প্রার্থনার অনুশীলন বিষয়ে
তোমরা তোমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রার্থনার উপর জোর দাও না। মানুষ প্রার্থনার বিষয়টিকে অবহেলা করে। প্রার্থনা সাধারণত করা হয়ে থাকে দায়সারাভাবে যেখানে মানুষ কেবল ঈশ্বরের সামনে শুধু ওঠাবসাই করে। কোনো মানুষ কখনও ঈশ্বরের সামনে তার হৃদয়কে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে না এবং ঈশ্বরের সত্যিকারের প্রার্থনায় নিয়োজিত হয় না। মানুষ কেবল বিপদে পড়লেই ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করে। এ-ই যখন অবস্থা তখন তুমি কি কখনও ঈশ্বরের কাছে সত্যিকারের প্রার্থনা করেছ? এমনটি কি কখনও হয়েছে যে তুমি যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ঈশ্বরের সম্মুখে চোখের জল ফেলেছ? এমন কি কখনও হয়েছে যে তুমি তাঁর নিকটে এসে নিজের অন্তরকে সমর্পণ করেছ? তুমি কি কখনও ঈশ্বরের নিকট মন খুলে প্রার্থনা করেছ? প্রার্থনার ফললাভ হয় চর্চার মাধ্যমে: সাধারণ সময়ে তুমি বাড়িতে প্রার্থনার চর্চা না রাখলে গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতে পারবে না, এবং যদি স্বাভাবিকভাবে ছোট কোনো জমায়েতে প্রার্থনা না করে থাক, তাহলে তুমি বড় সমাবেশে প্রার্থনায় অসমর্থ হবে। তুমি যদি নিয়মিত ঈশ্বরের নিকটবর্তী না হও বা ঈশ্বরের বাণী নিয়ে চিন্তা না কর, তাহলে প্রার্থনার সময় তোমার বলার মতো কিছুই থাকবে না এবং তুমি প্রার্থনা করলেও তা হবে শুধু লোক দেখানো; সেটি প্রকৃত প্রার্থনা হবে না।
প্রকৃত প্রার্থনা কী? এটা হচ্ছে ঈশ্বরকে তোমার হৃদয়ের কথা বলা, তাঁর ইচ্ছাকে উপলব্ধি করে তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা, ঈশ্বরের বাণীর মাধ্যমে তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা, ঈশ্বরের বিশেষ নৈকট্য অনুভব করা, তিনি যে তোমাদের সম্মুখেই আছেন তা অনুভব করা এবং তাঁকে কিছু বলার মতো কথা তোমার আছে এই বিশ্বাস রাখা। তোমার হৃদয় তাঁর আলোকে আলোকিত হয় এবং ঈশ্বরের প্রেমময়তা তুমি অনুভব করতে পারে। তুমি বিশেষ অনুপ্রেরণা অনুভব কর এবং তোমার কথা শুনে তোমার ভাই বোনেরাও পরিতৃপ্তির আনন্দ লাভ করে। তারা অনুভব করে যে তোমার কথা যেন তাদের অন্তরেরই কথা, তারা সেগুলোই বলতে চায়, যেন তোমার কথা তাদের কথারই প্রতিধ্বনি। এটাই হচ্ছে প্রকৃত প্রার্থনা। তুমি প্রকৃত প্রার্থনায় নিবেদিত হওয়ার পর তোমার হৃদয় শান্তি পাবে এবং তা তৃপ্তির আনন্দ অনুভব করতে পারবে। ঈশ্বরকে ভালোবাসার শক্তি জাগ্রত হবে এবং তুমি অনুভব করবে যে জীবনে ঈশ্বরকে ভালোবাসার চেয়ে বেশি মূল্যবান বা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনোকিছু নেই। এই সবই প্রমাণ করে যে তোমার প্রার্থনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তুমি কি কখনো এভাবে প্রার্থনা করেছ?
আর প্রার্থনার বিষয়বস্তু কী হবে? তোমার প্রার্থনা ধাপে ধাপে এগিয়ে নিতে হবে তোমার হৃদয়ের প্রকৃত অবস্থা এবং পবিত্র আত্মার কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে; তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে চাইছ এবং তা তাঁর কাঙ্ক্ষিত উপায়েই। তুমি যখন প্রার্থনার চর্চা শুরু করবে, তখন প্রথমেই তোমার হৃদয় ঈশ্বরের নিকট সমর্পণ করবে। ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানার চেষ্টা করবে না—শুধুমাত্র তোমার হৃদয়ের কথাগুলি ঈশ্বরের কাছে বলার চেষ্টা করবে। যখন তুমি ঈশ্বরের সামনে আসবে, তখন এভাবে শুরু করবে: "হে ঈশ্বর, আমি আজই বুঝতে পারলাম যে আমি আপনার অবাধ্যতা করতাম। আমি সত্যই অপবিত্র ও ঘৃণ্য। আমি শুধুমাত্র আমার জীবন ক্ষয় করে চলেছিলাম। আজ থেকে আমি আপনার ইচ্ছানুযায়ী জীবন পরিচালিত করবো। আমি অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করবো এবং আপনার ইচ্ছায় জীবন সঁপে দেব। আপনার আত্মা সর্বদা আমার উপর অধিষ্ঠান করুক, ক্রমাগত আমাকে প্রজ্ঞা আর সমৃদ্ধি দান করুন। আমাকে আপনার সম্মুখে দৃঢ়তার সাথে আপনার সাক্ষ্য বহন করতে দিন। শয়তানকে আপনার মহিমা, আপনার সাক্ষ্য এবং আপনার বিজয়ের প্রমাণ আমাদের মাধ্যমে প্রকাশিত করে দেখান।" তুমি এভাবে প্রার্থনা করতে পারলে, কেবল তখনই তোমার হৃদয় পূর্ণমাত্রায় স্বাধীন হবে। এভাবে প্রার্থনার মাধ্যমেই তোমার হৃদয় ঈশ্বরের নৈকট্য পাবে এবং যদি তুমি বারবার এভাবে প্রার্থনা করতে পার, পবিত্র আত্মা অবশ্যই তোমার মধ্যে বিরাজ করবেন। তুমি যদি সর্বদা ঈশ্বরকে এভাবে ডাকতে থাক এবং তোমার প্রতিজ্ঞা তাঁর সামনে উপস্থাপন কর, তাহলে এমন এক দিন আসবে যেদিন তোমার প্রতিজ্ঞা ঈশ্বরের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে, যখন তোমার হৃদয় এবং সমস্ত সত্ত্বা ঈশ্বর অধিগ্রহণ করবেন এবং তুমি তাঁর দ্বারা চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা লাভ করবে। তোমার জন্য প্রার্থনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন তুমি প্রার্থনা কর এবং পবিত্র আত্মার কাজ মাথা পেতে গ্রহণ কর, তখন তোমার হৃদয় ঈশ্বর দ্বারা পরিচালিত হবে, এবং ঈশ্বরকে ভালোবাসার শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। তুমি যদি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রার্থনা না কর, যদি তুমি ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হৃদয়কে উন্মুক্ত না কর, তাহলে ঈশ্বরের পক্ষে তোমার মধ্যে বিরাজ করার কোনও উপায় থাকবে না। যদি প্রার্থনা করার পর এবং তোমার হৃদয়ের কথা বলার পরেও, ঈশ্বরের আত্মা কাজ না শুরু করে এবং তুমি যদি অনুপ্রেরণা লাভ না কর, তাহলে এতে প্রমাণ হয় যে তোমার হৃদয়ে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, তোমার কথাগুলো সত্য নয় এবং সেগুলোতে এখনও অসততা রয়েছে। যদি প্রার্থনা করার পর তুমি তৃপ্তির আনন্দ পাও তাহলে বুঝবে তোমার প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে এবং ঈশ্বরের আত্মা তোমার মধ্যে বিরাজ করছে। ঈশ্বরের একজন সেবক হিসাবে তুমি প্রার্থনা ছাড়া থাকতে পারবে না। যদি তুমি সত্যিই ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগকে অর্থপূর্ণ এবং মূল্যবান মনে কর, তাহলে কি তুমি প্রার্থনা পরিত্যাগ করতে পারবে? ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ ছাড়া কেউ থাকতে পারবে না। প্রার্থনা ছাড়া তুমি দৈহিকভাবে শয়তানের দাসত্ববন্ধনেই থেকে যাবে; প্রকৃত প্রার্থনা ছাড়া তুমি অশুভর অন্ধকার ছায়ার প্রভাবেই রয়ে যাবে। আমি আশা করি তোমরা ভাই ও বোনেরা প্রতিদিন সত্যিকার প্রার্থনায় নিযুক্ত হতে পারবে। এটি শুধুই দায়সারা ব্যাপার নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জনের বিষয়। তুমি কি সকালের প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের বাণী উপভোগ করার জন্য তাড়াতাড়ি উঠতে খানিকটা ঘুম আর আনন্দ পরিত্যাগ করতে পারবে? তুমি যদি বিশুদ্ধচিত্তে প্রার্থনা কর এবং এইভাবে ঈশ্বরের বাণী আত্মস্থ কর, তাহলে তুমি তাঁর কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। যদি প্রতিদিন সকালে তুমি এটি কর, যদি প্রতিদিন তুমি তোমার হৃদয়কে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করার চর্চা কর, তাঁর সাথে যোগাযোগ কর এবং সম্পৃক্ত হও, তাহলে অবশ্যই ঈশ্বর সম্পর্কে তোমার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে এবং তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারবে। তুমি বল: "হে ঈশ্বর! আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। আমি আমার সমস্ত সত্ত্বা শুধুমাত্র আপনার দ্বারাই পবিত্র করতে সক্ষম, যাতে আমাদের থেকে আপনি গৌরবান্বিত হতে পারেন, যাতে আমাদের এই গোষ্ঠীর দ্বারা বহন করা সাক্ষ্য আপনি উপভোগ করতে পারেন। আমি আপনাকে আমাদের মধ্যে বিরাজ করার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে আমি আপনাকে সত্যিকারে ভালবাসতে এবং আপনাকে সন্তুষ্ট করতে এবং আপনাকেই আমার লক্ষ্য হিসাবে অনুসরণ করতে সমর্থ হই।" তুমি এই ভার বহন করার সাথেসাথে ঈশ্বর অবশ্যই তোমাকে পূর্ণতা দান করবেন। শুধুমাত্র তোমার নিজের সুবিধার জন্যই নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণ করতে এবং তাঁকে ভালবাসতেও তোমার প্রার্থনা করা উচিত। এটাই হল সেরা সত্যিকারের প্রার্থনা। তুমি কি ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসরণের জন্য প্রার্থনা করা কোনও ব্যক্তি?
আগে তোমরা জানতে না কিভাবে প্রার্থনা করতে হয় এবং তোমরা প্রার্থনার বিষয়টিকে অবহেলা করে এসেছ। এখন প্রার্থনার জন্য নিজেকে প্রশিক্ষিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। তুমি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসার জন্য তোমার মধ্যে শক্তি জাগ্রত করতে অক্ষম হও, তাহলে তুমি কিভাবে প্রার্থনা করবে? তুমি বলবে, "হে ঈশ্বর, আমার হৃদয় আপনাকে সত্যিকারের ভালোবাসতে অক্ষম। আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই, কিন্তু আমার শক্তির অভাব রয়েছে। আমার কী করা উচিৎ? আপনার দ্বারা আমার আধ্যাত্মিক চক্ষু উন্মোচিত হোক এবং আমার হৃদয় আপনার আত্মার দ্বারাই পরিচালিত হোক। এমন প্রশান্তি দিন যেন আমি আপনার সামনে উপস্থিত হওয়ার সাথে-সাথেই, নেতিবাচক সমস্ত কিছু ত্যাগ করতে পারি ফেলি; কোনও ব্যক্তি, বস্তু বা জিনিসের মোহে আবদ্ধ না হই এবং আপনার সামনে আমার হৃদয় সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত রাখি এবং এটি এমনভাবে প্রস্তুত করে নিই যাতে আমি আমার সমস্ত সত্ত্বা আপনার সামনে নিবেদন করতে পারি। যেভাবেই আপনি আমাকে পরীক্ষা করুন না কেন, আমি প্রস্তুত। এখন না আমি আমার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি নিয়ে ভাবছি, না আমি মৃত্যুর জোয়ালের নিচে আছি। এমন এক হৃদয় দিয়ে আমি জীবনের পথ খুঁজতে চাই, যা আপনাকেই চায়। প্রতিটি বিষয়, সবকিছু—সবই আপনার হাতে; আমার ভাগ্য আপনার হাতে এবং আপনি আমার জীবনটাই আপনার হাতে রেখেছেন। এখন আমি আপনার ভালবাসার সম্মতি নির্বিশেষেই আপনাকে ভালোবাসতে চাই, শয়তান শত হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও, আমি আপনাকে ভালোবাসতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।" যখন তুমি এই ধরনের সমস্যায় পড়বে, এভাবেই প্রার্থনা করবে। প্রতিদিন এভাবে প্রার্থনা করলে, ঈশ্বরকে ভালোবাসার শক্তি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।
কীভাবে একজন প্রকৃত প্রার্থনায় যোগ দিতে পারে?
প্রার্থনা করার সময়, অবশ্যই তোমার হৃদয় ঈশ্বরের সামনে শান্ত রাখতে হবে এবং তোমার হৃদয় আন্তরিকতাপূর্ণ হতে হবে। ঈশ্বরের নিকট প্রকৃত প্রার্থনা এবং যোগাযোগের সময়—তোমার অবশ্যই মিষ্টি কথায় ঈশ্বরের মনভোলানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। প্রার্থনার মূল বিষয়বস্তু এই মুহূর্তে ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষা পূরণকারী বিষয়ই হওয়া উচিত। আরও বেশি আলোকপ্রাপ্তি ও জ্ঞানের সমৃদ্ধির জন্য ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা কর; তোমার প্রকৃত অবস্থা এবং সমস্যার কথা প্রার্থনার মাধ্যমে জানাও, একইসাথে তোমার প্রতিজ্ঞাগুলো ঈশ্বরের সামনে তুলে ধর। প্রার্থনা মানে কোনো নিয়মের অন্ধ অনুসরণ নয়; বরং আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের অনুসন্ধান করা। যাচ্ঞা কর ঈশ্বর যেন তোমার অন্তরকে সুরক্ষা দেন, যাতে বারবার তোমার হৃদয় তাঁর সামনে নত হয়; যেন তিনি যে স্থানে তোমাকে রেখেছেন, সেই অবস্থানেই তুমি নিজের সম্পর্কে জান, নিজেকে বিনীত কর এবং আত্মবিস্মৃত হও, এভাবেই তুমি ঈশ্বরের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে এবং সত্যিকারভাবে ঈশ্বরকে ভালবাসেন এমন একজন হয়ে উঠতে পারবে।
প্রার্থনার তাৎপর্য কী?
প্রার্থনা হলো এমন একটি পন্থা যার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের সাথে সহযোগিতা করে, এমন এক মাধ্যম যার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরকে ডাকে এবং এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা চালিত হয়। এটা বলা যায় যে প্রার্থনা না করা ব্যক্তিরা মৃতের সমান| তারা আত্মা বিবর্জিত, যেটি প্রমাণ করে যে ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। প্রার্থনা ছাড়া স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করা অসম্ভব, এতে পবিত্র আত্মার কাজের সাথে সম্পর্ক কমে আসে। প্রার্থনাহীন থাকা মানে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং এইভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়া অসম্ভব। ঈশ্বরবিশ্বাসী হিসাবে একজন যত বেশি প্রার্থনা করেন, তত বেশি তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছায় চলেন, তত বেশি তিনি প্রতিজ্ঞায় দৃঢ়বদ্ধ হন এবং ঈশ্বরের নতুন প্রজ্ঞা লাভ করতে তিনি তত বেশি সক্ষম হন। যার ফলস্বরূপ এই ধরনের ব্যক্তি খুব দ্রুত পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিপূর্ণতা লাভ করেন।
কী ধরনের ফলাফল অর্জন করা প্রার্থনার উদ্দেশ্য?
মানবজাতি প্রার্থনার চর্চা করতে এবং প্রার্থনার তাৎপর্য অনুধাবন করতে সক্ষম হতে পারে, কিন্তু কার্যকর প্রার্থনা করা কোনও সাধারণ বিষয় নয়। প্রার্থনা কেবল কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম পালন করে যাওয়া কিংবা শুধু ঈশ্বরের বাণী পাঠ করা নয়। অর্থাৎ, প্রার্থনা মানে কিছু শব্দ তোতাপাখির মত করে আওড়ানো এবং অন্যদের অনুকরণ করা নয়। প্রার্থনার মাধ্যমে, একজনকে অবশ্যই সেই অবস্থায় পৌঁছাতে হবে যেখানে কেউ তার হৃদয় ঈশ্বরকে সঁপে দিতে পারে, তাকে তার হৃদয় উন্মুক্ত রাখতে হয় যাতে করে তা ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। প্রার্থনা ফলপ্রসূ করতে হলে তা অবশ্যই ঈশ্বরের বাণী পাঠের দ্বারাই করতে হবে। কেবল ঈশ্বরের বাণীর মধ্য দিয়ে প্রার্থনার মাধ্যমেই মানুষ মহান প্রজ্ঞা লাভ করতে পারে এবং আলোকপ্রাপ্ত হতে পারে। একটি প্রকৃত প্রার্থনার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে: এমন একটি হৃদয়ের অধিকারী হওয়া যা শুধু ঈশ্বরের ইচ্ছাই আকাঙ্ক্ষা করে এবং উপরন্তু তাঁর চাওয়া পূরণ করার অভিপ্রায় রাখে; ঈশ্বর যা ঘৃণা করেন তাকে ঘৃণা করা এবং তারপর এই ধারণার ওপর ভিত্তি করে, এর সম্পর্কে আরও উপলব্ধি করা এবং ঈশ্বরের প্রকাশিত সত্য সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান এবং স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করা। প্রার্থনার সাথে প্রতিজ্ঞা, বিশ্বাস, জ্ঞান এবং চর্চার উপায় থাকলে তবেই তাকে প্রকৃত প্রার্থনা বলা যেতে পারে এবং কেবল এই ধরনের প্রার্থনাই কার্যকর হতে পারে। এই প্রার্থনা অবশ্যই ঈশ্বরের বাণী উপভোগ করার উপরই নির্মিত হতে হবে, এটি অবশ্যই বাণী অনুসারে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে এবং হৃদয়কে অবশ্যই ঈশ্বরকে খুঁজতে সক্ষম এবং তাঁর সামনে নত হতে হবে। এই ধরনের প্রার্থনাই ইতিমধ্যে ঈশ্বরের সাথে প্রকৃত যোগাযোগের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
প্রার্থনা সম্পর্কিত মৌলিক প্রাথমিক জ্ঞান:
১. যা মনে আসে তা অন্ধভাবে বলবে না। তোমার হৃদয় ভাবগম্ভীর থাকতে হবে, অর্থাৎ, তুমি যখন প্রার্থনা করবে তখন অবশ্যই একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
২. প্রার্থনায় ঈশ্বরের বাণী থাকা আবশ্যক; এটা অবশ্যই ঈশ্বরের বাণীর ভিত্তিতে হতে হবে।
৩. প্রার্থনার সময় অবশ্যই পুরানো বিষয় টেনে আনবে না। তোমার প্রার্থনা ঈশ্বরের বর্তমান বাণীর সাথে সম্পর্কিত হতে হবে এবং প্রার্থনা করার সময় ঈশ্বরকে তোমার অন্তর্নিহিত ভাবনাগুলো বলতে হবে।
৪. দলগত প্রার্থনা অবশ্যই কেন্দ্রীভূত হতে হবে, যা অপরিহার্যভাবেই, পবিত্র আত্মার বর্তমান কাজ।
৫. সবাইকেই সুপারিশের প্রার্থনা শিখতে হবে। এটি ঈশ্বরের ইচ্ছার বিবেচনা প্রদর্শনের একটি উপায়ও বটে।
ব্যক্তিগত প্রার্থনাময় জীবন প্রার্থনার তাৎপর্য বোঝা এবং প্রার্থনার প্রাথমিক জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। দৈনন্দিন জীবনে তোমার নিজের ত্রুটিগুলির জন্য বারবার প্রার্থনা কর, জীবনে তোমার স্বভাব পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা কর এবং ঈশ্বরের বাণী সম্পর্কিত তোমার জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রার্থনা কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তাদের নিজের জন্য প্রার্থনাময় জীবন গড়ে তোলা, ঈশ্বরের বাণী উপলব্ধি করতে তাদের প্রার্থনা করা উচিত, এবং প্রার্থনা করা উচিত ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জানতে। ঈশ্বরের সামনে তোমার নিজের ব্যক্তিগত অবস্থা প্রকাশ কর এবং তুমি কীভাবে প্রার্থনা করছ তার ভাবনা বাদ দিয়ে আন্তরিক হও এবং মূল বিষয় হল সত্যিকারের উপলব্ধি অর্জন করা ও ঈশ্বরের বাণীর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা। যে ব্যক্তি আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশের চেষ্টা করে তাকে অবশ্যই বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করতে সমর্থ হতে হবে। নীরব প্রার্থনা, ঈশ্বরের বাণী অনুধাবন করা, ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জানা—এগুলি স্বাভাবিক আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশের জন্য আধ্যাত্মিক সঙ্গলাভের উদ্দেশ্যমূলক কাজের উদাহরণ, যা সব সময়ই ঈশ্বরের সামনে নিজের প্রগতি করে এবং জীবনে আরও বেশি উন্নতি করতে সহায়তা করে। সংক্ষেপে, তুমি যাকিছু কর, সেটা ঈশ্বরের বাণী গ্রহণ করাই হোক, বা নীরবে প্রার্থনা করা হোক অথবা উচ্চস্বরে ঘোষণা করাই হোক, তাতে যেন তুমি ঈশ্বরের বাণী, তাঁর কাজ এবং যা তিনি তোমার মধ্যে অর্জন করতে চান তা স্পষ্টভাবে দেখতে সমর্থ হও। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, তুমি যা কর তা ঈশ্বর-নির্ধারিত মানে পৌঁছানোর জন্য এবং তোমার জীবনকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য। ঈশ্বর মানুষের কাছে নূন্যতম যা চান তা হল মানুষ যেন তাঁর কাছে হৃদয় উন্মুক্ত করতে সমর্থ হয়। মানুষ যদি তার সত্যিকারের হৃদয় ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে এবং তার হৃদয়ের সত্য তাঁর সামনে তুলে ধরে, তার অর্থ ঈশ্বর তার মাধ্যমে কাজ করতে চান। ঈশ্বর মানুষের ছলনাপূর্ণ হৃদয় চান না, বরং তিনি চান বিশুদ্ধ ও সৎ হৃদয়। মানুষ যদি তার অন্তর থেকে ঈশ্বরের সাথে কথা না বলে, তাহলে ঈশ্বর তার হৃদয়কে পরিচালিত করবেন না বা তার মধ্যে কাজ করবেন না। অতএব, প্রার্থনার মূল বিষয় হল তোমার অন্তর থেকে ঈশ্বরের সাথে কথা বলা, তোমার ত্রুটি বা বিদ্রোহী স্বভাব সম্পর্কে তাঁকে বলা, তাঁর সামনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত করা; তবেই ঈশ্বর তোমার প্রার্থনার প্রতি আগ্রহী হবেন, অন্যথায় তিনি তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন। প্রার্থনার ন্যূনতম মাপকাঠি হল তুমি অবশ্যই ঈশ্বরের সামনে তোমার হৃদয়কে শান্ত রাখতে সমর্থ হবে এবং এটি ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে না। এই পর্যায়ে, হয়ত তুমি এক নতুন বা উচ্চতর অন্তর্দৃষ্টি অর্জন করতে পারলে না, কিন্তু তোমাকে অবশ্যই স্থিতি বজায় রাখতে প্রার্থনার ব্যবহার করতে হবে—তোমার পিছিয়ে পড়লে চলবে না। এটি তোমাকে অবশ্যই অর্জন করতে হবে। যদি তুমি এটিও সম্পন্ন করতে না পার, তবে এটি প্রমাণ করে যে তোমার আধ্যাত্মিক জীবন সঠিক পথে নেই। ফলস্বরূপ, তুমি তোমার প্রাথমিক লক্ষ ধরে রাখতে সমর্থ হবে না, তুমি ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারাবে এবং তোমার সংকল্প ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশ করেছ কি-না সেটি বুঝে ফেলার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, তোমার প্রার্থনাগুলো সঠিক পথে আছে কি-না তা খেয়াল করা। সকল মানুষকেই এই বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে; তাদের সকলকে অবশ্যই নিজেদেরকে সচেতনভাবে প্রার্থনায় প্রশিক্ষিত করার কাজটি করতে হবে, নিষ্ক্রিয়ভাবে অপেক্ষা না করে বরং সচেতনভাবে পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার জন্যই তা করতে হবে। তাহলেই তাঁরা প্রকৃত ঈশ্বরসন্ধানী ব্যক্তি হয়ে উঠবেন।
প্রার্থনা শুরুর সময়ে কখনই নিজেকে অতিক্রমের চেষ্টা করবে না এবং একবারেই সবকিছু অর্জন করার আশা করবে না। তুমি এই আশা করে অযৌক্তিক দাবি করতে পার না যে, বলার সাথে-সাথেই তুমি পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হবে, অথবা তুমি প্রজ্ঞা এবং সমৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে কিংবা ঈশ্বর তোমার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। তা কখনই হবে না; ঈশ্বর অতিপ্রাকৃত কিছু প্রদর্শন করেন না। ঈশ্বর তাঁর নিজ সময়ে মানুষের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং কখনওবা তিনি তোমার বিশ্বাস পরীক্ষা করেন যে তুমি তাঁর প্রতি অনুগত কিনা। প্রার্থনার সময় তোমার বিশ্বাস, অধ্যবসায় এবং সংকল্প থাকতে হবে। অধিকাংশ লোক প্রশিক্ষণ শুরু করেই হাল ছেড়ে দেয় কারণ পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হতে তারা ব্যর্থ হয়। এই কাজ করলে হবে না! তোমাকে অবশ্যই ধৈর্য ধরতে হবে; তোমাকে অবশ্যই পবিত্র আত্মার চলন অনুভব করা এবং অনুসন্ধান ও আবিষ্কারে মনোযোগ দিতে হবে। কখনো হয়ত তোমার চর্চার পথ সঠিক থাকে না এবং কখনো বা তোমার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য এবং ধারণাগুলি ঈশ্বরের সামনে দৃঢ় থাকে না এবং সেজন্য ঈশ্বরের আত্মা তোমাকে চালিত করতে ব্যর্থ হয়। অন্যান্য সময়ে তুমি অনুগত কিনা তা ঈশ্বর দেখেন। সংক্ষেপে বললে, প্রশিক্ষণের উপর তোমাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যদি তুমি বুঝতে পার যে তোমার চর্চা শিথিল হয়ে যাচ্ছে, তুমি তোমার প্রার্থনার ধরন বদলাতে পার। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি একান্ত হৃদয়ে অনুসন্ধান কর এবং পেতে চাও, ততক্ষণ পবিত্র আত্মা অবশ্যই তোমাকে এই সঠিক পথে নিয়ে যাবে। কখনওবা তুমি আন্তরিক হৃদয়ে প্রার্থনা কর কিন্তু মনে হয় না যে তুমি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছ। এই সময়ে তোমাকে অবশ্যই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে যে ঈশ্বর তোমার প্রার্থনার উপর নজর রাখেন; তোমার প্রার্থনায় উদ্যম থাকতে হবে।
সৎ ব্যক্তি হও; তোমার হৃদয়ের প্রবঞ্চনা থেকে তোমাকে মুক্তি দিতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর। প্রার্থনার মাধ্যমে সর্বদা নিজেকে পরিশুদ্ধ কর, প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হও এবং তোমার স্বভাব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে। প্রকৃত আধ্যাত্মিক জীবন হল প্রার্থনার জীবন—এটি এমন একটি জীবন যা পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়। মানুষের স্বভাব পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হওয়ার প্রক্রিয়া। যে জীবন পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয় না তা কোনো আধ্যাত্মিক জীবন নয়, শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-আচরণের জীবন। কেবলমাত্র যারা প্রায়শই পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয় এবং পবিত্র আত্মা দ্বারা প্রজ্ঞা এবং জ্ঞানের আলোক লাভ করেছে, তারাই প্রকৃত অর্থে আধ্যাত্মিক জীবনে প্রবেশ করেছে। প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে মানুষের স্বভাব ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। ঈশ্বরের আত্মা তাকে যত বেশি চালিত করে, সে তত বেশি সক্রিয় এবং অনুগত হয়ে ওঠে। সুতরাং তাতে তার হৃদয়ও ধীরে ধীরে পরিশুদ্ধ হয় এবং ধীরে ধীরে তার স্বভাব পরিবর্তিত হয়। এটিই হল প্রকৃত প্রার্থনার প্রভাব।