স্বয়ং অনন্য ঈশ্বর ১০

সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর (৪)

আজ আমরা বিশেষ একটি বিষয়ে যোগাযোগ স্থাপন করছি। প্রত্যেক বিশ্বাসীর ক্ষেত্রে, মাত্র দুটি বিষয় জানা, অনুভব করা ও উপলব্ধি করার প্রয়োজন। এই দুটি বিষয় কী? প্রথমটি হল ব্যক্তিমানুষের জীবনে প্রবেশ, এবং দ্বিতীয়টি হল ঈশ্বরকে জানা সংক্রান্ত। সম্প্রতি যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে, তোমাদের কি মনে হয় এটা অর্জনযোগ্য? এটা কি বলা সমীচীন যে বিষয়টা প্রকৃতপক্ষেই অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে। তোমরা আমার বাক্যগুলির দ্বারা প্রত্যয়ী নাও হতে পারো, কিন্তু কেন আমি এমন বলি? আমি এমন বলি কারণ আগে যা বলছিলাম, তোমরা যখন তা শ্রবণ করেছিলে, তা আমি যেভাবেই বলি যে বাক্য প্রয়োগ করেই তা বলে থাকি না কেন, সেগুলি কী বিষয় সংক্রান্ত, তা তোমরা আক্ষরিক এবং তত্ত্বগত উভয় ভাবেই বুঝতে সক্ষম হয়েছিলে। তবে, তোমাদের সকলের জন্য একটা গুরুতর বিষয় হল কেন আমি এই ধরনের বাক্য বলেছিলাম বা কেন আমি বিষয়গুলি উচ্চারণ করেছিলাম তা তোমরা উপলব্ধি করতে পারো নি। এটাই হল সার বক্তব্য। এইভাবে, যদিও তোমাদের এই বিষয়গুলি শোনার ফলে তোমাদের ঈশ্বর ও তাঁর কর্মে একটা মাত্রা যোগ হয়েছে এবং তা তোমাদের এই উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করেছে, তোমরা এখনও মনে করো ঈশ্বরকে জানা একটি কঠোর পরিশ্রমের কাজ। অর্থাৎ, আমার বক্তব্য শোনার পর তোমাদের মধ্যে অধিকাংশই বুঝতে পারবে না কেন আমি তা বলেছি, এবং এর সঙ্গে ঈশ্বরকে জানার সম্পর্ক কী? ঈশ্বরকে জানার সঙ্গে এর সম্পর্ক তোমাদের বুঝতে না পারার কারণ হল তোমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা খুবই অগভীর। ঈশ্বরের বাক্যগুলি সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যদি অত্যন্ত অগভীর স্তরে থাকে, তাহলে তাঁর সম্বন্ধে তাদের অধিকাংশ জ্ঞানই হবে অস্পষ্ট এবং বিমূর্ত; তা হবে একেবারেই সাধারণ, মতবাদমূলক এবং তত্ত্বগত। তত্ত্বে তা ন্যায্য ও যুক্তিসম্মত মনে হতে পারে বা শোনাতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষের মুখ থেকেই ঈশ্বরের যে জ্ঞান নিঃসৃত হয় তা প্রকৃতপক্ষে শূন্যগর্ভ। এবং কেন আমি তা শূন্যগর্ভ বলি? এর কারণ হল ঈশ্বরকে জানা সম্বন্ধে তুমি নিজে যা বলো তার সত্যতা ও যাথার্থতা নিয়ে প্রকৃতপক্ষে তোমার কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। এই কারণেই, যদিও এমনকি অধিকাংশ মানুষই ঈশ্বরকে জানা সম্বন্ধে অনেক তথ্য ও প্রসঙ্গ শুনেছে, ঈশ্বর সম্বন্ধে তাদের জ্ঞান এখনও তত্ত্বের বাইরে যায়নি, এবং যায়নি সেই মতবাদের বাইরেও যা অস্পষ্ট ও বিমূর্ত। তাহলে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে? তোমরা কখনো কি এই বিষয়টা নিয়ে ভেবেছ? কেউ যদি সত্যের অনুসরণ না করে তাহলে কি সে বাস্তবিকতার অধিকারী হতে পারবে? কেউ যদি সত্যের অনুসরণ না করে, তাহলে তারা প্রশ্নাতীত ভাবেই রয়ে যাবে বাস্তবিকতাবিহীন, এবং তাহলে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবেই কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা তাদের থাকবে না। ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে যাদের কোনো উপলব্ধি নেই তারা কি ঈশ্বরকে জানতে পারে? একেবারেই নয়; উভয় প্রসঙ্গ একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই কারণেই, বেশিরভাগ মানুষ বলে, “ঈশ্বরকে জানা কেন এত কঠিন? আমি যখন নিজেকে জানা সম্বন্ধে বলি, তখন আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলে যেতে পারি, কিন্তু যখন ঈশ্বরকে জানার প্রসঙ্গ আসে, তখন আর কোনো শব্দ খুঁজে পাই না। এমনকি যখন এই বিষয়ে অল্পকিছু বলতেও পারি, তখনও মনে হয় যেন আমার শব্দগুলিকে মনে হয় যেন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এবং তা শোনায়ও নীরস। এমনকি, এই কথাগুলি যখন নিজেকে বলতে শুনি তখনও তা বড়ই বেমানান শোনায়।” এটাই হল উৎস। তুমি যদি মনে করো যে ঈশ্বরকে জানা খুবই কঠিন, তাঁকে জানতে গেলে খুব পরিশ্রম করতে হয়, বা উত্থাপন করার মতো কোনো প্রসঙ্গ তোমার নেই, এবং যোগাযোগ স্থাপন বা নিজেকে ও অন্যদের দেওয়ার মতো বাস্তব বিষয়ের কথা যদি তুমি ভাবতে না পারো, তাহলে তা প্রমাণ করে যে তুমি মোটেই সেই ব্যক্তি নও যে ঈশ্বরের বাক্য অনুভব করেছে। ঈশ্বরের বাক্যগুলি কী কী? ঈশ্বরের যা আছে এবং তিনি যা, তাঁর বাক্যগুলি কি সেটারই অভিব্যক্তি নয়? তুমি যদি ঈশ্বরের বাক্যগুলি অনুভব না করে থাকো, তাহলে তাঁর যা আছে এবং তিনি যা, সেই সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান কি তোমার থাকতে পারে? অবশ্যই নয়। এই বিষয়গুলি সব পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। ঈশ্বরের বাক্যগুলি সম্বন্ধে কোনো অভিজ্ঞতা যদি তোমার না থাকে তাহলে, তাহলে তুমি ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে পারবে না, তাঁর স্বভাব কী, কী তিনি পছন্দ করেন, কী তাঁর অপছন্দ, মানুষের কাছ থেকে তাঁর কী কী চাহিদা, যারা ভালো তাদের প্রতি তিনি কী ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, এবং যারা দুষ্ট তাদের প্রতিই বা তাঁর কী ধরনের মনোভাব সেগুলি তুমি জানতে পারবে না; এগুলির সমস্ত কিছুই নিশ্চিতভাবেই তোমার কাছে অনিশ্চিত এবং অস্পষ্ট। এই ধরনের অস্পষ্টতার মাঝেও তুমি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসো তাহলে, যারা সত্যের অন্বেষণ করে ও ঈশ্বরের অনুসরণ করে তাদের একজন হওয়ার দাবি যখন তুমি করো, সেই ধরনের দাবি কি বাস্তবসম্মত? সেগুলি তেমন নয়! তাই এবার ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে আমাদের যোগাযোগ স্থাপন চলুক।

আজকের আলোচনার বিষয় কী তা তোমরা অধীর ভাবে শুনতে চাইছ, ঠিক কিনা? আজকের আলোচনার বিষয়ও, “সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর”—এই বিষয়টি সংক্রান্ত যা নিয়ে আমরা সম্প্রতি আলোচনা করছি। কীভাবে “সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর” তা নিয়ে আমরা অনেক কিছু বলেছি, সকল বস্তু উপর ঈশ্বর কীভাবে শাসন করেন, কী উপায়ে তিনি তা করেন, এবং কোন নীতি অনুসারে তিনি সমস্ত কিছু পরিচালনা করেন সে বিষয়ে মানুষকে অবগত করতে বিভিন্ন পন্থা ও প্রেক্ষিতকে ব্যবহার করেছি যাতে তারা ঈশ্বর সৃষ্ট এই গ্রহে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে। ঈশ্বর কীভাবে মানবজাতির জন্য জীবনের রসদ সরবরাহ করেন, কোন উপায়ে তিনি এই রসদের ব্যবস্থা করেন, জীবনযাপনের জন্য মানুষকে তিনি কী ধরনের পরিবেশ দেন, এবং কোনো উপায়ে ও কোন সূচনাবিন্দুসমূহ থেকে মানুষের জন্য জীবনযাপনের একটা সুস্থিত পরিবেশের ব্যবস্থা করেন সে নিয়েও আমরা অনেক কথা বলেছি। যদিও আমি সকল বস্তুর উপর ঈশ্বরের রাজত্ব ও পরিচালনা এবং তাঁর ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে সরাসরি কিছু বলিনি, তবে, কেন তিনি এই পন্থায় সমস্ত বস্তুকে পরিচালনা করেন, সেই কারণগুলি, এবং সেইসঙ্গে, এই উপায়ে কেন তিনি মানবজাতির জন্য রসদের যোগান দেন ও তাদের পোষণ করেন, সেই কারণগুলিও পরোক্ষে বলেছি। এই সকলকিছুই তাঁর ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা যা বলেছি তার বিষয়বস্তুর পরিধি বহুধা বিস্তৃত: বৃহত্তর পরিবেশ থেকে শুরু করে অনেক ক্ষুদ্র বিষয় যেমন মানুষের মৌলিক চাহিদাসমূহ এবং খাদ্যাভ্যাস; কীভাবে ঈশ্বর সমস্ত কিছুর উপর শাসন করেন এবং সেগুলিকে সুশৃঙ্খলভাবে চালিত করেন, তা থেকে শুরু করে প্রতিটি জাতির মানুষের জন্য তিনি জীবনযাপনের যে সঠিক ও যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন; এবং ইত্যবিধ। এই বিস্তৃত বিষয়গুলি মানুষ কীভাবে দৈহিকভাবে বাঁচে তার সঙ্গে সম্পর্কিত—অর্থাৎ, এগুলি সবই জাগতিক পৃথিবীর বস্তুসমূহের সঙ্গে সম্পর্কিত যেগুলিকে খালি চোখে দেখা যায়, এবং মানুষ যেগুলি অনুভব করতে পারে, যেমন পর্বতমালা, নদনদী, মহাসাগর, সমতলভূমি প্রভৃতি। এগুলি এমন সব বস্ত যাকে চোখে দেখা যায় ও স্পর্শ করা যায়। আমি যখন বায়ু ও তাপমাত্রার কথা বলি, তখন তুমি তোমার শ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সরাসরি বায়ুর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারো, দেহকে কাজে কাজে লাগিয়ে তাপমাত্রা বেশি না কম তা অনুভব করতে পারো। গাছপালা, তৃণ, পাখি এবং অরণ্যের পশু, বাতাসে যেসকল জিনিস ওড়ে, ভূমিতে যে সকল বস্তু হেঁটে বেড়ায়, এবং গর্ত থেকে ছোট ছোট বিভিন্ন যে জন্তু বেরিয়ে আসে তাদের সকলকেই মানুষ তাদের নিজের চোখে দেখতে পারে, এবং নিজের কানে শুনতে পারে। যদিও এই সকল বিষয়ের প্রসঙ্গগুলির পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত, ঈশ্বরসৃষ্ট সকল বস্তুর মধ্যে, এগুলি শুধু জাগতিক বিশ্বেরই প্রতিনিধিত্ব করে। জাগতিক বস্তু হল তা, যা মানুষ দেখতে ও অনুভব করতে পারে, অর্থাৎ, তুমি যখন সেগুলি স্পর্শ করো, তুমি সেগুলিকে অনুভব করো, এবং তোমার চোখ যখন সেগুলি দেখে তখন তোমার মস্তিষ্ক সেগুলির একটা প্রতিকৃতি, একটা ছবি, তোমার সামনে উপস্থাপিত করে; সেই বস্তুগুলি প্রকৃত ও বাস্তব; তোমার কাছে সেগুলি বিমূর্ত নয়, বরং সেগুলির একটা আকার আছে। সেগুলো চৌকো কিংবা গোলাকার, অথবা লম্বা কিংবা খাটো, প্রতিটি বস্তুই তোমাকে একটা আলাদা আলাদা ধারণা দেয়। এই সমস্ত বস্তুই সৃষ্টির একটা জাগতিক দিককে উপস্থাপিত করে। এবং তাই, ঈশ্বরের ক্ষেত্রে, “ঈশ্বর সমস্ত বস্তুর উপর রাজত্ব করেন” এই শব্দবন্ধের মধ্যে “সমস্ত বস্তু”-তে কী অন্তর্ভুক্ত? মানুষ যেগুলি দেখতে পায় ও স্পর্শ করতে পারে শুধু সেই বস্তুগুলিই যে এর অন্তর্ভুক্ত, এমন নয়, এর মধ্যে সেই সকল কিছুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা অদৃশ্য ও স্পর্শাতীত। সমস্ত বস্তুর উপর ঈশ্বরের রাজত্বের প্রকৃত অর্থগুলির মধ্যে এটি একটি। যদিও এই বস্তুগুলি মানুষের কাছে অদৃশ্য ও স্পর্শাতীত, ঈশ্বরের কাছে—তাঁর চক্ষু দ্বারা যতদিন সেগুলি পর্যবেক্ষিত হতে পারে, এবং সেগুলি তাঁর সার্বভৌমত্বের পরিসরের মধ্যে থাকে—ততদিন সেগুলি প্রকৃতপক্ষে বিরাজ করে। যদিও এ সত্য যে সেগুলি বিমূর্ত ও কল্পনাতীত, এবং উপরন্তু, মানুষের কাছে অদৃশ্য ও স্পর্শাতীত, তবু, ঈশ্বরের কাছে সেগুলি প্রকৃতপক্ষে ও যথার্থভাবে বিরাজমান। যে সকল বস্তুর উপর ঈশ্বর শাসন করেন সেগুলির মধ্যে এটা একটা অন্য দুনিয়া, যে সকল বস্তুর উপর তিনি রাজত্ব করেন সেগুলির পরিসরের এটি একটি অন্য অংশ। এটাই আজকের আলোচনার বিষয়: কীভাবে ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগতকে শাসন ও পরিচালনা করেন। যেহেতু এই বিষয়ের মধ্যে কীভাবে ঈশ্বর সমস্ত বস্তুকে শাসন ও পরিচালনা করেন তাও অন্তর্ভুক্ত, এটি বোঝায় জাগতিক বিশ্বের বাইরের জগতকে—আধ্যাত্মিক জগতকে—এবং এই কারণেই এটা উপলব্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয় সম্বন্ধে যোগাযোগ এবং তা উপলব্ধি করার পরই মানুষ “সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর” এই বাক্যগুলির প্রকৃত অর্থ যথার্থভাবে অনুধাবন করতে পারবে। এই কারণেই আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি, এর উদ্দেশ্য হল; “ঈশ্বর সমস্ত বস্তুর উপর শাসন করেন এবং ঈশ্বর সমস্ত বস্তুকে পরিচালনা করেন” এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ করা। সম্ভবত, তোমরা যখন এই বিষয়টি শোনো, তা তোমাদের কাছে অদ্ভূত বা দুর্বোধ্য মনে হতে পারে, তবে তোমাদের যাই মনে হোক না কেন যেহেতু ঈশ্বর যে সমস্ত বস্তুকে শাসন করেন আধ্যাত্মিক জগতও তার অংশ, তাই এই বিষয়ে কিছুটা উপলব্ধি তোমাদের অর্জন করতেই হবে। একবার তা অর্জন করার পর “সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর” এই শব্দবন্ধটির গভীরতর ধারণা, উপলব্ধি ও জ্ঞান লাভ করবে তোমরা।

কীভাবে ঈশ্বর আধ্যাত্মিক জগতকে শাসন ও পরিচালনা করেন

জাগতিক পৃথিবীর ক্ষেত্রে, মানুষ যখন কিছু নির্দিষ্ট বিষয় বা ঘটনাবলী বুঝতে পারে না, তখন তারা প্রাসঙ্গিক তথ্যের সন্ধান করতে পারে বা ঐ সকল বস্তুর উৎস এবং প্রেক্ষাপট খোঁজার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু যখন প্রসঙ্গ আসে সেই অন্য জগতের যার সম্বন্ধে আজ আমরা কথা বলছি—আধ্যাত্মিক জগত, যা জাগতিক বিশ্বের বাইরে অবস্থিত—তার সম্বন্ধে জানার জন্য মানুষে কাছে প্রকৃত অর্থেই কোনো উপায় বা মাধ্যম নেই। আমি কেন এমন বলছি? আমি যে এমন বলছি, তার কারণ হল, মানবদুনিয়ায়, জাগতিক বিশ্বের সমস্তকিছুই মানুষের দৈহিক অস্তিত্বের সাথে অবিচ্ছেদ্য, এবং, যেহেতু মানুষ মনে করে যে জাগতিক বিশ্বের সমস্তকিছুই তাদের দৈহিক যাপন ও দৈহিক জীবনের থেকে অবিচ্ছেদ্য, সেহেতু অধিকাংশ মানুষই শুধুমাত্র সেই জাগতিক বস্তুগুলি সন্বন্ধেই সচেতন বা সেগুলিকেই দেখতে পায়, যা তাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান। তবে যখন আধ্যাত্মিক জগতের,অর্থাৎ অন্য দুনিয়া সংক্রান্ত সবকিছুর প্রসঙ্গ আসে, তখন এমনটা বলা সমীচীন যে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না। যেহেতু মানুষ তা দেখতে পায় না, এবং বিশ্বাস করে যে তা উপলব্ধি করার বা তা জানার কোনো প্রয়োজন নেই, এই আধ্যাত্মিক জগত কীভাবে জাগতিক পৃথিবীর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ থেকে কীভাবে তা মুক্ত সে সম্বন্ধে তো আরোই কিছু জানার প্রয়োজন নেই—যদিও মানুষের মানুষের কাছে এই জগত গোপন ও বন্ধ—সেহেতু এই জগতের বিভিন্ন দিক উপলব্ধির পথ খুঁজতে মানুষকে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। আধ্যাত্মিক জগতের বিভিন্ন দিক যা সম্বন্ধে আমি আলোচনা করতে চলেছি তা শুধু ঈশ্বরের পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বের সঙ্গেই সম্পর্কিত; আমি কোনো রহস্যের উন্মোচন করছি না, বা আমি তোমাদের এমন কোনো গোপন কথা বলছি না যা তোমরা জানতে ইচ্ছুক। যেহেতু এই বিষয়টি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব, ঈশ্বরের পরিচালনা এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত, অতএব আমি শুধুমাত্র সেই অংশ নিয়েই কথা বলব যা তোমাদের জানা প্রয়োজন।

প্রথমেই, তোমাদের একটা প্রশ্ন করি: তোমাদের মনে, আধ্যাত্মিক জগত আসলে কী? মোটামুটিভাবে বলতে গেলে, তা হল জাগতিক পৃথিবীর বাইরের একটা জগত, সেই জগত যা মানুষের কাছে একই সঙ্গে অদৃশ্য এবং অধরা। তবুও, তোমাদের কল্পনায়, এই আধ্যাত্মিক জগত ঠিক কেমন জগত হওয়া উচিত? সম্ভবত, তোমাদের তা দৃষ্টিগোচর না হওয়ার কারণ হিসাবে, এই বিষয়ে চিন্তা করতেও তোমরা অক্ষম। তবে, তোমরা যখন কোনো কিংবদন্তি শোনো, তখনও তোমরা সে বিষয়ে ভাবতে থাকো, এবং তোমরা সে বিষয়ে না ভেবে থাকতে পারো না। কেন আমি এমনটা বলি? বহু মানুষের ক্ষেত্রেই তাদের অল্প বয়সে একটা ঘটনা ঘটে থাকে: যখন কেউ তাদের কোনো ভয়ের গল্প বলে—ভূত-প্রেত বা আত্মাদের নিয়ে, তখন তারা সাঙ্ঘাতিক ভয় পেয়ে যায়। ঠিক কেন তারা ভয় পায়? কারণ তারা সেইসব জিনিসের কল্পনা করে; যদিও তারা সেগুলি দেখতে পায় না, তারা অনুভব করে যে সেগুলি তাদের ঘরেই কোনো গোপন বা অন্ধকার কোণে রয়েছে, এবং সেহেতু তারা এতই ভয় পায় যে তারা ঘুমোতে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারে না। বিশেষ করে রাতে, তারা নিজেদের ঘরে একা থাকতে খুব ভয় পায়, বা উঠোনে বেরোতে ভয় পায়। এমনটাই তোমাদের কল্পিত আধ্যাত্মিক জগত, এবং তা এমন এক জগত যা মানুষ ভীতিপ্রদ বলে ভাবে। সত্যিটা হল, প্রত্যেকেই এবিষয়ে কিছুদূর অবধি কল্পনা করে, এবং সকলেই তা অল্পস্বল্প অনুভব করতে পারে।

এবার আধ্যাত্মিক জগত নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। সেটা আসলে কী? আমি একটা সংক্ষিপ্ত ও সরল ব্যাখ্যা দিচ্ছি: আধ্যাত্মিক জগত হল খুব গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান, এমন এক স্থান যা জাগতিক বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন। কেন আমি একে গুরুত্বপূর্ণ বলি? আমরা তা বিশদে ব্যাখ্যা করতে চলেছি। আধ্যাত্মিক জগতের অস্তিত্ব মানবজাতির জাগতিক বিশ্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত। সকল বস্তুর উপর ঈশ্বরের রাজত্বে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর চক্রের উপর এটি এক বড় ভূমিকা পালন করে, এ-ই হল এর ভূমিকা, এবং যে সমস্ত কারণে এর অস্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ, এটি তার অন্যতম। কারণ এটি এমন এক স্থান যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অগম্য, কেউই নির্ভুল ভাবে বিচার করতে পারে না যে আধ্যাত্মিক জগতের অস্তিত্ব রয়েছে কি নেই। এর বিভিন্ন দিক মানব অস্তিত্বের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত, যার কারণে মানব জীবনক্রমও আধ্যাত্মিক জগত দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত। এর সঙ্গে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব জড়িত আছে কি নেই? তা জড়িত আছে। আমি যখন এমনটা বলি, তোমরা উপলব্ধি করো কেন আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি: তার কারণ এই বিষয়টি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব এবং সেইসঙ্গে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ধরনের একটি জগতে—সেই জগত যা মানুষের কাছে অদৃশ্য—এর প্রতিটি স্বর্গীয় আদেশ, ফরমান এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা জাগতিক বিশ্বের যে কোনো দেশের বিধান ও ব্যবস্থাপনার অনেক ঊর্ধ্বে, এবং এই জগতে যারা বাস করে তাদের কেউই সেগুলির বিরোধিতা বা সেগুলি লঙ্ঘনের সাহস করে না। এটা কি ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব ও প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত? আধ্যাত্মিক জগতে সুস্পষ্ট প্রশাসনিক ফরমানসমূহ, সুস্পষ্ট স্বর্গীয় আদেশসমূহ, এবং সুস্পষ্ট বিধিমালা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহকারীরা কঠোরভাবে তাদের দায়িত্বগুলি পালন করে এবং নিয়ম ও প্রবিধানগুলি মেনে চলে, কারণ তারা জানে স্বর্গীয় অনুশাসনগুলি লঙ্ঘনের পরিণতি কী; তারা স্পষ্টভাবে অবহিত যে কীভাবে ঈশ্বর অন্যায়কারীদের শাস্তি দেন ও সজ্জনদের পুরস্কৃত করেন, এবং কীভাবে তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিচালনা ও সেগুলির উপর শাসন করেন। উপরন্তু, তারা স্পষ্টভাবে ভাবে দেখে যে কীভাবে তিনি তাঁর স্বর্গীয় আদেশ ও বিধিগুলি প্রয়োগ করেন। এগুলি কি মানব অধ্যুষিত জাগতিক বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন? এগুলি প্রকৃতই অতিশয় ভিন্ন। আধ্যাত্মিক জগত এমন এক দুনিয়া যা জাগতিক বিশ্বের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেহেতু সেখানে স্বর্গীয় অনুশাসনসমূহ ও বিধিসমূহ রয়েছে, যেহেতু তা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব, পরিচালনা, এবং সর্বোপরি তাঁর স্বভাব এবং, সেইসঙ্গে, তাঁর যা আছে এবং তিনি যা, তা তুলে ধরে। এমনটা শোনার পর তোমরা কি মনে করো না যে এ বিষয়ে আমার বক্তব্য রাখাটা খুবই প্রয়োজন? তোমরা এর অন্তর্নিহিত গোপন বিষয়গুলি জানতে ইচ্ছুক নও? (হ্যাঁ, আমরা ইচ্ছুক।) এ-ই হল আধ্যাত্মিক জগতের ধারণা। যদিও এটি জাগতিক বিশ্বের সঙ্গে সহাবস্থান করে, এবং একইসঙ্গে ঈশ্বরের পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বের অধীন, তবু এই জগতের জন্য ঈশ্বরের প্রশাসন ও সার্বভৌমত্ব জাগতিক বিশ্বে তাঁর পরিচালনা ও সার্বভৌমত্বের তুলনায় অনেক কঠোর। বিশদ ব্যাখ্যার প্রসঙ্গ যখন আসে, তখন কীভাবে এই আধ্যাত্মিক জগত মানবজাতির জীবন ও মৃত্যুর চক্রের জন্য দায়বদ্ধ, তা দিয়ে আমাদের শুরু করা উচিত, কারণ তা হল আধ্যাত্মিক জগতের সত্তাদের কাজের একটা বড় অংশ।

মানবজাতিকে আমি তিনটি শ্রেণিতে বিন্যাস করি। প্রথম হল অবিশ্বাসী, তারা হল সেইসব ব্যক্তি যাদের কোনো ধর্মীয় বিশ্বাস নেই। তাদের বলা হয় অবিশ্বাসী। অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রকাণ্ড একটা অংশ শুধু অর্থে বিশ্বাস রাখে; তারা শুধু নিজের স্বার্থ বজায় রাখে, তারা ভোগবাদী, এবং শুধুমাত্র জাগতিক পৃথিবীতে বিশ্বাসী—তারা জীবন ও মৃত্যুর চক্র বা দেবদেবী ও ভূতপ্রেত সম্পর্কে যা যা বলা হয় তা বিশ্বাস করে না। আমি এই ধরনের ব্যক্তিদের অবিশ্বাসীদের শ্রেণিতে ফেলি, এবং তারা হল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসীদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ। মানবজাতির মধ্যে, এই ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের আমি কয়েকটি প্রধান গোষ্ঠীতে ভাগ করি: প্রথম হল ইহুদি, দ্বিতীয় হল ক্যাথোলিক, তৃতীয় হল খ্রীষ্টান, চতুর্থ হল মুসলিম এবং পঞ্চম হল বৌদ্ধ; এই পাঁচটি ধরন রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে তারা রয়েছে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী, এবং এই শ্রেণিতে রয়েছ তোমরা। তারাই হল সেই বিশ্বাসী যারা আজ ঈশ্বরকে অনুসরণ করে। এই ধরনের মানুষরা আবার দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত: ঈশ্বরের নির্বাচিত লোক, এবং সেবা প্রদানকারী। প্রধান এই শ্রেণিগুলির মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নিরূপণ করা হয়েছে। এইভাবেই, তোমরা এবার নিজেদের মনে মানুষদের এই শ্রেণি ও পর্যায়ক্রমের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পার্থক্য নিরূপণে সক্ষম, তাই নও কি? প্রথম শ্রেণিটি অবিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত, এবং তারা কীরকম তা আমি বলেছি। যারা আকাশের বৃদ্ধ মানুষে বিশ্বাসী তারা কি অবিশ্বাসী বলে গণ্য হবে? অনেক অবিশ্বাসী শুধুমাত্র আকাশের বৃদ্ধ মানুষে বিশ্বাসী; তারা বিশ্বাস করে যে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্র, প্রভৃতি এই সত্তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যার উপর তারা ফসল রোপণ ও ফসল কাটার জন্য নির্ভর করে—তা সত্ত্বেও যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হয়, তারা তাঁকে বিশ্বাস করতে অনিচ্ছুক। একে কি বিশ্বাস থাকা বলা চলে? এই ধরনের ব্যক্তিরা অবিশ্বাসীদের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত। তোমরা এটা উপলব্ধি করো, ঠিক তো? এই শ্রেণিগুলির মধ্যে কোনো ভুল কোরো না। দ্বিতীয় শ্রেণির মধ্যে ধর্মবিশ্বাসী মানুষরা অন্তর্ভুক্ত, এবং তৃতীয় শ্রেণিতে রয়েছে তারা যারা বর্তমানে ঈশ্বরকে অনুসরণ করছে। তাহলে কেন সমস্ত মানুষকে আমি এই শ্রেণিগুলিতে বিভক্ত করেছি? (কারণ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিদের পরিণাম ও গন্তব্যগুলি ভিন্ন।) এটা এর একটা দিক। যখন এই ভিন্ন ভিন্ন জাতির ও শ্রেণির ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের প্রত্যেকের যাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা স্থান থাকবে, এবং তারা জীবন ও মৃত্যু চক্রের বিভিন্ন বিধানের অধীন হবে, এই কারণে আমি মানুষদের এই প্রধান শ্রেণিগুলিতে বিন্যস্ত করেছি।

ⅰ. অবিশ্বাসীদের জীবন ও মৃত্যুর চক্র

এবার অবিশ্বাসীদের জীবন ও মৃত্যুর চক্র দিয়ে শুরু করা যাক। মৃত্যুর পর, একজন ব্যক্তি আধ্যাত্মিক জগতের এক জন সহকারী দ্বারা বাহিত হয়। কিন্তু ব্যক্তির ঠিক কোন অংশটি বাহিত হয়? তার দেহ নয়, বরং তার আত্মা। যখন কোনো ব্যক্তির আত্মাকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সেই ব্যক্তি এমন এক স্থানে প্রবেশ করে যা হল আধ্যাত্মিক জগতের এক কার্যস্থল যেখানে বিশেষভাবে সদ্যমৃত ব্যক্তিদের আত্মাদেরকে বরণ করে নেওয়া হয়। সেটাই হল প্রথম স্থান যেখানে মৃত্যুর পর কেউ যায়, যা আত্মার কাছে অপরিচিত। তাদের যখন এই স্থানে আনা হয়, তখন একজন ব্যক্তি প্রথম পরীক্ষাগুলো করেন, তাদের নাম, ধাম, বয়স ও তাদের অভিজ্ঞতা যাচাই করেন। জীবদ্দশায় তারা যা করেছে তার প্রতিটির বিষয়ে একটা বইতে নথিভুক্ত করা হয়, এবং তা সঠিক কিনা সেটা যাচাই করা হয়। সবকিছু পরীক্ষার পর, সেই ব্যক্তির সারা জীবনের আচরণ ও কাজের ভিত্তিতে এটা স্থির করা হয় যে, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে নাকি সে মানব হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে, যেটা হল প্রথম ধাপ। এই প্রথম ধাপটি কি ভীতিপ্রদ? এটা খুব একটা ভীতিপ্রদ নয়, কারণ এখানে একমাত্র যেটা ঘটেছে সেটা হল সেই ব্যক্তি এক অন্ধকার ও অপরিচিত স্থানে এসে উপনীত হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে, যদি এই ব্যক্তি তার সারা জীবনে অনেক অন্যায় করে থাকে এবং বহু মন্দ কাজ করে থাকে, তাহলে মোকাবিলা করার জন্য তাকে শাস্তি দেওয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা হবে সেই স্থান যা মানুষের শাস্তির জন্য স্পষ্টভাবে ব্যবহৃত। তাদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া হবে তার খুঁটিনাটি নির্ভর করছে তারা কী পাপ করেছে, এবং সেইসঙ্গে মৃত্যুর পূর্বে কত মন্দ কাজ তারা করেছে তার উপর—এটা হল এই দ্বিতীয় ধাপে ঘটা প্রথম ঘটনা। মৃত্যুর পূর্বে তারা যে অন্যায় করেছে এবং মন্দ কাজ করেছে তার কারণে, শাস্তির পর যখন তাদের পুনর্জন্ম হয়—যখন তারা এই জাগতিক বিশ্বে আরো একবার জন্মগ্রহণ করে—তখন কেউ কেউ মানুষ হিসাবেই জন্ম নেবে, অন্যদিকে অন্যরা পশুজন্ম নেবে। অর্থাৎ, আধ্যাত্মিক জগতে একজন ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন করার পর, তারা যে অন্যায় করেছে তার কারণে তারা শাস্তি পায়; উপরন্তু, তাদের মন্দ কাজ করার কারণে তারা সম্ভবত পরের জন্মে মানুষ হিসাবে ফিরে আসবে না, বরং আসবে পশু হয়ে। যে সকল পশুতে তারা পরিণত হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে গরু, ঘোড়া, শুয়োর ও কুকুর। কেউ কেউ আবার পাখি, পাতিহাঁস অথবা রাজহংস হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে… পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভের পর, আবার যখন তাদের মৃত্যু হবে, তখন তারা আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করবে। সেখানে, আবার সেই আগেকার মতোই, মৃত্যুর পূর্বে তাদের আচরণের ভিত্তিতে, আধ্যাত্মিক জগত স্থির করবে যে তারা মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে কিনা। অধিকাংশ মানুষই প্রচুর অন্যায় করে, এবং তাদের পাপ খুবই গুরুতর, এই কারণেই তাদের সাত থেকে বারো বার পর্যন্ত পশু হিসাবে জন্ম নিতে হয়। সাত থেকে বারো বার—এটা কি ভয়ংকর নয়? (এটা ভয়ংকর।) কী তোমাদের আতঙ্কিত করে? একজন ব্যক্তি পশুতে পরিণত হচ্ছে—এমনটা ভয়ংকর। একজন মানুষের ক্ষেত্রে, পশুতে পরিণত হওয়ার কষ্টগুলি কী কী? কোনো ভাষা নেই, শুধুমাত্র সাদামাটা কিছু ভাবনা, শুধুমাত্র সেই কাজগুলিই করতে পারা যা পশুরা করে এবং পশুরা যা খায় তা-ই খাওয়া, পশুদের মতো একটা সরল মানসিকতা ও শরীরী ভাষা নিয়ে চলা, সোজা হয়ে হাঁটতে না পারা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা, এবং মানুষের কোনো আচরণ ও কাজের সঙ্গে পশুদের কোনো সম্পর্ক না থাকার বাস্তবিকতা। অর্থাৎ, পশু হওয়াটা সকল জীবের মধ্যে তোমাকে সবচেয়ে হীন করে তোলে, এবং তোমাকে মানুষের চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রণাভোগ করতে হয়। যারা অনেক অন্যায় করেছে এবং বড় বড় পাপ করেছে, তাদের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক জগতের শাস্তির এটা হল একটা দিক। তাদের শাস্তির তীব্রতার প্রসঙ্গ যখন আসে তখন, কী ধরনের পশুতে তারা পরিণত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে সেটা নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ, শূয়োর হওয়া কি কুকুর হওয়ার চেয়ে ভালো? একটা শূয়োর একটা কুকুরের চেয়ে ভালোভাবে বাঁচে না মন্দ ভাবে? মন্দ ভাবে, তাই না? মানুষ যদি গরু বা ঘোড়া হিসাবে জন্মায় তাহলে তারা শূয়োর হিসাবে যেভাবে বাঁচত তার চেয়ে ভালোভাবে বাঁচবে না মন্দভাবে? (ভালোভাবে।) একটি বেড়াল হিসাবে পুনর্জন্ম নিয়ে একজন ব্যক্তি কি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচবে? যাই হোক কেন তাকে তো পশুই হতে হবে, এবং গরু বা ঘোড়া হওয়ার চেয়ে বেড়াল হওয়াটা আরামদায়ক, কারণ বেড়াল বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই আলস্যের মধ্যে কাটিয়ে দেয়। গরু বা ঘোড়া হওয়া অনেক বেশি পরিশ্রমসাধ্য। তাই একজন ব্যক্তি যদি গরু বা ঘোড়া হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে তবে তাজে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে—যা কঠোর শাস্তির সমতুল। গরু বা ঘোড়ার চেয়ে কুকুর হওয়াটা কিছুটা ভালো, কারণ কুকুরের সঙ্গে তার মনিবের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। বেশ কয়েক বছর পোষ্য থাকার পর, কিছু কুকুর তাদের মনিব যা বলে তার অনেকটাই বুঝতে পারে। কখনো কখনো একটি কুকুর তার মনিবের মেজাজমর্জি ও চাহিদার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে এবং মনিবও কুকুরের সঙ্গে অনেক ভালো আচরণ করে, এবং কুকুরটি অনেক ভালো খাদ্য ও পানীয় পায়, এবং সে যখন যন্ত্রণায় থাকে, তখন তার অনেক বেশি দেখভাল করা হয়। কুকুর কি একটা সুখী জীবন উপভোগ করে না? তাই, গরু বা ঘোড়া হওয়ার চেয়ে কুকুর হওয়া ভালো। এখানে, একজন ব্যক্তির শাস্তির তীব্রতা অনুসারে এমনটা নির্ধারণ করা হয় যে, তাকে কতবার এবং কী কী ধরনের পশু হিসাবে পুনর্জন্ম নিতে হবে।

যেহেতু জীবদ্দশায় তারা প্রচুর পাপ করেছে, সেহেতু কোনো ব্যক্তিকে সাত থেকে বারো বার পর্যন্তও পশু হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণের শাস্তি দেওয়া দেয়। পর্যাপ্ত বার শাস্তি পাওয়ার পর, তারা যখন আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়—সেই স্থান যেখানে রয়েছে অন্যান্য বিভিন্ন আত্মা যারা ইতিমধ্যেই শাস্তি পেয়েছে, এবং যারা মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই স্থানে, আত্মারা কী ধরনের পরিবারে জন্মগ্রহণ করবে, পুনর্জন্ম গ্রহণের পর কী ধরনের ভূমিকা পালন করবে, এবং প্রভৃতির ভিত্তিতে প্রত্যেক আত্মাকে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ যখন এই পৃথিবীতে আসবে তখন তারা গায়ক হবে, তাই তাদের গায়কদের মাঝে স্থাপন করা হয়, কেউ কেউ যখন এই এই পৃথিবীতে সবে তখন তারা ব্যবসায়ী হবে, এবং তাই তাদের ব্যবসায়ীদের মাঝে স্থান দেওয়া হয়; মানুষ হওয়ার পর কারোর যদি বৈজ্ঞানিক গবেষক হওয়ার থাকে, তবে তাকে বৈজ্ঞানিক গবেষকদের মাঝেই স্থান দেওয়া হবে। শ্রেণীবিভাজনের পর, তাদের প্রত্যেককে ভিন্ন ভিন্ন সময় ও নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী প্রেরণ করা হয়, ঠিক আজ যেভাবে মানুষ ই-মেইল পাঠায়। এর মধ্যে দিয়ে জীবন ও মৃত্যুর একটি চক্র সম্পূর্ণ হবে। যেদিন মানুষ এই আধ্যাত্মিক জগতে পৌঁছায় সেদিন থেকে শুরু করে তাদের শাস্তি শেষ হয়ে গেলে, বা বহুবার পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করার পর মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভের প্রস্তুতি নেওয়া হলে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।

আর যাদের শুধু শাস্তি শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং পশু হিসাবে পুনর্জন্ম দেওয়া হয়নি, তাদের কি মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম নিতে শীঘ্রই জাগতিক বিশ্বে পাঠানো হবে? অথবা, মানুষের মধ্যে পৌঁছতে তাদের কতদিন সময় লাগবে? কত ঘন ঘন এমনটা ঘটতে পারে? এক্ষেত্রে কালগত বিধিনিষেধ রয়েছে। আধ্যাত্মিক জগতে যা কিছু ঘটে তা সুনির্দিষ্ট কালগত বিধিনিষেধ ও নিয়মের অধীন—আমি যদি সেটা তোমাদের সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করি তবে তোমরা তা উপলব্ধি করবে। যারা খুব অল্প সময়ের জন্য পুনর্জন্মপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের যখন মৃত্যু হয়, ততদিনে মানব হিসাবে তাদের পুনর্জন্মের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়ে যায়। এই ঘটনা ন্যূনতম যে সময়ের মধ্যে ঘটতে পারে তা হল তিন দিন। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তিন মাস সময় লাগে, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তিরিশ বছর সময় লাগে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আবার তিনশো বছর সময় লেগে যায়, এবং এভাবে চলতেই থাকে। তাই, এই সমস্ত কালগত নিয়মের ক্ষেত্রে কী বলা যেতে পারে, এবং এগুলির বৈশিষ্ট্যই বা কী? একটি আত্মার কাছ থেকে জাগতিক বিশ্বের—মানবদুনিয়ার—কী কী চাহিদা, এবং এই বিশ্বে এই আত্মার পালনের জন্য কী ভূমিকা নির্দিষ্ট করা হয়, তার ভিত্তিতে এগুলি নির্ধারণ করা হয়। মানুষ যখন নিছকই সাধারণ মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে তখন তাদের অতি দ্রুত তাদের পুনর্জন্ম হয়, কারণ এই মানব জগতে এই ধরণের সাধারণ মানুষের ভীষণ চাহিদা, তাদের আবার একটি পরিবারের কাছে পাঠানো হয় যেটি তারা মৃত্যুর আগে যে পরিবারে ছিল তার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে, এমন কেউ কেউ রয়েছেন যারা এই বিশ্বে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। “বিশেষ” অর্থাৎ মানবজগতে এই ধরনের মানুষের খুব একটা চাহিদা নেই; এই ধরনের ভূমিকা পালনের জন্য খুব একটা বেশি মানুষেরও প্রয়োজন নেই, তাই এক্ষেত্রে তিনশো বছর সময় লেগে যেতে পারে। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই আত্মা প্রতি তিনশো বছর অন্তর একবার আসে, অথবা এমনকি প্রতি তিন হাজার বছরে মাত্র একবারই আসে। তা কেন? তার কারণ হল, তিনশো বছরই হোক বা তিন হাজার বছর, মানব জগতে এই ধরনের ভূমিকার প্রয়োজন নেই, তাই তাদের আধ্যাত্মিক জগতের কোনো একটা স্থানে রেখে দেওয়া হয়। উদাহরণ স্বরূপ কনফুসিয়াসের কথাই ধরুন: চিনের প্রথাগত সংস্কৃতিতে তাঁর একটা গভীর প্রভাব ছিল, এবং তার আগমন সেই সময়কার মানুষের সংস্কৃতি, জ্ঞান, প্রথা ও মতাদর্শের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তবে, সব যুগে এই ধরনের ব্যক্তির প্রয়োজন থাকে না, তাই তাকে আধ্যাত্মিক জগতেই থাকতে হয়, পুনর্জন্ম গ্রহণের আগে তিনশো বছর বা তিন হাজার বছর সেখানে অপেক্ষা করতে হয়। কারণ মানব জগতে এই ধরনের ব্যক্তির প্রয়োজন থাকে না, তাকে নিষ্ক্রিয় ভাবে অপেক্ষা করতে হয়, কারণ তার পালনের মতো খুব অল্প ভূমিকাই থাকে, এবং তার করার মতো খুব অল্পই কাজ থাকে। এই কারণেই, বেশিরভাগ সময় তাকে আধ্যাত্মিক জগতের কোনো একটা স্থানে নিষ্ক্রিয় ভাবে রেখে দিতে হয়, মানব জগতে যখন তার প্রয়োজন হয় তখন তাকে প্রেরণ করা হয়। এরকমই হল আধ্যাত্মিক জগতের কালগত নিয়মাবলী, যেগুলি নির্ধারণ করে অধিকাংশ মানুষ কত ঘন ঘন পুনর্জন্ম গ্রহণ করবে, তা। মানুষ সাধারণ হোক বা বিশেষ, তাদের পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া হিসাবে যথাযথ নীতি ও সঠিক নিয়ম আধ্যাত্মিক জগতের রয়েছে, এবং এই সমস্ত নিয়মাবলী ও প্রথা ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রেরিত, তা আধ্যাত্মিক জগতের কোনো সহকারী বা কোনো সত্তা দ্বারা নির্ধারিত বা নিয়ন্ত্রিত নয়। তোমরা এবার এটা বুঝেছ, তাই তো?

যে কোনো আত্মার পুনর্জন্মের ক্ষেত্রে, এই জন্মে তার ভূমিকা কী হবে, কোন পরিবারে সে জন্ম নেবে, এবং তার জীবন কেমন হবে তা সেই আত্মার পূর্বজন্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। এই মানব জগতে সব ধরনের মানুষ আসে, এবং যে ভূমিকাগুলি তারা পালন করে তা ভিন্ন ভিন্ন হয়, যে কার্য তারা সাধন করে সেগুলিও ভিন্ন ভিন্ন। এগুলি কী ধরনের কাজ? কিছু কিছু মানুষ ঋণ পরিশোধের জন্য এসেছে: পূর্বজন্মে অন্যান্যদের কাছে যদি তাদের অনেক টাকার ঋণ থাকে, তাহলে এই জন্মে সেই ঋণ পরিশোধের জন্য তারা আসে। অন্যদিকে, কিছু মানুষ ঋণ সংগ্রহ করার জন্য আসে: তাদের পূর্বজন্মে তারা প্রচুর জিনিসপত্র ও প্রচুর টাকাপয়সার নয়ছয় করেছে; ফলস্বরূপ, তারা যখন আধ্যাত্মিক জগতে পৌঁছায়, তখন এই জগত তাদের বিচার করে এবং এই জীবনে তাদের ঋণ সংগ্রহের অনুমোদন দেয়। কিছু মানুষ কৃতজ্ঞতার ঋণ পরিশোধ করতে এসেছে: আগের জীবদ্দশায়—অর্থাৎ তাদের পূর্বজন্মে—কোনো ব্যক্তি তাদের প্রতি অত্যন্ত সদাশয় ছিল, এবং পুনর্জন্ম গ্রহণের এই বিরাট সুযোগ পাওয়ার কারণে, কৃতজ্ঞতার এই ঋণ পরিশোধের জন্য তারা পুনর্জন্ম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে অন্য অনেকে আবার, জীবন দাবি করার জন্য পুনর্জন্ম লাভ করেছে। কাদের জীবন তারা দাবি করে? তারা সেইসব মানুষের জীবন দাবি করে যারা পূর্ব জীবনে তাদের হত্যা করেছিল। মোদ্দাকথা হল, প্রত্যেক ব্যক্তির বর্তমান জীবন তাদের পূর্ব জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত সংযোগ বহন করে; এই সংযোগ অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তির বর্তমান জীবন তার পূর্ব জীবনের দ্বারা গভীর ভাবে প্রভাবিত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মৃত্যুর পূর্বে ঝ্যাং, লি-এর সঙ্গে প্রচুর টাকার প্রতারণা করেছিল। তাহলে লি-এর এর কাছে ঝ্যাং-এর কি কোনো ঋণ ছিল? হ্যাঁ ছিল, তাই এটা কি খুব স্বাভাবিক নয় যে ঝ্যাং-এর কাছ থেকে লি-এর ঋণ সংগ্রহ করা উচিত? ফলস্বরূপ, মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে একটা ঋণ রয়ে যাবে, যার মীমাংসা করতে হবে। যখন তাদের পুনর্জন্ম হয়, এবং ঝ্যাং মানুষে পরিণত হয়, তখন লি তার কাছ থেকে কীভাবে ঋণ সংগ্রহ করবে? একটা উপায় হল ঝ্যাং-এর পুত্র হিসাবে পুনর্জন্ম গ্রহণ করা; ঝ্যাং প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, যা লি অপব্যয় করে। ঝ্যাং যত অর্থই উপার্জন করুক না কেন, কখনওই সেটা পর্যাপ্ত হয় না, এবং ইতিমধ্যে, তার পুত্র, কোনো কারণে, বিভিন্ন উপায়ে নিজ পিতার অর্থ ব্যয় করে ফেলে। ঝ্যাং হতভম্ব হয়ে যায়, সে অবাক হয়ে ভাবে, “আমার এই ছেলে কেন সবসময় এই ধরনের দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। অন্যদের ছেলেরা কেন এত সুশীল? আমার ছেলের কেন কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, সে কেন এত অকর্মণ্য, এবং কোনো অর্থ উপার্জনে অক্ষম, এবং কেন আমাকে সবসময় তার ভরণপোষণ করতে হয়? আমাকে যেহেতু তার ভরণপোষণ করতে হয়—কিন্তু এমনটা কেন হয় যে যত টাকা তাকে দিই, তার তত বেশি টাকার প্রয়োজন হয়? সে কেন সৎ ভাবে কোনো কাজ করতে পারে না, বরং সে সারাক্ষণ আলস্যে সময় যাপন, পানভোজন, গণিকাগমন ও জুয়াখেলা করে বেড়ায়? এসব হচ্ছেটা কী?” ঝ্যাং তখন ক্ষণকালের জন্য ভাবে, “এমন হতে পারে যে পূর্ব জন্মে তার কাছে আমার কোনো ঋণ রয়েছে। তবে তাই হোক, আমি তা পরিশোধ করব! আমি পুরোটা পরিশোধ না করা পর্যন্ত এই পর্ব শেষ হবে না!” একদিন হয়তো আসবে যেদিন লি তার পুরো ঋণ উশুল করে দেবে, এবং তার বয়স যখন চল্লিশ বা পঞ্চাশের কোঠায় পৌঁছিবে সেদিন হঠাৎ তার বোধোদয় হবে, সে অনুভব করবে, “আমি আমার জীবনের প্রথমার্ধের পুরোটা জুড়ে একটাও ভালো কাজ করিনি! বাবা যে অর্থ উপার্জন করেছেন আমি তা সব অপচয় করেছি, তাই আমাকে একজন ভালো মানুষ হয়ে উঠতে হবে; আমি নিজেকে ইস্পাতের মতো দৃঢ় করব! আমি এমন একজন হয়ে উঠব যে সৎ ও যথাযথ ভাবে জীবনযাপন করে, এবং আমি আমার বাবাকে আর কোনোদিন দুঃখ দেবো না!” সে এরকম কেন ভাবল? হঠাৎ তার সুমতি কেন হল? এর পেছনে কি কোনো কারণ রয়েছে? কী সেই কারণ? (তার কারণ হল লি তার ঋণ সংগ্রহ করেছে এবং; ঝ্যাং তার ঋণ পরিশোধ করেছে।) এক্ষেত্রে, এখানে একটা কার্য ও কারণ রয়েছে। এই কাহিনী দীর্ঘ, দীর্ঘ কাল আগে শুরু হয়েছে, তাদের বর্তমানে জীবনকালের আগে; তাদের পূর্ব জীবনের এই কাহিনীকে বর্তমানে আনা হয়েছে; কেউই অন্যকে দোষারোপ করতে পারে না। ঝ্যাং তার পুত্রকে যাই শিক্ষা দিক না কেন, তার পুত্র কোনোদিন তাতে কর্ণপাত করেনি বা সে একদিনও সৎ ভাবে পরিশ্রম করেনি। অথচ যেদিন সেই ঋণ পরিশোধ হয়ে গেল, তার পুত্রকে শিক্ষা দেওয়ার আর প্রয়োজন থাকল না—সে স্বাভাবিক নিয়মেই উপলব্ধি করল। এটা একটা সহজ উদাহরণ। এ রকম উদাহরণ কি আরো অনেক রয়েছে? (হ্যাঁ, আছে।) এটা মানুষকে কী বলে? (এটা বলে যে তাদের ভালো হতে হবে এবং কোনো অন্যায় করা চলবে না।) এটা বলে যে তাদের কোনো মন্দ কর্ম করা চলবে না, এবং তারা তাদের অন্যায় কর্মের জন্য প্রতিফল পাবে! বেশিরভাগ অবিশ্বাসীই প্রচুর অন্যায় করে, এবং তাদের অন্যায়ের প্রতিফল আসে, ঠিক কিনা? তবে এই ধরনের প্রতিফল কি নিয়মবহির্ভূত? প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে একটা প্রেক্ষাপট এবং তার প্রতিফলের নেপথ্যে একটা কারণ থাকে। তুমি কি মনে করো অর্থ নিয়ে কারো সঙ্গে প্রতারণা করলে তোমার কিছুই হবে না? তুমি কি মনে করো যে এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পর তোমাকে কোনো পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে না? তা অসম্ভব, এখানে অবশ্যই পরিণাম থাকবে! তারা যে-ই হোক না কেন, বা ঈশ্বর আছে কিনা তাতে তারা বিশ্বাস করুক বা না করুক, প্রত্যেক ব্যক্তিমানুষকে তার আচরণের দায় নিতে হবে এবং কাজের পরিণাম ভোগ করতে হবে। এই সহজ উদাহরণের প্রসঙ্গে—ঝ্যাং-এর শাস্তি হল, এবং লি-এর ঋণের পরিশোধ হল—এটা কি ন্যায্য নয়? মানুষ যখন এই ধরনের কাজ করে তখন, তখন তার ফল এই রকমেরই হয়। আধ্যাত্মিক জগতের প্রশাসনের সঙ্গে এটা অবিচ্ছেদ্য। তারা অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও, ঈশ্বরে যারা বিশ্বাস করে না তাদের অস্তিত্বও এই ধরনের স্বর্গীয় অনুশাসন ও আজ্ঞার অধীন। কেউই এগুলি থেকে রেহাই পায় না, এবং কেউই এই বাস্তবকে উপেক্ষা করতে পারে না।

যাদের মধ্যে বিশ্বাস নেই, তারা প্রায়শই ভাবে যে, শুধু দৃশ্যমান জিনিসেরই অস্তিত্ব আছে, পক্ষান্তরে যা কিছু দেখা যায় না, বা মানুষের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, সেগুলির কোনো অস্তিত্বই নেই। তারা বিশ্বাস করতে পছন্দ করে যে, “জীবন-মৃত্যুর চক্র” বলে কিছু নেই, “শাস্তি” বলে কিছু হয় না; এই ভাবে, তারা কোনোরকম অনুশোচনা ছাড়াই পাপ ও কুকর্মে লিপ্ত হয়। পরবর্তীকালে, তারা শাস্তি পায় অথবা পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে। অবিশ্বাসীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানুষের অধিকাংশই এই দুষ্ট চক্রের অন্তর্ভুক্ত। এর কারণ হল, আধ্যাত্মিক জগতে সমস্ত জীবের জন্যই যে কঠোর পরিচালনার ব্যবস্থা রয়েছে, তা তারা জানে না। তুমি বিশ্বাস করো বা না করো, এই সত্যটি বিদ্যমান, কারণ একজনও ব্যক্তি বা একটিও বস্তু ঈশ্বর তাঁর দৃষ্টি দ্বারা যা নিরীক্ষণ করেন, তার পরিধি এড়িয়ে যেতে পারে না বা তাঁর স্বর্গীয় আদেশ ও ফরমানের নিয়ম ও পরিসীমা এড়িয়ে যেতে পারে না। অতএব, এই সাধারণ উদাহরণটিই বলে দেয়, যে তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো বা না করো, পাপ ও কুকর্মসাধন সর্বদাই অ-গ্রহণযোগ্য, আর সমস্ত কৃতকর্মেরই প্রতিফল রয়েছে। কেউ যদি কাউকে আর্থিক প্রতারণার জন্য শাস্তি পায়, সেটা ন্যায্য শাস্তি। এরকম আচরণ, যা প্রায়শই দেখতে পাওয়া যায়, এগুলোর শাস্তি দেওয়া হয় আধ্যাত্মিক জগতে, এবং এই ধরনের শাস্তি ঈশ্বরের ফরমান এবং স্বর্গীয় আদেশের দ্বারা প্রদান করা হয়। সুতরাং, গুরুতর অপরাধ এবং দুর্নীতিমূলক আচরণ, যেমন—ধর্ষণ ও লুঠতরাজ, প্রতারণা ও শঠতা, চুরি ও ডাকাতি, খুন ও অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির জন্য শাস্তির বিভিন্ন তীব্রতা রয়েছে। বিভিন্ন তীব্রতা বিশিষ্ট সেইসব শাস্তির মধ্যে কী কী রয়েছে? এগুলির মধ্যে কয়েকটির তীব্রতা শাস্তির সময়কালের উপর নির্ভর করে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সাধিত হয়; বাকি কিছুক্ষেত্রে পুনর্জন্মের পরে মানুষ কোথায় যাবে তা নির্ধারণের উপরে শাস্তির তীব্রতা নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ দুর্মুখ হয়। “দুর্মুখ” হওয়া বলতে কী বোঝায়? এর অর্থ হল প্রায়শই অন্যদের গালমন্দ করা, এবং অভিশাপ দেওয়ার মতো বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা। বিদ্বেষপূর্ণ ভাষা ব্যবহার বলতে কী বোঝায়? তা সেই ব্যক্তির দূষিত হৃদয়কে চিহ্নিত করে। এই ধরনের মানুষের মুখ থেকে প্রায়শই অন্যদের প্রতি গালমন্দ বর্ষণকারী অশালীন ভাষা নিঃসৃত হয়, এবং এহেন বিদ্বেষপূর্ণ ভাষার পরিণতিও হয় গুরুতর। এই ধরনের মানুষ মৃত্যুর পরে উপযুক্ত শাস্তিস্বরূপ, মূক হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। কিছু মানুষ জীবিত থাকাকালীন খুবই হিসাবী হয়; তারা প্রায়শই অন্যান্যদের থেকে সুযোগসুবিধা নেয়, তাদের ছোট্ট প্রকল্প খুবই সুপরিকল্পিত হয় এবং তা মানুষের অনেক ক্ষতি করে। পুনর্জন্ম লাভের সময় তারা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন বা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। অনেকে অহরহ অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে উঁকিঝুঁকি মারে; নিজেদের এক্তিয়ারের বাইরের জিনিসও তাদের নজর এড়ায় না; আর তাদের যতটুকু জানা উচিত, তার থেকে তারা বেশি জেনে ফেলে। ফলস্বরূপ, পুনর্জন্মকালে তারা দৃষ্টিহীন হয়ে জন্মাতে পারে। অনেকে জীবিত অবস্থায় বেশ চালাকচতুর হয়, তারা মাঝেমধ্যেই মারপিট ও কুকর্মে লিপ্ত হয়। এই কারণে, তারা হয়ত পরের জন্মে প্রতিবন্ধী, খোঁড়া বা কোনো অঙ্গহীন অবস্থায় জন্মায়; অন্যথায় তারা হয়ত কুঁজো বা ঘাড়বাঁকা হয়, খুঁড়িয়ে হাঁটে, এক পা অন্য পায়ের থেকে ছোট হয়, ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে, তারা তাদের জীবনকালে কৃত মন্দ কর্মের মাত্রার সাপেক্ষে বিভিন্ন শাস্তি লাভ করেছে। অনেকের দৃষ্টিশক্তি খুব ক্ষীণ হয়, তার কী কারণ রয়েছে বলে তোমার মনে হয়? এইরকম লোকের সংখ্যা কী অনেক? এখনকার দিনে এহেন লোকের সংখ্যা খুব কম নয়। অনেকের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়, কারণ গত জন্মে তারা তাদের চোখ খুব বেশি ব্যবহার করেছে এবং অনেক কুকর্ম করেছে, সেই কারণে এই জন্মে তারা ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জন্মেছে, এবং অনেক গুরুতর ক্ষেত্রে, তারা সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীনও হতে পারে। এ হলো তাদের কৃতকর্মের শাস্তি। অনেকে জীবৎকালে অন্যান্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করে; তারা তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, বা তাদের সাথে সম্পর্কিত লোকেদের সাথে সদাচরণ করে। তারা অন্যান্যদের দান করে বা পরিচর্যা করে, অথবা আর্থিকভাবে সহায়তা করে, এবং মানুষ তাদের বিষয়ে অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করে। এই ধরনের মানুষ আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করলে, তাদের শাস্তি দেওয়া হয় না। একজন অবিশ্বাসীকে কোনোভাবেই শাস্তি না দেওয়ার অর্থ হল জীবিতাবস্থায় তারা খুবই ভালো মানুষ ছিল। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করার পরিবর্তে, তারা শুধুমাত্র আকাশে অবস্থিত প্রবীণ মানুষটির উপরে বিশ্বাস করে। এই ধরনের মানুষ বিশ্বাস করে যে, তাদের ঊর্ধ্বে একজন আত্মা রয়েছেন, যিনি তাদের সমস্ত কর্মের উপর নজর রাখছেন—কেবলমাত্র এটাই হল তাদের বিশ্বাস। ফলে, এই ব্যক্তি অনেক বেশি সদাচারী হয়। এই ধরনের মানুষ সহৃদয় এবং দানশীল হয়, এবং তারা যখন শেষ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তন করে, তখন তাদের সাথে ভালো আচরণ করা হবে, এবং তারা শীঘ্রই পুনর্জন্ম লাভ করবে। যখন পুনর্জন্ম লাভ করবে, কী ধরনের পরিবারে তারা জন্ম নেবে? সেই পরিবার খুব ধনী না হলেও, সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকবে, তাদের সদস্যদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকবে; সেখানে, এই পুনর্জন্ম লাভ করা মানুষেরা নিরাপদে, সুখে দিন কাটাবে, আর সকলেই আনন্দময় ভাবে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করবে। এই মানুষেরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে তারা বৃহৎ, বিস্তৃত পরিবার অর্জন করবে, তাদের সন্তানেরা প্রতিভাবান এবং সফল হবে, এবং তাদের পরিবার সৌভাগ্যশালী হবে—এবং এইরকম পরিণতি সেই সমস্ত মানুষের গত জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। অর্থাৎ, মানুষ মৃত্যুর পরে কোথায় যায় এবং কোথায় পুনর্জন্ম লাভ করে, তারা ছেলে হয় না মেয়ে, তাদের লক্ষ্য কী হয়, তাদের জীবন কীভাবে কাটবে, কী কী কষ্ট তাদের সহ্য করতে হবে, তারা কী ধরনের আশীর্বাদ উপভোগ করবে, কাদের সাথে তাদের দেখা হবে, এবং তাদের কী হবে—এই সমস্ত বিষয় কেউই আগে থেকে বলতে পারে না, এড়াতে পারে না বা এসবের থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে না। অর্থাৎ বলা যায় যে, তোমার জীবন একবার ঠিক করা হয়ে গেলে—তোমার ভবিতব্যকে তুমি যেভাবেই বা যে উপায়েই এড়াতে চেষ্টা করো না কেন—আধ্যাত্মিক জগতে ঈশ্বর তোমার জন্য যে জীবনধারা নির্ধারণ করেছেন তা লঙ্ঘন করার কোনো উপায়ান্তরই নেই। কারণ যখন তোমার পুনর্জন্ম হয়, তোমার সারা জীবনের ভাগ্য তার আগেই নির্ধারিত করা হয়ে গেছে। ভালো বা মন্দ যেমনই হোক না কেন, প্রত্যেককেই তার সম্মুখীন হতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। জগতে কেউই এহেন সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারে না, এবং কোনো সমস্যাই এর থেকে বেশি বাস্তব নয়। তোমরা সকলে আমার সমস্ত কথা বুঝেছ, তাই তো?

এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করার পরে তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ যে অবিশ্বাসীদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কত নিখুঁত ও কঠোর পরীক্ষা এবং পরিচালনার ব্যবস্থা রয়েছে? প্রথমত, তিনি আধ্যাত্মিক জগতে বিভিন্ন স্বর্গীয় আদেশ, ফরমান এবং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, এবং ঘোষিত হওয়ার পরে, সেগুলি ঈশ্বরের দ্বারা নির্ধারিত উপায়ে, আধ্যাত্মিক জগতের বিভিন্ন আধিকারিক পদের সত্তাদের মাধ্যমে, অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়, এবং কেউই সেগুলি লঙ্ঘন করার সাহস পায় না। অতএব, মনুষ্যজগতে, মানবজাতির জীবন-মৃত্যুর চক্রে, কেউ পশু অথবা মানুষ, যেভাবেই পুনর্জন্ম লাভ করুক না কেন, উভয়ের জন্যই বিধান রয়েছে। যেহেতু এই সকল বিধান ঈশ্বর প্রদত্ত, তাই কেউ সেগুলি লঙ্ঘনের সাহস করে না, বা কেউ সেগুলি লঙ্ঘনে সক্ষমও নয়। শুধুমাত্র ঈশ্বরের এই সার্বভৌমত্বের কারণে, এবং যেহেতু এই ধরনের বিধান বিদ্যমান, সেই কারণেই মানুষ যে বস্তুজগতকে দেখতে পায় তা নিয়মিত এবং সুশৃঙ্খল; শুধুমাত্র ঈশ্বরের এই সার্বভৌমত্বের কারণেই মানুষ তাদের কাছে সম্পূর্ণ অদৃশ্য অন্য জগতের সঙ্গেও শান্তিপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সহাবস্থান ও জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়—যার সবই ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব থেকে অবিচ্ছেদ্য। কোনো ব্যক্তির নশ্বর দেহের জীবন শেষ হওয়ার পরে, আত্মার তখনও প্রাণ থাকে, আর তাই, তা যদি ঈশ্বরের পরিচালনাধীন না থাকত তাহলে কী হত? আত্মা সব জায়গায় ঘুরে বেড়াত, সর্বত্র অনধিকার প্রবেশ করত, এমনকি এই মনুষ্য জগতে জীবিত সত্তাদেরও ক্ষতি করত। কেবলমাত্র মানবজাতিই নয়, বরং সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলেরও এই ক্ষতি হতে পারত—তবে সবার আগে মানুষেরই ক্ষতি হত। এমন যদি ঘটতো—যদি এই ধরনের আত্মা কারো পরিচালনাধীন না থেকে লোকের সত্যিকারের ক্ষতিসাধন করত, এবং প্রকৃতপক্ষেই অনিষ্টকর কর্ম করত—তাহলে এই আত্মাকেও আধ্যাত্মিক জগতে যথাযথভাবে পরিচালনা করা হত: যদি অবস্থা গুরুতর হত, তাহলে সেই আত্মা অচিরেই বিলীন হয়ে যেত, এবং সেটিকে ধ্বংস করা হত। সম্ভব হলে, সেটিকে অন্য কোথাও রেখে তারপরে পুনর্জন্ম ঘটাতে হত। অর্থাৎ বলা যায়, বিভিন্ন আত্মাদের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক জগতের প্রশাসন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল, এবং তা বিভিন্ন পর্যায় ও নিয়ম অনুসারে সম্পাদিত হয়। শুধুমাত্র এহেন প্রশাসন ব্যবস্থার কারণেই বস্তুগত মনুষ্যজগত বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে নি, সেই কারণেই বস্তুজগতের মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক মানসিকতা, স্বাভাবিক যৌক্তিকতা এবং সুশৃঙ্খল দেহজ জীবন বজায় রয়েছে। মানবজাতির এহেন স্বাভাবিক জীবন থাকলে, তবেই পার্থিব সত্তারা বংশ পরম্পরায় উন্নতি ও বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

এইমাত্র যে সমস্ত বাক্য শুনলে, সেই বিষয়ে তোমার কী মনে হয়? এগুলো কি তোমার কাছে নতুন? আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুসমূহ তোমাদের ওপর কী প্রভাব ফেলেছে? এগুলোর অভিনবত্ব ছাড়া, তোমরা কি অন্য কিছুও অনুভব করছ? (মানুষের সদাচারী হওয়া উচিত, আমরা দেখতে পাই যে ঈশ্বর মহান এবং তাঁকে সম্মান করা উচিত।) (ঈশ্বর বিভিন্ন ধরণের মানুষের পরিণামের ব্যবস্থা কীভাবে করেন, এইমাত্র সেই সব বিষয় শোনার পর, এক দিকে আমার মনে হয় যে, কোনো অপরাধের অনুমোদন তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ এবং, যে, আমার তাঁকে সম্মান করা উচিত; অপরদিকে, কী ধরণের মানুষ ঈশ্বরের পছন্দ, বা কাদের তিনি অপছন্দ করেন, সেই বিষয়ে আমি সচেতন হয়েছি, এবং তাই, আমি তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের একজন হয়ে উঠতে চাই।) তোমরা কি দেখতে পাও, যে, ঈশ্বর এই বিষয়ে তাঁর কর্মনীতি অনুসরণ করেন? তিনি কোন কোন নীতি অনুসারে কাজ করেন? (তিনি মানুষের কর্মের ভিত্তিতে তাদের পরিণাম নির্ধারণ করেন।) আমরা এইমাত্র অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন পরিণাম সম্পর্কে আলোচনা করলাম। অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে, ঈশ্বরের কাজ কি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের নীতি অনুসারে সাধিত হয়? এর কি কোনো ব্যতিক্রম আছে? (না।) তোমরা কি ঈশ্বরের কাজের পেছনে কোনো নীতি চাক্ষুষ করতে পারো? অবিশ্বাসীরা আসলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তাঁর সমন্বয়সাধনেও তারা নিজেদের সমর্পণ করে না। তদুপরি, তারা তাঁর সার্বভৌমত্বের বিষয়েই সচেতন নয়, তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া তো আরোই দূরের কথা। আরও গুরুতর বিষয় হল, তারা ঈশ্বরকে অবমাননা করে, তাঁকে অভিশাপ দেয়, আর যারা ঈশ্বরবিশ্বাসী, তাদের প্রতি বিরূপতা পোষণ করে। ঈশ্বরের প্রতি এমন আচরণ থাকা সত্ত্বেও, তাদের প্রতি ঈশ্বরের পরিচালনা কিন্তু তাঁর নীতিবিরুদ্ধ হয় না; তিনি তাদের সুশৃঙ্খলভাবে, নিজের নীতি ও স্বভাব অনুসারে পরিচালনা করেন। তিনি তাদের বিদ্বেষকে কীভাবে দেখেন? অজ্ঞতা হিসাবে! ফলস্বরূপ, তিনি এই লোকেদের—অর্থাৎ, অবিশ্বাসীদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে—অতীতে পশু হিসাবে পুনর্জন্ম দান করেছেন। তাহলে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে, অবিশ্বাসীরা আসলে কী? তারা সকলেই পশু। ঈশ্বর মানবজাতির পাশাপাশি পশুদেরও পরিচালনা করেন, এবং এই ধরনের মানুষদের জন্যেও তাঁর নীতিসমূহ অভিন্ন। এমনকি এই লোকেদের পরিচালনার মধ্যেও তাঁর স্বভাব পরিলক্ষিত হয়, ঠিক যেমন ঈশ্বরের আয়ত্তাধীন সমস্ত কিছুর উপর তাঁর রাজত্বের পিছনে তাঁর বিধানসমূহ পরিলক্ষিত হয়। এবং সেহেতু, অবিশ্বাসীদের পরিচালনার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত যে নীতিগুলি আমি এইমাত্র উল্লেখ করেছি, সেগুলো কি তোমরা উপলব্ধি করো? তোমরা কি ঈশ্বরের ধার্মিক স্বভাব প্রত্যক্ষ করো? (হ্যাঁ করি।) অন্য কথায়, ঈশ্বর যে বস্তুরই পরিচালনা করুন না কেন, তিনি তাঁর নিজের নীতি ও স্বভাব অনুযায়ীই কাজ করেন। এ-ই হল ঈশ্বরের সারসত্য; তিনি যে এই ধরনের মানুষকে পশু হিসাবে বিবেচনা করেন, নিছক এই কারণে তিনি কখনোই এই ফরমান বা স্বর্গীয় আদেশগুলি আকস্মিকভাবে ভঙ্গ করবেন না। ঈশ্বর নীতির ভিত্তিতে কাজ করেন, বেপরোয়াভাবে নয়, এবং তাঁর কাজগুলি কোনও হেতুর দ্বারাই প্রভাবিত হয় না। তাঁর প্রতিটি কাজ তাঁর নিজস্ব নীতিসমূহ অনুসারেই সংঘটিত হয়। এর কারণ হল, স্বয়ং ঈশ্বরই স্বীয় সারসত্যের অধিকারী; এটি তাঁর সারসত্যের একটি দিক যা কোনো সৃষ্ট সত্তার অধিকৃত নয়। ঈশ্বর তাঁর সৃষ্ট প্রতিটি বস্তু, ব্যক্তি এবং চেতন পদার্থের পরিচালনা, অভিগমন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা এবং কর্তৃত্বের বিষয়ে বিবেকবান এবং দায়িত্বশীল থাকেন, কখনোই অসাবধান হন না। যারা ভালো, তাদের প্রতি তিনি সদয় এবং করুণাময়, আর যারা দুষ্ট তাদের তিনি নির্মম শাস্তি প্রদান করেন; এবং বিভিন্ন জীবের ক্ষেত্রে, তিনি সময়মতো ও নিয়মিতভাবে মনুষ্য জগতের বিভিন্ন প্রয়োজন অনুসারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, এবং তা এমনভাবে করেন যাতে বিভিন্ন জীব সুশৃঙ্খলভাবে, নিজেদের ভূমিকা অনুসারে পুনর্জন্ম লাভ করে, এবং বস্তুজগত ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে নিয়মনিষ্ঠ ভাবে স্থানান্তরিত হয়।

কোনো জীবের মৃত্যুর—ভৌত প্রাণের সমাপ্তির—অর্থ হল যে, সেই জীব বস্তুগত জগত থেকে আধ্যাত্মিক জগতে স্থানান্তরিত হয়েছে, পক্ষান্তরে, কোনো নতুন ভৌত জীবনে জন্মলাভের অর্থ হল যে, সেই জীব আধ্যাত্মিক জগত থেকে বস্তুজগতে উপনীত হয়েছে এবং নিজের ভূমিকা পালন করা শুরু করেছে। আগমন বা প্রত্যাগমন যাই ঘটুক না কেন, উভয়ই আধ্যাত্মিক জগতের কার্যের থেকে অবিচ্ছেদ্য। যখন বস্তুজগতে কারোর আগমন হয়, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই আধ্যাত্মিক জগতে তাঁর উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং সংজ্ঞা প্রস্তুত করে রাখেন, যেমন সেই ব্যক্তি কোন পরিবারে যাবে, কোন যুগে, কোন প্রহরে তার আগমন ঘটবে, কোন ভূমিকা সে পালন করবে। সংক্ষেপে, সেই ব্যক্তির সম্পূর্ণ জীবন—তারা কী করে, কোন পথ গ্রহণ করে—সমস্তটাই আধ্যাত্মিক জগতে করা আয়োজন অনুসারে, সামান্যতম বিচ্যুতি ছাড়াই সম্পাদিত হয়। তদুপরি, যে সময়ে, যে স্থানে ও যে উপায়ে ভৌত জীবনের সমাপ্তি হয়, তা আধ্যাত্মিক জগতের কাছে সুস্পষ্ট এবং বোধগম্য থাকে। ঈশ্বর বস্তুজগতের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জগতও শাসন করেন, এবং তিনি যেমন কোনো আত্মার স্বাভাবিক জীবন-মৃত্যুর চক্রকে বিলম্বিত করবেন না, সেই চক্রের উদ্দেশ্যে আয়োজনের কখনও কোনো ত্রুটি রাখবেন না। আধ্যাত্মিক জগতের আনুষ্ঠানিক পদাধিকারী প্রত্যেক তত্ত্বাবধায়ক নিজেদের স্বতন্ত্র কাজ সম্পাদন করে, এবং ঈশ্বরের নির্দেশ ও নিয়ম অনুসারে নিজেদের করণীয় কাজ সম্পন্ন করে। সুতরাং, মনুষ্যজগতে মানুষের প্রত্যক্ষ করা প্রতিটি বস্তুগত ঘটনা সুশৃঙ্খল, তাতে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। এর কারণ হল সমস্ত কিছুর উপরে ঈশ্বরের সুশৃঙ্খল শাসন বিদ্যমান এবং তাঁর কর্তৃত্বই সবকিছুর নিয়ন্তা। তাঁর রাজত্বের মধ্যে মানুষের বাস করা বস্তুগত জগতের পাশাপাশি, মানবজাতির অগোচর অদৃশ্য আধ্যাত্মিক জগতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতএব, মানুষ যদি সুন্দর জীবন পেতে চায় এবং সুন্দর পরিবেশে বাস করার আশা রাখে, তাহলে তাদের সমগ্র দৃশ্যমান বস্তুজগত প্রদানের পাশাপাশি, অবশ্যই প্রদান করতে হবে সেই আধ্যাত্মিক জগতকেও, যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে, যা মানবজাতির পক্ষ থেকে প্রত্যেক জীবের পরিচালনা করে, এবং যা সুশৃঙ্খল। এইভাবে, সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর, এই কথা বলার মাধ্যমে আমরা কি “সকল বস্তু” সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা এবং উপলব্ধিকে উন্নততর করিনি? (হ্যাঁ।)

ⅱ. বিভিন্ন বিশ্বাসী মানুষের জীবন-মৃত্যুর চক্র

আমরা এইমাত্র প্রথম শ্রেণি, অর্থাৎ অবিশ্বাসী মানুষের জীবন-মৃত্যুর চক্রের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখন, দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ, অর্থাৎ বিভিন্ন বিশ্বাসী মানুষের বিষয়ে আলোচনা করা যাক। “বিভিন্ন বিশ্বাসী মানুষের জীবন-মৃত্যুর চক্র”—এটি হল আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই বিষয়টিকে কিছু হলেও উপলব্ধি করা তোমাদের পক্ষে খুবই দরকারি। প্রথমত, আমাদের জানা উচিত, “বিভিন্ন বিশ্বাসী মানুষের” মধ্যে “বিশ্বাস” বলতে কোন ধর্মবিশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে: প্রধান পাঁচটি ধর্ম হল ইহুদি, খ্রীষ্টীয়, ক্যাথলিক, ইসলাম এবং বৌদ্ধ ধর্ম। অবিশ্বাসীরা ছাড়াও, এই পাঁচটি ধর্মের বিশ্বাসী মানুষেরা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। এই পাঁচটি ধর্মের মধ্যে, নিজেদের বিশ্বাস থেকে পেশা বা কর্মজীবন গঠনকারী লোকের উদাহরণ কম, তবুও এই সব ধর্মের অনেক অনুসারী রয়েছে। মৃত্যুর পর তারা একটি ভিন্ন স্থানে যাবে। কীসের থেকে “ভিন্ন”? অবিশ্বাসী—যারা বিশ্বাসহীন মানুষ—যাদের কথা এইমাত্র আলোচনা করলাম—তাদের থেকে ভিন্ন৷ এই পাঁচটি ধর্মের বিশ্বাসীরা মৃত্যুর পর অবিশ্বাসীদের থেকে আলাদা কোনো স্থানে চলে যায়। তবে, এখানেও সেই একই প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকে; মৃত্যুর আগে তারা যা করেছিল তার ভিত্তিতে আধ্যাত্মিক জগতে তাদের বিচার করা হবে, তারপরে সেই অনুযায়ী তাদের প্রক্রিয়াকরণ ঘটবে। তবু, কেন এই লোকেদের প্রক্রিয়াকরণের জন্য পৃথক স্থানে প্রেরণ করা হয় কেন? এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। সেটি কী? আমি তোমাদের একটা উদাহরণ দিয়ে তা ব্যাখ্যা করব। তবে, তার আগে, তোমরা হয়তো নিজেদের মনে ভাবছ: “তাদের ঈশ্বরে একটু হলেও বিশ্বাস আছে বলেই হয়ত এমনটা হয়! তারা তো সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী নয়।” তবে, কারণটা এটা নয়। তাদের অন্যদের থেকে ভিন্ন স্থানে রাখার পিছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ রয়েছে।

উদাহরণ হিসাবে বৌদ্ধ ধর্মের কথাই নেওয়া যাক। আমি তোমাদের একটা ঘটনা বলি। একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি হল, প্রথমত এমন একজন যে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছে, যে তার বিশ্বাসের বিষয়ে অবগত। যখন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি মাথা ন্যাড়া করে সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনী হয়, তার অর্থ হল তারা ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্ব থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, মনুষ্য জগতের কোলাহলকে পিছনে ফেলে চলে এসেছে। প্রত্যহ তারা সূত্র পাঠ করে, বুদ্ধের নাম জপ করে, কেবলমাত্র নিরামিষ ভোজন করে, সন্ন্যাস জীবন পালন করে, এবং মাখনের প্রদীপের স্মিত, শীতল স্বল্প আলোকে দিনাতিপাত করে। তারা এইভাবেই তাদের সমগ্র জীবন নির্বাহ করে। একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের ভৌত জীবনের অবসান ঘটলে, তারা নিজেদের জীবনের একটা সংক্ষিপ্তসার তৈরি করবে, কিন্তু মৃত্যুর পর তারা কোথায় যাবে, কার সাথে সাক্ষাত করবে, বা তাদের পরিণতি কী হবে, সে বিষয়ে তারা অন্তরে অনবগত থাকবে: তাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে এই বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা থাকবে না। তারা সারা জীবন অন্ধভাবে এক ধরনের বিশ্বাস বহন করা ছাড়া আর কিছুই করবে না, তারপর তারা নিজেদের সকল অন্ধ ইচ্ছা এবং আদর্শ সহ মনুষ্যলোক থেকে বিদায় নেবে। জীবজগত ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বৌদ্ধদের দৈহিক জীবনের অবসান এইভাবেই ঘটে; এর পরে, তারা আধ্যাত্মিক জগতে তাদের আদি স্থানে ফিরে আসে। সেই ব্যক্তি পুনর্জন্ম লাভ করে পৃথিবীতে ফিরে যাবে কিনা এবং আত্মচর্চা চালিয়ে যাবে কিনা, তা মৃত্যুর পূর্বে তাদের করা আচরণ এবং অনুশীলনের উপর নির্ভর করে। জীবদ্দশায় কোনো ভুল না করলে, তারা দ্রুত পুনর্জন্ম লাভ করবে এবং আবার পৃথিবীতে প্রেরিত হবে, সেখানেও তারা আরও একবার সন্ন্যাসী বা সন্ন্যাসিনী হয়ে উঠবে। অর্থাৎ, তারা তাদের জীবনকালে প্রথমবার যেভাবে আত্মচর্চা অনুশীলন করেছিল, সেভাবেই আত্মচর্চা চালিয়ে যাবে, এবং তারপর ভৌত জীবনকাল শেষ হওয়ার পরে আধ্যাত্মিক জগতে ফিরে আসবে, যেখানে তাদের পরীক্ষা করা হবে। তারপরে, কোনো সমস্যা না থাকলে, তারা পুনরায় মনুষ্যজগতে প্রত্যাবর্তন করতে পারে এবং আরও একবার বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হতে পারে, এইভাবে তাদের অনুশীলন চলতে থাকে। তিন থেকে সাতবার পুনর্জন্ম লাভের পর, তারা আবারও আধ্যাত্মিক জগতে অর্থাৎ, যে স্থানে প্রতিবার জীবদ্দশার শেষে ফিরে আসে, সেখানে ফিরবে। মনুষ্যজগতে তাদের বিভিন্ন যোগ্যতা ও আচরণ যদি আধ্যাত্মিক জগতের স্বর্গীয় আদেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে, সেই বিন্দু থেকে, তারা সেখানেই থেকে যাবে; তারা আর মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে না, পৃথিবীতে করা অন্যায়ের জন্য শাস্তি পাওয়ার ঝুঁকি থেকেও তারা বেঁচে যাবে। তাদের আর কখনো এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। বরং, তাদের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে, তারা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে একটি পদ অর্জন করতে পারবে। এটিকেই বৌদ্ধরা “বুদ্ধত্ব অর্জন করা” বলে উল্লেখ করে। বুদ্ধত্ব অর্জনের প্রধান অর্থ হল আধ্যাত্মিক জগতের একজন আধিকারিকের পদলাভের সাফল্য অর্জন করা, এবং তারপরে আর পুনর্জন্ম লাভের অথবা শাস্তি পাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে না থাকা। তদুপরি, এর অর্থ হল মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম লাভের পরে আর যন্ত্রণাভোগ না করা। তাহলে, তাদের পশু হিসাবে পুনর্জন্মলাভের কি আর কোনো সম্ভাবনা থাকে? (না।) এর অর্থ হল তারা আধ্যাত্মিক জগতে নিজেদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে এবং তাদের আর পুনর্জন্ম হবে না। এটাই হল বৌদ্ধ ধর্মে বুদ্ধত্ব অর্জনের পরিণতি। যারা এই ফল অর্জন করতে পারে না, আধ্যাত্মিক জগতে প্রত্যাবর্তনের পরে তারা আবারও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের দ্বারা যাচাইকরণ ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, যারা আবিষ্কার করে যে জীবদ্দশায় তারা অধ্যবসায় সহকারে আত্মচর্চা করেনি অথবা বৌদ্ধধর্মের নির্দেশিত সূত্র পাঠ এবং বুদ্ধের নাম জপ করার ক্ষেত্রে বিবেকবান ছিল না, বরং এর পরিবর্তে অনেক মন্দ কাজ ও অসদাচরণে লিপ্ত ছিল। তখন, আধ্যাত্মিক জগতে তাদের মন্দ কর্মের বিচার করা হয়, এবং তদনুসারে তাদের নিশ্চিতভাবেই শাস্তি দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনোরকম ব্যতিক্রম হয় না। এইভাবে, কোনো ব্যক্তি কখন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারে? যে জীবনকালে তারা কোনোরকম মন্দ কর্মে লিপ্ত হয় না—তার সমাপ্তিতে যখন আধ্যাত্মিক জগতে তারা ফিরে আসে, দেখা যায় যে মৃত্যুর পূর্বে তারা কোনো খারাপ কাজ করেনি। তারপরে তারা পুনর্জন্ম লাভ করে, সূত্র পাঠ এবং বুদ্ধের নাম উচ্চারণ চালিয়ে যায়, মাখনের প্রদীপের শীতল, স্তিমিত আলোকে দিনাতিপাত করে যায়, কোনও জীবন্ত সত্তাকে হত্যা করা বা আমিষ খাওয়া থেকে বিরত থাকে। তারা মনুষ্যজগতে অংশ নেয় না, এই জগতের সমস্যাকে পিছনে ফেলে আসে এবং অন্যান্যদের সাথে কোনোরকম বিরোধে জড়ায় না। এই পদ্ধতি অনুসারে, যদি তারা কোন মন্দ কাজ না করে থাকে, তবে আধ্যাত্মিক জগতে ফিরে আসার পরে এবং তাদের দ্বারা কৃত সমস্ত ক্রিয়াকলাপ এবং আচরণ পরীক্ষা করার পরে, তাদেরকে পুনরায় মনুষ্যজগতে প্রেরণ করা হয়, এক একটা চক্রে তিন থেকে সাতবার এমন ঘটনা ঘটে। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনোরকম অসদাচরণ না করা হয়, তবে তাদের বুদ্ধত্বপ্রাপ্তি প্রভাবিত এবং বিলম্বিত হবে না। বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের জীবন-মৃত্যুর চক্রে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রতীয়মান থাকে: তারা কাঙ্ক্ষিত “ফলাফল অর্জন” করতে এবং আধ্যাত্মিক জগতে পদ অধিকার করতে পারে; এটাই তাদেরকে অবিশ্বাসীদের থেকে আলাদা করে দেয়। প্রথমত, আধ্যাত্মিক জগতে পদ গ্রহণ করতে সক্ষম লোকেরা পৃথিবীতে জীবদ্দশায় কীভাবে আচরণ করবে? তাদের কোনোভাবেই মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়া চলবে না: তারা খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ বা লুণ্ঠন করবে না; যদি তারা প্রতারণা, তছরুপ, চুরি বা ডাকাতির সাথে জড়িত থাকে, তবে কোনো ফল লাভ করতে পারবে না। অন্যভাবে বললে, যদি কোনো মন্দ কর্ম বা তদনুরূপ কোনো কিছুর সাথে তাদের কোনো সংযোগ বা সংশ্লিষ্টতা থাকে, তবে তারা আধ্যাত্মিক জগতের শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। আধ্যাত্মিক জগতে বুদ্ধত্ব অর্জনকারী বৌদ্ধদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে: তাদেরকে বৌদ্ধধর্মে,এবং আকাশে অবস্থিত প্রবীণ মানুষে বিশ্বাসী লোকেদের পরিচালনায় নিযুক্ত করা যেতে পারে—তাদেরকে একটি এক্তিয়ার বরাদ্দ করা যেতে পারে। তাদের শুধুমাত্র অবিশ্বাসীদের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, বা খুব ছোট দায়িত্ব অর্পণ করা হতে পারে। আত্মার বিভিন্ন প্রকৃতি অনুসারে এই ধরনের বরাদ্দকরণ ঘটে। এ-ই হল বৌদ্ধ ধর্মের একটি উদাহরণ।

আমি যে পাঁচটি ধর্মের কথা বললাম, তাদের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্ম তুলনামূলকভাবে বিশিষ্ট। কোন বিষয়টা খ্রীষ্ট ধর্মকে এত বিশেষ করে তোলে? এই ধর্মাবলম্বীরাই একমাত্র সত্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। একমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের কীভাবে এখানে তালিকাভুক্ত করা হয়? খ্রীষ্টধর্ম যে এক ধরনের বিশ্বাস, তা বলার মধ্যে দিয়েই বোঝা যায় যে, তা নিঃসন্দেহে বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে, যে, তা হতে হবে শুধুই এক ধরনের অনুষ্ঠান, এক ধরনের ধর্ম, এবং যারা প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের অনুসরণ করে, তাদের বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় হতে হবে। আমি যে পাঁচটি প্রধান ধর্মের মধ্যে খ্রীষ্টধর্মকে তালিকাভুক্ত করেছি, তার কারণ হল, এটিও ইহুদি, বৌদ্ধ এবং ইসলামের মতো একই স্তরে অবনমিত হয়েছে। এখানে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর বলে কেউ আছেন, অথবা, যে, তিনি সব কিছুর শাসন করেন; আর তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা তো আরোই দূরের কথা। পরিবর্তে, তারা শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থ ব্যবহার করে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে, এবং সেই ধর্মতত্ত্ব ব্যবহার করে মানুষকে সদয় হতে, দুঃখকষ্ট সহ্য করতে এবং ভাল কাজ করতে শেখায়। খ্রীষ্ট ধর্ম এখন এমন ধর্মেই পর্যবসিত হয়েছে: তাতে এখন শুধুমাত্র ধর্মতত্ত্বের তাত্ত্বিক দিকই সন্নিবিষ্ট থাকে, তা আর ঈশ্বরের দ্বারা মানুষের ব্যবস্থাপনা ও উদ্ধারকার্যের বিন্দুমাত্র সম্পর্কযুক্ত নয়। তা এখন ধর্ম হয়ে উঠেছে এমন এক ধরনের মানুষের, যারা ঈশ্বরকে অনুসরণ করলেও, আদতে তাঁর দ্বারা স্বীকৃত নয়। তবুও, এই ধরনের মানুষের ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের অভিগম্যতার কিছু নীতি বিদ্যমান। তিনি অবিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে যেমন ইচ্ছাপূর্বক মোকাবিলা বা পরিচালনা করেন, এদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা করেন না। তিনি বৌদ্ধদের সাথে যেমন আচরণ করেন, এদের সাথেও অনুরূপ ভাবেই আচরণ করেন: যদি জীবদ্দশায় কোনো খ্রীষ্টান আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে পারে, দশটি আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে পারে, এবং বিধান ও নীতিসমূহ অনুসরণে আচরণে সচেষ্ট হতে পারে, এবং জীবৎকাল সেগুলি পালন করে চলতে পারে, তাহলে প্রকৃতপক্ষেই তথাকথিত “উন্নীত হওয়ার” অবস্থা অর্জন করার আগে, তাদেরও অবশ্যই জীবন-মৃত্যুর চক্রের মধ্যে একই পরিমাণ সময় অতিবাহিত করতে হবে। এই উন্নীত অবস্থা অর্জনের পর, তারা আধ্যাত্মিক জগতেই রয়ে যায় আর একটি পদ লাভ করে আধিকারিক হিসাবে অবস্থান করে। তেমনই, যদি তারা পৃথিবীতে থাকাকালীন মন্দ কর্ম করে—যদি তারা খুবই পাপী হয় এবং অনেক মন্দ কাজ করে থাকে—তাহলে তাদের অনিবার্যভাবে শাস্তি দেওয়া হবে এবং বিভিন্ন মাত্রায় অনুশাসন করা হবে। বৌদ্ধ ধর্মে, ফলাফল অর্জনের অর্থ হল পরম সুখের শুদ্ধ ভূমিতে স্থানান্তরিত হওয়া, কিন্তু খ্রীষ্টধর্মের ক্ষেত্রে একে কী বলা হয়? একে বলা হয় “স্বর্গে প্রবেশ করা” এবং “উন্নীত হওয়া”। যারা প্রকৃতপক্ষে উন্নীত হয়, তাদেরকেও তিন থেকে সাতবার জীবন ও মৃত্যুর চক্রের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তারপর, জীবনাবসানে, তারা আধ্যাত্মিক জগতে ফিরে আসে, ঠিক যেন তারা ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারা যদি মানসম্মত হয়, তাহলে পদ গ্রহণ করার জন্য সেখানে থেকে যেতে পারে, তাদের আর পৃথিবীর লোকের মতো সাধারণ উপায়ে বা গতানুগতিকভাবে পুনর্জন্ম লাভ করতে হবে না।

এই সমস্ত ধর্মের মধ্যে,যে অন্তিম অবস্থার কথা বলা হয়, বা যে পরিণামের উদ্দেশ্যে সকলে সচেষ্ট থাকে, তা বৌদ্ধ ধর্মের ফলাফল অর্জনের সমান; কেবলমাত্র পার্থক্য হল যে, এই “ফলাফল” অর্জনের উপায়গুলি আলাদা। তারা সকলেই একই গোষ্ঠীভুক্ত। এই সমস্ত ধর্মের এই অংশের অনুসারী, যারা নিজেদের আচরণের মাধ্যমে কঠোরভাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে, ঈশ্বর তাদের যথাযথ গন্তব্য, গমনের পক্ষে উপযুক্ত স্থান প্রদান করেন, তাদের উপযুক্তভাবে পরিচালনা করেন। এগুলির সমস্তটাই যৌক্তিক হলেও, মানুষ যেভাবে তা কল্পনা করে, তেমনটা আসলে নয়। এখন তোমরা শুনে নিয়েছ যে খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সাথে কী ঘটে, তাহলে তোমাদের এখন কী মনে হচ্ছে? তোমাদের কী মনে হয় যে তাদের এই দুর্দশা অন্যায্য? তোমরা কি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল? (একটু।) এখানে কিছুই করার নেই; তারা কেবল নিজেদেরই দোষারোপ করতে পারে। আমি কেন এমন বলছি? ঈশ্বরের কাজ সত্য; তিনি জীবন্ত এবং বাস্তবিক, তাঁর কাজ সমস্ত মানবজাতি এবং প্রত্যেকটি জীবের উদ্দেশ্যেই সম্পাদিত হয়। তাহলে কেন তারা এটা মেনে নিতে পারে না? তারা কেন এত উন্মত্তভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, তাঁকে নিগ্রহ করে? এই ধরণের ফলাফল প্রাপ্তির জন্য তাদের অন্তত নিজেদের ভাগ্যবান বলেই মনে করা উচিত, তাহলে তোমরা কেন তাদের জন্য দুঃখিত? তাদের এইভাবে পরিচালনা করাটাও মহান সহনশীলতার পরিচায়ক। যে মাত্রায় তারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে, তাতে তাদের ধ্বংস করে দেওয়াই উচিত, তবুও কিন্তু ঈশ্বর তা করেন না; পরিবর্তে তিনি সাধারণ ধর্মের মতোই খ্রীষ্টধর্মকেও পরিচালনা করেন। সুতরাং, অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে আরও বিশদে যাওয়ার দরকার আছে কি? এই সমস্ত ধর্মের নীতি হল যে, মানুষ আরও কষ্ট সহ্য করবে, কোনো মন্দ কর্ম করবে না, সুকর্ম করবে, অন্যকে গালিগালাজ করবে না, অন্যের প্রতি বিচারের মনোভাব পোষণ করবে না, বিবাদ থেকে নিজেকে দূরে রাখবে এবং একজন ভালো মানুষ হবে—অধিকাংশ ধর্মীয় শিক্ষাই এমনতর। সুতরাং, যদি এই সকল বিশ্বাসী মানুষ—বিভিন্ন ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের অনুগামীগণ—তাদের নিজ-নিজ ধর্মের নীতিসমূহ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে পারে, তাহলে তারা এই পৃথিবীতে তাদের অতিবাহিত সময়কালে মারাত্মক কোনও ভ্রান্তি অথবা পাপকার্য থেকে বিরত থাকবে; এবং, তিন থেকে সাত বার পুনর্জন্ম লাভের পর এই সকল ব্যক্তি—যারা ধর্মীয় নীতিসমূহ কঠোরভাবে পালনে সক্ষম—তারা মূলত আধ্যাত্মিক জগতে পদমর্যাদা ও অবস্থান গ্রহণ করে। এই ধরণের কি প্রচুর মানুষ রয়েছে? (না, আদৌ নেই।) তোমার উত্তরের ভিত্তি কী? ভালো কাজ করা এবং ধর্মীয় জগতের নীতি ও নিয়মগুলি পালন করে চলা সহজ নয়। বৌদ্ধ ধর্মে মাংস খাওয়া অনুমোদিত নয়—তুমি কি তা পারবে? যদি তোমাকে ধূসর পরিধান পরে, সারা দিন বুদ্ধ মন্দিরে সূত্র পাঠ এবং বুদ্ধের নাম জপ করতে হত, তুমি কি তা পারতে? এটা সহজ হত না। খ্রীষ্ট ধর্মে দশটি আদেশ রয়েছে, এই আদেশ এবং নিয়মগুলি পালন করা কি সহজ? না তা নয়, তাই না? উদাহরণ হিসাবে অন্যদের গালমন্দ করার বিষয়টাই ধরো: মানুষ এই নিয়ম মেনে চলতে অপারগ। নিজেদের আটকাতে না পেরে, তারা গালমন্দ করে ফেলে—আর তা করার পরে আর সেই কথাগুলি ফিরিয়ে নেওয়া যায় না, তাই তারা কী করে? রাতের বেলা তারা নিজেদের পাপ স্বীকার করে। অনেক সময় অন্যান্যদের গালমন্দ করার পরেও তাদের নিজেদের মনে ঘৃণা সঞ্চিত থাকে, আর সেগুলির মাত্রা ছাড়িয়ে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তারা সময় বার করে সেই মানুষগুলির আরও ক্ষতিসাধন করার ফন্দি আঁটে। সংক্ষেপে, যারা নিষ্প্রাণ মতবাদ আঁকড়ে বাঁচে, তাদের পক্ষে পাপ বা মন্দ কর্ম করা থেকে নিজেদের আটকানো সম্ভব নয়। অতএব, প্রত্যেক ধর্মেই শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু মানুষই এই ফলাফল অর্জন করতে পারে। তুমি কি মনে করো যে, এত বেশি সংখ্যক মানুষ এই ধর্ম অনুসরণ করার জন্য এদের বেশ বৃহৎ একটা অংশ আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে পদ বা ভূমিকা লাভে সক্ষম হবে? তাদের সংখ্যা বেশি নয়; কেবল কয়েকজনই তা অর্জন করতে পারে। এটাই হল বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী মানুষদের জীবন-মৃত্যুর সাধারণ চক্র। ফলাফল অর্জনের বিষয়টাই তাদের আলাদা করে, আর এই বিষয়টাই তাদের অবিশ্বাসীদের থেকে পৃথক করে দেয়।

ⅲ. ঈশ্বরের অনুগামীদের জীবন-মৃত্যুর চক্র

এবার ঈশ্বরের অনুগামীদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের বিষয়ে বলা যাক। এটা তোমাদের পক্ষে জরুরি বিষয়, তাই মনোযোগ দিয়ে শোনো: প্রথমে, ঈশ্বরের অনুসারীদের কীভাবে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়েছিল সেই বিষয়ে ভাবো। (ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণ, এবং সেবা প্রদানকারীগণ।) তাদের প্রকৃতপক্ষে দুইভাগে ভাগ করা যায়: ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণ এবং সেবা প্রদানকারীগণ। প্রথমেই ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের বিষয়ে কথা বলা যাক, যাদের সংখ্যা একেবারেই কম। “ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি” বলতে কাদের বোঝানো হয়? ঈশ্বর সমস্ত কিছু এবং মানবজাতি সৃষ্টি করার পর, একদল মানুষকে নিজের অনুসারী হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন; এদেরকেই সাধারণভাবে “ঈশ্বরের মনোনীত” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এই মানুষদের বেছে নেওয়ার পেছনে ঈশ্বরের বিশেষ সুযোগ এবং তাৎপর্য ছিল। এই সুযোগকে বিশেষ বলা হচ্ছে কারণ, তা শুধুমাত্র কয়েকজন নির্বাচিতদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল, ঈশ্বরের গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় যাদের উপস্থিতি ছিল আবশ্যিক। আর তাৎপর্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? যেহেতু ঈশ্বরই এই গোষ্ঠীর মানুষদের নির্বাচিত করছেন, তাই এদের তাৎপর্য খুবই বেশি। অর্থাৎ, ঈশ্বর এই মানুষদের সম্পূর্ণ করতে চান, ত্রুটিমুক্ত করতে চান, এবং পরিচালনামূলক কার্য সম্পন্ন হওয়ার পরে, তিনি এই মানুষদের অর্জন করবেন। এই তাৎপর্য কি মহান নয়? অর্থাৎ, এই মনোনীত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ঈশ্বর এদেরই অর্জন করার ইচ্ছা রাখেন। আর সেবা-প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে বলতে গেলে, ঈশ্বরের পূর্বনির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয় থেকে একটু বিরতি নিয়ে আগে আমরা প্রথমে তাদের উৎপত্তির বিষয়ে আলোচনা করি। “সেবা-প্রদানকারী” বলতে এমন কাউকে বোঝায় যে সেবা করে। সেবাকারীরা ক্ষণস্থায়ী; তারা দীর্ঘমেয়াদে বা চিরতরে তা করে না, বরং তাদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ বা নিযুক্ত করা হয়। অবিশ্বাসীদের থেকে নির্বাচিত হয়েই তাদের অধিকাংশের উৎপত্তি হয়েছিল। তারা ঈশ্বরের কাজে সেবা-প্রদানকারীর ভূমিকা গ্রহণ করবে, এই মর্মে ফরমান জারি করার পরেই এই পৃথিবীতে তাদের আগমন হয়েছিল। তারা হয়ত গত জন্মে পশু হিসাবে ছিল, আবার তারা অবিশ্বাসীও হতে পারে। এমনটাই হল সেবা-প্রদানকারীদের উৎপত্তি-স্থল।

ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণের বিষয়ে আরও আলোচনা করা যাক। মৃত্যুর পরে তারা যে স্থানে যায় অবিশ্বাসীগণ এবং বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীগণের গন্তব্যের থেকে তা ভিন্ন। সেই স্থানে তাদের সঙ্গী হয় পরি ও দেবদূতগণ; এটি এমন এক স্থান যেটিকে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করেন স্বয়ং ঈশ্বর। যদিও ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিগণ এই স্থানে স্বচক্ষে ঈশ্বরকে দর্শন করতে পারে না, তবু, আধ্যাত্মিক জগতের অন্য কোথাও এই ধরণের অন্য কোনো স্থান নেই; এই স্থান ভিন্ন, যেখানে মানবজাতির এই অংশ মৃত্যুর পর গমন করে। মৃত্যুর পর তাদেরকেও দেবদূতগণের কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেখানে কী পরীক্ষা করা হয়? দেবদূতগণ পরীক্ষা করে দেখে নেন সেই ব্যক্তিগণ তাদের জীবনে ঈশ্বর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কোন কোন পথে চলেছে, সেই সময়ে তারা কখনও ঈশ্বরের বিরোধিতা অথবা তাঁকে কোনো অভিসম্পাত করেছে কিনা, এবং তারা কখনও কোনো সাংঘাতিক পাপাচার অথবা মন্দ কাজ করেছে কি না। এই অনুসন্ধানের পর, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি থেকে যেতে পারবে নাকি তাকে অবশ্যই প্রস্থান করতে হবে—এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। এখানে “প্রস্থান” বলতে কী বোঝানো হয়? আর “থেকে যাওয়া” বলতেই বা কী বোঝায়? “প্রস্থান” বলতে বোঝায়, আচরণ অনুসারে তারা ঈশ্বরের নির্বাচিত লোকেদের মধ্যে নিজেদের পদে থেকে যেতে পারবে না তাদেরকে চলে যেতে হবে; আবার “থেকে যাওয়া”-র অনুমোদন পাওয়ার অর্থ হল, তারা অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের দ্বারা ত্রুটিমুক্ত হওয়ার সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের একজন হয়ে রয়ে যেতে পারবে। যারা থেকে যাবে, তাদের জন্য ঈশ্বরের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। কাজের প্রতিটি পর্বে, ঈশ্বর এই ধরনের মানুষদের প্রেরিত শিষ্য হিসাবে অথবা পুনরুজ্জীবিত করার কাজ বা গির্জার পরিচর্যার কাজ করতে পাঠাবেন। তবে, এই ধরনের কাজে সক্ষম ব্যক্তিরা অবিশ্বাসী লোকেদের মত অত ঘনঘন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জুড়ে পুনর্জন্মলাভ করে না; বরং তারা পৃথিবীর প্রয়োজনীয়তা এবং ঈশ্বরের কাজের পর্যায় অনুসারে প্রত্যাবর্তন করে, বারংবার তাদের পুনর্জন্ম হয় না। সুতরাং, তাদের পুনর্জন্ম কখন হবে, সেই বিষয়ে কি কোনো নিয়ম রয়েছে? তারা কি কয়েক বছর পর পরই একবার করে আসে? তাদের আসার হার কি এইরকমই? না, তা নয়। এগুলির সবই ঈশ্বরের কাজ, কাজের ধাপ এবং তাঁর প্রয়োজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, এবং এর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। একমাত্র নিয়ম হল, ঈশ্বর অন্তিম সময়ে যখন তাঁর কাজের চূড়ান্ত পর্যায় সম্পন্ন করবেন, তখন সমস্ত নির্বাচিত ব্যক্তিদের আগমন ঘটবে, এবং এই আগমনই হবে তাদের অন্তিম পুনর্জন্ম। এবং কেন এমন হবে? তা ঈশ্বরের কাজের শেষ পর্যায়ে অর্জিত ফলাফলের ভিত্তিতে হবে—কারণ কাজের এই শেষ পর্যায়ে, ঈশ্বর এই মনোনীত ব্যক্তিদের পুরোপুরি সম্পূর্ণ করবেন। এর অর্থ কী? যদি, অন্তিম পর্যায়ে, এই লোকেদের সম্পূর্ণ এবং ত্রুটিমুক্ত করা হয়, তাহলে তাদের আর আগের মতো পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হবে না; তাদের মানুষ হওয়ার পাশাপাশি পুনর্জন্ম লাভের প্রক্রিয়াটিও সম্পূর্ণ সমাপ্ত হয়ে যাবে। যারা থেকে যাবে, এমনটা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর যারা থেকে যেতে পারবে না, তারা কোথায় যাবে? যারা থেকে যাওয়ার অনুমোদন পায় না, তাদের নিজ নিজ উপযুক্ত গন্তব্য থাকে। প্রথমত, মন্দ কর্মের ফলস্বরূপ, অর্থাৎ তাদের করা ভুল এবং সমস্ত পাপাচারের কারণে, তাদেরও শাস্তি দেওয়া হবে। শাস্তি দেওয়ার পরে, ঈশ্বর হয় তাদেরকে পরিস্থিতি অনুসারে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রেরণের ব্যবস্থা করবেন, অথবা বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের মানুষদের মাঝে প্রেরণ করবেন। অন্য ভাবে বললে, তাদের সম্ভাব্য দুই রকমের ফলাফল হতে পারে: প্রথমটা হল শাস্তি লাভ করা এবং হয়ত পুনর্জন্ম লাভের পরে নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের মাঝে বসবাস করা, এবং অপরটি হল অবিশ্বাসীতে পরিণত হওয়া। অবিশ্বাসীতে পরিণত হলে, তারা সমস্ত সুযোগ হারিয়ে ফেলবে; তবে, যদি তারা ধর্মবিশ্বাসী মানুষ হয়—উদাহরণস্বরূপ, যদি তারা খ্রীষ্টান হয়—তাহলে ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের পদে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ তখনও তাদের থাকবে; এর মধ্যেকার সম্পর্কগুলি বেশ জটিল। সংক্ষেপে, যদি ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যদি ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করার মতো কিছু করে, তাহলে সেও বাকিদের মতোই শাস্তি পাবে। উদাহরণ হিসাবে পৌলের কথাই ধরে নাও, যার বিষয়ে আমরা আগে আলোচনা করেছি। পৌল হল এমন এমন একজন ব্যক্তির উদাহরণস্বরূপ, যাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমি কী বলছি সেটা কি তোমরা ধারণা করতে পারছ? ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের সুযোগ কি অপরিবর্তনীয়? (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাই।) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অপরিবর্তনীয়, কিন্তু এর অল্প অংশ অপরিবর্তনীয় নয়। তা কেন? এখানে আমি তার সবচেয়ে সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেছি: মন্দকর্ম করা। লোকে মন্দ কর্ম করলে, ঈশ্বর তাদের চান না, আর ঈশ্বর তাদের না চাইলে, তাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রের মানুষের মাঝে নিক্ষিপ্ত করেন। এতে তাদের আর কোন আশা অবশিষ্ট থাকে না এবং তাদের পক্ষে প্রত্যাবর্তন হয়ে দাঁড়ায় কষ্টকর। এগুলির সমস্তই ঈশ্বরের মনোনীত মানুষদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের সাথে সম্পর্কিত।

পরবর্তী বিষয়টি সেবা-প্রদানকারীদের জীবন-মৃত্যুর চক্রের সাথে সম্পর্কিত। আমরা এইমাত্র সেবা-প্রদানকারীদের উৎপত্তির কথা আলোচনা করেছি; অর্থাৎ, তারা পূর্বজন্মে অবিশ্বাসী ছিল, এবং পশু হয়ে জন্ম নেওয়ার পর তাদের পুনর্জন্ম হয়েছিল। কাজের শেষ পর্যায়ে উপনীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে এইরকম মানুষদের একটি গোষ্ঠীকে বেছে নিয়েছেন, এবং এটি হল এক বিশেষ গোষ্ঠী। এই ব্যক্তিদের বেছে নেওয়ার পিছনে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হল, তাঁর কাজের ক্ষেত্রে তাদের সেবা গ্রহণ করা। “সেবা” খুব একটা শ্রুতিমধুর শব্দ নয়, বা তা সকলের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণও নয়, তবুও এটা কাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, তা আমাদের জানা উচিত। ঈশ্বরের সেবা-প্রদানকারীর অস্তিত্বের একটি সবিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। অন্য কেউ তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে না, কারণ তারা ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত। এবং এইসব সেবা-প্রদানকারীদের ভূমিকা কী? তা হল ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের সেবা করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, তাদের ভূমিকা হল ঈশ্বরের কাজে সেবা প্রদান করা, তাতে সহযোগিতা করা, এবং ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত ব্যক্তিদের স্বয়ং তিনিই যাতে সম্পূর্ণ করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করা। তাদের করা পরিশ্রম, কাজের কিছু অংশের সম্পাদন, অথবা নির্দিষ্ট কিছু কাজ করা নির্বিশেষে, ঈশ্বরের এই সেবা-প্রদানকারীদের থেকে কী চাহিদা? তাদের প্রতি তাঁর চাহিদা কি প্রচুর? (না, তিনি তাদের থেকে শুধু আনুগত্য আশা করেন।) সেবা-প্রদানকারীদেরকেও অবশ্যই অনুগত হতে হবে। তোমার উৎস অথবা ঈশ্বরের তোমাকে বেছে নেওয়ার কারণ নির্বিশেষে, তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতি, ঈশ্বরের অর্পিত যেকোনো দায়িত্বের প্রতি অনুগত থাকতে হবে, এবং দায়িত্ব এবং পালনীয় কর্তব্যের প্রতি তোমায় বিশ্বস্ত থাকতে হবে। যে সেবা-প্রদানকারীরা বিশ্বস্ত থাকে এবং ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাদের পরিণতি কী হবে? তারা থেকে থেকে পারবে। থেকে যাওয়া কি সেবা-প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে আশীর্বাদস্বরূপ? এই আশীর্বাদের তাৎপর্য কী? মর্যাদাগত ভাবে, এমন মনে হয় যে তারা ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের থেকে ভিন্নতর; যেন, তারা আলাদা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তারা এই জীবনে কি ঈশ্বরের মনোনীত লোকেদের মতোই বিভিন্ন জিনিস উপভোগ করে না? অন্ততপক্ষে, এই জীবদ্দশার ক্ষেত্রে তা অভিন্ন। তোমরা এমনটা অস্বীকার করতে পারো না, পারো কি? ঈশ্বরের কথন, ঈশ্বরের অনুগ্রহ, ঈশ্বরের বিধান, ঈশ্বরের আশীর্বাদ—এইসব কে না উপভোগ করে? সকলেই প্রভূত পরিমাণে তা উপভোগ করে। একজন সেবা-প্রদানকারীর পরিচয় হল যে, সে এক সেবা দানকারী ব্যক্তি, কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সে তাঁর সৃষ্ট সমস্ত সত্তার মধ্যে নিছকই এক সত্তা মাত্র; শুধু তার ভূমিকা হল সেবা-প্রদানকারীর। যেহেতু সেবা-প্রদানকারী এবং ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি উভয়ই ঈশ্বরের সৃষ্টি, তাই তাদের মধ্যে কি কোনো পার্থক্য রয়েছে? কার্যত, নেই। তবে নামমাত্র বললে, তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে; সারসত্য এবং ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের একটা পার্থক্য রয়েছে—কিন্তু ঈশ্বর এই গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করেন না। তাহলে কেন এই লোকেদের সেবা-প্রদানকারী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়? তোমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে কিছু উপলব্ধি থাকতে হবে! সেবা-প্রদানকারীরা অবিশ্বাসীদের মধ্য থেকে আসে। যেইমাত্র আমরা উল্লেখ করি অবিশ্বাসীদের মধ্যে থেকে তাদের আগমন, তখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের পটভূমি খারাপ: তারা সকলেই নাস্তিক, এবং অতীতেও তাই ছিল; তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করত না, এবং তাঁর প্রতি, সত্যের প্রতি, এবং ইতিবাচক সকলকিছুর প্রতি বিদ্বেষের মনোভাব পোষণ করত। তারা ঈশ্বর বা তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করত না। তাহলে, তারা কি ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করতে সক্ষম? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে তারা সক্ষম নয়, তা বলাই বাহুল্য। ঠিক যেমন পশুরা মানুষের কথা বুঝতে পারে না, তেমনই সেবা প্রদানকারীরাও বোঝে না ঈশ্বর কী বলছেন, তিনি কী চান অথবা তিনি এমন দাবি কেন করছেন। তারা এসব উপলব্ধি করে না; তাদের কাছে এই সমস্ত জিনিস দুর্বোধ্য, এবং তারা অনালোকিতই থেকে যায়। এই কারণে, তারা আমাদের আলোচিত জীবনের অধিকারী হয় না। এই জীবন ব্যতীত, মানুষ কি সত্য উপলব্ধি করতে পারে? তারা কি সত্য সহকারে সজ্জিত হতে পারে? তাদের কি ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থাকে? (না।) সেবা-প্রদানকারীদের উৎপত্তি এমনই। তবে, যেহেতু ঈশ্বরই এই লোকেদের সেবা-প্রদানকারী হিসাবে নিযুক্ত করেছেন, সেহেতু এখনও তাদের জন্য তাঁর প্রয়োজনীয়তা মানসম্পন্ন; তিনি তাদের অবজ্ঞা করেন না, তেমনই তাদের প্রতি উদাসীন নন। যদিও তারা তাঁর বাক্য উপলব্ধি করতে পারে না, এবং তারা জীবনের অধিকারী নয়, তবুও তিনি তাদের সাথে সদাচরণ করেন, এবং তাদের প্রতি তাঁর প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে এখনও মানদণ্ডসমূহ বজায় থাকে। তোমরা এইমাত্র মানদণ্ডগুলির বিষয়ে বললে: ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকা এবং তিনি যা বলেন তাই করা। সেবার ক্ষেত্রে, তোমাকে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই সেবা করতে হবে, এবং অবশ্যই শেষ পর্যন্ত সেবা করতে হবে। তুমি যদি একজন অনুগত সেবা-প্রদানকারী হতে পারো, একেবারে শেষ পর্যন্ত সেবা করতে সক্ষম হও, এবং ঈশ্বরের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারো, তাহলে তুমি মূল্যবান জীবন যাপন করতে পারবে। এমনটা করতে পারলে, তুমি থেকে যেতে পারবে৷ যদি তুমি একটু বেশি পরিশ্রম করো, একটু বেশি সচেষ্ট হও, ঈশ্বরকে উপলব্ধির প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করতে পারো, ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে কিছু কথা বলতে পারো, তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারো, এবং সর্বোপরি, যদি তুমি তাঁর ইচ্ছার কিছুমাত্র উপলব্ধি করতে পারো, ঈশ্বরের কাজে সহযোগিতা করতে পারো, এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা সচেতন হতে পারো, তাহলে একজন সেবা-প্রদানকারী হিসাবে তুমি তোমার ভাগ্য পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করবে। আর ভাগ্যের এই পরিবর্তন কেমন হবে? তুমি আর নিছকই থেকে যাওয়া লোকেদের মধ্যে থাকবে না। তোমার আচরণ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা এবং সাধনার ভিত্তিতে, ঈশ্বর তোমাকে তাঁর নির্বাচিতদের লোকেদের একজন করে দেবেন৷ এটাই হবে তোমার ভাগ্যের পরিবর্তন। সেবা-প্রদানকারীদের পক্ষে এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার কোনটা? সেটা হল যে, তারা ঈশ্বরের মনোনীত হয়ে উঠতে পারে। এমনটা হতে পারার অর্থ হল, তাদের আর অবিশ্বাসীদের মতো পশু হিসাবে পুনর্জন্ম নিতে হবে না। এমনটা কী ভালো? হ্যাঁ, এটা ভালো। আর এটা এক রকমের সুখবরও বটে: এর অর্থ হল, সেবা-প্রদানকারীদের গড়েপিটে নেওয়া যায়। ঈশ্বর তাদের সেবা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত করে নিলে, তারা যে অনন্তকাল যাবৎ তাই করে যাবে, তা কিন্তু নয়। ঈশ্বর তাদের ব্যক্তিগত আচরণের সাথে সাযুজ্য রেখে পরিচালনা করবেন এবং প্রতিক্রিয়া দেবেন।

তবে, এমনও সেবা-প্রদানকারী রয়েছে যারা অন্তিম অবধি সেবা প্রদানে অক্ষম রয়ে যায়; তাদের মধ্যে এমনও লোকজন রয়েছে যারা সেবা প্রদানকালে মাঝপথেই হাল ছেড়ে দেয় এবং ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করে, আবার এমন মানুষও রয়েছে যারা একাধিক মন্দ কর্ম সংঘটন করে। এমনকি অনেকে থাকে যারা প্রবল অনিষ্ট করে এবং ঈশ্বরের কাজে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, আবার এমনও সেবা-প্রদানকারী রয়েছে যারা ঈশ্বরকে অভিসম্পাত সহ অনেক কিছু করে। এইসব কোন অপরিবর্তনীয় পরিণামের দিকে ইঙ্গিত করে? এই ধরনের যেকোনো কাজের তাৎপর্য হল তাদের সেবা প্রদানের পরিসমাপ্তি। যেহেতু সেবা প্রদানকালে তোমার আচরণ অত্যন্ত নিকৃষ্ট রয়েছে, এবং যেহেতু তুমি সীমা অতিক্রম করে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছ, সেহেতু, যখন ঈশ্বর দেখবেন যে তোমার সেবা মানসম্মত নয়, তিনি তোমার সেবা করার যোগ্যতা হরণ করবেন। তিনি তোমাকে আর সেবা করার অনুমতি দেবেন না; তিনি তাঁর চোখের সামনে থেকে এবং ঈশ্বরের গৃহ থেকে তোমাকে সরিয়ে দেবেন। এই কারণেই কি তুমি সেবা করতে চাও না? তুমি কি ক্রমাগত মন্দ কর্ম করতে চাইছ না? ক্রমাগত অবিশ্বাসী হয়ে থাকছ না? তাহলে, এর একটা সহজ সমাধান আছে: তোমার সেবা করার যোগ্যতা কেড়ে নেওয়া হবে। ঈশ্বরের কাছে কোনো সেবা-প্রদানকারীর সেবা করার যোগ্যতা হরণ করার অর্থ হল সেই সেবা-প্রদানকারীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে, এবং সে আর ঈশ্বরের সেবা করার যোগ্য থাকবে না। ঈশ্বরের এই ব্যক্তির থেকে আর সেবা পাওয়ার প্রয়োজন হয় না, তারা তখন যত সুমধুর কথাই বলুক না কেন, সবই নিষ্ফল হবে। এইরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, সেটার আর সুরাহা করা যাবে না; এহেন সেবা-প্রদানকারীদের আর ফেরার রাস্তা থাকে না। আর ঈশ্বর এইরকম সেবা-প্রদানকারীদের সাথে কীভাবে মোকাবিলা করেন? তিনি কি শুধু তাদের সেবা করা থেকে বিরত করেন? না। তিনি কি তাদের থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা প্রতিরোধ করেন? অথবা, তিনি কি তাদের একপাশে সরিয়ে রেখে তাদের প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা করেন? না, তিনি তা করেন না। সত্যি বলতে, সেবা-প্রদানকারীদের ক্ষেত্রে ঈশ্বর এত প্রেমপূর্ণ মনোভাব রাখেন না। ঈশ্বরের সেবার ক্ষেত্রে কারোর এই ধরনের মনোভাব থাকলে, সেই কারণের জন্য ঈশ্বর তাদের সেবা করার যোগ্যতা ছিনিয়ে নেবেন, এবং তাদেরকে আবার অবিশ্বাসীদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত করবেন। এবং, কোনো সেবা-প্রদানকারীকে অবিশ্বাসীদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হলে, তার ভাগ্য কী হয়? তা অবিশ্বাসীদের মতোই হয়: তারা পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করবে এবং আধ্যাত্মিক জগতে অবিশ্বাসী হিসাবে একই শাস্তি পাবে। তদুপরি, ঈশ্বর এই ব্যক্তির শাস্তির বিষয়ে কোনও ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখাবেন না, কারণ ঈশ্বরের কাজের সাথে এহেন ব্যক্তির আর কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। তা তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসপূর্ণ জীবনের পরিসমাপ্তির পাশাপাশি, তাদের নিজেদের ভাগ্যেরও পরিসমাপ্তি, তাদের ভাগ্যের ঘোষণাও বটে। এইভাবে, সেবা-প্রদানকারীদের সেবা যদি অযথার্থ হয়, তবে তাদের নিজেদেরকেই ফল ভোগ করতে হবে। যদি কোনো সেবা-প্রদানকারী শেষ পর্যন্ত সেবা করতে অক্ষম হয়, অথবা মাঝপথে তার সেবা করার যোগ্যতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে তাকে অবিশ্বাসীদের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে—এবং তেমনটা ঘটলে, এমনতর ব্যক্তির সাথে পশুদের মতো আচরণ করা হয়, তাদের যুক্তিবুদ্ধিহীন মানুষের মতো করে দেখা হয়। আমি এইভাবে বললে, তবেই তোমরা বুঝতে পারো, তাই নয় কি?

ঈশ্বর কীভাবে তাঁর মনোনীত ব্যক্তি এবং সেবা-প্রদানকারীদের জীবন-মৃত্যুর চক্র পরিচালনা করেন তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এসব শোনার পর তোমরা কেমন অনুভব করছ? আমি কি আগে এই বিষয়ে আলোচনা করেছি? আমি কি আগে ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তি এবং সেবা-প্রদানকারীদের বিষয়ে কথা বলছি? আসলে, বলেছি, কিন্তু তোমাদের মনে নেই। ঈশ্বর তাঁর মনোনীত লোক এবং সেবা-প্রদানকারীদের প্রতি ন্যায়পরায়ণ। সব ক্ষেত্রেই তিনি ধার্মিক। তুমি কি এর মধ্যে কোনো ভুল দেখেছ? “ঈশ্বর কেন তাঁর মনোনীত ব্যক্তিদের প্রতি এত সহিষ্ণু? কেনই বা সেবা-প্রদানকারীদের প্রতি তিনি এত সামান্য সহনশীল”, এমনটা বলার মত লোক কি নেই? কেউ কি সেবা-প্রদানকারী হতে রাজী আছো? “ঈশ্বর কি সেবা-প্রদানকারীদের আরও একটু সময় দিতে পারেন, এবং আর একটু সহিষ্ণু এবং ধৈর্যশীল হতে পারেন?” এই ধরনের প্রশ্ন করা কি ঠিক? (না, ঠিক নয়।) আর কেন নয়? (কারণ তাদের সেবা-প্রদানকারী পদ প্রদান করার মাধ্যমে আসলে তাদের প্রতি ইতিমধ্যে আনুকূল্য দেখানো হয়েছে।) সেবা-প্রদানের অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমেই সেবা-প্রদানকারীদের প্রতি আনুকূল্য দেখানো হয়েছে! “সেবা-প্রদানকারী” উপাধি ব্যতীত, তাদের করা কাজ ব্যতীত, এই লোকেরা কোথায়ই বা যাবে? তারা অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে, পশুপালের সাথেই বাঁচবে এবং মারা যাবে। ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে পেরে এবং ঈশ্বরের গৃহে আসার অনুমতি পেয়ে তারা বর্তমানে কত মহান অনুগ্রহই না উপভোগ করছে! এটা সত্যিই অসাধারণ একটা অনুগ্রহ! যদি ঈশ্বর তোমাকে সেবা করার সুযোগ না দিতেন, তবে তুমি কখনই তাঁর সামনে আসার সুযোগ পেতে না। অন্তত বলা যায়, তুমি যদি একজন ফলাফল অর্জন করা বৌদ্ধ হও, তবে আধ্যাত্মিক জগতে বড়জোর একজন ছোটাছুটি করার কর্মীই হতে পারো; তুমি কখনই ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে পারবে না, তাঁর কণ্ঠস্বর বা তাঁর বাক্য শুনতে পাবে না, অথবা তাঁর ভালবাসা ও আশীর্বাদ অনুভব করতে পারবে না, কখনও তাঁর মুখোমুখি হতে পারবে না। বৌদ্ধরা বড়জোর সহজ কিছু কর্মভার অর্জন করতে পারে। তাদের পক্ষে ঈশ্বরকে চেনার সম্ভাবনা কম, এবং তারা নিছক আদেশ মেনে চলে এবং মান্য করে, পক্ষান্তরে সেবা-প্রদানকারীরা কাজের এই পর্যায়ে কত কিছুই না লাভ করে! প্রথমত, তারা ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে, তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে, তাঁর বাক্য শুনতে, এবং মানুষের উপর তিনি যে অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ প্রদান করেন তা অনুভব করতে সক্ষম। তদুপরি, তারা ঈশ্বরের বর্ষিত বাক্য ও সত্য উপভোগ করতে সক্ষম। সেবা-প্রদানকারীরা প্রকৃতপক্ষেই কত অর্জন করে! এইভাবে, একজন সেবা-প্রদানকারী হিসাবে, তুমি যদি যথাযথ সচেষ্ট না হতে পারো, তাহলে ঈশ্বর কি এখনও তোমাদের রেখে দেবেন? তিনি তোমায় রাখতে পারেন না। তিনি তোমার থেকে বেশি কিছু চান না, তবুও তুমি তাঁর কাঙ্ক্ষিত কাজ যথাযথভাবে করো না; তুমি তোমার কাজ ঠিক করে পালন করো না। এইভাবে, নিঃসন্দেহে ঈশ্বর তোমাদের রাখতে পারেন না। ঈশ্বরের ন্যায়পরায়ণ স্বভাব এমনই। ঈশ্বর তোমার ওপর অতিরিক্ত অধিকার ফলান না, আবার তোমার প্রতি বৈষম্যও করেন না৷ এই সকল নীতির মাধ্যমেই ঈশ্বর কাজ করেন৷ ঈশ্বর এই পদ্ধতিতেই সমস্ত মানুষ এবং জীবের সাথে আচরণ করেন।

আধ্যাত্মিক জগতের ক্ষেত্রে, সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন সত্তা যদি কিছু ভুল করে অথবা নিজের কাজ ঠিক করে পালন না করে, তখনও ঈশ্বর তাদের সাথে বোঝাপড়া করে নেওয়ার জন্য যথোপযুক্ত স্বর্গীয় আদেশ এবং ফরমানসমূহ জারি করেন; এটা পরম সত্য। অতএব, ঈশ্বরের হাজার হাজার বছর ধরে চলা পরিচালনামূলক কার্যের সময়ে, মন্দ কাজ করা কোনও কোনও দায়িত্ব-পালনকারীদের নির্মূল করা হয়, আবার কাউকে—এই সময়েও—আটক করা ও দণ্ড প্রদান করা হয়। আধ্যাত্মিক জগতে প্রতিটি সত্তার জন্যই এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী। তারা যদি মন্দ বা ভুল কাজ করে, তাহলে তাদের দণ্ড দেওয়া হয়—আর ঈশ্বর তাঁর মনোনীত ব্যক্তি এবং সেবা-প্রদানকারীদের প্রতিও ঠিক এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেন। এইভাবে, বস্তুজগত এবং আধ্যাত্মিক জগত, উভয়ের ক্ষেত্রেই, ঈশ্বরের কাজের নীতি অপরিবর্তিত থাকে। তুমি ঈশ্বরের কাজ প্রত্যক্ষ করো বা না করো, সেগুলির নীতিসমূহ অপরিবর্তনীয়। তাঁর সকল বিষয়ে অভিগম্যতার এবং সমস্ত বস্তু পরিচালনার ক্ষেত্রেই, ঈশ্বর অভিন্ন নীতিসমূহ অনুসরণ করেন। এমনটা অপরিবর্তনীয়। যে সমস্ত অবিশ্বাসীরা তুলনামূলকভাবে যথার্থ জীবনযাপন করে, ঈশ্বর তাদের প্রতি সদয় থাকেন, এবং প্রত্যেক ধর্মের মধ্যেই যারা সদাচরণ করে, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে, ঈশ্বর তাদের জন্য সুযোগের ব্যবস্থা করে রাখেন, তিনি তাঁর পরিচালিত সমস্ত কাজে তাদের ভূমিকা পালনের অনুমতি দেন এবং তাদের করণীয় কাজ করতে দেন। অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের অনুগামী এবং তাঁর মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে, কারোর প্রতিই ঈশ্বর কোনোরকম বৈষম্য করেন না, তিনি তাঁর নীতিগুলির অনুবর্তী থাকেন। যারা তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করতে পারে, তাদের প্রত্যেকের প্রতি তিনি সদয়, এবং যারা তাঁকে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করে, তাদের প্রত্যেককে তিনি ভালোবাসেন। তবে, বিষয়টা হল এমন, যে, এই বিভিন্ন ধরণের মানুষদের জন্য—অবিশ্বাসী, বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের লোক এবং ঈশ্বরের মনোনীত ব্যক্তিদের জন্য—তিনি যা প্রদান করেন, তা সকলের ক্ষেত্রে এক হয় না। উদাহরণস্বরূপ, অবিশ্বাসীদের কথাই ধরো: যদিও তারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, ঈশ্বর তাদের পশু হিসাবেই দেখেন, সমস্ত কিছুর মধ্যে তাদের প্রত্যেকের ভোজনের নিমিত্ত আহার, নিজস্ব বাসস্থান রয়েছে, রয়েছে জীবন ও মৃত্যুর স্বাভাবিক চক্র। যারা মন্দ কাজ করে তারা দণ্ড ভোগ করে, এবং যারা সৎকর্ম করে তারা আশীর্বাদধন্য হয় ও ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করে। বিষয়টা কি এমনতরই নয়? ধর্মবিশ্বাসী লোকদের ক্ষেত্রে, যদি তারা বারংবার পুনর্জন্ম লাভের মাধ্যমে নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলতে সক্ষম হয়, তবে সেই সমস্ত পুনর্জন্মের পরে, ঈশ্বর শেষ পর্যন্ত তাদের ওপর কর্তৃত্ব ঘোষণা করবেন। একইভাবে, বর্তমানে তোমাদের ক্ষেত্রেও, তুমি ঈশ্বরের মনোনীত লোক বা সেবা-প্রদানকারী যেই হও না কেন, ঈশ্বর তোমাকেও একইভাবে সুসঙ্গতিপূর্ণ করে তুলবেন, এবং তাঁর নির্ধারিত বিধান ও প্রশাসনিক ফরমানসমূহ অনুসারে তোমার ফলাফল নির্ধারণ করবেন। এই বিভিন্ন ধরনের মানুষের মধ্যে, যারা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী হয়—তাদের বসবাসের জন্য কি ঈশ্বর স্থান প্রদান করেন? ইহুদিরা কোথায়? ঈশ্বর কি তাদের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করেছেন? না, তিনি করেন নি। আর খ্রীষ্টানদের ব্যাপারে কী বলবে? তাদের উপরও তিনি কিন্তু হস্তক্ষেপ করেন নি। তিনি তাদের স্ব-স্ব পদ্ধতি মেনে চলার অনুমতি দেন, তিনি তাদেরকে কিছু বলেন না বা তাদের কোনোভাবে আলোকিত করেন না, এবং তদুপরি, তিনি তাদের কাছে কিছু প্রকাশও করেন না। তুমি যদি এটাকে ঠিক বলে মনে করো, তাহলে এইভাবে বিশ্বাস করতে পারো। ক্যাথলিকরা মরিয়মের ওপর বিশ্বাস করে, আর তার মাধ্যমেই যীশুর কাছে তারা খবর পাঠায়; তাদের বিশ্বাসের ধরন এমনই। ঈশ্বর কি তাদের বিশ্বাস কখনো সংশোধন করেছেন? তিনি তাদের স্বতন্ত্র পরিসর প্রদান করেন; তাদের প্রতি কোনোরকম মনোযোগ নি দিয়ে তাদের বসবাসের উদ্দেশ্যে একটা নির্দিষ্ট স্থান প্রদান করেছেন। মুসলিম ও বৌদ্ধদের ক্ষেত্রেও কি তিনি তাই করেন না? তাদের সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসে কোনোরকম হস্তক্ষেপ না করেই তিনি তাদের জন্যও সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তাদের জন্যও বসবাসের স্থান অনুমোদন করেছেন। এই সবই যথাযথ ক্রমে রয়েছে। আর তোমরা এই সব কিছুর মধ্যে কী প্রত্যক্ষ করলে? দেখলে যে, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের অধিকার রয়েছে, কিন্তু তিনি তা অসদ্ব্যবহার করেন না। ঈশ্বর সব কিছুই নিখুঁত ক্রমে সাজিয়ে রাখেন এবং সুসংবদ্ধভাবে তা সম্পন্ন করেন, আর এর মধ্যেই তাঁর প্রজ্ঞা এবং সর্বশক্তিমত্তা লুকিয়ে রয়েছে।

আজ আমরা একটা নতুন ও বিশেষ বিষয় স্পর্শ করেছি, যা আধ্যাত্মিক জগতের বিষয় আশয়ের সাথে জড়িত, যা সেই জগতে ঈশ্বরের পরিচালনা এবং রাজত্বের একটা দিক তুলে ধরছে। এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করার আগে, তোমরা হয়ত বলে থাকবে “এর সাথে যুক্ত সমস্ত জিনিসই রহস্যময় এবং তা আমাদের জীবনে প্রবেশের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়; এই সমস্ত বিষয় মানুষের প্রকৃত বসবাসের উপায়ান্তরের থেকে বিচ্ছিন্ন, এবং সেগুলি আমাদের বোঝারও দরকার নেই, এমনকি আমরা সেগুলি শোনারও ইচ্ছা রাখি না। ঈশ্বরকে জানার সঙ্গে এগুলির একেবারেই কোনো সংযোগ নেই।” এখন, তোমরা কি ভাবো যে এইরকম চিন্তাভাবনায় কোনো ত্রুটি রয়েছে? তা কি ঠিক? (না।) এই ধরনের চিন্তা সঠিক নয় এবং এতে গুরুতর সমস্যা আছে। এর কারণ হল, কীভাবে ঈশ্বর সমস্ত কিছুর ওপর কর্তৃত্ব করেন তা তুমি বুঝতে চাইলেও তা তুমি একেবারেই বুঝতে পারবে না, তুমি শুধু যা কিছু দেখ এবং তোমার চিন্তাভাবনার মাধ্যমে যা কিছু উপলব্ধি করতে পারে, সেটুকুই অনুধাবনে সক্ষম; তোমাকে অবশ্যই অন্য জগতের বিষয়ে কিছুটা উপলব্ধি করতে হবে, যে জগত আপাতদৃষ্টিতে অদৃশ্য হলেও, দৃশ্যমান ইহলোকের সাথে তা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। এটা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয়, এবং এটা "সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর", এই বিষয়ের সাথে যুক্ত। সেবিষয়ে এটাই হল তথ্য। এই তথ্যের অভাবে, কীভাবে সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর তা নিয়ে মানুষের জ্ঞানের ত্রুটি এবং ঘাটতি থেকে যাবে। এইভাবে, আমরা আজকে যা বলেছি, বলা যেতে পারে যে তা আমাদের পূর্ববর্তী বিষয়গুলির সংক্ষিপ্তসার, সেইসাথে, তা "সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর" বিষয়বস্তুটিরও উপসংহার প্রদান করে। এমনটা উপলব্ধি করার পর, তোমরা কি এখন এই বিষয়বস্তুর মাধ্যমে ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম? আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, আজ আমি তোমাদের সেবা-প্রদানকারীদের সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছি। আমি জানি যে তোমরা এই ধরনের বিষয় সম্পর্কিত আলোচনা সত্যিই উপভোগ করো, এবং এই বিষয়গুলির প্রতি তোমরা সত্যিই মনযোগী৷ তাহলে আজকে আমি যা বলেছি তাতে কি তোমরা কি সন্তুষ্ট? (হ্যাঁ, সন্তুষ্ট।) অন্যান্য কিছু বিষয় তোমাদের উপর হয়ত খুব একটা শক্তিশালী প্রভাব ফেলেনি, কিন্তু সেবা-প্রদানকারীদের সম্পর্কে আমি যা কিছু বলেছি, তার সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষ প্রভাব রয়েছে, করণ এই বিষয়টা তোমাদের প্রত্যেকের আত্মাকে স্পর্শ করে।

মানবজাতির কাছে ঈশ্বরের চাহিদা

ⅰ. স্বয়ং ঈশ্বরের পরিচয় ও মর্যাদা

"সকল বস্তুর প্রাণের উৎস হলেন ঈশ্বর"—এই বিষয়বস্তুর পাশাপাশি আমরা “ঈশ্বরই স্বয়ং অদ্বিতীয় ঈশ্বর”-বিষয়টিরও শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি। ফলত, আমাদের এই বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ করতে হবে। আমাদের আবশ্যিকভাবে কী ধরনের সংক্ষিপ্তসার তৈরি করতে হবে? তা হল স্বয়ং ঈশ্বরের বিষয়ে উপসংহার স্বরূপ। এমনটা হওয়ার কারণে, এর মধ্যে অবশ্যই ঈশ্বরের প্রতিটি দিক, এবং মানুষ কীভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তার অবশ্যম্ভাবী সংযোগ থাকতে হবে। এবং সেহেতু, প্রথমেই আমি তোমাদের কাছে জানতে চাই: এই সমস্ত উপদেশ শোনার পর তোমাদের মানসচক্ষে যে ঈশ্বর ফুটে ওঠেন, তিনি কে? (সৃষ্টিকর্তা।) তোমাদের মানসচক্ষে ঈশ্বর হলেন সৃষ্টিকর্তা। আর কিছু আছে কি? ঈশ্বরই সমস্তকিছুর প্রভু। এই বাক্য কি যথাযথ? (হ্যাঁ।) ঈশ্বরই হলেন তিনি, যিনি সকলকিছুর নিয়ন্তা এবং পরিচালক। তিনি যেখানে যাকিছু রয়েছে সকলই সৃষ্টি করেছেন, সেগুলিকে পরিচালনা এবং শাসন করেন এবং যেখানে যাকিছু রয়েছে, সবকিছুর জন্য যোগান দেন। এমনটাই হল একাধারে ঈশ্বরের মর্যাদা, এবং, পরিচয়ও। এখানে থাকা সমস্ত কিছু এবং সমস্ত জিনিসের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রকৃত পরিচয় হল সৃষ্টিকর্তা এবং সকল সৃষ্টির শাসনকর্তা হিসাবে। ঈশ্বর হলেন এমনই পরিচয়ের অধিকারী, এবং তিনি সমস্ত কিছুর মধ্যে অনন্য। ঈশ্বরসৃষ্ট কোনো প্রাণীই—তা তারা মানবজাতির অন্তর্ভুক্তই হোক বা আধ্যাত্মিক জগতের—কোনো উপায় অথবা অজুহাত প্রয়োগ করে ঈশ্বরের ছদ্মবেশ ধারণ করতে অথবা তাঁর পরিচয় এবং মর্যাদাকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না, কারণ সকলকিছুর মাঝে সেই একজনই আছেন, যাঁর অধিকারে এই পরিচয়, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, এবং সৃষ্টির উপর শাসনক্ষমতা রয়েছে: আমাদের অনন্য ঈশ্বর স্বয়ং। সকলকিছুর মাঝে তিনি বাস করেন ও সঞ্চরমাণ হন; তিনি উচ্চতম স্থানে, সকলকিছুর ঊর্দ্ধে, উত্থিত হতে পারেন। তিনি মনুষ্যরূপ ধারণ করে, রক্তমাংসের মানুষের একজন হয়ে, মানুষের মুখোমুখি এবং তাদের সুখদুঃখ ভাগ করে নিয়ে নিজেকে নম্র করতে পারে, আবার, একই সঙ্গে, যা কিছু রয়েছে সকলই তাঁর আজ্ঞায় চলে, সকলকিছুর অদৃষ্ট ও গতিপথ তিনিই নির্ধারণ করেন। উপরন্তু, তিনিই সমগ্র মানবজাতির অদৃষ্টের নিয়ন্তা, এবং মানবজাতিকে তার গন্তব্যপথে নিয়ে চলেছেন তিনিই। এই ধরনের এক ঈশ্বরকেই আরাধনা করতে হবে, মান্য করতে হবে, এবং সকল জীবিত সত্তাকে তাঁর বিষয়ে জ্ঞাত হতে হবে। অতএব, তুমি মানবজাতির যে গোষ্ঠী বা যে শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্তই হও না কেন, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা, ঈশ্বরকে অনুসরণ করা, ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করা, তাঁর শাসন স্বীকার করা, এবং তোমার অদৃষ্টের নিমিত্ত তাঁর আয়োজনকে স্বীকার করাই হল যে কোনো ব্যক্তি অথবা জীবিত সত্তার একমাত্র বিকল্প—প্রয়োজনীয় বিকল্প। ঈশ্বরের অনন্যতায় মানুষ দেখে যে তাঁর কর্তৃত্ব, তাঁর ধার্মিক স্বভাব, তাঁর সারমর্ম, এবং যে উপায়সমূহের অবলম্বনে তিনি সকলকিছু সরবরাহ করেন—তার সবই সম্পূর্ণরূপে অনন্য; এই অনন্যতাই স্বয়ং ঈশ্বরের প্রকৃত পরিচিতি, এবং তাঁর মর্যাদাও, নিরূপণ করে। সুতরাং, সকল প্রাণীর মাঝে, যদি আধ্যাত্মিক জগতের কোনো জীবিত সত্তা, অথবা মানবজাতির কোনো সদস্য, ঈশ্বরের পরিবর্তে অধিষ্ঠিত হতে চায়, তবে তা বিফল হবে, যেমন বিফল হবে ঈশ্বরের ছদ্মবেশ ধারণের কোনো প্রচেষ্টা। এই হল সত্য। এমন একজন সৃষ্টিকর্তা এবং শাসক—যাঁর অধিকারে রয়েছে স্বয়ং ঈশ্বরের পরিচিতি, ক্ষমতা এবং মর্যাদা—তাঁর কাছে মানবজাতির কাছে কী কী চাহিদা রয়েছে? সকলের কাছে এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত, এবং সকলেরই এটা স্মরণে রাখা উচিত; ঈশ্বর এবং মানুষ—উভয়ের কাছেই তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ⅱ. ঈশ্বরের প্রতি মানবজাতির বিভিন্ন মনোভাব

মানুষেরা ঈশ্বরের প্রতি কেমন আচরণ করে, তার দ্বারা তাদের নিয়তি নির্ধারিত হয়, এবং ঈশ্বর তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবেন, কীভাবে পরিচালনা করবেন, তা-ও স্থির হয়। এখানে, আমি মানুষেরা কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি আচরণ করে তার কয়েকটা উদাহরণ দিতে চলেছি। তারা ঈশ্বরের সম্মুখে যে মনোভাব নিয়ে ও যেভাবে আচরণ করে, তা সঠিক কিনা তা জেনে নেওয়া যাক। মানুষের করা নিম্নলিখিত এই সাত প্রকারের আচরণ বিবেচনা করা যাক।

১) এক ধরনের মানুষ রয়েছে, যাদের ঈশ্বরের প্রতি মনোভাব বিশেষভাবেই অযৌক্তিক। এই লোকেরা ঈশ্বরকে বোধিসত্ত্ব বা মানব ধর্মের কোনো পবিত্র সত্তা বলে মনে করে, এবং একে অপরের সাথে দেখা হলে ও প্রত্যেকবার আহার করার পরে পরে ধূপ জ্বালানোর সময় তারা তিনবার করে প্রণাম করে। ফলস্বরূপ, তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহের জন্য নিজেদের অত্যন্ত বাধিত মনে করলে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করলে, প্রায়শই তাদের মধ্যে এই ধরণের আবেগ পরিলক্ষিত হয়। তারা ভীষণভাবেই চায় যে, তারা আজ যে ঈশ্বরকে তারা বিশ্বাস করে তিনিও, তাদের অন্তর থেকে আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করা পবিত্র সত্তার মতোই, তিনি তারা সাক্ষাতের পর যে তিনবার প্রণাম করে, এবং প্রতিবার আহার গ্রহণের পর ধূপ জ্বালায়, তা গ্রহণ করুন।

২) কেউ কেউ ঈশ্বরকে জীবন্ত বুদ্ধ বলে মনে করে, যিনি সমস্ত জীবকে কষ্টের থেকে মুক্ত করতে এবং উদ্ধার করতে সক্ষম; তারা তাঁকে দুর্দশার অকুল পাথার থেকে মুক্তিদানকারী জীবন্ত বুদ্ধ হিসাবে দেখে। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসই এই মানুষগুলিকে বুদ্ধ হিসাবে ঈশ্বরকে উপাসনায় প্রণোদিত করে। যদিও তারা ধূপ জ্বালে না, সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে না, অথবা অর্ঘ্য নিবেদন করে না, কিন্তু অন্তরের অন্তঃস্থলে তারা মনে করে ঈশ্বর নিছকই বুদ্ধের মতো একজন, যিনি কেবল চান যে তারা দয়ালু এবং দানশীল হোক, কোনোরকম জীবহত্যা না করুক, অপরকে গালমন্দ করা থেকে বিরত থাকুক, এমন জীবন যাপন করুক যা সৎ হিসাবে প্রতিভাত হয়, এবং মন্দ কর্ম সংঘটন না করুক। তারা ভাবে তিনি এইসবই আকাঙ্ক্ষা করেন; এমনটাই হল তাদের অন্তরের ঈশ্বরের স্বরূপ।

৩) কেউ কেউ ঈশ্বরকে এমনভাবে উপাসনা করে যেন তিনি কোনো মহান বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। যেমন ধরো, সেই মহান ব্যক্তি যেভাবে কথা বলা পছন্দ করেন, যে স্বরে কথা বলেন, যে শব্দ ও শব্দভান্ডার তিনি ব্যবহার করেন, তাঁর বাচনভঙ্গি, হাতের মুদ্রা, মতামত এবং ক্রিয়াকলাপ, তাঁর হাবভাব—তারা সমস্ত কিছুই অনুকরণ করে, এবং এইসব তাদের ঈশ্বর বিশ্বাসের পথেই সম্পূর্ণরূপে উদ্ভূত হতে বাধ্য।

৪) কেউ কেউ ঈশ্বরকে সম্রাট হিসাবে দেখে, মনে করে তিনিই সকলের ঊর্ধ্বে, এবং কেউই তাঁকে রুষ্ট করতে স্পর্ধা রাখে না—এবং কেউ তেমন করলে, সেই ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হবে। তারা এহেন সম্রাট হিসাবেই তাঁর উপাসনা করে, কারণ তাদের হৃদয়ে সম্রাটদের একটি সবিশেষ স্থান রয়েছে। তাদের চিন্তাধারা, পদ্ধতি, কর্তৃত্ব এবং প্রকৃতি—এমনকি তাদের আগ্রহ এবং ব্যক্তিগত জীবন—এই সমস্ত কিছু তাদের অবশ্যই উপলব্ধি করা উচিত বলে এই ব্যক্তিগণ বিবেচনা করে। এই বিষয়গুলিই সমস্যা এবং উদ্বেগের বিষয় হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, তারা ঈশ্বরকে সম্রাট হিসাবে উপাসনা করে। এহেন বিশ্বাস হাস্যকর।

৫) কোনো কোনো মানুষের ঈশ্বরের অস্তিত্বের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিশ্বাস রয়েছে, এবং এই বিশ্বাস খুবই গভীর এবং অটল। তবে, যেহেতু তাদের ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান অত্যন্ত অগভীর, এবং তাঁর বাক্যের বিশেষ অভিজ্ঞতাও তাদের নেই, সেহেতু তারা তাঁকে মূর্তি হিসাবে পূজা করে। এই মূর্তি হল তাদের অন্তঃস্থিত ঈশ্বরের মূর্তি; তাদের মনে হয় যেন এই মূর্তিই হল এমন বস্তু যা অবশ্যই ভয় পাওয়া উচিত, যার সামনে নতজানু হওয়া উচিত, এবং যা অবশ্যই অনুসরণ ও অনুকরণ করা উচিত। তারা ঈশ্বরকে এমন এক মূর্তি হিসাবে দেখে যা তাদের আজীবৎকাল অনুসরণ করে যেতেই হবে। তারা ঈশ্বরের স্বরভঙ্গিমা নকল করে, এবং ঈশ্বর যাদের পছন্দ করেন, বাহ্যিকভাবে তাদের নকল করে। তারা প্রায়শই এমন কিছু জিনিস করে, যেগুলি নিষ্পাপ, খাঁটি, এবং সৎ হিসাবে প্রতীয়মান হয়, এবং তারা সেই মূর্তিকে এমনকি একজন অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী বা সহচর হিসাবেও বিবেচনা করে। তাদের বিশ্বাসের ধরণ এই রকমই।

৬) এক ধরনের মানুষ আছে, যারা ঈশ্বরের অনেক বাক্য পড়ার পরেও, অনেক প্রচার শোনার পরেও, অন্তরে অনুভব করে যে, ঈশ্বরের প্রতি আচরণে একমাত্র প্রাসঙ্গিক নীতি হল সর্বদা তাঁর চাটুকারিতা বা তোষামোদ করা, অথবা, যে, তাদের অবাস্তব পদ্ধতিতে ঈশ্বরের প্রশংসা এবং তাঁর গুণকীর্তন করা উচিত। তারা মনে করে যে ঈশ্বর হলেন এমন একজন ঈশ্বর, যিনি তাদের থেকে এইরকম আচরণেরই চাহিদা রাখেন। তদুপরি, তারা বিশ্বাস করে যে, এমনটা না করলে, যেকোনো সময় তিনি কুপিত হবেন, অথবা তা তাঁর বিরুদ্ধে পাপাচারের পর্যায়ে পড়বে, এবং এই পাপের ফলস্বরূপ ঈশ্বর তাদের দণ্ড দেবেন। তারা এহেন ঈশ্বরকেই আপন অন্তরে রেখেছে।

৭) এবং তারপর রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষজন, যারা ঈশ্বরের মধ্যে আধ্যাত্মিক পরিপোষণ খুঁজে পায়। এর কারণ হল, এই দুনিয়ায় বসবাসকালে তারা সুখ শান্তি থেকে বঞ্চিত থাকে, এবং কোথাওই তারা স্বস্তি খুঁজে পায় না; যেই না তারা ঈশ্বরকে খুঁজে পায়, তাঁকে প্রত্যক্ষ করে ও তাঁর বাক্য শোনে, তারা অন্তরে গোপন আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস অনুভব করতে শুরু করে। এর কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, অবশেষে এমন এক স্থানের সন্ধান তারা পেয়েছে যেখানে তাদের আত্মা আনন্দিত হবে, এবং অবশেষে তারা এমন একজন ঈশ্বরকে পেয়েছে, যিনি তাদের আধ্যাত্মিক পরিপোষণ প্রদান করবেন। ঈশ্বরকে স্বীকার করে, তাঁকে অনুসরণ শুরু করার পরে, তারা আনন্দিত হয়, তাদের জীবন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তারা আর অবিশ্বাসীদের মতো, অর্থাৎ আজীবৎকাল স্বপ্নচারী পশুর মতো চলে না, বরং জীবনে উন্মুখ হওয়ার মতো কোনো একটি বিষয় তারা খুঁজে পায়। এইভাবে, তারা মনে করে যে, এই ঈশ্বর তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা ব্যাপকভাবে পূরণ করতে সক্ষম এবং মনন ও আত্মা উভয় স্থানেই তিনি তাদের অতিশয় সুখ এনে দিতে পারবেন। অজ্ঞাতসারেই, তারা এহেন ঈশ্বর, যিনি তাদের আধ্যাত্মিক পরিপোষণ প্রদান করেন, এবং যিনি তাদের আত্মার এবং তাদের পরিবারের সকল সদস্যের জন্য আনন্দ নিয়ে আসেন, তাঁকে পরিত্যাগ করতে অপারগ হয়। তারা মনে করে যে, ঈশ্বরে বিশ্বাসের দ্বারা আধ্যাত্মিক পরিপোষণের অতিরিক্ত অপর কিছুই আনীত হওয়ার প্রয়োজন নেই।

তোমাদের মধ্যে কেউ কি ঈশ্বরের প্রতি এই উপরোক্ত বিভিন্ন মনোভাবগুলি পোষণ করো? (হ্যাঁ।) ঈশ্বর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, কেউ যদি অন্তরে এমন কোনো মনোভাব পোষণ করে, তাহলে তারা কি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সম্মুখে আসতে সক্ষম? কেউ যদি অন্তরে এমন যেকোনো মনোভাব পোষণ করে, সে কি আদৌ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে? এমন কোনো ব্যক্তি কি অদ্বিতীয় স্বয়ং ঈশ্বরে বিশ্বাস করে? (না।) তুমি অদ্বিতীয় স্বয়ং ঈশ্বরে বিশ্বাস করো না, তাহলে কাকে বিশ্বাস করো? তুমি যাকে বিশ্বাস করো, তিনি যদি অদ্বিতীয় স্বয়ং ঈশ্বর না হন, তাহলে সম্ভবত তুমি কেবল এক মূর্তি বা মহান কোনো ব্যক্তি অথবা বোধিসত্ত্বকে বিশ্বাস করো, অথবা তোমার হৃদয়ের অন্তঃস্থিত বুদ্ধের উপাসনা করো। তদুপরি, এমনও হতে পারে যে, তুমি হয়তো একজন সাধারণ মানুষকেই বিশ্বাস করছ। সংক্ষেপে, ঈশ্বরের প্রতি মানুষের বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কারণে, তারা তাদের অন্তরে নিজস্ব ধ্যানধারণা অনুসারে ঈশ্বরকে স্থান দেয়, ঈশ্বরের উপর তাদের কল্পনা আরোপ করে, অদ্বিতীয় স্বয়ং ঈশ্বর এবং তাদের ঈশ্বর সম্পর্কিত মনোভাব এবং কল্পনাকে পাশাপাশি রাখে। এবং, তারপরে, সেগুলি পবিত্রকরণের উদ্দেশ্যে তুলে ধরে। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের এইরকম অনুপযুক্ত মনোভাবের অর্থ কী? এর অর্থ হল, তারা স্বয়ং সত্য ঈশ্বরকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মিথ্যা এক ঈশ্বরের উপাসনা করছে; তা দেখায় যে, ঈশ্বরে বিশ্বাস করার সময়ে, তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও তাঁর বিরোধিতা করছে, তারা একমাত্র সত্য ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছে। মানুষ এই ধরনের বিশ্বাস আঁকড়ে ধরলে তাদের কী পরিণতি হবে? এই ধরনের বিশ্বাসের মাধ্যমে, তারা কি ঈশ্বরের চাহিদা পূরণের আরও নিকটবর্তী হতে পারবে? (না, তারা পারবে না।) এর বিপরীতে, তাদের এমত ধারণা এবং কল্পনার উপস্থিতির কারণে, তারা ঈশ্বরের পথ থেকে আরও দূরে সরে যাবে, কারণ ঈশ্বর তাদের যে দিশায় পাঠাতে চান, তারা তার বিপরীত দিশায় অন্বেষণ করে। তোমরা কি কখনো “উত্তরে রথ চালিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার” গল্প শুনেছ? এই ধরনের ঘটনাগুলি উত্তরে রথ চালিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার ভালো উদাহরণ হতে পারে। মানুষ যদি এমন হাস্যাস্পদ উপায়ে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, তাহলে তুমি যতই চেষ্টা করবে, ঈশ্বরের থেকে তুমি তুমি ক্রমে আরো দূরে সরে যাবে। অতএব, আমি তোমাদের এই মর্মে সতর্ক করে দিচ্ছি: যাত্রাপূর্বে, তোমাদের সর্বাগ্রে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে যে তুমি সঠিক অভিমুখে চলেছ কিনা। অন্ধভাবে প্রচেষ্টা কোরো না, নিজেকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা কোরো, “আমি যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি, তিনিই কি সমস্ত কিছুর শাসক? আমি যে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি তিনি কি আমাকে নিছকই আধ্যাত্মিক পরিপোষণ প্রদান করেন? তিনি কি নিছকই আমার উপাস্য কোনো প্রতিমা? আমি যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি তিনি আমার থেকে কী চান? আমার করা সমস্তকিছুই কি ঈশ্বর অনুমোদন করেন? আমার সকল কাজ এবং অন্বেষণই কি ঈশ্বরকে জানার সাথে সুসঙ্গত? সেগুলি কি আমার প্রতি তাঁর আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? আমি যে পথে চলি, তা কি ঈশ্বরের দ্বারা স্বীকৃত এবং অনুমোদিত? আমার বিশ্বাসে কি তিনি সন্তুষ্ট?” তোমার নিজেকে মাঝেমধ্যে এবং বারংবার এই প্রশ্নগুলো করা উচিত। তুমি যদি ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতে চাও, তাহলে তাঁর সন্তুষ্টিবিধানে সফল হওয়ার আগে, তোমার মধ্যে অবশ্যই সুস্পষ্ট সংজ্ঞান এবং অভীষ্টসমূহ থাকতে হবে।

এমনটা কি সম্ভব, যে, ঈশ্বর, তাঁর সহিষ্ণুতার ফলাফলস্বরূপ, এইসমস্ত অনুপযুক্ত মনোভাব, যেগুলির বিষয়ে আমি এইমাত্র উল্লেখ করলাম, সেগুলি, হয়তো অনিচ্ছা সহকারেই, মেনে নেন? ঈশ্বর কি এইসব মানুষদের মনোভাবের প্রশংসা করতে পারেন? (না।) ঈশ্বর মানুষ এবং তাঁর অনুগামীদের থেকে কী প্রত্যাশা করেন? মানুষের মধ্যে তিনি কী ধরনের মনোভাব প্রত্যাশা করেন? এই বিষয়ে কি তোমার স্পষ্ট ধারণা আছে? এখন অবধি, আমি অনেক কিছু বলেছি; স্বয়ং ঈশ্বরের বিষয়ে আমি প্রভূত আলোচনা করেছি, পাশাপাশি তাঁর কাজ এবং তাঁর যা আছে ও তিনি যা, সে বিষয়েও বলেছি। ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে কী অর্জন করতে চান, তা কি তোমরা জানো? তোমার থেকে তিনি কী আকাঙ্ক্ষা করেন, তা কি তুমি জানো? জবাব দাও। যদি এখনও তোমার অভিজ্ঞতা ও অনুশীলন থেকে লব্ধ জ্ঞানের অভাব থেকে যায় বা তার গভীরতা কম হয়, তাহলেও তোমরা এই বাক্য সম্পর্কিত জ্ঞানের বিষয়ে কিছু বলতে পারো। তোমাদের কি একটা সারসংক্ষিপ্ত জ্ঞান রয়েছে? ঈশ্বর মানুষের থেকে কী চান? (এই সকল অজস্র যোগাযোগের মাধ্যমে, ঈশ্বর চান আমরা যেন তাঁকে জানি, তাঁর কাজ সম্পর্কে অবগত হই, তিনিই যে সমস্ত জীবনের উৎস তা উপলব্ধি করি, এবং তাঁর মর্যাদা ও পরিচয়ের বিষয়ে অবহিত হই।) এবং, যখন ঈশ্বর চান যে মানুষ তাঁকে জানুক, তখন তার অন্তিম পরিণতি কী হয়? (তারা উপলব্ধি করে যে, ঈশ্বরই হলেন সৃষ্টিকর্তা, এবং মানুষ হল সৃষ্ট জীব।) যখন মানুষ এমন জ্ঞান অর্জন করে, তখন তাদের ঈশ্বরের প্রতি আচরণে, দায়িত্ব পালনে, অথবা জীবন চরিত্রে কী কী পরিবর্তন সাধিত হয়? তোমরা কি কখনো এই বিষয়ে ভেবে দেখেছ? এমনটা কি বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বরকে জানার পর, তাঁকে উপলব্ধি করার পর, তারা ভালো মানুষে পরিণত হয়? (ঈশ্বর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকার দরকার নেই। পরিবর্তে, ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব এবং একজন সৎ ব্যক্তি হওয়ার সাধনা করাই কাম্য।) আর কোনও বিষয় কি রয়েছে? (ঈশ্বরকে প্রকৃত এবং সঠিকভাবে জানার পরে, আমরা তাঁকে ঈশ্বর হিসাবে পরিগণিত করতে সক্ষম হই; আমরা জানি যে ঈশ্বর সর্বদাই ঈশ্বর, আমরা হলাম সৃষ্ট সত্তা, আমাদের ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত, এবং আমাদের যথাযথ স্থানেই থাকা উচিত।) খুবই ভালো! এবারে অন্যান্যদের প্রতিক্রিয়া শোনা যাক। (আমরা ঈশ্বরকে জানি, এবং পরিশেষে এমন মানুষ হতে সক্ষম হই, যারা সত্যই ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে, ঈশ্বরকে সম্মান করে, এবং মন্দ কর্ম পরিত্যাগ করে।) একদম ঠিক!

ⅲ. ঈশ্বর মানুষের থেকে যে মনোভাব প্রত্যাশা করেন

বস্তুত, ঈশ্বর মানুষের কাছ থেকে খুব বেশি দাবি করেন না—অথবা, অন্তত এমনটা বলা যায় যে, মানুষ যেমন কল্পনা করে, তিনি তত পরিমাণ দাবি করেন না। ঈশ্বর যদি কোনো বাক্য উচ্চারণ না করতেন, এবং যদি তাঁর স্বভাব অথবা কোনো কীর্তি প্রকাশ না করতেন, তাহলে তোমাদের পক্ষে, ঈশ্বরকে জানা খুবই কঠিন হত, কারণ মানুষকে তাঁর উদ্দেশ্য ও ইচ্ছার অনুমান করে নিতে হত; এমনটা খুবই কষ্টসাধ্য হত। তবে, কাজের অন্তিম পর্যায়ে, ঈশ্বর অনেক বাক্য বলেছেন, প্রভূত কাজ করেছেন, এবং মানুষের কাছ থেকে অনেক চাহিদা রেখেছেন। তাঁর বাক্য দ্বারা, এবং তাঁর দ্বারা সম্পন্ন প্রভূত পরিমাণ কাজের মাধ্যমে, তিনি মানুষকে তাঁর নিজের পছন্দ, অপছন্দ, এবং মানুষের কেমন হওয়া উচিত, সেসকল বিষয়ে অবহিত করেছেন। এই সমস্ত বিষয় উপলব্ধি করার পর, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা উচিৎ, কারণ তারা অস্পষ্টভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তারা আর অস্পষ্ট ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাস আর অস্পষ্টতা বা শূন্যতায় আচ্ছন্নও নয়। পরিবর্তে, তারা তাঁর কথন শুনতে, তাঁর প্রয়োজনীয়তার মানগুলি উপলব্ধি ও অর্জন করতে সক্ষম হয়, এবং ঈশ্বর মানবজাতির ভাষা ব্যবহার করে তাদের যা কিছু জানা উচিত, বোঝা উচিত, সেসব বিষয় বলেন। আজ, যদি মানুষ এখনও ঈশ্বর যা এবং তিনি তাদের থেকে যা চান, তা না জানে; তারা যদি না জানে যে কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত, কীভাবে তাঁকে বিশ্বাস করা উচিত বা তাঁর সাথে কেমন আচরণ করা উচিত—তাহলে তা সমস্যার বিষয়। এইমাত্র, তোমরা প্রত্যেকে একটিমাত্র নির্দিষ্ট পরিসরের কথা বললে; সুনির্দিষ্ট অথবা সাধারণ নির্বিশেষে, তোমরা কিছু বিষয়ের প্রতি সচেতন। তবে, ঈশ্বর মানবজাতির থেকে কী চান, সেগুলি আমি তোমাদের সঠিক, সম্পূর্ণ এবং সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে চাই। এগুলি নিছকই সরল কিছু বাক্য; হয়তো তোমরা ইতিমধ্যেই সেগুলি জানো। ঈশ্বরের অনুগামীরা যা অনুসরণ করে, ঈশ্বর তা-ই মানবজাতির থেকে প্রত্যাশা করেন। তিনি তাঁর অনুগামীদের থেকে এই পাঁচটি জিনিসেরই প্রত্যাশা করেন: প্রকৃত বিশ্বাস, অনুগত অনুসরণ, সম্পূর্ণ সমর্পণ, প্রকৃত জ্ঞান এবং আন্তরিক শ্রদ্ধা।

এই পাঁচটি জিনিসের মাধ্যমে, ঈশ্বর চান যে, মানুষ যেন আর তাঁকে প্রশ্ন না করে বা নিজেদের কল্পনা অথবা অনিশ্চিত ও বিমূর্ত দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে তাঁর অনুসরণ না করে; তারা যেন আবশ্যিকভাবে কোনো কল্পনা বা পূর্বধারণার ভিত্তিতে ঈশ্বরকে অনুসরণ না করে। নিরুৎসাহ বা অঙ্গীকারবিহীন ভাবে নয়, তিনি চান তাঁর প্রত্যেক অনুগামী যেন অনুগতভাবেই তাঁর অনুসরণ করে। যখন ঈশ্বর তোমার থেকে কিছু দাবি করেন, তোমার পরীক্ষা নেন, বিচার ও মোকাবিলা করেন, অপ্রয়োজনীয় অংশ কর্তন করেন, তোমাকে অনুশাসন বা আঘাত করেন, তখন তোমার উচিত তাঁর কাছে সম্পূর্ণ সমর্পণ করা। তোমার কারণ জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়, শর্ত আরোপ করা উচিত নয়, যুক্তির কথা তো আরোই বলা উচিত নয়। তোমার পরম আনুগত্যই আবশ্যিক। ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞানের ক্ষেত্রেই মানুষের সবচেয়ে বেশি অভাব রয়ে গিয়েছে। তারা প্রায়শই ঈশ্বরে উপর এমন কিছু বক্তব্য, উচ্চারণসমূহ ও বচন আরোপ করে, যা তাঁর সঙ্গে সম্পর্কবিহীন, এবং ভাবে যে এই ধরনের কথাগুলিই বুঝি ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞানের সবচেয়ে সঠিক সংজ্ঞা। তারা প্রায় জানেই না যে, মানুষের কল্পনা, নিজস্ব যুক্তি এবং নিজস্ব জ্ঞান থেকে আগত এই বক্তব্যের সাথে, ঈশ্বরের সারসত্যের সামান্যতম সম্পর্কও নেই। অতএব, আমি তোমাদের বলতে চাই যে, যখন মানুষের কাছ থেকে ঈশ্বরের আকাঙ্ক্ষিত জ্ঞানের কথা আসে, তখন তুমি তাঁকে এবং তাঁর বাক্য চিনতে সক্ষম কিনা—শুধুমাত্র এইটুকু কিন্তু তিনি জানতে চান না, বরং, এর সাথে সাথে, তোমার ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞান সঠিক কিনা, তা-ও জানতে চান। এমনকি তুমি শুধুমাত্র একটি কথা বলতে পারলেও, বা শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কে সচেতন হলেও, এই ক্ষুদ্র অংশের সচেতনতা যেন সঠিক এবং সত্য হয়, এবং তা যেন স্বয়ং ঈশ্বরের সারসত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এর কারণ হল ঈশ্বর তাঁর প্রতি অবাস্তব বা বিবেচনাহীন স্তুতি বা প্রশংসা ঘৃণা করেন। তার চেয়েও বড় কথা, মানুষ তাঁর প্রতি শূন্য বাতাসের মতো আচরণ করলে তিনি তা ঘৃণা করেন। ঈশ্বরের বিষয়ে আলোচনার সময়, যখন লোকেরা সত্যকে বিবেচনা না করে কথা বলে, ইচ্ছামত নির্দ্বিধায় কথা বলে, নিজেদের যেমন উপযুক্ত মনে হয় তেমন করে কথা বলে—তিনি তা ঘৃণা করেন; তদুপরি, তিনি তাদেরও ঘৃণা করেন, যারা বিশ্বাস করে যে, তাদের ঈশ্বরের বিষয়ে উপলব্ধি রয়েছে, এবং সেই জ্ঞান নিয়ে তারা অহংকার করে, কোনো সীমাবদ্ধতা বা আপত্তি ছাড়াই যারা তাঁর সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। উল্লিখিত পাঁচটি প্রয়োজনীয়তার মধ্যে শেষটি ছিল আন্তরিক শ্রদ্ধা: ঈশ্বরের অনুগামীদের প্রতি এটিই হল ঈশ্বরের চূড়ান্ত চাহিদা। যখন কেউ ঈশ্বরের বিষয়ে সঠিক এবং সত্য জ্ঞানের অধিকারী হয়, তখন সে প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরকে সম্মান করতে, এবং মন্দ কাজ পরিত্যাগ করতে সক্ষম হয়। এই শ্রদ্ধা আসে তাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে; ঈশ্বর প্রদত্ত প্রবল দাবীর ফলাফল হিসাবে নয়, এই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই। ঈশ্বর তোমার থেকে তাঁর প্রতি উত্তম মনোভাব, আচরণ অথবা বাহ্যিক ব্যবহার স্বরূপ উপহার কামনা করেন না, পরিবর্তে তিনি চান যে তুমি যেন তাঁকে শ্রদ্ধা করো, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তাঁকে ভয় পাও। এই প্রকার শ্রদ্ধা অর্জিত হয় তোমার জীবন চরিত্রের পরিবর্তনের ফলাফল রূপে, ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞান ও ঈশ্বরের কর্ম বিষয়ক উপলব্ধি অর্জনের পরিণতি হিসাবে, তাঁর সারসত্য উপলব্ধি করতে পারার ফলে, এবং ঈশ্বরের এক জীব হিসাবে তোমার স্বীকৃতিস্বরূপ। অতএব, এখানে শ্রদ্ধা বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করার সময়ে, “আন্তরিক” শব্দটি ব্যবহার করে আমি মানুষকে বোঝাতে চাই যে, ঈশ্বরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা যেন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আসে।

এখন সেই পাঁচটি প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনা করো: তোমাদের মধ্যে কেউই কি প্রথম তিনটি অর্জন করতে সক্ষম? এর দ্বারা, আমি প্রকৃত বিশ্বাস, বিশ্বস্ত অনুসরণ এবং সম্পূর্ণ সমর্পণের কথা বোঝাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে কেউই কি এগুলি করতে সক্ষম? আমি জানি যে, পুরো পাঁচটির কথাই ধরলে নিঃসন্দেহে তোমাদের মধ্যে একজনও তা পারবে না, তবে আমি সংখ্যাটিকে কমিয়ে তিনে নামিয়ে এনেছি। তোমরা এই জিনিসগুলি অর্জন করেছ কিনা তা একবার ভেবে দেখ। “প্রকৃত বিশ্বাস” অর্জন করা কি সহজ? (না, তা নয়।) তা সহজ নয়, কারণ মানুষ প্রায়ই ঈশ্বরকে প্রশ্ন করে। এবং “অনুগত অনুসরণ”–এর বিষয়ে কী অভিমত? এই “অনুগত” বলতে কী বোঝানো হয়? (নিরুৎসাহ না হয়ে, বরং সর্বান্তকরণ-সম্পন্ন হওয়া।) নিরুৎসাহ হয়ে নয়, বরং সর্বান্তকরণে। একদম ঠিক ধরেছ! তাহলে, তোমরা কি এই প্রয়োজনীয়তা অর্জন করতে সক্ষম? তোমাদের আরও কঠোরভাবে চেষ্টা করতে হবে, তাই নয় কি? এই মুহূর্তে, তুমি এখনও এই প্রয়োজনীয়তাটিও পূরণে সফল হতে পারো নি। “সম্পূর্ণ সমর্পণ” সম্পর্কে কী অভিমত—তোমরা কি তা অর্জন করেছ? (না।) তোমরা তা-ও অর্জন করো নি। তোমরা প্রায়ই অবাধ্য এবং বিদ্রোহী; তোমরা প্রায়শই কথা শোনো না, মান্য করতে, বা শুনতেও চাও না। মানুষ জীবনে প্রবেশের পরে, এই তিনটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে, কিন্তু তোমরা এখনও সেগুলি অর্জন করতে পারো নি। এইভাবে, এই মুহূর্তে, তোমাদের মধ্যে কি দুর্দান্ত সম্ভাবনা আছে? আজ, আমাকে এই বাক্যগুলি বলতে শুনে, তোমরা কি উদ্বিগ্ন বোধ করছ? (হ্যাঁ।) তোমাদের পক্ষে উদ্বিগ্ন বোধ করাই যুক্তিযুক্ত। উদ্বেগ এড়ানোর চেষ্টা কোরো না। আমি তোমাদের হয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করি। আমি আর অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার কথা বলছিই না; কোনো সন্দেহই নেই যে, তোমাদের মধ্যে একজনও সেগুলি অর্জন করতে অপারগ। তোমরা উদ্বিগ্ন। তাহলে তোমরা কি তোমাদের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে নিয়েছ? তোমাদের প্রচেষ্টা কোন উদ্দেশ্যে, এবং কোন অভিমুখে, চালিত ও নিয়োজিত হওয়া উচিত? তোমার কি কোনো অভীষ্ট রয়েছে? আমি সরলভাবে বলছি: এই পাঁচটি প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে নিলে, তোমরা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। এদের প্রত্যেকটিই কারোর জীবনে প্রবেশের পূর্ণতা লাভের ক্ষেত্রে এক একটি সূচক, এবং চূড়ান্ত উদ্দেশ্যও বটে। এমনকি যদি আমি এগুলির মধ্যে যেকোনো একটি প্রয়োজনীয়তা বেছে নিয়ে বিশদে আলোচনা করি, এবং তোমাদের তা পূরণ করতে বলি, তা-ও অর্জন করা সহজ হবে না; তেমন করতে গেলে তোমাকে অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ কষ্ট সহন করতে হবে, এবং সুনির্দিষ্ট পরিমাণে প্রচেষ্টা করতে হবে। তোমাদের মানসিকতা কেমন হওয়া উচিত? তা হওয়া উচিত অস্ত্রোপচার কক্ষে যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত ক্যান্সার রোগীর মতোই। আমি কেন এমন বলি? তুমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে চাও, এবং ঈশ্বরকে পেতে চাও, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাও, তবে নির্দিষ্ট মাত্রার যন্ত্রণা ভোগ না করলে, এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রচেষ্টা না করলে, তুমি এই বিষয়গুলি অর্জনে সক্ষম হবে না। তোমরা অনেক প্রচার শুনেছ, কিন্তু তার অর্থ এই নয়, যে এই উপদেশ তুমি নিছক শোনার ফলেই গ্রহণ করে ফেলেছ; তোমাকে অবশ্যই তা আত্মভূত করে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। তোমাকে অবশ্যই এটিকে তোমার জীবনে আত্তীকরণ করতে হবে এবং নিজের অস্তিত্বের পরিসরে নিয়ে আসতে হবে, এই বাক্য এবং প্রচারসমূহকে নিজের জীবনযাপনের পথনির্দেশক রূপে গ্রহণ করতে হবে, এবং এগুলিকে তোমার জীবনের অস্তিত্বজ্ঞাপক মূল্য এবং অর্থবহ সত্তা করে তুলতে হবে৷ যখন এমনটি ঘটবে, তখনই তোমার দ্বারা এই বাক্যসমূহ শ্রবণ করার বিষয়টি মূল্যবান হিসেবে পরিগণিত হবে। আমার কথিত বাক্যগুলি যদি তোমার জীবনে কোনও উত্থান না ঘটায়, অথবা তোমার অস্তিত্বে কোনও মূল্য যোগ না করে, তবে তোমাদের পক্ষে সেগুলি শোনা নিরর্থক। তোমরা এমনটা উপলব্ধি করতে পারছ, তাই নয় কি? এই উপলব্ধি হয়ে গেলে, তারপরে কী ঘটবে তা তোমাদের উপরেই নির্ভর করে। তোমাদের অবশ্যই কাজ করা শুরু করতে হবে! সব বিষয়েই তোমাদের অবশ্যই আন্তরিক হতে হব! বিভ্রান্ত হয়ে থেকো না, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে! তোমাদের মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে এক দশকেরও বেশি সময়কাল ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছো। বিগত সেই দশ বছরের দিকে তাকিয়ে দেখো: তোমরা কতটা লাভ করেছ? আর এই জীবদ্দশায় আর কতগুলিই বা দশক অবশিষ্ট রয়েছে? তোমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই। ঈশ্বরের কাজ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে কিনা, তিনি তোমার জন্য সুযোগ রেখেছেন কি না, বা তিনি আবার একই কাজ করবেন কিনা, সেই চিন্তা ভুলেই যাও—এই বিষয়গুলি সম্পর্কে কথাও বোলো না। তুমি কি তোমার জীবনের বিগত দশ বছরের গতিপথকে বিপরীতে চালিত করতে পারবে? প্রতিটি দিন অতিবাহিত হওয়ার এবং তোমার প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে সাথেই, একটি একটি করে তোমার দিনও কমতে থাকে। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না! যদি তুমি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বিষয় হিসাবে ঈশ্বর বিশ্বাসকে গ্রহণ করতে পারো, এমনকি খাদ্য, বস্ত্র অথবা অন্য কিছুর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারো, তবেই কেবল এই বিশ্বাস থেকে তুমি কিছু অর্জন করতে পারবে। যদি তুমি শুধুমাত্র তোমার সময় অনুসারে বিশ্বাস করতে পারো, বিশ্বাসের প্রতি নিজের সম্পূর্ণ মনোযোগ উৎসর্গ করতে না পারো, এবং সর্বদাই বিভ্রান্তির দ্বারা আচ্ছন্ন থাকো, তাহলে তুমি কিছুই লাভ করতে পারবে না। তোমরা এটা উপলব্ধি করতে পারো, তাই নয় কি? আমরা আজ এখানেই শেষ করব। পরের বার আবার দেখা হবে!

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪

পূর্ববর্তী: স্বয়ং ঈশ্বর, অনন্য ৯

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন