ঈশ্বরে ভীত হতে এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করতে চাই!” যেহেতু মানুষের এই সংকল্প নেই, এবং এই ধরনের কোনোকিছু সে প্রদর্শনও করে না, সেহেতু তাদের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাবও নেই অতীতের সেই সময়ের মতো, যখন তিনি তাদের প্রতি করুণা, সহনশীলতা, ধৈর্য, এবং স্থৈর্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরিবর্তে, তিনি এখন মানুষের প্রতি চূড়ান্ত হতাশ। এই হতাশা কে তৈরি করেছে? মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কার উপর নির্ভর করে? তাঁকে অনুসরণ করা প্রতিটা মানুষের উপরেই তা নির্ভর করে। তাঁর বহু বছরের কাজের মধ্যে, ঈশ্বর মানুষের কাছে অনেক চাহিদা উপস্থাপিত করেছেন এবং তাদের জন্য বহু পরিস্থিতির আয়োজন করেছেন। যদিও, তারা যেভাবেই তাদের ভূমিকা পালন করে থাকুক, এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের মনোভাব যেমনই হোক, সেসব নির্বিশেষে, মানুষ ঈশ্বরে ভীত হওয়ার এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার লক্ষ্যে সুস্পষ্টভাবে অনুশীলন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই, আমি সংক্ষিপ্ত কিছু বাক্য বলবো, এবং ঈশ্বরে ভীত হওয়া ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের যে পথ, সেই পথে কেন মানুষ কেন চলতে পারে না, সেই বিষয়ে আমরা এখনই যা বলেছি, তা এই শব্দবন্ধনীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করবো। কী সেই কথা? তা হল: ঈশ্বর মানুষকে তাঁর পরিত্রাণের এবং কার্যের বস্তু হিসাবে গণ্য করেন; মানুষ ঈশ্বরকে তাদের শত্রু এবং তাদের বিপরীতপক্ষীয় বলে মনে করে। এবার কি বিষয়টা নিয়ে তোমার সুস্পষ্ট এক উপলব্ধি ঘটেছে? মানুষের মনোভাব কী, ঈশ্বরের মনোভাব কী, এবং মানুষ ও ঈশ্বরের সম্পর্ক কী, তা খুবই পরিষ্কার। তোমরা যতই ধর্মোপদেশ শুনে থাকো না কেন, যেসকল বিষয়ে তোমরা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছ সেই বিষয়গুলো, যেমন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া, ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করা, ঈশ্বরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়ার পথের অন্বেষণ, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সমগ্র জীবৎকাল ব্যয় করতে চাওয়া, এবং ঈশ্বরের জন্য বাঁচতে চাওয়া—আমার কাছে, এগুলো সচেতনভাবে ঈশ্বরের পথে থাকা, অর্থাৎ, ঈশ্বরে ভীত হওয়া এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার নমুনা নয়, বরং, এসকল নিতান্তই তোমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের পথ। সেগুলো অর্জনের উদ্দেশ্যে তোমরা অনিচ্ছাসহ কিছু নিয়ম পালন করে চলো, এবং নির্দিষ্টভাবে এই নিয়মগুলোই মানুষকে ঈশ্বরে ভীত হওয়া ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার পথ থেকে বহু দূরে নিয়ে যায়, এবং তা আরো একবার ঈশ্বরকে মানবজাতির বিপরীতে স্থাপন করে।

আজকের বিষয়বস্তু কিছুটা গুরুগম্ভীর, তবে যা-ই হোক না কেন, আমি এখনও আশা করি, যে, যতই তোমরা আশু অভিজ্ঞতা এবং অনাগত সময়কালের মধ্যে দিয়ে যাবে, ততই আমি তোমাদের এইমাত্র যা বললাম তা সম্পাদনে সক্ষম হবে। এমন ভেবো না, যে, ঈশ্বর হলেন নিছকই এক ঝলক শূন্য বাতাস—যেন, তোমার যখন তাঁকে প্রয়োজন তখনই তাঁর অস্তিত্ব রয়েছে, আর যখন তোমার কোনো কাজে লাগে না তখন তিনি নেই। তাঁর কোনোই অস্তিত্ব নেই। একবার যদি তোমার অবচেতনেও এই ভাবনা এসে থাকে, তুমি তাহলে ইতিমধ্যেই ঈশ্বরকে ক্ষিপ্ত করেছ। হয়তো কিছু মানুষ আছে যারা বলে, “আমি ঈশ্বরকে নিছকই শূন্য বাতাস হিসাবে গণ্য করি না। আমি সদাসর্বদা তাঁর প্রতি প্রার্থনা করি, এবং নিয়ত তাঁকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করি, এবং আমি যা করি তা সবই ঈশ্বরের প্রয়োজনীয় পরিধি, গুণমান এবং নীতির মধ্যেই পড়ে। আমি মোটেই আমার নিজের ধারণা অনুযায়ী অনুশীলন করছি না।” হ্যাঁ, তুমি যেভাবে অনুশীলন করছ, তা সঠিক। তবুও, কোনো একটা সমস্যার সম্মুখীন হলে তুমি কী ভাবো? কোনো একটা বিষয়ের মুখোমুখি হলে, তুমি কীভাবে অনুশীলন করো? কিছু মানুষ মনে করে যে, তারা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা অথবা অনুনয় করে, কেবল তখনই ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে, কিন্তু যখনই তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়, তারা নিজেদের মতো ধারণা তৈরি করে নেয়, আর সেটাই মেনে চলতে চায়। এর অর্থ হল যে, তারা ঈশ্বরকে নিছকই এক ঝলক শূন্য বাতাস বলে মনে করে, এবং এমনতার পরিস্থিতি তাদের মনে ঈশ্বরকে অস্তিত্বহীন হিসাবে প্রতীয়মান করে। মানুষ বিশ্বাস করে যে, তাদের তাঁকে প্রয়োজন হলে তবেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিদ্যমান হওয়া উচিত, নচেৎ নয়। মানুষ মনে করে যে, তাদের নিজেদের ধারণা অনুযায়ী অনুশীলন করাই যথেষ্ট। তারা বিশ্বাস করে যে, তারা যা খুশি তাই করতে পারে; তারা একেবারেই বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বরের পথ অন্বেষণের কোনো প্রয়োজনীয়তা তাদের আছে। যেসব মানুষ বর্তমানে এমন পরিস্থিতিতে আছে এবং এরকম অবস্থায় আবদ্ধ, তারা কি নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে না? কেউ কেউ বলে, “আমি বিপদ ডেকে আনি বা না-ই আনি, আমি বহু বছর ধরে বিশ্বাস করে এসেছি, এবং আমি বিশ্বাস করি, যে, ঈশ্বর আমায় কখনো পরিত্যাগ করবেন না, কারণ তেমনটা করা তাঁর পক্ষে অসহনীয়।” আবার অনেকে বলে, “আমি মাতৃজঠরে থাকার সময়কাল থেকেই প্রভুকে বিশ্বাস করি। তা প্রায় চল্লিশ বা পঞ্চাশ বছর হবে, ততএব, সময়ের সাপেক্ষে, আমি ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধার পাওয়ার জন্য যোগ্যতম, এবং টিকে থাকার পক্ষেও সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। এই চার-পাঁচ দশক ধরে, আমি আমার পরিবার এবং পেশা পরিত্যাগ করেছি, এবং আমি ত্যাগ করেছি আমার যা কিছু ছিল—যেমন বিত্ত, মর্যাদা, সুখভোগ, নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো—সবই। আমি বহু সুস্বাদু খাবার খাইনি, অনেক বিনোদন উপভোগ করিনি, অনেক আকর্ষণীয় স্থান দর্শন করিনি, এবং আমি এমন অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, যা সাধারণ মানুষ করতে পারতো না। এত সবের বিনিময়েও ঈশ্বর যদি আমায় উদ্ধার করতে না পারেন, তাহলে আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে, এবং আমি এই রকম ঈশ্বরকে বিশ্বাস করিনা।” এরকম দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ কি অনেকে আছে? (হ্যাঁ।) আচ্ছা, তাহলে, আজ আমি তোমাদের একটা বিষয় বুঝতে সাহায্য করছি: এইরকম দৃষ্টিভঙ্গির মানুষেরা নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়ুল মারছে। এর কারণ হল, এরা নিজস্ব কল্পনা দিয়ে নিজেদের দৃষ্টি ঢেকে রেখেছে। নির্দিষ্টভাবে এই কল্পনা, এবং সেইসাথে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তসকলই ঈশ্বরের দ্বারা প্রত্যাশিত মানুষের অর্জনীয় গুণমানকে প্রতিস্থাপিত করে, এবং সেগুলোই ঈশ্বরের প্রকৃত অভিপ্রায় স্বীকার করা থেকে মানুষকে বিরত রাখে। এই কল্পনা ও সিদ্ধান্তই তাদের ঈশ্বরের প্রকৃত অস্তিত্ব বুঝতে অসমর্থ করে রাখে, এবং তা ঈশ্বরের দ্বারা নিখুঁত হয়ে ওঠার সুযোগ থেকেও তাদের বঞ্চিত করে, ঈশ্বরের প্রুতিশ্রুতিতে অংশীদারিত্ব বা ভাগিদারি থেকে বিচ্যুত করে।

কীভাবে এবং কোন মানদণ্ডের দ্বারা ঈশ্বর মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করেন

কোনোরকম দৃষ্টিভঙ্গি বা সিদ্ধান্তে স্থিত হওয়ার আগে, তোমার প্রথমে বোঝা উচিত তোমার প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী, এবং তিনি কী ভাবছেন, এবং তারপরেই তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে যে, তোমার ভাবনা সঠিক কি না। ঈশ্বর কখনোই কোনো মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করতে সময়কে পরিমাপের একক হিসাবে ব্যবহার করেননি, বা কোনো ব্যক্তি কতখানি কষ্টভোগ করেছে, তার উপরে ভিত্তি করেও কখনোই তিনি নির্ণয় করেননি। তাহলে, মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করতে, ঈশ্বর মানদণ্ড হিসাবে কী ব্যবহার করেন? সময়ের ভিত্তিতে পরিণাম নির্ধারণই মানুষের পূর্বধারণার সাথে সবচেয়ে বেশি মেলে। তাছাড়া, এমন কিছু মানুষ তোমরা প্রায়ই দেখতে পাও, যারা এক সময়ে প্রভূত পরিমাণে সমর্পিত ছিল, প্রচুর ব্যয় করেছিল, প্রভূত মূল্য পরিশোধ করেছিল, এবং প্রচুর কষ্টভোগ করেছিল। তোমার চিন্তা অনুসারে, এরাই হল সেই ব্যক্তি, যারা ঈশ্বরের দ্বারা উদ্ধারলাভ করতে পারবে। এই মানুষেরা যা কিছু প্রদর্শন ও যাপন করে, তা মানুষের পরিণাম নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের ব্যবহৃত মানদণ্ডের বিষয়ে মানুষের পূর্বধারণার সাথে সুনির্দিষ্টভাবে সঙ্গতিপূর্ণ। তুমি যা-ই বিশ্বাস করো না কেন, আমি এই উদাহরণগুলো এক এক করে তালিকাভুক্ত করব না। সংক্ষেপে বলতে হলে, যা কিছু ঈশ্বরের নিজস্ব চিন্তাধারা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট মান অর্জন করতে পারেনি, সেই সবই মানুষের কল্পনাপ্রসূত, এবং সেরকম সমস্তকিছুই মানুষের পূর্বধারণাস্বরূপ। তুমি যদি স্বীয় পূর্বধারণা এবং কল্পনাসমূহের উপর নির্ভরশীল হওয়ার উপরেই অন্ধভাবে জোর দিয়ে যাও, তবে তার ফল কী হবে? অবশ্যম্ভাবীভাবে, এর ফল শুধু এটাই হতে পারে যে, ঈশ্বর তোমাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবেন। এর কারণ, তোমরা সবসময় ঈশ্বরের সামনে নিজের যোগ্যতা জাহির করো, তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামো, তাঁর সঙ্গে তর্ক করো, এবং তাঁর ভাবনাকে যথার্থভাবে বোঝার চেষ্টা করো না, এমনকি মানবজাতির প্রতি তাঁর অভিপ্রায় বা মনোভাবও অনুধাবনে সচেষ্ট হও না। এই পদ্ধতিতে এগিয়ে গিয়ে, তুমি সবার উপরে নিজেকে সম্মান প্রদর্শন করো; তা ঈশ্বরকে মহিমান্বিত করে না। তুমি নিজেকে বিশ্বাস করো; ঈশ্বরকে নয়। ঈশ্বর এমন মানুষকে চান না, বা তাদের জন্য তিনি পরিত্রাণও এনে দেবেন না। তুমি যদি এমনতর দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করতে পারো, এবং তাছাড়াও, অতীতে তোমার যেসব ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেসব সংশোধন করতে পারো, যদি ঈশ্বরের চাহিদা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারো, যদি এই মুহূর্ত থেকে ঈশ্বরে ভীত হওয়া এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার পথে অনুশীলন করতে পারো, যদি ঈশ্বরকে সেই অদ্বিতীয় হিসাবে সম্মান করতে সক্ষম হও যিনি সমস্তকিছুর মধ্যে মহান, এবং যদি নিজেকে ও ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য নিজস্ব কল্পনা, দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসকে প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে পারো, এবং, পরিবর্তে, যদি সমস্তকিছুর মধ্যে ঈশ্বরের অভিপ্রায় সন্ধান করো, মানবজাতির প্রতি তাঁর মনোভাব সম্পর্কে অনুভব ও উপলব্ধিতে উপনীত হও, এবং তাঁর নির্ধারিত মান অর্জন করে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারো, তবে তা চমৎকার হবে! এর থেকে সুনির্দিষ্ট হবে, যে, তুমি ঈশ্বরে ভীত হওয়ার এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করার পথে যাত্রা শুরু করতে চলেছ।

যদি ঈশ্বর মানুষের বিভিন্ন ভাবনাচিন্তা, ধারণা, এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে তাদের পরিণাম নির্ধারণের মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহার না করেন, তাহলে কোন ধরনের মানদণ্ড দ্বারা তিনি মানুষের পরিণতি নির্ধারণ করেন? তিনি তাদের পরিণাম স্থির করতে পরীক্ষার প্রয়োগ ঘটান। মানুষের পরিণাম নির্ধারণের পরীক্ষায় ঈশ্বরের ব্যবহার্য মানদণ্ড দুইপ্রকার: প্রথমটা হল, মানুষ কত সংখ্যক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যায়, এবং দ্বিতীয়টা হল, মানুষের উপর সেই পরীক্ষাগুলোর ফলাফল। উভয়ই কোনো মানুষের পরিণাম নির্ধারণের সূচক। এখন, এই দুই মানদণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

শুরুতেই বলতে হয় যে, যখন কোনো ব্যক্তি ঈশ্বরের দ্বারা আয়োজিত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, (তোমার কাছে সেই পরীক্ষা গৌণ বা উল্লেখযোগ্য নয় বলে মনে হতেই পারে), তিনি তোমাকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেবেন, যে, তোমার উপরে রয়ছে আদতে তাঁরই হাত, এবং তিনিই তোমার উদ্দেশ্যে সেই পরিস্থিতির আয়োজন করেছেন। যেহেতু এখনও তোমার আত্মিক উচ্চতা অপরিণত, সেহেতু ঈশ্বর তোমায় পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বিবিধ বিচারপদ্ধতির আয়োজন করবেন, এবং এসকল বিচার তোমার আত্মিক উচ্চতার সাথে সঙ্গত হবে, হবে এমন, যা তুমি উপলব্ধিতে এবং সহনে সক্ষম। তোমার কোন অংশটা পরীক্ষা করা হবে? ঈশ্বরের প্রতি তোমার মনোভাব। এই মনোভাব কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? অবশ্যই! এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ! মানুষের এই মনোভাবই ঈশ্বরের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল, অতএব, তাঁর দিক থেকে দেখলে, এ-ই হল সমস্তকিছুর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যথায়, এহেন কার্যে নিযুক্ত হয়ে ঈশ্বর মানুষের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রচেষ্টা ব্যয় করতেন না। এসকল পরীক্ষার পথ ধরে, ঈশ্বর তাঁর প্রতি তোমাদের মনোভাব দেখতে চান; তিনি দেখতে চান তোমরা সঠিক পথে রয়েছ কিনা। তিনি এ-ও দেখতে চান, যে তোমরা ঈশ্বরে ভীত কি না এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করো কি না। তাই, কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়কালে, তুমি কম-বেশি যতটুকুই সত্য উপলব্ধি করো না কেন, তবু তোমায় ঈশ্বরের পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হবে, এবং, যত বেশি পরিমাণে সত্য তুমি উপলব্ধি করবে, তত তিনি তিনি তোমার জন্য প্রাসঙ্গিক পরীক্ষার আয়োজন করতে থাকবেন। যখন আরো একবার তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন ঈশ্বর দেখতে চাইবেন, যে, অন্তর্বর্তী সময়কালে, তাঁর প্রতি তোমার দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণা, এবং মনোভাবে কোনোরকম উন্নতি ঘটেছে কি না। কিছু মানুষ এমনটা ভেবে আশ্চর্য হয়, যে, “কেন ঈশ্বর সর্বদা মানুষের মনোভাব দেখতে চান? তারা কীভাবে সত্যের বাস্তবে পালন করে, তা কি ইতিমধ্যেই তিনি দেখেননি? তবুও কেন তিনি তাদের মনোভাব দেখতে চান?” এ হল পাগলের প্রলাপ! ঈশ্বর যেহেতু এই পদ্ধতিতেই কাজ করেন, তাহলে নিশ্চয়ই এর মধ্যে তাঁর অভিপ্রায় নিহিত রয়েছে। ঈশ্বর পাশ থেকে সবসময় মানুষকে প্রত্যক্ষ করেন, তাদের প্রত্যেকটা কথা এবং কাজ লক্ষ্য করেন, তাদের প্রত্যেকটা কীর্তিকলাপ ও গতিবিধি লক্ষ্য করেন; এমনকি তিনি তাদের প্রত্যেকটা ভাবনাচিন্তা এবং ধারণাও পর্যবেক্ষণ করেন। মানুষের সঙ্গে ঘটে চলা সমস্তকিছু—তাদের সৎকার্যসমূহ, তাদের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো, তাদের অধর্ম সংঘটন, এমনকি তাদের বিদ্রোহ এবং বিশ্বাসঘাতকতাও—মানুষের পরিণাম নির্ধারণের উদ্দেশ্যে প্রমাণ হিসাবে ঈশ্বর নথিভুক্ত করেন। ঈশ্বরের কার্য যখন পর্যায়ক্রমে উন্নীত হবে, তখন তুমি আরো বেশি সত্য শুনতে পাবে এবং আরো বেশি ইতিবাচক বিষয় ও তথ্য স্বীকার করতে পারবে, এবং সত্যের বাস্তবতাকে আরও বেশি লাভ করবে তুমি। এই প্রক্রিয়া জুড়ে, তোমার প্রতি ঈশ্বরের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে, এবং, যতই তা বৃদ্ধি পাবে, ততই ঈশ্বর তোমার জন্য আরও বেশি কঠিন পরীক্ষার আয়োজন করবেন। তাঁর প্রতি তোমার মনোভাব ইতিমধ্যে উন্নত হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করাই তাঁর লক্ষ্য। অবশ্যই, তা যখন হবে, তখন তোমার থেকে ঈশ্বরের যে চাহিদা, তা তোমার সত্যের বাস্তবিকতা বিষয়ক উপলব্ধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।

যত তোমার আত্মিক উচ্চতা ক্রমশ গঠিত হবে, ততই বিকশিত হবে তোমার প্রতি ঈশ্বরের প্রত্যাশিত গুণমানও। তুমি অপরিণত থাকাকালীন তিনি তোমার পূর্ণ করার জন্য খুবই নিম্ন কোনো মান ধার্য করবেন; যখন তোমার আত্মিক উচ্চতা সামান্য বৃদ্ধি পাবে, তিনি তোমার গুণমানও কিছুটা উচ্চতর করবেন। কিন্তু, তোমার সমগ্র সত্যের উপলব্ধি লাভ করার হয়ে গেলে, তখন ঈশ্বর কী করবেন? তখন তিনি তোমাকে তার চেয়েও বড় পরীক্ষার সম্মুখীন করবেন। এই পরীক্ষাগুলোর মধ্যে দিয়ে, ঈশ্বর তোমার থেকে যা অর্জন করতে চান, যা তিনি তোমার কাছে রয়েছে বলে দেখতে চান, তা হল তোমার মধ্যে রয়েছে তাঁর বিষয়ে গভীরতর জ্ঞান, রয়েছে তাঁর প্রতি প্রকৃত সম্মান। এই সময়ে, তোমার প্রতি তাঁর চাহিদা হবে পূর্বকালের—যখন তোমার আত্মিক উচ্চতা আরও অপরিণত ছিল—সেই সময়ের তুলনায় উচ্চতর এবং “কঠোরতর” (মানুষ হয়তো সেগুলোকে কঠোর বলে মনে করতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর সেগুলোকে যুক্তিযুক্ত হিসাবেই দেখেন।) ঈশ্বর যখন মানুষকে পরীক্ষা করেন, তিনি কী ধরনের বাস্তবিকতা সৃষ্টি করতে চান? তিনি ক্রমাগত চাইছেন, যে, মানুষ তাঁর প্রতি তাদের হৃদয় নিবেদন করুক। কেউ কেউ বলবে, “আমি আর কীভাবে তা করতে পারি? আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি; আমার গৃহ ও জীবিকা ত্যাগ করেছি, এবং নিজেকে ব্যয় করেছি। এইগুলোই কি ঈশ্বরকে আমার হৃদয় নিবেদন করার উদাহরণ নয়? এছাড়া আর কীভাবে আমি ঈশ্বরকে আমার হৃদয় নিবেদন করতে পারতাম? এমন কি হতে পারে, যে, আদতে সেগুলো তাঁর প্রতি আমার হৃদয় নিবেদনের পদ্ধতি ছিল না? ঈশ্বর ঠিক কী চান?” তাঁর চাহিদা খুবই সাধারণ। আসলে, কিছু মানুষ রয়েছ, যারা ইতিমধ্যেই, পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে, ঈশ্বরকে বিভিন্ন মাত্রায় নিজেদের হৃদয় নিবেদন করেছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কখনোই ঈশ্বরকে তাদের হৃদয় নিবেদন করে না। ঈশ্বর যখন তোমার পরীক্ষা নেন, তিনি দেখেন যে, তোমার হৃদয় তাঁর সঙ্গে, না দৈহিকতার সঙ্গে, নাকি শয়তানের সঙ্গে রয়েছে। ঈশ্বর যখন তোমার পরীক্ষা নেন, তখন তিনি দেখেন, যে, তুমি তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান করছ, নাকি তোমার অবস্থান তাঁর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, এবং তিনি এ-ও দেখেন, যে, তোমার হৃদয় তাঁর সপক্ষেই রয়েছে কি না। যখন তুমি অপরিণত এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছ, তখন তোমার খুব সামান্যই আত্মবিশ্বাস থাকে, এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায় পূরণ করতে ঠিক কী করতে হবে, তা তুমি জানো না, কারণ সত্যের বিষয়ে তোমার উপলব্ধি থাকে সীমিত। তবে, যদি তবুও তুমি ঈশ্বরের কাছে অকৃত্রিম ও আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে যেতে পারো, এবং তুমি যদি তাঁকে তোমার হৃদয় নিবেদনে ইচ্ছুক হতে পারো, তাঁকে তোমার সার্বভৌম হিসাবে গণ্য করতে পারো, এবং তোমার কাছে যা কিছু সবচেয়ে মূল্যবান তা ঈশ্বরকে নিবেদন করতে ইচ্ছুক হতে পারো, তাহলে তুমি ইতিমধ্যেই তোমার হৃদয় ঈশ্বরকে নিবেদন করেছ। আরো বেশি ধর্মোপদেশ শুনলে, এবং সত্য সম্পর্কে আরো বেশি উপলব্ধি লাভ করলে, তোমার আত্মিক উচ্চতাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। এই সময়ে, ঈশ্বরের চাহিদানুসারী গুণমান তোমার অপরিণত অবস্থার মতো রইবে না আর; তিনি তোমার কাছে এক উচ্চতর গুণমান দাবি করবেন। যখন মানুষ ক্রমশ ঈশ্বরের প্রতি নিজের হৃদয় অর্পণ করে, তখন তাদের হৃদয় ক্রমশ তাঁর নিকটবর্তী হয়ে ওঠে; যতই মানুষ প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের সমীপবর্তী হয়ে উঠতে পারবে, ততই তাদের হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি আরো বেশি সম্মানশীল হতে পারবে। ঈশ্বর যা চান, তা হল ঠিক এইরকমই এক হৃদয়।

যখন ঈশ্বর কোনো ব্যক্তির হৃদয় প্রাপ্ত করতে চান, তিনি সেই ব্যক্তিকে অসংখ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নিয়ে যান। সেই পরীক্ষাগুলো চলাকালীন, যদি ঈশ্বর সেই ব্যক্তির হৃদয় প্রাপ্ত না হন, বা যদি দেখেন, যে, তার মধ্যে কোনোই সঠিক মনোভাব নেই—অর্থাৎ, বলা যায় যে, ঈশ্বর যদি দেখেন যে সেই ব্যক্তি তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এমন আচরণ বা অনুশীলন করছে না, এবং তিনি যদি এ-ও দেখেন, যে, সেই ব্যক্তির মধ্যে মন্দ কর্ম ত্যাগ করার কোনো মানসিকতা বা সংকল্প নেই—তাহলে, অসংখ্য পরীক্ষার পরে, তার প্রতি ঈশ্বরের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে, এবং তিনি তার প্রতি আর সহিষ্ণু রইবেন না। তিনি আর সেই ব্যক্তির পরীক্ষা নেবেন না, এবং তিনি তার উপরে আর কাজও করবেন না। তাহলে, এর দ্বারা, সেই ব্যক্তির পরিণামের বিষয়ে কী বোঝা যায়? এর অর্থ হল, যে, তার কোনোই পরিণাম নেই। হয়তো সেই ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করেনি; হয়তো সে কখনও কোনো বিঘ্ন সংঘটন করেনি, কখনও কোনো বিশৃঙ্খলারও সূত্রপাত ঘটায়নি। হয়তো সে খোলাখুলি ঈশ্বরকে প্রতিরোধও করেনি। তবে, তার অন্তর ঈশ্বরের কাছে গোপন থাকে; ঈশ্বরের প্রতি তার কখনোই কোনো স্পষ্ট মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকে নি, এবং ঈশ্বর স্পষ্টভাবে দেখতে পান না, যে তারা তাদের হৃদয় ঈশ্বরের কাছে অর্পণ করেছে কি না, বা তারা ঈশ্বরে ভীতি অর্জন এবং মন্দের পরিত্যাগ করার সন্ধান করছে কি না। ঈশ্বর এই ধরনের মানুষের প্রতি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন, এবং তিনি আর তাদের উদ্দেশ্যে কোনো মূল্য পরিশোধ করবেন না, তাদের প্রতি কোনো করুণা প্রসারিত করবেন না, বা তাদের উপর কাজ করবেন না। এহেন কোনো ব্যক্তির ঈশ্বরবিশ্বাসী জীবন ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। কারণ, ঈশ্বর তাদের যে বহুসংখ্যক পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন, তার কোনোটাতেই তিনি তাঁর আকাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাননি। সুতরাং, এমন বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ রয়েছে, যাদের মধ্যে কখনোই আমি পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তি দেখিনি। তা কীভাবেই বা দেখা যাবে? এইসব মানুষেরা হয়তো বহু বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছে, এবং বাহ্যিকভাবে তারা প্রাণশক্তিতে ভরপুর আচরণ করেছে; তারা হয়তো অনেক বই পড়েছে, অনেক কাজকর্ম সামলেছে, খাতার পর খাতা লিখে ভর্তি করেছে, এবং অনেক তত্ত্বকথা ও মতবাদ আয়ত্ত করেছে। তবে, তাদের মধ্যে কখনো কোনো দৃশ্যমান উন্নতি নেই, তাদের ঈশ্বর-বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি রয়ে গিয়েছে অদৃশ্যই, এবং তাদের মনোভাব এখনও অস্পষ্ট। প্রকারান্তরে বললে, তাদের হৃদয় দেখতে পাওয়া যায় না; সেগুলো থাকে সর্বদাই আবৃত এবং আবদ্ধ—থাকে ঈশ্বরের প্রতি অবরুদ্ধও। ফলত, তাদের প্রকৃত হৃদয় কখনো দেখেননি, তিনি এইসব মানুষের মধ্যে তাঁর প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখেননি, এবং, তার চেয়েও বড় ব্যাপার হল, কীভাবে এই ব্যক্তিগণ তাঁর পথ অবলম্বন করে চলে, তা-ও তাঁর নজরে পড়েনি। ঈশ্বর যদি এখনও এই ধরনের ব্যক্তিদের অর্জন না করে থাকেন, তবে কি ভবিষ্যতে তিনি তাদের অর্জন করতে পারবেন? পারবেন না! তিনি কি অসাধ্যসাধনেই বদ্ধপরিকর রয়ে যাবেন? তা তিনি রইবেন না! তাহলে, এহেন ব্যক্তিগণের প্রতি ঈশ্বরের বর্তমান মনোভাব কী? (তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান এবং উপেক্ষা করেন।) তিনি তাদের উপেক্ষা করেন! ঈশ্বর এই ধরনের মানুষের প্রতি মনোযোগ দেন না; তিনি তাদের প্রত্যাখ্যান করেন। তোমরা এই শব্দগুলো খুব তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে ফেলেছ, এবং, বেশ সঠিকভাবেই। মনে হচ্ছে যে, তোমরা যা শুনলে, তা উপলব্ধি করতে পেরেছো।

কিছু মানুষ রয়েছে, যারা যখন ঈশ্বরের অনুগমন আরম্ভ করে, তখন অপরিণত ও অজ্ঞ থাকে; তারা তাঁর অভিপ্রায় উপলব্ধি করতে পারে না, বা তারা এটাও জানে না, যে, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস করা আসলে কী। তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করার এবং তাঁকে অনুসরণ করার মনুষ্যপ্রসূত এবং ভ্রান্ত এক পথ গ্রহণ করে। যখন এই ধরনের মানুষেরা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, তখন তারা সেবিষয়ে সচেতন হয় না; তারা ঈশ্বরের নির্দেশনা ও আলোকপ্রদানের প্রতি প্রতিক্রিয়াহীন থাকে। তারা জানে না যে, ঈশ্বরকে নিজের হৃদয় নিবেদনের অর্থ কী, বা পরীক্ষার সময় অবস্থানে দৃঢ় থাকা বলতে কী বোঝায়। ঈশ্বরকে এই ধরনের মানুষকে সীমিত সময় দেবেন, এবং সেই সময়কালে তিনি তাঁর পরীক্ষাগুলো কী, এবং তাঁর অভিপ্রায়সমূহ কী, তা তাদের উপলব্ধি করতে দেবেন। তারপরে, সেই ব্যক্তিদের অবশ্যই নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে হবে। যারা এই পর্যায়ে রয়েছে, তাদের জন্য ঈশ্বর এখনো অপেক্ষা করছেন। কিছু দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও যারা এখনো দোলাচলে রয়েছে, যারা নিজ হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করতে চায়, কিন্তু তা এখনো সম্পূর্ণভাবে করে উঠতে পারেনি, যারা কিছু সাধারণ সত্যের পালন করা সত্ত্বেও বৃহৎ কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হলে লুকিয়ে পড়ার আর হাল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে—তাদের প্রতি ঈশ্বরের কী মনোভাব? তিনি এখনো তাদের থেকে সামান্য প্রত্যাশা করেন, এবং তাদের মনোভাব ও কার্যনির্বাহের দক্ষতার উপরেই ফলাফল নির্ভর করে। মানুষ যদি উন্নতিলাভে সক্রিয় না হয়, ঈশ্বর তখন কী করেন? তিনি তাদের উপর থেকে হাল ছেড়ে দেন। কারণ, ঈশ্বর তোমার প্রতি হাল ছেড়ে দেওয়ার আগে, তুমি নিজেই আসলে নিজের প্রতি হাল ছেড়ে দিয়েছ। তাই, তুমি ঈশ্বরকে এমনটা করার জন্য দোষারোপ করতে পারো না। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ধরে রাখাটা তোমার দিক থেকেই ভুল।

একটা ব্যবহারিক প্রশ্ন মানুষের বিভিন্ন যেসব বিব্রত অবস্থা সৃষ্টি করে

অন্য এক ধরনের মানুষ আছে যাদের পরিণতি সবচেয়ে বেশি বিয়োগান্তক; এই ধরনের মানুষের কথা আমি সবচেয়ে কম বলতে চাই। সেগুলো বিয়োগান্তক এই কারণে নয় যে তারা ঈশ্বরের শাস্তি লাভ করেছে, বা এই কারণেও নয় যে তাদের প্রতি ঈশ্বরের চাহিদা কঠোর ও তার ফলে তারা বিয়োগান্তক পরিণতি লাভ করেছে; বরং, সেগুলো বিয়োগান্তক এই কারণে যে তারা নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে এরকম করে। ঠিক এই চেনা প্রবাদের মতো, তারা নিজের কবর নিজেই খোঁড়ে। কী ধরনের মানুষ এমন করে? যারা সঠিক পথে চলে না, এবং যাদের পরিণাম অগ্রিম প্রকাশ করা হয়। ঈশ্বরের চোখে, এই ধরনের মানুষেরা তাঁর সবচেয়ে ঘৃণার বস্তু। মানুষের ভাষায়, এইরকম মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি অনুকম্পার পাত্র। এমন মানুষেরা যখন ঈশ্বরকে অনুসরণ করতে শুরু করে, তখন তারা প্রবলভাবে উদ্দীপনাপূর্ণ থাকে; তারা প্রভূত মূল্য পরিশোধ করে, ঈশ্বরের কার্যের সম্ভাবনা সম্পর্কে ভালো মতামত পোষণ করে, এবং নিজেদের ভবিষ্যতের বিষয়ে অবাধ কল্পনা করে থাকে। এছাড়াও, তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশেষভাবে আস্থাশীল, তারা মনে করে যে, ঈশ্বর মানুষকে সম্পূর্ণ করে তুলতে এবং মানুষকে একটা মহিমময় গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারেন। তবুও, যে কোনো কারণেই হোক, এইসব মানুষেরা তারপর ঈশ্বরের কাজ থেকে পলায়ন করে। “পলায়ন করা” বলতে এখানে কী বোঝানো হচ্ছে? এর অর্থ যে তারা কাউকে বিদায় না জানিয়ে, টুঁ-শব্দও না করে, অদৃশ্য হয়ে যায়। যদিও, এইধরনের মানুষজন দাবি করে যে, তারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী, কিন্তু তারা তাদের বিশ্বাসের পথে প্রকৃতরূপে বদ্ধমূল হয় না। সেই কারণেই, তারা কতদিন ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাসী থেকেছে তা নির্বিশেষেই, তারা এখনও ঈশ্বরের প্রতি বিমুখ হতে সক্ষম। কিছু মানুষ ব্যবসা করতে চলে যায়, কেউ তাদের নিজেদের মতো করে জীবন কাটানোর জন্য যায়, কেউ ধনী হওয়ার জন্য যায়, এবং কেউ বিবাহ ও সন্তানলাভের উদ্দেশ্যে চলে যায়…। যারা চলে যায়, তাদের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছে, যাদের পরবর্তীকালে বিবেকদংশন হয় আর তারা ফিরে আসতে চায়, এবং বাকিরা খুবই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়, বছরের পর বছর জগতের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েই দেওয়াটাই হয় তাদের পরিণতি। এইভাবে ভেসে চলা মানুষেরা প্রভূত পরিমাণে কষ্টভোগ করে, এবং তাদের বিশ্বাস হল যে, এই পৃথিবীতে থাকা খুবই কষ্টকর এবং তারা ঈশ্বরের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। আরাম, শান্তি, ও সুখ পাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা ঈশ্বরের গৃহে প্রত্যাবর্তন করতে চায়, এবং তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস অব্যাহত রাখতে চায় বিপর্যয় এড়িয়ে যাওয়ার, বা পরিত্রাণ ও সুন্দর গন্তব্য অর্জন করার উদ্দেশ্যেই। কারণ, তারা বিশ্বাস করে, যে, ঈশ্বরের প্রেম অসীম, এবং তাঁর অনুগ্রহ অক্ষয়। তারা মনে করে, যে, কেউ যা-ই করে থাকুক না কেন, ঈশ্বরের উচিত তাদের ক্ষমা করে দেওয়া, এবং তাদের অতীতের প্রতি সহনশীল হওয়া। তারা বারংবার বলে চলে, যে, তারা চায় ফিরে এসে তাদের দায়িত্বগুলো পালন করতে। এমনও কিছু মানুষ রয়েছে, যারা নিজেদের সম্পত্তির কিছু অংশ গির্জার উদ্দেশ্যে দিতে চায়, এবং তা এই প্রত্যাশায়, যে, এর ফলে ঈশ্বরের গৃহে প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি হবে তাদের। এই ধরনের মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী? কীভাবে তাদের পরিণাম নির্ধারণ করা উচিত তাঁর? খোলাখুলি বলো। (আমি ভেবেছিলাম ঈশ্বর এই ধরনের মানুষকে গ্রহণ করবেন, কিন্তু এখন এএসব শুনে আমার মনে হচ্ছে, যে, তিনি তেমনটা না-ও করতে পারেন।) তোমার যুক্তি বলো। (এহেন মানুষজন শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই ঈশ্বরের সম্মুখে আসে, যে, যাতে তাদের পরিণাম মৃত্যু না হয়। অকৃত্রিম আন্তরিকতাবশত তারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হতে আসে না; তারা আসে কারণ তারা জানে যে, ঈশ্বরের কার্য খুব শীঘ্রই সমাধা হবে, ফলে তারা এই বিভ্রমের মধ্যে থাকে যে, তারা এসে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে পারবে।) তুমি বলছ যে, এইসব মানুষ আন্তরিকভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তাই তিনি তাদের স্বীকার করতে পারেন না, তাই নয় কি? (হ্যাঁ) (আমার ধারণা, এইসব মানুষেরা কেবলমাত্র সুবিধাবাদী, এবং তারা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না।) তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে আসেনি; তারা হল সুযোগসন্ধানী। ভালো বলেছ! এহেন সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিগণ সকলের ঘৃণার পাত্র। হাওয়া যেদিকে বয়ে যায়, তারা সেইদিকে নৌকা বায়, এবং তারা ততক্ষণ কিছু করবে, না যতক্ষণ না তা করার ফলে তারা কিছু পেতে পারে, অতএব, তারা অবশ্যই ঘৃণার্হ! অন্য কোনো ভাই বা বোনের কি এমন কোনো মতামত রয়েছে, যা সে ভাগ করে নিতে চায়? (ঈশ্বর তাদের আর গ্রহণ করবেন না, কারণ তাঁর কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে, এবং এখনই হল সেই সময়, যখন মানুষের পরিণাম নির্ধারিত হচ্ছে। এই সময়েই এইরকম মানুষেরা ফিরে আসতে চায়—এই কারণে নয় যে তারা প্রকৃতপক্ষেই সত্যের অন্বেষণ করতে চায়, বরং এর কারণ হল যে, তারা বিপর্যয় ঘনিয়ে আসতে দেখেছে, অথবা, তারা বাহ্যিক বিষয়সমূহ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। সত্য অন্বেষণের অভিপ্রায় যদি তাদের প্রকৃতপক্ষেই থাকত, তবে তারা কখনোই ঈশ্বরের কাজের মাঝপথে পলায়ন করতে পারত না।) আর কারো অন্য কোনো মতামত রয়েছে কি? (তাদের গ্রহণ করা হবে না। ঈশ্বর আসলে তাদের ইতিমধ্যেই সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তাঁর প্রতি উদাসীন মনোভাবগ্রহণে ছিল বদ্ধপরিকর। তাদের অভিপ্রায় যা-ই হোক, এমনকি তারা যদি যথার্থই অনুতপ্তও হয়, তবুও ঈশ্বর তাদের ফিরে আসতে দেবেন না। কারণ, তিনি তাদের অনেক সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তাদের মনোভাব ইতিমধ্যেই প্রদর্শিত করেছে: তারা ঈশ্বরকে ত্যাগ করতে চেয়েছিল। এই কারণে, তারা যদি এখন ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাহলে ঈশ্বর তাদের গ্রহণ করবেন না।) (আমি একমত, ঈশ্বর এই ধরনের মানুষকে আর গ্রহণ করবেন না, কারণ, কোনো মানুষ যদি প্রকৃত পথ দেখে থাকা সত্ত্বেও, এত দীর্ঘকাল যাবৎ ঈশ্বরের কার্যের অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকা সত্ত্বেও, পার্থিবতায় এবং শয়তানের আলিঙ্গনে ফিরে যেতে পারে, তাহলে তা ঈশ্বরের সঙ্গে এক প্রবল বিশ্বাসঘাতকতা। যদিও এমনটা সত্যি যে, করুণা এবং প্রেমই ঈশ্বরের সারসত্য, কিন্তু, তা নির্ভর করে কোন প্রকার মানুষের দিকে সেই সারসত্য পরিচালিত হচ্ছে, তার উপর। এহেন মানুষ যদি ঈশ্বরের কাছে কেবলমাত্র সুখেরই জন্য আসে, বা আসে এমন কিছুর সন্ধানে, যা তাদের আশা জিইয়ে রাখতে পারে, তবে তারা একেবারেই তেমন মানুষ নয়, যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরবিশ্বাসী, এবং এদের প্রতি ঈশ্বরের করুণাও সুদূরপ্রসারী নয়।) ঈশ্বরের মূল সারসত্য যদি করুণাই হয়, তাহলে তিনি এরকম মানুষদের কেন তা আরও একটু বেশি করে দান করেন না? আরও একটু বেশি করুণা কি তাদের পক্ষে সুযোগস্বরূপ হত না? অতীতে, মানুষ প্রায়ই বলত, যে, ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে উদ্ধার করতে চান, এবং এমনটা চান না, যে, কেউ নরকবাস ভোগ করুক; যদি একশোটার মধ্যে একটা ভেড়া হারিয়ে যায়, ঈশ্বর বাকি নিরানব্বইটা ভেড়াকে ছেড়ে সেই হারানো একটার সন্ধান করবেন। এখন, যখন এই মানুষদের প্রসঙ্গ আসে, ঈশ্বরের কি তাদের গ্রহণ করে আন্তরিক বিশ্বাসলাভের দ্বিতীয় এক সুযোগ দেওয়া উচিত? প্রশ্নটা আদতে কঠিন নয়; তা খুবই সহজ! তোমরা যদি ঈশ্বরকে প্রকৃতপক্ষেই উপলব্ধি করতে পারো, এবং তাঁর সম্পর্কে তোমাদের বাস্তব জ্ঞান থাকে, তাহলে অধিক ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজনীয়—এবং খুব বেশি জল্পনারও দরকার নেই, তাই নয় কি? তোমাদের উত্তরগুলো সঠিক পথেই রয়েছে, কিন্তু ঈশ্বরের মনোভাবের থেকে সেগুলো এখনো বিস্তর দূরবর্তী।

এইমাত্র, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এই বিষয়ে নিশ্চিয়তা প্রকাশ করেছো যে, ঈশ্বর সম্ভবত এই ধরনের মানুষদের গ্রহণ করবেন না। অন্যদের মতামত স্পষ্ট ছিল না সেভাবে, তারা ভাবছিল ঈশ্বর তাদের গ্রহণ করতেও পারেন, আবার না—ও পারেন—এই মনোভাব অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী। তোমাদের মধ্যে এমনও অনেকে আছে, যাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন, যে, তোমরা আশা রাখো ঈশ্বর এহেন ব্যক্তিগণকে গ্রহণ করবেন—এহেন আচরণ আরোই দ্বিচারিতাময়। তোমরা যারা নিজেদের চিন্তাভাবনায় বিষয়ে সুনিশ্চিত, তোমরা বিশ্বাস করো যে, ঈশ্বর দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছেন, এবং তাঁর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, সেহেতু এই মানুষদের প্রতি সহনশীল হওয়ার কোনো প্রয়োজন তাঁর নেই; অর্থাৎ, তোমরা মনে করো, যে, তিনি তাদেরকে আর গ্রহণ করবেন না। তোমাদের মধ্যে যারা আরো বেশি মধ্যপন্থী, তারা বিশ্বাস করো যে, এই বিষয়টা স্বতন্ত্র পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচিত; যদি এইসব মানুষের হৃদয় ঈশ্বরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য হয়, এবং যদি তারা প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরে বিশ্বাস ও সত্যের অন্বেষণ করে, তাহলে ঈশ্বরের উচিত তাদের পূর্ববর্তী দুর্বলতা ও দোষত্রুটি ভুলে যাওয়া—তাঁর উচিত এই মানুষদের ক্ষমা করা, তাদের দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া, এবং তাঁর গৃহে প্রত্যাবর্তনের ও তাঁর পরিত্রাণ লাভের অনুমতি দেওয়া। তবে, যদি তারা আবার পালিয়ে যায়, তাহলে ঈশ্বর আর তাদেরকে চাইবেন না, এবং তাদের পরিত্যাগ করাটা অবিচার হিসাবে বিবেচিত হবে না। অন্য আর এক দল আছে, যারা আশা করে, যে, ঈশ্বর এমন একজন মানুষকে গ্রহণ করতে পারেন। এই দলের লোকেরা খুব একটা নিশ্চিত নয় যে ঈশ্বর বস্তুতই তা করবেন কি না। যদি তারা মনে করে, যে, ঈশ্বরের উচিত এই ধরনের মানুষকে গ্রহণ করা, কিন্তু তিনি তা না করেন, তাহলে, মনে হয় বুঝি, এই পরিপ্রেক্ষিত ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গির চাইতে কিছুটা আলাদা। যদি তারা বিশ্বাস করে, যে, ঈশ্বরের এই ধরনের মানুষকে গ্রহণ করা উচিত নয়, এবং এদিকে, ঈশ্বর বলেন যে, মানুষের প্রতি তাঁর প্রেম সীমাহীন এবং তিনি এই ধরনের মানুষকে আরেকটা সুযোগ দিতে ইচ্ছুক, তবে কি তা মানুষের অজ্ঞতা অনাবৃত হওয়ারই দৃষ্টান্তস্বরূপ নয়? যা-ই হোক, তোমাদের সকলেরই নিজ-নিজ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তোমাদের ভাবনাচিন্তায় যে জ্ঞান রয়েছে, এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো একভাবে সেটাকেই উপস্থাপিত করে; এগুলো সত্যের এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের বিষয়ে তোমার উপলব্ধির গভীরতারও এক প্রতিফলন। এরকম বলাটা ভুল হবে না, তাই নয় কি? তোমাদের যে এই বিষয়ে মতামত রয়েছে, তা খুব-ই ভালো ব্যাপার। যদিও, তোমাদের মতামতগুলো ঠিক কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তোমরা সকলেই কিছুটা চিন্তিত, তাই নও কি? “তাহলে কোনটা ঠিক? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না, আর আমি জানি না যে, ঈশ্বর ঠিক কী ভাবছেন, এবং তিনি আমাকে কিছু বলেনওনি। আমি কীভাবে জানতে পারবো যে, তিনি কী ভাবছেন? মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব হল প্রেমস্বরূপ। তাঁর অতীতে মনোভাব অনুযায়ী, এমন কেউ তাঁর দ্বারা গ্রহণীয়, কিন্তু ঈশ্বরের বর্তমান মনোভাব সম্পর্কে আমার খুব একটা স্পষ্ট ধারণা নেই; আমি শুধু বলতে পারি, যে, তিনি হয় এই মানুষদের গ্রহণ করবেন, নতুবা করবেন না।” এটা হাস্যকর, তাই না? এই প্রশ্ন তোমাদের সত্যিই বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। যদি তোমাদের এই বিষয়ে কোনো সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে, তাহলে তোমাদের গির্জা যখন সত্যিই এমন একজন মানুষের মুখোমুখি হবে, তখন তোমরা কী করবে? তোমরা যদি সেই পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামাল দিতে না পারো, তবে তুমি ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধও করতে পারো। তা কি এক বিপজ্জনক ব্যাপার নয়?

যে বিষয়টা আমি এখনই উত্থাপন করলাম, তা নিয়ে তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমি জানতে চাইলাম কেন? আমি তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম, যাচাই করতে চেয়েছিলাম ঈশ্বরের সম্পর্কে কতটা জ্ঞান তোমাদের আছে, এবং তাঁর অভিপ্রায় ও মনোভাবের কতটা তোমরা উপলব্ধি করেছ। এর উত্তর কী? তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই হল এর উত্তর। তোমরা কেউ কেউ খুবই রক্ষণশীল, এবং কেউ কেউ আবার কল্পনার উপরে ভিত্তি করে অনুমান করো। “অনুমান করা” কাকে বলে? এর মানে হল যে, ঈশ্বর কীভাবে চিন্তাভাবনা করেন, তা অনুধাবনে অসমর্থ হওয়া, এবং, এর ফলে, এমন এক ভিত্তিহীন অনুমানে পৌঁছানো, যে, ঈশ্বরের কোনো নির্দিষ্ট উপায়ই চিন্তাভাবনা করা উচিত; তুমি আসলে নিজেই জানো না যে তুমি ঠিক না ভুল, তাই তুমি একটা অস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করো। এই সত্যের মুখোমুখি হয়ে, তুমি কী দেখতে পেলে? ঈশ্বরকে অনুসরণকালে, মানুষ কদাচিৎ তাঁর অভিপ্রায়ের প্রতি মনোনিবেশ করে, এবং তারা তাঁর ভাবনার ও মানুষের প্রতি তাঁর মনোভাবের বিষয়েও খুব কমই মনোযোগ দেয়। মানুষ ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা উপলব্ধি করতে পারে না, অতএব, যখন তাঁর অভিপ্রায়সমূহ ও স্বভাবের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ো; তোমরা গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে যাও, এবং তখন হয় তোমরা আন্দাজে ঢিল ছোঁড়ো, নতুবা জুয়া খেলো। এটা কোন প্রকার মানসিকতা? এ এক তথ্যকে প্রতিপন্ন: অধিকাংশ ঈশ্বরবিশ্বাসী মানুষই মনে করে যে, ঈশ্বর হলেন একঝলক শূন্য বাতাস এবং যা এই মুহূর্তে আছে, আবার পরমুহূর্তে নেই। কেন আমি এভাবে বলছি? কারণ, যখনই তোমরা কোনো সমস্যার মোকাবিলা করো, তোমরা ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের বিষয়ে ওয়াকিবহাল হও না। কেন তোমরা তাঁর অভিপ্রায় সম্পর্কে অজ্ঞ? শুধুমাত্র এখনই নয়, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, তোমরা কখনোই এই সমস্যার বিষয়ে ঈশ্বরের মনোভাব বুঝতে পারো না। তুমি এর তল পাও না, এবং ঈশ্বরের মনোভাব জানো না, কিন্তু তুমি কি আদৌ তা নিয়ে খুব বেশি ভেবেছ? তুমি কি তা জানতে চেয়েছ? তুমি কি তা আলোচনা করেছ? না! এ থেকে একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়: তোমার বিশ্বাসের ঈশ্বরের সঙ্গে বাস্তবের ঈশ্বরের কোনো সংযোগ নেই। তোমার ঈশ্বরবিশ্বাসে, তুমি শুধু তোমার নিজের এবং তোমার নেতৃবর্গের অভিপ্রায়সমূহকেই গুরুত্ব দাও; তুমি শুধু ঈশ্বরের বাক্যের উপরিগত ও তাত্ত্বিক অর্থের বিষয়েই চিন্তাভাবনা করো, ঈশ্বরের অভিপ্রায়কে জানার ও অন্বেষণের প্রকৃত প্রচেষ্টা করো না। বিষয়টা কি বস্তুতই এমনটা নয়? এই বিষয়বস্তুর সারসত্য অতীব ভয়াবহ! এত বছর পর, আমি এমন অনেক মানুষ দেখেছি যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। তাদের বিশ্বাস তাদের মনে ঈশ্বরকে কীসে রূপান্তরিত করেছে? কিছু মানুষ ঈশ্বরকে এমনভাবে বিশ্বাস করে, যেন তিনি একঝলক শূন্য বাতাস। এই মানুষদের কাছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব-বিষয়ক প্রশ্নের কোনো উত্তর থাকে না, কারণ, তারা ঈশ্বরের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি অনুভব করতে পারে না বা টের পায় না, তা স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ বা উপলব্ধি করা তো আরোই দূরের কথা। অবচেতনগতভাবে, তারা মনে করে যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। অন্যরা ঈশ্বরকে এমনভাবে বিশ্বাস করে, যেন তিনি এক মনুষ্যমাত্র। তারা মনে করে যে, তারা যা করতে পারে না, ঈশ্বরও তা করতে অক্ষম, এবং তারা যেভাবে চিন্তা করে, ঈশ্বরেরও সেভাবেই চিন্তা করা উচিত। তাদের কাছে ঈশ্বরের সংজ্ঞা হল, “এক অদৃশ্য এবং অস্পর্শনীয় ব্যক্তি”। এমনও একদল মানুষ আছে, যারা মনে করে ঈশ্বর বুঝি এক নাচের পুতুল; তারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বরের কোনো আবেগ নেই। তারা মনে করে যে, ঈশ্বর বুঝি এক মাটির মূর্তি, এবং কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে, ঈশ্বরের কোনো মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, বা ধারণা থাকে না; তারা বিশ্বাস করে যে মানবজাতিই তাঁকে ইচ্ছেমতো চালিত করছে। মানুষ ঠিক তা-ই বিশ্বাস করে, যা তারা বিশ্বাস করতে চায়। যদি তারা তাঁকে মহান করে তোলে, তাহলে তিনি মহান; যদি তারা তাঁকে ক্ষুদ্র করে ফেলে, তবে তিনি ক্ষুদ্র। যখন মানুষ পাপ করে এবং তাদের প্রয়োজন হয় ঈশ্বরের করুণা, সহনশীলতা ও ভালোবাসার, তখন তারা ধরে নেয়, যে, ঈশ্বরের উচিত হল তাদের প্রতি তাঁর করুণা প্রসারিত করা। এই মানুষেরা তাদের নিজেদের মস্তিষ্কে এক “ঈশ্বর”-এর উদ্ভাবন করে, এবং তারপর এই “ঈশ্বর”-কে দিয়ে নিজেদের চাহিদা ও সকল আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করায়। এই ধরনের মানুষেরা কোথায়, কখন, কী করবে তা নির্বিশেষে, এই অলীক কল্পনাকেই তারা ঈশ্বরের প্রতি নিজেদের আচরণ ও বিশ্বাসে আপন করে নেয়। এমনকি কেউ কেউ এমনও আছে, যারা ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্রুদ্ধ করে, অথচ তারপরেও বিশ্বাস করে যে, তিনি তাদের উদ্ধার করবেন, কারণ তারা ধরে নেয় যে, ঈশ্বরের প্রেম অপরিসীম ও তাঁর স্বভাব ধার্মিক, এবং ঈশ্বরকে মানুষ যতই অসন্তুষ্ট করুক না কেন, তিনি সেসব কিছুই মনে রাখবেন না। তারা মনে করে যে, যেহেতু মানুষের ত্রুটি, অনুপ্রবেশ, এবং আনুগত্যহীনতা হল কোনো ব্যক্তির মুহূর্তকালীন স্বভাবের প্রকাশ, তাই ঈশ্বর মানুষকে সুযোগ দেবেন, এবং তাদের প্রতি সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল থাকবেন; তাদের বিশ্বাস যে, ঈশ্বর তবুও তাদের আগের মতোই ভালোবাসবেন। এই কারণেই, তারা পরিত্রাণ অর্জনের উচ্চাশা পোষণ করে। বস্তুত, মানুষ ঈশ্বরকে যেমনভাবেই বিশ্বাস করুক না কেন, যতক্ষণ তারা সত্যের অন্বেষণরত হয় না, ততক্ষণ ঈশ্বর তাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বজায় রাখেন। এর কারণ হল যে, তোমার ঈশ্বরবিশ্বাসের সময়কাল জুড়ে, যদিও তুমি ঈশ্বরের বাক্যের গ্রন্থ গ্রহণ এবং তা সম্পদ হিসাবে গণ্য করেছ, প্রতিদিন তা অধ্যয়ন ও পাঠ করেছ, তবু তুমি বাস্তব ঈশ্বরকে পাশে সরিয়ে রেখেছ। তুমি ঈশ্বরকে নিতান্তই একঝলক শূন্য বাতাস হিসাবে, বা নিছকই এক ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করো—এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে শুধুমাত্র নাচের পুতুল বলে মনে করো। কেন আমি ব্যপারটা এমনভাবে বলছি? এমন বলছি কারণ, আমি যেভাবে বিষয়টাকে দেখছি, তোমরা যে সমস্যা বা পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হও না কেন, তোমাদের অবচেতনে যা আছে, তোমাদের অন্তরে যা কিছু জেগে ওঠে, সেসবের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বা সত্য অন্বেষণেই কখনোই কোনো সম্পর্ক ছিল না। তুমি শুধু জানো তুমি নিজে কী ভাবছ, তোমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি কী, এবং তারপর, তুমি তোমার নিজের ধারণা ও মতামতসমূহ ঈশ্বরের উপরে আরোপ করো। তুমি ভাবতে শুরু করো যে, তা ঈশ্বরেরই দৃষ্টিভঙ্গি, এবং তুমি এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে অটলভাবে সমর্থনীয় গুণমান হিসাবে ধার্য করো। সময়ের সাথে সাথে, এহেন অগ্রগতি তোমায় ঈশ্বরের থেকে দূরে থেকে আরো দূরে নিয়ে চলে।

ঈশ্বরের মনোভাব উপলব্ধি করো এবং ঈশ্বর সম্পর্কিত সমস্ত রকমের ভ্রান্ত ধারণা পরিহার করো

তোমরা বর্তমানে যে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করো তিনি ঠিক কেমন ধরনের ঈশ্বর? তোমরা কি কখনো তা ভেবে দেখেছ? যখন তিনি কোনো দুষ্ট ব্যক্তিকে মন্দ কর্ম করতে দেখেন, তিনি কি তা ঘৃণা করেন? (হ্যাঁ।) যখন তিনি কোনো অজ্ঞ ব্যক্তিকে ভুলভ্রান্তি করতে দেখেন, তখন তিনি কোন মনোভাব অবলম্বন করেন? (দুঃখের।) মানুষকে তাঁর নৈবেদ্য চুরি করতে দেখলে তাঁর মনোভাব কেমন হয়? (তিনি তাদের ঘৃণা করেন।) এই সবটাই খুব স্পষ্ট, তাই নয় কি? যখন ঈশ্বর দেখেন যে, কেউ তাঁর প্রতি তার বিশ্বাস নিয়ে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে, কোনোভাবেই সত্যের অন্বেষণ করছে না, তখনই বা ঈশ্বরের মনোভাব কেমন হয়? তোমরা খুব একটা নিশ্চিত নও, তাই নয় কি? মনোভাব হিসাবে, “বিভ্রান্তি” পাপ নয়, বা তা ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করে না, এবং মানুষ মনে করে যে, তা খুব বড়ো ধরনের কোনো ভুল নয়। তাহলে আমাকে বলো—এক্ষেত্রে ঈশ্বরের মনোভাব কী? (তিনি তাদের স্বীকার করত অনিচ্ছুক।) “স্বীকার করতে অনিচ্ছুক”—এটা কী ধরনের মনোভাব? এর অর্থ হল, ঈশ্বর তাদের হীন দৃষ্টিতে দেখেন এবং নিদারুণ অবজ্ঞা করেন! এহেন ব্যক্তিগণকে উপেক্ষা করার মাধ্যমেই ঈশ্বর তাদের মোকাবিলা করেন। ঈশ্বরের পন্থা হল তাদের পাশে সরিয়ে রাখা, জড়িত না হওয়া তাদের উপর কোনো কাজ, যেমন তাদের আলোকপ্রদান, প্রদীপ্তকরণ, শাস্তিদান বা অনুশাসনের কাজের সাথে। ঈশ্বরের কার্যে এহেন ব্যক্তিগণ গণ্যই হয় না। যারা ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করে এবং তাঁর প্রশাসনিক ফরমান লঙ্ঘন করে, তাদের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কী? চরম ঘৃণার! যারা তাঁর স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করার বিষয়ে অনুতপ্ত নয়, তাদের প্রতি ঈশ্বর প্রচণ্ডভাবে ক্রুদ্ধ! “ক্রোধ” হল এক অনুভূতিমাত্রা, একটা মানসিক অবস্থার অধিক আর কিছুই নয়; তা কোনো সুস্পষ্ট মনোভাবের দ্যোতক নয়। কিন্তু, এই অনুভূতি—এই মানসিক অবস্থা—এই প্রকার মানুষদেরর প্রতি পরিণাম বহন করবে: তা ঈশ্বরকে চরম ঘৃণায় পূর্ণ করবে! এই চরম ঘৃণার ফল কী? ঈশ্বর এই ব্যক্তিগণকে অপসৃত করবেন, এবং আপাতত তাদের প্রতি প্রতিক্রিয়াহীন থাকবেন। তারপর, “শরত অতিবাহিত হলে”, তিনি তাদের বিষয়ে সমাধান করার জন্য অপেক্ষা করবেন। এটি কীসের ইঙ্গিতবাহী? তখনও কি তাদের কোনো পরিণতি থাকবে? ঈশ্বর কখনোই এহেন ব্যক্তিগণকে কোনো পরিণাম প্রদান করতে চাননি! সুতরাং, এমনটা কি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয়, যে ঈশ্বর এখন এই ধরনের মানুষদের প্রতি প্রতিক্রিয়া-বিরহিত রয়েছেন? (হ্যাঁ, খুবই স্বাভাবিক।) এই ধরনের মানুষের কী করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত? তাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত নিজেদের আচরণের, এবং যেসব মন্দ কাজ তারা করেছে সেগুলোর নেতিবাচক ফলাফল ভোগের উদ্দেশ্যে। এই ধরনের মানুষের প্রতি এ-ই হল ঈশ্বরের প্রতিক্রিয়া। তাই, এখন আমি এইরকম মানুষদের স্পষ্টভাবে বলছি: নিজেদের বিভ্রম আর বেশিদিন আঁকড়ে বসে থেকো না, পুণরায় অলীক কল্পনায় লিপ্ত হয়ো না। ঈশ্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের প্রতি সহিষ্ণু রইবেন না; তিনি তাদের অনুপ্রবেশ বা অবাধ্যতা চিরকাল সহ্য করবেন না। কেউ কেউ বলবে, “আমিও এরকম কিছু মানুষ দেখেছি, আর তারা যখন প্রার্থনা করে, তখন তারা বিশেষভাবে ঈশ্বরের স্পর্শ অনুভব করে, আর তারপর তারা করুণভাবে বিলাপ করে। সাধারণত, তারা আবার খুব সুখীও; অন্তত মনে হয় বুঝি, তাদের সঙ্গে ঈশ্বরের উপস্থিতি ও পথনির্দেশনা রয়েছে।” এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা বোলো না! তিক্ত অশ্রুপাতের অর্থ সর্বদাই এই নয়, যে, কেউ ঈশ্বরের স্পর্শ অনুভব করছে, বা ঈশ্বরের উপস্থিতি উপভোগ করছে, ঈশ্বরের পথনির্দেশনা প্রাপ্তি তো দূরস্থান। যদি মানুষ ঈশ্বরকে ক্রুদ্ধ করে, তবুও কি তিনি তাদের পথনির্দেশনা করবেন? সংক্ষেপে, যখন ঈশ্বর কাউকে অপসৃত এবং পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন সেই ব্যক্তির পরিণাম ইতিমধ্যেই বিনষ্ট হয়েছে। প্রার্থনার সময় তাদের অনুভূতি যতই অনুকূল হোক না কেন, বা তাদের হৃদয়েই যতই ঈশ্বরবিশ্বাস থাকুক না কেন, তা এখন অবান্তর। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, ঈশ্বরের এমন বিশ্বাসের কোন প্রয়োজন নেই; তিনি ইতিমধ্যেই এই মানুষদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কেমন আচরণ করা হবে, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, এই ব্যক্তিগণ যে মুহূর্তে ঈশ্বরকে রাগান্বিত করে, সেই মুহূর্তেই তাদের পরিণাম নির্দিষ্ট হয়ে যায়। ঈশ্বর যদি নির্ধারিত করে থাকেন যে এহেন ব্যক্তিগণকে উদ্ধার করবেন না, তাহলে তাদের শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে পশ্চাতে পরিত্যাগ করা হবে। এ-ই হল ঈশ্বরের মনোভাব।

যদিও ঈশ্বরের সারসত্যের একটা উপাদান হল প্রেম, এবং তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতিই করুণাময়, তবুও মানুষ তা উপেক্ষা করেছে এবং বিস্মৃত হয়েছে যে, তাঁর সারসত্য হল মর্যাদারও সারসত্য। তাঁর ভালোবাসা আছে মানে এটা বোঝায় না যে মানুষ তাঁকে অবাধে ক্ষুব্ধ করবে, অথচ তাঁর মধ্যে তাতে কোনো অনুভূতি বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না, বা তাঁর করুণা আছে মানে এই নয় যে মানুষের প্রতি তিনি কেমন আচরণ করেন সে বিষয়ে তাঁর কোনো নীতি নেই। ঈশ্বর জীবন্ত; প্রকৃতপক্ষেই তাঁর অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি কোনো কল্পিত পুতুল বা অন্য কোনো বস্তুও নন। যেহেতু তাঁর অস্তিত্ব রয়েছে, সেহেতু আমাদের উচিত তাঁর হৃদয়নিসৃত কণ্ঠ নিয়ত সযত্নে শোনা, তাঁর মনোভাবের প্রতি একনিষ্ঠ মনোযোগ দেওয়া, এবং তাঁর অনুভূতি উপলব্ধি করা। আমাদের উচিত নয় তাঁকে সংজ্ঞায়িত করার উদ্দেশ্যে মনুষ্যোচিত কল্পনা ব্যবহার করা, বা তাঁর উপর মানুষের এমন ভাবনা বা আকাঙ্ক্ষা আরোপ করা যে, তিনি মানুষের কল্পনা অনুযায়ী মনুষ্যোচিত পদ্ধতিতে মানুষের সাথে ব্যবহার করেন। যদি তুমি তা করো, তবে তুমি ঈশ্বরকে ক্রুদ্ধ করে তুলছ, তাঁর ক্রোধের উদ্রেক ঘটাচ্ছ, এবং তাঁর মর্যাদাকে প্রশ্ন করছ! তাই, একবার যখন তোমরা বিষয়টার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছ, আমি তোমাদের প্রত্যেককে অনুরোধ করছি যাতে তোমরা নিজেদের ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে সতর্ক এবং বিচক্ষণ হও। নিজের বক্তব্যের ক্ষেত্রেও সতর্ক এবং বিচক্ষণ হও—ঈশ্বরের প্রতি আচরণে তুমি যত সতর্ক এবং বিচক্ষণ হবে, ততই মঙ্গল! যখন তুমি ঈশ্বরের মনোভাব উপলব্ধি করতে পারছ না, তখন অসাবধান হয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকো, নিজের কাজে অসতর্ক হয়ো না, এবং না ভেবেচিন্তে কোনোকিছুকে চিহ্নিত কোরো না। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, কোনোরকম অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ো না। তার পরিবর্তে, তোমার উচিত অপেক্ষা করা এবং অন্বেষণ করা; এই ক্রিয়াকলাপও ঈশ্বরে ভীত হওয়া এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগের এক প্রকাশ। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, যদি তুমি তা অর্জন করতে পারো, যদি এই মনোভাবের অধিকারী হও, তাহলে ঈশ্বর তোমাকে তোমার মূর্খতা, অজ্ঞতা, এবং বিভিন্ন বিষয়ের নেপথ্যের কারণগুলো বুঝতে পারার অক্ষমতার জন্য দোষারোপ করবেন না। বরং, তোমার ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করতে ভয় পাওয়ার মনোভাব, তাঁর অভিপ্রায়কে শ্রদ্ধা করা, এবং তাঁকে মান্য করার ইচ্ছার কারণে, ঈশ্বর তোমায় স্মরণে রাখবেন, পরিচালিত এবং আলোকিত করবেন, বা তোমার অপরিণত আচরণ ও অজ্ঞতা সহ্য করবেন। বিপরীতভাবে, যদি তোমার আচরণ তাঁর প্রতি অসম্মানজনক হয়—তাঁকে যদি তুমি যদৃচ্ছ বিচার করো বা অযৌক্তিকভাবে তাঁর ধারণাগুলো অনুমান ও সংজ্ঞায়িত করো—তবে ঈশ্বর তোমায় তিরস্কার করবেন, অনুশাসন করবেন, এমনকি দণ্ডও দেবেন; অথবা, তিনি তোমার বিষয় মন্তব্যও প্রদান করতে পারেন। হয়তো, এই মন্তব্যের সঙ্গেই তোমার পরিণাম জড়িত থাকবে। সেই কারণেই, আমি আরো একবার জোর দিতে চাই: তোমাদের প্রত্যেকের ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা সমস্তকিছুর প্রতি সতর্ক এবং বিচক্ষণ হওয়া উচিত। অসাবধানে কথা বোলো না, এবং তোমাদের কাজকর্মে দায়সারা হয়ো না। কিছু বলার আগেই তোমার উচিত থামা এবং ভেবে দেখা: আমার এই কাজ কি ঈশ্বরকে রাগত করতে পারে? এটা করে আমি কি ঈশ্বরকে সম্মান করছি? এমনকি সাধারণ বিষয়েও, তোমাদের উচিত এই প্রশ্নগুলো নিরসনের চেষ্টা করা উচিত, এবং আরো বেশি সময় নিয়ে সেগুলোর বিষয়ে বিবেচনা করা। যদি তুমি সত্যিই এই নীতি অনুযায়ী সমস্ত ক্ষেত্রে, সমস্ত বিষয়ে, সর্বদা অনুশীলন করতে পারো, এবং বিশেষত যখন কিছু বুঝতে পারবে না তখনও যদি এই মনোভাব গ্রহণ করো, তবে ঈশ্বর সবসময় তোমায় পথ দেখাবেন এবং তোমার অনুসরণীয় একটা পথের সংস্থান করবেন। মানুষ নিজেকে কীভাবে প্রদর্শন করে তা নির্বিশেষে, ঈশ্বর তাদের যথেষ্ট স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবেই দেখেন, এবং তোমার এই সকল প্রদর্শিত বিষয়ের তিনি নির্ভুল ও সঠিক মূল্যায়ন করবেন। তুমি চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর, ঈশ্বর তোমার পরিণাম নির্ধারণের উদ্দেশ্যে তোমার সমস্ত আচরণগুলোর নীটফল ধার্য করবেন। এই পরিণাম সকলের কাছে সংশয়ের অবকাশমাত্র না রেখে দৃঢ় প্রত্যয় উৎপাদন করবে। আমি তোমাদের এখানে যা বলতে চাই, তা হল: তোমাদের প্রত্যেকটা কীর্তি, প্রত্যেকটা কর্ম, প্রত্যেকটা চিন্তাই তোমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে।

মানুষের পরিণাম কে নির্ধারণ করে?

আর একটা বিষয় আছে যা আলোচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, এবং তা হল ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের মনোভাব। এই মনোভাব ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ! এটাই স্থির করে যে, তোমরা শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের দিকে হেঁটে যাবে, নাকি যাবে সেই সুন্দর গন্তব্যের অভিমূখে, যা ঈশ্বর তোমাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন। রাজ্যের যুগে, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই কুড়ি বছরেরও বেশি সময় কাজ করেছেন, এবং হয়তো, এই দুই দশকের মধ্যে, তোমরা কেমনভাবে তোমাদের ভূমিকা পালন করেছ, সে বিষয়ে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তোমরা কিছুটা অনিশ্চিত। তবে, ঈশ্বর তাঁর হৃদয়ে তোমাদের প্রত্যেকের একটা বাস্তব ও সত্যনিষ্ঠ নথি প্রস্তুত করেছেন। যখন থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁকে অনুসরণ করতে ও তাঁর ধর্মোপদেশ শুনতে শুরু করেছে, ধীরে ধীরে সত্যকে আরো বেশি উপলব্ধি করতে পেরেছে, এবং যতক্ষণ না প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের দায়িত্বপালন আরম্ভ করেছে, ততক্ষণ ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যক্তির সমস্ত রকমের দায়িত্বপালন সম্পর্কিত নথি বজায় রাখবেন। নিজেদের দায়িত্ব পালন করার সময়, এবং সকলপ্রকার পরিস্থিতি ও পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়াকালীন, মানুষের মনোভাব কেমন থাকে? কীভাবে তারা দায়িত্বপালন করে? অন্তরে ঈশ্বরের প্রতি কেমন অনুভূতি অনুভব করে তারা? … ঈশ্বরের কাছে এই সবকিছুর হিসাব আছে; তাঁর কাছে সমস্তকিছুরই নথি রয়েছে। সম্ভবত, তোমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই বিষয়গুলো বিভ্রান্তিকর। কিন্তু ঈশ্বরের অবস্থান থেকে, এগুলো সকলই স্ফটিক-স্বচ্ছ, এবং তাতে পঙ্কিলতার চিহ্নমাত্র নেই। এ হল এমন এক বিষয়, যা প্রত্যেক মানুষের পরিণামের সাথে জড়িত, এবং তা প্রত্যেকের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার সাথেও যুক্ত, এবং উপরন্তু, এইখানেই ঈশ্বর তাঁর সকল শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টা ব্যয় করেন; তাই ঈশ্বর কখনোই তা বিন্দুমাত্রও অবহেলা করবেন না, বা তিনি কোন অযত্নও সহ্য করবেন না। ঈশ্বর মানবজাতির এই বিষয়টার হিসাব রেখে চলেছেন, মানুষের তাঁকে অনুসরণ করা সকল সময়কালের হিসাব নথিভুক্ত করছেন, আদি থেকে অন্ত অবধিই। এই সময়কালে তাঁর প্রতি তোমার আচরণই তোমার নিয়তি নির্ধারণ করেছে। তাই নয় কি? এখন, তুমি কি বিশ্বাস করো, যে, ঈশ্বর ধার্মিক? যে, তাঁর কাজ যথোপযুক্ত? তোমাদের মাথায় কি ঈশ্বরকে নিয়ে এখনও অন্য কাল্পনিক কিছু রয়েছে? (না।) তাহলে, মানুষের পরিণাম কি ঈশ্বরের নির্ধারণীয় বিষয়, না মানুষের, তোমরা কী বলবে? (তা ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারণীয়।) কে এইসব নির্ধারণ করেন? (ঈশ্বর।) তোমরা নিশ্চিত নও, তাই নয় কি? হংকং এর ভাই-বোনেরা, বলো—কে এসকল নির্ধারণ করে? (মানুষ নিজেই নির্ধারণ করে।) মানুষ নিজেই নির্ধারণ করে? তার মানে কি এই নয় যে, মানুষের পরিণামের সাথে ঈশ্বরের কোনো সম্পর্ক নেই? দক্ষিণ কোরিয়ার ভাই-বোনেরা, বলো। (মানুষের সমস্ত কাজ ও কর্মের উপর ভিত্তি করে, এবং তারা যে পথে রয়েছে তার সাথে সঙ্গতি রেখে ঈশ্বর মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করেন।) এটা খুবই নৈর্ব্যক্তিক প্রতিক্রিয়া। এখানে একটা বিষয় রয়েছে যে সম্পর্কে আমার অবশ্যই তোমাদের জানানো উচিত: ঈশ্বরের পরিত্রাণের কাজের সময় চলাকালীন, তিনি মানুষের জন্য একটা গুণমান নির্ধারণ করেছেন। সেই গুণমান হল, মানুষকে ঈশ্বরের বাক্য মেনে এবং ঈশ্বরের পথে চলতে হবে। এই মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করেই মানুষের পরিণাম পরিমাপ করা হয়। তুমি যদি ঈশ্বরের এই গুণমান অনুযায়ী অনুশীলন করো, তাহলে তুমি একটা ভালো পরিণাম প্রাপ্ত করতে পারবে; যদি তা না করো, তাহলে ভালো পরিণাম লাভ করতে পারবে না। তাহলে, তুমি কী বলবে, কে তোমার পরিণাম নির্ধারণ করে? ঈশ্বর একা তা নির্ধারণ করেন না, বরং মানুষ এবং ঈশ্বর একত্রে তা করে। ঠিক বলেছি? (হ্যাঁ।) এর কারণ কী? এর কারণ হল যে, ঈশ্বরই সক্রিয়ভাবে চান মানুষের পরিত্রাণকার্যে যুক্ত হতে, এবং তার উদ্দেশ্যে এক সুন্দর গন্তব্য প্রস্তুত করতে; মানুষ হল ঈশ্বরের কাজের লক্ষ্যবস্তু, এবং এই পরিণাম, এই গন্তব্যই হল তা, যা ঈশ্বর তাদের জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর যদি কর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যবস্তুই যদি না থাকত, তাহলে তাঁর এই কাজ করার প্রয়োজন হত না; এবং তিনি যদি এই কাজ না করতেন, তবে মানুষ পরিত্রাণলাভের সুযোগ পেতো না। মানুষই উদ্ধারলাভ করবে, এবং যদিও উদ্ধারলাভ করা হল এই প্রক্রিয়ার এক অপ্রধান অংশ, তবু, এই অংশে যারা ভূমিকা পালন করছে, তাদের মনোভাবই নির্ধারণ করে যে, মানবজাতির উদ্ধারকার্যে তিনি সফল হবেন কিনা। তোমার ঈশ্বরপ্রদত্ত পথনির্দেশনা না থাকলে তুমি তাঁর গুণমান সম্পর্কে অবহিত হবে না, বা তোমার কোনো লক্ষ্যও রইবে না। এই গুণমান, এই লক্ষ্য, থাকা সত্ত্বেও যদি তুমি সহযোগিতা না করো, তা পালন না করো, বা মূল্য পরিশোধ না করো, তবে তুমি এই পরিণাম অর্জন করতে পারবে না। এই কারণেই আমি বলি যে, কারো পরিণাম ঈশ্বর এবং সেই ব্যক্তি, উভয়ের থেকেই অবিচ্ছেদ্য। তাহলে, এখন তোমরা জানো যে, মানুষের পরিণাম কে নির্ধারণ করেন।

মানুষ অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করতে চায়

ঈশ্বরকে জানা নিয়ে আলোচনার সময়ে, তোমরা কি কিছু লক্ষ্য করেছ? তোমরা কি লক্ষ্য করেছ যে, সম্প্রতি তাঁর মনোভাব কিছুটা রূপান্তরিত হয়েছে? মানুষের প্রতি তাঁর মনোভাব কি অপরিবর্তনীয়? তিনি কি সবসময় এইভাবে সহ্যই করে যাবেন, অনির্দিষ্টকাল ধরে মানুষের প্রতি তাঁর সমস্ত প্রেম ও করুণা প্রসারিত করে যাবেন? এই বিষয়টা ঈশ্বরের সারসত্যের সাথেও জড়িত। আমরা আগে তথাকথিত অমিতব্যয়ী পুত্রের যে প্রশ্নের বিষয়ে উল্লেখ করেছি, সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। এই প্রশ্নটা তোমাদের যখন জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমাদের উত্তরগুলো খুব একটা স্পষ্ট ছিল না; অন্যভাবে বললে, ঈশ্বরের অভিপ্রায় সম্পর্কে তোমাদের খুব বলিষ্ঠ কোনো উপলব্ধি নেই। ঈশ্বর যে মানুষকে ভালোবাসেন, তা জানতে পারার পর তারা ঈশ্বরকে ভালোবাসার প্রতীকরূপে সংজ্ঞায়িত করে: তারা বিশ্বাস করে যে, মানুষ যা-ই করুক, ঈশ্বরের সাথে যেমন আচরণই করুক, তারা যত অবাধ্যই হোক, এর কোনোটাতেই কিছু যায় আসে না, কারণ ঈশ্বর প্রেমময়, এবং তাঁর প্রেম সীমাহীন ও অপরিমেয়; ঈশ্বর প্রেমময়, সেহেতু তিনি মানুষের প্রতি সহনশীল হবেন; এবং ঈশ্বর প্রেমময় বলেই মানুষের প্রতি, তাদের অপরিণত আচরণের প্রতি, অজ্ঞতার প্রতি, এবং তাদের অবাধ্যতার প্রতি তিনি করুণাময় হতে পারবেন। ব্যাপারটা কি সত্যিই তাই? কিছু মানুষ, একবার বা কয়েকবার ঈশ্বরের ধৈর্যের অভিজ্ঞতা লাভ করেই, এই অভিজ্ঞতাগুলোকে তাদের নিজস্ব ঈশ্বর-বিষয়ক ধারণার মূলধন হিসাবে ব্যবহার করে, বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর তাদের প্রতি চিরকালই সহনশীল ও করুণাময় থাকবেন, এবং তারপর, তাদের জীবদ্দশা জুড়ে, তারা ঈশ্বরের এই ধৈর্যকেই তাদের প্রতি ঈশ্বরের আচরণের মানদণ্ড গণ্য করে। আবার এমন কেউ কেউও আছে, যারা একবার ঈশ্বরের সহনশীলতার অভিজ্ঞতা লাভের পরে চিরতরে ঈশ্বরকে সহনশীল একজন হিসাবে বিবেচনা করবে—এবং তাদের চিন্তায়, এই সহনশীলতা অসীম, নিঃশর্ত, এমনকি সম্পূর্ণ নীতিহীন। এই ধরণের বিশ্বাস কি সঠিক? যতবার ঈশ্বরের স্বভাব এবং সারসত্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়, তোমাদের দেখে বিভ্রান্ত মনে হয়। তোমাদের এরকম দেখে আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়। তোমরা ঈশ্বরের সারমর্ম সম্পর্কে অনেক সত্য শুনেছ; তোমরা তাঁর স্বভাব সম্পর্কেও অনেক আলোচনা শুনেছ। যদিও, তোমাদের চিন্তায় এইসব বিষয় এবং বিভিন্ন প্রেক্ষিতের সত্য নিছকই তত্ত্ব ও লিখিত শব্দের উপরে নির্ভরশীল স্মৃতিমাত্র; তোমাদের দৈনন্দিন জীবনে, তোমরা কেউই ঈশ্বরের প্রকৃত স্বভাব দেখতে বা সেই স্বভাবের অভিজ্ঞতা লাভ করতে কখনোই সক্ষম নও। সেহেতুই, তোমরা সবাই নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে বিভ্রান্ত; তোমরা সবাই এতই অন্ধভাবে বিশ্বাস করছো, যে, ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আচরণ অসম্মানজনক এবং তোমরা তাঁকে উপেক্ষা পর্যন্ত করো। ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের এহেন মনোভাব তোমাদের কোন দিকে পরিচালিত করে? তা তোমাদের ঈশ্বরের বিষয়ে সর্বদা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার দিকে পরিচালিত করে। সামান্য জ্ঞান অর্জন করেই তুমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট বোধ করো, যেন ঈশ্বরকে তাঁর সামগ্রিকতা সমেত অর্জন করে ফেলেছ। পরবর্তীকালে, তুমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাও যে, ঈশ্বর এমনই, এবং তাঁকে স্বাধীনভাবে বিচরণমাত্র করতে দাও না। উপরন্তু, ঈশ্বর যখনই নতুন কিছু করেন, তুমি নিতান্তই তা মানতে অস্বীকার করো, যে, তিনিই ঈশ্বর। একদিন, যখন ঈশ্বর বলবেন, “আমি আর মানবজাতিকে ভালোবাসি না; আমি মানুষের প্রতি আর কোনো করুণার হাত বাড়িয়ে দেব না; তাদের জন্য আমার আর কোনো সহনশীলতা বা ধৈর্য অবশিষ্ট নেই; আমি তাদের প্রতি চূড়ান্ত ঘৃণা ও বিদ্বেষে কানায় কানায় পূর্ণ,” এহেন বিবৃতি মানুষের অন্তরে গভীর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও বলবে, “আপনি আর আমার ঈশ্বর নন; আপনি আর সেই ঈশ্বর নন যাকে আমি অনুসরণ করতে চাই। এটাই যদি আপনার বক্তব্য হয়, তাহলে আপনি আর আমার ঈশ্বর থাকার উপযুক্ত নন, এবং আমার আর আপনাকে অনুসরণ করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি আপনি আমাকে আর করুণা, ভালোবাসা, এবং সহনশীলতা প্রদান না করেন, তাহলে আমি আপনাকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দেব। আপনি যদি অনির্দিষ্টকাল আমার প্রতি সহনশীল থাকেন, সর্বদা আমার প্রতি ধৈর্যশীল থাকেন, এবং আমাকে প্রত্যক্ষ করার অনুমতি দেন যে আপনিই প্রেম, আপনিই ধৈর্যশীলতা, এবং আপনিই সহনশীলতা, একমাত্র তাহলেই আমি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি, এবং শুধুমাত্র তখনই আপনাকে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ করার আত্মবিশ্বাস আমার থাকবে। যেহেতু আপনার ধৈর্য ও করুণা আমার রয়েছে, তাই আমার আনুগত্যহীনতা ও সীমালঙ্ঘন অনির্দিষ্টকাল ধরে ক্ষমা করা হতে থাকবে, এবং আমি যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে পাপ করতে পারি, যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে তা স্বীকার করে ক্ষমাও পেতে পারি, আর যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে আপনাকে ক্রোধান্বিত করতেই পারি। আমার বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকা উচিত নয় বা কোন সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়।” যদিও তোমাদের মধ্যে একজনও হয়তো এই ধরনের বিষয় নিয়েএত বিষয়গতভাবে বা সচেতনভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারবে না, কিন্তু যখনই তোমরা ঈশ্বরকে নিজেদের পাপের ক্ষমা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্র বা সুন্দর গন্তব্য লাভের জন্য ব্যবহারযোগ্য বস্তু মনে করো, তোমরা সূক্ষ্মভাবে জীবন্ত ঈশ্বরকে স্থাপিত করো নিজের বিপরীতে, নিজের শত্রুরূপে। আমি তো তা-ই দেখতে পাই। তোমরা এমন বলতেই থাকতে পারো, যে, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি,” “আমি সত্যের অন্বেষণ করি,” “আমি আমার স্বভাব পরিবর্তন করতে চাই,” “আমি অন্ধকারের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে চাই,” “আমি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চাই,” “আমি ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করতে চাই,” “আমি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হতে চাই এবং নিজের কর্তব্য ভালো করে পালন করতে চাই,” ইত্যাদি। যদিও, তোমার কথা শুনতে যতই মধুর হোক, যত তত্ত্বই তুমি জেনে থাকো, এবং সেই তত্ত্ব যতই চিত্তাকর্ষক বা সম্ভ্রান্ত হোক, আসল ঘটনা হল যে, এখন তোমাদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা ইতিমধ্যেi শিখে ফেলেছ, যে, কীভাবে ঈশ্বরের সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য নিজেদের আয়ত্ত সকল নিয়ম, মতবাদ ও তত্ত্ব ব্যবহার করতে হয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই, তোমরা ঈশ্বরকে নিজেদের বিরুদ্ধপক্ষে স্থান দিয়েছ। যদিও তুমি হয়ত আক্ষরিক তত্ত্ব ও মতবাদ আয়ত্ত করতে পেরেছ, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্যের বাস্তবতায় প্রবেশ করতে পারোনি, তাই তোমাদের পক্ষে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া, তাঁকে জানা, এবং তাঁকে উপলব্ধি করা খুবই কঠিন। এ অত্যন্ত দুঃখজনক!

আমি একটা ভিডিওতে এই দৃশ্য দেখেছিলাম: কিছু বোনেদের কাছে ‘বাক্য দেহে আবির্ভূত হল’ বইটার একটা কপি ছিল, এবং তারা সেটাকে অনেক উঁচুতে ধরে রেখেছিল; তারা তাদের মাঝখানে, তাদের মাথার অনেক উপরে, বইটাকে তুলে ধরছিল। যদিও এটা শুধুই একটা ছবি, কিন্তু তা আমার অভ্যন্তরে যা জাগিয়ে তুলেছিল তা শুধু একটা ছবি ছিল না; বরং তা আমাকে ভাবিয়েছিল যে প্রত্যেক, মানুষ তাদের হৃদয়ে যা অনেক উঁচুতে স্থান দিয়েছে তা ঈশ্বরের বাক্য নয়, বরং ঈশ্বরের বাক্যের বই। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনা একেবারেই ঈশ্বরকে উঁচুতে স্থান দেওয়ার সমান নয়, কারণ ঈশ্বর সম্পর্কে তোমাদের বোধের অভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে, একটা খুব স্পষ্ট প্রশ্ন বা একটা সামান্য বিষয়েও তোমরা নিজেদের কল্পিত ধারণা নিয়ে আসছো। যখন আমি তোমাদের কিছু জিজ্ঞাসা করি, এবং তোমাদের সাথে গুরুতর আলোচনা করি, তোমরা অনুমান ও নিজেদের কল্পনা থেকে উত্তর দাও; তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ সংশয়পূর্ণ স্বরে কথা বলো, এবং আমার প্রশ্নের উত্তরে প্রতিপ্রশ্ন করো। এটাই আমাকে আরো স্পষ্ট করে বলে দেয়, যে, তোমরা যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, তা প্রকৃত ঈশ্বর নয়। এত বছর ধরে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার পরেও, তোমরা সেইসকল বাক্য, ঈশ্বরের কার্য, এবং অন্যান্য মতবাদকে আরো একবার তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য ব্যবহার করছো। এছাড়াও, তোমরা কখনো ঈশ্বরকে বোঝার চেষ্টাও করো না; তোমরা কখনোই উপলব্ধি করার চেষ্টা করো না তাঁর অভিপ্রায়, মানুষের প্রতি তাঁর মনোভাব, বা বউঝতে চেষ্টা করো না যে, ঈশ্বর কীভাবে চিন্তা করেন, কেন তিনি দুঃখিত, কেন তিনি ক্রোধান্বিত, কেন তিনি মানুষকে প্রত্যাখ্যান করেন, এবং এমন আরও অনেক প্রশ্ন। এছাড়াও, এমনকি আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করে, যে, ঈশ্বর সবসময়ই নীরব থেকেছেন কারণ তিনি মানুষের সম্পর্কে কোনো মনোভাব বা ধারণা পোষণ না করে নিছকই তাদের বিভিন্ন কর্ম লক্ষ্য কর চলেছেন। আবার অন্য একদল মানুষ বিশ্বাস করে, যে, ঈশ্বর একটাও শব্দ উচ্চারণ করেন না কারণ তিনি নীরবে মেনে নিয়েছেন, তিনি নীরব থাকেন কারণ, হয় তিনি অপেক্ষা করছেন নয় তাঁর কোনো মনোভাব নেই; তারা ভাবে যে, যেহেতু ঈশ্বরের মনোভাব ইতিমধ্যেই গ্রন্থে সম্পূর্ণ বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, এবং তা সামগ্রিকভাবে মানবজাতির কাছে প্রকাশ করা হয়েছে, তাই সে কথা আর বারবার করে মানুষকে বলার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর নীরব হলেও তাঁর একটা মনোভাব আর একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে, সেইসাথে একটা নির্ধারিত গুণমান রয়েছে, যে মানে মানুষের জীবন সেই গুণমান অনুসারে উত্তীর্ণ হোক বলে তিনি দাবি করেন। যদিও মানুষ তাঁকে উপলব্ধির বা অন্বেষণের প্রচেষ্টা করে না, তবে ঈশ্বরের মনোভাব খুবই স্পষ্ট। এমন একজনের কথা ধরা যাক, যে এক সময়ে আবেগঘন ভাবে ঈশ্বরের অনুসরণ করেছিল, কিন্তু তারপর, কোনো এক সময়ে, তাঁকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। যদি এই ব্যক্তি এখন ফিরে আসতে চায়, সেক্ষেত্রে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, বা তাঁর মনোভাব কী হবে, তা যে তোমাদের জানা নেই, এ এক আশ্চর্যের বিষয়। এটা কি অত্যন্ত দুঃখজনক নয়? বস্তুত, বিষয়টা নিতান্তই অগভীর। যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের হৃদয়কে উপলব্ধি করতে, তাহলে এহেন ব্যক্তিগণের প্রতি তাঁর মনোভাবও তোমাদের জানা থাকতো, আর, তাহলে তোমরা কোনো অস্পষ্ট উত্তর দিতে না। যেহেতু তোমরা জানো না, সেহেতু আমায় তাজানাতে দাও।

যারা তাঁর কাজ চলাকালীন পালিয়ে যায়, তাদের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব

এইমন মানুষ সর্বত্র রয়েছে: ঈশ্বরের পথ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরে, বিভিন্ন কারণে, তাদের হৃদয় যা চায় তা-ই করার জন্য, তারা কোনোরকম বিদায় না জনিয়েই নীরবে বিদায় নেয়। আপাতত, আমরা এদের চলে যাওয়ার কারণের বিষয়ে যাব না; আমরা প্রথমে দেখবো এইরকম মানুষের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব কেমন। তা খুবই স্পষ্ট। যে মুহূর্তে তারা দূরে চলে যায়, ঈশ্বরের চোখে তাদের বিশ্বাসের সময়কালের পরিধি সেখানেই শেষ হয়ে যায়। সেই ব্যক্তি যে তা শেষ করে, এমনটা নয়, তা ঈশ্বরই করেন। সেই ব্যক্তির ঈশ্বরকে ত্যাগ করার অর্থ হল যে, তারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা ঈশ্বরকে আর চায় না, এবং তারা আর ঈশ্বরের পরিত্রাণ স্বীকার করে না। যেহেতু, এহেন ব্যক্তিগণ ঈশ্বরকে আর চায় না, তারপরেও কি আর তিনি তাদের চাইতে পারেন? তাছাড়াও, যখন এইরকম মানুষেরা এই ধরনের মনোভাব পোষণ করে, এই দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, এবং ঈশ্বরকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের প্রকৃতিকে ক্ষুব্ধ করেছে। আর তা হয়েছে এসব নির্বিশেষে যে, তারা হয়তো ক্রুদ্ধ হয়ে ঈশ্বরকে অভিসম্পাত করেনি, হয়তো তারা কোনো নীচ বা মাত্রাতিরিক্ত আচরণে লিপ্ত হয়নি, তাদের এই চিন্তা নির্বিশেষে যে, “যদি এমন দিন আসে যখন আমার বহির্জগতের আনন্দ উপভোগ সম্পূর্ণ হয়েছে, অথবা কোনোকিছুর জন্য আমার তখনও ঈশ্বরকে প্রয়োজন, তখন আমি ফিরে আসবো। অথবা যদি ঈশ্বর আমায় আহ্বান করেন, তাহলে আমি ফিরে আসবো।”, অথবা তারা বলে, “বাইরের দুনিয়ায় আমি যখন আঘাত পাবো, বা যখন দেখতে পাবো যে, বাহ্যিক জগৎ অত্যন্ত অন্ধকার ও অত্যন্ত খারাপ এবং আমি আর স্রোতে গা ভাসাতে চাই না, তখন আমি ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসবো।” এমনকি যদিও তারা নিজেদের মনে হিসাব করে রেখেছে যে, ঠিক কখন তারা ফিরে আসবে, এবং যদিও তারা তাদের ফিরে আসার জন্য দরজা খুলে রাখার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না যে, তারা যা-ই বিশ্বাস করুক বা যেভাবেই পরিকল্পনা করুক, সেগুলো শুধুই অবান্তর চিন্তা। তাদের সবচেয়ে বড় ভুল হল, তাদের ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছার ফলে ঈশ্বর কেমন অনুভব করেন, সেই বিষয়ে তাদের অস্পষ্টতা। ঠিক যে মুহূর্ত থেকে তারা ঈশ্বরকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিনি তাদের সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করেছেন; ততক্ষণে, তিনি ইতিমধ্যেই এহেন ব্যক্তিগণের পরিণাম নিজের হৃদয়ে নির্ধারণ করে ফেলেছেন। কী সেই পরিণাম? তা হল যে, সেই ব্যক্তি এক ইঁদুরে পরিণত হবে এবং ইঁদুরদের সাথেই ধ্বংস হবে। তাই, মানুষ এই পরিস্থিতি প্রায়শই দেখে: কেউ ঈশ্বরকে ত্যাগ করে, অথচ তারপরে সে কোনো শাস্তি পায় না। ঈশ্বর তাঁর নিজের নীতি অনুযায়ী কাজ করেন; কিছু বিষয় চোখে দেখা যায়, আর অন্যগুলোর নিষ্পত্তি শুধুমাত্র ঈশ্বরের হৃদয়েই করা হয়, তাই মানুষ পরিণাম দেখতে পায় না। জরুরি নয় যে মানুষের চোখে দৃশ্যমান অংশটাই কোনো বিষয়ের প্রকৃত দিক, বরং অন্য দিকটা—যে দিকটা তুমি দেখতে পাও না—সেই দিকটাই প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের হৃদয়ে অনুভূত প্রকৃত ভাবনা এবং সিদ্ধান্তগুলোকে ধারণ করে।

যারা ঈশ্বরের কাজের মাঝপথে পালিয়ে যায়, তারাই প্রকৃত পথ পরিত্যাগ করে

যারা ঈশ্বরের কাজের মাঝপথে পালিয়ে যায়, তাদেরকে তিনি কেন এত গুরুতর শাস্তি দেন? কেন তিনি তাদের প্রতি এতখানি ক্রুদ্ধ? প্রথমত, আমরা জানি যে, ঈশ্বরের স্বভাব হল মহিমা এবং ক্রোধ; তিনি কারোর হাতে বধ হওয়ার মতো মেষ নন, মানুষের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রিত হওয়ার মতো পুতুল তো আরোই নন। আদেশ দিয়ে চালনা করার মতো একঝলক শূন্য বাতাসও তিনি নন। যদি তুমি সত্যিই বিশ্বাস করো যে ঈশ্বর আছেন, তাহলে তোমার ঈশ্বরে ভীত একটা হৃদয় থাকা উচিত, এবং তোমার জানা উচিত, যে তাঁর সারসত্য ক্রোধান্বিত করার মতো নয়। এই ক্রোধের কারণ হতে পারে কোনো কথা, বা হয়তো কোনো ভাবনা, অথবা হয়তো কোনোরকম জঘন্য আচরণ, এমনকি হয়তো কোনো ধরনের লঘু আচরণও, যে আচরণ মানুষের চোখে এবং মানুষের নীতিতে চলনসই; অথবা হয়তো কোনোরকম মতবাদ বা তত্ত্বের দ্বারাও তাঁর ক্রোধ প্ররোচিত হতে পারে। যাই হোক, ঈশ্বরকে ক্রোধান্বিত করা মাত্রই, তুমি তোমার সুযোগ হারাবে, এবং তোমার অন্তিম সময় উপস্থিত হবে। তা এক ভয়াবহ বিষয়! তুমি যদি বুঝতে না পারো যে, ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করা অনুচিত, তাহলে হয়তো তুমি তাঁর প্রতি ভীত নও, এবং হয়তো তুমি তাঁকে নিয়মিত ক্ষুব্ধ করে চলেছ। যদি তুমি না জানো যে, ঈশ্বরকে কীভাবে ভয় পেতে হয়, তবে তুমি তাঁকে ভয় পেতে অক্ষম, এবং তুমি জানবে না যে কীভাবে নিজেকে ঈশ্বরের পথে, অর্থাৎ ঈশ্বরে ভীতি ও মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথে, নিবদ্ধ রাখতে হয়। যখন তুমি সচেতন হবে, এবং বুঝবে যে, ঈশ্বরকে বিক্ষুব্ধ করা একেবারেই অনুচিত, তখন তুমি সচেতন হবে ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করা কাকে বলে।

তুমি কতখানি সত্য জানো, কতগুলো পরীক্ষার অভিজ্ঞতা তুমি লাভ করেছ, বা তুমি কতমাত্রায় অনুশাসিত হয়েছ, তা ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগের পথে চলার অপরিহার্য বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং, তা নির্ভর করে তোমার হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি কী ধরনের মনোভাব রয়েছে, এবং কোন সারসত্য তুমি প্রকাশ করো, তার উপরেই। মানুষের সারসত্য এবং তাদের ব্যক্তিগত মনোভাব—এগুলো খুবই জরুরি, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে চলে গেছে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের অবজ্ঞাজনক আচরণ এবং সত্যকে অবমাননাকারী হৃদয় ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের স্বভাবকে উত্তেজিত করেছে, তাই তাঁর দিক থেকে বলা যায় যে, তাদের কখনোই ক্ষমা করা হবে না। তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনেছে, এবং এ সংবাদও তারা পেয়েছে যে, তিনি ইতিমধ্যেই আবির্ভূত হয়েছেন, এমনকি ঈশ্বরের নতুন কাজের অভিজ্ঞতাও লাভ করেছে। তারা খুব একটা বিভ্রান্ত হয়ে বা বিক্ষিপ্তমতি হয়েপ্রস্থান করেনি, বাধ্য হয়ে প্রস্থান করছে, এমনটা তো আরোই নয়। বরং তারা সচেতনভাবে, স্বচ্ছ মস্তিষ্কে ঈশ্বরকে পরিত্যাগের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের প্রস্থান পথ হারানোর মতো নয়, বা তাদের যে বহিষ্কার করা হয়েছে, এমনটাও নয়। সেহেতু, ঈশ্বরের চোখে তারা দলছুট মেষশাবক নয়, পথভ্রষ্ট অমিতব্যয়ী সন্তান তো আরোই নয়। তারা দায়বদ্ধতা পরিহার করে প্রস্থান করেছে—এবং এহেন অবস্থা, এমনতর পরিস্থিতি, ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করে, আর এই ক্ষোভের বশেই তিনি তাদের নিরাশাজনক পরিণাম দেন। এইরকম পরিণতি কি ভয়ঙ্কর নয়? সুতরাং, যদি মানুষ ঈশ্বরকে না চেনে, তাহলে তারা তাঁকে ক্ষুব্ধ করে ফেলতে পারে। এটা কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়! যদি মানুষ ঈশ্বরের মনোভাবকে গুরুত্ব সহকারে না গ্রহণ করে, এবং এখনো বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর তাদের প্রত্যাবর্তনের আশায় বসে আছেন কারণ তারা ঈশ্বরের হারিয়ে যাওয়া মেষশাবকদের মধ্যে কয়েকজন, এবং তিনি এখনো তাদের হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটবে বলে অপেক্ষা করে রয়েছেন, তাহলে তারা তাদের দণ্ডের দিবস থেকে অধিক দূরবর্তী নয়। ঈশ্বর যে শুধু তাদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করবেন তাই নয়—যেহেতু তারা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করেছে, তাই এই বিষয়টা হল নিদারুণতর! তাদের অসম্মানজনক আচরণ ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের প্রশাসনিক ফরমানকে লঙ্ঘন করেছে। তবুও কি তিনি তাদের গ্রহণ করবেন? ঈশ্বরের হৃদয়ে, এই বিষয়ে তাঁর নীতি হল, কোন পথ প্রকৃত, সেবিষয়ে নিশ্চয়তা লাভের পরেও, কেউ যদি কেউ সচেতনভাবে, স্বচ্ছ মস্তিষ্কে, ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রস্থান করতে পারে, সেক্ষেত্রে তিনি এহেন মানুষের পরিত্রাণের পথ অবরুদ্ধ করবেন, এই ব্যক্তির জন্য তাঁর রাজ্যে প্রবেশের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। যখন এই ব্যক্তি পুনরায় এসে তাঁর দরজায় কড়া নাড়বে, ঈশ্বর দরজা খুলবেন না; সেই ব্যক্তি চিরতরে রুদ্ধ দরজার বাইরেই থাকবে। তোমরা কেউ কেউ হয়তো বাইবেলে মোশির কাহিনী পড়ে থাকবে। ঈশ্বরের দ্বারা অভিষিক্ত হওয়ার পরে, তার কাজ এবং বিভিন্ন কারণের জন্য ২৫০-জন নেতা মোশির প্রতি তাদের আনুগত্যহীনতা প্রকাশ করেছিল। কার প্রতি তারা সমর্পণ করতে অস্বীকার করেছিল? মোশির প্রতি নয়। তারা ঈশ্বরের আয়োজনগুলোর প্রতি সমর্পণ করতে অস্বীকার করেছিল; এইক্ষেত্রে, ঈশ্বরের কাজের কাছে সমর্পণ করতে তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল: “তোমরা তোমাদের উপরে খুব বেশিই দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছো, দেখছো সমস্ত মণ্ডলীই পবিত্র, এবং যিহোবাও তাদের মাঝেই আছেন”। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, এই শব্দ বা কথাগুলো কি সত্যিই খুব গুরুতর? তা নয়। অন্ততপক্ষে, এই কথাগুলোর আক্ষরিক অর্থ তেমন গুরুতর নয়। বিধানের দিক থেকে দেখলে, এই কথাগুলো কোনো বিধানভঙ্গ করে না, কারণ উপরিগতভাবে, কোনো বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা বা শব্দ ব্যবহার করা হয় নি, ধর্মনিন্দামূলক কোনো অর্থও এর মধ্যে নেই। এগুলো শুধুমাত্র সাধারণ কিছু কথা, আর কিছু নয়। তাহলে, কেন এই কথাগুলো এভাবে ঈশ্বরের ক্রোধের উদ্রেক ঘটায়? কারণ, এগুলো মানুষকে বলা হয়নি, বলা হয়েছে ঈশ্বরকে। তাদের যে মনোভাব ও স্বভাব প্রকাশ পেয়েছে ঠিক সেটাই ঈশ্বরের স্বভাবকে উত্তেজিত করে, এবং সেগুলো ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ করে, যা একেবারেই করা উচিত নয়। আমরা সবাই সেই নেতাদের অন্তিম পরিণামের কথা জানি। যেসব মানুষ ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছে, দৃষ্টিভঙ্গি কী? তাদের মনোভাব কী? এবং কেনই বা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোভাব ঈশ্বরকে তাদের সাথে এইভাবে মোকাবিলা করায়? কারণ হল, তিনিই যে ঈশ্বর তা স্পষ্টভাবে জানা সত্ত্বেও, তারা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করাকেই বেছে নিয়েছে, এবং এই কারণেই পরিত্রাণের সুযোগ থেকে তাদের সম্পূর্ণ বঞ্চিত করা হয়েছে। বাইবেলে যেমন বলা আছে, “সত্যের পরিচয় লাভ করার পর যদি আমরা স্বেচ্ছায় পাপ করি তাহলে সেই পাপ স্খালনের জন্য কোন বলিদানের ব্যবস্থা নেই” (হিব্রু ১০:২৬)। এখন কি বিষয়টা নিয়ে তোমাদের স্পষ্ট একটা উপলব্ধি তৈরি হল?

ঈশ্বরের প্রতি মানুষের মনোভাবের ভিত্তিতেই তাদের নিয়তি ভাগ্য নির্ধারিত হয়

ঈশ্বর হলেন এক জীবন্ত ঈশ্বর, আর ঠিক যেমন মানুষ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে, সেই আচরণগুলোর প্রতি ঈশ্বরের মনোভাবও ভিন্ন ভিন্ন হয়, কারণ তিনি কোনো নাচের পুতুল বা শূন্য বাতাসের দমক নন। ঈশ্বরের মনোভাব জানতে পারা মানবজাতির পক্ষে এক মূল্যবান অন্বেষণ। মানুষের শেখা উচিত যে, ঈশ্বরের মনোভাব জানার মাধ্যমে কীভাবে একটু একটু করে ঈশ্বরের স্বভাব সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়, এবং তাঁর হৃদয়কে উপলব্ধি করা যায়। যখন তুমি ধীরে ধীরে ঈশ্বরের হৃদয়কে উপলব্ধি করবে, তোমার ঈশ্বরে ভীতি এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করা তত কষ্টসাধ্য বলে মনে হবে না আর। তাছাড়াও, ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে পারলে, তুমি ঈশ্বরের বিষয়ে সিদ্ধান্তপ্রবণ হবে না। একবার যখন তুমি তাঁর সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বন্ধ করবে, তোমার পক্ষে তাঁকে ক্ষুব্ধ করার সম্ভাবনাও কমে যাবে, এবং তোমার অজান্তেই, ঈশ্বর তোমাকে তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের পথ দেখাবেন; এর মাধ্যমে তোমার হৃদয় তাঁর প্রতি সম্মানে পরিপূর্ণ হবে। তখন তুমি তোমার আয়ত্ত করা মতবাদ, আক্ষরিক অর্থ, ও তত্ত্বের দ্বারা ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করা বন্ধ করবে। পরিবর্তে, সকল বস্তুতে প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের অভিপ্রায় অন্বেষণ করার ফলে, অজ্ঞাতসারেই তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠবে।

ঈশ্বরের কার্য মানুষের দৃষ্টি ও স্পর্শের অতীত, কিন্তু তাঁর দিক থেকে দেখলে, প্রত্যেক ব্যক্তির কাজ—সেইসঙ্গে তাঁর প্রতি তাদের মনোভাব—ঈশ্বরের দ্বারা শুধু উপলব্ধিযোগ্যই নয়, তাঁর কাছে দৃশ্যমানও। এ হল এমন এক বিষয়, যা সকলের জানা উচিত, এবং এই বিষয়ে সকলেরই স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। তোমাদের মনে সবসময় প্রশ্ন আসতে পারে, “ঈশ্বর কি জানেন আমি এখানে কী করছি? তিনি কি জানেন, যে, ঠিক এই মুহূর্তে আমি কী ভাবছি? হয়তো জানেন, বা হয়তো জানেন না।” যদি তুমি এমনতর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করো, ঈশ্বরকে অনুসরণ ও বিশ্বাস করা সত্ত্বেও তাঁর কার্যে ও অস্তিত্বে সংশয় প্রকাশ করো, তাহলে অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে এমন এক দিন আসবে, যখন তুমি তাঁর ক্রোধের উদ্রেক ঘটাবে, কারণ তুমি ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক খাদের ধারে স্খলিতপদে বিচরণশীল। আমি এমন মানুষ দেখেছি যারা বহুবছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তবু এখনো তারা সত্যের বাস্তবিকতা অর্জন করতে পারেনি, ঈশ্বরের ইচ্ছা উপলব্ধি করা তো দূরের কথা। এই ব্যক্তিরা তাদের জীবন ও আত্মিক উচ্চতায় কোন উন্নতি ঘটাতে পারে না, শুধুমাত্র অগভীরতম মতবাদসমূহ আঁকড়ে পড়ে থাকে। কারণ, তারা কখনোই ঈশ্বরের বাক্যকে জীবন হিসাবে গ্রহণ করেনি, এবং তারা কখনোই ঈশ্বরের অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়ে তা স্বীকার করেনি। তোমার কি মনে হয়, যে, এমন মানুষদের দেখলে ঈশ্বর আনন্দে ভরে ওঠেন? তারা কি তাঁকে স্বস্তি দেয়? সুতরাং, মানুষ কেমনভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তা-ই তাদের অদৃষ্ট নির্ধারণ করে। মানুষের অন্বেষণের, বা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার উপায়ান্তর প্রসঙ্গে, মানুষের মনোভাবের গুরুত্বই প্রধান। নিছকই তোমার মাথার পিছনে ভেসে চলা একটা শূন্য বাতাসের দমক গণ্য করে ঈশ্বরকে অবহেলা কোরো না; সর্বদা মনে রেখো যে, তুমি যে ঈশ্বরের বিশ্বাস করো, তিনি জীবন্ত ঈশ্বর, এক বাস্তব ঈশ্বর। এমন নয় যে, ঊর্ধ্বে তৃতীয় স্বর্গে তিনি বসে আছেন আর তাঁর কিছুই করণীয় নেই। বরং, তিনি প্রতিনিয়ত প্রত্যেক ব্যক্তির অন্তর খুঁটিয়েদেখছেন, দেখছেন তুমি কী করছ, তোমার প্রতিটা ছোটখাট কথা ও কাজ তিনি লক্ষ্য করছেন, দেখছেন তুমি কেমন আচরণ করো এবং তাঁর প্রতি তোমার কী মনোভাব। তুমি নিজেকে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করতে ইচ্ছুক না অনিচ্ছুক তা নির্বিশেষে, তোমার সমস্ত ব্যবহার এবং তোমার অন্তরতম চিন্তাভাবনা ও ধারণা তাঁর সামনে অনাবৃত হয়ে পড়ে, এবং তিনি তা দেখেন। তোমার আচরণের কারণে, তোমার কর্মের কারণে, এবং তাঁর প্রতি তোমার মনোভাবের কারণে, তোমার বিষয়ে ঈশ্বরের মতামত এবং তোমার প্রতি তাঁর মনোভাব প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে। আমি কিছু মানুষকে কিছু উপদেশ দিতে চাইব: নিজেকে এমন শিশুর মতো ঈশ্বরের হাতে স্থাপন কোরো না, যেন তাঁর তোমাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা, যেন তিনি তোমায় কখনোই পরিত্যাগ করতে পারেন না, এবং যেন তোমার প্রতি তাঁর আচরণ কখনোই পরিবর্তিত হবে না, এবং আমি তোমাদের স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে উপদেশ দেব! ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি তাঁর আচরণে ধার্মিক, এবং তিনি মানুষকে জয় করা ও উদ্ধার করার কাজের প্রতি তাঁর মনোভাবে আন্তরিক। এ-ই হল তাঁর ব্যবস্থাপনা। তিনি প্রত্যেকের সাথেই গুরুত্ব সহকারে আচরণ করেন, খেলা করার পোষ্য হিসাবে নয়। ঈশ্বরের মানবপ্রেম মানুষকে অত্যধিক প্রশ্রয় দেওয়া বা তাদের নষ্ট করে দেওয়ার সমতুল নয়, অথবা মানবজাতির প্রতি তাঁর করুণা ও সহনশীলতাও মানুষের প্রতি প্রশ্রয়ী বা উদাসীন হওয়ার সমগোত্রীয় নয়। বরং পক্ষান্তরে, ঈশ্বরের মানবপ্রেমের মধ্যে নিহিত রয়েছে প্রতিপালন, করুণা, এবং জীবনের প্রতি সম্মানশীলতা; তাঁর করুণা এবং সহনশীলতা মানুষের প্রতি তাঁর প্রত্যাশার পরিচয়বাহী, এবং সেগুলোই মানুষের প্রয়োজন টিকে থাকার উদেশ্যে। ঈশ্বর জীবন্ত, এবং প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব রয়েছে; মানবজাতির প্রতি তাঁর আচরণ নীতি-নির্ভর, তা একগুচ্ছ গোঁড়া নিয়ম নয়, এবং তা পরিবর্তিতও হতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিসকল এবং প্রত্যেক ব্যক্তির মনোভাব অনুযায়ী সময়ের সাথে সাথে মানুষের প্রতি তাঁর অভিপ্রায়সমূহ ক্রমশ পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হচ্ছে। সুতরাং, অন্তর থেকে তোমার পূর্ণত স্পষ্টভাবে জানা উচিত, যে, ঈশ্বরের সারসত্য অপরিবর্তনীয়, এবং বিভিন্ন সময়কাল ও বিবিধ প্রসঙ্গক্রম অনুসারে তাঁর স্বভাব উন্মুক্ত হবে। তুমি হয়তো ভাববেই না, যে, এ এক গুরুতর বিষয়, এবং তুমি হয়তো ঈশ্বরের কেমনভাবে কাজ করা উচিত, তা হয়তো কল্পনা করবে তোমার ব্যক্তিগত পূর্বধারণা অনুযায়ী। যদিও, অনেক সময়ে তোমার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতমেরুর অবস্থানই সত্য হয়, এবং তোমার ব্যক্তিগত পূর্বধারণা ব্যবহার করে ঈশ্বরের পরিমাপ করতে গিয়ে তুমি ইতিমধ্যে তাঁকে ক্রোধান্বিত করে ফেল। কারণ, তুমি যেভাবে ভাবো, ঈশ্বর কখনোই সেই পদ্ধতিতে কাজ করেন না, তেমনই তুমি যেভাবে বলছো সেভাবে তিনি এই বিষয়টাকে পরিচালিত করবেন না। তাই, আমি তোমাকে নিজের চতুর্দিকে সমস্তকিছুর প্রতি আচরণে সতর্ক ও বিচক্ষণ হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, এবং অনুসরণ করা শিখতে বলছি কীভাবে সকলক্ষেত্রে ঈশ্বরের পথে চলতে হয় সেই নীতির, অর্থাৎ ঈশ্বরে ভীতি অর্জন এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগের। ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং মনোভাব সম্পর্কে তোমার অবশ্যই দৃঢ় উপলব্ধি গঠন করা উচিত, এই বিষয়ে তোমার সাথে আলোচনা করার জন্য তোমায় আলোকিত মানুষদের খুঁজে বার করতে হবে, এবং তোমাকে আন্তরিকভাবে অন্বেষণ করতে হবে। যে ঈশ্বরে তুমি বিশ্বাস করো, তাঁকে যদৃচ্ছ বিচার করে, তাঁর সম্পর্কে অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে, এবং তাঁর প্রতি আচরণে তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে—তাঁকে নাচের পুতুল হিসাবে বিবেচনা কোরো না। যখন ঈশ্বর তোমার জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসেন এবং তোমার পরিণাম নির্ধারণ করেন, তিনি তোমাকে করুণা প্রদান করতে পারেন, বা সহনশীলতা দেখাতে পারেন, অথবা বিচার ও শাস্তিপ্রদান করতে পারেন, কিন্তু যেকোনো ক্ষেত্রেই, তোমার প্রতি তাঁর মনোভাব অপরিবর্তনীয় নয়। তা নির্ভরশীল তাঁর প্রতি তোমার নিজের মনোভাব এবং সেইসাথে তাঁর সম্পর্কে তোমার ধারণার উপর। ঈশ্বর সম্পর্কে তোমার জ্ঞান বা ধারণার কোনো ক্ষণস্থায়ী দিককে স্থায়ীভাবে ঈশ্বরের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে দিও না। মৃত ঈশ্বরে বিশ্বাস কোরো না; বিশ্বাস করো জীবন্ত এক ঈশ্বরে। এটা মনে রেখো! যদিও আমি এখানে কিছু সত্য আলোচনা করেছি—যেসকল সত্য তোমাদের শোনার প্রয়োজন ছিল—কিন্তু, তোমাদের বর্তমান অবস্থা ও বর্তমান আত্মিক উচ্চতার নিরিখে, আমি আপাতত তোমাদের কাছে বৃহত্তর কোন দাবি রাখবো না, যাতে তোমাদের উৎসাহ নষ্ট না হয়। তা করলে তোমাদের হৃদয় অত্যধিক নৈরাশ্যে পূর্ণ হয়ে পড়তে পারে, এবং তোমরা ঈশ্বরের প্রতি অত্যন্ত হতাশ বোধ করতে পারো। পরিবর্তে, আমি আশা করব যে, সম্মুখবর্তী পথে চলার সময়, তোমরা তোমাদের হৃদয়ের ঈশ্বরপ্রেম ব্যবহার করবে এবং ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব বজায় রাখবে। ঈশ্বরকে কীভাবে বিশ্বাস করতে হয়, সেই বিষয়টা দায়সারাভাবে বিবেচনা কোরো না; এটাকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা কোরো। এটাকে নিজের হৃদয়ে স্থান দিও, পালন কোরো, এবং বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত কোরো; এটাকে শুধু মৌখিক দায়িত্ব করে রেখো না—কারণ এ হল জীবনমরণের বিষয়, এবং এমন এক বিষয়, যা তোমার নিয়তি নির্ধারণ করবে। এটাকে ঠাট্টাতামাশা বা ছেলেখেলা হিসাবে নিও না! আজ এই বাক্যসকল তোমাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার পর, তোমাদের মস্তিষ্কগুলো এই বিষয়ে কতমাত্রায় উপলব্ধির ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে, তা-ই আমি ভাবি। আজ আমি যা বললাম, তা নিয়ে কি তোমাদের কোনো প্রশ্ন আছে?

যদিও এই বিষয়গুলো কিছুটা নতুন, এবং তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গির থেকে, তোমাদের সাধারণ অন্বেষণের থেকে, এবং যা কিছুর প্রতি তোমরা মনোযোগ দিতে চাও তা থেকে, কিছুটা আলাদা, কিন্তু আমার ধারণা যে, একবার এই বিষয়গুলো নিয়ে কিছুটা সময় ধরে তোমরা আলোচনা করলে আমি আজ যা যা বললাম সেই সমস্তটার বিষয়ে তোমাদের একটা সাধারণ উপলব্ধি গড়ে উঠবে। এই বিষয়বস্তুগুলো সবকটাই খুব নতুন, এবং এগুলো এমন সব বিষয়, যার উপর তোমরা আগে কখনো মনোযোগ দাওনি, তাই আমি আশা করি যে, এগুলো কোনভাবেই তোমাদের উপর বোঝা সৃষ্টি করবে না। তোমাদের ভয় দেখানোর জন্য আজ এই বাক্যগুলো বলছি না, বা আমি তোমাদের সঙ্গে মোকাবিলা করার পথ হিসাবেও সেগুলোকে ব্যবহার করছি না; বরং, আমার লক্ষ্য হল তোমাদের সত্যের বিষয়ে আসল তথ্যের উপলব্ধি করতে সাহায্য করা। যেহেতু মানবজাতি এবং ঈশ্বরের মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে, সেহেতু, যদিও মানুষ ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, তবু তারা কখনো তাঁকে উপলব্ধি করেনি বা তাঁর মনোভাব জানতে পারেনি। ঈশ্বরের মনোভাবের বিষয়ে বিবেচনাশীল হওয়ার বিষয়ে মানুষও কখনোই খুব একটা উৎসাহ দেখায়নি। বরং, তারা অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছে ও অগ্রসর হয়েছে, এবং ঈশ্বরের সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ও উপলব্ধির বিষয়ে অযত্নবান রয়ে গেছে। তাই আমি তোমাদের কাছে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে, এবং তোমাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে বাধ্য হচ্ছি যে, তোমরা যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, সেই ঈশ্বর ঠিক কী ধরনের ঈশ্বর, তিনি কী ভাবছেন, বিভিন্ন ধরনের মানুষের প্রতি তাঁর আচরণের ক্ষেত্রে তাঁর মনোভাব কী, তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ করার থেকে তুমি কতটা দূরে রয়েছ, এবং তোমার কর্মের ও তাঁর চাহিদা অনুযায়ী অর্জনীয় গুণমানের মধ্যে পার্থক্য কত বিপুল। এই বিষয়গুলো সম্পর্কে তোমাদের জানানোর লক্ষ্য হল তোমাদের নিজেদের পরিমাপ করার উদ্দেশ্যে একটা মাপকাঠি দেওয়া, এবং যাতে তোমরা জানতে পারো যে তোমরা যে পথে রয়েছো তা কী ধরনের ফলাফলের দিকে তোমাদের নিয়ে চলেছে, এই পথে চলে তোমরা কী অর্জন করো নি, এবং কোন ক্ষেত্রগুলোতে তোমরা একেবারেই জড়িত হওনি। নিজেদের মধ্যে আলোচনার সময় তোমরা সাধারণত কথা বলো কিছু বহুচর্চিত বিষয়ে, যেগুলোর পরিধি সংকীর্ণ ও বিষয়বস্তু অগভীর। তোমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু এবং ঈশ্বরের অভিপ্রায় মাঝে একটা দূরত্ব, একটা ফাঁক রয়েছে, পাশাপাশি, তোমাদের আলোচনা এবং ঈশ্বরের চাহিদানুরূপ গুণমান ও পরিধির মাঝেও তা রয়েছে। এইভাবে চললে, সময়ের সাথে সাথে তোমরা ঈশ্বরের পথ থেকে আরো দূরে বিচ্যুত হয়ে পড়বে। তোমরা নিছকই ঈশ্বরের বর্তমান উচ্চারণসমূহকে নিয়ে সেগুলোকে উপাস্য বস্তুতে পরিণত করছ, এবং সেগুলোকে আনুষ্ঠানিক রীতিনীতি ও নিয়ম হিসাবে দেখছ। তোমরা শুধু এ-ই করছ! আসল ঘটনা হল, তোমাদের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য কোনো স্থানমাত্র নেই, এবং তিনি কখনোই তোমাদের হৃদয় লাভ করেননি। কেউ কেউ ভাবে ঈশ্বরকে জানা খুব কঠিন, আর এটাই সত্যি। তা খুবই কঠিন। যদি মানুষকে দিয়ে তাদের কর্তব্য পালন করানো হয় ও বাহ্যিকভাবে কাজ করানো হয়, এবং কঠোর পরিশ্রম করানো হয়, তাহলে তারা মনে করবে যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করা খুবই সহজ, কারণ এই সবকিছুই মানুষের সামর্থ্যের পরিধির মধ্যেই পড়ে। কিন্তু যে মুহূর্তে ঈশ্বরের অভিপ্রায় এবং মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের মনোভাবের বিষয়ে প্রসঙ্গান্তর ঘটে, তখন প্রত্যেকের পরিপ্রেক্ষিত থেকেই বিষয়গুলো প্রকৃতপক্ষেই কিছুটা কঠিনতর হয়ে পড়ে। কারণ, এখানে সত্য সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি এবং তাদের বাস্তবিকতায় প্রবেশের প্রসঙ্গক্রম জড়িত, সেহেতু তা অবশ্যই কিছুমাত্রায় কঠিন হবে! তবুও, একবার যখন তুমি প্রথম দরজাটা পার করে ফেলো এবং প্রবেশ অর্জন আরম্ভ করো, তখন বিষয়গুলো ধীরে ধীরে সহজতর হতে থাকে।

ঈশ্বরে ভীতি অর্জনের প্রথম ধাপ হল তাঁকে ঈশ্বরজ্ঞানে তাঁর সাথে আচরণ করা

কিছুক্ষণ আগে কেউ এই প্রশ্নটা তুলেছিল: ঈশ্বর সম্পর্কে আমরা যদিও ইয়োবের থেকে বেশি জানি, তবুও আমরা তাঁকে সম্মান করতে পারি না কেন? এর আগে আমরা এই বিষয়টা সামান্য ছুঁয়ে গেছি। আমরা আসলে এই প্রশ্নের নির্যাস নিয়ে আগেও আলোচনা করেছি, সেই নির্যাস হচ্ছে যে, যদিও ইয়োব সেই সময়ে ঈশ্বরকে জানতো না, কিন্তু তবুও সে তাঁকে ঈশ্বজ্ঞানে তাঁর সাথে আচরণ করেছিল, এবং তাঁকে আকাশ, পৃথিবী ও সমস্তকিছুর প্রভু হিসাবে বিবেচনা করেছিল। ইয়োব ঈশ্বরকে শত্রু বলে মনে করতো না; বরং সে তাঁকে সমস্তকিছুর সৃষ্টিকর্তা হিসাবে উপাসনা করতো। আজকাল মানুষ ঈশ্বরকে এত বেশি প্রতিরোধ করে কেন? কেন তারা তাঁকে সম্মান করতে অক্ষম? একটা কারণ হল যে, তারা শয়তানের দ্বারা গভীরভাবে ভ্রষ্ট, এবং এমন গভীরভাবে বদ্ধমূল শয়তানোচিত স্বভাবের কারণে, তারা পরিণত হয়েছে ঈশ্বরের শত্রুতে। সেহেতু, যদিও তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং তাঁকে স্বীকার করে, কিন্তু তবুও তারা তাঁকে প্রতিরোধ করতে এবং নিজেদের তাঁর বিপরীতে স্থাপন করতে সক্ষম। এটা মানুষের প্রকৃতির দ্বারাই নির্ধারিত। অন্য কারণটা হল, ঈশ্বরবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও মানুষ তাঁকে ঈশ্বরজ্ঞানে তাঁর সাথে আচরণ করে না। পরিবর্তে, তারা ঈশ্বরকে মানবজাতির বিরোধী হিসাবে বিবেচনা করে, তাঁকে নিজেদের শত্রু হিসাবে গণ্য করে, এবং মনে করে যে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে অসঙ্গত নয়। বিষয়টা এতটাই সরল। এই বিষয়টা কি আগের অধিবেশনেই আলোচিত হয়নি? এই বিষয়ে ভাবো: এটাই কি কারণ নয়? তোমার হয়তো ঈশ্বর সম্পর্কে যৎসামান্য জ্ঞান থাকতে পারে, কিন্তু সেই জ্ঞানের ফলাফল কী? সকলে কি এই নিয়েই কথা বলছে না? ঈশ্বর তোমায় যা বলেছিলেন, এটা কি সে তা-ই নয়? তুমি শুধু এর তাত্ত্বিক এবং মতবাদগত দিকের সঙ্গেই পরিচিত—কিন্তু তুমি কি কখনো ঈশ্বরের প্রকৃত রূপের প্রশংসা করেছ? তোমার কি বিষয়গত জ্ঞান রয়েছে? তোমার কি ব্যবহারিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে? যদি ঈশ্বর তোমাকে না বলতেন, তুমি কি জানতে পারতে? তোমার তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রকৃত জ্ঞানকে উপস্থাপিত করে না। সংক্ষেপে, তুমি কতটা জানো, বা কীভাবে তা জানতে পারো, সেটা বিষয় নয়, যতক্ষণ না তুমি ঈশ্বরের বিষয়ে একটা প্রকৃত উপলব্ধি অর্জন করছ, তিনি তোমার শত্রু হয়েই থাকবেন, এবং যতক্ষণ না তুমি বস্তুতই তাঁকে ঈশ্বরজ্ঞানে তাঁর সাথে আচরণ আরম্ভ করো, তিনি তোমার বিরোধিতা করবেন, কারণ তুমি হলে শয়তানের এক মূর্ত প্রতীক।

তুমি যখন খ্রীষ্টের সঙ্গে একসাথে থাকো, হয়তো তুমি তাঁকে প্রত্যহ তিনবেলার খাবার পরিবেশন করতে পারো, বা হয়তো তাঁকে চা পরিবেশন করতে পারো, এবং তাঁর জীবনের প্রয়োজন মেটাতে পারো; মনে হবে তুমি বুঝি খ্রীষ্টের সাথে ঈশ্বরতুল্য আচরণ করেছ। যখনই কিছু ঘটে, তখনই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ঈশ্বরের বিপরীত দিশায় ধাবিত হয়; মানুষ সবসময়েই ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে ও গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। যদিও মানুষ হয়তো উপরিভাগে ঈশ্বরের সাথে সঙ্গত হয়ে চলতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কিছু ঘটার সাথে সাথেই মানুষের আনুগত্যহীনতার সত্য উন্মোচিত হয়, এইভাবে মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতা সুনিশ্চিত হয়। এই শত্রুতা মানুষের প্রতি ঈশ্বরের বিরোধিতা নয় বা তাদের প্রতি ঈশ্বরের শত্রুভাবাপন্ন হতে চাওয়া নয়, বা এমনও নয় যে ঈশ্বর নিজের বিপক্ষে তাদের স্থাপন করেন এবং তারপর তাদের সাথে সেই অনুসারে আচরণ করেন। বরং, এই শত্রুতা হল ঈশ্বরের বিপরীতধর্মী সারমর্মের ব্যাপার, যা মানুষের বিষয়গত ইচ্ছা ও তাদের অবচেতনমনে প্রচ্ছন্নভাবে অপেক্ষা করে। যেহেতু ঈশ্বরের থেকে আগত সমস্ত কিছুই মানুষ তাদের গবেষণার বস্তু বলে মনে করে, সেহেতু, ঈশ্বরের কাছ থেকে আগত এবং ঈশ্বরের সাথে জড়িত সবকিছুর বিষয়েই মানুষের প্রতিক্রিয়া হল অনুমান করা, সন্দেহ করা, এবং চটজলদি কোনো মনোভাব অবলম্বন করা, যা ঈশ্বরবিরোধী ও তাঁর সাথে দ্বন্দ্বমূলক। তার ঠিক পরেই, নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে তারা ঈশ্বরের সঙ্গে বিবাদ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়, এমনকি এতদূর চলে যায় যে, এহেন এক ঈশ্বর আদৌ অনুসরণীয় কিনা, সেই নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করে। যদিও তাদের যৌক্তিকতা তাদের বলে, যে, তাদের এমন ভাবে অগ্রসর হওয়া অনুচিত, কিন্তু তবুও তারা তা অনিচ্ছাসত্ত্বেও বেছে নেয়, এতটাই যে, একেবারে শেষ পর্যন্ত তারা তা নির্দ্বিধায় অব্যাহত রাখে। উদাহরণস্বরূপ, যখন কিছু মানুষ ঈশ্বর সম্পর্কে গুজব বা অপবাদ শোনে, তাদের প্রথমে কী প্রতিক্রিয়া হয়? তাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হচ্ছে বিস্ময়ের, যে, এইসব গুজব সত্যি কিনা, এবং সেগুলোর আদৌ কোনো অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, এবং তারপরের প্রতিক্রিয়া হল অপেক্ষা করে দেখতে থাকা ব্যাপারটা কোন দিকে গড়ায়। তারপর তারা ভাবতে শুরু করে, “এটা যাচাই করার কোনো উপায় নেই। সত্যিই কি এরকম ঘটেছে? এই গুজব কী সত্যি না মিথ্যা?” যদিও এইরকম মানুষেরা এই মনোভাব বাইরে দেখায় না, কিন্তু অন্তরে তারা ইতিমধ্যে সংশয়ী হতে শুরু করে দিয়েছে, এবং ইতিমধ্যেই ঈশ্বরকে অস্বীকার করতে আরম্ভ করেছে। এই ধরনের মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির সারসত্য কী? তা কি বিশ্বাসঘাতকতা নয়? যতক্ষণ না তারা এই বিষয়ের মুখোমুখি হচ্ছে, ততক্ষণ তুমি এই ব্যক্তিগণের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারবে না; মনে হবে যেন ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই, এবং তারা ঈশ্বরকে শত্রু হিসেবে গণ্যও করে না। কিন্তু, কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলেই তারা অবিলম্বে শয়তানের পক্ষ নিয়ে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে। এর থেকে কী বোঝা যায়? এর থেকে বোঝা যায় যে, মানুষ এবং ঈশ্বর পরস্পরের বিরোধী! এমন নয় যে ঈশ্বর মানবজাতিকে শত্রু বলে বিবেচনা করেন, কিন্তু মানবজাতির সারসত্যের মূলই হল ঈশ্বরের প্রতি বিরোধপ্রবণ। কেউ কতদিন ধরে ঈশ্বরকে অনুসরণ করছে বা কত বিপুল মূল্য প্রদান করেছে, এবং তারা কীভাবে ঈশ্বরের প্রশংসা করে, কীভাবে ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করার থেকে নিজেদের বিরত করে, এমনকি কীভাবে তারা ঈশ্বরপ্রেমের উদ্দেশ্যে নিজেদের কঠোরভাবে প্রণোদিত করে, সেইসব নির্বিশেষেই বলা যায় যে, তারা কখনোই ঈশ্বরের প্রতি এমন আচরণ করতে পারে না, যে, তিনিই ঈশ্বর। এমনটা কি মানুষের সারসত্য দ্বারাই নির্ধারিত নয়? যদি তুমি তাঁকে ঈশ্বরগণ্য করে তাঁর প্রতি আচরণ করো, এবং প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বাস করো, যে, তিনিই ঈশ্বর, তাহলে তারপরেও কি তাঁর প্রতি তোমার কোনো সংশয় থাকতে পারে? তোমার অন্তর কি তাঁর প্রতি আর কোনো প্রশ্নচিহ্ন ধারণ করতে পারে? পারে না, তাই নয় কি? এই পৃথিবীর প্রবণতা খুবই মন্দ, এবং এই মানবজাতিও তেমনই; তাহলে সেগুলোর প্রতি তোমার কোনো পূর্বধারণা থাকবে না, তা কি হতে পারে? তুমি নিজে অত্যন্ত দুষ্ট, তাহলে তোমার এই বিষয়ে কোনো পূর্বধারণা নেই, তা কীভাবে হতে পারে? এবং সেইসঙ্গে, নিছক কিছু গুজব ও অপবাদই এহেন অসংখ্য ঈশ্বরবিষয়ক কল্পিত ধারণার জন্ম দিতে পারে, এবং তোমার মনেও প্রভূত কল্পনার জন্ম দিতে পারে, যা থেকে বোঝা যায় যে তোমার আত্মিক উচ্চতা কতখানি অপরিণত! শুধু কিছু মশার আর কয়েকটা ঘৃণ্য মাছির “গুঞ্জন”—তোমাকে প্রতারিত করার জন্য কি কেবল এইটুকুই প্রয়োজন? তুমি কী ধরনের মানুষ? তুমি জানো, যে, ঈশ্বর এইরকম মানুষদের নিয়ে কী ভাবেন? তাদের সাথে তাঁর করণীয় আচরণের বিষয়ে ঈশ্বরের মনোভাব আসলে খুবই স্পষ্ট। সেই মনোভাব হল শুধু এই, যে, এদের প্রতি ঈশ্বরের আচরণ হল উপেক্ষার—তাঁর মনোভাব হল তাদের প্রতি কোনো মনোযোগ না দেওয়ার, এবং সেই অজ্ঞ লোকেদের গুরুত্ব না দেওয়ার। কিন্তু এমনটা কেন? এর কারণ হল যে, যারা একেবারে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতার পণ করেছে এবং কখনোই তাঁর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে ওঠার পথের অন্বেষণের পরিকল্পনা করেনি, ঈশ্বর তাঁর অন্তর থেকে কখনোই তেমন মানুষদের অর্জন করার কথা ভাবেননি। হয়তো আমার এই বাক্যগুলো কিছু মানুষকে আঘাত করতে পারে। আচ্ছা, তোমাদের কী আমাকে সবসময়েই এমনভাবে আঘাত করার ইচ্ছা পোষণ করো? তোমরা তা করো বা না করো, আমি যা বলছি তার সবটাই সত্যি! যদি আমি সর্বদা তোমাদের আঘাত করি এবং তোমাদের ক্ষতচিহ্নগুলো এইভাবে প্রকাশ করি, তবে কি তা তোমাদের হৃদয়ে পোষণ করা ঈশ্বর-বিষয়ক সউচ্চ প্রতিমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? (না, করবে না।) আমি একমত যে তা হবে না, কারণ তোমাদের হৃদয়ে আসলে ঈশ্বরের কোনো অস্তিত্বই নেই। যে সুউচ্চ ঈশ্বর তোমাদের হৃদয়ে বাস করেন—যাকে তোমরা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করো ও সুরক্ষা দাও—তিনি আসলে ঈশ্বরই নন। বরং, তিনি মানুষের কল্পনাপ্রসূত এক অলীক চিত্রায়ণ; যা আদ্যতই অস্তিত্ববিহীন। সেই কারণে, এই প্রহেলিকার উত্তর আমার প্রকাশ করে দেওয়াই সবচেয়ে ভালো; তা কি সমস্ত সত্যিটাকেই উন্মুক্তভাবে প্রকাশিত করে না? প্রকৃত ঈশ্বর মানুষের কল্পনামাফিক হন না। আমি আশা করি যে, তোমরা সকলে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারবে, এবং তা তোমাদের ঈশ্বর-বিষয়ক জ্ঞানলাভে সহায়ক হবে।

যে মানুষেরা ঈশ্বরের স্বীকৃতি পায়নি

কিছু মানুষ আছে যাদের বিশ্বাস কখনোই ঈশ্বরের হৃদয় দ্বারা স্বীকৃত হয় নি। অন্যভাবে বললে, ঈশ্বর নিজের অনুগামী হিসাবে তাদের চিহ্নিত করেন না, কারণ তিনি তাদের বিশ্বাসের প্রশংসা করেন না। এই ব্যক্তিগণ যত বছর ধরেই ঈশ্বরকে অনুসরণ করুক না কেন, এদের ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি কখনো বদলায়নি; এরা অবিশ্বাসীদেরই মতো, এরা অবিশ্বাসীদের নীতি ও তাদের কাজের পদ্ধতি, এবং অবিশ্বাসীদের অস্তিত্বরক্ষার ও বিশ্বাসের নীতিতে অবিচল থাকে। তারা কখনো ঈশ্বরকে বাক্যকে নিজেদের জীবন হিসাবে গ্রহণ করেনি, কখনো বিশ্বাস করেনি যে ঈশ্বরের বাক্যই সত্য, কখনো ঈশ্বরের পরিত্রাণ গ্রহণ করতে চায়নি, এবং কখনোই ঈশ্বরকে নিজেদের ঈশ্বর হিসাবে স্বীকার করেনি। এরা ঈশ্বরবিশ্বাসকে একপ্রকার শৌখিন অবসরবিনোদন মনে করে, তাঁকে নিছক আধ্যাত্মিক জগতে নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করে; এতটাই যে, তারা ঈশ্বরের স্বভাব বা তাঁর সারসত্যকে উপলব্ধি করা চেষ্টারও যোগ্য বলে মনে করে না। বলা যেতে পারে যে, প্রকৃত ঈশ্বরের সাথে যা যা সঙ্গতিপূর্ণ, তার কোনোকিছুর সঙ্গেই তাদের কোনো সম্পর্ক নেই; তারা আগ্রহী নয়, তারা ভ্রুক্ষেপমাত্র করতে চায় না। কারণ, তাদের হৃদয়ের গভীরে, একটা জোরালো স্বর তাদেরকে সবসময় বলে, “ঈশ্বর অদৃশ্য ও অস্পর্শনীয়, এবং তাঁর কোনো অস্তিত্ব নেই।” তারা বিশ্বাস করে যে এই ধরনের ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা তাদের প্রচেষ্টারও যোগ্য হবে না, এবং তা করতে গেলে তারা নিজেদেরকেই ঠকাবে। তারা বিশ্বাস করে যে, কোনো প্রকৃত অবস্থান না নিয়ে, বা কোনো আসল কাজে নিজেদের বিনিয়োগ না করে, শুধু মৌখিকভাবে ঈশ্বরকে স্বীকার করে নিয়েই, তারা খুব চালাকির কাজ করে ফেলছে। এই ধরনের মানুষদের ঈশ্বর কেমন নজরে দেখেন? তিনি তাদের অবিশ্বাসী হিসাবে দেখেন। কিছু মানুষ প্রশ্ন করে, “অবিশ্বাসীরা কি ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করতে পারে? তারা কি তাদের কর্তব্য পালন করতে পারে? তারা কি বলতে পারে, ‘আমি ঈশ্বরের জন্য বাঁচবো’?” মানুষ সাধারণত যা দেখে তা হল মানুষের বাহ্যিক প্রদর্শন; তারা মানুষের সারসত্য দেখে না। যদিও, ঈশ্বর এইসব কৃত্রিম প্রদর্শনের দিকে তাকান না; তিনি শুধুমাত্র তাদের অন্তরের সারসত্য দেখেন। সুতরাং, এহেন ব্যক্তিগণের প্রতি ঈশ্বরের মনোভাব ও সংজ্ঞা এমনটাই। এরা বলে, “কেন ঈশ্বর এমন করেন? কেন ঈশ্বর অমন করেন? আমি এটা উপলব্ধি করতে পারি না; আমি ওটা বুঝতে পারি না; এটা মানুষের পূর্বধারণার সাথে সঙ্গত নয়; আপনাকে অবশ্যই আমায় তা ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে...।” এর উত্তরে আমি জিজ্ঞাসা করছি: এই বিষয়গুলো তোমার কাছে ব্যাখ্যা করা কি সত্যিই খুব জরুরি? এই বিষয়গুলোর সাথে সত্যিই কি তোমার কোনো সম্পর্ক আছে? তুমি নিজেকে কী মনে করো? কোথা থেকে এসেছ তুমি? তুমি কি সত্যিই ঈশ্বরকে দিকনির্দেশ দেওয়ার যোগ্য? তুমি কি তাঁকে বিশ্বাস করো? তিনি কি তোমার বিশ্বাস স্বীকার করেন? যেহেতু তোমার বিশ্বাসের সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো সম্পর্ক নেই, তাঁর কর্ম দিয়ে তোমার কী যায় আসে? যেহেতু তুমি জানোই না যে ঈশ্বরের হৃদয়ে তোমার অবস্থান কোথায়, তাহলে তাঁর সাথে কথোপকথনে লিপ্ত হওয়ার যোগ্যতা তোমার কীভাবে থাকতে পারে?

কিছু উপদেশমূলক বাক্য

তোমাদের কি এই মন্তব্যগুলো শুনে অস্বস্তি হচ্ছে না? যদিও তোমরা হয়তো এগুলো শুনতে অনিচ্ছুক হতে পারো, বা এগুলোকে স্বীকার করতে অনিচ্ছুক হতে পারো, কিন্তু এগুলো সবই যথার্থ। যেহেতু কার্যের এই পর্যায়টা ঈশ্বরের কর্মসম্পাদনের উদ্দেশ্যে, সেহেতু, যদি তুমি তাঁর অভিপ্রায়ের বিষয়ে মনোযোগী না হও, যদি তাঁর মনোভাবের বিষয়ে তোমার কোনও যত্নই না থাকে, এবং যদি তুমি তাঁর স্বভাব ও সারসত্য উপলব্ধি না করো, তাহলে শেষ পর্যন্ত, পিছিয়ে পড়া মানুষটা হবে তুমিই। আমার বাক্যসকল শুনতে কঠিন বলে সেগুলোর প্রতি দোষারোপ কোরো না, তোমাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য সেগুলোকে দায়ী কোরো না। আমি যা বলি, তা সত্য; তোমাদের হতোদ্যম করা আমার অভিপ্রায় নয়। আমি তোমাদের কাছে কী চাই এবং কীভাবে তা করণীয় তা নির্বিশেষে, আমি আশা করি যে, তোমরা সঠিক পথে চলবে এবং ঈশ্বরের পথ অনুসরণ করবে, এবং যে, কখনোই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। তুমি যদি ঈশ্বরের বাক্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে অগ্রসর না হও, বা তাঁর পথ অনুসরণ না করো, তাহলে তুমি নিঃসন্দেহেই ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছ এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছ। তাই, আমার মনে হয় যে, আমার অবশ্যই উচিত তোমাদের কাছে কিছু বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া, এবং তোমাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে, স্পষ্টভাবে, কোনোরকম অনিশ্চয়তার চিহ্ন ছাড়াই, বিশ্বাস করানো, এবং ঈশ্বরের মনোভাব, তাঁর অভিপ্রায়, কীভাবে তিনি মানুষকে নিখুঁত করে তোলেন, কোন পদ্ধতিতে মানুষের পরিণাম নির্ধারণ করেন, সেইসব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে তোমাদের সাহায্য করা। এমন দিন যদি কখনো আসে যেদিন তুমি এই পথে যাত্রা শুরু করতে অসমর্থ হও, তার কোনো দায়িত্ব আমার নয়, কারণ এই বাক্যসকল তোমাদেরকে ইতিমধ্যেই খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়ে গিয়েছে। কীভাবে তুমি নিজের পরিণামের মোকাবিলা করবে, তা পূর্ণত তোমারই উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন ধরনের মানুষের পরিণামের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন মনোভাব রয়েছে, তাদের পরিমাপ করার জন্য তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিসমূহ রয়েছে, সেইসাথে, তাদের জন্য রয়েছে তাঁর নিজস্ব চাহিদানুসারী গুণমান। মানুষের পরিণাম পরিমাপ করার জন্য তাঁর মানদণ্ড সকলের প্রতি ন্যায্য—সেবিষয়ে সন্দেহমাত্র নেই! অতএব, কারো কারো ভীতি অপ্রয়োজনীয়। তোমরা কি এখন একটু স্বস্তি পেলে? আজকের মতো এটুকুই। বিদায়!

অক্টোবর ১৭, ২০১৩

পূর্ববর্তী: ভূমিকা

পরবর্তী: ঈশ্বরের কর্ম, ঈশ্বরের স্বভাব, এবং স্বয়ং ঈশ্বর ১

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন