অধ্যায় ২৪
আমার শাস্তি এসে সকল মানুষের উপর আপতিত হয়, তবু সকল মানুষের থেকে তা দূরবর্তী রয়ে যায়। প্রতিটি মানুষের সমগ্র জীবন আমার প্রতি প্রেম ও ঘৃণায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং কেউ কখনো আমায় জানে নি—আর তাই আমার প্রতি মানুষের মনোভাব ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়, এবং তা স্বাভাবিক হতে অপারগ। তবু সর্বদাই আমি মানুষের যত্ন নিয়েছি ও তাদের সুরক্ষিত রেখেছি, এবং কেবলমাত্র তাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে সে আমার সকল কার্যাদি প্রত্যক্ষ করতে ও আমার আকুল অভিপ্রায় উপলব্ধি করতে অসমর্থ। সকল রাষ্ট্রের মধ্যে আমিই সর্বাধিক অগ্রগামী, এবং সকল মানুষের মধ্যে আমিই সর্বোচ্চ; কেবল মানুষ আমাকে জানে না। বহু বছর যাবৎ আমি মানুষের মাঝে বাস করেছি এবং মানবজগতে জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, তবু সে সবসময় আমায় অগ্রাহ্য করেছে এবং আমাকে মহাকাশ থেকে আগত এক সত্তা বলে গণ্য করেছে। পরিণামস্বরূপ, স্বভাব ও ভাষাগত বৈষম্যের কারণে, মানুষ আমার সাথে এমনভাবে আচরণ করে যেন আমি রাস্তার কোনো অপরিচিত ব্যক্তি। মনে হয়, আমার বেশভূষাও যেন খুব বেশি স্বাতন্ত্র্যসূচক, যার ফলে আমার সমীপবর্তী হতে মানুষ সাহসের অভাব বোধ করে। কেবল তখনই আমি মানুষের মধ্যিখানে জীবনের একাকীত্বকে অনুভব করি, এবং শুধুমাত্র তখনই আমি মানবজগতের অবিচার টের পাই। পথচারীদের মাঝে আমি হেঁটে চলি, তাদের সকলের মুখ লক্ষ্য করে দেখি। মনে হয় যেন তারা এক ব্যাধি-জর্জরিত জীবনধারণ করে, এমন এক ব্যাধি যা তাদের মুখ বিষণ্ণতায় ভরিয়ে তোলে; এবং মনে হয় যেন তারা শাস্তির মধ্যেও বাস করছে, যা তাদের অব্যাহতিকে প্রতিহত করে। মানুষ নিজেকে নিগড় পড়িয়ে রাখে, এবং ছদ্ম বিনয়ের প্রদর্শন করে। আমার কাছে অধিকাংশ মানুষ এক মিথ্যা ভাবমূর্তি সৃষ্টি করে যাতে আমি তাদের তারিফ করি, এবং অধিকাংশ মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে আমার সম্মুখে নিজেদের অনুকম্পনীয় হিসাবে উপস্থাপন করে যাতে তারা আমার সহায়তা লাভ করতে পারে। আমার আড়ালে, সকল মানুষ আমায় মিষ্টি কথায় খুশি করতে চায় এবং আমায় অমান্য করে। আমি কি ভুল বলছি? এটাই কি মানুষের উদ্বর্তনের কৌশল নয়? নিজের জীবনে কে কবে আমায় যাপন করেছে? অন্যদের মাঝে কে কবে আমায় মহিমান্বিত করেছে? আত্মার কাছে কে কবে দায়বদ্ধ ছিল? শয়তানের সম্মুখে আমার হয়ে সাক্ষ্যে কে কবে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে? আমার প্রতি তাদের যে “আনুগত্য”, তা-র সাথে কে কবে সত্যনিষ্ঠতাকে সংযুক্ত করেছে? আমার নিমিত্ত কে কবে অতিকায় লাল ড্রাগনের দ্বারা বহিষ্কৃত হয়েছে? মানুষ শয়তানের হাতে তাদের ভাগ্যকে সঁপে দিয়েছে এবং এখন তারা তার সাথে পাপপঙ্কে নিমগ্ন রয়েছে; আমাকে অমান্য করতে তারা সিদ্ধহস্ত, তারা আমার প্রতি বিরোধিতার উদ্ভাবক, এবং আমার প্রতি দায়সারা আচরণরীতিতে তারা “অগ্রসর পর্যায়ের ছাত্র”। তার নিজস্ব নিয়তির খাতিরে, মানুষ পৃথিবীর বুকে ইতস্তত হাতড়ে বেড়ায়, আর আমি ইশারায় যখন তাকে আহ্বান করি, তখন সে আমার মহার্ঘতার অনুভবে অসমর্থই রয়ে যায়, এবং নিজের আত্মনির্ভরতার উপর “আস্থা” অক্ষুণ্ণ রাখে, অন্যদের “গলগ্রহ” হয়ে উঠতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। মানুষের “আশাআকাঙ্ক্ষা” মূল্যবান, তবু কারো আশাআকাঙ্ক্ষা কখনো পূর্ণ মানসূচক সংখ্যা অর্জন করেনি: আমার সম্মুখে তারা সকলেই নিঃশব্দে ভূপাতিত তথা ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
প্রত্যেকটি দিন আমি বাক্যোচ্চারণ করি, এবং প্রতিদিন আমি নতুন কার্য সম্পাদন করি। মানুষ যদি তার সর্বশক্তি প্রয়োগ না করে, তাহলে আমার কণ্ঠস্বর শ্রবণ করতে তার অসুবিধা হবে, এবং আমার মুখমণ্ডল দর্শন করা তার কাছে কষ্টসাধ্য বোধ হবে। হতে পারে যে এই প্রিয়তমগণ নিরতিশয় মনোরম, এবং তাঁর উক্তিও যৎপরোনাস্তি বিনম্র, কিন্তু মানুষ অনায়াসে তাঁর গৌরবান্বিত মুখমণ্ডল দর্শন করতে ও তাঁর কণ্ঠস্বর শ্রবণ করতে অক্ষম। যুগ-যুগান্ত ধরে, কেউই কখনো সহজে আমার মুখচ্ছবি অবলোকন করেনি। একবার আমি পিতরের সাথে বার্তালাপ করেছিলাম এবং পৌলের সম্মুখে “আবির্ভূত হয়েছিলাম”, কিন্তু—ইসরায়েলবাসীদের বাদ দিয়ে—আর কেউ কখনো প্রকৃত অর্থে আমার মুখমণ্ডল দর্শন করেনি। আজ, আমি নিজে মানুষের মাঝে এসেছি তার সাথে একত্রে বসবাস করবো বলে। এমন কি হতে পারে যে তোমাদের কাছে তা দুর্লভ ও মহার্ঘ ঘটনা বলে বোধ হচ্ছে না? তোমরা কি তোমাদের সময়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করতে চাও না? তোমরা কি সময়কে এইভাবে তোমাদের পাশ কাটিয়ে বয়ে চলে যেতে দিতে চাও? সময়ের ঘড়ির কাঁটা কি সহসা মানুষের মনে স্থগিত হয়ে যেতে পারে? নাকি সময় কখনো উল্টোমুখে প্রবাহিত হতে পারে? কিংবা মানুষ কি পুনরায় তরুণ হয়ে উঠতে পারে? আজকের এই সৌভাগ্যমণ্ডিত জীবন আবার কি কখনো ফিরে আসতে পারে? মানুষের এই “অপচয়”-এর নিমিত্ত তাকে আমি যথোপযুক্ত এক “পুরস্কার” প্রদান করি না। অন্য সকলকিছুর থেকে বিচ্ছিন্নভাবে আমি অবিরাম কেবল আমার কার্য সম্পাদন করে যাই, এবং মানুষ ব্যস্ত বলে, কিংবা তার রোদনধ্বনির কারণে, কালের বহমানতা আমি অবরুদ্ধ করি না। বহু সহস্র বছর ধরে, কেউই আমার শক্তিকে বিভাজিত করতে পারেনি, এবং কেউই আমার আদি পরিকল্পনাকে বিপর্যস্ত করতে সক্ষম হয়নি। আমি দেশকে অতিক্রম করে যাবো, এবং কাল থেকে কালান্তরে প্রসারিত হবো, এবং একই সাথে, প্রবৃত্ত হবো সকলকিছুর ঊর্ধ্বে ও অভ্যন্তরে আমার সামগ্রিক পরিকল্পনার কেন্দ্রস্থলের কর্মে। একজন মানুষও আমার কাছ থেকে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ প্রাপ্ত হতে, বা আমার হস্ত থেকে “পুরস্কার” লাভ করতে সমর্থ হয়নি, যদিও তারা মুখব্যাদান করে এগুলির জন্য প্রার্থনা জানায়, এবং যদিও তারা তাদের হস্ত প্রসারিত করে আমার কাছ থেকে এগুলি দাবি করে। এই মানুষগুলির মধ্যে কেউই কখনো আমায় বিচলিত করে তুলতে পারেনি, এবং আমার “হৃদয়হীন” কণ্ঠস্বরের দ্বারা তারা সকলেই ধাক্কা খেয়ে পিছু হঠেছে। অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে তারা “নিতান্তই অল্পবয়স্ক”, আর তাই তারা অপেক্ষারত যে, কখন তাদের প্রতি আমি মহান করুণা প্রদর্শন করবো, কখন দ্বিতীয়বারের জন্য তাদের প্রতি আমি অনুকম্পাপরায়ণ হবো, এবং তারা চায়, যে আমি তাদের পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অনুমতি দিই। কিন্তু কীভাবে আমি লঘুভাবে আমার পরিকল্পনায় অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করতে পারি? মানুষের যৌবনাবস্থার খাতিরে আমি কি পৃথিবীর আবর্তন স্থগিত করে দিতে পারি, যাতে সে আরো কয়েক বছর মর্ত্যলোকে জীবনধারণ করতে পারে? মানুষের মস্তিষ্ক অতীব জটিল, তবু মনে হয় যে তাতে কিছু জিনিসের ঘাটতিও রয়েছে। পরিণামে, আমার কার্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যাহত করার লক্ষ্যে মানুষের মনে প্রায়শই “চমৎকার উপায়সমূহের” উদয় হয়।
যদিও আমি বহুবার মানুষের পাপ ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তার দুর্বলতার দরুন তাকে বিশেষ অনুকুল্য প্রদর্শন করেছি, কিন্তু বহুবার তাদের অজ্ঞতার দরুন তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থাও আমি নিয়েছি। আসলে কীভাবে আমার সদাশয়তার কদর করতে হয়, মানুষ কখনো তা জানেনি, তার অজ্ঞতা এতটাই যে, সে তার বর্তমান অবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে: সে ধূলায় আচ্ছাদিত, তার পোশাক শতচ্ছিন্ন, তার কেশদাম আগাছার ঝোপের মতো তার মস্তক আবৃত করেছে, তার মুখে পুরু ময়লার আস্তরণ লেপে রয়েছে, তার পায়ে পরিহিত রয়েছে কাজ-চালানো গোছের স্বহস্তনির্মিত পাদুকা, মরা ঈগলের নখরশোভিত পায়ের মতো তার হস্তযুগল দেহের দুপাশে দুর্বলভাবে প্রলম্বিত রয়েছে। যখন আমি চক্ষু উন্মীলিত করে চেয়ে দেখি, মনে হয় যেন মানুষ সদ্য অতল গহ্বর থেকে উঠে এসেছে। আমি রাগান্বিত না হয়ে পারি না: মানুষের প্রতি সদাসর্বদাই আমি সহিষ্ণু থেকেছি, তবু কীভাবে আমার পবিত্র রাজ্যে শয়তানকে আমি যদৃচ্ছ আসা-যাওয়া করার অনুমতি দিতে পারি? কীভাবে কোনো ভিক্ষুককে আমি আমার গৃহস্থালিতে নিখরচায় ভোজন করার অনুমতি দিতে পারি? এক অপরিচ্ছন্ন দানবকে কীভাবে আমি আমার পরিবারের অতিথি হিসাবে মেনে নিতে পারি? মানুষ সবসময়ই ছিল “নিজের বিষয়ে কঠোর” ও “অন্যের বিষয়ে প্রশ্রয়প্রবণ,” তবু আমার প্রতি কখনো সে ন্যূনতমও সৌজন্যপরায়ণ ছিল না, আমি স্বর্গের ঈশ্বর বলে আমার প্রতি সে ভিন্নরকমের আচরণ করে, এবং আমার জন্য তার কখনো সামান্যতম মমত্ববোধও ছিল না। মনে হয় যেন মানুষের চক্ষু সবিশেষ তীক্ষ্ণদৃষ্টিসম্পন্ন: যখনই সে আমার সম্মুখীন হয়, তার মুখভঙ্গি তৎক্ষণাৎ পরিবর্তিত হয়ে যায়, এবং তার শীতল, ভাবলেশশূন্য মুখাবয়বে সে কিছুটা বেশি অভিব্যক্তি যোগ করে। আমার প্রতি তার মনোভাবের কারণে মানুষের উপর আমি যথোচিত দণ্ডাজ্ঞা জারি করি না, বরং ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বদেশ থেকে আকাশের দিকে চেয়ে দেখি, এবং সেখান থেকেই আমার ধরাধামের কার্য সম্পন্ন করে চলি। মানুষের স্মরণকালে, কোনো মানুষের প্রতি আমি কখনো সহৃদয়তা প্রদর্শন করি নি, কিন্তু কারো প্রতি খারাপ আচরণও আমি কখনো করি নি। মানুষ তার অন্তরে আমার নিমিত্ত একটি “শূন্য আসন” ছেড়ে রাখে না বলে, সব রকমের সতর্কতা দূরে নিক্ষেপ করে আমি যখন তার অভ্যন্তরে বাস করি, তখন সে রূঢ়ভাবে আমায় বহিষ্কৃত করে, এবং তারপর মিষ্ট বাক্য ও স্তাবকতার মাধ্যমে কৈফিয়ত দেওয়ার চেষ্টা করে, বলে যে, আমার উপভোগের নিমিত্ত নিজেকে প্রদান করার পক্ষে নাকি সে নিতান্তই অযোগ্য ও অক্ষম। কথা বলার সময়, তার মুখমণ্ডল মাঝেমাঝেই “অন্ধকার মেঘে” আচ্ছন্ন হয়, যেন যে কোনো মুহূর্তে মানুষের মাঝে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কিন্তু তবুও, সংশ্লিষ্ট বিপদকে কোনোরকম বিবেচনার মধ্যে না এনেই, সে আমায় চলে যেতে বলে। মানুষকে যদিও আমি আমার বাক্য ও আমার আলিঙ্গনের উষ্ণতা প্রদান করি, কিন্তু মনে হয় বুঝি তার কোনো শ্রবণযন্ত্রই নেই, এবং ফলত, আমার কণ্ঠস্বরের প্রতি সে কিছুমাত্র অভিনিবেশ প্রদান করে না, পরিবর্তে দৃঢ়মুষ্টিতে নিজের মাথা চেপে ধরে ক্ষিপ্রগতিতে সে প্রস্থান করে। কিছুটা নিরাশ হয়ে মানুষের কাছ থেকে আমি বিদায় নিই, কিন্তু একই সঙ্গে কিছুটা ক্রুব্ধও হই। ইতিমধ্যে মানুষও প্রবল বাত্যা ও প্রকাণ্ড তরঙ্গের আক্রমণের মাঝে তৎক্ষণাৎ অন্তর্হিত হয়ে যায়। কিছু পরেই, আমার উদ্দেশ্যে সে আর্তনাদ করে ওঠে, কিন্তু বায়ু ও লহরীর বিচলনকে সে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে? ক্রমে ক্রমে, মানুষের সকল চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে যায়, যতক্ষণ না তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
যুগ-যুগান্তকাল পূর্বে, ব্রহ্মাণ্ডের ঊর্ধ্বদেশ থেকে সকল ভূভাগের উপর আমি দৃষ্টিপাত করেছিলাম। পৃথিবীর বুকে আমি এক মহান উদ্যোগের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম: আমার আপন ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এক মানবজাতির সৃজন, এবং পৃথিবীর বুকে স্বর্গের মতো এক রাজ্যের নির্মাণ, যাতে আমার শক্তি গগনমণ্ডলকে ভরিয়ে তুলতে পারে এবং আমার প্রজ্ঞা সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার অবকাশ পায়। আর তাই আজ, হাজার হাজার বছর পরেও, আমি আমার পরিকল্পনা চালিয়ে নিয়ে যাই। তবু ধরাতলে আমার পরিকল্পনা বা ব্যবস্থাপনার কথা কেউ জানে না, আর পৃথিবীপৃষ্ঠে আমার রাজ্যকে দর্শন করা তো দূর অস্ত। তাই, মানুষ ছায়াকে তাড়া করে বেড়ায়, এবং আমায় প্রতারণা করতে আমার সম্মুখে আসে, স্বর্গরাজ্যে আমার আশীর্বাদের এক “নীরব মূল্য” পরিশোধ করতে চায়। পরিণতিস্বরূপ, সে আমার ক্রোধের উদ্রেক ঘটায়, এবং আমি তার উপর বিচার ডেকে আনি, কিন্তু তবু সে জাগ্রত হয় না। মনে হয় সে যেন মাটির নীচে কাজকর্ম করছে, মাটির উপরে যা আছে সে বিষয়ে সম্পূর্ণ অবিদিত, কারণ সে একমাত্র নিজের আশাআকাঙ্ক্ষার পিছনেই ধাবমান রয়ে যায়। সকল মানুষের মধ্যে, আমি কখনো এমন একজনকেও দেখিনি যে আমার দীপ্যমান আলোকের নীচে বসবাস করে। তারা এক অন্ধকারের জগতে বাস করে, এবং মনে হয় বুঝি তারা হতাশার মাঝে জীবনধারণেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আলোকের অভ্যুদয়কালে তারা বহু দূরত্বে অবস্থান করে, এবং মনে হয় যেন আলো এসে তাদের কার্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে; তার ফলে, তাদের কিছুটা উত্যক্ত দেখায়, যেন আলো এসে তাদের সকল শান্তি চুরমার করে প্রগাঢ় নিদ্রা থেকে তাদের বঞ্চিত করেছে। পরিণামস্বরূপ, আলোকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে মানুষ তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। মনে হয় এই আলোকও যেন সকল সচেতনতা বিরহিত, এবং সেহেতুই বুঝিবা তা মানুষকে তার ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে, এবং মানুষ যখন জাগ্রত হয়, রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সে স্বীয় চক্ষু মুদিত করে। আমার প্রতি সে কিছুটা অপ্রসন্ন, কিন্তু আমার অন্তরে আমি পরিস্থিতির খুঁটিনাটির বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। ক্রমশ আলোকে আমি তীব্রতর করি, সকল মানুষকে আমি আমার আলোকের মাঝে বসবাস করতে এতটাই বাধ্য করি যে স্বল্পকালের মধ্যেই আলোকের অনুষঙ্গী হওয়ার বিষয়ে তারা সুদক্ষ হয়ে ওঠে, এবং, তদুপরি, সকলেই আলোকে মূল্যবান জ্ঞান করে। এই ক্ষণে, আমার রাজ্য এসে মানুষের মাঝে উপস্থিত হয়েছে, সকল মানুষ আনন্দে নেচে উঠে উদযাপন করছে, পৃথিবী সহসা উৎফুল্ল কলরবে পূর্ণ হয়, এবং আলোকের অভ্যুদয়ের দ্বারা বহু সহস্র বছরের নিঃস্তব্ধতা বিদীর্ণ হয়ে যায় …
মার্চ ২৬, ১৯৯২